"ঈশা বাস্যমিদꣳ সর্বꣳ য়ৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্ ॥১॥" [ঈশাবাস্যোপনিষদ্ ১.১]
পদার্থঃ- হে মনুষ্য ! তুমি (য়ৎ) যাহা (ইদম্) প্রকৃতি হইতে লইয়া পৃথিবী পর্য্যন্ত (সর্বম্) সকল -(জগত্যাম্) প্রাপ্ত হওয়ার যোগ্য সৃষ্টিতে (জগৎ) চরপ্রাণীমাত্র (ঈশা) সম্পূর্ণ ঐশ্বর্য্য দ্বারা যুক্ত সর্বশক্তিমান্ পরমাত্মা দ্বারা (বাস্যম্) আচ্ছাদন করিবার যোগ্য অর্থাৎ সব দিক দিয়া ব্যাপ্ত হওয়ার যোগ্য (তেন) সেই (ত্যক্তেন) ত্যাগ করা জগত হইতে (ভুঞ্জীথাঃ) পদার্থগুলিকে ভোগ করিবার অনুভব কর (কিঞ্চ) কিন্তু (কস্য, স্বিৎ) কাহারও (ধনম্) বস্তুমাত্রের (মা) না ( গৃধঃ) অভিলাষা কর ॥ ১ ॥
সরলার্থঃ হে মনুষ্য! এই প্রকৃতি (কারণ) থেকে শুরু করে পৃথিবী (কার্য) পর্যন্ত সমস্ত গতিশীল সৃষ্টিতে যে চরাচর জগৎ আছে, তা ঈশ্বরের দ্বারা আচ্ছাদনীয় অর্থাৎ সর্বতোভাবে অভিব্যাপ্ত। সেই কারণে ত্যাগপূর্বক অর্থাৎ জগৎ থেকে চিত্তকে সরিয়ে (বাসনারহিত হয়ে) ভোগ্য পদার্থসমূহের উপভোগ করো। কিন্তু এই ধন কার? অর্থাৎ সবকিছুই ঈশ্বরের। অতএব, কারো ধন অর্থাৎ বস্তুমাত্রের অভিলাষ কোরো না ॥১॥
ভাবার্থঃ যে সব মনুষ্য ঈশ্বরকে ভয় করেন যে, ইনি আমাদের সবসময় সব দিক থেকে দেখেন, এই জগৎ ঈশ্বরের দ্বারা ব্যাপ্ত অর্থাৎ সর্বত্র ঈশ্বর বিদ্যমান; এইপ্রকারে সেই সর্বব্যাপক অন্তর্যামী ঈশ্বরকে যারা জানেন, তারা কখনো অন্যায়-আচরণ দ্বারা অন্য কারো কোনো দ্রব্য গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা করেন না। তারা এই ত্যাগের মাধ্যমে ধার্মিক হয়ে ইহলোকে অভ্যুদয় এবং পরলোকে নিঃশ্রেয়সরূপ ফল প্রাপ্ত হয়ে সর্বদা আনন্দে মগ্ন থাকবে॥১॥
অন্যত্র ব্যাখ্যাতঃ হে মনুষ্য! যিনি এই সংসারের যাবতীয় গতিশীল বস্তুর মধ্যে ব্যাপ্ত হয়ে তাদের নিয়ন্তারূপে আছেন, তিনিই ঈশ্বর। তাঁকে ভয় করে তুমি অন্যায়পূর্বক কারো ধন গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা কোরো না। সেই অন্যায়াচরণ ত্যাগপূর্বক ন্যায়াচরণ-রূপ ধর্মানুষ্ঠান দ্বারা নিজ আত্মায় আনন্দ ভোগ করো (সত্যার্থ প্রকাশ, সপ্তম সমুল্লাস) ॥১॥
ভাষ্যসারঃ মনুষ্য পরমাত্মাকে জেনে কী করবে- এই গতিশীল সৃষ্টিতে প্রকৃতি থেকে শুরু করে পৃথিবী পর্যন্ত যে চরাচর জগৎ আছে, সে সমস্তই- সকল ঐশ্বর্যসম্পন্ন, সর্বশক্তিমান পরমাত্মা দ্বারা আচ্ছাদিত অর্থাৎ সকল দিক থেকে ব্যাপ্ত। ঈশ্বর সর্বত্র বিদ্যমান; তিনি সর্বব্যাপী ও সর্বান্তর্যামী। তিনি সর্বদা সবদিক থেকে মানুষদের দেখছেন। এরূপ নিশ্চিত জেনে মনুষ্য ঈশ্বরকে ভয় করে ত্যাগপূর্বক নিজের ভোগ্য-পদার্থের উপভোগ করবে। ধার্মিক হয়ে ইহলোকে ঈশাবাস্যোপনিষদ্ অভ্যুদয় ফল এবং পরলোকে নিঃশ্রেয়স ফল (মোক্ষ) লাভ করে সদা আনন্দে থাকবে। এই ধন কার? অর্থাৎ কারোর নয়, এই সমস্ত ধন পরমাত্মারই। তিনিই কর্ম অনুসারে সবাইকে ভোগ্য। প্রদান করেছেন। অতএব, কখনো অন্যায়পূর্বক অন্য কারো ধন অথবা দ্রব্য গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা কোরো না ॥১॥
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