রামায়ণ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

15 September, 2017

রামায়ণ

রামায়ণ পর্ব : এক

কান্ড : বালকাণ্ড

সর্গ : প্রথম

শ্লোক : এক – পাঁচ

🚩তপস্স্বাধ্যায়নিরতং তপস্বী বাগ্বিদাং বরম্ l

নারদং পরিপপ্রচ্ছ বাল্মীকির্মুনিপুঙ্গবম্ ৷৷1.1.1৷৷

তপস্বী বাল্মীকি, যিনি তপস্যা আর অধ্যয়নে নিরত থাকেন, যিনি বেদজ্ঞ, পন্ডিতশ্রেষ্ঠ, সেই মুনিপুঙ্গব বাল্মীকি নারদকে জিজ্ঞাসা করলেন l

🚩কোন্বস্মিন্সাম্প্রতং লোকে গুণবান্কশ্চ বীর্যবান্ ৷

ধর্মজ্ঞশ্চ কৃতজ্ঞশ্চ সত্যবাক্যো দৃঢব্রত:৷৷1.1.2৷৷

সাম্প্রতিক কালে কে এমন আছেন যিনি গুণবান, বীর্যবান, ধর্মজ্ঞানী, কৃতজ্ঞ,  সত্যবাদী এবং দৃঢ়ব্রত ( নিজের প্রতিজ্ঞায়  সুদৃঢ় ) l

🚩চারিত্রেণ চ কো যুক্তস্সর্বভূতেষু কো হিত: ৷

বিদ্বান্ক: কস্সমর্থশ্চ কশ্চৈকপ্রিয়দর্শন: ৷৷1.1.3৷৷

এমন একজন যিনি চরিত্রবান, সর্বভূতের হিতসাধনকারী, বিদ্বান, যে কার্যে কেউ সমর্থ নয় এমন কার্য করতে সমর্থ,  প্রিয়দর্শন (যাঁর দর্শনে মন আনন্দিত হয়ে ওঠে )l

🚩আত্মবান্কো জিতক্রোধো দ্যুতিমান্কোনসূয়ক: ৷

কস্য বিভ্যতি দেবাশ্চ জাতরোষস্য সংযুগে ৷৷1.1.4৷৷

এমন একজন যিনি আত্মনিয়ন্ত্রণে সক্ষম, জিতক্রোধ ( ক্রোধ কে যিনি জয় করেছেন ),

দ্যুতিমান, অসূয়া বা ঈর্ষা থেকে মুক্ত, যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে ক্রোধিত হলে দেবতারাও যাঁকে ভয় পান l

🚩এতদিচ্ছাম্যহং শ্রোতুং পরং কৌতূহলং হি মে ৷

মহর্ষে ত্বং সমর্থোসি জ্ঞাতুমেবংবিধং নরম্ ৷৷1.1.5৷৷

হে মহর্ষি ( এখানে নারদ ) আমি (মহর্ষি বাল্মীকি) পরম কৌতূহল সহিত এইরকম একজন গুণসম্পন্ন মানুষ সম্পর্কে শুনতে ইচ্ছা করি l

শ্লোক : ছয় – দশ

🚩শ্রুত্বা  চৈতৎত্রিলোকজ্ঞো বাল্মীকের্নারদো বচ: । শ্রূয়তামিতি চামন্ত্ত্র্য প্রহৃষ্টো বাক্যমব্রবীৎ ৷ ১.১.৬৷৷

বাল্মীকির দ্বারা নিমন্ত্রিত ত্রিলোকজ্ঞ  নারদ তাঁর কথা শুনে হৃষ্ট চিত্তে বললেন, ‘আমার কথা শোনো’, এবং এভাবে বলতে লাগলেন

🚩বহবো দুর্লভাশ্চৈব যে ত্বয়া  কীর্তিতা গুণা: l

মুনে বক্ষ্যাম্যহং বুদ্ধ্বা তৈর্যুক্তশ্শ্রূয়তান্নর: ৷৷১.১.৭৷৷

হে মুনি ( এখানে বাল্মীকি কে বোঝাচ্ছে ), তুমি যেসব গুনের বর্ণনা দিলে, সেসব গুণসম্পন্ন কোন সাধারণ মানুষ অতি দুর্লভ। আমি  (এখানে দেবর্ষি নারদ ) নিশ্চিত করে এইসব গুণসম্পন্ন একজনের কথা বলব। তুমি তা শ্রবণ কর।

