সত্যার্থ প্রকাশ (প্রথম সংস্করণ) শেষ হয়ে আসছিল। তাতে সংশোধন করা খুবই জরুরি ছিল এবং অনেক নতুন সমাগ্রীও তাতে সংযোজন করা প্রয়োজন ছিল। তাই মহর্ষি তার পরিশোধিত, বিস্তৃত ও সংশোধিত দ্বিতীয় সংস্করণ তৈরী করার বিচার করেন।
এর প্রকাশনার পূর্বঘোষণা বর্ণোচ্চারণ শিক্ষা গ্রন্থের শেষ পাতায় মুদ্রিত পাওয়া যায়, যা সম্বৎ ১৯৩৬ (খ্রিষ্টাব্দ ১৮৭৯) সালের শেষে প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর এই প্রকাশনার আরেকটি সূচনা সন্ধি বিষয় (সম্বৎ ১৯৩৮, খ্রিষ্টাব্দ ১৮৮১) গ্রন্থের শেষ অংশেও মুদ্রিত অবস্থায় পাওয়া যায়।
প্রচারযাত্রায় থাকলেও মহর্ষি সাহিত্য-রচনার কাজ নিয়মিতভাবে চালিয়ে যেতেন। লেখালেখির কাজে সহায়তার জন্য তিনি বেতনভুক্ত দু’জন কর্মচারী রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন লিপিকার বা লেখক— যার কাজ ছিল মহর্ষির উচ্চারিত বক্তব্য লেখার মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করা, চিঠিপত্র লিখে দেওয়া এবং সেগুলো থেকে মুদ্রণের উপযোগী প্রতিলিপি প্রস্তুত করা।
সকল স্তরের গবেষক ছিলেন যারা লিখিত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতেন। তারা সবসময় পরিবর্তিত হতেন এবং নতুনজন আসতেন। প্রচার-যাত্রায় থাকাকালীনও মহর্ষি দ্বিতীয় সংস্করণ রচনার কাজ চালিয়ে গেছেন। মহর্ষি বলতেন এবং লিপিকার লিখতেন। সত্যার্থপ্রকাশ লিখেছেন এবং মুদ্রণপ্রতি তৈরির কাজ করেছেন বহু লিপিকার। মহর্ষি নিজের মুখ দিয়ে বলিয়ে সত্যার্থপ্রকাশ দ্বিতীয় সংস্করণের প্রথম একটি কপি তৈরি করান, যাকে মূলপ্রতি বলা হয়। এরপর সেই কপি থেকে প্রকাশনার জন্য মুদ্রণপ্রতি প্রস্তুত করা হয় এবং তা থেকে দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪) প্রকাশিত হয়। এই তিনটি কপির বিস্তারিত তথ্য নিম্নরূপ:
(ক) মূলপ্রতি — এটিকে মূল-হস্তলেখ বা প্রথম প্রতি বলা হয়। মহর্ষি যখন প্রথমবারের মতো পরিশোধিত ও বিস্তৃত দ্বিতীয় সংস্করণ বলিয়ে লিখান, সেটিই মূলপ্রতি। এতে বহু লিপিকারের লেখা আছে। মহর্ষি বলতেন এবং লিপিকার লিখতেন। এই কপিতে লিগ্যাল সাইজে মোট ৮০৬ পৃষ্ঠা লেখা আছে। সত্যার্থপ্রকাশ দ্বিতীয় সংস্করণের মূলপ্রতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবচেয়ে প্রামাণিক এবং সবচেয়ে প্রধান ভিত্তিমূলক ঐতিহাসিক দলিল, কারণ এটি সম্পূর্ণরূপে মহর্ষি দ্বারা প্রোক্ত এবং পরে দুইবার (একবার নীল রঙের কালি দিয়ে এবং একবার লাল রঙের কালি দিয়ে) মহর্ষি নিজ হাতে সংশোধিত। এটি মহর্ষির বিরল ঐতিহাসিক বিশুদ্ধ বাণী। এই বৈশিষ্ট্য অন্য কোনো কপিতে নেই। দ্বিতীয় কপি তৈরি করার সময় যেমন সাধারণত হয়, লিপিকারদের অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে কিছু অক্ষর, শব্দ, বাক্য ভুল থেকে গেছে এবং বানানের অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। যেহেতু লিপি লিখেছেন লিপিকার, তাই লিপি বা ভাষাসংক্রান্ত সব ভুলও তাদের দোষ। এগুলো মহর্ষির দায় নয়। মূলপ্রতিতে প্রায় ২০০০–২৫০০টি ত্রুটি রয়েছে।
মূলপ্রতি–কে রফপ্রতি বলা উচিত নয়। অনেক পণ্ডিত এই মূল-হস্তলেখকে রফপ্রতি বলে সম্বোধন করেন। মহর্ষি প্রোক্ত ও সংশোধিত মূলপ্রতিকে রফপ্রতি বলা মানে মহর্ষিকে অযোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টা। প্রসঙ্গক্রমে, এখানে এই ভুল ধারণার সঠিক ব্যাখ্যা করা জরুরি। লক্ষ্য করুন, মহর্ষি যেটি স্বপ্রোক্ত ভাষায় লিখিয়েছেন, সেই সম্পূর্ণ কপির নিজ হাতে কমপক্ষে দুইবার পরিদর্শন ও সংশোধন করেছেন, তাহলে কীভাবে তা রফপ্রতি হয়ে যায়? কিছু পণ্ডিত বলবেন, যেহেতু এর থেকে প্রেসপ্রতি তৈরি হয়েছে, তাই তা রফপ্রতি। কিন্তু কোন কপিই রফপ্রতি হয় না। দ্বিতীয় কপি নিরাপত্তার কারণে তৈরি করা হয়, একটি নিজের কাছে রাখা হয়। বর্তমানে প্রেসপ্রতির ফটোকপি রাখা হয়। দ্বিতীয় কপিতে স্বাভাবিকভাবে কিছু সংশোধন ও বৃদ্ধি হয়, তবে মূল কপির গুরুত্ব সবসময় বেশি। তাই মহর্ষি প্রোক্ত, সংশোধিত ও পরিদর্শিত কপিকে রফপ্রতি বলা মহর্ষির অবমাননা। এটিকে মূলপ্রতি বা মূল-হস্তলেখ বলা সম্মানজনক এবং যুক্তিসঙ্গত। রফপ্রতি বলা মানে প্রকাশ পায় যে মহর্ষি ঠিকমতো বলিয়ে লিখতে পারেননি এবং নিজ হাতে দুইবার সংশোধন করার পরও কপিটি শুদ্ধ করতে পারেননি। যারা রফপ্রতি বলেন তারা মহর্ষির অযোগ্যতার প্রচার করেন এবং লিপিকার-গবেষকদের ভুল মহর্ষির উপর চাপাচ্ছেন। মূলপ্রতি অগ্রাহ্য ও অসিদ্ধ বলে যারা দাবি করেন, তারা মহর্ষির প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন, ভক্ত নন, সত্যিকারের অনুসারী নন এবং সত্যিকারের আর্য নন। অন্য মত-সমূহ তাদের প্রিয় ব্যক্তির একেকটি বাক্য পাবে প্রাণ–ধন–শ্রম দিয়ে, কিন্তু এরা সম্পূর্ণ গ্রন্থকে অবমাননা করছেন।
মহর্ষি ভক্তদের জন্য মহর্ষি প্রোক্ত ও মহর্ষি সংশোধিত মূলপ্রতি সবচেয়ে পূণ্য এবং প্রধান ভিত্তিমূলক কপি। এজন্যই পণ্ডিত পণ্ডিত লেখরাম দ্বারা সংশোধিত–সম্পাদিত দ্বিতীয় সংস্করণের পঞ্চম সংস্করণ থেকে উদয়পুর সংস্করণ (২০১০) পর্যন্ত প্রায় সব সম্পাদক সেই কপিকে সংশোধনের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তার পাঠ গ্রহণ করেছেন।
এই হস্তলেখ পরোপকারিণী সভা, আজমের-এর গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত। মুদ্রণপ্রতি তৈরির পর এটি প্রমাণ ও সতর্কতার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছিল। পরোপকারিণী সভা এখন এটিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ল্যামিনেশন কাজ শুরু করেছে।
প্রচেষ্টা এবং সংরক্ষণ কার্যাবলীর জন্য বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
(ক) মুদ্রণপ্রতি — সংশোধনের পরে যখন প্রকাশনার জন্য এটি উপযোগী হয়ে যায়, তখন মহর্ষি প্রেসে পাঠানোর জন্য মূলপ্রতি থেকে দ্বিতীয় হস্তলিখিত কপি তৈরি করান। এটিকে মুদ্রণপ্রতি, প্রেসপ্রতি, দ্বিতীয় হস্তলেখ, বা মুদ্রণহস্তলেখ বলা হয়। এই কপি তৈরি করার সময় লিপিকাররা অপ্রয়োজনীয়ভাবে, ব্যর্থ ও অনাবশ্যক পাঠান্তুর করে মহর্ষির ভাষায় নিজের ভাষার মিশ্রণ যোগ করেছেন। অনেক অংশে ভুল আছে, কিছু অংশ নষ্ট বা দূষিত হয়েছে, এবং নিজের দক্ষতা অনুযায়ী কিছু বানানের ভুল ঠিক করা হয়েছে, তবে অনেক নতুন ভুলও এসেছে। শ্রী মোহনচন্দ্রজি (আজমের)–এর হিসাব অনুযায়ী, মূলপ্রতির তুলনায় এই কপিতে লিপিকাররা প্রায় ১৯০০ পরিবর্তন ও সংযোজন করেছেন।
বাস্তবতা হলো, মহর্ষি প্রচার, বেদভাষ্য এবং অন্যান্য কাজে এত ব্যস্ত থাকার কারণে এবং মূলপ্রতির সঙ্গে মিল না থাকার কারণে, লিপিকাররা যে এত বড় পরিবর্তন করেছেন তার উপলব্ধি মহর্ষির হয়নি। অন্যথায়, কোনও পাঠ পরিবর্তনের স্বাধীনতা এমনই অযোগ্য লেখকদের দেওয়া হতো না। প্রেসে পাঠানোর সময় মহর্ষি এই মুদ্রণপ্রতির ৩৪৪ পৃষ্ঠা পর্যবেক্ষণ করেছেন, তবে মূলত নীতিগত এবং ভাবগত দিক যাচাই করেছেন; ভাষাগত ত্রুটির জন্য তিনি নিজের বেতনভুক্ত গবেষক–সম্পাদকদের উপর নির্ভর করেছেন। তাদের অলসতা ও উদাসীনতার কারণে ভাষাগত ত্রুটি দূর হয়নি, যার ফলে দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)–এ তা প্রকাশিত হয়েছে। মুদ্রণপ্রতিতে প্রায় ৩০০০–৩৫০০টি ত্রুটি রয়েছে।
(খ) কী মুদ্রণপ্রতি মহর্ষি প্রোক্ত? — কিছু পণ্ডিতের ধারণা, মূলপ্রতির মতো মুদ্রণপ্রতিও মহর্ষি বলিয়ে লিখিয়েছেন। যারা এমন দাবি করেন, তারা পাণ্ডুলিপির বিশ্লেষণ করেননি। তাদের neither মহর্ষির লেখন প্রক্রিয়া জানা, না মুদ্রণপ্রতির অন্তর্গত অবস্থা জানা। পূর্বোক্ত ব্যাখ্যায় মুদ্রণপ্রতির প্রকৃত এবং বিকৃত অবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে। মূলপ্রতির ওপর ভিত্তি করে মুদ্রণপ্রতি তৈরির সময় অধিকাংশ বানান ভুলই অমীমাংসিত রয়ে গেছে, যা প্রমাণ করে মূলপ্রতি সামনে রেখে কপি তৈরি করা হয়েছে। বেদমন্ত্র এবং অন্যান্য উদ্ধৃতিও এভাবে ভুল লেখা হয়েছে। মহর্ষি যদি নিজে লিখিয়ে দিতেন, তবে শত শত ভুল উদ্ধৃতি শুদ্ধ করতেন এবং অক্ষর, মাত্রা, শব্দ, বাক্য, অনুচ্ছেদ ও পৃষ্ঠার ত্রুটি রয়ে যেতে দিতেন না। বহু প্রমাণ আছে, যেখানে মুদ্রণলিপিকার ভুল রেখা ছেড়ে পরে লেখা শুরু করেছেন বা পুনরায় লিখতে শুরু করেছেন। কিছু ভুলের প্রতি অবগত হলে কপি সংশোধন করা হয়েছে। মুদ্রণলিপিকার অনেক ত্রুটি ও অযথার্থ পরিবর্তন মহর্ষির ভাষায় করা হয়েছে। কোনো লেখক নিজের ভাষায় এই ধরনের ত্রুটি বা অযথার্থ পরিবর্তন করাতে চান না। পুনরায় লিখিয়ে লেখা হলে সমস্ত ত্রুটি শুদ্ধ করে লিখানো হতো, কিন্তু মুদ্রণপ্রতিতে তা হয়নি।
এ থেকে বোঝা যায়, মহর্ষি এটিকে বলিয়ে লিখাননি, বরং লিপিকাররা মূলপ্রতি সামনে রেখে মুদ্রণপ্রতি তৈরি করেছেন। অবশ্য কিছু ছোটখাটো সংশোধন হতে পারে।
(গ) অল্পপ্রামাণিক কপি — উপরোক্ত কারণে, মুদ্রণপ্রতি সত্যার্থপ্রকাশের মহর্ষি প্রোক্ত বিশুদ্ধ কপি নয়, বরং মিশ্রিত কপি, কারণ এতে লিপিকারদের পরিবর্তিত ও সংযোজিত ভাষা এবং তাদের ত্রুটি মূলপ্রতির ভাষায় মিশ্রিত হয়েছে। সেই অনুযায়ী, এটি মূলপ্রতির তুলনায় অল্পপ্রামাণিক। এতে লিগ্যাল সাইজে মোট ৪৯৮ পৃষ্ঠা রয়েছে, যার মধ্যে পৃষ্ঠা ১–৩৪৪ পর্যন্ত মহর্ষির হাতে সংশোধিত।
(ঘ) অর্ধপ্রামাণিক কপি — সংশোধনের দিক থেকে এটি মহর্ষির হাতে সম্পূর্ণরূপে সংশোধিত নয়, তাই অর্ধপ্রামাণিক হিসেবেও গণ্য। মহর্ষি ২৯ সেপ্টেম্বর ১৮৮৩ তারিখে জোধপুর থেকে মুদ্রণপ্রতির ৩৪৪ পৃষ্ঠা পর্যবেক্ষণ ও সংশোধন করেছেন।
প্রেসে প্রকাশের জন্য ডাকের মাধ্যমে পাঠানোর সময় মহর্ষি অসুস্থ হয়ে যান। একই দিনে, ২৯ সেপ্টেম্বর, মহর্ষিকে বিষ দেওয়া হয় এবং তিনি শয্যাশায়ী হন। এই কারণে মুদ্রণপ্রতির অর্ধেক, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ সমুল্লাস এবং স্বমন্তব্যামন্তব্যপ্রকাশ–এর পর্যবেক্ষণ ও সংশোধন মহর্ষি করতে পারেননি। পরে এই পর্যবেক্ষণ ও সংশোধন পণ্ডিত জ্বালাদত্ত, পণ্ডিত ভীমসেন এবং মুন্সী সমর্থদান করেছেন। এই দিক থেকে এই কপি মূলপ্রতি–এর সমান “পূর্ণ প্রামাণিক” নয়। কেউ যদি এটিকে পূর্ণ প্রামাণিক বলে, তাহলে তিনি মহর্ষি ও লিপিকারদের এক কাতারে তুলছেন। এতে মহর্ষির ভাষা ও সংশোধনের গুরুত্ব কমে যায় এবং এটি মহর্ষির প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা ও ভক্তির প্রকাশ নয়।
(ঘ) তৃতীয় কপি নয় — তথ্যের অভাবে কিছু সম্পাদক ও সমালোচক এই ভুল ধারণা তৈরি করেছেন যে, সত্যার্থপ্রকাশ দ্বিতীয় সংস্করণের একটি তৃতীয় কপিও তৈরি করা হয়েছিল এবং তা প্রকাশের জন্য প্রেসে পাঠানো হয়েছিল, এবং প্রথম মুদ্রণপ্রতি রেকর্ডে রাখা হয়েছিল। এই ধারণা সঠিক নয়। কারণ:
১. মুদ্রণপ্রতি প্রকাশের জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং এটিকে সংশোধন করে ধাপে ধাপে প্রেসে পাঠানো হত।
২. মুদ্রণ পাঠানোর আগে মহর্ষি এই কপিতে সংশোধন করতেন। পৃষ্ঠা ১–৩৪৪ পর্যন্ত তার হাতে সংশোধন আছে।
৩. চিঠিপত্র ইত্যাদিতে যে পৃষ্ঠাসংখ্যা উল্লেখ রয়েছে, তা এই কপির সঙ্গে মিলছে।
৪. প্রকাশের সময় চিহ্ন যা অঙ্কিত হত, তা এই কপির পাতায় পাওয়া যায়; যেমন, কম্পোজিটর একদিনে যতদূর কম্পোজ করতেন, তার পর স্মৃতির জন্য বিশেষ চিহ্ন রাখতেন। এছাড়াও টাইপের কালি লাগানো হস্তচিহ্নও পাওয়া যায়।
৫. প্রকাশিত দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)–এ শুদ্ধ ও অশুদ্ধ বানান এবং বাক্য এই কপির অনুযায়ীই ছাপা হয়েছে।
দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশের পর মুদ্রণপ্রতি রেকর্ডের জন্য পরোপকারিণী সভার গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ করা হয়, যা আজও সংরক্ষিত। পরোপকারিণী সভা এখন এটিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ল্যামিনেশন করিয়েছে।
(ছঃ) সত্যার্থপ্রকাশ (দ্বিতীয় সংস্করণ)–এর রচনাকাল — মহর্ষি দয়ানন্দ ১১ আগস্ট ১৮৮২–এ উদয়পুরে পৌঁছান এবং মহারাণার গুলাববাগের নওলখা মহলে থাকেন। উদয়পুরে পৌঁছানোর আগে মহর্ষি যাত্রাকালে মূলপ্রতি লিখে ফেলেছিলেন এবং তার মুদ্রণপ্রতিও প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। উদয়পুরে পৌঁছানোর ১৭ দিন পর, ২৯ আগস্ট ১৮৮২ (ভাদ্রপদ বদি ১, মঙ্গলবার, সং. ১৯৩৯) মুন্সী সমর্থদানের কাছে পাঠানো চিঠির সাথে মুদ্রণপ্রতির প্রথম ৩৭টি পৃষ্ঠা সংশোধন করে প্রেসে পাঠানো শুরু করেন। মহর্ষির সেই চিঠির অংশ:
“আজ সত্যার্থপ্রকাশ শুদ্ধ করে ৫ পৃষ্ঠা ভূমিকা এবং ৩২ পৃষ্ঠা প্রথম সমুল্লাস পাঠানো হয়েছে, পৌঁছাবে।” (চিঠিপত্র পৃ. ৬০৯, অংশ ২)
সংশোধিত মুদ্রণপ্রতির পাতাগুলি (পৃষ্ঠাসমূহ)–এর বিষয়ে মহর্ষির চিঠিপত্র থেকে জানা যায়:
-
পৃষ্ঠা ৩৩–৫৭ পাঠানো, ১৬ অক্টোবর ১৮৮২ (আশ্বিন সুদী ৪, সোমবার, সং. ১৯৩৯)
-
পৃষ্ঠা ২৭২–৩১৯ (সম্পূর্ণ দ্বাদশ সমুল্লাস) পাঠানো, ১৭ সেপ্টেম্বর ১৮৮৩ (আশ্বিন বদি ১, সং. ১৯৪০)
-
পৃষ্ঠা ৩২০–৩৪৪, ১৩ সমুল্লাসের শুধুমাত্র তৌরেত ও যবূর বিষয়ের পৃষ্ঠা পাঠানো, ২৯ সেপ্টেম্বর ১৮৮৩ (আশ্বিন বদি ৮, সং. ১৯৪০)
-
পৃষ্ঠা ৩৪৫–৪৯৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ১৮৮৩–এ মহর্ষিকে বিষ দেওয়ার কারণে সংশোধন সম্ভব হয়নি। তাই পণ্ডিত যুধিষ্ঠিরজী মীমাংসক যে বলেছেন “১৩তম সমুল্লাস পর্যন্ত প্রেস কপি মহর্ষির নির্বাণের প্রায় ১ মাস আগে পৌঁছেছিল”, তা সঠিক নয়। এই প্রেস কপি কেবল তৌরেত–যবূর বিষয় এবং আয়াত ৬২ পর্যন্ত, অর্থাৎ অর্ধেক ত্রয়োদশ সমুল্লাস পর্যন্ত।
সমুল্লাস পর্যন্তই পাঠানো সম্ভব হয়েছিল।
এতে কোনো সন্দেহ বা বিতর্ক নেই যে, উভয় হস্তলিখিত কপি (ভূমিকা সহ) উদয়পুরে আসার আগে লিখে ফেলা হয়েছিল। কারণ, ভূমিকা গ্রন্থের সম্পূর্ণ হওয়ার পরই লেখা হয়। মহর্ষিও সত্যার্থপ্রকাশের ভূমিকায় ১৪ সমুল্লাস এবং স্বমন্তব্যামন্তব্য লিখিত হওয়ার বিষয় উল্লেখ করেছেন, যা স্পষ্টভাবে দেখায় যে উদয়পুরে আসার আগে উভয় হস্তলিখিত কপি সম্পন্ন ছিল। তাই তিনি ২৯ আগস্ট ১৮৮২–এ ভূমিকার ৫ পৃষ্ঠা এবং প্রথম সমুল্লাসের ৩২ পৃষ্ঠা সংশোধন করে পাঠাতে সক্ষম হন।
দ্বিতীয় বৃহৎ প্রমাণ হলো, মহর্ষি সত্যার্থপ্রকাশ দ্বিতীয় সংস্করণের প্রকাশের সংবাদ ১৮৮১ (সং. ১৯৩৮)–এ সন্ধি বিষয় গ্রন্থের শেষে প্রকাশ করিয়েছিলেন। লেখা ছাড়া এই সংবাদ প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না। তৃতীয় প্রমাণ হলো, উদয়পুরে ১৭ দিনের মধ্যে মূলপ্রতির ৮০৬ পৃষ্ঠা এবং মুদ্রণপ্রতির ৪৫৮ পৃষ্ঠা, মোট ১২৬৪ পৃষ্ঠা কোনো অবস্থাতেই লেখা সম্ভব নয়। চতুর্থ প্রমাণও তুলনামূলকভাবে এই তথ্যের সঠিকতা নিশ্চিত করবে।
১৮৭৫ সালে প্রকাশিত সত্যার্থপ্রকাশের প্রথম সংস্করণ কাশীতে দুই-দুইয়েক মাসে লেখা হয়েছিল, মোট হস্তলিখিত পৃষ্ঠা ১০০৯। তখন মহর্ষি অন্যান্য লেখার কাজ একসাথে করতেন না, শুধুমাত্র উপদেশ দিতেন, তাই যথেষ্ট সময় ছিল। উদয়পুরে থাকাকালীন মহর্ষি বেদভাষ্য করতেন, অন্যান্য গ্রন্থের লেখা চলত, মহারাণাকে পড়াতেন এবং জনসাধারণকে উপদেশ দিতেন। এত ব্যস্ত থাকার সময় ১৭ দিনে ১২৬৪ পৃষ্ঠা লেখা সম্ভব নয়। অতএব, যারা প্রচার করেন যে দ্বিতীয় সংস্করণ উদয়পুরের নওলখা মহলে লেখা হয়েছে, তা ইতিহাস-বিরোধী, মহর্ষির লেখা-বিরোধী এবং বিভ্রান্তিকর। এটি মহর্ষির ইতিহাসকে দূষিত করবে এবং তার লেখা অমিথ্যা প্রমাণিত হবে। উদয়পুরে অবস্থানকালে পূর্বলিখিত মুদ্রণপ্রতির পৃষ্ঠা কেবল প্রকাশের জন্য পাঠানো শুরু হয়েছিল, যা শেষবার জোধপুর থেকে পাঠানো হয়েছিল।
(ই) দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪) — যেমন উপরে উল্লেখ হয়েছে, উদয়পুরে অবস্থানকালে ২৯ আগস্ট ১৮৮২–এ মহর্ষি মুদ্রণপ্রতির প্রথম ৩৭টি পৃষ্ঠা (ভূমিকার ৫ পৃষ্ঠা এবং প্রথম সমুল্লাসের ৩২ পৃষ্ঠা) প্রয়াগের বৈদিক যন্ত্রালয়–এ পাঠান। এটি সত্যার্থপ্রকাশ প্রকাশের প্রক্রিয়ার সূচনা ছিল।
এই পৃষ্ঠা প্রাপ্তি পর মুন্সী সমর্থদান দুটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন:
১. মুদ্রণপ্রতির ভূমিকার শেষে ডানদিকে নিজের হস্তলিখিতে “(স্বামী) দয়ানন্দ সরস্বতী” গ্রন্থকারের নাম লিখেন, এবং বাম পাশে দুই লাইনে লিখেন—প্রথম লাইনে “স্থান মহারাণা জীর উদয়পুর” এবং দ্বিতীয় লাইনে “ভাদ্রপদ… সং. ১৯৩৯”। এখানে স্থান খালি রাখা হয়েছে। যখন ভূমিকার পৃষ্ঠা প্রকাশিত হয়, তখন খালি স্থানে “শুক্লপক্ষ” ছাপা হয়, ফলে সম্পূর্ণ লেখা হয় “ভাদ্রপদ শুক্লপক্ষ সং. ১৯৩৯”।
২. প্রথম আট পৃষ্ঠার ফর্মের প্রথম পৃষ্ঠায় মুন্সী সমর্থদান প্রাথমিক আবেদন ছাপেন, নিচে বাম পাশে লিখেন “আশ্বন কৃষ্ণপক্ষ সং. ১৯৩৯”। অক্টোবর ৮২–এর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রকাশনার খবর পৌঁছায়নি। এটি নির্দেশ করে যে, সম্ভবত নভেম্বরে সত্যার্থপ্রকাশের প্রকাশ শুরু হয়েছিল, যা মহর্ষির মৃত্যু এক বছর দুই মাস পরে, ডিসেম্বর ১৮৮৪–এ সম্পন্ন ও বিক্রয়ের জন্য উপলব্ধ হয়।
প্রকাশে বিলম্বের কারণে দুই বছর তিন মাস লেগেছে। মহর্ষির চিঠিপত্র থেকে জানা যায়, প্রয়াগের বৈদিক যন্ত্রালয়–এ বহিরাগত কাজ অনেক ছিল, যার কারণে বারবার লেখার পরও সত্যার্থপ্রকাশের প্রকাশ শুরু হয়নি। প্রথম ফার্মে ছাপা হয়ে মহর্ষির হাতে ১৯ ডিসেম্বর ১৮৮২–এ পৌঁছায়। এরপর ধীরে ধীরে কাজ চলছিল। মহর্ষি বারবার দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দেন এবং বহিরাগত কাজ বন্ধ করার আদেশ দেন, কিন্তু তা অনুসরণ করা হয়নি। অবশেষে, ৩১ মে ১৮৮৩–এ মহর্ষি একটি চিঠিতে বিলম্বের কারণে মুন্সী সমর্থদানের শাস্তির হুমকি দেন এবং ৭ জুন ১৮৮৩–এর চিঠিতে বাবু বিশ্বেশ্বরসিংহের কাছে রুষ্টি প্রকাশ করেন, তখন কাজের গতি বাড়ে। কয়েক মাস পরে, ৩০ অক্টোবর ১৮৮৩–এ মহর্ষি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর যথেষ্ট সময় ধরে যন্ত্রালয়ের কাজ স্থগিত থাকে।
কাজ থেমে গিয়েছিল। পুনরায় শুরু হওয়ার পর ডিসেম্বর ১৮৮৪–এ সত্যার্থপ্রকাশের প্রকাশ কার্য সম্পূর্ণ হয়। মহর্ষির জীবদ্দশায় এর ১১টি সমুল্লাসই প্রকাশিত হয়েছিল, বাকি অংশ পরবর্তীতে পণ্ডিত ও মুন্সী সমর্থদানের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়। পণ্ডিত (পং. জ্বালাদত্ত ও পং. ভীমসেন শর্মা)–এর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ১২তম সমুল্লাস সত্যার্থপ্রকাশ (১৮৮৪)–এর সবচেয়ে অসঙ্গতিপূর্ণ মুদ্রণ। ১৩তম সমুল্লাসে মুদ্রণলিপিকার চারটি আয়াতখণ্ডকে অন্য আয়াতখণ্ডের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলেন এবং কিছু খণ্ড মূলপ্রতি থেকে অনিচ্ছায় অনুলিপি করতে ভুলে গিয়েছিলেন। এর ফলে মহর্ষি যে সমীক্ষা করা আয়াতগুলো পাঠিয়েছিলেন, সেগুলোর অনেকগুলো প্রকাশিত হয়নি, ফলে মহর্ষির শ্রমসাধ্য ঐতিহাসিক লেখা বৃথা গেছে। ১৪তম সমুল্লাসে যদিও মুদ্রণপ্রতিতে লেখা ছিল, মুন্সী সমর্থদান স্বকল্পিত অনুমান ও পুনরুক্তি ও কৃত্রিম ভাষার ভিত্তিতে ১১টি আয়াতখণ্ডই প্রকাশ করেননি। এইভাবে মহর্ষির অনুপস্থিতিতে তিনি মহর্ষির শ্রমসাধ্য এবং মূল্যবান ঐতিহাসিক লেখা বৃথা করেছেন। মহর্ষি জীবিত থাকলে তা কখনো হতো না। সত্য হলো, মহর্ষি এই সকল আয়াতের পর্যালোচনা প্রকাশের জন্য লিখেছিলেন এবং মুদ্রণপ্রতিতে লেখা সকল সমীক্ষা পাঠানো হয়েছিল। যখন সম্পূর্ণ মুদ্রণপ্রতি প্রকাশের জন্য পাঠানো হয়েছিল, তখন সব আয়াত অবশ্যই প্রকাশিত হওয়া উচিত ছিল; এগুলো প্রকাশ থেকে বিরত রাখার অধিকার মুন্সী সমর্থদানের ছিল না। এই কারণে সত্যার্থপ্রকাশ দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)–এ এই ‘অসম্পূর্ণতা–ত্রুটি’ রয়ে গেছে। (বিস্তারিত বিবরণ পরবর্তী মীমাংসা–অংশ পৃষ্ঠা ১১৩–এ দেখার জন্য রয়েছে)
