“দুনিয়া বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে। এমন হতে পারে নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর জন্য কখনো হস্তক্ষেপ করেন না”✍️স্টিফেন উইলিয়াম হকিং
বইটির মাধ্যমে ডারউইন বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের সাথে "প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন" তত্ত্বের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এতে একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে সকল প্রজাতির উদ্ভবের পক্ষে প্রচুর প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। ডারউইন ১৮৩০-এর দশকে বিগ্ল জাহাজে করে বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যমে অর্জিত সকল অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন জীব প্রজাতির নমুনা এবং পরবর্তী গবেষণা, অন্যদের সাথে যোগাযোগ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সকল ফলাফল এই বইয়ে একত্র করেন।
বিবর্তন বলতে জীবজগতের উন্নতি বোঝায় না; বিবর্তন হচ্ছে পরিবর্তন, সাধারণ পরিবর্তন নয়, ডারউইনের ভাষ্যমতে এটি “পরিবর্তন সংবলিত উদ্ভব” (descent with modification)। এই পরিবর্তন ইতিবাচক, নেতিবাচক কিংবা নিরপেক্ষ হতে পারে। এটি নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা পরিবেশের উপর। তবে সাধারণত বিবর্তনকে জীবজগতের উন্নয়ন বলে মনে হয়, কেননা হিতকর বা কোন একটি জীবকে বাড়তি সুবিধা প্রদানকারী বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে কম হিতকর বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে অধিক পরিমাণে দেখা যায়। অর্থাৎ হিতকর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সদস্যগুলোর সংখ্যা কম সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সদস্যদের তুলনায় সবসময়ই বেশি থাকে।
বিবর্তনের কোন সুনির্দিষ্ট্য লক্ষ্য নেই। ‘বিপরীতমুখীন’ কিংবা ‘পশ্চাৎ বিবর্তন’ (backward evolution or de-evolution) বলেও কোন জিনিস নেই; একইভাবে নেই ‘সম্মুখ বিবর্তন’-এর মত কোন জিনিসও। অর্থাৎ বিবর্তন কোন নির্দিষ্ট দিকে চালিত হয় না। এমনকি প্রাকৃতিক নির্বাচনও সবসময় জীবজগতকে উন্নত করে না। কেননা কোন একটা পরিবেশের সাপেক্ষে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে একটা জীবগোষ্ঠী ঐ পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয় ঠিকই, কিন্তু ভিন্ন পরিবেশে সেই অভিযোজিত বৈশিষ্ট্যগুলোই আবার ঐ জীবগোষ্ঠীর অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিবর্তন কোন তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়া নয়। বিবর্তন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলমান প্রক্রিয়া। এটি একটি অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়া। একটি দৃশ্যমান বা চোখে পড়ার মত বড় ধরনের পরিবর্তনের জন্য সাধারণত লক্ষ লক্ষ বছর লেগে যায়। একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হওয়ার জন্য একটি জীবগোষ্ঠীকে হাজার হাজার অন্তর্বতী অবস্থা (transitional forms) পার করতে হয়।
সর্বোপরি, বিবর্তন সরাসরিভাবে একটি পর্যবেক্ষণলব্ধ ঘটনা। যদিও বিবর্তনের ফলে জীবের অভিযোজন ঘটে, তবুও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিবর্তন সুনির্দিষ্টভাবে উপকারী হয় না। বিবর্তনের ফলে জীবজগতের নাটকীয় পরিবর্তন সাধিত হয় সত্যি, কিন্তু একটা ক্ষুদ্র কালখণ্ডের সাপেক্ষে এই পরিবর্তন খুবই ধর্তব্য নয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটেনের চার্লস রবার্ট ডারউইন একটি তত্ত্ব খাড়া করেন বিশ্বের সামনে যা তাঁর সফরের পর্যবেক্ষণের ওপর ছিল প্রতিষ্ঠিত। তিনি দাবি করেন, তাঁর সফরকালীন সময়ে বনজঙ্গল ও সমুদ্রে তিনি যেসব পর্যবেক্ষণ করেন সেসব থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে তিনি এক নতুন ভিশন ও বিভিন্ন নতুন বিষয় লক্ষ্য করেন। তিনি বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু স্বাভাবিক ও প্রকৃতিগতভাবেই বিবর্তিত ও উন্নীত হয়েছে। বস্তু ও প্রাণী সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে তার প্রকৃতি বদলে ফেলছে আপনাআপনিই। জলে, স্থলে, সমুদ্র ও জঙ্গলে যেসব বড় বড় প্রাণী আজকাল দেখতে পাওয়া যায় সেসব আগে ছিল অন্যরকম। বুকে ভর করে চলা প্রাণী হাজার হাজার বছরে চতুষ্পদ প্রাণীতে উন্নীত হয়। আবার চতুষ্পদ প্রাণী দ্বিপায়ী প্রাণীতে উন্নীত হয় বহু বছর পরে। এর আগে জলের প্রাণী স্থলে আসলে তার প্রকৃতি বদলে যায়। এই ছিল ডারউইনের তত্ত্ব।
কিন্তু ডারউইনের কাছে তার তত্ত্বের স্বপক্ষে তেমন বৈজ্ঞানিক যুক্তি ছিল না। বস্তুর প্রকৃতি, এর রাসায়নিক প্রক্রিয়া, সচল প্রাণীর সৃষ্টি প্রক্রিয়া, এদের উপাদান সমূহের বিন্যাস, এদের দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ইত্যাদি বিষয়ে গভীর পরীক্ষা-নীরিক্ষা তিনি করেননি। কেবল বাহ্যিক গঠন ও এর সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে তিনি অনুমানের ঘোড়া দৌড়িয়েছেন।
বিবর্তনের স্বপক্ষে প্রামাণ্য তথ্য-বিশ্লেষণ
বিবর্তনের পক্ষে সাক্ষ্যপ্রমাণ অফুরন্ত বলে মনে করা হয়। বিবর্তন বা জৈব অভিব্যক্তির পক্ষে যে সমস্ত সাক্ষ্য হাজির করা যায় তা হলো : প্রাণ রাসায়নিক প্রমাণ, কোষবিদ্যা বিষয়ক প্রমাণ, শরীরবৃত্তীয় প্রমাণ, জীবাশ্ম বা ফসিলের প্রমাণ, সংযোগকারী জীবের (connecting link) প্রমাণ, ভৌগোলিক বিস্তারের (Geographical distribution) প্রমাণ, তুলনামূলক অঙ্গসংস্থানের প্রমাণ, শ্রেনীকরণ সংক্রান্ত প্রমাণ, নিষ্ক্রিয় বা বিলুপ্তপ্রায় অঙ্গের প্রমাণ ইত্যাদি। এ ছাড়া তবে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে বিবর্তনের সপক্ষে সবচেয়ে জোরালো এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া গেছে ‘আণবিক জীববিদ্যা’ (molecular biology) এবং সাইটোজেনেটিক্স (cytogenetics) থেকে। আধুনিক জীববিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ববিজ্ঞান, জেনেটিক্স, জিনোমিক্স এবং আণবিক জীববিদ্যার সকল শাখাতেই বিবর্তনের পক্ষে জোরালো প্রমাণ পাওয়া গেছে। গুটিকয় প্রধান সাক্ষ্য উল্লেখ করা যেতে পারে –
সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতি উদ্ভূত হলে প্রজাতিগুলোর মধ্যে একটা সম্পর্ক থাকবে, এ সমস্ত কিছুকে জাতিজনি বৃক্ষ (Phylogenetic tree) আকারে সাজানো যাবে। সেটাই দৃশ্যমান
জীবজগত রেপ্লিকেশন, হেরিটাবিলিটি, ক্যাটালাইসিস এবং মেটাবলিজম নামক সার্বজনীন মৌলিক প্রক্রিয়ার অধীন, যা জীবন প্রক্রিয়ার এক অভিন্ন উৎসের দিকে অঙ্গুলি-নির্দেশ করে।
বিবর্তন তত্ত্ব থেকে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত টানা হয় তা প্রত্নতত্ত্ব, জৈব রসায়ন, আণবিক জীববিদ্যা, কোষ বংশবিদ্যা কিংবা জেনেটিক ট্রেইটের থেকে পাওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সাথে মিলে যায়।
প্রাণীর ফসিলগুলো এই জাতিজনি বৃক্ষের ঠিক ঠিক জায়গায় খাপ খেয়ে যাচ্ছে। ট্রাঞ্জিশনাল ফসিল বা ‘মিসিং লিঙ্ক’ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বহু ।
বহু প্রাণীর মধ্যে অসম্পূর্ণ ডানা, চোখ কিংবা অ্যাপেন্ডিক্সের মত নিষ্ক্রিয় অঙ্গাদির অস্তিত্ব রয়েছে।
তিমির পেছনের পা, ডলফিনের পেছনের ফিন, ঘোড়ার অতিরিক্ত আঙ্গুল বিশিষ্ট পা কিংবা লেজবিশিষ্ট মানব শিশু প্রকৃতিতে মাঝে মধ্যেই জন্ম নিতে দেখা যায়। এটা বিবর্তনের কারণেই ঘটে। কারণ কোন অঙ্গ লুপ্ত হয়ে গেলেও জনপুঞ্জের জীনে ফেনোটাইপ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ডিএনএ সেই তথ্য সংরক্ষণ করে। তার পুনঃপ্রকাশ ঘটতে পারে বিরল কিছু ক্ষেত্রে। ব্যপারটিকে বিবর্তনের পরিভাষায় আতাভিজম বলে ।
কোলাকান্থ, প্লাটিপাস, রাজকাঁকড়া, অ্যালিগেটর, অপোসাম এবং লাংফিশের মতো জীবন্ত ফসিল বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন।
জীবজগতে প্রজাতির বিন্যাস বিবর্তনের ইতিহাসের ক্রমধারার সাথে সঙ্গতি বিধান করে। বিচ্ছিন্ন অন্তরিত দ্বীপে এমন সমস্ত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রাণী পাওয়া যাচ্ছে যা মূল ভূখণ্ডে অনুপস্থিত, যা বিবর্তনের প্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বিবর্তন তত্ত্ব অনুয়াযী পুর্ব বিকশিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকেই নতুন অঙ্গের কাঠামো তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হয়। বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর সামনের হাত বা অগ্রপদের মধ্যে তাই লক্ষ্যনীয় মিল দেখা যায়। ব্যাঙ, কুমীর, পাখি, বাদুর, ঘোড়া, গরু, তিমি মাছ এবং মানুষের অগ্রপদের অস্থির গঠন প্রায় একই রকম।
একই ব্যাপার খাটে আণবিক স্তরেও। তাই ফ্রুটফ্লাই আর মানুষের মধ্যে বাহ্যিক পার্থক্য যতই থাকুক না কেন, এরা শতকরা সত্তুরভাগেরও বেশি ‘কমন জিন‘ শেয়ার করে। আর যে পূর্বপূরুষের সাথে কাছাকাছি সময়ে কোন প্রজাতি বিচ্ছিন্ন হয়েছে, তাদের জিনগত নৈকট্যও তত বেশি থাকে। সেজন্যই মানুষের সাথে ওরাং ওটাং -এর ডিএনএ অণুর বেইস জোড়ের মধ্যে পার্থক্য মাত্র ২.৪%, গরিলার সাথে ১.৪%, আর শিম্পাঞ্জীর সাথে মাত্র ১.২%। বিবর্তন তত্ত্ব সঠিক না হলে এই ব্যাপারটি কখনোই ঘটতো না।
স্বতন্ত্র ভাবে কিংবা সমান্তরাল পথে ঘটা বিবর্তনও পরীক্ষিত। যেমন, পাখি, বাদুর কিংবা পতঙ্গের পাখা উড়তে সহায়তা করলেও এদের গঠন এবং উদ্ভব ভিন্নভাবে হয়েছে ।
লেন্সকির পরীক্ষা সহ বহু পরীক্ষায় প্রজাতি গঠনের বিভিন্ন উদাহরণ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে।
আধুনিক বিজ্ঞানের কোন শাখা থেকে পাওয়া তথ্য বিবর্তনের বিপক্ষে যাচ্ছে না।
বিবর্তন বা অভিব্যক্তি হলো এমন একটি জীববৈজ্ঞানিক ধারণা যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জীবের গাঠনিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ক্রমপরির্তনকে বুঝায়। কোনো জীবের বংশধরদের মাঝে যে জিনরাশি ছড়িয়ে পড়ে তারাই বংশপ্রবাহে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে। জিনের পরিব্যক্তির মাধ্যমে জীবের নির্দিষ্ট কোনো বংশধরে নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হতে পারে বা পুরনো বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটতে পারে। যদিও একটি প্রজন্মে জীবের বৈশিষ্ট্যের যে পরিবর্তন সাধিত হয়, তা খুবই সামান্য। কিন্তু কালক্রমে জীবগোষ্ঠীতে সেই পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য হয়ে দেখা দেয় এবং এমনকি একসময় তা নতুন প্রজাতির উদ্ভবেরও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।[১] বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যকার দৃশ্যমান বিভিন্ন অঙ্গসাংস্থানিক ও জিনগত সাদৃশ্যগুলো একটা ধারণা দেয় যে আমাদের পরিচিত সকল প্রজাতির প্রাণীই এক ধারাক্রমিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি "সাধারণ পূর্বপুরুষ" থেকে ধীরে ধীরে উৎপত্তি লাভ করেছে।[২]
