শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ষোড়শ-অধ্যায় - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

19 July, 2017

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ষোড়শ-অধ্যায়

ষোড়শ-অধ্যায়-দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগযোগ
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ষোড়শ-অধ্যায়

 শ্রীভগবানুবাচ
অভয়ং সত্ত্বসংশুদ্ধির্জ্ঞানযোগব্যবস্থিতিঃ।
দানং দমশ্চ যজ্ঞশ্চ স্বাধ্যায়স্তপ আর্জবম্।।১।।
অহিংসা সত্যমক্রোধস্ত্যাগঃ শান্তিরপৈশুনম্।
দয়া ভূতেষ্বলোলুপ্ত্বং মার্দবং হ্রীরচাপলম্।।২।।
তেজঃ ক্ষমা ধৃতিঃ শৈৗচমদ্রোহো নাতিমানিতা।
ভবন্তি সম্পদং দৈবীমভিজাতস্য ভারত।।৩।।

শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভগবান বলিলেন) অভয়ং (ভয়শূন্যতা) সত্ত্বসংশুদ্ধিঃ (চিত্তের প্রসন্নতা) জ্ঞানযোগব্যবস্থিতিঃ (জ্ঞানোপায় অমানিত্বাদিতে নিষ্ঠা) দানং (দান) দমঃ (বাহ্যেন্দ্রিয় সংযম) যজ্ঞঃ চ (যজ্ঞ) স্বাধ্যায়ঃ (বেদপাঠ) তপঃ (তপস্যা) আর্জ্জবম্ (সরলতা) অহিংসা (হিংসা রাহিত্য) সত্যম্ (সত্য) অক্রোধঃ (ক্রোধাভাব) ত্যাগঃ (পুত্ত্রকলত্রাদিতে মমতা ত্যাগ) শান্তিঃ (মনঃ সংযম) অপৈশুনম্ (পরের দোষানুসন্ধান বর্জ্জন) ভূতেষু (প্রাণিগণের প্রতি) দয়া (করুণা) অলোলুপ্ত্বং (লোভের অভাব) মার্দ্দবং (মৃদুতা) হ্রীঃ (অসৎ কর্ম্মে লজ্জা) অচাপলম্ (অচঞ্চলভাব) তেজঃ (তেজ) ক্ষমা (সহিষ্ণুতা) ধৃতিঃ (ধৈর্য্য) শৌচম্ (বাহ্য ও অভ্যন্তরশুদ্ধি) অদ্রোহঃ (জিঘাংসারাহিত্য) ন অতিমানিতা (অভিমান শূন্যতা) [হে] ভারত ! (হে অর্জ্জুন !) [এতেগুণাঃ] (এই সকল গুণ ) দৈবীম্ (সাত্ত্বিক) সম্পদং (সম্পদের) অভিজাতস্য (অভিমুখে জাত ব্যক্তির) ভবন্তি (উদিত হইয়া থাকে) ॥১–৩॥


শ্রীভগবান্ কহিলেন—অভয়, চিত্তের প্রসন্নতা, আত্মজ্ঞানে দৃঢ়নিষ্ঠা, দান, বাহ্যেন্দ্রিয় সংযম, যজ্ঞ, বেদপাঠ, তপস্যা, সরলতা, অহিংসা, সত্য, অক্রোধ, ত্যাগ, শান্তি, পরের দোষ না দেখা, জীবে দয়া, নির্লোভ, মূদুতা, লজ্জাশীলতা, অচপলতা, তেজ, ক্ষমা, ধৈর্য্য, শৌচ, অদ্রোহ ও অভিমানশূন্যতা—হে ভারত ! এই সকল গুণ সাত্ত্বিক সম্পদের অভিমুখে জাত ব্যক্তির উদিত হয় ॥১–৩॥

অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান বললেন-হে ভারত! ভয়শূন্যতা, সত্তার পবিত্রতা, পারমার্থিক জ্ঞানের অনুশীলন, দান, আত্মসংযম, যজ্ঞ অনুষ্ঠান, বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন, তপশ্চর্যা, সরলতা, অহিংসা, সত্যবাদিতা, ক্রোধশূন্যতা, বৈরাগ্য, শান্তি, অন্যের দোষ দর্শন না করা, সমস্ত জীবে দয়া, লোভহীনতা, মৃদুতা, লজ্জা, অপচলতা, তেজ, ক্ষমা, ধৈর্য, শৌচ, মাৎসর্য শূন্যতা, অভিমান শূন্যতা- এই সমস্ত গুণগুলি দিব্যভাব সমন্বিত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়।
দম্ভো দর্পোহভিমানশ্চ ক্রোধঃ পারুষ্যমেব চ।
অজ্ঞানং চাভিজাতস্য পার্থ সম্পদমাসুরীম্।।৪।।