এছাড়াও, দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)–এর ‘অল্পপ্রামাণিক’ এবং ‘অর্ধ-প্রামাণিক’ হওয়ার এবং সর্বাধিক শুদ্ধ একটি একরূপ সংস্করণের ভিত্তি না হওয়ার অন্যান্য বহু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় কারণ হলো, দ্বিতীয় সংস্করণ সেই “মুদ্রণপ্রতি”–এর ভিত্তিতে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে লিপিকার করা অসঙ্গতিগুলো প্রচুর। মুদ্রণপ্রতির অধিকাংশ ত্রুটি দ্বিতীয় সংস্করণে সংক্রমিত হয়েছে। মুদ্রক ও আদিশোধকদের কারণে বহু নতুন মুদ্রণসংক্রান্ত ও পাঠান্তর সংক্রান্ত ত্রুটি সৃষ্ট হয়েছে। এর ফলে প্রাথমিক তিনটি প্রতির মধ্যে দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪) সবচেয়ে বেশি ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে। এতে বিদ্যমান মোট ত্রুটি প্রায় ৪০০০–৪৫০০। এত ত্রুটিপূর্ণ কোনো গ্রন্থ কখনো প্রধান ভিত্তি হতে পারে না এবং পূর্ণ প্রামাণিক হতে পারে না।
তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো—দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)–এর প্রামাণিকতা সম্পর্কে দুটি বিশেষ যুক্তি দেওয়া হয়, যে এটি মহর্ষি দ্বারা নিরীক্ষিত ও সংশোধিত এবং মহর্ষির জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছে। এই দুটি যুক্তি অর্ধসত্য। যেমন পূর্বের পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, বিষ খাওয়ানোর কারণে মহর্ষি মুদ্রণপ্রতির নিরীক্ষা ও সংশোধন শুধুমাত্র ৩৪৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত করতে পেরেছিলেন, অর্থাৎ ১৩তম সমুল্লাসের অর্ধেক পর্যন্ত, এবং এর বেশি করতে পারেননি। একইভাবে, বিষ খাওয়ানোর কারণে প্রকাশিত সত্যার্থপ্রকাশ দ্বিতীয় সংস্করণের নিরীক্ষা–সংশোধন শুধুমাত্র ৩২০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত সম্ভব হয়েছে। এতে মোট ৫৯২ পৃষ্ঠা হয়েছে। অর্থাৎ প্রকাশিত সত্যার্থপ্রকাশের অর্ধেকই মহর্ষির নিরীক্ষা–সংশোধিত, অর্ধেকই অ-সংশোধিত। মহর্ষিকে বিষ খাওয়ানোর দিন (২৯ সেপ্টেম্বর ১৮৮৩) পর্যন্ত সত্যার্থপ্রকাশের ৩২০ পৃষ্ঠা প্রকাশিত হয়েছে, বাকি অংশ তার নিরীক্ষা ছাড়াই এবং শেষ তিনটি সমুল্লাস মহর্ষির মৃত্যুর পর প্রকাশিত। এইভাবে, মহর্ষির জীবদ্দশায় শুধুমাত্র অর্ধেক সত্যার্থপ্রকাশ প্রকাশিত হয়েছে। এই বিবরণ থেকে স্পষ্ট যে, মহর্ষি দ্বারা অসম্পূর্ণভাবে সংশোধিত মুদ্রণপ্রতি থেকে অসম্পূর্ণভাবে সংশোধিত সত্যার্থপ্রকাশ দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪) প্রকাশিত হয়েছে। মহর্ষির নিরীক্ষা–সংশোধনের দিক থেকে এটি সত্যার্থপ্রকাশ ‘অর্ধ-প্রামাণিক’, এবং এমন সংস্করণ কখনো আগাম শুদ্ধতম একরূপ সংস্করণের “ভিত্তি” হওয়ার প্রধান যোগ্যতা রাখে না।
এই সত্যার্থপ্রকাশ মহর্ষির মৃত্যুর পর শর্মাদ্দয় (পং. জ্বালাদত্ত ও পং. ভীমসেন)–এর তত্ত্বাবধানে ডিসেম্বর ১৮৮৪–এ সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয়। তারা শুরুতে একটি শুদ্ধ-অশুদ্ধি চিঠি সংযুক্ত করেছেন। তাদের কৌশলের সীমা দেখুন—শত শত গুরুতর ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও তারা মাত্র ১৪৭টি ত্রুটিই উল্লেখ করেছেন। যদি তারা তখনই সমস্ত ত্রুটি উল্লেখ করতেন, পরবর্তি সংস্করণে ত্রুটি নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকত না।
লিপিকার ও আদিশোধকদের অযোগ্যতা, লাপরবাদী, নিষ্ঠাহীনতা এবং কৌশলের কারণে সৃষ্ট ত্রুটি এবং তাদের সম্পূর্ণ সংশোধন না করায় উদ্ভূত সমস্যা শুদ্ধ না করার খারাপ পরিণতি হলো, আজও একশো বছরেরও বেশি সময় পার হওয়া সত্ত্বেও, একশোর বেশি সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার পরেও, এবং ত্রিশেরও বেশি আর্য সম্পাদক দ্বারা সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার পরেও সত্যার্থপ্রকাশের সবচেয়ে বিশুদ্ধ সংস্করণ পাঠকদের কাছে পৌঁছায়নি। এর সংশোধনের প্রক্রিয়া আজও চলমান। পরোপকারিণী সভা এটি আইনগতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় আজ প্রতিটি ব্যক্তি নিজের ইচ্ছামতো পরিবর্তন করে প্রকাশ করছে। আজ যতগুলো প্রকাশনা/সংস্করণ আছে, ততগুলোই স্বাধীন সত্যার্থপ্রকাশ; কোনো সংস্করণই একে অপরের সঙ্গে মিল রাখে না, এমনকি এক প্রকাশকের সমস্ত সংস্করণও একই পাঠ বহন করে না। এ থেকে বড় দুর্ভাগ্যপূর্ণ অবস্থা কোনো ধর্মগ্রন্থের, বিশেষত ধর্মগ্রন্থের ক্ষেত্রে, কল্পনাও করা যায় না। আমাদের জন্য, আর্যদের জন্য, প্রতিটি বিতর্ককে অগ্রাহ্য করে এটি গভীরভাবে চিন্তা করার বিষয়।
এই অবস্থার প্রমাণ মিলছে এই সত্য থেকেই যে, ১৮৮৪ সালে প্রথমবার প্রকাশিত হওয়ার পর দ্বিতীয় সংস্করণটি শুধুমাত্র এক প্রকাশক দ্বারা, তা-ও সামান্য সংশোধনের সঙ্গে, একবার প্রকাশিত হওয়ার পর কেউ পুনরায় মূলরূপে প্রকাশ করেনি। কেউ কেউ শুধুমাত্র দ্বিতীয় সংস্করণের নাম নেন, কিন্তু তার আড়ালে হাজার হাজার যথেষ্ট সংশোধনের সঙ্গে নিজের সংস্করণ প্রকাশ করে জনগণের সামনে দ্বিতীয় সংস্করণ হওয়ার মিথ্যা বক্তব্য দেন। বাস্তবতা হলো, তারা সত্যার্থপ্রকাশের সত্যতা ও উপকারিতা অগ্রাহ্য করে চলেছেন। আর্যসমাজে জন্ম নেওয়া স্বার্থপর ও লোভী রাজনীতি এই “দ্বিতীয় সংস্করণ” নামকে তাদের মিথ্যা অহংকার, ব্যক্তিগত খ্যাতি ও দুরুগ্রহের প্রতীক বানিয়ে দিয়েছে। তাদের জন্য সত্যার্থপ্রকাশের উপকার ও মহর্ষির সন্মান গৌণ হয়ে গেছে।
৩. সত্যার্থপ্রকাশের রেজিস্ট্রি এবং স্বত্বাধিকার
সত্যার্থপ্রকাশ দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)–এর প্রকাশের পর পরোপকারিণী সভার নামে এর রেজিস্ট্রেশন দুইবার সম্পন্ন হয়েছে। এর নির্দেশক নিম্নলিখিত বাক্যটি এর শিরোনাম এবং মুখপাতায় দুটি স্থানে পাওয়া যায়—
/‘সর্বথা রাজনিয়মে নিয়োজিত:’/ (দৃষ্টব্য, গবেষণা সংখ্যা পৃ. ৪)
অর্থাৎ, এটি রাজনিয়মের অধীনে নিবন্ধিত। এই অধিকারকে আজ ‘স্বত্বাধিকার’ ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে লেখা হয়। মহর্ষি ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৩–এ পরোপকারিণী সভা প্রতিষ্ঠা করে তা উদয়পুর শাসনে নিবন্ধিত করেন। এতে মহর্ষি তার সমস্ত সম্পদ—পুস্তক, বস্ত্র, ধন, প্রশাসন ইত্যাদি—‘উত্তরাধিকার’ হিসেবে পরোপকারিণী সভাকে প্রদান করেন এবং এটিকে তার ‘স্থানাপনন’ ঘোষণা করেন। উক্ত দুটি রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ‘পरोপকারিণী সভা’ আইনগতভাবে সমস্ত গ্রন্থের কপিরাইটের অধিকার লাভ করে। সেই সময়ের কপিরাইট অধীনে পরোপকারিণী সভার তিনটি অধিকার ছিল—
১. সত্যার্থপ্রকাশের পূর্ণ স্বত্বাধিকার পরোপকারিণী সভার। এটি সম্পর্কিত যেকোনো সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র সভাই নিতে পারে। অন্য কেউ নিতে পারবে না। সত্যার্থপ্রকাশ পরোপকারিণী সভার সম্পত্তি।
২. পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত পরোপকারিণী সভার বাইরে অন্য কেউ সত্যার্থপ্রকাশ প্রকাশ করতে পারবে না।
৩. পঞ্চাশ বছর পর অন্য প্রকাশক সত্যার্থপ্রকাশ প্রকাশ করতে পারলেও, তাকে পরোপকারিণী সভার পূর্ব অনুমতি নিতে হবে এবং সভা কর্তৃক অনুমোদিত সংস্করণে কোনো ধরনের পরিবর্তন/সংযোজন/সংশোধন করতে পারবে না।
এটি সকলের জানা সত্য যে, এই অধিকার থাকার কারণে প্রথম পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত অন্য কেউ সত্যার্থপ্রকাশ প্রকাশ করতে পারেনি। এই সময়ের মধ্যে সমস্ত সংশোধন পরোপকারিণী সভা দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে এবং সেই সংশোধিত সংস্করণই প্রকাশিত হয়েছে।
১. মূলপ্রতি, মুদ্রণপ্রতি, দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)–এর বিস্তারিত অভ্যন্তরীণ বিবরণ পূর্ববর্তী অধ্যায় ও চতুর্থ অধ্যায়ে প্রমাণসহ দেখার জন্য রয়েছে।
পরোপকারিণী সভার উদারতা এবং তার ক্ষতিকর প্রভাব
পঞ্চাশ বছরের “কপিরাইট” অধিকার শেষ হওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রকাশকরা সত্যার্থপ্রকাশ ছাপা শুরু করেন এবং এতে তারা স্বতঃসিদ্ধভাবে পরিবর্তন, সংযোজন ও সংশোধনও করেন। তখনকার পরোপকারিণী সভার কর্মকর্তারা এই কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করেননি, ধারণা ছিল যতটা ছাপা হবে ততটাই সত্যার্থপ্রকাশের প্রচার হবে। প্রচার হয়েছে, কিন্তু স্বতন্ত্র সংশোধনের কারণে পাঠান্তুর হয়েছে। আজও এটি হচ্ছে, ফলে প্রতিটি সংস্করণ একে অপরের থেকে ভিন্ন হয়ে গেছে। নিয়ন্ত্রণ না রাখার আরও একটি ক্ষতিকর প্রভাব হলো, আজ প্রতিটি ব্যক্তি নিজেরাই প্রকাশনা ও সংশোধনের অধিকার ভাবছেন এবং উল্টো পরোপকারিণী সভাকে নির্দেশ দিতে শুরু করেছেন। যারা সত্যার্থপ্রকাশের ওপর কোনো অধিকার রাখে না, তারা কুন্ডলী মেরে বসে থাকেন এবং পরোপকারিণী সভার দিকে ফুঁফুকতে থাকেন।
মহর্ষি শুধুমাত্র পরোপকারিণী সভাকে প্রদত্ত অধিকার ছাড়িয়ে যাওয়ার চরম উদাহরণ এবং দৃষ্টান্ত কিছু সংস্করণে দেখা যায়, যেখানে তারা নিজেরা প্রকাশিত সংস্করণে “স্বত্বাধিকার”, “সর্বাধিকার সংরক্ষিত” এর মতো বাক্যও লিখিয়েছেন। এটি পরোপকারিণী সভার অতিরিক্ত উদারতার ক্ষতিকর ফল। সভা এই উক্তি ভুলে গেছে—“অতি সর্বত্র বর্জয়েত”। তাই লোকেরা তাদের বৈধ সীমা ভুলে “উল্টো-চোর কতোয়ালকে ডাঁটছে” পরিস্থিতি তৈরি করছে।
তৃতীয় ও চতুর্থ সংস্করণের পরিবর্তন
| সংস্করণ | উদাহরণ | মূল পাঠ | তৃতীয়/চতুর্থ সংস্করণ পাঠ | মন্তব্য |
|---|---|---|---|---|
| তৃতীয় সংস্করণ | ১ | “व्यासमुनिकृत शारीरक सूत्र है” (১৯/১) | “व्यासमुनिकृत শারীরिक सूत्र है” (১৩৯/৭) | অসঙ্গত পরিবর্তন |
| ২ | “अथवा द्वेत से रहित है'' (২৪/৪) | “अथवा द्वেত इससे जो रहित है'' (৪৯/৪) | অস্পষ্ট সংশোধন | |
| ৩ | “(प्राण) भीतर से वायु को निकालना” | “(प्राण) बाहर से वायु को भीतर लेना” (৬০/৮, ১৯৩/২৩) | অসঙ্গত পরিবর্তন, ১৬ তম সংস্করণে সংশোধিত | |
| ৪ | “क्या जिसके माता-पिता ब्रাহ्मण हों वह” (৮৫/২৮) | “क्या जिसकी माता ब्रাহ্মণী पिता ब्रাহ্মণ हो वह ब्रাহ্মণ होता है'' (১৫৯/৫) | অস্পষ্ট সংশোধন, ৩৩ পর্যন্ত প্রয়োগ | |
| চতুর্থ সংস্করণ | ১ | “यद्यपि जो बारहवें समुल्लास में --'' (৫/২৬) | “जो বারোতম সমুল্লাসে चारবাকের মত --'' (১২/৮) | ভুল/হটানো |
| ২ | “चारवाक का जो मत है वह बौद्ध और --'' (৫/৩০) | “चारवाक का जो मत है वह तथा बौদ্ধ এবং जैन का মত” (১২/১২) | অসঙ্গত সংযোজন | |
| ৩ | “कर्मों की समाप्तियों को, हाथी, घোड़े आदि के उचित ही किया है। वाहनों को, नियत लाभ और खरच” (১৭৫/২৬) | “कর্মों की समाप्तियों को, हाथी, घোड़े आदि के उचित ही किया, वाहनों को, नियত लाभ ও খরচ আকারে ঠিক করা হয়েছে।” | ভুল/সংশোধন প্রয়োগ |
পঞ্চম থেকে জন্ম-শতাব্দী সংস্করণের পরিবর্তন
| সংস্করণ | উদাহরণ | মূল পাঠ | সংশোধিত/পরবর্তি সংস্করণ পাঠ | মন্তব্য |
|---|---|---|---|---|
| তৃতীয় সংস্করণ | ৩ | “इनका विशेष मत पर विचार बारहवें --” (৬/২৫) | “इके मत पर विशेष विचार बारहवें --” (১৪/১১) | সঠিক সংশোধন, সমুল্লাসে গ্রহণ |
| ৪ | “ऋग्वेद का वचन है'' (২১২/২৯) | পাঠ মুছে ফেলা (৩৮২/২) | অনুচিত বাদ | |
| ৭ | “नहीं तू परन्तु आदमी मानन्द हमारी '' (৫৬১/২৭) | “नहीं तू आदमी मानन्द हमारी '' (১০১১/১) | ‘परन्तु’ বাদ দেওয়া অনুচিত | |
| পঞ্চম সংস্করণ | ১ | “सत्यार्थ का प्रकाश करके मुझ वा सब --” (৮/ध৩) | “सत्यार्थ का प्रकाश करना मेरा वा सब --” (১৭৪১) | যথাযথ সংশোধন |
| ২ | “गायत्री मन्त्र का उच्चारण.....परन्तु --” (৪১/১৮) | “गायत्री मन्त्र का उच्चारण....परन्तु --” (৮৭/৩) | শুদ্ধ করা হয়েছে | |
| ৩ | “सालम मिश्री डालके गर्भस्नान करके जो --” (৯৪/৩) | “সালম মিশ্রী डालके गर्म करके जो --” (১৭৪/৩) | হাস্যরসপূর্ণ পাঠ সংশোধন | |
| ৪ | “जंबूद्वीप....एक लाख योजन अर्थात् --” (৪২২/১৩) | “एक अरब कोश का है” (৭৯৫৫২) | যথাযথ সংশোধন | |
| ৭৫ | “दिगम्बरों का श्वेताम्बरों के साथ इतना ही --” (৪৪৭/২০) | “... बातों से मोक्ष को प्राप्त होते हैं।” (৭৭৮/১) | যথাযথ সংশোধন | |
| নবম সংস্করণ | ১ | “देवेन्द्रस्तवन सूत्र” (৬/২১) | “देवेन्द्रस्तमन सूत्र” (১৪/৭) | অসঙ্গত সংশোধন |
| ২ | “दूसरे मतस्थ को '' (৭/৪) | “और दूसरे मतस्थ को '' (১৪/১৯) | ‘और’ অপ্রয়োজনীয় সংযোজন | |
| একাদশ সংস্করণ | ১ | “लूटमार करने से ऐशवर्य प्राप्त होगा” (৫৩২/১৭) | “लूटमार कराने से ऐवर्य प्राप्त होगा” (৯৬৩/১৫) | অসঙ্গত সংশোধন |
| ২ | “और न अन्यायकारी होने से यह खुदा 33सं० ही हो सकता है।'' (৫৬৩/৬) | “और न न्यायकारी होने से यह खुदा ১০১৩/১” | অসম্পূর্ণ পাঠ | |
| ষোড়শ সংস্করণ | ১ | “किसी कारण से वर-कन्या का इच्छापूर्वक --” (৯২/২১) | “किसी कारण से दोनों की इच्छापूर्वक वर-कन्या का परস্পর संयोग होना गांधर्व।” (১৭২/৩) | মূলপ্রতি অনুযায়ী সংশোধন |
| ২ | “पश्चात् दूसरे शुद्ध कोठरी वा जहां --” (৯৪/৩০) | “पश्चात् दूसरे शुद्ध कोठरी वा कमरे में वायु शुद्ध हो” (১৭৫/১৭) | মূলপ্রতি অনুযায়ী সংশোধন | |
| ৩ | “प्राण-अपान” | তৃতীয় সংস্করণে বিপরীতার্থক, পুনঃ শুদ্ধ করা হয়েছে | মূলপ্রতি অনুযায়ী সংশোধন | |
| ৪ | “क्योंकि प्रलय में जगत् प्रसिद्ध नहीं था” (২১২/২৫) | “क्योंकि सृष्टि की आदि अर्थात् प्रलय में जगत् प्रसिद्ध नहीं था” (৩৮১/২০) | মূলপ্রতি অনুযায়ী সংশোধন | |
| ৫ | “ब्राह्ममाज और प्रार्थनासमाज” (৩৭৪/১৬) | “अब ब्रাহ्मसमाज और प्रार्थनासमाज” (৬৯৭/৩) | মূলপ্রতি অনুযায়ী শিরোনাম সংশোধন |
২৬তম থেকে ৩৬তম সংস্করণের পরিবর্তন
| সংস্করণ | উদাহরণ | মূল পাঠ | সংশোধিত/পরবর্তি সংস্করণ পাঠ | মন্তব্য |
|---|---|---|---|---|
| ২৬তম সংস্করণ | - | চতুর্দশ সমুল্লাসের আয়ত-পাঠ এবং উদ্ধৃতির সংখ্যা | পং০ মহেশপ্রসাদ জি মৌলভী ‘আলিম ফাজিল’ দ্বারা কুরআন অনুযায়ী শুদ্ধ করা | দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে অসঙ্গতিপূর্ণ ছাপ |
| ২৭তম সংস্করণ | - | ২৬তম সংস্করণের শুদ্ধি | পুনরায় শুদ্ধ করা হয়েছে | আগের অসঙ্গতি দূর হয়েছে |
| ৩১তম সংস্করণ | ১ | “विद्वान् लोग इस्लाम के मजहब को प्रसन्न --” (৫৪৫/৮) | “विद्वान् लोग इस्लाम के मजहब को --इस सं० में ' पसन्द ' ऋषिनहीं करते।” (৯৮৬/১০) | বিরোধপূর্ণ পরিবর্তন |
| ২ | “गरीबों के प्राण लेना ही लाभ समझा” (৫৫০/২৪) | “गरीबों के प्राण लेना ही काम समझा” (৯৯০৫/১৪) | অসঙ্গত পরিবর্তন | |
| ৩ | “परीक्षा लेवे तुमको, कौन तुममें से -- अच्छा है” (৫৫১/২৩) | “परीक्षा लेवे तुमसे कौन तुममें से -- अच्छा है” (৯৯৭/৪) | অপ্রয়োজনীয় পরিবর্তন | |
| ৩২তম সংস্করণ | - | কিছু অংশে লিখিত যেমন পৃষ্ঠা ৫০: “সম্ভব है पहले अष्टाध्यायी शलोकबद्ध हो।” | সংশোধন পং০ ভদ্রসেন জি দ্বারা | শ্লোক শব্দের ব্যবহার প্রাচীন পদ্ধতি অনুযায়ী, সম্পাদকীয় ত্রুটি |
| ৩৪তম সংস্করণ | ১ | “मुद्रणलिपिकर के प्रमाद से त्रुटित यह पाठ...” (১৮/২৬) | “यद्वा ब्रह्म जलम् - सब सुखों का देनेवाला है।” (৩৮/১৪) | মূলপ্রতি অনুযায়ী গ্রহণ |
| ২ | “द्वेत से रहित है” (২৪/৪) | “द्वैत जो इनसे रहित है।” (৪৯/৪) | অসঙ্গত পরিবর্তন | |
| ৩ | “किसी को अभिमान न चाहिये।” (৩৫/২৪) | “किसी को अभिमान करना योग्य नहीं, क्योंकि अहंकार लक्ष्मी का নाश कर देता है।” (৭৪/৩) | লিপিকার ত্রুটি সংশোধন | |
| ৪ | “प्रत्यक्ष से घट सकते ईश्वर की सिद्धि” (১৯০/১) | “प्रत्यक्ष से ईश्वर की सिद्धि नहीं होती।” (৩৩৯/৯) | দ্বিতীয় সংস্করণে অসঙ্গতি সংশোধন | |
| ৭ | “अब थोड़ा सा विशेष रामस्नेही के -- मत विषय में लिखते हैं।” (৩৫৯/৬) | “अब थोड़ा सा विशेष रामस्नेही के -- मूलপ্রতি থেকে গবেষণা” (৬৭২/৪) | মূলপ্রতি থেকে শুদ্ধি | |
| ৩৬তম সংস্করণ | ৬ | “गण्यन्ते ये ते गुणा वा यैर्गणयन्ति --” | “गुण্যन्ते ये ते गुणा वा यैर्गुणयन्ति' '” (২৪) (৪৯/৯) | সঠিক শোধন |
পরোপকারিণী সভার ৩৭, ৩৮, ৩৯তম সংস্করণ (মূলপ্রতি সংস্করণ)
দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪) প্রকাশিত হওয়ার পরই তাতে বিদ্যমান অসঙ্গতি, ত্রুটিপূর্ণ পাঠ, ভুল উদ্ধৃতি ইত্যাদির অভিযোগ পরোপকারিণী সভার কাছে আসতে শুরু করে এবং আজও আসছে। এর প্রমাণ হিসেবে রয়েছে বৈদিক যন্ত্রালয়ের ম্যানেজার শ্রী শিবদয়াল সিংহের ১২.২.১৮৮৯ তারিখের চিঠি, যেখানে তিনি পং০ লেখরাম জি কর্তৃক অসঙ্গতিগুলি জানানো হয়েছে তা উল্লেখ করেছেন। এই বিবরণ থেকে জানা যায় যে, ২ থেকে ৩৬তম সংস্করণ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি সংস্করণে পরোপকারিণী সভার সংশোধন ঘটেছে। স্বাধীনভাবে সম্পাদিত সমস্ত সংস্করণে হাজার হাজার সংশোধন করা হয়েছে। এর দুষ্পরিণাম হলো যে, প্রতিটি সত্যার্থপ্রকাশ একে অপরের থেকে ভিন্ন হয়ে গেছে এবং এক প্রকাশকের সব সংস্করণও একে অপরের সাথে মিলে যায় না। পরোপকারিণী সভা, যথাসময়ে তার ‘কপি রাইট’ অধিকার ব্যবহার না করার কারণে, সত্যার্থপ্রকাশের সংশোধন ও পাঠান্তর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
১৯৯২ সালে সত্যার্থপ্রকাশের ৩৭তম সংস্করণ প্রকাশ করা হয় এই অরাজকতা রোধের উদ্দেশ্যে। এ সংস্করণে সম্পাদনার নীতি ছিল যে, মহর্ষিপ্রকৃত এবং মহর্ষিলিখিত ‘মূলপ্রতি’কে প্রধান ভিত্তি হিসেবে ধরা হবে, মুদ্রণপ্রতিতে পাওয়া ঋষি-হস্তলিখিত পাঠ এবং দ্বিতীয় সংস্করণে পাওয়া পাঠ-সংশোধন, পাঠ-পরিবর্তন ও পরিবর্ধন গ্রহণ করে একটি ‘ঋষিপ্রকৃত এবং ঋষিলিখিত’ সংস্করণ প্রকাশ করা হবে। ভাষাগত অসঙ্গতিগুলি সংশোধন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন পাঠ বৃহৎ বন্ধনীতে যত্রতত্র রয়েছে, যা নগণ্য। হিন্দিতে যার অর্থ সত্যার্থপ্রকাশে পাওয়া যায় কিন্তু মূল সংস্কৃত উদ্ধৃতিটি নেই, তা মূল উদ্ধৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে এতে কোনো মৌলিক, তাত্ত্বিক বা ভাবগত পার্থক্য নেই; সাধারণ শব্দগত পার্থক্য আছে এবং সেগুলি দ্বিতীয় সংস্করণে মহর্ষির চাকর, লিপিকার ও গবেষকের দ্বারা অনাবশ্যক ও অসঙ্গতিপূর্ণভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। পরোপকারিণী সভার বিশ্বাস ছিল যে, ঋষিপ্রকৃত ও ঋষিলিখিত সত্যার্থপ্রকাশই পাঠান্তর রোধের একমাত্র সমাধান এবং কোনো সত্য আর্য এ অস্বীকার বা বিরোধ করবে না।
পরবর্তীতে পরোপকারিণী সভা হতবাক হয় যখন নিজেদেরকে আর্য বলেও দাবি করা কিছু ব্যক্তি ও একটি আর্যন্যাস ঋষিপ্রকৃত ও ঋষিলিখিত পাঠের সুপরিকল্পিত ও প্রায়োজিত বিরোধ করে। তারা এর বিরুদ্ধে প্রবন্ধ লিখেছে, বৈঠক করেছে, বই প্রকাশ করেছে, পণ্ডিতদের লবিং করেছে, এমনকি বিতণ্ডা, প্রচারণা ও কূটনীতি করেছে। আশ্চর্যের বিষয়, তারা মহর্ষিলিখিত পাঠকে উপেক্ষা করে তাদের চাকরের ভাষাকে প্রাধান্য দিয়েছে। বিশ্বাস করা কঠিন যে, নিজেকে মহর্ষির অনুগামী বা ভক্ত বলা কেউ তাঁর ভাষার প্রতি এতই অসম্মান প্রদর্শন করতে পারে। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, এটি ঘটেছে এবং তাদের দৃষ্টান্ত দেখুন, তারপরও তারা নিজেদেরকে “ঋষিভক্ত” বলার ক্ষেত্রে সংকোচ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, এই বিরোধ ৩৭তম সংস্করণের বিরুদ্ধে নয়, বরং মহর্ষি দয়ানন্দের বিরুদ্ধে ছিল, কারণ ৩৭, ৩৮, ৩৯তম সংস্করণের ভাষা সম্পূর্ণ মহর্ষির নিজের, যিনি তা সংশোধন করেছেন; এতে সম্পাদক বা প্রকাশকের ভাষার অবদান নগণ্য। সুতরাং সরাসরি এটি ঋষির বিরোধ।
