শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা নবম অধ্যায় - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

06 August, 2017

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা নবম অধ্যায়

নবম অধ্যায়- রাজবিদ্যা রাজগুহ্যযোগ


                 
ভগবান উবাচ-
ইদন্তুু তে গুহ্যতমং প্রবক্ষ্যাম্যনসূয়বে ।
জ্ঞানং বিজ্ঞানসহিতং যজ্ জ্ঞাত্বা মোক্ষ্যসেহশুভাৎ ।। ১

অর্থ-ভগবান বললেন হে অর্জুন নিমৎসর বলে তোমাকে আমি পরম বিজ্ঞান সমন্বিত সব চেয়ে গোপনীয় জ্ঞান উপদেশ করছি সেই জ্ঞান প্রাপ্ত হয়ে তুমি দুঃখময় সংসার থেকে মুক্ত হও।
রাজবিদ্যা রাজগুহ্যং পবিত্রমিদমুত্তমম্‌ ।
প্রত্যক্ষাবগমং ধর্মং সুসুখং কর্তুমব্যয়ম্‌ ।। ২

অর্থ-এই জ্ঞান সমস্ত বিদ্যার রাজা সমস্ত গুজ্যতত্ত্ব থেকেও গুহ্যতর অতি গুহ্যতর অতি পবিত্র এবং প্রতক্ষ্যরুপে আত্ত্ব উপলব্ধি প্রদান করে বলে প্রকৃত ধর্ম। এই জ্ঞান অব্যয় এবং সুখসাধ্য।
অশ্রদ্দধানাঃ পুরুষা ধর্মস্যাস্য পরন্তপ ।
অপ্রাপ্য মাং নিবর্তন্তে মৃত্যুসংসারবর্ত্মনি ।। ৩

অর্থ-হে পরন্তপ যে সমস্ত জীবের শ্রদ্ধা উদিত হয়নি, তারা এই পরম ধর্মরুপ ভগবৎভক্তি লাভ করতে অসমর্থ হয়ে এই জড় জগতে জন্ম মৃত্যুর আবর্তে পতিত হয়।
ময়াততমিদং সর্বং জগদব্যক্তমুর্ত্তিনা ।
মত্স্থানি সর্বভূতানি ন চাহং তেষ্ববস্থিতঃ ।। ৪

অর্থ-অব্যক্ত রুপে আমি সমস্ত জগতে ব্যাপ্ত আছি। সমস্ত জীব আমাতেই অবস্থিত কিন্তু আমি তাতে অবস্থিত নই।
পদার্থ-( ইদম্) এই ( সর্বে) সর্বভূতে ( জগত্) সংসার ( অব্যক্তমূর্তিনা) নিরাকার স্বরপ দ্বারা (ময়া) আমার ( ততম্) বিস্তৃত বা ব্যাপ্ত ( সর্বভূতানি) সংসারের পৃথিবী আদি সকল ভূতে ( মতস্থানি) আমাতে স্থির হয় ( চ) এবং ( অহম্) আমি ( তেষু) তাতে ( ন,অবস্থিত) স্থির না অর্থাৎ আমি তাতে অবস্থি নই।

