" ইন্দ্র বয়ুমনিরাধং হবামহে"- অথর্ব কা০১৯ ব০১৫ ম০২
আমরা আরাধনা করিবার যোগ্য সেই ঐশ্বর্যশালী পরমেশ্বরের স্ততি করি।
বেদের এই মন্ত্র দেখে অনেক বৈষ্ণব পন্ডিতের মন পুলকিত হয় বেদে রাধা পেয়েছে ভেবে।
যতদূর জানা যায় আজ থেকে আনুমাণিক ৫০০ বৎসর পূর্বে নিত্যানন্দের স্ত্রী জাহ্নবী দেবী নয়ন ভাস্কর কে দিয়ে রাধার মূর্তি তৈরী করিয়ে বৃন্দাবনে গিয়ে জীব গোস্বামীর অজ্ঞাতে শ্রী কৃষ্ণের পাশে রাধারমূর্তি প্রথম বসিয়ে রেখে আসেন। তার পূর্বে কৃষ্ণের পাশে রাধার মূর্তি কোনদিনই ছিল না।
উপযুক্ত প্রমাণে এটাই প্রমাণিত হয় শ্রী কৃষ্ণের জীবনী তে শ্রী রাধা নামে কোনো নারীর সাথে সম্পর্ক ছিল না। মামির সম্পর্ক তো দূরে থাক, রাধা নামে কোনো গোপী শ্রী কৃষ্ণের সমগ্র জীবনী তে ছিলো না। এই রাধা উৎপত্তি এবং তার সাথে মামির সম্পর্ক ও অবৈধ্য সম্পর্ক সৃষ্টিকার হলেন পূর্বের কিছু “রসময় সাহিত্যিক চরিত্রের বৈষ্ণব মানুষ ও তাদের তৈরী কিছু কাব্য”।
শ্রীরাধার সংমিশ্রণ দেখতে পাই খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দী থেকে। রাধার উল্লেখ পাই বাংলার ব্রহ্মৱৈৱর্তপুরাণে, পদ্মপুরাণে এবং মৎস্যপুরাণে। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর আগেই যে বাংলায় রাধাবাদের প্রচলন ছিল তার প্রমাণ পাই পাহাড়পুরের মন্দিরগাত্রে ষষ্ঠ–সপ্তম শতকের দণ্ডায়মান রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তির উপস্থিতিতে। সদুক্তিকর্ণামৃতে রাধাকৃষ্ণলীলাবিষয়ক জয়দেব রচিত পদ পাওয়া যায়। অর্থাৎ গীতগোবিন্দ ছাড়াও অন্যত্র জয়দেব রাধাকৃষ্ণবিষয়ক কাব্যরচনা করেছেন। গীতগোবিন্দকাব্যের leitmotif ‘রাধাকৃষ্ণ’—একথা বলা মনেহয় অতিশয়োক্তি হবে না। জয়দেব রচিত রাধাকৃষ্ণের প্রণয়সম্পৃক্ত গীতগোবিন্দ সারাভারতে প্রচারিত হয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে, তার মূলে বিশেষ অবদান শ্রীচৈতন্যের। যার ফলে ভারতের সব রাজ্যেরই নৃত্য–গীত–নাট্য–কাব্য–চিত্রকলায় গীতগোবিন্দ তথা রাধাতত্ত্ব স্থান পেয়েছে ষোড়শ শতক থেকে। এই পরকীয়া রাধার ক্রমবিকাশ এবং প্রতিষ্ঠার জোরালো ভূমি বাংলা। মহাভারতে কোথাও রাধার উল্লেখ নেই।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী, তিনি হলেন গোকুলনিবাসী বৃষভানু ও কলাবতীর কন্যা। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ও দেবীভাগবতের মতে, রাধার সৃষ্টি ভগবান কৃষ্ণের শরীরের বামভাগ থেকে হয় এবং সেই রাধাই দ্বাপর যুগে বৃষভানুর পুত্রী রুপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। রাধা শ্রীকৃষ্ণের সহস্রাধিক গোপিকা দের মধ্যে শ্রীমতী রাধা গোপী শিরোমণি। শ্রীকৃষ্ণের মথুরা গমনের পর শ্রীরাধা বৃন্দাবনের আয়ান ঘোষ-এর সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল। আবার ব্রহ্মা পূরণ অনুসারে শ্রী কৃষ্ণ এবং রাধার ব্রহ্মাণ্ড বিবাহ হয়েছিল, তাই বলা যায় যে শ্রী কৃষ্ণই ছিল রাধার আসল স্বামী।
শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধার প্রেম বিষয়ক বহু গাঁথা কবিতা বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যা বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য ঐশ্বর্য। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনেও রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা সুবিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে। বাংলার ভক্তি আন্দোলনেও এর সুদুরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল।
নিচের অংশ গুলি- বঙ্কিমচন্দ্রের “শ্রী কৃষ্ণচরিত্র” গ্রন্থের লেখকের ভাবদৃষ্টি অনুসারে শ্রী রাধা ব্যাখ্য সংগ্রহ করে তুলে ধরা হল.
