অহং ব্রহ্মাস্মি - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

14 January, 2017

অহং ব্রহ্মাস্মি

অহং ব্রহ্মাস্মি

মুনি ঋষিরা যোগযুক্ত অবস্থায় কেউ কেউ বলেছেন 'অহং ব্রহ্মাস্মি', আবার কেউ কেউ বলেছেন অয়মাত্মাব্রহ্ম,তার অর্থ এই নয় যে তাঁরা সকলে সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বর হয়ে গেছেন। উপনিষদের এই বচনগুলির বৈদিক ব্যাকরণ অনুযায়ী সঠিক অর্থ না করে অনেকে ইহার অনর্থই করেছেন। আর এই উক্তিগুলির ভিত্তি করেই

শিষ্যের দল তাদের গুরুদের অবতার বানিয়ে ছেড়েছে। এবং এই সব গুরুরা নিজেরা এক একজন স্বঘোষিত ভগবান্ হয়ে মঠমন্দির তৈরী করে শিষ্য বাড়িয়ে মানুষকে ঠকিয়ে ব্যবসা করে খাচ্ছে। উপরিক্ত উপনিষদের বচনগুলি সমাধি প্রাপ্ত যোগী বা মুক্তাত্মা সম্বন্ধে বলা হয়েছে বুঝতে হবে।
জীবাত্মা নির্গুণ বলে পরমাত্মার সহিত পূর্ণ ভাবে সম্বন্ধ উৎপন্ন করে,তাহাতে যোগী সমাধি প্রাপ্ত হয়ে তদাকার হয়ে ব্রহ্মভাব ধারণ করে,যা যোগীরাজ শ্রীকৃষ্ণের হয়েছিল। মুনি ঋষিরা তাঁদের ওই অবস্থার ব্যাখ্যার জন্য "অহংব্রজ্মাস্মি,অয়মাত্মা ব্রহ্ম,তত্ত্বমসি" ইত্যাদি বচন সমূহের ব্যবহার করেছেন। কাউকে ভ্রমে পতিত করার জন্য নহে।
লৌকিক সংস্কৃত দ্বারা এই সমস্ত বচনের অর্থ করা যায় না, বৈদিক ব্যাকরণ ও অভিধান পাঠ করা প্রয়োজন। মহর্ষি পাণিনীর ব্যাকরণ অষ্টাধ্যায়ীতে একটি সূত্র আছে-'তাতৎস্তোপাধি' তৎসহচরিত উপাধি। ঐস্থলে 'স্থ' শব্দ উহ্য আছে জানতে হবে। অহং ব্রহ্মাস্মি শব্দের অর্থ 'অহং ব্রহ্মস্থ অস্মি'। অর্থাৎ আমি সর্ব্বব্যাপক ব্রহ্মেই অবস্থিত আছি
এইরূপ বুঝিতে হইবে। অয়মাত্মা ব্রহ্ম শব্দে বুঝতে হবে অয়মাত্মা ব্রহ্মস্থ অর্থাৎ আমার আত্মা ব্রহ্মের আধারে অবস্থিত। তত্ত্বমসি এ ছান্দোগ্য উপনিষদের বচন। শ্বেতকেতুকে তাঁর পিতা বলেছেন তুমি সেই অন্তর্যামী পরমাত্মাকেই যুক্ত আছো।
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- ময়া ততমিদং সর্বং জগদব্যক্ত মূর্ত্তিনা।
মৎস্থানি সর্ব্বাভূতানি ন চাহং তেস্বাস্থিতঃ।।-গীতা।।৯।৪
অর্থাৎঃ আমি অব্যক্তরূপে এই সমস্ত জগৎ ব্যাপিয়া আছি।সমস্ত ভূত আমাতে অবস্থিত,আমি কিন্তু তৎ সমুদেয়ে অবস্থিত নই। এখানে এই "আমি"কথার অর্থ বৈষ্ণবরা বা অনেকেই শ্রী কৃষ্ণকেই প্রতিপন্ন করতে চান। কিন্তু এখানে 'আমি' অর্থে পরমাত্মার কথাই বেলছেন। কারন গীতার ৯।৫ শ্লোকে বলেছেন-
ন চ মৎস্থানি ভূতানি পশ্য মে য়োতমৈশ্বরম্।। অর্থাৎঃ তিনি অর্জুনকে যত উপদেশ দিয়েছেন, তা তিনি যোগযুক্ত অবস্থায় বলেছেন। এ কারণে তিনি গীতার বহু জায়গায় একাধিকবার পশ্য মে য়োগমৈশ্বম্ কথাটি অর্জুনের প্রতি ব্যবহার করেছেন।
অদ্বৈতবাদ খন্ডন পিডিএফ

