ঈশ্বরে অবিশ্বাস’ আর ‘ঈশ্বর নাই বিশ্বাস’ বিষয় - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

16 November, 2017

ঈশ্বরে অবিশ্বাস’ আর ‘ঈশ্বর নাই বিশ্বাস’ বিষয়

নাস্তিকতা নিয়ে সারা পৃথিবীজুড়েই অসংখ্য ভুল ধারণা ছড়িয়ে আছে। তার মধ্যে আমার মতে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা এই যে, “নাস্তিকরা ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করে”। নাস্তিকতা নিয়ে এই ভুল ধারণাটা খুব খুব এবং খুবই সাধারণ। কেবল আস্তিকদের মধ্যেই এই ভুল ধারণাটা আছে তা নয়, দুঃখজনকভাবে এমন অনেক নাস্তিকই আছেন যারা এই ভুল ধারণাটি পোষণ করেন।

ধর্মবিশ্বাসী লেখক, ব্লগার এবং ইউটিউবারদের প্রায়ই দেখা যায় সাধারণ মানুষদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, নাস্তিকরা অন্ধবিশ্বাসী, তারা অন্ধভাবে ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করে। এটা আমার বোধগম্য নয় যে, তারা কেনো তাদের দর্শকদের সামনে নাস্তিকতার সঠিক উপস্থাপন করতে পারেন না। ছোটবেলা থেকে নাস্তিকতার প্রতি সমাজ থেকে প্রাপ্ত ঘৃণা নিয়ে বড় হওয়ার কারণে কি তারা নাস্তিকতা আসলে কি তা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে জানার চেষ্টা করতে পারেন না? নাকি তারা নাস্তিকতা আসলে কি তা বোঝার মতো যথেষ্ট বোধবুদ্ধির অভাবে ভোগেন? নাকি তারা নাস্তিকদেরকে তাদের ধর্মবিশ্বাসের জন্য হুমকিস্বরূপ মনে করে নিজেদের ধর্মবিশ্বাস রক্ষার্থে নাস্তিকদেরকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা জরুরী মনে করেন?

যাইহোক, এই প্রবন্ধটি লিখছি “নাস্তিক মাত্রই এমন একজন ব্যক্তি যিনি ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করেন” এই প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করার চেষ্টায়। আশাকরি, প্রবন্ধটি অনেককেই তাদের ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করবে।

নাস্তিকরা ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করে?

নাস্তিকতার কেবল সংজ্ঞাটাই যদি আমরা জানি এবং ভালোভাবে বুঝি তাহলেই নাস্তিকতা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো ভুল ধারণা থাকার কথা নয়।

নাস্তিকতা শব্দটির মানে ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাস বা বিশ্বাসের অভাব। নাস্তিক শব্দটির মানে এমন একজন ব্যক্তি যিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাস করেন বা যার ভেতর ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসের অভাব আছে। ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা বা ‘ঈশ্বর আছে’ মনে না করাই নাস্তিকতা। নাস্তিকতা এই এতটুকুই, কেবল ঈশ্বরে বিশ্বাস না করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ, এর বাইরে কোনোকিছুই নাস্তিকতা নয়। কিন্তু, নাস্তিকতার সাথে অনেকেই অনেককিছু জুড়ে দিতে চান। কারো কাছে নাস্তিকতার মানে ‘ঈশ্বরে নেই’ বলে বিশ্বাস করা, কারো কাছে নাস্তিকতা একটি মতবাদ, কারো কাছে একটি ধর্ম, আবার কারো কাছে একটি দর্শন। না, নাস্তিকতা কোনো বিশ্বাস নয়, কোনো মতবাদ নয়, কোনো ধর্ম নয়, কোনো দর্শনও নয়।

ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না মানেই আপনি নাস্তিক। নাস্তিক হওয়ার জন্য ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করতে হয় বা নাস্তিক মাত্রই এমন একজন ব্যক্তি যিনি ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করেন এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। আস্তিক এবং দুঃখজনকভাবে অনেক নাস্তিকও এটা বুঝতে পারেন না যে ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাস করা আর ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করা এক নয়৷ না, ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাস আর ঈশ্বরের অনস্তিত্বে বিশ্বাস এক নয়, দুইটা দুই অবস্থান।

ঈশ্বরে অবিশ্বাস আর ঈশ্বর নাই বিশ্বাস যে এক বিষয় নয় সেটা নিয়ে আমেরিকান এথিস্ট অ্যাকটিভিস্ট ম্যাট ডিলাহান্টির একটা চমৎকার উপমা আছে।