যদি শব্দান্তরের মাধ্যমে করা বিরোধের কথা বলা হয়, তবে মূলপ্রতি সংস্করণ ও দ্বিতীয় সংস্করণের মধ্যে যত শব্দান্তর আছে, তার চেয়ে এক প্রকাশকের দ্বিতীয় সংস্করণের মধ্যে অন্য প্রকাশকের দ্বিতীয় সংস্করণের তুলনায় অনেক বেশি শব্দান্তর আছে। কিন্তু ‘দ্বিতীয় সংস্করণ’ নামে কিছু ব্যক্তিরা সেই শব্দান্তরের বিরোধ করেন না। দ্বিতীয় সংস্করণের তুলনায় উদয়পুর ন্যাসের প্রকাশিত ‘উদয়পুর সংস্করণ’ (২০১০)-এও অনেক বেশি শব্দান্তর আছে, তবে বহু বছর পুরানো বিরোধের চশমা তাদের চোখে থাকায় তারা তা দেখতে পায় না, শুধু মূলপ্রতি সংস্করণই দেখতে পায়।
এই অধ্যায়ের শেষে প্রদর্শিত অসঙ্গতির তুলনামূলক তালিকা থেকে স্পষ্ট হয় যে, যারা দ্বিতীয় সংস্করণের প্রকাশ ত্যাগ করে মূলপ্রতি সংস্করণ (৩৭-৩৯) প্রকাশ করার কারণে পরোপকারিণী সভার সমালোচনা করে, তাদের দাবী ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক। কারণ, উভয় সংস্করণে কোনো মৌলিক বা তাত্ত্বিক পার্থক্য নেই, কেবল শব্দগত পার্থক্য আছে। মূলপ্রতি সংস্করণে শব্দান্তর-পাঠান্তরের সংখ্যা ১৫০০–২০০০, আর দ্বিতীয় সংস্করণে ২৫০০–৩০০০। উপরন্তু, মূলপ্রতি সংস্করণের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি ঋষিপ্রকৃত ও ঋষিলিখিত। দ্বিতীয় সংস্করণে এই বৈশিষ্ট্য নেই। এই পরিস্থিতিতে মূলপ্রতি সংস্করণের বিরোধের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
পর্যাপ্ত সংশোধনের পরও ৩৭তম সংস্করণে কিছু লিপিকার-সৃষ্ট ভাষাগত অসঙ্গতি রয়ে গেছে; এগুলি ক্রমশ ৩৮তম ও ৩৯তম সংস্করণে সংশোধন করা হয়েছে। তারপরও কিছু অসঙ্গতি এখনও সংশোধনের অপেক্ষায় আছে। যা অসঙ্গতি মুদ্রণপ্রতি ও দ্বিতীয় সংস্করণে সংশোধিত হয়েছে এবং মূলপ্রতি অনুযায়ী প্রকাশিত হয়েছে, তা মূলপ্রতি সংস্করণে রয়ে গেছে; তারও সংশোধন প্রয়োজন। সম্পাদনার নীতি অনুসারে কিছু পাঠও অসঙ্গত হয়েছে, যেগুলির সংশোধন প্রয়োজন (অসঙ্গতির বিবরণ “সমীক্ষা অংশ” পৃঃ ৫২-এ দেখুন)।
উপসংহার: পরোপকারিণী সভার প্রকাশিত ২ থেকে ৩৯তম সংস্করণের প্রদর্শিত বিবরণ থেকে আমরা উপসংহার টানতে পারি যে, সত্যার্থপ্রকাশে লিপিকার ও গবেষকের দ্বারা সৃষ্টি বহু অসঙ্গতি বিদ্যমান। ক্রমাগত প্রতিটি সংস্করণে তার সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ঘটানো হয়েছে, যার কারণে পাঠান্তরের ফলে প্রতিটি সংস্করণ একে অপরের থেকে ভিন্ন হয়েছে।
স্বতন্ত্র সংস্করণ ও সমালোচক পর্যবেক্ষণ
এপর্যন্ত পরোপকারিণী সভা দ্বারা প্রকাশিত সংস্করণগুলির তথ্য প্রদান করা হয়েছে। এখন স্বতন্ত্রভাবে প্রকাশিত সংস্করণ এবং সত্যার্থপ্রকাশের প্রধান সমালোচকদের পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হলো। পরোপকারিণী সভার “কপি রাইট” অধিকার শেষ হওয়ার পর স্বাধীন আর্য সম্পাদক-প্রকাশকরা তাদের-তাদের সংস্করণ প্রকাশ করেন এবং তাতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ইচ্ছামতো সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেন। এই প্রক্রিয়া আজও চলমান। তার মধ্যে কয়েকটি প্রধান সংস্করণ নিম্নরূপ:
১৫. গোবিন্দরাম হাসানন্দ সংস্করণ
পরোপকারিণী সভার “কপি রাইট” অধিকার শেষ হতেই প্রথম প্রকাশিত সংস্করণ হলো “গোবিন্দরাম হাসানন্দ, নতুন রাস্তা, নতুন দিল্লি”, ১৯২৩ (সংবৎ ১৯৮১)-এ। এই সংস্করণের সম্পাদক ছিলেন পং০ জয়দেব জি বিদ্যালঙ্কার। তিনি এতে পাঠ-সংশোধনের পাশাপাশি শুরুতে বিস্তৃত বিষয়সূচি এবং শেষে প্রমাণসূচিও সংযোজন করেছিলেন। পরবর্তী সংস্করণে এই উপকারী তালিকাগুলি বাদ দেওয়া হয়। পং০ জি এই সংস্করণে ভাষাগত অনেক সংশোধনও করেছেন।
তিনি ‘আর্য সাহিত্য মণ্ডল, আজমের’ থেকে প্রকাশিত তৃতীয় সংস্করণও সম্পাদনা করেছিলেন। এতে দীর্ঘ অনুচ্ছেদগুলোকে ছোট রেফারেন্সে পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন এই সংস্করণের প্রকাশ আর হচ্ছে না।
১৬. স্বামী বেদানন্দ জি সরস্বতী দ্বারা সম্পাদিত সংস্করণ
পরোপকারিণী সভার “কপি রাইট” অধিকার শেষ হওয়ার পর ১৯৫৬ (সংवत ২০১৩)-এ প্রকাশিত স্থূলাক্ষর সত্যার্থপ্রকাশে স্বামী বেদানন্দ জি সরস্বতী ভাষা-সংশোধন, পাঠনির্ধারণ এবং মন্তব্যে প্রচুর পরিশ্রম করেছেন, যা প্রশংসনীয়। কিন্তু তাদের স্বতঃসিদ্ধ ভাষা-পরিবর্তন কিছু সমালোচকের পছন্দ হয়নি। পরিবর্তিত স্থানের মন্তব্যে পরিচয় না দেওয়ায় পাঠক জানেন না কোন ভাষা ঋষির এবং কোনটি স্বামী জি-র। কিছু সমালোচক এ বিষয়টি অতিমাত্রায় তুলে ধরে স্বামী জি-র মহান ঐতিহাসিক পরিশ্রমকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন।
ত্রুটিপূর্ণ সংশোধন বাদে স্বামী জি-র পরিশ্রম অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাদের মন্তব্য ও বিশ্লেষণ এক প্রকার ঐতিহ্য, যা সংরক্ষিত হওয়া উচিত। উত্তরার্ধে করা পরিশ্রম অনন্য। স্বামী জি-র সম্পাদিত সত্যার্থপ্রকাশ একটি ‘মাইলফলক’, যা পরবর্তী সম্পাদক, গবেষক ও পাঠককে দিকনির্দেশ করবে। পরবর্তী পং০ যুধিষ্ঠির জি মীমাংশক, পং০ ভাগবদ্দত্ত জি, শ্রী জগদেবসিংহ জি সিদ্দান্তী, স্বামী বিদ্যানন্দ জি সরস্বতী, উদয়পুর সংস্করণ ইত্যাদি তাদের সংস্করণ থেকে যথেষ্ট উপকৃত হয়েছে।
স্বামী জি-র সংশোধনের মোট সংখ্যা ২০০০–৩০০০ পর্যন্ত। তাঁর সমগ্র সংশোধন স্বচিন্তন ও স্ববিবেকের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। মূলপ্রতি ও মুদ্রণপ্রতি সম্পর্কে তাদের জ্ঞান ছিল না। তারা সময়ের সংস্করণ দেখে এবং উদ্ধৃতিগুলি মূল গ্রন্থের সাথে মিলিয়ে পাঠের শুদ্ধতা নির্ধারণ করেছেন। অবশিষ্ট অসঙ্গতির সংশোধন পরে আচার্য উদয়বীর জি শাস্ত্রী করেছেন।
কিছু বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয়:
(অ) অষ্টম সমুল্লাসে নব নাস্তিক মতের পূর্বপক্ষের স্থাপনার পর তারা নিরীক্ষণ করেছেন। নবম মতের জন্য স্থাপনাপ্রক সূত্র অনুপস্থিত। স্বামী বেদানন্দ জি মনে করেছিলেন এটি গ্রন্থকার বা লিপিকার ভুল হয়েছে এবং “ন্যায়দর্শন” সূত্র উদ্ধৃত করেছেন, যা সম্পূর্ণ অসঙ্গত। পরবর্তীতে পং০ ভাগবদ্দত্ত, শ্রী জগদেবসিংহ সিদ্দান্তী, পং০ যুধিষ্ঠির মীমাংশক, স্বামী বিদ্যানন্দ সরস্বতী এবং উদয়পুর সংস্করণের প্রধান সম্পাদক পং০ বিশুদ্ধানন্দ মিশ্রও এটি অনুবর্তীভাবে গ্রহণ করেছেন।
(আ) নবম সমুল্লাসের শুরুতে স্বামী বেদানন্দ জি “ অবিদ্যা কা লক্ষণঃ-- অনিত্যাশুচি....” পাঠকে ক্রমবিরোধী বা স্থানভ্রষ্ট বলে ধরে পরবর্তী পৃঃ ২১২-এ “অবিদ্যাউসমিতারাগদ্বেষ....” সূত্রের আগে রাখার মন্তব্য করেছেন। এই মন্তব্যের সাথে সহমত হওয়া যায় না।
(ই) পৃষ্ঠাঃ ৪৯৭-এ ‘((7প্রশা)জ্ঞান’ নামক একটি বই উদ্ধৃত করে তিনি সমর্থন করেছেন যে, ক্রুশে উত্তোলনের পর ঈসা মসীহ মারা যাননি, বরং তাদের মঠের শ্বেতবস্ত্রধারী সাধু নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করে সুস্থ করেছেন। এই বক্তব্য বাইবেলের বর্ণনার বিপরীত।
সত্যার্থপ্রকাশের স্বতন্ত্র সংস্করণ ও সম্পাদনা: বিস্তারিত পর্যালোচনা
(ঈসা সম্পর্কিত বিবরণ)
সরাসরি লেখা আছে ‘ঈসা চিৎকার করে বড় কষ্টে প্রাণ ত্যাগ করেছেন, তার জন্য কবর তৈরি করা হয়েছে, সেখানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে,’ ইত্যাদি (মত্তি ২৬, ২৮; গবেষণা সংঃ পৃঃ ৯১৪, ৯১৫)।
(ई) বহু স্থানে স্বামী জি-র সংস্করণে অসঙ্গত পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে এবং অনেক স্থানে পাঠ ত্রুটিপূর্ণ। যেমন—
-
“বিভবচলক নিকালেগা'' (গবেষণা সংঃ ৮৮০)
-
“ঈসা হী অদ্বিতীয় ঈশ্বর কহাতা হ্যায়'' (গবেষণা সংঃ ৯১৭)
-
“তুঝকো আলবত্তা দেখ সকেগা'' (গবেষণা সংঃ ৯৮৮)
-
“উন লোগোং কী ওর সে হুই জো উস কাউম সে হোভেন'' (গবেষণা সংঃ ৯৮০)
-
“ঈশ্বর কে সামর্থ্য কী সাফলতা সৃষ্টি করনে মেং হ্যায় অর জীবোং কে কর্মোং কা যথাভত ভোগ করনা আদি ভী'' (গবেষণা সংঃ ১০৪৮)
(उ) মূলপ্রতি না দেখার কারণে স্বামী বেদানন্দ জি এবং তাদের অনুসারী সংস্করণে অনেক অযুক্তিযুক্ত ও দূষিত পাঠ বিদ্যমান রয়ে গেছে। যেমন—
মূলপ্রতি: 'ভালা, এক মিয়ান-এ দুই তরবারি কি কখনও থাকতে পারে?'
মুদ্রণকালীন হিন্দি অনুবাদ (পং০ জ্বালাদত্ত শর্মা): 'ভালা, এক ঘরে দুই তরবারি....।'
স্বামী বেদানন্দ জি-ও অসঙ্গত পাঠ গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে প্রায় সবাই পুনরায় মূলপ্রতি অনুযায়ী “মিয়ান” ব্যবহার গ্রহণ করেছেন।
(ऊ) স্বামী বেদানন্দ জি-র উদ্ধৃতিপাঠ-নির্ধারণেও কিছু ভুল রয়েছে। যেমন—
সত্যার্থপ্রকাশে দুই স্থানে অথর্ববেদে লেখা আছে:
-
"আচার্য উপনয়মানো ব্রহ্মচারিণম ইচ্ছতে"
অথর্ববেদে পাঠ: “কৃণুতে” (অথর্ব ১১.৫.৩)
স্বামী জি দুটি উদ্ধৃতিতে পাঠান্তার ও প্রমাণসংখ্যা বৃথা বৃদ্ধি করেছেন: -
"আচার্যো ব্রহ্মচার্যেণ ব্রহ্মচারিণম ইচ্ছতে" (সমু. ১০, পৃ. ৪৮২)
-
"আচার্য উপনয়মানো ব্রহ্মচারিণং কৃণুতে গর্ভমন্তঃ" (সমু. ১১, পৃ. ৫৯২)
এখানে একটি সংশোধিত প্রমাণই রাখা উচিত ছিল।
(ए) তার সংস্করণে ত্রুটিপূর্ণ পাঠের অন্যান্য উদাহরণ গবেষণা সংস্করণে প্রাসঙ্গিকভাবে দেখা যাবে।
(ऊ) তার সংস্করণে বানান-সম্পর্কিত অসঙ্গতি জন্য মীমাংশা ভাগ: পৃ. ১১৭ দেখুন।
১৭. শ্রী জগদেবসিংহ জি সিদ্দান্তী সম্পাদিত সংস্করণ
১৯৬৯ সালে প্রকাশিত এই স্থূলাক্ষর সত্যার্থপ্রকাশ প্রায় স্বামী বেদানন্দ জি-র মূলপাঠের অনুসরণে সম্পাদিত। এজন্য প্রায় সমস্ত ত্রুটি এবং ত্রুটিপূর্ণ পাঠ একই রয়েছে। প্রায় ৫০–১০০ স্থানে তিনি স্বাধীন পরিবর্তন করেছেন। মন্তব্য নগণ্য। পাঠভেদ পৃথক নির্দেশ না থাকায় সংশোধন ও ঋষি ভাষার মিশ্রণ দেখা যায়। পরিবর্তন-সংশোধনের সংখ্যা প্রায় ২৫০০–৩০০০।
১৮. পং০ ভাগবদ্দত্ত জি সম্পাদিত সংস্করণ
পং০ ভাগবদ্দত্ত জি দুইবার সম্পাদনা করেছেন: একবার পরোপকারিণী সভায় ১৬তম সংস্করণ এবং পুনরায় ১৯৬২ (সংवत ২০১৯) সালে স্বাধীন সম্পাদনা। প্রকাশনা: “গোবিন্দরাম হাসানন্দ, দিল্লি”।
-
সংস্করণে উল্লেখযোগ্য তথ্য সীমিত।
-
অনুচ্ছেদ বিভাজন ও বড় বন্ধনীর মধ্যে ক্রমসংখ্যা দেওয়া অনাবশ্যক।
-
অনেক ভাষাগত অসঙ্গতি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
-
দ্বিতীয় সংস্করণে গ্রন্থকার কর্তৃক লিপিকার-গবেষকদের দায়িত্ব উল্লেখিত হয়েছে, কিন্তু এটি লক্ষ্য করা হয়নি।
ত্রুটিপূর্ণ পাঠের উদাহরণ (মূলপ্রতি বনাম পং০ ভাগবদ্দত্ত)
| মূলপ্রতি পাঠ | পৃষ্ঠা | পং০ ভাগবদ্দত্ত পাঠ | পৃষ্ঠা |
|---|---|---|---|
| अब कुछ संदेह न रहा कि ईसाइयों का ईश्वर | ৮৮৬/৭ | अब कुछ संदेह न रहा कि ईसाइयों का ईश्वर मनुष्यवत् देहধारी नहीं है। | ৫২৫/২৬ |
| खून बहा उन लोगों की ओर साई हुईं (या सौंपी हुई) | ৯৮০/১৭ | खून बहा उन लोगों की ओर से हुई जो उस कौम से होवें | ৫৮০/২৫ |
| बस, नियत किया उसको सात आसमान, बीच दो | ১০২৪/১২ | बस नियत किया उनको साथ आसमान, बीच দুই দিন | ৬১১/৭ |
| पढ़ते हैं फ़रिश्ते और रूह তर्फ़ उसकी..... | ১৯০৩৫//৭ | চড়তে हैं फ़रিশ्ते এবং রূহ তার দিকে..... | ৬১৭/২৬ |
(इ) কখনও কখনও পং০ জি পাঠনির্ধারণে বিচলিত হয়েছেন। যেমন—
“পৃথিবী ভারী হওয়ার কারণে নিচে নেমে যায়।” (গবেষণা সংঃ ৪১৫)
পং০ জি পরিবর্তন করেছেন: “পৃথিবী ভারহীন হওয়ায় নিচে নেমে যায়।” (ভদ্., পৃ. ২৩২)
বৈজ্ঞানিকভাবে ভারী বস্তু নিচে যায় এবং ভারহীন উপরে ওঠে।
(ई) অন্য একটি স্থানে পং০ জি পাঠনির্ধারণে বিভ্রান্ত হয়ে পাঠটি অসম্পূর্ণ হয়েছে:
“বৈল.....উপকারী হয় এবং গরু দুধে বেশি উপকারী, কিন্তু যেভাবে বৈল উপকারী হয়, সেইভাবে [গরু] বেঁসেও” (ভদ., পৃ. ২৭৬; গবেষণা সংঃ ৪৯৭–৪৯৮)
এই বাক্য কোনভাবে শুদ্ধ নয়।
(उ) ত্রুটিপূর্ণ পাঠের আরও অনেক উদাহরণ গবেষণা সংস্করণে প্রাসঙ্গিকভাবে আছে।
সংক্ষিপ্ত তথ্য
পং০ ভাগবদ্দত্ত জি-র মোট সংশোধন প্রায় ১৫০০–২০০০। তারা অনুচ্ছেদ সংখ্যা যোগ করলে মোট পরিবর্তন-সংশোধন প্রায় ৪০০০।
১৯. আর্ষ সাহিত্য প্রচার ট্রাস্ট-এর সংস্করণ—ক্রমশ সত্যার্থ প্রকাশের বিভিন্ন সংস্করণ প্রকাশিত হতে লাগল এবং তাতে যথেষ্ট পরিবর্তন করা হতে লাগল, তখন এই বিষয়কে কেন্দ্র করে আর্যসমাজে দুইটি পক্ষ তৈরি হল—
১. সংশোধনবাদী এবং
২. সংশোধনবিরোধী।
এদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক-সংলাপ চলল। আচার্য রাজেন্দ্রনাথজী শাস্ত্রী (সন্ন্যাস নাম—স্বামী সচ্চিদানন্দজি যোগী)–র আবেগপূর্ণ প্রেরণায় ঋষিভক্ত লালা দীনচন্দ ভাবলেন—কেন না দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪) যথাযথভাবে পুনঃপ্রকাশ করা হয়, তাহলে সব বিতর্কের অবসান হবে। ১৮৮৪ সালের পরে প্রথমবার অক্টোবর ১৯৬৭ সালে তিনি (কিছু সংশোধনসহ) তার ‘ফটোপ্রতি সংস্করণ’ প্রকাশ করলেন।
কিন্তু আবেগে প্রকাশিত সেই সংস্করণের প্রতিক্রিয়া পেয়ে তিনি বাস্তবতা বুঝলেন—এটি তো সর্বাধিক ত্রুটিপূর্ণ সংস্করণ, এতে বিতর্ক কমেনি, বরং আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সমাধান তো হলই না, বরং নতুন বহু প্রশ্ন সৃষ্টি হল। লালা জির এই প্রকাশনা প্রথম এবং শেষ হয়ে রইল। এর বাইরে ১৮৮৪ সালের পরে আজ পর্যন্ত সেই সংস্করণ কেউ যথাযথভাবে ছাপেনি। এটাই দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)–র কঠিন সত্য।
আর্ষ সাহিত্য প্রচার ট্রাস্ট, দিল্লি এরপর পরোপকারিণী সভার সংস্করণের ভিত্তিতে এবং নিজস্ব সংশোধিত সত্যার্থপ্রকাশ প্রকাশ করতে থাকে। এই ট্রাস্ট খরচমূল্যে ঋষিগ্রন্থ প্রকাশ ও বিতরণকারী সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। তারা আজ পর্যন্ত সত্যার্থপ্রকাশের প্রায় একশো সংস্করণ প্রকাশ করেছে। যদি বলা হয়—বিশ্বে সকল হিন্দি প্রকাশকের প্রকাশিত সত্যার্থপ্রকাশ একদিকে রাখা হয় এবং অপরদিকে ট্রাস্টের প্রকাশিত সংখ্যা রাখা হয়, তাহলে ট্রাস্টের প্রকাশনা সংখ্যা তার থেকেও অধিক হবে।
ট্রাস্ট সময়ে সময়ে নিজেদের সংস্করণে সংশোধন এনেছে এবং দ্বিতীয় সংস্করণের বহু ত্রুটিপূর্ণ পাঠ মূলপ্রতি অনুসারে গ্রহণ করেছে। কোথাও স্ববিবেচনায় পাঠ পূরণও করেছে। এই সাহিত্যপ্রচার কাজ বর্তমানে লালা দীনচন্দের পুত্র শ্রী ধর্মপাল আর্যের ব্যবস্থাপনায় চলছে এবং ট্রাস্টের প্রধান বৈদিক বিদ্বান আচার্য রাজবীরজি শাস্ত্রী। যারা একসময় সত্যার্থপ্রকাশে সংশোধনের প্রবল বিরোধী ছিলেন, সেই শাস্ত্রীজির সম্মতিতে শুধু ট্রাস্টের সত্যার্থপ্রকাশে শত শত পরিবর্তনই হয়নি, বরং ‘উদয়পুর সংস্করণ’ (২০১০)-এও সংশোধন হয়েছে যেখানে তিনি সম্পাদনা কমিটির সদস্য ছিলেন। কয়েক বছরের মধ্যেই শাস্ত্রীজির চিন্তায় এমন ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে যে পণ্ডিত যুধিষ্ঠিরজী মীমাংসকের যেসব সংশোধনের একসময় তিনি কঠোর বিরোধিতা করেছিলেন, এখন তার অনেকগুলো তিনি উদয়পুর সংস্করণ ও ট্রাস্ট সংস্করণে গ্রহণ করেছেন। শাস্ত্রীজির এই ‘হৃদয়-পরিবর্তন’ সংশোধনবিরোধী আবেগপ্রবণ মানুষদের জন্য শিক্ষণীয় হওয়া উচিত। স্পষ্ট হল—আবেগ ‘ভক্তি’ নয়।
২০. পণ্ডিত যুধিষ্ঠিরজী মীমাংসক কর্তৃক সম্পাদিত সংস্করণ—পণ্ডিত যুধিষ্ঠিরজী মীমাংসক যথেষ্ট শ্রম দিয়ে সত্যার্থপ্রকাশ সম্পাদনা করেন যা ‘শতাব্দী সংস্করণ’ নামে ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়। এতে তিনি মন্তব্যে ত্রুটিপূর্ণ পাঠ, পাঠভেদ, প্রস্তাবিত পাঠ, ভুল, জ্ঞানসমৃদ্ধ তথ্যে পাণ্ডিত্যপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন। প্রস্তাবিত বৃহৎ বন্ধনীযুক্ত পাঠভেদ ছাড়াও কিছু ভুল তিনি মূল পাঠেও সংশোধন করেছেন, আর কিছু কেবল মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন।
এই পদ্ধতিতে পাঠকদের জন্য তার শ্রমের উপযোগিতা কমে গেছে, কারণ মূলপাঠ তো ভুলের জায়গায় ভুলই থেকে গেল। মন্তব্যে উল্লেখ করলেই বা লাভ কী? কেউ যদি সত্যার্থপ্রকাশ থেকে উদ্ধৃতি নেয়, তাহলে তো সে ভুল মূলপাঠই গ্রহণ করবে, মন্তব্য তো কেউ সাথে রাখে না। মন্তব্য তাহলে পণ্ডিতজির সংস্করণেই পরে থাকবে।
এ যেন চিকিৎসক রোগ নির্ণয় করলেন কিন্তু চিকিৎসা করলেন না—তাহলে সেই রোগ তো জ্যোতিষ্কই রইল। ওষুধ না দিলে চিকিৎসা অর্থহীন। এই কারণেই পণ্ডিতজির বহু শ্রম বৃথা গেল। তবে তার অধিকাংশ পরিবর্তন ও সংশোধন যুক্তিগ্রাহ্য।
পণ্ডিতজির সংস্করণ একটি দুঃখজনক পরিস্থিতির কারণে পূর্ণ শুদ্ধ, বা সম্পূর্ণ প্রামাণিক হতে পারেনি। তিনি সেই সময়ে যেসব সংস্করণ পাওয়া যায় সেগুলিকে ভিত্তি করে পাঠ নির্ধারণ করেছিলেন, কিন্তু মূলপ্রতি ও মুদ্রণপ্রতি তিনি যাচাই করতে পারেননি। কারণ—তিনি পরোপকারিণী সভার গ্রন্থাগার থেকে নোট নিতেন, আর তার প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ এক আর্যবিদ্বান পণ্ডিত বিশ্বশ্রবা জি তার বিরুদ্ধে সভার কর্তাদের উদ্দেশ্যে কুৎসা করেন। ফলে তাকে গ্রন্থাগারে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
এই কারণে তিনি মূলপ্রতি ও মুদ্রণপ্রতি থেকে পাঠ মিলিয়ে নিতে পারেননি এবং নিজের সংস্করণে সে সুবিধা কাজে লাগাতে পারেননি। ৩২ বছর পর তিনি পুনরায় পরোপকারিণী সভার গ্রন্থাগারে প্রবেশাধিকার পান—যখন ড. ধর্মবীরজি সভার মন্ত্রী ছিলেন। পণ্ডিতজী নিজে ড. ধর্মবীরজিকে এ কথা জানান, এবং ড. ধর্মবীরজি তা তাঁর এক নিবন্ধে লিখেছেন।
পণ্ডিতজির সম্পাদনা শৈলী নিয়ে সময়ে সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি মন্তব্যে সত্যার্থপ্রকাশ (দ্বিতীয় সংস্করণ)-এর ৮৫০-এরও বেশি পাঠকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন—এর মধ্যে কিছু সংশোধন তিনি মূলপাঠে করেছেন, আবার কিছু ভুল অবস্থাতেই রেখেছেন এবং কেবল মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন। এই পরস্পরবিরোধী পদ্ধতির কারণ জানা যায়নি।
অন্যদিকে আরও একটি বিপরীত শৈলী দেখা যায়—তিনি নিজের পক্ষ থেকে প্রায় ২০০০ উপশিরোনাম বৃহৎ কোষ্ঠকে সরাসরি মূলপাঠে যোগ করেছেন। এর ফলে সমগ্র সত্যার্থপ্রকাশের রূপ বিকৃত হয়েছে। তার ব্যবহার করা শৈলী মূলগ্রন্থকারের শৈলী নয়। এই পরিবর্তনটি উপকারীও নয়, কাম্যও নয়।
তবে কিছু ত্রুটি ও ভুল মন্তব্য বাদ দিলে তার শ্রম মূল্যবান—বিশেষত অপরপাঠ তুলে ধরায় এবং গবেষণামূলক মন্তব্যে। এই গবেষণা সংস্করণেও তার সংস্করণ থেকে নির্দেশ ও সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়েছে। উদয়পুর তহবিলের সংস্করণে তার প্রায় ৭০০ সংশোধন গ্রহণ করা হয়েছে।
সত্যার্থপ্রকাশের ইতিহাসে পণ্ডিতজির গবেষণা অবশ্যই স্মরণীয় থাকবে। সংশোধন তো বহু সম্পাদকই করেছেন, কিন্তু তিনিই প্রথম সম্পাদক যিনি পরিষ্কার ভাষায় মন্তব্যে সত্যার্থপ্রকাশে ত্রুটি থাকার কথা সাহসিকতার সাথে লিখেছেন।
ঋষি-উচ্চারিত মূলপ্রতি পাঠকের সামনে আসার পর তার বহু অনুমানভিত্তিক মন্তব্য অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছে—যেমন ‘জপ জন্ম থেকে করা উচিত’—এই পাঠের পক্ষে মন্তব্য (শতাব্দী সংস্করণ পৃ.৭৩, গবেষণা সংস্করণ পৃ.৮৭)।
পংঃজীর সংশোধন পদ্ধতি অনেক স্থানে আপত্তিকর, আবার কিছু স্থানে তাদের সংস্করণে হাস্যকর ভুলও আছে। এত সুপ্রতিষ্ঠিত ও বিশিষ্ট পণ্ডিতের সংস্করণে এসব ভুল কীভাবে ঘটল বোঝা যায় না। পাঠকের বিভ্রান্তি দূর করার জন্য কিছু উদাহরণ দেখুন—
(অ) হিন্দি-উর্দুর সাধারণ জ্ঞানও জানে যে 'दरिंदे' শব্দের অর্থ 'মাংসবক্ষণকারী হিংস্র জন্তু'—কিন্তু পংঃজি একটি অসঙ্গত মন্তব্য দিয়ে লিখেছেন—“दरंदे अर्थात् दरिंदे-पक्षी।” (পৃঃ ৮৭৯)। জানা নেই পংঃজি কীভাবে এই হাস্যকর অর্থ লিখে ফেললেন!