ভাগবতের এই “রাসপঞ্চাধ্যয়ের” মধ্যে ‘রাধা’ নাম কোথাও পাওয়া যায় না।কিন্তু বৈষ্ণবদের অস্থিমজ্জার ভিতর রাধা নাম প্রবিষ্ট। তাঁহারা টীকাটিপ্পনীর ভিতর পুনঃ পুনঃ রাধাপ্রসঙ্গ উত্থাপিত করেছেন, কিন্তু মূলে কোথাও রাধার নাম নাই। গোপীদিগের অনুরাগাধিক্যজনিত ঈর্ষার প্রমাণ স্বরূপ কবি লিখিয়াছেন যে,তাহারা পদচিহ্ন দেখিয়া অনুমান করিয়াছিল যে, কোন একজন গোপীকে লইয়া কৃষ্ণ বিজনে প্রবেশ করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাও গোপীদিগের ঈর্ষাজনিত ভ্রমমাত্র। শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্হিত হইলেন এই কথাই আছে, কাহাকেও লইয়া অন্তর্হিত হইলেন, এমন কথা নাই এবং রাধার নামগন্ধও নাই।
“রাসপঞ্চাধ্যায়ে” কেন, সমস্ত ভাগবতে কোথাও রাধার নাম নাই। ভাগবতে কেন,বিষ্ণুপুরাণে, হরিবংশে বা মহাভারতে কোথাও রাধার নাম নাই। অথচ এখনকার কৃষ্ণ উপাসনার প্রধান অঙ্গ রাধা। রাধা ভিন্ন এখন কৃষ্ণনাম নাই। রাধা ভিন্ন এখন কৃষ্ণের মন্দির নাই বা মূর্তি নাই। বৈষ্ণবদিগের অনেক রচনায় কৃষ্ণের অপেক্ষাও রাধা প্রাধান্যলাভ করিয়াছেন যদিও মহাভারতে, হরিবংশে, বিষ্ণুপুরাণে বা ভাগবতে ‘রাধা’ নাই। উপনিষদ সকলের মধ্যে একখানির নাম গোপালতাপনী।কৃষ্ণের গোপমূর্তির উপাসনা ইহার বিষয়। উহার রচনা দেখিয়া বোধ হয় যে,অধিকাংশ উপনিষদ্ অপেক্ষা উহা অনেক আধুনিক ও নবীন। ইহাতে কৃষ্ণ যে গোপগোপীপরিবৃত তাহা বলা হইয়াছে। কিন্তু ইহাতে গোপগোপীর যে অর্থ করা হইয়াছে, তাহা প্রচলিত অর্থ হইতে ভিন্ন। গোপী অর্থে “অবিদ্যা কলা”। টীকাকার বলেন,- “গোপায়ন্তীতি গোপ্যঃ পালনশক্তয়ঃ।” আর গোপীজনবল্লভ অর্থে“গোপীনাং পালনশক্তীনাং জনঃ সমূহঃ তদ্বাচ্যা অবিদ্যাঃ কলাশ্চ তাসাং বল্লভঃ স্বামী প্রেরক ঈশ্বরঃ।” উপনিষদে এইরূপ গোপীর অর্থ আছে। কিন্তু রাসলীলার কোন কথাই এখনে নাই। রাধার নামমাত্র নাই। এক জন প্রধানা গোপীর কথা কাছে, কিন্তু তিনি রাধা নহেন, তাঁহার নাম গান্ধর্বী। তবে এ ‘রাধা’ আসিলেন কোথা হইতে?
রাধাকে প্রথমে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে দেখিতে পাই। উইল্সন্ সাহেবর মতে ইহা পুরাণগণের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ বলিয়াই বোধ হয়। ইহার রচনাপ্রণালী আজিকালিকার ভট্টাচার্যদিগের রচনার মত। ইহাতে ষষ্ঠী মনসারও কথা আছে। আদিম ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ বিলোপপ্রাপ্ত হইয়াছে। যাহা এখন আছে, তাহাতে এক নূতন দেবতত্ত্ব সংস্থাপিত হইয়াছে। পূর্বাবধিতে প্রসিদ্ধ যে, কৃষ্ণ বিষ্ণুর অবতার কিন্তু এখানে পুরানকার বলেন, কৃষ্ণ বিষ্ণুর অবতার হওয়া দূরে থাকুক, কৃষ্ণই বিষ্ণুকে সৃষ্টি করিয়াছেন। বিষ্ণু থাকেন বৈকুণ্ঠে, কৃষ্ণ থাকেন গোলোকে রাসমণ্ডলে,—বৈকুণ্ঠ তাহার অনেক নীচে। ইনি কেবল বিষ্ণুকে নহে, ব্রহ্মা, রুদ্র,লক্ষ্মী, দুর্গা প্রভৃতি সমস্ত দেবদেবী এবং জীবগণকে সৃষ্টি করিয়াছেন। ইঁহার বাসস্থান গোলকধামে, বলিয়াছি। তথায় গো, গোপ ও গোপীগণ বাস করে। তাহারা দেবদেবীর উপর। যে গুলি সবটায় মিথ্যা ছাড়া আর কিছু না। সেই গোলোকধামের অধিষ্ঠাত্রী কৃষ্ণবিলাসিনী দেবীই রাধা। রাধার আগে রাসমণ্ডল,রাসমণ্ডলে ইনি রাধাকে সৃষ্টি করেন। রাসের রা, এবং ধাতুর ধা, ইহাতে রাধা নাম নিষ্পন্ন করিয়াছেন। সেই গোপগোপীর বাসস্থান রাধাধিষ্ঠিত গোলোকধাম পূর্বক বিদিগের বর্ণিত বৃন্দাবনের বজনিশ নকল। এখনকার কৃষ্ণযাত্রায় যেমন চন্দ্রাবলী নামে রাধার প্রতিযোগিনী গোপী আছে, গোলকধামেও সেইরূপ বিরজা নাম্নী রাধার প্রতিযোগিনী গোপী ছিল। মানভঞ্জন যাত্রায় যেমন যাত্রাওয়ালারা কৃষ্ণকে চন্দ্রাবলীর কুঞ্জে লইয়া যায়, ইনিও তেমনি কৃষ্ণকে গোলোকধামে বিরজার কুঞ্জে লইয়া গিয়াছেন। তাহাতে যাত্রার রাধিকার যেমন ঈর্ষা ও কোপ উপস্থিত হয়, ব্রহ্মবৈবর্তের রাধিকারও সেইরূপ ঈর্ষা ও কোপ উপস্থিত হইয়াছিল। তাহাতে আর একটা মহা গোলযোগ ঘটিয়া যায়। রাধিকা কৃষ্ণকে বিরজার মন্দিরে ধরিবার জন্য রথে চড়িয়া বিরজার মন্দিরে গিয়া উপস্থিত। সেখানে বিরজার দ্বারবান্ ছিলেন শ্রীদামা বা শ্রীদাম। শ্রীদামা রাধিকাকে দ্বার ছাড়িয়া দিল না। এ দিকে রাধিকার ভয়ে বিরজা গলিয়া জল হইয়া নদীরূপ ধারণ করিলেন। শ্রীকৃষ্ণ তাহাতে দুঃখিত হইয়া তাঁহাকে পুনর্জীবন এবং পূর্ব রূপ প্রদান করিলেন। বিরজা গোলোকনাথের সহিত অবিরত আনন্দানুভব করিতে লাগিল। ক্রমশঃ তাহার সাতটি পুত্র জন্মিল। কিন্তু পুত্রগণ আনন্দানুভবের বিঘ্ন,এ জন্য মাতা তাহাদিগকে অভিশপ্ত করিলেন, তাঁহারা অনেক ভর্ৎসনা করিলেন, তাঁহারা সাত সমুদ্র হইয়া রহিলেন। এ দিকে রাধা, কৃষ্ণবিরজা-বৃত্তান্ত জানিতে পারিয়া, কৃষ্ণকে অনেক ভর্ৎসনা করিলেন, এবং অভিশাপ প্রদান করিলেন, যে তুমি গিয়া পৃথিবীতে বাস কর। এ দিকে কৃষ্ণকিঙ্কর শ্রীদামা রাধার এই দুর্ব্যবহারে অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহাকে ভর্ৎসনা করিলেন। শুনিয়া রাধা শ্রীদামাকে তিরস্কার করিয়া শাপ দিলেন, তুমি গিয়া অসূর হইয়া জন্মগ্রহণ কর।শ্রীদামাও রাধাকে শাপ দিলেন, তুমিও গিয়া পৃথিবীতে মানুষী হইয়া পরপত্নী এবং কলঙ্কিনী হইয়া খ্যাত হইবে।
