আর্য - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

01 June, 2000

আর্য


আর্য

 "আর্য" শব্দটি কোনো জাতি গত নাম নয় । "আর্য" হলো মানবের গুণগত অর্থাৎ গৌনিক নাম । আমাদের জাতি হল  একটাই তা "মনুষ্য" জাতি । "আর্য" শব্দের অর্থ হলো শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি


"কুতস্ত্বা কশ্মলমিদম্‌ বিষমে সমুপস্থিতম্‌ 
  অনার্যজুষ্টমস্বর্গ্যমকীর্তিকরমর্জুনঃ"

                                           গীতা - ২ / ২ শ্লোক 

ভাবার্থ : হে অর্জুন ! এই অসময়ে তোমার মধ্যে মোহ কোথা হইতে এলো ? শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা এমন আচরণ করেনা এবং এই মোহ স্বর্গ বা কীর্তি কোনোটিও প্রদান করেনা। গীতা প্রেস ভাষ্য )

"আর্য" শব্দটি বেদাদী শাস্ত্রে অসংখ্য  জায়গায় পাবেন । 
"কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্"  - ঋগ্বেদ - ৯/৬৩/৫ মন্ত্র 
অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বকে শ্রেষ্ঠ বা মহৎ করে তোলো 

"আর্যা ব্রতা বিসৃজন্তো অধি ক্ষমি"  - ঋগ্বেদ - ১o/৬৫/১১ মন্ত্র

“বি জানীহ্যার্যান্যে চ দস্যবো বর্হিষ্মতে রন্ধয়া শাসদব্রতান্”  

                                                         - ঋগ্বেদ - ১/৫১/৮ মন্ত্র

রামায়ণে দেখুন -

• “সর্বদাভিগতঃ সদ্ভিঃ সমুদ্র ইব সিন্ধুভিঃ। 
    আর্যসর্বসমশ্চৈব সদৈব প্রিয়দর্শন।।” 

                                       বাল্মীকি রামায়ণ - ১/১/১৬ শ্লোক

অর্থাৎ , রামচন্দ্র সদাসর্বদা সৎপুরুষদের সাহচর্যে থাকতেন যেরূপ সমুদ্র সদা নদীসমূহের সাথে মিলে থাকে তথা তিনি আর্য, সমদর্শী ও সকলের প্রিয় ছিলেন ।
 অতীতকালে এই ভূ-ভাগের নাম ছিল ভারতবর্ষ বা আর্যাবর্ত। এই আর্যাবর্তে যাঁরা বাস করতেন তাঁদের বলা হত আর্য। ‘হিন্দু’ নামটি বিদেশিদের দেওয়া নাম। ফার্সি অভিধান ‘লুগা’তে এই ‘হিন্দু’ নামটি গালি এবং কদর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আরবি ভাষাতেও ‘হিন্দু’ শব্দের অর্থ ‘ঘৃণাযুক্ত’।
ইংরেজ শাসনামলে ভারতবাসীকে তারা ঘৃণাভরে বলত ‘নেটিভ ব্লাক’। আবার কেউ কেউ বলেন ‘সিন্ধু’ নদের নাম পরিবর্তিত হয়ে ‘হিন্দু’ শব্দ হয়েছে-এটাও ঠিক নয়। ঐতিহাসিক ও ভাষাতাত্ত্বিকগণ গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন যে, ‘হিন্দু’ নামটি বিদেশি শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া নাম। কালে কালে এই ভূ-ভাগে আর্য জনসাধারণ বিদেশি শাসকদের চাপে ‘হিন্দু’ নামটি স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছিল। ১৮৩০ সালে ভারতীয় সংবিধানে ইংরেজ সরকার ‘হিন্দু’ নামটি পাকাপাকিভাবে সংবিধানে জুড়ে দেন। সনাতন ধর্মের প্রামাণ্য ধর্মপুস্তকসমূহ প্রমাণ দেয় যে, আমদের ধর্ম সনাতন ধর্ম বা বৈদিক ধর্ম এবং আমাদের পরিচয় আমরা আর্যজাতি।
अहं भूमिमददामार्यायाहं वृष्टिं दाशुषे मर्त्याय।
 अहमपो अनयं वावशाना मम देवासो अनु केतमायन् ॥२॥
-ऋग्वेद  मण्डल:4 सूक्त:26 मन्त्र:2

फिर ईश्वर के गुणों को अगले मन्त्र में कहते हैं ॥
अन्वय:
हे मनुष्या ! योऽहमार्य्याय भूमिमददामहं दाशुषे मर्त्याय वृष्टिमनयमहमपोऽनयं यस्य मम वावशाना देवासः केतमन्वायंस्तं मां यूयं सेवध्वम् ॥२॥
पदार्थान्वयभाषाः -हे मनुष्यो ! जो (अहम्) सबका धारण करने और सब का उत्पन्न करनेवाला ईश्वर मैं (आर्य्याय) धर्म्मयुक्त गुण, कर्म्म और स्वभाववाले के लिये (भूमिम्) पृथिवी के राज्य को (अददाम्) देता हूँ (अहम्) मैं (दाशुषे) देनेवाले (मर्त्याय) मनुष्य के लिये (वृष्टिम्) वर्षा को (अनयम्) प्राप्त कराऊँ (अहम्) मैं (अपः) प्राणों वा पवनों को प्राप्त कराऊँ जिस (मम) मेरे (वावशानाः) कामना करते हुए (देवासः) विद्वान् लोग (केतम्) बुद्धि वा जनाने के लिये (अनु, आयन्) अनुकूल प्राप्त होते हैं, उस मुझको तुम सेवो ॥२॥
भावार्थभाषाः -हे मनुष्यो ! जो न्यायकारी स्वभाववाले के लिये भूमि का राज्य देता, सब के सुख के लिये वृष्टि करता और सब के जीवन के लिये वायु को प्रेरणा करता है और जिसके उपदेश के द्वारा विद्वान् होते हैं, उसी की निरन्तर उपासना करो ॥२॥-स्वामी दयानन्द सरस्वती 
যাস্কাচার্যের মতে ‘আর্য’ শব্দের নিরুক্তগত অর্থ ‘ঈশ্বরপুত্র’। অর্থাৎ ঈশ্বরের যথার্থ পুত্রকে ‘আর্য’ নামে সম্বোধন করা হয়। পিতার অনেক পুত্র থাকা সত্ত্বেও পিতার অনুবর্তী, আজ্ঞা পালনকারী, সদাচারী, আদর্শ পুত্রকেই প্রকৃতপক্ষে পুত্র বলা হয়ে থাকে। সেইরূপ, যদ্যপি মানবমাত্রেই ঈশ্বরের পুত্র তথাপি সদাচারপরায়ণ পুরুষকেই ঈশ্বরপুত্র অর্থাৎ ‘আর্য’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
প্রাচীন গ্রন্থসমূহে ‘আর্য’ শব্দের অর্থঃ
বেদঃ
• “আর্যা ব্রতা বিসৃজন্তো অধি ক্ষমি।” (ঋগ্বেদ ১০/৬৫/১১)
• “কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্।’’ (ঋগ্বেদ ৯/৬৩/৫)
वि जा॑नी॒ह्यार्या॒न्ये च॒ दस्य॑वो ब॒र्हिष्म॑ते रन्धया॒ शास॑दव्र॒तान्।
शाकी॑ भव॒ यज॑मानस्य चोदि॒ता विश्वेत्ता ते॑ सध॒मादे॑षु चाकन ॥-ऋग्वेद 0 मण्डल:1 सूक्त:51 मन्त्र:8 

अंग्रेज़ी लिप्यंतरण
vi jānīhy āryān ye ca dasyavo barhiṣmate randhayā śāsad avratān | śākī bhava yajamānasya coditā viśvet tā te sadhamādeṣu cākana ||

मन्त्र उच्चारण
पद पाठ
वि। जा॒नी॒हि॒। आर्या॑न्। ये। च॒। दस्य॑वः। ब॒र्हिष्म॑ते। र॒न्ध॒य॒। शास॑त्। अ॒व्र॒तान्। शाकी॑। भ॒व॒। यज॑मानस्य। चो॒दि॒ता। विश्वा॑। इत्। ता। ते॒। स॒ध॒ऽमादे॑षु। चा॒क॒न॒ ॥