অহং ব্রহ্মাস্মি

  "ব্রহ্ম বা ইদমগ্র আসীত্তদাত্মানমেবাবেৎ।
অহং ব্রহ্মাস্মীতি।
অস্মাত্তৎসর্ব্বমভবৎ।
তদ্ যো যো দেবানাং প্রত্যবুধ্যত স এব তদভবত্ততর্ষীণাং তথা মনুষ্যণাং তদ্ধৈসৎ পশ্যন্নরষির্বাদেবঃ প্রতিপেদেহহং মনুরভব সূর্য্যশ্চেতি।
তদিদমপ্যেতর্হি য এবং বেদাহং ব্রহ্মাস্মীতি স ইদ সর্ব্বং ভবতি তস্য় হ ন দেবাশ্চ নাভূত্যা ঈশতে।
আত্মা হ্যেষাꣳ স ভবতি।
অথ যোহন্যাং দেবতামুপাস্তেহন্যেহসাবন্যোহহমস্মীতি ন স বেদ যথা পশুরেব স দেবানাম
যথা হ বৈবহবঃ পশবো মনুষ্যং ভুঞ্জ্যুরেবমেকৈকঃ পুরুষো দেবান্ ভুনক্ত্যেকস্মিন্নেব পশাবাদীয়মানেহপ্রিয়ং ভবতি কিমু বহুষু তস্মাদেষাং তন্ন প্রিয়ং যদেতন্মনুষ্য। বিদ্যুঃ।।"
[বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ১ম অধ্যায়।৪র্থ ব্রাহ্মণম্।১০নং কন্ডিকা]
যজুর্বেদের ব্রাহ্মণ pdf page 216 বৃঃউঃ
অপর ব্রহ্ম অর্থাৎ হিরণ্যগর্ভই ব্রহ্মশব্দের অর্থ, যেহেতু তাঁহারই বিজ্ঞানসাধ্য সর্ব্বস্বরূপতা ফল পূর্বে বলা হয়েছে, পরব্রহ্মের সর্ব্বস্বরূপতা বিজ্ঞানসাধ্য নয়, স্বাভাবিক, "তস্মাত্তৎ সর্ব্বভবৎ"[সবকিছু ব্রহ্ম দ্বারা সৃষ্ট]- এইশ্রুতিতে বিজ্ঞানসাধ্য সর্ব্বস্বরূপতা অপর ব্রহ্মেরই অভিহিত আছে। তবে ইহাই বলিতে হয় যে, "ব্রহ্ম বা ইদমগ্র আসীৎ" শ্রুতিতে ব্রহ্মশব্দের অপর ব্রহ্মই অর্থ। অথবা পূর্ব্বশ্রুতিতে মনুষ্যের প্রস্তাব আছে, এবং মনুষ্যই অভ্যুদয় ও নিঃশ্রয়স ফলসাধনে বিশেষরূপে অধিকারী, এই হেতু ব্রহ্মশব্দে পরব্রহ্ম হইবে বা অপরব্রহ্ম (প্রজাপতি)-কে না বুঝাইয়া, যে ব্রহ্মণ ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করিয়া ব্রহ্মময় হইবে, তাহাকেই বুঝাইয়াছে। অতএব ইহা নিষ্কর্ষ হয় যেযে ব্রাহ্মণ নিত্য নৈমিত্তিক ও নিষ্কাম কর্ম্ম সহিত দ্বৈতৈকত্ব (সর্ব্বদ্বৈতের ঐক্য) জ্ঞান বা অপর ব্রহ্মবিদ্যা দ্বারা অপরব্রহ্মভাব প্রাপ্ত হইয়া সমস্ত ভোগ বিরত এবং সকল অভিলষিত ফলের লাভবশঃত কাম্য কর্ম্মবন্ধন হইতে বিমুক্ত হইয়াছেন ও ক্রমশঃ পরব্রহ্মবিদ্যা লাভ করিয়া ভবিষ্যতে পরব্রহ্মভাব লাভ করিবেন, সেই ব্রাহ্মণই এই শ্রুতিতে ব্রহ্মশব্দের লক্ষ্য। 
ব্রহ্ম বা ইদমগ্র আসীত্ত= হিরন্যগর্ভ ব্রহ্ম
অস্মাত্তৎসর্ব্বমভবৎ= সমস্তকিছু ব্রহ্ম দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে।
তদ্ যো যো [যে তা জানে]
স এব তদভবত্ততর্ষীণাং [সেই বড় হয়ে যায়]
মনুষ্যণাং তদ্ধৈসৎ পশ্যন্নরষির্বাদেবঃ প্রতিপেদেহহং মনুরভব [ঋষিদের মধ্যে যারা তা জানে তারা বড় জ্ঞানী হয়ে যায়]
ইদ সর্ব্বং ভবতি তস্য় হ ন দেবাশ্চ নাভূত্যা ঈশতে= দেবতাদেরও তিনি উপাস্য হয়ে যায়
বেদ যথা পশুরেব স দেবানাম=  পশুপালক যেমন মালিকের জন্য পশু সেবকের জন্য, পশুতুল্য জীবন যাপন।
পশাবাদীয়মানেহপ্রিয়ং ভবতি কিমু বহুষু তস্মাদেষাং তন্ন প্রিয়ং যদেতন্মনুষ্য।=যেমন অনেক পশু মানুষের সেবা করে তেমন বহু মানুষ একজন মহান ব্যক্তির অন্ধ ভক্ত হয়ে পশুর মতো অনুসরন করে

