অবতারবার বেদ বিরুদ্ধ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

26 September, 2017

অবতারবার বেদ বিরুদ্ধ

১। স পৰ্য্যগাক্ৰমকায়মত্ৰণমবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম।
কবিৰ্মনীষী পরিভূ স্বয়্যাথাব্যতােহর্থান্ ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাধ্য।
(যজু ৪০। ৪]
তিনি সর্বব্যপক, শরীর রহিত, শারীরিক বিকার রহিত ইত্যাদি।
অজো অক্ষা দাধার পৃঙ্খীং তস্তম্ভ দ্বাং মন্ত্রেভিঃ সতৈঃ।
প্রিয় পদানি পশশ্যা নিপাহি বিশ্বায়ুরগ্নে গুহা গুহংগা।। [ঋক্ ১। ৬৭। ৩]
শন্নো অজ এক পান্দেববাহ
(ঋক্ ৭। ৩৫। ১৩]
ব্রহ্ম বা অজঃ। [শতপথ ৬। ৪। ৪। ১৫]
বেদাহমেতমজরং পুরাণং সর্বাত্মানং সর্বগতং বিভূত্বাৎ।
জন্মনিরােধ প্রবদন্তি যস্য ব্রহ্মবাদিনাে হি প্ৰবদন্তি নিত্যম্।
[ শ্বেতাশ্বতর ৩। ২' 24
৬। একধৈবানুদ্রষ্টব্যমেদমেয়ং ধুবং।
বিরজঃ পর আকাশ অজঃ আত্মা মহান্ ধুবঃ ।। বৃহদারণ্যক ৪|৪২৭]
৭। দিব্যোহ্যমূঃ পুরুষঃ বাহ্যভ্যন্তরােহ্যজঃ।
অনােহমনাঃ শুভ্র হ্যক্ষরাই পরতঃ পরঃ।। [মুণ্ডক ২। ১]
এইভাবে বেদ এবং শ্রুতিতে সর্বত্রই যাঁকে “অজ, অকায়ম, অশুক্র, অাবিরং,
অমূৰ্ত্ত, অক্ষরাৎ পরতঃ পরঃ,” বলা হয়েছে, ব্রহ্মবাদিগণ যাঁকে ‘
নিত্য জেনে
‘জন্মনিরােধ” অর্থাৎ তার জন্ম হয় না বলেছেন, সেই সর্বান্তরাত্মা সর্বব্যাপক পরমাত্মা
অবতার গ্রহণ করেন না, এই কথাই স্বতঃসিদ্ধ। ডাঃ সেনগুপ্তের মিথ্যা আস্ফালন
সুধী পাঠকের হাসির উদ্রেক করবে মাত্র!
হিটলারী নীতিতে দক্ষ, Micn Kampf এর আদর্শে দীক্ষিত, গােয়েবলস্ এর
উত্তরসাধক ডাঃ সেনগুপ্তরা মিথ্যা রটনায় সিদ্ধহস্ত। যে কোনও শিষ্টলােক কারও
রচনা থেকে কোনও অংশ উদ্ধৃত করলে সেই অংশ বা লাইনটি বিকৃত করেন না।কিন্তু ওঁদের কোনও শিষ্টনীতির বালাই নেই। “আলােক তীর্থকে লােকচক্ষে হেয়
করবার জন্য স্বীয় “শাস্ত্ৰমৰ্যাদা রক্ষায় যেখানে যেখানে আলােক তীর্থের উদ্ধৃতি
দিয়েছেন সেগুলি সবই খণ্ডাংশ মাত্র এবং বিকৃত। এমন কি, আমি যে প্রসঙ্গে যে।
কথা বলিনি সেই অপ্রাসঙ্গিক কথা টেনে এনেই ‘উদোরপিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে
চাপিয়েছে।
বাক্যার্থ বােধের প্রধানতঃ চারটি কারণ :-আকাঙক্ষা, যােগ্যতা, আসক্তি এবং
তাৎপৰ্য। পূর্বাপর প্রসঙ্গ, গ্রন্থকারের অভিপ্রায় ধরেই কোনও প্রস্থের অংশ বুঝতে
হয়। কিন্তু যে ডাঃ সেনগুপ্তরা বেদ শ্রুতিবাক্যগুলির উপরেই নিজেদের সংকীর্ণত ও
সাম্প্রদায়িকতার বিষ-ছুরি মারতে পারেন, তারা আলােক তীর্থের অংশগুলি বিকৃত
করে জনতাকে ধোঁকা দিবার জন্য লিখবেন তাতে আর আশ্চর্য কি? ঐ অবতারবাদ
প্রসঙ্গেই ডাঃ সেনগুপ্ত লিখেছেন-“শৈলেন্দ্র ঘােষাল বলিতেছে, অবতারবান অশস্তব ;
মানুষীর ক্ষুদ্র জরায়ু মধ্যে অমূর্ত, অসীম অবতার হয়ে আসা তাঁহার আত্মহত্যা। এই
কথা খুব পণ্ডিতের মত বলিল অথচ অন্যত্র লিখিতেছে-“দরিয়ায়ে মহিতিদার
শুবয়েদার সুরত খাক ইসমায়ে। অর্থাৎ একটি কলসীতে বিশাল সমুদ্র বন্ধ থাকার
