বিখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট ক্রুলউইচ এই জটিল প্রক্রিয়ার সমাধান করতে গিয়ে বহু বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। অবশেষে খুঁজে পেয়েছেন মহার্ঘ্য এই উত্তর। ‘এনপিআর’ নামক এক মার্কিন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে সেই তথ্য। সেখানে বলা হচ্ছে, কয়েক হাজার বছর আগে পৃথিবীতে বাস ছিল মুরগি সদৃশ এক ‘পাখি’-র। প্রাগৈতিহাসিক সেই পাখি জিনগতভাবে অনেকটাই মুরগিদের কাছাকাছি। তবে তা পুরোমাত্রায় মুরগি ছিল না। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেটি আসলে ছিল এক ধরনের ‘প্রোটো-চিকেন’।
মুরগির সেই প্রাচীনতম পূর্বসূরী একটি ডিম পেড়েছিল। পুরুষ সঙ্গী সেই ডিমটি উর্বর করে। কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে ডিমটির ভেতরে বাবা-মা থেকে পাওয়া জিনের মধ্যে মিউটেশন বা বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন ঘটে যায়। যার ফলে তখনকার সেই পুরুষ ও মহিলা মুরগির জিন থেকে বেশ কিছুটা আলাদা জিনগত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বাচ্চার জন্ম হয়।
আর নতুন জন্ম নেওয়া সেই পাখিই হল আজকের মুরগিদের আদি পূর্বপুরুষ। এরপর কয়েক হাজার বছর ধরে পৃথিবীর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এদের শরীরেও আরো নতুন জিনগত মিউটেশন বা রদবদল ঘটে বহুবার।
প্রথম যে মুরগি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই মুরগির সঙ্গে হয়তো আজকের এই মুরগির প্রচুর অমিল। ডিমের মধ্যে বাবা-মার জিনগত মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটে যাওয়ার ফলে সেই আদি মুরগিটির জন্ম হয়েছিল। তার মানে ওই ডিমটির আগে কোনও এমন নতুন বৈশিষ্টসম্পন্ন মুরগি ছিল না।
অর্থাৎ পুরো ঘটনাটি সংক্ষেপে বলতে হলে, প্রাগৈতিহাসিক মুরগি-সদৃশ এক পাখি ভিন্নধর্মী এক ডিম পাড়ার ফলে উদ্ভব ঘটে আদিতম মুরগির। তাই মুরগির আগেই ডিম এসেছে। তাই ডিমই আগে আর মুরগি পরে।
“ডিম আগে না মুরগী
আগে” বাচ্চাকালের এই প্রশ্ন আসলে হাস্যকর মামুলী কিছু নয়। খ্রিষ্টপূর্ব থেকে বহু দার্শনিক আর গবেষকদের Apple of Discord হয়ে আছে এই কথা। এই ধরনের উভয়সঙ্কট প্রশ্নগুলোকে Casualty Dilemma বলা হয়। এই টাইপের ডায়ালেমা গুলো খুব মজার অবশ্য। ১৮২৫ সালে দার্শনিকদের জীবনী
নিয়ে লেখা বই Francois
Fenelon – এ এরিস্টটল অংশে আছে ,
“If there has been a first man he must have been born without father or
mother – which is repugnant to nature. For there could not have been a first
egg to give a beginning to birds, or there should have been a first bird which
gave a beginning to eggs; for a bird comes from an egg.”
এটা বলে এরিস্টটল সাহেব আরো কনফিউশন বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর প্রধান কারণ অবশ্য
তাদের ইভল্যুশনারি বায়োলজি সম্পর্কে ধারণা ছিল না। বিজ্ঞানী ল্যামার্ক এরকম কিছু
ধারণা দেয়ার পরে থেকে মানুষ ধীরে ধীরে কিছু ব্যাখা করা শিখল। স্টিফেন হকিং বলতেন
তিনি ডিমের পক্ষে। গবেষক রিচার্ড ডকিংস বলেন, “The chicken is only an egg’s way of making another
egg.” এটা বলেও কিছু সমাধান হল না। ইদানীংকাল গবেষকরা বলেন
মানুষের প্রাপ্ত প্রাচীনতম ডিম ১৯ কোটি বছর আগের যা প্রাপ্ত উড্ডয়ন অক্ষম
প্রাচীনতম পাখি আর্কিওপ্টেরিক্স এর আরো বেশ কয়েক কোটি বছর আগের। তার মানে
দাঁড়াচ্ছে পাখির কোন জাতি আসার আগেই অন্য সরীসৃপ প্রজাতিরা ডিম পাড়ত। হতে পারে যে
এমন কোন ডিমের ভেতরে ডি এন এ তে মিউটেশন হয়েছিল যার ফলে সরীসৃপ প্রজাতিতে ভিন্নতা
এসে সেটা আস্তে আস্তে পাখিতে রূপান্তরিত হয় কোটি বছর ধরে। এই মত পৃথিবীর অধিকাংশ
বিজ্ঞানী গ্রহণ করে। ফলে একটা সমাধানে এসে দাঁড়ায় এই ডায়ালেমা।
আমেরিকান এস্ট্রো ফিজিসিস্ট ডি গ্রাসি টাইসন পরিষ্কার বলে দেয় যে, “Which came first: the chicken or the
egg? The egg – laid by a bird that was not a chicken.” ধারণা করা হচ্ছে যে Chicken এর আগে Proto
Chicken নামের এক পাখি ছিল যেটা proto egg নামক ডিম পারত।
এটা থেকে মিউটেশন হয়ে একদিন এর Proto Egg ফেটে Chicken বের হল যে চিকেন Egg পাড়তে লাগল।
এ তো গেল এক কথা কিন্তু ২০১০ সালে এক বৃটিশ বিজ্ঞানী এক সুপার কম্পিউটারকে
নিযুক্ত করলেন এই চিন্তার জন্য। সুপার কম্পিউটার ও বিজ্ঞানীরা মিলিতভাবে মুরগীর
জরায়ুতে এক স্পেশাল প্রোটিন পেল Ovocleidin 17 নামে। দেখা
যাচ্ছে এই প্রোটিন ক্যালসিয়ামকে ক্যালসাইটিন ক্রিস্টাল বানিয়ে ডিমের খোলস
বানাচ্ছে। এই Ovocleidin
17 কেবলমাত্র মুরগীদেরই থাকে। তাই আবার প্রশ্ন উঠল
প্রোটো চিকেনের এই প্রোটিন না থাকলে সেটা যে ডিম পাড়বে তাকে Egg বলা যাবে কিভাবে? সমাধান হয়- প্রোটো এগ এর
ভিতরে মিউটেশনের ফলে যে পরিবর্তিত প্রোটো মুরগী জন্মে সেটার দেহে ডিমের খোলস
বানানোর অন্য প্রোটিন পরিবর্তিত হয়ে Ovocleidin 17 হয়। তার মানে প্রথমে এমন একটা মুরগী হতে হয়েছিল যার শরীরে এই প্রোটিন তৈরী
হয়েছে। অর্থাৎ ফাইনাল কথা হল মুরগী আগে এসেছিল এবং ওই মুরগী কোন মুরগীর ডিম থেকে
হয়নি।
বৈদিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুরগী অণ্ডজ
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