ঋগ্বেদ ৬।৪৭।১৮ যিনি সর্বাত্মা থেকে সম্পূর্ণ সতন্ত্র তিনিই ব্রহ্ম [ব্রহ্মসূত্রঃ ১।২৪]

মূল সংস্কৃত বাক্য অহং ব্রহ্মাস্মীতি।[যজুর্বেদের ব্রাহ্মণ]

অহং (আমি) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম) অস্মি (হই) ইতি (এইরূপে)।
"অস্য লোকস্য কা গতিরিত্যাকাশ ইতি হোবাচ"- ছান্দগ্য উপনিষদে্র প্রঃ ১খন্ড ৯মঃ ১ ব্রহ্মকে "আকাশ" শব্দে বাচ্য বলা হয়েছে। আকাশের মতো ব্রহ্ম অশরীর সূক্ষ্ম অর্থাৎ দুর্বিজ্ঞেয় বলে ব্রহ্ম "আকাশ" শব্দের দ্বারা অভিহিত হয়ে থাকে।

“সোহহমস্মি” বেদান্তের অন্যতম একটি মহাবাক্য।

উৎসঃ “যজুর্বেদ” ঈশোপনিষদের ১৬ নং মন্ত্র, বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৫/১৫ নং মন্ত্র এবং ছান্দোগ্য উপনিষদের ৪/১১/১ নং মন্ত্রে সোহহমস্মি বাক্যটির উল্লেখ রয়েছে।
अहं ब्रह्मास्मि - यजुर्वेदः बृहदारण्यकोपनिषत् अध्याय 1 ब्राह्मणम् 4 मंत्र 10