বিবর্তনের ভিত্তি হচ্ছে বংশপরম্পরায় জিনের সঞ্চারণ। যা একটি জীবের বংশগতভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য দায়ী, তা-ই জিন। এই জিনগুলোর বিভিন্নতার কারণে একটি জীবগোষ্ঠীর বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে বংশগত বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য বা প্রকরণ সৃষ্টি হয়। বিবর্তন মূলত দুটি বিপরীত নিয়ামকের ফল : একটি প্রক্রিয়ায় ক্রমাগতভাবে নতুন প্রকরণ সৃষ্টি হয়, আর অন্যটির প্রভাবে এই প্রকরণগুলোর কোনো কোনোটির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং কোনো কোনোটির সংখ্যা হ্রাস পায়। নতুন প্রকরণ উৎপন্ন হয় দুটি প্রধান উপায়ে : ১. জিনগত মিউটেশন বা পরিব্যপ্তির মাধ্যমে এবং ২. বিভিন্ন জীবগোষ্ঠী বা প্রজাতির মধ্যে জিনের স্থানান্তরের মাধ্যমে। "জিনেটিক রিকম্বিনেশনের" মাধ্যমেও নতুন বৈশিষ্ট্যসূচক জিন তৈরি হয় যা জীবগোষ্ঠীর মধ্যকার প্রকরণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
দুটি প্রধান মেকানিজম বা করণকৌশল নির্ধারণ করে কোন একটি ভ্যারিয়্যান্টের সংখ্যা বাড়বে কী কমবে। একটি হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন, যে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে একদিকে একটি জীবগোষ্ঠীর অস্তিত্বের অনুকূল বৈশিষ্ট্যের (যে বৈশিষ্ট্যগুলো কোনো একটি জীবের অধিককাল ধরে বেঁচে থাকা এবং সন্তান উৎপাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে) অধিকারী সদস্য বা মভ্যারিয়্যান্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও কালক্রমে তা ঐ জীবগোষ্ঠীর কমন বা সাধারণ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয় এবং অন্যদিকে ক্ষতিকর বা কম সুবিধাদায়ক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভ্যারিয়্যান্টদের সংখ্যা হ্রাস করে, ফলে সেই ভ্যারিয়্যান্টগুলো ধীরে ধীরে বিরল হয়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাপেক্ষে সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সদস্যগুলো অধিককাল বেঁচে থাকে এবং অধিক সংখ্যক সন্তান জন্ম দিতে পারে। ফলে বংশপরম্পরায় সেই বৈশিষ্ট্যগুলো বংশগতভাবে পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে বেশি পরিমাণে সঞ্চারিত হয়।[২][৩] প্রজন্মান্তরে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ছোট ছোট র্যান্ডম বা দৈব পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্যগুলো ক্রমান্বয়ে জীবগোষ্ঠীতে প্রকট হয়ে দেখা দেয় এবং এভাবে সেই জীবগোষ্ঠী তার পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়।[৪] বিবর্তনের আরেকটি প্রধান করণকৌশল হচ্ছে "জেনেটিক ড্রিফট", যে স্বাধীন পদ্ধতিতে গোষ্ঠীস্থিত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতির হার বা ফ্রিকোয়েন্সি অব ট্রেইটস দৈবাৎ পরিবর্তিত হয়।
বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে বিবর্তন সংঘটিত হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিবর্তনকে ব্যাখ্যাকারী তত্ত্বগুলোকে তারা যাচাই করে দেখেছেন, এগুলোর উন্নয়ন সাধন করেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের গবেষণা শুরু হয়েছিল যখন ফসিল রেকর্ড আর প্রাণীবৈচিত্র্যের ভিত্তিতে অধিকাংশ বিজ্ঞানীই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে, সময়ের সাথে সাথে জীব প্রজাতি ক্রমশ পরিবর্তিত হয়েছে।[৫][৬] তবে বিবর্তন সংঘটিত হওয়ার প্রক্রিয়াটি অস্পষ্ট বা বলতে গেলে অজানাই রয়ে যায় যতদিন না চার্লস ডারউইন ও আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস পৃথক পৃথকভাবে তাদের প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব উপস্থাপন করলেন। ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত আলোড়ন সৃষ্টিকারী বই অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিস-এর মাধ্যমে ডারউইন যখন প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব প্রচার করলেন, তখনই তা বৈজ্ঞানিক মহলে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং সর্বসাধারণ কর্তৃক সমাদৃত হয়।[৭][৮][৯][১০][১১] তারও অনেক পরে, ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ডারউইনীয় প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের সাথে মেন্ডেলীয় বংশগতিবিদ্যার মেলবন্ধনে প্রতিষ্ঠিত হয় বিবর্তনের আধুনিক সংশ্লেষণী তত্ত্ব বা মডার্ন এভুলিউশনারি সিনথেসিস, যা প্রাকৃতিক নির্বাচন ও মেন্ডেলীয় জেনেটিক্সের সাহায্যে সমন্বিতভাবে বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করে।[১২] এই শক্তিশালী ও ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম তত্ত্বটি বা প্রেডিক্টিভ থিওরি আজ আধুনিক জীববিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় মূলতত্ত্বে পরিণত হয়েছে; প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই পৃথিবীতে প্রাণিবৈচিত্র্যের একমাত্র বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যারূপে।[৯][১০][১১] সে জন্যই জীববিজ্ঞানী এবং বংশগতিবিদ, কলম্বিয়া এবং রকফেলার ইউনিভার্সিটি ও ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক থিওডসিয়াস ডবঝানস্কি উল্লেখ করেছেন,[১৩] "বিবর্তনের আলোকে না দেখলে জীববিজ্ঞানের কোনো কিছুরই আর অর্থ থাকে না।"
বিবর্তনের পক্ষে সাক্ষ্যপ্রমাণ অফুরন্ত বলে মনে করা হয়। বিবর্তন বা জৈব অভিব্যক্তির পক্ষে যে সমস্ত সাক্ষ্য হাজির করা যায় তা হলো : প্রাণ রাসায়নিক প্রমাণ, কোষবিদ্যা বিষয়ক প্রমাণ, শরীরবৃত্তীয় প্রমাণ, জীবাশ্ম বা ফসিলের প্রমাণ, সংযোগকারী জীবের (connecting link) প্রমাণ, ভৌগোলিক বিস্তারের (Geographical distribution) প্রমাণ, তুলনামূলক অঙ্গসংস্থানের প্রমাণ, শ্রেনীকরণ সংক্রান্ত প্রমাণ, নিষ্ক্রিয় বা বিলুপ্তপ্রায় অঙ্গের প্রমাণ ইত্যাদি।[৩৭]। এ ছাড়া তবে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে বিবর্তনের সপক্ষে সবচেয়ে জোরালো এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া গেছে ‘আণবিক জীববিদ্যা’ (molecular biology) এবং সাইটোজেনেটিক্স (cytogenetics) থেকে। আধুনিক জীববিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ববিজ্ঞান, জেনেটিক্স, জিনোমিক্স এবং আণবিক জীববিদ্যার সকল শাখাতেই বিবর্তনের পক্ষে জোরালো প্রমাণ পাওয়া গেছে।[৩৮]। গুটিকয় প্রধান সাক্ষ্য উল্লেখ করা যেতে পারে -
সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতি উদ্ভূত হলে প্রজাতিগুলোর মধ্যে একটা সম্পর্ক থাকবে, এ সমস্ত কিছুকে জাতিজনি বৃক্ষ (Phylogenetic tree) আকারে সাজানো যাবে। সেটাই দৃশ্যমান
জীবজগত রেপ্লিকেশন, হেরিটাবিলিটি, ক্যাটালাইসিস এবং মেটাবলিজম নামক সার্বজনীন মৌলিক প্রক্রিয়ার অধীন, যা জীবন প্রক্রিয়ার এক অভিন্ন উৎসের দিকে অঙ্গুলি-নির্দেশ করে।
বিবর্তন তত্ত্ব থেকে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত টানা হয় তা প্রত্নতত্ত্ব, জৈব রসায়ন, আণবিক জীববিদ্যা, কোষ বংশবিদ্যা কিংবা জেনেটিক ট্রেইটের থেকে পাওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সাথে মিলে যায়।
প্রাণীর ফসিলগুলো এই জাতিজনি বৃক্ষের ঠিক ঠিক জায়গায় খাপ খেয়ে যাচ্ছে। ট্রাঞ্জিশনাল ফসিল বা ‘মিসিং লিঙ্ক’ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বহু ।[৩৯]।
তিমির পেছনের পা, ডলফিনের পেছনের ফিন, ঘোড়ার অতিরিক্ত আঙ্গুল বিশিষ্ট পা কিংবা লেজবিশিষ্ট মানব শিশু প্রকৃতিতে মাঝে মধ্যেই জন্ম নিতে দেখা যায়। এটা বিবর্তনের কারণেই ঘটে। কারণ কোন অঙ্গ লুপ্ত হয়ে গেলেও জনপুঞ্জের জীনে ফেনোটাইপ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ডিএনএ সেই তথ্য সংরক্ষণ করে। তার পুনঃপ্রকাশ ঘটতে পারে বিরল কিছু ক্ষেত্রে। ব্যপারটিকে বিবর্তনের পরিভাষায় আতাভিজম বলে ।
জীবজগতে প্রজাতির বিন্যাস বিবর্তনের ইতিহাসের ক্রমধারার সাথে সঙ্গতি বিধান করে। বিচ্ছিন্ন অন্তরিত দ্বীপে এমন সমস্ত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রাণী পাওয়া যাচ্ছে যা মূল ভূখণ্ডে অনুপস্থিত, যা বিবর্তনের প্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বিবর্তন তত্ত্ব অনুয়াযী পুর্ব বিকশিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকেই নতুন অঙ্গের কাঠামো তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হয়। বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর সামনের হাত বা অগ্রপদের মধ্যে তাই লক্ষ্যনীয় মিল দেখা যায়। ব্যাঙ, কুমীর, পাখি, বাদুর, ঘোড়া, গরু, তিমি মাছ এবং মানুষের অগ্রপদের অস্থির গঠন প্রায় একই রকম।[৪০],[৪১] ।
একই ব্যাপার খাটে আণবিক স্তরেও। তাই ফ্রুটফ্লাই আর মানুষের মধ্যে বাহ্যিক পার্থক্য যতই থাকুক না কেন, এরা শতকরা সত্তুরভাগেরও বেশি ‘কমন জিন‘ শেয়ার করে। আর যে পূর্বপূরুষের সাথে কাছাকাছি সময়ে কোন প্রজাতি বিচ্ছিন্ন হয়েছে, তাদের জিনগত নৈকট্যও তত বেশি থাকে। সেজন্যই মানুষের সাথে ওরাং ওটাং -এর ডিএনএ অণুর বেইস জোড়ের মধ্যে পার্থক্য মাত্র ২.৪%, গরিলার সাথে ১.৪%, আর শিম্পাঞ্জীর সাথে মাত্র ১.২%। বিবর্তন তত্ত্ব সঠিক না হলে এই ব্যাপারটি কখনোই ঘটতো না।
স্বতন্ত্র ভাবে কিংবা সমান্তরাল পথে ঘটা বিবর্তনও পরীক্ষিত। যেমন, পাখি, বাদুর কিংবা পতঙ্গের পাখা উড়তে সহায়তা করলেও এদের গঠন এবং উদ্ভব ভিন্নভাবে হয়েছে ।
লেন্সকির পরীক্ষা সহ বহু পরীক্ষায় প্রজাতি গঠনের বিভিন্ন উদাহরণ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে [৪২],[৪৩]।
আধুনিক বিজ্ঞানের কোন শাখা থেকে পাওয়া তথ্য বিবর্তনের বিপক্ষে যাচ্ছে না।
বিবর্তন বিরোধিতা একটি বিশ্বাসগত অথবা বৈজ্ঞানিক অবস্থান যা মানুষের উদ্ভবের ও বিকাশের বিবর্তন তত্ত্ব কে অস্বীকার করে। বিবর্তনবাদের ধারণা ঊনিশ শতকে দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর বিজ্ঞানী, ধর্মতত্ববিদ এবং সাধারণ মানুষ স্ব স্ব দৃষ্টিকোণ থেকে এ তত্ত্বের বিরোধিতা শুরু করে। অধিকাংশ মানুষ পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবকে ঈশ্বরের সিদ্ধান্ত ও অবদান বলে বিশ্বাস করে।
বিবর্তনবাদ শুধুই থিওরী
বিবর্তনের সমালোচনাকারীরা বিবর্তন শুধুমাত্র একটি থিওরী বা তত্ত্ব বলেন দাবী করেন এবং তারা জোর দেন যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব কখনোই বাস্তব নয়। এই তত্ত্ব বিভ্রান্তিকরভাবে নিজেকে প্রকাশ করে এবং এর কোনো প্রমাণস্বাপেক্ষ না। তাই বিবর্তনবাদ ফ্যাক্ট নয়, শুধুই তত্ত্ব।।[২৮] প্রচলিত ভাষায় তত্ত্ব আর বিজ্ঞানের ভাষায় তত্ত্বের মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। প্রচলিত ভাষায় তত্ত্বের অর্থ অনুমান হলেও বিজ্ঞানের ভাষায় থিওরী বা তত্ত্ব হচ্ছে এমন এক ব্যাখ্যা যার মাধ্যমে ভবিষ্যতবাণী করে প্রমাণের মাধ্যমে যাচাই করা যায় এবং অবশ্যই পরীক্ষা করে তার সত্যতা নিশ্চিত করতে হয়। বিবর্তনবাদ প্রজাতির বৈচিত্র্যতা এবং তাদের পুর্বপুরুষকে ব্যাখ্যা করে। এটা উচ্চতর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ। বিবর্তনবাদের উদাহরণ হচ্ছে আধুনিক বিবর্তনীয় সমন্বয়, যা ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ এবং মেণ্ডেলের বংশগতিবিদ্যার যুগপৎ উদাহরণ। অন্য যে কোনো মতবাদের মতই এই আধুনিক সমন্বয় ঘনঘন তর্ক-বিতর্ক, পরীক্ষা এবং বারবার বিজ্ঞানীদের দ্বারা সংশোধন হতে থাকে। সর্বশেষ গোটা বিজ্ঞান সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে এই সিদ্ধান্তে আসে যে এই মডার্ণ সিন্থেসিস বা আধুনিক সমন্বয় ঘটছে বিবর্তনের কারণে।[২৮][২৯]
