.
এই বিষয়ে পবিত্র বেদের দুইটি মন্ত্র দেখে নিই,
.
ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্।
ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।
------------------------------------------------(অথর্ববেদ ১৮/৩/১)
পদার্থঃ (মর্ত্য) হে মনুষ্য! (ইয়ং নারী) এই স্ত্রী (পতিলোকম্) পতিলোককে অর্থাৎ বৈবাহিক অবস্থাকে (বৃণানা) কামনা করিয়া (প্রেতম্) মৃত পতির (অনু) পরে (উপ ত্ব) তোমার নিকট আসিতেছে (পুরাণম্) সনাতন (ধর্মম) ধর্মকে (পালয়ন্তী) পালন করিয়া (তস্য) তাহার জন্য (ইহ) এই লোকে (প্রজাম) সন্তান কে (দ্রবিণং চ) এবং ধর্মকে (ধেহি) ধারন করাও।
অর্থাৎঃ
★হে মনুষ্য! এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্ক্ষা করিয়া মৃতপতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে। সনাতনধর্মের পালন করিয়য়া সে যেন তোমার দ্বারা সন্তান ও ধন লাভ করে।
ভাবার্থঃহে মনুষ্য! এই স্ত্রী পতিলোককে অর্থাৎ বৈবাহিক অবস্থাকে কামনা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিতেছে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া তাহার জন্য এই লোকে সন্তান কে এবং ধর্মকে ধারন করাও।
এ মন্ত্রে বেদ স্পষ্ট বিধবা বিবাহের আজ্ঞা দিচ্ছে। যেখানে পতি বিযোগের পর নারীর পূনরায় বিবাহের অনুমোদন রয়েছে। সেখানে বেদে সতীদাহ প্রথার দাবী একেবারেই ভিত্তিহীন ।
.উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকং গতাসুমেতমুপশেষ এহি।
হস্তাগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভি সংবভূব।।
-----------------------------------------------------(ঋগ্বেদ ১০/১৮/৮)
অর্থাৎঃ
★ হে স্ত্রী! তুমি এই মৃত পতির পার্শ্বে শয়ন করিয়া আছ। ওখান হইতে উঠিয়া এখানে আসো। জীবিত মনুষ্যদের মধ্যে তোমার পাণিগ্রহণকারী পতির সঙ্গে পত্নীত্ব জন্মুক।
.
.
সুতরাং, পবিত্র বেদে পরমাত্মা বিধবাবিবাহের নির্দেশনায় দিয়েছেন।
.
তাহলে এই কলঙ্কময়, নৃশংস কুসংস্কার হিন্দুদের মধ্যে এল কোথা থেকে?
.
এটি এসেছে হিন্দুদের প্রাণপ্রিয় বেদবিরুদ্ধ গ্রন্থ পুরাণ থেকে।
.
দেখে নিন নীচের প্রমাণগুলো।
.
★অগ্নি পুরাণ ২২২.১৯-২৩ বলছে- "যে সকল নারী স্বামী মৃত্যুর পর বৈধব্যব্রত(সাদাকাপড়,নিরামিষ ইত্যাদি) পালন করবে তারা স্বর্গ লাভ করবে আর যারা অগ্নিতে সহমরণ করবে তারা আরও দ্রুত স্বর্গ লাভ করবে।"
.
★কূর্ম পুরাণ ২.৩৪.১০৮-১০৯ বলছে, "যে সকল নারী স্বামীর মৃত্যুর পর তার সাথে অগ্নিতে সহমরণ করে সে সকল নারীর স্বামী যদি ব্রহ্মঘাতকও(ব্রাহ্মণহত্যাকারী) হয় তারপরেও তার সকল পাপ ক্ষয় হয়ে যায়।"
.
★ বিষ্ণুপুরাণ ৫.৩৮ বলছে শ্রীকৃষ্ণ মারা যাবার পর তাঁর ৮ স্ত্রী সবাই ই নাকি জ্বলন্ত আগুনে সহমরণ করেন। অর্থাৎ আমাদের প্রাণপ্রিয় শ্রীকৃষ্ণকেও পুরাণ সতীদাহপন্থী বানিয়ে দিয়েছে। প্রভুপাদ নিজেও ভাগবত পুরাণ ৪.২৮.৫০ এবং ৯.৯.৩৬ এর রেফারেন্স দিয়ে সতীদাহ প্রথাকে পূণ্যকর্ম বলে অভিহিত করেছেন এবং ১৯৩৬ সালে তার নিজের সরাসরি দেখা একটি সতীদাহ প্রথার প্রত্যক্ষ উদাহরণ দিয়েছেন।
.
★ গরুড় পুরাণ প্রেতখন্ড ১০.৪৫-৪৬ এ আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলা হয়েছে, "যে নারী তার স্বামীর মৃত্যুর পর অগ্নিতে সহমরণ করেনা তার আত্মা কখনো জাগতিক শরীর থেকে মুক্তি লাভ করেনা।একমাত্র সহমরনেই তার মুক্তি হয়,সহমরণ করলে কেবল দেহ বিনষ্ট হয় কিন্তু আত্মা তার স্বামীর সাথে মিলিত হয়।"
.