🚩ইক্ষ্বাকুবংশপ্রভবো রামো নাম জনৈশ্শ্রুত: ৷

নিয়তাত্মা মহাবীর্যো দ্যুতিমান্ধৃতিমান্ বশী ৷৷১.১.৮৷৷

ইনি ইক্ষ্বাকু নামক রাজার বংশজাত, রাম ( যিনি সবাইকে আনন্দদান করেন ) নামে পরিচিত,  দৃঢ় প্রকৃতি সম্পন্ন, অতুল শক্তির অধিকারী, দ্যুতিমান, ধৃতিমান, সমস্ত ইন্দ্রিয়কে নিজের বশে আনতে সক্ষম ।

🚩বুদ্ধিমান্নীতিমান্বাগ্মী শ্রীমান্ শত্রুনিবর্হণ: ৷

বিপুলাংসো মহাবাহু: কম্বুগ্রীবো মহাহনু: ৷৷১.১.৯৷৷

ইনি বুদ্ধিমান, নীতিবান, বাগ্নী, সুন্দর, শত্রুসংহারক, প্রশস্ত স্কন্দের ও সবল বাহুর অধিকারী, এনার গ্রীবা শঙ্খের আকৃতি সদৃশ, হনু সম্মুখে প্রলম্বিত ।

🚩মহোরস্কো মহেষ্বাসো গূঢ়জত্রুররিন্দমঃ ৷

আজানুবাহুস্সুশিরাস্সুললাটস্সুবিক্রমঃ ৷৷১.১.১০৷৷

বপু বিশালাকৃতি, দেহ বিরাটাকৃতি ধনু ধারণের উপযুক্ত, কন্ঠাস্থি মাংসল, শত্রু তথা পাপের সংহারক, বাহু আজানুলম্বিত, শিরে মহত্বের চিহ্ন, প্রশস্ত, সুন্দর ললাট আর ইনি অমিত বিক্রমের অধিকারী ।

শ্লোক : এগারো – কুড়ি

🚩সমস্সমবিভক্তাঙ্গস্স্নিগ্ধবর্ণ: প্রতাপবান্ ৷
পীনবক্ষা বিশালাক্ষো লক্ষ্মীবান্ শুভলক্ষণঃ ৷৷ ১.১.১১

(শ্রীরামের ) সমস্ত অঙ্গ সুষম ও সুবিন্যস্ত, বর্ণ উজ্জ্বল ।তিনি প্রতাপশালী, প্রশস্ত বক্ষের অধিকারী, বিশাল নেত্র বিশিষ্ট, লক্ষীবান ও শুভলক্ষণ যুক্ত।

🚩ধর্মজ্ঞস্সত্যসন্ধশ্চ প্রজানাং চ
হিতে রতঃ ৷
যশস্বী জ্ঞানসম্পন্নশ্শুচির্বশ্যস্সমাধিমান্ ৷৷১.১.১২

(তিনি) ধর্মজ্ঞ, প্রতিজ্ঞায় অটল, প্রজাগণের হিতসাধনে রত, যশস্বী, জ্ঞানী, শুদ্ধাচারি , গুরুজনের প্রতি বিনয়ী, শরণাগত কে রক্ষায় সদাসংকল্পবান।

🚩প্রজাপতিসমশ্শ্রীমান্ ধাতা রিপুনিষূদনঃ ৷
রক্ষিতা জীবলোকস্য ধর্মস্য পরিরক্ষিতা ৷৷১.১.১৩

(তিনি) প্রজাপতি ব্রম্হাসম পবিত্র, সমস্ত জগতের পালক, অরিসংহারক, সকল জীবলোকের, ন্যায়, নীতি ও ধর্মের রক্ষক।

