"ভগবান" শব্দের ব্যাখ্যা ও ইন্দ্র-অহল্যা
বর্তমানে ইন্টারনেট দুনিয়ায় কতিপয় কু-মানসিকতা সম্পন্ন ভন্ড "মুসলিম/নাস্তিক জ্ঞানপাপীর" সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে অতিসহজে , তাদের কাজই হল "সনাতন ধর্ম" নিয়ে নানা কুৎসা রটিয়ে বেড়ানো ও নিজের কু-মতলব জনিত স্বার্থ চরিতার্থ করা ৷৷ অপপ্রচারকারী কাটমোল্লারা নিজেদের ধর্মের নোংরামির সাফাই দিতে এখন অন্য ধর্মের নামে মিথ্যাচার করা তাদের পেশা হয়ে দাড়িয়েছে ৷ আর নাস্তিকরা নিজের অজ্ঞতার প্রমাণ স্বরুপ নেট থেকে ঘেটে ঘেটে রেফারেন্স হীন লেখা কপি পেস্ট করে ইবুক বের করে ফেলে !! বড়ই বিচিত্র !!
এই জ্ঞানপাপীদের নতুন অপপ্রচার হচ্ছে "ভগবান" শব্দের অর্থের বিকৃৃত উপস্থাপন ও রামায়ণের ইন্দ্র-অহল্যা মিলিত হওয়া নিয়ে বর্ণিত ঘটনার প্রকৃৃত অর্থ জানার চেষ্টা না করে তাদের মূর্খামির প্রমাণ করা ৷
আপনাদের অবগতির জন্য উক্ত অপপ্রচারের স্কিনশট দুইভাগ একসাথে যুক্ত করে নিম্মে দেয়া হল :-
জ্ঞানপাপির দাবি:-
👉 সংস্কৃত "ভগ" শব্দের অর্থ "স্ত্রী যোনী" আর "ভগবান" এর অর্থ "স্ত্রী যোনি আছে যার"
প্রকৃৃত অর্থ সহ বিশ্লেষণাত্তক জবাব:-
স্বাভাবিকভাবে শাস্ত্র প্রমাণহীন কোনো কিছু কখনো গ্রহনযোগ্য নয় , যেহেতু আমি যুক্তি ও প্রমাণবাদী তাই শাস্ত্র থেকে যথাযথ প্রমাণ ছাড়া কিছুই বিশ্বাস করি না , তাই প্রমাণসহকারে আলোচনা হবে ৷
→ প্রথমত ভগবান শব্দের "সন্ধি বিচ্ছেদ" করলে দাড়ায়- ভগঃ + বান্ = ভগবান ৷
★ এবার চলুন সংস্কৃৃত অভিধান থেকে ভগঃ শব্দের অর্থ দেখে নিই :-
এখানে স্পষ্টত লেখা আছে ,
"ভগ" শব্দের অর্থ হল ঐশ্বর্য , বীর্য(বীরত্ব), যশ , শ্রী , জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুণ এর সমষ্টি ৷
★ পাঠক সংস্কৃৃতে "ভগ" শব্দ ও ভগবান যে ঈশ্বর কেই বুঝানো হয় তা বেদাঙ্গ এর অংশ নিরুক্ত থেকে দেখে নিন :
→ (ভজ সেবায়াম ) এই ধাতু হইতে "ভগ" সিদ্ধ হয় , ইহার সহিত "মতুপ্ " প্রত্যয় যোগে "ভগবান্ " শব্দ সিদ্ধ হয় ৷
→ “ ভগঃ সকলৈশ্বয়ং সেবনং বা বিদ্যতে য়স্য স ভগবান্ ”
অনুবাদ :- যিনি সমগ্র ঐশ্বর্যযুক্ত এবং ভজনের যোগ্য এই জন্য সেই পরমেশ্বরের নাম "ভগবান্ "
উল্লেখ্য যে বিষ্ণুপুরাণ ৬ষ্ট অংশ ৫ অধ্যায় এর ৭ শ্লোকও একই উল্লেখ আছে :-
→ "সমগ্র ঐশ্বর্য্য , ধর্ম , যশঃ , শ্রী , জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টির নাম একত্রে ভগ ""
→ ঋকবেদ ৫/৫১/১১ মন্ত্রে ভগঃ শব্দটি দ্বারা "ভজনীয় প্রভু" নির্দেশ করা হয়েছে একই ভাবে নিরুক্তেও ৷
★উপরিউক্ত কোনো শাস্ত্রে ভগ শব্দ যোনী বুঝাতে ব্যবহার করা হয় নি তা দৃৃশ্যমান , হবেও বা কেন বলুন ত !! ভগবান শব্দ সর্বশক্তিমান পরমাত্মাকে নির্দেশ করে মাত্র, যিনি মানুষের মতো নারী বা পুরুষ নন যে তার নারী-পুরুষ বাচক লিঙ্গ চিন্হ থাকবে , তা নিম্মে উপনিষদ থেকে রেফারেন্স দেয়া হল ৷৷