সমালোচকরা এটাও বলেন যে বিবর্তন ফ্যাক্ট নয়।[৩০] প্রচলিত অর্থে ফ্যাক্ট হচ্ছে, যা পর্যবেক্ষণ করা যায় এবং পর্যবেক্ষণ করেই সেখান থেকে তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করা যায়। কিন্তু বিজ্ঞানে প্রমাণ স্বাপেক্ষে ফ্যাক্ট যে কোনো কিছু হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ জানামতে থিওরী যেমন "পৃথিবী সুর্যের চারদিকে ঘুরে" এবং "বস্তু উপর থেকে নিচে পরে অভিকর্ষের কারণে" হতে পারে "ফ্যাক্টস" যদিও এরা সম্পুর্ণভাবে তত্ত্বীয়। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, বিবর্তনকেও "ফ্যাক্ট" বলা যায় একই কারণে, যেভাবে অভিকর্ষকে তত্ত্ব বলা হয়। বিবর্তনবাদ পর্যবেক্ষণলব্ধ প্রক্রিয়া, কারণ জীবের পপুলেশন সময়ের দ্বারা জীনগতভাবে পরিবর্তিত হয়। এইভাবেই বিবর্তনবাদকে ফ্যাক্ট বলা যেতে পারে। এই তত্ত্ব সমাজে প্রতিষ্ঠিত সত্য। এভাবেই বিজ্ঞানীদের কাছে বিবর্তনবাদ তত্ত্ব এবং ফ্যাক্ট উভয়ভাবেই স্বীকৃত হয় [৩১][৩২][৩৩]
শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণলব্ধ প্রমাণ ছাড়া কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বই প্রমাণিত নয় বলে বিবর্তনবাদ এখনো অপ্রমাণিত এবং বিভ্রান্তিকর।[৩৪] এই পার্থক্যটি বৈজ্ঞানিক দর্শনের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু এতে নিশ্চয়তার অভাব আছে। বিজ্ঞানের কিছু কিছু শাখা যেমন গণিত কিংবা যুক্তিবিজ্ঞানে পর্যবেক্ষণলব্ধ দাবীকে মেনে নেয়া গেলেও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তা মেনে নেয়া যায় না। কেননা, এক্ষেত্রে সত্যতা যাচাই এবং সত্যতা প্রতিপাদিত সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। তাই বিবর্তনবাদ প্রমাণিত নয় কথাটি উল্লেখযোগ্যতাবিহীন হলেও খানিক সত্য। তাই বলে শুধু মাত্র তত্ত্ব বলে সম্পূর্ন বিবর্তনবাদকে অস্বীকার করা অযৌক্তিক। বিভ্রান্তি বাড়ায় প্রমাণ শব্দটির চলিত অর্থ "বাধ্যতামূলক প্রমান" যাইহোক বিজ্ঞানীরা ববর্তনকে প্রমাণিত বলেই মেনে নেন।
একটা প্রাসঙ্গিক আপত্তি বিবর্তনের বিরুদ্ধে হচ্ছে বিবর্তন অনির্ভরযোগ্য প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত।বিতর্কের সারমর্ম হল বিবর্তন প্রমাণিত নয়। এমনকি এর বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য প্রমাণও পাওয়া যায় না।তার সাথে সাথে বলা হয় বিবর্তনের আগাগোড়া পুরোটাই ধাপ্পাবাজি আর মিথ্যাচারে ভরপুর।
এবার বিতর্ক সক্রিয় হয় বিবর্তনের নির্ভরযোগ্যতার বিরুদ্ধে, সৃষ্টিবাদীরা বলতে থাকেন অতীতেও গুরুত্বপূর্ণ scientific revolutions(বৈজ্ঞানিক বৈপ্লবিক তত্ব) গুলো মিথ্যা হয়ে গেছে। যদিও প্রাথমিকভাবে সেগুলোকে প্রায় নিশ্চিত বলে ধরা হত।তারা এইরুপে দাবী করতে থাকে সাম্প্রতিক সময়ের বিবর্তনবাদ বিপ্লব ঘটিয়ে দিবে ভবিষ্যতে একটাই বিষয়ের উপর নির্ভর করে। আর সে বিষয়টা হল "বিপদের সময়ের তত্ব"(সৃষ্টিবাদের বিকল্প বুঝাতে এই বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে) [৮৩]
সমালোচকরা বিতর্কের জন্য হাজির করেন বিজ্ঞানের ইতিহাসে ধাপ্পাবাজি Piltdown Man(পিল্টডাউন মানবকে) এক প্রকার জালিয়াতি। তারা বলতে থাকেন যেহেতু অতীতে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী থাকার কারণে বিবর্তনের উপর প্রমাণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভুল করেছেন এবং কতিপয় গণ জালিয়াতি করেছেন, একইভাবে সাম্প্রতিককালের বিবর্তনও মিথ্যাচার ও ধাপ্পাবাজির উপর প্রতিষ্ঠিত। বিবর্তনের অনেকপ্রমাণই অভিযুক্ত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে ও এগুলো প্রতারণাপুর্ণ। তারা এই ব্যাপারে অন্তর্ভুক্ত করেন Archaeopteryx, peppered moth melanism, and Darwin's finchesকে। এইসব দাবীগুলো পরবর্তীতে যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করা হয়।[৮৪][৮৫][৮৬][৮৭]
এটাও দাবী করা হয় যে বিবর্তনের যে সব টুকরো প্রমাণ পাওয়া গেছে তা হল ভ্রান্ত এবং অকেজো, Ernst Haeckel' এর মত। যিনি ১৯ শতকে ভ্রূণদ্বয়ের মধ্যে তুলনামুলক চিত্র একেছিলেন যা recapitulation theory নামে পরিচিতি পায়। ("ontogeny recapitulates phylogeny"), যেটা শুধুমাত্র ভুলই ছিল না বরং ধোকাবাজিও ছিল।[৮৮]Molecular biologistJonathan Wells সমালোচনা করেন জীববিজ্ঞান পাঠ্যবইয়ের,অভিযোগ করেন যে তারা এমন কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে বিবর্তন বাদ চাপিয়ে দিতে চাইছে শিক্ষার্থী দের উপর যেসব প্রমাণ ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত।(হেকেলের ধারণাকেই তিনি জনসম্মুখে হাজির করেন) [৮৬] এর প্রতিবাদে National Center for Science Education বলেন কোনো বইই যে ওয়ালস রিভিউ করে নাই এটা হল তার প্রমাণ। রিভিউ করলেই সে বুঝত তার এই দাবীটা মিথ্যা। হ্যাকেলের ড্রইং একটা ঐতিহাসিক পাঠ, এই বিষয়টা নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে আলোচনা করা হয়েছে কেন তার চিত্রাংকন ভুল ছিল সেই বিষয়ে, সঠিক এবং সাম্প্রতিক হালনাগাদ হওয়া চিত্রই পাঠ্যপুস্তকে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ এটা ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে ওয়ালের দ্বারা [৮৯]
অবিশ্বস্ত কালপঞ্জী
সৃজনবাদীরা দাবী করেন যে বিবর্তনবাদ অনিশ্চয়তা নীতির ওপর নির্ভর করে। এবং অতীত সম্বন্ধে কোনো তথ্য দিতে পারে না। উদাহরণস্বরুপ পদার্থের বয়স নির্ধারণের জন্য যে radioactive decay র উপর নির্ভর করা হয় তা সম্পুর্ণভাবে অবিশ্বস্ত। Radiocarbon dating নির্ভর করে carbon-14 র আইসোটোপের উপর। আইসোটোপ থেকে নির্ধারিত এই ফলাফল সম্পুর্ণভাবে সমালোচিত হয়।প্রথমদিকে এটা এত বেশি সমালোচিত হতে যে সমালোচকরা বলতে শুরু করে যে এটা সম্পুর্ণভাবে অন্যায্য অনুমানের নীতি uniformitarianismর উপর অবস্থিত। পাথরের ক্ষয়ের হার থেকে বয়স নির্ধারণ করা পাথরটা closed system হিসেবে কাজ করে। এইরুপ তর্কবিতর্কের নিষ্পত্তি ঘটে বিজ্ঞানীদের দ্বারা যখন স্বাধীনভাবে করা অন্যান্য গবেষণায় এবং ভিন্ন পদ্ধতিতে পাথরের বয়স নির্ধারণ করতে গেলে সবগুলার ফলাফল একই আসে।[৯১] একইরকম অভিযোগ আছে জীবাশ্মকে ঘিরে। অভিযোগ করা হয় জীবাশ্মের প্রমাণ নির্ভরযোগ্য নয়। অভিযোগ করা হয় ফসিল রেকর্ডে বিশাল গ্যাপ আছে।[৯২][৯৩] that fossil-dating is circular (see the Unfalsifiability section above), or that certain fossils, such as polystrate fossils, are seemingly "out of place." Examination by geologists have found polystrate fossils to be consistent with in situ formation.[৯৪] অনেকসময় এটাও অভিযোগ করা হয় বিবর্তনবাদের কিছু বৈশিষ্ট্য catastrophism দের (cf. নুহের প্লাবন)কে সমর্থন করে। কিন্তু বিবর্তনবাদের gradualisticpunctuated equilibrium কে সমর্থন করে না।[৯৫] যদিও এটাই ব্যাখ্যা করে কেন ফসিলের মধ্যে এত গ্যাপ আছে।[৯৬]
১) একটি প্রোটিন অনু একটি কোষ ছাড়া এমনি এমনি তৈরি হতে পারে না। বহু সংখ্যক মিথ্যা ফসিলের কাহিনী রচনাকারি ডারউইন বাদিরা আজ পর্যন্ত একটি প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারে নি। তা হল """"""কিভাবে একটি প্রোটিন অনু এমনি এমনি মহাজগতে সৃষ্টি হতে পারে?""""""
এই প্রশ্নের উত্তরে নাস্তিকরা আমাদের কাছে একটি নতুন থিওরি দাড় করায় যার নাম হচ্ছে "এমনি এমনি" থিওরি
এই "এমনি এমনি" থিওরি এর মুল কথা হচ্ছে একটি প্রোটিন অনু "এমনি এমনি" তৈরি হতে পারে, এটা নিয়ে আরও প্রশ্ন করলে নাস্তিকরা আপনাকে ছাগু বলে অভিহিত করে আপনাকে অনেক বই পড়ার পরামর্শ দিবে কিন্তু নিজেদের জ্ঞানের স্বল্পতার দরুন আপনাকে কোন সদুত্তর দিতে পারবে না।
এবার বাকিটা নির্ভর করে আপনার বিশ্বাসের উপর, আপনি বিশ্বাস করে নিন একটি প্রোটিন অনু "এমনি এমনি" প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মহাজগতে এসেছে, এরপর বিবর্তনবাদী নাস্তিক হয়ে নিজেরে বিজ্ঞানের মহাপন্ডিত দাবি করুন এবং আস্তিকদের স্রষ্টায় বিশ্বাসকে কেবল একটি বিশ্বাস বলে আস্তিকদের ছাগু উপাধিতে ভূষিত করুন।
আর নিজের "এমনি এমনি " থিওরিতে ইমান আনয়ন পূর্বক বিবর্তনকে চূড়ান্ত সত্য ধরে এগুতে থাকুন।
২)১৫০ বছর আগের বিবর্তন তত্তের সময়কালে ফসিল সম্বন্ধে মানুষের জ্ঞান ছিল খুবই সামান্য। কারন বিবর্তন প্রমান করতে হলে ফসিলের বয়স নির্ধারণ জরুরী, আর ফসিলের বয়স নির্ধারণের জন্য যে দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ( কার্বন ডেটিং, ও ফ্লুরাইড টেস্ট) তার আবিষ্কার হয় কেবল ৫০ বছর আগে। ডারউইন কোন ফসিলের বয়স নির্ধারণ করা তো দূরে থাক নিজের হাতে তার জীবনকালে কোন ফসিল নেড়েচেড়েও দেখেন নাই। তিনি কেবল বিভিন্ন প্রানির ছবি একে এদের বৈশিষ্ট্যগুলো লিপিবদ্ধ করেন তারপর তার বিবর্তন তত্তের জন্ম দেন যেটা নিয়ে ডারউইনের নিজের মনের মাঝেই ছিল অজস্র উত্তরহীন প্রশ্ন ।
৩) বিবর্তনকে সমর্থন করে যে কটি ফসিল পাওয়া যায় বলে দাবি করা হয় তার সবই পরে বিজ্ঞানের নতুন নতুন পদ্ধতির আবিষ্কারের ফলে মিথ্যা প্রমানিত হয়। যে তত্ত বিজ্ঞানের কাছ থেকে সমর্থন পায় না সে তত্ত পেতে ব্যর্থ সে তত্ত কিছু নাস্তিকেরা হাজারও প্রতারণার ফাদ পেতে বাঁচিয়ে রেখেছে আজো। পিল্ট ডাউন মান হক্স এর ঘটনা জানতে
৪) বিবর্তনের প্রমান হিসেবে অনেক অন্তর্বর্তীকালীন ফসিলের সন্ধান পাওয়ার কথা। যেমন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন নিচের ছবিটিতে
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে বিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে ডাইনোসর থেকে পাখির উদ্ভব হতে পারে!!!!!!!!! এই বিবর্তন যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে কেন লক্ষ লক্ষ ফসিল আবিষ্কারের পরও আজ পর্যন্ত এমন কোন ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া যায় নি যার দেহে পাখির মত ডানার লক্ষণ প্রকাশ পায়??????? বিবর্তন লক্ষ লক্ষ বছর সময় ধরে চলে। তাই একটি প্রানি থেকে আরেকটি প্রানিতে বিবর্তনের মাঝামাঝি সময়টাতে এমন অনেক প্রানির অস্তিত্য এর প্রমান পাওয়া উচিত যেগুলোর মাঝে বিবর্তন পূর্ববর্তী এবং বিবর্তন পরবর্তী উভয় সময়ের প্রানিদেরই কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান নাস্তিকদের এমন কোন ফসিলেরই সন্ধান দিতে পারে নাই যা বিবর্তন প্রমান করে। তাই নাস্তিকরা বাধ্য হয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
চিত্রে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন ৪৯০০ লক্ষ বছর !!!!!!!!! আগের স্টারফিসের ফসিলের সাথে আজকের স্টারফিসের কোন পার্থক্য নেই। ঠিক তেমনি ৩৮০ লক্ষ বছর আগের কাঁকড়া এর ফসিল অবিকল আজকের কাঁকড়ার মত।
প্রশ্ন জাগে যদি ৪৯০০ লক্ষ বছরেও বিবর্তন না হয়ে থাকে (ডারউইনবাদিরা ভাবত বিবর্তন কেবল কয়েক লক্ষ বছর আগের ঘটনা) তাহলে বিবর্তন আর হল কবে??????
বিবর্তন
কবে শুরু হল???????
কবে শেষ হয়েছে????????
কেন শেষ হয়েছে???????
বিবর্তন কি আজো চলছে???????
মানুষ বিবর্তিত হয়ে আজ থেকে লক্ষ লক্ষ বছর পড়ে কি রুপ ধারন করবে??????
উটপাখি কি উটের বিবর্তন???
ডি এন এ ছাড়া কিভাবে প্রোটিন অনু জন্ম হতে পারে?????
কিভাবে কয়েকটি প্রোটিন অনু নিজেদের মাঝে যোগাযোগ করে একটি প্রানিদেহ এমনি এমনি তৈরি করতে পারে ????????