মত এই মনুষ্যদেহে তিনিও গুপ্ত আছে। এত ক্ষুদ্রস্থানে থাকিয়াও আত্মরক্ষা হইল।
পরমাত্মার এখানে আত্মহত্যা হইল না। সে কি? শৈলেন্দ্র ঘােষাল পূর্বে বলিয়াছে
যে ইহাতে আত্মহত্যা হয়। কিন্তু এখন বলিতেছে আত্মরক্ষা হয়। এমন অসহব
লােক কখনও দেখিয়া কি?
জবাব না! ডাঃ সেনগুপ্ত যেমন অবলীলাক্রমে এখানে সত্য মিথ্যা মিশিয়ে,
অংশবিশেষ ছিন্নভিন্নভাবে উদ্ধৃত করে, এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশ লাগিয়ে মিথ্যা
প্রচারের কৌশল দেখালেন—এরকম কুটকৌশলী মিথ্যাচারী লােক, “শাস্ত্ৰমৰ্য্যাদা
রক্ষার নামে শামৰ্য্যাদা নাকারী, বেদ প্রতিপাদিত ধর্মের গুপ্ত আততায়ী এর পূর্বে
কখনও দেখিনি, এ কথা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করছি। প্রথমেই বলি ঐ ফারসী দোঁহাটি
ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। দরিয়ায়ে নয়—কথাটি ‘দরিয়ায়ে, ‘ঝয়ে নয়-‘শুবুয়ে’, ‘মহিতদর শুয়েন্দার’ নয়—কথাটি ‘মহিত দারশুবুয়ে', সুরত' নয়—
সুরতে। যে কথাটি যা, সেটিকে বিকৃত করে উদ্ধৃত করলে ব্যাকরণগত, ভাবগত
এবং অর্থগত যে বিকৃতি ঘটে—তা কি অবতার-কিঙ্করদের জানা নেই। “ডাঃ নলিনী
রঞ্জন রকে বসে আব–“ডাঃ নলিনীরঞ্জ নরকে বসে” একথার মধ্যে কি কি
প্রভেদ নেই?
আলােক তীর্থে ইহজীবনেই ঈশ্বর লাভ সম্ভব এই বিষয় আলােচনা করতে গিয়ে
লিখেছি—“তাই এই Dying while Living জিজিত্ মরণা’ প্রকৃত পক্ষে হল
আলােক রাজ্যে নবজন্ম। এই New_birth না হলে এই দেহে, ইহলােকেই দয়ালকে
জানা বোঝা যায় না। দেখা যায় না, বিন্দুর মাঝেই সিন্দুর নাচন
“দরিয়ায় মহিত দারণ্ডবুয়ে।
দার সুরতে আৰু ইসমায়ে।”
অর্থাৎ একটি কলসীতে বিশাল সমুদ্র বন্ধ থাকার মত, এই মনুষ্যদেহে তিনি গুপ্ত
আছে”। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই আপনারা বুঝতে পারকেন আমার ঐকথায় অবতারবাদের কোনও কথাই আসে না। যে অনর্থকরী কদৰ্থকারীরা
বৈদিক ঋষিদের মনে বা ঐশীবাণীতে অবতারবাদ মূৰ্ত্তিপূজার কথা না থাকলেও বেদে
অবতারবান ও মূর্তিপূজার প্রসঙ্গ জোর করে লাগিয়েছে তারা আলােক তীর্থেরও
কোনও কথার কমালের বিড়াল বাখ্যা করবে এতে আর বিচিত্র কি! সেই সর্বব্যাপক
পরমাত্মা সর্বত্র আছেন, সর্বত্রই তার প্রকাশ, মহত্তম বন্ধুর মধ্যেও তিনি আছেন,
ক্ষুদ্রতম বস্তুতেও খ্রিন আছে—এ কথা বলা আর সেই সর্বব্যাপক পরমাত্মা স্থান
কাল পাত্রের দ্বারা পরিচ্ছিন্ন হয়ে, একটি নির্দিষ্ট স্থানে জন্মগ্রহণ করে রাম, বামন,
শূকর, সীতারামদাস হয়ে লীলা করে বেড়াচ্ছেন, এ কথা কি এক? সূর্যের প্রতিবিম্ব
বিরাট সমুদ্রে পড়ে। স্ফটিকে আয়নায় পড়ে আর এক টুকরাে কয়লাতেও তার
প্রতিবিম্ব বা প্রকাশ পড়ে একথা বলা—আর বিরাট সূৰ্য্য অন্তরীক্ষ থেকে তত
করে ষােলকলা সহ নেমে এসে এক টুকরাে কয়লা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এ কথাতে