🚩রক্ষিতা স্বস্য ধর্মস্য স্বজনস্য চ রক্ষিতা ৷
বেদবেদাঙ্গতত্ত্বজ্ঞো ধনুর্বেদে চ নিষ্ঠিতঃ ৷৷১.১.১৪

(তিনি ) ক্ষাত্রধর্মের রক্ষক, স্বজনবর্গের রক্ষক, বেদ, বেদাঙ্গ ও তত্ত্বজ্ঞানী, ধনুর্বিদ্যাতে সুনিপুন।

🚩সর্বশাস্ত্রার্থতত্ত্বজ্ঞস্স্মৃতিমান্প্রতিভানবান্ ৷
সর্বলোকপ্রিযস্সাধুরদীনাত্মা বিচক্ষণঃ ৷৷১.১.১৫

(তিনি ) সর্বশাস্ত্র ও তত্বজ্ঞানী, স্মৃতিমান, প্রতিভাবান, সর্বলোকের প্রিয়, সকলের প্রতি ভদ্র ব্যবহারকারী ( এমনকি যাঁরা তাঁর ক্ষতি করেছে তাঁদের প্রতিও ), স্থিরচিত্ত, বিচক্ষণ।

🚩সর্বদাভিগতস্সদ্ভিস্সমুদ্র ইব সিন্ধুভিঃ ৷
আর্যস্সর্বসমশ্চৈব সদৈকপ্রিযদর্শনঃ ৷৷১.১.১৬

(ইনি ) নদীদের নিকট সমুদ্র সদৃশ, গুনবানের নিকট অবারিত, প্রকৃত আর্য বা গুণবান, সবার প্রতি তাঁর সমব্যবহার, আর শ্রীমুখ সর্বদা আনন্দময়।

🚩স চ সর্বগুণোপেত: কৌসল্যানন্দবর্ধন: ৷
সমুদ্র ইব গাম্ভীর্যে ধৈর্যেণ হিমবানিব ৷৷১.১.১৭

তিনিই হলেন কৌশল্যার আনন্দবর্ধনকারী, সর্বগুণসম্পন্ন শ্রীরাম, যিনি গাম্ভীর্যে সমুদ্রসম, ধৈর্যে হিমালয়সম।

🚩বিষ্ণুনা সদৃশো বীর্যে সোমবত্প্রিযদর্শন: ৷
কালাগ্নিসদৃশ: ক্রোধে ক্ষমযা পৃথিবীসম: ৷৷১.১.১৮৷৷

ভগবান বিষ্ণুর ন্যায় তাঁর বীরত্ব, চন্দ্র সদৃশ প্রিয় তাঁর দর্শন, ক্রোধে তিনি কালাগ্নিসম, ক্ষমাশীলতায় ধরিত্রী সম।

🚩ধনদেন সমস্ত্যাগে সত্যে ধর্ম ইবাপর: ৷
তমেবং গুণসম্পন্নং রামং সত্যপরাক্রমম্ ৷৷১.১.১৯

দানধ্যানে কুবের সদৃশ, সত্যবাদিতায় ধর্মরাজ কল্প।
এইসমস্ত গুণসম্পন্ন রাম সত্যই পরাক্রমী।

পিতা দশরথের জেষ্ঠ্য পুত্র যিনি শ্রেষ্ঠগুণসম্পন্ন এবং প্রিয়।

🚩জ্যেষ্ঠং শ্রেষ্ঠগুণৈর্যুক্তং প্রিযং দশরথস্সুতম্ ৷
প্রকৃতীনাং হিতৈর্যুক্তং প্রকৃতিপ্রিযকাম্যযা ৷৷1.1.20ll

(ইনি)পিতা দশরথের জেষ্ঠ্য পুত্র, শ্রেষ্ঠগুণসম্পন্ন এবং প্রিয় l প্রকৃতিগত ভাবেই তিনি হিতসাধনকারী কাজে যুক্ত, সকলের মঙ্গলকারী কাজে আগ্রহী l