গরুড় পুরাণ প্রেতখন্ড ১০.৪৮ তো আরও মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছে সতীদাহ প্রথার,লিখেছে- "যে নারী স্বামীর সাথে সহমরণ করেন তিনি অরুন্ধতির মত শ্রেষ্ঠ মর্যাদা পান,তিনি নিজে তো মুক্ত হন ই সাথে তার তিনপুরুষকে সকল পাপ থেকে মুক্ত করেন।" ব্রহ্ম পুরাণ ১০.৭৫ বলছে- "স্বামীর মৃত্যুর পর সহমরণে যাওয়া স্ত্রীর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।যে স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর পর সহমরণে যায় সে তার যতগুলো চুল আছে তত বছর পর্যন্ত স্বর্গ লাভ করে,সাড়ে ৩ কোটি বছর।"
.
.
★ পুরাণের সতিদাহপ্রথার পক্ষে এমন নির্দেশনা লক্ষ্য করে ইসকন বেদের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের " প্রশ্ন করুন, উত্তর পাবেন " নামের বইয়ে লিখেছে যে সতিদাহ নাকি একটি বৈদিক প্রথা এবং এটি অনেক পুণ্যের।
=>> অপপ্রচারকারীর আরো দাবীঃ-
গুণশালী পুরুষদের বিধবারা ঘি ইত্যাদি প্রলেপ ধারন করুক। স্বামী যে চিতাই শায়িত আছে সেখানে তারা উঠে যাক আভরন সজ্জিত হয়ে, কোন দুঃখ বা অশ্রুজল ছাড়াই।
(ঋগবেদ ১০।১৮।৭)
.
দাবীর সত্যতাঃ
উক্ত মন্ত্রে কোন বিধবা নারীর কথা মোটেই বলাই হয় নি। বরং অবিধবা অর্থাৎ পতিযুক্ত নারীর কথা বলা হয়েছে। আর যে নারীর পতি বিদ্যমান তার চিতার উপরে যাবার প্রয়োজন কি?
পরন্তু উক্ত মন্ত্রে নারীকে নিজ গৃহে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে যে, সে নারী যেন,সুপত্নি, দুঃখরহিত এবং রোগরহিত হয়ে প্রবেশ করে এবং সেই সাথে উত্তম সন্তান উৎপাদনে সমর্থ হয়।
আর সতিদাহ প্রথার নিয়মানুয়ায়ী পতি বিয়োগের পর পতির সাথে পত্নিকেও দাহ করা হয়। তখন নারী সুপত্নি, রোগরহিত অথবা উত্তম সন্তান উৎপাদনে সমর্থ কি না এসব দেখার প্রশ্নই আসে না।
অতএব ইহা স্পষ্ট যে, এই মন্ত্রে নারীর বৈবাহিক জীবনের প্রথম ধাপের বর্ণনা করা হয়েছে।
নিচে মন্ত্রের যথার্থ অর্থ দেখুন প্রতিটি পদের অর্থ সহকারে-
.
ইমা নারীরবিধবাঃ সুপত্নীরন্জনেন সর্পিষা সংবিশন্তু।
অনশ্রবোনমীবাঃ সুরত্না আরোহন্তু জনয়ো যোনিমগ্রে।।
(ঋগবেদঃ ১০।১৮।৭)
.
পদার্থঃ (ইমাঃ) এই (অবিধবাঃ) পতিযুক্ত (নারী) স্ত্রী (সুপত্নি) উত্তম পত্নি হয়ে (আঞ্জনেন) অঞ্জন আদি পদার্থ এবং (সর্পিষা) ঘৃত আদি সুগন্ধিত পদার্থ দ্বারা শোভিত হয়ে (সংবিশন্তু) নিজ গৃহ মধ্যে প্রবেশ করবে। তথা (অনশ্রবঃ) দুঃখরহিত (অনমীবাঃ) রোগরহিত (সুরত্নাঃ) উত্তম রত্ন আদি দ্বারা সুসজ্জিত হয়ে (জনয়ঃ) উত্তম সন্তানকে উৎপন্ন করতে সমর্থ স্ত্রী (অগ্রে) প্রথমে (যোনিম্) গৃহ মধ্যে (আরোহন্তু) প্রবেশ করবে।
.
অপপ্রচারকারীর আরো দাবী
আমরা মৃতের বধু হবার জন্য জীবিত নারীকে নীত হতে দেখেছি।
(অথর্ববেদ ১৮।৩।১, ৩)
.
দাবীর সত্যতাঃ
সর্বপ্রথম উক্ত মন্ত্রের যথার্থ অর্থ দেখে নেওয়া যাক-
.
