লেখক:বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
স্বস্তিকা 👈পড়ুন
১৮৩৮ খ্রীষ্টাব্দের ২৬ জুন চব্বিশ পরগণার অন্তর্গত কাঁঠালপাড়া গ্রামে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্কিমচন্দ্রের বাবা যাদবচন্দ্র ঐ বছর মেদিনীপুরে ডেপুটিতে কলেক্টর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। বাড়িতেই গ্রাম্য পাঠশালায় গুরুমশাইয়ের কাছে কয়েকমাস লেখাপড়ার পরে বঙ্কিমচন্দ্র বাবার কর্মস্থল মেদিনীপুর জেলার ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। পরে তিনি কাঁঠালপাড়ায় এসে হুগলি কলেজে ভর্তি হন। ঐ বছর তাঁর বিয়ে হয়। ১৮৫৯ খ্রীষ্টাব্দে প্রথমা স্ত্রী বিধবা হলে তিনি আবার বিয়ে করেন। বঙ্কিমচন্দ্র অপুত্রক ছিলেন, তাঁর তিনটি কন্যাসন্তান ছিল। ছাত্রজীবনে বঙ্কিমচন্দ্রের মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। কাঁঠালপাড়ায় চতুষ্পাষ্ঠীতে তিনি সংস্কৃত নিয়ে পড়াশুনা করেন, সঙ্গে বাংলা ভাষার চর্চাও করতেন। ১৮৫৬ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র আইন পড়বার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দে সেখান থেকে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষা পাশ করেন। ১৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দে নতুন স্থাপিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বি.এ. পরীক্ষায় বঙ্কিমচন্দ্র দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। আইন পড়া শেষ হওয়ার আগেই যশোরের ডেপুটি ম্যাজিস্টেট ও ডেপুটি কলেক্টর চাকরি পান। এর বেশ কয়েক বছর বাদে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম বিভাগে বি.এল. পরীক্ষা পাশ করেন।
১৮৬০ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র নেঁগুয়ায় (কাঁথি) বদলি হন। এইখানেই ‘কপালকুণ্ডলা’ কাহিনীর উতপত্তি। ঐ বছরেই উনি আবার খুলনায় বদলি হন। খুলনার মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি শক্ত হাতে নীলকর সাহেবদের দৌরাত্ম দমন করেছিলেন। কর্মক্ষেত্রে তিনি ন্যায়নিষ্ঠ, নির্ভীক, কর্তব্যপরায়ণ, সুযোগ্য শাসক ও বিচারক ছিলেন। ইংরেজ সরকার তাঁকে শেষজীবনে রায়বাহাদুর এবং সি.আই.ই. উপাধিতে ভূষিত করেন। তেত্রিশ বছর সরকারি চাকরি করার পর ১৮৯১ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর বঙ্কিমচন্দ্র অবসর গ্রহণ করেন। শেষ জীবন উনি কলকাতা মাডিকেল কলেজের সামনে প্রতাপ চাটুজ্যের গলিতে নিজের বাড়িতে কাটেয়েছেন। ঐখানেই বহুমত্র রোগে ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দের ৮ এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়।
বঙ্কিমচন্দের জীবন দীর্ঘ নয়, তারই মধ্যে তাঁর সাহিত্য সাধনা বিস্ময়কর। হুগলি কলেজে ছাত্রজীবনে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের রচনার আদর্শে ‘সংবাদ প্রভাকরে’ ও ‘সংবাদ সাধুরঞ্জনে’ গদ্য, পদ্য লিখতেন। ৪২ বছরের সাহিত্যসাধনা তাঁর ছাত্রজীবন, কর্মজীবন, শেষজীবন পর্যন্ত ব্যাপ্ত ছিল। ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে তিনি শেষ লেখা লেখেন। বঙ্কিমচন্দের প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৩৪। ১৫ বছর বয়সে তিনি দুটি ছোট কাব্য রচনা করেন। তিন বছর পরে ঐ দুটি কাব্য ‘ললিতা-পুরাকালিক গল্প তথা মানস’ নামে প্রকাশিত হয়।