पदार्थान्वयभाषाः -हे मनुष्य ! तू (बर्हिष्मते) उत्तम सुखादि गुणों के उत्पन्न करनेवाले व्यवहार की सिद्धि के लिये (आर्य्यान्) सर्वोपकारक धार्मिक विद्वान् मनुष्यों को (विजानीहि) जान और (ये) जो (दस्यवः) परपीड़ा करनेवाले अधर्मी दुष्ट मनुष्य हैं, उनको जान कर (बर्हिष्मते) धर्म की सिद्धि के लिये (रन्धय) मार और उन (अव्रतान्) सत्यभाषणादि धर्मरहित मनुष्यों को (शासत्) शिक्षा करते हुए (यजमानस्य) यज्ञ के कर्ता का (चोदिता) प्रेरणाकर्त्ता और (शाकी) उत्तम शक्तियुक्त सामर्थ्य को (भव) सिद्ध कर, जिससे (ते) तेरे उपदेश वा सङ्ग से (सधमादेषु) सुखों के साथ वर्त्तमान स्थानों में (ता) उन (विश्वा) सब कर्मों को सिद्ध करने की (इत्) ही मैं (चाकन) इच्छा करता हूँ ॥ ८ ॥
[he manushy ! too (barhishmate) uttam sukhaadi gunon ke utpann karanevaale vyavahaar kee siddhi ke liye (aaryyaan) sarvopakaarak dhaarmik vidvaan manushyon ko (vijaaneehi) jaan aur (ye) jo (dasyavah) parapeeda karanevaale adharmee dusht manushy hain, unako jaan kar (barhishmate) dharm kee siddhi ke liye (randhay) maar aur un (avrataan) satyabhaashanaadi dharmarahit manushyon ko (shaasat) shiksha karate hue (yajamaanasy) yagy ke karta ka (chodita) preranaakartta aur (shaakee) uttam shaktiyukt saamarthy ko (bhav) siddh kar, jisase (te) tere upadesh va sang se (sadhamaadeshu) sukhon ke saath varttamaan sthaanon mein (ta) un (vishva) sab karmon ko siddh karane kee (it) hee main (chaakan) ichchha karata hoon .]
भावार्थभाषाः -मनुष्यों को दस्यु अर्थात् दुष्ट स्वभाव को छोड़ कर आर्य्य अर्थात् श्रेष्ठ स्वभावों के आश्रय से वर्त्तना चाहिये। वे ही आर्य हैं कि जो उत्तम विद्यादि के प्रचार से सबके उत्तम भोग की सिद्धि और अधर्मी दुष्टों के निवारण के लिये निरन्तर यत्न करते हैं। निश्चय करके कोई भी मनुष्य आर्य्यों के संग, उनसे अध्ययन वा उपदेशों के विना यथावत् विद्वान्, धर्मात्मा, आर्यस्वभाव युक्त होने को समर्थ नहीं हो सकता। इससे निश्चय करके आर्य के गुण और कर्मों को सेवन कर निरन्तर सुखी रहना चाहिये ॥ ८ ॥
{manushyon ko dasyu arthaat dusht svabhaav ko chhod kar aaryy arthaat shreshth svabhaavon ke aashray se varttana chaahiye. ve hee aary hain ki jo uttam vidyaadi ke prachaar se sabake uttam bhog kee siddhi aur adharmee dushton ke nivaaran ke liye nirantar yatn karate hain. nishchay karake koee bhee manushy aaryyon ke sang, unase adhyayan va upadeshon ke vina yathaavat vidvaan, dharmaatma, aaryasvabhaav yukt hone ko samarth nahin ho sakata. isase nishchay karake aary ke gun aur karmon ko sevan kar nirantar sukhee rahana chaahiye .}
• “বি জানীহ্যার্যান্যে চ দস্যবো বর্হিষ্মতে রন্ধয়া শাসদব্রতান্।” (ঋগ্বেদ ১/৫১/৮)
উক্ত মন্ত্রসমূহে সত্য, অহিংসা, পবিত্রতাদি উত্তম ব্রতধারী ব্যক্তিদের ‘আর্য’ বলা হয়েছে এবং বিশ্বের নর-নারী সকলকে এইরূপ ‘আর্য’ করার উপদেশ দেয়া হয়েছে।
• “আর্যবৃত্ত।’’ (গৌতম ধর্মসূত্র ১৯/৯৬)
এখানে সদাচারপরায়ণ অর্থে ‘আর্য’ শব্দ প্রযুক্ত হয়েছে।
বাল্মীকি রামায়ণঃ
• “সর্বদাভিগতঃ সদ্ভিঃ সমুদ্র ইব সিন্ধুভিঃ। আর্যসর্বসমশ্চৈব সদৈব প্রিয়দর্শন।।” (বাল্মীকি রামায়ণ ১/১/১৬)
অর্থাৎ, রামচন্দ্র সদাসর্বদা সৎপুরুষদের সাহচর্যে থাকতেন যেরূপ সমুদ্র সদা নদীসমূহের সাথে মিলে থাকে তথা তিনি আর্য, সমদর্শী ও সকলের প্রিয় ছিলেন।
বিদুর নীতিঃ
• “আর্য কর্মাণি রজ্যন্ত ভূতি কর্মাণি কুর্বতে হিতং চ নাভ্যসূযন্তি পণ্ডিতা ভরতর্ষভ।
ন স্বে সুখে বৈ কুরুতে প্রহর্ষ। নান্যস্য দুঃখে ভবতি প্রহৃষ্টঃ।।
দত্ত্বা ন পশ্চাৎ কুরুতেহনুতাপং স কথ্যতে সৎপুরুষার্য শীলঃ।।” (বিদুর নীতি ১/৩০/১/১৮)
এই বচনসমূহে অত্যন্ত ধার্মিককে ‘আর্য’ বলা হয়েছে।
চাণক্যনীতিঃ
• “অভ্যাসাদ্ ধার্যতে বিদ্যা কুলং শীলেন ধার্যতে। গুণেন জ্ঞাযতে আর্যঃ কোপো নেত্রেণ গম্যাতে।।” (চাণক্য নীতি ৫/৮)
এখানে গুণীজনকে ‘আর্য’ বলা হয়েছে।
মহাভারতঃ
• “স বাল এবার্যমতির্নৃপোত্তমঃ।” (মহাভারত আদিপর্ব ৪০/৭)
এই বচনে উত্তম রাজকুমারের সাথে ‘আর্যমতি’ বিশেষণ যুক্ত করা হয়েছে যার অর্থ শ্রেষ্ঠ, বুদ্ধিমান।
কৌটিল্য-অর্থশাস্ত্রঃ
• “ব্যবস্থিতার্যমর্যাদাঃ কৃতবর্ণাশ্রমস্থিতঃ।”
আর্যগণের মর্যাদাকে যে ব্যবস্থিত করতে সমর্থ সেই রাজ্যাধিকারী, এরূপ বর্ণিত হয়েছে।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাঃ
• “কুতস্ত্বা কশ্মলমিদং বিষমে সমুপস্থিতম্। অনার্যজুষ্টমস্বর্গ্যমকীর্তিকরম
র্জুন।।” (ভগবদ্গীতা ২/২)
এখানে যুদ্ধসাজে সজ্জিত ভীরুতাপ্রাপ্ত অর্জুনের বৃত্তিকে ‘অনার্যবৃত্তি’ বলা হয়েছে। এস্থলে আর্যকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে।
ধর্ম্মপদঃ
• “অরিযপ্পবেদিতে ধর্ম্মে সদা রমতি পণ্ডিতো।”
অর্থাৎ, পণ্ডিতগণ আর্যপ্রদর্শিত ধর্মে বিচরণ করেন।
• “ন তেন অরিযো হোতি যেন পাণতি হিংসতি। অহিংসা সব্ব পাণানং অরিযোতি পবচ্চতি।।” (ধর্ম্মপদ ২৭০/১৫)
অর্থাৎ, প্রাণীহিংসা করে কোনও ব্যক্তি আর্য হয় না। যে ব্যক্তি হিংসা করে না সে-ই আর্য।
শব্দকল্পদ্রুমঃ
• “মান্যঃ উদারচরিতঃ শান্তচিত্তঃ ন্যায়পথাবলম্বী প্রকৃতাচারশীলঃ সততকর্তব্যকর্মানুষ্ঠাতা।
যদুক্তং কর্তব্যমাচরন্ কার্যম্ অকর্তব্যমনাচরন্। তিষ্ঠতি প্রকৃতাচারে সতু আর্য ইতি স্মৃতঃ।।” (শব্দকল্পদ্রুম ১০/৫৭) অর্থাৎ, মান্য(সম্মানযোগ্য), উদারচরিত্র, শান্তচিত্ত, ন্যায়ের পথ অবলম্বনকারী, শাস্ত্রানুকুল আচরণকারী, নিরন্তর কর্তব্যকর্মের অনুষ্ঠানকারী এবং অসৎকর্ম বর্জনকারী পুরুষকেই স্মৃতি অনুসারে ‘আর্য’ বলা হয়।
পাশ্চাত্য বিদ্বানগণ কর্তৃক ‘আর্য’ শব্দের ব্যাখ্যাঃ
• ‘HISTORY OF THE WORLD’ গ্রন্থে ‘আর্য’ শব্দের ব্যাখ্যাঃ
“A tall skinned, long headed race, whose origin is still doubtfull though it was probably in Central Asia and who spread in pre-historic times over the whole of Europe and the parts of Asia and Africa. Almost all modern Europeans are of Aryan descent the family also called Indo-European or Indo-Germanic but these names are open objections from which of the word ‘Aryan’ is free.” (History of the world- Harms worth; Page-328)
• ‘Pear’s Cyclopedia General Mation’ গ্রন্থে ‘আর্য’ শব্দের ব্যাখ্যাঃ
“The word ‘Arya’ is derived from the Sanskrit, means an honourable lord of the soil.”
অর্থাৎ, সংস্কৃতে ‘আর্য’ শব্দের অর্থ মাননীয় ভূস্বামী।
• প্রসিদ্ধ ইংরেজ লেখক Emerson কর্তৃক ‘আর্য’ শব্দের ব্যাখ্যাঃ
“Whenever is open loyal true, of human, and affable demeanour, honourable himself, and in his judgement of other, faithful to his work as to law and faithful alike ton God and man such a man. The flowering of civilization is the finished man the of sense, of grace, of accomplishment of social power-the gentleman” – Emerson
অর্থাৎ, সেই ব্যক্তিই সভ্য ও আর্য যে উদার, নিষ্ঠাবান, সত্যপ্রেমী, দয়ালু এবং সরল। যে স্বীয় দৃষ্টিতে স্বয়ং মহান এবং যে অন্যের সম্মান করে, যে প্রতিজ্ঞা পালনকারী, যে পরমেশ্বর এবং মানবের প্রতি সত্যনিষ্ঠ, যে বুদ্ধিমান, সুন্দর গুণভূষিত, এবং সামাজিক শক্তিসম্পন্ন তথা ভদ্র সেই ব্যক্তিই সংস্কৃত।
• শ্রী অরবিন্দ ঘোষ রচিত ‘What is the significance of the name of Arya’ গ্রন্থে ‘আর্য’ শব্দের ব্যাখ্যাঃ
“The word ‘Arya’ expresses a particular, ethical and social ideal of well governed life, candour, courtesy, nobility, straight dealing, courage, gentleness, purity, humanity, compassion, protection of the weak, liberality, observance of social duty, eagerness for knowledge, social accomplishment; there is no word in human speech that has a nobler history. The Arya is he who strives and overcomes all outside him or within him that stand opposed to the human advance. In every thing he seeks truth, right and freedom.” (Arya Vol 1, p 61)
অর্থাৎ, ‘আর্য’ শব্দ দ্বারা এক সামাজিক তথা নৈতিক আদর্শের, এক মর্যাদাপূর্ণ জীবনের উদারতা, নম্রতা, সজ্জনতা, সরলতা, সাহস, সৌজন্য, পবিত্রতা, মানবতা, বলহীনের সহায়তা, সামাজিক কর্তব্যের অনুষ্ঠান, জ্ঞানপ্রাপ্তির উৎকণ্ঠা ইত্যাদি গুণের বোধ হয়ে থাকে। বাস্তবিকপক্ষে, মানবীয় ভাষায় এরূপ অন্য কোনও শব্দ নেই, যার ইতিহাস এই শব্দ হতে মহান হতে পারে।
অতএব উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে,
• আর্যের সংজ্ঞাঃ
শ্রেষ্ঠ স্বভাবযুক্ত ব্যক্তিই আর্য।
• আর্যের গুণঃ
বিদ্যা, বিনয়, প্রেমপূর্ণ ব্যবহার, চাতুর্য, সময়ানুকুল কর্ম করা, জীবন ও মৃত্যুর ব্যবস্থাকে জেনে অধিক শোক বা হর্ষে জড়িয়ে না পড়া, ঈশ্বরাজ্ঞা ভঙ্গের ভয়।
• আর্যের কর্মঃ
আর্যোচিত গুণের প্রসারার্থে সদা উদ্যমশীলতা, জ্ঞানবৃদ্ধির জন্য কায়মনোবাক্যের উপযোগ, সজ্জন, গম্ভীর ও উদার পুরুষদের সহযোগ।
• আর্যের স্বভাবঃ
সৌন্দর্য, তেজস্বিতা, পরহিত বিচার, স্বার্থবশীভূত অপরের অপকার করার ভাবনা মনে না আনা।
ইহা যথার্থ যে, যে সমাজে উক্ত আর্যোচিত গুণ, কর্ম ও স্বভাবের যত বিকাশ ঘটবে, সে সমাজ ততই সমৃদ্ধশালী হবে এবং অনবদ্য প্রতিভায় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

