"প্রতিমা" শব্দের অর্থ
(প্রতিমা) শব্দের অর্থ (অমরকোষে ২/১০/৩৫)
প্রতিমানং প্রতিবিম্বং প্রতিমাপ্রতিয়াতনা প্রতিচ্ছায়া।।৩৫।। প্রতিকৃতিরর্চা পুংসি প্রতিনিধি-
প্রতিমা অর্থাৎ ছবির নাম।।৮।।
১. প্রতিমান। ২. প্রতিবিম্ব। ৩. প্রতিমা। ৪. প্রতিছবি। ৫. প্রতিছায়া।।৩৫।।
৬. প্রতিকৃতি। ৭. অর্চা। ৮. প্রতিনিধি।
সংস্কৃত প্রতিমা শব্দটি "প্রতিম" থেকে উতপন্ন এবং আ প্রত্যয়যোগে নিস্পন্ন। প্রতিম এর অর্থ তুলনীয় এবং অপ্রতিম এর অর্থ অতুলনীয়। প্রতিম থেকেই প্রতিমা শব্দটি এসেছে যার অর্থ তুলনা বা তুলনীয়া।
তাই- "ন তস্য প্রতিমা অস্তি" শব্দের অর্থ দাঁড়ায় তার কোন তুলনা নেই। আরো ভেঙ্গে বলতে গেলে হয়- তার তুল্য কেউ নেই ।
এমন এক সময় ছিল যখন সাধারণ হিন্দুদের কাছে তাদের শাস্ত্র ছিল অস্পৃশ্য। ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের যদিওবা বেদ শোনার অধিকার ছিল, শুদ্র বেদ শুনলে তার কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়ার কুপ্রথা ছিল প্রচলিত। ভাগবতাদি পুরাণ ও বেদ বিরুদ্ধ মানব রচিত স্মৃতির এমনই ছিল আইন। এছাড়াও নানা কুসংস্কার, কুপ্রথায় জর্জরিত ছিল এই অভাগা হিন্দু সমাজ।
এসব কুপ্রথা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যেসব মহাত্মারা লড়াই করেছেন তাদের মধ্যে রাজা রাম মোহন রায় ও মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ছিলেন অগ্রগণ্য। বেদ ও বৈদিক শাস্ত্র বিরুদ্ধ এসব অন্যায় কুসংস্কারের গুঁড়িতে তাঁরা আঘাত হেনেছিল বেদ, উপনিষদ ও অন্যান্য বৈদিক গ্রন্থের আলোকে। উল্লেখ্য এই দুই মহাত্মার কর্মে আমরা বেশ কিছু সাদৃশ্য দেখতে পাই। তাঁরা যেমন ছিলেন কুসংস্কারের বিরোধী, তেমনি তাঁরা অভাগা হিন্দুদের অধঃপতন থেকে মুক্তির পাথেয় হিসেবে খুঁজে নিয়েছিলেন বেদ-উপনিষদের আলোকবর্তিকা। তাঁদের উভয়ের মতেই আমাদের অধঃপতনের অন্যতম কারণ আমরা বৈদিক এক ঈশ্বরের উপাসনা ত্যাগ করে বহু মতে, বহু পথে বিভক্ত হয়েছি। তাই তাঁরা জোর দিয়েছিলেন আমরা যেন সেই বৈদিক এক ঈশ্বরের উপাসনার পথে অগ্রসর হই। এই দুই মহাপুরুষই বেদ উপনিষদে বর্ণিত নিরাকার এক ব্রহ্মের উপাসনার কথা বলেছেন। এই বিষয়ে একটি মজার ঘটনা না বললেই নয়।
রাজা রামমোহন রায় যখন বাংলায় ঈশ, কেন, কঠ উপনিষদ অনুবাদ করে নিরাকার ব্রহ্মবাদের প্রচার শুরু করলেন এক দল তথাকথিত পণ্ডিত প্রচার করা শুরু করে যে, উপনিষদ বলে সংস্কৃতে কোনো শাস্ত্রই নেই, ঈশ, কেন, কঠ প্রভৃতি নাকি তিনি রচনা করেছেন। এই অভিযোগ এত মানুষ বিশ্বাস করেছিল যে তিনি প্রকাশ্যে এসে এই বলেছিলেন যে, “এই কলিকাতা শহরে শ্রীযুক্ত মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের বাড়িতে গেলেই দেখতে পাবেন যে, বেদান্ত শাস্ত্রের সকল পুঁথিই তাঁর ঘরে মজুত আছে।” উল্লেখ্য মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার ছিলেন রামমোহন রায়ের বিপক্ষ দলের অগ্রগণ্য পণ্ডিত।