[হে] পার্থ ! (হে কুন্তীপুত্র !) দম্ভঃ (ধর্ম্মধ্বজিতা) দর্পঃ (বিদ্যাধন সৎকূলত্বাদি নিমিত্ত গর্ব্ব) অভিমানঃ চ (নিজের পূজ্যত্ব বুদ্ধি) ক্রোধঃ (ক্রোধ) পারুষ্যম্ এব চ (নিষ্ঠুরতা) অজ্ঞানং চ (অবিবেকিতা) [এ তে গুণাঃ] (এই সকল অসৎগুণ) আসুরীম্ (আসুরী) সম্পদম্ (সম্পদের) অভিজাতস্য (অভিমুখে জাত ব্যক্তির) [ভবন্তি] (হইয়া থাকে) ॥৪॥


হে পার্থ! দম্ভ, দর্প, অভিমান, ক্রোধ, নিষ্ঠুরতা, ও অবিবেকিতা—এই সকল অসৎগুণ আসুরী সম্পদের অভিমুখে জাত ব্যক্তির হইয়া থাকে ॥৪॥

অনুবাদঃ হে পার্থ! দম্ভ, দর্প, অভিমান, ক্রোধ, রূঢ়তা ও অবিবেক- এই সমস্ত সম্পদ আসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তিদের লাভ হয়।

দৈবী সম্পদ্ বিমোক্ষায় নিবদ্ধায়াসুরী মতা।
মা শুচঃ সম্পদং দৈবীমভিজাতোহসি পান্ডব।।৫।।

দৈবী সম্পদ্ (দৈবী সম্পদ্) বিমোক্ষায় (বন্ধন মুক্তির) আসুরী [চ] (ও আসুরী সম্পদ্) নিবন্ধায় (বন্ধনের কারণ বলিয়া) মতা (কথিত হয), [হে] পাণ্ডব ! (হে পাণ্ডুপুত্ত্র !) [ত্বং] (তুমি) মা শু চঃ (শোক করিও না) দৈবীম্ (দৈবী) সম্পদং (সম্পদ্) অভি (আশ্রয় করিয়া) জাতঃ অসি (জন্মগ্রহণ করিয়াছ) ॥৫॥


দৈবসম্পদ্ বন্ধনমুক্তির এবং আসুরসম্পদ্ দৃঢ় বন্ধনের কারণ বলিয়া কথিত হয় । হে পাণ্ডব ! শোক করিও না, তুমি দৈবী সম্পদ্ আশ্রয় করিয়াই জন্মগ্রহণ করিয়াছ ॥৫॥

অনুবাদঃ দৈবী সম্পদ মুক্তির অনুকূল, আর আসুরিক সম্পদ বন্ধনের কারণ বলে বিবেচিত হয়। হে পান্ডুপুত্র! তুমি শোক করো না, কেন না তুমি দৈবী সম্পদ সহ জন্মগ্রহণ করেছ।

দ্বৌ ভূতসর্গৌ লোকেহস্মিন্ দৈব আসুর এব চ।
দৈবো বিস্তরশঃ প্রোক্ত আসুরং পার্থ মে শৃণু।।৬।।

[হে] পার্থ ! (হে অর্জ্জুন !) অস্মিন্ (এই) লোকে (সংসারে) দৈবঃ (দেবপ্রকৃতি) আসুরঃ চ (ও অসুরপ্রকৃতি) দ্বৌ এব (এই দুই প্রকার) ভূতসর্গৌ (প্রাণিসৃষ্টি) [দৃশ্যতে] (দেখা যায়) । দৈবঃ (দেবপ্রকৃতির বিষয়) বিস্তরশঃ (বিস্তৃত ভাবে) প্রোক্তঃ (কথিত হইয়াছে), মে (আমার নিকট) আসুরং (অসুরপ্রকৃতির বিষয়) শৃণু (শ্রবণ কর) ॥৬॥


