ভগবান শিব - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

15 July, 2021

ভগবান শিব

শিবরাত্রি

ও৩ম্ নমঃ শম্ভুবায় চ ময়োভবায় চ নমঃশঙ্করায় চ

ময়স্করায় চ নমঃ শিবায় চশিবতরায় চ।।-যজু০১৬/৪১

 ভাবার্থ – সুখস্বরূপ, সুখদাতা, কল্যাণকারী, কল্যাণদাতা, মঙ্গলস্বরূপ ও মোক্ষদাতা পরমাত্মাকে বারংবার নমস্কার করি।

ভগবান মহাদেব শিব একজন মহর্ষি যিনি হঠযোগ, রসায়নশাস্ত্র (Chemistry) এবং জ্যোতিষ প্রভৃতি বেদাঙ্গ শাস্ত্রের প্রবর্ত্তক। তিনি জিতেন্দ্রিয়, প্রশান্তাত্মা, স্থিতপ্রজ্ঞ, যোগীপুরুষ, পরব্রহ্মবিদ্, রুদ্র ব্রহ্মচারী ছিলেন। তিনি অগ্নিস্বাত এর পুত্র ছিলেন। তিনি পশুপতাস্ত্রের নির্মাতা, ও নানা অস্ত্রশস্ত্রের আবিস্কারক ও প্রশিক্ষক। মহাভারত থেকে জানা যায় বৈদিক সময়ে মহর্ষি বহ্মা সর্বপ্রথম ১ লাখ অধ্যায়ের নীতি শাস্ত্র রচনা করেছিলেন, তার পর তাহা মহাদেব জী সংক্ষিপ্ত আকার করেছিলেন, তাঁর পর মহারাজ ইন্দ্র ও ভগবান বৃহস্পতি এবং সর্বপরি মহর্ষি শুক্রাচার্য তাহা ১০০০ শ্লোকের নীতি শাস্ত্র হিসাবে তৈরী করেন। ওনাকে আদিযোগীও বলা হয়, কারণ তিনি অনেক যোগ কলার উদ্ভাবক ছিলেন । যার বেশিরভাগই বর্তমানে লুপ্ত হয়ে গিয়েছে ।  সর্বত্র অভেদ ব্রহ্ম দর্শন হওয়ায়, সর্বদা সমাধির ভাবে তন্ময় থাকার ফলে, সব সময়ই ব্রহ্মানন্দের নেশায় বিভোর থাকতেন। অপরাজেয় পাশুপাত অস্ত্র শুধুমাত্র তাহার কাছেই বিদ্যমান ছিল। ইহা ব্যতীত রামায়ণেও তাহার ধনুষ সম্পর্কে আমরা জানতে পাই । ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথির রাত্রিকে বলা হয় শিবরাত্রি, যা ভগবান শিবের পুন্য জন্ম তিথি। শিবপুরাণ অনুসারে এইরাত্রেই শিব ও উমাদেবীর বিবাহ হয়েছিল ।

ভগবান শিবের জন্ম তিথি হিন্দুরা মানলেও বিজ্ঞানী, সাধক, যোগীরাজ শিবের চরিত্রের পূজা না করে  কিম্ভুত কিমাকার লিঙ্গ বানিয়ে সকলের কাছে হাসির পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৌরাণিকরা ভগবান শিব কে ঈশ্বর বানিয়ে যোনিলিঙ্গের পূজা করে চলছে, সাম্প্রদায়ীদের হাতে পড়ে শিবের পুত্র, ইন্দুর বাহন, লম্বোদর, শনির কোপে মাথা উড়ে যাওয়ায় গজানন !! কী ভিষণ প্রহেলিকা ! পরমাত্মাবাচক গভীর মর্মার্থ সমাধৌত হৃদয়ে অনুভব করতে চাই না পৌরাণিকগণ। পুরাণ-কারদের হাতে পড়ে পরমাত্মবাচক অর্থ আবরিত হ'ল। পরমাত্মা সকলের মঙ্গল করেন বলে তাঁর নাম শিব; "শিবং সুখং তদস্যান্তি। অর্শাদ্যচ্। শিবয়তীতি বা তৎ করোতীতিণ্যত্তাৎ পচাদ্যচ্"- অর্থাৎ যিনি সুখস্বরূপ, মঙ্গল নিধান, সেই পরমাত্মার এক নাম শিব