(আ) বাইবেলের একজন ব্যক্তির নাম আছে—'आरामी लाबन'। তিনি ইজরায়েল অঞ্চলের 'আড়াম বা আরাম' দেশের বاسی; তাই তাঁকে 'আরামী/আরামি' অর্থাৎ 'আরাম দেশ-বাসীর' বিশেষণ লেখা হয়; যেমন দিল্লিভাসীকে 'দেহলভী', হরিয়ানাবাসীকে 'হরিয়ানভী', গুজরাতবাসীকে 'গুজরাটি' বলা হয়। পংঃজী এইটি হাস্যকরভাবে ব্যাখ্যা করে মন্তব্য করেছেন—“आरामी — 'आराम करने वाला/शোने वाला'” (পৃঃ ৭৬৯)। আয়াতে এই অর্থের কোনো প্রসঙ্গই নেই। এই ঐতিহাসিক ভুলটি অত্যন্ত কটূভাবে লাগছে।
(৩) স্বামী বেদানন্দজীর অনুকরণে, অষ্টম সমুল্লাসে নবম নাস্তিক মতের স্থাপনায় যে বিপরীতার্থক ন্যায়সূত্র “न स्वभावसिद्ध्रिरापेक्षिकत्वात्” যোগ করা হয়েছিল—এই ভুলের স্বীকারোক্তি পংঃজি নিজে পরিশিষ্টে লিখে রেখেছেন—“এই সূত্রের এখানে কোনো ব্যাপ্তি নেই। এই ভুল স্বামী বেদানন্দজীর সংস্করণের কারণে হয়েছে।” (পৃঃ ৯৭১)
(ই) কুরআনের হিন্দি অনুবাদে ব্যবহৃত 'वही' শব্দটি আরবি শব্দ 'वहय্/বইহ'-এর ভিন্ন উচ্চারণ; এটি একটি পারিভাষিক শব্দ যার অর্থ—'আল্লাহর পক্ষ থেকে হৃদয়ে প্রাপ্ত নির্দেশ বা অনুপ্রেরণা'। পংঃজি এ বিষয়ে একটি অসঙ্গত মন্তব্য করেছেন—“वही → 'বই-পুস্তক'” (পৃঃ ৮৮১)। আরবি শব্দটির সাথে 'পুস্তক' অর্থের কোনো সম্পর্ক নেই। হয়েছে। ভাষাবিদরা ‘বহী’ অপভ্রংশ শব্দটির মূল “বদ্ধদ্বিতা বা বদ্ধা” সংস্কৃত শব্দকে মেনে নিয়েছেন, যা গ্রহণযোগ্যও।
(ঊ) জৈনদের মুক্তিস্থানে বর্ণিত ‘সিদ্ধশিলা’র মাপে ‘পোলী’ শব্দটি পড়ে পণ্ডিতজী এটিকে হিন্দির শব্দ ভেবে নিলেন, যার অর্থ ‘ফাঁপা’। বাস্তবে এটি গুজরাটির শব্দ—“পোলী → পোহলী”, যার অর্থ “চওড়া”। জৈনগ্রন্থ ‘রত্নসার’-এর এটি উদ্ধৃতি এবং সেখানে গুজরাটি ব্যবহার রয়েছে। প্রমাণের জন্য “প্রকরণরত্নाकर”-এর উদ্ধৃতি দ্রষ্টব্য—“লম্বে পর এবং পোলপনে ৪৫ লাখ যোজন প্রমাণ আছে” (শোধসং. পৃ. ৮৩৫)। পণ্ডিতজী এই ভ্রান্তির ভিত্তিতে মন্তব্য লিখে দিলেন—“৮ যোজন মোটা শিলা ৪৫ লাখ যোজন পোলী কেমন করে হতে পারে?” (যুমি সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৭৩২ এবং শোধসংস্করণ ৭৮৫)। পণ্ডিতজী এখানে গভীরভাবে চিন্তা করেননি।
(এ) পণ্ডিতজী সত্যার্থপ্রকাশের মূলপাঠে অর্ধ-ডজনেরও বেশি স্থানে ঋষি-নির্ধারিত পাঠক্রম নিজ মনমতো বদলে দিয়েছেন, যার মধ্যে অনেক পরিবর্তন ভুল প্রমাণিত হয়েছে (দ্রষ্টব্য—মীমাংসক সং. পৃ. ৩৮১, ৬৪৩–৬৪৪, ৮২৪/১৫ ইত্যাদি এবং ক্রমান্বয়ে শোধসংস্করণ পৃ. ৪৫১, ৭৪৮, ৯২৪ ইত্যাদি)।
(ঐ) পণ্ডিতজী সত্যার্থপ্রকাশে পাওয়া শত শত অপবর্ণনী শুদ্ধ করেছেন এবং মন্তব্যে সেগুলোকে ভুল বলেছেন। জানা যায় না কেন, পণ্ডিতজী কিছু ভুল শব্দরূপে অটকে থাকলেন এবং সেগুলোই গ্রহণ করলেন, যদিও এটি প্রমাণিত যে ভাষাগত এসব ভুল লিপিকারের অদক্ষতার ফলে ঘটেছে। “তুহমারা, তুহমারে, তুহমারী” এই ধরনের লিপিকারজনিত ভুল, যেগুলো পণ্ডিতজী অপরিবর্তিত রেখেছেন, অথচ তাঁরই সংস্করণে এবং পান্ডুলিপিগুলোতে “তুমহারা” ইত্যাদির শুদ্ধ রূপও পাওয়া যায়। (যুমি, পৃ. ৫৯, ৭৯৭ ইত্যাদি)।
(ও) একইভাবে হিন্দিতে ‘হঠানা’ ক্রিয়া “হটানা”-র অর্থে স্বীকৃত নয়, বরং “হঠ করা” অর্থে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এটিও শুদ্ধ বানান হিসেবে গ্রহণ করা উচিত ছিল না। পণ্ডিতজীর সংস্করণে পাওয়া বানানসংক্রান্ত বিশৃঙ্খলার উদাহরণ “মীমাংসা ভাগ”-এ পৃ. ১১৭-এ দ্রষ্টব্য।
(ঔ) পণ্ডিতজী বহু ভুল পাঠ সংশোধন করেছেন, কিন্তু কিছু আবার ভুলভাবেই গ্রহণ করেছেন, যেমন—“মার ডালা অউর বাদ মে উসে ছিপা দিয়া” (শোধসংস্করণ ৮৭৪), “বিভব চলক নিবলেগা” (শোধসংস্করণ ৮৮০), “ঈসাইয়োং কা ঈশ্বর দেহধারী নহीं” (শোধসংস্করণ ৮৮৬), “যব দো কে পুত্র” (শোধসংস্করণ ৯১০), “উন লোগোঁ কি অোর সে হুই যা উস কওম সে হোবে” (শোধসংস্করণ ৯৮০), “ভেজ দেন হাম এবাব” (শোধসংস্করণ ১০১৪), “নিয়ত কিয়া উনকো সাথ আসমান” (শোধসংস্করণ ১০২৪) ইত্যাদি। অন্যান্য ভুল পাঠের পর্যালোচনা প্রসঙ্গ অনুযায়ী দ্রষ্টব্য।
(অং) পান্ডুলিপির সাথে তুলনা করতে না পারার কারণে পণ্ডিতজীর পাঠ-নির্ধারণে যে ভুলগুলো রয়ে গেছে, তার একটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো। এই পাঠটি পণ্ডিত ভগবদ্দত্তজী এবং পরোপকারিণী সভার ৩৪তম সংস্করণে সংশোধিত হয়, কিন্তু পণ্ডিতজীর মনোযোগে শুদ্ধ পাঠ বসেনি এবং তিনি ভুল পাঠ গ্রহণ করে মন্তব্যে টানাটানি করে তার অর্থও লিখলেন। এই একই ভুল দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪), স্বামী বেদানন্দজী ও সিদ্ধান্তীজীর সংস্করণেও রয়েছে। ভুলটি হলো—
মুদ্রণপ্রতিতে সূত্রার্থের পাঠ ঠিক ছিল—“ঈশ্বর কি সিদ্ধি নহीं হোতি॥ ১॥ কিউংকি জব উসকি সিদ্ধি মে প্রত্যক্ষ হী নহीं তো অনুমানাদি প্রমাণ নহीं॥ ২॥” (দ্বিপ্র. পৃ. ১৯০)
এই পাঠে ‘ঈশ্বর’ শব্দের আগে ত্রুটির চিহ্ন দিয়ে প্রথম লাইনের পাশে বামদিকে মহর্ষি লিখলেন—“প্রত্যক্ষ সে”—এভাবে নতুন পাঠ যোগ করলেন। একইভাবে দ্বিতীয় লাইনে “প্রমাণ নহीं”-এর পরে ত্রুটির চিহ্ন দিয়ে “ঘট সকতে”—নতুন পাঠ যোগ করলেন। দ্বিতীয় সংস্করণের ছাপার সময় কম্পোজিটর ওপর-নিচে লেখা কথাগুলো ভুল করে এক বাক্য বানিয়ে দিল—“প্রত্যক্ষ সে ঘট সকতে ঈশ্বর কি”—এই ভুল পাঠ পরোপকারিণীর ৩৩তম সংস্করণে এবং পরবর্তী সম্পাদকদের সংস্করণে চলে এলো। পণ্ডিত মীমাংসকজীর সামনে শুদ্ধ–অশুদ্ধ দুটো পাঠই ছিল, এবং বাক্যগঠনও ভ্রান্ত ছিল, তবুও তিনি ভুল পাঠই গ্রহণ করলেন (যুমি, পৃ. ২৯২)। শুদ্ধ পাঠ হলো—“প্রত্যক্ষ সে ঈশ্বর কি সিদ্ধি নহीं হোতি॥ ১॥ কিউংকি জব উসকি সিদ্ধি মে প্রত্যক্ষ হী নহीं তো অনুমানাদি প্রমাণ নহीं ঘট সকতে॥ ২॥” (শোধসংস্করণ পৃ. ৩৩৯)। পণ্ডিতজী দ্বারা গৃহীত বাক্যাংশের কোনো অর্থই হয় না, তবুও তিনি টেনে-টেনে নতুন অর্থ দিয়ে দিলেন। যেমন কম্পোজিটরের ভুল ছাপা বাক্য প্রামাণিক হয়ে গেল, তেমনি লিপিকারজনিত ভুলও প্রামাণিক ধরা হচ্ছে।
(অঃ) সমুল্লাস ১১-এ মূলপ্রতিতে শুদ্ধ পাঠ রয়েছে—“খাখী লকড়ে কি লড়োলী লাগা ধূনি তাপতে।” মুদ্রণপ্রতি তৈরি করার সময় মুদ্রণলিপিকার নিজের মতো করে “লড়োলী”-কে বদলে “লংগোটি” বানিয়ে দিল। সব সংস্করণে এবং দুই হস্তলিপিতে একই পাঠ রয়েছে। পণ্ডিতজীর মনে কী এলো জানা নেই, তিনি এই শুদ্ধ পাঠ বদলে এভাবে ভুল করে দিলেন—“খাখী লংগোটি লাগা লকড়ে কি ধূনি তাপতে।” শুধু তাই নয়, প্রচলিত পাঠের বিষয়ে মন্তব্যও লিখলেন—“সব সংস্করণে তা ভুল পাঠ।” (যুমি, পৃষ্ঠা ৫৫৭)
প্রথম সংস্করণ (১৮৭৫)-এও এই প্রসঙ্গ আসে, সেখান থেকে নিশ্চিত হয় যে মহর্ষির প্রচলিত পাঠটিই শুদ্ধ। সেখানে এটি আরও স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে—“খাখী লগ ভস্ম লাগা লেতে, জটা বঢ়া লেতে অউর কাঠ কি কোপীন ধারন কর লেতে হ্যায়ং।” (চতুর্থ সমুল্লাস, পৃ. ১২৫)
উল্লেখযোগ্যভাবে এখানে বলা দরকার যে মূলপ্রতিতে থাকা “লড়োলি” ব্যবহারটি “লংগোটি”-র তুলনায় যথাযথ। সাধারণভাবে দুটোকেই “লংগোটি” বলা হয়, কিন্তু “লংগোটি” কাপড়ের হয় এবং “লড়োলি” কাঠের সিপি সদৃশ খাঁজ, যেটি দড়ি বা কাপড়ের সাহায্যে খাঁখিরা পরিধান করে।
(অ-অ) সমুল্লাস ৩-এ, “পরিত্যাগযোগ্য গ্রন্থ” প্রসঙ্গে, দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)-এর ভুল পাঠ পণ্ডিতজী গ্রহণ করেন—“স্মৃতিওं মে এক মনুস্মৃতি, ইসমে ভী প্রক্শিপ্ত লোক [অউর] অন্ন সব স্মৃতি।” প্রসঙ্গ অনুযায়ী এর অর্থ দাঁড়াল—“স্মৃতিগুলোর মধ্যে মনুস্মৃতিও পরিত্যাগযোগ্য।” পণ্ডিতজী মন্তব্যে এই পাঠের কিছুমাত্র সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কিন্তু তা মন্তব্যে হওয়ায় অকার্যকর। এখানে মূলপ্রতির পাঠই শুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য (শোধসংস্করণ পৃ. ১৩৪)।
পণ্ডিতজীর অন্যান্য অগ্রহণযোগ্য মন্তব্যের পর্যালোচনা গ্রন্থে যথাস্থানে দ্রষ্টব্য। পণ্ডিতজী তাঁর সংস্করণে সত্যার্থপ্রকাশের মূলভাষায় ভাষাগত সংশোধন করেছেন, মন্তব্যে ভুল পাঠও উল্লেখ করেছেন, বৃহৎ বন্ধনীতে পরিবর্তিত পাঠ দিয়েছেন, তাঁর তরফ থেকে প্রায় ২০০০-টি নতুন উপশিরোনামও বৃহৎ বন্ধনীতে যুক্ত করেছেন। যদি তাঁর সংস্করণের সব পরিবর্তন–সংযোজন–সংশোধন গণনা করা হয়, তবে তা প্রায় ৪০০০–৪৫০০-র মতো দাঁড়ায়।
২৯. স্বামী বিদ্যানন্দজি সারস্বতী দ্বারা সম্পাদিত সত্যার্থপ্রকাশ— (১৯৯৩ সালে দুই ভাগে প্রকাশিত সত্যার্থভাস্কর–এর সম্পাদক এবং মন্তব্য সংকলনকারী স্বামী বিদ্যানন্দজি সারস্বতী। এর মূল পাঠ পণ্ডিত মীমাংসকজীর সংস্করণের অনুসরণে, এতটাই যে প্রায় সমস্ত ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ পাঠও মীমাংসকজীর সংস্করণের মতোই। স্বামীজী সেই মূলপাঠে নিজের পক্ষ থেকে একটি আপত্তিজনক স্বাধীনতা নিয়েছেন—যেখানে পণ্ডিত মীমাংসকজী নিজের প্রস্তাবিত পাঠ বৃহৎ বন্ধনীর মধ্যে দিয়েছিলেন, যাতে ঋষির ভাষা এবং সম্পাদকের ভাষার পার্থক্য বোঝা যায়, স্বামীজী সেই বৃহৎ বন্ধনী সরিয়ে সেগুলোকে ঋষির ভাষার সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। ফলে ঋষির ভাষার সঙ্গে সম্পাদকের ভাষার মিশ্রণ হয়ে গেছে এবং সত্যার্থপ্রকাশ দ্বিতীয় সংস্করণের ভাষায় কয়েক হাজার পাঠান্তর সৃষ্টি হয়ে গেছে। যতক্ষণ না এই সিদ্ধান্ত হয় যে অমুক প্রস্তাবিত পাঠ সম্পূর্ণ শুদ্ধ ও অবশ্যগ্রাহ্য, ততক্ষণ সত্যার্থপ্রকাশের ভাষায় নিজের ভাষা ঢুকিয়ে দেওয়া অনুচিত বলা হবে। তাঁদের সংস্করণে মোট পরিবর্তন–সংশোধন প্রায় ৪০০০–৪৫০০-এর কাছাকাছি।
স্বামীজী সত্যার্থপ্রকাশের ভাষ্যের নামে মন্তব্যে যথেষ্ট বিবরণ রেখেছেন। আসলে তা বিভিন্ন লেখকের লিখিত উপাদানের গোপন সংগ্রহমাত্র। সত্যার্থপ্রকাশে পাওয়া স্বামী বেদানন্দজী, পণ্ডিত ভগবদ্দত্তজী, পণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসক ইত্যাদির সমস্ত মন্তব্য হুবহু সংকলিত আছে, কিন্তু কোথাও মূল লেখকের নাম দেওয়া হয়নি। এতে পাঠকের মনে প্রথম ধারণা হয়—এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশদ ব্যাখ্যা স্বামী বিদ্যানন্দজী সারস্বতীরই রচনা। অন্যান্য সংগৃহীত উপাদানেও একই অবস্থা।
স্বামীজী যখন সত্যার্থপ্রকাশ সম্পাদনের কাজ শুরু করেন তখন একটি বিজ্ঞপ্তি সংবাদপত্রে প্রকাশ করেন যে—তাঁদের সত্যার্থপ্রকাশ–সম্পর্কিত উপাদান প্রয়োজন, যাদের কাছে এ বিষয়ে কিছু আছে তারা যেন সাহায়্য করেন। প্রফেসর রাজেন্দ্রজি জিজ্ঞানাসু (আবোহর) লিখেছেন ও বলতেন—তিনি স্বামীজীকে প্রচুর সহায়ক উপাদান প্রদান করেছিলেন, কিন্তু স্বামীজী কোথাও তাঁর নাম উল্লেখ করেননি, কৃতজ্ঞতাও জানাননি, অথচ সেই উপাদান ব্যবহার করেছেন। এমন আচরণ আরও বহুজনের সঙ্গে হয়েছে।
তাঁর মন্তব্য পড়ে বোঝা যায় না—কোন মন্তব্য আসলে কার লেখা। একই মন্তব্য ও পাঠ দুটি বইতে পড়ে ভবিষ্যতের পাঠক সন্দেহে পড়ে যাবে—কার অনুকরণ কে করেছেন। যেমন, স্বামী বিদ্যানন্দজী কি স্বামী বেদানন্দজীর এবং অন্যদের অনুকরণ করেছেন, নাকি তারা স্বামী বিদ্যানন্দজীর। একইভাবে যে স্থানে মনুস্মৃতির শ্লোকগুলির নব্য অর্থ আমি (ডঃ সুরেন্দ্রকুমার) দিয়েছি, সেখানেও তা আমার ভাষ্য থেকেই গ্রহণ করা। তাতেও পাঠককে সিদ্ধান্ত নিতে মাথা খাটাতে হবে—ডঃ সুরেন্দ্রকুমারের থেকে স্বামী বিদ্যানন্দজী নিয়েছেন, নাকি ডঃ সুরেন্দ্রকুমার স্বামী বিদ্যানন্দজীর কাছ থেকে নিয়েছেন, কারণ কোথাও আমার নাম বা ইঙ্গিতও নেই। ভূমিকায় কিছু বড় বিদ্বানের নাম অবশ্য উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তাঁদের কোন গ্রন্থ থেকে কোথায় কী উপাদান নেওয়া হয়েছে—তার স্পষ্টীকরণ নেই। অন্যের উপাদান উদারভাবে গ্রহণ করা হলেও নামোল্লেখে অনুদারতা দেখানো হয়েছে। তাঁদের সংস্করণে উপাদান সংগ্রহ ছাড়া মূল পাঠ-সম্পর্কিত কোনো মৌলিক কাজ স্বামীজীর নয়। যদি উল্লিখিত অনৈতিক দিকগুলো বাদ দেওয়া যায়, তবে এই সংস্করণের মন্তব্যে প্রচুর জ্ঞানবর্ধক বিষয় সংকলিত হয়েছে, যা স্বাধ্যায়ের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
২২. স্বামী জগদীশ্বরানন্দজি দ্বারা সম্পাদিত সত্যার্থপ্রকাশ— মার্চ ১৯৯৫-এ “আধুনিক হিন্দি ভাষায় সত্যার্থপ্রকাশের রূপান্তরণ” এই শিরোনামে স্বামী জগদীশ্বরানন্দজি সারস্বতী সত্যার্থপ্রকাশের একটি অদ্ভুত সংস্করণ প্রকাশ করেন, যেখানে সবকিছু ওলটপালট—পরিবর্তিত ও বিকৃত ছিল এবং ঋষির ভাষায় অগণিত পরিবর্তন ও প্রক্ষেপ যোগ করা হয়েছে। ‘সত্যার্থপ্রকাশের আধুনিক হিন্দিতে রূপান্তরণ’ শিরোনাম দিয়েই তিনি বিতর্কে জড়িয়ে গেলেন, কারণ কোনো ভাষা কখনো একই ভাষায় রূপান্তরিত হয় না। তিনি অতিরিক্ত স্বাধীনভাবে অনেক কিছু বদলে দিয়েছেন এবং সবচেয়ে কষ্টকর বিষয় হলো—এই পরিবর্তনের কোনো পরিচয় বা ব্যাখ্যা পাঠকদের কোথাও দেওয়া হয়নি। নিজের মতের ভিত্তিতে যুক্তিহীনভাবে ‘কর্মফল’, ‘নিয়োগ’-এর মতো বহু প্রসঙ্গ ও শ্লোক এবং তাদের অর্থ বাদ দিয়েছেন, অনেক স্থানে শ্লোকার্থে গ্রন্থকার যে ব্যাপক অর্থ প্রসঙ্গক্রমে করেছিলেন তা বদলে দিয়েছেন। অনেক এমন বাক্য নিজের পক্ষ থেকে জুড়ে দিয়েছেন যা সত্যার্থপ্রকাশে ছিল না। কিছু স্থানে যেগুলো তিনি নিজের ভাষায় পরিবর্তন করেছেন সেগুলো ঋষির ভাবেরও বিরোধী। বলতে হয়—তাঁর সংস্করণে যা কিছু বাদ বা যোগ হয়েছে তা ঋষির আদর্শ অনুযায়ী কম, তাঁর নিজের পছন্দ অনুযায়ী বেশি। এইভাবে স্বামীজী সত্যার্থপ্রকাশের ঋষিকৃত মৌলিক রূপ সম্পূর্ণভাবে বিকৃত করেছেন। স্বামী জগদীশ্বরানন্দজীর এই সম্পাদনা সংশোধনের অন্তর্গত নয়, বরং প্রক্ষেপ–শ্রেণিতে পড়ে। ভবিষ্যতে কেউ যদি সত্যার্থপ্রকাশের আসল রূপ খুঁজতে চান এবং তাঁর হাতে স্বামী জগদীশ্বরানন্দজীর সংস্করণ পড়ে, তবে তিনি হয়তো খুঁজতেই থাকবেন—আসল সত্যার্থপ্রকাশ কোনটি। ভাষাবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে স্বামী জগদীশ্বরানন্দ সম্পাদিত সত্যার্থপ্রকাশ আধুনিক রচনা বলে গণ্য হবে, কারণ তাতে ভাষা ঋষির যুগের নয় এবং বানানও আধুনিক।
যদি স্বামীজী তাঁর সংস্করণের নাম ‘সত্যার্থপ্রকাশ–সার’ রাখতেন, তবে এসব বিভ্রান্তির উৎপত্তি হতো না। এ কারণেই পণ্ডিত বিশুদ্ধানন্দ মিশ্রের নেতৃত্বে তাঁর সংস্করণের যথেষ্ট সমালোচনা হয়। পরোপকারিণী সভা কর্তৃক প্রদত্ত নোটিশ এবং বিদ্বানদের বোঝানোর পর তিনি তাঁর সংস্করণের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেননি। সময়ের অদ্ভুত খেলা যে, একই স্বামী জগদীশ্বরানন্দজীকেই সেই পণ্ডিত বিশুদ্ধানন্দ মিশ্র উদয়পুর সংস্করণের সম্পাদনার জন্য গঠিত কমিটিতে রাখেন। তাঁদের ‘বেদমন্দির আশ্রম, ইবরাহিমপুর, দিল্লি’তে একবার সাক্ষাতে যখন এই পঙ্ক্তিগুলির লেখক তাঁর সাথে আলোচনা করে জিজ্ঞেস করলেন—“উদয়পুর সংস্করণের কর্মপদ্ধতি কি তিনি…?”