শেষ দুই জনেই কৃষ্ণের নিকট আসিয়া কাঁদিয়া পড়িলেন। শ্রীদামাকে কৃষ্ণ বর দিয়া বলিলেন যে, তুমি অসূরেশ্বর হইবে, যুদ্ধে তোমাকে কেহ পরাভব করিতে পারিবে না। শেষে শঙ্করশূলস্পর্শে মুক্ত হইবে। রাধাকেও আশ্বাসিত করিয়া বলিলেন, ‘তুমি যাও; আমিও যাইতেছি।’ শেষে পৃথিবীর ভারাবতরণ জন্য, তিনি পৃথিবীতে আসিয়া অবতীর্ণ হইলেন।
রাসে সম্ভূয় গোলোকে, সা দধাব হরেঃ পুরঃ।
তেন রাধা সমাখ্যাতা পুরাবিদ্ভির্দ্বিজোত্তম ||-ব্রহ্মখণ্ডে ৫ অধ্যায়ঃ।
কিন্তু আবার স্থানান্তরে,-
রাকারো দানবাচকঃ।
ধা নির্বাণঞ্চ তদ্দাত্রী তেন রাধা প্রকির্তিতা ||-শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডে ২৩ অধ্যায়ঃ।
এ সকল কথা নূতন হইলেও, এবং সর্বশেষে প্রচারিত হইলেও এই ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ বাঙ্গালার বৈষ্ণবধর্মের উপর অতিশয় আধিপত্য স্থাপন করিয়াছে। জয়দেবাদি বাঙ্গালী বৈষ্ণবকবিগণ, বাঙ্গালার জাতীয় সঙ্গীত,বাঙ্গালার যাত্রা মহোৎসবাদির মূল ব্রহ্মবৈবর্তে। কিন্তু আবার স্থানান্তরেব্রহ্মবৈবর্তের মতে তিনি বিধিবিধানানুসারে কৃষ্ণের বিবাহিতা পত্নী। সেই বিবাহবৃত্তান্তটি সবিস্তারে বলিতেছি, বলিবার আগে গীতগোবিন্দের প্রথম কবিতাটা পাঠকের স্মরণ করিয়া দিই।
“মেঘৈর্মেদুরমম্বরং বনভুবঃ শ্যামাস্তমালদ্রুমৈ—
র্নক্তং ভীরুরয়ং ত্বমেব তদিমং রাধে গৃহং প্রাপয়।
ইত্থং নন্দনিদেশতশ্চলিতয়োঃ প্রত্যধ্বকুঞ্জদ্রুমং
রাধামাধবয়োর্জয়ন্তি যমুনাকূলে রহঃকেলয়ঃ ||
অর্থ। হে রাধে! আকাশ মেঘে স্নিগ্ধ হইয়াছে, তমাল দ্রুম সকলে বনভূমি অন্ধকার হইয়াছে, অতএব তুমিই ইহাকে গৃহে লইয়া যাও, নন্দ এইরূপ আদেশ করায়,পথিস্থ কুঞ্জদ্রুমাভিমুখে চলিত রাধামাধবের যমুনাকূলে বিজনকেলি সকলের জয় হউক।
এ কথার অর্থ কি? টীকাকার কি অনুবাদকার কেহই বিশদ করিয়া বুঝাইতে পারেন না। একজন অনুবাদকার বলিয়াছেন, “গীতগোবিন্দের প্রথম শ্লোকটি কিছু অস্পষ্ট; কবি নায়ক-নায়িকার কোন্ অবস্থা মনে করিয়া লিখিয়াছেন, ঠিক বলা যায় না। টীকাকারের মত, ইহা রাধিকাসখীর উক্তি। তাহাতে ভাব এক প্রকার মধুর হয় বটে, কিন্তু শব্দার্থের কিছু অসঙ্গতি ঘটে।” বস্তুতঃ ইহা রাধিকাসখীর উক্তি নহে; জয়দেব গোস্বামী ব্রহ্মবৈবর্ত-লিখিত এই বিবাহের সূচনা স্মরণ করিয়াই এ শ্লোকটি রচনা করিয়াছেন। এক্ষণে আমি (বঙ্কিমচন্দ্র) ঠিক এই কথাই ব্রহ্মবৈবর্ত হইতে উদ্ধৃত করিতেছি; তবে বক্তব্য এই যে, রাধা শ্রীদামশাপানুসারে শ্রীকৃষ্ণের কয় বৎসর আগে পৃথিবীতে আসিতে বাধ্য হইয়াছিলেন বলিয়া, রাধিকা কৃষ্ণের অপেক্ষা অনেক বড় ছিলেন। তিনি যখন যুবতী, শ্রীকৃষ্ণ তখন শিশু।
“একদা কৃষ্ণসহিতো নন্দো বৃন্দাবনং যযৌ।
তত্রোপবনভাণ্ডীরে চারয়ামাস গোকুলম্ || ১ ||
সরঃসুস্বাদুতোয়ঞ্চ পায়য়ামাস তং পপৌ।
উবাস বটমূলে চ বালং কৃত্বা স্ববক্ষসি || ২ ||
এতস্মিন্নন্তরে কৃষ্ণো মায়াবালকবিগ্রহঃ।
চকার মায়য়াকস্মান্মেঘাচ্ছন্নং নভো মুনে || ৩ ||
মেঘাবৃতং নভো দৃষ্টা শ্যামলং কাননান্তরম্।
ঝঞ্ঝাবাতং মেঘশব্দং বজ্রশব্দঞ্চ দারুণম্ || ৪ ||
বৃষ্টিধারামতিস্থূলাং কম্পমানাংশ্চ পাদপান্।
দৃষ্ট্বৈং পতিতস্কন্ধান্ নন্দো ভয়মবাপ হ || ৫ ||
কথং যাস্যামি গোবৎসং বিহায় স্বাশ্রমং প্রতি।
গৃহং যদি ন যাস্যামি ভবিতা বালকস্য কিম্ || ৬ ||
এবং নন্দে প্রবদতি রুরোদ শ্রীহরিস্তদা।
মায়াভিয়া ভয়েভ্যশ্চ পিতুঃ কণ্ঠং দধার সঃ || ৭ ||
এতস্মিন্নন্তরে রাধা জগাম কৃষ্ণসন্নিধিম্।”
--- ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণম্, শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডে, ১৫ অধ্যায়ঃ।