wikipedia

ভারতের নানা নাম


আজ যে ভৌগোলিক অস্তিত্বকে ‘ইন্ডিয়া’ নামে অভিহিত করা হয়, বিগত শতাব্দীগুলিতে তা কিন্তু কখনোই একটি ধারাবাহিক অস্তিত্ব ছিল না। পণ্ডিতেরা হামেশাই বলেছেন যে ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে যুক্ত প্রাচীনতম নামগুলির একটি হলো মেলুহা, যে নাম ব্যবহৃত হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে লেখা প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার গ্রন্থে, সিন্ধু সভ্যতা বা ইন্ডাস ভ্যালি সিভিলাইজেশনের বর্ণনায়।
তবে এই অঞ্চলে আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত হওয়ার অনেক আগেই নাম হিসেবে বিলুপ্ত হয়ে যায় মেলুহা। প্রাচীনতম যে নামের এখনও চর্চা হয়ে থাকে, তা হলো ‘ভরত’, ‘ভারত’, অথবা ‘ভারতবর্ষ’, যে নাম ভারতের সংবিধানেও ব্যবহার করা হয়েছে। এই নামের উৎস যদিও পৌরাণিক সাহিত্য, বিশেষ করে মহাভারত, তা সত্ত্বেও আধুনিক যুগে এর জনপ্রিয়তার কারণ হলো স্বাধীনতা সংগ্রামে ‘ভারত মাতা কি জয়’ জাতীয় স্লোগানে এর ধারাবাহিক প্রয়োগ।
‘India, that is Bharat…’: One Country, Two Names’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ক্যাথারিন ক্লেমেনট্যাঁ-ওঝা লিখছেন, ভারত বলতে বোঝায় একটি “অঞ্চল-নির্বিশেষে উপমহাদেশীয় ভূমি যেখানে ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজের প্রাধান্য”। পুরাণে বলা আছে, ভারতের ভৌগোলিক বিস্তার ‘দক্ষিণে সমুদ্র থেকে উত্তরে হিমের আলয়’ পর্যন্ত। তবে এর আকার এবং আয়তন বিভিন্ন যুগে পরিবর্তিত হয়েছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ওঝার বর্ণিত ভারত ঠিক রাজনৈতিক বা ভৌগোলিক ভূমি নয়, বরং একটি ধর্মীয় এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিচয়। তবে একথাও সত্য যে এই জাতির পৌরাণিক পিতা ছিলেন ভরত, এই বিশ্বাসও রয়েছে।
বৈদিক সাহিত্যে কিন্তু আরও কিছু নামের উল্লেখ রয়েছে। যেমন মনুস্মৃতি গ্রন্থে যে ‘আর্যাবর্তের’ কথা বলা হয়েছে, তা হলো আর্যদের দ্বারা অধিকৃত উত্তরে হিমালয় এবং দক্ষিণে বিন্ধ্যপর্বতের মধ্যবর্তী ভূখণ্ড। এছাড়াও প্রাচীন সাহিত্যে পাওয়া যায় জম্বুদ্বীপ’ নামটি, অর্থাৎ ‘জামগাছের ভূমি’। এই নামটি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে আজও ব্যবহৃত হয় ভারতীয় উপমহাদেশের বর্ণনায়।
ওদিকে জৈন সাহিত্যেও ভারত নামের উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু একথাও বলা হয়েছে যে এই দেশের নাম আগে ছিল নভিবর্ষ’। “রাজা নভি ছিলেন (প্রথম তীর্থঙ্কর) ঋষভনাথের পিতা এবং ভরতের পিতামহ,” তাঁর বই ‘Mapping Place Names of India’-তে লিখেছেন ভূগোলবিদ অনু কাপুর।
নাম হিসেবে ‘হিন্দুস্তান’ প্রথম, যাতে রাজনৈতিক রঙের আভাস পাওয়া যায়। প্রথম এই নাম ব্যবহৃত হয় যখন খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে সিন্ধু উপত্যকা অধিকার করে পারসিকরা, অর্থাৎ পারস্য দেশের বাসিন্দা। সংস্কৃত ‘সিন্ধু’ শব্দটি তাদের মুখে মুখে হয়ে যায় ‘হিন্দু’। প্রথম খ্রিস্টাব্দ থেকে এই নামের সঙ্গে পার্সি প্রত্যয় ‘স্তান’ জুড়ে তৈরি হয় ‘হিন্দুস্তান’।
পাশাপাশি পারসিকদের মুখে শোনা ‘হিন্দ’ নামটির আক্ষরিক অনুবাদ করে ‘ইন্ডাস’ করেন গ্রীকরা। ম্যাসেডোনিয়ার রাজা অ্যালেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে যখন ভারত আক্রমণ করেন, ততদিনে সিন্ধুনদ পার করে যে অঞ্চল, তার নাম হয়ে গেছে ‘ইন্ডিয়া’
ষোড়শ শতাব্দী নাগাদ দেখা যায়, বেশিরভাগ দক্ষিণ এশীয়ই তাঁদের বাসভূমির পরিচয় দিচ্ছেন ‘হিন্দুস্তান’ হিসেবে। ‘From Hindustan to India: Naming change in changing names’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে ঐতিহাসিক ইয়ান যে ব্যারো লিখেছেন যে “অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত হিন্দুস্তান বলতে বোঝাত মোগল সম্রাট অধিকৃত ভূমি, যা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার সিংহভাগ”। তবে ওই শতাব্দীর শেষ দিক থেকে ব্রিটিশদের তৈরি মানচিত্রে বেশি করে দেখা যেতে লাগল ‘ইন্ডিয়া’ নামের ব্যবহার, এবং দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে ‘হিন্দুস্তানের’ যোগসূত্র ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকল।
গ্রীক-রোমান উৎস, ইউরোপে এই নাম ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস, বা সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার মতো তৎকালীন বৈজ্ঞানিক এবং প্রশাসনিক সংস্থা দ্বারা এর ব্যবহার, এই সব কারণেই বাড়তে থাকে ‘ইন্ডিয়া’ নামের আকর্ষণ, বলছেন ব্যারো। তিনি আরও লিখেছেন, ‘ইন্ডিয়া’ নামটিকে যেভাবে গ্রহণ করা হয়, তার দ্বারা ঔপনিবেশিক নামকরণের মাধ্যমে কীভাবে এই উপমহাদেশকে একটি একক ব্রিটিশ রাজনৈতিক ভূখণ্ডে পরিণত করা হয়, তার প্রমাণ মেলে।

মহর্ষি দয়ানন্দ  সরস্বতী সত্যার্থ প্রকাশের অষ্টম সমুল্লাসে  বলেছেন– 

     “প্রশ্নঃ- কেহ-কেহ বলেন যে , অর্য্যগণ  ইরান হইতে আসিয়াছিলেন বলিয়া তাহাদের নাম আর্য্য হইয়াছে । তাহাদের পূর্বে এদেশে বন্য লোকেরা বাস করিত । আর্য্যগণ তাহাদিগকে অসুর ও রাক্ষস এবং নিজেদের দেবতা বলিতেন । তাহাদের সহিত আর্য্যদের যে সংগ্রাম হইয়াছিল তাহা দেবাসুর সংগ্রাম নামে আখ্যায়িকায়  সন্নিবিষ্ট হইয়াছে । 

       উত্তর– ইহা সর্বথা মিথ্যা , কারণ —

         বিজানীহ্যার্য়ান্ য়ে স্যবো বর্হিষ্মতে      রন্ধয়া শাসদব্রতান্ ।

                          📙ঋগ্বেদ ১৯/৯২/৮

         উত শূদ্রে উত আর্য়ে । 

                           📙অথর্ব ১৯/৯২/১।

          ইহা লিখিত হইয়াছে যে , ধার্মিক , বিদ্বান্ এবং আপ্ত পুরুষদিগের নাম আর্য্য । তদ্বিপরীত ব্যক্তিদের নাম দস্যু অর্থাৎ ডাকাত , দুর্বৃত্ত , অধার্মিক ও মূর্খ ; সেইরূপ ব্রাহ্মণ–ক্ষত্রিয়–বৈশ্য দ্বিজদিগের নাম আর্য্য এবং শূদ্রের নাম অনার্য্য অর্থাৎ আনাড়ি । 

    কোন সংস্কৃত গ্রন্থ বা ইতিহাসে এইরূপ লিখিত নাই যে , আর্য্যগণ   ইরান হইতে আসিয়াছিলেন বা এদেশীয় বন্য মানুষ্যদিগকে যুদ্ধে পরাজিত ও বিতাড়িত করিয়া দেশের রাজা হইয়াছিলেন । তাহা হইলে বিদেশীদের লেখা কিরূপে গ্রাহ্য হইতে পারে  ?”

