বিক্রম সম্বৎ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

15 July, 2017

বিক্রম সম্বৎ

নানান লোকগাথা, কিংবদন্তি, জনশ্রুতি আর রোমাঞ্চকর ও ঐতিহ্যশালী ইতিহাসে পরিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ প্রাচীন ভারতবর্ষ।

প্রাচীন ভারতবর্ষে শাসন করেছেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, সম্রাট বিন্দুসার, সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত, সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত, সম্রাট খারবেলা, সম্রাট গৌতমীপুত্র শতকার্নী প্রভৃতিদের মতো বহু শক্তিশালী ও মহান সম্রাট।
এদের মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয় লোকগাথা আর জনশ্রুতির ফলে ঐতিহাসিক চরিত্র থেকে কিংবদন্তি চরিত্রে পরিণত হয়েছেন।
প্রাচীন ভারতবর্ষের কিংবদন্তি সম্রাটদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিক্রমাদিত্য।
লোকগাথা আর জনশ্রুতিতে সম্রাট বিক্রমাদিত্য অমর হয়ে রয়েছেন তাঁর শৌর্য, পরাক্রম, ন্যায়পরায়নতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, বিচক্ষণতা এবং বিদ্যান পণ্ডিত ব্যক্তিদের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতার জন্য।
এছাড়াও আরেকটি বিশেষ কারণে সমগ্র বিশ্বজুড়ে বসবাসকারী আপামর হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনতার হৃদয়ে চির অমর হয়ে রয়েছেন সম্রাট বিক্রমাদিত্য।
লোক মান্যতায় তিনিই হলেন হিন্দু বর্ষপঞ্জি “বিক্রম সম্বতের” সৃষ্টিকর্তা।
লোকগাথা অনুযায়ী সম্রাট বিক্রমাদিত্য আনুমানিক ১০৫ খ্রিষ্টপূর্বে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ১৫ খ্রিষ্টাব্দে পরলোকগমন করেছিলেন।
সম্রাট বিক্রমাদিত্যের রাজধানী ছিল প্রাচীন উজ্জয়িনী নগরীতে।
বেতাল পঁচিশি আর সিংহাসন ছত্রিশির মতো নানাবিধ ভারতীয় রূপকথায় স্থান পেয়েছেন সম্রাট বিক্রমাদিত্য।

অধিকাংশ লোকগাথার বর্ণনা অনুযায়ী সম্রাটের রাজধানী উজ্জয়িনী নগরী হলেও কিছু কিছু লোকগাথায় তাঁর রাজধানী হিসেবে পাটালিপুত্রের উল্ল্যেখ রয়েছে।
বিক্রম সম্বতের লোকগাথা
====================
জনশ্রুতি আনুমানিক ৫৭ খ্রিষ্টপূর্বে ভারতবর্ষের পশ্চিম প্রান্তে দেখা দিয়েছিল বিদেশি আগ্রাসনের ঝঞ্জা।
তাজিকিস্তান আর আফগানিস্থানের মরূপথে অশ্বপৃষ্ঠে ধূলিকণা উড়িয়ে তীক্ষ্ণধার নগ্ন অসি হস্তে সমৃদ্ধশালী ভারতবর্ষকে লুন্ঠন করবার বাসনায় ধেয়ে এসেছিল বর্বর শক আক্রমনকারীরা দল।
 ভারতমাতার বিপন্ন সময়ে তাঁর যোগ্য সন্তানের মতো তরবারি হস্তে চিনের প্রাচীরের ন্যায় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সম্রাট বিক্রমাদিত্য।
সম্রাটের পরাক্রম আর বীরত্বের সম্মুখে সম্পূর্ন বিধ্বস্ত হয়েছিল শকদের আক্রমণ।
সম্রাটের শৌর্যের ফলে রক্ষা পেয়েছিল হিন্দু ধর্ম আর সনাতনী সভ্যতা।
পরাজিত শক বাহিনী বাধ্য হয়েছিল সনাতন ধর্ম গ্রহণ করে ভারতবর্ষকেই নিজেদের মাতৃভূমি হিসাবে স্বীকার করতে।

