স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

12 February, 2016

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী
"ওঁ বিশ্বানি দেব সবিতর্দুরিতানি পরা সুব। য়দ্ভদ্রং তন্ন আ সুব।।"
ধর্ম্মজ্ঞানী ব্যাক্তিরাই(মন্ত্র) দ্রষ্টা বা ঋষি(নিরুক্ত ১.১৬ যাস্ক)
বৈদিক মন্ত্র যারা অনুধাবন করতে সক্ষম তারা ঋষি (যাস্ক নিরুক্ত ২।১১)
দয়ানন্দ সরস্বতীর জন্ম ১২ ফেব্রুয়ারি ১৮২৪ টঙ্কারায়। তাঁর পিতার নাম করশনজী লালজি তিওয়ারি এবং মাতার নাম যশোদাবাই। তাঁর বাবা, কর আদায়কারী ছিলেন, ব্রাহ্মণ পরিবারের একজন ধনী, ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। দয়ানন্দ সরস্বতীর আসল নাম মুলশঙ্কর এবং তাঁর প্রথম জীবন খুব আরামদায়ক ছিল। পরবর্তীকালে, তিনি পণ্ডিত হওয়ার জন্য সংস্কৃত, বেদ, ধর্মগ্রন্থ এবং অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থের অধ্যয়নের সাথে জড়িত হয়েছিলেন। তাঁর আদি নাম মুল শঙ্কর তিওয়ারি কারণ তিনি ধনু রাশি এবং মুল নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি যখন আট বছর বয়সে ছিলেন, তখন তাঁর যজ্ঞোপবিত সংস্কার হয়। শিবরাত্রি উপলক্ষে দয়ানন্দ শিবের আনুগত্যে পুরো রাত জেগে বসেছিলেন। তাঁর বাবা শিবের অনুসারী ছিলেন এবং শিবকে প্রভাবিত করার উপায় শিখিয়েছিলেন। এক শিবরাত্রিতে উপবাসের সময়, তিনি একটি ইন্দুর নৈবেদ্যর খাচ্ছিলেন এবং প্রতিমার শরীরে দৌড়াতে দেখলেন। এটি দেখার পরে, তিনি প্রশ্ন করেছিলেন যে শিব যদি কোনও ইঁদুরের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করতে না পারেন তবে তিনি কীভাবে বিশ্বের ত্রাণকর্তা হতে পারেন।
তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে বিবাহ তাঁর জন্য নয় এবং ১৮46 সালে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। ১৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী বোম্বাই শহরে উপনীত হন, এখানে অবস্থান কালে তিনি "সত্যার্থ প্রকাশ" অমর গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়া রাজা জয়কৃষ্ণ দাসকে তাহা মুদ্রিত করিবার ভার দিয়েছিলেন।

তাঁর বিখ্যাত বিতর্কসভার মধ্যে হৃষীকেশ এর নামজাদা পণ্ডিত হীরা বল্লভ ও তাঁর ৯ জন সঙ্গী পণ্ডিত এর সাথে বিতর্কের কথা স্মরণ করা যেতে পারে।৮ দিন ব্যাপী এই বিতর্ক প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা করে অনুষ্ঠিত হত।এই ছিল তাঁর জয়যাত্রার সূচনা।
আরেকটি স্মরণীয় বিতর্কসভা ছিল কাশীর বিতর্কসভা। মহর্ষি যখন কাশীতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সভা সমাবেশ করতে লাগলেন তখন তাঁর জাগরণী,যুক্তিময় মানবতার বাণীতে পুরো শহরে এক বিশাল সারা পরে গেল।হাজার হাজার লোক আসতে থাকল তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহনে।তখন কাশীর পণ্ডিতদের টনক নড়ল।তাঁরা বুঝতে পারলেন যে তাঁদের অন্ধবিশ্বাস দিয়ে নিরীহ লোকদের পরিচালনা করার দিন ফুড়োতে চলেছে।ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাঁরা কাশীর তৎকালীন রাজার কাছে নালিশ দিলেন যে দয়ানন্দ তাদের ভুলপথে পরিচালিত করছেন।তখন কাশীর রাজা এক বিতর্কের আয়োজন করলেন।সহস্র সহস্র লোকের জমায়েত হল,কাশীর সমস্ত পণ্ডিত একদিকে আর দয়ানন্দজী আরেকদিকে। দয়ানন্দজীর অতিমানবীয় জ্ঞানালোকের চ্ছটায় তারা ত্রাহি ত্রাহি রব করতে লাগলেন।না পেরে তারা দয়ানন্দজীর দিকে পাথর ছুঁড়তে শুরু করলেন,রক্তাক্ত করলেন তাঁকে।এমন পরিস্থিতিতে লজ্জিত হয়ে রাজা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন।সবাই বুঝে নিল কে জয়ী হয়েছিল!
তাঁর জীবনের সবচেয়ে ঐতিহাসিক বিতর্কসভা ছিল ১৮৬৯ সালের ২২ শে অক্টোবর বারানসীর বিতর্কসভা যাতে সমগ্র ভারতের ৩৯ জন শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত তাঁর সাথে বিতর্কে অংশ নিতে মিলিত হন।প্রায় ৫০০০০ দর্শনার্থীর অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত এই সভায় দয়ানন্দ জীর জয় ভারতের ইতিহাসে তাঁকে অনন্য আসনে প্রতিষ্ঠা করে। পবিত্র বেদের আলো ছড়িয়ে দেবার জন্য প্রতিষ্ঠা করলেন অসঙ্খ্য গুরুকুল যাতে সারা ভারতবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করল জ্ঞান অর্জনের তৃষ্ণায়।এর মধ্যে ফররুখাবাদ (১৮৬৯), মিরজাপুর(১৮৭০) , কাশিগঞ্জ (১৮৭০), আলীগড়(১৮৭০) এবং বারানসি গুরুকুল (১৮৭৩) উল্লেখযোগ্য।
১৮৭৪ সালে তিনি বোম্বেতে আমন্ত্রন পেলেন সেখানকার পণ্ডিতদের সাথে বিতর্কের জন্য।২০ শে অক্টোবর এর সেই বিতর্কতে জয়লাভ ই তাঁকে তাঁর অমর সংগঠন আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মোচন করে দেয়। সেখানে সবাই তাঁর গভীর পাণ্ডিত্যে এতই মুগ্ধ হলেন যে তাঁরা বেদ প্রচারে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করলেন স্বামীজিকে প্রধান বানিয়ে। শুরু হল আর্য সমাজের ঐতিহাসিক পথচলা। বোম্বেতে থাকাকালীন সময়েই তিনি আহমেদাবাদের প্রখ্যাত পণ্ডিত গোপালরাও হরিমুখ এর সাথে বিতর্ক করার আমন্ত্রণ পান।রওনা দিলেন আহমেদাবাদের উদ্যেশ্যে। স্থানীয় পণ্ডিতদের বিতর্কে হারিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন আর্য সমাজের আহমেদাবাদ শাখা। এর ই মধ্যে প্রকাশিত হল তাঁর কালজয়ী গ্রন্থ ‘সত্যার্থ প্রকাশ’ যা ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রভূত ভূমিকা পালন করেছিল।তিনি ই প্রথম বিদেশী সম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দেন যে কারনে প্রাক্তন ভারত রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ তাঁকে ‘আধুনিক ভারতের অন্যতম রুপকার’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
তাঁর মৃত্যুর ইতিহাস অতি বেদনাদায়ক। যোধপুরের মহারাজা যশবন্ত সিং দয়ানন্দজীর আদর্শে এতই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যে তিনি ঠিক করলেন তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করবেন।দয়ানন্দজীকে রাজা আমন্ত্রণ জানালেন তাঁর প্রাসাদে আতিথ্য গ্রহন করতে।তিনি আমন্ত্রণ গ্রহন করলেন।একদিন দয়ানন্দজী রাজার সাথে কথা বলার জন্য তাঁর বিশ্রামকক্ষে গেলেন,সেখানে তিনি রাজাকে নন্নীজান নামক এক নর্তকীর সাথে দেখে ফেললেন।তখন মহর্ষি রাজাকে অত্যন্ত ভৎসরনা করলেন এবং তাঁকে এসব অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে মানা করলেন।দয়ানন্দজীর এই আচরণ ওই নর্তকীর মনে অত্যন্ত দুঃখ দিল এবং সেই মহিলা এর প্রতিশোধ নেবেন বলে ঠিক করল। নন্নীজান দয়ানন্দকে খাবার সরবরাহকারী বাবুর্চি ও রাঁধুনী জগন্নাথকে ঘুষ দিয়ে তাঁর খাবারে বিষ মিশিয়ে দিল।২৯ শে সেপ্টেম্বর রাতে খাবার খেয়ে ঋষি ঘুমোতে শুলেন।কিছুক্ষন পর অসহ্য ব্যাথায় জেগে উঠলেন তিনি।তিনি বুঝতে পারলেন যে তাঁর খাবারে বিষ মেশানো হয়েছে। রাজা তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকলেন।তাঁর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে উঠল।তাঁর ব্যাথা এতই তীব্র হয়ে উঠল যে বাবুর্চি অনুশোচনায় থাকতে না পেরে তাঁর কাছে নিজের দোষের কথা স্বীকার করল। দয়ানন্দজী সেই বাবুর্চিকে ক্ষমা করে দিলেন এবং নিজের গচ্ছিত শেষ সম্পদ অল্প কিছু অর্থ তার হাতে দিয়ে তাকে সেখান হতে পালিয়ে যেতে বললেন,নাহলে যে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেবেন!!!এভাবে মৃত্যুর আগেও উজ্জ্বল মহানুভবতার দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন তিনি!!!খাওয়ারে বিষ প্রয়োগের পরদিন ডঃ আলীমর্দান খান ইন্জেক্শনের দ্বারা আবার বিষ প্রয়োগ করেন
এই বিষক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে প্রায় এক মাস পরে ৩০ শে অক্টোবর,১৮৮৩ সালে তিনি
দেহত্যাগ করলেন।

