লোকনাথ ঘোষাল (লোকনাথ বাবা)কচুয়া, বঙ্গদেশে ১১৩৭ সালের ফাল্গুন মাসে জন্ম, মাতা কমলা দেবী। তিনি ছিলেন তার বাবা-মায়ের ৪র্থ পুত্র। বাবা রামকানাই, ভগবান গাঙ্গুলী নাম রাখেন লোকনাথ, তাঁর জীবনী অনুসারে ভগবান গাঙ্গুলী বেদঙ্গ পন্ডিত। ছোট বেলা থেকেই ওনার পিতার মত লোকনাথ ঘোষালও শিব লিঙ্গের উপাসক ছিলেন ।গৃহত্যাগ করে কালীঘাটে গুরু ও বন্ধু বেনীমাধবের সাথে আসেন ১১ বছর বয়সে। গুরু তাদের নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচারী করার জন্য তাঁদের নক্তব্রত, একান্তরা, ত্রিরাত্র, পঞ্চাহ, নবরাত্র, দ্বাদশাহ ও মাসাহ ব্রত পালন করিয়েছিলেন। নক্তব্রতে দিনের বেলায় উপোস থেকে রাতে বহ্মচর্যের উপযোগী খাদ্য গ্রহন করতে হয়। একান্তরা ব্রতে অহোরাত্র উপোস থেকে পরের দিন খাদ্য গ্রহন করতে হয়। ত্রিরাত্র ব্রতে তিন অহোরাত্র উপোস পরের দিন খাদ্যগ্রহণ। পঞ্চাহ ব্রতে পাঁচদিন এবং নবরাত্র ব্রতে নয় অহোরাত্র উপোস তাকার পর খাদ্যগ্রহণ। দ্বাদশাহ দিন আর মাসাহ ব্রতে একমাস উপবাস থেকে তারপর খাদ্যগ্রহন করতে হয়। ৪০ বছর লোকনাথ ও বেনীমাধব ব্রহ্মচর্যাদি বহিরঙ্গ সাধনের অভ্যাস দ্বারা যোগের অন্তরঙ্গসাধন অর্থাৎ ধারণা,ধ্যান ও সমাধির উপযুক্ত হয়েছিলেন। পরে সাধনতীর্থ হিমালয়ে ধারণা,ধ্যানাদি দ্বারা ভগবদ্দর্শন ও ব্রহ্মপদ লাভের জন্য যাত্রা করেন। আমার মতে লোকনাথের গোলমাল হয়েছিল সাধনার অন্তকালে কারন ভগবান গাঙ্গুলী আত্মাকে ওঙ্কাররুপে ধ্যান করতে শিখিয়ে ছিলেন। সত্ত্বপ্রধান ও মায়াবচ্ছিন্ন হয়ে "ওঙ্কারবাচ্য ব্রহ্মই আমি" এই ভাবে ধ্যানের পরামর্শ দিতেন। তাঁর যুক্তি ব্রহ্মসূত্রে আছে, ওঙ্কার সহায়ে ব্রহ্মধ্যান করলে ক্রমমুক্তি হয় এবং ব্রহ্মলোক প্রাপ্তিদ্বারা বিদেহমুক্তি লাভ করা যায়। মন্ডুক উপনিষদের বর্ণনাতে ওতম্ই ধনু আর জীবাত্মা শর। ব্রহ্ম ঐ শরের লক্ষ্য। প্রমাদশূন্য অর্থাৎ মায়া বিবর্জিত হয়ে ঐ লক্ষ্যভেদ করতে হয়, তারপর ব্রহ্মরূপ লক্ষের সঙ্গে অভিন্ন হতে হয়। কিন্তু তা সম্পূর্ণ হয়নি। অষ্ট সিদ্ধির মধ্যে দেহকে অতিমাত্রায় সূক্ষ্ম করার নাম অনিমা সিদ্ধি। দেহকে বৃহৎ করার নাম মহিমা সিদ্ধি আর দেহকে খুব বেশী লঘু করার নাম লঘিমা সিদ্ধি। সমস্ত প্রাণীদের ইন্দ্রিয়শক্তির সঙ্গে নিজের ইন্দ্রিয়শক্তির সম্বন্ধ স্থাপন করার নাম প্রাপ্তিসিদ্ধি। ঐহিক ও পারত্রিক সকল তত্ত্ব অবগত হওয়ার নাম প্রাকাম্য সিদ্ধি। ঈশ্বরের শক্তিদ্বারা সৃষ্টি তত্ত্ব জানার নাম ঈশিতা সিদ্ধি। সত্ত্বাদি গুণযুক্ত সকল প্রকার বিষয় ভোগকে বশীভূত করে স্বাধীন থাকার নাম বশিতা সিদ্ধি। ইচ্ছানুসারে সকল সুখ ও কামনা পূরণ করার নামই হলো অষ্টমী সিদ্ধি কামবসায়িত্ব যা লোকনাথ বাবাকে তাঁর গুরু শিক্ষা দিয়েছিলেন। ধারণা অবস্থায় ঈশ্বরকে ভাবনা করতে করতে যোগী ভক্তের এই আট প্রকার স্বাভাবিক সিদ্ধি হয়।