হে পার্থ! এই জগতে দেব-প্রকৃতি ও অসুর-প্রকৃতি—এই দুই প্রকার জীব-সৃষ্টি দেখা যায় । জীবের দৈবী সম্পৎ সম্বন্ধে তোমাকে সবিস্তারে বলিয়াছি, এক্ষণে আমার নিকট আসুরী সম্পদের বিষয় শ্রবণ কর ॥৬॥

অনুবাদঃ হে পার্থ! এই সংসারে দৈব  ও আসুরিক-এই দুই প্রকার জীব সৃষ্টি হয়েছে। দৈব সম্বন্ধে বিস্তারিতভবে বলা হয়েছে। এখন আমার থেকে অসুর প্রকৃতি সম্বন্ধে শ্রবণ কর।

প্রবৃত্তিং চ নিবৃত্তিং চ জনা ন বিদুরাসুরাঃ।
ন শৌচং নাপি চাচারো ন সত্যং তেষু বিদ্যতে।।৭।।

আসুরাঃ (অসুর প্রকৃতি) জনাঃ (লোকসমূহ) প্রবৃত্তিং চ (ধর্ম্মে প্রবৃত্তি) নিবৃত্তিং চ (ও অধর্ম্ম হইতে নিবৃত্তি) ন বিদুঃ (জানে না) ; তেষু (তাহাদের মধ্যে) শৌচং (শুচিতা) ন বিদ্যতে (নাই), আচারঃ অপি (সদাচারও) ন (নাই), সত্যং চ (এবং সত্যও) ন (নাই) ॥৭॥


অসুর প্রকৃতি লোকসমূহ ধর্ম্মে প্রবৃত্তি ও অধর্ম্ম হইতে নিবৃত্তির বিষয় জানে না ; তাহাদের মধ্যে শুচিতা সদাচার ও সত্যপরায়ণতার কিছুই নাই ॥৭॥

অনুবাদঃ অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা ধর্ম বিষয়ে প্রবৃত্ত এবং অধর্ম বিষয় থেকে নিবৃত্ত হতে জানে না। তাদের মেধ্যে শৌচ, সদাচার ও সত্যতা বিদ্যমান নেই।

অসত্যমপ্রতিষ্ঠং তে জগদাহুরনীশ্বরম্।
অপরস্পরসম্ভুতং কিমন্যৎ কামহৈতুকম্।।৮।।

তে (তাহারা অর্থাৎ অসুর প্রকৃতি লোক সমূহ) জগৎ (জগৎকে) অসত্যম্ (মিথ্যা) অপ্রতিষ্ঠং (নিরাশ্রয়) অনীশ্বরম্ (নিরীশ্বর) অপরস্পরসম্ভূতং (পরস্পর সংসর্গজাত) কিম্ অন্যৎ (অন্য কি কথা ? ) কাম হেতুকম্ (কেবল কামই জগৎ সৃষ্টির হেতু) আহুঃ (বলিয়া থাকে) ॥৮॥


অসুর-প্রকৃতি লোকগণ জগৎকে মিথ্যা, আশ্রয়হীন, নিরীশ্বর ও পরস্পর সংসর্গ-জাত বলে ; অন্য কি কথা ? তাহাদের সিদ্ধান্ত একমাত্র কামই বিশ্ব সৃষ্টির হেতু ॥৮॥

অনুবাদঃ আসুরিক স্বভাববিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলে যে, এই জগৎ মিথ্যা, অবলম্বনহীন ও ঈশ্বরশূন্য। কামবশত এই জগৎ উৎপন্ন হয়েছে এবং কাম ছাড়া আর অন্য কোন কারণ নেই।

এতাং দৃষ্টিমবষ্টভ্য নষ্টাত্মানোহল্পবুদ্ধয়ঃ।
প্রভবস্ত্যুগ্রকর্মাণঃ ক্ষয়ায় জগতোহহিতাঃ।।৯।।

এতাং (এই প্রকার) দৃষ্টিম্ (দর্শন) অবষ্টভ্য (আশ্রয় করিয়া) নষ্টাত্মানঃ (আত্মতত্ত্ব জ্ঞানহীন) অল্প বুদ্ধয়ঃ (ক্ষুদ্রবুদ্ধি) উগ্রকর্ম্মাণঃ (ভীষণকর্ম্মা) অহিতাঃ (অমঙ্গল স্বরূপ) [অসুরাঃ] (অসুরগণ) জগতঃ (জগতের) ক্ষয়ায় (ধ্বংসের জন্যই) প্রভবন্তি (প্রভাব লাভ করে) ॥৯॥


