অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যেহসংভূতিমুপাসতে।
ততো ভুয় ইব তে তমো য উ সম্ভূত্যাঃ রতাঃ।।
যজুর্বেদ অধ্যায় ৪০মন্ত্র ৯
স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ইহার এই অর্থ লিখেছে -
“যাহারা ব্রহ্মের স্থানে ‘অসম্ভতি’ অর্থাৎ অনুৎপন্ন অনাদি প্রকৃতি কারণের উপাসনা করে, তাহারা অন্ধকার অর্থাৎ অজ্ঞানতা এবং দুঃখসাগরে নিমগ্ন হয়। আর যাহারা ব্রহ্মের স্থানে ‘সম্ভূতি’ অর্থাৎ কারণ হইতে উৎপন্ন কার্যরূপ পৃথিব্যাদি ভূত, পাষাণ ও বৃক্ষাদির অবয়ব এবং মনুষ্যাদির শরীরের উপাসনা করে, তাহারা উক্ত অন্ধকার অপেক্ষাও অধিকতর অন্ধকার অর্থাৎ মহামূর্খ চিরকাল ঘোর দুঃখরূপ নরকে পতিত হইয়া মহাক্লেশ ভোগ করে।”
(সত্যার্থ প্রকাশ, ১১শ সমুল্লাস)
अ॒न्धन्तमः॒ प्र वि॑शन्ति॒ येऽस॑म्भूतिमु॒पास॑ते। ततो॒ भूय॑ऽइव॒ ते तमो॒ यऽउ॒ सम्भू॑त्या र॒ताः ॥९ ॥
-यजुर्वेद अध्याय:40 मन्त्र:9
हिन्दी - स्वामी दयानन्द सरस्वती
कौन मनुष्य अन्धकार को प्राप्त होते हैं, इस विषय को अगले मन्त्र में कहा है ॥
पदार्थान्वयभाषाः -(ये) जो लोग परमेश्वर को छोड़कर (असम्भूतिम्) अनादि अनुत्पन्न सत्व, रज और तमोगुणमय प्रकृतिरूप जड़ वस्तु को (उपासते) उपास्यभाव से जानते हैं, वे (अन्धम्, तमः) आवरण करनेवाले अन्धकार को (प्रविशन्ति) अच्छे प्रकार प्राप्त होते और (ये) जो (सम्भूत्याम्) महत्तत्त्वादि स्वरूप से परिणाम को प्राप्त हुई सृष्टि में (रताः) रमण करते हैं (ते) वे (उ) वितर्क के साथ (ततः) उससे (भूय इव) अधिक जैसे वैसे (तमः) अविद्यारूप अन्धकार को प्राप्त होते हैं ॥९ ॥
भावार्थभाषाः -जो मनुष्य समस्त जड़जगत् के अनादि नित्य कारण को उपासना भाव से स्वीकार करते हैं, वे अविद्या को प्राप्त होकर क्लेश को प्राप्त होते और जो उस कारण से उत्पन्न स्थूल-सूक्ष्म कार्य्यकारणाख्य अनित्य संयोगजन्य कार्य्यजगत् को इष्ट उपास्य मानते हैं, वे गाढ़ अविद्या को पाकर अधिकतर क्लेश को प्राप्त होते हैं, इसलिये सच्चिदानन्दस्वरूप परमात्मा की ही सब सदा उपासना करें ॥९ ॥
সরলার্থঃ ঘোর অন্ধকারে প্রবেশ করে যে অনাদি প্রকৃতিকে উপাসনা করে। তাহার থেকেও অধিকতর ঐ অন্ধকারে প্রবেশ করে যে বিতর্কের সহিত প্রকৃতির কার্য মধ্যে রত থাকে।।
ভাবার্থঃ কোন মনুষ্য ঘোর অন্ধকার কে প্রাপ্ত হয় - যে মনুষ্য পরমেশ্বর কে ছেড়ে অসম্ভূতি অর্থাৎ অনাদি, অনুৎপন্ন, প্রকৃতি নামক সত্ব, রজ, তমগুনাত্মক জড়বস্তু কে উপাস্য মানে, সে ঘোর অন্ধকার প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ অবিদ্যাকে প্রাপ্ত হয়ে সদা দুঃখী থাকে। এবং যে সম্ভূতি অর্থাৎ সেই কারন প্রকৃতি দ্বারা উৎপন্ন, মহদাদি স্বরূপ মধ্যে পরিণত হয়ে সৃষ্টি অর্থাৎ পৃথিবী আদি স্থুল জগত কার্য কারন রূপ সূক্ষ্ম অনিত্য সংযোগজন্ম কার্য জগৎ কে উপাস্য মানে। এবং তাহার মধ্যে রমন
করে সে তাহা থেকেও অধিক গাঢ় অবিদ্যা অন্ধকার কে প্রাপ্ত হয়ে দুঃখী হন। অতঃ সব মনুষ্যের উচিৎ সচ্চিদানন্দ স্বরূপ পরমাত্মাকে সদা উপাসনা করা।
अ॒न्यदे॒वाहुः स॑म्भ॒वाद॒न्यदा॑हु॒रस॑म्भवात्। इति॑ शुश्रुम॒ धीरा॑णां॒ ये न॒स्तद्वि॑चचक्षि॒रे ॥१० ॥
-यजुर्वेद अध्याय:40 मन्त्र:10
অন্যদেবাহুঃ সম্ভবাদন্য দাহুরসম্ভবাত্।
ইতি শুশ্রম ধীরাণাং যে নস্তদ্বিচচক্ষিরে।।যজুর্বেদ অধ্যায় ৪০মন্ত্র ১০
हिन्दी - स्वामी दयानन्द सरस्वती
फिर मनुष्य क्या करें, इस विषय को अगले मन्त्र में कहा है ॥
पदार्थान्वयभाषाः -हे मनुष्यो ! जैसे हम लोग (धीराणाम्) मेधावी योगी विद्वानों से जो वचन (शुश्रुम) सुनते हैं (ये) जो वे लोग (नः) हमारे प्रति (तत्) (विचचक्षिरे) व्याख्यानपूर्वक कहते हैं, वे लोग (सम्भवात्) संयोगजन्य कार्य्य से (अन्यत्, एव) और ही कार्य्य वा फल (आहुः) कहते (असम्भवात्) उत्पन्न नहीं होनेवाले कारण से (अन्यत्) और (आहुः) कहते हैं, (इति) इस बात को तुम भी सुनो ॥१० ॥
भावार्थभाषाः -हे मनुष्यो ! जैसे विद्वान् लोग कार्य्यकारणरूप वस्तु से भिन्न-भिन्न वक्ष्यमाण उपकार लेते और लिवाते हैं तथा उन कार्य्यकारण के गुणों को जानकर जनाते हैं, ऐसे ही तुम लोग भी निश्चय करो ॥१० ॥
সরলার্থঃ কার্য জগতের দ্বারা অন্যই ফল ইহা বলেন এবং প্রকৃতি দ্বারা অন্য ফল ইহা বলেন। ইহা ধীর পুরুষের থেকে আমরা শুনেছি, যে বিদ্বান পুরুষ আমাদের জন্য সেই তত্বের বিশেষরূপে ব্যাখ্যা করেছেন।।
ভাবার্থঃ মনুষ্যের উচিত যে -বিদ্বান মনুষ্য ধীর অর্থাৎ মেধাবী বিদ্বান যোগী জন দ্বারা যে সম্ভূতি বিষয়ক বচন শ্রবণ করে তার বিবেচনা করে সব মনুষ্যকে বোঝাবে। সম্ভব (সম্ভূতি) অর্থাৎ সংযোগ দ্বারা উৎপন্ন কার্য জগৎ দ্বারা উক্ত বিদ্বান অন্য ফল বলবে। এবং অসম্ভব (অসম্ভূতি) অর্থাৎ অনুৎপন্ন কারন জগৎ দ্বারা অন্য ফল বলবে। উক্ত বিদ্বান মনুষ্য সম্ভব (কার্যবস্তু) অসম্ভব (কারন বস্তু) দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন বক্ষমান উপকার গ্রহন করে এবং করায়। কার্য বস্তু এবং কারন বস্তুর গুন কে স্বয়ং মেনে তাহার উপদেশ করবে। অতঃএব সব মনুষ্য কার্য এবং কারন বস্তুকে জানো।।
सम्भू॑तिं च विना॒शं च॒ यस्तद्वेदो॒भय॑ꣳ स॒ह।
वि॒ना॒शेन॑ मृ॒त्युं ती॒र्त्वा सम्भू॑त्या॒मृत॑मश्नुते ॥११ ॥
সম্ভুতিং চ বিনাশং চ যস্তদ্বেদেভয়ং সহ।
বিনাশেন মৃত্যুং তীর্ত্বা সম্ভূত্যামৃতমশ্নুতে।।-যজুর্বেদ অধ্যায় ৪০মন্ত্র ১১
पद पाठ
सम्भू॑ति॒मिति॒ सम्ऽभू॑तिम्। च॒। वि॒ना॒शमिति॑ विऽना॒शम्। च॒। यः। तत्। वेद॑। उ॒भय॑म्। स॒ह ॥ वि॒ना॒शेनेति॑ विना॒शेन॑। मृ॒त्युम्। ती॒र्त्वा। सम्भू॒त्येति॒ सम्ऽभू॑त्या। अ॒मृत॑म्। अ॒श्नु॒ते॒ ॥११ ॥
यजुर्वेद » अध्याय:40» मन्त्र:11
हिन्दी - स्वामी दयानन्द सरस्वती
फिर मनुष्यों को कार्य्यकारण से क्या-क्या सिद्ध करना चाहिये, इस विषय को अगले मन्त्र में कहा है ॥
पदार्थान्वयभाषाः -हे मनुष्यो ! (यः) जो विद्वान् (सम्भूतिम्) जिसमें सब पदार्थ उत्पन्न होते उस कार्य्यरूप सृष्टि (च) और उसके गुण, कर्म, स्वभावों को तथा (विनाशम्) जिसमें पदार्थ नष्ट होते उस कारणरूप जगत् (च) और उसके गुण, कर्म, स्वभावों को (सह) एक साथ (उभयम्) दोनों (तत्) उन कार्य्य और कारण स्वरूपों को (वेद) जानता है, वह विद्वान् (विनाशेन) नित्यस्वरूप जाने हुए कारण के साथ (मृत्युम्) शरीर छूटने के दुःख से (तीर्त्वा) पार होकर (सम्भूत्या) शरीर, इन्द्रियाँ और अन्तःकरणरूप उत्पन्न हुई कार्यरूप धर्म में प्रवृत्त करानेवाली सृष्टि के साथ (अमृतम्) मोक्षसुख को (अश्नुते) प्राप्त होता है ॥११ ॥