প্রোটিনের ভেতর এই তথ্য আসলো কোথা থেকে????? (আমরা জানি তথ্যের বাহক হচ্ছে ডি এন এ)
নাস্তিকরা তাদের নিজেদের প্রয়োজনে ডারউইনকে ব্যবহার করে।
সমগ্র ইতিহাসজুড়ে, প্রাণের বিকাশ কীভাবে শুরু হয়েছিল এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনীয়তা কখনো বিবেচিত হয়নি। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে উত্তর তো আগে থেকেই সুনির্দিষ্ট। ১৮০০ শতকের আগে মানুষ বিশ্বাস করতো, প্রাণের উৎস এবং বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে তার পুর্ব শারীরিক এবং রাসায়নিক শক্তির মিথস্ক্রিয়া। এটি ছিল মানুষের সহজাত ধারণা যে সমস্ত জীবন্ত অস্তিত্ব সর্বশক্তিমানের একটি বিশেষ উপহার এবং অলৌকিকতার সাথে সম্পৃক্ত ছিল যা তৈরি হয়েছিল কোন প্রাণহীন পদার্থ থেকে। জীবন সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদানগুলো সবই সরল রাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়াতে জন্ম নিলেও জীবনের সাথে সেই রাসায়নিক উপাদানগুলোর কোন সম্পর্ক নেই। অলৌকিকভাবে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে এই বিশ্বাস ধর্মবিশ্বাসের সাথে মিলে মিশে ফুলে ফলে পল্লবে শাখায় শাখায় বিকশিত হয়েছে। বাইবেলে বলা হয়েছে প্রথম মানবকে জীবন দান করতে ঈশ্বর তার মুখে ফুঁ দিয়েছিলেন এবং চির অজর অমর আত্মা প্রাণীর দেহে অলৌকিকভাবে বিরাজিত থাকে।
ধর্মীয় তত্ত্বের একটাই সমস্যা ছিল। অলৌকিকতা হলো নির্জলা ভুল ধারণা। ১৮০০ শতকের শুরুর দিকে বিজ্ঞানীগণ এমন কিছু বস্তুর সন্ধান পেলেন যেগুলো মনে হচ্ছিল জীবনের জন্য অনন্য উপাদান। সেইসব উপাদানের মধ্যে ইউরিয়া অন্যতম যা পাওয়া গিয়েছিল মূত্রের মধ্যে এবং ১৭৯৯ সালে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তখন পর্যন্ত বিজ্ঞানের যা কিছু অর্জন ছিল সেটা অলৌকিকতার সাথে বেশি মানানসই। শুধু জীবিত প্রাণই এই ধরণের রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে সুতরাং ধারণা করা হয় ইউরিয়ার মধ্যে জীবনের শক্তি সঞ্চিত ছিল এবং এই কারণেই সেই বস্তুগুলো ছিল অন্যদের তুলনায় বিশেষ কিছু।
The German chemist Friedrich Wöhler, in a lithograph by Rudolf Hoffmann from 1856
কিন্তু ১৮২৮ সালে জার্মান রসায়নবিদ ফ্রেডরিখ ভোলার একটা সাধারণ রাসায়নিক দ্রব্য আমোনিয়াম সায়ানেট থেকে ইউরিয়া উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন যার সাথে জীবিত প্রাণের কোন যোগসূত্রতাই ছিল না। অন্যান্য বিজ্ঞানীগণও এগিয়ে এলেন ফ্রেডরিখ ভোলারের পথ অনুসরণ করে এবং কিছুদিনের মধ্যেই বিজ্ঞানীগণ বুঝতে পারলেন, প্রাণের সাথে কোন সম্পর্ক নাই এমন সাধারণ নিরীহ রাসায়নিক দ্রব্য দিয়েও রসায়নে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রাণ বিকাশে অলৌকিকতার স্থান এখানেই সমাপ্তি। কিন্তু মানুষ মনের গভীরে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত প্রাণ বিকাশের ঐশ্বরিক ধারণা এত সহজে দূর করতে পারে না। অনেকেই বলতে থাকে, রসায়ন থেকে প্রাণ সৃষ্টির মধ্যে বিশেষত্ব কিছু নেই বরং তাদের কাছে মনে হয় রোবটে প্রাণের মত ইন্দ্রজাল যা আমাদেরকে আসতে আসতে যন্ত্রে পরিণত করছে। এবং এটা অবশ্যই বাইবেলের সাথে সাংঘর্ষিক।
দশকের পর দশক জীবনের উৎস কোথায় এই রহস্য অবহেলিত থেকে গেছে। এমনকি বিজ্ঞানীগণ পর্যন্ত প্রাণ সৃষ্টির অলৌকিকত্বকে রক্ষা করতে রীতিমত মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন। যেমন ১৯১৩ সালের শেষ নাগাদ ব্রিটিশ জৈবরসায়নবিদ বেঞ্জামিন মূর ‘জৈব শক্তি’ নামে একটা তত্ত্বের অবতারণা করেন যেটা আসলে নতুন মোড়কে অলৌকিকতা প্রচারের প্রবল চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। বেঞ্জামিন মূরের ‘জৈব শক্তি’ তত্ত্বে আবেগের প্রাধান্যও যথেষ্ট ছিল। বর্তমানে মূরের ‘জৈব শক্তি’ তত্ত্ব অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন বহু বহু বিজ্ঞানের কল্প-গল্পে দেখা যায় একজন মানুষের জীবনী শক্তি বাড়ানো সম্ভব অথবা জীবনী শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। ইংল্যান্ডের একটা টিভি সিরিয়াল ‘ডক্টর হু’ এর মধ্যে একটা চরিত্র টাইম লর্ডস জীবনী শক্তি নবায়নের চিন্তা করেন যেখানে দেখা যায় শক্তি বাড়ানো হচ্ছে, যদি ধীরেও প্রবাহিত হয় তবুও সে শীর্ষে পৌঁছে যাবে। বৈজ্ঞানিক কল্প-গল্পটিকে অভিনব মনে হলেও বাস্তবে এটা অতিপুরনো একটা অলিক ধারণা মাত্র।
তারপরেও ১৮২৮ সালের পর থেকেই দেবত্ববিহীন প্রাণের বিকাশ প্রথম কীভাবে ঘটেছিলে তার যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজতে থাকেন বিজ্ঞানীগণ। কিন্তু তারা কোন উপায় অন্তর খুঁজে পাননা। যদিও প্রাণ বিকাশের উৎস রহস্যে ঢাকা কিন্তু দশকের পর দশক অবহেলিত ছিল, তবুও তখন বিজ্ঞানীদের মনে হতে লাগল প্রাণের বিকাশ কীভাবে ঘটেছিল তা অবশ্যই আবিষ্কার করার বিষয়। সম্ভবত তখনকার প্রায় সবাই সৃষ্টিতত্ত্বের প্রশ্নে অলৌকিকতাবাদে আবেগের আতিশয্যে এমনভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িত ছিল যে তারা আবিষ্কারের পরবর্তী পদক্ষেপ শুরুই করতে পারছিল না।
Charles Darwin showed that all life has evolved from a simple common ancestor
পূর্বের অচলাবস্থার পরিবর্তে ১৯ শতকে চার্লস ডারউইন এবং সহযোগীদের চেষ্টায় গড়ে তোলা বিবর্তন তত্ত্বের সুবাদে জীববিজ্ঞানে নব নব আবিষ্কারের হাতছানি দেখা দেয়। চার্লস ডারউইন জানতেন কীভাবে প্রাণের বিকাশ হয়েছে এটা খুবই গভীর চিন্তা ও আবেগ মেশানো প্রশ্ন। চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের সূচনা হয় ১৮৫৯ সালে পৃথিবী তোলপাড় করা ‘অন দ্য ওরিজিন অফ স্পিসিজ’ বইটি প্রকাশের মাধ্যমে। বিবর্তনবাদে তিনি ব্যাখ্যা করে দেখান কীভাবে এই বিপুলা পৃথিবীর ততোধিক বিপুল পরিমাণ বিচিত্র প্রাণী জগতের উদ্ভব হয়েছে একটা সাধারণ এককোষের আদিপিতা থেকে। এই প্রথম কেউ বললেন ঈশ্বর প্রতিটি জীবকে আলাদা আলাদা করে সৃষ্টি করেননি। প্রাণিজগৎ সৃষ্টি হয়েছে কোটি কোটি বছর আগেকার পৃথিবীর প্রাথমিক জৈব উপাদান থেকে। প্রাণী জগতের সবাই সেই এককোষী আদিপিতার বংশধর।
চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ চারিদিকে বিতর্কের হৈচৈ ফেলে দিলো এবং বাইবেলের সাথে সাংঘর্ষিক তত্ত্বের জন্য বিতর্কিত হয়। বিশেষত উগ্র ধর্মান্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায় থেকে ডারউইন এবং তার বিবর্তনবাদ ভয়ানক হিংস্র আক্রমণের শিকার হলো। কিন্তু বিবর্তনবাদের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি কীভাবে প্রথম প্রাণের বিকাশ সম্ভব হয়।
Darwin wondered if life began in a “warm little pond” (Credit: Linda Reinink-Smith/Alamy)
ডারউইন জানতেন প্রশ্নটা অতীব গুরুতর, কিন্তু তিনি যথাসম্ভব সতর্কভাবে শুরু করেছিলেন তবুও চার্চের সাথে দ্বন্দ্ব এড়ানো সম্ভব হলো না। ১৮৭১ সালে লেখা এক চিঠিতে তিনি বিবর্তনবাদ নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। আবেগমথিত ভাষায় তিনি বলতে চেয়েছিলেন, প্রাণের উৎপত্তি কীভাবে এই তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর তিনি জানেন। প্রাণ বিকাশের প্রথম অনুকল্পটি উদ্ভূত হয়েছিল একটি সর্বগ্রাসী বাকস্বাধীনতাহীন দেশে। কিন্তু যদি (ওহহ কী বিশাল একটা যদি) আমরা বুঝতে পারি তবে দেখতে পাবো একটা ছোট উষ্ণ পুকুরে থাকে পর্যাপ্ত এমোনিয়া এবং ফসফরাস লবণ সেই সাথে আলো, উত্তাপ, বিদ্যুৎ এবং রাসায়নিকভাবে স্বয়ং উদ্ভূত আমিষের জটিলযৌগ আরও জটিল পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
ভিন্নভাবে বলা যেতে পারে, কী ঘটেছিল যখন দীর্ঘদিন সাধারণ জৈব উপাদান একটা ছোট জলাভূমিতে সূর্যালোকে নিমজ্জিত ছিল। কিছু জৈব উপাদান হয়ত মিলেমিশে প্রাণের সদৃশ কোন বস্তুতে রূপান্তরিত হয়েছিল। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় সেখানে সৃষ্টি হয়েছিল আমিষ এবং আমিষ আরও জটিল কোন বস্তুতে পরিণত হচ্ছিল। হতে পারে অস্পষ্ট ধারণামাত্র। কিন্তু ভবিষ্যতে এই অস্পষ্ট ধারণার উপর ভিত্তি করে অনুমান করা সম্ভব প্রথম কীভাবে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল।
এই ধারণার আত্মপ্রকাশ ঘটে সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত স্থানে। আপনি হয়ত ভাবতে পারেন ঈশ্বরবিহীন প্রাণ বিকাশের মত সাহসী চিন্তা বিকশিত হয়েছে একটা গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে মানুষের বাক স্বাধীনতা সামাজিক ঐতিহ্যের অংশ। হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র? কিন্তু না, বাস্তব ঘটনা হলো অলৌকিকতাকে পাশ কাটিয়ে জীবনের উৎপত্তি নিয়ে প্রথম অনুমান করেন নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে যেখানে মুক্তিচিন্তা নিষিদ্ধ। তখন স্ট্যালিনের রাশিয়াতে সবকিছু রাস্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে। মানুষের চিন্তা, এমনকি পঠন পাঠনের বিষয় যা কিছু কমিউনিস্ট রাজনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় সেটাও রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন। ওপারিন কল্পনা করতেন কেমন ছিল পৃথিবী যখন সবেমাত্র সৃষ্টি হলো?
সবথেকে আলোচিত ঘটনা ছিল স্ট্যালিন জীনতত্ত্বের প্রচলিত পঠন পাঠনের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের আরেক জীববিজ্ঞানী এবং কৃষিবিদ ট্রোফিম ডেনিশোভিচ লিসেঙ্কো জোসেফ মেন্ডেলের জিনতত্ত্ব এবং ডারউইনের বিবর্তনবাদকে বাতিল করে বংশপরম্পরার উপর জোর দেন। তিনি মনে করতেন প্রাণী তার জীবনের অভিজ্ঞতা পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে সঞ্চারিত করে যায়। লিসেঙ্কো দেখালেন উন্নতজাতের গম থেকে উন্নত এবং অধিকফলনশীল কিভাবে উৎপাদন করা যায়। স্ট্যালিন কমিউনিস্ট ভাবধারার সাথে অধিক সঙ্গতিপূর্ণ ট্রোফিম ডেনিশোভিচ লিসেঙ্কোর মতবাদকে চাপিয়ে দেন। জীনতত্ত্ব নিয়ে যেসব বিজ্ঞানীরা কাজ করছিলেন তাদেরকে জনসাধারণের কাছে লিসেঙ্কোর মতবাদকে সমর্থন এবং প্রচার করতে বাধ্য করা হয়। অন্যথায় তাদের স্থান হতো লেবার ক্যাম্পে।
Alexander Oparin lived and worked in the USSR (Credit: Sputnik/Science Photo Library)
স্ট্যালিনের দমন নিপীড়নের শাসনের মধ্যেই আলেক্সান্ডার ওপারিন চালিয়ে যেতে লাগলেন তার জৈবরাসায়নিক গবেষণা। ওপারিন নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন কারণ তার কমিউনিজমের প্রতি সন্দেহাতীত আনুগত্য। ওপারিন লিসেঙ্কোর তত্ত্বকে সমর্থন দিলেন এবং দেশের সেবা করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের “অর্ডার অফ লেনিন” সর্বোচ্চ পুরষ্কারে ভূষিত হন।
১৯২৪ ওপারিন প্রকাশ করলেন “দ্য ওরিজিন অফ লাইফ” তার অমর গ্রন্থখানি। দ্য ওরিজিন অফ লাইফ বইতে ওপারিন প্রাণের বিকাশ অন্বেষণে যে প্রস্তবনা করেন সেটা ডারউইনের বিবর্তনবাদের “একটি ছোট উষ্ণ পুকুর” ধারণার সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে যায়। ওপারিন চিন্তা কল্পনা করেছিলেন কেমন ছিল সদ্য গঠিত পৃথিবীর চেহারা। পৃথিবীর উপরিভাগ ছিল কল্পনাতীত গরম, মহাকাশ থেকে খসে পড়া জ্বলন্ত পাথরের খণ্ড। পৃথিবী তখন ছিল বিভিন্ন ধরণের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত অর্ধগলিত পাথরের বিশৃঙ্খল স্তুপ। পদার্থগুলোর মধ্যে কার্বনের পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশী।
Oceans formed once Earth had cooled down (Credit: Richard Bizley/Science Photo Library)
যদি আমরা অণুবীক্ষণযন্ত্রের নিচে কোয়াসারভেটিভ (জৈব রাসায়নিক দ্রবণ) পরীক্ষা করে দেখি তাহলে দেখব দ্রবণটি জীবিত কোষের মত আচরণ করছে। ধীরে ধীরে উত্তপ্ত পৃথিবী ঠাণ্ডা হচ্ছে, জলীয় বাস্প ঘনীভূত হয়ে প্রথম বৃষ্টি নামল পৃথিবীর বুকে, তরল পানিতে তলিয়ে গেল চরাচর। বৃষ্টি পড়ার আগেও সমুদ্র ছিল তবে সেটা প্রচণ্ড উত্তাপে গলিত কার্বননির্ভর ঘন তরল। এমতাবস্থায় দুইটা জিনিস ঘটতে পারে।
প্রথমত, বিভিন্ন রাসায়নিক নিজেদের মাঝে বিক্রিয়া করে অসংখ্য নতুন জটিল যৌগ সৃষ্টি করতে পারে। তাদের মধ্যে কিছু যৌগ আরও জটিল যৌগে পরিণত হবে। আলেক্সান্ডার ওপারিন ধারণা করেন রাসায়নিক দ্রব্যের ক্ষুদ্র মৌলগুলি প্রাণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। চিনি এবং এমাইনো এসিড পৃথিবীর পানি থেকেই উৎপত্তি হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, কিছু রাসায়নিক দ্রব্য নতুন আণুবীক্ষণিক অণুজীবের কাঠামো তৈরি করতে শুরু করে। কিছু অণুজীবের জৈবরাসায়নিক উপাদান পানিতে দ্রবীভূত হয় না। যেমন তেল পানির উপর আস্তরণ সৃষ্টি করে ভেসে থাকে। কিন্তু যখন কিছু জৈবরাসায়নিক উপাদান পানির সাথে মিশে যায় তখন গোলাকার “কোয়াসারভেটিভ” বস্তুর রূপ ধারণ করে যেগুলো আয়তনে .০১ সেমি বা (.০০৪) ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। অণুজীব বেড়ে ওঠে, তারা অবয়ব পরিবর্তন করে এমনকি মাঝেমাঝে তারা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তারা চারপাশের পানির রাসায়নিক দ্রব্যের সাথে বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। এভাবেই জীবনসদৃশ রাসায়নিক উপাদান নিজেদের মাঝে সংগঠিত হতে থাকে। ওপারিন প্রস্তাব করেন কোয়াসারভেটিভ হলো আধুনিক জীবিত কোষের পূর্বপুরুষ।