সারাজীবন দয়ানন্দ ছিলেন যুক্তি ও প্রমাণের অটল বিশ্বাসী। তিনি যুক্তিহীন কোন কথাতেই কখনো বিশ্বাস করতেন না, সেটা তথাকথিত শাস্ত্রবাণী ই হোক আর যাই হোক।এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বর্ণনা করা যাক। একবার তিনি প্রাচীন ভারতের মানবদেহের অঙ্গসংস্থান(এনাটমি) নিয়ে লেখা একটি শাস্ত্র পড়ছিলেন। পড়ার কিছুদিন পর দেখলেন নদীতে একটি লাশ ভাসছে,হয়তো দুর্ভিক্ষ বা অন্য কোন কারনে কোন মৃত্যুজনিত লাশ হয়ত!মহর্ষি উদীচ্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান,রক্ত-মাংস খাওয়া বা ধরা তাঁর কল্পনার বাইরের কর্ম।কিন্তু না, তিনি এগিয়ে গিয়ে নদী থেকে লাশটা তুলে আনলেন।এর ব্যাবচ্ছেদ করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন এর ভেতরের অংশগুলি।দেখলেন অনেককিছুই মিলছে না সেই শাস্ত্র এর বর্ণনার সাথে। তৎক্ষণাৎ সেই শাস্ত্র তিনি ছুঁড়ে মারলেন নদীর জলে যা তৎকালীন সময়ে কোন ধর্মীয় পণ্ডিতের চিন্তারও বাইরে!!!
তাঁর এই অনন্য গুনের কারনেই দেশী বিদেশী অসংখ্য পণ্ডিত ব্যাক্তিবর্গ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেছিলেন।এদের মধ্যে লন্ডনে India House এর প্রতিষ্ঠাতা শ্যামজী কৃষ্ণ বর্মা ,লালা রাজপুত রাই, বিনায়ক দামোদর সর্বাকর,মদন লাল ঢিংরা,রাম প্রসাদ বিসমিল,মহাদেব গোবিন্দ রানাদে,ম্যাডাম ক্যামা,সুভাষ চন্দ্র বোস,শ্রী সত্যমূর্তি,পণ্ডিত লেখরাম,মহাত্মা হংসরাজ,রাজীব দিক্ষীত।তাঁর উল্লেখযোগ্য গুণমুগ্ধদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ,ঋষি অরবিন্দ,রাষ্ট্রপতি রাধাকৃষ্ণান,বল্লভভাই প্যাটেল,শ্যাম প্রসাদ মুখারজি উল্লেখযোগ্য।
আমেরিকান দার্শনিক এন্ড্রু জ্যাকসন ডেভিস মহর্ষিকে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এছাড়া বিখ্যাত স্কটিশ লেখক নিনিয়ান স্মার্ট, ব্রিটিশ লেখক বেঞ্জামিন ওয়াকার প্রমুখ তাঁর বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। তাঁর অমোঘ বাণী এখনও আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যায়,
“হে প্রিয় ভারতবাসী,আমি তোমাদের কাছে নতুন কোন ধর্ম প্রচার করতে আসিনি,আমি আসিনি কোন নবী বা অবতার সাজতে,আমি শুধু তোমাদের সেই পবিত্র বাণী স্মরণ করিয়ে দিতে এসেছি যা প্রিয় আর্যভুমির সহস্র বছরের গ্লানিতে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছিল!”
মহর্ষি স্বামীদয়ানন্দ সরস্বতী যখন কলিকাতায় আগমন করেন তখন (১৬ই ডিসেম্বর, ১৮৭২) হইতে কয়েক মাস পর্যন্ত হেমচন্দ্র তাহার সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন। হেমচন্ত্র দয়ানন্দের নিকট উপনিষদ পাঠ ও যোগবিদ্যা শিক্ষা করিতেন। “দয়ানন্দ-প্রসঙ্গ এই নামে হেমচন্দ্র কয়েক মাসের দিনপঞ্জী লিখিয়াছিলেন। দয়ানন্দ বঙ্গ দেশে চারি মাস কাল ছিলেন। এই হস্তলিখিত সংক্ষিপ্ত দিন-পঞ্জীতে উক্ত চারি মাসের সূক্ষ্ম ধারাবাহিক বিবরণ পাওয়া যায়। গ্রন্থখানি। সাধারণের অজ্ঞাত ছিল। আদি ব্রাহ্মসমাজের পুরাতন জীর্ণ খাতাপত্রের মধ্যে ছিল। আদি ব্রাহ্মসমাজের পুরাতন জীর্ণ খাতাপত্রের মধ্য হইতে এই হস্তলিখিত দিনপঞ্জী হঠাৎ স্বর্গীয় আচার্য ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টিতে আসে। তিনি আমাকে এই দিনপঞ্জী খানি দেখাইয়াছিলেন। আমি তখন আপার চিৎপুর রোডস্থ আদি ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে সাপ্তাহিক উপাসনায় উপনিষদ ও বেদমন্ত্র ব্যাখ্যা করিতাম। সে আজ ২২/২৩ বৎসর পূর্বের কথা। আমি হেমচন্দ্র লিখিত দিনপঞ্জী খানি সম্পূর্ণ নকল করিয়া ছিলাম। দিন-পঞ্জীতে উল্লিখিত বহু ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাদটীকায় সন্নিবেশ করিলাম। পাদটীকা আমার নিজস্ব। মন্দির, তাঃ ১।১। ৫৪ কলিকাতা আর্য সমাজ পন্ডিত দীনবন্ধু বেদশাস্ত্রী ১৬ ডিসেম্বর, ১৮৭২। কাশী শাস্ত্র-বিচারের বিজেতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ভাগলপুর হইতে কলিকাতায় পৌছিলেন। ব্যারিষ্টার চন্দ্রশেখর সেন, পণ্ডিত সত্যব্রত সামশ্রমী, ব্যারিষ্টার উমেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় প্রভৃতি কয়েক জনে সন্ন্যাসীকে পাথুরিয়াঘাটার রাজবাড়ীতে লইয়া আসিলেন। বরাহনগর “নাইনান”বাগান বাড়ীতে তাহার আহার ও বাসস্থান নির্দিষ্ট হইল। [ পাদটীকা- ব্যারিষ্টার চন্দ্রশেখর সেন ব্রাহ্মসমাজের নেতা, “ভূ-প্রদক্ষিণ” প্রণেতা। কাশী শাস্ত্রবিচারে তিনি উপস্থিত ছিলেন। পণ্ডিত সত্যব্রত সামশ্রমী বেঙ্গল এশিয়াটিক সোসাইটির বেদজ্ঞ পণ্ডিত, বহু বৈদিক সাহিত্যের প্রকাশক।তিনিও কাশী শাস্ত্ৰবিচারে উপস্থিত ছিলেন। ব্যারিষ্টার উমেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি (বোম্বাই, ১৮৮৫) ছিলেন।] ১৭-২০ ডিসেম্বর, ১৮৭২। দয়ানন্দ সন্ন্যাসীর দর্শনের জন্য “নাইনানে” অসম্ভব লোকসমাগম। তাহার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাইলাম না। ২১ ডিসেম্বর ১৮৭২। সন্ন্যাসীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাইয়া তৃপ্ত হইলাম। কেশবচন্দ্র সেনকেও দেখিলাম। ২২ ডিসেম্বর ১৮৭২। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ত্রিদিব ভট্টাচার্যের সঙ্গে সন্ন্যাসীর দর্শন করিলাম। যজ্ঞোপবীত, বর্ণভেদ, যজ্ঞ, আত্মা ও ষড়দর্শন সম্বন্ধে বহু প্রশ্নের উত্তর পাইলাম। আত্মা তৃপ্ত হইল। [পাদটীকা—দ্বিজেন্দ্রনাথ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং হেমেন্দ্রনাথ তাহার তৃতীয় পুত্র।] ২৩-২৮ ডিসেম্বর ১৮৭২। ব্রাহ্মসমাজের কার্যে ব্যস্ত থাকায় সন্ন্যাসীকে দর্শন করিতে পারিলাম না। ২৯শে ডিসেম্বর ১৮৭২। সন্ন্যাসীর নিকট নূতন ভাবে উপনিষদের ব্যখ্যা শুনিলাম। কেশবসেনের সঙ্গে তাহার ঘনিষ্ঠতা জন্মিয়াছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন। ৩০-৩১ ডিসেম্বর ১৮৭২। নাইনানে যাইতে পারিলাম না। শুনিলাম অক্ষয় কুমার দত্ত ও রাজনারায়ণ বসু এই দুই দিনে বেদ ও হোম সম্বন্ধে তাহার সঙ্গে আলোচনা করিয়াছেন। [ পাদটীকা—অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০-১৮৬৮ খৃঃ) ব্রাহ্ম সমাজের তত্ত্ববোধিনী পত্রের সম্পাদক ও বিভিন্ন গ্রন্থলেখক। “ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়”তাহার বিখ্যাত গ্রন্থ। কবি সত্যেন্দ্র নাথ দত্তের ইনি পিতামহ। রাজনারায়ণ বসু (১৮২৬ ১৮৯৯ খৃঃ) ঋষি অরবিন্দের মাতামহ বিভিন্ন ইংরেজী গ্রন্থের লেখক, উপনিষদের ইংরেজী অনুবাদক; ধর্ম সমাজ, ভাষা ও রাজনীতি বিষয়ে বহু বাংলাগ্রন্থের রচয়িতা,ব্রাহ্মসমাজের নেতা।] ১লা জানুয়ারী ১৮৭৩। কেশবচন্দ্র সেন দয়ানন্দ সরস্বতীকে সঙ্গে করিয়া কলিকাতায় বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করিলেন। [পাদটীকা- কেশবচন্দ্র সেন (১৮৩৮-১৮৮৮ খৃঃ)নববিধান ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা। তাহার চেষ্টায় ১৮৭২ খৃষ্টাব্দের ৩ আইন (অসবর্ণ বিবাহ আইন পাশ হয়। ভারতে ও ইউরোপে তিনি অসাধারণ বাগ্মীরূপে পরিচিত ছিলেন।] ২রা জানুয়ারী ১৮৭৩। সন্ন্যাসীর নিকট উপনিষদ পাঠ করিতে আরম্ভ করিলাম। কৃষ্ণদাস পাল নাইনে সন্ন্যাসীর সঙ্গে দেখা করিয়া কথাবার্তা করিলেন। বেদবিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবেকৃষ্ণদাস পাল হর্ষ জ্ঞাপন করিলেন। [ পাদটীকা—কৃষ্ণদাস পাল (১৮৩৮-১৮৮৪ খৃঃ) হিন্দু পেট্রিয়ট নামক ইংরেজী পত্রের সম্পাদক, কলিকাতা মিউনিসিপ্যালিটির সভ্য ও বড়লাটের মন্ত্রী সভার সভ্য।] ৩ জানুয়ারী ১৮৭৩। সন্ন্যাসীর কেশবচন্দ্রের সঙ্গে বাদুড়বাগানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের গৃহে আগমণ।