কি একই ভাবের দ্যোতনা? আলাে সব স্থানে আছে, ঐ কাঠ টুকুরােটার মধ্যেও
আছে এই কথা বলা আর বিশ্বের সমূহ আলে সংহত হয়ে ঐ কাঠটুকরােটা হয়ে
পড়ে আছে, একথা কলম কি একই মর্ম? অবতারবাদীরা বলে--সেই পূর্ণ পরমাত্মা
নাকি তাঁর ষােল আনা সত্ত্বা নিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্লিষ্ট দেহ
নিয়ে জন্মেন, লীলা করেন তাদের এই কথা আর—পরমাত্মা সর্বত্র আছে
স্বমহিমায় তিনি অণু পরমাণুতেও আছেন, এ কথার মধ্যে যে রাত দিন তফাৎ, এ 24
কি জড়বাদীদের জড় মস্তিষ্কে ঢােকে না? “যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে, তা আছে এই ভাণ্ডে,
'বিন্দু মাঝে সিন্দুর নাচন'—এ সব কথার নিগুঢ় মর্ম বুঝলে, মনুষ্যদেহে তিনি গুপ্ত
আছেন (অর্থাৎ মনুষ্যদেহের মধ্যেও তিনি বিরাজিত, তাঁর মহাচেতন সত্ত্বার প্রকাশ)
এ কথা নিয়ে শ্লেষ কার দুর্মতি ডাঃ সেনগুপ্তের হত না। তিনি মনুষ্য, ‘দেহ' এই
কথা কয়টি দেখেই অবতারদাস বড়ই ভাবস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু ওখানে ঐ কথার
অর্থ-অবতারবাদীদের ধারণার—ঈশ্বরের নরদেহ নিয়ে অবতরণের সম্পূর্ণ বিপরীত।
যে অর্থে গীতায় বলা হয়েছে, “ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহৰ্জুন! তিষ্ঠতিহে
অর্জুন! ঈশ্বর সকল প্রাণীর হৃদয়ে বিরাজমান”—ঠিক সেই রকম ভাবার্থেই ওখানে
বলা হয়েছে “এই মনুষ্যদেহে তিনি গুপ্ত আছেন।”
(ক) যে ভাব প্রকাশ করার জন্য বেদে বলা হয়েছে“প্রজাপতিরতি গর্ভ অন্তর জায়মাননা বহুধা বিজায়তে” (যজু ৩১। ১৯]
“সেই অজ পরমাত্মা গর্ভস্থ জীবাত্মা এবং সকলের হৃদয়েই বিরাজ করছেন।
অর্থাৎ তার সত্ত্বা, তাঁর প্রকাশ গর্ভস্থ জীবাত্মার মধ্যেও আছে,
(খ) যে ভাব প্রকাশ করার জন্য শ্রুতিমন্ত্র বলা হয়েছে
“তৎ সৃষ্ট তদেবানুপ্রাবিশৎ"
তিনি এই জগৎ সৃষ্টি করে তার মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট আছে,
—ঠিকই ঐ রকম ভাবই ঐ দোহাটিতে প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি অনুপ্রবিষ্ট
আছেন একথা বললে যেমন সেই অসীম অনন্ত পরমেশ্বরের পূর্ণ সদ্য নিয়ে
জন্মগ্রহণ বােঝায় না, তেমনি একটি কলসিতে বিশাল সমুদ্র বন্ধ থাকার মত এই
মনুষ্য দেহে জিন গুপ্ত আছেন—একথা বললেও অবতারবাদীদের Principle অনুযায়ীকুধারণা অনুযায়ী তিনি জন্মগ্রহণ করেন, এ কথা কোন মতেই বােঝায় না। কাজেই
পূর্বাপর প্রসঙ্গ উপেক্ষা করে, কথা কয়টি বিকৃত করে আমাকে ব্যঙ্গ করায় তার
কিরূপ প্রবৃত্তির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে?
ফহা মিথ্যা কল্পনার আশ্রয়ে, স্বকপােলকল্পিত কাহিনী রচনাতেও ডাঃ সেনগুপ্ত
রহস্য রােমাঞ্চ সিরিজকেও হার মানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন—Alom Bomb
পরীক্ষার প্রাক্কালে জগদ্বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক 0ppenheimer নাকি গীতার ‘কালােহমি
লােকক্ষয়কৃৎ প্রবৃদ্ধো' এই শ্লোকটি মনে করে Aton Bomb এর switch টিপতে
