পুনা প্রবচনে মহর্ষি দয়ানন্দ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

08 October, 2017

পুনা প্রবচনে মহর্ষি দয়ানন্দ

মহর্ষির আত্মচরিত
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর বিভিন্ন বক্তৃতার মধ্যে পুনা নগরীতে প্রদান করা পুনা প্রবচন বেশ বিখ্যাত। ১৮৭৫ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে পুনা নগরীতে প্রদান করা ধারাবাহিক বক্তৃতা সমূহকে “পুনা প্রবচন” হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। এই প্রবচনের শেষ দিন অর্থাৎ ১৫ই আগস্ট বক্তৃতা সমাপ্তির পর সমাগত লোকজন মহর্ষিকে তাঁর জীবনী নিয়ে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করায় তিনি যা বলেন তার অনুবাদ নিচে দেয়া হল-
.
আমি ব্রাহ্মণ কিনা, এই কথা অনেক লোকে জিজ্ঞাসা করেন, এবং তার প্রমাণস্বরূপ কোন আত্মীয়স্বজনের নামোল্লেখ করতে বা তাঁদের কারো লিখিত কোন চিঠি প্রদর্শন করতে অনুরোধ করেন। বলা বাহুল্য যে, গুজরাটবাসী লোকদিকের সঙ্গেই আমি অধিকতর অনুরাগ সূত্রে নিবন্ধ। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যদি কোন প্রকারে আমার সাক্ষাৎ ঘটে, তবে যে সাংসারিক অশান্তি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা করেছি, আমাকে পুনরায় নিশ্চয়ই অশান্তি জালে জড়িত হতে হবে। এই কারণে আত্মীয়স্বজনদের নামোল্লেখ বা তাঁদের কোন চিঠি প্রদর্শন উচিত বলে মনে করিনা।
.
আমি মর্ভিতে জন্মগ্রহণ করি, মর্ভি একটি নগর, এটি গুজরাটের অন্তর্গত দ্রুগান্ধ্রা রাজ্যের সীমান্তবর্তী। আমি উদীচ্য শ্রেণীস্থ ব্রাহ্মণ। উদীচ্য ব্রাহ্মণগণ সামবেদী হলেও আমি যজুর্বেদে শিক্ষিত হই। আমি যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করি, তা একটি বিস্তৃত সম্পত্তি সম্পন্ন পরিবার। আমার বয়স এখন ৪৯ বা ৫০ বছর। আমাদের সংসার এখন ১৫টি পৃথক পৃথক পরিবারে বিভক্ত। আমি বাল্যকালে রুদ্রাধ্যায় শিক্ষাপূর্বক যজুর্বেদের পাঠ আরম্ভ করি। পিতা শৈবমতাবলম্বী ছিলেন বলে আমি ১০ বছর থেকেই শিবোপাসনা করতে অভ্যস্থ হই। আমি শিবরাত্রির ব্রতাবলম্বন করি, পিতা এমনটাই চাইতেন। আমি পিতৃ ইচ্ছা পালনে অসম্মতি প্রকাশ করলেও আমাকে বাধ্য হয়ে শিবরাত্রির ব্রত কথা শুনতে হত। শুনতে শুনতে সেই ব্রত সম্পর্কে আমার এতটাই প্রীতিভাব জন্মাল যে, মাতার অসম্মতি সত্ত্বেও আমি সেই ব্রতাবলম্বন করতে কৃতসঙ্কল্প হয়ে উঠলাম। কৃতসংকল্প হলেও আমি কিন্তু সেই ব্রত উদযাপন করে উঠতে পারি নি। নগরের বাইরের দিকে একটি বিশাল শিব মন্দির ছিল। সেখানে শিবচতুর্দশীর দিন বহু লোক আসত। একবার শিবরাত্রি উপলক্ষে আমি, আমার পিতা ও অন্যান্য আরো বহু লোক সেই মন্দিরে সমাগত হলাম। সেখানে মহাদেবের প্রথম পূজা হয়ে গেলে পরে যখন দ্বিতীয় পূজাও সমাপ্ত হল, তখন রাত প্রায় দ্বিপ্রহর। মন্দিরে আগত উপাসকগণ ক্লান্তি দূরীকরণের জন্য কিছুক্ষণ করে ঘুমাবার উদ্দেশ্যে এক জনের পর আরেকজন করে শয়ন করতে লাগল। বলা বাহুল্য, আমার পিতাও কিছুক্ষণের জন্য ঘুমোতে গেলেন। ইতোমধ্যে মন্দিরের পুরোহিতরাও মন্দির থেকে চলে গেল। পাছে ব্রতভঙ্গ বা অভিলষিত ফললাভে বঞ্চিত হই এই আশঙ্কায় আর ঘুমোই নি।
.