বিধবা-বিবাহ, নিয়োগ,বাল্য বিবাহ, কৌলীণ্য প্রথা, বৃদ্ধ-বিবাহ, শিশু-বিবাহ সম্বন্ধে উভয়ের মধ্যে আলাপ। বিদ্যাসাগর অসুস্থ ছিলেন। সন্ন্যাসীর বেদ-বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবে আনন্দ। ৪ জানুয়ারী ১৮৭৩।রাজা রাজেন্দ্রনাথ মল্লিকের গৃহে কেশবচন্দ্র কর্তৃক বেদ-বিদ্যালয় সম্বন্ধে পরামর্শ সভার আয়োজন। মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, উত্তর পাড়ার জমিদার জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, চারুচন্দ্র মল্লিক, প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণদাস পাল, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন, ভূদেব মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি সভায় উপস্থিত ছিলেন। ঠিক হইল সংস্কৃত কলেজে বেদপাঠের ব্যবস্থা সম্ভবনা হইলে পৃথক বিদ্যালয় স্থাপন করা হইবে। [পাদটীকা—যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর (১৮৩১-১৯০৮ খৃঃ) পাথুরিয়াঘাটার জমিদার, স্যার-সি-এস-আই-মহারাজা উপাধিতে ভূষিত, বড়লাটের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য। বৃটিশ ইণ্ডিয়ান সভার সভাপতি, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ও সিণ্ডিকেটের সহকারী সভাপতি। মহারাজা প্রদ্যোতকুমার তাহারই পুত্র। জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় (১৮০৮-১৮৮৮ খৃ) উত্তরপাড়ার জমিদার। রাজা প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায় ইহারই পুত্র। বড়লাটের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ভূদেব মুখোপাধ্যায় (১৮২৫-১৮৯৪ খৃঃ) সি-আই-ই, এডুকেশন গেজেটের পরিচালক, বহু গ্রন্থলেখক, স্কুল ইন্সপেক্টর, শিক্ষা দর্পণ পত্রিকার সংস্থাপক, ছোটলাটের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য] | ৫-৭ জানুয়ারী ১৮৭৩। সন্ন্যাসী আমাকে যম নিয়মের উপদেশ দিলেন ও লঘু প্রাণায়ামের প্রণালী শিক্ষা দিলেন। কেশবচন্দ্র ও রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র সন্ন্যাসীর সঙ্গে দেখা করিলেন। আর্য জাতির প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে রাজেন্দ্রলালের সঙ্গে আলোচনা। [পাদটীকা-রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র ই-সি-আই-ই (১৮২৪১৮৯১ খৃঃ) বিভিন্ন ভাষায় অভিজ্ঞ, ঐতিহাসিক, “বিবিধার্থ সংগ্রহ”নামক মাসিক পত্রের সম্পাদক, এসিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি, প্রত্নতত্ত্ববিদ, হিন্দুপেট্রিয়টের সম্পাদক, ইণ্ডো,এরিয়ান্স আদিবহু ঐতিহাসিক গ্রন্থের রচয়িতা)] । ৮ জানুয়ারী ১৮৭৩ সন্ন্যাসীর নিকট যোগ বিদ্যা সম্বন্ধে উপদেশ লাভ। রাজনারায়ণ বসু, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও রামতনু লাহিড়ীতাহার সঙ্গে নাইনানে দেখা সাক্ষাৎ ও আলাপ-আলোচনা করিলেন। ঈশ্বরচন্দ্রের সঙ্গে সমাজ সংস্কার সম্বন্ধে আলোচনা। সন্ন্যাসী তাহাকে বঙ্গদেশে বেদ প্রচারের অনুরোধ জানাইলেন। “এই শরীরে আর হইবেনা, পরজন্মে দেখা যাইবে”—ঈশ্বরচন্দ্র এই উত্তর করিলেন। রামতনু লাহিড়ী প্রাচ্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষা সম্বন্ধে আলোচনা করিলেন। [পাদটীকা রামতনু লাহিড়ী (১৮১৩-১৮৯৮ খৃঃ) ডেভিড হেয়ারের শিষ্য ও ডিরোজিওর ভক্ত, শিক্ষাব্রতী, সমাজ সংস্কারক ও বিদ্যাসাগরের বন্ধু। ] ৯ জানুয়ারী ১৮৭৩। কেশবচন্দ্র সেনের লিলি কটেজে সন্ন্যাসী দয়ানন্দের সংস্কৃত ভাষায় বক্তৃতা। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি বক্তৃতা শুনিয়া মুগ্ধ হইলেন। রাজানারায়ণ বসু সন্ন্যাসীকে“হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠতা নামক গ্রন্থ উপহার দিলেন ও তাহা হইতে কোন কোন অংশ হিন্দী করিয়া শুনাইলেন। লিলি কলেজে আসিবার পূর্বে তিনি এশিয়াটিক মিউজিয়াম পরিদর্শন করিলেন ও বেদ-উপনিষদ্‌কয়েক খণ্ড ক্রয় করিলেন। ১০ জানুয়ারী ১৮৭৩। সন্ন্যাসীর আদেশে মৌন ব্রত অবলম্বন করিলাম এবং তাহার সান্নিধ্যে অবস্থান করিলাম। আই-সি-এস রমেশচন্দ্র দত্ত ও উকীল রমেশচন্দ্র মিত্র তাহার সঙ্গে দেখা করিয়া বেদের অনুবাদ ও ভারতের প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে আলাপ আলোচনা করিলেন। রমেশচন্দ্র দত্ত সন্ন্যাসীর বেদ সম্বন্ধে অগাধ পাণ্ডিত্য দেখিয়া বিস্মিত হইলেন। [পাদটীকা রমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪৮-১৯০৯ খৃঃ) ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে আই-সি-এস্ হন। বিভিন্ন জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট ও পরে উড়িষ্যা বিভাগের কমিশনার, পরে বড়োদা রাজ্যের অর্থসচিবের পদে অধিষ্ঠিত। ঐতিহাসিক উপন্যাস, রামায়ণের ইংরেজী অনুবাদ, ঋগ্বেদের বঙ্গানুবাদ, ভারতের প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস, বঙ্গভাষার ইতিহাস ইত্যাদি তাহার অক্ষয় কীর্তি। রমেশচন্দ্র মিত্র (১৮৪০১৮৯৯ খৃঃ) কলিকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করার পর ১৮৭৪ খৃষ্টাব্দে হাইকোর্টের বিচারপতি পদে আরুঢ় হন] ১১-১৮ জানুয়ারী ১৮৭৩। সন্ন্যাসীর আদেশে আরও আট দিনের জন্য মৌন অবলম্বন করিলাম। প্রত্যহ ব্রাহ্ম মুহুর্তে তিনি যোগবিদ্যা শিক্ষা দিলেন। লক্ষ্য করিলাম এই কয়েক দিনের মধ্যে সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী, রজনীকান্ত গুপ্ত, যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার, প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, দ্বারকানাথ গাঙ্গ লি, গঙ্গাধর কবিরাজ প্রভৃতি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তার সঙ্গে দেখা করিলেন। [ পাদটীকা-মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী (১৮৫০১৯০৮ খৃঃ) ময়মনসিংহ জেলার আলাপসিংহ পরগণার জমিদার। মুক্তাগাছার জমিদার রাজা জগৎকিশোর আচার্য চৌধুরীর পুত্র শশিকান্ত আচার্য চৌধুরীকে ইনি পোষ্যপুত্ররূপে গ্রহণ করিয়াছিলেন।] [রজনী কান্ত গুপ্ত (১৯৪৯-১৯০০ খৃঃ) প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক সাহিত্যিক ও সুলেখক। পাণিনিবিচার, আর্যকীর্তি ভারতবর্ষের ইতিহাস ও সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস লিখিয়া তিনি অমরত্ব লাভ করিয়াছেন।] [ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯০৩ খৃঃ) এম-ডি, ডিএল, সি-আই-ই, সুপ্রসিদ্ধ চিকিৎসক, বিজ্ঞানসভার স্থাপয়িতা, কলিকাতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেললা, ছোটলাটের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য।] [প্রতাপচন্দ্র মজুমদার (১৮৮০-১৯০৫ খৃঃ) বিখ্যাত বক্তা ও ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক, ইণ্ডিয়ান মিরর পত্রিকার সম্পাদক, বিভিন্ন ইংরেজী গ্রন্থের লেখক। ইনি চিকাগো ধর্ম মহাসভায় ব্রাহ্মসমাজের প্রতিনিধিত্ব করিয়াছিলেন।] [দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি (১৮৪৬-১৮৯৮৭ খৃঃ) ব্রাহ্ম সমাজের নেতা, স্ত্রীশিক্ষার পক্ষপাতী, সুলেখক, সুকবি, হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়ের ও ভারত সভার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও “অবলা বান্ধব” পত্রিকার স্থাপয়িতা। না জাগিলে সব ভারত ললনা, এ ভারত আর জাগে না জাগে না”কবিতাটি তাহারই রচিত।] [গঙ্গাধর কবিরাজ (১৭৯৮-১৮৮৫ খৃঃ) নিপুণ চিকিৎসক, ৪০ খানি সংস্কৃত গ্রন্থের রচয়িতা। মুগ্ধবােধ ব্যাকরণের ও চবক সংহিতার সুবিস্তৃত টীকা লিখিয়া তিনি অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে] ১৯-২১ জানুয়ারী ১৮৭৩। ব্রাহ্ম সমাজের মাঘোৎসব উপলক্ষ্যে ব্যস্ত রহিলাম। ২১শে জানুয়ারী মাঘোৎসবের দিন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের আমন্ত্রণ দয়ানন্দ সন্ন্যাসীকে আমি ও দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর জোড়াশাকো রাজবাড়ীতে লইয়া আসিলাম। ব্রাহ্মসমাজের সব নেতাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ব্রাহ্মসমাজও বেদ বিষয়ে সকলের সঙ্গে সন্ন্যাসীর আলাপ আলোচনা হইল। দেবেন্দ্রনাথের পুত্রগণের মুখে বেদমন্ত্র শুনিয়া তিনি মুগ্ধ হইলেন। তাহাকে রাজবাড়ীতে কয়েকদিন থাকিতে অনুরোধ করিলাম তিনি সম্মত হইলেন না। ২১-৩০ জানুয়ারী ১৮৭৩। সন্ন্যাসী আমাকে নিভৃতে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করিয়া যোগাভ্যাস করিতে আদেশ দেওয়ায় বেহালায় এক নির্জন কুটীরে এই নয় দিন অবস্থান করিলাম। এই কয়েক দিন গুরুদেবের সঙ্গসুখ হইতে বঞ্চিত রহিলাম। শুনিলাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজনারায়ণ বসু, অক্ষয়কুমার দত্ত, কেশবচন্দ্র সেন প্রভৃতি তাহার সঙ্গে আলাপ আলোচনার জন্য গিয়াছিলেন। [পাদটীকা—মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫ খৃঃ) প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং আদি ব্রাহ্ম সমাজের নেতা। ইহার ১৪টি পুত্র কন্যা, যথা—দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ, হেমেন্দ্রনাথ, বীরেন্দ্রনাথ, সৌদামিনী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, সুকুমারী, শরকুমারী, স্বর্ণকুমারী, বর্ণকুমারী, পুর্ণেন্দ্রনাথ, সোমেন্দ্রনাথ, ররীন্দ্রনাথ (বিশ্বকবি) ও বুধেন্দ্রনাথ।] ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১ খৃঃ) কলিকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ এবং হুগলী, বর্ধমান, নদীয়া ও মেদিনীপুর জেলার বিদ্যালয় সমূহের স্পেশাল ইন্সপেক্টর, বিভিন্ন গ্রন্থ রচয়িতা, বিধবা বিবাহ, আন্দোলনের প্রবর্তক। কলিকাতা সংস্কৃত কলেজে ব্রাহ্মণ ও বৈদ্যসমাজের ছাত্র ছাড়া অন্য সমাজের ছাত্রদের জন্যও দ্বারোদঘাটন ইহারই কীর্তি । ৩১শে জানুয়ারী ১৮৭৩, গুরুদেব সন্ন্যাসী দয়ানন্দ বালুচরে কোন পরিচিত ব্যক্তির বাগানবাড়ীতে নিভৃত জীবন যাপন করিলেন। কলিকাতার অজস্র লোক সমাগম হইতে কয়েক দিনের বিরাম গ্রহণই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। ২২শে ফেব্রুয়ারী ১৮৭৩। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর কলিকাতায় প্রত্যাবর্তন ও বিশ্রাম। ২৩শে ফ্রেব্রুয়ারী ১৮৭৩। গোরাচাঁদ দত্তের গৃহে সন্ন্যাসীর “ঈশ্বর ও ধর্ম”সম্বন্ধে বক্তৃতা। কেশবচন্দ্র সেন সভার আয়োজন করিয়াছিলেন। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতি। সংস্কৃত কলেজের বহু ছাত্র সঙ্গে করিয়া মহেশচন্দ্র ন্যায়রত্নের যোগদান। সন্ন্যাসীর সংস্কৃত বক্তৃতায় সকলে মুগ্ধ।ন্যায়রত্ন বক্তৃতার হিন্দীতে অনুবাদ করিয়া শুনাইলেন। অনুবাদে কদর্থকরা হইতেছে বলিয়া ছাত্রদের আপত্তি। ন্যায়রত্ন উত্মা প্রকাশ করিয়া সভা ত্যাগ। ২৪-২৮ ফ্রেব্রুয়ারী। কেশবচন্দ্র সেনের কলুটোলাস্থ পিতৃগৃহে, আদিব্রাহ্মসমাজে, বেহালায়, খিদিরপুরেও কাশীপুরে কেশবচন্দ্রের উদ্যেগে সন্ন্যাসীর বক্তৃতা ও ধর্মালোচনা। ১-১১ মার্চ ১৮৭৩। যোগসাধনার জন্য আমার বেহালায় নির্জন ও নিঃসঙ্গ জীবনযাপন। স্বামিজীর সঙ্গে কলিকাতার বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির বার্তলাপ। ১৩ মার্চ ১৮৭৩। লক্ষ্মীনারায়ণ গোস্বামীর সঙ্গে স্বামীজীৰ নবদ্বীপে উপস্থিতি। ১৪-১৮ মার্চ ১৮৭৩। ১৫ই নবদ্বীপে বাজারে ও ১৬ই গঙ্গাতীরে সভা। গুজব উঠিল—জার্মান সাহেব ম্যাক্সমূলার সন্ন্যাসীর বেশে নবদ্বীপের লোককে খৃষ্টান করিতে আসিয়াছে, শত সহস্র নরনারী তাহাকে দেখার জন্য ছুটিয়া আসিয়াছে। লক্ষ্মীনারায়ণ লোকের নিকট অপদস্থ। কোন পণ্ডিত শাস্ত্রবিচারে অগ্রসর হইলেন না নবদ্বীপে গিয়া স্বামীজীর সঙ্গে মিলিত হইলাম। ১৯-২১ মার্চ ১৮৭৩। স্বামীজীকে সঙ্গে করিয়া বরাহনগরে ফিরিলাম। ২২-৩১ মার্চ ১৮৭৩। স্বামীজী নিঃসঙ্গ ভাবে গ্রন্থ প্রণয়ন কার্যে আত্মনিয়োগ করিলেন। বিকালে তাহার উপদেশ হইল। ১লা এপ্রিল ১৮৭৩, দয়ানন্দের বরাহনগরত্যাগ ও ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে হুগলীতে উপস্থিতি। বৃন্দাবনচন্দ্র মণ্ডলের বাগানবাড়ীতে আহার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা। রেভারেণ্ড লালবিহারী দে’র সহিত স্বামীজীর প্রশ্নোত্তর। রেভারেণ্ডের পরাজয়। ২-৫ এপ্রিল ১৮৭৩। বৃন্দাবনবাবুর গৃহে স্বামীজীর সংস্কৃতে বক্তৃতা। সাহিত্যিক অক্ষয়চন্দ্র সরকার, ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও ভট্টপল্লীর পণ্ডিতেরা বক্তৃতা শুনিয়া মুগ্ধ। ৭-৮ এপ্রিল ১৮৭৩। ৮ই এপ্রিল ভট্টপল্লীর পণ্ডিত তারাচরণ তর্করত্নের (কাশীনরেশের সভাপণ্ডিত) সহিত স্বামীজীর মূর্তিপূজা বিষয়ে শাস্ত্ৰবিচার। তারাচরণের পরাজয়। ৯-১২ এপ্রিল ১৮৭৩। মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে হুগলীর বিভিন্ন স্থানে স্বামীজীর পরিভ্রমণ। : ১৩ এপ্রিল ১৮৭৩। স্বামীজীর বর্ধমানে উপস্থিতি। রাজা বনবিহারী কাপুর রাজবাড়ীতে আহার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করিলেন। ১৪-১৫ এপ্রিল ১৮৭৩। বর্ধমান রাজবাড়ীতে স্বামীজীর উপদেশ। বহুলোকের সমাগম। রাজা বাহাদুরের ধর্মোপদেশ শুনিতে নিয়মিত যোগদান কিন্তু ঔদাসীন্য। ১৬ই এপ্রিল ১৮৭৩। স্বামীজীর বর্ধমান ত্যাগ ও ভাগলপুর অভিমুখে যাত্রা।