ইংরেজী ভাষায় দক্ষ বঙ্কিমচন্দ্র খুলনায় ‘Rajmohan’s Wife’ নামে এক ইংরেজী উপন্যাস রচনা করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সাহিত্য জীবনের আরম্ভ। এই উপন্যাস দিয়েই বঙ্কিমচন্দ্র এক নতুন দিগন্ত খুলে ধরলেন। বাঙালীর রোমান্টিক সত্তার এক নতুন জাগরণ ঘটলো বঙ্কিমচন্দ্রের রচনার তিনটি দিয়ে- ‘দুর্গেশনন্দিনী’, ‘কপালকুণ্ডলা’, এবং ‘মৃনালিনী’। এরপর দেখা দিল বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিভার প্রদীপ্ত মধ্যযুগ বঙ্গদর্শন পত্রিকার প্রকাশনা ও সম্পাদনার মাধ্যমে। এই মাসিক পত্রে তিনি পরপর ‘বিষবৃক্ষ’, ‘ইন্দিরা’, ‘যুগলাঙ্গুরীয়’, ‘চন্দ্রশেখর’ ইত্যাদি উপন্যাসের সঙ্গে নানা বিষয়ে নানা প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন, যথা ‘লোকরহস্য’, ‘বিজ্ঞানরহস্য’, ‘কমলাকান্তের দপ্তর’, ‘সাম্য’ প্রভৃতি। বঙ্গদর্শনের আবির্ভাব বাংলা সাহিত্যে যুগান্তর এনেছিল। সম্পাদক বঙ্কিমচন্দ্রের বিশিষ্ট অবদান হল প্রবন্ধ ও সমালোচনা সাহিত্যের বিকাশ ও বিস্তার। দুবছর বন্ধ থাকার পর সঞ্জীবচন্দ্রের সম্পাদনায় ‘বঙ্গদর্শন’ আবার বার হয়। ‘রাধারাণী’, ‘রজনী’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ এই যুগের রচনা।
বঙ্কিমচন্দ্রের মধ্যযুগের রচনায় দেখা যায় সৌন্দর্য ও লোকশিক্ষার মিলন। শেষ যুগে লোকশিক্ষার প্রাধান্য। প্রতিভার শেষধাপে প্রকাশিত পত্রিকা ‘নবজীবন’ ও ‘প্রচার’। এই যুগের প্রধান উপন্যাস ‘রাজসিংহ’ (১৮৮২ খ্রী), ‘আনন্দমঠ ‘ (১৮৮২ খ্রী), ‘দেবী চৌধুরাণী’ (১৮৮৩ খ্রী), ‘সীতারাম’ (১৮৮৭ খ্রী)। ‘দেবী চৌধুরাণী’ আংশিক ভাবে ‘বঙ্গদর্শনে’ প্রকাশিত হয়। ‘সীতারাম’, ‘প্রচারে’ প্রকাশিত হয়। তাঁর অনেক উপন্যাসই তিনি বারবার নতুন ভাবে লিখেছেন বা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছেন। দৃষ্টান্ত হল ‘ইন্দিরা’, ‘রাজসিংহ’ ও ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’।
বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিভার শেষ পর্যায় পূর্ণভাবে প্রকাশ পেল স্বাদেশিকতা ও অনুশীলন ধর্মের ব্যাখ্যা। ‘কমলাকান্তের দপ্তরে’র নায়ক নেশাখোর কমলাকান্তের মুখে মাতৃপ্রেমের প্রথম প্রকাশ ‘আনন্দমঠের’ ‘বন্দেমাতরম’ মন্ত্রে পূর্ণ প্রতিষ্ঠা পেল। ‘অনুশীলন’ ধর্মমূলক প্রবন্ধ ‘নবজীবন’ প্রকাশিত হয়। এই ধর্মের আদর্শ সম্বন্ধে ‘স্ব-স্বভাবানুবর্তিতা’ প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, “সকল প্রকার মানসিক বৃত্তির সম্যক অনুশীলন, সম্যক স্ফুর্তি ও যথোচিত উন্নতি ও বিশুদ্ধিই মনুষ্য জীবনের উদ্দেশ্য”। এখানে বঙ্কিমচন্দ্র জন স্টুয়ার্ট মিলের শিষ্য ও মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণের অনুগামী। শ্রীকৃষ্ণই অনুশীলন ধর্মের আদর্শ। ‘কৃষ্ণচিত্র’ প্রথমে ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয় ‘প্রচারে’। ‘নবজীবনে’ ধর্ম-জিজ্ঞাস্য-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলি ‘ধর্মতত্ত্ব প্রথম ভাগ অনুশীলন’ নামে ১৮৮৮ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
বঙ্কিমচন্দ্রের প্রায় সব উপন্যাসই ইংরেজী, জার্মান, হিন্দী, কানাড়া, তেলেগু প্রভৃতি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। তাঁর উপন্যাসগুলির নাট্যরূপ সাফল্যের সঙ্গে মঞ্চে অভিনীত ও সিনেমায় রূপায়িত হয়েছে। উপন্যাসগুলির নাটকীয়তা ও রোমান্টিকভাব সফলতার একটা কারণ। ঐতিহাসিক উপন্যাসের বিস্তৃত আঙিনায় বাঙালীর রোমান্টিক মনকে প্রথমে মুক্তি দিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র। ভাষা ও উপন্যাসের কাঠামো তৈরীর বিষয়ে তিনি পথ দেখিয়েছিলেন। দেশের রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয়, সামাজিক ও শিক্ষামূলক উন্নতির সব রকম প্রয়াসে তিনি অবিরাম লেখনী চালনা করেছেন। ‘আনন্দমঠের’ ‘বন্দেমাতরম’ মন্ত্র ভারতবর্ষে রাষ্ট্রীয় ভাব প্রবুদ্ধ করেছে, অপূর্ব দেশপ্রীতির উদ্ভব ঘটিয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র কেবলমাত্র সাহিত্যিক বা লেখক নন, উপরন্তু তিনি যুগস্রষ্টা। ঐতিহাসিক, রোমান্টিক, পারিবারিক- এই তিন ধারায় উতসারিত বঙ্কিমচন্দ্রের আখ্যানগুলির সমসাময়িক ও পরবর্তী সাহিত্য ও জীবনের ওপর অপরিসীম প্রভাব বিস্তার করেছে। রাসভারী, গম্ভীর লোক হলেও বন্ধুবত সলতার গুণে সুধীবৃন্দের সমাবেশে উন্নতরুচি, পরিচ্ছন্ন, সুদর্শন বঙ্কিমচন্দ্র প্রতিভার দীপ্তিচ্ছটায় বাংলা সাহিত্যের আকাশ সমুজ্জ্বল রেখেছিলেন।