★ঈশাবাস্যোপনিষদ্ এর ৮মন্ত্রে উল্লেখ আছে:-
→ স পর্য্যগচ্ছুক্রমকায়মব্রণ
মস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্।
কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্
যাথাতথ্যতোর্থান ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ
সমাভ্যঃ।।৮।
সরলার্থঃ পরমেশ্বর সব দিক থেকে ব্যপ্ত আছেন, তিনি সর্বশক্তিমান, শরীররহিত , ছিদ্র রহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত, দোষ রহিত, পাপরহিত, সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী, দুষ্টের দমন কর্তা, স্বয়ম্ভূ তিনি যথাভাবে সব পদার্থের বিশেষরূপে উপদেশ করেছেন শাশ্বত, অনাদিস্বরূপ প্রজাদের জন্য।।৮।।
★এবার "বান্" শব্দের অর্থ দেখি নিই :-
→ বান্ (bāna) :- বিণ. যুক্ত অন্বিত প্রভৃতি অর্থবাচক তদ্ধিত প্রত্যয়বিশেষ (বেগবান, ফলবান, ভগবান)
“বান” শব্দের অর্থ হলো অধিকারী কিংবা যার আছে অর্থে বুঝায়। “বান” শব্দের পূর্বে গুনবাচক উপসর্গ বসিয়ে বান্ শব্দ পূর্ণতা পায় ৷ “বান্” শব্দের আগে ভগ শব্দ বসানো হয়েছে যেমনটা “রূপবান” , যার “ধনবান” শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে ঠিক একভাবে। ‘ভগ’ অর্থ ঐশ্বর্য্য এবং ‘বান’ অর্থ অধিকারী, যার আছে। ঠিক যেভাবে যার সুন্দর রূপ আছে – আমরা তাকে বলি রূপবান, যার ধন আছে ধনবান, ঠিক তদ্রুপ যিনি ভগ অর্থাত্ ঐশ্বর্যের অধিকারী তাকে বলে ভগবান ৷ ”
★ সুতরাং সর্বোপরি মুলত প্রয়োগিক ক্ষেত্রে “যুক্ত বা সমন্বিত” বুঝাতে বান্ ব্যবহৃৃত হয় তা আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই ৷
সংক্ষেপে ভগবান অর্থ " সমগ্র ঐশ্বর্য্য , ধর্ম , যশঃ , শ্রী , জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুণ এর অধিকারীকে ভগবান বলে "
“মূলত পরমাত্মা ঈশ্বরকেই ভগবান বলা হয়” তার প্রমাণ :-
★ ভাগবত পুরাণে ১ স্কন্ধ ২ অধ্যায় ১১ নং শ্লোকে উল্লেখ আছে :-
→ “বদন্তি তত্ত্ববিদন্তত্তং যজ্জ্ঞানদ্বয়ম্ ৷
ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগদানিতি শব্দ্যতে৷৷”
★বাংলা অনুবাদ:-
→ “তত্ত্ববেত্তাগণ জ্ঞাতা আর জ্ঞেয় এর অভেদ , অখন্ড , অদ্বিতীয় সচ্চিদানন্দস্বরুপ জ্ঞানকেই তত্ত্ব বলে থাকেন ৷
সেই তত্ত্বাকেই কেউ বলেন ব্রহ্ম , কেউ বলেন পরমাত্মা আর কেউ বা বলেন ভগবান ৷৷”
★ সুতরাং সর্বোপরি এটাই সন্দেহ এর উর্দ্ধে প্রমাণিত হল যে ভগবান অর্থ " সমগ্র ঐশ্বর্য্য , ধর্ম , যশঃ , শ্রী , জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুণ পরমাত্মাকেই বুঝায় , যার কোনো বিশেষ নারী পুরুষ বাচক লিঙ্গ নেই , সুতরাং এখানে স্ত্রী যোণীর প্রসঙ্গ নিয়ে আসা পুরোটাই নাস্তিক ও কাটমোল্লাদের আষাঢ়ের গালগল্প !