এইরূপ দর্শন আশ্রয় করিয়া আত্মজ্ঞানহীন অল্পবুদ্ধি, ভীষণকর্ম্মা ও অমঙ্গল স্বরূপ অসুরগণ জগধ্বংসের জন্যই প্রভাব লাভ করে ॥৯॥

অনুবাদঃ এই প্রকার সিদ্ধান্ত অবলম্বন করে আত্মতত্ত্ব-জ্ঞানহীন, অল্প-বুদ্ধিসম্পন্ন, উগ্রকর্মা ও অনিষ্টকারী অসুরেরা জগৎ ধ্বংসকারী কার্যে প্রভাব বিস্তার করে।




কামমাশ্রিত্য দুষ্পূরং দম্ভানমদান্বিতাঃ।
মোহাদ্ গৃহীত্বাসদগ্রাহান্ প্রবর্তন্তেহশুচিব্রতাঃ।।১০।।

[তে] (তাদৃশ অসুরগণ) দুষ্পূরং (দুষ্পূরণীয়) কামম্ (বিষয়তৃষ্ণা) আশ্রিত্য (আশ্রয় করিয়া) দম্ভমানমদাম্বিতাঃ [সন্তঃ] (দম্ভ, মান ও মদে মত্ত হইয়া) মোহাৎ (মোহ বশতঃ) অসদ্­গ্রাহান্ (অসৎ বিষয়ে আগ্রহ) গৃহীত্বা (অবলম্বন পূর্ব্বক) অশুচিব্রতাঃ [সন্তঃ] (ঘোর অনাচারে) প্রবর্ত্তন্তে (প্রবৃত্ত হয়) ॥১০॥


তাদৃশ অসুরগণ দুষ্পূরণীয় কামনা আশ্রয় করিয়া মোহবশতঃ অসৎ বিষয়ে আগ্রহ অবলম্বন পূর্ব্বক দম্ভ, মান, ও মদে মত্ত হইয়া ঘোর অনাচারে প্রবৃত্ত হয় ॥১০॥

অনুবাদঃ সেই আসুরিক ব্যক্তিগণ দুষ্পরণীয় কামকে আশ্রয় করে দম্ভ, মান ও মদমত্ত হয়ে অশুচি কার্যে ব্রতী হয় এবং মোহবশত অসৎ বিষয়ে প্রবৃত্ত হয়।



চিন্তামপরিমেয়াং চ প্রলয়ান্তামুপাশ্রিতাঃ।
কামোপভোগপরমা এতাবদিতি নিশ্চিতাঃ।।১১।।
আশাপাশশতৈর্বদ্ধাঃ কামক্রোধপরায়ণাঃ।
ঈহন্তে কামভোগার্থমন্যায়েনার্থসঞ্চয়ান্।।১২।।

[তে] (তাহারা) প্রলয়ান্তাম্ (মৃত্যুকাল পর্য্যন্ত) অপরিমেয়াং চ (অপরিসীম) চিন্তাং (চিন্তাকে) উপাশ্রিতাঃ (আশ্রয় পূর্ব্বক) কামোপভোগপরমাঃ (কামোপভোগই চরম কার্য্য) এতাবৎ ইতি নিশ্চিতাঃ (এইরূপ নিশ্চয় করিয়া) আশাপাশশতৈঃ (শতশত আশাপাশে) বদ্ধাঃ (আবদ্ধ) কামক্রোধপরায়ণাঃ [সন্তঃ] (কাম ও ক্রোধ বশীভূত হইয়া) কামভোগার্থম্ (কাম ভোগের জন্য) অন্যায়েন (অন্যায়ভাবে) অর্থসঞ্চয়ান্ (অর্থ সংগ্রহের) ঈহন্তে (চেষ্টা করিয়া থাকে) ॥১১–১২॥


তাহারা আমৃত্যু অপরিসীম চিন্তাগ্রস্থ থাকিয়া কামোপভোগই চরম কার্য্য নিশ্চয় পূর্ব্বক শতশত আশাপাশে আবদ্ধ এবং কাম ও ক্রোধ বশীভূত হইয়া কামভোগের জন্য অন্যায়ভাবে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করিয়া থাকে ॥১১–১২॥