ভাষ্য-কৃষ্ণজীর ঈশ্বর সম্বন্ধি এই যোগ যেমন-
"যাত্মানিতীষ্ঠান্ আত্মনোন্তরোয়মাত্মান্বেদয়স্যাত্মাশরীরম্"।বৃহ০-৩/৭/২২। ইত্যাদি অন্তর্যামী ব্রাহ্মণে যে অন্তর্যামী মনুষ্য আত্মার সাথে দেহের সম্বন্ধ বর্ণনা করা হয়েছে। এই অর্থেই কৃষ্ণজী নিজেকে পরমাত্মার প্রকাশ বলে মনে করেন। সেই অন্তর্যামী সত্তায় আত্মা-উপলবদ্ধিকে ধারণ করে এই উক্তি এমন করে যে আমি এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছি...এই ঐশ্বরীয় যোগকে সাধারণ পুরুষেরা বুঝে না,কেবল সাধারণ যোগশক্তি দ্বারা এই অপূর্ব প্রতিপাদন দেয়নি কিন্তু ঈশ্বরের সাথে এই অ-মৌখিক সম্পর্ক।
উপরোক্ত প্রকারে প্রমাণ রেখে এই অর্থ করা হয়েছে।
এবং অন্যান্য অনেক ঋষিও এই ইচ্ছা পোষণ করেছেন,যেমন আমরা ইন্দ্রমার্দনাপিকরণে "প্রাণস্তথানুগমাত্" ব্র০ সূ০,১.১.২৮সূত্রে লিখা। নমবোধ্যায় ২৪১ চতুর্থাধ্যায় দেখানো হয়েছে 'ইন্দ্র'যিনি নিজে কথিত আছে যে তুমি আমার উপাসনা কর,এই ঈশ্বর যোগ ছিল তারপর বামদেব বৃহদা০ ১৪.১০-এ আমি বলছেন যে দেবতাদের মধ্যে জাগ্রত হয়ে তিনি ঈশ্বরের উপাসনা করে নিজেকে পরম ঈশ্বর হওয়ার নির্দেশ দিতে শুরু করেছিলেন এবং ৫০৪ অর্থ-"সত্বপুরুষান্যথা ক্ষ্যতিমাত্রস্য সর্বভাবাধিষ্ঠাতৃত্ত্বম্ চ " যো০ ৩.৪৮। আমি এই প্রকার
বর্ণনা করেছি যখন প্রকৃতি ও ঈশ্বর তত্বজ্ঞান হয়ে যায়, তখন সকল ইন্দ্রিয়ের প্রতিষ্ঠা ও জ্ঞান হয় এবং সেই পুরুষকে জান এর নাম সিদ্ধি, কৃষ্ণজী এই রকম যোগসিদ্ধি লাভ করেছিলেন, তাই তিনি নিজেকে ঈশ্বর ভাব দ্বারায় বিবৃতি দিয়েছেন।।
( আর্যমুনি ভাষ্য)
ন চ মত্স্থানি ভূতানি পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্ ।
ভূতভৃন্ন চ ভূতস্থো মমত্মা ভূতভাবনঃ ।। ৫

অর্থ-যদিও সব কিছুই আমারই সৃষ্ট তবুও তারা আমাতে অবস্থিত নয়। আমার যোগৈশ্বর্য্য দর্শন কর। যদিও আমি সমস্ত জীবের ধারক এবং যদিও আমি সর্বব্যাপ্ত তবুও অমি সমস্ত সৃষ্টির উৎস।
যথাকাশস্থিতো নিত্যং বায়ুঃ সর্বত্রগো মহান্ ।
তথা সর্বাণি ভূতানি মত্স্থানীত্যুপধারয় ।। ৬

অর্থ-মহান বায়ু যেমন সর্বত্র বিচর শীল হওয়া সত্তেও সর্বদা আকাশে অবস্থান করে তেমনই জগৎ আমাতে অবস্থান করে।
সর্বভূতানি কৌন্তেয় প্রকৃতিং যান্তি মামিকাম্‌ ।
কল্পক্ষয়ে পুনস্তানি কল্পদৌ বিসৃজাম্যহম্‌ ।। ৭

অর্থ-হে কৌন্তেয় কল্পান্ত সমস্ত জড় বস্তু আমারই প্রকৃতে প্রবেশ করে এবং পুনরায় কল্পারম্ভে প্রকৃতির দ্বারা আমি তাদের সৃষ্টি করি।
প্রকৃতিং স্বামবষ্টভ্য বিসৃজামি পুনঃ পুনঃ ।
ভূতগ্রামমিমং কৃত্স্নমবশং প্রকৃতের্বশাৎ ।। ৮

অর্থ-আমি নিজের মায়া দ্বারাই কর্মাধীন জীবগণকে বার বার সৃষ্টি করি।
ন চ মাং তানি কর্মাণি নিবধ্নন্তি ধনঞ্জয় ।
উদাসীনবদাসীনমসক্তং তেষু কর্মসু ।। ৯