        এখানে আর্যরা বিদেশ থেকে এসেছিল কিনা আমরা সে সম্বন্ধে প্রচলিত মতের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব । 

      আর্যদের মূল অভিযান প্রসঙ্গে ঊনবিংশ শতাব্দীর উত্তরার্ধে প্রচুর আলোচনা হয়েছে । এই আলোচনার ফলস্বরূপ শুধু ভারতেই নয় , সমস্ত এশিয়া ও ইউরোপে আর্যদের মূল নিবাস খোঁজার প্রচেষ্টা করা হয় এবং অনেক মত প্রতিপাদিত হয় , যথা– 

     ১. ইউরোপ– কিছু লোকের বক্তব্য আর্যদের নিবাসস্থান ইউরোপে ছিল । তাদের মত অনুযায়ী উত্তরের ইউরাল পর্বত থেকে শুরু করে অ্যাটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ক্ষেত্রে আর্যদের সভ্যতা ও ভাষার বিকাশ হয়েছে । এই মতের সমর্থনে বলা হয় যে , এই স্থান আর্যদের কয়েকটি শাখার  সমীপে  ছিল , কেননা এশিয়া অপেক্ষা ইউরোপে আর্যদের বসতী বেশী ।  এই মতের প্রবর্তক কিউনো । কিছু লোক তাঁর সমর্থনে এগিয়ে আসেন । কিন্তু এই মত প্রসার লাভ করেনি । 

     ২. মধ্য এশিয়া –  আর্যদের মূল নিবাস মধ্য এশিয়ায় (ইরানের উত্তর এবং ক্যাম্পিয়ান সাগরের পূর্বে ) ধরা হয় । এই মত সর্বপ্রথম ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে রোহড্ (J.B. Rhode) নামক বিদ্বান্ প্রতিপাদন করেন । ইরানের প্রাচীন ঐতিহ্য দৃষ্টিতে রেখে রোহড্ এই মত স্থির করেন যে , প্রারম্ভে আর্যরা ব্যাক্ট্রিয়া নামক স্থানে নিবাস করত এবং সেখান থেকে ক্রমে- ক্রমে অন্য জায়গায় শাখা বিস্তার লাভ করে । শ্লীগল ও পাট এই মত সমর্থন করেন ।   ১৯৫৯ খৃঃ ম্যাক্সমূলারও আর্যদের মূলনিবাসী মধ্য এশিয়ায় হওয়ার পক্ষে জোরদার মত ব্যক্ত করেন ।  তাঁর মতানুযায়ী আর্যদের একটা শাখা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চলে যায় । এরাই পরে ইরানী ও ভারতীয় আর্য রূপে দুটি উপশাখা তৈরি হয়ে যায় , এরা অনেকদিন একসঙ্গে ছিল । এই মতের পুষ্টিতে ১৮৭৪ খৃঃ প্রফেসর সেঅস (Sayace) এও বললেন যে , বেদ ও জেন্দাবেস্তা অনুশীলনে  জানা যায় যে , আর্যরা প্রথমে এমন জায়গায় থাকত যেখানে শীতের আধিক্য ছিল । ম্যাক্সমূলার  ও ক্বীথ প্রভৃতি আর্যদের ভারত প্রবেশ কে মধ্য এশিয়া থেকে হিন্দুকুশের রাস্তা হয়ে দেখান । প্রোরগাইন্স , গীয়র্মন , সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় প্রভৃতি বোগাজকোই (বর্তমান টার্কী) থেকে প্রাপ্ত দেবনামের সঙ্গে ভারতের সাম্য স্থাপন করে দেখিয়ে বলেন যে , ভারতের দিকে প্রস্থানরত আর্যদের সূচনা এখান থেকেই হয়েছে ।  জেকোবী মানেন যে এরা এশিয় ,  মাইনর থেকে ভারতে নয় ভারত থেকে এশিয়া মাইনরে গিয়ে ছিল । কোসাম্বীও ভারতে আর্যদের আক্রমণ স্বীকার করেন । প্রো০ ওয়াডেন লিখেছেন যে , আর্যদের মুখ্য ব্যবসা কৃষি ও পশুপালন । মধ্য এশিয়ার ভূমি  উর্বর ছিল না , প্রয়োজনীয় মাত্রায় জলও ছিলনা; অতএব , এই ভূমি তাদের জন্য সর্বথা  অনুপযুক্ত ছিল ।

     কিছু বছর পূর্বে ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীতে ভারত সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী সাত সদস্যের দল এক মত হয়ে আর্যদের ইরান ইত্যাদি হয়ে ভারতে এসে বাস করার ধারণার প্রবল প্রতিবাদ করেন ।  শিষ্টমণ্ডলের জনৈক সদস্য , রাষ্ট্রীয় সংগ্রহালয়ের নির্দেশক ডঃ এন. আর. ব্যানার্জী বললেন যে , ভারতীয় বিদ্বানেরা সবলে এই পক্ষ স্থাপিত করেন । তাঁদের প্রবন্ধের সকলেই প্রশংসা করেন । সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন , পশ্চিম জার্মানী , ইরান , পাকিস্তান , ভারত সহ  ৯০ প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন । ভারতীয় প্রতিনিধি মণ্ডলের নেতা ডঃ বি০ বি০ লাল (Director of advanced studies) ছিলেন ।  ভারতীয় বিদ্বানরা বললেন যে , ভারতীয় ইতিহাসের বিভিন্ন কালে ও ক্ষেত্রে আর্য সম্পর্কিত প্রত্নতত্ত্ববিষয়ক সামগ্রী ইরান , আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় উপলব্ধ প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কীয় সামগ্রীর সঙ্গে সামঞ্জস্য হয় না । (The Hindustan Times , 31.10.1977) 


  ৩. উত্তর মেরুপ্রদেশ– বিখ্যাত বিদ্বান বালগঙ্গাধর তিলক আর্যদের অভিযান সম্পর্কে এই মত প্রতিপাদিত করেন যে, শুরুতে আর্যরা উত্তর মেরুতে থাকত । কাল ক্রমে জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তন হেতু তারা অন্যত্র যেতে বাধ্য হয় । তাঁর মান্যতা অনুযায়ী ঋগ্বেদ নির্মাণকালে আর্যরা সপ্তসিন্ধু প্রদেশে (পাঞ্জাবের আশেপাশে) এসে গিয়েছিল , তবে মেরুপ্রদেশের স্মৃতি তাদের মধ্যে ছিল । 

      তিলক ‘ওরিয়ন’ (Orion - মৃগশীর্ষ ) গ্রন্থ লেখার পাঁচ বৎসর পর ১৮৯৬ সালে আর্যদের উত্তরমেরু বাসস্থান গ্রন্থটি (Arctic home in the Vedas) লিখলেন । এর সারাংশ তিনি ম্যাক্সমূলারকে লিখে পাঠালেন । 

  ম্যাক্সমূলার জবাবে লিখলেন— 

আমার সন্দেহ হচ্ছে আপনার ধারণা ভূগর্ভ শাস্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে না । ভূগর্ভশাস্ত্র অনুযায়ী হিমপাত তো অনেক দিন পূর্বে হয়েছে অথচ আপনি বেদকে কেবল ৬ হাজার বছর পূর্বে স্বীকার করেন । এমন অবস্থায় লক্ষ-লক্ষ বছর পূর্বে সংঘটিত হিম প্রপাতের সময় উত্তরমেরুতে কারও থাকার বর্ণনা বেদে কিভাবে পাওয়া যেতে পারে ?’ সেই সময় পর্যন্ত ভূগর্ভ শাস্ত্র অনুযায়ী হিমপ্রপাত কাল ৮০ হাজার বছরের বেশী মানা হত । তিলকের মনে খটকা লাগে এবং তিনি তাঁর গ্রন্থ ছাপানো বন্ধ করে দিলেন । পরে অবশ্য ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর গ্রন্থ প্রকাশন করেন ।’ 

     ‘মানবের আদি জন্মভূমি’র লেখক বাবু উমেশ চন্দ্র বিদ্যারত্ন লিখছেন— ‘আমি গত বছরে তিলক মহাশয়ের বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করিয়াছিলাম । তাঁহার সহিত এই বিষয়ে আমার ক্রমাগত পাঁচ দিন বহু সংলাপ হইয়াছিল । তিনি আমাকে তাহার দ্বিতল গৃহে বসাইয়া সরল হৃদয়ে বলিয়াছিলেন যে , আমি মূল বেদ অধ্যয়ন করি নাই , সাহেবদিগের অনুবাদ পাঠ করিয়াছি মাত্র ।  

(পৃষ্ঠা ১২৪)

   ৪. সপ্ত সিন্ধুর দেশ— শ্রী অবিনাশ চন্দ্র দাস ‘ঋগ্বেদিক ইণ্ডিয়া’ নামক গ্রন্থে তার মতের পুষ্টি হেতু  ঋগ্বেদের মন্ত্রের উল্লেখ করেন—