অনুবাদঃ অপরিমেয় দুশ্চিন্তার আশ্রয় গ্রহণ করে মৃত্যুকাল পর্যন্ত ইন্দ্রিয়সুখ ভোগকেই তারা তাদের জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। এভাবেই শত শত আশাপাশে আবদ্ধ হয়ে এবং কাম ও ক্রোধ-পরায়ণ হয়ে তারা কাম উপভোগের জন্য অসৎ উপায়ে অর্থ সঞ্চয়ের চেষ্টা করে।

ইদমদ্য ময়া লদ্ধমিমং প্রাপ্স্যে মনোরথম্।
ইদমন্তীদমপি মে ভবিষ্যতি পুনর্ধনম্।।১৩।।

অদ্য (আজ) ময়া (আমি) ইদম্ (ইহা) লব্ধম্ (পাইলাম) [পুনঃ] (আবার) ইদং (এই) মনোরথম্ (অভীষ্ট বস্তু) প্রাপ্স্যে (পাইব), ইদম্ (এই ধন) অস্তি (আছে) পুনঃ (আবার) ইদম্ অপি ধনম্ (এই ধনও) মে (আমার) ভবিষ্যতি (হইবে) ॥১৩॥


আজ আমি ইহা পাইলাম, আবার এই অভীষ্ট প্রাপ্ত হইব, আমার এই সম্পত্তি আছে, আবার এই ধনও আমারই হইবে ॥১৩॥

অসৌ ময়া হতঃ শত্রুর্হনিষ্যে চাপরানপি।
ঈশ্বরোহহমহং ভোগী সিদ্ধোহহং বলবান্ সুখী।।১৪।।

অসৌ (এই) শক্রঃ (শক্রুকে) ময়া (আমাকর্ত্তৃক) হতঃ (বিনষ্ট হইয়াছে) অপি চ (আরও) অপরান্ (অপর শক্রদিগকে) হনিষ্যে (বিনাশ করিব), অহম্ (আমি) ঈশ্বরঃ (প্রভু), অহং (আমি) ভোগী (ভোক্তা), অহং (আমি) সিদ্ধঃ (কৃতকৃত্য) বলবান্ ( বলবান্) সুখী (সুখী) ॥১৪॥


এই শত্রুকে আমি বধ করিলাম, অপর শত্রুগণকেও বিনাশ করিব, আমিই ঈশ্বর, আমিই ভোক্তা, আমিই কৃতকৃত্য, ও বলবান্ এবং আমিই সুখী ॥১৪॥

অঢ্যোহভিজনবানস্মি কোহন্যোহস্তি সদৃশো ময়া।
যক্ষ্যে দাস্যামি মোদিষ্য ইত্যজ্ঞানবিমোহিতাঃ।।১৫।।
অনেকচিত্তবিভ্রান্তা মোহজালসমাবৃতাঃ।
প্রসক্তাঃ কামভোগেষু পতন্তি নরকেহশুচৌ।।১৬।।

[অহং] (আমি) আঢ্যঃ (ধনী) অভিজনবান্ (কুলীন) অস্মি (হই) ময়া (আমার) সদৃশঃ (সমকক্ষ) অন্যঃ (অপর) কঃ (কে) অস্তি (আছে) ? [অহং] (আমি) যক্ষ্যে (যজ্ঞ করিব) দাস্যামি (দান করিব) মোদিষ্যে (ও আনন্দ করিব) ইতি (এইরূপ) অজ্ঞানবিমোহিতাঃ (অজ্ঞান—বিমোহিতা) অনেকচিত্তবিভ্রান্তাঃ (নানা চিন্তাতে বিভ্রান্ত চিত্ত) মোহজালসমাবৃতাঃ (মোহজালে আচ্ছন্ন) কামভোগেষু (ও বিষয়ভোগে) প্রসক্তাঃ [সন্তঃ] (অত্যন্ত আসক্ত হইয়া ইঁহারা) অশুচৌ (ঘৃণিত) নরকে (বৈতরণী প্রভৃতি নরকে) পতন্তি (পতিত হয়) ॥১৫–১৬॥