भावार्थभाषाः -हे मनुष्यो ! कार्य्यकारणरूप वस्तु निरर्थक नहीं हैं, किन्तु कार्यकारण के गुण, कर्म और स्वभावों को जानकर धर्म आदि मोक्ष के साधनों में संयुक्त करके अपने शरीरादि कार्यकारण को नित्यत्व से जान के मरण का भय छोड़ कर मोक्ष की सिद्धि करो। इस प्रकार कार्य्यकारण से अन्य ही बल सिद्ध करना चाहिये। इन कार्य्यकारण का निषेध परमेश्वर के स्थान में जो उपासना उस प्रकरण में जानना चाहिये ॥११ ॥
সরলার্থঃ কার্য জগৎ কে এবং সুক্ষ্ম কারন জগৎ কে এই উভয় কে যে একসাথে জানে। সে সুক্ষ্ম কারন জগৎ দ্বারা মৃত্যু ভয়কে উত্তীর্ণ করে এবং কার্য জগৎ দ্বারা মোক্ষ কে প্রাপ্ত হয়।।
ভাবার্থঃ মানুষ কার্য এবং কারন দ্বারা কি সিদ্ধ করে - কার্য (সৃষ্টি) কারন (প্রকৃতি) নামক বস্তু নিরর্থক নয়। বিদ্বান মনুষ্য সম্ভূতি অর্থাৎ কার্য নামক সৃষ্টি এবং তার গুন, কর্ম, স্বভাব এবং বিনাশ (অসম্ভূতি) অর্থাৎ যাহার মধ্যে সব পদার্থ বিনষ্ট অর্থাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়, সেই কারন রূপ প্রকৃতি এবং তার গুন কর্ম স্বভাব কে জানে। বিনাশ (অসম্ভূতি) নিত্য প্রকৃতি কে জেনে মৃত্যু অর্থাৎ শরীরের বিয়োগ দ্বারা উৎপন্ন দুঃখকে পার করে। সম্ভূতি অর্থাৎ শরীর ইন্দ্রীয় এবং অন্তকরনরূপ উৎপন্ন কার্যজগত তথা ধর্ম মধ্যে প্রযত্নকারী সৃষ্টিকে জেনে ইহার সদুপযোগ করে মোক্ষের ফল প্রাপ্ত করে। এই দুই প্রকার কারন বস্তু দ্বারা মৃত্যু ভয় কে ত্যাগ এবং কার্য বস্তু দ্বারা মোক্ষের ফল সিদ্ধিরূপ ভিন্ন ভিন্ন ফল কে প্রাপ্ত করে। কারন এবং কার্য বস্তু পরমেশ্বরের স্থানে উপাসনা করা নিষেধ পরন্ত ইহার উপযোগ নেওয়াতে নিষেধ নয়।।
উপরোক্ত মন্ত্র ত্রয়ে সম্ভূতি এবং অসম্ভূতির উপযোগ কে বোঝানো হয়েছে। ইহার মধ্যে প্রথম মন্ত্রে বলা হয়েছে যে, অসম্ভূতির উপাসনা করে সে ঘোর অন্ধকারে প্রবিষ্ট হয় এবং যে মনুষ্য অসম্ভূতি মধ্যে রত সে তাহা থেকেও অধিক ঘোর অন্ধকারে প্রবিষ্ট হয়। এবং দ্বিতীয় মন্ত্রে বলা হয়েছ যে, মেধাবী বিদ্বান যোগী জন আমাদের জন্য সম্ভূতি এবং অসম্ভূতির উপদেশ করেছেন, এইরূপ আমরা শুনেছি যে,সম্ভূতির ফল ভিন্ন এবং অসম্ভূতির ফল ভিন্ন। এবং তৃতীয় মন্ত্রে সম্ভূতি এবং অসম্ভূতিকে সাথে সাথে জেনে নেয়, তিনি অসম্ভূতি দ্বারা মৃত্যুর ভয় কে পার করে। এই প্রকার এই মন্ত্রে সম্ভূতি এবং অসম্ভূতির ফলের বর্ণনা করা হয়েছে।
এখন এখানে প্রশ্ন উৎপন্ন হয় যে, অসম্ভূতি এবং সম্ভূতি কি বস্তু? ভাষ্যকারগণ ইহার যে ব্যাখ্যা করেছে, তার মধ্যে পর্যাপ্ত ভিন্নতা রয়েছে। মহর্ষি দয়ানন্দের ভাষ্য অনুসারে সম্ভূতির অর্থ প্রকৃতি, যা কখনো না উৎপন্ন হবার কারনে অনাদি। ইহা জড় বস্তু। এই প্রকৃতি দ্বারা যে মহত্তত্বাদি উৎপন্ন হয় তাকে সম্ভূতি বলে।এই মহত্তত্বাদি প্রকৃতি থেকে সম্ভূত= উৎপন্ন হবার কারণেই সম্ভূতি বলা হয়।
উক্ত অসম্ভূতি এবং সম্ভূতি আত্মার জন্য কিরূপ উপযোগ , তাহা প্রথম মন্ত্রে বলা হয়েছে যে অসম্ভূতি = প্রকৃতির উপাসনা করে, সে ঘোর অন্ধকারে প্রবিষ্ট হয়, অর্থাৎ সে অবিদ্যাগ্রস্ত হওয়ার দ্বারা সদা দুঃখী হয়ে থাকে।আর যে সম্ভূতি= প্রকৃতির কার্য পৃথিবী আদি জড় বস্তুতে লেগে থাকে সে তাহা থেকেও ঘোর অন্ধকারে প্রবেশ করে। অতঃএব আত্মার জন্য অসম্ভূতি এবং সম্ভূতি দুইই উপাসনীয় বস্তু নয়। কিন্তু এক চেতন পরমাত্মাই উপাসনার যোগ্য।
দ্বিতীয় মন্ত্রে অসম্ভূতি এবং সম্ভূতির ভিন্ন ভিন্ন ফল বলে তার উপযোগ বর্ণনা করা হয়েছে। তৃতীয় মন্ত্রে তাহার ফল বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, অসম্ভূতি এবং সম্ভূতি আত্মার জন্য উপাসনীয় নয়, কিন্তু অত্যন্ত উপযোগী।আত্মা কে এই দুই এর সাথে সাথে জ্ঞান প্রাপ্তি করে ইহার উপযোগ নেওয়া উচিৎ। তৃতীয় মন্ত্রে অসম্ভূতির স্থলে " বিনাশ " শব্দের পাঠ রয়েছে। কারণ সব উৎপন্ন পদার্থ প্রলয়ে প্রকৃতির মধ্যে বিনাশ = লয় প্রাপ্ত হয়। যে এই বিনাশের বিজ্ঞান অর্থাৎ সৃষ্টির কারন কার্য ভাব কে জেনে নেয়। তিনি অবিদ্যাদি কলুষ থেকে বাঁচার কারণে মৃত্যু কে পার করে যায়। এবং সম্ভূতি= প্রকৃতির কার্যপদার্থের আত্মা বিদ্বান কে সংগতি মধ্যে অবস্থান করে বেদোক্তবিধি দ্বারা ঠিক ঠিক উপযোগ করে তো তিনি অমৃত= মোক্ষ কে প্রাপ্ত করে।
এই তিন মন্ত্র দ্বারা স্পষ্ট যে অসম্ভূতি আত্মার জন্য উপাসনীয় বস্তু নয়, কিন্তু উপযোগী অবশ্যই।
শ্রী শঙ্করাচার্য জী এই মন্ত্রের বিপরীত করেছেন। এই মন্ত্রগুলোর মধ্যে প্রথম মন্ত্রের ব্যাখ্যায় শ্রী শঙ্করাচার্য লিখেছে - অসম্ভূতিম = সম্ভবনং সম্ভূতিঃ সা যস্য কার্যস্য সা সম্ভূতিঃ তস্যা অন্যা অসম্ভূতিঃ প্রকৃতিঃ কারণম্... সম্ভূত্যাং কার্যব্রহ্মাণি হিরন্যগর্ভাখ্যে।
অর্থাৎ সম্ভবন = উৎপন্ন হওয়ার নাম সম্ভূতি। তিনি যেই কার্যের ধর্ম তাকে সম্ভূতি বলেছেন। তাহা থেকে ভিন্ন কে অসম্ভূতি= প্রকৃতি বা কারণ বলেছেন। সম্ভূতির নাম কার্যব্রহ্ম।
এখানে শঙ্করভাষ্যে "অসম্ভূতি"র অর্থ ঠিক করেছেন কিন্তু সম্ভূতির অর্থ পূর্বাগ্রহ বশত কল্পিত করেছেন। যখন "অসম্ভূতি" র অর্থ "সম্ভূতির" অর্থ স্পষ্ট করে দিচ্ছে। তো তাহার ভিন্নথা কেন? যদি "অসম্ভূতি" র অর্থ প্রকৃতি বা কারণ হয় তবে "সম্ভূতি" র অর্থ প্রকৃতি দ্বারা উৎপন্ন কার্য জগৎ হওয়া উচিত।
অথবা শঙ্করাচার্যের অনুসারে যদি "সম্ভূতি"র অর্থ "কার্য-ব্রহ্ম" তো অসম্ভূতির অর্থ কারন ব্রহ্ম হওয়া উচিৎ। আর হিরণ্যগর্ভাখ্য কার্য ব্রহ্ম কি বস্তু? এবং অসম্ভূতি= প্রকৃতি কি বস্তু? কারণ অদ্বৈততবাদে তো ব্রহ্ম ভিন্ন তো দ্বিতীয় বস্ত নেই।
এখানে শঙ্কারাচার্য জগতের কারনভূত প্রকৃতির সত্তাকে স্বীকার করেছেন। যখন "স পর্যগাত্" মন্ত্রে ব্রহ্ম কে ব্যাপক সর্ববিধশরীর থেক রহিত, অবিনশ্বরাদি বলা হয়েছে। তখন কারণ ব্রহ্ম থেকে কার্যব্রহ্ম কি করে উৎপন্ন হতে পারে? যখন এই মন্ত্রে স্পষ্টরূপে জড় পদার্থের উপাসনাকে নিষেধ করেছে। তখন এই কার্যব্রহ্ম = হিরণ্যগর্ভের বর্ননা এখানে কিভাবে সম্ভব?