আধ্যাত্মিক জীবনঃ
দীক্ষাগুরু হিসেবে ভগবান চন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় কয়েক বছর দেশে বাস করে লোকনাথ ও বেণীমাধব বন্দ্যোপাধ্যায় নামীয় শিষ্যদ্বয়কে সাথে নিয়ে কালীঘাটে আসেন ।
ঐ সময়ে কালীঘাট বর্তমানের ন্যায় দালান-কোঠায় নয়, ঘন জঙ্গলে পূর্ণ ছিল ।
জঙ্গলে বসে অনেক সাধু-সন্ন্যাসী নিজ নিজ অভীষ্ট কাজ করতেন ।
লোকনাথের গুরুজীও তাদেরকে ঐ কাজে নিযুক্ত করলেন ।
এভাবে চলল প্রথমে সারা দিন উপবাস ।
পরে সারাদিন সারারাত উপবাস ।
এই উপবাসকে বলে “একান্তর” । এরপর তিনদিন তিনরাত উপবাস ।
একে বলে “ত্রিরাত্র” । .........। এভাবে শেষে টানা ৩০ দিন ৩০ রাত উপবাস ।
এটাকে বলা হয় “মাসাহ’ ব্রত ।
এরপর এরপর গুরুদেব তাদের গাঁয়ে চিনি ছিটিয়ে পিপড়া ডেকে এনে পরীক্ষা করেন, তাদের ধ্যান ভঙ্গ হয় কিনা ।
এই পরীক্ষায় তারা সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ।
পরে ভগবান চন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় তাদেরকে নিয়ে বারাণসীতে গমন করে যোগাবলম্বনে দেহত্যাগ করার পূর্বে ত্রৈলিঙ্গস্বামীর হাতে ভার দিয়ে যান ।
সেখানে স্বামীজীর সাথে তারা কিছুকাল যোগশিক্ষা করে ভ্রমণে বের হন ।
লোকনাথ বাবা পশ্চিম দিকে দিয়ে আফগানিস্তান, মক্কা, মদিনা ইত্যাদি স্থান অতিক্রম করে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত গমন করেছিলেন। মক্কাদেশীয় মুসলিম জনগোষ্ঠী তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। সেখানে আবদুল গফুর নামে এক মহাপুরুষের সাথে পরিচিত হন। পরে তিনি বেণীমাধবকে সাথে নিয়ে উত্তরের পথে গমন করেন। তারা সুমেরু এলাকা গমনের ইচ্ছায় প্রাক-প্রস্তুতি উপলক্ষে শৈত্যপ্রধান এলাকা হিসেবে বদরিকা আশ্রমে অবস্থান করে সেখান থেকে আধুনিক পরিজ্ঞাত সীমা অতিক্রম করে উত্তরে বহুদূরে চলে যান। সেখানে সূর্যোদয় না হওয়ায় সময় নির্ণয় করা যায় নাই; তবে তারা সে পথে ২০ বার বরফ পড়তে ও গলতে দেখেছিলেন। শেষে হিমালয় শৃঙ্গে বাঁধা পেয়ে তারা পূর্ব দিকে গমন করে চীন দেশে উপস্থিত হন এবং ৩ মাস বন্দী থেকে মুক্তিলাভ করেন। তারপর উভয়ে চন্দ্রনাথে আগমন করে কিছুকাল থেকে বেণীমাধব কামাখ্যায় এবং লোকনাথ বারদী গ্রামে গমন করে বাস করতে থাকে। সে সময় থেকেই “বারদী’র ব্রহ্মচারী” হিসেবে লোকনাথ পরিচিতি পান।