এই ধরণের মূর্খ পণ্ডিত সর্বকালেই দেখা যায়। যে মহর্ষি বেদ মন্ত্র থেকে প্রমাণ বের করে দেখালেন বেদ কেবল ব্রাহ্মণ নয়, স্ত্রী-শুদ্র সকলেই পড়তে ও শুনতে পারবে; সেই মহর্ষিকেই আজকাল কতিপয় দুর্মুখ পণ্ডিতম্মন্য ব্যক্তি বলেন যে তিনি নাকি ভুলভাবে বেদ ব্যাখ্যা করেছেন। আজ মহর্ষি বেঁচে থাকলে বুঝতেন এই হিন্দু জাতির বেদ অধিকার দিতে চেয়ে তিনি কত ভুল করেছেন।
আজকাল কিছু সেরকম পণ্ডিতম্মন্য ব্যক্তি দাবি করেন যে বেদ তথা বৈদিক ঈশ্বর নিরাকার না, মহর্ষি দয়ানন্দ ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেখানে অরবিন্দের মত যোগী বলেছেন যে, মহর্ষি দয়ানন্দই বেদের প্রকৃত তাৎপর্য, প্রকৃত অর্থ তুলে ধরেছেন সেখানে কুয়োর ব্যাঙের মত পণ্ডিতদের মিথ্যা প্রলেপন বাতুলতা ভিন্ন কিছুই না।
তাদের দাবি যজুর্বেদের ৩২তম অধ্যায়ের ৩য় মন্ত্র নাকি প্রতিমা পূজার নিষেধ করছে না। তবে চলুন দেখি কি বলছে যজুর্বেদ ৩২/৩-
যজুর্বেদ ৩২/৩, মহর্ষির ভাষ্য সহিত
ঋষিঃ-স্বয়ম্ভু ব্রহ্ম। দেবতা-হিরণ্যগর্ভঃ পরমাত্মা। ছন্দঃ-নিচৃত্ পঙক্তিঃ। স্বরঃ-পঞ্চমঃ।।
ন তস্য প্রতিমাঅস্তি য়স্য নাম মহদ্যশঃ।
হিরন্যগর্ভহত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা যস্মান্ন জাতঃ ইত্যেষঃ।।
যজুর্বেদ ৩২।৩
*পদঃ* ন। তস্য। প্রতিমেতি প্রতিমা। অস্তি।যস্য। নাম। মহত্। যশঃ। হিরণ্যগর্ভ ইতি হিরণ্যগর্ভ। ইতি। এষঃ। মা। মা। হিংসীত্। ইতি এষাঃ। যস্মাত্। ন। জাতঃ। ইতি। এষঃ।
*পদার্থ*- হে মনুষ্য! ( যস্য) যাঁহার ( মহৎ) উপাসনাপূর্ণ বৃহৎ ( যশঃ) কীর্ত্তিকর ধর্মযুক্ত কর্মের আচরণে যাঁহার ( নাম) নামস্মরণ হয় যিনি ( হিরণ্যগর্ভ) সূর্য বিদ্যুৎ আদি পদার্থের আধার ( ইতি) এই প্রকার ( এষঃ) অন্তর্যামী হতে প্রকাশ যা ( মা) আমাকে ( মা হিসীত্) তাড়না দিবেন না বা বিমুখ করিবেন না, ( ইতি) এই প্রকার ( এষা) এই প্রার্থনা বা বুদ্ধি এবং ( যস্মাত্) যে কারণ ( ন) না ( জাতঃ) উৎপন্ন হয়, ( ইতি) এই প্রকার ( এষঃ) এই পরমাত্মার উপাসনা যোগ্য হয়। ( তস্য) সেই পরমেশ্বরের ( প্রতিমা) প্রতিমা-পরিমাণ তাঁহার তুল্য অবধির সাধন প্রতিকৃতি,মূর্তি বা আকৃতি ( ন অস্তি) না আছে। অথবা দ্বিতীয় পক্ষ এই হয় যে ( হিরণ্যগর্ভঃ০) পঁচিশতম অধ্যায়ে,১০ মন্ত্র থেকে ১৩ মন্ত্র পর্যন্ত ( ইতি, এষঃ) এই অনুবাকে বলা আছে ( মা, মা,হিসীত্) ( ইতি) একই প্রকার ( এষা) এই মন্ত্র দ্বাদশ অধ্যায়ের ১০২ ( বা) মন্ত্র এবং ( যস্মান্ন জাতঃ-ইত্যেষঃ০) এই অষ্টম অধ্যায়ের ৩৬.৩৭ দুই মন্ত্রের অনুবাকে (যস্য) যে পরমেশ্বরের ( নাম) প্রসিদ্ধ ( মহত্) মহতী ( যশঃ) কীর্ত্তি আছে,( তস্য) তাঁহার ( প্রতিমা) প্রতিবিম্ব ( তস্বীর) (ন,অস্তি) না আছে।
*ভাবার্থ*-হে মনুষ্য!যিনি কখনও দেহধারী হোন না,যাঁহার কোনও পরিমাণ সীমার কারণ হয় না,যাঁহার আজ্ঞার পালন নাম স্বরণ হয়,যাঁহার উপাসনা করা হয় তিনি তাঁহার উপাসকদের প্রতি অনুগ্রহ করেন,বেদে অনেক স্থানে যাঁহার মহত্ত্ব বলা হয়েছে,যাঁহার মৃত্যু হয় না,বিকৃত হয় না, বিনিষ্ট হয় না,তাঁহাকে নিরন্তর উপাসনা করো। যারা এর থেকে ভিন্ন কিছুর উপাসনা করে তারা এই মহাপাপ দ্বারা যুক্ত হয়ে নিজ দুঃখ দ্বারা বিনিষ্ট হইবে।।-[ভাষ্য-মহির্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী]