মহাভারত অনুযায়ী তিব্বতে আমরা যে শিব নামে এক যোগেশ্বরের সন্ধান পাই , তাঁর নাম ভগবান মহাদেব শিবের নামানুসারে থাকলেও দুই শিব এক ন'ন, তিনি  কিরাতদলপতি ছিলেন অগ্নিষ্বাত্তর পুত্র মহাদেব।। অজ্ঞ জনসাধারণ ঈশ্বরের নাম ও যোগীরাজ শিবকে এক বলে confuse করে। যঃ শং কল্যাণং সুখং করোতি স শঙ্করঃ- কল্যাণ এবং সুখের কর্ত্তা বলে পরমাত্মাকে শঙ্কর বলা হয়। কিন্তু শৈব সম্প্রদায়ের হাতে পড়ে পাষাণ প্রিয় বন্ডদের কৃতিত্বে শিব হলেন একটা স্বতন্ত্র দেবতা, শ্মশানচারী, গাঁজা ধুতুরা সেবী, স্ত্রীপুত্র সমান্বিত ভৈরব মূর্ত্তি ! অন্যান্য সম্পরদায়ের দেবতাকে করে দিলেন এঁর উপাসানাকারী, আজ্ঞাবহ ! নানা অভিসন্ধি নিয়ে বেদ ও শ্রুতির কদর্য্য বিকৃত অর্থ করে জড় মূর্তিপূজক, সংকীর্ণ ভেদদৃষ্টিসম্পন্ন পুরাণকার এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ীরা যা করে গেল, পরে তারই উপর ভিত্তি করে আরও বহু উপকরণ, গল্প, গাঁথা, মন্ত্র, তন্ত্র, পূজা পদ্ধতি সংযোজিত হ'ল, আসল তত্ত্ব এই ভাবে গেল রসাতলে। খ্রঃ পূঃ দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষ পর্য্যন্তও ভারতে বৈদিক আর্য্যদের মধ্যে এই দেব-দেবীর পূজা ছিলো না।

মহাভারতে উল্লেখ অনুযায়ী অর্জুন প্রতিস্মৃতিবিদ্যা শেখার পর(কৃষ্ণদ্বৈপায়ন মহারাজ যুধিষ্ঠির কে শেখান পরে যুধিষ্ঠির অর্জুনকে) ব্যাসের নির্দেশে ইন্দ্রলোকে গিয়ে শ্রেষ্ঠতর অস্ত্র সংগ্রহ করতে ও শ্রেষ্ঠতর অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা লাভ করতে যান।

ইন্দ্রলোক হিমালয়ের উত্তরে ও উত্তর পশ্চিমে হিমবান্ (হিমালয়) গন্ধমাদন ও ইন্দ্রকীল পর্বত পার হয়ে যান।-(মহাভারত বনপর্ব ৩৭।৪১-৪২) পুরাণ মতে হিমবানের একদিকে কিম্পুরুবর্ষ বা কিন্নরদের দেশ; কিন্নরদেশের অলশ এখন সিমলা হতে কিছু দূরে উত্তর পশ্চিম সীমান্তে চিনি উপত্যকায় বিরাজিত আছে। তার উত্তরে হরিবর্ষ, তিব্বতের মালভূমি। তার উত্তর পশ্চিমে ইলাবৃত বর্ষ। যেখানে সমরখন্দ,বোখারা ইত্যাদি এখন অবস্থিত মনে হয় সেটাই ইন্দ্রলোক; সেখানকার আর্য অধিপতি ইন্দ্র নামে পরিচিত হতেন।