যাই হোক, সকলের নিদ্রাবশত মন্দির নিস্তব্ধ হলে কিছু ইদুর গর্ত থেকে বের হয়ে মহাদেবের শরীরের উপর স্বেচ্ছামত বিচরণ ও তাঁর মাথায় রাখা চাল আদি খেয়ে ফেলতে লাগল। আমি জেগে থাকায় এই ব্যাপরটা দেখতে পারলাম বটে, কিন্তু গতদিন শিবরাত্রির যে ব্রত উপাখ্যান শুনেছিলাম, তাতে মহাদেবকে একজন মহাপ্রতাপান্বিত পুরুষ বলেই ধারণা করেছিলাম। এই কারণে এই ঘটনা দেখে আমার সরল মনে এই প্রশ্ন জেগে উঠল যে, কত শত দুর্দমনীয় দানব সংহারে যিনি সমর্থ, তিনি নিজের দেহ থেকে কয়েকটা ইদুর বিদুরিত করতে সমর্থ নন কেন? এই প্রশ্ন বহুক্ষণ ধরে আমার মস্তিষ্ক আলোড়িত করতে লাগল, এবং সবশেষে প্রগাঢ় সংশয়ে পরিণত হয়ে আমাকে এতটাই অশান্ত করে তুলল যে আমি পিতার নিদ্রাভঙ্গ না করে পারলাম না। পিতা জেগে উঠলে আমি এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলাম, এবং মহাদেবের দেহ থেকে ইদুরগুলোকে তাড়িয়ে দিতে বললাম। জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তরে পিতা বললেন, “তুমি অল্পবুদ্ধি বালক! এটি যে মহাদেবের কেবল মূর্তিমাত্র।” পিতার এই উত্তরে আমি সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। এই কারণে আমি সেই স্থানে সেই ক্ষণে প্রতিজ্ঞা করলাম যে, যদি আমি ত্রিশূলধারী মহাদেবকে দেখতে না পাই, তবে আমি কোনো মতেই তাঁর আরাধনা করব না।
.
এমন প্রতিজ্ঞা করে ঘরে ফিরে আসলাম, এবং যার পর নাই ক্ষুধার্থ ছিলাম বলে মাতার নিকট খাবার চাইলাম। তার উত্তরে মাতা বললেন, “আমি তো তোমাকে ব্রত গ্রহণ করতে নিষেধ করেছিলাম। কারণ আমি জানতাম যে তুমি উপবাস করে থাকতে পারবে না। তুমি তো নিজেই জেদ করে ব্রত গ্রহণ করেছিলে।” তারপর আমার খাবারের যেসকল সামগ্রী প্রস্তুত ছিল তা উপস্থিত পূর্বক, যেন আমি আপাতত দুইদিন পিতার সামনে উপস্থিত না হই, বা তাঁর নিকট কথা মাত্রও উচ্চারণ না করি, সে বিষয়ে মাতা আমাকে পরামর্শ দিলেন। কেননা পিতার নিকট উপস্থিত হলে বা কোন কথা বললে এই অপরাধের কারণে আমাকে শাস্তি পেতে হবে বলেই তাঁর বিশ্বাস ছিল। এদিকে খাবার খাওয়া শেষ হলে আমি এতটাই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম যে, পরদিন সকালে আটটার আগে কোন ভাবেই শয্যা ত্যাগ করতে পারলাম না। পরিগৃহীত ও প্রভূত পাঠ অভ্যাস করার বিঘ্ন ঘটবে বলে আমি ব্রতভঙ্গরূপ অপরাধ করেছি, এই কথা পিতামহকে বুঝিয়ে বললাম, এবং তিনিও সেই কথা পিতাকে বুঝিয়ে বলে তাঁর কোপ শান্ত করলেন। আমি সে সময়ে যজুর্বেদ পাঠ করতেছিলাম এবং পণ্ডিত বিশেষের নিকট সংস্কৃত ব্যাকরণ শিক্ষা নিতাম। আমার বয়স যখন নয় কি দশ বছর, তখন যজুর্বেদ শেষ করে আমার পাঠ সমাপ্তির শেষে আমাদের জমিদারীর অন্তর্গত গ্রামে গমন করলাম।
.
 বালক হৃদয়ে মৃত্যু চিন্তা ও বৈরাগ্য
.