ওপারিনের মতবাদে দেখা যাচ্ছে জীবিত অনুজীবের জন্ম হয়েছে পুরোপুরি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এখানে কোন ঈশ্বরের হাত নেই। এমনকি অলৌকিকভাবে জীবনী শক্তি সঞ্চারিত হয়েছে এমন চিন্তাও প্রথাগত যার কোন ভিত্তি নেই।
পাঁচ বছর পরে ১৯২৯ সালে ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী জন বারডন স্যান্ডারসন হালডেন একই মতবাদ নিয়ে র্যাশনালিস্ট অ্যানুয়াল জার্নালে একটা ছোট প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। হালডেন ইতিমধ্যেই বিবর্তনবাদে প্রভূত অবদান রেখে ফেলেছেন। তিনি ডারউইনের মতবাদকে বিকাশমান জীনতত্ত্বের আলোকে আরও সংহত করে।
রঙ্গমঞ্চে হালডেন তার জীবনের থেকেও বড় চরিত্র। একবার তিনি কানের পর্দায় ছিদ্রের চিকিৎসায় ডিকম্প্রেসন চেম্বারের অভিজ্ঞতার জন্য ডাক্তারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। কিন্তু পরে তিনি রম্য করে লিখেছিলেন, “কানের পর্দা সাধারণত প্রাকৃতিকভাবেই সুস্থ হয়ে যায়। যদি পর্দায় ছিদ্র থেকেই যায় এবং তারফলে কেউ যদি বধির হয়ে যায় তাহলে সে কারো ভ্রূক্ষেপ না করেই বাতাসে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে পারবে যেটা হবে একটা সামাজিক অর্জন”।
ওপারিনের মত হালডেনও মতবাদ প্রচার করলেন, সমুদ্র প্রাথমিক অবস্থা থেকে স্থিতিশীল গরম ঘন তরলে পরিণত হলে কিভাবে সেখানের পানিতে রাসায়নিক অনুজীব নিজে থেকেই সৃষ্ট হতে পারে। পৃথিবীর এরকম পরিবেশে প্রথম জন্ম নেয় জীবনের অণুজীব অথবা অর্ধজীবন্ত বস্তু আর এরপরের স্তরে সৃষ্টি হয় স্বচ্ছ তেলতেলে জেলির মত থকথকে বস্তু।
কথিত আছে ওপারিন এবং হালডেন যে তত্ত্বের অবতারণা করেন পৃথিবীর সমস্ত জীববিজ্ঞানী সেগুলো ব্যক্ত করেন মাত্র। প্রাণের প্রথম বিকাশ ঘটেছে পুরোপুরি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এখানে কোন ঈশ্বরের হাত নেই। ডারউইনের বিবর্তনবাদের আগেও পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছে ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে। ডারউইন সেটাকে যুক্তিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করেছেন কিন্তু এই তত্ত্ব খ্রিস্টবাদের ভিত্তিমূলে চরম কুঠারাঘাত।
ডারউইনের বিবর্তনবাদের একটাই সমস্যা ছিল। তার প্রচারিত বিবর্তনবাদকে নির্ভুল প্রমাণ করতে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার নিরিখে কোন প্রমাণ নাই। ঈশ্বরবিহীন সৃষ্টিতত্ত্ব সোভিয়েত ইউনিয়নে কোন সমস্যা নয় কারণ কমিউনিস্ট শাসিত সোভিয়েত রাষ্ট্রীয়ভাবেই ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করে না। সেজন্যই কমিউনিস্ট নেতারা প্রাণের উৎপত্তি গবেষণায় বস্তবাদী ব্যাখ্যাকে অকুন্ঠ সমর্থন জানায়। হাল্ডেন নিজেও ছিলেন একজন নাস্তিক এবং কমিউনিজমের কড়া সমর্থক।
তখনকার সময়ে বিবর্তনবাদ গৃহীত হবে নাকি বাতিল করবে সেটা নির্ভর করত প্রধানত ব্যক্তির ধর্ম বিশ্বাসী ব্যক্তিত্বের উপর। জীবনের উৎস অনুসন্ধান করা বিশেষজ্ঞ জীববিজ্ঞানী জার্মানির ওসনাব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আরমেন মালকিদজানিয়ান বলেন, বিবর্তনবাদ গৃহীত হবে কি হবে না নির্ভর করে মানুষেরা কি ধর্মে বিশ্বাস করে নাকি বাম ধারার কমিউনিজম সমর্থন করে সেটার উপর। সোভিয়েত ইউনিয়নে বিবর্তনবাদ সাদরে গৃহীত হয়েছে কারণ সেখানে ঈশ্বরের প্রয়োজন ছিল না। যদি পশ্চিমাবিশ্বের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব সেখানের মানুষেরা অনেক বস্তুবাদী। তাদের চিন্তা বাম ঘেঁষা কমিউনিস্ট বা উদারপন্থার দিকে ধাবিত।
প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আদিম জৈবরাসায়নিক ঘন তরল সহযোগে এই ধারণাটি ওপারিন-হালডেন তত্ত্ব বলে ব্যাপক পরিচিত পেয়ে গেল। ওপারিন-হালডেন তত্ত্ব যুক্তির বিচারে গ্রহণযোগ্য হলেও তত্ত্বটির একটা সমস্যা ছিল। ওপারিন-হালডেন তত্ত্বকেও নির্ভুল করার স্বপক্ষে কোন গবেষণালব্ধ প্রমাণ নেই। পচিশ বছর পার হয়ে গেলেও তত্ত্বটির স্বপক্ষে কোন প্রমাণ দাড় করানো যায়নি।
The English geneticist J. B. S. Haldane (Credit: Science Photo Library)
সময়ের সাথে প্রাণের উদ্ভব গবেষণায় যোগ দেন ১৯৩৪ সালে রসায়নে নোবেল বিজয়ী আমেরিকান রসায়নবিদ। হ্যারল্ড উরে পারমাণবিক বোমা বানানোর দলেও কাজ করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ম্যানহাটান প্রকল্পে পারমাণবিক বোমার অতি প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম ২৩৫ সমৃদ্ধ করতেন। যুদ্ধের পরে তিনি নিউক্লিয়ার প্রযুক্তিকে সুশীল সমাজের নিয়ন্ত্রণে দেয়ার জন্য আন্দোলন করেন। প্রফেসর উরে ধারণা করেছিলেন, আমদের পৃথিবী আদিম অবস্থায় সম্ভবত অ্যামোনিয়া, মিথেন এবং হাইড্রোজেনের মিশেলে পিণ্ডাকৃতির ছিল। এই মিশ্রণকে যদি বৈদ্যুতিক বিস্ফোরণ এবং পানির সংস্পর্শে আনা যায় তাহলে অ্যামাইনো এসিড উৎপন্ন করা সম্ভব। এটা সর্বজন বিদিত যে, অ্যামাইনো এসিড হলো জীবনের প্রথম উপাদান।
উরে এই সময়ে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশ এবং মহাকাশের ভাসমান বস্তুকণার রসায়ন নিয়ে আগ্রহী হন বিশেষকরে দেখতে চেয়েছিলেন সৌরজগৎ যখন সবে সৃষ্টি হলো তখন ঠিক কী ঘটছিল। একদিন তিনি ক্লাসে বললেন সৃষ্টিলগ্নে পৃথিবীর বায়ুস্তরে সম্ভবত অক্সিজেনের অস্তিত্ব ছিল না। রাসায়নিক বিক্রিয়ার সংস্পর্শে অক্সিজেন হয়ত ধ্বংস হয়ে গেছে। উরের ক্লাস লেকচারের প্রস্তাবিত ‘অক্সিজেনবিহীন পৃথিবী’ ওপারিন এবং হালডেনের আদিম জৈবরাসায়নিক ঘন তরল ধারণাকে আরও বেগবান করে। প্রফেসর হ্যারল্ড উরের ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন পিএইচডি’র গবেষণারত ছাত্র স্ট্যানলি মিলার। মিলার প্রফেসর উরেকে প্রস্তাব দেন পরীক্ষা করে দেখার আসলেই কেমন ছিল সেদিনের সৌরজগতের পরিবেশ। উরে নিজের ক্লাস লেকচারের উপর কিছুটা সন্দেহ পোষণ করলেও মিলার অক্সিজেনবিহীন পৃথিবীর চিন্তায় মনোনিবেশ করলেন। তাদের মাঝে বিস্তর আলোচনার পরে ১৯৫২ সালে প্রফেসর উরে এবং তার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্ট্যানলি লয়েড মিলার যৌথভাবে প্রথমবারের মত প্রাণের খোঁজে বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিখ্যাত ‘উরে-মিলার এক্সপেরিমেন্ট’ পরীক্ষা শুরু করলেন।
The Miller-Urey experiment (Credit: Francis Leroy, Biocosmos/Science Photo Library)
পরীক্ষার যন্ত্রপাতি খুব সাধারণ। মিলার পূর্বের আলোচিত ধারণা অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্নের চারটি রাসায়নিক উপাদান গরম পানি, হাইড্রোজেন গ্যাস, অ্যামোনিয়া এবং মিথেন চারটি কাঁচের জারে পূর্ণ করে তাদের মাঝে সংযোগ করে দিলেন। কাঁচের গ্লাসের মাঝে মিলার বারবার তড়িৎপ্রবাহ দিতে লাগলেন যাতে বজ্রপাত ঘটে। আদিকালে পৃথিবীতে বজ্রপাতের ঘটনা ছিল নিত্য নৈমিত্তিক। এই পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সাধারন পরিবেশেই প্রচুর পরিমাণ জৈব অনু উৎপাদন সম্ভব। মিলার দেখতে পেলেন প্রথমদিনেই কাঁচের জারের মধ্যকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গোলাপী আভা ধারন করেছে এবং সপ্তাহ শেষে ঘন তরল দ্রবণটি গাঢ় লাল হয়ে গেল। পরিষ্কার বোঝা গেল জারে জৈব রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ তৈরি হয়েছে।
মিলার পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করে মিশ্রণটিতে গ্লাইসিন এবং আলানাইন নামে দুইটা অ্যামাইনো এসিড পেলেন। অ্যামাইনো এসিডকে জীবন সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং অ্যামাইনো এসিড আমিষ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আমিষ আমাদের শরীরের শারীরবৃত্তিক এবং জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মিলার গবেষণাগারে জন্ম দিলেন প্রাণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মিলারের গবেষণার ফলাফল বিখ্যাত সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হলো ১৯৫৩ সালে। প্রাণের বিকাশ অভিযানে ‘উরে-মিলার এক্সপেরিমেন্ট’ স্মরণীয় ঘটনা। উদার প্রফেসর উরে এই গবেষণার সমুদয় কৃতিত্ব মিলারকে দিয়ে আর্টিকেল থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞানের গবেষক জন সাদারল্যান্ড বলেন, “উরে-মিলার পরীক্ষার শক্তি এখানেই যে, আপনি সাধারণ পরিবেশে প্রচুর অণুজীব সৃষ্টি করতে পারবেন”। জীবন আরও জটিল যা আমরা চিন্তা করি তার থেকেও বেশি।
পরবর্তীতে আরও গবেষণায় পৃথিবী সৃষ্টির আদিতে অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রণও ছিল আবিষ্কারের কারণে আগের গবেষণা ভুল প্রমানিত হয়। কিন্তু সেটা নিয়ে সম্পূরক আলোচনা হতে পারে। জন সাদারল্যান্ড বলেন, “উরে-মিলার পরীক্ষা ছিল দৃষ্টান্ত, তারা মানুষের কল্পনা জাগাতে পেরেছিলেন এবং প্রাণের উৎস সন্ধানে ব্যাপকভাবে চর্চা করতে থাকে”। মিলারের পরীক্ষার প্রভাবে অন্যান্য বিজ্ঞানীরাও এগিয়ে এলেন ভিন্ন ভিন্ন মৌল থেকে অনুজীব সৃষ্টির গবেষণা করে প্রাণের উৎস সন্ধানে। প্রাণের রহস্য উন্মোচনের হাতছানি মনে হয় সন্নিকটে। এতদিনে পরিষ্কার হওয়া গেছে জীবন এত জটিল যে আমাদের চিন্তাকে বিহ্বল করে দেয়। অবশেষে জানা গেল জীবন্ত কোষ শুধুমাত্র কিছু রসায়নের জটিল যৌগ নয় জীবন হলো সূক্ষ্ম শিল্পিত যন্ত্রবিশেষ। হঠাৎ করে সম্পর্কহীন বস্তু থেকে নিজেকে সৃষ্টি করে নিজেই আবার বড় বাধা অতিক্রম করে ছুটে যায় নতুন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানীদের বুঝে ওঠার আগেই।
The machinery inside cells is unbelievably intricate (Credit: Equinox Graphics Ltd)
১৯৫০ সালের শুরুর দিকে বিজ্ঞানীগণ আমাদের জীবন ঈশ্বরের দান বহুদিনের পুরনো বাসি ধারণা থেকে সরে আসতে থাকে। তার পরিবর্তে তারা সম্ভাবনাময় জীবন কীভাবে নিজে নিজেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হলো সেই রহস্য উন্মোচনে আগ্রহী হয়ে উঠল। এবং যুগান্তকারী পরীক্ষার জন্য অবশ্যই স্ট্যানলি মিলারকে ধন্যবাদ। বিজ্ঞানীগণ জীবন অন্বেষণে মিলারের পরীক্ষা থেকে ভবিষ্যৎ গবেষণার রশদ পেয়ে গেলেন।
মিলার যখন ভিন্ন ভিন্ন বস্তু থেকে জীবনের উপাদান বানাতে ব্যস্ত তখন কিছু বিজ্ঞানী জীন কিসের তৈরি খুঁজতে গবেষণারত। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীগণ অনেকগুলো অনুজীবকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। চিনি, চর্বি, আমিষ, নিউক্লিক এসিড যেমন ডিঅক্সিরিবোনিউক্লিক এসিড বা সংক্ষেপে ডিএনএ আবিষ্কার হয়ে গেছে এতদিনে। ২০শতক হলো আবিষ্কারের স্বর্ণযুগ। বিজ্ঞানের বড় বড় আবিষ্কারগুলো এই শতাব্দীতেই ঘটেছে।
আজকে আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি ডিএনএ আমাদের জীন বহন করে। কিন্তু ডিএনএ আবিষ্কার ১৯৫০ দশকের বিজ্ঞানীদের জন্য একটা আঘাত কারণ আমিষের জটিল গঠন দেখে তারা আমিষকেই জীন ভেবেছিলেন। ১৯৫২ সালে আলফ্রেড হারশে এবং মার্থা চেস বিজ্ঞানীদের ভুল ভেঙ্গে দেন। তারা ওয়াশিংটনের কার্নেজি ইনস্টিটিউটে শুধু প্রোটিন আর ডিএনএ বহনকারী ক্ষুদ্র ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছিলেন। পুনোরুৎপাদনের জন্য ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার মাঝে সংক্রামিত হয়। পরীক্ষায় আলফ্রেড হারশে এবং মার্থা চেস জানতে পারলেন সংক্রামক ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে প্রবেশ করেছে কিন্তু প্রোটিন বাইরেই রয়ে গেল। পরিষ্কার বুঝা গেল, ডিএনএ হলো জীনের উপাদান।
হারশে এবং মার্থা চেস’র পরীক্ষার ফলাফল ডিএনএ কীভাবে কাজ করে এবং কেমন তার গঠন আবিষ্কারের গবেষণায় তোলপাড় সৃষ্টি করে দিলো। পরের বছর ডিএনএ রহস্যের সমাধান করে ফেললেন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ফ্রান্সিস ক্রিক এবং জেমট ওয়াটসন। দীর্ঘ পরিশ্রমসাধ্য গবেষণায় তাদেরকে সাহায্য করে রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন। ২০শতকের আবিষ্কারগুলো জীবনের উৎস অন্বেষণের পথে নতুন মাত্রা যোগ করে। আবিষ্কৃত হতে থাকে জীবন্ত কোষের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা অবিশ্বাস্য জটিলতা।
James Watson and Francis Crick with their model of DNA (Credit: A. Barrington-Brown/Gonville and Caius College/Science Photo Library)
ক্রিক এবং ওয়াটসন বুঝতে পেরেছিলেন ডিএনএ হলো দুইটা প্যাচানো মইয়ের সদৃশ বস্তু যারা আবার নিজেদের মধ্যেও সর্পিল আকৃতিতে জড়িয়ে থাকে। প্যাচানো মইয়ের দুই প্রান্ত নিউক্লিওটাইড নামের মলিকিউল দ্বারা গঠিত। আমার আপনার এবং আমাদের সবার জীন এসেছে ব্যাকটেরিয়া নামের আদিপিতা থেকে। ডিএনএ’র গঠন ব্যাখ্যা করে কিভাবে আমাদেরকে কোষ ডিএনএকে অনুসরণ করে। অন্যভাবে বলা যায়, ডিএনএ উন্মোচন করে কিভাবে বাবা-মা তাদের জীনের প্রতিলিপি তৈরি করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। এখানের মূল আলোচ্য বিষয় হলো, এখন প্যাচানো দুই সর্পিল মইয়ের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব। তখন আমরা জানতে পারি জীবের বংশগতির ধারা যা তৈরি হয়েছে জীবের বংশপরম্পরায়। বংশগতির ধারাকে আমরা এ, টি সি এবং জি দিয়ে চিহ্নিত করতে পারি। বংশগতির ভিত্তি সাধারণত ডিএনএ’র সর্পিল মইয়ের মধ্যে সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে এবং প্রতিলিপি তৈরির প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
