ঈশ্বর : যাহার গুণ, কর্ম ও স্বরূপ একমাত্র সত্য, যিনি চেতন মাত্র বস্তু তথা যিনি অদ্বিতীয়, সর্বশক্তিমান, নিরাকার, সর্বব্যাপক, অনাদি এবং অনন্ত আদি সত্য গুণ যুক্ত, যিনি স্বভাবত অবিনাশী, জ্ঞানী, আনন্দময়, শুদ্ধ, ন্যায়কারী, দয়ালু এবং জন্মরহিত, জগতের উৎপত্তি, স্থিতি ও প্রলয় তথা সর্ব জীবের পাপ পুণ্যের যথাযথ ফল দান করা যাহার স্বাভাবিক কর্ম তিঁনি ঈশ্বর ।প্রমান স্বরূপ যজুর্বেদ - ৪০/৮ মন্ত্র , অথৰ্ববেদ - ১৩/৪/২ মন্ত্র , এমনকি ঈশ্বরের যে কোনো প্রতিকৃতি বা মূর্তি নেই তা যজুর্বেদ - ৩২/৩ মন্ত্রে উল্লেখ হয়েছে।আবার গীতার - ১৩/১৫ শ্লোকে বলছে - সর্বেন্দ্রিয়গুণাভাসং সর্বেন্দ্রিয়বিবর্জিতম্ ৷ অসক্তং সর্বভৃচ্চৈব নির্গুণং গুণভোক্তৃ চ ৷৷ অর্থ : সেই পরমাত্মা সমস্ত ইন্দ্রিয়ের প্রকাশক তথাপি তিঁনি সমস্ত ইন্দ্রিয় বিবর্জিত , যদিও তিঁনি সকলের পালক তথাপি তিঁনি সম্পূর্ণ অনাসক্ত , তিঁনি জড়া প্রকৃতির গুণের অতীত তথাপি তিঁনি সমস্ত গুণের ঈশ্বর । আবার গীতার - ১৩/১৮ শ্লোকে বলছে - জ্যোতিষামপি তজ্জ্যোতিস্তমসঃ পরমুচ্যতে ৷জ্ঞানং জ্ঞেয়ং জ্ঞানগম্যং হৃদি সর্বস্য বিষ্ঠিতম্ ৷৷ অর্থ : "তিঁনি (পরমাত্মা ) সকল জ্যোতির স্বরূপ, তিঁনি তমসার অতীত, তিঁনি জ্ঞান ,আবার তিঁনিই জ্ঞেয়, তিঁনিই জ্ঞানগম্য তিঁনিই সকলের হৃদয়ের মধ্য স্থলে আছেন।"দেবতা :সঃ হোবাচ মহিমান এবৈষামেতে ত্রয়স্ত্রিংশত্ত্বেব দেবা ইতি কতমে তে ত্রয়স্ত্রিংশদিত্যষ্টৌ বসব একাদশ রুদ্রা দ্বাদশাদিত্যাস্ত একত্রিংশদিন্দ্রশ্চৈব প্রজাপতিশ্চ ত্রয়স্ত্রিংশাবিতি।।বৃহদারণ্যকোপনিষৎ তৃতীয় অধ্যায় নবম ব্রাহ্মণ শ্লোক 2বঙ্গানুবাদ_ যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, দেবতাগণ মাত্র তেত্রিশ জন, অন্যেরা এদেরই বিভূতি।
আর দেবতার অর্থ হলো যার দিব্য গুন আছে এবং যার দিব্য গুনের দ্বারা এই জীব জগৎ চলছে তাকেই দেবতা বলে অর্থাৎ পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু, সূর্য্য প্রভৃতি এই ভাবে বেদে মোট ৩৩ টি দেবতা আছে যথা - ৮ বসু , ১১ রুদ্র , ১২ আদিত্য , ইন্দ্র ও প্রজাপতি , এর মধ্যে ৩২ টি জড় দেবতা ও ১ টি চেতন ( জীবাত্মা ) দেবতা ।প্রমান স্বরূপ যজুর্বেদ - ১৪/৩১ মন্ত্র ("ত্রয়স্ত্রিংশৎত্রিশতা") এবং শতপথ ব্রাহ্মণ - ১৪/৫ শ্লোক ।সংস্কৃতে কোটি শব্দের অর্থ প্রকার। যাজ্ঞবল্ক্য ঋষি শাকল্য বলছেন এই ৩৩ ধরনের দেবতাদের মধ্যে রয়েছেন –"অগ্নিশ্চ পৃথিবীশ্চ বায়শ্চান্তিরিক্ষং চাদিত্যশ্চ দ্যৌশ্চ চন্দ্রমাশ্চ নক্ষত্রাণি চৈত্রে বসব" বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৩ "ত্রয়স্ত্রিং শতাস্তুবত ভূতান্য শাম্যন্ প্রজাপতিঃপরমেষ্ঠ্যধিপতিরাসীৎ"-যজুর্বেদ ১৪/৩১অর্থ : প্রকৃতির শাসক , প্রজার পালক সর্ব্বব্যাপক , সর্ব্বাধিপতি পরমাত্মার তেত্রিশ ভৌতিক দেব শক্তির অনুশীল করঅষ্টবসু ১.অগ্নি ২.পৃথিবী ৩.বায়ু ৪.অন্তরীক্ষ ৫. দ্যৌঃ ৬.আদিত্য ৭.