২৯. স্বামী বিদ্যানন্দ জি সরস্বতী কর্তৃক সম্পাদিত সত্যार्थপ্রকাশ—
(সন ১৯৯৩-এ দুই খণ্ডে প্রকাশিত সত্যার্থভাস্কর-এর সম্পাদক এবং টীকা সংগ্রাহক স্বামী বিদ্যানন্দ জি সরস্বতী। এর মূল পাঠ পণ্ডিত মীমাংসক জির সংস্করণ অনুসরণে তৈরি, এমনকি প্রায় সব অশুদ্ধি এবং ভুল পাঠও মীমাংসক জির সংস্করণের মতোই আছে। স্বামী জি সেই মূলপাঠে নিজের পক্ষ থেকে একটি আপত্তিকর স্বাধীনতা নিয়েছেন—পণ্ডিত মীমাংসক জি যে পাঠগুলো ব্রহৎ বন্ধনীর মধ্যে নিজের প্রস্তাবিত রূপে দিয়েছিলেন, যাতে ঋষির ভাষা এবং সম্পাদকের ভাষার পার্থক্য বোঝা যায়—স্বামী জি সেই ব্রহৎ বন্ধনী তুলে দিয়ে সেই পাঠ মূল ভাষার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন। ফলে ঋষির ভাষার সঙ্গে সম্পাদকের ভাষা মিশে গেছে এবং সত্যার্থপ্রকাশ দ্বিতীয় সংস্করণের ভাষায় কয়েক হাজার পাঠভেদ সৃষ্টি হয়েছে। যতোক্ষণ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত না হয় যে অমুক প্রস্তাবিত পাঠ সম্পূর্ণ শুদ্ধ এবং গ্রহণীয়, ততক্ষণ সত্যার্থপ্রকাশের ভাষায় নিজের ভাষা ঢোকানো অবাঞ্ছনীয় বলে গণ্য হবে। তাঁদের এই সংস্করণে পাঠ-সংস্করণ ৪০০০-৪৫০০-র মধ্যে।
স্বামী জি মন্তব্যে বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তা প্রকৃত অর্থে বিভিন্ন লেখকের রচনার গোপন সংকলন মাত্র। সত্যার্থপ্রকাশে প্রাপ্ত স্বামী বেদানন্দ জি সরস্বতী, পণ্ডিত ভগবদ্দত্ত জি, পণ্ডিত যুধিষ্ঠির জি মীমাংসক প্রমুখের সমস্ত মন্তব্য অক্ষরে অক্ষরে সংকলিত, কিন্তু সেখানে মূল লেখকের নাম দেওয়া হয়নি। এতে পাঠকদের প্রথম ধারণা হয়—সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিস্তৃত বক্তব্য স্বামী বিদ্যানন্দ জির নিজের লেখা।
অন্যান্য সংকলিত উপকরণের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। যখন তিনি সত্যার্থপ্রকাশের সম্পাদনা শুরু করেন, তখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন যে—তাঁর সত্যার্থপ্রকাশ-সংক্রান্ত উপকরণের প্রয়োজন আছে, যার কাছে এ সম্পর্কিত বই আছে তারা দিয়ে সহায়তা করুক। প্রফেসর রাজেন্দ্র জি জিজ্ঞাসু (আবোহর) লেখেন এবং বলেন যে তিনি স্বামী জিকে অনেক উপাদান দিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু তাঁর নাম কোথাও উল্লেখ করা হয়নি, কিংবা কৃতজ্ঞতাও জানানো হয়নি—যদিও সেই উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকের সাথে একই আচরণ হয়েছে।
তাঁর মন্তব্য পড়ে বোঝা যায় না কোন মন্তব্য কার লেখা। একই মন্তব্য দুই বইয়ে পড়লে ভবিষ্যৎ পাঠক সন্দেহে পড়ে যাবে কে কাকে নকল করেছে—স্বামী বিদ্যানন্দ জি কি স্বামী বেদানন্দ জি-কে নকল করেছেন, নাকি বিপরীতটা। এছাড়া মনুস্মৃতির যে শ্লোকে নতুন অর্থ দেওয়া হয়েছে, তা আমার (ড. সুরেন্দ্রকুমার) ভাষ্য থেকে নেওয়া। সেখানেও পাঠককে আন্দাজ করতে হবে—ড. সুরেন্দ্রকুমার কি স্বামী বিদ্যানন্দ জির থেকে নিয়েছেন, নাকি স্বামী বিদ্যানন্দ জি ড. সুরেন্দ্রকুমার-এর ভাষ্য ব্যবহার করেছেন—কারণ কোথাও নাম বা ইঙ্গিতও নেই। ভূমিকায় কিছু বড় বিদ্বানের নাম আছে, কিন্তু তাদের কোন গ্রন্থ থেকে কোন উপকরণ নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। অন্যের লেখা সহজেই নিয়ে নিলেও নামোল্লিখনে সংযম রাখা হয়েছে। সংকলন ছাড়া মূল পাঠসম্পর্কিত কোন মৌলিক কাজ তাঁর নয়।
উল্লিখিত অনৈতিক অংশ বাদ দিলে টীকার উপাদান জ্ঞানমূলক এবং স্বাধ্যায়ের জন্য উপকারী।
২৩. আচার্য রাজেন্দ্রনাথ জি শাস্ত্রীর সম্পাদনা এবং সমালোচনা দৃষ্টিভঙ্গি—
সত্যার্থপ্রকাশ (দ্বিতীয় সংস্করণ ১৮৮৪)-এর প্রতিটি অক্ষর ঋষির লেখা ধরে নিয়ে, সেই পাঠে কোনো পরিবর্তনের বিরোধী হিসেবে যুক্তিহীনভাবে দাঁড়ানো সম্পাদক এবং সমালোচক আচার্য রাজেন্দ্রনাথ জি শাস্ত্রী (সংন্যাস-নাম—স্বামী সচ্চিদানন্দ জি যোগী)-র ভূমিকা সর্বাধিক আলোচিত এবং বিতর্কিত।
১৯৬৬-তে তাঁর সত্যার্থপ্রকাশের সংশোধনসমূহের সমালোচনা নামে বই প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি পরোপকারিণী সভা, স্বামী বেদানন্দ জি, আচার্য উদয়বীর জি শাস্ত্রী প্রমুখ কর্তৃক করা সংশোধনের প্রবল বিরোধিতা করেন। বইটি গভীর পক্ষপাতদুষ্ট, অভ্যন্তরীণ-বিরোধপূর্ণ এবং কল্পনানির্ভর। ভাষা সাহিত্যিক নয়—আর্য সমাজের মানুষকে উত্তেজিত করার মতো। কঠোর ও কটু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই প্রথম বই যেখানে সাহিত্যিক সমালোচনাকে অবমূল্যায়ন করে একে ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং বিদ্বেষে পরিণত করা হয়েছে—যার ফলে আর্যসমাজে অসাহিত্যিক সমালোচনার ধারা জন্ম নেয়।
সত্যার্থপ্রকাশে সংশোধন করায় তিনি স্বামী বেদানন্দ জিকে "গুরুদ্রোহী" বলতেও দ্বিধা করেননি—কিন্তু তিনি ভুলে যান যে তিনি তাঁরই গুরু স্বামী বেদানন্দ জির নিন্দা ও আক্রমণ করে নিজেও গুরুদ্রোহ করেছেন। তিনি দাবি করেছিলেন সত্যার্থপ্রকাশে একটি অশুদ্ধিও নেই এবং “भी” শব্দ পাঠে রাখা উচিত—এ নিয়ে তিনি সাত পৃষ্ঠা লিখেছেন (পৃ.৯৩-১০০)।
কিন্তু অন্যত্র তিনি সত্যার্থপ্রকাশে ১১টি গুরুতর ভুল আছে বলে সংশোধনের আহ্বান দিয়েছেন (সত্যার্থপ্রকাশ, ফটোকপি সংস্করণ, ১৯৬৭, ভূমিকা পৃ.১৯-২২)। তিনি ভাবেননি—যদি তাঁকে ১১টি ভুল দেখা যায়, তাহলে অন্য কাউকে ১১০০, আর অন্য কাউকে ২২০০ ভুলও দেখা যেতে পারে।
এই কারণেই প্রতিটি সম্পাদক দ্বিতীয় সংস্করণে ২৫০০–৩০০০ সংশোধন করেছেন। এটি ব্যক্তির যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে।
শাস্ত্রী জির সমালোচনার ধরনও অদ্ভুত। সত্যার্থপ্রকাশে দু’টি স্থানে "সত্যমেব জয়তে" (শোধসংখ্যা পৃ. ১০, ১০৪৬) উদ্ধৃত হয়েছে। এর মধ্যে এক জায়গায় "জয়তে" আর অন্য স্থানে "জয়তি" ভুলপাঠ ছিল। সম্পাদকরা মূলগ্রন্থের ভিত্তিতে দ্বিতীয় স্থানেও "জয়তে" কে সঠিক পাঠ হিসেবে গ্রহণ করলেন। শাস্ত্রী জি এ নিয়ে আক্ষেপ করেন যে — "জয়তি" এর স্থানে কেন "জয়তে" করা হলো — কিন্তু ভুল সংশোধনের যথার্থ সমাধান কোথাও দেন না।
সত্যার্থপ্রকাশে লৌকিক ও বৈদিক — উভয় ধরনের উদ্ধৃতিতে ভুলপাঠ এবং পাঠভেদ পাওয়া যায়। লৌকিক গ্রন্থের উদ্ধৃতিতে যেসব পাঠভেদ দ্বিতীয় সংস্করণে (প্রথম মুদ্রণ) এসেছে, সেগুলোকে অনেকে পাঠভেদের অযৌক্তিক যুক্তি দেখিয়ে অপরিবর্তনীয় করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বৈদিক মন্ত্রসমূহে যে ডজনখানেক ভুলপাঠ পাওয়া যায় — সেগুলোও কি অপরিবর্তনীয়? এই নীতিগত প্রশ্নে শাস্ত্রী জি এক অক্ষরও লেখার সাহস করেননি। সম্ভবত তিনি মনে করেন — বেদেও পাঠভেদ থাকতে পারে! না হলে "প্রত্যেক শব্দ অপরিবর্তনীয়" — তাঁর এই প্রতিজ্ঞা কীভাবে রক্ষা করতেন? আজ পর্যন্ত কোনো সম্পাদক পণ্ডিত এই দাবিকে রক্ষা করতে পারেননি, ভবিষ্যতেও পারবেন না।
মূলপ্রতি-সংস্করণ প্রকাশের পর, মূলপ্রতি-লিপিতে মহর্ষি-প্রদত্ত পাঠ উদ্ঘাটিত হওয়ায় স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে — পাঠ সম্পর্কে শাস্ত্রী জির সিদ্ধান্ত ও মতামত পক্ষপাতদুষ্ট, কল্পনানির্ভর এবং ভুল ছিল, আর সংশোধনকারী সম্পাদকদের মতামতই সঠিক ছিল। কিছু উদাহরণে এই কথা পরিষ্কার হয়—
(ক) সন্ন্যাসের সংস্কৃত সংজ্ঞার হিন্দি অনুবাদকে সংশোধকেরা ভুল প্রমাণ করে সেখানে প্রয়োজনীয় পাঠসংযোজন করে পাঠ সম্পূর্ণ করেন। শাস্ত্রী জি সেই পরিবর্তনকে "আন্ড-বাণ্ড" বলে চিহ্নিত করেন। পরে মূলপ্রতিতে সেই পূর্ণ পাঠ পাওয়া গেছে — ফলে প্রমাণিত হয় সংশোধকেরাই সঠিক ছিলেন এবং শাস্ত্রী জির বক্তব্যই "আন্ড-বান্ড" ছিল। (“সংশোধনী কী সমীক্ষা” পৃ. ৩৬–৩৮; শোধসংখ্যা পৃ. ২৪৩)
(খ) দ্বিতীয় সংস্করণের নবম সমুল্লাসে (শোধসংখ্যা পৃ. ৪৪২–৪৪৩) একটি সংস্কৃত উদ্ধৃতির হিন্দি অনুবাদে "अप्रसन्नता" শব্দটি ভুল ছিল। স্বামী বেদানন্দ জি সহ অন্যান্য সংশোধকরা মূলগ্রন্থ থেকে সেই শব্দ গ্রহণ করেন। শাস্ত্রী জি এই নিয়ে তাঁর বইয়ে তিন পৃষ্ঠা জুড়ে তীব্র আপত্তি জানান (পৃ. ৪৯–৫১)।
কিন্তু পরে সেই একই শব্দ মূলপ্রতি-লিপিতে পাওয়া যায়। ছাপা প্রতি তৈরি করার সময় মুদ্রাক্ষর সংযোজক ভুলে তা বাদ পড়ে যায় — এবং সেই ভুলই দ্বিতীয় সংস্করণে ছাপা হয়। এই তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর প্রমাণিত হলো — শাস্ত্রী জির সমালোচনা ভিত্তিহীন ও ভুল ছিল। তিনি ভুল পাঠ আঁকড়ে ধরে অর্থহীন বিতর্কে সময় নষ্ট করেছেন এবং অল্পপাঠ্য পাঠকদের বিভ্রান্ত করেছেন।
এমন আরও বহু উদাহরণ এই গ্রন্থের মন্তব্য অংশে পড়তে পাওয়া যাবে।
শাস্ত্রী জি এই সত্য নিয়ে কখনও চিন্তা করতে পারেননি যে — ১২, ১৩ এবং ১৪তম সমুল্লাস মহর্ষির লেখকদের দ্বারা সংকলিত — সেখানে শুধু সমালোচনা অংশ মহর্ষিগ্রন্থ। তাই দ্বাদশ সমুল্লাসের শ্লোকার্থ আর জৈন গাথার অর্থে অপ্রত্যাশিত ভুল রয়েছে।
গাথা সংখ্যা ১০৯ "तिहुअण जणं ...." — এর অর্থ ভুল। অসতর্কতার কারণে ১০৯ এর স্থানে ১১৯ নম্বর গাথার অর্থ লিখে দেওয়া হয়। শাস্ত্রী জি এই ভুল স্বীকার করলেও চান— যেন তা সংশোধন না করা হয়। অর্থাৎ— কোনো লেখকের করা ভুলকে ‘ঋষি সম্মান’ ভেবে রাখা— এ এক অদ্ভুত যুক্তি।
এই ভুল সংশোধনকারীদের বিরুদ্ধে তিনি অভিধানের সব বিষাক্ত শব্দ বর্ষণ করেছেন— “ঋষিগ্রন্থ বিকৃতি”, “ঋষিবিরোধের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত”, “আর্যসমাজের গুরুুপদ্রোহ” ইত্যাদি (পৃ. ৫৮)। বৈদিক বিদ্যা এমন বিদ্বানকেও পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়নি।
আরেক উদাহরণ— একাদশ সমুল্লাসে "Bible in India" বইয়ের লেখকের নাম ভুলক্রমে "Goldstücker" ছাপা হয়েছে— যখন সঠিক নাম ছিল "Jacolliot"। এই ঐতিহাসিক ভুল সংশোধন করতেই শাস্ত্রী জি আপত্তি করেন এবং যুক্তি দেন —“হতে পারে Goldstücker-এর এই বইয়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল!”
পাঠকবৃন্দ— আলোচনা চলছে লেখকের নাম নিয়ে— আর শাস্ত্রী জি অনুসন্ধান করছেন "সম্ভাব্য সম্পর্ক"! এই বই বহু আবেগী বিশ্বাসীদের বিভ্রান্ত করেছে— তাই এই সংস্করণে ব্যাপকভাবে এর সমালোচনা করা হয়েছে।
শাস্ত্রী জি आर्ष साहित्य प्रचार ट्रस्ट, दिल्ली–কে প্রভাবিত করে তাঁর সম্পাদনায় দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)–এর ৫০০০ কপি ফোটোপ্রিন্টে প্রকাশ করান— যার ভূমিকাও তিনি নিজে লেখেন। অথচ সেই সংস্করণই সবচেয়ে বিকৃত, যা ভুল এবং অসম্পূর্ণতায় পূর্ণ। এতে মাত্র বানান, পাঠ এবং মুদ্রণ ভুলই প্রায় ৪০০০–৪৫০০। এর মধ্যে ১৪৭টি ভুল পরে সংশোধনপত্র হিসেবে যুক্ত করা হয়।
পরবর্তীকালে সংশোধিত সংস্করণে শত শত ভুল সংশোধন করা হয়েছে।
প্রশ্ন ওঠে — এই ভুলপূর্ণ প্রাথমিক সংস্করণ ছাপিয়ে শাস্ত্রী জি সত্যার্থপ্রকাশের উপকার করেছেন, নাকি ক্ষতি?
আমার মতে — তিনি কিছু সময়ের জন্য ট্রাস্টকে পথচ্যুত করেছিলেন। যদি তা এত মূল্যবান সংস্করণ হতো — তবে আজ সবাই সেটিই ছাপত। কিন্তু বাস্তব হলো — শাস্ত্রী জি বাদে আর কেউ কখনো দ্বিতীয়বার সেটি ছাপায়নি।
আরও আশ্চর্য হলো — সেই ফোটোপ্রিন্ট সংস্করণেও কিছু সংশোধন করা হয়েছে। কেন? নিশ্চয়ই তার জন্য কোনো উদ্বেগজনক কারণ ছিল।
সৌভাগ্য যে প্রকাশক লালা দীপচাঁদ দ্রুতই বাস্তবতা বুঝতে পারেন এবং পুনরায় তা না ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেন — এবং তার বদলে ২০০০–২৫০০ ভুল সংশোধন করে সংশোধিত সত্যার্থপ্রকাশ প্রকাশ করেন।
শাস্ত্রী জির আরেকটি বিশেষ দৃষ্টান্ত — তিনি মহর্ষির নিয়োজিত লিপিবদ্ধকার পণ্ডিত জ্বালাদত্ত এবং পণ্ডিত ভীমসেন শর্মার প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। তিনি লেখেন —
“মানুষ তাদের প্রতারণাপূর্ণ ও কপট বলতে শুরু করেছে”, এবং —“তাদের পাণ্ডিত্য আজকের সংশোধকদের চেয়ে উন্নত ছিল।” (সত্যার্থপ্রকাশ, ফোটোপ্রিন্ট, ভূমিকা, পৃ. ১৫)
সম্ভবত শাস্ত্রী জি মহর্ষির পত্রাবলি পড়েননি — পড়লে তিনি মহর্ষির মতের বিপরীতে গিয়ে এই প্রশংসা করতেন না।
মহর্ষি ভীমসেনকে বলেছেন —
“অযোগ্য, শিশুসুলভ, ভুলপ্রবণ, কুচারিত্র, মার্জারলিঙ্গী, কাজের অনুপযুক্ত, খারাপ স্বভাবের, আর্য সমাজে রাখার যোগ্য নয়।”
জ্বালাদত্তকে বলেছেন —
“বিভ্রান্ত, অলস, ভুলকারী, দাম্ভিক, ক্রোধী, স্বার্থপর, খারাপ ভাষা-লেখক, ঘাসকাটার ভাষা লিখে ফেলে এমন।”
(দেখুন — "मीमांसा भाग" পৃ. ২৭)
এই শব্দগুলো মহর্ষির — বর্তমান যুগের নয়। মহর্ষি যাদের তিরস্কার করেছেন — শাস্ত্রী জি তাদেরই মহর্ষি বিরুদ্ধ অবস্থানে থেকে প্রশংসা করেন। পাঠক বিচার করুন — এ কেমন "ঋষিভক্তি"?
আজকাল তো উদয়পুরে তার প্রতি "শ্রদ্ধা-নমিত" নতুন ভক্তও জন্মেছে। শাস্ত্রী জির যুক্তি —
“ঋষি তাঁর লেখকদের সমালোচনা করতে পারেন — আমরা নই।”
তাহলে এটাও মানতে হয়— যে সব মত তিনি খণ্ডন করেছেন — সেই খণ্ডনের অধিকারও কেবল তাঁর — অন্য কারোর নয়।
দ্বিতীয় সত্য এই যে, ঋষি দয়ানন্দ কর্তৃক মুখে উচ্চারিত এবং লিখিয়ে নেওয়া কোনো গ্রন্থ “ভুল বাক্য” হতে পারে না। এবং এটিই সেই মূলপ্রতি, যার ভিত্তিতে সত্যার্থপ্রকাশের সম্পাদকরা দেড়শত বছর ধরে দ্বিতীয় সংস্করণের পাঠ সংশোধন করে আসছেন। প্রথমে পঞ্চম মুদ্রণে পণ্ডিত লেখরাম জি করেছিলেন, তারপর পরোপকারীণী দ্বারা গঠিত চার-পাঁচ উপ-সমিতি করেছিল, পণ্ডিত ভগবদ্দত্ত জি করেছিলেন এবং সর্বশেষ সংশোধন উদয়পুর সংস্করণে (২০১০ খ্রিস্টাব্দ) পণ্ডিত বিশুদ্ধানন্দ জি মিশ্র করেছেন। উদয়পুর সংস্করণে তো ঐতিহ্যগতভাবে দেড়শত বছর ধরে চলে আসা দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)-এর দুইশত পাঠ পরিত্যাগ করে তাদের স্থলে মূলপ্রতির পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে। এত গুরুত্বপূর্ণ মূল ভিত্তি “মূলপ্রতি” কীভাবে “ভুল বাক্য” হতে পারে? আজ পর্যন্ত কোনো আর্য বিদ্বানও এটিকে “ভুল বাক্য” বলেননি।
তৃতীয় সত্য এই যে, মূলপ্রতি ও সেই ভিত্তিতে তৈরি মূলপ্রতি-সংস্করণে যেখানে আছে ২০০০–২৫০০ সার্বিক ভুল, সেখানে তার চেয়ে বেশি ৩০০০–৩৫০০০ ভুল আছে মুদ্রণপ্রতিতে, এবং তার থেকেও বেশি ৪০০০–৪৫০০০ সার্বিক ভুল বিদ্যমান দ্বিতীয় সংস্করণে (১৮৮৪)। সংখ্যাগুলো প্রমাণ করে যে তিনটি প্রারম্ভিক প্রতির মধ্যে সবচেয়ে কম ভুল রয়েছে মূলপ্রতি ও তার ভিত্তিতে তৈরি মূলপ্রতি-সংস্করণে। তাহলে দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)-কেই সবচেয়ে “ভুল বাক্য” বলা হবে না কেন? এবং মূলপ্রতির চেয়ে বেশি “ভুল বাক্য” মুদ্রণপ্রতি কেন হবে না? এই পরিসংখ্যান পড়ে কি আপনি নিজের পূর্বোক্ত মন্তব্য সংশোধনের সাহস করবেন? ভুলের উদাহরণ এই "মীমাংসা-অংশ" ও মন্তব্যে প্রদর্শিত রয়েছে।
চতুর্থ সত্যটি আপনার দৃষ্টিতে আনতে চাই—দ্বিতীয় সংস্করণের প্রতিটি সম্পাদক-প্রকাশক নিজের নিজের সংস্করণে ২৫০০–৪৫০০ সংশোধন-পরিবর্তন করেছেন। আজ লোকেরা দ্বিতীয় সংস্করণের নাম বটে বাজায়, তার উপর জেদও করে, তার উপর আর্যদের বিভ্রান্ত করতে রাজনীতিও করে, কিন্তু কেউই একে যথাবৎ রূপে প্রকাশ করে না। ডক্টর সাহেব! তাদের জিজ্ঞেস করুন তো—যারা দ্বিতীয় সংস্করণকে ঋষির জীবদ্দশায় মুদ্রিত বলে দাবি করেন, যারা একে “মূলগ্রন্থ” বলেন—তারা এটিকে যথাবৎ প্রকাশ করেন না কেন? কেন তারা এতে হাজার হাজার পরিবর্তন করেছেন?
দ্বিতীয় সংস্করণের সমর্থকেরা কি সৎভাবে দাবি করতে পারেন—আজ যে দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ হচ্ছে তা সত্যিই ঋষিকালীন দ্বিতীয় সংস্করণ? হাজার সংশোধনের পরে কি কোনো গ্রন্থ তার মূলরূপে থাকে? সত্য এটাই যে সম্পাদকরা নিজের ইচ্ছামতো নিজ নিজ সংস্করণে হাজার হাজার পরিবর্তন করেছেন, যার ফল—আজ যতগুলো দ্বিতীয় সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে, ততগুলো ভিন্ন ভিন্ন সত্যার্থপ্রকাশ রয়েছে—একটির পাঠ অন্যটির সঙ্গে মেলে না এবং কোনো সম্পাদক-প্রকাশকের নিজের সব সংস্করণও পরস্পরের সঙ্গে মেলে না। এই পরিস্থিতিতে আপনি যদি ভাষা-সংশোধন করেন, তাহলে অবশ্যই সেই সত্যার্থপ্রকাশের ভাষা হবে আধুনিক ও শুদ্ধতম—কিন্তু তা দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)-এর ভাষা বলবৎ থাকবে না। যদি শুদ্ধ-অশুদ্ধতার হিসাব করতে চান—তাহলে “মূলপ্রতি” এবং “মূল দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)-এর ভাষা” পরস্পরের তুলনা করে নির্ণয় করুন এবং সেখানে লিপিকার কর্তৃক ভুলে যোগ করা পাঠ আলাদাভাবে গণ্য করুন। হতে পারে তবেই ডক্টর সাহেব “হে দেব দয়ানন্দ!”-এর বিলাপ-বাক্য লিপিকারের ভাষা-মিশ্রিত দ্বিতীয় সংস্করণে প্রয়োগ করাকে অধিক উপযুক্ত মনে করবেন। ডক্টর সাহেব! এখন তো আপনি নিজের শ্রদ্ধেয় ঋষির মূল ভাষার উপরই বিলাপ করছেন!!
আমি ডক্টর সাহেবের দৃষ্টিতে আরও একটি বিষয় আনতে চাই—আপনার প্রদত্ত বহু শুদ্ধ পাঠ পরোপকারীণী সভার নতুন সংস্করণে গ্রহণ করা হয়েছে, অথচ কোনো দ্বিতীয় সংস্করণে আপনার গবেষণাপ্রসূত পাঠ গ্রহণ করা হয়নি—এমনকি সেই সংস্করণেও নয়, যার উদ্দেশ্যে আপনি এই সমালোচনা লিখেছেন। এই পরিস্থিতিতে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত করুন—সত্যার্থপ্রকাশের “ভুল বাক্য” রক্ষা করার প্রকৃত দায় কার উপর?