এবং তৃতীয় মন্ত্রে "অসম্ভূতি" ও "অসম্ভূতি"র ফল বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় মন্ত্রে কথিত ফল কে উপেক্ষা করে শঙ্কর ভাষ্যে লিখেছেন -
" সম্ভূতেঃ কার্যব্রহ্মোপাসনাদ্ অণিমাদৌশ্বর্যলক্ষণং ব্যাখ্যাতবন্ত ইত্যর্থঃ।.. অসম্ভবাদ্ = অসম্ভূতেরব্যাকৃতাদ্ অব্যাকৃতপানাত্। যদুক্তমন্ধন্তমঃ প্রবিশন্তীতি প্রকৃতিলয় ইতি চ পৌরাণিকৈরুচ্যতে।"
অর্থাৎ সম্ভূতি = কার্যব্রহ্ম কে উপাসনা দ্বারা অণিমাদি ঐশ্বর্যরূপ ফল প্রাপ্ত হওয়া যায় এবং অসম্ভূতি = অব্যক্ত প্রকৃতিকে উপাসনার দ্বারা, যাকে "অন্ধনন্তমঃ প্রবিশন্তি" এই বাক্য দ্বারা বলা হয়েছে তথা পৌরাণিক তাহাকে প্রকৃতিলয় বলে।
এই মন্ত্রের ব্যাখ্যাই শ্রী শঙ্করাচার্য জী সম্ভূতি এবং অসম্ভূতি কে উপাসনার ফল অনিমাদি ঐশ্বর্য প্রাপ্তি আদি বর্ণনা করেছেন। যখন ইহার প্রথম মন্ত্রেই সম্ভূতিকে উপাসনাকারী কে ঘোরতম অন্ধকারে প্রবেশ করে বলা হয়েছে। নয়। তখন তার দ্বারা ঐশ্বর্য প্রাপ্তি কিভাবে সম্ভব? আর এই মন্ত্রে "উপাসনা" শব্দই নেই। মন্ত্র মধ্যে যেই উপযোগরূপ ফলের সঙ্কেত করা হয়েছে তার ফল তো আগের মন্ত্রেই বর্ণনা করা হয়েছে। তাহার কি ফল মধ্যে এবংপূর্বক্ত মন্ত্র প্রোক্ত ফলের মধ্যে সমতা রয়েছে? যদি না হয় তবে তাহার ব্যাখ্যা মূল মন্ত্রের বিরুদ্ধ।
বাস্তবে তৃতীয় মন্ত্রে তাহার উপযোগীতার বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ অসম্ভূতি বিজ্ঞান দ্বারা মৃত্যুকে পার করে। এবং সম্ভূতি বিজ্ঞান দ্বারা মোক্ষ কে প্রাপ্ত করা যায়। এজন্য মন্ত্রে "বেদ= জানা " ক্রিয়া রয়েছে, উপাসনা নয়।
তৃতীয় মন্ত্রের ব্যাখ্যায় শ্রী শঙ্করাচার্য জী লিখলেন - "সম্ভূতিং চ বিনাশং চ যস্তদ্ বেদোভয়ং সহ বিনাশো ধর্মো যস্য কার্যস্য স তেন ধর্মিনা অভেদন উচ্যতে বিনাশ ইতি, তেন তদুপাসনেনানৈশ্বর্যম-ধর্মকামাদিদোষজাতং চ মৃত্যুং তীর্ত্বা হিরণ্যগর্ভোপাসনেন হ্যাণিমাদি প্রাপ্তিঃ ফলম্ তেনানৈশ্বর্যাদি মৃত্যুমতীত্য অসম্ভুত্যা অব্যাকৃতোপসনায়া অমৃতং প্রকৃতিলয়লক্ষণমশ্নুতে।।"
অর্থাৎ যে পুরুষ সম্ভূতি এবং বিনাশ এই দুই কে একসাথে জানে, তিনি - যাহার কার্যের ধর্ম বিনাশ এবং সেই ধর্ম দ্বারা অভেদ হওয়ার কারণে যাকে স্বয়ং বিনাশ বলা যায়, সেই বিনাশ কে উপাসনা দ্বারা অনৈশ্বর্য, অধর্ম তথা কামনাদি দোষ দ্বারা উৎপন্ন মৃত্যু কে পার করে। হিরণ্যগর্ভ (সম্ভূতি) কে উপাসনা দ্বারা অণিমাদি ঐশ্বর্য প্রাপ্তি রূপ ফল মিলে। এবং অসম্ভূতি= অব্যক্ত প্রকৃতিকে উপাসনা দ্বারা অমৃত = প্রকৃতিলয়ত্ব কে প্রাপ্ত হয়।
এখানে শ্রী শঙ্করাচার্য জী "বিনাশ" পদের অর্থ যথার্থ ব্যাখ্যা করেন নি। নিজে "বিনাশ" এর অর্থ বিনাশ হওয়া কার্য পদার্থ করেছেন। মন্ত্রে কার্য পদার্থের জন্য যখন "সম্ভূতি" পদ যখন পড়া হয়েছে, যাহার বর্ণনা তিনি স্বয়ং " কার্য ব্রহ্ম " অর্থ করেছেন। যদি মন্ত্রে " সম্ভূতি" এবং "বিনাশ" পদের অর্থ একই হয় তবে মন্ত্রে পূণরুক্তি দোষ ঘটবে।
মহর্ষি দয়ানন্দ এই রহস্যকে উত্তমরূপে উন্মোচন করেছেন। তিনি লিখেছেন - মন্ত্রে " সম্ভূতি"র অর্থ তো "কার্য পদার্থ" কিন্তু "বিনাশ" এর অর্থ কারণরূপ প্রকৃতি। মহর্ষি লিখেছেন - " বিনশ্যন্ত্যদৃশ্যাঃ পদার্থ ভবন্তি যস্মিন " অর্থাৎ যাহার মধ্যে সব কার্য পদার্থ বিনষ্ট = অদৃশ্য হয়ে যায় তাকে বিনাশ= প্রকৃতি বলে। দেখুন কত সুন্দর তথা ব্যকরনসম্মত ব্যাখ্যা।
প্রথম মন্ত্রে বলা হয়েছে যে, সম্ভূতি এবং অসম্ভূতির উপাসনা নিষেধ। কিন্তু শঙ্করাচার্য পূনরায় তৃতীয় মন্ত্রে " উপাসনা" শব্দের প্রয়োগ করেছেন। মূলতমন্ত্রে সম্ভূতি তথা অসম্ভূতির বিজ্ঞান কে আত্মার জন্য উপযোগীতা বর্ণনা করা হয়েছে।কারন তৃতীয় মন্ত্রে "উপাসতে" ক্রিয়া নেই বরং "বেদ" জানা ক্রিয়া রয়েছে।অতঃ মন্ত্রে ইহার বিজ্ঞানের নির্দেশ। শঙ্করভাষ্যে বিনাশের বিজ্ঞান এর স্থলে বিনাশোপসনার বর্ননা শুধু কল্পনাই নয়, বরং মূল মন্ত্রের বিরুদ্ধ ।
এই মন্ত্রের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় মন্ত্রের ব্যাখ্যায় শঙ্করভাষ্যে অসম্ভূতি কে উপাসনার ফল প্রকৃতিলয় রূপ অমৃত প্রাপ্তি বলেছেন। দ্বিতীয় মন্ত্রের ব্যাখ্যায় অন্ধন্তমঃ= ঘোর অন্ধকার মধ্যে প্রবেশ তথা প্রকৃতিলয় কে স্বয়ং মেনেছেন আর তৃতীয় মন্ত্রে প্রকৃতিলয় কে অমৃত করে দিয়েছেন। কি প্রকৃতিলয় এবং অমৃত এক হতে পারে?