আমাদের বাড়িতে একবার কোন বিশেষ উপলক্ষে নৃত্যগীত হচ্ছিল। কিন্তু সে সময়ে আমার এক বোন সাংঘাতিক রূপে কোন এক অসুখে আক্রান্ত হয়। আমি অসুখের খবর শুনে তার শয্যাপার্শ্বে উপস্থিত হলাম। এর আগে আমি কখনো কোনো লোককে মৃত্যু যন্ত্রণায় পড়তে দেখিনি। তাই আমি সেই বোনের আসন্ন দশা সম্পর্কে একান্ত ব্যথিত হলাম এবং মানুষ মাত্রেই যে এইরূপ মৃত্যুমুখে পতিত হতে হবে তাও আমি বুঝতে পারলাম। তাকে মুমূর্ষু দেখে আমি ছাড়া পরিবারের সকলেই বিলাপ ও কান্না করতে লাগল। সেজন্য পিতা, এমনকি মাতাও আমাকে পাষাণ হৃদয় বলে অভিহিত করল। আমি যে সেই অদৃষ্টপূর্ব ঘটনা দেখে যারপর নাই আতঙ্কিত হয়েছিলাম এবং সেকারণেই যে তাঁদের মত বিলাপ বা অশ্রুপাত করতে পারিনি, তা বলা বাহুল্য। তারপর তাঁদের আজ্ঞা অনুযায়ী আমি বিছানায় গিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলেও কিছুতেই ঘুমোতে পারলাম না। যাই হোক, এরূপ শোকাবহ ঘটনা আমার সামনে কয়েকবার সংঘটিত হলেও আমি তারজন্য আমাদের দেশের অদ্ভুত রীতি অনুসারে একবারও শোক প্রকাশ করতে পারি নি। এই কারণে আত্মীয় স্বজনদের নিকট আমি নিন্দার পাত্রও হয়েছিলাম। 
.
আমার বয়স যখন নয় তখন পিতামহ কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণত্যাগ করেন। পিতামহ যখন মুমূর্ষু দশাপন্ন তখন আমাকে ডেকে নিয়ে নিজের শয্যাপাশে উপস্থিত হবার আদেশ দিলেন এবং আমার মুখের প্রতি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে অবিরল ধারায় কাঁদতে লাগলেন। আমিও তাঁর এই অবস্থা দেখে এতটাই ব্যথিত হয়ে পড়লাম যে অতিরিক্ত ক্রন্দনে আমার চোখ দুটি ফুলে উঠল। বস্তুত এই ঘটনার পর আমি এমন আর কখনো কাঁদিনি। এছাড়া আমাকেও যে এভাবে কালগ্রাসে পতিত হতে হবে তাও সেই ঘটনার পর চিন্তা করতে লাগলাম। মৃত্যুচিন্তা যখন ক্রমশ বাড়তেই লাগল তখন কিভাবে অমরত্ব লাভ হতে পারে, সেবিষয়ে আত্মীয় স্বজনদের জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম। আমাদের স্থানীয় পণ্ডিতেরা যোগাভ্যাস করতে পরামর্শ দিলেন। সুতরাং আমি গৃহত্যাগ করতে কৃতসঙ্কল্প হলাম। তখন আমার বয়স ২০ বছর। আমাকে শান্ত ও স্বচ্ছন্দ চিত্ত করার উদ্দেশ্যে পিতা জমিদারী কাজের ভার অর্পণ করতে ইচ্ছা করলেও আমি তাতে সম্মত হলাম না। পিতা তখন আমাকে বিবাহ শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার জন্য কৃতসঙ্কল্প হয়ে উঠল। বিবাহের কথা উঠলেই আমি আত্মীয় ও বন্ধুদেরকে বলতাম যে আমি কখনো বিবাহ করব না। কিন্তু তাঁরা তার প্রতিবাদ করত। বিবাহের জন্য বান্ধবগণ কর্তৃক যখনই অনুরুদ্ধ হতাম তখনই তাঁদের নিকট বিয়ের পরিবর্তে গৃহত্যাগের অনুমতি চাইতাম। দেখতে দেখতে একমাসের মধ্যেই বিবাহ উপযোগী সমস্ত বিষয় প্রস্তুত করা হল। আমি তা দেখে একদিন সন্ধ্যাকালে বন্ধুর সাথে দেখা করার কথা বলে গৃহত্যাগ করলাম। নিকটস্থ একটি গ্রামে রাত কাটিয়ে ভোরে ঘুম থেকে উঠেই আবার চলতে লাগলাম।
.