সুদেব আসি বরুণ য়স্য তে সপ্তসিন্ধবঃ ।

অনুরক্ষন্তি কাকুদং সূর্য়্যং সুষিরামিব ।।

                            📙ঋগ্বেদ-৮/৬৯/১২

   অর্থাৎ– হে (বরুণ) বরণীয় আচার্য (য়স্য তে) তোমার যে তালু প্রতি (সপ্তসিন্ধবঃ) সপ্ত ছন্দে প্রবাহিত জলধারার সমান (সূষিরা সূর্য়্যং) ছিদ্রবর্তী লৌহ নলিকায় জলধারার সমান (অনুরক্ষন্তী) প্রবাহিত হয় , সেই তুমি (সুদেবঃ অসি) জ্ঞানের প্রকাশক । সায়ণভাষ্য— হে জলাভিমানী বরুণদেব । তুমি শ্রেষ্ঠ দেবতা , তোমার তালুরূপ সমুদ্রে সাত নদী প্রবাহিত হয় । সায়ণ এর পুষ্টি হেতু আরেকটি মন্ত্রের উল্লেখ করলেন — 

            ইমং মে গঙ্গে । 
           য়মুনে সরস্বতি শুতুদ্রি 
           স্তোমং সচতা পরুষ্ণা । 
           অস্কিন্যা মরুদ্ বৃধে 
           বিতস্তয়ার্জী কীয়ে 
           শৃণুদা সুষোময়া ।।

                           📙ঋগ্বেদ-১০/৭৫/৫

   এই ঋচার ভিত্তিতে নানা পাওগী লিখলেন যে , ইন্দ্র বৃত্ত (মেঘ) কে বজ্র মেরে সপ্ত সিন্ধুকে মুক্ত করেন । কিন্তু ‘ইমং মে গঙ্গে য়মুনে’— ঋ০ ১০/৭৫/৫ মন্ত্রে স্পষ্টভাবে দশটি নদীর উল্লেখ পাওয়া যায় । এর মধ্যে কোন্ তিনটি সায়ণ ত্যাগ করেছেন তার নির্দেশ তিনি দেননি ।

      ডঃ সম্পূর্ণানন্দ বলেন – ‘সপ্তসিন্ধুর সীমা সম্বন্ধে বিদ্বানদের মধ্যে বড় মতভেদ লক্ষ করা যায় । যদি সপ্ত সিন্ধুর তৎকালীন ভূগোলের স্বরূপ নিশ্চিত হয়ে যায় তবে সম্ভবত আর্যদের মূলনিবাসের সমস্যা স্বতই সমাধান হয়ে যাবে ।’ 

    যদি গঙ্গাদি শব্দকে নদী বাচক মেনে নেওয়াও হয় তা হলেও এর দ্বারা বেদে ইতিহাস প্রতিপন্ন হয় না কেননা নদীর বর্ণনা একটা নৈসর্গিক অবস্থান , নদী সর্বত্র সমান রূপে প্রবহমান , তার স্বভাব–প্রাপ্ত রচনা বা গতি ইত্যাদির উল্লেখ কোন ইতিহাসের দ্যোতক হতে পারে না ।

৫. ভারতীয় মত– আদি সৃষ্টি হেতু উপযুক্ত স্থানের নিরিখে আমরা নিম্নলিখিত শর্ত ধার্য করতে পারি —

       ১। সংসারে সবচেয়ে উঁচু জায়গা ।

       ২। যেখানে শীত ও উষ্ণ জলবায়ু থাকে ।

       ৩। যেখানে মানুষের খাদ্য , ফল , উদ্ভিদের প্রাচুর্য ।

        ৪। যার আশেপাশে রঙ-রূপ বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকে ।

        ৫। যার নাম সকলের স্মরণে অঙ্কিত থাকে ।

    এসমস্ত লক্ষণ হিমালয়ের উপর গঠিত হয় । হিমালয় থেকে নেমে আর্যরা সোজা বর্তমান যাকে ভারত নামে অভিহিত করা হয় , সেই ভূখণ্ডে এসে বসবাস করতে থাকে । যে রাস্তা দিয়ে তারা এসেছিল সেই রাস্তার নাম তারা হরিদ্বার রেখেছিল । মনুস্মৃতি ২/২ - তে আর্যাবর্তের সীমা এইভাবে নির্দেশ করা হয়েছে — 

আ সমুদ্রাত্তু বৈ পূর্বাদাসমুদাত্তু পশ্চিমাৎ ।

তয়োরেবান্তরং গির্য়োরার্য়াবর্ত্ত বিদুর্বুধাঃ ।।

 অর্থাৎ পূর্ব সমুদ্র থেকে নিয়ে পশ্চিম সমুদ্র পর্যন্ত বিদ্যমান উত্তরে হিমালয় ও দক্ষিনে স্থিত বিন্ধ্যাচলের মধ্যবর্তী দেশ , যাকে বিদ্বান লোকেরা ‘আর্যবর্ত’ বলে । সত্যার্থ-প্রকাশ এর অষ্টম সমুল্লাসে এই শ্লোক নির্দেশ করে স্বামী দয়ানন্দ বলেছেন — ‘হিমালয়ের মধ্য রেখা থেকে দক্ষিণ ও পাহাড়ের মধ্যে এবং রামেশ্বর পর্যন্ত বিন্ধ্যাচলের ভিতর যত প্রদেশ , সে সবকে আর্যবর্ত বলে । পুরাতন কালে বিন্ধ্যাচল সেই পর্বতমালার নাম ছিল যাকে আজকাল পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট বলে ।’ 

    ম্যাক্সমূলার India what can teach us (P.29) নামক পুস্তকে লিখেছেন—  ‘এটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে যে , আমরা সকলে পূর্ব দেশ থেকেই এসেছি । শুধু তাই নয় , আমাদের জীবনে যা কিছু মুখ্য ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় , সবকিছু আমরা পূর্ব দেশ থেকেই পেয়েছি । এমন পরিস্থিতিতে যখন আমরা পূর্বের দিকে যাই , তখন আমাদের ভাবতে হবে যে , প্রাচীন গৃহের দিকে প্রত্যাবর্তন করছি ।’ 