তখন কার ইন্দ্রলোকের কথিত ভাষা বা মধ্য এশিয়ার প্রচলিত মূল আর্যভাষাকে প্রতিস্মৃতি বিদ্যা বলা হয়। সেখানকার অস্ত্রশিক্ষার জন্য বা অন্য কোন কাজের জন্য গেলে সেখানকার ভাষা জানা প্রয়োজন। কৃষ্ণদৈপায়ন দেশ হতে দেশান্তরে ভ্রমন করতেন, তাঁর মধ্য এশিয়ার ভাষা জানা ছিল, সেই ভাষার জ্ঞানই প্রতিস্মৃতি বিদ্যা। ইন্দ্রলোকে যাওয়ার সময় হিমালয় অন্চলে থাকা কিরাত অধিবাসিদের দলপতির সাথে যুদ্ব হয়, সে সময় কিরাতদের বাস ছিল ঐ অঞ্চলে। রাজা ভগদত্তের সৈনদলের মধ্যে কিরাতবাহিনী ছিল বলে বর্ছিত হয়েছে। অর্জুনের দিকে ছুটে আসা একটি বরাহ লক্ষ করে বাণ নিক্ষেপ করে সেটিকে পাতিত করেন, অন্যদিক থেকে কিরাতদলপতি লোকজন সহ এসেছিলেন, তিনিও বরাহটিকে বাণ নিক্ষেপ করেন। বরাহটি কে কে পাবে তা নিয়ে দুজনের মধ্যে বিবাদ শুরু হয় পরে কথাকাটাকাটি থেকে যুদ্ধ; অর্জুন মনে করেছিলেন যে সহজেই তিনি কিরাত নেতার উপর জয়লাভ করবেন, কিন্তু কিরাত নেতা অর্জুনের সব বাণ যেন সহজেই কেটে দিচ্ছিলেন, তাঁর ক্ষিপ্রকারিতা ও ধনুর্বিদ্যাপটুতা দেখে অর্জুন আশ্চার্য হয়ে গেলেন। অর্জুনও কিরাত নেতার সব বান সহজেই কেটে দেন, এই ভাবে অর্জুনের বাণ ফুরিয়ে গেলে, তখন অর্জুন বাহুযুদ্ধ আরম্ভ করেন, কিন্তু বাহুযুদ্ধেও কিরাতনেতা পটু, বহুক্ষন চেষ্টার পরে অর্জুন বিপন্ন হয়ে পরাজয় স্বীকার করেন।

কিরাতনেতা অর্জুনের অস্ত্রশিক্ষা গ্রহণ করলেন, এবং অর্জুনকে কিরাতদের ধনুর্বিদ্যা কৌশল শিখিয়ে ছিলেন। কিরাতগণ ভগবান যোগীরাজ শিবের ধনুর্বিদ্যায় কুশল ছিল। অর্জুন ইলাবৃতবর্ষে (ইন্দ্রলোক) অস্ত্রশিক্ষার জন্য যাবেন জেনে কিরাতনেতা তাঁর যাত্রার সুবিধা করে ছিলেন। অর্জুন সার্থবাহ নামক একটা দলের সঙ্গে ইলাবৃতবর্ষ বা ইন্দ্রলোকে গিয়েছিলেন। ওখানে মহরাজা ইন্দ্রের সেনানীদের মধ্যে থেকে যুদ্ধবিদ্যা লাভ করেন, এবং সেখানে নৃত্যগীত আয়ত্ত করেছিলেন। অস্ত্রশিক্ষা শেষ হলে ইন্দ্রের নির্দেশে নিবাত-কবচ নামক অসুরদের ধ্বংস করেন তার পরে দেশে ফিরেন। মহাভারতে এই কিরাত সর্দারই মহাভারতে উল্লেখিত যোগীপুরুষ শিব, তাঁর কাছ থেকে অর্জুন পাশুপাত অস্ত্র লাভ করেন। অনুমান করা হয় পাশুপাত অস্ত্র বিষয়ে শিক্ষকদের একটা উপদধি বিশেষ "শিব", যেমন বর্তমান সময় "শঙ্করাচার্য" নামে অনেক লোকের উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার যেমন নিরুক্তকার ঋষি যাস্ক বলছেন - প্রত্যেক চার বেদ জ্ঞাতা ঋষির নামই ব্রহ্মা ।