পরবর্তীকালে নিজের এই নির্ণায়ক জয়কে স্মরণীয় করতে ৫৭ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে একটি নতুন বর্ষ পঞ্জি চালু করেন সম্রাট। সম্রাটের নামের সাথে সাযুজ্য রেখে সেই বর্ষ পঞ্জি পরিচিতি লাভ করে “বিক্রম সম্বৎ” নামে।
ইতিহাসের পাতায় সম্রাট বিক্রমাদিত্য
=============================
এবারে আসুন জেনে নেওয়া যাক সম্রাট বিক্রমাদিত্যের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব সংস্কৃত শব্দ “বিক্রমাদিত্যের” অর্থ সাহসিকতা আর পরাক্রমি সূর্য। “বিক্রম” শব্দের অর্থ পরাক্রম আর “আদিত্য” শব্দের অর্থ সূর্য। প্রাচীন ভারতবর্ষের বহু সম্রাট ও নরেশ ঐতিহ্যশালী বিক্রমাদিত্য উপাধি ধারণ করেন। এমনকি বিদেশি তুর্কি শাসিত পরাধীন মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষেও হেমুর মতো দুয়েকজন হিন্দু শাসক এই উপাধি ধারণ করেন। বহু লোকগাথা কিংবদন্তি সম্রাট বিক্রমাদিত্যকে স্মেচ্ছ যবন আগ্রাসনকারীদের হাত থেকে ভারতবর্ষের উদ্ধারক বলে দাবি জানিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কে এই মহান সম্রাট ? তাঁর আসল ঐতিহাসিক পরিচয় কি ? তিনি কি কোন একক সম্রাট ছিলেন নাকি প্রাচীন ভারতবর্ষের বিক্রমাদিত্য উপাধিধারী বহু সম্রাটের সমষ্টি ছিলেন ? ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম বিক্রমাদিত্য উপাধি ধারণ করেন ষষ্ঠ গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত। সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের ঐতিহাসিক শাসনকাল ৩৮০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৪১৫ খ্রিষ্টাব্দ। এই মহান গুপ্ত সম্রাট একাধারে এক মহান ও নির্ভীক যোদ্ধা, ন্যায় পরায়ণ সুশাসক, বিদ্যানুরাগী আর প্রজাবৎসল ছিলেন। তিনি পশ্চিমের শকজাত পশ্চিমী ক্ষত্রপা আক্রমণকারীদের পরাজিত করে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডকে সুরক্ষিত করেছিলেন। তাঁর শাসনকালকে ভারতবর্ষের স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু বিক্রমসম্বতের প্রারম্ভকাল (৫৭ খ্রিষ্টপূর্ব) আর সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শাসনকাল ভিন্ন সময়ে ভিন্ন শতকে। বিক্রম সম্বতের সময়কালে অর্থাৎ ৫৭ খ্রিষ্টপূর্বের নিকটবর্তী সময়কালে উৎকলের পরাক্রমশালী সম্রাট খারবেলা গ্রীক যবন আক্রমণকারী ডিমেট্রিয়াসকে নির্মম ভাবে পরাজিত করে ভারতবর্ষকে রক্ষা করেছিলেন।
 কিছু লোকগাথা দাবি করে সাতবাহন শাসক শালিবাহন ওই সময়ে শকদের পরাজিত করে শকাব্দ বর্ষ পঞ্জির সূত্রপাত করেছিলেন।
কিন্তু সম্রাট শালিবাহন নামে কোন সাতবাহন শাসকের অস্তিত্ব সম্বন্ধেই সন্ধিহান ঐতিহাসিকগণ। ঐতিহাসিক ভাবে আসলে খ্রিষ্টাব্দের দ্বিতীয় শতাব্দীতে সাতবাহন সম্রাট গৌতমীপুত্র শতকার্নী শক জাত পশ্চিমী ক্ষত্রপাদের পরাজিত করেছিলেন।
সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ছাড়াও প্রাচীনকালের আর যে সকল ভারতীয় সম্রাটরা বিক্রমাদিত্য উপাধি ধারণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মালওয়া নরেশ যশধর্মা। ৫২৮ খ্রিষ্টাব্দে রাজা যশধর্মা স্মেচ্ছ হুন আগ্রাসনকারী মিহিরকুলকে নির্মম ভাবে পরাজিত করে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডকে রক্ষা করেছিলেন। কাশ্মীরি পণ্ডিত কলহানের “রাজতরঙ্গিনী” গ্রন্থ অনুযায়ী সম্রাট হর্ষ বিক্রমাদিত্য শক আক্রমণকারীদের পরাজিত করেছিলেন। ঐতিহাসিক ডি সি সরকারের মতে কলহান সম্ভবত পুষ্পবতী রাজবংশের রাজা হর্ষবর্ধনের সহিত কিংবদন্তি সম্রাট বিক্রমাদিত্যকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন। এছাড়াও বিক্রমাদিত্য উপাধিধারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন দক্ষিণাত্যের চালুক্য বংশের সম্রাটরা। অন্তত সাতজন চালুক্য সম্রাট বিক্রমাদিত্য উপাধি ব্যবহার করেছিলেন। এদের মধ্যে সম্রাট দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্য চালুক্য সম্রাট নাগভট্ট দ্বিতীয় আর বাপ্পা রাওয়ালের সাথে হিন্দু বাহিনীর এক মহাজোট নির্মাণ করে আরবের খলিফা বাহিনীর ইসলামিক আগ্রাসনকারীদের পরাজিত করেছিলেন। ওনার শাসনকাল ছিল ৭৩৩ থেকে ৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দ।
এইসব আলোচনা থেকে কিংবদন্তি সম্রাট বিক্রমাদিত্যের সাথে সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের অধিক মিল পাওয়া যায়। কিন্তু এদের শাসনকাল ভিন্ন সময়ে। এছাড়াও আলোচনায় বর্ণিত অন্যান্য বিক্রমাদিত্য উপাধিধারী সম্রাটদের সাথেও কিংবদন্তি সম্রাট বিক্রমাদিত্যের বহু চরিত্রগত মিল পাওয়া যায়। এই থেকে সহজেই অনুমেয় যে কিংবদন্তি সম্রাট বিক্রমাদিত্য কোন একক সম্রাট বা ব্যক্তি নন। প্রাচীন ঐতিহ্যশালী ভারতবর্ষের চেতনা, উন্নত জ্ঞান, সমৃদ্ধি আর তৎকালীন সময়ের একাধিক মহান সম্রাটের সমষ্টি যাদের তীক্ষ্ণ অসি এবং শক্তিশালী বাহু বারংবার ভারতবর্ষকে রক্ষা করেছে বর্বর বিদেশি আগ্রাসনকারীদের অত্যাচার থেকে এবং জন্ম দিয়েছে হিন্দু বর্ষ পঞ্জি বিক্রম সম্বতের যা আজ শুধুমাত্র নেপালের সরকারি বর্ষপঞ্জি (ক্যালেন্ডার)।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

সূর্য কি স্থির না গতিশীল?

  সূর্য ও পৃথিবী সম্পর্কে জানুন ... সূর্যের অবস্থান আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৫,০০০ - ২৮,০০০ আলোকবর্ষ দূরে, এবং এটি অবিরত ছায...

Post Top Ad

ধন্যবাদ