অর্থ। “একদা কৃষ্ণসহিত নন্দ বৃন্দাবনে গিয়াছিলেন। তথাকার ভাণ্ডীরবনে গোগণকে চরাইতেছিলেন। সরোবরে স্বাদু জল তাহাদিগকে পান করাইলেন,এবং পান করিলেন। এবং বালককে বক্ষে লইয়া বটমূলে বসিলেন। হে মুনে! তার পর মায়াতে শিশুশরীরধারণকারী কৃষ্ণ অকস্মাৎ মায়ার দ্বারা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন করিলেন, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং কাননান্তর শ্যামল; ঝঞ্ঝাবাত, মেঘশব্দ, দারুণ বজ্রশব্দ, অতিস্থূল বৃষ্টিধারা, এবং বৃক্ষসকল কম্পমান হইয়া পতিতস্কন্ধ হইতেছে, দেখিয়া নন্দ ভয় পাইলেন। ‘গোবৎস ছাড়িয়া কিরূপেই বা আপনার আশ্রমে যাই, যদি গৃহে না যাই, তবে এই বালকেরই বা কি হইবে,’ নন্দ এইরূপ বলিতেছিলেন, শ্রীহরি তখন কাঁদিতে লাগিলেন; মায়াভয়ে ভীতযুক্ত হইয়া বাপের কণ্ঠ ধারণ করিলেন। এই সময়ে রাধা কৃষ্ণের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন।”
রাধার অপূর্ব লাবণ্য দেখিয়া নন্দ বিস্মিত হইলেন, তিনি রাধাকে বলিলেন, “আমি গর্গমুখে জানিয়াছি, তুমি পদ্মারও অধিক হরির প্রিয়া; আর ইনি পরম নির্গুণ অচ্যুত মহাবিষ্ণু; তথাপি আমি মানব, বিষ্ণুমায়ায় মোহিত আছি। হে ভদ্রে!তোমার প্রাণনাথকে গ্রহণ কর; যথায় সুখী হও, যাও। পশ্চাৎ মনোরথ পূর্ণ করিয়া আমার পুত্র আমাকে দিও।”
এই বলিয়া নন্দ রাধাকে কৃষ্ণসমর্পণ করিলেন। রাধাও কৃষ্ণকে কোলে করিয়া লইয়া গেলেন। দূরে গেলে রাধা রাসমণ্ডল স্মরণ করিলেন, তখন মনোহর বিহারভূমি সৃষ্ট হইল। কৃষ্ণ সেইখানে নীত হইলে কিশোরমূর্তি ধারণ করিলেন। তিনি রাধাকে বলিলেন, “যদি গোলোকের কথা স্মরণ হয়, তবে যাহা স্বীকার করিয়াছি, তাহা পূর্ণ করিব।” তাঁহারা এরূপ প্রেমালাপে নিযুক্ত ছিলেন, এমন সময়ে ব্রহ্মা সেইখানে উপস্থিত হইলেন। তিনি রাধাকে অনেক স্তবস্তুতি করিলেন। পরিশেষে নিজে কন্যাকর্তা হইয়া, যথাবিহিত বেদবিধি অনুসারে রাধিকাকে কৃষ্ণে সম্প্রদান করিলেন। তাঁহাদিগকে বিবাহবন্ধনে বদ্ধ করিয়া তিনি অন্তর্হিত হইলেন। রায়াণের সঙ্গে রাধিকার যথাশাস্ত্র বিবাহ হইয়াছিল কি না, যদি হইয়া থাকে, তবে পূর্বে কি পরে হইয়াছিল, তাহা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে পাইলাম না অথচ পুরাণকারের দাবী করে রাধা রায়াণের স্ত্রী। রাধাকৃষ্ণের বিবাহের পর বিহারবর্ণন। বলা বাহুল্য যে, ব্রহ্মবৈবর্তের রাসলীলাও ঐরূপ, যেগুলি সবটাই বানানো।
· উপরক্ত মন্তব্য তথা “রাধা যখন যুবতী, শ্রীকৃষ্ণ তখন শিশু” ইহা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু না। কারণ হিসাব অনুসারে শ্রী কৃষ্ণজন্মাষ্টমী এর ১৫ দিন পর শুক্লপক্ষে রাধাজন্মাষ্টমী আসে। তাহলে এখনে রাধার বয়স < কৃষ্ণর বয়স। কিন্তু পুরাণকার বলছে উল্টোটা। তাই ব্রহ্মবৈবর্তকার পুরাণকার যে মিথ্যা এতে কোনো সন্দেহ নাই।
যাহা হউক, পাঠক দেখিলেন যে, ব্রহ্মবৈবর্তকার সম্পূর্ণ নূতন বৈষ্ণবধর্ম সৃষ্ট করিয়াছেন। সে বৈষ্ণবধর্মের নামগন্ধমাত্র বিষ্ণু বা ভাগবত বা অন্য পুরাণে নাই।রাধাই এই নূতন বৈষ্ণবধর্মের কেন্দ্রস্বরূপ। জয়দেব কবি, গীতগোবিন্দ কাব্যে এই নূতন বৈষ্ণবধর্মাবলম্বন করিয়াই গোবিন্দগীতি রচনা করিয়াছেন। তাঁহার দৃষ্টান্তানুসরণে বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস প্রভৃতি বাঙ্গালার বৈষ্ণবগণ কৃষ্ণসঙ্গীত রচনা করিয়াছেন। বলিতে গেলে, সকল কবি, সকল ঋষি, সকল পুরাণ, সকল শাস্ত্রের অপেক্ষা ব্রহ্মবৈবর্তকারই বাঙ্গালীর জীবনের উপর অধিকতর আধিপত্য বিস্তার করিয়াছেন।
· “শ্রী কৃষ্ণ কীর্ত্তনে” রচনা করে আবার চণ্ডীদাস এই আগুনে ঘি ঢ়েলেছেন। যদিও চণ্ডীদাসের লিখনী তে বহু বহু ভুল ও বানানো মন্তব্য পাওয়া যাই। আর এই মন্তব্যগুলো ভুল ছাড়া আর কিছু না। উদাহরণ স্বরূপ দেখুন চণ্ডীদাসের লিখা “শ্রী কৃষ্ণ কীর্ত্তনে” ২ টি মন্তব্য।–
· শ্রীকৃষ্ণ কীর্ত্তন (চণ্ডীদাস বিরচিত): বৃন্দাবন খণ্ড পৃষ্ঠা-৮৯
“রাধে, তোমার এই নব যৌবনের সুষমা অহরহ আমার মনে জাগিতেছে। তাহাতে আবার তোমার সহিত রমণেচ্ছা প্রবল হইয়া আমার হৃদয়কে অতিমাত্রায় কর্ষণ করিতেছে”
· মাউলানীর যৌবনে কাহ্নের মন।
বিধুমুখে বোলেঁ কাহ্নাঞিঁ মধুর বচন
সম্বন্ধ না মানে কাহ্নাঞিঁ মোকে বোলেঁ শালী।
লজ্জা দৃষ্টি হরিল ভাগিনা বনমালী
দেহ বৈরি হৈল মোকে এরুপ যৌবন।
কাহ্ন লজ্জা হরিল দেখিআঁ মোর তন
- শ্রীকৃষ্ণ কীর্ত্তনের দানখণ্ড : রামগিরীরাগ : পৃষ্ঠা : ২০
(শব্দার্থঃ মাউলানী- মামী, কাহ্নের- কৃষ্ণের)
দেখেছেন এই শ্রী রাধা কে শ্রী কৃষ্ণের মামি বানিয়েছে এই চণ্ডীদাস।
এগুলো কোনোটাতে বিন্দুমাত্র সত্যতা নাই। এগুলো কেবল রসময় লেখকের রসময় সাহিত্য ছাড়া আর কিছু না।
তবে এই শ্রী রাধার প্রকৃত পরিচয় কি ?