শেষে শুধু এটুকুই বলা উপযুক্ত—ডক্টর সাহেব, আপনার সমালোচনা একপাক্ষিক এবং নতুন সংশোধিত সংস্করণের ভিত্তিতে রচিত। আপনি এ নিয়ে পুনর্বিবেচনা করুন এবং সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করে সমালোচনা করুন। আপনার মতো জ্যেষ্ঠ বিদ্বানকে ভুল সিদ্ধান্তের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করা উচিত নয়। আপনার ভুল সমালোচনার একটি উদাহরণ দেখুন—
মূলপ্রতিতে সামনে উদ্ধৃত পুনরুক্ত পাঠ নেই। মুদ্রণ-লিপিকার মুদ্রণপ্রতি প্রস্তুত করার সময় ভুলবশত অন্যান্য বহু পুনরুক্ত পাঠের মতো এটিও লিখে ফেলেছেন। যখন তার নজরে পুনরুক্তি আসে, তখন তা কেটে না দিয়ে শেষে নিজের পক্ষ থেকে একটি নতুন বাক্য যোগ করেন—“কুলের কুল নষ্ট হয়ে যাক।” আশ্চর্য! একটি সাধারণ পাঠকের কাছেও সহজেই পুনরুক্তি-দোষযুক্ত বলে প্রতীয়মান এই বাক্য ডক্টর সাহেবের কাছে বিশেষ মনে হয়েছে—“মহা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পেয়ে সবাই রোগী, দুর্বল এবং অল্পায়ু হয়ে দ্রুত-দ্রুত মারা যাবে… মহা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পেয়ে সবাই রোগী, দুর্বল এবং অল্পায়ু হয়ে কুলের কুল নষ্ট হয়ে যাবে।” (দ্বিপ্র. ১২০; গবেষণা-সং. ২২০) পাঠক লক্ষ্য করুন—যদি এই সংশোধিত পাঠ মৌলিক হতো, তাহলে “কুলের কুল নষ্ট হয়ে যাক!”- বাক্যাংশ “দ্রুত-দ্রুত মারা যাক”—এর পরেই যোগ করলেই যথাযথ, সংক্ষিপ্ত এবং অর্থবহ সম্পূর্ণ বাক্য হয়ে যেত। এই একটি বাক্যাংশের জন্য পুরো পূর্ববর্তী বাক্যের পুনরুক্তি করা ভুল-সৃষ্ট বাক্য। অতএব ডক্টর সাহেব-এর এই বিষয়ে মত যুক্তিহীন।
একপাক্ষিক প্রস্তাব হওয়া সত্ত্বেও ডক্টর সাহেবের সমালোচনা বহু দৃষ্টিতে তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর সমালোচনা চিন্তনপূর্ণ এবং তিনি এই চিন্তার দিক নির্দেশ করেছেন যে কোনো একমাত্র সংস্করণ বা পান্ডুলিপি সম্পূর্ণ ও সম্পূর্ণ শুদ্ধ নয়। এবং পূর্ণ শুদ্ধ সংস্করণ শুধুই উভয় সংস্করণের শুদ্ধ পাঠ গ্রহণ এবং অশুদ্ধ পাঠ বর্জন করলে তৈরি হতে পারে। তাঁর সমালোচনায় এই বার্তাও সুস্পষ্ট যে শিক্ষিত গবেষকদের উচিত নয় কোনো এক সংস্করণের প্রতি পক্ষপাত রেখে গবেষণা করা; বরং যেখানে যে শুদ্ধ পাঠ আছে তা গ্রহণ করে সত্যার্থপ্রকাশের সর্বশুদ্ধ সংস্করণ প্রকাশ করা উচিত।
এই গ্রন্থে কিছু স্থানে মাননীয় ডক্টর সাহেবের সমালোচনার পুনঃসমালোচনা করা হয়েছে এবং সে বিষয়ে সম্মতি বা অসম্মতি নিবেদন করা হয়েছে। পাঠক তা যথাস্থানে মন্তব্যে দেখবেন এবং তা কেবল সাহিত্যিক দৃষ্টিতেই গ্রহণ করবেন, ব্যক্তিগত রূপে নয়।
২৫. উদয়পুর সংস্করণ (২০১০)-এর সমালোচনা—
‘পরোপকারিণী সভা আজমের’-এর পক্ষ থেকে, ঋষি-উক্ত এবং ঋষি-সংশোধিত ‘মূলপ্রতি’-ভিত্তিক ৩৭তম ও ৩৮তম সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার পর, ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ‘कब तक मौन रहेंगे’ নামক গ্রন্থ প্রকাশ ও প্রচার করে এবং অন্যান্য প্রবন্ধ রচনা ও আলোচনা-গোষ্ঠী আয়োজন করে ‘সত্যার্থপ্রকাশ ট্রাস্ট উদয়পুর’-এর পক্ষ থেকে, মহর্ষি দয়ানন্দের উত্তরাধিকারিণী এবং স্থাপিত প্রতিকে রূপ পরোপকারিণী সভা’-র বিরুদ্ধে আর্যসমাজে বিরোধ ও কলহের পরিবেশ গড়ে তোলার একটি পরিকল্পিত সূচনা করা হয়েছিল। বাহ্যতঃ এটি পরোপকারিণী সভার বিরোধ ছিল, কিন্তু পরোক্ষভাবে তা ছিল ঋষি দयानন্দের বিরোধ, কারণ উদয়পুর ট্রাস্ট যে পাঠের বিরোধ করছে এবং আজও করছে, সেটি মহর্ষির মুখ থেকে প্রকাশিত এবং তাঁর স্বহস্তে দু’বার সংশোধিত বিরল ঐতিহাসিক বাণী। সুতরাং ঐ বাণীর বিরোধ ঋষির বিরোধই বটে। স্পষ্ট যে উদয়পুর গোষ্ঠী নিজের মিথ্যা অহং এবং স্বার্থের কারণে ঋষি-বিরোধের পাপে লিপ্ত হয়েছে।
পरोপকারিণী সংস্করণের প্রতিক্রিয়ায়, সত্যার্থপ্রকাশ ট্রাস্ট উদয়পুর তাদের প্রতিষ্ঠার ২০–২৫ বছরের মধ্যে জুলাই ২০১০-এ একটি মাত্র প্রথম সত্যার্থপ্রকাশ প্রকাশ করে, যা বিরোধ এবং বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। সেই সংস্করণে প্রতিজ্ঞা-বিরুদ্ধ, বিশৃঙ্খল, ত্রুটিপূর্ণ এবং একপাক্ষিক সম্পাদনা ছিল—ফলে তার সমালোচনায় আমি, পরোপকারিণী সভার ৩৭তম সংস্করণের সম্পাদক শ্রদ্ধেয় বিরজানন্দ দয়াকরণী এবং আরও আধা-ডজন দার্শনিক ‘পরোপকারী’ পত্রিকায় বহু প্রবন্ধ লিখেছিলাম, কারণ প্রতিক্রিয়ার জন্ম হওয়া স্বাভাবিক ছিল। উদয়পুর সংস্করণের চার সমর্থিত লেখক সেই প্রবন্ধগুলোর অশুদ্ধ, যুক্তিহীন, পরস্পরবিরোধী, তর্কসর্বস্ব এবং অসভ্য উত্তর প্রদান করেন, ফলে সাহিত্যিক আলোচনা ‘বিতর্ক’ ও ‘বিরোধ’-এ পরিণত হয়।
উদয়পুর গোষ্ঠী আমাদের সাহিত্যিক প্রতিক্রিয়া দিতে না পেরে, আমাদের বিরুদ্ধে অকারণ বিষোদগার আরম্ভ করে এবং আমাদের বিরুদ্ধে ডজনখানেক প্রবন্ধ লেখে। পরে ‘ট্রাস্ট’ সেই সব প্রবন্ধ গ্রন্থাকারে ছাপিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে বিতরণ করে। প্রকৃতপক্ষে ঐ গ্রন্থটি ঋষি-বিরোধ, কুচর্চা, আর্তনাদ, অসভ্যতা, নিন্দা, একগুঁয়েমি, বিষয়ের বহির্ভূত লেখা এবং পরস্পরবিদ্বেষমূলক অশুদ্ধ উত্তরের জীবন্ত দলিল—যা সারাজীবন ওই লেখক এবং ট্রাস্টের দায়িত্বশীলদের বিবেককে দংশন করবে। অশুদ্ধতা এবং অসভ্যতায় পূর্ণ ঐ গ্রন্থ পড়তে গিয়ে পাঠক বিভ্রান্ত না হন, এবং সত্যার্থপ্রকাশ-সংক্রান্ত ভুল ব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত না হন—এই কারণে, প্রকাশকের বিশেষ অনুরোধে এই সংস্করণে উদয়পুর সংস্করণের স্থানানুগ সমালোচনা করা হয়েছে।
যখন উদয়পুর সংস্করণ প্রকাশিত হয়ে পাঠকের হাতে পৌঁছায়, তখন আমার সংস্করণের দ্বিতীয় প্রুফ দেখা হয়ে গিয়েছিল। উপর্যুক্ত পরিস্থিতিতে এবং প্রকাশকের বিশেষ অনুরোধে প্রয়োজনীয় স্থানে উদয়পুর সংস্করণের সমালোচনা যুক্ত করতে হয়েছে—যেমন পূর্ব থেকেই অন্যান্য প্রধান সংস্করণের সমালোচনা যুক্ত ছিল। উদয়পুর সংস্করণের সমালোচনা যুক্ত করা এই কারণেও প্রয়োজনীয় ছিল—কারণ একে তথাকথিত দশ জন সম্পাদক দ্বারা প্রস্তুত বলে দাবী করে পাঠকের মনে এই ভ্রম সৃষ্টি করার পরিকল্পিত প্রয়াস চালানো হয়েছে যে, এটি বহু বিদ্বান দ্বারা অনুমোদিত শ্রেষ্ঠ সংস্করণ। ফলে এর প্রভাব—সুপ্রভাব বা কুপ্রভাব—উভয়ই ব্যাপক হবে। তাই এর প্রকৃত অবস্থা পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা অপরিহার্য ছিল।
(ক) বাস্তবিক প্রশ্ন—
‘উদয়পুর সংস্করণ’-এর সম্পাদনা এবং কাজের পদ্ধতি বিষয়ে আমরা যে প্রশ্ন তুলেছিলাম, তা নিম্নরূপ—
১. ১ মার্চ ২০০৫ তারিখে চিন্তা-পর্যালোচনার পর ‘সত্যার্থপ্রকাশ ট্রাস্ট উদয়পুর’-এর দপ্তরে সত্যার্থপ্রকাশ-এর সম্পাদনার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তার লক্ষ্য ছিল—একটিমাত্র সর্বস্বীকৃত, শুদ্ধতম, সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ সংস্করণ প্রস্তুত করা। এটাই ছিল ট্রাস্টের পূর্বঘোষিত লক্ষ্য। কিন্তু ট্রাস্ট সেই লক্ষ্য পরিত্যাগ করে কেবল ‘দ্বিতীয় সংস্করণ’-কে কেন্দ্র করে একপাক্ষিক কাজ করেছে। ফলে উদয়পুর সংস্করণ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। যে কাজ ট্রাস্টের করা উচিত ছিল না, পূর্বধারণা ও পক্ষপাত থেকে তা-ই করেছে এবং নিজের অহংকে তুষ্ট করার জন্য আর্য পণ্ডিতদের মাঝে এক দুর্ভাগ্যজনক বিবাদ সৃষ্টি করেছে।
উদয়পুর সংস্করণে ঘোষণা করা হয়েছে যে এটি দশ জন পণ্ডিত-সম্পাদক দ্বারা প্রস্তুত। তারা হলেন—
১) আচার্য বিশুদ্ধানন্দ মিশ্র (সভাপতি)
২) ড. রঘুবীর বেদালংকার (সমন্বয়ক)
৩) স্বামী জগদীশ্বরানন্দ সারস্বতী
৪) ড. সুদর্শনদেব আচার্য
৫) পণ্ডিত রাজবীর শাস্ত্রী
৬) ড. ভবানীলাল ভারতীয়
৭) আচার্য বেদব্রত শাস্ত্রী (রোহতক)
৮) ধর্মসিংহ কোঠারি
৯) ড. জয়দেব আর্য (দিল্লি)
১০) বেদপ্রিয় শাস্ত্রী (সীতাবাড়ি)
সম্পাদনার ভুল এবং অসঙ্গতি দেখে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছিল—এই কাজ একজন-দুইজনের করা, দশ জনের নয়। আর্যসমাজের সামনে দশ জন সম্পাদক দেখানো হয়েছে—এটি ছিল জনসাধারণকে প্রভাবিত করার বাহুল্য-প্রদর্শন। পরে তা প্রমাণিত হয়। এক প্রবন্ধে ড. রঘুবীর স্বীকার করেন ধনমসিংহ কোঠারি এক দিনও সভায় উপস্থিত হননি। জানা যায়, ড. ভবানীলাল ভারতীয় এবং আচার্য বেদব্রতও একবারও সভায় অংশ নেননি। ড. সুদর্শনদেব ও স্বামী জগদীশ্বরানন্দ মাঝপথেই প্রয়াত হন। পণ্ডিত রাজবীর শাস্ত্রী এবং আচার্য বিশুদ্ধানন্দ অসুস্থতার কারণে কাজ করতে পারেননি। ড. জয়দেব জানান—এই কাজ আসলে কেবল ড. রঘুবীর ও বেদপ্রিয় করেছেন এবং অশোক আর্য নিজের ইচ্ছামতো তা করিয়ে নিয়েছেন।
সুতরাং সত্য প্রকাশিত হলো এবং অসত্য উন্মোচিত হলো। পাঠক চিন্তা করুন—উদয়পুর ট্রাস্ট আর্যসমাজের সাথে কত বড় প্রতারণা করেছে! নিশ্চয়ই এর নেপথ্যে কোনো স্বার্থ ছিল। ট্রাস্ট এজন্য পণ্ডিতদের লবি করেছিল এবং কিছু পণ্ডিত অজানা কারণে লবিবদ্ধও হয়েছিলেন। সাহিত্যিক বিষয়ে লবিবদ্ধ হওয়া আর্য-বিদ্বানদের জন্য লজ্জাজনক আচরণ।
উদয়পুর সংস্করণের সম্পাদনা পরস্পরবিরোধী, বিশৃঙ্খল, ত্রুটিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ ও পক্ষপাতদুষ্ট। এমন ত্রুটিপূর্ণ কাজ দশ জন পণ্ডিতের হতে পারে না। এক জন একাই যেসব সংস্করণ প্রস্তুত করেছেন, তাতেই উন্নত ভাষা ও গবেষণাধর্মিতা পাওয়া যায়। তাহলে দশ জনের সম্পাদনার বিশেষত্ব কোথায়? অর্থাৎ—এটি দশ জনের সম্পাদনা নয়, এবং যদি হয়ও—তা নিষ্ফল, এবং অর্থের অপচয়। এ কেমন দশ জন ‘বিশিষ্ট পণ্ডিত’, যাদের কাজ এক জনের কাজের চেয়েও অযোগ্য?
উদয়পুর সংস্করণে অধিকাংশ গ্রহণ করা হয়েছে পূর্ববর্তী সম্পাদকদের, যেমন—স্বামী বেদানন্দ সারস্বতী, পণ্ডিত ভগবদ্দত্ত, পণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসক এবং পরোপকারিণী সভার। কিন্তু তাকে নিজেদের মৌলিক কাজ বলে দাবি করা হয়েছে—যখন উদয়পুর সংস্করণের স্বীয় মৌলিক সংযোজন অতি সামান্য। ঐ পণ্ডিতদের প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশও—
এইভাবে পাঠকদের ওপর এই ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে যেন এই সমস্ত কাজ সম্পাদকদেরই মৌলিক রচনা। দ্বিতীয় প্রশ্ন উঠছে— যখন এটি মৌলিক রচনা নয়, তখন এই অনুকরণমূলক প্রকাশনার প্রয়োজনই বা কী ছিল? এইভাবে কেবলমাত্র একটি ভিন্ন সংস্করণই বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সংস্করণকে “মানক সংস্করণ” নামে অভিহিত করা হয়েছে, পাঠকদের আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে। এর অর্থ দাঁড়ায়— এ পর্যন্ত প্রকাশিত সকল সংস্করণ, এমনকি মহর্ষির উপস্থিতিতে কথিতভাবে মুদ্রিত দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪) এবং যেসব বিদ্বানের অনুসরণ উদয়পুর পক্ষ গ্রহণ করেছে— সেসব সংস্করণও ‘অমানক’। এটি ‘মানক’–এর একটিও মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়।
‘মানক’–এর সংজ্ঞা হলো— “যেখানে বানান, ভাষা, শৈলী, সম্পাদনার শুদ্ধতা, উৎকর্ষ, সমরূপতা থাকবে এবং প্রকাশনার দৃষ্টিতে যা সুসজ্জিত ও সুন্দরভাবে প্রকাশিত হবে।” উদয়পুর সংস্করণে এর মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্যও নেই। সেখানে শত শত বানান–সম্পর্কিত ভুল রয়েছে। সম্পাদনা ত্রুটিপূর্ণ এবং প্রকাশনা রুচিহীন ও নিম্নমানের।
ছয়–সাত বছর পূর্বে পরোপকারিণী সভার মূল–হস্তলিপি ভিত্তিক সংস্করণ যখন প্রকাশিত হয়, তখন উদয়পুর ন্যাসের কার্যনির্বাহী সভাপতি শ্রী অশোক আর্য তার বিরোধে পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন এবং সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা বিরোধে বই লিখেছিলেন, প্রবন্ধ লিখেছিলেন, আলোচনা সভা করেছিলেন। তখন শ্রী অশোক আর্য–র বিরোধ নির্ভর ছিল এই ঘোষণাগুলোর ওপর—
(ক) ঋষির প্রচলিত দ্বিতীয় সংস্করণে একটি কমা বা বিরামচিহ্ন পর্যন্ত পরিবর্তন হওয়া উচিত নয়; অর্থাৎ দ্বিতীয় সংস্করণ যেমন আছে তেমনই প্রকাশিত হওয়া উচিত।
(খ) যদি কোনো পরিবর্তন করাই প্রয়োজন হয় তাহলে তা মূলপাঠে নয়, শুধুমাত্র টীকা অংশে হওয়া উচিত।
(গ) ঋষির ভাষায় নিজের ভাষা প্রবেশ করানো উচিত নয়।
এখন তাঁরা যে উদয়পুর সংস্করণ প্রকাশ করেছেন, তাতে কমা–বিরাম কে জানে কোথায় উড়ছে! ভাব থেকে ভাষা পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি পরিবর্তন–সংশোধন হয়েছে। না সেটি দ্বিতীয় সংস্করণ, আর না মূল প্রতিলিপি ভিত্তিক সংস্করণ। মূলপাঠে শুধু পরিবর্তনই নয়, কোথাও কোথাও ঋষির ভাষা সরিয়েও দেওয়া হয়েছে। ঋষির ভাষার জায়গায় নিজের ভাষা সীমাহীনভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কোথাও ঋষির শব্দ বাদ দিয়ে তার স্থানে নিজেদের শব্দ বসানো হয়েছে, কোথাও ঋষি প্রদত্ত শ্লোকার্থকে ভুল বলে ধরে পরিবর্তন করেছে, বহু স্থানে ঋষির নির্ধারিত পাঠক্রম বদলে দিয়েছে, তিনটি আদিতম প্রতিলিপি/সংস্করণে সমানভাবে প্রাপ্ত পাঠগুলো স্বেচ্ছায় পরিবর্তন করেছে, কোথাও ঐতিহাসিক তথ্যকে বিকৃত করেছে; কোথাও লেখকের ভুলে যুক্ত ভুল আয়াত যেগুলো প্রায় সবাই গ্রহণ করেছেন— তা গ্রহণ করেনি, কিন্তু নিজেদের পক্ষ থেকে নতুন আয়াত ঋষিপাঠে সংযোজন করেছে।
বিরোধ দূর করার অঙ্গীকার করা হয়েছিল, কিন্তু একটি বিরোধও দূর করা হয়নি (প্রমাণ এই গবেষণা সংস্করণের টীকা অংশে দেখা যাবে; এখানে দীর্ঘতার কারণে দেওয়া হল না)। শ্রী অশোক আর্য তাঁর পূর্ব প্রতিজ্ঞা ও মতবাদ নিঃশব্দে কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দিয়েছেন— যেগুলোর ওপর ভিত্তি করেই তিনি পরোপকারিণী সভা এবং স্বামী জগদীশ্বরানন্দ–এর সংস্করণের বিরোধ করেছিলেন। তিনি তাঁর মতবাদ কেন বদলালেন— তার কোনো কারণ প্রকাশ করলেন না এবং সেই মতবাদের ভিত্তিতে যে বিরোধ করেছিলেন সেই জন্য একটাও ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন না। এখন নতুন মতবাদ গ্রহণ করে তার ভিত্তিতে সত্যার্থপ্রকাশ প্রকাশ করলেন এবং এ কারণেই একটি গ্রন্থ ছাপিয়ে অন্যদের বিরুদ্ধে বিরোধ করছেন— কেন তাঁর করা পরিবর্তনগুলো হুবহু গ্রহণ করা হচ্ছে না, এই অভিযোগে। যেন শ্রী অশোক আর্য “সত্যার্থপ্রকাশ ন্যাস” নামের আড়ালে সত্যার্থপ্রকাশকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং নিজেকে তার স্বয়ম্ভূ শাসক ভেবে বসেছেন— যে ইচ্ছা মতো, যখন ইচ্ছা মতো, যেকোনোভাবে সত্যার্থপ্রকাশের ওপর মনমতো পরিবর্তন করাই যেন তাঁর অধিকার। অথচ আইনত এই অধিকার মহর্ষি দয়ানন্দ স্বহস্তে নথিভুক্ত করে তাঁর উত্তরাধিকারিণী প্রতিষ্ঠান ‘পরোপকারিণী সভা’কে দিয়েছেন।
উদয়পুর সংস্করণের সম্পাদক মণ্ডলীতে এমনও সম্পাদক রয়েছেন যারা সারাজীবন সংশোধনের কারণে পরোপকারিণী সভা এবং পণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসক–এর তীব্র বিরোধ করেছেন। এখন তাঁরাই পণ্ডিত মীমাংসক প্রস্তাবিত সেই সংশোধনগুলোকেই গ্রহণ করেছেন এবং মোট দুই হাজারেরও বেশি সংশোধন করেছেন। তাঁদের ধারণা কেন বদলালো— সে সম্পর্কে আর্যসমাজকে একটিও বক্তব্য দেওয়া হয়নি। যদি বদলেই থাকে, তবে পণ্ডিত মীমাংসক এবং অন্যদের বিরোধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা উচিত ছিল। কিন্তু দুঃখের একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। এটি স্বাধীনতা নয়— এটি স্বেচ্ছাচারিতা, এটি অশিষ্টতা।
যখন ইচ্ছা কারও বিরোধ করা আর যখন ইচ্ছা সেই একই কাজ নিজে করে নেওয়া— এ আবার কেমন শালীন আচরণ?
আর দেখুন— সেই “উদয়পুর ন্যাস”–ই যাদের নেতৃত্বে পণ্ডিত বিশুদ্ধানন্দ–এর সভাপতিত্বে সভায় স্বামী জগদীশ্বরানন্দ–এর সংস্করণের বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা হয়েছিল— সেই একই স্বামীজিকে পরে উদয়পুর সংস্করণের সম্পাদকমণ্ডলীতে রাখা হলো এবং তাঁর সংশোধনগুলো গ্রহণ করা হলো। এরপর জানা যায় না সে বিরোধ কোথায় মিলিয়ে গেল।
আরেকটি অদ্ভুত বিষয় দেখুন— এই স্বামীজির বিরোধে পণ্ডিত বিশুদ্ধানন্দের লেখা প্রবন্ধ— “সত্যার্থপ্রকাশে আর্যসমাজের পণ্ডিতমন্যদের আক্রমণ”— অন্য লেখাগুলোর সঙ্গে বিতরণও করা হয়েছিল। তারপর সেটি বন্ধ রাখা হয় এবং গ্রন্থে ছাপা হয়নি। সম্ভবত তখন অশোকজির মনে হলো— স্বামীজি এখন আমাদের সম্পাদকমণ্ডলীতে আছেন— এখন তাঁকে আর বিরোধ করা উচিত নয়। তার মানে হলো— মতবাদ নয়, লবিই আসল ভিত্তি। দেখুন, নিজের লবিতে প্রবেশ করলেই স্বামীজি আর বিরোধের উপযুক্ত থাকেন না।
পাঠকবৃন্দ বিচার করুন— ন্যাস এবং তার সম্পাদকরা আর্যসমাজে কেমন অনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন!
ন্যাস ও তার সম্পাদকরা সত্যার্থপ্রকাশের বিনষ্টি ঘটিয়েছেন— উদয়পুর সংস্করণের মাধ্যমে।
একদিকে দ্বিতীয় সংস্করণ অক্ষুণ্ণ রাখার নামে তার আদিম অপরিশোধিত রূপ প্রকাশ করেছেন— যাতে না পড়ার সুবিধা আছে, না পড়ানোর; না যথাযথ প্যারাগ্রাফ বিভাজন আছে, না ঋগ্বেদের মন্ত্রে স্বরচিহ্ন আছে; না ভাষা প্রাঞ্জল, না মুদ্রণ উৎকৃষ্ট; না পাঠ সম্পূর্ণ।
অন্যদিকে সেখানে দুই হাজারেরও বেশি পরিবর্তন–সংশোধন করেছেন। যখন মূলরূপ অক্ষত রাখার দাবি ছিল— তখন দুই হাজারেরও বেশি পরিবর্তন কেন করা হলো? আর যখন পরিবর্তন করেই ফেলেছেন— তখন তাকে আবার “অক্ষত দ্বিতীয় সংস্করণ” বলা যায় কীভাবে? উভয় দিকেই পাঠকদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এটি না অক্ষত সংস্করণ, না দ্বিতীয় সংস্করণ, না সংশোধিত সংস্করণ, না পাঠযোগ্য ও সুবিধাজনক সংস্করণ। এখানে স্পষ্টভাবেই পরস্পরবিরোধী আচরণ প্রকাশিত হয়েছে।
পরিবর্তন ও সংশোধনের পদ্ধতিতেও পাঠকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। নিজেদের ঘোষণায় — উদয়পুর সংস্করণের সম্পাদকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে সমস্ত সংশোধন ও মুদ্রণপ্রমাদ মন্তব্যে প্রদর্শিত হবে। সে অনুযায়ী মন্তব্যে ৫০১টি সংশোধন এবং ৩২৪টি মুদ্রণপ্রমাদ প্রদর্শিত হয়েছে।
কিন্তু সত্য তা নয়।
উদয়পুর সংস্করণে বাস্তবে দুই হাজারেরও বেশি পরিবর্তন ও সংশোধন রয়েছে। ঘোষণামতে ক্ষুদ্র-বৃহৎ প্রতিটি পরিবর্তনই মন্তব্যে দেখানো উচিত ছিল — কিন্তু তা করা হয়নি। প্রায় ১২০০ সংশোধন মন্তব্যে দেখানোই হয়নি।
পাঠক বিচার করুন — এই গোপন ব্যবহারের নেপথ্যে নিশ্চয়ই কোনো স্বার্থ লুকিয়ে আছে। সম্ভবত এমন যে— এত পরিবর্তন দেখালে দ্বিতীয় সংস্করণ হিসেবে দাবি করা কঠিন হয়ে পড়ত এবং পাঠকরা দুই হাজার সংশোধনের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলতে পারতেন— তাই কিছু পরিবর্তন মন্তব্যে দেখিয়ে বাকিগুলো নিঃশব্দে ঢুকিয়ে দেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছে।
এটাই সেই নীতি—
"সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না।"
পরিবর্তন মানেই পরিবর্তন — তা ছোট, বড়, গৌণ বা প্রধান যাই হোক। সেই পরিবর্তন পাঠকদের থেকে লুকানো— অনৈতিকতা, প্রতারণা, স্বার্থপরতা।
২৫. উদয়পুর সংস্করণ (২০১০) এর পর্যালোচনা—‘পরোপকারিণী সভা আজমের’ এর তরফ থেকে, ঋষিপ্রোক্ত এবং ঋষিসংশোধিত ‘মূলপ্রতি’ প্রধানত ভিত্তি করে ৩৭, ৩৮ সংস্করণ প্রকাশের পরে, ২০০৪ সালে “কতক্ষণ নীরব থাকবেন” নামক বই প্রকাশ ও বিতরণ করে এবং অন্যান্য প্রবন্ধ লিখে ও সেমিনার আয়োজন করে ‘সত্যার্থপ্রকাশ ন্যাস উদয়পুর’ মহর্ষি দয়ানন্দের উত্তরাধিকারিণী এবং পরোপকারিণী সভা আজমেরের বিরুদ্ধে আর্যসমাজে বিরোধ এবং কলহের পরিবেশ তৈরিতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিয়েছিল। দেখা যায়, এটি সরাসরি যদিও পরোপকারিণী সভার বিরোধ ছিল, তবে পরোক্ষভাবে ঋষি দয়ানন্দের বিরোধই ছিল, কারণ উদয়পুর ন্যাস যা বিরোধিতা করছে, এবং এখনও করছে, তা মহর্ষির মুখ থেকে প্রকাশিত এবং তার করকমল দিয়ে দু’বার সংশোধিত তাঁর মূল্যবান ঐতিহাসিক বাণী। তার বিরোধ ঋষির বিরোধই। স্পষ্ট যে, উদয়পুর দল তাদের মিথ্যা অহংকার ও স্বার্থের কারণে ঋষি-বিরোধের পাপে লিপ্ত হয়েছে।
পরোপকারিণী সংস্করণের প্রতিক্রিয়ায়, সত্যার্থপ্রকাশ ন্যাস উদয়পুর তাদের প্রতিষ্ঠার ২০–২৫ বছরের কার্যকাল শেষে জুলাই ২০১০ সালে প্রথম একমাত্র সত্যার্থপ্রকাশ প্রকাশ করে যা বিরোধ ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সেই সংস্করণে প্রতিজ্ঞাভঙ্গ, অগোছালো, दोषপূর্ণ এবং একপক্ষীয় সম্পাদনার কারণে, তার পর্যালোচনায়, পরোপকারিণী সভার ৩৭তম সংস্করণের সম্পাদক শ্রী বীরজানন্দ দৈবকর্ণি এবং অর্ধ ডজন অন্যান্য পণ্ডিতরা *পরোপকারী’ পত্রিকায় বহু প্রবন্ধ লিখেছেন। উদয়পুর সংস্করণের সঙ্গে যুক্ত চারজন লেখক তাদের প্রবন্ধের অসঙ্গতিপূর্ণ, অপর্যাপ্ত, পরস্পরবিরোধী, বিতণ্ডাপূর্ণ এবং অসভ্য উত্তর দিয়েছেন, যার কারণে সাহিত্যিক সংলাপ “বিরোধ” ও “বিরোধিতা” তে রূপান্তরিত হয়েছে।
উদয়পুর দল আমাদের সাহিত্যিক প্রবন্ধের সাহিত্যিক উত্তর দিতে না পেরে আমাদের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক বিষবিষর্ণ শুরু করেছে এবং বহু প্রবন্ধ আমাদের বিরুদ্ধে লিখে ‘ন্যাস’ তা বই আকারে প্রকাশ করেছে এবং পরে সেই বই জোর করে বিতরণ করেছে। প্রকৃতপক্ষে, এই বই ঋষি-বিরোধ, বিতণ্ডা, বিলাপ, অসভ্যতা, নিন্দা, হট, বিষয়ান্তর লেখা এবং পরস্পরবিরোধী অসঙ্গত উত্তরগুলির জীবন্ত দলিল, যা জীবনভর এই লেখক ও ন্যাসের কর্মকর্তাদের নাড়িয়ে রাখবে। অসঙ্গতি এবং অসভ্যতায় ভরা এই বই থেকে পাঠক বিভ্রান্ত হবেন না এবং এতে সত্যার্থপ্রকাশ সম্পর্কিত অসঙ্গত ব্যাখ্যা থেকে বিভ্রান্ত হবেন না। এই কারণে এই সংস্করণে প্রকাশকের বিশেষ অনুরোধে উদয়পুর সংস্করণের যথাস্থিত পর্যালোচনা করা হয়েছে।
যখন উদয়পুর সংস্করণ প্রকাশিত হয়ে পাঠকের হাতে পৌঁছায়, তখন আমার সংস্করণের দ্বিতীয় প্রুফ ইতিমধ্যে দেখা হয়ে গেছে। উল্লিখিত পরিস্থিতি এবং প্রকাশকের বিশেষ অনুরোধে প্রয়োজনীয় স্থানে উদয়পুর সংস্করণের পর্যালোচনা সংযুক্ত করতে হয়েছে, যেমন আগে থেকে অন্যান্য প্রধান সংস্করণের পর্যালোচনা বিদ্যমান ছিল। উদয়পুর সংস্করণের পর্যালোচনা সংযুক্ত করা এই কারণে প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে যে এটি দাবি করা হয়েছে যে দশজন সম্পাদক দ্বারা এটি সম্পাদিত হয়েছে এবং পাঠকের উপর এই প্রভাব ফেলা হয়েছে যে এটি সর্বাধিক পণ্ডিতদের দ্বারা স্বীকৃত সংস্করণ। স্পষ্ট যে, এর প্রভাব পাঠকের উপর নেতিবাচকও হতে পারে। এই কারণে এর বাস্তব অবস্থা পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
(ক) ব্যবহারিক প্রশ্ন—‘উদয়পুর সংস্করণ’ সম্পর্কিত সম্পাদনা এবং তার কার্যশৈলীর বিষয়ে যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে তা নিম্নরূপ—
১. ১.৩.২০০৫ তারিখে, আলোচনার পরে, ‘সত্যার্থপ্রকাশ ন্যাস উদয়পুর’ এর অফিসে, সত্যার্থপ্রকাশের সম্পাদনার জন্য যে পণ্ডিত কমিটি গঠিত হয়েছিল তার লক্ষ্য ছিল সর্বগ্রহণযোগ্য, একমাত্র, শুদ্ধতম, সর্বাঙ্গীণ সংস্করণ তৈরি করা। এটি ন্যাসের পূর্ব ঘোষিত লক্ষ্য ছিল। ন্যাস সেই লক্ষ্য এড়িয়ে কেবল দ্বিতীয় সংস্করণকে লক্ষ্য রেখে একপক্ষীয় কাজ করেছে। ফলে উদয়পুর সংস্করণ লক্ষ্যবিহীন হয়েছে। যা কাজ ন্যাসকে করা উচিত ছিল না, তা পূর্বগৃহীত কারণে করা হয়েছে এবং নিজের অহং সন্তুষ্ট করার জন্য আর্যপণ্ডিতদের মধ্যে একটি দুর্ভাগ্যপূর্ণ বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
উদয়পুর সংস্করণে ঘোষণা করা হয়েছে যে এটি দশজন পণ্ডিতের সম্পাদক-কমিটি দ্বারা সম্পাদিত। তারা হলেন—১. আচার্য বিশুদ্ধানন্দ জী মিশ্র (সভাপতি), ২. ড. রঘুবীর জী বেদালঙ্কার (সমন্বয়ক), ৩. স্বামী জগদীশ্বরানন্দ জী সরস্বতী, ৪. ড. সুদর্শনদেব জী আচার্য, ৫. পণ্ডিত রাজবীর জী শাস্ত্রী, ৬. ড. ভবানীলাল জী ভারতীয়, ৭. আচার্য বেদব্রত জী শাস্ত্রী (রোहतক), ৮. শ্রী ধর্মসিং জী কোঠারি, ৯. ড. জয়দেব জী আর্য (দিল্লি), ১০. শ্রী বেদপ্রিয় জী শাস্ত্রী (সীতাবাড়ি)। সম্পাদনার ত্রুটি ও অসঙ্গতি দেখে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল যে এটি এক বা দুইজন দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে, এটি দশজন পণ্ডিতের কাজ হতে পারে না। আর্যজনতার সামনে দশজনের নাম দিয়ে মিথ্যা প্রচার করা হয়েছে, মানুষকে প্রভাবিত করতে অট্টালিকা দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ের সত্যতা ক্রমে প্রমাণিত হয়েছে। এক প্রবন্ধে ড. রঘুবীর জী স্বীকার করেছেন যে শ্রী ধর্মসিং কোঠারি এক দিনও এতে অংশগ্রহণ করেননি। আমাদের আলোচনার সময় জানা গেছে যে ড. ভবানীলাল জী ভারতীয় এবং আচার্য বেদব্রত জী শাস্ত্রীও একবারও এতে উপস্থিত ছিলেন না। ড. সুদর্শনদেব জী এবং স্বামী জগদীশ্বরানন্দ জী অর্ধেক সময়ে স্মৃতিশেষ হয়ে গিয়েছিলেন। পণ্ডিত রাজবীর জী শাস্ত্রী এবং আচার্য বিশুদ্ধানন্দ জীর অবদান অত্যধিক দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে ছিল না। ড. জয়দেব জী জানিয়েছেন যে এই কাজ কেবল ড. রঘুবীর জী এবং শ্রী বেদপ্রিয় জী সম্পন্ন করেছেন এবং শ্রী অশোক আর্য এটিকে নিজের রুচি অনুযায়ী সমাধা করেছেন। সত্য নিজেই প্রকাশ পেয়েছে এবং মিথ্যা উন্মোচিত হয়েছে। পাঠকরা ভাবুন, উদয়পুর ন্যাস আর্যজনতার সঙ্গে কত বড় প্রতারণা করেছে। এখানে কিছু স্বার্থও নিশ্চিতভাবেই ছিল। উদয়পুর ন্যাস এর জন্য পণ্ডিতদের লবিংও করেছে এবং কিছু পণ্ডিত অজানা কারণে লবি-বদ্ধও হয়েছে। সাহিত্য বিষয়ক লবি-বদ্ধ হওয়া আর্যপণ্ডিতদের জন্য অশোভন আচরণ।
উদয়পুর সংস্করণের সম্পাদনা পরস্পরবিরোধী, অগোছালো, दोषপূর্ণ, অসম্পূর্ণ এবং একপক্ষীয়। এমন একটি ত্রুটিপূর্ণ কাজ দশজন পণ্ডিতের হতে পারে না। এতে শুদ্ধ শ্রমসাপেক্ষ সম্পাদিত সংস্করণ ইতিমধ্যেই বিদ্যমান। তাহলে দশজনের সম্পাদনার কোন বৈশিষ্ট্য এবং লাভ কী? বলতে চাই যে এটি দশজনের সম্পাদনা নয়, এবং যদি হয়, তা বৃথা, অর্থের অপব্যয়। এরা কীভাবে বড় পণ্ডিত হতে পারে যাদের একজনের সম্পাদনা ইতিমধ্যেই বেশি যথাযথ?