কিংবা Hydrogen Borth তৈরী করতে রাজী হন নাই।!! (শামৰ্য্যাদা রক্ষা]।
কৃষ্ণ বাক্য স্মরণ করেই যে Openheimer উদ্গত অঞ হয়ে, ভাববিহুল হয়ে
পড়েছিলেন, সে কথা ডাঃ সেনগুপ্ত কোথায় পেলেন? Oppenheimer On
মুহূর্থেই কৃষ্ণের বর্তমান সংস্করণ ‘অবতারের প্রিয় অনুচরকে কি টেলিফোন করে
জানিয়েছিলেন? না- রাষ্ট্রীয় চরম গােপনীয়তা অবলম্বন করে যে Alom Bomb
তৈরী করা হয়েছিল, সেই গােপন গবেষণাগারে United States Govt. Special
Messenger HGW w সেনগুপ্তকে আবাহন করে নিয়ে গিয়ে স্বচক্ষে
Oppenheimer এর ঐ ভাবস্থ অবস্থাটি নিরীক্ষণ করার সুযােগ দিয়েছিলে
অথবা, আমারই ভুল হচ্ছে সঞ্জয় যেমন দিব্যদৃষ্টি প্রভাবে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ নিরী 24
করতেন, কলির ‘সঞ্জয়' ডাঃ সেনগুপ্তও বুঝি দিব্যদৃষ্টি (!) প্রভাবে Oppenheimer
এর ঐ মনের কথা টের পেয়েছিলেন। সম্প্রদায়ীদের ঐরূপ অগ্রাকৃতলীলা'
‘অপ্রাকৃত দৃষ্টিভ’ তাে আর নূতন গল্প নয়!! ডাঃ সেনগুপ্ত উপন্যাস রচনায় মন
দিলে ভাল করতেন!!!
আলােক তীর্থে যা আমি লিখিনি, তাই বিকৃত করে পরিবেশন করে ডাঃ সেনগুপ্ত
জনসাধারণের সামনে আলােক তীকে হেয় করবার জন্য বদ্ধপরিকর। আমি ভেবে
আশ্চর্য হচ্ছি, যখন নিরপেক্ষ পাঠক ‘আলােক তীর্থ পঞ্চবেন, তখন যে,
ডাঃ সেনগুপ্ত আলােক তীর্থের বিষয়বস্তু কি ভাবে misrepresent করেছেন, সে
প্রবঞ্চনা ধরা পড়বে, তা কি তিনি বােঝেন না? ডাঃ সেনগুপ্ত পুরাণ এবং কিংবদন্তির
যুগে থাকতে পারেন, কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাসের দোলনায় দোল খেতে পাব্লেন,
কিন্তু যুগ এবং জাতি অনেক এগিয়ে গেছে, সে বােধ কি তার নেই। আত্মসচেতন
সুধী পাঠকগণ এখন আর মুখে ঝাল খান না, কুৎসা রটনাকারীদের সম্প্রদায়ীদের
অভিসন্ধি তাঁৱা বােঝেন। আলােক তীর্থ পড়ে ডাঃ সেনগুপ্তের বর্ণনার সত্যাসত্যটা
যখন মিলিয়ে দেখবেন, তখনই বুঝবেন সম্প্রদায়ীদের গােয়েনীতির মহিমা!
যেমন ডাঃ সেনগুপ্ত লিখেছেন—“শীতার বক্তা শৈলেন্দ্রনাথ ঘােষালের ন্যায় একজন
সাধারণ মানুষ, এরূপ কথা শৈলেন্দ্র ঘােযালের মত উদ্ধত মুখেই বাহির হইতে
জবাব # মিথ্যাবাদীদের এটি একটি জঘন্য মিথ্যা কথা। কারণ, আলােক তীর্থে
আমি, শ্রীকৃষ্ণ মানুষ ছিলেন, সমাজনীতি, রাজনীতি, রণনীতি, তপস্যা এবং
যােগশক্তিতে একজন অসাধারণ মানুষ ;—“পূর্ণ ভগবান” নন—এই কথাই প্রমাণ সহ
উল্লেখ করেছি। কোথাও তিনি আমার মত মানুষ ছিলেন—এ কথা বলি নি আমি।
[লেখক শ্রীশৈলেন্দ্রনারায়ণ ঘোষাল শাস্ত্রী ]
অন্ধবিশ্বাসী পাখন্ডি হিন্দু সমাজে ততদিন থাকবে যতদিন হিন্দুরা " বেদ" কে জানতে এবং বুঝতে না শিখবে । বেদ বিরুদ্ধ যা গ্রন্থ আছে তা সব ত্রুটি পূর্ন ,এবং তাকে ত্যাগ করা অনিবার্য , বেদের মাত্র একটা মন্ত্র এর মাধ্যমে এই অবতার বাদ কে মিথ্যা এবং যুক্তিহীন প্রমান করা যাবে তা হলো যজুর্বেদ এর ৪০ অধ্যায় ৮নং মন্ত্রে বলেছে -....

