শান্তি সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মাম্ একম্ শরণম্ ব্রজ।অহম্ ত্বাম্ সর্বপাপেভ্যঃ মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ।।
পদার্থঃ হে অর্জুন! (সর্বাধর্মান্) বেদ বিরোধী সমস্ত ধর্মকে (পরিত্যজ্য) ত্যাগ করে (মাম্, একম্, শরণম্, ব্রজ) আমার এক বৈদিক ধর্মরূপী শরণকে প্রাপ্ত হও, তাহলে (অহম্) আমি (ত্বাম্) তোমাকে (সর্বপাপেভ্যঃ) সমস্ত পাপ হতে (মোক্ষয়িষ্যামি) মুক্ত করবো (মা, শুচঃ) শোক করোনা।।
ভাবার্থঃ হে অর্জুন! বেদ বিরোধী সমস্ত ধর্মকে ত্যাগ করে তুমি আমার বৈদিক ধর্মরূপী শরণকে প্রাপ্ত হও। তাহলে তোমাকে আমি সমস্ত পাপ হতে মুক্ত করবো, তুমি শোক করো না।।
ভাষ্যঃ উক্ত দুই শ্লোকের মধ্যে সম্পূর্ণ গীতার অর্থকে ব্যাসজী সংগ্রহ করে দিয়েছেন, যাহার তাৎপর্য হলো পরমাত্মার অনন্য ভক্তি, যেমন পূর্বে এক স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে যে পরমাত্মা একমাত্র অনন্য ভক্তি দ্বারা প্রাপ্ত হয় এবং একমাত্র পরমাত্মার ভক্তিকেই অনন্য ভক্তি বলা হয় অর্থাৎ যে ভক্তিতে পরমাত্মা হতে ভিন্ন বস্তুর ধ্যান হয় না যেমন 'অথ য় এতদক্ষরং গার্গী বিদিত্বাহস্মাল্লোকাত্প্রৈতি স ব্রাহ্মণঃ' বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৩/৮/১০ এখানে নিরূপণ করা হয়েছে যে যিনি ওই অক্ষর পরমাত্মাকে জেনে ইহ লোক হতে প্রয়াণ করেন তিনি ব্রাহ্মণ, ইত্যাদি বাক্যে একমাত্র পরমাত্মার ভক্তি কথন করা হয়েছে। এই অনন্য ভক্তিকে দৃঢ় করার জন্য কৃষ্ণজী সমস্ত ধর্মকে ত্যাগ করে একমাত্র বৈদিকধর্ম শরণের আশ্রয় নিতে বলেছে। এই শ্লোকে ধর্ম শব্দের অর্থ ধর্মাভাস অর্থাৎ যা উত্তম ধর্মের সমান প্রতিত হয় কিন্তু বাস্তবে মিথ্যা এমন ধর্মকে ত্যাগ করে তুমি একমাত্র বৈদিক ধর্মের আশ্রয় নাও। মায়াবাদীগণ এই শ্লোকের বৃহৎ ভাষ্য করেছে, প্রথম শ্লোকের এরূপ ভাষ্য করেছে যে 'তত্ত্বমসি' তথা 'অহং ব্রহ্মাস্মি' ইত্যাদি বাক্য দ্বারা যিনি জীব-ব্রহ্মের অভেদ কে বুঝে নেয় উহার জন্য কৃষ্ণজী প্রতিজ্ঞা করেন যে সে স্বয়ং ব্রহ্ম হয়ে যায় আর সে পরমেশ্বরের অত্যন্ত প্রিয় হয়, কিন্তু উক্ত ১৮/৬৫ শ্লোকের 'মদ্যাজী' আদি শব্দ মায়াবাদীদের সিদ্ধান্তের সর্বথা বিপরীত, কেননা ইহাদের মতানুসারে ব্রহ্মজ্ঞান দ্বারা মুক্তি হয় আর এই শ্লোকে যজ্ঞ আর নমস্কার দ্বারাও ভগবৎ প্রাপ্তি কথন করা হয়েছে। এইজন্য ইহাদের মতানুকূল জীব ব্রহ্মের একতার অর্থ এই শ্লোকে কদাপি নেই আর 'সর্বধমর্মান্ পরিত্যজ্য' এই শ্লোকের ভাষ্যতে মায়াবাদীগণ এরূপ অর্থ করে যে বর্ণাশ্রমের সমস্ত ধর্মকে ত্যাগ করে একমাত্র ভগবৎ শরণের উপদেশ এখানে করেছে এবং ইহারা ভগবৎ শরণের তিনটি অর্থ করেছে - ১) আমি ওই পরমেশ্বরের হই ২) পরমেশ্বর আমার হয় ৩) সেই পরমেশ্বর আমি হই, এই অর্থ গীতার তাৎপর্যের পুরোই বিপরীত, কেননা 'স্বকর্মণা তমভ্যর্চ্য সিদ্ধিং বিন্দতি মানবঃ' গীতা ১৮/৪৫,৪৬ শ্লোকে বলা হয়েছে যে চার বর্ণ নিজের-নিজের কর্ম দ্বারা পরমাত্মার পূজন করে সিদ্ধিকে প্রাপ্ত হয়। যখন এই শ্লোকে বর্ণের ধর্ম দ্বারা পরমাত্মার পূজনের হেতু কথন করা হয়েছে তাহলে এখানে এসে তা ত্যাগের কথন করার তাৎপর্য কি ? অতএব এখানে কৃষ্ণজীর তাৎপর্য বেদ বিরুদ্ধ ধর্মকে ত্যাগ করা।।-(আর্যমুনি ভাষ্য)
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