কিছুক্ষণ পরে মরোটির মন্দিরে উপস্থিত হলাম। বলা বাহুল্য, সহজ পথ ধরে চলায় আমাকে দশ ক্রোশ কম হাটতে হল। সেই মন্দিরে কিছুকাল অবস্থান করে জলযোগ করলাম এবং সেখান থেকে শৈলা যোগীর উদ্দেশ্যে প্রস্থান করলাম। কিন্তু আশানুরূপ ফল লাভ না হওয়ায়, তাঁর নিকট যাওয়া আমার পক্ষে বৃথা হল। লালা ভক্ত নামে একজন যোগী বলে পরিচিত ছিল। এই কারণে অতপর আমি তাঁর অনুসন্ধানে চলতে লাগলাম। পথের মধ্যে এক বৈরাগীর সাথে দেখা হল। বৈরাগীর নিকট বেশকিছু বিগ্রহ ছিল। বৈরাগী আমাকে স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিত দেখে বললেন, “তোমার মত ব্যক্তির পক্ষে যোগাভ্যাস সম্ভব নয়।” আমার আঙ্গুলের স্বর্ণের আংটি দেখিয়ে তা যে সেই বিগ্রহগুলিতে অর্পণ করি, সেজন্য আমায় তা বলল। যাই হোক, আমি লালা ভক্তের নিকট যোগাভ্যাসে প্রবৃত্ত হলাম। একদিন রাত্রে এক গাছের নিচে বসে যোগাভ্যাস করছিলাম, এমন সময়ে গাছের উপর কোন এক পাখির বিকট ধ্বনি শুনতে পেলাম। আমি তা শুনে ভীত হয়ে বাধ্য হয়ে মঠে ফিরে গেলাম। আহম্মেদাবাদ নগরের নিকটস্থ স্থানে কতকগুলি বৈরাগী আছে শুনে, আমি লালা ভক্তের থেকে সেই স্থানে যাত্রা করলাম। সেখানকার বৈরাগীদের মধ্যে একজন রাজমহিষী দেখলাম। সেই রাজমহিষী কোথঅকার বলাতে পারি না। কিন্তু তিনি আমার সাথে পরিহাস করতে প্রবৃত্ত হওয়ায়, তাঁর সান্নিধ্য হতে আমি দূরে থাকতে লাগলাম। আমার পরিধানে রেশম নির্মিত বস্ত্র ছিল, যা দেখে বৈরাগীরা হাসাহাসি করত। এই কারণে আমি তা ফেলে দিয়ে সামান্য বস্ত্র কিনে পরিধান করলাম। তখন আমার নিকট কেবল তিন টাকা অবশিষ্ট ছিল। 
.
যাই হোক, আমি সেখানে ব্রহ্মচারী হিসেবেই পরিচিত হলাম। সেখানে তিন মাস অবস্থান করে কার্তিক মাসের একদিন সিদ্ধপুরে আগমন করলাম। কারণ ঐ সময়ে সিদ্ধপুরে একটি মেলা বসার কথা। অধিকন্তু সেই মেলা উপলক্ষে অনেক যোগবিদ্যা বিশারদ সেখানে উপস্থিত হতে পারেন এবং অমরত্ব লাভের জন্য আমি তাঁদের নিকট থেকে উপদেশ লাভ করতে পারি, এরূপ আশা করে সিদ্ধপুরে উপস্থিত হলাম। মিদ্ধপুরে পথে এক পূর্ব পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে আমার দেখা হল। দুঃখের বিষয়, সেই ব্যক্তি পিতার নিকট যেয়ে আমার পলায়ন সংবাদ বলে দিল। ইতোমধ্যে আমার বন্ধু ও আত্মীয়রা চতুর্দিকে আমার অনুসন্ধান করছিলেন। ফলে সেই ব্যক্তির নিকট আমার সংবাদ পেয়ে পিতা চারজন সিপাহী নিয়ে একদিন আমার নিকট এসে উপস্থিত হল। পিতার এই আকস্মিক আগমনে আমি একান্তই ভীত হয়ে পড়লাম ও মনে করতে লাগলাম যে, তিনি হয়ত আমার প্রতি যারপর নাই নির্দয় ব্যবহার করবেন। সেই জন্য আমি পিতার নিকট বললাম যে, একজন গোসাই কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আমি এই স্থানে উপস্থিত হয়েছি। কিন্তু তা হলেও আমি বাড়িতে ফিরে যেতে সম্মত আছি। তা শুনে পিতার ক্রোধ কমলেও আমার কাষ্ঠ নির্মিত পাত্র ও পরিধেয় বস্ত্র ছিড়ে ফেললেন এবং সচরাচর যে বস্ত্র পরিধান করতাম তা পরিধানে আজ্ঞা দিলেন। আর আমি যেন পুনরায় পলায়ন করতে না পারি সেজন্য সাথে সর্বদা দুজন সিপাহী রেখে দিতেন। এমনকি তাদের একজন না একজন সমস্ত রাত আমার পাশে বসে থাকত লাগল। কিন্তু আমিও এদিকে প্রস্থানে সুযোগে ছিলাম।
.