অনুবাদ: যাঁর মহান প্রসিদ্ধ যশ রয়েছে সেই পরমাত্মার কোনো প্রতিমা নেই। "হিরণ্যগর্ভ" আদি মন্ত্রে, "মা মা হিংসীত্" এই মন্ত্রে ও "য়স্মান্ন জাত" এই মন্ত্রে সেই পরমাত্মার বর্ণন রয়েছে। মহর্ষির ভাষ্য “ন নিষেধে তস্য পরমেশ্বরস্য প্রতিমা প্রতিমীয়তে য়য়া তৎপরিমাপকং সদৃশং তোলনসাধকং প্রকৃতিরাকৃতিরবা অস্তি বর্ততে” অর্থাৎ সেই পরমেশ্বরের তুল্য পরিমাণ সদৃশ সাধক প্রতিকৃতি বা মূর্তি কিছুই নেই।
সম্প্রদায়বাদী সেই গোঁড়াদের দাবি এই মন্ত্রে প্রতিমা শব্দ দ্বারা নাকি মূর্তিকে বোঝায় নি, কেবল উপমা বা তুলনা অর্থে বুঝিয়েছে। তাদের দাবি পুরাতন ভাষ্যকাররা নাকি এমন কোনো অর্থ করে যাননি, মহর্ষি দয়ানন্দই কেবল এই অর্থ করেছেন।
বেশ দেখুন তাদের আদরণীয় উবট ও মহিধর কি ভাষ্য করেছে,
যজুর্বেদ ৩২/৩, উবট ও মহিধর ভাষ্য সহিত
"ন তস্য পুরুষস্য প্রতিমা প্রতিমানভূতং কিঞ্চিদ্বিদ্যতে"(উবট)
এবং
"তস্য পুরুষস্য প্রতিমা প্রতিমানমুপমানং কিঞ্চিদ্বস্তু নাস্তি"(মহিধর)
অর্থাৎ সেই পুরুষের প্রতিমা, তুলনা বা উপমা কিছুই নেই।
উভয়েই বলছেন প্রতিমা নেই।
এই মন্ত্র দ্বারা যেমন প্রমাণ হয় ঈশ্বরের তুল্য কিছু নেই, তেমনি তাঁর প্রতিমা বা মূর্তি নেই। প্রতিমা অর্থ যে মূর্তি হয় তা মানতে নারাজ পণ্ডিতম্মন্যরা। মূর্তি শব্দ অবৈদিক দেখে বেদে মূর্তি শব্দ নেই, সে স্থলে আছে প্রতিমা। প্রতিমা অর্থ যে মূর্তি তা বৈদিক কোষেও উল্লেখিত আছে।
দেখা যায় প্রতিমা=উপমা দেখাতে তারা সাধারণ বাংলা অভিধান ইউজ করে৷ অথচ একটি বিখ্যাত প্রাচীন অভিধান অমরকোষ এ প্রতিমার ৮ প্রতিশব্দ আছে যা মূর্তি নির্দেশ করে৷ অমরকোষ ২.১০.৩৫
প্রতিমানং প্রতিবিম্বং প্রতিমা প্রতিয়াতনা প্রতিচ্ছায়া।
প্রতিকৃতিরর্চা পুংসি প্রতিনিধিরুপমোপমানং স্যাত্।।
যারা বলে পরমাত্মার উপমা নেই তারাই বরং ভুল বলে। কারণ পুরুষসূক্তসহ বেদের অসংখ্যস্থলে পরমাত্মার মহিমাকে বিভিন্ন উপমার সাহায্যে প্রকাশ করা হয়েছে৷ সামবেদের ৪৩ নং মন্ত্রটি দেখুন -
আ নো অগ্নে বয়োবৃধং রয়িং পাবক শংস্যম্।
রাস্বা চ ন উপমাতে পুরুস্পৃহং সুনীতী মুযশস্তরম্ ॥
[সামবেদ - ৪৩]
পদার্থঃ হে (পাবক) চিত্তশোধক, পতিতপাবন (অগ্নে) সম্মুখ মার্গ প্রদর্শক পরমাত্মা ! তুমি (বয়োবৃধম্) আয়ুকে বর্ধনকারী, (শংস্যম্) প্রশংসাযোগ্য (রয়িম্) ধনকে (নঃ) আমাদের জন্য (আ) নিয়ে এসো। হে (উপমাতে) উপমানভূত, সর্বোপমাযোগ্য পরমাত্মা ! (পুরুস্পৃহম্) অধিক আকাঙ্ক্ষিত অথবা বহু লোক দ্বারা আকাঙ্ক্ষিত, (সুয়শস্তরম্) অতিশয় কীর্তিজনক সেই ধনকে (সুনীতী) সন্মুখ মার্গে চালিত করে (নঃ) আমাদের (রাস্ব চ) প্রদানও করো।
চলুন বৈদিক ঈশ্বরের সাকার নিরাকার কি আকার সে নিয়ে বেদ উপনিষদ কি বলে তা দেখে নিই:
যজুর্বেদ ৪০/৮ বলছে ঈশ্বর অকায়ম(সর্বপ্রকার শরীররহিত)
যজুর্বেদ ৪০/৮, মহর্ষির ভাষ্য সহিত
আচার্য শঙ্করের ভাষ্য দেখুন, তিনিও বলছেন সেই আত্মা(পরমাত্মা) স্থুল, সূক্ষ্ম শরীর বিবর্জিত
ঈশ উপনিষদ ৮, শঙ্কর ভাষ্য
এবার তাহলে প্রশ্ন রইল, যার কোনো শরীরই নেই তাঁর মূর্তি বা প্রতিমা আপনারা কিভাবে তৈরি করবেন?