"ব্রহ্মা সর্ববিদ্যঃ সর্ব বেদিতুমর্হতি ।
ব্রহ্মা পরিবৃল্হঃ শ্রুততো ব্রহ্মা পরিবৃহল্হং সর্বতঃ।।"
নিরুক্ত ১/৮
অর্থাৎ "ব্রহ্মা তিঁনি , যিঁনি সর্ববিদ্যার জ্ঞাতা , সব কিছু জানার যোগ্য এবং যিনি ত্রয়ী বিদ্যা জানেন ।"

শিবরাত্রি কি
ভগবান যোগীরাজ শিব

কামুক তান্ত্রিকদল, যোগীপুরুষকে ধুতুরা ভাং-সেবী মত্ত বলে চিত্রিত করেছেন। কল্পনাপ্রিয় পুরণাকাররা এই যোগশ্বর শিবকে (তিব্বতের অধিবাসী) বিকৃত করে চিত্রিত করেছে; বানিয়েছে নগ্ন ভিক্ষুক। বুদ্ধের দেহান্তের পর বৌদ্ধ ভিক্ষু-ভিক্ষুনীগন এক সাথে বসবাস শুরু করেছিল,শুরু হয়ে ছিল অবাধ মেলামেশা। শক্তিশালী আচার্যের অভাবে, ব্যভিচার দেখা দিয়েছিল। এক সময় এই অনাচারের স্রোত এমন ভাবে বেড়েছিল বহু ভিক্ষু-ভিক্ষুণী বিতাড়িত হয়েছিল নালন্দ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয়ে গভীর অরণ্যে পর্ব্বতে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের মধ্য থেকেই হ'ল 'বজ্রযান' নামক বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের উৎপত্তি। এরা জিতেন্দ্রিয় না হলেও এদের মধ্যে অনেক ফন্ডিত ছিলেন ! তাঁরাই জঘন্য জৈব লালসাকে ধর্মের (রিলিজিওন) মধ্য দিয়ে চরিতার্থ করাবার জন্য, নিজেদের প্রবৃত্তি এবং ভোগের সমর্থনে অনেক রহস্যপূর্ণ শব্দজাল দিয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। চলতে লাগলো মদ্য ,মাংস মৈথুনাদি মঞ্চমকারের সাধনা; সাধনার নামে ভৈরবী চক্রে বসে নরকপালে অজস্র মদ্যপান, যোনিলিঙ্গপূজা অর্থাৎ পূজার নামে, বামাচার নিয়ে ব্যভিচারের ক্লেদাক্ত যৌনলীলা। সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর আরো বেশী করে বামমার্গী গ্রন্থরচনা করা হয়। যেহেতু যৌন প্রবৃত্তির দিকে মানুষের সহজাত প্রবণতা আছে, এজন্য ধর্ম্মাচরণের নামে এই ধবাধ ভোগলীলাকে অনেকে গ্রহণ করতে শুরু করে, তিব্বতের অধিকাংশই হয়েছিল তান্ত্রিক। পরে পরে খৃষ্ট পূর্ব প্রথম শতাব্দীর অন্তিমভাগে ঐ সব ব্যভিচারী বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের তথাকথিত ধর্ম পৌরানিক বামাচারীর সংস্পর্শে এসে নূতনরূপে রূপায়িত হয়েছিল। যোনিলিঙ্গপূজা পরিণত হ'ল "শিবলিঙ্গ ও গৌরীপট্ট" রূপে। মানুষের মনে বিশ্বাস উৎপন্ন করার জন্য শিবের নাম দিয়ে,গ্রন্থ রচনা করে, শিবের মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে। শিব-সংহিতাতে, আত্মস্থ শিবকে পরিত্যাগ করে, বাইরের কোন মূর্ত্তিতে বা লিঙ্গে পূজা করাকে, হাতের খাদ্য ফেলে দিয়ে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা চেয়ে খাওয়ার মত মূঢ়তা এবং নীচতা বলে ধিক্কৃত করা হয়েছে।