      অতএব , আর্যরা যে বিদেশী নয় তা’ স্পষ্ট এবং তারা এখানে এসে এখানকার আদিবাসীদের দাস-দস্যু- শূদ্রতে পরিণত করে তাদেরকে অপাংক্তেয় করে রাখেনি তাও স্পষ্ট ।
পাশ্চাত্য তথা কথিত পণ্ডিত দের ধারনা ছিল আর্য বলতে কোন জাতি গোষ্ঠী এর উল্লেখ করা হয়েছে। বৈদিক শাস্ত্র সম্পর্কে অবগত না থাকার দরুন এমন ভুল ধারনা সৃষ্টি হয়। কিন্তু সত্য সর্বদা সত্য ই থাকে।
আর্য শব্দের অর্থ গুনি ব্যক্তি বা বেদ জ্ঞান এ গুণি ব্যক্তি দের ই বোঝানো হয়েছে।
“বি জানীহ্যার্যান্যে চ দস্যবো বর্হিষ্মতে রন্ধয়া শাসদব্রতান্।” (ঋগ্বেদ ১/৫১/৮)
উক্ত মন্ত্ৰসমূহে সত্য, অহিংসা, পবিত্রতাদি উত্তম ব্রতধারী ব্যক্তিদের ‘আর্য’ বলা হয়েছে এবং বিশ্বের নর-নারী সকলকে এইরূপ 'আর্য' করার উপদেশ দেয়া হয়েছে।
“আর্যবৃত্ত।” (গৌতম ধর্মসূত্র ১৯/৯৬) এখানে সদাচারপরায়ণ অর্থে ‘আর্য’ শব্দ প্রযুক্ত হয়েছে।
বাল্মীকি রামায়ণে পুরুষ শ্রেষ্ঠ রাম জী এত গুণগান করতে বলা হয়েছে।
“সর্বদাভিগতঃ সদ্ভিঃ সমুদ্র ইব সিন্ধুভিঃ। আৰ্যসর্বসমশ্চৈব সদৈব প্রিয়দর্শন।।” (বাল্মীকি রামায়ণ ১/১/১৬)
রামচন্দ্র সদাসর্বদা সৎপুরুষদের সাহচর্যে থাকতেন যেরূপ সমুদ্র সদা নদীসমূহের সাথে মিলে থাকে তথা তিনি আর্য, সমদর্শী ও সকলের প্রিয় ছিলেন।
মহাভারতের ধর্মরাজ বিদুর আর্য এর বর্ণনা করতে বলেছেন।
“আর্য কর্মাণি রজ্যন্ত ভূতি কর্মাণি কুৰ্বতে হিতং চ নাভ্যসূযন্তি পণ্ডিতা ভরতর্ষভ।(বিদুর নীতি ১/৩০/)
এই বচনসমূহে অত্যন্ত ধার্মিককে 'আর্য' বলা হয়েছে।
মহাভারতে আর্য এর উল্লেখ করে বলা হয়েছে।
“স বাল এবার্যমতির্মূপোত্তমঃ।" (মহাভারত আদিপর্ব ৪০/৭)
এই বচনে উত্তম রাজকুমারের সাথে ‘আর্যমতি’ বিশেষণ যুক্ত করা হয়েছে যার অর্থ শ্রেষ্ঠ,বুদ্ধিমান।
"ন বৈরমুদ্দীপয়তি প্রশান্তং ন দপমারােহন্তি নাস্তমেতি ।
ন দুর্গতােশ্মীতি করােত্যকায়ং তমায়শীলং পরমাহুরায়াঃ।
ন স্বে সুখে বৈকুরুতে প্রহর্ষং নান্যসাদুঃখেভবতি প্রহৃষ্ট ,
দত্বান পশ্চাৎ কুরুতেনুতাপং স কথ্যতে সৎপুরুষায় শীলঃ।
- মহাঃ উদ্যোগপর্ব/৩৩ অধ্যায়/১১৭-১১৮ শ্লোক
অর্থাৎ – সেই "আর্য" যে শান্ত , বৈরতা উদ্দীপ্ত করেনা , যে অভিমান করে না , যে কখনও নিরাশ হয় না , যে নিজের সুখে বেশী প্রসন্ন হয় না , অন্যের দুঃখ দেখে দুঃখী হয় না , দান দিয়ে অনুতাপ করে না ।
মহর্ষি বেদব্যাস নিম্নোক্ত আট গুণেযুক্ত ব্যক্তিকে আর্য বলেছেন -
জ্ঞানী তুষ্টশ্চ দান্তশ্চ , সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ।
দাতা দয়ালুর্নশ্চ স্যাদার্গো হৃষ্টভিগুণৈঃ।।
অর্থাৎ যে জ্ঞানী , সর্বদা সন্তুষ্ট , মনের নিয়ন্ত্রক , সত্যবাদী , জিতেন্দ্রিয় , দানী , দয়ালু ও নম্র – এই অষ্ট গুণধারী ব্যক্তি ‘ আর্য নামে অভিহিত হয় ।
এমন অনেক সনাতন বৈদিক শাস্ত্রে আর্য বলতে জ্ঞানী পুরুষ বা সংযমী মানুষ ও বলেন। রাম থেকে শ্রী কৃষ্ণ সবাই ই আর্য। তাই শ্রী কৃষ্ণ মহাভারতে ভারতকে আর্যবর্ত্ত বলেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন রিসার্স পেপার ও দেওয়া হল আর্য বলতে কাদের বোঝায় জানার জন্য।
আর্য আক্রমণ তত্ত্বের স্রষ্টা হলেন তথা কথিত পাশ্চাত্য পণ্ডিত গণ। রীতিমত তারাই সর্বদা প্রচেষ্টা করে গেছে যেকোন ভাবে ভারতীয় সংস্কৃতি কে ব্রিটিশ ইতিহাস থেকে নিচুস্তর এ রাখাই ছিল মূল উদ্দেশ্য । মূলত এই মিথ্যাচার এর প্রণেতা " লর্ড টমাস ব্যরিংটন মেকলে”। তিনি ইংরেজ সরকার কতৃক ভারতে শিক্ষা ব্যবস্থা এর প্রধান হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এবং তৌরি করেন এডুকেশন বোর্ড। এর বোর্ড এর উদ্দেশ্য ছিল পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থা তথা ইংরেজি শিক্ষা ব্যবস্থা ভারতের প্রত্যেকের রক্তে বীজ বপন করতে। মেকলে ছিলেন একজন উগ্র খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। তার ইচ্ছা ছিল সারা ভারতবর্ষে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করা বিভিন্ন কৌশলে। এজন্য তিনি নীতিগত পরিবর্তন আনেন ভারত বর্ষে এবং গুরুকুল এর পতন ঘটান।
তিনি নিজেই বলেছেন - আমার পরিকল্পনা মত যদি ঠিক ঠিক ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা চলে তবে শিক্ষিত বাঙ্গ লীদের মধ্যে ৩০ বছরের মধ্যে মূর্তি পূজারী কেউ থাকবে না। #রেফারেন্স (মেকলে, দি শেপিং অফ দি হিস্টোরিয়ান জনক্লাইভ, পৃ. ৪১২ ৪১৩) দুঃখের বিষয় হল বর্তমানেও ভারতে মেকলে এর তৌরি বিষ বৃক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা চলিত হয়ে থাকে।
পরবর্তিতে ভারতে খ্রিস্টান ধর্ম ভারতে প্রসার করার জন্য মেকেল ততকালিন জার্মান খ্রিস্টান প্রচারক, ফ্রেডেরিক ম্যাকসমুলারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ম্যাকসমুলার লিখেছেন -Sacred Books of the East। মুলারের বয়স তখন ৩১। ১৮৫৪-র ডিসেম্বর ১ লক্ষ টাকা পাওয়ার চুক্তিতে মূলার দায়িত্ব নেন এমনভাবে বেদ-এর অনুবাদ করবেন যাতে হিন্দুদের বৈদিক শাস্ত্রে বিশ্বাস নষ্ট হয়। ম্যাকসমুলার ছিলেন গোঁড়া খৃষ্টান। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ৪০০৪ খৃষ্ট পূর্বাব্দে ২৩ অক্টোবর সকাল ৯টায় পৃথিবীর জন্ম হয়েছে। তাই তার বিশ্বাস মতে ৪০০৪ খৃষ্ট পূর্বে কোন সভ্যতা থাকার কথা না। এর ফলে তিনি সিন্ধু সভ্যতা ইত্যাদি কে অনার্য সভ্যতা বা এর অস্তিত্ব নিয়ে মিথ্যাচার করতে বাধ্য হোন। তিনি যে কি পরিমান উগ্র খৃষ্ট ছিলেন তা তার বই এ উল্লেখ পাওয়া যায়।
I look upon the account of creation given in the Genesis as simply historical #রেফারেন্স[পৃ. ৪১৮-৮২ Life & Letters by Georgina Muller.]
একটি চিঠি তিনি লিখেছিলেন তার স্ত্রীকে ১৮৬৬ সালে। “আমার এই পুস্তক (দি স্যাক্রেড বুক্‌স অফ দি ইষ্ট) ভারতের লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলবে। তাদের ধর্মের মূলটা কোথায় তারা তা জানতে পারবে গত তিন হাজার বছর ধরে তারা যা বিশ্বাস করে এসেছে সেই বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করার এইটাই একমাত্র উপায় বলে আমি মনে করি। #রেফারেন্স (Max Muller, F. 1902. Life and Letters Edited by Georgina Muller, Page 328.]
১৮৬৮ সালে তিনি সেক্রেটারী অফ স্টেট ফর ইণ্ডিয়া - ডিউক অফ আরগিলকে লিখলেন :
ভারতের প্রাচীন ধর্মের শ্রাদ্ধ হয়ে গেছে,এরপর যদি খৃষ্টধর্ম সে স্থান দখল করতে না পারে, সেটা কার দোষ ? #রেফারেন্স : (Max Muller, F. 1902. Life and Letters Edited by Georgina Muller, Page 357-358.]
যাই হোক, ১৮৭১ সালে জার্মান অধিকৃত ফ্রান্সের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এ ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি বলেন যে " আর্য বলতে জাতি বুঝায় না, ভাষা গোষ্ঠী বুঝায় -এই ভাষা গোষ্ঠীতে সংস্কৃত, গ্রীক, ল্যাটিন, আবেস্তা এবং অন্যান্যগুলি আছে। #রেফারেন্স (Max Muller Biographies of words and Home of Aryans - P. 26)।
তার এই মত পাল্টানো এর মূল কারণ হিসেবে ধরা হয় জার্মান দের ঐকতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে বৈদিক শাস্ত্রের কোন রূপ হাত থাকতে পারে।
যখনি কথা আসে আর্য আক্রমণ তত্ত্ব নিয়ে কিছু বলার, তখনি কিছু স্বল্পজ্ঞাত মানুষ এসে একগাদা কুচক্রী মহলের বই ধরিয়ে এসে বলেন। " এই দেখ বিজ্ঞ তথা এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দের মতামত, তাদের মত ই ধার্য ”।
সেই ক্ষণে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সেই অপর ব্যক্তি টি তথাকথিত বিশেষজ্ঞ দের বই, ইন্টার্ভিউ বা অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে রেফারেন্স দেখানো দায় হয়ে যায়। তাই এখানে আমরা সেই সব বিজ্ঞ ব্যক্তি যারা এ বিষয়ে সত্যই গবেষণা করেছেন তাদের থেকেই উল্লেখিত বই থেকে ই দেওয়া হল সব প্রমাণ। উল্লেখিত বিষয় সমূহ হল।
♂ আর্য আক্রমণ তত্ত্ব নিয়ে মিথ্যাচার।
♂ প্রাচীন ভারতে ঘোড়া এর অস্তিত্ব।
♂ ডিএনএ থিওরি এর পর্যালোচনা।
♂ প্রাচীন ভারতে বৈদিক সভ্যতা উন্মোচন।