এরপর জ্ঞানপাপীর দাবি:-
👉 "দেবরাজ ইন্দ্র একদা তার গুরু গৌতমের স্ত্রীকে স্নান করে ফিরে আসার পথে ভেজা কাপড়ে দেখে কামাতুর হয়ে পড়ে। সে কৌশলে গুরুর স্ত্রীকে সম্ভোগ বা ধর্ষণ করে।
গৌতম এই ঘটনা জানার পর ইন্দ্রকে অভিশাপ দেয় যার ফলে ইন্দ্রের সারা শরিরে সহস্র ভগ বা স্ত্রী যোনী সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে কিছু দেবতাকে বুঝাতে এই
" ভগবান " বা যোনীওয়ালা শব্দটি ব্যহার করা হয়।
গৌতম এই ঘটনা জানার পর ইন্দ্রকে অভিশাপ দেয় যার ফলে ইন্দ্রের সারা শরিরে সহস্র ভগ বা স্ত্রী যোনী সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে কিছু দেবতাকে বুঝাতে এই
" ভগবান " বা যোনীওয়ালা শব্দটি ব্যহার করা হয়।
★ প্রকৃৃত ঘটনা বিশ্লেষণ সহ শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা :-
→ উক্ত ঘটনাটি রামায়ন এর আদিকান্ডে বর্ণিত আছে , তবে অহল্যা আর ইন্দ্র মিলিত হওয়ার কাহিনীটি মুলত রুপক অর্থে রামায়ণে ব্যবহৃত হয়েছে তার বহু প্রমাণ রয়েছে ৷
উঁঁক্ত বিষয়ে চর্চা হেতু বোধগম্যতার সুবিধার্থে প্রথমে ইন্দ্র দেবতা সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাক :-
★ পবিত্র বেদে “ইন্দ্র” শব্দ পরমাত্মা ঈশ্বরের গুণ/শক্তি/পদবী বিশেষ হিসেবে নির্দেশিত হয়েছে তাই তাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়েছে ৷ যথা:-
→ ঋকবেদ ১/১৬৪/৪৬ মন্ত্রে উল্লেখযোগ্য :-
সেই সদ্বস্ত অর্থাৎ পরব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয় ৷ কিন্তু জ্ঞানী তাহাঁঁকে ইন্দ্র , মিত্র , বরুণ , অগ্নি , দিব্য(সূর্য) , সুপর্ণ ,গরুড় , যম , বায়ু ইত্যাদি নামে অভিহিত করিয়া থাকেন ৷৷
অর্থাৎ যিনিই ইন্দ্র তিনিই বরুণ তিনিই অগ্নি সরলার্থ দ্বারায় এসব ঈশ্বরের নানা রুপ/শক্তির নাম মাত্র ৷
আবার, ঋকবেদ ১/৯০/৯ এ গুণবাচক প্রয়োগ দেখুন :-
ওঁঁ শংনো মিত্রঃ শং বরুণং শং নো ভবত্বর্ঘমা ৷
শং ন ইন্দ্র বৃৃহস্পতিঃ শং নো বিষ্ণুরুরুক্রমঃ ৷৷
→উক্ত মন্ত্রে 'ইন্দ্র' শব্দ “ঐশ্বর্য্যদাতা” বুঝাতে প্রয়োগ হয়েছে দৃৃশ্যমান ৷