চন্দ্র ৮.নক্ষত্র "দ্বাদশ বৈ মাস" বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৫১২ টি আদিত্য / দ্বাদশ আদিত্য : ১২মাসকে এক সাথে দ্বাদশ আদিত্য বলা হয়) { ১ ) চৈত্র ২ ) বৈশাখ ৩ ) জৈষ্ঠ ৪ ) আষাঢ় ৫ ) শ্রাবন ৬ ) ভাদ্রপদ ৭ ) আশ্বিন ৮ ) কার্ত্তিক ৯ ) মার্গশীর্ষ ১০ ) পৌষ ১১ ) মাঘ ১২ ) ফাল্গুন } একাদশ রুদ্র👉 ১.প্রাণ ২.অপান ৩.ব্যান ৪.সমান ৫.উদান ৬.নাগ ৭.কুর্ম ৮.কৃকর ৯.দেবদত্ত ১০.ধনঞ্জয় ১১.জীবাত্মা-"দশমে পুরুষো প্রাণা আত্মৈকাদশন্তে"-বৃহদারন্যকোপনিষদঃ ৩/৯/৪
৩২.ইন্দ্র অর্থাৎ বিদ্যুৎ এবং ৩৩.প্রজাপতি বা শুভকর্ম মিত্রগণ / চেতন ( জীবাত্মা ) দেবতা ,
অথর্ব বেদের দশম অধ্যায় সপ্তম সুক্তের ত্রয়োদশ শ্লোকে বলা হয়েছে-
যস্য ত্রয়স্ত্রিংশদ্ দেবা অঙ্গে সর্বে সমাহিতাঃ।
স্কম্মং তং ব্রুহি কতমঃ স্বিদেব সঃ।।
অর্থাৎ, পরম ঈশ্বরের প্রভাবে এই তেত্রিশ জন দেবতা বিশ্বকে বজায় রেখেছে।রুদ্র শব্দের অর্থ এই শ্লোকে অবশ্যই পৌরাণিক দেবতা নন।{রুদির্ অশ্রুবিমোচনে}এই ধাতুর সহিত "ণিচ্"(রক)প্রত্যয় যোগে "রুদ্র" শব্দ সিদ্ধ হয়।তদ্ যদ্ রোদয়ন্তি তস্মাদ্ রুদ্রা ইতি।।বৃহদারণ্যকোপনিষৎ_ 3/9/4মৃত্যুর সময় জীবদেহ থেকে যখন,দশটি বায়ু ও জীবাত্মা বেড়িয়ে যায়,তখন জীবের অত্যধিক কষ্ট হয় বা জীব রোদন করে বা কাঁদে। তাই এই দশটি বায়ু ও জীবাত্মার নাম হল, রুদ্র।
ভগবান : ভজ সেবায়াম এই ধাতুর সাথে বতুপ প্রত্যয় যোগে ভগবান শব্দ হয়েছে ,বিশ্ব ব্ৰহ্মান্ডে যার সমান ভজনা করার মত কেহই নাই তিনি ভগবান । ৬ টি গুণ থাকলে ভগবান হওয়া যায়, যথা - ঐশ্বর্য্য, ধর্ম, যশ, শ্রী, বৈরাগ্য, এবং মোক্ষ লাভের ইচ্ছা । এই ৬ টি গুণের অধিকারী যে কোনো ব্যক্তি অর্থাৎ আপনি আমি যে কেউ "ভগবান" হতে পারি । আবার পরমাত্মাকেও ভগবান বলা যেতে পারে । তাহলে আশা করছি বোঝা গেছে যে ঈশ্বর, দেবতা ও ভগবান সব আলাদা আলাদা কেহই এক নয় । ভগবান শব্দের "সন্ধি বিচ্ছেদ" করলে দাড়ায়- ভগঃ + বান্ = ভগবান ৷
★ এবার চলুন সংস্কৃৃত অভিধান থেকে ভগঃ শব্দের অর্থ দেখে নিই :-খানে স্পষ্টত লেখা আছে ,
→ (ভজ সেবায়াম ) এই ধাতু হইতে "ভগ" সিদ্ধ হয় , ইহার সহিত "মতুপ্ " প্রত্যয় যোগে "ভগবান্ " শব্দ সিদ্ধ হয় ৷
→ “ ভগঃ সকলৈশ্বয়ং সেবনং বা বিদ্যতে য়স্য স ভগবান্ ”অনুবাদ :- যিনি সমগ্র ঐশ্বর্যযুক্ত এবং ভজনের যোগ্য এই জন্য সেই পরমেশ্বরের নাম "ভগবান্ "উল্লেখ্য যে পৌরাণিক বিষ্ণুপুরাণ ৬ষ্ট অংশ ৫ অধ্যায় এর ৭ শ্লোকও একই উল্লেখ আছে :-→ "সমগ্র ঐশ্বর্য্য , ধর্ম , যশঃ , শ্রী , জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টির নাম একত্রে ভগ ""
→ ঋকবেদ ৫/৫১/১১ মন্ত্রে ভগঃ শব্দটি দ্বারা "ভজনীয় প্রভু" নির্দেশ করা হয়েছে একই ভাবে নিরুক্তেও ৷