অর্থ-হে ধনঞ্জয় সেই সমস্ত কর্ম আমাকে আবদ্ধ করতে পারে না। আমি সেই সমস্ত কর্মে অনাসক্ত ও উদাসিনের ন্যায় অবস্থিত থাকি।
ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতিঃ সূয়তে সচরাচরম্‌ ।
হেতুনানেন কৌন্তেয় জগদ্ বিপরিবর্ততে ।। ১০

অর্থ-হে কেন্তেয় আমার অধ্যক্ষতার দ্বারা ত্রিগুনাত্তিকা মায়া এই চরাচর বিশ্ব সৃষ্টি। প্রকৃতির নিয়মে এই জগত্ পুনঃ পুনঃ সৃষ্টি হয় এবং ধংস হয়।
অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম্‌ ।
পরং ভাবমজানন্তো মম ভূতমহেশ্বরম্‌ ।। ১১

অর্থ-আমি যখন মানুষ রুপে অবতীর্ন হই, মুর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে তারা আমার পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত হন না এবং তারা আমাকে সর্বভূতের মহেশ্বর বলে জানে না।
মোঘশা মোঘকর্মাণো মোঘজ্ঞানা বিচেতসঃ ।
রাক্ষসীমাসুরীঞ্চৈব প্রকৃতিং মোহিনীং শ্রিতাঃ ।। ১২

অর্থ-এই ভাবে যারা মোহচ্ছন্ন হয়েছে তারা রাক্ষসী বা আসুরী ভাবের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সেই মোহছন্ন অবস্থায় তাদেরও মুক্তি লাভের আশা, তাদের স্বকাম কর্ম এবং জ্ঞানের প্রয়াস সমস্তই ব্যর্থ হয়।
মহাত্মানস্তুু মাং পার্থ দৈবীং প্রকৃতিমাশ্রিতাঃ ।
ভজন্ত্যনন্যমনসো জ্ঞাত্বা ভূতাদিমব্যয়ম্‌ ।। ১৩

অর্থ-হে পার্থ মোহযুক্ত মহাত্মাগন আমার দৈবী প্রকৃতি আশ্রয় করেন। তারা আমাকে সর্বভূতের কারন ও অবিনাশী জেনে অনন্য চিত্তে ভজনা করেন।
সততং কীর্তয়ন্তো মাং যতন্তশ্চ দৃঢ়ব্রতাঃ ।
নমস্যন্তশ্চ মাং ভক্ত্যা নিত্যযুক্তা উপাসতে ।। ১৪

অর্থ-ব্রহ্মচর্য্যাদি ব্রতে দৃঢ়নিষ্ট ও যত্নশীল হয়ে সেই ভক্তরা সর্বদা আমার মহিমা কির্তন করে এবং সর্বদা ভক্তি পুর্বক আমার উপসনা করেন।

[ কেচিৎ ] সততং কীৰ্ত্তয়ন্তঃ মাম্ [ উপাসতে ] [ কেচিৎ ] দৃঢ়ব্রতাঃ [ সক্ত | যতন্তশ্চ (প্রযত্নং কুৰ্ব্বত্তশ্চ) [ উপাসতে ] [ কেচিৎ ] ভক্ত্যা নমস্যত্তশ্চ (প্রণমন্তশ) [ উপাসতে ] [ অন্যে ] নিত্যযুক্তাঃ [ অনবরতমবহিতাঃ ] [ সন্তঃ ] মাম্ উপাসতে।।১৪

কেহ কেহ সৰ্ব্বদা কীৰ্ত্তন করিয়া, কেহ কেহ দৃঢ় নিয়মস্থ হইয়া প্রযত্ন করিয়া, রেহ কেহ ভক্তি-সহকারে প্রণাম করিয়া, কেহ কেহ বা সর্ব্বদা অবহিত হইয়া আমাকে ভজনা করেন।।