এই একই প্রক্রিয়ায় বংশগতি জীবনের শুরু থেকেই বাবা-মা তাদের সন্তানদের মাঝে জীবনের বৈশিষ্ট্য প্রবাহিত করতে থাকে। ক্রিক এবং ওয়াটসন আবিষ্কার করেন ব্যাকটেরিয়া থেকে কিভাবে ধাপে ধাপে বংশগতির প্রতিলিপি তৈরি করে প্রাণী আজকের অবস্থানে চলে এসেছে।
ক্রিক এবং ওয়াটসন ১৯৫৩ সালে তাদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান “নেচার”বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশ করেন। ক্রিক এবং ওয়াটসনের আবিষ্কারের ফলে পরের বছরগুলোতে জৈবরাসায়নিক বিজ্ঞানীগণ ডিএনএ ঠিক কী তথ্য বহন করে সেটার আদ্যপান্ত খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তারা দেখতে চাইলেন কীভাবে DNA তে সংরক্ষিত তথ্য জীবন্ত কোষে ব্যবহৃত হয়। জীবনের অভ্যন্তরে লুকায়িত গোপন খবর প্রথমবারের মত প্রকাশের পথে। তখন হঠাৎ করে বিজ্ঞানীদের কাছে ওপারিনের ধারণাকে মামুলি সাদাসিধা।
আবিষ্কার হয়ে গেল DNA ’র মাত্র একটাই কাজ। আপনার ডিএনএ আপনার কোষদেরকে বলে দেয় কীভাবে প্রোটিন তৈরি করতে হবে। প্রোটিন সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে মলিকিউল। প্রোটিন ছাড়া আপনি খাদ্য হজম করতে পারবেন না, আপনার হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে এবং আপনি নিশ্বাস নিতে পারবেন না।
DNA থেকে প্রোটিন উৎপন্নের জটিল প্রক্রিয়া দেখলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। যে কারো পক্ষে জীবনের উৎস কী ব্যাখ্যা করতে যাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ল কারণ এত জটিল প্রক্রিয়া কীভাবে একা একা শুরু হয়েছিল সেটা বিজ্ঞানীগণের চিন্তার জন্যও দুরূহ। প্রতিটি প্রোটিনই মূলত অ্যামাইনো এসিডের বিশাল শিকল একটা বিশেষ শৃঙ্খলার বাঁধনে তারা পারস্পারিক আবদ্ধ। অ্যামাইনো এসিডের ক্রম নির্ধারণ করে দেয় প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক আকার এবং এভাবেই প্রোটিন কাজ করে। সর্পিল DNA’র অভ্যন্তরে প্রাণের প্রয়োজনীয় তথ্য সাংকেতিক আকারে লিপিবদ্ধ থাকে। সুতরাং যখন একটা কোষকে কোন নির্দিষ্ট প্রোটিন সৃষ্টি করতে হয় তখন সে অ্যামাইনো এসিডের শিকলের নাগাল পেতে DNA’র মধ্যে সংরক্ষিত জীন থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বিশ্লেষণ করতে শুরু করে।
কিন্তু এখানেও একটা প্যাচ আছে। DNA জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই কোষ DNA কে সংরক্ষণ করতে নিরাপদে জমিয়ে রাখে। এই কারণে কোষ DNA’র তথ্যকে প্রতিলিপি করে RNA (রাইবোনিউক্লিক এসিড) মলিকিউলে স্থানান্তর করে। DNA যদি পাঠাগারের বই ধরি তাহলে RNA হবে গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ লেখা ছেঁড়া কাগজের সমষ্টি। DNA’র তুলনায় RNA ছোট। সর্পিল মইতে RNA’র একটামাত্র সুতোর মত প্রান্ত। এপর্যায়ে RNA’র মধ্যে সংরক্ষিত তথ্য প্রোটিনে পরিণত হয় এবং প্রচুর পরিমাণ ‘রাইবোসোম’ মলিকিউল গঠন করে।
প্রতিটি জীবিত কোষে এই সৃষ্টি প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এমনকি অতি সাধারণ ব্যাকটেরিয়াও এই প্রক্রিয়ার বাইরে নয়। খাদ্যগ্রহণ এবং অবিরাম নিঃশ্বাস প্রশ্বাস চালিয়ে যাওয়া জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণের উৎস ব্যাখ্যা করতে গেলে আমাদের অবশ্যই DNA, RNA, রাইবোসোম এই তিন প্রোটিনের জটিল মিথস্ক্রিয়া বুঝতে হবে। কীভাবে তাদের উৎপত্তি হলো, কেমন করেই বা তারা পরস্পর কাজ শুরু করে।
Cells can become enormously intricate (Credit: Russell Kightley/Science Photo Library)
হঠাৎ করেই ওপারিন এবং হালডেনের ধারণা নিতান্ত সাদামাটা প্রতীয়মান হয়ে গেল। একই সাথে মিলারের যে যুগান্তকারী পরীক্ষার মাধ্যমে উৎপন্ন হয়েছিল অ্যামাইনো এসিড যা দিয়ে প্রোটিন সৃষ্টি সম্ভব সেটাকেও মনে হলো অসম্পূর্ণ এবং ভাসাভাসা। কীভাবে জীবন সৃষ্টি হয়েছিল সেই প্রশ্নের উত্তর থেকে এখনো আমরা অনেক দূরে। মিলারের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ছিল সৃষ্টি রহস্য উন্মোচনের দীর্ঘ যাত্রাপথের সূচনামাত্র। জীবন গঠিত হয়েছিল RNA দিয়ে এই ধারণা এখন প্রভূত প্রমাণিত এবং বিজ্ঞানে খুব প্রভাবশালী তত্ত্ব।
জন সাদারল্যান্ড বলেন, “DNA সৃষ্টি করে RNA এবং RNA সৃষ্টি করে প্রোটিন যা লিপিড হিসেবে মুখ আটকানো রসায়নের থলের মধ্যে থাকে। আপনি যদি DNA, RNA এবং লিপিডের দিকে তাকাই তাহলে এর জটিলতা দেখে বিস্ময়ে আপনার মুখ হা হয়ে যাবে। কীভাবে আমরা খুঁজে পাবো
অন্যান্য বিজ্ঞানীগণকে যদি ধরি প্রাণের উৎস গবেষণার রাস্তা তৈরি করেছেন তাহলে ব্রিটিশ রসায়নবিদ লেজলি ওরগেলকে বলতে হবে প্রথম বিজ্ঞানী যিনি সেই রাস্তায় যাত্রা শুরু করেন। লেজলি ওরগেলই প্রথম ক্রিক এবং ওয়াটসনের DNA’র মডেল নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরে তিনি মঙ্গলগ্রহে রোবটিক যান পাঠাতে নাসা’র ভাইকিং প্রোগ্রামে সাহায্য করেছিলেন। ওরগেল প্রাণের উৎস কী এই বৈজ্ঞানিক জিজ্ঞাসাকে চিহ্নিত করলেন। ১৯৬৮ সালে লিখিত এক গবেষণাপত্রে তিনি দাবি করেন জীবনের শুরুতে প্রোটিন বা DNA কিছুই ছিলনা। জীবন সৃষ্টি হয়েছিল পুরোপুরি RNA দিয়ে এবং ফ্রান্সিস ক্রিক ওরগেলের এই দাবীকে সমর্থন দেন।
ওরগেলের দাবী যদি সঠিক হয় তাহলে আদিম RNA মলিকিউলকে অবশ্যই অভিযোজন ক্ষমতা থাকতে হবে এবং তারা নিজেই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করবে। ধারণা করা হচ্ছে সম্ভবত DNA একই প্রক্রিয়া কাজ করে।
জীবন গঠিত হয়েছিল RNA দিয়ে এই ধারণা এখন প্রভূত প্রমাণিত হয়েছে এবং বিজ্ঞানে খুব প্রভাবশালী তত্ত্ব। কিন্তু জন্ম দিয়েছে বৈজ্ঞানিক তর্কযুদ্ধের যা অবধি চলছে।
জীবন শুরু হয়েছিল RNA দিয়ে দাবী করেই ওরগেল ক্ষান্ত হননি, তিনিই সবার আগে প্রস্তাব করেন RNA নিজেকে নিজেই পুনরুৎপাদন করতে পারে যা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। অন্যভাবে বলা যায় তিনি শুধু জীবন কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল সেটাই বলেননি, জীবন কী এই প্রশ্নেরই সমাধান তিনি করে ফেলেছেন। এ পর্যায়ে বিজ্ঞানীগন প্রাণের জন্ম রহস্য নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে গেলেন।
DNA is at the heart of almost every living thing (Credit: Equinox Graphics Ltd)
অনেক জীববিজ্ঞানী ওরগেলের ‘প্রাণ নিজেই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে’ দাবীর সাথে সহমত পোষণ করলেন। ডারউইনের বিবর্তনবাদের সারাংশ ছিল নিজের অসংখ্য প্রতিলিপি বা সন্তান জন্মদানের মাধ্যমেই শুধু প্রাণী নিজের বংশ রক্ষা করতে পারে। কিন্তু জীবনের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো যেমন জীবন বেঁচে থাকার জন্য একটি জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে ঘটতে থাকা রাসায়নিক প্রক্রিয়া। বেঁচে থাকতে হলে চারিপাশের পরিবেশ থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে হয়। অনেক জীববিজ্ঞানী মনে করেন জীবনের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো জীবনের অভ্যন্তরীণ চলমান রাসায়নিক প্রক্রিয়া এবং জীবের নিজের প্রতিলিপি উদ্ভব হয়েছে অনেক পরে। এখানেই বিতর্কের শুরু। ১৯৬০ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানীগণ জীবনের উত্থান গবেষণায় দুই সলে বিভক্ত। সাদারল্যান্ড বলেন, “জীবনের অভ্যন্তরীণ চলমান রাসায়নিক প্রক্রিয়া নাকি বংশগতি প্রথম” প্রশ্নই বিজ্ঞানীগণের নতুন দুই প্রান্তে বিভাজন। তাই বিজ্ঞান সভা মাঝে মাঝেই দ্বিধা বিভাজনের তর্কে পর্যবসিত হয়। ততদিনে তৃতীয় একদল বিজ্ঞানী প্রচার করলেন প্রথমে মলিকিউলের ধারকের জন্ম হয়েছে কারণ তারা ছিল তখন ভাসমান। জীবন সৃষ্টিতে কোষের উপাদানগুলোকে জড়ো করতে হয়েছে। কোষের উপাদানগুলো ছাড়া অভ্যন্তরীণ চলমান রাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব নয়। সাদারল্যান্ড বলেন, প্রাণ সৃষ্টিতে কোষের প্রয়োজন যে কথা ওপারিন এবং হালডেন কয়েক দশক আগেই জোরালোভাবে বলে গেছেন। সম্ভবত জীবনের প্রথম কোষ চর্বি জাতীয় স্বচ্ছ তরল পর্দায় আবৃত ছিল।
জীবন বিকাশের এই তিনটা গবেষণা এবং তর্কালোচনার স্বপক্ষে বিপক্ষে অনেক বিজ্ঞানী আছেন এবং অদ্যাবধি আলোচনা চলছে। বিজ্ঞানীগণ নিজেদের ধারণার স্বপক্ষে নিরন্তর গবেষণা করেছেন এমনকি অনেক সময় অন্ধভাবে স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছে। প্রায়ই দেখা যায় একদন বিজ্ঞানী আত্মপক্ষ সমর্থন করে অন্য বিজ্ঞানীগণকে নির্বোধ বলতেও দ্বিধা করছে না। ফলে জীবনের উৎস নিয়ে বিজ্ঞান সভার বিতর্ক সাংবাদিকদের পত্রিকার চটকদার কলাম আর সাধারণ পাঠকদের মুখরোচক গল্পে পরিণত হয়েছে। ওরগেলকে ধন্যবাদ। তিনি প্রথম ধারণা দিলেন বংশগতি নয় বরং জীবন গঠিত হয়েছিল RNA দিয়ে। তারপর এলো ১৯৮০ দশক, বিজ্ঞানের চমক লাগানো আবিষ্কারের যুগ এবং পাওয়া হওয়া গেল কীভাবে জীবনের জন্ম প্রশ্নের অমীমাংসিত উত্তর।
ডারউইন জন্মগ্রহণ করেন ১৮০৯ সালে। আর তাঁর মৃত্যু হয় ১৮৮২ সালে। তাঁর এই ৭১ বছরের জীবনে তিনি মাত্র একবার যান ইংল্যাণ্ডের বাইরে। সে সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। দক্ষিণ আমেরিকা ও এর উপকূল অঞ্চলে অবস্থিত দ্বীপসমূহে ভ্রমণকালে সম্ভবত: তিনি মানুষের গঠন ও কাঠামোর সঙ্গে সাদৃশ্যমান বনমানুষ অথবা এই দ্বীপপুঞ্জে এমনসব প্রাণী দেখেছিলেন যেসবকে তিনি এর আগে দেখেননি। তিনি সফরকালীন সময়ে যা কিছু দেখেন, বলা হয়, তাতে জীবনের বৈচিত্র সম্পর্কে তাঁর ধ্যানধারণা বদলে দেয়।
মজার কথা হল মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ইংল্যাণ্ডে ফিরে এসে তিনি আর কখনও সফর করেননি সারা জীবনে। তিনি তাঁর বাড়ির একটি ছোট কুঠুরিতে সফরের পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে তার থিওরী প্রতিষ্ঠা করতে গোটা জীবন অতিবাহিত করেন। অথচ তিনি ছিলেন না সে যুগের আলবেরুনী অথবা ইবনে বতুতা যারা তৎকালীন দুনীয়ার অধিকাংশ স্থান সফর করেছিলেন। অপরদিকে তৎকালীন বিজ্ঞান এত উন্নত হয়নি যে তিনি তাঁর ঘরে বসে বসে হাজারো পর্দার অভ্যন্তরে নিরীক্ষণ করতে পারেন অথাব শতাব্দী-শতাব্দীর অগ্রপশ্চাতের পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। একটি অপরিচিত মহাদেশের ছোট অংশ এবং তার আশপাশের কিছু দ্বীপ ভ্রমণকারী কোন ব্যক্তি যদি এ দাবি করেন যে, তিনি পৃথিবীর বৈচিত্র এবং বিশ্বভূখণ্ডে বিরাজমান প্রাণীদের প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন তাহলে তাকে উন্মাদই বলতে হবে। কিন্তু ডারউইনের সাথে এমনটা হয়নি। বরং তার থিওরী অসাধারণ গুরুত্ব পেয়ে গেল।
ডারউইনের মতবাদের উৎস
তাহলে দেখা যাক এর কারণ ও প্রেক্ষাপট কি ছিল? এটা দেখা বেশি আকর্ষক হবে যে, তিনি যা বলেন তার মূলে কি ছিল? আসলে বহু শতাব্দী পূর্বে গ্রীক দর্শনে এ ধারণার ভিত্তি ছিল যে পৃথিবীর অস্তিত্ব একটি কারণের পরিনাম। এই পৃথিবীর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা যেই হোক না কেন তিনি প্রথমে একটি কারণই সৃষ্টি করেন। তারপর এই কারণ থেকে দ্বিতীয় কারণ সৃষ্টি হয় এবং প্রথমোক্ত কারণের বিনাশ ঘটে। যেমনভাবে প্রথম কারণ সৃষ্টি করার পরে তার স্রষ্টার যেমন কোন অস্তিত্ব বজায় থাকেনি, আর যদি বজায় থেকেও থাকে তা নামমাত্র যা কোন বস্তুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। দ্বিতীয় থেকে তৃতীয়, তৃতীয় থেকে চতুর্থ এভাবে সৃষ্টি হতে থাকে। আর এভাবে প্রতিটি কারণ সৃষ্টি হওয়ার পরে তার জন্মদাতার কারণের বিনাশ ঘটতে থাকে। এভাবে আপনাআপনি অস্তিত্বে আসতে থাকে। আর আজ পর্যন্ত এই পৃথিবী এই ব্যবস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
ডারউইনের এই দর্শনের উৎস অবশ্যই এই প্রাচীন (গ্রীক) দর্শন। যাকে তিনি উপস্থাপিত করেছেন নতুন রূপে। সেই সঙ্গে তার যুক্তির গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য তিনি পর্যবেক্ষণের রামকাহিনি যোগ করেছেন এর সঙ্গে। এরপর এর ভিত্তিতে পৃথিবীর অস্তিত্বে আসার এক নতুন কাহিনি নির্মাণ করেছেন। পৃথিবী প্রথমে একটি অগ্নিগোলা ছিল যাতে বিস্ফোরণ ঘটে। তারপর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন বস্তু অস্তিত্বে আসে। চাঁদ, গ্রহসমূহ আবর্তন করতে শুরু করে নিজ নিজ কক্ষপথে। এরও পরে প্রথমে পানিতে জীবনের অস্তিত্ব সৃষ্টি হয় এবং প্রথম প্রথম সৃষ্ট এইসব সচল প্রাণী থেকে উন্নীত হয়ে স্থলে ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য প্রাণী। যাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত মানুষও।
-সৃষ্টির আরম্ভে সমস্ত জীবের একমাত্র মাতা পৃথিবী। মনুষ্যের বিকাশের উপযুক্ত সময়ে অমৈথুনী সৃষ্টির মাধ্যমে ভুমি থেকে প্রাদুর্ভাব হয়, সে সময় পৃথিবীর জমি গর্ভের ন্যায় কোমল থাকে..