শ্লোক : একুশ – ত্রিশ

🚩যৌবরাজ্যেন সংযোক্তুমৈচ্ছত্প্রীত্যা মহীপতি: ৷
তস্যাভিষেকসম্ভারান্দৃষ্ট্বা ভার্যাথ কৈকযী ৷৷১.১.২১৷৷

(শ্রীরামের প্রতি) প্রীত মহীপতি ( দশরথ ) তাঁকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করতে ইচ্ছুক হলেন।

🚩পূর্বং দত্তবরা দেবী বরমেনমযাচত ৷
বিবাসনং চ রামস্য ভরতস্যাভিষেচনম্ ৷৷১.১.২২৷৷

শ্রীরামের রাজ্যাভিষেকের প্রস্তুতি দেখে ভার্যা ( দশরথ পত্নী ) কৈকেয়ী দশরথের নিকট পূর্ব প্রতিশ্রুত বর চাইলেন – রামের নির্বাসন আর ভরতের রাজ্যাভিষেক।

🚩স সত্যবচনাদ্রাজা ধর্মপাশেন সংযত: ৷
বিবাসযামাস সুতং রামং দশরথ: প্রিযম্ ৷৷১.১.২৩৷৷

সত্যবচনাবদ্ধ, ধর্মপরায়ণ, সংযত দশরথ তাঁর প্রিয় পুত্র রামকে নির্বাসনে বনে পাঠালেন।

🚩স জগাম বনং বীর: প্রতিজ্ঞামনুপালযন্৷
পিতুর্বচননির্দেশাত্কৈকেয্যা: প্রিযকারণাত্ ৷৷১.১.২৪৷৷

পিতার নির্দেশ রক্ষা করতে, কৈকেয়ীকে সন্তুষ্ট করতে পরমবীর শ্রীরাম বনে গেলেন আর কৈকেয়ীকে দেওয়া পিতার প্রতিজ্ঞা পালনে সাহায্য করলেন।

🚩তং ব্রজন্তং প্রিয়ো ভ্রাতা লক্ষ্মণোনুজগাম হ ৷
স্নেহাদ্বিনয়সম্পন্নস্সুমিত্রানন্দবর্ধন: ৷৷১.১.২৫৷৷

প্রিয়ভ্রাতা লক্ষণ, যিনি বিনয়সম্পন্ন ও সুমিত্রার আনন্দ বর্ধক তিনিও ভ্রাতৃস্নেহের পরশে রামের অনুগামী হয়ে বনে গেলেন।

🚩ভ্রাতরং দয়িতো ভ্রাতুস্সৌভ্রাত্রমনুদর্শয়ন্ ৷
রামস্য দযিতা ভার্যা নিত্যং প্রাণসমা হিতা ৷৷১.১.২৬৷৷

প্রিয় ভাই এর প্রতি ভ্রাতৃত্ব দেখিয়ে লক্ষণ বনবাসে অনুগমন করলেন। রামের প্রিয় ভার্যা তাঁর ( রামের ) প্রাণ বায়ুর ন্যায় নিত্য হিতসাধনকারী ছিলেন।

🚩জনকস্য কুলে জাতা দেবমায়েব নির্মিতা ৷
সর্বলক্ষণসম্পন্না নারীণামুত্তমা বধূ: ৷৷১.১.২৭৷৷

জনককুলে জন্মগ্রহণকারিনী ( রামের ভার্যা সীতা ) ছিলেন স্বয়ং দেবী মোহিনীর রূপ। তিনি সর্বগুণসম্পন্ন, নারীদের মধ্যে সর্বত্তমা পুত্রবধূ ( দশরথের )

🚩সীতাপ্যনুগতা রামং শশিনং রোহিণী যথা ৷
পৌরৈরনুগতো দূরং পিত্রা দশরথেন চ ৷৷১.১.২৮৷৷

সীতাও রামের অনুগতা হলেন অর্থাৎ বনগমন করলেন ঠিক যেভাবে রোহিনী ( প্রজাপতি দক্ষের এক কন্যা তথা চন্দ্রের সঙ্গিনী ) চন্দ্রের অনুগমন করেন।পুরবাসীগণ এমনকি পিতা দশরথও বহুদূর পর্যন্ত শ্রীরামের অনুগমন করলেন।