শ্রী শ্রী বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আধ্যাত্মিক শক্তি সম্বন্ধে অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত আছে । কেউ কেউ বলেন, তিনি জাতিস্মর; দেহ হতে বহির্গত হতে এবং অন্যের মনের ভাব অবলীলায় তিনি জানতে পারতেন । এছাড়াও, অন্যের রোগ নিজ দেহে এনে রোগীকে রোগমুক্ত করতে পারতেন । মানুষের অন্তরের ভাষা তিনি জানতেন । বুজতেন পশু-পাখি ও কীট-পতঙ্গের ভাষা । একশত ষাট বছরের মধ্যে বেশির সময় কাটিয়েছেন ধ্যান এবং যোগসাধনায় । হিমালয়ের নির্জন পাহারের গুহায়, গভীর অরণ্যে, পরিত্যক্ত পর্ণকুটিরে তাঁর এই সাধনা চলেছিলো বহুকাল । বাংলা ১২৭০ সনে বা তার কিছু আগে পরে বারদী গ্রামে এসেছিলেন তাঁর সাধনা শেষান্তে।
১৬০ বছর বয়সে লোকনাথ ব্রহ্মচারী দেহত্যাগ করেন। ২ জুন ১৮৯০ (বয়স ১৬০) বারদি, ঢাকা, বঙ্গদেশ, ব্রিটিশ ভারত। আচার্য গাঙ্গুলীর সাথে তিনি কাবুলে পারসিক কবি মোল্লা সাদীর বাড়িতে গিয়ে এক বছর ধরে কোরাণ শিক্ষা করেন। লোকনাথ মক্কার মুসলমান ফকির গফুরকে ব্রাহ্মণ বলে ধারনা করেছিলেন।
লোকনাথ এক সময় মহাযোগী হিতলালের আশ্রম থেকে যোগসাধনা শিখতে লাগলেন সাথে বেণীমাধবও ছিলেন। তারা অপূর্ব যোগসামর্থ্য অর্জন করলেন। দীর্ঘ যোগ সাধনার পর লোকনাথের উপর বর্ষিত হলো নানান ঐশ্বরিক করুনার ধারা, তিনি নিজেকে ব্রহ্মজ্ঞ মহাপুরুষ রূপে জানতে পারলেন। এর পর লোকনাথ ব্রহ্মচারী একাই আরব দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। অর্থাৎ তার জীবনী অনুযায়ী বলা যায় যে লোকনাথ যখন আরবের পথে যাত্রা শুরু করলেন তখন লোকনাথ একজন যোগী। লোকনাথ প্রথমে মুসলিমদের পবিত্রস্থান ও প্রধান তীর্থক্ষেত্রে হজরত মুহাম্মাদের জন্মস্থান মক্কা নগরে। যেখানে আব্দুল গফুরের সাথে সাক্ষাৎ হলো। লোকনাথ কে মক্কার মুসলিমরা খুবই আদর যত্ন করলো। তারা লোকনাথ কে রান্নার সামগ্রী দিয়ে বললেন তিনি যেন রান্না করেন। তাদের এই কথন শুনে লোকনাথ বললেন-তোমাদের হাতের রান্না খেতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এই কথা শুনে আব্দুল গফুর বললেন এই লোকনাথ এইজন খাঁটি মুসলমান। তোমারা হিন্দুদের বিধর্মী বলে, কাফের বলে ভুল করো। লোকনাথ বললেন আমি এত পাহাড় পর্বত ভ্রমণ করেছি কিন্তু তিনজন ছাড়া ব্রাহ্মণ দেখিনি। লোকনাথ আব্দুল গফুর কে ব্রাহ্মণ হিসেবে মেনেছেন। লোকনাথ আরও বলেছেন ষোলো আনা ধর্ম যার মধ্যে আছে তিনিই মুসলমান, আমি লক্ষ্য করেছি প্রকৃত মুসলমানের মধ্যেও ব্রাহ্মণ অর্থাৎ মহাপুরুষ আছে। আব্দুল গফুর একজন ব্রহ্মজ্ঞ মহাপুরুষ।