বিঃদ্রঃ ছবিতে আধুনিক বিজ্ঞানকৃত সময়সীমা দেখানো হয়েছে। যা বার বার পরিবর্ত্তন হচ্ছে।
-জীবন সৃষ্টির জন্য পৃথিবীর ওপর ও গর্ভ ভাগ নরম মৃদু কিছু কাল পর্যন্ত থাকে। পুনঃ গর্ভে অসংখ্য জীব আসৃত থাকে, এবং আজও প্রায় সমস্ত জীবরে মধ্যে একটি স্ব-স্বজাতীয় সংঘ্যবদ্ধতা বিদ্য়মান। আত্মা ভূর্গভস্থ শরীরে প্রবিষ্ট হয় তথায়, শরীর ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক রস থেকে সম্পূর্ণ আহার বৃক্ষের ন্যায় নিতে থাকে। [নিরু০ ৩।১৩, নিরু০ ২।১৪, ঋ০১০।১৮।১১]
অর্থাৎ-ওই পরমাত্মা থেকে অনেক বিদ্বান সিদ্ধি প্রাপ্ত জন তথা সাধারণ বিদ্বান জন উৎপন্ন হয়েছে।
ঈশ্বর অসংখ্য মনুষ্য সৃষ্টির আদিতে যুবাবস্হায় উৎপন্ন করেন
জীবজগতের প্রথম স্তর উদ্ভিজ্জ, দ্বিতীয় স্বেদজ, তৃতীয় অন্ডজ, চতুর্থ জরায়ুজ। বৈদিক বিবর্তন কখনই ডারউইনের বিবর্তনের মতো নয়। ডারউইনের বিবর্তন আসলে, বিবর্তন নয়, বরং অনিয়ন্ত্রিত এবং অচেতন, যা বিভ্রম দ্বারা বৈজ্ঞানিক বিবর্তনের নাম দেওয়া হয়েছে।
আসলে, বিবর্তন মানে, বীজ থেকে স্প্রাউটস, ফুল, গাছ এবং ফল থেকে sprouts এবং আবার শেষ বীজ। আজ, মৌলিক কণা, যা হিসাবে বিবেচিত হয় মৌলিক, আসলে মৌলিক নয়। দ্য কোয়ার্ক এবং ফোটনগুলিও মৌলিক নয়। এগুলি মাইক্রো-রশ্মির আকারযুক্ত, তা হ'ল বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিকাশিত রূপ এই রশ্মির।
যেখানে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সমাপ্তি ঘটে সেখানেই শুরু বৈদিক পদার্থবিজ্ঞানের এবং যেখানে বৈদিক পদার্থবিজ্ঞানের সীমা শেষ হয়, সেখানে বৈদিকের আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানের সূচনা হয়।
Vaidic Theory of Evolution(Written by -Acharya Agnivrat Naishthik)(Translated by–Rajaram Solanki) pdf:-
ক্রমবিকাশবাদ অনুসার জীবনের উৎপত্তি জল থেকে উদ্ভিদ রূপে হয়। প্রথমে জল, মাটি, বায়ু আদির সংযোগ দ্বারা একপ্রকারের শ্যাওলা উৎপন্ন হয়। সেখান থেকে ঘাস, বিরুধ, লতা, গুল্ম, ওষধি, বনস্পতি, বিভিন্ন প্রকারের বৃক্ষের ক্রমশ বিকাশ হয়। কালান্তরে এই মূল জীব-বীজ থেকে সর্বপ্রথম জলেই এক অন্য জীবনের উৎপত্তি হয়। আরম্ভে অ্যামিবার মতো সূক্ষ্ম জলজন্তু হয়। ধীরে ধীরে জলীয় কিট, মাছ, ব্যাঙ, কচ্ছপ, শুকর, ভালুক, বানর ও বনমানুষ আদি বিভিন্ন প্রাণী স্তরকে পার করে বিকশিত হয়ে মানুষ তৈরি হয়।
ক্রমবিকাশ বাদীদের মান্যতা হল যে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে আকৃতি পরিবর্তন করে জীব এক নতুন জাতিকে উৎপন্ন করে। স্বভাব থেকেই জীব বাঁচতে চায়। প্রাণ রক্ষার তাগিদে যে অঙ্গের অভ্যাস হয় তা দৃঢ় হয়ে যায়। আর যার কোনো অভ্যাস হয় না তা দুর্বল হয়ে লুপ্ত হয়ে যায়। এই ভাবে নতুন আকৃতির জীবের উৎপন্ন হয়।
ক্রমবিকাশ বাদীদের এই মত অন্তঃসার শূন্য বলে মনে হবে। আমরা দেখেছি, যেমন ছাগল গাছের নিচের পাতা খায়; তেমনি সামনের দুটো পা গাছে রেখে উপরের পাতা খায়। লক্ষ লক্ষ বছর থেকে এই ভাবেই সে পেট ভরে। কিন্তু আজ পর্যন্ত না তার গলা লম্বা হয়েছে; না তার আগের দুটি পা লম্বা হয়েছে; না তার জন্য ঘাসের অভাব হয়েছে। এখানে এটিও বিচারণীয় যে, গলা লম্বা না হয়ে জিরাফের মধ্যে বাঁদরের মতো গাছে ওঠার সামর্থ্য কেন বিকশিত হলো না? না জানি কবে থেকে মানুষ উত্তর ধ্রুব গ্রীনল্যান্ডের মতো শীতপ্রধান দেশগুলিতে বসবাস করছে। কিন্তু শীত থেকে বাঁচার জন্য তাদের গায়ে ভালুকের মতো লোম কেন জন্মায়নি? আমরা দেখি রাজস্থানের মরুভূমিতে থাকা ভেড়ার গায়ে যেমন লম্বা চুল হয়, তেমনি হিমালয়ের শীতপ্রধান দেশের ভেড়ার গায়েও হয়। আফ্রিকার অতি উষ্ণ প্রদেশে দীর্ঘ লোমযুক্ত ভালুক ও রোমরহিত গন্ডার এক সঙ্গেই থাকে। নিজের দেশেই গরু-মহিষের বিপরীত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। মহিষের চামড়া পাতলা, মসৃন এবং ছোট লোম যুক্ত হয়; গরুর চামড়া অপেক্ষাকৃত মোটা, কঠোর ও ঘন লোমযুক্ত হয়। কেন এত ভিন্নতা? প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে দুটির একই বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত ছিল। ক্রমবিকাশ বাদীদের অনুসার আত্মরক্ষার জন্য হরিণ নীলগাইয়ের মত অনেক প্রকারের জংলি পশুদের মধ্যে নরের সিং হয় অথচ মাধির সিং নেই। আত্মরক্ষার প্রয়োজন কি শুধু নরের হয়, মাধির হয় না? জঙ্গলের থাকা পশুদের অপেক্ষায় গৃহপালিত পশুদের বিপদ কম হয়। তবে কোন প্রয়োজনে দুটির সিং হয়? আবার কোকিলের মধুর কন্ঠ, ময়ূরের সুন্দর পেখমের প্রাণরক্ষার সঙ্গে কি বা সম্বন্ধ? কাককে কি তার কা কা শব্দ ভালো লাগে, আর ময়ূরের সুন্দর পেখম দেখে ময়ূরীর মনে কি ঈর্ষা হয় না?
ভাই আর বোন একই পরিস্থিতিতে উৎপন্ন হয় ও বেড়ে ওঠে কিন্তু বোনের মুখে দাড়ি মুছের কোনো চিহ্ন নেই। হাতি ও হাতিনী একই পরিস্থিতিতে থাকে। কিন্তু হাতিনীর সামনে বড় বড় দাঁত হয় না কেন? আত্মরক্ষা কি কেবল হাতি করে, হাতিনী নয়? আত্মরক্ষার জন্য যদি পশুদের কান বড় হয় তবে মানুষের কেন হয় নি?? মানুষের আত্মরক্ষার কি কোনো দরকার নেই??
ভারতে বাঘ, সিংহ, হাতি হয়। কিন্তু ইংল্যান্ড আদি অন্য দেশে হয় না। আফ্রিকায় জিরাফ, অস্ট্রেলিয়ায় ক্যাঙারু, ভারতে ময়ূর হয়। ইউরোপীয়দের পৌঁছানোর আগেই অস্ট্রেলিয়ায় খরগোশ হতো না। এর দ্বারা স্পষ্ট যে, কোন প্রাণী কোথাও যদি না পৌঁছায় এবং তার সন্তান সন্ততির বিস্তার যদি না হয় তবে সেখানে কোন প্রাণী এমনি জন্মে যায় না।
মানুষের চুলের রঙ্ বদলায় কিন্তু পশুদের চুলের রঙ কোনদিনও বদলায় না। ক্রমবিকাশ বাদীদের অনুসার যদি বানর থেকে মানুষ হয় তবে বানরের বাচ্চা জন্ম থেকে সাঁতার জানে কিন্তু মানুষের তা জানে না কেন? মানুষকে তো তা শিখতে হয়। একে কি তবে বিকাশ বলবো বা অধঃপতন বলবো? রাজস্থানের মরুভূমিতে জন্মানো মানব শিশুটিকে যেমন সাঁতার শিখতে হয়, তেমনি বাংলাদেশের জলাদেশের মানব শিশুটিকেও সাঁতার শিখতে হয়। প্রাণ রক্ষার তাগিদে জঙ্গলি মানুষের না সিং গজায়; না নদীর তীরে থাকা মানুষ জন্ম থেকে স্বতঃ সাঁতার জানে।
অনাদিকাল থেকে কচ্ছপের নিচে নরম ওপরে কঠোর। অথচ কচ্ছপের ওপরের ভাগ একদিনও মাটিতে ঘর্ষণ পায়নি। ক্রমবিকাশবাদীদের মতানুসারে কচ্ছপের গঠন তার বিপরীত হওয়া উচিত ছিল। প্রাণী মাত্রেরই আত্মরক্ষার প্রবৃত্তি স্বাভাবিক হয়। এই প্রবৃত্তি কীটপতঙ্গের মধ্যেও তো হওয়া উচিত। প্রদীপের অগ্নিশিখায় পতঙ্গ পুড়ে মারা যায়। আর এই প্রক্রিয়া আদিকাল থেকে চলে এসেছে। কিন্তু পতঙ্গ কখনো বাঁচার চেষ্টা করেনি। এর জন্য কোন বড় চেষ্টা তাকে করতে হত না। কেবল প্রদীপের শিখা থেকে তাকে দূরে থাকার অভ্যাস মাত্র করতে হতো। কিন্তু লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর থেকে সে এটাই করে যাচ্ছে।
ক্রমবিকাশের ধাপের শেষ প্রাণী যদি মানুষ হয়; তবে মানুষের তুলনায় পিঁপড়ে ও কুত্তার মধ্যে ভূকম্পের পূর্বানুমান কি করে হয়ে যায়? প্রতিটি প্রাণী বেশি থেকে বেশি সময় বাঁচতে চায়। তবে মানুষের থেকে সাপ, কচ্ছপ দীর্ঘজীবী কেন? অধিক দূরত্ব কম সময়ে যেতে মানুষ কেন বা যন্ত্রের বিকাশ করছে? সে নিজে হরিণ ও চিতাবাঘের গতিকে কখন ছাড়লো? কুকুরের তীব্র ঘ্রাণশক্তি ও শকুনির দূরদৃষ্টি শক্তিকে জেনে-বুঝে মানুষ কখনো ছাড়বে না হয়তো। অনুপযোগী ভেবে কুকুরের ঘ্রাণশক্তিকে মানুষ যদি উপেক্ষা করেছিল; তবে আজ অপরাধীদের ধরার জন্য কুকুরের সাহায্য কেন নিত?