তাৎপৰ্য্য।—কেহ কেহ সৰ্ব্বদা আত্মগুণ কথন (সৎচর্চ্চা) দ্বারা আমার কীর্তন করিয়া আমাকে ভজনা করেন এবং সদা সর্ব্বদা আমাতে বিভোররূপে আটকাইয়া থাকিয়া আমাতেই তন্ময়রূপ কীৰ্ত্তন দ্বারা আমাকে ভজনা করেন [ এই তন্ময়রূপ বিভোর অবস্থাই প্রকৃত কীৰ্ত্তন, স্তোত্রমন্ত্রাদি দ্বারা ভগবানের নাম উচ্চারণ গৌণ কীৰ্ত্তন, সাধন দ্বারা যখন এরূপ তন্ময়ভাব আসে যে জিহ্বা, চক্ষু, ওষ্ঠ, মন ও প্রাণ স্পন্দিত হয় না, তখনই ঠিক মুখ্য কীৰ্ত্তন; বৰ্ত্তমান গৌণ কীৰ্ত্তন দ্বারা মোক্ষ লাভ অসম্ভব; কারণ জলপান ব্যতিরেকে কেবলমাত্র জলের নাম উচ্চারণে তৃষ্ণা নিবারণ হওয়া সম্ভবপর নহে; তবে গৌরাঙ্গদেব যে সংকীর্তনের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন তাহা সাধারণের রুচি আকর্ষণের জন্য, উহা মোক্ষলাভের জন্য নহে; যাহারা মুখ্য কীৰ্ত্তন না জানে, বৰ্ত্তমান গৌণ কীর্তন তাহাদের অকরণীয় নহে; কেহ কেহ দৃঢ় নিয়মপূর্ব্বক সাধনায় প্রযত্ন করিয়া আমার ভজনা করেন এবং কেহ কেহ ওঁকার ক্রিয়া দ্বারা ভক্তিযুক্ত প্রণাম করিয়া আমাকে ভজনা করেন, কেহ বা নিতাই আমাতে যুক্ত থাকিয়া (সদা সৰ্ব্বদা আত্মধ্যানে আটকাইয়া থাকারূপ নিত্যযুক্ত হইয়া) আমার উপাসনা করেন।।

জ্ঞানযজ্ঞেন চাপ্যন্যে যজন্তো মামুপাসতে ।
একত্বেন পৃথক্ তেন বহুধা বিশ্বতোমুখম্‌ ।। ১৫

অর্থ-অন্য কেউ কেউ জ্ঞান যজ্ঞের দ্বারা, অভেদ চিন্তাপুর্বক, কেউ কেউ বহুরুপে প্রকাশিত ভেদ চিন্তাপুর্বক এবং অন্য কেউ আমার বিশ্বরুপের উপসনা করে।
অহং ক্রতুরহং যজ্ঞঃ স্বধাহমহমৌষধম্‌ ।
মন্ত্রোহমহমেবাজ্যমহমগ্নিরহং হুতম্‌ ।। ১৬

অর্থ-আমি অগ্নিষ্টোম আদি শ্রৌত যজ্ঞ আমি বৈশ্যদেব আদি স্মার্ত যজ্ঞ, আমি পিত্রিপুরুষদের উদ্বেশ্যে কর্ম, আমি রোগ নিবারক ভেষজ, আমি মন্ত্র, আমি হোমের ঘৃত, আমি হোমাগ্নি এবং আমিই হোমক্রিয়া।
পিতাহমস্য জগতো মাতা ধাতা পিতামহঃ ।
বেদ্যং পবিত্রমোঙ্কার ঋক্ সাম যজুরেব চ ।। ১৭

অর্থ-আমিই জগতের পিতামাতা সর্ব প্রাণীর কর্মফল প্রানদাতা এবং পিতামহ ঋক সাম এবং যজুঃ (বেদসমুহ)।

তপাম্যহমহং বর্ষং নিগৃহ্নাম্যুত্সৃজামি চ ।
গতির্ভর্ত্তা প্রভূঃ সাক্ষী নিবাসঃ শরণং সুহৃৎ ।
প্রভবঃ প্রলয়ঃ স্থানং নিধানং বীজমব্যয়ম্‌ ।। ১৮

