একদা মহানবী মুহাম্মদ কাউকে কিছু না জানিয়ে সাত আসমান পাড়ি দিয়ে আল্লাহর সকাশে যান। কথিত আছে তিনি বোরাক নামক এক ডানাওয়ালা গাধা সদৃশ জন্তুর পিঠে চড়ে, মক্কা থেকে প্রথমে জেরুজালেম যান, সেখানে বায়তুল মোকাদ্দসে ১,২৪,০০০ নবীর সাথে নামাজ পড়েন যার ইমামতি করেন তিনি নিজে। এরপর সেখান থেকে সরাসরি বিভিন্ন আসমান পর্যবেক্ষন শেষে আল্লাহর সাথে দেখা করেন, নানা কথাবার্তা বলে তারপর ফিরে আসেন। ফিরে এসে তিনি দেখেন আল্লাহর আরশে যাওয়ার আগে ওজু করার জন্যে যে পানি তিনি ব্যবহার করেছিলেন, তা তখনও গড়িয়ে পড়ছে।
প্রশ্নঃ
মুহম্মদ আল্লাহর সাথে দেখা করে (মেরাজ) মুসলিমদের জন্যে দিনে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ (Sahih Bukhari 4:2970) পড়ার নির্দেশ নিয়ে আসেন (যা পরে মুসার কথায় ৫ ওয়াক্ত করা হয়) ! আল্লাহ কি এতোটাই নির্বোধ যিনি মানব জাতিকে সারাদিন শুধুমাত্র তাঁর প্রার্থনা করারই নির্দেশনা দেন (যা মানতে গেলে সারাদিনে মানুষের আর অন্যকোন কাজ করার সময় থাকে না) ?
নবী মুহম্মদের ভাষ্যমতে, তিনি ডানা ওয়ালা এক ঘোড়ায় (বোরাক) চড়ে সাত আসমান পাড় হয়ে আল্লাহর সাথে দেখা করতে যান (মেরাজ গমন) ! বায়ুশূন্য মহাকাশে চলার জন্যে বোরাকের ডানার প্রয়োজনীয়তা পড়লো কোনদিক দিয়ে ? মহাকাশ যে বায়ুশূন্য সে ব্যাপারে কি মুহম্মদের কোন ধারনাই ছিলো না ?
আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব বলে, কোন বস্তু যদি আলোর গতির সমান গতিতে ভ্রমণ করে তাহলে তার কাছে সময় থেমে যাবে। অর্থাৎ কোন নভোচারী যদি আলোর গতিতে আমাদের পার্শ্ববর্তী নক্ষত্র প্রক্সিমা সেঞ্চুরিতে যান ও আবার দুনিয়াতে ফিরে আসেন, তাহলে তিনি দেখবেন দুনিয়াতে ৮ বছর সময় পার হয়ে গেছে, অথচ তার নিজের কাছে মনে হবে, তিনি তো এইমাত্র ভ্রমণে বের হয়েছিলেন আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড বা মিনিট তিনি পার করেছেন। কারন পৃথিবী থেকে প্রক্সিমা সেঞ্চুরি হলো ৪ আলোকবর্ষ দুরে। অর্থাৎ তার কাছে সময় থেমে ছিল, কিন্তু দুনিয়াতে সময় থেমে থাকেনি। সেহেতু দুনিয়াতে ৪+৪=৮ বছর পার হয়ে গেলেও, তার কাছে সময় থেমে ছিল বলেই তার কাছে এই ভ্রমণটার সময়কাল মনে হবে মাত্র কয়টা মুহুর্ত।
এখন ধরা যাক আল্লাহর আরশ হলো ১০০০ আলোক বর্ষ দূরে। সুতরাং যদি মুহাম্মদ আলোর গতিতে আরশের দিকে রওনা হন ও শুধুমাত্র আল্লাহর সাথে দেখা করে ফিরে আসেন, তাহলে তিনি দুনিয়াতে ফিরে এসে দেখবেন দুনিয়াতে ১০০০+১০০০= ২০০০ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু তার কাছে মনে হবে মাত্র কয়টা মুহুর্ত পার হয়েছে। আইনস্টাইনের তত্ত্ব আরো বলে, কোন বাস্তব বস্তু বা কনিকা আলোর গতি বা তার চাইতে বেশী গতিতে চলতে পারে না। যদি তা চলতে চায়, তাহলে সেই বস্তু বা কনিকার ভর অসীম হয়ে যাবে, যার ফলে তার পক্ষে চলাটাই সম্ভব হবে না। মুহাম্মদ যেহেতু একজন পার্থিব মানুষ, তাই তার পক্ষে কোন মতেই আলোর গতি বা তার চাইতে বেশী গতিতে চলা সম্ভব না। সুতরাং তাকে অবশ্যই আলোর গতির চাইতে কিছু কম গতিতে চলতে হবে আর তাহলেই তার মত পার্থিব কোন ব্যাক্তির পক্ষে মহাকাশ ভ্রমণ সম্ভব হবে। তারপরেও যুক্তির খাতিরে ধরে নেয়া যাক, তিনি আলোর গতিতেই চলেছিলেন আর ফিরেও আসেন আলোর গতিতে। এটা হলেও তিনি দুনিয়াতে এসে দেখবেন যে দুনিয়াতে ২০০০ বছর পার হয়ে গেছে, যদি আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের সূত্র সত্য ধরা হয়। কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছ থেকে ফিরে এসে দাবী করলেন, তিনি যাত্রার আগে যে ওজু করেছিলেন, তা তখনও গড়িয়ে পড়ছে। তার মানে দুনিয়াতেই মাত্র কয়েক মুহুর্ত পার হয়েছে। যা আপেক্ষিক তত্ত্বের বিপরীত ও অবাস্তব ধারনা। তার দাবী সত্য হবে, যদি দুনিয়াটাসহ তিনি আল্লাহর আরশে যান। তাহলে দুনিয়াটাও আলোর গতিতে চলবে ও ফলে তাতে সময় স্থির থাকবে। বলাবাহুল্য, মুহাম্মদ একাই আল্লাহর সাথে দেখা করতে গেছিলেন, দুনিয়াটা তার সাথে যায়নি।
সুতরাং এমতাবস্থায়, মুহাম্মদের আল্লাহর সাথে মোলাকাতের এ ঘটনা কীভাবে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সত্য হতে পারে? কিন্তু কথিত ইসলামী বিজ্ঞানীরা এসবের ধার ধারে না। তারা মনে হয় শুধু শুনেছে আপেক্ষিকতাবাদ বলে একটা তত্ত্ব আছে, আর শুনেছে এ তত্ত্ব বলে সময় নাকি থেমে যায়। কিন্তু কোনদিন এই তত্ত্বটা ভালমত পড়ে বোঝার চেষ্টা করেনি, আসলে বিষয়টা কী। বিষয়টা আদৌ না জেনে, না বুঝে (সেটা বোঝা সম্ভবও না যদি তারা কোরান থেকে বিজ্ঞান শেখে) তারা দিব্যি ওয়াজে, ইসলামী টিভিতে, লম্বা চওড়া বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে, আর মুসলমানরাও তাদেরকে বাহবা দিয়ে নিজেদের ঈমান শক্ত করছে আর নিজেরা গমন করছে অজ্ঞতার অতল গর্ভে।
এভাবেই দুনিয়ার গোটা মুসলমান জাতি দিনে দিনে অজ্ঞতা ও অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেটা কিন্তু তারা বুঝতেও পারছে না।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