এখানে শক্তিবাদের কথা মনে স্মরণ রাখিয়া ব্রহ্মবৈবর্তকার লিখিয়াছেন যে,কৃষ্ণ রাধাকে বলিতেছেন যে, তুমি না থাকিলে, আমি কৃষ্ণ, এবং তুমি থাকিলে আমি শ্রীকৃষ্ণ। বিষ্ণুপুরাণকথিত এই “শ্রী” লইয়াই তিনি শ্রীকৃষ্ণ। বিষ্ণুপুরাণে যাহা “শ্রী” সম্বন্ধে কথিত হইয়াছে, ব্রহ্মবৈবর্তে “রাধা” সম্বন্ধে ঠিক তাহাই কথিত হইয়াছে। অর্থ্যাৎ রাধা সেই “শ্রী” এর কাল্পণিক চরিত্র স্বরূপ। রাধা সেই কৃষ্ণের নারী রূপে কল্পিত সেই শক্তি। অর্থ্যাৎ শ্রী রাধা হল সেই শ্রী কৃষ্ণের “শ্রী” অর্থ্যাৎ“শক্তি” যা ছাড়া কৃষ্ণ অপূর্ণ।
এই নিয়ে শ্রী চৈতন্য চরিত্রামৃতে শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু বলিয়াছেন –
মহাভাবস্বরূপ শ্রীরাধাঠাকুরাণী ।
সর্বগুণখনি কৃষ্ণকান্তা-শিরোমণি ।।
অর্থাৎ, “মহাভাব-স্বরূপিনী শ্রীমতী রাধারাণী হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের সমস্ত গুণের আধার এবং শ্রীকৃষ্ণের শিরোমণি”
অর্থ্যাৎ শ্রী রাধা হল সেই শ্রী কৃষ্ণের “শ্রী” অর্থ্যাৎ “শক্তি” যা ছাড়া কৃষ্ণ অপূর্ণ। যা প্রমাণিত।
কিন্তু আদিম ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ‘রাধাতত্ত্ব’ ছিল কি? বোধ হয় ছিল; কিন্তু এই প্রকার নহে। বর্তমান ব্রহ্মবৈবর্তে রাধা শব্দের ব্যুৎপত্তি অনেক প্রকার দেওয়া হইয়াছে। তাহার দুইটি পূর্বে ফুটনোটে উদ্ধৃত, আর একটি উদ্ধৃত করিতেছি:—
“রেফো হি কোটিজন্মাঘং কর্মভোগং শুভাশুভম্।
আকারো গর্ভবাসঞ্চ মৃত্যুঞ্চ রোগমুৎসৃজেৎ || ১০৬ ||
ধকার আয়ুষো হানিমাকারো ভববন্ধনম্।
শ্রবণস্মরণোক্তিভ্যঃ প্রণশ্যতি ন সংশয়ঃ || ১০৭ ||
রাকারো নিশ্চলাং ভক্তিং দাস্যং কৃষ্ণপদাম্বুজে।
সর্বেস্পিতং সদানন্দং সর্বসিদ্ধৌঘমীশ্বরম্ || ১০৮ ||
ধকারঃ সহবাসঞ্চ তত্তুল্যকালমেব চ।
দদাতি সার্ষ্টিং সারূপ্যং তত্ত্বজ্ঞানং হরেঃ সমম্ || ১০৯ ||”
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণম্, শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডে, ১৩ অঃ।
ইহার একটিও রাধা শব্দের প্রকৃত ব্যুৎপত্তি নয়। রাধ্ ধাতু আরাধনার্থে, পূজার্থে। যিনি কৃষ্ণের আরাধিকা, তিনিই রাধা বা রাধিকা। বর্তমান ব্রহ্মবৈবর্তে এ ব্যুৎপত্তি কোথাও নাই। যিনি (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণকার ও কিছু রসময় চরিত্রের বৈষ্ণব)এই রাধা শব্দের প্রকৃত ব্যুৎপত্তি গোপন করিয়া কতকগুলা অবৈয়াকরণিক কল কৌশলের দ্বারা ভ্রান্তি জন্মাইবার চেষ্টা করিয়াছেন, এবং ভ্রান্তির প্রতিপোষণার্থ মিথ্যা করিয়া সামবেদের দোহাই দিয়াছেন,তিনি কখনও ‘রাধা’ শব্দের সৃষ্টিকারক নহেন। যিনি রাধা শব্দের প্রকৃত ব্যুৎপত্তির অনুযায়িক হইয়া রাধারূপক রচনা করেন নাই, তিনি কখনও রাধা শব্দের সৃষ্টিকর্তা নহেন। সেই জন্য বিবেচনা করি যে, আদিম ব্রহ্মবৈবর্তেই রাধার প্রথম সৃষ্টি। এবং সেখানে রাধা কৃষ্ণারাধিকা আদর্শরূপিণী “শ্রী” ছিলেন, সন্দেহ নাই।
রাধা শব্দের আর একটি অর্থ আছে—বিশাখানক্ষত্রের# একটি নাম রাধা। কৃত্তিকা হইতে বিশাখা চতুর্দশ নক্ষত্র। পূর্বে কৃত্তিকা হইতে বৎসর গণনা হইত। কৃত্তিকা হইতে রাশি গণনা করিলে বিশাখা ঠিক মাঝে পড়ে। অতএব রাসমণ্ডলের মধ্যবর্তিনী হউন বা না হউন, রাধা রাশিমণ্ডলের বা রাসমণ্ডলের মধ্যবর্তী বটেন। এই ‘রাসমণ্ডলমধ্যবর্তিনী’ রাধার সঙ্গে ‘রাসমণ্ডলে রাধার কোন সম্বন্ধ আছে কি না, তাহা আসল ব্রহ্মবৈবর্তের অভাবে স্থির করা অসাধ্য।
রাধাশব্দস্য ব্যুৎপত্তিঃ সামবেদ নিরূপিতা || ১৩ অঃ, ১৫৩।
রাধা বিশাখা পুষ্যে তু সিধ্যতিযৌ শ্রবিষ্ঠয়া-অমরকোষ।
তাই, শ্রী রাধা হল সেই শ্রী কৃষ্ণের “শ্রী” অর্থ্যাৎ “শক্তি” যা ছাড়া কৃষ্ণ অপূর্ণ। ঠিক যেমন একজন “সন্তান” একজন “মা” ছাড়া অপূর্ণ। শ্রী রাধা কোনো সম্পর্কের মামি নহে।
মূল মহাভারত, চার বেদ, ১০৮টি উপনিষদ, গীতার ১৮টি অধ্যায়ের ৭০০ শ্লোক এবং বিষ্ণু পুরান- কোথাও রাধার কোনো উল্লেখ নেই। এই সমস্ত বিষয়, বিচার-বিশ্লেষণ করে, সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র, তার "কৃষ্ণ চরিত্র" গ্রন্থে এক বিশাল প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেছেন।