অর্থ-আমি সকলের গতীভর্তা প্রভু সাক্ষীনিবাস শরণ, সুহৃদ, উত্পত্তি, নাশ, স্থিতি, হেতু এবং অব্যয় বীজ।
অমৃতঞ্চৈব মৃত্যুশ্চ সদসতচ্চাহমর্জুন ।। ১৯
অর্থ-হে অর্জুন আমি তাপ এবং আমি বিষ্টি, আমি জল বর্ষনকারী ও জল আকর্ষন করি; আমি অমৃত এবং আমি মৃত্যু; আমি সত্ত্বা এবং সত্ত্বাহীন।
ত্রৈবিদ্যা মাং সোমপাঃ পুতপাপা
যজ্ঞৈরিষ্ট্বা স্বর্গতিং প্রার্থয়ন্তে ।
তে পুণ্যমাসাদ্য সুরেন্দ্রলোক-
মশ্নন্তি দিব্যান্ দিবি দেবভোগান ।। ২০
তে তং ভূক্ত্বা স্বর্গলোকং বিশালং
ক্ষীণে পুণ্যে মর্ত্যলোকং বিশন্তি ।
এবং ত্রয়ীধর্মমনুপ্রপন্না
গতাগতং কামকামা লভন্তে ।। ২১

অর্থ-ত্রিবেদ যজ্ঞগন যজ্ঞ অনুষ্ঠান দ্বারা আমাকে আরাধনা করে যজ্ঞাবশিষ্ঠ সোমরস পান করে পাপ মুক্ত হন এবং স্বর্গ কামনা করেন। তারা পুন্য কর্মের ফল স্বরুপ ইন্দ্র লোক লাভ করে দিব্য স্বর্গসুখ উপভোগ করেন। তারা সেই বিপুলস্বর্গলোক উপভোগ করে পুন্য ক্ষয় হলে আবার মর্তলোকে ফিরে আসেন। এই ভাবে ত্রিবেদক্ত ধর্মের অনুষ্ঠান করে ইন্দ্রিয় ভোগ আকাঙ্খি মানুষেরা সংসারে জন্ম মৃর্ত্যর আবর্তে আবর্তিত হয়।
অনন্যাচিন্তয়ন্তো মামং যে জনাঃ পর্য্যুপাসতে।
তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম্‌ ।। ২২

অর্থ-অনন্য চিত্তে আমার চিন্তায় মগ্নহয়ে যারা আমার উপসনা করে আমি তাদের সমস্ত অভাব পুরন করি এবং তাদের প্রাপ্ত বস্তু সংরক্ষণ করি।
যেহপ্যন্যদেবতা ভক্তা যজন্তে শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ ।
তেহপি মামেব কৌন্তেয় যজন্ত্যবিধিপুর্বকম্‌ ।। ২৩

অর্থ- হে কৌন্তেয় যারা ভক্তি পুর্বক অন্য দেবতাদের পূজা করেন তারাও অবিধি পুর্বক আমারই পূজা করেন।
অহং হি সর্বযজ্ঞানাং ভোক্তা চ প্রভূরেব চ ।
ন তু মামভিজানন্তি তত্ত্বেনাহতশ্চ্যবন্তি তে ।। ২৪

অর্থ-আমিই যজ্ঞের ভোক্তা ও প্রভূ। যারা আমার চিন্ময় স্বরুপ জানেনা তারা আবার সংসার সমুদ্রে অধোপাতিত হয়।
যান্তি দেবব্রতা দেবান্ পিতৃন্ যান্তি পিতৃব্রতাঃ ।
ভূতানি যান্তি ভূতেজ্যা যান্তি মদ্যাযাজিনোহপি মাম্‌ ।। ২৫