[গ্রন্থের নাম=পরমপুরুষ শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী। লেখক- সুধাংশুরঞ্জন ঘোষ। প্রকাশক-রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস, পূর্ণ প্রকাশন ৮এ, টেমার লেন, কলকাতা- ৭০০ ০০৯]
যে লোকনাথ কে হিন্দু সমাজ একজন মহান যোগী হিসেবে জানে সেই ব্যক্তি বলছে যে একজন খাঁটি মুসলিমও ব্রাহ্মণ অর্থাৎ বলা যায় যে কুরআন পড়েও ব্রাহ্মণ হওয়া যায়! যে কুরআন বলে -আল্লাহ সাক্ষী দিয়েছেন আল্লাহ ছাড়া উপাস্য কেউ নেই (কুরআন,সূরা -৩ আল ইমরান/ ১৮, ৬২)। আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হল ইসলাম। ( সূরা-৩ আল ইমরান /১৯)। যারা কুরআনের আয়াত মানেনা, অর্থাৎ যারা কুরআনে বিশ্বাসী নয় বা কুরআন মানেনা তারা কাফের। (সূরা -৫ মাহিদাহ /৪৪)। কেবল কাফেররা কুরআনের আয়াত বিশ্বাস করে না (সূরা- ২৯ আনকাবুত/৪৭)। তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহকে ধীরস্থির করে রাখ। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গ*র্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়। (সূরা- ৮ আনফাল/১২) যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গ*র্দার মার, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল (সূরা-৪৭ মুহাম্মাদ/৪)। যারা এগুলোকে মেনে চলেন তারাই খাঁটি মুসলমান হতে পারা যায়। যে আল্লাহ মুসলিমদের এই শিক্ষা দেয়, যে কুরআন এই শিক্ষা দেয়। লোকনাথের মতে সেই কুরআন কে গ্রহণকারী মুসলিম হলো ব্রাহ্মণ! কোন প্রকারের মূর্খ হলে এমন বলা যায় আমার জানা নেই। লোকনাথ কে যোগী বলা মানে ঈশ্বর কে কলঙ্ক্ষিত করা ছাড়া কিছুই নয়, একজন যোগী ঈশ্বরের পরম ভক্ত হন, যোগী যেকোনো বিষয় যোগের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে জানতে পারেন। কিন্তু যে লোকনাথ কে যোগী বলা হচ্ছে সে এটাও জানে না যে ইসলাম একটা মি*থ্যা মতবাদ! লোকনাথ খাঁটি মুসলিমকে ব্রাহ্মণ বলেছেন অবশ্যই কিন্তু লোকনাথ আজীবনে কোথাও ইসলামের বিরোধিতা করেনি। অবশ্য যে লোকনাথ কুরআন পড়া মোল্লা আব্দুল গফুর কে ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ বলছে, সে ব্যক্তির কাছে ইসলামের বিরোধিতা আশা করা যায়না। অনেকেই বলতে পারে যে লোকনাথ মক্কায় গেলো কি করে সেখানে তো অমুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ। এই প্রশ্নের উত্তর এই যে লোকনাথ মক্কায় প্রবেশ করার সময় নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করতেই পারে, কাজেই তাকে মক্কায় প্রবেশ করে দেওয়া হয়েছিল এবং আব্দুল গফুর যখন লোকনাথ কে মুসলিম বলেছিল, তখন তার কথার কোনো বিরোধিতা