কোথাই প্রকৃতিলয়= মহাদুখার্ণব মধ্যে ডুবে যাওয়া আর কোথাই অমৃত= মোক্ষ প্রাপ্তি, যাহাতে লেশমাত্র দুঃখ নেই। এই দুইএর মধ্যে আকাশ - পাতালবত্ ভেদ।
শ্রী শঙ্করাচার্য জী অন্যত্র "অমৃতম" শব্দের অর্থ "অমরণধর্মকং ব্রহ্ম" অর্থাৎ মোক্ষ অথবা "অমৃতম= সুখরূপম" করেছেন। দেখুন -
" পরামৃতাঃ পরিমুচ্যন্তি সর্ব (মুন্ডক ৩।২।৬)
পরামৃতাঃ = পরমমৃতম = অমরণধর্মকং ব্রহ্ম আত্মভূতং যেষাং তে।
শ্রী উব্বট প্রথম মন্ত্রের ব্যাখ্যায় "অসম্ভূতি" পদের অর্থ অপূণর্জন্ম এবং সম্ভূতির অর্থ আত্মজ্ঞান করেছেন। তিনি লিখেছেন -
যেহসম্ভূতিমুপাসতে, মৃতস্য সতঃ পুনঃ সম্ভবো নাস্তি, অতঃ শরীরগ্রহণাদস্মাকং মুক্তিরেব। ন হি বিজ্ঞানাত্মা কশ্চিদনুচ্ছিত্তিধর্মাহস্তি যো যমনিয়মৈঃ সম্বধ্যতে। যে সম্ভুত্যামেব রতা...আত্মজ্ঞান এব রতাঃ।
এই তিন মন্ত্রে "অসম্ভূতি" এবং "সম্ভূতি" র যা অর্থ তা সর্বত্র ঘটা উচিৎ। যদি স্বীকারকৃত অর্থ সর্বত্র এক না ঘটে তবে বোঝা উচিৎ অর্থে দোষ রয়েছে।
এখানে প্রথম মন্ত্রে "অসম্ভূতি" এবং "সম্ভূতি" পদ। দ্বিতীয় মন্ত্রে একই পর্যায়বাচী "অসম্ভব" এবং "সম্ভব" পদ। এবং তৃতীয় মন্ত্রে অসম্ভূতির পর্যায়বাচী "বিনাশ" পদ। সম্ভূতি শব্দ প্রথম মন্তের তূল্যই রয়েছে।
শ্রী উব্বট দ্বিতীয় মন্ত্রে অসম্ভব এবং সম্ভব এর কোন অর্থ করেন নি। তৃতীয় মন্ত্রে সম্ভূতির অর্থ পরব্রহ্ম এবং বিনাশের অর্থ বিনাশী শরীর করেছেন। এখানে তৃতীয় মন্ত্রে সম্ভূতির এক নতুন অর্থ তিনি করলেন পরব্রহ্ম। আর বিনাশ পদেরও বিনাশী শরীর প্রথম মন্ত্রের অর্থ থেকে ভিন্ন করলেন। অসম্ভূতি পদের প্রথম অর্থ প্রথম মন্ত্রে অপূণর্জন্ম তথা তৃতীয় মন্ত্রে বিনাশী শরীর। শ্রী উব্বট স্থানে স্থানে অসম্ভূতি এবং সম্ভূতির অর্থ বদল করেছে। অর্থাৎ তার কৃত পদার্থের উপর স্বয়ং সন্তোষ নেই।
শ্রী উব্বট সম্ভূতি পদের অর্থ প্রথম মন্ত্রে আত্মজ্ঞান তথা তৃতীয় মন্ত্রে পরব্রহ্ম করেছেন। প্রথম মন্ত্রে সম্ভূতি= আত্মজ্ঞান দ্বারা ঘোর অন্ধকার কে প্রাপ্তি এবং তৃতীয় মন্ত্রে সম্ভূতি= পরব্রহ্মের জ্ঞান দ্বারা অমৃত কে প্রাপ্তির বর্ণনা পরস্পর বিরোধী তথা অশুদ্ধ। আর বিনাশ পদের যে শরীরগ্রহন অর্থ করেছেন তাও তর্কসংগত নয়। শরীরগ্রহন দ্বারা মৃত্যুর ভয় দূর হয় না বরং ভয় উৎপন্ন হয়। অতঃ উব্বট এর সম্ভূতি এবং অসম্ভূতির অর্থও ভ্রমপূর্ণ।
সমীক্ষাঃ যজুর্বেদ ৪০/১১ নং মন্ত্রে আছে ‘সম্ভূত্যাহমৃতমশ্নুতে’ অর্থাৎ সম্ভূতি দ্বারা অমৃতত্ব লাভ হয় ৷ তাহলে দয়ানন্দের ভাষ্য অনুযায়ী বলতে হয়— যারা ‘সম্ভূতি’ অর্থাৎ কারণ হইতে উৎপন্ন কার্যরূপ পৃথিব্যাদি ভূত, পাষাণ ও বৃক্ষাদির অবয়ব এবং মনুষ্যাদির শরীরের উপাসনা করে, তারা অমৃতত্ব লাভ করে ৷ কিন্তু দয়ানন্দ ইহার বিরোধীতা করেছেন ৷ এজন্যই কি তিনি নিজেই ঘোর দুঃখরূপ নরকে পতিত হইয়া মহাক্লেশ ভোগ করিলেন? তিনি পরলোকের বাহ্যিক স্বর্গ-নরক মানতেন না, এইজন্যই কি জীবদ্দশাতেই তাকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হলো? কেন তিনি বিষের যন্ত্রণারূপ নরকে পতিত হইয়া তিলে তিলে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করে মারা গেলেন, পবিত্র বেদের এইরুপ বিকৃত অর্থ করার জন্যই কি?
যজুর্বেদ ৪০/৯-১১ মন্ত্র তিনটির শ্রীঅরবিন্দ কৃত অনুবাদ ও ব্যাখ্যা (ঈশোপনিষদ ১২-১৪ হতে) দেখুন ৷—
অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যেহ’সম্ভূতিমুপাসতে ৷
ততো ভূয়া ইভ তে তমো য উ সম্ভূত্যাং রতাঃ ৷৷
Into a blind darkness they enter who follow after the Non-Birth, they as if into a greater darkness who devote themselves to the Birth alone.
অন্যদেবাহুঃ সম্ভবাদন্যদাহুরসম্ভাৎ ৷
ইতি শুশ্রুম ধীরাণাং যে নস্তদ্বিচচক্ষিরে ৷৷
Other, verily, it is said, is that which comes by the Birth, other that which comes by the Non-Birth; this is the lore we have received from the wise who revealed That to our understanding.
সম্ভূতিং চ বিনাশঞ্চ যস্তদ্বেদোভয়ং সহ ৷
বিনাশেন মৃত্যুং তীর্ত্বা সম্ভূত্যাহ’মৃতমশ্নুতে ৷৷
He who knows That as both in one, the Birth and the dissolution of Birth, by the dissolution crosses beyond death and by the Birth enjoys Immortality.
ব্যাখ্যাঃ ...আত্মার দুটি অবস্থা-- একটি সর্বগত, অপরটি সর্বাতীত; একটি প্রকৃতিতে গতিশীল, অপরটি প্রকৃতির ঊর্ধে স্থিত। আত্মার এই দুটি অবস্থার জন্যই মানবীয় চেতন সত্তার দুটি ভাব দেখা যায়। একটি জন্ম বা 'সম্ভূতি', অপরটি অজন্ম বা 'অসম্ভূতি'। মানুষ জন্মের বিক্ষুব্ধ অবস্থা থেকে যাত্রা করে এবং ক্রমে এই গতি থেকে মুক্ত হয়ে চেতনসত্তার যে নিষ্ক্রিয় শান্ত অবস্থা তাতে পৌঁছায়-- এটাই 'অসম্ভূতি'। প্রকৃতিতে জন্মের গ্রন্থি হচ্ছে অহং জ্ঞান। এই অহং জ্ঞান বিনষ্ট হলে মানুষ অসম্ভূতির অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এই কারণেই অসম্ভূতিকে বলা হয়েছে বিনাশ। সম্ভূতি ও অসম্ভূতি দৈহিক অবস্থা নয়, আত্মিক অবস্থা। ...এই রকমই আমিত্বের আসক্তি বিনাশ দ্বারা আত্মা মৃত্যুকে অতিক্রম করে এবং সব রকম দ্বন্দ্বের সীমাবন্ধন থেকে মুক্ত হয়। মুক্তিলাভের পর জীব সম্ভূতিকে আত্মার অধীন ক্রিয়ারূপে গ্রহণ করে, আত্মাকে প্রকৃতির অধীন করে না এবং এই মুক্ত দিব্য সম্ভূতি দ্বারা অমৃতত্ব ভোগ করে।
ততো ভূয়া ইভ তে তমো য উ সম্ভূত্যাং রতাঃ ৷৷
Into a blind darkness they enter who follow after the Non-Birth, they as if into a greater darkness who devote themselves to the Birth alone.