অর্থ-দেবতাদের উপাসকেরা দেবলোক প্রাপ্ত হবেন; যারা ভূত প্রেতাদির উপাসক তারা ভূত লোকই লাভ করে; যারা পিত্রী পুরুষদের উপাসক, তারাঅনিত্য পিত্রি লোক লাভ করে এবং যারা আমার উপাসনা করে তারা আমাকেই লাভ করে।
পত্রং পুস্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি ।
তদহং ভক্ত্যুপহৃতমশ্নামি প্রযতাত্মনঃ ।। ২৬

অর্থ-যে বিশুদ্ধ চিত্ত নিস্কাম ভক্ত আমাকে ভক্তি পুর্বক পত্র, পুস্প, ফল ও জল অর্পন করেন, আমি তার সেই ভক্তি প্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহন করি।
যৎ করোষি যদশ্নাসি যজ্জুহোষি দদাসি যৎ ।
যৎ তপস্যসি কৌন্তেয় তৎ কুরুষ্ব মদর্পনম্‌ ।। ২৭

অর্খ-হে কৌন্তেয় তুমি যা অনুষ্ঠান কর, যা আহার কর, যা হোম কর, যা দান কর এবং যে তপস্যা কর, সেই সমস্তই আমাকেই অর্পন কর।
শুভাশুভফলৈরেবং মোক্ষ্যসে কর্মবন্ধনৈঃ ।
সন্ন্যাসযোগযুক্তাত্মা বিমুক্তো মামুপৈষ্যসি ।। ২৮

অর্থ – এই ভাবে আমাকে সমস’ কর্ম অর্পন দ্বারা শুভ এবং অশুভ ফল বিশিষ্ট কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হবো। এই ভাবে সন্নাস যোগে যুক্ত হয়ে তুমি মুক্ত হবে এবং আমাকেই প্রাপ্ত হবে।
সমোহহং সর্বভূতেষু ন মে দ্বেষ্যোহস্তি ন প্রিয়ঃ ।
যে ভজন্তি তু মাং ভক্ত্যা ময়ি তে তেষু চাপ্যহম্‌ ।। ২৯

অর্থ-আমি সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন। কেউ আমার প্রিয় নয় ও অপ্রিয়ও নয়। কিন্তু যারা ভক্তি পুর্বক আমাকে ভজনা করেন তারা সভাবতই আমাতে অবস্থান করেন, অমিও তাদের হৃদয় বাস করি।
অপি চেৎ সুদুরাচারো ভজতে মামনন্যভাক্‌ ।
সাধুরেব স মন্তব্যঃ সম্যগ্ ব্যবসিতো হি সঃ ।। ৩০

অর্থ-অতি দুরাচারি ব্যাক্তিও যদি অনন্য ভক্তি সহকারে আমাকে ভজনা করেন, তাকে সাধুবলে মনে করবে, কারন তিনি যথার্থ মার্গে অবস্থিত।
                          
ক্ষিপ্রং ভবতি ধর্মাত্মা শশ্বচ্ছান্তিং নিগচ্ছতি ।
কৌন্তেয় প্রতিজানিহি ন মে ভক্তঃ পণশ্যতি ।। ৩১

অর্থ-তিনি শিগ্রই ধর্ম আত্মায় পরিনত হয় এবং শান্তি লাভ করেন। হে কৌন্তেয় আমার ভক্ত কখনও বিনষ্ট হয় না, সে কথা দৃঢ় কন্ঠে ঘোষনা করে দাও।
মাং হি পার্থ ব্যাপাশ্রিত্য যেহপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ ।
স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথা শুদ্রাস্তেহপি যান্তি পরাং গতিম্‌ ।। ৩২

অর্থ-হে পার্থ অন-জ ম্লেচ্ছগনও বেশ্যাদি পতিতা স্ত্রীলোকেরা তথা বৈশ্যা শুদ্র প্রভৃতি নিচবর্নস- মানুষেরা আমার অনন্যা ভক্তিকে বিষেশ ভাবে আশ্রয় করলে অবিলম্বে পরাগতী লাভ করে।[পাদভাষ্য]