মন্ত্র :- স পর্য্যগাচ্ছুক্রমকায়ম ব্রণম্ স্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্।কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথা তথ্যতোতর্থান্ধ্যদধাচ্ছা শ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।।

ভাবার্থ :- পরমাত্মা সর্ব ব্যাপক, সর্বশক্তিমান শরীর রহিত, রোগ রহিত, জন্ম রহিত, শুদ্ধ, নিষ্পাপ, সর্বজ্ঞ, অন্তর্য্যামী, দুষ্টের দমন কর্তা ও অনাদি। তিনি তাহার শাশ্বত প্রজা জীবের জন্য যথাযথ ফলের বিধান করেন।ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদ্ যশঃ।হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা যস্মান্ন জাত ইত্যেষঃ।।

এই মন্ত্র তেই সব শেষ এদের মিথ্যা মতবাদ তবুও এই নিয়ে আজ এই সমীক্ষা করা হলো কারণ হিন্দুরা এক একটা মহা আবাল তৈরি হচ্ছে বেদ কেও মানতে চায়না ।

অবতার বাদীদের স্বভাব দেখুন !

অবতার বাদী :- গীতা ৪/৭
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানিঃ ভবতি ভারত ।
অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদা আত্মনম্‌ সৃজামি অহম্‌ ।।৭
অর্থ- হে ভরত যখনই ধর্মের অধঃপতন হয়এবং অধর্মের অভূত্থান হয় তখনই আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতির্ন হই।

অর্থাৎ ঈশ্বর শ্রী কৃষ্ণ অধর্মের সময় জন্ম নিয়ে সেই অধর্ম কে পতন করে ।

যুক্তিবাদী :- প্রথমেই বলে রাখি কৃষ্ণ একজন যোগী ,এই শ্লোকে 'আমি' বলতে ঈশ্বর কে বোঝানো হয়েছে কৃষ্ণ কে নয় । গীতায় তাকে অনেকবার যোগীরাজ এবং যোগেশ্বর অর্থাৎ যে যোগের মাধ্যমে ঈশ্বর কে লাভ করে । হিন্দুরা গীতার অর্থ না বুঝে উল্টো পাল্টা বকে !