সিপাহী ঘুমে আচ্ছন্ন হয় কি না তা দেখার জন্য সমস্ত রাত জেগে থাকতাম। অথচ আমার আমার কৃত্রিম নাকের ডাক শুনে তারা ভাবত আমি প্রতি রাতেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ঘুমাচ্ছি। এভাবে জেগে জেগে তিনরাত পার করলাম। চতুর্থ রাত্রিতে সিপাহী যখন আর জেগে থাকতে না পেরে ঘুমে আচ্ছন্ন হল, আমি তখন প্রকৃত সুযোগ এসেছে দেখে শয্যাত্যাগ করলাম এবং পাতকৃত্য সমাপনের উদ্দেশ্যে একটি ঘটী হাতে বের হয়ে আসলাম। তারপর নগর অতিক্রম করে নিজেকে লুকিয়ে রাখার অভিপ্রায়ে একটি নিবিড় উদ্যান মধ্যস্থিত এক গাছের উপর উঠে বসলাম। গাছের উপর বসে সারাদিন অনশনে অতিবাহিত হলে, যখন সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসল তখন আমি গাছ থেকে নেমে এবং স্বদেশ ও স্বজনদের থেকে জন্মের মত বিদায় নিয়ে দ্রুতপদে গমন করতে লাগলাম। এরপর নিজের এলাকার লোকদের সাথে কেবল একবারই দেখা হয়েছিল। কিন্তু আমি তখন তাঁদেরকে আমার বিষয়ে কোনরূপ পরিচয় প্রদান করিনি।
 সন্ন্যাস গ্রহণ, বিরজানন্দের সাক্ষাৎ ও বৈষ্ণব মত খণ্ডন
.
আমি সিদ্ধপুর থেকে নর্মদা নদীর তীরবর্তী প্রদেশে গমন করি। সেখানে যোগানন্দ স্বামীর সাথে আমার সাক্ষাৎ ঘটে। যোগানন্দের সাথে কৃষ্ণ শাস্ত্রী নামে জনৈক মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি আমাকে কিছু বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করেন এবং তারপর সেই রাজগুরুর সাথে বেদ পাঠ করি। ২৩ বা ২৪ বছর বয়সে চুনোদে একজন সন্ন্যাসীর সাথে দেখা হয়। শাস্ত্রানুশীলনের প্রতি আমার গভীর আকাঙ্ক্ষা থাকায় এবং সন্ন্যাসাশ্রম শাস্ত্র শিক্ষার পক্ষে সর্বাপেক্ষা সুবিধাজনক বিবেচনা করে আমি সেই সন্ন্যাসী সমীপে দীক্ষা গ্রহণ করি। দীক্ষার পর আমি দয়ানন্দ সরস্বতী নামে পরিচিত হলাম। সেখানে দুইজন রাজযোগ-পরায়ণ গোস্বামীর সঙ্গেও আমার সাক্ষাৎ ঘটল। তাঁদের সাথে আমি আহমেদাবাদে গমন করলাম। সেখানে একজন ব্রহ্মচারীর সাথে সাক্ষাৎ হলেও আমি তাঁর সংসর্গ পরিত্যাগ করে হরিদ্বার অভিমুখে গমন করলাম। হরিদ্বারে তখন কুম্ভমেলা শুরু হয়েছে। হিমাচলের যে স্থান থেকে অলকনন্দা নদী প্রবাহিত, আমি হরিদ্বার হতে সেস্থানে উপস্থিত হলাম। অলকনন্দার জলে বস্তু-বিশেষের আঘাত লাগায় আমার পা এরূপ ক্ষতবিক্ষত হল যে তা থেকে অঝোর ধারায় রক্ত বের হতে লাগল। এমনকি আমি তাতে এতটাই ব্যথিত হলাম যে বরফরাশির মধ্যে পতিত হয়ে প্রাণত্যাগ করাই আমার নিকট শ্রেয় হয়ে উঠল।
.