ছান্দোগ্য এবং কেনোপনিষদে রুদ্রানী, ভবানী,উমা প্রভৃতি যে নাম আছে, ঋগ্বেদের [বৈদিক সংশোধক মন্ডল সংস্করণ] ৪র্থ খন্ডে ৯৫৭।৯৫৮ পৃষ্ঠাতে ভদ্রা 'শিব' 'দূর্গা' প্রভৃতির যে উল্লেখ আছে ['সহস্র সম্মিতাং দুর্গাং জাত বেদসে সুনবাম্ সোমম্"], মুন্ডকোপনিষদে জাত বেদস্ অগ্নির, ['কালী-করালী চ মনোজবাচ, সুলোহিতা যা চ সুধুর্মবর্ণা, স্ফুলিঙ্গিনী বিশ্বরুচী চ দেবী লোলায়মানইতি সপ্তজিহ্বাঃ"]-ইত্যাদি আহুতি গ্রহণে সমর্তা দ্যুতিমতী সপ্তজিহ্বার যে বর্ণনা আছে-তাই থেকে শাক্তরা উপাদান গ্রহন করে কালী তারা দূর্গা ষোড়শী বগলামুখী ইত্যাদি এক একটা স্বতন্ত্র দেবী বানিয়ে স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র মূর্ত্তিপূজার প্রচলন করে গেছে। বেদে উপনিষদে কিন্তু ভদ্রা দূর্গা উমা শক্তি প্রভৃতি নামগুলি একই পরমাত্মা বাচক অর্থে ব্রহ্ম বিদ্যাপ্রকাশিকা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

যেমন কেনোউপনিষদে উমা, সম্প্রদায়ীদের মতানুয়ায়ী হিমালেয়ের কন্যা শিব বলে কোন পৃথক দেবতার স্ত্রী দুর্গা নামে কোন পৃথক দেবী নয় ! পরমাত্ম জ্যোতির স্বরূপ; উং বিষ্ণুং (সর্ব্বব্যাপক-ব্রহ্মচৈতন্য) পরিমাপেতি যা স উমা- এই অর্থে উমা বলা হয়েছে। তেমনি, "দেবী" বলতে পৃথক কোন ঠাকুর নয়, পরমেশ্বরের নামি দেবী। পরমেশ্বরের নাম তিনলিঙ্গেই আছে, যথা-"ব্রহ্মচিতিরী-শ্বরশ্চেতি"; যখন ঈশ্বরের বিশেষণ তখন "দেব" আর যখন চিতির বিশেষণ হ'বে তখন "দেবী"। উদাঃ যিনি সমস্ত চরাচর জগৎকে দেখেন,চিহ্নিত বা দর্শন যোগ্য করেন, যিনি সকল শোভার শোভা, যিনি বেদাদি শাস্ত্র এবং যোগিগণের পরমলক্ষ্য-সেই পরমেশ্বরের নাম "লক্ষ্মী"। কিন্তু সম্প্রদায়ীরা "লক্ষ্মী" বলতে এক প,তক পেচক বাহনা দেবীর সৃষ্টি করেছেন।