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদও বলছে, “তাঁর কোনও প্রতিরূপ বা প্রতিমা নেই”(৪/১৯) এবং “সনাতনের কোন রূপ নেই যা চক্ষুর গোচর হয়, দৃষ্টির দ্বারাও তাঁকে কেও দেখে না”(৪/২০)
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ, শ্রী অরবিন্দের অনুবাদ
কঠ উপনিষদেও ১/২/২২ এ বলা হচ্ছে ব্রহ্ম প্রাণীগণের শরীরে থেকেও শরীর রহিত
কঠ উপনিষদের ১/৩/১৫ তে আরও বলা হয়েছে, পরমাত্মা অরূপম বা রূপহীন, কেবল সেই পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে পারলেই মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩/১০-এও একই কথা বলা হয়েছে।
একই কথা বলছে তৈত্তিরীয় উপনিষদের ব্রহ্মানন্দবল্লীর সপ্তম অনুবাক
মুণ্ডক উপনিষদ ২/১/২ তো বলেই দিচ্ছে, সেই দিব্য পুরুষ অমূর্ত বা মূর্তিহীন
সেই পরমেশ্বরের মূর্তি তো দূরে থাক,
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৬/৯ বলছে সেই ঈশ্বরের কোনও চিহ্নবিশেষও নেই
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট বেদ উপনিষদের সর্বত্রই নিরাকার মূর্তিহীন ঈশ্বরের কথা বলছে। বেদের কোথাও যেখানে পরমাত্মার মূর্তি বা অবয়ব উপাসনার নামগন্ধ নেই, সেখানে ধূর্তরা বেদ মন্ত্র বিকৃতির আশ্রয় নিয়ে প্রতিমা পূজা প্রচলিত করে ও তা প্রচার করে বেড়ায়। বৈদিক ধর্মে পৌত্তলিকতার কোনো স্থান নেই। আর বৈদিক ধর্ম কেবল এক পরমাত্মার উপাসনার কথাই বলে। যারা জড় মূর্তি পূজা করে ভাবছেন ঈশ্বরের উপাসনা করছেন তারা কেন উপনিষদের এই মন্ত্রটি জেনে রাখুন-
কেন উপনিষদ ১/৬
য়চ্চক্ষুষা ন পশ্যতি য়েন চক্ষুংষি পশ্যতি।
তদেব ব্রহ্ম ত্বং বিদ্ধি নেদং য়দিদমুপাসতে।।
অনুবাদ: চোখ দিয়ে যাঁকে দেখা যায় না, কিন্তু লোকে দৃশ্যমান বিষয়গুলো যাঁর দ্বারা দেখে থাকে, তাঁকেই তুমি ব্রহ্ম বলে যেন। লোকে যেসব দৃশ্যমান বস্তুর উপাসনা করে তা ব্রহ্ম নয়।
তাহলে আপনারাই ভাবুন আপনারা মূর্তির সামনে গড়াগড়ি খেয়ে প্রকৃতপক্ষে কার উপাসনা করছেন? তা মোটেও ব্রহ্মোপাসনা নয়। তাই আমাদের সকল বৈদিক মতাদর্শীর উচিত সকল প্রকার মূর্তিপূজা তথা পৌত্তলিকতা ত্যাগ করে কেবল এক সচ্চিদানন্দ ব্রহ্মের উপাসনা করা। তবেই আমাদের যথার্থ মঙ্গল হবে।
আরেকটি অপব্যখ্যা গীতার সপ্তম অধ্যের ২০ নাম্বার শ্লোক নিয়ে করে থাকে-প্রকৃতপক্ষে সেখানে বলা হয়েছে- "যাদের মন ঝড় কামনা বাসনার ধারা বিক্ষিপ্ত/বিকৃত তারা অন্য দেব দেবীর স্মরনাগত হয় এবং তাদের সেই স্বভাব অনুসারে নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।"
লক্ষ করুন এখানে মূর্তি পূজার কোন কথাই বলা হয়েনি বরং বলা হয়েছে যারা জড় সুখর প্রতি আসক্ত তারাই ভিবিন্ন দেব দেবীর পুজা করে ভগবানের পূজা বাদ দিয়ে। দেবতা মানেই মূর্তি নয়, মূর্তি তো ভগবানেরও হয় যাকে বলা হয় বিগ্রহ।
এই শ্লোকের লিংক গীতা সপ্তম অধ্যায়-শ্লোক-২০
(Source: যজুর্বেদ সংহিতা, শ্রীবিজনবিহারী গোস্বামী)
শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ ৪/১৯
न तस्य॑ प्रति॒माऽअस्ति॒ यस्य॒ नाम॑ म॒हद्यशः॑।
हि॒र॒ण्य॒ग॒र्भऽइत्ये॒ष मा मा॑ हिꣳसी॒दित्ये॒षा यस्मा॒न्न जा॒तऽइत्ये॒षः ॥