কেন আপনি আর্যসমাজের মত গ্রহন করবেন ? --

১) আর্য সমাজের প্রধান পথপ্রদর্শক দয়ানন্দ সরস্বতী, তার মতামতই সবচেয়ে যুক্তিপূর্ণ ও সকল ধরনের কুসংস্কারমুক্ত কারন :- তিনি সেটাই বলেছেন যেটা বেদে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, এখানে তিনি নিজের কোন মত যুক্ত করেন নি ৷নিজেকে প্রচলিত ধর্ম গুরু ,ভগবান ,অবতার হিসাবে দাবি করেন নি ।বরং তিনি নিষিদ্ধ করেছেন উনার কোনও ছবির পূজা ,প্রার্থানার বেধীতে বা সামনে কোনও ছবি প্রদর্শন ।তিনি বলেছেন আমি কোনও গুরু বা অবতার নই বরং তোমারা ও আমি উভয় একই সম সাধক ।

২) আর্য সমাজের বৈদিক বিশ্বাস সবচেয়ে সুশৃঙ্খল ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ৷ এটি অত্যন্ত শক্তিশালী বিশ্বাসের ভিতের উপর গঠিত ৷ এখানে বেদ হচ্ছে প্রধান ধর্মগ্রন্থ এবং আদি ১০টি উপনিষদ হল গৌন ধর্মগ্রন্থ ৷ #অর্থাৎ সাধারন ভাবে উভয় গ্রন্থই আমাদের পথ প্রদর্শন করবে,তবে যদি কখনও বেদ ও উপনিষদগুলির মতামতে মধ্যে পার্থক্য দেখা দেয় তবে বেদের মতটিই গৃহিত হবে যা শাস্ত্রে নির্দেশিত ।
" যেসব স্মৃতি ও শাস্ত্র বেদমূলক নয় এবং বেদবিরুদ্ধ, সেগুলো ফলপ্রদান করে না। সেসব অন্ধকারের ন্যায় ইহলোক ও পরলোকে কেবল দুর্গতি প্রদান করে। বেদের বিরুদ্ধ এসব নবীন গ্রন্থসমূহ অচিরেই ধ্বংস হবে।এসব নবীন গ্রন্থ নিষ্ফলা সর্বৈব মিথ্যা "(মনুস্মৃতি ১২/৯৫)
৩) অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন ১০ টি ছাড়া বাকী উপনিষদগুলো কেন আপনি বাদ দিবেন ? এর উত্তর হল এই ১০ টি উপনিষদ যে মূল বা আদি তা সকলের নিকট প্রমানিত অর্থাৎ আচার্য শঙ্করও এই উপনিষদগুলির কথা বর্ণনা করেছেন, কিন্তু অন্য উপনিষদগুলোর এধরনের কোন শক্ত ভিত্তি নেই যা নিজ নিজ সম্পদ্রায়ের ধর্ম গুরু কৃতক স্বীয় সার্থে রচিত ।

৪) আমাদের বেদের বাইরে গিয়ে কোনকিছু জোর করে প্রমানের কিছু নেই বা কাউকেই জোর করে ঈশ্বর প্রমানেরও কিছু নেই ৷ বেদের মানদন্ডে যদি কারও কোন কাজ অন্যায় বলে প্রতিয়মান হয় তবে তাকে অন্যায় বলতে আর্যসমাজ দ্বিধা বোধ করে না ৷ তা সে শ্রীরামচন্দ্র বা শ্রীকৃষ্ণ ,দয়ানন্দ স্বরসতী যে ই হোক না কেন ৷

৫) বেদে কোন দেবদেবীর কথা বলা নেই,বেদের দেবতা বলতে বেদ মন্ত্রের বিষয়বস্তু ও তেত্রিশ প্রকার উপকারী শক্তিকে বোঝানো হয়েছে । এখন আমরা যদি এই কাল্পনিক দেবদেবীদেরকে বেদের বাইরে গিয়ে পুরান বা অন্য কোন কিছু রচনা করে তাকে প্রতিষ্টিত করার চেষ্টা করি তবে সময়ের সাথে সাথে আরও নতুন নতুন দেবদেবীর আবির্ভাব ঘটবে এবং আরও পুরান, উপনিষদ লিখিত হবে ফলশ্রুতিতে হিন্দুদের ধর্ম বিশ্বাস দূর্বল হয়ে যাবে, আমরা বুঝতে পারব না আমাদের ধর্মের আসল বাণী কোনটি ৷ আমরা আরও বিভক্ত হব ৷
উল্লেখ্য যে মধ্যযুগে যখন থেকেই হিন্দুদের মধ্যে কাল্পনিক দেবদেবীর পূজা অর্চনা শুরু হয়েছে তখন থেকেই হিন্দুদের মধ্যকার ঐক্য নষ্ট হয়েছে এবং যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্বেও আমরা বিদেশী শক্তির হাতে বার বার পরাজিত হয়েছি ৷ আমাদের ধর্ম বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম ,শিখ ধর্ম ইত্যাদিতে ভাগ হয়েছে ৷ দেবদেবী প্রথা চলতে থাকলে হিন্দু ধর্মের আরও ভাগ হওয়া অসম্ভব কিছু নয় ৷

৬) বেদ ছাড়া আমরা অন্য ধর্মগ্রন্থকে প্রধান মানার ফল আরও মারাত্মক, পরবর্তী সময় যখন অন্য ধর্মগ্রন্থের অনুসারীগন শক্তিশালী হয় তখন তারা হিন্দু ধর্মের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে যেমন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীগন বর্তমানে আর হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে একীভুত নন ৷ একই রাস্তা ধরেছে আজ বৈষ্ণব ধর্ম iskon এর হাত ধরে ,হরিচাদের মতুয়া ধর্ম ,অনুকূল সৎসঙ্গ আলাদা ধর্ম হিসাবে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় ৷ তাই সময় থাকতেই সাধু সাবধান ৷

৭) তাহলে আপনাদের মনে হতে পারে তবে আমরা কি দূর্গা পূজা সহ অন্যান্য পূজায় অংশ নিতে পারব না, আমাদের শত শত দেব মন্দিরগুলোর কি হবে ? এখানে আমাদের বক্তব্য হল আপনি যে কোন পূজায় অংশ নিতে পারবেন, কিন্তু সেটি আপনি আপনার সংস্কৃতির অংশ হিসেবে নিবেন যেমন পহেলা বৈশাখের মত অনুষ্ঠান হিসেবে নিবেন কিন্তু কোনভাবেই ধর্মের অংশ হিসেবে নিতে পারবেন না, অঞ্চলভেদে এ ধরনের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র থাকতে পারে, আছেও কিন্তু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে নিলে মহা সমস্যা, এতে আমাদের ধর্মীয় আদেশের ঐক্য বিনষ্ট হতে বাধ্য ৷ তাই বলছি একটি rock solid বিশ্বাসের জন্য আমাদের আর্যসমাজের অনুগামী একদিন আপনাকে হতেই হবে ৷
বেদ এ ভিত্তি ,বেদই সর্বোত্তম ,তাই আসুন বেদ ভিত্তিক জীবন যাপনে বেদ এ পরম গতি হোক ।

মহাত্মা গান্ধী (১৯২৬):

 “মহর্ষি দয়ানন্দ সম্বন্ধে আমার বক্তব্য এইরূপ — তিন ভারতের আধুনিক ঋষি, সংস্কারক ও মহাপুরুষদের মধ্যে অন্যতম। তাহার ব্রহ্মচর্য, উদার স্বাতন্ত্র, বিশ্বপ্রেম, কর্ম কুশলতা ইত্যাদি গুণ লোককে মুগ্ধ করিত। তাহার জীবনের প্রভাবে ভারত যথেষ্ট প্রভাবিত। স্বামী দয়ানন্দ ছিলেন একজন উচ্চ শ্রেণীর বিদ্বান ও সমাজ সংস্কারক। মাতৃভূমির প্রয়োজন বোধেই তিনি সংসার পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। আমার নিকট আর্য সমাজ বড়ই প্রিয়। এই সমাজ বুদ্ধির প্রয়োগ দ্বারা কার্য করে এবং দেশের পক্ষে লাভদায়ক।”


Mahatma Gandhi (1933) :

Among the many rich legacies that Swami Dayananda has left to us, is his un-eqivocal pronouncement against untouchability is undoubtedly one. (Yerveda Central Jail) - Dayanandà Commemoration Volume P. I.


শ্ৰীমতী কস্তুরী বাঈ গান্ধী (১৯২৬):

স্বামী দয়ানন্দের জীবনে সত্যানুসন্ধিৎসা দৃষ্ট হয় সুতরাং তিনি শুধুআর্য সমাজের নিকটেই পূজ্য নহেন সমগ্র বিশ্বের নিকটেই।


Rabindranath Tagore (1933):

Ioffer my homage of generation to Swami Dayananda, the great path-maker in modern India, who through bewildering tangles of creeds and practices- the dense undergrowth of the degenerate days of our country - cleared a straight path that was meant to lead to a simple and rational life of devotion to God and service for man. With clear-sighted vision of truth and courage of determination he preached and worked for our self-respect and vigorous awakement of mind that could strive for a harmonious adjustment with the progressive spirit of the modern age and at the same time keep in effect touch with the glorious past of India when it revealed its personality in freedom of thought and action, in an unceouded radiance of spiritual realisaton (Santiniketan).


আচার্য শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র রায় (P.C. Roy):

“আর্য সমাজের সিদ্ধান্ত ও দেশবাসীকে আমি আন্তরিক প্রশংসা করি। বেদ একেশ্বরবাদের সমর্থক। আর্য সমাজ ক্রিয়াত্মকরূপে জাতিবন্ধনকে ছিন্ন করিয়াছে। আমি এই জাতি বন্ধনকে ভারতীয় রাষ্ট্র নির্মাণ কার্যে এক ভীষণ অভিশাপ ও ভয়ানক বাধা মনে করি। আর্য সমাজ “অস্পৃশ্য জাতিকে” প্রীতি ও প্রেমের হস্ত বাড়াইয়াছে এবং তাহাদিগকে সমাজের অন্তর্ভুক্ত করিয়া কালিঙ্গন করিতেছে! আর্য সমাজের নেতাদের কর্মে অনুরাগ আছে এবং এ জন্য তাহারা যথেষ্ট আত্মত্যাগও করিয়াছেন। আর্যসমাজ তাহার কর্ম তালিকার মধ্যে স্ত্রী-শিক্ষাকে এক মহত্বপূর্ণ স্থান দান করিয়াছে। আর্য সমাজ আমাদের মাতৃভূমির উদ্ধারের জন্য বহু কিছুই করিয়াছে, এ জন্য ইহা আমাদের নিকট চিরকৃতজ্ঞতার পাত্র।”


Shri Subhas Chandra Bose (Netaji):

Swami Dayananda Saraswati is certainly is one of the most powerful personalities who have shaped modern India and are responsible for its moral regeneration and religious revival. His Samaj-the Arya samaj is clearly and unquestionsbly one of the most potent factors in rebuilding, reforming and rejuvenating the instiutions of Hindu India" - (Vedic Magazine, December.1922.)