একই ভাবে গুণবাচক ব্যবহার যর্জুবেদ ১ম অধ্যায় ১ম মন্ত্রে দৃৃশ্যমান ৷
→ ইন্দ্র দেবতাকে পবিত্র বেদ মন্ত্রে "সূর্য" ধরে স্তুতি করতেও দেখা যায় , যেমন ঋকবেদ ৮ মন্ডল ৯৩ সূক্তে ৩৪ টি মন্ত্রের ৩৩ টিতেই ইন্দ্র কে সূর্য বলে স্তুতি করা হয়েছে ৷
ঋকবেদ ৮/৯৩/৪ :-
যদদ্য কচ্চ বৃৃহন্নুদগা অভি সূর্য ৷
সর্বং তদিৎদ্র তে বশে ৷
অনুবাদ :- হে বৃৃত্রহা সূর্য ইন্দ্র ! অদ্য যৎ কিঞ্চিৎ পদার্থের অভিমুখে প্রাদুভূর্ত হইয়াছ , অমনি সমস্ত জগৎ তোমার বশীভূত হইয়াছে ৷৷
আবার , ঋকবেদ ২য় মন্ডলের ১২সুক্ত টাই ইন্দ্র দেবতার উদ্দেশ্যে কৃৃত , এখানে ১২ নং মন্ত্রে তাকে সূর্যের সাত রশ্মির উল্লেখ করে স্তুতি করেছেন :-
→ যঃ সপ্তরশ্মিবৃৃর্ষভস্তবিষ্মান্ বাসৃৃজৎসর্তবে সপ্ত সিংধৃৃন্ ৷
অনুবাদ :- যিনি(ইন্দ্র ) সপ্তরশ্মি সমন্বিত, বর্ষণকারী ও বুদ্ধিমান ৷
★ এটাই প্রতিয়মান হচ্ছে যে ইন্দ্র দেবতা কোনো দেহ বিশেষ দেবতা নন , তিনি এবং সূর্য দুজনেই এক ৷
👉 জ্ঞানপাপি দাবি করেছে যে ইন্দ্র এর শরীরে নাকি সহস্রভগ সৃৃষ্টি হয় !! বাস্তবে ভগ অর্থ কি তা আমরা প্রথমেই আলোচনা করে সেটি ক্লোজ করে দিয়েছি অলরেডি , এখন আমার দৃৃষ্টিতে সহস্র ভগ যে শব্দ তা মূলত বিকৃৃতকারীরা " ইন্দ্র দেবতার একটি অপর নাম সহস্রাক্ষ" কে বিকৃৃত ভাবে ব্যবহার করছে ৷ ইন্দ্র দেবতাকে সহস্রাক্ষ নামে উল্লেখ করা হয়েছে বেদে ৷যথা :-
→ ঋকবেদ ১০/৯০/১ মন্ত্রে ইন্দ্রকে সহস্রাক্ষ বলে উল্লেখ করা হয়েছে দেখুন :-
“ ওঁঁ সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ ৷
স ভূমিং বিশ্বতো বৃৃত্বাত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলম্ ৷৷
অনুবাদ :- সেই পূর্ণস্বরুপ শ্রীভগবানের -অনন্ত মস্তক , অনন্ত নয়ন(সহস্রাক্ষঃ) , অনন্ত চরণ ৷ তিনি বিশ্ব জগৎকে সর্বতোভাবে পরিব্যাপ্ত করিয়াও , জীবদেহে নাভীর দশাঙ্গুল উর্দ্ধে হৃৃদয়মধ্যে অবস্থিত আছেন৷
এই পবিত্র বেদ মন্ত্রেই স্পষ্ট যে সহস্রাক্ষ(সহস্র নয়ন) হল উপাধী বিশেষ যার সাথে যোনীর কখনো কোনো সম্পর্ক থাকা সম্ভব নয় ৷
এবার তাহলে প্রশ্ন দাড়ায় রামায়ণে যে অহল্যা ইন্দ্র ঘটনা তা মূলত কি নির্দেশ করতে ব্যবহৃৃত হয়েছে !!