ঐ সমস্ত পুরাণ কথা সাম্প্রদায়িক প্রচার মাত্র ! যদি তুমি শিবভক্তের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস কর তারা শিবপুরাণ,রুদ্রহৃদয় উপনিষদ্, অন্যান্য বহু শৈবশাস্ত্র থেকে অবিকল ঠিক মন্ত্র যা তাঁদের মত প্রমান করায় যথেষ্ট সেই মন্ত্র(শ্লোক) quote করে, দরকার হলে ছাপার অক্ষরে বইএ দেখিয়ে প্রমাণ করে দেবে "শিব'ই একমাত্র তারকমন্ত্র বা উপাস্য পৌরানিক ঠাকুর। একজন শাক্ত কে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে সেউ একি ভাবে ভাগবত,দেবীপুরাণ, অন্নপূর্ণোপনিষদ্ আর মহু বহু বই বের করে তাঁর কথা প্রমান করবে। রামভক্ত দেরও অবস্থাও একি তাঁরা মূল বাল্মীকি রামায়ণ থেকে সব কিছু প্রমান করতে না পারলেও ভক্তির আতিশয্যে যে সমস্ত সুলভ রামায়ণ, অধ্যাত্মরামায়ণ, আনন্দ রামায়ণ, কৃত্তিবাসী রামায়ণ, রামরসায়ণ, শ্রীরামগীত গোবিন্দ, পদ্মপুরাণ, শ্রীরাম পূর্ব্বাতাপনী-উপনিষদ্- ইত্যাদি স্ব সম্প্রদায়ের স্বার্থানুকুল রচনা থেকে সমস্ত ভুল কে সত্য প্রমান করার চেষ্টা করবে। কৃষ্ণ ভক্তের দল, এরা বেশভূষায় যেন দৈন্যের প্রতিমূর্ত্তি, কিন্তু স্ব সম্প্রদায়ের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য শাস্ত্রের বিকৃত অর্থ করে 'বৈষ্ণব ধর্ম'ই যে শ্রেষ্ঠ ধর্ম(রিলিজিওন) তা প্রমাণ করার সময় কোপন স্বভাব দর্ব্বাশার worse সংস্করণ। গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতের সঙ্গে প্রাচীনতর মাধ্ব, রামানুজ-নির্বাকের অপর বেষ্ণব সম্প্রদায়গুলির সিদ্ধান্ত মেলে না বলে তাঁদেরকেই "অজ্ঞ" বলে প্রচার করে চলে। নিজেদের সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্তের অনুকুলে অন্য শাস্ত্র পায় না বলে এরা " অসারের সার জলসার" শ্রীমদ্ভাগবতকেই বেদব্যাসের রচনা বলে মিথ্যা প্রচার করেন; শ্রীমদ্ভাগবত নাকি "সর্ব্বশাস্ত্রের প্রনম্য"! 'সর্ব্বশাস্ত্রের বিমর্দ্দক"! ইত্যাদি (শ্রীজীব গোস্বামীর শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ) নিজেদের সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠার জন্য স্বকপোলকল্পিত, বেদশ্রুতি বিরুদ্ধ, নানা-রকম অর্ব্বাচীন গ্রন্থ রচনা করে,নিত্যনূতন এক একটা গোপালতাপনী উপনিষদ্, নৃসিংহতাপনী উপনিষদ্, রাধাউপনিষদ্, ললিতাসখীউপনিষদ্, নিত্যানন্দোপনিষদ্ বা চৈতন্যোপনিষদ্ নাম দিয়ে এগুলিকেই শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ বলে তাতে কষ্ণনামের ঢক্কানিনাদ কর, কিন্তু মিথ্যা কোনদিন সত্য হবে না। সত্যও কোনদিন ম্লান হবে না।