প্রোঃ ম্যাক্সমুলার (Prof. Maxmullar):

“আর্য সমাজের আন্দোলনের পক্ষে আমার পূর্ণ সহানুভূতি আছে। আমি জানি স্বামী দয়ানন্দ সাধু উদ্দেশেই কর্ম করিয়াছেন। স্বামী দয়ানন্দ যে কার্যকরিয়া গিয়াছে তাহাতেই তাহার শিষ্যগণের তৃপ্ত থাকা উচিৎ নয় বরং যে কার্য তিনি অসম্পূর্ণ রাখিয়া গিয়াছে তাহা সমাপ্ত করা উচিৎ। আর্য সমাজের যদি কিছু সেবা করিতে পারি তবে নিজেকে ধন্য মনে করিব।” (Extract from a letter of Maximullar, dated7,7. ISSB toLakshumi Narayan, President, Arya samaj, London),

“ঋগ্বেদ হইতে আরম্ভ করিয়া দয়ানন্দের ঋগ্বেদাদি ভাষ্য ভূমিকা পর্যন্ত সমগ্ৰ সংস্কৃত সাহিত্যকে আমরা দুইভাগে ভাগ করিতে পারি। বৈদিকও বৌদ্ধ সাহিত্যকে প্রথম ভাগের ও অন্যান্য গ্রন্থ দ্বিতীয় ভাগের অন্তর্গত মানি।” – (Page 74, What India can it teach us by Prof, Maxmullar)..


Dr. Sudhindra Bose M.A.,Ph.D.:

Professor in the University of India (U.S.A.) Dayananda Commemoration Volume. 19133.Page 194.

When Swami Dayananda Saraswati began his labours in India, as a religious and social reformer, he met with bitter opposition from the organised Christian Missionary propa-. ganda. The Christian Missonary almost unchecked and unresisted at that the time, threatend the very existence of Hindu life and openly avowed their ditermination to destroy the Hindu Religion. Some of the Christian Zealots even pedicted the utter collapse of Hinduism at no distance date. But Swami Dayananda Saraswati met the challenge of the Christian propagandists and envisaged a brighter future for the Sanatan Dharma. His work has borne abundant fruit."


সি. এফ. এন্ড্রজ, (Rev. C. F. Andrews):

দয়ানন্দের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র সম্বন্ধে আমি বিস্মিত হইয়া যাই। তিনি জিতেন্দ্রিয়, ব্রহ্মচারী, স্বীয় সিদ্ধান্তানুকূল আচরণে দৃঢ়, হৃষ্ট-পুষ্ট, শূর-বীর ও স্বাধীনচেতা ছিলেন। তিনি বড়ই ধৈর্যের সহিত কয়েক বর্ষ ধরিয়া একইভাবে ভারতের বিদ্বানদের প্রতযোগিতা করিয়াছে। তাহার স্বদেশবাসী প্রথমতঃ তাহার মস্তকে নাস্তিকতা আরোপ করিয়াছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন সত্যের উপর অচল,অটল ও দৃঢ়। স্বামী দয়ানন্দ যে সত্যের জন্য নিজেকে বলিদান দিয়াছিলেন আমি তাহা স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষরূপে বুঝিতে পারিতেছি। বাল্যকাল হইতে মরণকাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন তপস্বী।

স্বামীজী যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এত বীরত্বের সঙ্গে প্রচার করিয়াছিলেন এবং যাহার জন্য জীবনকেও বলি দিয়াছিলেন তাহা আর্য সমাজের শক্তি ও জীবন হইতে বিচ্যুত হইবে না। আমি ভূখন্ডের সর্বত্রই আর্য সমাজকে মানবহিতকর কার্য করিতে দেখিয়াছি। গতবর্ষে সর্বাপেক্ষা আনন্দের সংবাদ পাইয়াছি। পূর্বব্রিটিশ আফ্রিকার আর্যসমাজ শুধু বালক-বালিকাদের বিদ্যালয়, মহিলা-আর্যসমাজ, আর্য যুবক সংঘ ও এইরূপ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানই স্থাপন করে নাই, নিগ্রোদের শিক্ষার জন্যেও বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছে। (সংকলকের “দিগ্বিজয়ী দয়ানন্দ” ১৯২৬ হইতে)।


Sir Saiyad Ahmed Khan: ( Founder of the Aligarh University) on the death of Swami Dayananda)-1883

"Swami Dayanada Saraswati was a profound scholar of Sanskrit and critical student of the Vedas. Beside being a  learned scholar he was a man of distinctly noble and spiritual nature. His disciples honoured him like a god. And undoubtedly he deserved that honour. He brought about certain reforms in the Hindu religion. He was vehemently against idol worship and he was triumphat in discussion with Pandits on the contention that there was no idol worship sanctioned by the Vedas. He did not consider it right to worship any other God than the formless One. He also strived to establish that the Vedas do not advocate the worship of elements.

I was very well asquainted with the late Swami Dayananda Saraswati and I always showed great respect to him simply because he was such an excellent and learned man that the beloved men of all religions respected him.

"In my case he was such a great man as has no equal in India. Every one, therefore, should mourns his death and feel sorry that such an unparalleled man has passed away from our midst."


এন্ড ডেভিড জ্যাকসন, আমেরিকা (Andrew David Jackson, America):

“সনাতন আর্যধর্মকে প্রকৃত অবস্থায় ফিরাইয়া আনিতে যে আগ্নি এতদিন অগ্নিকুন্ডে অবস্থিত ছিল তাহাই আর্য সমাজ। এই অগ্নি ভারতের এক পরম যোগী দয়ানন্দ সরস্বতীর হৃদয়ে জ্বলিতেছিল। হিন্দু ও মুসলমান এই অগ্নিকে রোধ করিতে চারিদিক হইতে ছুটিয়া আসিয়াছিল কিন্তু এই অগ্নি এতই তেজের সঙ্গে জ্বলিতে আরম্ভ করিল যে এই অগ্নির উদ্বোধক দয়ানন্দ সরস্বতীও তাহা কল্পনা করিতে পারেন নাই। যাহাদের গির্জা ঘরের অগ্নিও পবিত্র এই এশিয়াতেই প্রথম জ্বলিয়াছিল, সেই খ্রীষ্টানেরাও এশিয়ার এই সদ্য প্রজ্বলিত অগ্নিকে ঠান্ডা করিতে হিন্দু ও মুসলমানের সঙ্গে মিলিত হইয়াছিল। কিন্তু এই ধর্মাগ্নি দ্বিগুণ বেগে জ্বলিয়া উঠিল। এই অগ্নি জগতের সমস্ত রাজ্য, সাম্রাজ্য ও শাসনতন্ত্রকে দুর্নীতিকে ভস্মীভূত করিয়া শুদ্ধ করিবে। আমি ইহা বুঝিতে পারিয়া নৃত্য করিতেছি।”

Romain Rolland ( from his "Life of Ramkrishna):

"The enthusiasic reception accorded to the thunders champion of the Vedas, a Vedist belonging to a great race and penetrated with the sacred writing uf ancient India and with her heroic spirit, is then easily explained. He alone hurled the defiance of India against her invaders. Dayananda decleared war cleft it asunder with scant reference to the scope or exact atitude of his blows.

"Dayananda had no greater regard for the Koran and the Puranas, and trampled underfoot the body of Brahmin orthodoxy. He was ruthless critic of all who, according to him had falsified or profaned the true Vedic religion. He was a Luther fighting against his own misled and misguided Church of Rome, and his first care was to throw-open the wells of the holy books, so that they see and drink for themselves.

He wrote commentories on the Vedas in the vernacular- it was in truth an epoch-making date for India when a Brahmin not only acknowledged that all human beings have the right to know the Vedas, whose study had been previously prohibited by orthodox Brahmins, but insisted that their study and propaganda was the duty of every Arya. | “His creation the Arya samaj, postulates in pricipleequal justice for all men and all nations, togather with equality of the sexes.”



যোগিরাজ শ্রী অরবিন্দ:

বেদভাষ্য সম্বন্ধে আমার পূর্ণ বিশ্বাস-অন্তে যে ভাষ্যই প্রামাণিক বলিয়া স্থিরীকৃত হউক না কেন, স্বামী দয়ানন্দ সর্বাগ্রে পূজা পাইবেন, কারণ বেদ ভাষ্যের প্রকৃত রহস্য তিনিই আবিষ্কার করিয়াছেন। বিশৃঙ্খল, অবিদ্যা, অন্ধকার ও বহু শতাব্দীর ভ্রমজালে জনতা আবদ্ধ ছিল। তাহার দৃষ্টিই ইহা ভেদ করিয়া সত্যকে গ্রহণ করিয়াছিল। রাজা রামমোহন রায় উপনিষদ পর্যন্ত পৌছিয়াই নিবৃত্ত হইয়াছিলেন, আরও অগ্রসর হইয়া অনুভব করিয়াছিলেন যে বেদই আমাদের জ্ঞানের মূল প্রসবণ! ("Dayananda and the Vedas" by Shri Aravinda)