উদয়পুর সংস্করণে বেশিরভাগ অনুসরণ পূর্ববর্তী সম্পাদকদের, যেমন স্বামী বেদানন্দ জী সরস্বতী, পণ্ডিত ভবগবদ্দত্ত জী, পণ্ডিত যুধিষ্ঠির জী মীমাংশক, পরোপকারিণী সভার, তবে এটিকে তাদের মৌলিক কাজ বলা হয়েছে, যদিও উদয়পুর সংস্করণের মৌলিক কাজ খুব কম। সেই পণ্ডিতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন না।
এইভাবে পাঠকদের উপর প্রভাব ফেলা হয়েছে যেন মনে হয় এই সমস্ত কাজ সম্পাদকদের মৌলিক। দ্বিতীয় প্রশ্ন উত্থিত হয়, যখন মৌলিক কাজ নেই, তখন এই অনুসরণাভিত্তিক প্রকাশনার প্রয়োজনই কী ছিল? ফলে কেবল একটি ভিন্ন সংস্করণের বৃদ্ধি হয়েছে। এই সংস্করণকে “মানক সংস্করণ” মিথ্যা নাম দেওয়া হয়েছে পাঠকদের আকর্ষণ করার জন্য। এর অর্থ হয়েছে যে, এ পর্যন্ত সকল সংস্করণ—even মহর্ষির সম্মুখে প্রকাশিত দাবিকৃত দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪) এবং যেসব পণ্ডিতদের অনুসরণ উদয়পুরের দ্বারা করা হয়েছে—তাদের সকল সংস্করণ “অমানক”। এটি “মানক” কোনও মানদণ্ডে খাপ খায় না। মানক সংজ্ঞা হলো—যাতে বানান, ভাষা, শৈলী, সম্পাদনার শুদ্ধতা, উৎকৃষ্টতা ও একরূপতা থাকে এবং প্রকাশনায় সুসংগঠিত ও সুন্দর। উদয়পুর সংস্করণে এর কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। এতে শত শত বানান সংক্রান্ত ত্রুটি বিদ্যমান। সম্পাদনা ত্রুটিপূর্ণ এবং প্রকাশনাশৈলী অপ্রসন্ন ও নিম্নমানের।
যখন ছয়–সাত বছর আগে পরোপকারিণী সভার মূল-হস্তলিখিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়, তখন উদয়পুর ন্যাসের কার্যনির্বাহী সভাপতি শ্রী অশোক আর্য তার বিরোধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তখন তার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরোধের ভিত্তি ছিল—
(ক) ঋষির প্রচলিত দ্বিতীয় সংস্করণে একটি কমা বা বিরামচিহ্নও পরিবর্তন করা যাবে না, অর্থাৎ দ্বিতীয় সংস্করণ যথावत প্রকাশিত হবে।
(খ) যদি পরিবর্তন প্রয়োজন হয়, তা মূলপাঠে নয়, মন্তব্যে করা হবে।
(গ) ঋষির ভাষায় নিজের ভাষার হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
তাদের প্রকাশিত উদয়পুর সংস্করণে কমা-বিরামচিহ্ন এলোমেলো, ২০০০–এর বেশি পরিবর্তন-সংশোধন হয়েছে। এটি নয় দ্বিতীয় সংস্করণ, নয় মূলপ্রতি সংস্করণ। মূলপাঠে পরিবর্তন হয়েছে, কোথাও কোথাও মহর্ষির ভাষা বাদ দেওয়া হয়েছে। মহর্ষির ভাষায় তাদের হস্তক্ষেপ নির্বিচারভাবে করা হয়েছে। কোথাও মহর্ষির শব্দ পরিবর্তন করে নিজেদের বসানো হয়েছে, কোথাও শ্লোকার্থ ভুল মনে করে পরিবর্তন করা হয়েছে, অনেক স্থানে ঋষির নির্ধারিত পাঠক্রম পরিবর্তিত হয়েছে। তিনটি আদিপ্রতি/সংস্করণে সমান পাঠকে ইচ্ছামত পরিবর্তন করা হয়েছে। কোথাও ঐতিহাসিক তথ্য বিকৃত করা হয়েছে, কোথাও লিপিকার ভুলপূর্বক ত্রুটিপূর্ণ আয়ত পাঠ, যা প্রায় সব সম্পাদক গ্রহণ করেছেন, তা গ্রহণ করা হয়নি, বরং নতুন আয়ত যোগ করা হয়েছে। অসঙ্গতি দূর করার প্রতিজ্ঞা হয়েছে, কিন্তু একটিও দূর করা হয়নি।
শ্রী অশোক আর্য পূর্ব প্রতিজ্ঞা/ধারণাগুলো গোপনভাবে বাতিল করেছেন, যেগুলো দ্বারা তারা পরোপকারিণী সভা ও স্বামী জগদীশ্বরানন্দ জীর সংস্করণের বিরোধ করেছিলেন। তারা নিজের নতুন ধারণা তৈরি করে তার ভিত্তিতে সত্যার্থপ্রকাশ প্রকাশ করেছেন এবং বই প্রকাশ করে অন্যের বিরোধ করছেন যে, তাদের পরিবর্তন কেন স্বীকৃত হচ্ছে না। যেন শ্রী অশোক আর্য ‘সত্যার্থপ্রকাশ ন্যাস’ আড়ালে সত্যার্থপ্রকাশকে নিজের সম্পত্তি এবং নিজেকে স্বয়ম্ভূ নির্দেশক মনে করছেন। তারা যখন ইচ্ছে, ইচ্ছামতো, মনমতো হস্তক্ষেপ করতে পারবে, অথচ আইনীভাবে উত্তরাধিকারী তাদের স্থানাপন পরোপকারিণী সভা, যা মহর্ষি দয়ানন্দ স্বাক্ষরিতভাবে রেজিস্ট্রি করেছেন।
উদয়পুর সংস্করণের সম্পাদক-কমিটিতে এমন সম্পাদক রয়েছেন যারা সমগ্র জীবনে পরোপকারিণী সভা ও পণ্ডিত যুধিষ্ঠির জী মীমাংশক ইত্যাদির সংশোধনের বিরোধী ছিলেন। এখন তারা সেই একই সংশোধন গ্রহণ করেছেন এবং মোট ২০০০-এর বেশি সংশোধন করেছেন। তাদের ধারণা কেন পরিবর্তিত হয়েছে, তা আর্যজগতের কাছে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। যদি পরিবর্তিত হয়, পণ্ডিতদের বিরোধে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু এক শব্দও প্রকাশিত হয়নি। এটি স্বেচ্ছাচারিতা এবং অসভ্যতা। ইচ্ছে করলে বিরোধ, ইচ্ছে করলে নিজের কাজ করা—এটি কি কোন শিষ্ট আচরণ?
উদয়পুর ন্যাসের বই এবং সম্পাদক-কমিটির সভাপতি পণ্ডিত বিশুদ্ধানন্দ জীর নেতৃত্বে কিছু সম্পাদক স্বামী জগদীশ্বরানন্দ জীর সংস্করণের বিরোধ করেছিলেন। এখন সেই স্বামী জীকে উদয়পুর সংস্করণের সম্পাদক মণ্ডলে রেখেও সংশোধন গ্রহণ করেছেন। তাহলে সেই বিরোধ কোথায় গেল? আরও এক অদ্ভুত দিক, বিরোধে থাকা স্বামী জীর বিরুদ্ধে পণ্ডিত বিশুদ্ধানন্দ জীর লেখা প্রবন্ধ—‘সত্যার্থপ্রকাশে আর্যসমাজের পণ্ডিতদের আক্রমণ’ অন্যান্য প্রবন্ধের সঙ্গে বিতরণ করা হয়েছে কিন্তু বইয়ে মুদ্রিত হয়নি। সম্ভবত অশোক জী বুঝেছেন যে এখন তারা আমাদের সম্পাদক-কমিটিতে বসেছেন, তাই বিরোধ রাখা যায় না। অর্থাৎ বিরোধ ও বন্ধুত্বের ভিত্তি নীতি নয়, নিজের লবিং। পাঠক দেখুন ন্যাস ও তার সম্পাদক আর্যসমাজে কতটা অশালীন পরিবেশ তৈরি করেছে।
ন্যাস ও তার সম্পাদকরা সত্যার্থপ্রকাশকে নিজেদের ইচ্ছামত দুর্ব্যবস্থা করেছেন—উদয়পুর সংস্করণ হিসাবে। একদিকে দ্বিতীয় সংস্করণকে অক্ষুণ্ণ রাখার নামে এর প্রাথমিক, অপরিশোধিত রূপ প্রকাশ করেছেন, যেখানে পড়ার সুবিধা নেই, অনুচ্ছেদ বিভাজন নেই, বেদমন্ত্রে স্বর গ্রহণ নেই, ভাষা ও শৈলী শুদ্ধ নয়, মুদ্রণ খারাপ, পাঠের সমগ্রতা নেই। অন্যদিকে ২০০০-এর বেশি পরিবর্তন-সংশোধন করেছেন। যখন মূল রূপ অক্ষুণ্ণ রাখা উচিত ছিল, তখন কেন ২০০০-এর বেশি পরিবর্তন করা হলো? আর পরিবর্তন করলে এটিকে ‘অক্ষুণ্ণ’ বলা যায় কেন? পাঠক বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এটি নয় অক্ষুণ্ণ, নয় দ্বিতীয় সংস্করণ, নয় সংশোধিত, নয় সুবিধাজনক পাঠযোগ্য সংস্করণ। এটি পরস্পরবিরোধী আচরণের খোলা প্রমাণ।
পরিবর্তন-সংশোধনের শৈলীতে পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। পূর্ব প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী উদয়পুর সংস্করণের সম্পাদকরা মন্তব্যে পরিবর্তন ও মুদ্রণ ত্রুটি দেখানোর ঘোষণা করেছিলেন। তদনুযায়ী ৫০১টি সংশোধন ও ৩২৪টি মুদ্রণ ত্রুটি দেখানো হয়েছে। সত্য হলো উদয়পুর সংস্করণে ২০০০-এর বেশি পরিবর্তন-সংশোধন হয়েছে। ছোট-বড় সব পরিবর্তনই মন্তব্যে দেখানো উচিত ছিল, কিন্তু প্রায় ১২০০টি পরিবর্তন-সংশোধন মন্তব্যে দেখানো হয়নি। পাঠক বুঝুন, উদয়পুর সংস্করণের এই প্রতারণার অন্তত কিছু স্বার্থ ছিল। সম্ভবত এত পরিবর্তনের পর এটিকে দ্বিতীয় সংস্করণ প্রমাণ করতে পারবে কি না, পাঠক অবহিত না হোক—এ কারণে কিছু মন্তব্যে দেখানো হয়েছে, বাকি গোপন রাখা হয়েছে। এই প্রতারণার কৌশলকে বলে—“সাপও মারা যাক, লাঠিও না ভাঙে।” পরিবর্তন যে কোন কিছুই হোক—ছোট-বড়, गौণ-মুখ্য—তার তথ্য পাঠককে না দেওয়া অযৌক্তিকতা, প্রতারণা এবং স্বার্থপরতা।
(ক) সাহিত্যিক দিক—আমরা আমাদের প্রবন্ধে মোট একশটি প্রশ্ন উল্লেখ করে উদয়পুর সংস্করণের কার্যপ্রণালী, প্রতিজ্ঞাহীনতা, অশুদ্ধতা, অযোগ্যতা, একপাক্ষিকতা তুলে ধরেছিলাম। এর উত্তর চারজন লেখক দিয়েছেন। তাদের উত্তর অশুদ্ধ, অর্থহীন, যুক্তি-প্রমাণহীন এবং অসভ্য। একশটি বিষয়ে দেওয়া কোনো উত্তরই শুদ্ধ নয়। তারা অশুদ্ধতাগুলি স্বীকার করার উদারতা দেখাতে পারেননি। অশুদ্ধতা নির্দেশ করার পরিবর্তে উদয়পুর সংস্করণের সম্পাদকরা আমাদের গালি এবং হুমকি দিয়েছেন। অশুদ্ধকে শুদ্ধ প্রমাণ করতে সমস্ত শক্তি ব্যয় করেছেন এবং কাগজ বৃথা কালো করেছেন। এদের সকলের বিস্তারিত তথ্য গ্রন্থের মন্তব্যে দেওয়া হয়েছে; সেখানে পড়ে পাঠক নিজেই শুদ্ধ-অশুদ্ধ উত্তর বিচার করতে পারেন এবং উদয়পুর সংস্করণে বাকি অশুদ্ধতাও দেখতে পারেন, যা উদয়পুরের সম্পাদকরা হয় জানতেনই না বা উত্তর দেননি। আমার মতে, উদয়পুর সংস্করণে এমন বাকি অশুদ্ধতার সংখ্যা এখনও যথেষ্ট আছে। যদি তারা আর্যত্বের আচরণের অনুযায়ী অশুদ্ধতা স্বীকার করত, বিষয়টি সদ্ভাবে সমাধান হতো।
উদয়পুর সংস্করণের লেখকরা যে বিষয়ের উত্তর দিয়েছেন, তার মধ্যে কিছু বিপরীততামূলক ঘটনা লক্ষ্যযোগ্য—
(১) কোনও একজন লেখক সকল বিষয়ে উত্তর দেননি। এমনকি চারজন মিলে হলেও সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।
(২) চারজনের মধ্যে কেউ একজন একটি প্রশ্নের কিছু উত্তর দিয়েছে, কেউ অন্য। ফলে চারজনের উত্তর পরস্পরবিরোধী; কোনো একমত বা দ্বিমত নেই। এটি প্রমাণ করে সংস্করণটি নয় দশজন দ্বারা সম্পাদিত, নয় সকলের সম্মতিক্রমে সম্পাদিত, এবং সম্পাদনা শুদ্ধ নয়।
(৩) চারজনের মধ্যে কেউ কোনও প্রশ্নের উত্তর দিলে অন্য কেউ তা উত্তর দেননি। একজন এটি অশুদ্ধ মনে করছে, অন্যজন শুদ্ধ বলছে। চারজনের উত্তরে এই অরাজকতা দেখা যাচ্ছে। এটি তাদের অজ্ঞতা এবং পারস্পরিক অমতের পরিচায়ক।
(৪) অবাক করা বিষয়, যারা নিজেদের “বড় পণ্ডিত” ঘোষণা করেছেন, উদয়পুর সংস্করণের সঙ্গে যুক্ত লেখকদের মধ্যে কেউ আমার প্রশ্নই বুঝতে পারেননি, কেউ সত্যার্থপ্রকাশের ভাষা বুঝতে পারেননি, কেউ শ্লোকার্থ বুঝতে পারেননি, কেউ শুদ্ধ-অশুদ্ধতার পার্থক্য বুঝতে পারেননি। তাহলে উত্তর কিভাবে শুদ্ধ হতে পারে? এ কারণেই বেশিরভাগ উত্তর অশুদ্ধ এবং অর্থহীন। মন্তব্যে এটির বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে। পাঠক এ থেকে অনুমান করতে পারেন, এমন সম্পাদকদের দ্বারা সম্পাদিত সত্যার্থপ্রকাশ কেমন হবে।
(৫) উদয়পুর সংস্করণে সম্পাদনার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা ও বিরোধিতা বিদ্যমান। কোথাও বানান শুদ্ধ, কোথাও অশুদ্ধ; কোথাও অশুদ্ধ বাক্য সংশোধন, কোথাও অশুদ্ধ রেখে দেওয়া; উদ্ধৃতিগুলি কোথাও সংশোধিত, কোথাও অশুদ্ধ; গাণিতিক ত্রুটি কোথাও ঠিক, কোথাও অশুদ্ধ; পরিবর্তন কোথাও মূলপাঠে, কোথাও মন্তব্যে; পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে, কোথাও বাদ দেওয়া।
(৬) উদয়পুর সংস্করণে দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪)-এর প্রচলিত ২০০ পাঠ পরিত্যাগ করে “মূলপ্রতি” গ্রহণ করা হয়েছে। যখন আমি অন্যান্য শুদ্ধ পাঠ প্রদর্শন করে গ্রহণের পরামর্শ দিলাম, তাদের সমালোচনা করা হলো, যদিও তা ঋষি প্রোক্ত, আমার নয়। “মূলপ্রতি”কে রফপ্রতি ইত্যাদি বলে নিন্দা করা হলো। উগ্রতা থেকে উদয়পুর মণ্ডলী ভুলে গেছে যে “মূলপ্রতি” সমালোচনা করা মানে ঋষি দয়ানন্দের সমালোচনা। এভাবে ঋষি-বিরোধ করা হয়েছে। তারপরও তারা নিজেদের ‘ঋষিভক্ত’ বলার সাহস দেখাচ্ছেন।
(৭) উদয়পুর সংস্করণের সম্পাদকীয় পৃষ্ঠা “ডি”তে দাবি করা হয়েছে, সত্যার্থপ্রকাশের অসঙ্গতি সমাধান করা হয়েছে এবং পরিবর্তন না করার ঘোষণা। বাস্তব সত্য হলো, ২০০০-এর বেশি সংশোধন করা হয়েছে এবং একটিও অসঙ্গতি সমাধান করা হয়নি। যখন আমি কিছু সমাধান চেয়েছিলাম, তারা উত্তর না দিয়ে আমার ওপর অভিযোগ চাপিয়েছে যে ‘আমি ঋষি দয়ানন্দের ভুল বের করছি’। বাহ, উদয়পুর সম্পাদকরা! নিজেই অসঙ্গতি স্বীকার করেছেন, ২০০০-এর বেশি পরিবর্তন করেও ঋষির কোনো ভুল বের হয়নি, আর আমার প্রশ্নের জন্য মিথ্যা অভিযোগ চাপিয়েছেন। এটি দুর্বৃত্ততার চূড়ান্ত উদাহরণ। এমন সম্পাদককে কি “বড় পণ্ডিত” বলা যায়? এবং কি তাদের সম্পাদনা শুদ্ধ হবে? পাঠক নিজেই সিদ্ধান্ত নিন।
(৮) শ্রী অশোক আর্যের বিষয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য—
১. শ্রী অশোক আর্য বলেন, সম্পাদনার কাজ দশ পণ্ডিতের কমিটি করেছে, প্রকাশকের কোনও হস্তক্ষেপ নেই। সকল শুদ্ধ-অশুদ্ধতার সিদ্ধান্ত সম্পাদকদের। কিন্তু ন্যাসের প্রকাশিত বইয়ে সর্বাধিক (৫০–৬০) পৃষ্ঠার প্রবন্ধ লিখে সিদ্ধান্ত শ্রী অশোক আর্য দিচ্ছেন, যা তাদের কাজ নয়।
২. অনেক উত্তর তারা দিয়েছেন, যেখানে সম্পাদকদের অন্য উত্তর আছে এবং তাদের নিজস্ব উত্তরও ভিন্ন। সম্পাদকরা যেখানে ভুল স্বীকার করেছেন, সেখানে তারা করেননি। এমন ক্ষেত্রে কোন উত্তরের গ্রহণযোগ্যতা হবে? কি শ্রী অশোক আর্য সম্পাদকদের উপর মহা-সম্পাদক? এটি আমার সন্দেহকে আরও দৃঢ় করছে যে দশজন সম্পাদকদের নাম ব্যবহার করে প্রকৃত কাজ অন্য কেউ করেছে এবং ন্যাস শুধুমাত্র দশজন পণ্ডিতের নাম ব্যবহার করেছে, কাজ নিজের ইচ্ছামতো করেছে।
৩. শ্রী অশোক আর্য উত্তর দেওয়ার জন্য সরাসরি প্রবেশ করেছেন, কিন্তু সম্পাদনার অনুমোদিত মানদণ্ড সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। অথবা তারা জানবুঝে পাঠকদের ভুল বোঝাচ্ছেন। সম্পাদক কমিটি কোথাও প্রতিজ্ঞা করেনি যে “অধিকাংশ পূর্ব সম্পাদক দ্বারা স্বীকৃত পাঠ আমরা গ্রহণ করব বা এটি আমাদের পাঠ-নির্ধারণের মানদণ্ড হবে।” শ্রী অশোক আর্য তাদের সমস্ত উত্তর পূর্ব সম্পাদকদের পাঠ-তালিকা প্রদর্শন করে ভিত্তি হিসেবে দিয়েছেন। স্পষ্টত তাদের সব উত্তর প্রতিজ্ঞাবিরোধী এবং পাঠকদের বিভ্রান্ত করার জন্য। ৩৯টির মধ্যে ৩৫ উত্তর তালিকা ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে, তাই প্রতিজ্ঞাবিরোধী হওয়ায় তা অকার্যকর।
যদি ধরে নেওয়া হয় যে তারা এই ভিত্তিকেই প্রমাণ গ্রহণ করেছেন, তবে প্রশ্ন ওঠে, পূর্ব সম্পাদকদের অন্যান্য অনেক পাঠ কেন তারা গ্রহণ করেননি? যদি তারা পূর্ব পাঠই গ্রহণ করতে চায়, তবে নতুন একটি সংস্করণ কেন প্রকাশিত হলো, তারা পূর্ব সংস্করণ গ্রহণ করতেন? শ্রী অশোক আর্য তাদের নিজের গ্রহণযোগ্য মানদণ্ডও ভেঙে দিয়েছেন। পূর্ব সম্পাদকদের তালিকা প্রদর্শন করে দেখিয়েছেন যে সবাই আমাদের মতো পাঠ গ্রহণ করেছে, এবং তারপর তাদের নয়টি পাঠকে ভুল ঘোষণা করেছেন। এই নয়টি পাঠের ক্ষেত্রে, নিজেদের প্রতিজ্ঞা কেন ভঙ্গ হলো? শ্রী অশোক উত্তর দেওয়ার সময় জানতেন না কোন ভিত্তিতে উত্তর দেওয়া উচিত এবং কী উত্তর দিচ্ছেন। শুধু উত্তর নামের নামে ৫০–৬০ পৃষ্ঠা কালো হয়েছে। এমন ব্যক্তি কি সত্যার্থপ্রকাশের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্য?