पदार्थान्वयभाषाः -हे मनुष्यो ! (यस्य) जिसका (महत्) पूज्य बड़ा (यशः) कीर्त्ति करनेहारा धर्मयुक्त कर्म का आचरण ही (नाम) नामस्मरण है, जो (हिरण्यगर्भः) सूर्य बिजुली आदि पदार्थों का आधार (इति) इस प्रकार (एषः) अन्तर्यामी होने से प्रत्यक्ष जिसकी (मा) मुझको (मा, हिंसीत्) मत ताड़ना दे वा वह अपने से मुझ को विमुख मत करे, (इति) इस प्रकार (एषा) यह प्रार्थना वा बुद्धि और (यस्मात्) जिस कारण (न) नहीं (जातः) उत्पन्न हुआ (इति) इस प्रकार (एषः) यह परमात्मा उपासना के योग्य है। (तस्य) उस परमेश्वर की (प्रतिमा) प्रतिमा-परिमाण उसके तुल्य अवधि का साधन प्रतिकृति, मूर्ति वा आकृति (न, अस्ति) नहीं है। अथवा द्वितीय पक्ष यह है कि (हिरण्यगर्भः०) इस पच्चीसवें अध्याय में १० मन्त्र से १३ मन्त्र तक का (इति, एषः) यह कहा हुआ अनुवाक (मा, मा, हिंसीत्) (इति) इसी प्रकार (एषा) यह ऋचा बारहवें अध्याय की १०२ (वाँ) मन्त्र है और (यस्मान्न जातः—इत्येषः०) यह आठवें अध्याय के ३६, ३७ दो मन्त्र का अनुवाक (यस्य) जिस परमेश्वर की (नाम) प्रसिद्ध (महत्) महती (यशः) कीर्ति है, (तस्य) उसका (प्रतिमा) प्रतिबिम्ब-तस्वीर (न, अस्ति) नहीं है ॥
{ he manushyo ! (yasy) jisaka (mahat) poojy bada (yashah) keertti karanehaara dharmayukt karm ka aacharan hee (naam) naamasmaran hai, jo (hiranyagarbhah) soory bijulee aadi padaarthon ka aadhaar (iti) is prakaar (eshah) antaryaamee hone se pratyaksh jisakee (ma) mujhako (ma, hinseet) mat taadana de va vah apane se mujh ko vimukh mat kare, (iti) is prakaar (esha) yah praarthana va buddhi aur (yasmaat) jis kaaran (na) nahin (jaatah) utpann hua (iti) is prakaar (eshah) yah paramaatma upaasana ke yogy hai. (tasy) us parameshvar kee (pratima) pratima-parimaan usake tuly avadhi ka saadhan pratikrti, moorti va aakrti (na, asti) nahin hai. athava dviteey paksh yah hai ki (hiranyagarbhah0) is pachcheesaven adhyaay mein 10 mantr se 13 mantr tak ka (iti, eshah) yah kaha hua anuvaak (ma, ma, hinseet) (iti) isee prakaar (esha) yah rcha baarahaven adhyaay kee 102 (vaan) mantr hai aur (yasmaann jaatah—ityeshah0) yah aathaven adhyaay ke 36, 37 do mantr ka anuvaak (yasy) jis parameshvar kee (naam) prasiddh (mahat) mahatee (yashah) keerti hai, (tasy) usaka (pratima) pratibimb-tasveer (na, asti) nahin hai .}
भावार्थभाषाः -हे मनुष्यो ! जो कभी देहधारी नहीं होता, जिसका कुछ भी परिमाण सीमा का कारण नहीं है, जिसकी आज्ञा का पालन ही नामस्मरण है, जो उपासना किया हुआ अपने उपासकों पर अनुग्रह करता है, वेदों के अनेक स्थलों में जिसका महत्त्व कहा गया है, जो नहीं मरता, न विकृत होता, न नष्ट होता उसी की उपासना निरन्तर करो। जो इससे भिन्न की उपासना करोगे तो इस महान् पाप से युक्त हुए आप लोग दुःख-क्लेशों से नष्ट होओगे ॥- स्वामी दयानन्द सरस्वती
{ he manushyo ! jo kabhee dehadhaaree nahin hota, jisaka kuchh bhee parimaan seema ka kaaran nahin hai, jisakee aagya ka paalan hee naamasmaran hai, jo upaasana kiya hua apane upaasakon par anugrah karata hai, vedon ke anek sthalon mein jisaka mahattv kaha gaya hai, jo nahin marata, na vikrt hota, na nasht hota usee kee upaasana nirantar karo. jo isase bhinn kee upaasana karoge to is mahaan paap se yukt hue aap log duhkh-kleshon se nasht hooge }
ঈশ্বরের কি প্রতিমা, উপমা, উপমান, সাদৃশ্য, তুলনা এই পৃথিবীতে হয় কিনা এবং সেই পরমপিতা পরমাত্মার স্বরূপ কেমন-
স পর্য়্যগাচ্ছুকমকায়মব্রণমস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্।
কবির্মণীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্য়াথাতথ্যতোঽর্থান্
ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।। ৮।।(যজু০ ৪০/৮)