★উপরিউক্ত কোনো শাস্ত্রে ভগ শব্দ যোনী বুঝাতে ব্যবহার করা হয় নি তা দৃৃশ্যমান , হবেও বা কেন বলুন ত !! ভগবান শব্দ সর্বশক্তিমান পরমাত্মাকে নির্দেশ করে মাত্র, যিনি মানুষের মতো নারী বা পুরুষ নন যে তার নারী-পুরুষ বাচক লিঙ্গ চিন্হ থাকবে , তা নিম্মে উপনিষদ থেকে রেফারেন্স দেয়া হল ৷৷
★ঈশাবাস্যোপনিষদ্ এর ৮মন্ত্রে উল্লেখ আছে:- → স পর্য্যগচ্ছুক্রমকায়মব্রণ মস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্।কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্ যাথাতথ্যতোর্থান ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃসমাভ্যঃ।।৮।
সরলার্থঃ পরমেশ্বর সব দিক থেকে ব্যপ্ত আছেন, তিনি সর্বশক্তিমান, শরীররহিত , ছিদ্র রহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত, দোষ রহিত, পাপরহিত, সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী, দুষ্টের দমন কর্তা, স্বয়ম্ভূ তিনি যথাভাবে সব পদার্থের বিশেষরূপে উপদেশ করেছেন শাশ্বত, অনাদিস্বরূপ প্রজাদের জন্য।।৮।।
★এবার "বান্" শব্দের অর্থ দেখি নিই :-
→ বান্ (bāna) :- বিণ. যুক্ত অন্বিত প্রভৃতি অর্থবাচক তদ্ধিত প্রত্যয়বিশেষ (বেগবান, ফলবান, ভগবান) “বান” শব্দের অর্থ হলো অধিকারী কিংবা যার আছে অর্থে বুঝায়। “বান” শব্দের পূর্বে গুনবাচক উপসর্গ বসিয়ে বান্ শব্দ পূর্ণতা পায় ৷ “বান্” শব্দের আগে ভগ শব্দ বসানো হয়েছে যেমনটা “রূপবান” , যার “ধনবান” শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে ঠিক একভাবে। ‘ভগ’ অর্থ ঐশ্বর্য্য এবং ‘বান’ অর্থ অধিকারী, যার আছে। ঠিক যেভাবে যার সুন্দর রূপ আছে – আমরা তাকে বলি রূপবান, যার ধন আছে ধনবান, ঠিক তদ্রুপ যিনি ভগ অর্থাত্ ঐশ্বর্যের অধিকারী তাকে বলে ভগবান ৷ ”
★ সুতরাং সর্বোপরি মুলত প্রয়োগিক ক্ষেত্রে “যুক্ত বা সমন্বিত” বুঝাতে বান্ ব্যবহৃৃত হয় তা আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই ৷
সংক্ষেপে ভগবান অর্থ " সমগ্র ঐশ্বর্য্য , ধর্ম , যশঃ , শ্রী , জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুণ এর অধিকারীকে ভগবান বলে "
“মূলত পরমাত্মা ঈশ্বরকেই ভগবান বলা হয়” তার প্রমাণ :-
★পৌরাণিকদের ভাগবত পুরাণে ১ স্কন্ধ ২ অধ্যায় ১১ নং শ্লোকেও উল্লেখ আছে :-→ “বদন্তি তত্ত্ববিদন্তত্তং যজ্জ্ঞানদ্বয়ম্ ৷ ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগদানিতি শব্দ্যতে৷৷”
★বাংলা অনুবাদ:-
→ “তত্ত্ববেত্তাগণ জ্ঞাতা আর জ্ঞেয় এর অভেদ , অখন্ড , অদ্বিতীয় সচ্চিদানন্দস্বরুপ জ্ঞানকেই তত্ত্ব বলে থাকেন ৷ সেই তত্ত্বাকেই কেউ বলেন ব্রহ্ম , কেউ বলেন পরমাত্মা আর কেউ বা বলেন ভগবান ৷৷”
★ সুতরাং সর্বোপরি এটাই সন্দেহ এর উর্দ্ধে প্রমাণিত হল যে ভগবান অর্থ " সমগ্র ঐশ্বর্য্য , ধর্ম , যশঃ , শ্রী , জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুণ পরমাত্মাকেই বুঝায় , যার কোনো বিশেষ নারী পুরুষ বাচক লিঙ্গ নেই , সুতরাং এখানে স্ত্রী যোণীর প্রসঙ্গ নিয়ে আসা পুরোটাই নাস্তিক ও কাটমোল্লাদের আষাঢ়ের গালগল্প !