অন্যদেবাহুঃ সম্ভবাদন্যদাহুরসম্ভাৎ ৷
ইতি শুশ্রুম ধীরাণাং যে নস্তদ্বিচচক্ষিরে ৷৷
Other, verily, it is said, is that which comes by the Birth, other that which comes by the Non-Birth; this is the lore we have received from the wise who revealed That to our understanding.
সম্ভূতিং চ বিনাশঞ্চ যস্তদ্বেদোভয়ং সহ ৷
বিনাশেন মৃত্যুং তীর্ত্বা সম্ভূত্যাহ’মৃতমশ্নুতে ৷৷
He who knows That as both in one, the Birth and the dissolution of Birth, by the dissolution crosses beyond death and by the Birth enjoys Immortality.
ব্যাখ্যাঃ ...আত্মার দুটি অবস্থা-- একটি সর্বগত, অপরটি সর্বাতীত; একটি প্রকৃতিতে গতিশীল, অপরটি প্রকৃতির ঊর্ধে স্থিত। আত্মার এই দুটি অবস্থার জন্যই মানবীয় চেতন সত্তার দুটি ভাব দেখা যায়। একটি জন্ম বা 'সম্ভূতি', অপরটি অজন্ম বা 'অসম্ভূতি'। মানুষ জন্মের বিক্ষুব্ধ অবস্থা থেকে যাত্রা করে এবং ক্রমে এই গতি থেকে মুক্ত হয়ে চেতনসত্তার যে নিষ্ক্রিয় শান্ত অবস্থা তাতে পৌঁছায়-- এটাই 'অসম্ভূতি'। প্রকৃতিতে জন্মের গ্রন্থি হচ্ছে অহং জ্ঞান। এই অহং জ্ঞান বিনষ্ট হলে মানুষ অসম্ভূতির অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এই কারণেই অসম্ভূতিকে বলা হয়েছে বিনাশ। সম্ভূতি ও অসম্ভূতি দৈহিক অবস্থা নয়, আত্মিক অবস্থা। ...এই রকমই আমিত্বের আসক্তি বিনাশ দ্বারা আত্মা মৃত্যুকে অতিক্রম করে এবং সব রকম দ্বন্দ্বের সীমাবন্ধন থেকে মুক্ত হয়। মুক্তিলাভের পর জীব সম্ভূতিকে আত্মার অধীন ক্রিয়ারূপে গ্রহণ করে, আত্মাকে প্রকৃতির অধীন করে না এবং এই মুক্ত দিব্য সম্ভূতি দ্বারা অমৃতত্ব ভোগ করে।
যজুর্বেদের ৪০ তম অধ্যায়ের অন্তর্গত ঈশাবাস্যোপনিষদের ১২-১৪ মন্ত্রে অসম্ভূতি এবং সম্ভূতি
দয়ানন্দ জী কর্তৃক ভাষ্য -
পদার্থঃ (যে) যে লোক পরমেশ্বর কে ছেড়ে (অসম্ভূতিম্) অনাদি অনুৎপন্ন সত্ব, রজ এবং তমোগুণময় প্রকৃতিরূপ জড় বস্তুকে (উপাসতে) উপাস্যভাব দ্বারা জানে, তিনি (অন্ধম্ তমঃ) আবরনকারী অন্ধকার কে (প্রবিশন্তি) উত্তম প্রকারে প্রাপ্ত হন এবং (যে) যিনি (সম্ভৃতাম্) মহত্ তত্ত্বাদি স্বরূপ পরিণাম কে প্রাপ্ত হয়ে সৃষ্টিতে (রতাঃ) রমণ করে (তে)তিনি (উ) বিতর্কের সাথে (ততঃ) তার থেকেও (ভূয় ইব) অধিক যেমন ওইরূপ (তমঃ) অবিদ্যারূপ অন্ধকার কে প্রাপ্ত হন।।
সত্যার্থ প্রকাশের একাদশ সমুল্লাসে উক্ত মন্ত্রের অর্থে তিনি বলেছেন -
" যাহারা ব্রহ্মের স্থানে "অসম্ভূতি" অর্থাৎ অনুৎপন্ন অনাদি প্রকৃতি কারণের উপাসনা করে, তাহারা অন্ধকার অর্থাৎ দুঃখসাগরে নিমগ্ন হয়। আর যাহারা ব্রহ্মের স্থানে "সম্ভূতি" অর্থাৎ কারণ হইতে উৎপন্ন কার্যরূপ পৃথিব্যাদি ভূত, পাষাণ ও বৃক্ষাদির অবয়ব এবং মনুষ্যাদির শরীরের উপাসনা করে, তাহারা উক্ত অন্ধকার অপেক্ষাও অধিকতর অন্ধকার অর্থাৎ মহামুর্খ চিরকাল ঘোর দুঃখরূপ নরকে পতিত হইয়া মহাক্লেশ ভোগ করে"
মহর্ষি দয়ানন্দ জীর ভাষ্য অনুসারে সম্ভূতির অর্থ প্রকৃতি, যা কখনো না উৎপন্ন হবার কারনে অনাদি। ইহা জড় বস্তু। এই প্রকৃতি দ্বারা যে মহত্তত্বাদি উৎপন্ন হয় তাকে সম্ভূতি বলে।এই মহত্তত্বাদি প্রকৃতি থেকে সম্ভূত= উৎপন্ন হবার কারণেই সম্ভূতি বলা হয়। উক্ত অসম্ভূতি এবং সম্ভূতি আত্মার জন্য কিরূপ উপযোগ , তাহা এই মন্ত্রে বলা হয়েছে যে অসম্ভূতি = প্রকৃতির উপাসনা করে, সে ঘোর অন্ধকারে প্রবিষ্ট হয়, অর্থাৎ সে অবিদ্যাগ্রস্ত হওয়ার দ্বারা সদা দুঃখী হয়ে থাকে।আর যে সম্ভূতি= প্রকৃতির কার্য পৃথিবী আদি জড় বস্তুর উপাসনা করে সে তা থেকেও ঘোর অন্ধকারে প্রবেশ করে।
এর প্রেক্ষিতে পাখন্ডি মহাশয় লিখেছে - ///উক্ত মন্ত্রের শঙ্করাভাষ্যের বঙ্গানুবাদ যিনি করেছেন সেই শ্রীযুক্ত পণ্ডিত দূর্গাচরণ সাংখ্য বেদান্ততীর্থ, তিনি শঙ্করাচার্যের অসম্ভূতি ব্যাখ্যাকে স্পস্ট করতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন-"জগতের মূল কারণ, অব্যাকৃত শব্দবাচ্য (কোন নাম ও রূপে অভিব্যক্ত নহে এমন) প্রকৃতি, জীবের সুখ-দুঃখ ভোগের কারণীভূত কর্ম্মময় বীজ এই অব্যাকৃত প্রকৃতিতেই নিহিত থাকে"।কিন্তু কপটি আর্য সমাজীরা এখানে শঙ্করাচার্যের উক্তির দার্শনিক স্পষ্টতাই তুলে ধরলেন না!! উল্টে লিখে দিলেন "অসম্ভূতি= প্রকৃতি বা কারণ /// আচ্ছা পাখন্ডি মহাশয় আপনার এই তথ্যের ভিত্তি তবে দূর্গাচরণের পাদ টিকা, যা দেখে কোন বিচার না করেই সোজা আর্য সমাজ কে কপট বলে দিলেন। অর্থাৎ ব্যাপার টি হচ্ছে আপনার দূর্গাচরণের টিকা [যেটাকে শঙ্করাচার্যের দার্শিনকতা বলছেন সেটা] কেউ তুলে না ধরলেই সেই কপট। আচ্ছা গীতা প্রেস থেকে প্রকাশিত শঙ্কর ভাষ্যের অনুবাদ টি তবে একটিবার দেখে নেওয়া যাক। গীতা প্রেসের অনুবাদে বলা হচ্ছে -
"অন্য অসম্ভূতি- প্রকৃতি কারণ অথবা অব্যকৃত নামের অবিদ্যা। সেই অসম্ভূতি যা অব্যাকৃত নামের প্রকৃতি কারণ অর্থাৎ অজ্ঞানত্মিকা অবিদ্যা, যা কামনা এবং কর্মের বীজ"

এখানে গীতা প্রেসের অনুবাদেও অসম্ভূতি কে - প্রকৃতির কারণ এবং অব্যকৃত নামের অবিদ্যা বলা হয়েছে । তারা তো আপনার দূর্গাচরণের মতো অব্যকৃত শব্দবাচ্য কে (কোন নাম ও রূপে অভিব্যক্ত নহে এমন প্রকৃতি) এভাবে আলাদা করে লেখেন নি, অথবা আলাদা করে নিচে পদাটিকা করে ব্যাখ্যাও করে নি। এখন কি গীতা প্রেসের অনুবাদকদের আপনি কপট বলবেন? [যেহেতু আপনার মতে শঙ্করাচার্যের দার্শনিকতা তাদের ভাষ্যে অনুপস্থিত]।