পদার্থঃ সোহহমস্মি = সঃ + অহম্ + অস্মি

অর্থাৎ সেই পুরুষই আমি। আমিই সেই পুরুষ(আত্মা)। আমিই হই সেই (পুরুষ) ।
উপনিষদের যে স্থলে "অহং ব্রহ্মাস্মি,অয়মাত্মা ব্রহ্ম" ইত্য়াদি বাক্য দেখিতে পাওয়া যায় সেখানে সমাধিপ্রাপ্ত যোগী ও মুক্ত আত্মার সম্বন্ধে পরামর্শ বুঝিতে হইবে।বৈদিক সংস্কৃত ও বৈদিক
ব্যাকরণ ও অভিধান পাঠ করা প্রয়োজন।মহর্ষি পাণিণির ব্যকরণ ও অষ্টধ্য়ায়ীতে সূত্র আছে "তাতৎস্তোপাধি" তৎসহচরিত উপাধি। ঐস্থলে স্থ শব্দ উহ্য আছে জানিতে হইবে।
"অহং ব্রহ্মাস্মি" শব্দের অর্থ অহং ব্রহ্মস্থ অস্মি অর্থাৎ আমি সর্বব্যাপক ব্রহ্মেই অবস্থিত এইরূপ বুঝিতে হইবে।"অয়মাত্মা অর্থাৎ ব্রহ্মের আধারে অবস্থিত। "তত্ত্বমসি ইহা ছান্দোগ্য উপনিষদের বচন শ্বেতকেতু কে তাহার পিতা বলিতেছেন-"হে শ্বেতকেতু তুমি সেই অন্তর্যামী পরমাত্মাতে যুক্ত।" ঋষিদের উপদেশ এই যে অপরাবিদ্যা অর্থাৎ সৃষ্টি বিজ্ঞান পাঠ করিবার পর তবে
পরাবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যা পাঠ করিবে-নতুবা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হইবে।আমরা সৃস্টি বিজ্ঞানের যথার্থ জ্ঞানলাভ না করিয়াই পরাবিদ্যা বা বেদান্ত ও উপনিষদাদি পাঠ করিতে গিয়া এই মায়াবাদ বা
অদ্বৈত-বাদরূপ বিভ্রান্তির সৃষ্টি করিয়া তাহাতে মোহিত হইয়া পড়িব।
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- ময়া ততমিদং সর্বং জগদব্যক্ত মূর্ত্তিনা।
মৎস্থানি সর্ব্বাভূতানি ন চাহং তেস্বাস্থিতঃ।।-গীতা।।৯।৪
অর্থাৎঃ আমি অব্যক্তরূপে এই সমস্ত জগৎ ব্যাপিয়া আছি।সমস্ত ভূত আমাতে অবস্থিত,আমি কিন্তু তৎ সমুদেয়ে অবস্থিত নই। এখানে এই "আমি"কথার অর্থ বৈষ্ণবরা বা অনেকেই শ্রী কৃষ্ণকেই প্রতিপন্ন করতে চান। কিন্তু এখানে 'আমি' অর্থে পরমাত্মার কথাই বেলছেন। কারন গীতার ৯।৫ শ্লোকে বলেছেন-
ন চ মৎস্থানি ভূতানি পশ্য মে য়োতমৈশ্বরম্।। অর্থাৎঃ তিনি অর্জুনকে যত উপদেশ দিয়েছেন, তা তিনি যোগযুক্ত অবস্থায় বলেছেন। এ কারণে তিনি গীতার বহু জায়গায় একাধিকবার পশ্য মে য়োগমৈশ্বম্ কথাটি অর্জুনের প্রতি ব্যবহার করেছেন।
উপনিষদের যে স্থলে "অহং ব্রহ্মাস্মি, অয়মাত্মা ব্রহ্ম" ইত্যাদি বাক্য দেখিতে পাওয়া যায় সেখানে সমাধিপ্রাপ্ত যোগী ও মুক্ত আত্মার সম্বন্ধে পরামর্শ বুঝিতে হইবে। জীবাত্মা নির্গুণ বলিয়া পরমাত্মা সহিত পূর্ণভাবে সম্বন্ধ উৎপন্ন করিয়া তাহাতে সমাধিপ্রাপ্ত হইয়া তদাকার প্রাপ্ত হইয়া যায়।
তদ্ভিন্ন মুক্তি হইতে পার না। পরমাত্মায় মগ্ন হিয়া স্বরূপ শুন্যের ন্যায় সমাধি প্রাপ্ত হইয়া ব্রহ্মভাব ধারণ করে। ব্রহ্মবিদ ঋষিগণ মুক্তির অবস্থা উপলব্ধি..