কিন্তু তবুও আমার জ্ঞানস্পৃহা এতটাই প্রবল ছিল যে আমি পুনরায় যাত্রা শুরু করলাম এবং মথুরায় বিরজানন্দ নামক সুপণ্ডিত সাধুর নিকট আগমন করলাম। বিরজানন্দ পূর্বে আলোয়ারে থাকতেন। তাঁর বয়স তখন ৮১ হবে। একদিকে বেদাদি আর্ষ গ্রন্থের প্রতি বিরজানন্দের যেরূপ প্রগাঢ় আস্থা ছিল, তেমন শেখর, কৌমুদী প্রভৃতি আধুনিক পুস্তকের প্রতি ছিল তাঁর বিশিষ্ট অশ্রদ্ধা। এমন কি, তিনি পুরাণ ভাগগবতাদির একান্ত বিরুদ্ধ ছিলেন। বিরজানন্দ অন্ধ ছিলেন এবং তাঁর পাকাশয়ে ব্যথা ছিল। আমি তাঁর নিকটেই বেদাদি গ্রন্থের অধ্যয়ন আরম্ভ করলাম। সেখানকার অমরলাল নামে এক সহৃদয় ব্যক্তি বিষয়ে বিশিষ্টরূপে সাহায্য করতেন। আহার ও গ্রন্থাদি সম্পর্কে মুক্তহস্তে সহায়তার কারণে আমি অমরলালের নিকট যারপর নাই বাধিত আছি। তিনি খাবারের ব্যাপারে এতটাই যত্নশীল ছিলেন যে প্রথমে আমাকে খাবার না দিয়ে নিজে আহার করতেন না। বস্তুত তিনি যে একজন মহৎ প্রাণের অধিকারী তাতে কোনো সংশয় নাই। বিরজানন্দের নিকট পাঠ সমাপ্ত করে আমি আগ্রা নগরে দুই বছর অবস্থান করেছিলাম। আগ্রায় অবস্থানের সময় নানা বিষয়ে সন্দেহ নিবারণের জন্য আমি কখনো স্বয়ং উপস্থিত হয়ে বা কখনো চিঠি দ্বারা গুরুর নিকট থেকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতাম।
.
আগ্রা থেকে গোয়ালিয়রে গিয়ে বৈষ্ণব মত খণ্ডনে প্রবৃত্ত হলাম। সেখানে অনুত্তমাচার্য নামে এক ব্যক্তি আমার শাস্ত্র আলোচনা শোনার জন্য সর্বদাই উপস্থিত থাকতেন এবং নিজেকে একজন কেরানি বলেই পরিচিতি দিতেন। আলোচনার সময় আমার মুখ থেকে কখনো কোনো অশুদ্ধ শব্দ উচ্চারিত হলে তা সংশোধন করে দিতেন। আশ্চর্যের বিষয়, বহুবার জিজ্ঞাসা করলেও তিনি নিজেকে একজন কেরানি ভিন্ন অন্য কোনো পরিচয় প্রদান করেন নাই। এছাড়া তাঁর জ্ঞান শিক্ষা সম্পর্কে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করলে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতেন যে তিনি তা লোকমুখে শুনেই শিখেছেন। একদিন বক্তৃতাকালে আমি বললাম যে, বৈষ্ণবগণ যদি কপালে কৃষ্ণবর্ণ তিলক ধারণ করলেই যদি মোক্ষ লাভ করেন তবে তো সমস্ত মুখ কৃষ্ণবর্ণ রেখা দ্বারা অঙ্কণ করলে তাঁরা মোক্ষ অপেক্ষা অধিকতর পদ প্রাপ্ত হবেন। অনুত্তমাচার্য সেই কথা শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গেলেন। তারপর আমি গোয়ালিয়র হতে কেরোলিতে গমন করলাম। কেরোলিতে জনৈক কবিরপন্থীর সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তাঁর নিকট শুনলাম যে কবিরোপনিষদ নামে নাকি একখানা উপনিষদ আছে! তারপর কেরোলি থেকে জয়পুরে যাত্রা করলাম। জয়পুরে হরিশ্চন্দ্র নামক এক মহা পণ্ডিতের সাথে বৈষ্ণব মত নিয়ে বিচার যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলাম এবং তাঁকে পরাজিত করে শৈবমতের শ্রেষ্ঠত্ত্ব প্রতিপাদিত করলাম। এই ব্যাপর উপলক্ষে জয়পুরে মহা আন্দোলন উপস্থিত হল। মহারাজ শৈবমত অবলম্বন করলেন। সুতরাং প্রজাবর্গও তার পক্ষপাতী হয়ে উঠল। এমন কি তা নিয়ে লোক সকল এত উত্তেজিত হয়ে পড়ল যে হাজার হাজার রুদ্রাক্ষমালা বিতরিত হতে লাগল এবং হাতি ঘোড়ার গলায় পর্যন্ত রুদ্রাক্ষমালা পড়িয়ে সমগ্র নগর অপূর্ব শোভায় শোভিত হয়ে উঠল। যাই হোক আমি জয়পুর থেকে পুষ্করে গেলাম। সেখান থেকে আজমিরে এসে শৈব মতের বিরুদ্ধেও বিচার উপস্থিত করলাম। সেইসময় রাজা রামরাজ গভর্নর জেনারেল দ্বারা আহুত হয়ে তাঁর সাথে আগ্রায় যাচ্ছিল। শৈবমতের সমর্থক মনে করে তিনি আমাকে তাঁদের সাথে নিয়ে যেতে চাইলেন। কারণ বৃন্দাবনের রঙ্গাচারী নামক প্রসিদ্ধ বৈষ্ণবমতাবলম্বী পণ্ডিতকে আমি বিচার যুদ্ধে পরাজিত করে শৈবমতের শ্রেষ্ঠত্ত্ব প্রতিপাদন করব এটিই তাঁর অভিপ্রায়ের কারণ ছিল। কিন্তু তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে আমি শৈবমতেরও বিরুদ্ধবাদী, তখন সেই সঙ্কল্প ত্যাগ করলেন। অতঃপর আমি পুনরায় মথুরায় আসলাম এবং আচার্যের নিকট থেকে আমার যাবতীয় সংশয় দূরীভূত করে নিলাম।
.