🚩শৃঙ্গিবেরপুরে সূতং গঙ্গাকূলে ব্যসর্জয়ৎ ৷
গুহমাসাদ্য ধর্মাত্মা নিষাদাধিপতিং প্রিয়ম্ ৷৷১.১.২৯৷৷

শৃঙ্গিবেরপুরের গঙ্গাকূলে এসে রাম সারথীকে (সুমন্ত্র ) ফেরত পাঠালেন। তিনি ধর্মাত্মা, নিষাদাধিপতি প্রিয় গুহের দিকে এগিয়ে গেলেন।

🚩গুহেন সহিতো রামো লক্ষ্মণেন চ সীতয়া ৷
তে বনেন বনং গত্বা নদীস্তীর্ত্বা বহূদকা: ৷৷১.১.৩০.

গুহের সহিত রাম লক্ষণ ও সীতা গভীর এবং বিশাল জলরাশি সম্পন্ন নদী ( গঙ্গা ) পার হয়ে এক বন থেকে আরেক বনে যাত্রা করলেন।

শ্লোক : একত্রিশ – চল্লিশ

🚩চিত্রকূটমনুপ্রাপ্য ভরদ্বাজস্য শাসনাৎ ৷
রম্যমাবসথং কৃত্বা রমমাণা বনে ত্রয়: ৷৷১.১.৩১৷৷

ভরদ্বাজ মুনির নির্দেশে চিত্রকূটে পৌঁছে তাঁরা একটি রমণীয় পর্ণকুটির নির্মাণ করলেন এবং তিনজনে ( রাম, সীতা, লক্ষণ ) সুখে বনবাস করতে লাগলেন।

🚩দেবগন্ধর্বসঙ্কাশাস্তত্র তে ন্যবসন্ সুখম্ ৷
চিত্রকূটং গতে রামে পুত্রশোকাতুরস্তথা ৷৷১.১.৩২৷৷

দেব ও গন্ধর্বের ন্যায় তাঁরা সুখে বসবাস করতে লাগলেন। যখন রাম চিত্রকূটের উদ্দেশ্যে গেলেন, পিতা দশরথ পুত্র বিচ্ছেদের ব্যাথায় শোকাতুর হলেন।

🚩রাজা দশরথস্স্বর্গং জগাম বিলপন্সুতম্ ।
মৃতে তু তস্মিন্ভরতো বশিষ্ঠপ্রমুখৈর্দ্বিজৈ: ৷৷ ১.১.৩৩৷৷

পুত্রশোকে বিলাপরত রাজা দশরথ মৃত্যুপথযাত্রী হলেন, আর বশিষ্ঠ প্রমুখ দ্বিজগণ ভরতকে রাজ্যভার দিলেন।

🚩নিযুজ্যমানো রাজ্যায় নৈচ্ছদ্রাজ্যং মহাবল:৷
স জগাম বনং বীরো রামপাদপ্রসাদক: ৷৷ ১.১.৩৪।।

রাজকার্যে নিযুক্ত হয়ে মহাবল ভরত রাজ্যশাসন করতে অনিচ্ছুক হলেন। বীর ভরত যিনি ঈর্ষা ও ঘৃণা জয় করেছেন, তিনি বনে গেলেন রামের পদবন্দনা করতে।

🚩গত্বা তু সুমহাত্মানং রামং সত্যপরাক্রমম্ ৷
অযাচদ্ভ্রাতরং রামমার্যভাবপুরস্কৃত: ৷৷১.১.৩৫৷৷

তিনি (ভরত ) সম্মানীয়, মহাত্মা, সত্যবান ও পরাক্রমী রামের নিকট গেলেন এবং ভ্রাতা রামকে শ্রদ্ধাসহিত বন্দনা করে তাঁর কাছে অনুনয় করলেন ( রাজ্যে ফিরে যাবার জন্য )।

🚩ত্বমেব রাজা ধর্মজ্ঞ ইতি রামং বচোব্রবীত্ ৷
রামোপি পরমোদারস্সুমুখস্সুমহাযশা: ৷ ১.১.৩৬.