আমিই ধনী ও কুলীন, আমার সমকক্ষ কে আছে ? আমি যজ্ঞ করিব, প্রার্থীকে দান করিব এবং আনন্দ করিব—এইরূপ অজ্ঞান বিমোহিত, নানা চিন্তায় বিভ্রান্তচিত্ত, মোহজালে আচ্ছন্ন ও বিষয়ভোগে অতীব আসক্ত হইয়া ইহারা ঘৃণিত (বৈতরণী প্রভৃতি) নরকে পতিত হয় ॥১৫–১৬॥


অনুবাদঃ অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা মনে করে- “আজ আমার দ্বারা এত লাভ হয়েছে এবং আমার পরিকল্পনা অনুসারে আরও লাভ হবে। এখন আমার এত ধন আছে এবং ভবিষ্যতে আরও ধন লাভ হবে। ঐ শত্রু আমার দ্বারা নিহত হয়েছে এবং অন্যান্য শত্রুদেরও আমি হত্যা করব। আমিই ঈশ্বর, আমি ভোক্তা। আমিই সিদ্ধ, বলবান ও সুখী। আমি সবচেয়ে ধনবান এবং অভিজাত আত্মীয়স্বজন পরিবৃত। আমার মতো আর কেউ নেই। আমি যজ্ঞ অনুষ্ঠান করব, দান করব এবং আনন্দ করব।” এভাবেই অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা অজ্ঞানের দ্বারা বিমোহিত হয়। নানা প্রকার দুশ্চিন্তায় বিভ্রান্ত হয়ে এবং মোহজালে বিজড়িত হয়ে কামভোগে আসক্তচিত্ত সেই ব্যক্তিরা অশুচি নরকে পতিত হয়।

আত্মসম্ভাবিতাঃ স্তব্ধা ধনমানমদান্বিতাঃ।
যজন্তে নামযজ্ঞৈস্তে দম্ভেনাবিধিপূর্বকম্।।১৭।।

আত্মসম্ভাবিতাঃ (নিজ নিজেই সম্মানিত) স্তব্ধাঃ (অবিনীত) ধনমানমদান্বিতাঃ (ধন ও মান হেতু মদমত্ত) তে (সেই সমস্ত অসুরগণ) দম্ভেন (দম্ভের সহিত) নামযজ্ঞৈঃ (নাম মাত্র যজ্ঞ দ্বারা) অবিধিপূর্ব্বকম্ (অশাস্ত্রীয়) যজন্তে (যজ্ঞ করিয়া থাকে) ॥১৭॥


নিজে নিজেই সম্মানিত, অবিনীত এবং ধন ও মানমদে মত্ত, সেই সকল অসুরগণ দম্ভের সহিত অবিধি পূর্ব্বক নামমাত্র (লোক দেখান) যজ্ঞ করিয়া থাকে ॥১৭॥

অনুবদাঃ সেই আত্মভিমানী, অনম্র এবং ধন ও মানে মদান্বিত ব্যক্তিরা অবিধিপূর্বক দম্ভ সহকারে নামমাত্র যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে।

অহঙ্কারং বলং দর্পং কামং ক্রোধং চ সংশ্রিতাঃ।
মামাত্মপরদেহেষু প্রদ্বিষন্তোহভ্যসূয়কাঃ।।১৮।।

[তে] (তাহারা) অহঙ্কারং (অহঙ্কার) বলং (বল) দর্পং (দর্প) কামং (কাম) ক্রোধং চ (ও ক্রোধকে) সংশ্রিতাঃ (আশ্রয় করিয়া) আত্মপরদেহেষু (নিজের ও পরের দেহে) [স্থিতং] (অবস্থিত) মাম্ (আমাকে) প্রদ্বিষন্তঃ (অতিশয় দ্বেষ করিয়া) অভ্যসূয়কাঃ (সাধুদিগের গুণে দোষারোপকারী) [ভবন্তি] (হইয়া থাকে) ॥১৮॥


তাহারা অহঙ্কার, বল, দর্প, কাম ও ক্রোধকে আশ্রয় করিয়া, নিজের ও অপরের দেহে অবস্থিত পরমেশ্বর স্বরূপ আমাকে অত্যন্ত দ্বেষ পূর্ব্বক (সাধুগণের) গুণে দোষারোপ করিয়া থাকে ॥১৮॥

অনুবাদঃ অহঙ্কার, বল, দর্প, কাম ও ক্রোধকে আশ্রয় করে অসুরেরা স্বীয় দেহে ও পরদেহে অবস্থিত পরমেশ্বর স্বরূপ আমাকে দ্বেষ করে এবং সাধুদের গুণেতে দোষারোপ করে।