পদার্থঃ হে মনুষ্য! যে ব্রহ্ম (শুক্রম্) শীঘ্রগামী, সর্বশক্তিমান (অকায়ম্) স্থুল, সূক্ষ্ম আর কারণ শরীর থেকে রহিত, (অব্রণম্) ছিদ্র রহিত এবং যাহার দুই টুকরো হয় না, (অস্নাবিরম্) নাড়ী আদির বন্ধন থেকে রহিত, (শুদ্ধম্) অবিদ্যা আদি দোষের হইতে রহিত হয়ে সদা পবিত্র, (অপাপবিদ্ধম্) যে কখনো পাপ হইতে যুক্ত, পাপকারী আর পাপ দ্বারা প্রেমকারী হয় না, সে (পরি+অগাত্) সর্বত্র ব্যাপক; যে (কবিঃ) সর্বজ্ঞ, (মনীষী) সব জীবের মনোবৃত্তিকে জানে, (পরিভূঃ) দুষ্ট পাপিদের তিরস্কারকারী, (স্বয়ম্ভূঃ) অনাদিস্বরূপ, যাহার সংযোগ থেকে উৎপত্তি আর বিয়োগ হইতে বিনাশ হয় না, যাহার মাতা-পিতা কেউ নেই আর যাহার গর্ভবাস, জন্ম, বৃদ্ধি আর ক্ষয় হয় না, সে পরমাত্মা (শাশ্বতীভ্যঃ) সনাতন, অনাদি স্বরূপ, নিজের স্বরূপের দৃষ্টি থেকে উৎপত্তি আর বিনাশ হইতে রহিত (সমাভ্যঃ) প্রজার জন্য (য়াথাতভ্যতঃ) যথার্থ হইতে (অর্থান্) বেদের দ্বারা সব পদার্থের (ব্যদধাত্) উত্তম প্রকারে উপদেশ করে। (সঃ) সে পরমাত্মাই তোমাদের জন্য উপাসনা করার যোগ্য।। ৮।।
ভাবার্থঃ হে মনুষ্য! যদি অনন্ত শক্তিশালী, অজন্মা, অখ-, সদাই মুক্ত, ন্যায়কারী, পাপরহিত, সর্বজ্ঞ, সবার দ্রষ্টা, নিয়ন্তা আর অনাদি স্বরূপ ব্রহ্ম সৃষ্টির আদিতে স্বয়ং প্রোক্ত বেদের শব্দ দ্বারা অর্থ আর সম্বন্ধকে বুঝানোকারী বিদ্যার উপদেশ না করে তো কোন বিদ্বান হয় না; আর না ধর্ম, অর্থ কাম, মোক্ষ রূপ ফলকে প্রাপ্ত করে। এইজন্য এই ব্রহ্মকে সদা উপাসনা করো।। ৮।।ভাষ্যঃ আচার্য রাজবীর শাস্ত্রী
ন তস্য প্রতিমা অস্তি য়স্য নাম মহদ্যশঃ।
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেব মা মা হিংসীদিত্যেবা য়স্মান্ন জাত ইত্যের্ষঃ।। (যজু০ ৩২/৩)
পদার্থঃ (য়স্য) যাহার (মহত্) মহান (নাম) প্রসিদ্ধ (য়শঃ) যশ আছে, (তস্য) ওই পরমাত্মার কোন (প্রতি-মা) প্রতিমা অথবা উপমা (ন অস্তি) নেই। (হিরণ্য-গর্ভ ইতি এবঃ) 'হিরণ্যগর্ভ' আদি মন্ত্রের দ্বারা তথা, (মা মা হিংসীত্ ইতি এষা) 'মা মা হিসীত্' এই মন্ত্রদ্বারা, আর (য়স্মাত্ ন জাতঃ ইতি এষঃ) 'য়স্মান্ন জাত' এই মন্ত্রদ্বারা তাহার বর্ণন হয়।।৩।।
ভাবার্থঃ উক্ত মন্ত্রের দ্বারা যাহার মহান প্রসিদ্ধ যশের গায়ন হয় ওই আত্মার কোন প্রতিমা অথবা উপমা হয় না।।৩।।
ভাষ্যঃ পণ্ডিত দামোদর সাতবলেকর
আসুন অমরকোষ আর বৈদিককোষ প্রতিমা শব্দ নিয়ে কি বলে-
তাই আসুন (প্রতিমা) শব্দের অর্থ (অমরকোষে ২/১০/৩৫)
প্রতিমানং প্রতিবিম্বং প্রতিমাপ্রতিয়াতনা প্রতিচ্ছায়া।।৩৫।। প্রতিকৃতিরর্চা পুংসি প্রতিনিধি-
প্রতিমা অর্থাৎ ছবির নাম।।৮।।
১. প্রতিমান। ২. প্রতিবিম্ব। ৩. প্রতিমা। ৪. প্রতিছবি। ৫. প্রতিছায়া।।৩৫।।
৬. প্রতিকৃতি। ৭. অর্চা। ৮. প্রতিনিধি।
.................................................................................
আর (বৈদিককোষ; পৃষ্টাঃ ৬৪১) দেখে আসি-
প্রতিমা প্রতিমীয়নোত পরিমীয়ন্তে সর্ব পদার্থা য়য়া সা
ভা০-পরিমাণসাধন পদার্থতোলনার্থম্ (বস্তু) ১৫ ৬৫
প্রতিমীয়তে য়য়া তৎপরিমাপক সদৃশ তোলনসাধন প্রতিকৃতিরাকৃতির্বা ৩২ ৩
প্রতিগোয়তে য়য়া ক্রিয়ায়া সা ১৪ ১৮
পরিমাণ, সাদৃস্য বা মূর্তি স০ প্র০ ৪৩২, ৩২ ৩
প্রতিনিধি প্রতিকৃতি, প্রতিমান তোলনসাধন, পরিমাণ, মূর্ত্যাদিকল্পনম্
ঋ০ ভূ০ ৩০০, ৩২ ৩, প্রতিমীয়তেহনয়া সা (য়য়া পরিমাণ ক্রিয়তো)
ঋ০ ভূ০ ১৪৭, ঋ০ ৮ ৭ ১৮০ ৩
................................................................................
অনেক নামের দ্বারা এক ঈশ্বরের বোধ হয়-
ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমগ্নিমাহুরথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান্।
একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং য়মং মাতরিশ্বানমাহুঃ।।