"অহং ব্রহ্মাস্মি"- এই বাক্যের যদি অর্থকরা যায় তাহা হইলে ইহা অত্যন্ত প্রীতির উদাহরণ(=আদর্শ) হইবে।ইহাই লৌকিক দৃষ্টান্ত দ্বারা স্পষ্ট হয়,-"আমিই আমার মিত্র" এরূপ বলা হয়, পরন্তু আমি এবং আমার মিত্র,  ইহাদের মধ্যে সর্ব থৈব অভিন্নতা রহিয়াছে এরূপ পলিতার্থ করা সম্ভব নহে। সমাধিস্থ অবস্থায় তত্ত্বমতি মুনিরা এইরূপ বলিয়াছেন,পরন্তু সাহচর্য্যের প্রতি ধ্যান দিলে মুনিদেরএই উক্তি"জীবাত্মা ও পরমাত্মা অভিন্ন" এইমতের পোষক হয় না। কারণ, এই বচনের [কি উক্তির] পূর্ব ভাগে এই সমস্ত স্থুল ও সুক্ষ্ম জগতে করাণ রূপে পরমাত্মার এতদাত্ম্য [কথিত] বিদ্যমান। 
পরমাত্মার আত্মা ভিন্ন নহে,'স আত্মা' সেই আত্মা 'ভদন্তর্যামী ত্বমসি" যিনি সমস্ত জগতের আত্মা,সে তোমারই। এ কারণ জীবাত্মাও পরমাত্মা ইহাদের মধ্যে পরস্পর সেব্য-সেবক,ব্যাপ্য-ব্যাপক আধারাধেয় এসমস্ত বাস্তবিকই খাঁটে। ঐতরোয়োপনিষদ্ গ্রন্থে-"প্রজ্ঞানং ব্রহ্ম" বাল্যটি এই রূপ।
 ইহার মহাবাক্য-বিবরণে "প্রজ্ঞানমানন্দং ব্রহ্ম" এইরূপ বিস্তার করা হইয়াছে,তথাপি পরমেশ্বরই সৃষ্টি রচনা করিয়াছেন, এইরূপ অর্থ " তৎসৃষ্টিং প্রাবিশত"-এই বাক্যের আধারে অর্থ করিলে কার্য কারণের ভিন্নতা হওয়া সম্ভব। ঈশ্বর,যদি জ্ঞানবান্ হন, তাহা হইলে তিনি অবিদ্যা মায়া আদির অধীন হইয়া সৃষ্ট্যুৎপত্তির কারণ হইবে। এরূপ বলিলে "তিনি ভ্রান্ত" এইরূপ প্রতিপদন করিতে হইবে। যেখানে দেশ, কাল, বস্তু[র] পরিচ্ছেদ হইবে,উহা ভ্রান্তময়। ব্রহ্মের এই ভ্রান্তি হইয়াছে যদি বলা হয় তাহা হইলে ব্রহ্ম জ্ঞান অনিত্য প্রমাণিত হইবে[অতঃ]ইহা বিচারণীয় বিষয়। এইরূপ "জীবভাবনা" ভ্রান্তির পরিণাম। ভ্রান্তি দূর হওয়া মাত্রই জীব ব্রহ্ম হইল। যদি এইরূপ ধারণা হয় তাহা হইলে[এই ধারণা]যথার্থ নহে। কারণ পরমাত্মায় ভ্রান্তি সম্ভব নহে। আধুনিক বেদান্তানুসারে মুক্তি স্বীকার করিলে ব্রহ্মের উপর অনির্মোক্ষ ব্রহ্মই দেখা দিবে। যদি বলো, জীব ও ব্রহ্ম এক তাহা হইলে জীবে তো ব্রহ্মের গুণ পাওয়া যায় না। জীবে অপরিমিত জ্ঞান ও অপরিমিত
সামর্থ্য নাই। যদি আমি ব্রহ্ম হইয়া যাই তাহা হইলে আমি জগৎ রচনাও করিতে পারিব। এ কারণ পুনঃ একবার এরূপ মনে করা উচিত যে,বিশ্ব জড়, আর ব্রহ্ম চেতন;ইহাদের মধ্যে আধার-আধেয়,সেব্য-সেবক, ব্যাপ্য ও ব্যাপক সম্বন্ধ বর্তমান। "সুখমস্বাপ্ সম্" এই অনুভবের যোজনা করা যাইতেছে। কারণ এই যে,ইহা চৈতন্য ও নিত্যজ্ঞানী। তৈত্তিরীয়োপনিষদে আনন্দময় কোষের অবয়ব বর্ণনা করা আছে।