পাঞ্জাব কেশরীলালা লাজপত রায় - স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী আমার গুরু। সংসারে আমি শুধু ইহাকেই গুরু বলিয়া মানিয়াছি। ইনি আমার ধর্মপিতা এবং আর্য সমাজ আমার ধর্ম-মাতা। এই দুইয়ের ক্রোড়েই আমি লালিত পালিত হইয়াছি এবং হৃদয় ও মস্তিষ্ককে গঠন করিয়াছি। আমার বড়ই গর্ব যে আমার গুরু স্বাধীন পুরুষ ছিলেন। তিনিই আমাকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করা, কথা বলা ও কর্তব্য পালন করা শিখাইয়াছে। ইহাও আমার গর্বের বিষয় যে মাতা আমাকে প্রতি কর্মে নিষ্ঠা শিখাইয়াছে। একজন আমাকে স্বাধীনতা দিয়াছেন এবং অন্যে আমাকে নিয়মানুবর্তিতা দান করিয়াছে। স্বামীজী আমাকে দেশপ্রেমের সুমিষ্ট ফলের আস্বাদন দিয়াছে, জাতিসেবার বীজ হৃদয়ে বপন করিয়াছে এবং সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র জাতির সেবার জন্য হৃদয়কে বিশাল ও উদার রাখিবার উপদেশ দিয়াছে।


স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দ সন্ন্যাসী - মহর্ষি দয়ানন্দ ভারতীয় সম্প্রদায়গুলিকে যেমন সামাজিক, আর্থিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়ের সরল পথ দেখাইয়াছিলেন, ঠিক তেমনই রাজনীতি ক্ষেত্রেও নিজেকে অভিজ্ঞ সন্ন্যাসী রূপে পরিচিত করিয়াছিলেন। আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে পৌরাণিক হিন্দু, জৈন ও শিখকে জাগাইয়া মুসলমানদিগকে ও “ফিক ও শির্কের” (উপসম্প্রদায়ের) গর্ত হইতে বাহিরে আসিতে উৎসাহ দিয়াছিলেন।


Pandit BhagavanDas M.A., D.LITT(Beneras):

Swami Dayanada wrote rationalist commentories on the Vedas, with extraordinary learning. From 1863 to 1883, Swami Dayananda wandered incessantly, all over the upper and largerhalf of India, like the Buddha, preaching and holding disputitions with the orthodox Pandit in town, and arousing keen interest and controvresy among the Hindu Public. Swami Dayananda may certain be said to be the first pioneer and principal author of the latest Hindu revival.


Ramananda Chatterjee -

(The Editor, the Modern Review and Acharya Sadharan Brahma Samaj, Calcutta)

"The Swami (Dayananda) wanted to realise the ideal of unifying India Nationaly, socialy and religiously. Tomake Indians one nation, he thought it was necessary to free it from foreign rule. In order to make the people of India socialy one, he wanted to eliminate the differences of caste and class. To make India religiously one, he desired to substitute his Vedic religions prevelent in India. These aims of Swami Dayananda have brone some fruit."


পন্ডিত জহরলাল নেহে( (১৯২৯) কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট:

পূর্ণ স্বাধীনতার আন্দোলনকে বিদেশী সরকার সহ্য করিতে পারিতেছে না – ইহার মধ্যে যুক্তি আছে। কিন্তু ভারতের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিও ইহাকে অসহনীয় মনে করিতেছে, ইহাই বিস্ময়কর ব্যাপার। কানপুর ডি.এ.ভি. কলেজের ছাত্রদের আমন্ত্রণে সেখানে উপস্থিত হইলাম, কলেজের কতৃপক্ষ আমার বক্তৃতার স্থান দিলেন না। অনুরূপভাবে কলিকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্রদের আমন্ত্রণে আসিয়াও কলেজের অনুমতি পাইলাম না। ছাত্রদের প্রার্থনায় কলিকাতা আর্য সমাজের কর্তৃপক্ষ এই পবিত্র মন্দিরে আমার বক্তৃতার স্থান দিয়াছেন। সভায় সভাপতিত্ব করিতেছে উক্ত কলেজেরই অধ্যাপক শ্রীঅমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ। আর্যসমাজের বৈশিষ্ট্য আমার দৃষ্টিতে চির উজ্জ্বল। ইহার প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি দয়ানন্দ ছিলেন ধর্মযোদ্ধা, সমাজ সংস্কারক, রাষ্ট্র নির্মাতা ও নির্ভীক সন্ন্যাসী। তাহার অনুযায়ী আর্য সমাজের মধ্যেও অনুসরণকারী আর্য সমাজীগণের মধ্যে মহর্ষির গুণ আদর্শ ব্যাপকরূপে দৃষ্ট হয়। (কলিকাতা আর্য সমাজের মন্দিরে প্রদত্ত বক্তৃতা হইতে উদ্ধৃত১৯২৯)।


সভাপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ (১৯৩৯):

কলিকাতার আর্য সমাজের আমন্ত্রণে আজ এই পবিত্র মন্দিরে উপস্থিত হইয়াছি। আমি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলাম। ছাত্র জীবনের মধ্যে-মধ্যে এই মন্দিরে আসিতাম। স্বাধীন চিন্তাধারাকে সাহসিকতার সঙ্গে প্রকাশ করার শক্তি একমাত্র আর্য সমাজের মধ্যেই দেখিতে পাই। জাতীয়তা বোধ, দেশভক্তির প্রেরণা, সমাজ-সংস্কারের জন্য ত্যাগ স্বীকার ও পরাধীনতার জ্বালাবোধ আর্য সমাজের মধ্যেই সর্বপ্রথম ব্যাপক ভাবে দৃষ্ট হইয়াছিল। পরাধীন ভারত আর্য সমাজের নিকটেই সর্বপ্রথম স্বাধীনতার প্রেরণা পাইয়াছিল। এই সমাজের প্রতিষ্ঠাতা প্রাতঃস্মরণীয় ত্যাগী সন্ন্যাসী স্বামী দয়ানন্দের পুণ্য স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা অর্পণ করি।(কলিকাতা আর্য সমাজ মন্দিরে প্রদত্ত বক্তৃতার অংশ)।


লালা লাজপতরায় (১৯২০): আমার শরীরের প্রতিরক্তবিন্দু ও মনের প্রতিটি শুভ চিন্তা মহর্ষি দয়ানন্দের প্রভাবে প্রভাবিত। কলিকাতা আর্য সমাজের মন্দিরে প্রবেশ করিতেই মনে হইল নিজের গৃহে ফিরিয়া আসিয়াছি। আজ হইতে প্রায় ৩৫ বৎসর পূর্বে কলিকাতায় কয়েকজন বাঙ্গালী মনীষীর আগ্রহে ও চেষ্টায় আর্য সমাজ স্থাপিত হইয়াছিল। বঙ্গদেশে বেদের আদর্শ স্থাপিত হইবে, বেদের পত্রিকা পতাকা বঙ্গদেশময় সর্বত্র উত্তোলিত হইবে, স্থানে স্থানে বেদের জয়ধ্বনি উখিত হইবে—এই ছিল তাহাদের আশা ও আকাঙ্খ। কিন্তু। দূর্ভাগ্যের বিষয় আজও এই আর্য সমাজে ৩৫ বৎসরে ৩৫ জনও বাঙ্গালী পাওয়া যায় নাই। কারণ অনুসন্ধান করা উচিৎ। মনে রাখিতে হইবে বেদই বঙ্গদেশকে নবজীবন দান করিবে। যাহারা বঙ্গদেশের বাহির হইতে এখানে প্রচার কার্যে আসিয়া থাকেন। তাহাদের বঙ্গদেশ, বঙ্গভাষা ও বঙ্গবাসী—এই তিনের প্রতি সেবার মনেভাব লইয়া প্রচার করিতে হইবে। এই বঙ্গদেশই সর্বপ্রথমে মহর্ষি দয়ানন্দকে চিনিতে পারিয়াছিল। বাঙ্গালী জনসাধারণ আর্য সমাজকে নিজস্ব বলিয়া গ্রহণ করিলে সর্বাঙ্গীন কল্যাণ লাভ হইবে, তাহাতে ভুল নাই। (জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের পরে কলিকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ সভাপতিত্ব করিতে আসিলে কলিকাতা আর্যসমাজ মন্দিরে তাহার স্বাগত সভায় প্রদত্ত বক্তৃতা উদ্ধৃত।)


Sri BipinChandra Pal:

“The Satyatrtha Prakash which contains the teaching of Dayananda, clearly proves his interpretation of the psychology of the Arya samaj. Whatever may be the philosophical value of the teaching and however much these may be discordant with some of the bedrock doctrines and ideals of Hindu Universalism, it can not be denied that the movement of Dayananda Saraswati,as organised in the Arya Samaj, has contributed more than the rational movement of the Raja's (Rammohan Roy's ) Brahmo Samaj to the developement of a new national consciousness in the modern Hindus...." (Memories of my life and times by Bipin Chandra Pal, P. 3450). 50).


শ্ৰীমতী সরোজিনী নাইডু (১৯২২):

“স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী বর্তমান যুগের অন্যতম বিশাল শক্তিকেন্দ্র। তাহার বাণী প্রকৃতই প্রাচীন বৈদিক ধর্মের সত্য সার অংশ। ইহা জাতিকে পুনর্জীবিত করিবে এবং স্বীয় আদর্শ ও সীমার অন্তে পৌছাইয়া দিবে। বর্তমানে ভারতে যদি কিছুর প্রয়োজনীয়তা থাকে তবে তাহা আত্মিক জ্ঞানের পুনরুদ্বোধন। স্বামী দয়ানন্দের ন্যায় দূরদর্শী ও বিচারশীল পুরুষই ভারতবর্ষের সংস্কারের পথ খুলিয়া দিতে পারেন এবং ইহাকে উন্নতির উচ্চ শিখরে লইতে পারেন।” (An extract from Srimati Sarojini Naidu's letter dated 20.9.22 to Dr.Chandravarkar of Hydrabad).


ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়(১৯২২):

(২১-২২শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৪৪ সনে নিখিল ভারত আর্য-মহাসম্মেলন, দিল্লী পঞ্চম অধিবেশনে সভাপতিরূপে ভাষণ) “ভারতবর্ষে ইংরেজদের প্রভুত্ব ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার হওয়ায় আর্য সমাজের বিস্তার ও কার্য -

ভারতে ও বহির্ভারতে ৪ হাজারের উপরে আর্য সমাজ আছে। তন্মধ্যে ৩ হাজার ভারতে। প্রান্তীয় আর্য প্রতিনিধি সভা ও বিশেষ বিশেষ জেলার উপ-প্রতিনিধি সভার সংখ্যা প্রায় ২ শত। ভারত, নেপাল আফ্রিকা, ট্রিনীডাড, ফিজী, আদি স্থানে আর্যবীর দলের শাখা ৪ শত। আর্যকুমার সভা ও আর্যযুবক সভার সংখ্যা প্রায় ২ শত।

আর্য সমাজ পক্ষ হইতে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কার্য করিতেছে, তন্মধ্যে ৩শতের অধিক ডিগ্রী কলেজ ও হাইস্কুল। বালক ও বালিকাদের পৃথক পৃথক্‌ গুরুকুল ও সংস্কৃত পাঠশালার সংখ্যা ৬০। দলিত জাতির বালক-বালিকাদের জন্য পাঠশালা ৪ শতের অধিক। টেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউটের সংখ্যা ১২ হইতে অধিক।

অনাথালয়ের সংখ্যা ২ শতের উপরে। অতিথি-ভবনের সংখ্যা ৫ শত প্রায়। ব্যায়ামশালা প্রায় প্রতি আর্য সমাজের সঙ্গেই আছে।

আর্য সমাজের প্রচারক ও উপদেশকের সংখ্যা এক হাজারের উপরে। আর্য সমাজভুক্ত নরনারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি। ৫ শতের উপর প্রেস, পত্রিকা, পুস্তকালয় ও পাঠাগার আছে।

আর্য সমাজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হইতে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা গ্রহণ করিতেছে। ঐ সব প্রতিষ্ঠানে প্রতি বৎসর এক কোটি টাকারও অধিক ব্যয় হয়।-(ভক্তি দর্পণ হইতে)।

আর্য সমাজের রিলীফ ও কার্য – আর্য সমাজ রিলীফ কার্যে অর্থাৎ বন্যা-ভূমিকম্প-দুর্ভিক্ষ হইতে দেশবাসীকে রক্ষা করিবার কার্যে ১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দ হইতে অগ্রসর হইয়াছে। পাঞ্জাব, রাজপুতানা, মধ্যপ্রদেশ, বোম্বাই, গুজরাটে, বঙ্গদেশে ও আসামে আর্য সমাজের রিলীফ বা ত্রাণ সমিতির কার্য অত্যন্ত প্রশংসাজনক।

আর্য সমাজের শুদ্ধি কার্য — আর্য সমাজের স্থাপনের পূর্ব হইতেই সর্বপ্রথম মহর্ষি দয়ানন্দ এইরূপে শুদ্ধি কার্য আরম্ভ করিয়াছে। স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দের পুরুষার্থের বলে আর্য সমাজের বাহিরেও বিভিন্ন হিন্দু প্রষ্ঠিানের মধ্যে ইহা বিস্তার লাভ করিয়াছে। সর্ব প্রদেশেই শুদ্ধি কার্যের জন্য প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হইয়াছে। যে কোনও অহিন্দু নরনারী স্বেচ্ছায় বৈধরূপে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করিতে পারে। লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি হিন্দু সমাজের ক্রোড়ে স্থান পাইয়াছে।

Dayananda Saraswati wrote more than 60 works in all, including a 16 volume explanation of the six Vedangas, an incomplete commentary on the Ashtadhyayi (Panini's grammar), several small tracts on ethics and morality, Vedic rituals and sacraments, and a piece on the analysis of rival doctrines (such as Advaita Vedanta, Islam and Christianity). Some of his major works include the Satyarth Prakash, Satyarth Bhumika, Sanskarvidhi, Rigvedadi Bhashya Bhumika, Rigved Bhashyam (up to 7/61/2)and Yajurved Bhashyam. The Paropakarini Sabha located in the Indian city of Ajmer was founded by Saraswati to publish and preach his works and Vedic texts. He was also a socio religious reformer lived in 19th century.(India)

Complete list of works


অনেক সম্প্রদায়ের ব্যক্তি বিশেষের মনে প্রশ্নের উদয় হয় স্বামী দায়নন্দ সরস্বতী কে "মহর্ষি" বলা হয় কেন ?

আমরা যদি ঋষি ও মহর্ষি কাহাদের বলা হয় জানি তহলে উত্তর সহজে পেয়ে যাবো। তাহলে দেখাযাক ঋষি মহর্ষি কাদের বলা হয়।

যেইসব মুনি তপস্যাবলে বেদের মন্ত্র প্রকাশ করতে পারতেন, তাদের বলা হতো #ঋষি । সুতরাং এখান থেকে এটি অবশ্যই বোঝা যায় যে, সব ঋষিই মুনি কিন্তু সকল #মুনি ঋষি নয় । মুনির স্থান অতিক্রম করেই ঋষির স্থানে অধিষ্ঠিত হতে হয় । এজন্য ঋষিরা ছিলেন মুনিদের থেকে উচ্চস্তরের । এখানে কয়েকজন ঋষির নাম উল্লেখ করছি : গার্গী, লোপামুদ্রা, কশ্যপ, বশিষ্ট, বিশ্বামিত্র, গৌতম, কণ্ব, বিশ্ববালা প্রভৃতি ৷

স্বামী বিবেকানন্দ জী মাদুরা অভিনন্দনে প্রশ্ন উত্তরে বলেন তিনিই ঋষি, যিনি ধর্ম্মকে সাক্ষাৎকার করেছেন-যাঁহার কাছে ধর্ম্ম কেবল পুঁথিগত বিদ্যা, বাগবিতণ্ডা বা তর্কযুক্তি নয়-সাক্ষাৎ উলব্ধি- অতীন্দ্রিয় সত্যের সাক্ষাৎকার। উপনিষদ্ বলেছেন, এরূপ ব্যক্তি সাধারণ মানবতুল্য নয়-তিনি মন্ত্রদ্রষ্টা-এটাই ঋষিত্ব। [ভারতে বিবেকানন্দ, মাদুরা অভিনন্দনের উত্তর পৃঃ১১৯] সেই মত যদি বিচার করনে দয়ানন্দ জী কে অবশ্যয় মহর্ষি বলা চলে।

ঋষিদের সাতটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে । যথা : ব্রহ্মর্ষি, মহর্ষি, দেবর্ষি, কান্ডর্ষি, রাজর্ষি, পরমর্ষি ও শ্রুতর্ষি ।

#ব্রহ্মর্ষি

ব্রহ্ম বা ঈশ্বর সম্পর্কে যেসব ঋষিদের বিশেষ জ্ঞান ছিল, তাদের বলা হতো ব্রহ্মর্ষি । যেমন : বশিষ্ট ।

#মহর্ষি

ঋষিদের মধ্যে যারা মহান ও প্রধান ছিলেন তাদের বলা হতো মহর্ষি = মহা + ঋষি । যেমন : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস

#দেবর্ষি

দেবতা হয়েও যারা ঋষি ছিলেন তাদের বলা হতো দেবর্ষী = দেবতা + ঋষি । যেমন : নারদ ।

#কান্ডর্ষি

বেদের রয়েছে দুইটি কান্ড (জ্ঞানকান্ড ও কর্মকান্ড) এর মধ্যে যে কোন একটির বিষয়ে যাদের বিশেষ জ্ঞান ছিল তাদের বলা হতো কান্ডর্ষি । যেমন : জৈমিনি ।

#রাজর্ষি

রাজা হয়েও যিনি ঋষি বা ঋষির মতো আচরন করেন তাকে বলা হতো রাজর্ষি । যেমন : রাজা জনক (মাতা সীতার পিতা)

#পরমর্ষি

পরমব্রহ্ম বা ঈশ্বরকে যিনি দর্শন করেছেন তাকে বলা হতো পরমর্ষি । যেমন : পৈল ।

#শ্রুতর্ষি

যেসব ঋষিগণ শুনে শুনে বেদ মন্ত্র লাভ করেছিলেন তাদের বলা হতো শ্রুতর্ষি । যেমন : সুশ্রুত (বিশ্বামিত্রের পুত্র এবং বিশ্ব বিদিত চিকিৎসাশাস্ত্র সুশ্রুতসংহিতা রচনাকারী) ।

নিম্নে কতিপয় মুনি-ঋষিদের নাম উল্লেখ করা হলো :

মনু, ভৃগু, বশিষ্ট, বামদেব, বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ, কণ্ব, অঙ্গিরা, পাতঞ্জল, যাজ্ঞবল্ক্য, কষ্কীবান, শুনঃশেপ, কুৎস, পুরুকুৎস, ত্রসদস্যু, ভৌম, ত্রবজামরুৎ, বৈশম্পায়ন, অথর্বা, দধীচি, কৃষ্ণ, আপ্তত্রিত, গৃৎসমদ, রাতহব্য, গৌতম, চ্যবন, অগস্ত,......

পৌর, শ্রুতবিদ, মধুচ্ছদা, জেতৃ, মেধাতিথি, অর্চনানা, অজীগর্ত্ত, হিরণ্যস্তুপ, ঘোর, যজত, প্রস্বম্ব, সব্য, নোধা, শক্তি, পরাশর, সপ্তবধ্রি, রহুগণ, দীর্ঘতমা, দিবোদাস, পুরুচ্ছেদ, উচথ্য, উরুচক্রি, সোমাহুতি, উৎকীল, বাহুবৃক্ত, কুশিক, গাধী, ইষীরখ, বুধ, গবিষ্টি, বসুশ্রুত, ইষ, গয়, সুতম্ভর, সত্যশ্রবা, ধরুণ, মৃক্তবাহ, দ্বিত, বব্রি

ओ३म् शम्





No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