এরপর জ্ঞানপাপীর দাবি:-
👉 "দেবরাজ ইন্দ্র একদা তার গুরু গৌতমের স্ত্রীকে স্নান করে ফিরে আসার পথে ভেজা কাপড়ে দেখে কামাতুর হয়ে পড়ে।
সে কৌশলে গুরুর স্ত্রীকে সম্ভোগ বা ধর্ষণ করে।
গৌতম এই ঘটনা জানার পর ইন্দ্রকে অভিশাপ দেয় যার ফলে ইন্দ্রের সারা শরিরে সহস্র ভগ বা স্ত্রী যোনী সৃষ্টি হয়।
এরপর থেকে কিছু দেবতাকে বুঝাতে এই
" ভগবান " বা যোনীওয়ালা শব্দটি ব্যহার করা হয়।
★ প্রকৃৃত ঘটনা বিশ্লেষণ সহ শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা :-
→ উক্ত ঘটনাটি রামায়ন এর আদিকান্ডে বর্ণিত আছে , তবে অহল্যা আর ইন্দ্র মিলিত হওয়ার কাহিনীটি মুলত রুপক অর্থে রামায়ণে ব্যবহৃত হয়েছে তার বহু প্রমাণ রয়েছে ৷
উঁঁক্ত বিষয়ে চর্চা হেতু বোধগম্যতার সুবিধার্থে প্রথমে ইন্দ্র দেবতা সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাক :-
★ পবিত্র বেদে “ইন্দ্র” শব্দ পরমাত্মা ঈশ্বরের গুণ/শক্তি/পদবী বিশেষ হিসেবে নির্দেশিত হয়েছে তাই তাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়েছে ৷ যথা:-
→ ঋগ্বেদের ১/১৬৪/৪৬ মন্ত্রে উল্লেখযোগ্য :-
ওঁঁ শংনো মিত্রঃ শং বরুণং শং নো ভবত্বর্ঘমা ৷শং ন ইন্দ্র বৃৃহস্পতিঃ শং নো বিষ্ণুরুরুক্রমঃ ৷৷→উক্ত মন্ত্রে 'ইন্দ্র' শব্দ “ঐশ্বর্য্যদাতা” বুঝাতে প্রয়োগ হয়েছে দৃৃশ্যমান ৷ একই ভাবে গুণবাচক ব্যবহার যর্জুবেদ ১ম অধ্যায় ১ম মন্ত্রে দৃৃশ্যমান ৷
→ ইন্দ্র দেবতাকে পবিত্র বেদ মন্ত্রে "সূর্য" ধরে স্তুতি করতেও দেখা যায় , যেমন ঋকবেদ ৮ মন্ডল ৯৩ সূক্তে ৩৪ টি মন্ত্রের ৩৩ টিতেই ইন্দ্র কে সূর্য বলে স্তুতি করা হয়েছে ৷ ঋকবেদ ৮/৯৩/৪ :- যদদ্য কচ্চ বৃৃহন্নুদগা অভি সূর্য ৷ সর্বং তদিৎদ্র তে বশে ৷
অনুবাদ :- হে বৃৃত্রহা সূর্য ইন্দ্র ! অদ্য যৎ কিঞ্চিৎ পদার্থের অভিমুখে প্রাদুভূর্ত হইয়াছ , অমনি সমস্ত জগৎ তোমার বশীভূত হইয়াছে ৷৷ আবার , ঋকবেদ ২য় মন্ডলের ১২সুক্ত টাই ইন্দ্র দেবতার উদ্দেশ্যে কৃৃত , এখানে ১২ নং মন্ত্রে তাকে সূর্যের সাত রশ্মির উল্লেখ করে স্তুতি করেছেন :-
→ যঃ সপ্তরশ্মিবৃৃর্ষভস্তবিষ্মান্ বাসৃৃজৎসর্তবে সপ্ত সিংধৃৃন্ ৷ অনুবাদ :- যিনি(ইন্দ্র ) সপ্তরশ্মি সমন্বিত, বর্ষণকারী ও বুদ্ধিমান ৷ ★ এটাই প্রতিয়মান হচ্ছে যে ইন্দ্র দেবতা কোনো দেহ বিশেষ দেবতা নন , তিনি এবং সূর্য দুজনেই এক ৷
" ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি "
ঈশ্বর :
যাহার গুণ, কর্ম ও স্বরূপ একমাত্র সত্য, যিনি চেতন মাত্র বস্তু তথা যিনি অদ্বিতীয়, সর্বশক্তিমান, নিরাকার, সর্বব্যাপক, অনাদি এবং অনন্ত আদি সত্য গুণ যুক্ত, যিনি স্বভাবত অবিনাশী, জ্ঞানী, আনন্দময়, শুদ্ধ, ন্যায়কারী, দয়ালু এবং জন্মরহিত, জগতের উৎপত্তি, স্থিতি ও প্রলয় তথা সর্ব জীবের পাপ পুণ্যের যথাযথ ফল দান করা যাহার স্বাভাবিক কর্ম তিঁনি ঈশ্বর ।