★ উক্ত অহল্যা ও ইন্দ্র ঘটনাটি যে মুলত রূপক অখ্যান তা নানা দার্শনিক মত ও শাস্ত্র থেকে প্রমাণ নিন্মে দেয়া হল :-
→ সনাতন মীমাংসা দর্শনের দার্শনিক “কুমারিলভট্টের” মতে, অহল্যার উপাখ্যান একটি রূপক কাহিনী … ।
যথা :-
“ ইন্দ্র বলতে ( সূর্য ) ও অহল্যা বলতে (রাত্রি বা অন্ধকারের) প্রতীক। অহল্যার ধর্ষণ অন্ধকার জয়ের প্রতীক” ।
অন্য মতে, “অহল্যা উষার প্রতীক। দিনে ইন্দ্ররূপী সূর্যের উদয় হলে অহল্যারূপী উষা অসূর্যম্পশ্যা হয়” |
তত্ৰেদৃশ্যো মিথ্যৈব কথাঃ সন্তি। কুতঃ ? আসামপ্যলঙ্কারার্থতাৎ। তদ্যথা - ইন্দ্রাগচ্ছেতি। গৌরাবস্কন্দিন্নহল্যায়ৈ জারেতি। তদ্যান্যেবাস্য চরণানি তৈরেবৈনমেতৎপ্রমুমোদয়িষতি ।। শতপথ ব্রাহ্মণ ৩/৩/৪/১৮
রেতঃ সোমঃ।। শতপথ ব্রাহ্মণ ৩/৩/২/১
সূর্য্যরশ্মিশ্চন্দ্রমা গন্ধর্ব।। যজুর্বেদ ১৮ /৪০
ইত্যপি নিগমো ভবতি। সোহপি গৌরুচ্যতে।। নিরুক্ত ২/৬
জার আ ভগম্ জারঃ ইব ভগম্। আদিত্যোহ ত্রজার উচ্যতে, রাত্রের্জরয়িতা।। নিরক্ত ৩/১৬
এষ এবেন্দ্রো য় এষ তপতি। শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৬/৪/১৮
এখানে ইন্দ্রোগচ্ছতি ইত্যাদির তাৎপর্য্য এই যে, ইন্দ্ৰ শব্দে সূৰ্য্য বুঝায়, এবং রাত্রিকে অহল্যা বলা হয়েছে, তথা চন্দ্রমা গৌতম সাদৃশ্য হয়ে থাকেন। এস্থানে রূপকালঙ্কার মতে রাত্রিকে চন্দ্রমার স্ত্রীরূপে বর্ণন করা হয়েছে। চন্দ্রমা আপনার স্ত্রীর সহিত রাত্রিকালে সকল প্রাণীর আনন্দদায়ক হয়ে থাকে। এই রাত্রিকালের জার আদিত্য অর্থাৎ সূৰ্য্য হয়ে থাকে, কারণ সূর্যের উদয় হলেই, রাত্রি অন্তর্ধান হয়ে যায় অর্থাৎ চন্দ্রমাকে ছেড়ে দেয়, বিশেষতঃ সূর্য্যকে রাত্রীর জার এইজন্য বলা যায় যে, সূর্য্যের আগমনেই চন্দ্রমাকে ছেড়ে দেয়, সূর্যকে রাত্রীর জার এইজন্য বলা যায় যে, সূর্য্যের আগমনেই চন্দ্রমার সহিত রাত্রির শৃঙ্গার ভঙ্গ বা নষ্ট করে দেয়, এইজন্য রাত্রি চন্দ্র ও সূর্য্য, স্ত্রীপুরুষ ও জারকর্তা রূপে রূপকালঙ্কার দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। যেরূপ স্ত্রীপুরুষ একত্রে থাকে, সেইরূপ রাত্রি ও চন্দ্রমা একত্রিত হয়ে থাকে। চন্দ্রমাকে গৌতম এইজন্য বলা যায় যে উক্ত চন্দ্রমা অত্যন্ত বেগশালী এবং রাত্রিকে অহল্যা এই কারণে বলা যায় যে ঐ রাত্রিতে দিবস লয় হয়ে যায়, পুনরায় সূর্য্যই রাত্রির নিবৃত্তকারী, এজন্য সূর্য্যকে রাত্রির জার বলা যায়। এইরূপ চমৎকার রূপকালঙ্কারকে অল্পবুদ্ধি ও বিদ্যাহীন পুরুষেরা নষ্ট ও শ্রীভ্রষ্ট করে তার অনর্থ প্রকাশ করে। এজন্য সজ্জনমাত্রেই পুরাণোক্ত মিথ্যা ও অনর্থযুক্ত বাক্য গুলিকে মূলের সহিত যেন ত্যাগ করেন।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