শিব রাত্রি
কুন্ডলিনী চক্র

সাধকদের সাধনা শক্তির তারতম্য অনুসারে যিনি যতখানি কাল এবং মায়ার চাতুরী এড়িয়ে অগ্রসর হতে পরেছিলেন তিনি সেই স্তরকে এবং সেই স্তরের Presiding Diety কেই চরম এবং পরমদেবতা বলে গেছেন। আর এই জন্যই যাঁরা মনিপুর চক্র পর্য্যন্ত অনুভব করেছেন তাঁরা সেখানকার অধিষ্ঠাতা দেবতা বিষ্ণুকেই চরমতত্ত্ব বলে মনে করেছেন; যাঁদের অনাহত চক্র পর্য্যন্ত গতি তাঁদের কাছে কালী তত্ত্বই চরম তত্ত্ব; যাঁদের শিবভূমি পর্য্যন্ত গতি তাঁদের কাছে শিবই সব; আর এই অনুভুতির তারতম্য অনুযায়ী, অনুভবী মহাপুরুষদের এক এক জনের অন্তর্ধ্যানের পর তাঁদের নাম নিয়ে স্বার্থপর বন্ডগণ সৌর গানপত্য বৈষ্ণব শাক্ত শৈব ইত্যাদি বিভিন্ন সম্প্রদায় রচনা করে অমৃতের বদলে দিয়েছে হলাহলের জন্ম !
সাধক যোগীদের সাধনপন্থায় হঠযোগকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সাধক যোগীদের সাধনপন্থায় হঠযোগকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। হঠপ্রদীপিকা, দত্তাত্রেয়সংহিতা, গোরক্ষসংহিতা– এই তিন গ্রন্থে যোগপ্রণালীর আসন প্রাণায়ামাদি সমুদায় অঙ্গের ও ষট্চক্র-সাধনের সবিশেষ বৃত্তান্ত বিস্তারিত বর্ণিত হলেও; হঠপ্রদীপিকা প্রভৃতি গ্রন্থে যোগীদের অলৌকিক ক্রিয়া সাধনের এমন অনেক বৃত্তান্ত রয়েছে। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মতে হঠপ্রদীপিকা গ্রন্থ টি সঠিক নয়। 
দত্তাত্রেয়সংহিতায় যোগের অষ্ট অঙ্গ সম্পর্কে বলা হয়েছে–

যমশ্চ নিয়মশ্চৈব আসনঞ্চ ততঃ পরম্ ।
প্রাণায়ামশ্চতুর্থঃ স্যাত্ প্রত্যাহারশ্চ পঞ্চমঃ।।
ষষ্ঠী তু ধারণা প্রোক্তা ধ্যানং সপ্তমমূচ্যতে।
সমাধিরষ্টমঃ প্রোক্তঃ সর্বপুণ্যফলপ্রদঃ।।- (দত্তাত্রেয়সংহিতা)
অর্থাৎ : যম প্রথম, নিয়ম দ্বিতীয়, তৎপরে আসন তৃতীয়, প্রাণায়াম চতুর্থ, প্রত্যাহার পঞ্চম, ধারণা ষষ্ঠ, ধ্যান সপ্তম, এবং সমস্ত পুণ্য-ফল-দায়ক সমাধি অষ্টম অঙ্গ।

        তবে গোরক্ষসংহিতা’য় হঠপ্রদীপিকা ও দত্তাত্রেয়সংহিতার প্রণালীক্রমে আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি এই ছয় যোগাঙ্গ নির্দেশিত হলেও যম ও নিয়ম এই দু’টি অঙ্গের প্রসঙ্গ নেই। যেমন–

আসনং প্রাণসংরোধঃ প্রত্যাহারশ্চ ধারণা।
ধ্যানং সমাধিরেতানি যোগাঙ্গানি বদন্তি ষট্ ।।- (গোরক্ষসংহিতা)
অর্থাৎ : আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি– এই ছয়টি বিষয় যোগের অঙ্গ বলিয়া উল্লিখিত হয়।

        গোরক্ষসংহিতায় যম ও নিয়মের বিষয়টি উল্লিখিত না হলেও হঠপ্রদীপিকার প্রথম উপদেশে কিন্তু যম ও নিয়মের সবিস্তার বর্ণনা রয়েছে। বলা হয়েছে–