উল্লেখ্য বিষয় সমূহ ই মূলত আর্য আক্রমণ / বহিরাগমন তত্ত্ব এর স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই কোন তত্ত্ব কে খন্ডন করার জন্য সেই তত্ত্বের স্তম্ভ কে ধ্বংস করা অতিব জরুরি বলে মনেকরি। তাই উল্লেখিত বিষয় সমূহ বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, প্রত্নতাত্ত্বিক ও অন্যান্য মহলের অভিজ্ঞ ব্যক্তি দের ব্যাখ্যা থেকে জানার চেষ্টা করব আসল সত্য টা কি। যথায় এখানে বিশেষজ্ঞ দের মতামত অনুযায়ী ই কথা বলা হচ্ছে সেই ক্ষেত্রে এটির প্রামাণিকতা নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকার কথা নয়।
#বিশেষ_দ্রষ্টব্য : যথায় ঐতিহাসিক দের সাহায্য নেওয়া হয়েছে, তাই তাঁরা মূলত বেদ থেকে বিভিন্ন ইতিহাস বা বিভিন্ন ব্যক্তি, নদী কাহিনী ইত্যাদি বের করতে চায়। কিন্তু বেদ এ কোন ইতিহাস বা চরিত্র বা এসবের কিছুই নেই তা আমরা আর্টিকেল এর শুরুতেই প্রমাণ করেছি। তাই এ নিয়ে কোন সন্দেহ থাকা অনুচিত বটে।
যাদের কাছে আর্য বলতে কোন যাযাবর শ্রেণী বোঝায় সেই ইউরোপ আমেরিকান শিক্ষিত তথাকথিত বিজ্ঞ ব্যক্তি রাই বর্তমানে " আর্য আক্রমণ তত্ত্বের ” খন্ডনে সবার শীর্ষে। যাই হোক মতিভ্রম কাটার জন্য ধন্যবাদ এদের। ঠিক এমনই একজন ইউরোপিয়ান ইতিহাসবিদ Michel Danino তার লেখা ডকুমেন্টারি বই তে তিনি প্রমাণ করেন আর্য আক্রমণ তত্ত্ব একটি পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই না।
♦ Michel Danino এর আর্য আক্রমণ খন্ডন প্রমাণ সহ।
A brief note on the Ariyan invasion theory তে তিনি উল্লেখ করেন কীভাবে পাশ্চাত্য সাহিত্যিক রা ভারত বর্ষের ইতিহাস কে ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা করেছেন। সেই হিসেবে তিনি প্রমাণ দিয়েছেন ভারত ও বিশ্বের অন্যতম সব ইতিহাসবিদদের। ঠিক তেমন একজন George F. Dales, "The Mythical Massacre at Mohenjo-daro" এর রেফারেন্স থেকে, Despite the extensive excavations at the largest Harappan sites, there is not a single bit of evidence that can be brought forth as unconditional proof of an armed conquest and the destruction on the supposed scale of the Aryan invasion."
এছাড়াও আরেকজন আমেরিকান ইতিহাসবিদ তিনি আর্য আক্রমণ তত্ত্ব নিয়ে পর্যাপ্ত পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেন, এখন পর্যন্ত মহেঞ্জোদারো হরপ্পা অঞ্চল পর্যালোচনা করে কোন ইনভেনশনস এর প্রমাণ পাওয়া যায় নি। "There is no archaeological or biological evidence for invasions or mass migrations into the Indus Valley between the end of the Harappan Phase, #রেফারেন্স : J. M. Kenoyer, Ancient Cities of the Indus Valley Civilization, p. 174.
শুধু তাই নয়, যারা হরপ্পা মহেঞ্জোদারো এর খনন কার্যে নিযুক্ত ছিলেন সেই সবদের মধ্যে অন্যতম এস, আর রাও তিনি সর্বাপেক্ষে আর্য আক্রমন তত্ত্ব নাকচ করেছেন এবং বলেছেন খনন কার্যে এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি যাতে আর্য রা বাহির থেকে আক্রমণ করেছে তা প্রমাণ পাওয়া যায় না। "There is no indication of any invasion of Indus towns nor is any artefact attributable to the so-called 'invaders'." #রেফারেন্স : S.R. Rao, Foreword to The Aryan Invasion Theory.
এমন আরেকজন ভারতরত্ন প্রাপ্ত এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইতিহাসবিদ এবং হরপ্পা মহেঞ্জোদারো এর প্রধান খনন কর্তা " বি বি লাল ” তার বইয়ে তিনি উল্লেখ করেন আর্য আক্রমণ একটি মিথ্যা বানোয়াট ছাড়া আর কিছুই না। "The supporters of the Aryan invasion theory have not been able to cite even a single example where there is evidence of 'invaders," represented either by weapons of warfare or even of cultural remains left by them." #রেফারেন্স : B.B. Lal, The Earliest Civilization of South Asia, p.283.
ঠিক এমনি একজন বিখ্যাত আর্কিওলজিস্ট " Henry - paul Francfort " তিনি মূলত আর্য আক্রমণ তত্ত্ব নিয়ে বিশেষ ভাবে গবেষণা করেছেন তা উল্লেখ পাওয়া যায় তাঁর মূলবান বই এই। সেখানে তিনি এ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখার সময় উল্লেখ করেছেন, তথা কথিত স্টেপ ( stape) অঞ্চল থেকে আর্য রা ভারতে আসে তা নিছক একটি বানোয়াট গল্প কাহিনী ছাড়া কিছুই নয়। এ বিষয়ে তিনি তুলে ধরেছেন কিছু গ্রাউন্ড স্টাডি রিপোর্টস। আর সেই সব রিপোর্ট এ বলে দেয় আসল সত্য কি ! দেখে নেই তাই কথা। In neither of
the two regions, steppes and oases, do we find an archaeological material that could be indisputably attributed to Indo-Iranians, Indo- Ayans or Iranian.
#রেফারেন্স: Henri-Paul Francfort, "Oxus Civilization, or BMAC, Indo-Iranians and Indo-Aryans" in Aryas, page - 262.
তাছাড়া আরো অনেক পাশ্চাত্য ইতিহাসবিদ এরাও প্রি আর্য বা আর্য দের আগে ভারত এর কিছুই খুযে পান না। আর্য পূর্ব সময় কাল বলতে কিছুই তাঁরা নাকচ করেন এবং সত্য উপলদ্ধি করতে উদ্ভূত করেন। The British archaeologist Colin Renfrew went even further, rejecting the notion of a "pre- Aryan" Harappan civilization: "It is difficult to see what is particularly non-Aryan about the Indus Valley civilization." উল্লেখ্য : এরা কেউ হিন্দুত্ববাদি বিজেপি, আর এস এস এর থেকে টাকা বা ডলার নিয়ে এসব কথা লিখে নি। প্রমাণ রেফারেন্স সব দেওয়া আছে নিজ ইচ্ছায় চ্যাক করে নিবেন সম্ভব হলে।
♦ " আর্যজন ও সিন্ধু সভ্যতা ” বই থেকে প্রমাণ। উল্লেখ বইটি বাজারে অন্যতম জনপ্রিয় বই গুলোর একট।
এই বইটি বিশাল ২৫০ পৃষ্টার, কিন্তু পাঠক এর পড়ার স্বার্থে দরকারি বিষয় সমূহ ও প্রাসঙ্গিক গুলই পিডিএফ এ রাখা হয়েছে। তিনি তাঁর বইয়ে পাশ্চাত্য চক্রান্তকারী কুচক্রী মহলের আলোক উন্মোচন করেন বটে। যচেষ্ঠ প্রমাণ সহ তিনি বৈদিক কাল কে ১০০০০ বছর পূর্ব থেকে প্রমাণ সহ দেখিয়েছেন কি ভাবে বৈদিক সভ্যতার কাল বিভাগ করা হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ইত্যাদি সহ বোঝানো বা প্রমাণ করা হয়েছে। তাই এ নিয়ে আসঙ্কা এর কিছুই থাকার কথা না।
♦ পাশ্চাত্য সনাতন পণ্ডিত ডেভিড ফ্রেডওয়ে এর আর্য আক্রমণ খন্ডন (পার্ট১)
এটি মূলত কয়েকটি পার্ট এ বর্ণিত। তবে এখানে প্রথম ( ১ম ) পার্ট ই দেওয়া হল। ডেভিড ফ্রেডওয়ে মূলত একজন আমেরিকান আর্য সমাজি। মূলত তিনি ম্যাক্সমুলার এদের চক্রান্ত এর প্রমাণ সমূহ এখানে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন এবং এর প্রভাব বিস্তারিত করেছেন। বেদ ও সেই সময়ের প্রাচীন ভারতে দ্রাবিড় দের আদি মানুষ হিসেবে বলা হত এবং মহাভারত কে আর্য দ্রাবিড় দের লড়াই বলা Dainael এর কথার খন্ডন ও করেছেন।
♦ India facts এর আর্য আক্রমণ খন্ডন, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ সহ।
A.L Chavda একজন indologist ভারত তত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা করেন। ইন্ডিয়া ফেক্টস এ আর্য আক্রমণ নিয়ে কথা বলার সময় তিনি সাধারণত শুধু ইনভেনশনস বা আক্রমণ নিয়ে নয়, তার আনুসাঙ্গিক অন্যান্য বিষয় নিয়েও নানা ভাবে কথা বলেছেন এবং যুক্তি দিয়েছেন। তিনি সরস্বতী নদী ছাড়াও আর্কিওলজিকাল অন্যান্য প্রমাণ দিয়ে প্রমাণিত করেছেন, আর্য আক্রমণ একটি মিথ্যা ছাড়া কিছুই না। তিনি এখানে কিছু বিশেষজ্ঞ দের ও উক্তি দিয়েছেন। যেমন: Professor B. B. Lal এর থেকে বলেছেন, Aryan migration too is a myth. He further states that “Vedic” and “Harappan” are respectively literary and material facets of the same civilization.
এছাড়া তিনি তাঁর বিখ্যাত বই,
এমন অনেক আর্কিওলজিস্ট দের থেকে প্রমাণ করা হয়েছে এবং তাদের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট থেকেই দেখানো হয়েছে যে আর্য আক্রমণ একটি মিথ্যাচার ।
♦বিখ্যাত World history. org এর Arya invented নিয়ে আর্টিকেল ।