ছোট্ট বাবুই পাখি সুন্দর ঘর বানাতে পারে, কিন্তু মানুষের এক পুরুষ নিচে থাকা বানর তা বানাতে পারেনা। মৌমাছি চাক বানায় ও ফুলের মধু নিয়ে সঞ্চয় করে। কিন্তু এই কলাকৃতি ও কারিগরিতা তাদের নিজেদের আবিষ্কার নয়। তারা তা অন্য প্রাণীদেরকেও শেখায় নি। যার যা ছিল তা আজও পর্যন্ত সেই রূপেই করে আসছে।
ল্যামার্ক নামক বৈজ্ঞানিক ইঁদুরের অনেক বংশ পর্যন্ত লেজ কেটে বিনা লেজের ইঁদুর বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু সে তা করতে পারেনি। হিন্দুদের ছেলেমেয়ে অনেকদিন থেকেই "কর্নভেদ" অর্থাৎ কান ছেদ করে আসছে; মুসলমান ও ইহুদিরা হযরত ইব্রাহিমের সময় থেকে খতনা করে আসছে; চীনের মহিলারা কি জানি কত বছর থেকে তাদের পা ছোট করার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু না হিন্দুদের কানছেদা সন্তান জন্মায়; না মুসলমানদের খতনা করা সন্তান জন্মায়; আর না চিনাদের ঘরে ছোটো পা সন্তান জন্মায়।
এইভাবে ক্রমবিকাশ বাদিদের বিরুদ্ধে অনেক উদাহরন দেওয়া যেতে পারে। বাস্তবে যে জীব সৃষ্টিতে যেমন ভাবে বানানো হয়েছে তেমন ভাবেই আছে ও ভবিষ্যতে তেমনভাবেই থাকবে। প্রয়োজনীয়তা, ইচ্ছা, অভ্যাস, এবং পরিস্থিতির কারণে প্রাণীদের মধ্যে কোন পরিবর্তন সম্ভব নয়। অত্যন্ত প্রতিকূলতায় জাতিগুলি লুপ্ত হতে পারে। কিন্তু তাদের নৈসর্গিক গুণ, বৈশিষ্ট্য ও গঠন কোনোদিন বদলায় না। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে প্রাণী থেকে বিকশিত হয়ে মানুষ তৈরি হয়নি। বরং ঈশ্বরের বিশেষ রচনা দ্বারা অন্যান্য প্রাণীদের সাথে মনুষ্য সৃষ্টি হয়েছে। যে মানুষ আজকের উত্তম মস্তিষ্কের তুলনায় অনেক গুণ অধিক উন্নত ও বিকশিত ছিল। বেদের সেই উত্তম বিদ্যা ও শিক্ষাগুলির দ্বারা আমরা জানতে পারি যে মানুষ কত বুদ্ধিমান ছিল।
বিজ্ঞান বলে যে সর্বপ্রথম এক কোষ উৎপন্ন হয়। কিন্তু এক কোষ কোথা থেকে হয় তার সমাধান আজ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকরা করতে পারেনি। অ্যামিবা হল এককোষী দেহ। অনেকগুলি এককোষী মিলিত হয়ে বহুকোষী প্রাণী উৎপন্ন হয়-- এটা বিজ্ঞানের মত। যদি এককোষী প্রাণী নিজে নিজেই উৎপন্ন হতে পারে; তবে মনুষ্য কেন নিজে নিজে উৎপন্ন হতে পারে না? না হলে যে অন্তব্যপ্ত শক্তির সাহায্যে একটি কোষ উৎপন্ন হতে পারে সেই শক্তির সাহায্যে মানুষের শরীরের রচনা কেন সম্ভব নয়??
বনস্পতি শাস্ত্রের আন্তর্জাতিক খ্যাতিপ্রাপ্ত বিদ্বান ডাক্তার বীরবল সাহনিকে প্রশ্ন করা হয়-- আপনি তো বলেন আরম্ভে এককোষী জীব ছিল সেখান থেকে তা বিকশিত হয়ে বড় বড় প্রাণী হয়ে গেল। আপনি এটিও বলেন যে আরম্ভে অনেক অল্প জ্ঞান ছিল ধীরে ধীরে উন্নতি হতে হতে তা বর্তমানের বিজ্ঞানের স্টেজে পৌঁছে যায়। তখন আপনি এটি তো বলুন---"Where from did life come in the very beginning and where from did knowledge come in the very beginning?" অর্থাত্ আরম্ভে জীবন কোথা থেকে এলো এবং আরম্ভে জ্ঞান কোথা থেকে এলো?
কেননা জীবন ও জ্ঞান শূন্য থেকে উৎপন্ন হতে পারে না। ডাক্তার সাহনি তার উত্তরে বলেন-- "এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই যে, আরম্ভে জীবন জ্ঞান কোথা থেকে এলো। আমরা একে স্বীকার করে এসেছি যে আরম্ভে কিছু জীবন ছিল ও কিছু জ্ঞান ছিল।"
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বিকাশবাদ যাকে তথাকথিত পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিতরা মেনে এসেছে এবং অন্তিম সিদ্ধান্ত বলে মনে করে, আসলে তা যুক্তির সামনে টিকতে পারবে না। সত্য তো এটি যে জড়বস্তুতে স্বয়ং সঞ্চালন(self-Direction) ও সম্প্রয়োগ(co-ordination)-এর শক্তি হয় না। তাই বিকাশ বাদীদের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোটি কোটি বছর থেকে জড় পরমাণুর মধ্য থেকে জীবিত প্রাণীর বিকাশ হতে পারে তা একেবারেই অসম্ভব। এই ভাবেই মানব জ্ঞানের বিকাশ যদিও তার চিন্তা শক্তির দ্বারা হয় তবুও যা কিছু জ্ঞান স্বাভাবিকভাবে প্রাপ্ত হয় তার আদি মূল সে নিজে নয়।।
↑"Darwin's Timeline: November"। AboutDarwin.com। Eugene, OR: David Leff। ফেব্রুয়ারি ১০, ২০০৮। নভেম্বর ২৮, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৩-২১।
↑The specific hereditary mechanism Darwin provided, pangenesis, lacked any supporting evidence. Although evolution was unchallenged, uncertainties about the mechanism in the eclipse of Darwinism persisted from the 1880s until the
↑ ঝাঁপ দাও:কখMajid, Abdul (Summer ২০০২)। "The Muslim Responses To Evolution"। Science-Religion Dialogue। Mansehra, Pakistan: Hazara Society for Science-Religion Dialogue। 1 (1)। ২০০৪-০১-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৩-২৩।
↑"A Scientific Dissent from Darwinism"(PDF) (Original "100 Scientists" advertisement)। Seattle, WA: Discovery Institute। সেপ্টেম্বর ২০০১। ২০০৭-০৯-৩০ তারিখে মূল(PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-৩০।
↑ ঝাঁপ দাও:কখMoran, Laurence (জানুয়ারি ২২, ১৯৯৩)। "Evolution is a Fact and a Theory"। TalkOrigins Archive। Houston, TX: The TalkOrigins Foundation, Inc.। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-২৫। In the American vernacular, 'theory' often means 'imperfect fact'--part of a hierarchy of confidence running downhill from fact to theory to hypothesis to guess. Thus the power of the creationist argument: evolution is 'only' a theory and intense debate now rages about many aspects of the theory. If evolution is worse than a fact, and scientists can't even make up their minds about the theory, then what confidence can we have in it? [...] Well evolution is a theory. It is also a fact. And facts and theories are different things, not rungs in a hierarchy of increasing certainty. — Moran quoting Stephen J. Gould (Discover, May 1981)
↑Menton, David N. (১৯৯৩)। "Is Evolution a Theory, a Fact, or a Law?"। Missouri Association for Creation। ২০১০-০৯-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-১৬। "Originally published in: St. Louis MetroVoice, October 1993, Vol. 3, No. 10"
↑Coppedge, David F. (২০০০)। "Shining Through Materialistic Darkness"। The World's Greatest Creation Scientists: From Y1K to Y2K। Chesterbrook, PA: CreationSafaris.com। ২০১৬-০৬-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৫-০৪।
↑Cole, John R. (Fall ১৯৮১)। "Misquoted Scientists Respond"। Creation/Evolution। Buffalo, NY: National Center for Science Education। 2 (4)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৩-২৯। Quoting Popper: "I have changed my mind about the testability and logical status of the theory of natural selection, and I am glad to have the opportunity to make a recantation."
↑Isaak, Mark, সম্পাদক (এপ্রিল ১৬, ২০০৪)। "Index to Creationist Claims: Claim CB901: No Macroevolution"। TalkOrigins Archive। Houston, TX: The TalkOrigins Foundation, Inc.। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৩-৩১। As biologists use the term, macroevolution means evolution at or above the species level. Speciation has been observed and documented. Published as Isaak 2007, পৃ. 87–88
↑Huelsenbeck, John P.; Rannala, Bruce (এপ্রিল ১১, ১৯৯৭)। "Phylogenetic Methods Come of Age: Testing Hypotheses in an Evolutionary Context"। Science। Washington, D.C.: American Association for the Advancement of Science। 276 (5310): 227–232। doi:10.1126/science.276.5310.227। PMID9092465। আইএসএসএন0036-8075।
↑Delsuc, Frédéric; Brinkmann, Henner; Philippe, Hervé (মে ২০০৫)। "Phylogenomics and the reconstruction of the tree of life"। Nature Reviews Genetics। London: Nature Publishing Group। 6 (5): 361–75। doi:10.1038/nrg1603। PMID15861208। আইএসএসএন1471-0056।
↑Gishlick, Alan D. (নভেম্বর ২৩, ২০০৬)। "Icon 4 — Haeckel's Embryos"। National Center for Science Education। Oakland, CA: National Center for Science Education। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১৭।
↑Richardson, Michael K.; Hanken, James; Selwood, Lynne; ও অন্যান্য (মে ১৫, ১৯৯৮)। "Haeckel, embryos, and evolution"। Science (Letter to the editor)। Washington, D.C.: American Association for the Advancement of Science। 280 (5366): 983, 985–986। doi:10.1126/science.280.5366.983c। PMID9616084। আইএসএসএন0036-8075।
↑Grynspan, Alec (নভেম্বর ৯, ১৯৯৭)। "Figures don't Lie but Creationists Figure"। The Skeptic Tank। San Clementa, CA: Fredric L. Rice। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূলথেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-০৪।
↑Waggoner, Ben M.; Collins, Allen G.; ও অন্যান্য (নভেম্বর ২২, ১৯৯৪)। Rieboldt, Sarah; Smith, Dave, সম্পাদকগণ। "The Cambrian Period"। Tour of geologic time (Online exhibit)। Berkeley, CA: University of California Museum of Paleontology। মে ১৫, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-০৫।
↑Lane, Abby (জানুয়ারি ২০, ১৯৯৯)। "Timing"। The Cambrian Explosion। Bristol, England: University of Bristol। মার্চ ৭, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-০৫।
↑Musgrave, Ian; Baldwin, Rich; ও অন্যান্য (২০০৫)। "Information Theory and Creationism"। TalkOrigins Archive। Houston, TX: The TalkOrigins Foundation, Inc.। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-২৪।
↑Harter, Richard (মে ২৩, ১৯৯৯)। "Are Mutations Harmful?"। TalkOrigins Archive। Houston, TX: The TalkOrigins Foundation, Inc.। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-২৪।
↑Morris 1974, পৃ. 45: "Until evolutionists can not only speculate, but demonstrate, that there does exist in nature some vast program to direct the growth toward higher complexity of the marvelous organic space-time unity known as the terrestrial biosphere (not to mention that of the cosmos), as well as some remarkable global power converter to energize the growth through converted solar energy, the whole evolutionary idea is negated by the Second Law."
↑Patterson 1984, পৃ. 99–116: "Henry Morris, director of the Institute for Creation Research (ICR) has joined several other engineers to make thermodynamics a cornerstone of the creation-evolution controversy. For twenty years Morris has maintained that the second law of thermodynamics directly contradicts evolution. ... Is there, indeed, a paradox at all? The answer to this question is, quite simply - no! Morris and his colleagues have constructed a completely fallacious and deceptive argument."
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ <ref> ট্যাগ; icr-morris নামের সূত্রের জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ <ref> ট্যাগ; aig-thermodynamics-evolution নামের সূত্রের জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ <ref> ট্যাগ;talkorigins-2003-10-1-faq-misconceptions-isaak নামের সূত্রের জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑Bunn, Emory F. (অক্টোবর ২০০৯)। "Evolution and the Second Law of Thermodynamics"। American Journal of Physics। College Park, MD: American Association of Physics Teachers; American Institute of Physics। 77 (10): 922–925। arXiv:0903.4603। doi:10.1119/1.3119513। আইএসএসএন0002-9505।
↑Rendle-Short, Tyndale John (ফেব্রুয়ারি ১৯৮০)। "What should a Christian think about evolution?"। Ex Nihilo। Creation Ministries International। 3 (1): 15–17। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-০৭। 9. Evolution lowers man from the 'image of God' to the level of an animal. Why then should he not behave as one, in his own life and towards others?
↑"A Venerable Orang-utang" (Editorial cartoon commentary)। London। মার্চ ২২, ১৮৭১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-০৭। I have to apologize once more for the wild fligh (STDs), of my incorrigible rtist. I told him most clearly and positively to draw me a life-like portrait of that profound philosopher, Mr. Darwin...অজানা প্যারামিটার |newpaper= উপেক্ষা করা হয়েছে (|newspaper= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) — Original cartoon here. From the collection of The Complete Work of Charles Darwin Online.
Bergman, Jerry (আগস্ট ১৯৯৯)। "Darwinism and the Nazi race Holocaust"। Creation Ex Nihilo Technical Journal। Creation Ministries International। 13 (2): 101–111। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-০৮।
Sarfati, Jonathan (ডিসেম্বর ১৯৯৯)। "The Holocaust and evolution"। Creation Ex Nihilo (Guest editorial)। Creation Ministries International। 22 (1): 4। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-০৮।
Moreno-Riaño, Gerson; Smith, Mark Caleb; Mach, Thomas (২০০৬)। "Religiosity, Secularism, and Social Health: A Research Note"(PDF)। Journal of Religion & Society। Omaha, NE: Creighton University; Kripke Center। 8। আইএসএসএন1522-5658। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-০৯। [Paul's] methodological problems do not allow for any conclusive statement to be advanced regarding the various hypotheses Paul seeks to demonstrate or falsify. Of course, correlation does not imply causality, and Paul does not produce any speculations about the cause of these correlations.
↑ ঝাঁপ দাও:কখগPerry এবং অন্যান্য 2014, পৃ. 634–635: "The most extreme ideological expression of nationalism and imperialism was Social Darwinism. In the popular mind, the concepts of evolution justified the exploitation by the 'superior races' of 'lesser breeds without the law.' This language of race and conflict, of superior and inferior people, had wide currency in the Western nations. Social Darwinists vigorously advocated empires, saying that strong nations—by definition, those that were successful at expanding industry and empire—would survive and others would not. To these elitists, all white peoples were more fit than nonwhites to prevail in the struggle for dominance. Even among Europeans, some nations were deemed more fit than others for the competition. Usually, Social Darwinists thought their own nation the best, an attitude that sparked their competitive enthusiasm. ...In the nineteenth century, in contrast to the seventeenth and eighteenth centuries, Europeans, except for missionaries, rarely adopted the customs or learned the languages of local people. They had little sense that other cultures and other peoples deserved respect. Many Westerners believed that it was their Christian duty to set an example and to educate others. Missionaries were the first to meet and learn about many peoples and the first to develop writing for those without a written language. Christian missionaries were ardently opposed to slavery...."
↑Strobel 2004, পৃ. 32: "In my quest to determine if contemporary science points toward or away from God, I knew I had to first examine the claims of evolution in order to conclude once and for all whether Darwinism creates a reasonable foundation for atheism. That's because if the materialism of Darwinian evolution is a fact, then the atheist conclusions I reached as a student might still be valid."
" The more I study science, the more I believe in God."
" I want to know how God created this world. I am not interested in this or that phenomenon, in the spectrum of this or that element. I want to know his thoughts." ✍Albert Einstein
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