তানহং দ্বিষতঃ ক্রুরান্ সংসারেষু নরাধমান্।
ক্ষিপাম্যজস্রমশুভানাসুরীষ্বেব যোনিষু।।১৯।।

অহং (আমি) দ্বিষতঃ (দ্বেষকারী) ক্রূরান্ (নিষ্ঠুর) অশুভান্ (অমঙ্গলস্বরূপ) নরাধমান্ (নরাধম) তান্ (সেই অসুরগণকে) সংসারেষু (কর্ম্মচক্রে) আসুরীষু (অসুর) যোনিষু এব (যোনি সমূহেই) অজস্রম্ (অনবরত) ক্ষিপামি (নিক্ষেপ করি) ॥১৯॥


আমি সেই বিদ্বেষী, ক্রূর, অশুভ-গ্রহ ও নরাধম অসুরগণকে কর্ম্মচক্রে অবিরত আসুরী যোনি সমূহেই নিক্ষেপ করিয়া থাকি ॥১৯॥

অনুবাদঃ সেই বিদ্বেষী, ক্রুর ও নরাধমদের আমি এই সংসারেই অশুভ আসুরী যোনিতে অবিরত নিক্ষেপ করি।

আসুরীং যোনিমাপন্না মূঢ়া জন্মনি জন্মনি।
মামপ্রাপ্যৈব কৌন্তেয় ততো যান্ত্যধমাং গতিম্।।২০।।

[হে] কৌন্তেয় ! (হে কুন্তীনন্দন !) জন্মনি জন্মনি (জন্মে জন্মে) আসুরীং (অসুরী) যোনিম্ (যোনি) আপন্নাঃ (প্রাপ্ত হইয়া) মূঢ়াঃ (সেই মূঢ়গণ) মাম্ (আমাকে) অপ্রাপ্য এব (না পাওয়ার হেতুই) ততঃ (তাহা হইতেও) অধমাং (নিকৃষ্ট) গতিম্ (গতি) যান্তি (লাভ করিয়া থাকে)॥২০॥


হে কৌন্তেয়! জন্মে জন্মে অসুর যোনি প্রাপ্ত হইয়া মূঢ়গণ পরমস্বরূপ আমাকে না পাওয়া হেতু তাহা হইতেও অধমগতি লাভ করিয়া থাকে ॥২০॥

অনুবাদঃ হে কৌন্তেয়! জন্মে জন্মে অসুরযোনি প্রাপ্ত হয়ে, সেই মূঢ় ব্যক্তিরা আমাকে লাভ করতে অক্ষম হয়ে তার থেকেও অধম গতি প্রাপ্ত হয়।

ত্রিবিধং নরকস্যেদং দ্বারং নাশনমাত্মনঃ।
কামঃ ক্রোধস্তথা লোভস্তস্মাদেতত্রয়ং ত্যজেৎ।।২১।।

কামঃ (কাম) ক্রোধঃ (ক্রোধ) তথা লোভঃ (ও লোভ) ইদং (এই) ত্রিবিধং (তিন প্রকার) নরকস্য (নরক প্রাপ্তির) আত্মনঃ [চ] (ও আত্মার) নাশনম্ (সর্ব্বনাশকর) দ্বারং (দ্বার) তস্মাৎ (অতএব) এতৎ (এই) ত্রয়ং (তিনটীকে) ত্যজেৎ (ত্যাগ করিবে) ॥২১॥


কাম, ক্রোধ ও লোভ এই তিন প্রকার আত্মনাশকর নরক প্রাপ্তির দ্বারস্বরূপ, অতএব এই তিনটীকে পরিত্যাগ করিবে ॥২১॥

অনুবাদঃ কাম, ক্রোধ ও লোভ- এই তিনটি নরকের দ্বার, অতএব ঐ তিনটি পরিত্যাগ করবে।

এতৈর্বিমুক্তঃ কৌন্তেয় তমোদ্বারৈস্ত্রিভির্নরঃ।
আচরত্যাত্মনঃ শ্রেয়স্ততো যাতি পরাং গতিম্।।২২।।