(ঋ০ ১।১৬৪।৪৬; অথর্ব০ ৯।১০।২৮; নিরু০ ৭।১৮, ১৪।১; ঋগ্বেধা০ ১।২৫।৭; বৃহদেবতা ৪।৪২)
'একই সৎ স্বরূপ পরমাত্মাকে জ্ঞানীলোক অনেক প্রকারে ডেকে থাকেন। ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, উরুত্মান, সৎ, যম, মাতরিশ্বা আদি নামের দ্বারা একই পরমাত্মার বর্ণন করেন।'
অথর্ববেদে ঈশ্বরের একত্বার নিশ্চয়তা-
'সে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চাম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম আদি অনন্ত সংখ্যা দ্বারা বলা হয়নি। এই সম্পূর্ণ জগত তাহাতে নিঃশেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ তাহার মধ্যে। সে সহন শক্তিদ্বারা যুক্ত অর্থাৎ অত্যন্ত বলবান। সে একই। কেবল একই। নিশ্চয়ই একই। সব তেজস্বী পদার্থ ইহাতে কেবল এক বানিয়ে রাখে।' (অথর্ব০ ১৩।৪।১৬-২১)
বৈ-মানরস্য প্রতিমোপরি দ্যোর্য়াবদ্রোদসী বিবাদে অগ্নিঃ। (অথর্বঃ ৮।৯।৬)
'(বৈশ্বা-নরস্য) বিশ্বের নেতা ঈশ্বরের (প্রতিমা) প্রতিমা এমনই হয়, যে (য়াবত্ দ্যোঃ) তেমন দ্যুলোকে উপরে থাকে, যেমন (রোদসী) উপরে নিয়ে আর নিম্নস্থ আকাশে (অগ্নিঃ) অগ্নিই (বি-ববাধে) অন্তর বানায়।' যথা-
য়স্মান্ন ঋতে বিজয়ন্তে জনাসো য়ং য়ুদ্ধয়মানা অবসে হবন্তে।।
য়ো বিশ্বস্য প্রতিমানং বভূব য়ো অচ্যুতচ্যুত্ স জনাস ইন্দ্রঃ।।
(ঋ০ ২।১২।৯; অথর্ব০ ২০।৩৪।৯)
'হে (জনাসঃ) মনুষ্য ! (য়স্মাত্ ঋতে) যাহাকে ছেড়ে (জনাসঃ) মনুষ্য (ন বিজয়ন্তে) বিজয়কে প্রাপ্ত হতে পারে না, আর (য়ুদ্ধমানাঃ) লড়াইকারী (অবসে) রক্ষণের জন্য (য়ং হবন্তে) যাহার প্রার্থনা করতে হয়। আর যে (প্রতিমানম্) বিশ্বের প্রতিমা (বভূব) হয় আর যে (অচ্যুত-চ্যুত্) স্বয়ং না নড়াচড়া করে আর অন্যকে নাড়ায় (স ইন্দ্রঃ) সে ইন্দ্র অর্থাৎ সব জগতের এক রাজা।' ভাষ্যঃ পণ্ডিত দামোদর সাতবলেকর
এই দুই মন্ত্রে জগতের বরাবর ওই পরমাত্মার প্রতিমা, এরূপ বলেছে। এই আকাশ অনন্ত। যে প্রকার আকাশের কোন সীমা নেই ওই প্রকার পরমেশ্বরেরও কোন অন্ত নেই। এই কথা উক্ত দুই মন্ত্রে বলা হয়েছে।
এই দুই মন্ত্রে জগতের বরাবর ওই পরমাত্মার প্রতিমা, এরূপ বলেছে। এই আকাশ অনন্ত। যে প্রকার আকাশের কোন সীমা নেই ওই প্রকার পরমেশ্বরেরও কোন অন্ত নেই। এই কথা উক্ত দুই মন্ত্রে বলা হয়েছে।
এখন আসি যজুর্বেদের নিম্ন মন্ত্র-
ও৩ম্ খং ব্রহ্ম।। (যজু০ ৪০। ১৭)
'(ও৩ম্ ব্রহ্ম) সবার রক্ষাকারী ব্রহ্ম (খং) আকাশের সমান ব্যাপ্ত।'
এই মন্ত্রের ভাব উক্ত অর্থের দুই মন্ত্রের সমান।
তাই আরো দেখুন-
ত্বং ভুবঃ প্রতিমানং পৃথিব্যাঃ।। (ঋ০ ১।৫২।১৩)
'তুমি পৃথিবী থেকে উল্টো প্রমাণ রাখেন।' অর্থাৎ পৃথিবী ছোট আর তুমি মহান। যথা-
সূ ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বাহত্যতিষ্ঠদ্দশাংগুলম্।
(ঋ০ ১০।৯০।১; আরণ্য স০ ৪।২; অথর্ব০ ১৯।৬।১; যজু০ ৩১।১; তৈ০ আরণ্য০ ৩।১২।১)
'সে পরমাত্মা পৃথিবীকে (বিশ্বতঃ) চারিদিক থেকে (বৃত্বা) ঘিরে (দশাংগুলং) দশ আঙ্গুলের সমান ছোট বিশ্বকে (অতি অতিষ্ঠত্) বিশ্বের বাহিরেও আছে অথবা বিশ্বের উপর শাসন করেন।'
এই মন্ত্রে উক্ত আশায় অনেক স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তথা আরো মন্ত্র দেখুন-
ন হীন্বমস্য প্রতিমানস্যত্যন্তর্জাতেষূত য়ে জনিত্বাঃ। (ঋ০ ৪।১৮।৪)
'(অস্য ন) নিশ্চয়ই ইহার (জাতেষু অন্তঃ) বানানো পদার্থের অন্তর (উত) আর (য়ে জনিত্বাঃ) যে বানানোকারী হয় তাহার মধ্যে কোন (প্রতিমানম্) তুলনা, প্রতিমা (ন অস্তি) হয় না।, যথা-