এর পর পাখন্ডি মহাশয় লিখেছেন - ///উনারা এমন কপটতা দেখাচ্ছেন কারণ দয়ানন্দ জী এই অসম্ভূতির অর্থ - "অনাদি অনুৎপন্ন সত্ব, রজ ও তমো গুণময় প্রকৃতিরূপ জড় বস্তু" হিসাবে ধরেছেন যা স্পস্টত কিছুটা শঙ্করাভাষ্য বিরোধী ও অযথার্থ। শঙ্করাচার্য উক্ত প্রকৃতির ব্যাখা করতে গিয়ে "অব্যাকৃতাখ্যা" শব্দ ব্যাবহার করেছেন, সুতরাং দয়ানন্দ জীর ব্যাবহার করা "সত্ব, রজ ও তমো গুণময়" শব্দগুলি ব্যাবহার অনুচিত এবং উক্ত প্রকৃতিকে "জড় বস্তু" হিসাবে অভিষিক্ত করাও অনুচিত। /// আচ্ছা এবারও তবে আপনি দূর্গাচরণের উক্ত পাদটিকা তুলে যেখানে বলা হয়েছে -(জগতের মূল কারণ, অব্যাকৃত শব্দবাচ্য (কোন নাম ও রূপে অভিব্যক্ত নহে এমন, প্রকৃতি) এই তথ্য অনুসারে দয়ানন্দ জীর প্রকৃতির পক্ষে সত্ব, রজ ও তমো গুণময়" এই ত্রিগুণাত্মক শব্দ গুলোর ব্যবহার কে অনুচিৎ বলছেন? আপনার জ্ঞানের দৌড় যে, দূর্গাচরণের টিকা পর্যন্তই এবার তা সবাই বুঝে যাবে । অব্যক্ত প্রকৃতিকে ত্রিগুণাত্মক বলা যায় কি না এবার তা নিজের চোখেই দেখুন। বিবেকচুড়ামণি তে শঙ্কর বলছেন -
অব্যক্তনাম্নী পরমেশশক্তিরানদ্যবিদ্যা ত্রিগুণাত্বিকা পরা।
কার্যানুমেয়া সুধিয়ৈব মায়া যয়া জগৎ সর্বমিদং প্রসূয়তে।। ১০৮
=>>মায়া বা অবিদ্যা ব্রহ্মের শক্তি। তাহাকে অব্যক্তও বলা হয়। উহা আদি- রহিত, সত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিন গুণ সমন্বিত এবং কারণরূপা। সৃষ্টিরূপ কার্য হইতে তীক্ষ্ণবুদ্ধি ব্যক্তি উহার অস্তিত্ব অনুমান করিতে পারেন। এই মায়া হইতে এই সকল জগৎ উৎপন্ন হয়।
এখানে মায়া হচ্ছে প্রকৃতি (মায়াং তু প্রকৃতিং বিদ্যান্মায়ীনং তু মহেশ্বরম্; শ্বেতাঃ ৪।১০) অর্থাৎ মায়াকে প্রকৃতি জানবে এবং মায়িন কে মহেশ্বর। এই মায়া (প্রকৃতি) কে শঙ্করাচার্য্য অব্যক্ত, অনাদি, অবিদ্যা, ত্রিগুণাত্বিকা অর্থাৎ সত্ব, রজঃ তম রূপে ভূষিত করেছেন। আর আপনি মশাই দূর্গাচরণের পাদটিকা তুলে ধরে দয়ানন্দ জীর প্রকৃতির পক্ষে সত্ব, রজ ও তমো গুণময়" এই ত্রিগুণাত্মক শব্দ গুলোর ব্যবহার কে অনুচিৎ বলেন কোন আক্কেলে? অন্যদের কে কপট বলেন এবার তবে আপনাকে কি বলা উচিৎ! নিশ্চয় ভন্ড তাই না?
এরপর পাখন্ডি মহাশয় লেখেন -///স্পস্টত এখানে শঙ্করাচার্য যে প্রকৃতিকে বোঝাতে চেয়েছেন তা সৃষ্টির পূর্বের স্বরূপ এবং দয়ানন্দ জী যে প্রকৃতির কথা বলছেন তা বর্তমান স্বরূপ।/// হ্যা শঙ্করাচার্য্য প্রকৃতি অর্থে সৃষ্টির পূর্বের অবস্থা বুঝিয়েছেন। কিন্তু দয়ানন্দ জী প্রকৃতি বলতে সৃষ্টির পরের অবস্থা বুঝিয়েছে এই তথ্য কই পেলেন? দয়ানন্দ জী স্পষ্টভাবে প্রকৃতির অর্থে বলেছেন - অনদ্যনুতপন্নং প্রকৃত্যাখ্যং সত্বরজস্তমোগুণময়ং জড়ং বস্তু" অর্থাৎ অনাদি অনুৎপন্ন প্রকৃতি আখ্যায়িত সত্ব রজ তম গুণময় জড় বস্তু। এখানে অনুৎপন্ন শব্দটি স্পষ্টই বুঝিয়ে দিচ্ছে এটা সৃষ্টির পূর্বের অবস্থা।
তাছাড়া ভাবার্থে তিনি আরো স্পষ্টকরে বলেছেন -
" যে জনাঃ সকলজড়জগতোহনাদি নিত্যং কারণমুপাস্যতয়া স্বীকুর্বন্তি, তেহবিদ্যাং প্রাপ্ত সদা ক্লিশয়ন্তি"অর্থাৎ যে লোক সকল জড় জগতের অনাদি নিত্য কারণ কে উপাসনা ভাব দ্বারা স্বিকার করে তিনি অবিদ্যা প্রাপ্ত হয়ে সদা কলুষ কে প্রাপ্ত হন। এখানে দয়ানন্দ জী প্রকৃতি বলতে স্পষ্টতর সকল জড় জগতের মূল কারণ অনাদি নিত্য কারণ কে বুঝিয়েছেন। কেননা জগতের যে মূল কারণ তার নামই প্রকৃতি।
প্রকৃতিকে ত্রিগুণাত্মক বলা চলে কি না সে সমন্ধ্যে গীতা ভাষ্যকার জগদীশ চন্দ্র বলেছেন -
প্রকৃতি - জগতের মূল কারণ তাহার নাম প্রকৃতি (প্রকৃতিরহ মূলকারণস্য সংজ্ঞামাত্রম্)। ইহা অনাদি, অন্তহীন, নিত্য, অসীম, অতিসূক্ষ, অলিঙ্গ ও নিরবয়ব বা নির্বিশেষ। প্রধান, অব্যক্ত, ত্রৈগুণ্য ইত্যাদি ইহার নামান্তর। এই অব্যক্তের পরিণামেই ব্যক্ত জগৎ। সত্ব, রজঃ তমঃ এই তিন গুণের সাম্যাবস্থাই এই অব্যক্ত অবস্থা, এই হেতু ইহার নাম ত্রৈগুণ্য।
দেখা যাচ্ছে - জগদীশ চন্দ্র ঘোষ ও অব্যক্ত প্রকৃতিকে ত্রৈগুণ অর্থাৎ সত্ব, রজঃ, তমঃ বলে আখ্যায়িত করেছে।
अ॒न्धन्तमः॒ प्र वि॑शन्ति॒ येऽवि॑द्यामु॒पास॑ते। ततो॒ भूय॑ऽइव॒ ते तमो॒ यऽउ॑ वि॒द्याया॑ र॒ताः ॥१२ ॥-यजुर्वेद अध्याय:40 मन्त्र:12
पद पाठ
अ॒न्धम्। तमः॑। प्र। वि॒श॒न्ति॒। ये। अवि॑द्याम्। उ॒पास॑त॒ इत्यु॑प॒ऽआस॑ते ॥ ततः॑। भूय॑ऽइ॒वेति॒ भूयः॑ऽइव। ते। तमः॑। ये। ऊँ॒ऽइत्यूँ॑। वि॒द्याया॑म्। र॒ताः ॥१२ ॥
पदार्थान्वयभाषाः -(ये) जो मनुष्य (अविद्याम्) अनित्य में नित्य, अशुद्ध में शुद्ध, दुःख में सुख और अनात्मा शरीरादि में आत्मबुद्धिरूप अविद्या उसकी अर्थात् ज्ञानादि गुणरहित कारणरूप परमेश्वर से भिन्न जड़ वस्तु की (उपासते) उपासना करते हैं, वे (अन्धम्, तमः) दृष्टि के रोकनेवाले अन्धकार और अत्यन्त अज्ञान को (प्र, विशन्ति) प्राप्त होते हैं और (ये) जो अपने आत्मा को पण्डित माननेवाले (विद्यायाम्) शब्द, अर्थ और इनके सम्बन्ध के जानने मात्र अवैदिक आचरण में (रताः) रमण करते (ते) वे (उ) भी (ततः) उससे (भूय इव) अधिकतर (तमः) अज्ञानरूपी अन्धकार में प्रवेश करते हैं ॥१२ ॥