ভরতকে উদ্দেশ্য করে রাম বললেন, তুমি ধর্মজ্ঞ, তুমিই রাজা, যদিও রাম সবাইকে আনন্দ দেন, শরণাগতের প্রতি উদার, শ্রীমুখ সর্বদাই প্রফুল্ল এবং খ্যাতিমান।

🚩ন চৈচ্ছৎপিতুরাদেশাদ্রাজ্যং রামো মহাবল: ৷৷
পাদুকে চাস্য রাজ্যায় ন্যাসং দত্বা পুন:পুন: ৷ ১.১.৩৭।।

মহাবল রাম পিতার নির্দেশ মেনে রাজ্য নিতে অস্বীকার করলেন। রাজকর্তৃত্বের প্রতীক স্বরূপ তিনি তাঁর পাদুকা দান করে বারংবার বললেন।

🚩নিবর্তয়ামাস ততো ভরতং ভরতাগ্রজ।
কামমনবাপ্যৈ রামপাদাবুপস্পৃশন ৷৷১.১.৩৮৷৷

ভরতের অগ্রজ (শ্রীরাম ) ভরতকে বোঝালেন রাজধানীতে ফিরে যেতে। তাঁর ( ভরতের ) মনোভিলাষ পূর্ণ না হওয়াতে তিনি রামের পাদুকা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্পর্শ করলেন।

🚩নন্দিগ্রামেকরোদ্রাজ্যং রামাগমনকাঙ্ক্ষয়া ৷
গতে তু ভরতে শ্রীমান্ সত্যসন্ধো জিতেন্দ্রিয়: ৷৷১.১.৩৯৷৷

(ভরত) রামের প্রত্যাগমনের আকাঙ্খা নিয়ে নন্দিগ্রাম থেকে রাজ্যশাসন করতে লাগলেন। ভরত চলে গেলে শ্রীময়, সংকল্পে অটল, জিতেন্দ্রিয় রাম লক্ষ্য করলেন।

🚩রামস্তু পুনরালক্ষ্য নাগরস্য জনস্য চ ৷
তত্রাগমনমেকাগ্রো দণ্ডকান্প্রবিবেশ হ ৷৷১.১.৪০৷৷

রাম লক্ষ্য করলেন নগরের বাসিন্দা গণ (অযোধ্যাবাসী ) সেখানে আসতে পারেন, তাই দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে ( যাতে প্রতিজ্ঞা না ভঙ্গ হয়) তিনি দণ্ডকারণ্যে প্রবেশ করলেন।

শ্লোক : একচল্লিশ – পঞ্চাশ

🚩প্রবিশ্য তু মহারণ্যং রামো রাজীবলোচনঃ ৷
বিরাধং রাক্ষসং হত্বা শরভঙ্গং দদর্শ হ ৷৷১.১.৪১৷৷

পদ্মলোচন রাম মহারণ্যে ( দণ্ডকারণ্যে ) প্রবেশ করে বিরাধ নামক রাক্ষসকে বধ করলেন, মহর্ষি শরভঙ্গের
সাক্ষাৎ পেলেন।

🚩সুতীক্ষ্ণং চাপ্যগস্ত্যং চ অগস্ত্যভ্রাতরং তথা
অগস্ত্যবচনাচ্চৈব জগ্রাহৈন্দ্রং শরাসনম্ ৷৷১.১.৪২৷৷

মহর্ষি সুতীক্ষ্ণ, অগস্ত্য ও অগস্ত্যর ভ্রাতার সঙ্গে ( শ্রীরামের ) সাক্ষাৎ হল। অগস্ত্যের নির্দেশে ইন্দ্র তাঁকে ( শ্রীরামকে ) শরাসন ( ধনুক ) প্রদান করলেন।

🚩খড্গং চ পরমপ্রীতস্তূণী চাক্ষয় সায়কৌ ৷
বসতস্তস্য রামস্য বনে বনচরৈস্সহ ।। ১.১.৪৩।।

তিনি খড়গ, অক্ষয় শর ও তুনীর পরম আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করলেন।