ধরুন, আমি আপনাকে একটি কয়েন ভর্তি মাটির ব্যাংক দেখালাম। ব্যাংকটিতে ঠিক কয়টি কয়েন আছে তা আপনিও বুঝতে পারছেন না, আমিও বুঝতে পারছি না। ব্যাংকটির মোট কয়েন সংখ্যা জোড় নাকি বিজোড় সেটা আপনিও জানেন না, আমিও জানি না। কিন্তু, আপনি আমি উভয়েই এবিষয়ে একমত হতে পারি যে, ব্যাংকটির মোট কয়েন সংখ্যা হয় জোড় হবে নাহয় বিজোড় হবে।

এখন আমি দাবি করে বসলাম, ব্যাংকটির মোট কয়েন সংখ্যা জোড়। আপনি কি আমার এই দাবিটি বিশ্বাস করে ফেলবেন? অবশ্যই আপনি যদি একজন যুক্তিবাদী মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আমার এই দাবিটি অন্ধভাবে বিশ্বাস করে ফেলবেন না। আপনি বলবেন, “ব্যাংকটির মোট কয়েন সংখ্যা যে জোড় তার প্রমাণ কি?” তারপর আমি যদি বলি, “ওহ, তাহলে আপনি বিশ্বাস করেন, ব্যাংকটির মোট কয়েন সংখ্যা বিজোড়?”, তাহলে আপনি বলবেন, “না, আমি বলছি না যে, ব্যাংকটির মোট কয়েন সংখ্যা বিজোড়।” আপনি বিশ্বাস করেন না ব্যাংকটির মোট কয়েন সংখ্যা জোড়, তারমানে এটা নয় যে আপনি বিশ্বাস করেন ব্যাংকটির মোট কয়েন সংখ্যা বিজোড়।

কোনোকিছু বিশ্বাস না করা তার বিপরীত কিছুতে বিশ্বাস করা নয়।

ঈশ্বর বলে কিছু আছে কিনা তা আমরা কেউই জানি না। ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে।

আস্তিকরা দাবি করেন, ঈশ্বর আছে। আমি আস্তিকদের এই দাবিটি বিশ্বাস করি না।

আমি আস্তিকদের এই দাবিটি বিশ্বাস করি না মানে এটা নয় যে আমি ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করি।

আমি ‘ঈশ্বর আছে’ বলেও বিশ্বাস করি না, আবার ‘ঈশ্বর নেই’ বলেও বিশ্বাস করি না। আমার কাছে দুটোই অপ্রমাণিত। আমার ‘ঈশ্বর আছে’ বলে বিশ্বাস না করাটাই নাস্তিকতা।

আস্তিকতা হচ্ছে ‘ঈশ্বর আছে’ মনে করা। আর, নাস্তিকতা হচ্ছে ‘ঈশ্বর আছে’ মনে না করা, ‘ঈশ্বর নেই’ মনে করা নয়।

অর্থ্যাৎ, একজন নাস্তিক মাত্রই এমন একজন ব্যক্তি নয় যিনি ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করেন। নাস্তিকদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা ‘ঈশ্বর আছে’ বলে বিশ্বাস করেন না, আবার ‘ঈশ্বর নেই’ বলেও বিশ্বাস করেন না। আবার, এমন অনেকেই আছেন যারা ‘ঈশ্বর আছে’ বলে বিশ্বাস করেন না, তবে ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করেন।

অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক ও জ্ঞেয়বাদী নাস্তিক

ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না এমন অনেকেই বলেন, “আমি নাস্তিক না, আমি অজ্ঞেয়বাদী।” তারা মনে করেন, আস্তিকরা ‘ঈশ্বর আছে’ বলে বিশ্বাস করেন এবং নাস্তিকরা ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করেন আর যেহেতু ঈশ্বরের অস্তিত্বের মতো ঈশ্বরের অনস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ এখন অব্ধি খুঁজে পাওয়া যায়নি সেহেতু কোনো সিদ্ধান্তে না আসা বা অজ্ঞেয়বাদ অবস্থানটাই বেশি যুক্তিযুক্ত।

‘ঈশ্বর আছে’ বলে বিশ্বাস করলে আপনি আস্তিক। ‘ঈশ্বর আছে’ বলে বিশ্বাস না করলে আপনি নাস্তিক। আপনি আস্তিক নন মানেই আপনি নাস্তিক। নাস্তিক হওয়ার জন্য ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করার কোনো প্রয়োজন নেই।