করেননি লোকনাথ উল্টে লোকনাথই আব্দুল গফুরকে ব্রাহ্মণ বলেছিল, ব্রহ্মজ্ঞ বলেছিল। আমাদের কোনো হিন্দু মেয়েরা লাভ জিহাদের ফাঁদে পড়লে আমরা চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেই, সেই মেয়েকে গালি দিতে শুরু করি। কিন্তু আমারা ভেবে দেখেনা যে লোকনাথ কে ভগবানের আসনে বসিয়ে পূজা করে থাকে হিন্দু সমাজ তিনিই বলছে প্ৰকৃত মুসলিম আর ব্রাহ্মণ একই! পরোক্ষ ভাবে দেখতে গেলে হিন্দু মেয়েদের লাভ জিহাদের ফাঁদে পড়ার পেছনে রামকৃষ্ণ, লোকনাথের মতন ব্যক্তির দারুণ ভূমিকা রয়েছে। আর এই সমস্ত দালাল লোক গুলো যতদিন হিন্দু সমাজে পূজিত হবে ততদিন হিন্দুদের ঘরে ইসলাম প্রেমী সেকুলার সন্তান তৈরি হবেই হবে।
ভগবান গাঙ্গুলী আংশিক পৌরাণিক ছিলেন কারন তিনি পৌরাণিক গল্প গুলি কে সত্য বলে মনে করতেন। কাশীধামের মাহাত্য শোনানোর সময় তিনি লোকনাথ জি কে প্রলয় কালে সমস্ত জগৎ জলপ্লাবিত হয়, সে সময় দেবাদিদেব মহাদেব ত্রিশূলের উপর কাশীধাম অবস্থিত ছিল ইত্যাদি গল্প বলেছিলেন লোকনাথের জীবনী থেকে জানা যায়। ভক্তদের বিশ্বাস অনুসারে ১৬০ বছর বেঁচেছিলেন তিনি! ভক্তরা চিরকালই একটু বাড়িয়ে বলে। ১৬০ বছর আজ অবধি পৃথিবীর ইতিহাসে কেউ বাঁচেনি। সর্বাপেক্ষা দীর্ঘজীবি ব্যক্তিরই মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিলো 122 বছর 164 দিন। ফ্রান্সের নাগরিক ছিলেন তিনি। নামটা Jeanne Calment (1875-1997) । কিন্তু সেটা তর্কের বিষয় নয়। ধরে নিলাম লোকনাথ ১৬০ বছর না বাঁচলেও হয়তো দীর্ঘজীবি ছিলেন, হয়তো ৯০/১০০ বছর বেঁচেছিলেন, ভক্তির আতিশয্যে সেটাকেই ভক্তরা ১৬০ বানিয়ে দিয়েছে। বেশ ঠিক আছে। তাও নাহয় মানা গেলো। কিন্তু ইনার অস্তিত্বের কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় নি যা কিছু তথ্য এসেছে তাও বিতর্কিত। অর্থাৎ ভক্তদের দেওয়া সময়কাল অনুসারে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের একদম শুরুর দিক থেকে মাঝের দিকের লোক তিনি। বাবা লোকনাথের কিছু হাস্যকর বাণী -
১। রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়বি, আমাকে স্মরণ করবি, আমিই রক্ষা করবো।
২। আমার বিনাশ নেই, শ্রাদ্ধও নেই, আমি নিত্য পদার্থ। অর্থাৎ এই ‘আমি’ হলাম গীতায় বর্ণিত ‘পরমাত্মা’
৩। দেখ-অর্থ উপার্জন করা , তা রক্ষা করা, আর তা ব্যয় করবার সময় বিষয় দু:খ ভোগ করতে হয়। অর্থ সকল অবস্থাতেই মানুষকে কষ্ট দেয়। তাই অর্থ ব্যয় হলে বা চুরি হলে তার জন্যে চিন্তা করে কোন লাভই হয় না।
৪। সিদ্ধি(গাজা) স্বয়ং প্রভু শিবের আহার তবে আমার বারণ কিসের? তোদেরই বা কেন?