প্রমান স্বরূপ যজুর্বেদ - ৪০/৮ মন্ত্র , অথৰ্ববেদ - ১৩/৪/২ মন্ত্র , এমনকি ঈশ্বরের যে কোনো প্রতিকৃতি বা মূর্তি নেই তা যজুর্বেদ - ৩২/৩ মন্ত্রে উল্লেখ হয়েছে।
আবার গীতার - ১৩/১৫ শ্লোকে বলছে - সর্বেন্দ্রিয়গুণাভাসং সর্বেন্দ্রিয়বিবর্জিতম্ ৷ অসক্তং সর্বভৃচ্চৈব নির্গুণং গুণভোক্তৃ চ ৷৷
অর্থ : সেই পরমাত্মা সমস্ত ইন্দ্রিয়ের প্রকাশক তথাপি তিঁনি সমস্ত ইন্দ্রিয় বিবর্জিত , যদিও তিঁনি সকলের পালক তথাপি তিঁনি সম্পূর্ণ অনাসক্ত , তিঁনি জড়া প্রকৃতির গুণের অতীত তথাপি তিঁনি সমস্ত গুণের ঈশ্বর ।
আবার গীতার - ১৩/১৮ শ্লোকে বলছে - জ্যোতিষামপি তজ্জ্যোতিস্তমসঃ পরমুচ্যতে ৷জ্ঞানং জ্ঞেয়ং জ্ঞানগম্যং হৃদি সর্বস্য বিষ্ঠিতম্ ৷৷ অর্থ : "তিঁনি (পরমাত্মা ) সকল জ্যোতির স্বরূপ, তিঁনি তমসার অতীত, তিঁনি জ্ঞান ,আবার তিঁনিই জ্ঞেয়, তিঁনিই জ্ঞানগম্য তিঁনিই সকলের হৃদয়ের মধ্য স্থলে আছেন।"
দেবতা :
সঃ হোবাচ মহিমান এবৈষামেতে ত্রয়স্ত্রিংশত্ত্বেব দেবা ইতি কতমে তে ত্রয়স্ত্রিংশদিত্যষ্টৌ বসব একাদশ রুদ্রা দ্বাদশাদিত্যাস্ত একত্রিংশদিন্দ্রশ্চৈব প্রজাপতিশ্চ ত্রয়স্ত্রিংশাবিতি।।
বৃহদারণ্যকোপনিষৎ তৃতীয় অধ্যায় নবম ব্রাহ্মণ শ্লোক 2
বঙ্গানুবাদ_ যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, দেবতাগণ মাত্র তেত্রিশ জন, অন্যেরা এদেরই বিভূতি।
আর দেবতার অর্থ হলো যার দিব্য গুন আছে এবং যার দিব্য গুনের দ্বারা এই জীব জগৎ চলছে তাকেই দেবতা বলে অর্থাৎ পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু, সূর্য্য প্রভৃতি এই ভাবে বেদে মোট ৩৩ টি দেবতা আছে যথা - ৮ বসু , ১১ রুদ্র , ১২ আদিত্য , ইন্দ্র ও প্রজাপতি , এর মধ্যে ৩২ টি জড় দেবতা ও ১ টি চেতন ( জীবাত্মা ) দেবতা ।
প্রমান স্বরূপ যজুর্বেদ - ১৪/৩১ মন্ত্র ("ত্রয়স্ত্রিংশৎত্রিশতা") এবং শতপথ ব্রাহ্মণ - ১৪/৫ শ্লোক ।সংস্কৃতে কোটি শব্দের অর্থ প্রকার। যাজ্ঞবল্ক্য ঋষি শাকল্য বলছেন এই ৩৩ ধরনের দেবতাদের মধ্যে রয়েছেন –
"অগ্নিশ্চ পৃথিবীশ্চ বায়শ্চান্তিরিক্ষং চাদিত্যশ্চ দ্যৌশ্চ চন্দ্রমাশ্চ নক্ষত্রাণি চৈত্রে বসব"
বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৩
"ত্রয়স্ত্রিং শতাস্তুবত ভূতান্য শাম্যন্ প্রজাপতিঃ
পরমেষ্ঠ্যধিপতিরাসীৎ"-যজুর্বেদ ১৪/৩১
অর্থ : প্রকৃতির শাসক , প্রজার পালক সর্ব্বব্যাপক , সর্ব্বাধিপতি পরমাত্মার তেত্রিশ ভৌতিক দেব শক্তির অনুশীল কর
অষ্টবসু ১.অগ্নি ২.পৃথিবী ৩.বায়ু ৪.অন্তরীক্ষ ৫. দ্যৌঃ ৬.আদিত্য ৭.চন্দ্র ৮.নক্ষত্র
"দ্বাদশ বৈ মাস" বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৫
১২ টি আদিত্য / দ্বাদশ আদিত্য : ১২মাসকে এক সাথে দ্বাদশ আদিত্য বলা হয়) { ১ ) চৈত্র ২ ) বৈশাখ ৩ ) জৈষ্ঠ ৪ ) আষাঢ় ৫ ) শ্রাবন ৬ ) ভাদ্রপদ ৭ ) আশ্বিন ৮ ) কার্ত্তিক ৯ ) মার্গশীর্ষ ১০ ) পৌষ ১১ ) মাঘ ১২ ) ফাল্গুন }