একজন নাস্তিক কখনো অজ্ঞেয়বাদী হতে পারে না বা একজন অজ্ঞেয়বাদী কখনো নাস্তিক হতে পারে না এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। একইসাথে মানুষ এবং নারী/পুরুষ হওয়ার মতো আপনি একইসাথে নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদী হতে পারেন।

নাস্তিকতা এবং অজ্ঞেয়বাদ দুইটা দুই প্রশ্নের উত্তর। নাস্তিকতা “আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন?” এই প্রশ্নের উত্তর। আর, অজ্ঞেয়বাদ “ঈশ্বর বলে কি কিছু আছে?” এই প্রশ্নের উত্তর।

“আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন?” এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি যদি বলেন, “না, আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না”, তাহলে আপনি নাস্তিক।

“ঈশ্বর বলে কি কিছু আছে?” এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি যদি বলেন, “আমি জানি না, ঈশ্বর বলে কিছু থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে”, তাহলে আপনি অজ্ঞেয়বাদী।

আমি একইসাথে একজন নাস্তিক এবং একজন অজ্ঞেয়বাদী। আমি নাস্তিক কারণ আমি ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি না। আমি অজ্ঞেয়বাদী কারণ আমি জানি না ঈশ্বর আছে কি নেই। ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা মানে ঈশ্বর নেই বলে জানা নয়, ঈশ্বর আছে কি নেই তা না জানা মানে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করা নয়।

নাস্তিকদের মধ্যে যারা ‘ঈশ্বর আছে’ বলে বিশ্বাস করেন না এবং ‘ঈশ্বর নেই’ বলেও দাবি করেন না, তারা অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক (Agnostic Atheist)। আর, যারা ‘ঈশ্বর আছে’ বলে বিশ্বাস করেন না এবং ‘ঈশ্বর নেই’ বলে দাবি করেন, তারা জ্ঞেয়বাদী নাস্তিক (Gnostic Atheist)।

ঈশ্বর বিষয়ক প্রমাণ গুলি
(১) প্রত্যক্ষ
(২) অনুমান
(৩) উপমান
(৪) শব্দ
(৫)ঐতিহ্য
(৬) অর্থাপত্তি
(৭)সম্ভব এবং
(৮) অভাব
এই হল ৮ প্রকার বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ । যার দ্বারা কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা তা প্রমাণিত করা যাবে ।
(১) প্রত্যক্ষ কি ?
যাহা প্রসিদ্ধ শব্দাদি পদার্থের সহিত শ্রোত্রাদী ইন্দ্রিয় ও মনের নিকট সম্বন্ধ হইতে জ্ঞান জন্মে উহাকে প্রত্যক্ষ বলে ।
(২) অনুমান কি ?
কোনো পূর্ব দৃষ্ট পদার্থের এক অঙ্গকে প্রত্যক্ষ দেখিয়া পরে যদ্দ্বারা পূর্ব দৃষ্ট পদার্থের অদৃষ্ট অঙ্গের যথাবৎ জ্ঞান হইয়া থাকে উহাকে অনুমান বলে ।
(৩) উপমান কি ?
কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে বলিল নীল গাভী (গবয়) দেখিতে গাভীর ন্যায় । এইরুপ উপমা দ্বারা যে সাদৃশ্য-জ্ঞান জন্মায় তাহাকে উপমান বলে ।
(৪) শব্দ কি ?
যাহা পূর্ণ আপ্ত পরমেশ্বর এবং আপ্ত পুরুষের উপদেশ তাহাকে শব্দ বলে ।
(৫)ঐতিহ্য (ইতিহাস) কি ?
যাহা শব্দ প্রমানের অনুকূল এবং যাহা অসম্ভব তথা মিথ্যা লিখিত নহে ,উহাকে ইতিহ্য (ইতিহাস) বলে ।
(৬) অর্থাপত্তি কি ?
একটি কথা বলিবার পর অপরটি না বলিলেও যাহার পরিচয় পাওয়া যায় , উহাকে অর্থাপত্তি বলে ।
(৭)সম্ভব কি ?
যে বাক্যটি প্রমাণ যুক্তি এবং সৃষ্টি ক্রমানুমোদিত উহাকে সম্ভব বলে ।
(৮) এবং অভাব কি ?

এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে বললো - "তুমি জল আনো" আদিষ্ট ব্যক্তি দেখিলো যে , সেখানে জল নাই কিন্তু যেখানে জল আছে সেখানে থেকে জল আনা প্রয়োজন বোধ করিল । এই অভাব নিমিত্ত যে জ্ঞান উৎপন্ন হয় উহাকে অভাব বলে ।

তথ্যসূত্র

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