 পাষণ্ড মর্দ্দন ও আর্য সমাজ স্থাপনারম্ভ
.
মথুরা থেকে হরিদ্বারে পৌঁছালাম এবং সেখানে আমার কুটিরের উপর “পাষণ্ড মর্দ্দন” নাম অঙ্কিত করে পতাকা উত্তোলন করলাম। সেই কারণে আমার সাথে অনেকের বিচার বিতর্ক হতে লাগল। তখন আমি চিন্তা করলাম যে, সাংসারিক লোকের নিদর্শন স্বরূপ এসকল গ্রন্থাদি সামগ্রী কি আমার সাথে রেখে দিব? এবং সমস্ত সংসারের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হয়ে কি শত্রুদল বৃদ্ধি করতে থাকব? এরূপ চিন্তা তরঙ্গে আন্দোলিত হয়ে অবশেষে সমস্ত পরিহার করাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করলাম। সে অনুসারে সমস্ত সামগ্রী বিতরণ করে দিলাম, এবং কৌপীন ধারণ ও সর্বাঙ্গে ভস্মলেপন পূর্বক মৌনী হয়ে ধ্যান-ধারণায় প্রবৃত্ত হলাম। ভস্মলেপনের অভ্যাস গত বৎসর পর্যন্তও আমার ছিল। কিন্তু রেলপথে ভ্রমণের কারণে বাধ্য হয়ে আমাকে তা ত্যাগ করতে হয়েছে। আমি মৌনব্রত হয়েও বেশিদিন থাকতে পারলাম না। কারণ একবার এক ব্যক্তি আমার কুটীরে আগমন করে “নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলম্” ইত্যাদি বাক্য আবৃত্তি করে যখন ভাগবতের শ্রেষ্ঠত্ত্ব প্রতিপাদন করতে চাইলেন, তখন আমি তার প্রতিবাদ না করে থাকতে পারি নাই। এ ঘটনার পর আমি স্থিরচিত্তে সিদ্ধান্ত করলাম যে, যে জ্ঞান উপার্জন করেছি, তা পৃথিবীর নিকট প্রচারিত করা আমার পক্ষে একান্ত কর্তব্য। এই সিদ্ধান্তের পর আমি হরিদ্বার ত্যাগ করে ফরাক্কাবাদে চলে আসলাম। সেখান থেকে পুনরায় রামগড়ে আসলে সেখানকার লোকজন আমাকে “কোলাহল-স্বামী” বলে অভিহিত করতে লাগল। কারণ সেখানে কতিপয় শাস্ত্রী বিচারার্থী হয়ে আমার কাছে আসেন এবং সকলেই এক সাথে বিচার করা শুরু করেন। তা দেখে আমি তাঁদের বিচার-ব্যাপারকে কোলাহল বলে অভিহিত করি। বোধ হয়, সেজন্যই তাঁরা আমাকে সেরকম আখ্যা প্রদান করলেন। রামগড়ে চিত্রণগড় নিবাসী দশজন লোক আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করলে আমি বিশেষভাবে সাবধানতার সাথে তাদের হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভ করলাম। তারপর আমি কানপুর হয়ে প্রয়াগে উপস্থিত হলাম। প্রয়াগেও আমাকে হত্যা করার উদ্দেশে কয়েকজন দুর্বৃত্ত লোক প্রেরিত হয়েছিল। কিন্তু সে বারে মহাদেব প্রসাদ নামে জনৈক ব্যক্তি দ্বারা আমি হত্যাকারীরের হাত থেকে বাঁচলাম।
.