একাদশ রুদ্র
👉 ১.প্রাণ ২.অপান ৩.ব্যান ৪.সমান ৫.উদান ৬.নাগ ৭.কুর্ম ৮.কৃকর ৯.দেবদত্ত ১০.ধনঞ্জয় ১১.জীবাত্মা-"দশমে পুরুষো প্রাণা আত্মৈকাদশন্তে"-বৃহদারন্যকোপনিষদঃ ৩/৯/৪
৩২.ইন্দ্র অর্থাৎ বিদ্যুৎ এবং
৩৩.প্রজাপতি বা শুভকর্ম মিত্রগণ / চেতন ( জীবাত্মা ) দেবতা ,
অথর্ব বেদের দশম অধ্যায় সপ্তম সুক্তের ত্রয়োদশ শ্লোকে বলা হয়েছে-
যস্য ত্রয়স্ত্রিংশদ্ দেবা অঙ্গে সর্বে সমাহিতাঃ।
স্কম্মং তং ব্রুহি কতমঃ স্বিদেব সঃ।।
অর্থাৎ, পরম ঈশ্বরের প্রভাবে এই তেত্রিশ জন দেবতা বিশ্বকে বজায় রেখেছে।
রুদ্র শব্দের অর্থ এই শ্লোকে অবশ্যই পৌরাণিক দেবতা নন।
{রুদির্ অশ্রুবিমোচনে}এই ধাতুর সহিত "ণিচ্"(রক)প্রত্যয় যোগে "রুদ্র" শব্দ সিদ্ধ হয়।
তদ্ যদ্ রোদয়ন্তি তস্মাদ্ রুদ্রা ইতি।।
বৃহদারণ্যকোপনিষৎ_ 3/9/4
মৃত্যুর সময় জীবদেহ থেকে যখন,দশটি বায়ু ও জীবাত্মা বেড়িয়ে যায়,তখন জীবের অত্যধিক কষ্ট হয় বা জীব রোদন করে বা কাঁদে। তাই এই দশটি বায়ু ও জীবাত্মার নাম হল, রুদ্র।
ভগবান :
ভজ সেবায়াম এই ধাতুর সাথে বতুপ প্রত্যয় যোগে ভগবান শব্দ হয়েছে ,বিশ্ব ব্ৰহ্মান্ডে যার সমান ভজনা করার মত কেহই নাই তিনি ভগবান । ৬ টি গুণ থাকলে ভগবান হওয়া যায়, যথা - ঐশ্বর্য্য, ধর্ম, যশ, শ্রী, বৈরাগ্য, এবং মোক্ষ লাভের ইচ্ছা । এই ৬ টি গুণের অধিকারী যে কোনো ব্যক্তি অর্থাৎ আপনি আমি যে কেউ "ভগবান" হতে পারি । আবার পরমাত্মাকেও ভগবান বলা যেতে পারে । তাহলে আশা করছি বোঝা গেছে যে ঈশ্বর, দেবতা ও ভগবান সব আলাদা আলাদা কেহই এক নয় ।
ভগবান শব্দের "সন্ধি বিচ্ছেদ" করলে দাড়ায়- ভগঃ + বান্ = ভগবান ৷
★ এবার চলুন সংস্কৃৃত অভিধান থেকে ভগঃ শব্দের অর্থ দেখে নিই :-
খানে স্পষ্টত লেখা আছে ,
→ (ভজ সেবায়াম ) এই ধাতু হইতে "ভগ" সিদ্ধ হয় , ইহার সহিত "মতুপ্ " প্রত্যয় যোগে "ভগবান্ " শব্দ সিদ্ধ হয় ৷
→ “ ভগঃ সকলৈশ্বয়ং সেবনং বা বিদ্যতে য়স্য স ভগবান্ ”
অনুবাদ :- যিনি সমগ্র ঐশ্বর্যযুক্ত এবং ভজনের যোগ্য এই জন্য সেই পরমেশ্বরের নাম "ভগবান্ "
উল্লেখ্য যে পৌরাণিক বিষ্ণুপুরাণ ৬ষ্ট অংশ ৫ অধ্যায় এর ৭ শ্লোকও একই উল্লেখ আছে :-
→ "সমগ্র ঐশ্বর্য্য , ধর্ম , যশঃ , শ্রী , জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টির নাম একত্রে ভগ ""
→ ঋকবেদ ৫/৫১/১১ মন্ত্রে ভগঃ শব্দটি দ্বারা "ভজনীয় প্রভু" নির্দেশ করা হয়েছে একই ভাবে নিরুক্তেও ৷
★উপরিউক্ত কোনো শাস্ত্রে ভগ শব্দ যোনী বুঝাতে ব্যবহার করা হয় নি তা দৃৃশ্যমান , হবেও বা কেন বলুন ত !! ভগবান শব্দ সর্বশক্তিমান পরমাত্মাকে নির্দেশ করে মাত্র, যিনি মানুষের মতো নারী বা পুরুষ নন যে তার নারী-পুরুষ বাচক লিঙ্গ চিন্হ থাকবে , তা নিম্মে উপনিষদ থেকে রেফারেন্স দেয়া হল ৷৷