অহিংসা সত্ত্যমস্তেয়ং ব্রহ্মচর্য্যং কৃপার্জবম্ ।
ক্ষমাধৃতির্ম্মিতাহারঃ শৌচং চেতি যমা দশ।।
তপঃ সন্তোষ আস্তিকাং দানং দেবস্য পূজনম্ ।
সিদ্ধান্তশ্রবণঞ্চৈব হ্রী মতিশ্চ জপোহুতম্ ।।
দশৈতে নিয়মাঃ প্রোক্তা যোগশাস্ত্রবিশারদৈঃ।। (হঠপ্রদীপিকা প্রথম উপদেশ)
অর্থাৎ : যোগশাস্ত্র বিশারদদের মতে অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য, কৃপা, ক্ষমা, ধৃতি, সারল্য, পরিমিত আহার, শৌচাচার এই দশের নাম যম। তপস্যা, সন্তোষ, আস্তিকতা, দান, দেব-পূজা, সিদ্ধান্ত শ্রবণ, লজ্জা, মতি, জপ, হোম, এই দশের নাম নিয়ম।

 

         কেবল পরিমিত আহার নয়, ভোজন বিষয়েও যোগীদের এমন কিছু কঠোর নিয়ম পালন করবার ব্যবস্থা রয়েছে যে তাতে করে তান্ত্রিক পঞ্চতত্ত্বের সাধনগামিতা থেকে এই যোগীদের সাধনপন্থার ভিন্নতা খুব সহজেই পরিলক্ষিত হয়। এই যোগীরা বস্তুত নাথ-যোগী বা অবধূত-যোগী। কারণ হঠপ্রদীপিকার বিধানানুসারে অম্ল, লবণ, কটু, তিক্ত– এই চার প্রকার রস এবং মৎস্য, মাংস, মদ্য প্রভৃতি তাদের অভক্ষ্য ঘোষণা করে বলা হয়েছে–

কটুম্লতিক্তলবণোষ্ণহরীত শাক-
সৌবীরতৈলতিলসর্ষপমত্সামদ্যম্ ।।
অজাদিমাংসদধিতক্রকুলন্থকোল-
পিন্যাকহিঙ্গুলসুনাদ্যমপথ্যমাহুঃ।।- (হঠপ্রদীপিকা)
অর্থাৎ : কটু, অম্ল, তিক্ত, লবণ, উষ্ণ দ্রব্য, হরীত শাক, বদরী ফল, তৈল, তিল, সর্ষপ, মৎস, মদ্য, ছাগলাদির মাংস, দধি, তক্র, কুলন্থ, কলায়, বরাহ মাংস, পিন্যাক, হিঙ্গু, লসুনাদি দ্রব্য যোগীদিগের অপথ্য।

গোধূমশালিয়বযষ্টিশভৌনান্নং
ক্ষীরাদ্যখণ্ডনবনীতসিতামধূনি।
শুঠোকপোলকফলাদিকপঞ্চশাকং
মুদ্গাদিদিব্যমূদকঞ্চ যমীন্দ্রপথ্যম্ ।।- (হঠপ্রদীপিকা)
অর্থাৎ : গোধূম, শালিধান্য, যব, যষ্টিক ধান্যরূপ সুচারু অন্ন, ক্ষীর, অখণ্ড নবনীত, চিনি মধু, শুণ্ঠী, কপোলক ফল, পঞ্চশাক, মুদ্গ প্রভৃতি এবং উত্তম জল এই সকল সামগ্রী যোগীর পথ্য।



 

1 comment:

  1. osadharon mitthacar korashan. nijar mone ja asacha tai lekha hoyasha

    ReplyDelete

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

জাতিবাদ ও ভগবান মনু

  সম্পাদকীয় বর্তমান সময়ে দেশ অনেক গম্ভীর সমস্যায় গ্রস্ত আছে, তারমধ্যে একটা হল - জাতিবাদ। এই জাতিবাদের কারণে আমাদের দেশের অনেক বড় হানি হ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