৪. একটি অদ্ভুত গোলমাল লক্ষ্য করুন। প্রকাশক থেকে লেখক হওয়া শ্রী অশোক আর্যের কোনো বক্তব্য উদ্ধৃত করলে সম্পাদক কমিটির সংযোজক ডঃ রঘুবীরজি বলছেন, “আপনি কেন বীজ মেশাচ্ছেন?” একইভাবে শ্রী অশোক আর্য বলছেন, “আমাদের সম্পাদনার সঙ্গে কিছু নেই, এটি সম্পাদনা কমিটির কাজ।” অন্যদিকে ডঃ রঘুবীরজি বীজ অর্থাৎ শ্রী অশোক আর্যের সমর্থনে লিখছেন, আর শ্রী অশোক আর্য ৫০–৬০ পৃষ্ঠার প্রবন্ধ লিখে বীজ অর্থাৎ সম্পাদকদের সমর্থন দিচ্ছেন এবং নিজেই পাঠের উপর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। দুটির মধ্যে কি কৌশল, পাঠকদের বিভ্রান্ত করার জন্য?
৭. শ্রী অশোক আর্য আরও একটি চালাক কাজ করেছেন। আমার লিখিত অসম্পূর্ণ উদ্ধৃতিগুলো উদ্ধৃত করে আর্যজনদের উত্তেজিত করতে কয়েকশো আর্যসমাজে একটি পত্র প্রেরণ করেছেন, যেখানে ২০–২২টি পাঠ সংযুক্ত ছিল, এবং আমাকে অভিযোগ করা হয়েছিল যে “তিনটি সংস্করণ (মূলপ্রতি, মুদ্রণপ্রতি, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৮৮৪)-এ একই রকম পাঠ পরিবর্তনের পরামর্শ দিচ্ছেন।” শ্রী অশোক আর্যের ষড়যন্ত্র দেখুন—আমি শুধু পরামর্শ দিচ্ছিলাম, তাই তাদের দৃষ্টিতে ‘ঋষি-বিরোধী’ হয়ে গেলাম। তারা উদয়পুর সংস্করণে এমন কয়েক ডজন পাঠ, যা তিনটি সংস্করণে একই রকম, পরিবর্তন করে প্রকাশ করেছেন এবং সত্যার্থপ্রকাশ বিক্রি করেছেন। তারা এখনও নিজেদেরকে নিখুঁত ঋষিভক্ত মনে করছেন। আমি “পেরোপকারী” পত্রিকায় ২৫টি উদাহরণ দেখিয়েছি এবং উত্তর চেয়েছি, কিন্তু আজও কোনো অভিযোগের উত্তর দেননি। ২০–২২ উদ্ধৃতি উদ্ধৃত করার সময়ও তারা ছল-কৌশল ব্যবহার করেছেন, কারণ অনেক উদ্ধৃতি তিনটি সংস্করণে একই রকম ছিল না। এর জন্য প্রবাদ আছে, “ভেড়া নিজের কালো রঙ দেখে না, অন্যের কালো রঙ দেখে ক্ষিপ্ত হয়।” পরামর্শ দেওয়া অপরাধ নয়, কিন্তু শ্রী অশোক আর্য নিঃসন্দেহে ‘মহা-অপরাধী’, যারা তিনটি সংস্করণে একই রকম ঋষি-পাঠ পরিবর্তন করেছেন এবং প্রকাশও করেছেন। এটি সত্যার্থপ্রকাশের আড়ালে নিম্নমানের রাজনীতি।
(ই) সিদ্ধান্ত টেবিল—
মন্তব্যে যথাস্থানে উদয়পুর সংস্করণের চারজন লেখকের দেওয়া উত্তর পর্যালোচনা করা হয়েছে। অনেক কারণে নাম উল্লেখ করা হয়নি। যৌক্তিকতার ভিত্তিতে তাদের নাম এবং ক্রম নিম্নরূপ—
প্রথম লেখক—ডঃ রঘুবীরজি বেদালঙ্কার।
দ্বিতীয় লেখক—শ্রী বেদপ্রকাশজি শাস্ত্রী।
তৃতীয় লেখক—শ্রী অশোকজি আর্য (প্রকাশক)।
চতুর্থ লেখক—শ্রী বেদপ্রকাশজি শ্রোত্রিয় (অসংযুক্ত লেখক)।
পাঠক এই বিশেষণগুলোর মাধ্যমে মন্তব্যের ভাষায় এই লেখকদের চেনবেন।
“পেরোপকারী” পত্রিকার মাধ্যমে উদয়পুর মণ্ডলীর সামনে এখন পর্যন্ত উপস্থাপিত একশটি সাহিত্যিক প্রশ্নের উত্তরে চারজন লেখক কত প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছেন, কত উত্তর দেননি, কত অশুদ্ধ উত্তর দিয়েছেন এবং কত অশুদ্ধতা স্বীকার করেছেন, তার তথ্য নিম্নোক্ত তালিকায় দেওয়া হয়েছে—
| ক্র. নং | লেখকের নাম | মোট কত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন | কত উত্তরে ভুল আছে | কত ভুল স্বীকার করেছেন | কত প্রশ্নের উত্তর দেননি |
|---|---|---|---|---|---|
| ১ | ডঃ রঘুবীর জি বেদালঙ্কার | ১০ | ১০ | একটিও নয় | ১০ |
| ২ | শ্রী বেদপ্রিয় জি শাস্ত্রী | ২৯ | ১৪ | ৭ | ১৫ |
| ৩ | শ্রী অশোক জি আর্য | ৪৪ | ২৮ | ১৩ | ১৬ |
| ৪ | শ্রী বেদপ্রকাশ জি শ্রোত্রিয় | ৩৬ | ২৮ | ৮ | ৬৪ |
উদয়পুর সংস্করণের সাথে সম্পর্কিত একশটি প্রশ্নের মধ্যে, প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে কতটিতে, কতটিতে ভুল হয়েছে এবং কোন লেখক কতটি ভুল স্বীকার করেছেন বা কত প্রশ্নের উত্তরই দেননি, তা তালিকায় দেখানো হয়েছে।
পাঠকগণ লক্ষ্য করুন, এই তালিকা প্রমাণ করে যে কোনো এক লেখকই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি, এবং চারজন লেখক মিলেও সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। চারজনের দেওয়া শুদ্ধ–অশুদ্ধ উত্তরের মধ্যে কোনো একমত বা ভিন্নমতও এক নয়, যা নির্দেশ করে যে এটি দশজন পণ্ডিত দ্বারা সম্পাদিত সংস্করণ নয়। তালিকা আরও দেখায় যে আজও আমাদের অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর উদয়পুর মণ্ডলী দিতে সক্ষম হয়নি।
উদয়পুর সংস্করণের সঙ্গে সম্পর্কিত একশটি প্রশ্নের মধ্যে, প্রতিটি প্রশ্নের কতটিতে উত্তর দেওয়া হয়েছে, কতটিতে ভুল রয়েছে এবং কোন লেখক কতটি ভুল স্বীকার করেছেন বা কত প্রশ্নের উত্তরই দেননি, তা তালিকায় দেখানো হয়েছে।
পাঠকগণ লক্ষ্য করুন, তালিকাটি প্রমাণ করে যে কোনো এক লেখকই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি, এবং চারজন লেখক মিলেও সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। চারজনের দেওয়া শুদ্ধ–অশুদ্ধ উত্তরের মধ্যে কোনো একমত বা ভিন্নমতও নেই, যা নির্দেশ করে যে এটি দশজন পণ্ডিত দ্বারা সম্পাদিত সংস্করণ নয়। তালিকাটি আরও দেখায় যে আজও অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর উদয়পুর মণ্ডলী দিতে সক্ষম হয়নি।
(ই) মনুস্মৃতি বিষয়ক গবেষণামূলক কাজের ওপর আক্রমণ—কিছু সাহিত্যিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে এবং যুক্তিপূর্ণভাবে আমি ৩০ বছর আগে সম্পন্ন করা ‘মনুস্মৃতির প্রক্ষেপানুসন্ধান ও ভাষ্য’ কাজটি মনু এবং মনুস্মৃতির মর্যাদা, মহিমা ও গৌরববর্ধক প্রমাণিত হয়েছে। এর ফলে ‘মনুবাদ’ নামে যা বিরোধ করা হচ্ছিল তা কমে গেছে এবং মহর্ষি দয়ানন্দের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে, কারণ মনুস্মৃতির রক্ষা ও মর্যাদায় রক্ষক হিসেবে ঋষি দয়ানন্দের সাহিত্যও রক্ষা পেয়েছে। আর্যসমাজের জন্য সেই কাজটি ‘মাইলফলক’ প্রমাণিত হয়েছে। সত্যার্থপ্রকাশ উদয়পুর-সংস্করণে করা আমাদের প্রশ্নের কারণে উদয়পুর সংস্করণের দুই লেখক এক কুৎসিত কৌশল অবলম্বন করেছেন। ডঃ রঘুবীর জী বেদালঙ্কার আমাকে হুমকি দিয়েছেন যে যদি আমি উদয়পুর সংস্করণের ওপর লেখা চালিয়ে যাই, তবে তারা আমার ‘মনুস্মৃতি ভাষ্য’ তে লিখবেন, অর্থাৎ তাতে ত্রুটি তুলে ধরবেন এবং আমাকে আটকাগারে পাঠাবেন। এই হুমকির প্রেক্ষিতে পাঠকরা কিছু বিষয়ে ভাববেন। অর্থ হলো যে, অন্যরকমভাবে ডঃ রঘুবীর জী স্বীকার করেছেন যে তাদের উদয়পুর সংস্করণে ত্রুটি আছে। এখন সেই ত্রুটিগুলো প্রকাশ হওয়া থেকে রোধ করতে তারা বিষয়বস্তুর বাইরে হুমকি দিচ্ছেন। বিষয় সত্যার্থপ্রকাশ হলে মনুস্মৃতি হঠাৎ কোথা থেকে এসে গেল? একদিকে তারা লিখছেন যে ত্রুটি তুলে ধরে আমরা তাদের উপকার ও প্রচার করছি, কিন্তু অন্যদিকে তারা হুমকি দিচ্ছেন। এটি একটি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। তারা ভুলে গিয়েছেন যে তত্ত্ববিরোধ এবং ত্রুটি তাদের বইতেও আছে, তাই কি সেই বিষয়ে লেখা যাবে না? তবুও আমি ডঃ রঘুবীর জীকে এই কাজের জন্য স্বাগত জানাই। আমি তাদের মতো দ্বৈত আচরণ করব না, অর্থাৎ অসঙ্গতি দেখালে প্রশংসা করব এবং রেগে যাবো না, অন্যের মৌলিক কাজকে নিজের বলে ঘোষিত করব না এবং নামও উল্লেখ করব না। যে ত্রুটি তারা দেখাবেন, আমি তা তাদের উপকারই মনে করে নাম উল্লেখসহ ধন্যবাদ জানাব। সঠিক উত্তর হলে পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করব। তবে অনুগ্রহ করে এমন অযৌক্তিক, পরস্পরবিরোধী উত্তর দেবেন না, যেমন সত্যার্থপ্রকাশের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ভাবুন, হুমকি দেওয়া এবং কুৎসিত ভাষা ব্যবহার করা বিদ্বানদের জন্য সোভন নয়।
একইভাবে, শ্রী বেদপ্রকাশ শ্রোত্রিয় আমাকে কৌশলপূর্ণভাবে শাস্ত্রার্থের হুমকি দিয়েছেন। মনুস্মৃতি এবং সত্যার্থ বিষয়ক তাদের পর্যাপ্ত ও প্রামাণিক জ্ঞান নেই, এবং অন্যান্য শাস্ত্র বিষয়ক জ্ঞানও নেই, তাই তাদের শাস্ত্রার্থের যোগ্যতা নেই। ‘শাস্ত্রার্থ’ শব্দটি তাদের ব্যবসার অংশ। কখনও তারা নিজেদেরকে ‘আই.এ.এস.’ পাস বলে দোকান চালাতেন, কিন্তু যখন সত্য উদঘাটিত হল, তখন তা বলা বন্ধ করে দিলেন। কখনও শঙ্করাচার্য গদী প্রদান সংক্রান্ত কাহিনী গড়তেন। এখন মানুষ তাদের চেনে, তাই সেই কাহিনী বন্ধ হয়ে গেছে। এখন শাস্ত্রার্থের নামে ব্যবসা চালাচ্ছেন। তাদেরও বাস্তবিক জ্ঞান নেই যে সাইদ্ধান্তিক এবং তাৎক্ষণিক বিষয়গুলোতে মৌখিক শাস্ত্রার্থ হয়, গবেষণামূলক বিষয়গুলোতে লিখিত শাস্ত্রার্থ হয়। এজন্য মহর্ষি দয়ানন্দ “লেখ এবং বাদ” (পৃ. ৭৩০) থেকে সত্য নিরূপণের নির্দেশ দিয়েছেন। লিখিত শাস্ত্রার্থ বহুদিন ধরে চলছে। তাদের দেওয়া কোনো উত্তর সঠিক নয়। তাদের লেখার ধরনই অযোগ্যতার পরিচায়ক, কারণ এতে উত্তর সংক্ষিপ্ত, বিতণ্ডা, অভিযোগ-প্রত্যয়, দম্ভোক্তি, হীনোক্তি এবং শব্দজালই বেশি থাকে। তারা জানেন না যে উত্তর প্রদানে কি বলা হয়েছে, কতটুকু বলা হয়েছে, কি বলা হয়নি, এবং কি বলা উচিত হয়নি। ঘুরেফিরে কথা বলেন, তারপরও শাস্ত্রার্থ আমার ‘মনুস্মৃতি ভাষ্য’ এবং ‘সত্যার্থপ্রকাশ’ এর কর্মধারার ওপর কেন? এতে বর্ণিত তত্ত্বগুলোর ওপরও হতে পারে যে দুই বিবাহ করা ঋষি দয়ানন্দ ও আর্যসমাজের নীতিমালার অনুসারে পাপ নাকি পুণ্য? একবার জেরুভা বস্ত্র পরিধান করে পুনরায় গৃহস্থ্য হওয়া আর্যসমাজের নীতিমালার অনুসারে কি সঠিক নাকি ভুল? কোনো আর্যবিদ্বান দ্বারা ছয় সূতার যজ্ঞোপবীত ধারন করা ঋষি-বিরোধী কাজ কি না? যদিও শ্রী শ্রোত্রিয় সঠিক উত্তর দেওয়ার যোগ্যতা নেই, তারপরও যদি তারা কোন ত্রুটি দেখান, আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করব। অভিযোগ ত্রুটি প্রদর্শন নিয়ে নয়, পক্ষপাত, বিতণ্ডা এবং কৌশলপূর্ণ আচরণ নিয়ে।
প্রসঙ্গত, পাঠকদের জানাতে চাই যে, মহর্ষি দয়ানন্দের মিশন পূরণের জন্য মনুস্মৃতির প্রক্ষেপানুসন্ধানের জটিল কাজ আমি ৩০ বছরের কম বয়সে করেছি। তখনকার বৌদ্ধিক ক্ষমতা অনুযায়ী কিছু ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। এই অভূতপূর্ব এবং জটিল কাজ আমি একা করেছি। একাই সব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোনো পরামর্শদাতা ছিল না। তারপরও এটি একটি ঐতিহাসিক কাজ। কিছু রাগীকে বাদ দিলে সবাই এর কার্যকারিতা স্বীকার করেছেন। এটি মনুবিরোধ বৃদ্ধি রোধ করেছে। মনু এবং মহর্ষি দয়ানন্দের মর্যাদা উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার মনুস্মৃতির ভিত্তিতে জয়পুর হাইকোর্টে মনুর ভাস্কর্য অপসারণের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পাওয়া গিয়েছে। ভাস্কর্য আজও সেখানে আছে। এক বছর ধরে শ্রী ধর্মপাল জী আর্য (দিল্লি ট্রাস্ট), ডঃ ধর্মবীর জী (অজমের) এবং আমি সংগ্রাম করেছি, তখন দক্ষিণার ব্যবসায়ীরা কোথাও মনোযোগ দেননি। ৩০ বছর ধরে প্রকাশিত ‘মনুস্মৃতিভাষ্য’ নিয়ে আজ তারা বিতণ্ডা-প্রচারণা চালাচ্ছে। এটি স্পষ্ট প্রতিশোধ, বিদ্বেষ, ঈর্ষা ও জেমনস্যর শয়তানি প্রভাব। প্রতিশোধ এবং বিদ্বেষ তাদের শান্তিতে বসবাস করতে দেয় না।
শ্রী বেদপ্রকাশ শ্রোত্রিয় আজ পর্যন্ত কোনো একজন ব্যক্তির সঙ্গেও শাস্ত্রার্থ করেননি এবং কোনো ঋষি-বিরোধী বা সত্যার্থপ্রকাশ-বিরোধী লিখিত উত্তর দেননি। অগণিত মানুষকে শাস্ত্রার্থের ঘোষণা দিয়ে পিছিয়ে গেছেন। শ্রী আদিত্যমুনি ও শ্রী উপেন্দ্ররাও এর উপর লিখিত প্রতিপাদ্য করার পর শাস্ত্রার্থের ঘোষণা দিয়ে পিছিয়ে গেছেন এবং তাদের কোনো অভিযোগের উত্তর আজও দেওয়া হয়নি। হরিয়ানার কাবীরপন্থী রামপালদাস সংবাদপত্র, বই, টিবি মাধ্যমে বহু বছর ধরে মহর্ষি দয়ানন্দ ও সত্যার্থপ্রকাশের বিরুদ্ধে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন, তারা তার কোনো উত্তরও দিতে পারেননি। স্বামী অগ্নিবেশ সত্যার্থপ্রকাশ থেকে সিখবিরোধী বক্তব্য বের করার ঘোষণা দিয়েছেন, সমলিঙ্গ সমর্থন করেছেন, ভারতবিরোধী কাশ্মীরি সন্ত্রাসীদের পাশে ছিলেন, মনুস্মৃতি পুড়িয়েছেন, শ্রী শ্রোত্রিয় এক শব্দও বলেননি, লিখেননি, বরং তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ। স্মৃতিশেষ স্বামী মুনিশ্বরানন্দ জী সরস্বতী কয়েক বছর আগে কিছু মহর্ষি দয়ানন্দ-বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার সমালোচনা লিখেছি। মহর্ষি নামের ব্যবসা সাজানোর শ্রী শ্রোত্রিয়ের বিকৃত মানসিকতা দেখুন, তখন তারা সেই ঋষি-বিরোধী বক্তব্যের বিরুদ্ধে লেখেননি, বরং আমার বিরুদ্ধে লিখেছেন। তখন একটি বিনগ্রতাপূর্ণ বাক্য বলার কারণে আমি কোনো প্রতিক্রিয়া দিইনি। সত্যার্থপ্রকাশ বিষয়ক উত্তর লেখায় তারা শিষ্টতা-সৌজন্যের সব সীমা উপেক্ষা করেছেন। কোনো তত্ত্ববিরোধ বা মহর্ষি দয়ানন্দের অপমান নিয়ে তারা কখোনো ব্যথিত হননি, আজকে সত্যার্থপ্রকাশ এবং মহর্ষি দয়ানন্দের সব ব্যথাই মনে পড়ে। যখন উত্তর দিতে আসে না, তখন কুৎসিত যুক্তি ও বিতণ্ডা করা তাদের অভ্যাস। আমি একটি প্রশ্নে লিখেছিলাম ‘এখানে দুষ্টান্ত ও দার্শন্তে সামঞ্জস্য নেই’। তার উত্তর না দিয়ে তারা বিতণ্ডা করছেন—‘দুষ্টান্ত কী অর্থ, দার্শন্ত কী অর্থ?’ এটি এমন শৈলী, যেন কেউ তাদের ‘আচার্য বেদপ্রকাশ শ্রোত্রিয়’ নাম শুনে জিজ্ঞেস করে—‘আচার্য অর্থ কী? এই উপাধি নকল নাকি আসল? কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত নাকি নিজেই তৈরি করে লাগিয়েছে? যদি আসল, কোন বছর এবং কত নম্বরে উত্তীর্ণ? শ্রোত্রিয় অর্থ কী? শ্রোত্রিয়তার আচরণের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কি না?’ ইত্যাদি।
যতদূর সত্যার্থপ্রকাশ বিষয়ক তাদের উত্তর সম্পর্কিত, তাদের অধিকাংশ উত্তর সঠিক নয়। বক্তৃতায় শব্দজাল দিয়ে পাঠককে বিভ্রান্ত করা হয়, ঠিক তেমনি উত্তরেও শুধু প্রাসঙ্গিক শব্দজাল রয়েছে। এই সংস্করণের মন্তব্যে করা সমালোচনা থেকে পাঠকরা উদয়পুর মণ্ডলীর লেখকদের যোগ্যতার ধারণা পাবেন।
(উ) “উদয়পুর সংস্করণ” এবং সামাজিক দিক—পাঠকবৃন্দ! এটি একটি সাহিত্যিক বিষয় ছিল যা সাহিত্যিক সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যেত, কিন্তু উদয়পুর মণ্ডলী এটি বিকৃত ও আরও বিকৃত কলহের রূপ দিতে থাকে। কলহ, স্বার্থ, ষড়যন্ত্র, প্রচারণা, বিতণ্ডা এবং কুৎসিত কৌশলের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে। এর একটি কালো দিক আরও আছে। পরোপকারী সভা এবং তার বিদ্বানদের বিরুদ্ধে সমজাতীয় লোক এবং লবি-সংযুক্ত বিদ্বানদের মাধ্যমে আর্যসমাজে বিরোধের ঘূর্ণিঝড় তোলার সুপরিকল্পিত কিন্তু ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে। এই ঘটনাটিকে রাজনীতির খেলার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, অযোগ্যদের নেতৃত্বে অদক্ষ লোকদের সমাবেশ করে, তাদের অনুমোদনবিহীন সভা আয়োজন করে ভিত্তিহীন প্রস্তাব পাশ করার ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় প্রথমবার লেখা হয়েছে। একটি আদালতে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের মঞ্চে দুর্বৃত্তদের ডেকে মারধমির হুমকি দেওয়া হয়েছে, মিথ্যা পাম্পলেট বিতরণ করা হয়েছে, সম্মেলনে দৈত্যসদৃশ ঐতিহ্য অনুকরণ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আর্যসমাজের ভাবমূর্তিকে দেশ-বিদেশে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। একজন কবি সঠিকভাবে বলেছেন—“স্বার্থপর দোষ দেখতে পারে না।” সারাংশ হলো, নিজের মিথ্যা সন্তুষ্টি এবং মর্যাদার জন্য এমন কোনো কৌশল নেই যা তারা প্রয়োগ করেনি। এবং এ সব অ-আর্য আচরণ প্রদর্শনকারী কে ছিলেন? তারা যারা মঞ্চে সত্য, ন্যায়, প্রেম, দয়া, ক্ষমা, উদারতা, বেদ এবং আর্যত্বের শিক্ষা প্রচার করতেন, কেউ নিজেকে আর্যবিদ্বান বলে দাবি করতেন, কেউ আর্যসন্ন্যাসী, কেউ আর্যনেতা, আবার কেউ আর্য সংস্থার কর্মকর্তা। মহা বিস্ময় হচ্ছে যে, যারা নিজেকে ঋষিভক্ত এবং ঋষি-অনুগামী বলে দাবি করতেন, তারা এই বেপরোয়া আচরণ করেছেন কারণ তারা ঋষিপ্রকৃত এবং ঋষিলিখিত সত্যার্থপ্রকাশের প্রকাশই বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। এটি ঋষি-বিরোধের চরম সীমা। আর্যগণ! আজ এমন কিছু লোক নিজেদেরকে আর্য বলে দাবি করছেন এবং তারা সত্যার্থপ্রকাশ এবং আর্যসমাজের ধারক ও বাহক হয়ে বসেছেন। সিদ্ধান্ত হলো যে সত্যার্থপ্রকাশের ইতিহাসে ‘উদয়পুর ন্যায়স’ বর্তমান সময়ে একটি দুর্ভাগ্যজনক রূপ ধারণ করেছে যা আর্যসমাজে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে ভাঙন, জাতিগততা এবং কলহের বিষ মিশিয়েছে। ভর্তৃহরি এমন লোকদের জন্য লিখেছেন—“তে কে ন জ্ঞানিমহে।” আর্যসমাজের ভবিষ্যত ইতিহাস এই বিষয়ের বিস্তৃত আলোচনা করবে।
২৬. সিদ্ধান্ত: বিভিন্ন সংস্করণে করা পরিবর্তন-সংশোধনের তালিকা
এই অধ্যায়ে, সত্যার্থপ্রকাশের প্রথম সংস্করণ (১৮৭৪) থেকে এখন পর্যন্ত সমস্ত প্রধান সংস্করণের সৃজনাত্মক এবং গবেষণামূলক পরিচয় প্রদান করা হয়েছে। এখন, তাতে থাকা ত্রুটি এবং করা সংশোধনের তথ্য একটি তালিকার মাধ্যমে প্রদত্ত হলো—
(অ) ভিত্তিমূলকভাবে মান্য তিনটি প্রাপ্ত কপি থেকে মোট ত্রুটি—
১. মূলকপি (প্রথম পাণ্ডুলিপি) — ২০০০-২৫০০
২. মুদ্রণকপি (প্রেস পাণ্ডুলিপি) — ৩০০০-৩৫০০
৩. সত্যার্থপ্রকাশ (দ্বিতীয় সংস্করণ ১৮৮৪) — ৪০,০০০-৪০,৫০০
(আ) সম্পাদক-প্রকাশক কর্তৃক করা মুদ্রণ ত্রুটি সহ মোট পরিবর্তন, সংশোধন, বৃদ্ধি—
১. পরোপকারী সভা দ্বারা প্রকাশিত মূলকপি সংস্করণ (৩৭, ৩৮, ৩৯) — ১৫,৭০০-২০,০০০
২. পরোপকারী সভা দ্বারা ক্রমে সংশোধিত ৩-৩৬ সংস্করণ — ২,২০০-৩,০০০
৩. উদয়পুর সংস্করণ (সত্যার্থপ্রকাশ ন্যায়স, উদয়পুর প্রকাশিত) — ২৫০০-৩০০০
৪. আর্ষ সাহিত্য প্রচার ট্রাস্ট, দিল্লির সংস্করণ — ২,০০০-৩,০০০
৫. সার্বদেশিক সভা, প্রতিনিধি সভা, সংস্থা, আর্যসমাজ দ্বারা প্রকাশিত সংখ্যা — ২৫০০-৩০০০
৬. পণ্ডিত ভাগবদত্ত সংস্করণ — ১৫৫০-২০,০০০
যদি পণ্ডিত জী দ্বারা অনুচ্ছেদ শুরুতে তাদের নিজস্ব বৃহৎ বন্ধনীর মধ্যে যোগ করা সংখ্যাগুলোও ধরা হয়, পরিবর্তনের সংখ্যা প্রায় ৪০০০ হবে।
৭. স্বামী জগদীশ্বরানন্দ সংস্করণে পরিবর্তন ও প্রক্ষেপ অসংখ্য
৮. পণ্ডিত যুধিষ্ঠটীর জী মীমাংশক সংস্করণে ৪০০০-৪০০০ (পণ্ডিত জী কর্তৃক মূলপাঠে যোগ করা উপশিরোনামসহ)
৯. স্বামী বিদ্যানন্দ সংস্করণ (উপশিরোনামসহ) — ৪০,০০০-৪০,৫০০
১০. স্বামী বেদানন্দ জী সংস্করণ — ২,০০০-৩,০০০
১১. শ্রী জগদেবসিংহ জী সিদ্ধান্তী সংস্করণ — ২৫০০-৩০০০
১২. ব্যক্তিগতভাবে প্রকাশিত অন্যান্য সমস্ত সংস্করণে ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত সংস্করণে যত পরিবর্তন হয়েছে, প্রায় ততই পাওয়া যায় ২০০০-৩০০০
এই তালিকা তিনটি সত্য প্রমাণ করে—
এক, সকল সম্পাদক-প্রকাশক শত শত ত্রুটি সংশোধন করেছেন, অতএব দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪) ত্রুটিপূর্ণ এবং তা অবশ্যই সংশোধনযোগ্য।
দুই, দ্বিতীয় সংস্করণ (১৮৮৪) পুনরায় কোনো ব্যক্তি প্রকাশ করেননি, এবং আজও করছেন না, তাই এর অর্থ হলো এটি সঠিকভাবে প্রকাশযোগ্য নয়। লিপিকার ও প্রাথমিক গবেষকদের অযোগ্যতা, অনিষ্ঠা এবং প্রতারণার কারণে এই অবস্থায় পৌঁছেছে।
তিন, কোনো পাণ্ডুলিপি বা সংস্করণ সম্পূর্ণভাবে শুদ্ধ নয়, অতএব সত্যার্থপ্রকাশের সর্বোচ্চ শুদ্ধ ও একরূপ সংস্করণ তিনটির সমন্বয় ছাড়া তৈরি করা সম্ভব নয়। চূড়ান্ত দুটি বিষয়ে উদাহরণসহ মীমাংসা পরবর্তী অধ্যায়ে করা হবে। page-78