৫। গরজ করিব, কিন্তু আহাম্মক (নির্বোধ) হবি না। ক্রোধ করিব কিন্তু ক্রোধান্ধ হবি না।
৬| "আমার চরণ ধরিস না, আচরণ ধর।"
[তথ্যসূত্র: বারদী আশ্রম এবং ধর্মসংক্রান্ত গ্রন্থ]
ইনার কথায় ইনি হলেন স্বয়ং ঈশ্বর- " আমার বিনাশ নেই, শ্রাদ্ধও নেই, আমি নিত্য পদার্থ। অর্থাৎ এই ‘আমি’ হলাম গীতায় বর্ণিত ‘পরমাত্মা’"।
এখন,লোকনাথ বাবার ভক্তদের কাছে কিছু প্রশ্ন:-
১|১৭৬৮ সনে আদায়কৃত রাজস্ব দেড় কোটি রুপির চেয়ে ১৭৭১ সনের আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ ৫,২২,০০০ রুপি বেশি ছিল, অথচ এর আগের বছরেই ঘটে যায় দুর্ভিক্ষ। এভাবে, কোম্পানি শাসনের সহযোগিতায়, খাদ্যশস্যের বাজার থেকে মুনাফা লুট এবং অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার কারণে জনমানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। পরিণতিতে মারাত্মক দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকাগুলি হয়ে পড়ে জনশূন্য।ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময়(১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ) জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, প্রায় ১০ মিলিয়ন(১ কোটি) মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যায়।কৃষি উৎপাদন আর রাজস্ব আদায় অনুরূপহারে কমে যায়। দেশে দেখা দেয় চরম বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ। কয়েক লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যান।
Reference:
Jonsson, Fredrik Albritton (২০১৩-০৬-১৮)। Enlightenment’s Frontier: The Scottish Highlands and the Origins of Environmentalism (ইংরেজি ভাষায়)। Yale University Press।
Sen, Amartya (১৯৮২)। Poverty and Famines: An Essay on Entitlement and Deprivation (ইংরেজি ভাষায়)।
বাবা লোকনাথ তখন কোথায় ছিলেন?
২|ব্রিটিশরা যখন বাংলায় অবৈধভাবে ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম করেছিল,তখন লোকনাথ ব্রহ্মচারী কোথায় ছিলেন?
Reference: “Books associated with Trading Places – the East India Company and Asia 1600–1834, an Exhibition.”
৩|চালিশা দুর্ভিক্ষ সংঘটিত হয় ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে। এটি সমগ্র উত্তর ভারত অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসাধন করে। ফলে প্রায় ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।লোকনাথ বাবা তখন মানুষকে সাহায্য করেননি কেন?
৪|সপ্তদশ শতাব্দীর ক্রান্তিলগ্নে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র রাজপুতানার ২,৯৬০০০ বর্গমাইল জুড়ে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।সমগ্র আজমীর, দক্ষিণ আগ্রা এবং পূর্ব পাঞ্জাবের প্রায় ৪৪,৫০০,০০০ জনগণ এ
দুর্ভিক্ষের আওতায় পড়ে।
মূলত বর্ষাকাল দেরিতে আরম্ভ হওয়া এবং গবাদিপশুর খাদ্যের অভাবে এ বিপর্যয়টি দেখা দেয় l এর ফলে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ১৫ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে সচরাচর সময়ের তুলনায় অত্যন্ত দেরিতে বর্ষার আগমন ঘটে এবং এটি স্বল্পস্থায়ী হয়।
ফলে সমগ্র রাজপুতানাজুড়ে পানীয়জল এবং তৃণভূমির সংকট দেখা দেয়। আর আরেকদিকে দেখা দেয় কলেরার প্রাদুর্ভাব। ফলে দুর্ভিক্ষের সূচনা ঘটে।বাবা লোকনাথ তখন অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে সাহায্য করেননি কেন?