সারাংশঃ জীব ব্রহ্ম নহে,জগৎও ব্রহ্ম নহে। এস্থলে কার্য্য কারণ পৃথক্ পৃথক্। ইহা সত্য,পরন্তু ঈশ্বর সজীব ও নির্জীব যাবতীয় পদার্থ স্বীয় সামর্থ্য বলে নির্মাণ করিয়াছেন। সেই সামর্থ্য তাহার নিকট সদা বিদ্যমান থাকে,এই তাৎপর্য্যে ভেদ দৃষ্ট হয় না।  

 শংকরের মতে আত্মজ্ঞান লাভের জন্য চার প্রকার সাধনার প্রয়োজন যথা- (১) নিত্য ও অনিত্য বস্ত্তর ভেদাভেদ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করা, (২) ইহলোক ও পরলোকের ফলভোগে অনাশক্তি, (৩) অন্তরিন্দ্রিয় ও বহিরিন্দ্রয় সংযম এবং (৪) মুক্তি লাভের ঐকান্তিক ইচ্ছা। এই চার প্রকার সাধনার ফলে জীব বুঝতে পারে যে,  তাতে এবং ব্রহ্মতে কোনো পার্থক্য নেই। তার উপলব্ধি ঘটে যে, সব কিছুই ব্রহ্মময় বা "সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম"-ছান্দোগ্য উপনিষদ
ব্রহ্মইএই চরাচর জগতের রূপধারণ করেছেন, তাই সর্বত্রই ব্রহ্মময়।। তার ধারণা স্পষ্ট হয় তিনি ভাবেন: ‘সোহ্হম’ অর্থাৎ আমিই নিত্য-শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত-সত্য স্বভাবরূপ পরমানন্দ অদ্বয় ব্রহ্ম এবং জীব তখন মোক্ষ লাভ করে।

উপনিষদ ব্যাখ্যা কৌশল বুঝতে হলে ছান্দোগ্যোপনিষদ্ ১।১১।১ (পৃষ্ঠাঃ৪৪৫) দেখুন। "তাহাই দেবগণের অন্নস্বরূপ" "দেবগণ তাহাদিগকে ভক্ষণ অর্থাৎ উপভোগ করেন" ইত্যাদি শ্রুতি হতে জানা যায় যে, তাঁহারাই দেবগণের অন্নস্বরূপ। "অন্ন ভোজন করিতেছ" "প্রিয়জনকে দর্শন করিতে পারিতেছ"-ইত্যাদি বাক্যই এর লক্ষণ অর্থাৎ জ্ঞাপক চিহ্নস্বরূপ। অনায়াসে বোধগম্য করিবার নিমিত্ত ও বিদ্যাদানের যে রীতি আছে, সেই রীতি প্রদর্শনের নিমিত্ত আখ্যায়িকা হয়। 
আত্মা ও ব্রহ্ম এই দুটি শব্দ পরস্পর বিশেষ্য ও বিষেষণভাবাপন্ন অর্থাৎ আমাদের আত্মস্বরূপ ব্রহ্মটি কে ? এই স্থানে "ব্রহ্ম" এই শব্দ টি অধ্যাত্মপরিচ্ছিন্ন অর্থাৎ দেহপরিচ্ছিন্ন আত্মাকে নিষেধ করে, আর আত্মা এই শব্দটিও আত্মা ব্যতীত আদিত্যাদিরূপ ব্রহ্মের উপাস্যত্বকে নিবৃত্তি করে।
ব্রহ্মশব্দ শরীরাদি পরিচ্ছিন্ন আত্মাকে অপর হইতে ব্যাবৃত্ত করে, আবার আত্মশব্দ ব্রহ্ম এবং ব্রহ্মই আত্মা, এই প্রকার অভেদ নিবন্ধন পরিশেষে সর্ব্বাত্মা বৈশ্বানরই ব্রহ্ম, তিনিই আত্মা নির্ণীত হয়।