অবতার বাদী :- আর্য সমাজি ভন্ড তারা নাস্তিক কৃষ্ণ কে ঈশ্বর ভাবেনা । এখানে ঈশ্বর জন্ম নেয় এইটাই বলা আছে । তোমরা গীতা পারোনা !

যুক্তিবাদী :- আচ্ছা আমরা গীতা পরিনা ? তো শোনো ! গীতা ১০/২৩ " বসুদের মধ্যে আমি অগ্নি " এখানে বলেছে আমি বসু অর্থাৎ ৮ বসুর মধ্যে কৃষ্ণ আগুন । তাহলে কি বলবেন আগুন হয় কৃষ্ণ ? আগুন জড় বস্তু নাকি চেতন ?

গীতা ১০/২১ জ্যোতিস্কদের মধ্যে কিরনশালী সুর্য, মরুতদেও মধ্যে মরীচি এবং নক্ষত্রদের মধ্যে চন্দ্র। এর মানে কি কৃষ্ণ ই সূর্য ,মরিচি, চন্দ্র ? এইবার ভাবুন তো নিজেরাই নিজেকে প্রশ্ন করুন ।

গীতা ১০/৩৭ বাসুদেব পান্ডবদের মধ্যে ধনঞ্জয়,আমি মুনিদের মধ্যে ব্যাস । এখানে কৃষ্ণ বলছে আমি অর্জুন , আর আমি ব্যাসদেব ব্যাসদেব,কৃষ্ণ,অর্জুন এরা 3 জনে একই সময়ে বেঁচে ছিল , শাস্ত্র অজ্ঞ হিন্দুরা অর্জুন তাহলে কৃষ্ণের অবতার ? ব্যাসদেব ছিল কৃষ্ণর অবতার ? এইবার ভাবুন আপনাদের অবতার বাদ এর কি কোনো সত্য যুক্তি আছে কাল্পনিক মিথ্যা ধারণা ছাড়া ?

অবতার বাদী :- ইয়ে মানে ! না ঈশ্বর জন্ম নেয় অবতার রূপে ।

যুক্তিবাদী :- আপনরা হলেন অন্ধবিশ্বাসী । যুক্তি বোঝেন না , শাস্ত্র ও বোঝেন না । বলুন তো ঈশ্বর সর্ব ব্যাপক না এক দেশীয় ?

অবতারবাদী :- ঈশ্বর সর্ব ব্যাপক সে সমস্ত জায়গায় আছে ।

যুক্তিবাদী :- তাহলে ভাবুন যে ঈশ্বর জায়গায় আছে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ঈশ্বর নেই । তাহলে ভাবুন ঈশ্বর কেন জন্ম নেবে অধার্মিক দের দমন করার জন্য ? সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় ঈশ্বর নিজে একা করেন, যে ব্যাক্তি অধার্মিক ছিল যেমন রাবন, দুর্যধন ইত্যাদি এদের শরীরের মধ্যে কি ঈশ্বর ব্যাপাক ছিলোনা ? নিশ্চয়ই ছিল তাদের দেহ তে ,ঈশ্বর সর্ব শক্তিমান যে চাইলেই তাদের সেকেন্ডের মধ্যে বিন্যাস করতে পারবে । রাবন,কংস ইত্যাদিরা ঈশ্বর এর কাছে এক একটা কীট এর থেকেও কম , এই সমস্ত কীট কে বিনাশ করতে ঈশ্বর কে জন্ম নিতে হবে ? এইটা একটা বিনোদন ছাড়া কি ?