भावार्थभाषाः -इस मन्त्र में उपमालङ्कार है। जो-जो चेतन, ज्ञानादिगुणयुक्त वस्तु है वह जाननेवाला, जो अविद्यारूप है वह जानने योग्य है और जो चेतन ब्रह्म तथा विद्वान् का आत्मा है वह उपासना के योग्य है, जो इससे भिन्न है, वह उपास्य नहीं है, किन्तु उपकार लेने योग्य है। जो मनुष्य अविद्या, अस्मिता, राग, द्वेष और अभिनिवेश नामक क्लेशों से युक्त हैं, परमेश्वर को छोड़ इससे भिन्न जड़वस्तु की उपासना कर महान् दुःखसागर से डूबते हैं और जो शब्द अर्थ का अन्वयमात्र संस्कृत पढ़कर सत्यभाषण पक्षपातरहित न्याय का आचरणरूप धर्म नहीं करते, अभिमान में आरूढ़ हुए विद्या का तिरस्कार कर अविद्या को ही मानते हैं, वे अत्यन्त तमोगुणरूप दुःखसागर में निरन्तर पीडि़त होते हैं ॥१२ ॥
अ॒न्यदे॒वाहुर्वि॒द्याया॑ऽअ॒न्यदा॑हु॒रवि॑द्यायाः। इति॑ शुश्रुम॒ धीरा॑णां॒ ये न॒स्तद्वि॑चचक्षि॒रे ॥१३ ॥-यजुर्वेद अध्याय:40 मन्त्र:13
पद पाठ
अ॒न्यत्। ए॒व। आ॒हुः। वि॒द्यायाः॑। अ॒न्यत्। आ॒हुः॒। अवि॑द्यायाः ॥ इति॑। शु॒श्रु॒म॒। धीरा॑णाम्। ये। नः॒। तत्। वि॒च॒च॒क्षि॒रे इति॑ विऽचचक्षि॒रे ॥१३ ॥
पदार्थान्वयभाषाः -हे मनुष्यो ! (ये) जो विद्वान् लोग (नः) हमारे लिये (विचचक्षिरे) व्याख्यापूर्वक कहते थे (विद्यायाः) पूर्वोक्त विद्या का (अन्यत्) अन्य ही कार्य वा फल (आहुः) कहते थे (अविद्यायाः) पूर्व मन्त्र से प्रतिपादन की अविद्या का (अन्यत्, एव) अन्य फल (आहुः) कहते हैं (इति) इस प्रकार उन (धीराणाम्) आत्मज्ञानी विद्वानों से (तत्) उस वचन को हम लोग (शुश्रुम) सुनते थे, ऐसा जानो ॥१३ ॥
भावार्थभाषाः -ज्ञानादि गुणयुक्त चेतन से जो उपयोग होने योग्य है, वह अज्ञानयुक्त जड़ से कदापि नहीं और जो जड़ से प्रयोजन सिद्ध होता है, वह चेतन से नहीं। सब मनुष्यों को विद्वानों के सङ्ग, योग, विज्ञान और धर्माचरण से इन दोनों का विवेक करके दोनों से उपयोग लेना चाहिये ॥१३ ॥
वि॒द्यां चावि॑द्यां च॒ यस्तद्वेदो॒भय॑ꣳ स॒ह। अवि॑द्यया मृ॒त्युं ती॒र्त्वा वि॒द्यया॒मृत॑मश्नुते ॥१४ ॥-यजुर्वेद अध्याय:40 मन्त्र:14
पद पाठ
वि॒द्याम्। च॒। अवि॑द्याम्। च॒। यः। तत्। वेद॑। उ॒भय॑म्। स॒ह ॥ अवि॑द्यया। मृ॒त्युम्। ती॒र्त्वा। वि॒द्यया॑। अ॒मृत॑म्। अ॒श्नु॒ते॒ ॥१४ ॥
पदार्थान्वयभाषाः -(यः) जो विद्वान् (विद्याम्) पूर्वोक्त विद्या (च) और उसके सम्बन्धी साधन-उपसाधनों (अविद्याम्) पूर्व कही अविद्या (च) और इसके उपयोगी साधनसमूह को और (तत्) उस ध्यानगम्य मर्म (उभयम्) इन दोनों को (सह) साथ ही (वेद) जानता है, वह (अविद्यया) शरीरादि जड़ पदार्थ समूह से किये पुरुषार्थ से (मृत्युम्) मरणदुःख के भय को (तीर्त्वा) उल्लङ्घ कर (विद्यया) आत्मा और शुद्ध अन्तःकरण के संयोग में जो धर्म उससे उत्पन्न हुए यथार्थ दर्शनरूप विद्या से (अमृतम्) नाशरहित अपने स्वरूप वा परमात्मा को (अश्नुते) प्राप्त होता है ॥१४ ॥
भावार्थभाषाः -जो मनुष्य विद्या और अविद्या को उनके स्वरूप से जानकर इनके जड़-चेतन साधक हैं, ऐसा निश्चय कर सब शरीरादि जड़पदार्थ और चेतन आत्मा को धर्म, अर्थ, काम और मोक्ष की सिद्धि के लिये साथ ही प्रयोग करते हैं, वे लौकिक दुःख को छोड़ परमार्थ के सुख को प्राप्त होते हैं। जो जड़प्रकृति आदि कारण वा शरीरादि कार्य्य न हो तो परमेश्वर जगत् की उत्पत्ति और जीव कर्म, उपासना और ज्ञान के करने को कैसे समर्थ हों? इससे न केवल जड़, न केवल चेतन से अथवा न केवल कर्म से तथा न केवल ज्ञान से कोई धर्मादि पदार्थों की सिद्धि करने में समर्थ होता है ॥१४ ॥
পদার্থঃ (যে) যে লোক পরমেশ্বর কে ছেড়ে (অসম্ভূতিম্) অনাদি অনুৎপন্ন সত্ব, রজ এবং তমোগুণময় প্রকৃতিরূপ জড় বস্তুকে (উপাসতে) উপাস্যভাব দ্বারা জানে, তিনি (অন্ধম্ তমঃ) আবরনকারী অন্ধকার কে (প্রবিশন্তি) উত্তম প্রকারে প্রাপ্ত হন এবং (যে) যিনি (সম্ভৃতাম্) মহত্
সত্যার্থ প্রকাশের একাদশ সমুল্লাসে উক্ত মন্ত্রের অর্থে তিনি বলেছেন -
" যাহারা ব্রহ্মের স্থানে "অসম্ভূতি" অর্থাৎ অনুৎপন্ন অনাদি প্রকৃতি কারণের উপাসনা করে, তাহারা অন্ধকার অর্থাৎ দুঃখসাগরে নিমগ্ন হয়। আর যাহারা ব্রহ্মের স্থানে "সম্ভূতি" অর্থাৎ কারণ হইতে উৎপন্ন কার্যরূপ পৃথিব্যাদি ভূত, পাষাণ ও বৃক্ষাদির অবয়ব এবং মনুষ্যাদির শরীরের উপাসনা করে, তাহারা উক্ত অন্ধকার অপেক্ষাও অধিকতর অন্ধকার অর্থাৎ মহামুর্খ চিরকাল ঘোর দুঃখরূপ নরকে পতিত হইয়া মহাক্লেশ ভোগ করে"
মহর্ষি দয়ানন্দ জীর ভাষ্য অনুসারে সম্ভূতির অর্থ প্রকৃতি, যা কখনো না উৎপন্ন হবার কারনে অনাদি। ইহা জড় বস্তু। এই প্রকৃতি দ্বারা যে মহত্তত্বাদি উৎপন্ন হয় তাকে সম্ভূতি বলে।এই মহত্তত্বাদি প্রকৃতি থেকে সম্ভূত= উৎপন্ন হবার কারণেই সম্ভূতি বলা হয়। উক্ত অসম্ভূতি এবং সম্ভূতি আত্মার জন্য কিরূপ উপযোগ , তাহা এই মন্ত্রে বলা হয়েছে যে অসম্ভূতি = প্রকৃতির উপাসনা করে, সে ঘোর অন্ধকারে প্রবিষ্ট হয়, অর্থাৎ সে অবিদ্যাগ্রস্ত হওয়ার দ্বারা সদা দুঃখী হয়ে থাকে।আর যে সম্ভূতি= প্রকৃতির কার্য পৃথিবী আদি জড় বস্তুর উপাসনা করে সে তা থেকেও ঘোর অন্ধকারে প্রবেশ করে।