৫| 1837-1838 সালে আগ্রা দুর্ভিক্ষের সময় প্রায় 800000 মানুষ মারা যায় । ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী লোকনাথ ব্রহ্মচারী তখন কোথায় ছিলেন?
৬| ১৮১৭ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ অবধি কলেরা-অতিমারিতে ভারতে প্রাণ হারিয়েছেন দেড় কোটির বেশি মানুষ। ১৮৬৫ থেকে ১৯১৭ অবধি এই পরিসংখ্যান ছিল দু’কোটি ৩০ লক্ষ।সেসময় লোকনাথ বাবা কোথায় ছিলেন?
৭|আঠারো শতকের শেষের দিকে (১৭৬০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল।তখন লোকনাথ বাবা মানুষকে সাহায্য করেননি?
৮|সিপাহি বিদ্রোহ বা সৈনিক বিদ্রোহ ১৮৫৭ সালের ১০ মে মিরাট শহরে শুরু হওয়া ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর সিপাহিদের একটি বিদ্রোহ। ক্রমশ এই বিদ্রোহ গোটা উত্তর ও মধ্য ভারতে (অধুনা উত্তরপ্রদেশ, বিহার, উত্তর মধ্যপ্রদেশ ও দিল্লি অঞ্চল ) ছড়িয়ে পড়েছিল।ব্রিটিশরা বিদ্রোহীদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।তখন লোকনাথ বাবা দেশপ্রেমিক সৈন্যদের পাশে ছিলেন না কেন?
৯|সাঁওতাল বিদ্রোহ বা সান্তাল হুল এর সূচনা হয় ১৮৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুর জেলায়। ইংরেজ আমলে স্থানীয় জমিদার, মহাজন ও ইংরেজ কর্মচারীদের অন্যায় অত্যাচারের শিকার হয়ে সাঁওতালরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে।এটি ছিল তাদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র গণসংগ্রাম। তাদের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় সিধু, কানু, চাঁদ,ভৈরব প্রমুখ। কারণ,১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশের প্রবর্তিত চিরস্থায়ি বন্দোবস্তের ফলে তাদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছিল। তাই সিপাহী বিদ্রোহের আগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা সোচ্চার হয়েছিল।তখন লোকনাথ বাবা কোথায় ছিলেন?
১০|১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে পুণের কাছে কারদে গ্রামে ও পরে বােম্বাই প্রেসিডেন্সিতে মাড়োয়ারি ও গুজরাটি মহাজনদের (সাহুকার ও বানিয়া সম্প্রদায়) বিরুদ্ধে এক ব্যাপক কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়। এই বিদ্রোহের গুরুত্ব হ্রাস করার জন্য ব্রিটিশ সরকার এর নাম দেন Deccan Riot বা দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা। এই বিদ্রোহ ইংরেজ সরকার ও অত্যাচারী মহাজনদের ভীত ও সন্ত্রস্ত করে তােলে। এই বিদ্রোহের নানা কারণ ছিল।লোকনাথ সেসময় কৃষকদের পক্ষে ছিলেন না কেন?
১১|নীল বিদ্রোহ ১৮৫৯ সন থেকে শুরু হয়েছিল।লোকনাথ বাবা তখন ছিলেন কোথায়?
১২|ভারতে ১৮১৫ থেকে ১৮২৮ সালের মধ্যে ৮১৩৫ নারীকে সতীদাহের নামে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় (প্রতিবছর হত্যা করা হয় গড়পরতা ৫০৭ থেকে ৫৬৭ জনকে)।
লোকনাথ বাবা তখন কোথায় ছিলেন?
১৩|১৭৯১-১৭৯২ সনে দোজি বড় দুর্ভিক্ষ বা মাথার খুলি দুর্ভিক্ষের সময় লোকনাথ বাবা কোথায় ছিলেন?
১৪|১৮৬০-১৮৬১ সালের আপার দোয়াবের দুর্ভিক্ষের সময় লোকনাথ বাবা কোথায় ছিলেন?