অবতার এর অর্থ হলো অবতারন করা মানে ওপর থেকে নামা যে ঈশ্বর সর্ব ব্যাপক তার নামা বা ওঠা আসে কোথা হইতে ? কেও যদি বলে যে আমি আকাশ কে মুষ্টির মধ্যে রেখেছি । এইটা কখনোই সত্য হতে পারেনা কারণ আকাশ সর্ব ব্যাপাক । অতএব আকাশ ভিতরেও যায়না বাইরেও আসেনা । ঠিক তেমনি যে ঈশ্বর সর্ব ব্যাপক তার কোথাও জন্ম নেওয়া বা কোথাও যাওয়া আসা এমন হতে পারেনা ।

ঈশ্বর নিজ কর্ম অনুযায়ী চলেন এবং প্রকৃতি এবং জীব কেও নিয়ম অনুযায়ী চালান । ঈশ্বর এর কর্ম হলো সৃষ্টি, স্থিতি,প্রলয় এবং সমস্ত জীবের পাপ পূর্ণের ফল ফল দেওয়া ।

অবতারবাদী :- নানা ঈশ্বর অবতার হয় ।

যুক্তিবাদী :- হিন্দুরা শাস্ত্র বিরোধী মূর্তি পূজা করে করে তাদের বুদ্ধি জড় হয়ে গেছে কিছুই ঢোকেনা মাথায় ! তোমরা যদি তবুও এই গীতা ৪/৭ শ্লোক কে অবতার ভাবো তাহলে তোমাদের যুক্তিতেই এই শ্লোক কে ডাহা মিথ্যা প্রমান করে দেবো এবং কৃষ্ণ মিথ্যা বাদী ছিল ।। দেখুন !

সাধারণ কিছু উদাহরণ যেমন :- হিন্দুরা প্রায় 1200 বছর ধরে বিদেশি মুসলিম এবং ইংরেজ দের দাস হয়ে ছিল । এসেছিল ঈশ্বর এর কোনো অবতার ? তৈমুর লং প্রায় 1 লক্ষ এর মতো হিন্দু হত্যা করেছিল ! এসেছিল কোনো অবতার অধর্ম কে বিনাশ করতে ? সব থেকে হিন্দু হত্যা করেছে মুঘল সম্রাট রা এসেছিল কোনো অবতার ? দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর বাংলায় ৫০শে মনন্বতর লক্ষ লক্ষ হিন্দু কে মারা হয়েছিল না খাইয়ে এসেছিল কোনো অবতার ? অথবা ঈশ্বর জন্ম নিয়েছিল ভাই রা একটু বলুন অযোধ্যা রাম মন্দির, কাশিবিশ্বনাথ মন্দির ভাঙা হয়েছিল এসেছিল কোনো অবতার ? তাহলে কি প্রমান হলো তোমাদের অবতার যুক্তিতে ? এই শ্লোক পুরোই মিথ্যা তাই না এবং কৃষ্ণ মিথ্যা বাদী তাই না ?

শুনুন এই শ্লোকে কোনো কিছুই ভুল নেই তোমাদের বোঝার ভুল , তোমরা শাস্ত্র চর্চা ( বেদ উপনিষদ মনুস্মৃতি দর্শন ) না করে ভন্ড দের কথার চালায় হিন্দুদের আজ এই অবস্থা !

গীতার সেই শ্লোক গুলোতে কি বোঝাতে চেয়েছে দেখুন

গীতা ৪ অধ্যায়

পরিত্রানায় সাধুনাম বিনাশায়ঃ চ দুস্কৃতম্ ।ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে ।।৮

সাধুদের পরিত্রান (পরিত্রানায় সাধুনাম) দুস্কৃতকারীদের বিনাশ করে (বিনাশায়ঃ চ দুস্কৃতম্) ধর্ম সংস্থাপন করি আমি যুগে যুগে (ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে)এখানে আপনি হয়তো ভাবছেন, আমাদের তো চার যুগ অতএব প্রতি যুগে তিনিই এসে ধর্ম সংস্থাপন করেন।

কিন্তুু উপরের পর্যালোচনা অনুযায়ী এখানে আমাদের কিছু কাকতালীয় রয়েছে আর এটাই করেছে সনাতনের মহাসর্বনাশ।প্রকৃত অর্থে এখানে ভগবান বোঝাতে চেয়েছিলেন যখনই ধর্মের গ্লানি ও অধর্মবৃদ্ধি হয় তখনই সাধুদের পরিত্রান ও দুস্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য তাহাদিগের অর্থাৎ মনুষ্যদিগের আত্মাদিগকে সৃজন করেন অর্থাৎ ন্যায় অন্যায় বুঝার জ্ঞান দান করেন। আর এভাবেই যুগ যুগ ধরে তিনি ধর্ম সংস্থাপনকরে আসছেন।