[পদার্থঃ- মাম্। হি। পার্থ। ব্যপাশ্রিত্য। যে। অপি। স্যুঃ। পাপযোনয়ঃ। স্ত্রিয়ঃ। বৈশ্যঃ। তথা। শূদ্রাঃ। অপি। যান্তিঃ। পরাম্। গতিম্।

পদার্থ-( পার্থ) হে পার্থ! ( হি) নিশ্চয়ই ( মাম্) আমাকে ( ব্যপাশ্রিত্য) আশ্রয় করে ( যে) যে ( পাপযোনয়ঃ) পাপ থেকে জন্মকারী ( অপি) ও ( স্যুঃ) হোক,স্ত্রী হোক,বা বৈশ্য হোক তথা শূদ্র হোক ( তে অপি) তবুও ( পরম্,গতি,যন্তি) পরম গতি প্রাপ্ত হয়।

ভাবার্থ-এখন কৃষ্ণজী প্রাক্তানকে জোড় দিয়ে বলেছেন যারা পারধ কর্মে নিন্দিত, তারা নারীই হোক,বৈশ্যই হোক তথা শূদ্রই হোক না কেন,তারাও পরমেশ্বরকে ভক্তি করে শুদ্ধ হয়,এই শ্লোকে প্রায় সকল ভাষ্যকারের মতে,বিবেচ্য নারী,বৈশ্য ও শূদ্ররা জন্মগত ভাবে দুষ্ট ছিল। মনে হয় এই অনুভূতি ব্যাসজীর নয়,যদি ব্যাসজীর এই অনুভূতি থাকতো,তবে "অপশুদ্রাধিকরণে" সামর্থ দ্বারা বেদাধ্যয়নের ব্যাবস্থা করা হয় না এমনকি একটি অজ্ঞাত গোত্র সত্যকামজকারীকে ব্রহ্মবিদ্যা শেখানো উচিত নয়,তাহলে কি,উপনিষদের সময়ে নারীদের পৌরাণিক বোধ ছিলো গার্গী,মৈত্রেয়ী,কাত্যায়নী যদি পরোহিতদের ধর্মতত্বের অধিকার না থাকে তবে ত্রিয় কে কখনও ব্রহ্মবাদিনী বলা যায় না, অতএব ভাষ্যকারগণের উক্ত ভাব ঠিক নয়।।-( ভাষ্য-আর্যমুনি পরিব্রাজক) ]

কিং পুনর্ব্রাহ্মণাঃ পুণ্যা ভক্তা রজর্ষয়স্তথা ।
অনিত্যমসুখং লোকমিমং প্রাপ্য ভজস্ব মাম্‌ ।। ৩৩

অর্থ-পুন্যজন্ম ব্রহ্মভক্ত এবং ক্ষত্রিয়দের আর কি করা ? তারা আমাকে আশ্রয় করলে নিশ্চয় পরা গতী লাভ করবেন। অতএব যখন এই অনিত্য দুঃখময় মর্ত্তলোকে মনুষ্য দেহ ধারন করেছে, তখন অন্যান্য সমস্ত কর্তব্য ত্যাগ করে আমাকেই ভজনা করে।
মন্মনা ভব মদ্ভক্তো মদ্ যাজী মাং নমস্কুরু ।
মামেবৈষ্যসি যুক্ত্বৈবমাত্মনং মত্পরায়ণঃ ।। ৩৪

অর্থ-তোমার মনকে আমার ভাবনায় নিযুক্ত করে আমাকে প্রনাম কর এবং আমার পূজাকর। সম্পুর্নরুপে আমাকে আশ্রয করে তুমি অবশ্যই আমাকে লভ করবে।
ওঁ তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে
রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগো নাম নবমোঽধ্যাযঃ

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

জম্বুদ্বীপে ভারখণ্ডে

 মহাভারতের ভীষ্মপর্ব হতে তৎকালীন ভৌগলি বর্ণনা পাওয়া যায়। পৃথিবীতে ৭টি দ্বীপ আছে (বর্ত্তমানের সপ্ত মহাদেশের মত)। সাত দ্বীপের মধ্যে একটি হলো জ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