পুরাণে বলা হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণের বাম পার্শ্ব থেকে আবির্ভূত হয়ে সহসা তাঁর শ্রীপাদপদ্ম সেবার জন্য যিনি ধাবিত হয়ে পুষ্পচয়ন করে শ্রীকৃষ্ণর প্রথম আরাধনার বিধান করলেন, তিনি হচ্ছেন রাধা।
শ্রীমতী রাধারাণী সম্বন্ধে শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী লিখেছেন-----
মহাভাবস্বরুপ শ্রীরাধাঠাকুররাণী।
সর্বগুণখনি কৃষ্ণকান্তা-শিরোমণি।।
অর্থাৎ, "মহাভাব-স্বরুপিণী শ্রীমতী রাধারানী হচ্ছেন সমস্থ গুণের আধার এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রেয়সীগণের শিরোমণি"।
গোলকে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধা নি্ত্য কান্ত ও কান্তারুপে বিরাজমান। সেই কথা শ্রীব্রহ্মা ব্রহ্মসংহিতায় (৫/৩৭ শ্লোকে) বর্ণনা করেছেন ----
" পরম আনন্দদায়িনী শ্রীমতী রাধারাণীর সঙ্গে যিনি স্বীয় ধাম গোলকে অবস্থান করেন এবং শ্রীমতী রাধারাণীর অংশ-প্রকাশ চিন্ময় রসের আনন্দে পরিপূর্ণ ব্রজগোপিরা যাঁর নিত্য নীলাসঙ্গিনী, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি । "
রাধা কৃষ্ণলীলা প্রসঙ্গে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছেন। কৃষ্ণপ্রিয়ারূপে রাধার (রাহিআ/রাধিকা) প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় হালের প্রাকৃত কাব্য গাথাসত্তসঈ-তে (খ্রি ২য় শতক)। পরে বিভিন্ন পুরাণ (যেমনঃ পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ইত্যাদি), সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশএর উপখ্যান এবং নারদপানচরিতা (Narodpancharatra) কাব্যে রাধার উল্লেখ আছে। বারো শতকে জয়দেব রচিত গীতগোবিন্দম্ এবং চৌদ্দ শতকে বড়ু চন্ডীদাস রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন-এ রাধাকৃষ্ণের এই প্রণয়লীলা চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। আঠারো শতক পর্যন্ত বাংলা পদাবলি সাহিত্যের এক বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের ভক্তিতত্ত্বমূলক পদসমূহ। বর্তমানেও পদাবলি কীর্তন নামে রাধা-কৃষ্ণের তত্ত্বমূলক পালাগান বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে গীত হয়। আধুনিক গানের পাশাপাশি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক কীর্তন গান শহুরে শ্রোতাদেরও হূদয় আকর্ষণ করে। এ গান ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলেরই প্রিয়। রাধাকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র বৃন্দাবন হিন্দুদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তীর্থক্ষেত্র। কৃষ্ণের সাহচর্যগুণে রাধা গোপী থেকে দেবীর পর্যায়ে উন্নীত। কৃষ্ণের পাশাপাশি তিনিও এখন সমান গুরুত্বের সঙ্গে ভক্তদের পূজা পেয়ে থাকেন। রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি হিন্দুদের, বিশেষত বৈষ্ণবদের পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তির বিষয়। গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম ও দর্শনে রাধাতত্ত্ব পূর্ণ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, অর্থাৎ বৈষ্ণবধর্মের মূল কথাই রাধাকৃষ্ণের প্রেমতত্ত্ব; রাধাকৃষ্ণের যুগল রূপের অন্তরালে তাঁরা এক ঈশ্বরকেই কল্পনা করেন।
বৈষ্ণবমতে কৃষ্ণ মূলত স্বয়ং বিষ্ণু বা ঈশ্বর, আর রাধা তাঁর জীবনসঙ্গিনী লক্ষ্মী। মর্ত্যে তাঁরা ভিন্ন পরিচয়ে জন্মগ্রহণ করলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী। ভারতীয় দর্শনমতে বিষ্ণু হচ্ছেন পরমাত্মা, আর সব জীবাত্মা। জীবাত্মার সর্বদা আকাঙ্ক্ষা পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হওয়া। পরমাত্মা বিষ্ণুই হচ্ছেন একমাত্র পুরুষ, আর সব প্রকৃতি অর্থাৎ নারী। রাধা এখানে সকল জীবাত্মার প্রতীক এবং কৃষ্ণ বিষ্ণু বা পরমাত্মার প্রতীক। তাই কৃষ্ণের প্রতি রাধার প্রণয়াসক্তি পরমাত্মা-জীবাত্মার শাশ্বত মিলনাসক্তিরই নামান্তর, অর্থাৎ পরমাত্মার প্রতি জীবাত্মার আত্মসমর্পণ। এটাই রাধাকৃষ্ণ তত্ত্বের মূল কথা এবং ভারতীয় দর্শনেরও সার কথা।