শাস্ত্র গ্রন্থ না পড়ে অন্ধবিশ্বাসী পৌরাণিক মিথ্যা কাহানি পড়ার ফল এগুলো । কৃষ্ণ কে গীতায় বেদ এবং অন্যান্য শাস্ত্রর কথা এতবার বলেছে সেগুলো তাদের চোখে পড়েনা !

গীতা ১৬ অধ্যায়

যঃ শাস্ত্রবিধিম্‌ উত্সৃজ্য বর্ততে কামকারত ॥
ন সঃ সিদ্ধিম্‌ অবাপেনাতি ন সুখেন ন পরাম্‌ গতিম্‌ ॥২৩॥
অর্থ-কিন্তু শাস্ত্রবিধি ( বেদ) পরিত্যাগ করে যে কামাচারে বর্তমান থাকে সে সিদ্ধি বা সুখ বা পরা গতীলাভ করতে পারে না।

তস্মাত্ শাস্ত্রম্‌ প্রমানম্‌ তে কার্য অকার্য ব্যবস্থিতৌ ॥
জ্ঞাতা শাস্ত্র বিধান উত্তম্‌ কর্ম কর্তুম্‌ ইহ অর্হসি ॥২৪॥
অর্থ-অতএব কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই একমাত্র প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রিয় বিধি নিষেধের স্বরুপ জেনে কর্ম করা উচিত যাতে পারমার্থিক উন্নতি লাভ করা যায়।

৮ অধ্যায়

বেদেষু যজ্ঞেষু তপষু চ এব
দানেষু যত্ পুন্য ফলম্ প্রদিষ্টম্ ।
অত্যেতি তত্ সর্বমিদম্ বিদিত্বা
যোগী পরম্ স্থানম্ উপৈতি চ আদ্যম্ ।।২৮
অর্থ-ভক্তিযোগ অবলম্বন করলে তুমি কোন কালেই বঞ্চিত হবে না। বেদপাঠ, যজ্ঞ, অনুষ্ঠান, তপস্যা,দান ইত্যাদি যত প্রকার জ্ঞান কর্ম আছে সে সমুদয়ের যে ফল তুমি তা ভক্তিযোগ দ্বারা লাভ করে আদি ও পরম ধাম প্রাপ্ত হও।

ভাগবতে অবতার তালিকা ভ্রান্তি
সূত উবাচ
দ্বাপরে সমনুপ্রান্তে তৃতীয়ে যুগপর্যয়ে।
জাতঃ পরাশরাদ্ যোগী বাসব্যাং কলয়া হরেঃ।। [ভা০ ১।৪।১৪]
অনুবাদঃ সূত বললেন- বর্তমান চতুর্যুগের তৃতীয় যুগ দ্বাপরে মহর্ষি পরাশরের ঔরসে বসু-কন্যা সত্যবতীর গর্ভে ভগবানের কলাবতার যোগীরাজ ব্যাসদেবের জন্ম হয়।।
সমীক্ষাঃ [ভা০ ১।১।৯] রসালো ভাগবত অনুসারে দ্বাপরে যদি ব্যাসদেবের অবতার হয় তাহলে [ভা০ ১।৩।২১] নং শ্লোক অনুসারে ব্যাসদেব ১৭তম অবতার কিকরে হয়? কেননা রামের অবতার হয় ত্রেতা যুগে অর্থাৎ ব্যাসদেবের পূর্বে রামের জন্ম অথচ ভাগবত অনুসারে ব্যাস ১৭তম অবতার, আর রাম ১৮তম অবতার, যা নিত্যান্তই হাস্যকর বিষয়।

হিন্দুরা মানুষ হও । আর বুদ্ধির মধ্যে যে অন্ধবিশ্বাস এর তালা মারা আছে তা খুলে দেও তাহলেই ধর্ম কে ঠিক জানতে পারবেন তার আগে নয়

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