★ঈশাবাস্যোপনিষদ্ এর ৮মন্ত্রে উল্লেখ আছে:-
→ স পর্য্যগচ্ছুক্রমকায়মব্রণ
মস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্।
কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্
যাথাতথ্যতোর্থান ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ
সমাভ্যঃ।।৮।
সরলার্থঃ পরমেশ্বর সব দিক থেকে ব্যপ্ত আছেন, তিনি সর্বশক্তিমান, শরীররহিত , ছিদ্র রহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত, দোষ রহিত, পাপরহিত, সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী, দুষ্টের দমন কর্তা, স্বয়ম্ভূ তিনি যথাভাবে সব পদার্থের বিশেষরূপে উপদেশ করেছেন শাশ্বত, অনাদিস্বরূপ প্রজাদের জন্য।।৮।।
★এবার "বান্" শব্দের অর্থ দেখি নিই :-
→ বান্ (bāna) :- বিণ. যুক্ত অন্বিত প্রভৃতি অর্থবাচক তদ্ধিত প্রত্যয়বিশেষ (বেগবান, ফলবান, ভগবান)
“বান” শব্দের অর্থ হলো অধিকারী কিংবা যার আছে অর্থে বুঝায়। “বান” শব্দের পূর্বে গুনবাচক উপসর্গ বসিয়ে বান্ শব্দ পূর্ণতা পায় ৷ “বান্” শব্দের আগে ভগ শব্দ বসানো হয়েছে যেমনটা “রূপবান” , যার “ধনবান” শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে ঠিক একভাবে। ‘ভগ’ অর্থ ঐশ্বর্য্য এবং ‘বান’ অর্থ অধিকারী, যার আছে। ঠিক যেভাবে যার সুন্দর রূপ আছে – আমরা তাকে বলি রূপবান, যার ধন আছে ধনবান, ঠিক তদ্রুপ যিনি ভগ অর্থাত্ ঐশ্বর্যের অধিকারী তাকে বলে ভগবান ৷ ”
★ সুতরাং সর্বোপরি মুলত প্রয়োগিক ক্ষেত্রে “যুক্ত বা সমন্বিত” বুঝাতে বান্ ব্যবহৃৃত হয় তা আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই ৷
সংক্ষেপে ভগবান অর্থ " সমগ্র ঐশ্বর্য্য , ধর্ম , যশঃ , শ্রী , জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুণ এর অধিকারীকে ভগবান বলে "
“মূলত পরমাত্মা ঈশ্বরকেই ভগবান বলা হয়” তার প্রমাণ :-
★পৌরাণিকদের ভাগবত পুরাণে ১ স্কন্ধ ২ অধ্যায় ১১ নং শ্লোকেও উল্লেখ আছে :-
→ “বদন্তি তত্ত্ববিদন্তত্তং যজ্জ্ঞানদ্বয়ম্ ৷
ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগদানিতি শব্দ্যতে৷৷”
★বাংলা অনুবাদ:-
→ “তত্ত্ববেত্তাগণ জ্ঞাতা আর জ্ঞেয় এর অভেদ , অখন্ড , অদ্বিতীয় সচ্চিদানন্দস্বরুপ জ্ঞানকেই তত্ত্ব বলে থাকেন ৷
সেই তত্ত্বাকেই কেউ বলেন ব্রহ্ম , কেউ বলেন পরমাত্মা আর কেউ বা বলেন ভগবান ৷৷”
★ সুতরাং সর্বোপরি এটাই সন্দেহ এর উর্দ্ধে প্রমাণিত হল যে ভগবান অর্থ " সমগ্র ঐশ্বর্য্য , ধর্ম , যশঃ , শ্রী , জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুণ পরমাত্মাকেই বুঝায় , যার কোনো বিশেষ নারী পুরুষ বাচক লিঙ্গ নেই , সুতরাং এখানে স্ত্রী যোণীর প্রসঙ্গ নিয়ে আসা পুরোটাই নাস্তিক ও কাটমোল্লাদের আষাঢ়ের গালগল্প !