ঋষি বামদেব ব্রহ্মজ্ঞানে জ্ঞানী হয়ে বলেছিলেন- ‘আমি মনু হয়েছিলাম’; ‘আমিই সূর্য হয়েছিলাম’। যিনি নিজেকে নিশ্চিতভাবে (সমাধি অবস্থায়) জানেন ‘আমি ব্রহ্ম’, তিনি এইরকমই হন। কারণ তাঁর আত্মা তখন সর্বব্যাপী পরমেশ্বরের সাথে সর্ব্বব্যপক দেখেন(বৃহদারণ্যক-১/৪/১০)।

ব্রহ্মৈব ভবতি (মুণ্ডক উপঃ ৩/২/৯)

অর্থাৎ যিনি ব্রহ্মকে জানেন তিনি ব্রহ্মই হয়ে থাকেন। [যত পিন্ড তৎ ব্রহ্মান্ডে:- বোঝানোর সুবিধার্থে নিজ পিন্ড বা পুরী কে বুঝলে ব্রহ্মান্ড কে বোঝা যায়.. কিন্তু বস্তবে তা সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় না]

অনেকে শংকরের বক্তব্যকে সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন যে, শংকর জগতের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেছেন। এ বক্তব্য সঠিক নয়। শংকর বলেছেন জগৎ মিথ্যা। কিন্তু জগৎ অস্তিত্বহীন অর্থাৎ জগতের কোনো অস্তিত্বই নেই এ কথা তিনি কোথাও বলেননি। অন্যদিকে তিনি বলেন, বন্ধ্যা নারীর সন্তান প্রসব অবাস্তব বা অস্তিত্বহীন। বন্ধ্যা নারী সন্তান প্রসব করেছে- এমন কথা কেউ দাবী করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে এটা  যৌক্তিকভাবে পরস্পরবিরোধী। তাঁর এই যুক্তি প্রমাণ করতে তিনি সত্যের পক্ষে মত দিয়েছেন। সত্যকে তিনি দুই ভাগে ভাগ করেছেন: ব্যবহারিক সত্য এবং পারমার্থিক সত্য। পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে একমাত্র ব্রহ্মই সত্য। শুধুমাত্র ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে জগৎ সত্য।
শঙ্করাচার্য বর্ণিত অদ্বৈতবেদান্তের মূল সূত্রেই জীব সম্পর্কেও বলা আছে- ব্রহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ’ অর্থাৎ, ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা এবং জীব ও ব্রহ্ম অভিন্ন। তার মানে, শঙ্করের তৃতীয় বাণীটি হলো- ‘জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ’ অর্থাৎ, জীব এবং ব্রহ্ম এক ও অভিন্ন তথা জীব ব্রহ্মস্বরূপ।

ব্রহ্ম সম্বন্ধে  মহর্ষি ব্যাসদেব লিখেছেন  -জন্মাদ্যস্য য়তঃ[ব্রহ্মসূত্র ১/১/২]-অর্থাৎ যিনি এই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি এবং প্রলয় করেন তিনিই ব্রহ্ম। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৪/৫ এর মধ্যে বলা হয়েছে যে - 'সত্ত্ব, রজ, তম গুণের প্রকৃতি, জীবাত্মা এবং পরমাত্মা হলো 'অজ' অর্থাৎ অজন্মা, আর এই অজন্মা প্রকৃতি কে জীবাত্মা ভোগ করে'।

 কঠ উপনিষদে আছে, ‘‘মনসৈবেদমাপ্তব্যং নেহ নানাসিত্ম কিঞ্চন। মৃত্যোঃ স মৃত্যুং গচ্ছতি য ইহ নানেব পশ্যতি।।’’ অর্থাৎ এই জগতে ব্রহ্ম হতে পৃথক কিছুই নেই, এই তত্ত্বটি সংস্কৃত মন দ্বারাই উপলব্ধি করতে হবে।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

अथर्ववेद 6/137/1

  एक वरिष्ठ वैदिक विद्वान् ने मुझे अथर्ववेद के निम्नलिखित मन्त्र का आधिदैविक और आध्यात्मिक भाष्य करने की चुनौती दी। इस चुनौती के उत्तर में म...

Post Top Ad

ধন্যবাদ