মহাদেব প্রসাদ অত্যন্ত সজ্জন লোক। আর্যধর্মের শ্রেষ্ঠতা তিন মাসের মধ্যে প্রমাণ করতে না পারলে তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এই মর্মে মহাদেব প্রসাদ প্রয়াগের সকল পণ্ডিতের নিকট বিজ্ঞাপন পত্র প্রচার করেছিলেন। বলা বাহুল্য, আর্য ধর্মের শ্রেষ্ঠতা প্রতিপাদন করে আমি তাঁকে খ্রিস্টানধর্ম গ্রহণ থেকে নিরস্ত করলাম। প্রয়াগ থেকে রামনগরে আগমন করি। কাশীধাম নিবাসী পণ্ডিতদের সাথে শাস্ত্র বিচারে প্রবৃত্ত হব, এই সংকল্প করে রামনগরের মাহারাজ আমাকে আহবান করলেন। যাই হোক আমি সে অনুসারে বারাণসীতে বিচারার্থ উপস্থিত হলাম। বারাণসীতে বিচার প্রসঙ্গে সেখানকার পণ্ডিতেরা আমায় জিজ্ঞেস করলেন যে, বেদে প্রতিমা শব্দ আছে কি না? তার উত্তরে আমি প্রমাণের সাথে বললাম যে বেদে প্রতিমা শব্দ আছে, কিন্তু তার অর্থ পরিমাপন। বারাণসীর বিচার পুস্তক আকারে বের হয়েছে, সুতরাং ইচ্ছে করলেই সকলে তা দেখতে পারেন। বেদের ব্রাহ্মণভাগকে ইতিহাস বলে পরিগনিত করা উচিত, আমি এই বিষয়েও কাশীর পণ্ডিতদের নিকট প্রমাণ করার চেষ্টা করলাম। বিগত ভাদ্রপদে আমি কাশীধামে চতুর্থবার গমন করলাম। আমি সেখানে যতবারই গিয়েছি, ততবারই মূর্তিপূজা বেদ প্রতিপাদিত কি না, তা প্রমাণার্থ সেখানকার পণ্ডিতদেরকে আহবান করেছি। কিন্তু কি আর বলব, তা প্রমাণ করার জন্য কেউই আমার নিকট উপস্থিত হন নাই। এই উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়ে আমি প্রায় সমগ্র ভারত ভ্রমণ করেছি। বিগত দুই বছরের ভিতর আমি কোলকাতা, লক্ষ্ণৌ, এলাহাবাদ, কানপুর ও জব্বলপুর প্রভৃতি স্থানে হাজার হাজার লোকের সামনে আর্যধর্ম প্রচার করছি এবং সংস্কৃত ভাষা অনুশীলনের জন্য কাশী ও ফরাক্কাবাদ প্রভৃতি স্থানে কিছু সংস্কৃত পাঠশালাও স্থাপন করেছি। কিন্তু অধ্যাপকদের অনুদারতা বশতঃ সেই সকল পাঠশালায় আশানুরূপ ফল দেখা যায় নি।
.
আমি গত বছর বোম্বাই এসেছিলাম। বোম্বাই নগরে মহারাজ মতের প্রতিবাদ করতে প্রবৃত্ত হই এবং সেখানে একটি আর্যসমাজও স্থাপন করি। বোম্বাই থেকে আহমেদাবাদ এবং সেখান থেকে রাজকোট যেয়ে বৈদিক ধর্মের জয় ঘোষণা করি। আপাতত দুই মাস কাল আপনাদের নিকট অবস্থান করছি। ফলত এতক্ষণ যা বললাম, তাই আমার জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। আর্যধর্মের প্রতিষ্ঠা পক্ষে প্রকৃত প্রচারকের যথার্থই অভাব রয়েছে। এক ব্যক্তি দ্বারা কখনোই এই বিরাট কাজ কখনোই সম্পাদিত হতে পারে না। এইজন্য আমি আমার যথাশক্তি সমর্পণ করতে কৃত-প্রতিজ্ঞ হয়েছি। ভারতের আদ্যোপান্তে আর্যসমাজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সারাদেশে প্রচলিত সকল কুরীতি উন্মূলিত হয়ে যাক, এটাই আমি মনেপ্রাণে কামনা করি। সর্বত্র বেদাদি শাস্ত্র ব্যাখ্যা ও আলোচিত হোক এবং আমাদের নিদ্রিত দেশ জাগ্রত হয়ে উঠুক, সেই নিমিত্ত আমি ঈশ্বরের নিকট একান্ত হৃদয়ে প্রার্থনা করছি।
.
ইতি “পুনা প্রবচন”-এ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী কর্তৃক কথিত আত্মচরিত সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