বিঃদ্রঃ আরো মূর্খামী দেখুন
রাধাকৃষ্ণ উচ্চারণ শাস্ত্রসম্মত। কৃষ্ণরাধা উচ্চারণ করলে ব্রহ্মহত্যার পাপ হয়। কার্তিকী পূর্ণিমার পূজা করে রাসোত্সব উপলক্ষে গোলকমণ্ডলের রাসমণ্ডলে বিষ্ণু রাসেশ্বরী পূজা করেন। এই পূজায় বিষ্ণু রাধাকবচ কণ্ঠে ও বাহুদেশে ধারণ করেন। এই সময় রাধা বিষ্ণুর পূজা করেন এবং বিষ্ণু রাধার পূজা করেন। [ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, প্রকৃতি খণ্ড, ৪৮-৫০ খণ্ড]
এক বার কৃষ্ণ নামে যত পাপ হরে
জীবের কি সাধ্য আছে অত পাপ করে
কিন্তু কৃষ্ণরাধা উচ্চারন করা যাবে না
রাধা বিভিন্ন নামে অভিহিতা হয়ে থাকেন। এর ভিতরে ১৬টি নাম পাপনাশক। এই নামগুলো হলো−
- রাসেশ্বরী: শ্রীকৃষ্ণকে বলা হয় রাসেশ্বর। কৃষ্ণের পত্নী অর্থে রাধাকে বলা হয় রাসেশ্বরী।
- রাসবাসিনী: রাসমণ্ডলে বাস করেন, তাই তিনি রাসবাসিনী।
- রসিকেশ্বরী: সকল রসিকাদেবীগণের ঈশ্বরী, এই অর্থে রসিকেশ্বরী।
- কৃষ্ণপ্রাণাধিকা: শ্রীকৃষ্ণের প্রাণাধিকা প্রেয়সী, এই অর্থে কৃষ্ণপ্রাণাধিকা।
- কৃষ্ণপ্রিয়া: শ্রীকৃষ্ণের অতিশয় প্রিয় নারী, এই অর্থে কৃষ্ণপ্রিয়া। এর সমার্থক শব্দ বিষ্ণুপ্রিয়া।
- কৃষ্ণস্বরূপিণী: অবলীলাক্রমে কৃষ্ণের বিধান সম্পন্ন করতে পারেন বলে, তিনি কৃষ্ণস্বরূপিণী।
- বামাংশসম্ভূতা: বিষ্ণুর বামপার্শ্ব থেকে উত্পন্ন হন, এই অর্থে বামাংশসম্ভূতা।
- পরমানন্দরূপিণী: রাধা স্বয়ং মূর্তিমতী পরমানন্দরাশি, এবং পরমানন্দরূপে বিরাজ করেন, এই অর্থে পরমানন্দরূপিণী।
- কৃষ্ণা: কৃষ্ শব্দের অর্থ মোক্ষ (মুক্তি), এর সাথের ণ-এর অর্থ উত্কৃষ্ট। এর সাথে দানবোধক আ ধ্বনি যুক্ত হয়ে কৃষ্ণা শব্দের সৃষ্টি। সব মিলিয়ে কৃষ্ণা শব্দের অর্থ দাঁড়ায়, যিনি উত্কৃষ্টতর মুক্তি প্রদান করেন।
- বৃন্দাবনী: বৃন্দাবনে সম্পূর্ণরূপে বিরাজিতা, এই অর্থে বৃন্দাবনী।
- বৃন্দা: বৃন্দ শব্দের অর্থ সখী, আছে অর্থে আ মিলে তৈরি হয় বৃন্দা শব্দ। বৃন্দাবনে তাঁর লোমকূপ থেকে উত্পন্ন সকল সখীসহ বিরাজিতা ছিলেন, তাই তাঁর নাম বৃন্দা।
- বৃন্দাবনবিনোদিনী: বৃন্দাবনে বিনোদ (আনন্দ) রূপে বিরাজ করেন, এই অর্থ বৃন্দাবনবিনোদিনী।
- চন্দ্রাবলী: রাধার মুখমণ্ডল ও নখ চাঁদের মতো, তাই তিনি চন্দ্রাবলী।
- চন্দ্রাকান্তা: রাধার মুখমণ্ডল সবসময় চাঁদের তূল্য, তাই তিনি চন্দ্রকান্তা।
- শতচন্দ্রনিভাবননা: তাঁর মুখমণ্ডল সর্বদা শতচন্দ্রে প্রভা বিদ্যমান থাকে, তাই তিনি শতচন্দ্রনিভাবনা।
- এসববিষয় বিবেচনা করলে, এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হয় যে, কৃষ্ণের সাথে যৌবনবতী রাধা, কবিদের উপলব্ধির ভুল আর শুধুই কষ্ট কল্পনা। বাস্তবে বৃন্দাবনে কৃষ্ণের বাল্যকালে কোনো রাধা থেকে থাকলেও, তার সাথে যুবক কৃষ্ণের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এজন্যই রাধা কৃষ্ণের প্রেম, কোনো প্রকারেই ঐতিহাসিক নয়, সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
- রাধা নামী কুলটা, চরিত্রের নারীর খোঁজ পাবেন নীচের কিছু নোংরা বই এ১)পুরুষবোধিনী ঊপনিষদ২)গর্গসংহিতা( গোলকখন্ড ১৬ অধ্যায়, দ্বারকাখন্ড ১৮ অধ্যায় প্রভৃতি)৩)সনদকুমার সংহিতা (৩০২-৩০৩, ৭২, ৭৪)৪)নারদপঞ্চরাত্রম(২য়,৩য় ও ৫ম অধ্যায় জুড়ে)৫)বৃহত-গৌতম তন্ত্র৬)ঊর্ধ্বামনায় তন্ত্র৭)পদ্মপুরাণ (#ভূমিখন্ডের ৭ম ও ২০তম অধ্যায়, #পাতালখন্ডের বহু অধ্যায় যেমন-৩৯-৪৫,৭১ অধ্যায় জুড়ে, #ব্রহ্মখন্ডের বিস্তৃত অংশজুড়ে যেমন -৭-৯ম অধ্যায়, স্বর্গখন্ডম ৪৬ অধ্যায় প্রভৃতি )৮)দেবীভাগবতম (সমস্ত ৯ম স্কন্ধ জুড়ে),৯) ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ( প্রকৃতিখন্ড ও শ্রীকৃষ্ণজন্মখন্ড জুড়ে)১০)ব্রহ্মান্ডপুরাণ( সমগ্র উত্তরখন্ড জুড়ে, উপদগত পর্ব ৪২,৪৩ অধ্যায়)১১)নারদপুরাণ ( ৩য় খন্ড ৮৯ অধ্যায় সহ অনেক স্থানে)১২)শিবপুরাণ(রুদ্রসংহিতার ৩০,৩১ অধ্যায়)১৩)মৎস্য পুরাণ(১৩ অধ্যায়)১৪)স্কন্দ পুরাণ(বিষ্ণুখন্ডের শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্মের ১/২২ ও ২/১১-১৩,১৯, বাসুদেব মাহাত্ম্যের ১৬,১৭ প্রভৃতি অধ্যায়, প্রভাসখন্ডের দ্বারকামাহাত্ম্যম ১২ অধ্যায় প্রভৃতি)১৫)শংকরাচার্যের জগন্নাথ-অষ্টকম(৬ নং শ্লোক)১৬)শংকরাচার্যের যমুনা-অষ্টকম১৭)রাধাতন্ত্র১৮)রাধাপোনিষদ১৯) মায়াতন্ত্র ২য় পটল২০) নীলতন্ত্র (২২/৯-১১)২১)মুক্তমালা তন্ত্র২২) গোপালতাপনী ঊপনিষদ( আদি ও উত্তরে গান্ধর্বীদেবী হলেন শ্রীরাধিকা)২৩) চৈতন্যচরিতামৃত( সমস্ত জুড়ে বিবিধ স্থানে)২৪) চৈতন্য ভাগবত২৫) বায়ুপুরাণ ১০৪/৫২২৬) বরাহপুরাণ (১৬৪/৩৩,৩৪)২৭) সৌভাগ্য লক্ষ্মী তন্ত্র ( ১৩ অধ্যায়)২৮) শংকরাচার্যের অচ্যুত অষ্টকম( ৪ নং শ্লোক)২৯) নির্বাণতন্ত্র (৫ম অধ্যায়)৩০) শংকরাচার্যের নারায়ন গীতি-স্ত্রোত (১০ নং শ্লোক)
মহাভারত থেকে আমরা পাই-
বৈদেহ্যাং চ যথা রামো রুক্মিণ্যাং চ জনার্দনঃ। (উদ্যোগপর্ব-১১৭/১৭)
অর্থাৎ যেমন বিদেহনন্দিনী সীতার জন্য রাম তেমনি রুক্মিণীর জন্য ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ।রাধার চরিত্র কি-রুপ কল্পনা করে তত্ত্বগত দিকটি বুঝাতে চেয়েছেন, এক্ষনে সেই রুপক অর্থের ভাবার্থ পরিস্ফুটন করতে প্রবৃত্ত হব।- বেদে রাধা শব্দঃ
- বরিবোধাতমো ভুবো মহিষ্ঠো বৃন্নহন্তমঃ ৷পর্ষি রাধো মঘোনাম৷-(সামবেদ - ৬৯১ মন্ত্র)[ভাষ্যকার- রামনাথ বেদালঙ্কার]পদার্থঃ- হে ইন্দ্র পরমাত্মন্ ৷ আপনি (বরিবোধাতম্ঃ) অতিশয় ঐশ্বর্য ধারণকারী (মহিষ্ঠঃ) সবার থেকে বড় দানশীল (বৃন্নহন্তমঃ) সমস্ত পাপের সংহারকারী (ভুবঃ) সিদ্ধ হন৷ আপনিই (মঘোনামঃ) আমাদের ভৌতিক ধন (রাধঃ) সত্য,ন্যায়,দয়া,মোক্ষ,আদি দিব্য ধনকে (পর্ষি) প্রদান করুন৷বেদে অনেক স্থানে রাধা শব্দের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। ঋক, সাম, যজুর বেদের অনেক মন্ত্রে এ শব্দের প্রমান আছে। এই রাধা শব্দটা অন্যান্যা সনাতন ধর্মীয় পুস্তকে পাওয়া যায়। কিন্তু সর্বত্র এই রাধা শব্দটা একই অর্থে ব্যবহার হয় না। বেদে রাধা শব্দের অর্থ এক প্রকার এবং অন্যান্য গ্রন্থে তাহা আবার আরেক প্রকারে অর্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পৌরানিক ও বৈষ্ণবরা তাদের পুস্তকে রাধা শব্দের ব্যবহার দেখতে পায়। কিন্তু তাদের রাধা একজন মানুষ।। এক কথায় রাধা হল কৃষ্ণের প্রেমিকাস্বরূপ। কিন্তু বেদের রাধা শব্দ কোন মানুষকে নির্দেশ করে না। বৈদিক শব্দকোষ নির্ঘন্টুতে রাধা শব্দের প্রমান আছে [ রাধ ইতি ধননামসু পঠিতম্।। ( নির্ঘন্টু ২/১০)।। অত্র হলাশ্চ। ( অষ্টা ০ ৩/৩/১২১) ইতি ঘঞ] এ সকল স্থানে রাধা শব্দের অর্থ হল (ধননাম) অর্থাৎ ঐশ্বর্যাদি।। পৌরানিক বৈষ্ণবগন বেদে যখন রাধা শব্দ দেখতে পায় তখন তাহার কৃষ্ণের প্রেমিকা রাধা ধরে নেয় এ কারনে বেদ শাস্ত্রের প্রকৃত অর্থ লুপ্ত হয়ে রূঢ় অর্থ হয়ে যায়। বৈষ্ণবগন বেদের (ঋক ১/৩০/৫) মন্ত্রে রাধা শব্দের মাঝে তাদের পুরানাদির রাধাকে দর্শন করেছেন। অামি মনে করি তাদের এ ভূল ধারনা দূর করা দরকার তাই আমি এই মন্ত্রের বাংলা অর্থ দিচ্ছি।।।।ওম্।। স্তোত্রং রাধানং পতে গির্বাহো বীর যস্য তে। বিভুতিরস্তু সুনৃতা।। ঋক ( ১/৩০/৫)পদার্থঃ হে ( গির্বাহঃ) জানিবারযোগ্য পদার্থকে জানিয়া এবং সুখ দুঃখকে নাশ কারী তথা ( রাধ আনাম্) যিনি পৃথিবী অাদি পদার্থে সুখ সিদ্ধ হয়ে থাকে, তাহাকে ( পতে) পালন কারী সভা বা সেনাদের স্বামী বিদ্বান ( যস্য) যিনি ( তে) অাপনাকে ( সুনৃতা) শ্রেষ্ঠতা দ্বারা সব গুনকে প্রকাশ কারী ( বিভূতি) অনেক প্রকার ঐশ্বর্য স্বরূপ। সে নিজের আশ্রয় দ্বারা আমাদের জন্য ( স্তোত্রম্) স্তুতি ( নঃ) আমাদের পূর্বোক্তো ( মদায়) আনন্দ এবং ( শুষ্মিনো) বল প্রাপ্তির জন্য ( অস্তু) হউক।।অর্থঃ আমাদের সকলের স্বামী যিনি বেদে পরিপূর্ন বিজ্ঞান তর ঐ শ্বর্যযুক্ত এবং যথাযোগ্য ন্যায়কারী সভ্যাধ্যাক্ষ বা সেনাপতি বিদ্বান তাহাকে ন্যায়ধীশ বলে মান্যতা প্রদান করা উচিত।এ মন্ত্রের পৌরানিক রাধা কোথাও নাই।। এখানে রাধ ইতি ধননামসু পঠিতম্ বলে জানিবে।। ( নির্ঘন্টু)=২/১৩।।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