এটি মূলত খুবি জনপ্রিয় একটি ওয়েবসাইট যেখানে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলা হয়ে থাকে। এখানে Joshua j. mark, Professor of Philosophy at Marist College, New York তিনি মূলত এই আর্টিকেল এর লেখক। তিনিও সবার মত করে ম্যাক্সমুলার সহ ইউরোপ এর কুচক্রী মহলের নিন্দা জানিয়ে প্রত্যেকটি জিনিস খন্ডন করেছেন। তিনি ইরানের জেরোস্ট্রিজম এর উল্লেখ করে বলেছেন সেই সময়ের প্রক্ষাত রাজা পর্যন্ত নিজেকে Aryan বলত যা ২০০০ বিসি বা ৪০০০ বছর আগের।
☞ The archaeologist J.P Mallory states that, “as an ethnic designation the word [Aryan] is most properly limited to the Indo-Iranians, and most justly to the latter where it still gives its name to the country Iran…the great Persian king Darius describes himself as Aryan”…
এমন অনেক প্রমাণ দিয়ে তিনি আর্য আক্রমণ তত্ত্বের খন্ডন করেছেন। আর্য বহিরাগমন এবং আক্রমণ দুই তত্ত্ব কেই প্রমাণ সহ খন্ডন করেন এই ইতিহাসবিদ।
♦আর্য আক্রমণ তত্ত্ব খন্ডন প্রমাণ সহ।
ছোট তবে ডকুমেন্টরি হিসেবে লেখক এর ছোট হলেও প্রামাণিক ভাবে খন্ডন আর্য আক্রমণ তত্ত্বের।
♦ "Chronology of Ancient india " বইতে বেদ কে ১০০০০ BC বয়স বলা হইছে। এবং তার প্রমাণ ও বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হইছে।
উক্ত বই পার্সোনালি নিজের সবচেয়ে বেশি প্রামাণিক বই। বিপুল পরিমাণ এ প্রমাণ দেওয়ার দরুন এর গ্রহণযোগ্যতা অন্যদের থেকে বেশি। এতে খুবি সুন্দর ভাবে প্রমাণ করা হয়েছে যে, প্রাচীন ভারত তথা আর্য সভ্যতা ১০০০০ বছর আগে থেকেই বিস্তারিত। এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ যেমন, কুণ্ডলী পাত্র, স্বস্তিকা ইত্যাদি জিনিস পাওয়া গেছে যা ১০০০০ বছর পূর্বের এবং তা বৈদিক ভারত কে ই প্রমাণ করে।
♦ The Rigvedic People: 'Invaders' /'Immigrants? -- New book by BB Lal. Kazanas' links refuting Witzel and 'mass migrationists'
ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ আর্কিওলজিস্ট ও ইতিহাসবিদ " বি বি লাল ” এর বিখ্যাত বই The Rigvedic People: 'Invaders' or 'Immigrants এই বইটি তে তিনি সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন আর্য রা আদি বাসিন্দা কি না, এই বিষয়ে শ্রেষ্ঠ বই এটি। এছাড়া একটি স্টাডিতে বিবি লাল সহ shri K. N Dikshit সহ অন্যান্য রা একটি সেমিনারে সিন্ধু সভ্যতা কে ১০০০০ বছর আগের বা ৮০০০ বিসি বলে উল্লেখ্য করেন।
In a recent study jointly made by the author and Shri K.N. Dikshit, a former Jt. DG of ASI declared in the conference the preliminary results of their investigation of data from early sites of Indo-Pak sub-continent such as Mehrgarh in Baluchistan, Rehman Dheri in Gomal plains, Jalilpur and Harappa in Punjab whereas Bhirrana, Baror, Sothi, Nohar, Siswal, Banawali, Kalibangan, Girawad and Rakhigarhi in India besides many others which suggest that Indian Civilization emerged in the 8th millennium BC in Ghaggar-Hakra and Baluchistan area.
এমন হাজারো প্রমাণ দেওয়া যায় বিভিন্ন বই থেকে যে আর্য আক্রমণ / বহিরাগমন তত্ত্ব একটি মিথ্যাচার কুচক্রী মহলের তা। এখন।যদি কোন অতিমানবীয় কেউ এসে নিজেকে বিবি লাল, এস আর রাও, মিচেল ডেনিল থেকেও বড় পণ্ডিতি করতে আসে তা হলে একটাই কথা বলার আছে। " কত টাকা দেয় গোলামি করার জন্য ? ”
আর্য আক্রমণ তত্ত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবী রাখা হয় তা হল প্রাচীন শিলালিপি যা পাওয়া গেছে তা অন্যান্য সব কিছুই প্রাণীর চিত্র থাকলেও ঘোড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় না।
♦ প্রাচীন ভারতে ঘোড়া এর উপস্থিতি এবং রাশিয়ার কুরগান তত্ত্ব খন্ডন।
এটি India facts এর Akshay Shankar নামক একজন Indologist এর একটি প্রামাণিক ডকুমেন্টারি যেখানে সিন্ধু সভ্যতা তে প্রাপ্ত ঘোড়া এর প্রমাণ দেওয়া হয়েছে আর্কিওলজিকাল ভাবে। সেখানে ৪০০০ থেকে ৬০০০ বছর আগের ঘোড়ার গাড়ি এবং ঘোড়ার প্রমাণ চিত্র সহ দেওয়া হয়েছে।
♦বৈদিক সাহিত্যে প্রাচীন সিন্ধু ঘাটিতে ঘোড়া এর আর্কিওলজিকাল প্রমাণ।
#উল্লেখ্য : এটি ইতিহাসবিদ রা লিখেছেন তাই বেদের আসল অর্থ উপলদ্ধি না হওয়াতে এখানে বেদের আধ্যাত্মিক অর্থ গ্রহণ যোগ্য নয়।
♦ সিন্ধু সভ্যতা তে ঘোড়া এর প্রমাণ ।
♦ ৪০০০ বছরের অধিক পুরনো ঘোড়ার গাড়ি এর প্রমাণ লথাল এ।
আসা করি তারপর সত্যপথ অবলম্বন করতে আর বেশি কষ্ট করতে হবে না। এবং ঘোড়া যে আর্য রা আনেনি বরং তা প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে ছিল সেটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বর্তমান সবচেয়ে প্রচলিত জিনিস যা ব্যবহার হয় আর্য আক্রমণ কে সাপোর্ট করতে তা হল " ডি এন এ বা জীনতত্ত্ব। দাবী করা হয় যে, যেহেতু বর্তমান প্রাপ্ত স্কেলেটন বা কঙ্কাল এর সাথে তাদের করা DNA টেস্ট ভারতের বর্তমান মানুষের সাথে মিলে নাই বলে তাদের মত তাই আর্য রা বহিরাগত। এ নিয়ে তাদের মত আরো বিস্তারিত কিন্তু সবকিছু লেখার সীমার জন্য বলা যাচ্ছে না। এখন আমরা এই DNA তত্ত্বের সত্যটা যাচাই করে দেখব।
যথায় এখানে DNA বা জীন নিয়ে কথা হচ্ছে তা হলে আমরা এ সম্পর্কে কিছি রিসার্স পেপার দেখে নিব পাশ্চাত্য ও দেশীয় বিশেষজ্ঞ দের নিয়ে। যেমন :
♦European Journal of Human Genetics এর রিপোর্ট এ আর্য আক্রমণ তত্ত্ব এর দাবি খন্ডন করেছে এবং বলেছে প্রাপ্ত ভারতীয় ডিএনএ mid - holocene age বা ১২০০০ বছর আগের।
♦ এছাড়া Investigate genetic এর রাকেশ টামাংগ এবং কুমারসামি ঠাংগরাজ এর রিসার্সে আর্য আক্রমণ বা বহিরাগমন সরাসরি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে প্রমাণ সাপেক্ষে।
♦ ভারতের সুনামধন্য নিউজ চ্যানেল " The Economic times ” একটি রিপোর্ট এ Kumarsamy Thagaraj এবং ফর্মার CCMB ডিরেক্টর ও দুজন US রিসার্স টিম বলেন - All indians have same genes.
♦ এছাড়া সাম্প্রতিক ডিএনএ টেস্ট পরিক্ষা প্রাপ্ত রিপোর্ট নিয়ে প্রজেক্ট ইন্সপেক্টর vasant shinde এর বক্তব্য , যা তিনি স্পষ্ট বলেছেন বর্তমান ডি এন এ রিপোর্ট আর্য আক্রমণ তত্ত্ব খন্ডন করে থাকে।
এমন হাজারো প্রমাণ থেকে এটা প্রমাণ করা যায় যে প্রাচীন ভারতের জীন (DNA) রিপোর্ট স্বদেশী জাতি কেই প্রমাণ করে থাকে।
এখন পর্যন্ত এটা প্রমাণিত যে, আর্য আক্রমণ তত্ত্ব একটি মিথ্যা বানোয়াট জিনিস। তাই এখন দেখব আর্যরা স্বদেশী ভারতীয় হলেও ঐ সময় বৈদিক ছিল কি না।
♦ প্রফেসর শাস্ত্রী তেওয়ারি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃত বিভাগ এর, বৈদিক সভ্যতা এর পরিচিতি।
♦ প্রাচীন বৈদিক ভারতের সময় কাল এবং প্রত্নতত্ত্বীয় রেফারেন্স।
♦ প্রাচীন বৈদিক ভারতের প্রমাণ এখানে দেওয়া আছে আর্কিওলজিকাল প্রমাণ সহ। তাই প্রাচীন ভারত যে বৈদিক তা প্রমাণিত।
♦ অনেকে বলতে পাড়েন বেদ কত বছর আগের সৃষ্টি বা বেদ এর প্রাচীনতা প্রমাণ কি ! তাদের জন্য এই আর্টিকেল এ প্রমাণ করা আছে এ বিয়য়ে। বেদ কত বছর আগের পুরনো ।
♦ এছাড়া কেউ যদি সংস্কৃত ভাষা এর প্রাচীনতা নিয়ে কোন রূপ সন্দেহ থাকে তাহলে এই ডকুমেন্টারি পড়তে পাড়েন। এখাবে সংস্কৃত ভাষার প্রাচীনতা এবং তামিল নয় সংস্কত ই প্রাচীন তা প্রমাণ করা হয়েছে।
সুজিত দাসের আর্য আক্রমণ তত্ত্বের ভাষা গত বিতর্কের সত্য উন্মোচন প্রমাণ সহ।
রাজিব মালহোতরা এর আর্য আক্রমণ তত্ত্ব এর খন্ডন এবং তামিল এবং সংস্কৃত ভাষার ষড়যন্ত্র ফাস এবং ইউরোপিয়ান/ আমেরিকান খ্রিস্টান দের অপকর্ম ফাস।
এছাড়া আরো হাজারো প্রমাণ আছে যে আর্য রা স্বদেশী এবং এই ভারতে তাঁরাই রাজ করেছে এবং বৈদিক সিন্ধু সভ্যতা গড়ে তুলেছে। যদি কোন প্রবল জ্ঞানী পুরুষ থাকে তা হলে এই আর্টিকেল খন্ডন করে আর্যরা বহিরাগত তা প্রমাণ করিয়েন। কিন্তু তা সম্ভবপর হবে না, কারণ আর্য রা বহিরাগত তা খুদ পাশ্চাত্য পণ্ডিত বারেবারে খন্ডন করছেন।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