এরপর জ্ঞানপাপীর দাবি:-
👉 "দেবরাজ ইন্দ্র একদা তার গুরু গৌতমের স্ত্রীকে স্নান করে ফিরে আসার পথে ভেজা কাপড়ে দেখে কামাতুর হয়ে পড়ে।
সে কৌশলে গুরুর স্ত্রীকে সম্ভোগ বা ধর্ষণ করে।
গৌতম এই ঘটনা জানার পর ইন্দ্রকে অভিশাপ দেয় যার ফলে ইন্দ্রের সারা শরিরে সহস্র ভগ বা স্ত্রী যোনী সৃষ্টি হয়।
এরপর থেকে কিছু দেবতাকে বুঝাতে এই
" ভগবান " বা যোনীওয়ালা শব্দটি ব্যহার করা হয়।
সে কৌশলে গুরুর স্ত্রীকে সম্ভোগ বা ধর্ষণ করে।
গৌতম এই ঘটনা জানার পর ইন্দ্রকে অভিশাপ দেয় যার ফলে ইন্দ্রের সারা শরিরে সহস্র ভগ বা স্ত্রী যোনী সৃষ্টি হয়।
এরপর থেকে কিছু দেবতাকে বুঝাতে এই
" ভগবান " বা যোনীওয়ালা শব্দটি ব্যহার করা হয়।
★ প্রকৃৃত ঘটনা বিশ্লেষণ সহ শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা :-
→ উক্ত ঘটনাটি রামায়ন এর আদিকান্ডে বর্ণিত আছে , তবে অহল্যা আর ইন্দ্র মিলিত হওয়ার কাহিনীটি মুলত রুপক অর্থে রামায়ণে ব্যবহৃত হয়েছে তার বহু প্রমাণ রয়েছে ৷
উঁঁক্ত বিষয়ে চর্চা হেতু বোধগম্যতার সুবিধার্থে প্রথমে ইন্দ্র দেবতা সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাক :-
★ পবিত্র বেদে “ইন্দ্র” শব্দ পরমাত্মা ঈশ্বরের গুণ/শক্তি/পদবী বিশেষ হিসেবে নির্দেশিত হয়েছে তাই তাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়েছে ৷ যথা:-
→ ঋগ্বেদের ১/১৬৪/৪৬ মন্ত্রে উল্লেখযোগ্য :-
ওঁঁ শংনো মিত্রঃ শং বরুণং শং নো ভবত্বর্ঘমা ৷
শং ন ইন্দ্র বৃৃহস্পতিঃ শং নো বিষ্ণুরুরুক্রমঃ ৷৷
→উক্ত মন্ত্রে 'ইন্দ্র' শব্দ “ঐশ্বর্য্যদাতা” বুঝাতে প্রয়োগ হয়েছে দৃৃশ্যমান ৷
একই ভাবে গুণবাচক ব্যবহার যর্জুবেদ ১ম অধ্যায় ১ম মন্ত্রে দৃৃশ্যমান ৷
→ ইন্দ্র দেবতাকে পবিত্র বেদ মন্ত্রে "সূর্য" ধরে স্তুতি করতেও দেখা যায় , যেমন ঋকবেদ ৮ মন্ডল ৯৩ সূক্তে ৩৪ টি মন্ত্রের ৩৩ টিতেই ইন্দ্র কে সূর্য বলে স্তুতি করা হয়েছে ৷
ঋকবেদ ৮/৯৩/৪ :-
যদদ্য কচ্চ বৃৃহন্নুদগা অভি সূর্য ৷
সর্বং তদিৎদ্র তে বশে ৷
অনুবাদ :- হে বৃৃত্রহা সূর্য ইন্দ্র ! অদ্য যৎ কিঞ্চিৎ পদার্থের অভিমুখে প্রাদুভূর্ত হইয়াছ , অমনি সমস্ত জগৎ তোমার বশীভূত হইয়াছে ৷৷
আবার , ঋকবেদ ২য় মন্ডলের ১২সুক্ত টাই ইন্দ্র দেবতার উদ্দেশ্যে কৃৃত , এখানে ১২ নং মন্ত্রে তাকে সূর্যের সাত রশ্মির উল্লেখ করে স্তুতি করেছেন :-
→ যঃ সপ্তরশ্মিবৃৃর্ষভস্তবিষ্মান্ বাসৃৃজৎসর্তবে সপ্ত সিংধৃৃন্ ৷
অনুবাদ :- যিনি(ইন্দ্র ) সপ্তরশ্মি সমন্বিত, বর্ষণকারী ও বুদ্ধিমান ৷
★ এটাই প্রতিয়মান হচ্ছে যে ইন্দ্র দেবতা কোনো দেহ বিশেষ দেবতা নন , তিনি এবং সূর্য দুজনেই এক ৷
" ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি "
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