১৫| ১৮৭৩-১৮৭৪ সালে
বিহার দুর্ভিক্ষের সময় লোকনাথ বাবা কোথায় ছিলেন?
১৬| ১৮৬৬ সালের উড়িষ্যা দুর্ভিক্ষের সময় লোকনাথ বাবা ছিলেন?
১৭|১৮৭৬-১৮৭৮ সালে দুর্দান্ত দুর্ভিক্ষের সময় লোকনাথ বাবা কেন ঐশ্বরিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে মানুষকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসেন নি?
শুধু সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই নয় কিংবা দুর্ভিক্ষের সময় অলৌকিক ক্ষমতার প্রয়োগ করে মানুষের পাশে দাঁড়ানো নয় বরং তৎকালীন ভারতে যে সমস্ত কুপ্রথাগুলি ছিলো, যেমন বাল্যবিবাহ প্রথা, বহুবিবাহ প্রথা, মহিলাদের শিক্ষার সুযোগ না থাকা, শূদ্রদের গ্রামের কুয়ো থেকে জল নিতে না দেওয়া, ইত্যাদির বিরুদ্ধেও কেন তিনি সোচ্চার হন নি? কিসের ভয়ে বা কিসের লোভে মুখ লুকিয়ে বসেছিলেন বরং যুব সমাজকে নেশার আসক্তিতে নিমজ্জিত রাখতে চেয়েছিলেন এই মূর্খ বর্বর লোকনাথ তার কথায় - "সিদ্ধি(গাজা) স্বয়ং প্রভু শিবের আহার তবে আমার বারণ কিসের? তোদেরই বা কেন?"
ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই ভন্ডের প্রচার প্রসার সেরকম প্রসার লাভ না করলেও ইনি একবিংশ শতাব্দীতে অন্ধবিশ্বাসী মানুষের কাছে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে।অন্ধ ভক্তের মতো না ভেবে নিজের যুক্তি দিয়ে বিচার করুন যে লোক তার জীবদ্দশায় চোখের সামনে অত্যাচারিত মানুষকে রক্ষা করতে পারেনি সে মরণোত্তরকালে কী করে সাধারণ মানুষকে রনে বনে জলে জঙ্গলে রক্ষা করবে? তাই সময় এসেছে এই ভন্ডের ভন্ডামো উন্মোচন করার।যদি কারোর বাড়িতে ইনার পুজো হয়ে থাকে তাহলে সে সব থেকে বিরত থাকুন সত্য প্রচার করুন (তিনি নিজে বলে গেছেন তাঁর মূর্ত্তি বানিয়ে অথবা ফটো রেখে পূজো না করতে) ।আর ভন্ডদের ভন্ডামি উন্মোচন করুন।
শিবকল্প মহাযোগী বাবা লোকনাথ অনলাইনে পড়ুন
লোকনাথের বাণী:
“রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে, আমাকে স্মরণ করো আমিই রক্ষা করব । “
“আমার বিনাশ নেই, শ্রাদ্ধও নেই, আমি নিত্য পদার্থ ।“ অর্থাৎ তিনি হলেন গিতায় বর্ণিত পরমাত্মা ।
“সদগুরুই হচ্ছে স্বয়ং ভগবান, ভগবান ভিন্ন কেহ সদগুরু হতে পারে না ।“
নিজেকে বড় না করে তাকে বড় কর । নিজে কর্তা না সেজে তাকে কর্তা জ্ঞান করার চেষ্টা কর । তবেই ত্যাগ আসবে ।“
“আমার বিনাশ নেই, শ্রাদ্ধও নেই, আমি নিত্য পদার্থ ।“ অর্থাৎ তিনি হলেন গিতায় বর্ণিত পরমাত্মা ।
“সদগুরুই হচ্ছে স্বয়ং ভগবান, ভগবান ভিন্ন কেহ সদগুরু হতে পারে না ।“
নিজেকে বড় না করে তাকে বড় কর । নিজে কর্তা না সেজে তাকে কর্তা জ্ঞান করার চেষ্টা কর । তবেই ত্যাগ আসবে ।“
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