এই প্রকার প্রতিমা আর প্রতিমান শব্দের প্রয়োগ বেদ মন্ত্রে এসেছে, ইহার নিম্ন লিখিত অর্থ-'প্রতি-মা' র অর্থ-বানানোকারী প্রতিমা, সাদৃশ্য, উপমা, প্রতিবিম্ব, মাপ, তোলা, বিস্তার, বরাবর, 'প্রতি-মান' এর অর্থ-নমুনা সাদৃশ্য, তোলা, ওজন, মাপ, প্রতিবিম্ব, বিপরীত, শত্রু এই বিবিধ অর্থ দেখে তথা মন্ত্রের সংবন্ধ দেখে, উক্ত মন্ত্রের অর্থ বিচার করা উচিত।
কিং সময় ঋধক্ কৃণবদ্ য়ংসহপ্রে মাসো জভার শরদশ্চ পূর্বীঃ।
নহী ধ্বস্ত প্রতিমানমত্ত্য ন্তর্জাতেষূতে য়ে জনিত্বা।।৪।।
প্র তুবিদ্যুম্নস্য স্থবিরস্য ঘৃষ্বের্দিবো ররপ্শে মহিমা পৃথিব্যাঃ।
নাস্য শত্রুর্ন প্রতিমাননস্তি ন প্রতিষ্ঠিঃ পুরুমায়স্য সহ্যোঃ।।১২।।
(ঋ০ ৪/১৮/৪; ৬।১৮।১২)
পদার্থঃ (য়) যাহার (সহস্রং মাসঃ পূর্বী শরদঃ চ) হাজার মাসের আর অনেক বর্ষ পর্যন্ত (জভার) ভরণপোষণ করেন, (সঃ) সে (ঋধক্ কিং কৃণবত্) বিরুদ্ধ কর্ম কে করবে? (য়ে জনিত্বাঃ) যে উৎপন্নকারী তাহার আর (গাতেষু) উৎপন্ন হওয়ার (অন্তঃ) মাধ্যমে (অস্য প্রতিমানম্ নহি) এই ইন্দ্রের কোন উপমা নেই।।৪।।
ভাবার্থঃ যাহার অনেক মাসের আর বর্ষ পর্যন্ত ভরণপোষণ করেন, সে নিজের পোষণকরীর কোন কার্য কে করবে? অর্থাৎ কেউ করবে না। উৎপন্নকারী আর উৎপন্ন হওয়ার মধ্যে এই ইন্দ্রের সমান কেউ নেই।।৪।।
পদার্থঃ (তুবি-দ্যু-ম্নস্য) অত্যন্ত তেজস্বী (স্থবিরস্যা) স্থির আর (ঘৃষ্বেঃ) দুষ্টতাকে চূর্ণকারী ঈশ্বরের (মহিমা) মহত্তা দ্যুলোক আর পৃথিবীর মর্যাদার থেকেও বাহিরে (ররশ্পে) বিস্তার। (ন অস্য শত্রুঃ) এই ঈশ্বরের কোন শত্রু নেই (ন অস্য প্রতিমানম্) না ইহার কোন প্রতিমা আছে। (পুরু-মায়স্য) অনন্ত জ্ঞানবান (সহ্যোঃ) আর সহন শক্তিবান বলবান ঈশ্বরকে ছেড়ে আর (প্রতিষ্ঠিঃ) আশ্রয় হয় না। অর্থাৎ সেই এক সবার আশ্রয়।।১২।।
ভাবার্থঃ তেজস্বী শ্রেষ্ঠ শত্রুনাশক বীরের মহিমা পৃথিবী থেকে আর দ্যুলোক থেকেও মহান। অনেক প্রজ্ঞাবান আর শত্রুনাশক বীরের কোন শত্রু হয় না। অধিক কুশল আর শান্তি, সুখ, দানকারী বীরের জন্য তুলনা হয় না।।১২।।
ভাষ্যঃ পণ্ডিত দামোদর সাতবলেকর
এখন আসি প্রতিমানম্ শব্দের কি অর্থ করেছেন বৈদিককোষ
বৈদিককোষ প্রতিমানম্; পৃষ্টা ৬৪১।
পরিমাণসাধনানম্ ৪ ১৮ ৪ সাদৃশ্য পরিগান বা ১ ৩২ ৩ রামন্তাত্ প্রতিমীয়তে
পরিণীয়তে প্রতিক্রিয়তে গেন তত্ (স্ব-সুখমন্তরিক্ষ বা) ১ ৫২ ১২
প্রতিমীয়তে য়ত্ (জগত্) ১ ১০২ ৮ অতিসমর্থানামুপমা ১ ১০২ ৬
পরিমাণসাধক (ইন্দ্র=পরমেশ্বরী বিদ্যুদ্বা) ২ ১২.৯
পরিমাণসাধকম্ (জ্ঞানম্) ৩ ৩১ ৮ প্রতিমান অর্থাৎ পরিমাণের কর্তা (ঈশ্বর) আর্যাভি০ ১ ১৩,
ঋ০ ১ ৪.১৪ ১২, [প্রতি+মাঙ্মানে (জু০) ধাতো করণে ল্যুট্]
তাই সামবেদও ঘোষণা করছেন-মা চিদন্যদ্ বি শংসত সখায়ো মা রিষণ্যত।
ইন্দ্রমিত্স্তোতা বৃষণং সাচ সুতে মুহুরুক্থা চ শংসত।।১০।।
সামবেদ ২৪২
পদার্থঃ হে (সখায়ঃ) মিত্র! তুমি (অন্যত্) দ্বিতীয় কোন বস্তু পাথরের মূর্তি, নদী, পর্বত ইদিকে (মা চিত্) না কখনো (বি শংসত) উপাস্য রূপে পূজা করো, (মা রিষণ্যত) যে উপাসনীয় নয় তাহার উপাসনা করে হানি প্রাপ্ত করো না। (সুতে) জ্ঞান, কর্ম আর ভক্তির রস নিষ্পাদিত হয়ে (সচা) সাথে মিলে (বৃষণম্) সুখবর্ধক (ইন্দ্রম্ ইত্) পরমেশ্বরেরই (স্তোত) স্তুতি-উপাসনা করো আর (শংসত) গান করো।।১০।।
ভাবার্থঃ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র আর জগতে যে সম্মানের যোগ্য তাহাকে সম্মান তো করাই উচিত, কিন্তু তাহাদের মধ্য থেকে কাউকে পরমেশ্বরের রূপে পূজা করা উচিত নয়, না নদী, বৃক্ষ, পর্বত আদি জড় পদার্থকে পূজা করা উচিত নয়। ইন্দ্র আদি নামের দ্বারা বেদের মধ্যে প্রসিদ্ধ সুখবর্ষী এক জগদীশ্বরই পুনঃ-পুনঃ স্তুতি, প্রার্থনা, অর্চনা আর উপাসনা করার যোগ্য।।১০।।
ভাষ্যঃ আচার্য ড. রামনাথ বেদালঙ্কার বিদ্যামার্তণ্ড
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