[হে] কৌন্তেয় ! (হে কৌন্তেয় !) এতৈঃ (এই) ত্রিভিঃ (তিন প্রকার) তমোদ্বারৈঃ (নরকদ্বার হইতে) বিমুক্তঃ (বিশেষভাবে মুক্ত) নরঃ (লোক) আত্মনঃ (নিজের আত্মার) শ্রেয়ঃ (মঙ্গল) আচরতি (সাধন করে) ততঃ (তাহাদ্বারা) পরাং (পরম) গতিম্ (গতি) যাতি (লাভ করে) ॥২২॥


হে কৌন্তেয়! এই তিন প্রকার নরকদ্বার হইতে বিমুক্ত মানব নিজের শ্রেয়ঃসাধন করেন এবং পরম গতি লাভ করিয়া থাকেন ॥২২॥

অনুবাদঃ হে কৌন্তেয়! এই তিন প্রকার তমোদ্বার থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ আত্মার শ্রেয় আচরণ করেন এবং তার ফলে পরাগতি লাভ করে থাকেন।

যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ।
ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্।।২৩।।

যঃ (যে ব্যক্তি) শাস্ত্রবিধিম্ (শাস্ত্রবিধিকে) উৎসৃজ্য (উল্লঙ্ঘন করিয়া) কামচারতঃ (স্বেচ্ছাচারে) বর্ত্ততে (বর্ত্তমান) সঃ (সে) সিদ্ধিম্ (চিত্তশুদ্ধি) সুখং (সুখ) পরাং গতিম্ (বা পরাগতি) ন অবাপ্নোতি (কোনটীই লাভ করিতে পারে না) ॥২৩॥


যে ব্যক্তি শাস্ত্রেয় বিধি উল্লঙ্ঘন করিয়া স্বেচ্ছাচারে বর্ত্তমান, সে ব্যক্তি কখনও সিদ্ধি বা সুখ বা পরমগতি—কোনটীই লাভ করিতে পারে না ॥২৩॥

অনুবাদঃ যে শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে কামাচারে বর্তমান থাকে, সে সিদ্ধি, সুখ অথবা পরাগতি লাভ করতে পারে না।
তস্মাচ্ছস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ।
জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কর্তুমিহার্হসি।।২৪।।

তস্মাৎ (অতএব) কার্য্যাকার্য্যব্যবস্থিতৌ (করণীয় ও অকরনীয়ের নির্ণয় বিষয়ে) শাস্ত্রং (শাস্ত্র বাক্যই) তে (তোমার পক্ষে) প্রমাণং (প্রমাণ) ইহ (এই কর্ম্মভূমিতে) শাস্ত্রবিধানোক্তং (শাস্ত্রবিহিত) কর্ম্ম (কর্ম্ম) জ্ঞাত্বা (জানিয়া) [তৎ] কর্ত্তুং (তাহা করিতে) অর্হসি (যোগ্য হও) ॥২৪॥


অতএব কর্ত্তব্য ও অকর্ত্তব্য কর্ম্মের নির্ণয় বিষয়ে শাস্ত্র-বাক্যই তোমার পক্ষে একমাত্র প্রমাণ । এই কর্ম্মভূমিতে শাস্ত্র বিহিত অর্থাৎ ভগবৎ-সুখ তাৎপর্য্যপর কর্ম্ম—বুঝিয়া তাহা করিতে যোগ্য হও ॥২৪॥

অনুবাদঃ অতএব, কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রীয় বিধানে কথিত হয়েছে যে কর্ম, তা জেনে তুমি সেই কর্ম করতে যোগ্য হও।

ইতি শ্রীমহাভারতে শতসাহস্র্যাং সংহিতায়াং বৈয়াসিক্যাং
ভীষ্মপর্ব্বণি শ্রীমদ্ভবগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং
যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জ্জুনসংবাদে দৈবাসুর-সম্পদ্-বিভাগ যোগো
নাম ষোড়শোঽধ্যায়ঃ ॥১৬॥


ইতি ষোড়শ অধ্যায়ের অন্বয় সমাপ্ত ॥


ইতি ষোড়শ অধ্যায়ের বঙ্গানুবাদ সমাপ্ত ॥

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

সূর্য কি স্থির না গতিশীল?

  সূর্য ও পৃথিবী সম্পর্কে জানুন ... সূর্যের অবস্থান আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৫,০০০ - ২৮,০০০ আলোকবর্ষ দূরে, এবং এটি অবিরত ছায...

Post Top Ad

ধন্যবাদ