রচনাবলী
- বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- (দুৰ্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয়, চন্দ্রশেখর, রাধারাণী, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ, দেবী চৌধুরাণী, সীতারাম)
- বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) (পরিলেখন প্রকল্প) •
সঙ্কলন
- উপকথা (১৮৭৭) - ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয়, রাধারাণী (পরিলেখন প্রকল্প) •
উপন্যাস
- রাজমোহনের স্ত্রী (১৮৬৪) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬)(পরিলেখন প্রকল্প) •
(দামোদর মুখোপাধ্যায় রচিত দ্বিতীয় ভাগ: (পরিলেখন প্রকল্প) •
)
- মৃণালিনী (১৮৬৯) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- বিষবৃক্ষ (১৮৭৩) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- ইন্দিরা (১৮৭৩) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- যুগলাঙ্গুরীয় (১৮৭৪) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- চন্দ্রশেখর (১৮৭৫) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- রাধারাণী (১৮৭৭) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- রজনী (১৮৭৭) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- রাজসিংহ (১৮৮২) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- আনন্দমঠ (১৮৮২) (পরিলেখন প্রকল্প) •
, (পরিলেখন প্রকল্প) •
- দেবী চৌধুরাণী (১৮৮৪)(পরিলেখন প্রকল্প) •
- সীতারাম (১৮৮৭)(পরিলেখন প্রকল্প) •
- বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী:
- প্রথম ভাগ (পরিলেখন প্রকল্প) •
,
- দ্বিতীয় ভাগ (পরিলেখন প্রকল্প) •
,
- তৃতীয় ভাগ (পরিলেখন প্রকল্প) •
- প্রথম ভাগ (পরিলেখন প্রকল্প) •
রম্যরচনা
- লোকরহস্য
- প্রথম সংস্করণ (১৮৭৪) - (পরিলেখন প্রকল্প) •
- বঙ্কিম-শতবার্ষিকী সংস্করণ (১৯৩৯) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- প্রথম সংস্করণ (১৮৭৪) - (পরিলেখন প্রকল্প) •
- কমলাকান্ত (১৮৮৫) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- কমলাকান্তের দপ্তর (১৮৭৫) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- কমলাকান্তের দপ্তর (১৮৭৫) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- মুচিরাম গুড়ের জীবন-চরিত (১৮৮৪) (পরিলেখন প্রকল্প) •
প্রবন্ধ
- বিজ্ঞানরহস্য (১৮৭৫) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- বিবিধ সমালোচন (১৮৭৬) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- প্রবন্ধ পুস্তক (পরিলেখন প্রকল্প) •
- বিবিধ (পরিলেখন প্রকল্প) •
- বিবিধ প্রবন্ধ— প্রথম ভাগ (১৮৮৭) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- বিবিধ প্রবন্ধ— দ্বিতীয় ভাগ (১৮৯২) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- সাম্য (১৮৭৯)
- বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী (নবম ভাগ) (১৮৮০) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- কৃষ্ণচরিত্র (১৮৯২) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- ধর্মতত্ত্ব (১৮৮৮) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (১৯০২) (পরিলেখন প্রকল্প) •
- দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম
- লোকরহস্য (১৮৭৪)
জীবনীসাহিত্য
- "রায় দীনবন্ধু মিত্র বাহাদুরের জীবনী ও গ্রন্থাবলীর সমালোচনা" (পরিলেখন প্রকল্প) •
- "ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জীবনচরিত ও কবিত্ব" (পরিলেখন প্রকল্প) •
- "বাঙ্গালা সাহিত্যে প্যারীচাঁদ মিত্র"
- "সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী"
অগ্রন্থিত রচনা
কাব্য-কবিতা
- দুর্গোৎসব
- ললিতা তথা মানস(পরিলেখন প্রকল্প) •
- কবিতাপুস্তক (১৮৭৮) (পরিলেখন প্রকল্প) •
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