🚩ঋষয়ো ভ্যাগমন্সর্বে বধায়া সুররক্ষসাম্ ৷
তেষাং প্রতিশুশ্রাব রাক্ষসানাং তথা বনে ৷৷১.১.৪৪৷৷

সব বনবাসী ঋষি এবং সাধুরা রামকে অনুরোধ করলেন তাঁদের জীবন নষ্টকারী অসুর ও রাক্ষসদের বধ করে তাঁদের রক্ষা করতে। তিনি (শ্রীরাম) রাক্ষস অধ্যুসিত বনে বসবাস কারী ঋষিদের প্রতিশ্রুতি দিলেন ।

🚩প্রতিজ্ঞাতশ্চ রামেণ বধস্সংযতি রক্ষসাম্ ৷
ঋষীণামগ্নিকল্পানাং দণ্ডকারণ্যবাসিনাম্ ৷৷১.১.৪৫৷৷

প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখা সদৃশ দীপ্যমান দণ্ডকারণ্যবাসী ঋষি দের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে রাম যুদ্ধে রাক্ষসদের বধ করলেন।

🚩তেন তত্রৈব বসতা জনস্থাননিবাসিনী ৷
বিরূপিতা শূর্পণখা রাক্ষসী কামরূপিণী ৷৷১.১.৪৬৷৷

যখন সেইস্থানে জনস্থাননিবাসী হয়ে তিনি ( শ্রীরাম ) বসবাস করছেন, তখন ছদ্মবেশী, মায়াবিনী শূর্পণখার (লক্ষণ দ্বারা ) রূপ বিকৃতি ঘটলো।

🚩ততশ্শূর্পণখাবাক্যাদুদ্যুক্তান্সর্বরাক্ষসান্ ৷
খরং ত্রিশিরসং চৈব দূষণং চৈব রাক্ষসম্ ৷৷১.১.৪৭৷৷

তারপর শূর্পণখার বাক্যে উত্তেজিত হয়ে খর, ত্রিশিরা এবং দূষণ সহ সমস্ত রাক্ষসরা যুদ্ধে উদ্যত হলেন।

🚩নিজঘান বনে রামস্তেষাং চৈব পদানুগান্ ৷
বনে তস্মিন্নিবসতা জনস্থাননিবাসিনাম্ ৷৷১.১.৪৮৷৷

রাম তাঁদের ( খর, ত্রিশিরা, দূষণ ) এবং তাঁদের অনুগামীদের বনেই হত্যা করলেন। সেই বনে তিনি ( শ্রীরাম ) জনস্থান নিবাসী হয়ে বাস করতে লাগলেন।

🚩রক্ষসাং নিহতান্যাসন্সহস্রাণি চতুর্দশ ৷
ততো জ্ঞাতিবধং শ্রুত্বা রাবণঃ ক্রোধমূর্ছিতঃ ৷৷১.১.৪৯৷৷

চতুর্দশ সহস্র রাক্ষস ( রামের দ্বারা ) নিহত হল । তারপর রাবণ তাঁর জ্ঞাতি রাক্ষসদের হত্যার সংবাদ শুনে ক্রোধে মূর্ছিত হলেন।

🚩সহায়ং বরয়ামাস মারীচং নাম রাক্ষসম্ ৷
বার্যমাণস্সুবহুশো মারীচেন স রাবণঃ ৷৷১.১.৫০৷৷

রাবণ মারিচ নামক রাক্ষসের সহায়তা অন্বেষণ করলেন। মারিচ রাবণকে নানা উপায়ে বুঝিয়ে নিরস্ত করতে চেষ্টা করলেন।

(ক্রমশঃ )

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্য ও য়জ্ঞোপবীত

একাদশ অধ্যায় মেখলা প্রাচীনকালে গুরুকুলগুলোতে বেদের বিদ্বান বেদসংজ্ঞক আচার্য য়জ্ঞোপবীত সংস্কার করাতেন আর তারপর তারা বেদারম্ভসংস্কারের সময়...

Post Top Ad

ধন্যবাদ