এর প্রেক্ষিতে পাখন্ডি মহাশয় লিখেছে - ///উক্ত মন্ত্রের শঙ্করাভাষ্যের বঙ্গানুবাদ যিনি করেছেন সেই শ্রীযুক্ত পণ্ডিত দূর্গাচরণ সাংখ্য বেদান্ততীর্থ, তিনি শঙ্করাচার্যের অসম্ভূতি ব্যাখ্যাকে স্পস্ট করতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন-"জগতের মূল কারণ, অব্যাকৃত শব্দবাচ্য (কোন নাম ও রূপে অভিব্যক্ত নহে এমন) প্রকৃতি, জীবের সুখ-দুঃখ ভোগের কারণীভূত কর্ম্মময় বীজ এই অব্যাকৃত প্রকৃতিতেই নিহিত থাকে"।কিন্তু কপটি আর্য সমাজীরা এখানে শঙ্করাচার্যের উক্তির দার্শনিক স্পষ্টতাই তুলে ধরলেন না!! উল্টে লিখে দিলেন "অসম্ভূতি= প্রকৃতি বা কারণ /// আচ্ছা পাখন্ডি মহাশয় আপনার এই তথ্যের ভিত্তি তবে দূর্গাচরণের পাদ টিকা, যা দেখে কোন বিচার না করেই সোজা আর্য সমাজ কে কপট বলে দিলেন। অর্থাৎ ব্যাপার টি হচ্ছে আপনার দূর্গাচরণের টিকা [যেটাকে শঙ্করাচার্যের দার্শিনকতা বলছেন সেটা] কেউ তুলে না ধরলেই সেই কপট। আচ্ছা গীতা প্রেস থেকে প্রকাশিত শঙ্কর ভাষ্যের অনুবাদ টি তবে একটিবার দেখে নেওয়া যাক। গীতা প্রেসের অনুবাদে বলা হচ্ছে -
"অন্য অসম্ভূতি- প্রকৃতি কারণ অথবা অব্যকৃত নামের অবিদ্যা। সেই অসম্ভূতি যা অব্যাকৃত নামের প্রকৃতি কারণ অর্থাৎ অজ্ঞানত্মিকা অবিদ্যা, যা কামনা এবং কর্মের বীজ"

এখানে গীতা প্রেসের অনুবাদেও অসম্ভূতি কে - প্রকৃতির কারণ এবং অব্যকৃত নামের অবিদ্যা বলা হয়েছে । তারা তো আপনার দূর্গাচরণের মতো অব্যকৃত শব্দবাচ্য কে (কোন নাম ও রূপে অভিব্যক্ত নহে এমন প্রকৃতি) এভাবে আলাদা করে লেখেন নি, অথবা আলাদা করে নিচে পদাটিকা করে ব্যাখ্যাও করে নি। এখন কি গীতা প্রেসের অনুবাদকদের আপনি কপট বলবেন? [যেহেতু আপনার মতে শঙ্করাচার্যের দার্শনিকতা তাদের ভাষ্যে অনুপস্থিত]।
এর পর পাখন্ডি মহাশয় লিখেছেন - ///উনারা এমন কপটতা দেখাচ্ছেন কারণ দয়ানন্দ জী এই অসম্ভূতির অর্থ - "অনাদি অনুৎপন্ন সত্ব, রজ ও তমো গুণময় প্রকৃতিরূপ জড় বস্তু" হিসাবে ধরেছেন যা স্পস্টত কিছুটা শঙ্করাভাষ্য বিরোধী ও অযথার্থ। শঙ্করাচার্য উক্ত প্রকৃতির ব্যাখা করতে গিয়ে "অব্যাকৃতাখ্যা" শব্দ ব্যাবহার করেছেন, সুতরাং দয়ানন্দ জীর ব্যাবহার করা "সত্ব, রজ ও তমো গুণময়" শব্দগুলি ব্যাবহার অনুচিত এবং উক্ত প্রকৃতিকে "জড় বস্তু" হিসাবে অভিষিক্ত করাও অনুচিত। /// আচ্ছা এবারও তবে আপনি দূর্গাচরণের উক্ত পাদটিকা তুলে যেখানে বলা হয়েছে -(জগতের মূল কারণ, অব্যাকৃত শব্দবাচ্য (কোন নাম ও রূপে অভিব্যক্ত নহে এমন, প্রকৃতি) এই তথ্য অনুসারে দয়ানন্দ জীর প্রকৃতির পক্ষে সত্ব, রজ ও তমো গুণময়" এই ত্রিগুণাত্মক শব্দ গুলোর ব্যবহার কে অনুচিৎ বলছেন? আপনার জ্ঞানের দৌড় যে, দূর্গাচরণের টিকা পর্যন্তই এবার তা সবাই বুঝে যাবে । অব্যক্ত প্রকৃতিকে ত্রিগুণাত্মক বলা যায় কি না এবার তা নিজের চোখেই দেখুন। বিবেকচুড়ামণি তে শঙ্কর বলছেন -
অব্যক্তনাম্নী পরমেশশক্তিরানদ্যবিদ্যা ত্রিগুণাত্বিকা পরা।
কার্যানুমেয়া সুধিয়ৈব মায়া যয়া জগৎ সর্বমিদং প্রসূয়তে।। ১০৮
=>>মায়া বা অবিদ্যা ব্রহ্মের শক্তি। তাহাকে অব্যক্তও বলা হয়। উহা আদি- রহিত, সত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিন গুণ সমন্বিত এবং কারণরূপা। সৃষ্টিরূপ কার্য হইতে তীক্ষ্ণবুদ্ধি ব্যক্তি উহার অস্তিত্ব অনুমান করিতে পারেন। এই মায়া হইতে এই সকল জগৎ উৎপন্ন হয়।
এখানে মায়া হচ্ছে প্রকৃতি (মায়াং তু প্রকৃতিং বিদ্যান্মায়ীনং তু মহেশ্বরম্; শ্বেতাঃ ৪।১০) অর্থাৎ মায়াকে প্রকৃতি জানবে এবং মায়িন কে মহেশ্বর। এই মায়া (প্রকৃতি) কে শঙ্করাচার্য্য অব্যক্ত, অনাদি, অবিদ্যা, ত্রিগুণাত্বিকা অর্থাৎ সত্ব, রজঃ তম রূপে ভূষিত করেছেন। আর আপনি মশাই দূর্গাচরণের পাদটিকা তুলে ধরে দয়ানন্দ জীর প্রকৃতির পক্ষে সত্ব, রজ ও তমো গুণময়" এই ত্রিগুণাত্মক শব্দ গুলোর ব্যবহার কে অনুচিৎ বলেন কোন আক্কেলে? অন্যদের কে কপট বলেন এবার তবে আপনাকে কি বলা উচিৎ! নিশ্চয় ভন্ড তাই না?
এরপর পাখন্ডি মহাশয় লেখেন -///স্পস্টত এখানে শঙ্করাচার্য যে প্রকৃতিকে বোঝাতে চেয়েছেন তা সৃষ্টির পূর্বের স্বরূপ এবং দয়ানন্দ জী যে প্রকৃতির কথা বলছেন তা বর্তমান স্বরূপ।/// হ্যা শঙ্করাচার্য্য প্রকৃতি অর্থে সৃষ্টির পূর্বের অবস্থা বুঝিয়েছেন। কিন্তু দয়ানন্দ জী প্রকৃতি বলতে সৃষ্টির পরের অবস্থা বুঝিয়েছে এই তথ্য কই পেলেন? দয়ানন্দ জী স্পষ্টভাবে প্রকৃতির অর্থে বলেছেন - অনদ্যনুতপন্নং প্রকৃত্যাখ্যং সত্বরজস্তমোগুণময়ং জড়ং বস্তু" অর্থাৎ অনাদি অনুৎপন্ন প্রকৃতি আখ্যায়িত সত্ব রজ তম গুণময় জড় বস্তু। এখানে অনুৎপন্ন শব্দটি স্পষ্টই বুঝিয়ে দিচ্ছে এটা সৃষ্টির পূর্বের অবস্থা।
তাছাড়া ভাবার্থে তিনি আরো স্পষ্টকরে বলেছেন -
" যে জনাঃ সকলজড়জগতোহনাদি নিত্যং কারণমুপাস্যতয়া স্বীকুর্বন্তি, তেহবিদ্যাং প্রাপ্ত সদা ক্লিশয়ন্তি"অর্থাৎ যে লোক সকল জড় জগতের অনাদি নিত্য কারণ কে উপাসনা ভাব দ্বারা স্বিকার করে তিনি অবিদ্যা প্রাপ্ত হয়ে সদা কলুষ কে প্রাপ্ত হন। এখানে দয়ানন্দ জী প্রকৃতি বলতে স্পষ্টতর সকল জড় জগতের মূল কারণ অনাদি নিত্য কারণ কে বুঝিয়েছেন। কেননা জগতের যে মূল কারণ তার নামই প্রকৃতি।
প্রকৃতিকে ত্রিগুণাত্মক বলা চলে কি না সে সমন্ধ্যে গীতা ভাষ্যকার জগদীশ চন্দ্র বলেছেন -
প্রকৃতি - জগতের মূল কারণ তাহার নাম প্রকৃতি (প্রকৃতিরহ মূলকারণস্য সংজ্ঞামাত্রম্)। ইহা অনাদি, অন্তহীন, নিত্য, অসীম, অতিসূক্ষ, অলিঙ্গ ও নিরবয়ব বা নির্বিশেষ। প্রধান, অব্যক্ত, ত্রৈগুণ্য ইত্যাদি ইহার নামান্তর। এই অব্যক্তের পরিণামেই ব্যক্ত জগৎ। সত্ব, রজঃ তমঃ এই তিন গুণের সাম্যাবস্থাই এই অব্যক্ত অবস্থা, এই হেতু ইহার নাম ত্রৈগুণ্য।
দেখা যাচ্ছে - জগদীশ চন্দ্র ঘোষ ও অব্যক্ত প্রকৃতিকে ত্রৈগুণ অর্থাৎ সত্ব, রজঃ, তমঃ বলে আখ্যায়িত করেছে।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