অপশ্যং যুবতিং নীয়মানাং জীবাং মৃতেভ্যঃ পরিণীয়মানাম্।
অন্ধেন যত্তমসা প্রাবৃতাসীৎপ্রাক্তো অপাচীমনয়ং তদেনাম।।
(অথর্ববেদ ১৮।৩।৩)
.
পদার্থঃ (অপশ্যম) আমি দেখেছি (জীবাম) জীবিত (যুবতীম) যুবতী নারীকে (পরিনীমানাম) বিবাহিত হতে এবং (মৃতেভ্যঃ) মৃতের নিকট হতে [মৃত পতির নিকট হতে] (নীয়মানাম) নিয়ে যেতে (যত) কারন সে (অন্ধেন তমসা) গভীর অন্ধকারে (প্রাবৃতা) আবৃত (আসীত) ছিলো (ততঃ) অতঃ (এনাম) তাহাকে (প্রাক্ত) সামনে থেকে [ মৃত পতির সামনে হতে] (অপচীম্ অনয়ম) দূরে আনয়ন করি।
.
উক্ত মন্ত্রে কোথাও সতী দাহের উল্লেখ নেই। বরং পতি বিয়োগে শোকান্ধকারে আচ্ছন্ন পত্নিকে সহনাভূতি দেখানো হচ্ছে। সে যেন অধিক শোকে আচ্ছন্ন হয়ে না পড়ে এ জন্য তাকে পতির নিকট হতে দূরে রাখার কথা বলা হচ্ছে।
এ মন্ত্রে বেদ স্পষ্ট বিধবা বিবাহের আজ্ঞা দিচ্ছে। যেখানে পতি বিযোগের পর নারীর পূনরায় বিবাহের অনুমোদন রয়েছে। সেখানে বেদে সতিদাহ প্রথার দাবী একেবারেই ভিত্তিহীন।
বিবাহ বিষয়ে বেদাদি শাস্ত্রে যেরূপ প্রমাণ আছে, নিয়োগ বিষয়েও কি সেইরূপ প্রমাণ আছে
কুহ স্বিদ্দোধা কুহ বস্তোরশ্বিনা কুহাভিপিত্বং করতঃ কহোষতুঃ।
কো বাং শয়ুত্রা বুধবার দেবরং মর্য়্যং ন য়োষা কৃণুতে সধস্হ আ।। ঋগ্বেদ-১০।৪০।২
উদীর্স্ব নায়ভি জীবলোকং গতাসুমেতমুপ শেষ এহি।
হস্হগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভি সং বভূথ।।-ঋগ্বেদ-১০।১৮।৮
অর্থঃ- হে (অশ্বিনা) স্ত্রী-পুরষগণ! যেরূপ (দেবরং বিধবেব) দেবব বিধবার সহিত এবং (য়োষা মর্য়াং ন) বিবাহিতা স্ত্রী স্বীয় পতির সহিত (সধস্তে) এক স্হানে শয়্যায় একত্র হইয়া সন্তান (আ কৃণুতে) সর্বপ্রকারে উৎপন্ন করে,সেইরূপ তেসরা উভয়ে স্ত্রী-পুরুষ (কুহস্বিদ্দোষা) কোথায় রাত্রিতে এবং (কুহ বস্তঃ) কোথায় দিবসে একত্র বাস করিয়াছিলে? (কুহভিপিত্বম্) কোথায় পদার্থ লাভ (করতঃ) করিয়াছ? এবং (কুহোষতুঃ) কোন্ সময়ে কোথায় বাস করিয়াছিলে? (কো বাং শয়ুত্রা) তোমাদের শয়ন স্হান কোথায়? তেসরা কে এবং কোন্ দেশবাসী? ।। -ঋগ্বেদ-১০।৪০।২
ইহা দ্বারা সিদ্ধ হইল যে,দেশে বিদেশে স্ত্রী-পুরুষ সঙ্গেই থাকিবে এবং বিধবা ও স্ত্রী নিযুক্ত পতিকে বিবাহিতা পতির ন্যায় গ্রহণ করিয়া সন্তান উৎপত্তি করিবে।
"দেবরঃ তস্মাত্ দ্বিতীয়ো বর উচ্যতে"। নিরু০ ৩।১৫।
বিধবার দ্বিতীয় পতিকে 'দেবর' বলে।সে পতির কণিষ্ঠ বা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাই হোক অথবা সুবর্ণ বা নিজ অপেক্ষা উত্তম বর্ণের হউক, যাহার সহিত নিয়োগ হইবে তাহার নাম 'দেবর'।(নিরু,অ,৩ খন্ড, ১৫)
অর্থঃ- হে (নারি) বিধবে! তুমি (এতং গতাসুম্) এই মৃত পতির আশা পরিত্যাগ করিয়া (শেষে) অবশিষ্ট পুরুষদিগের মধ্যে (অভিজীবলোকম্) জীবত দ্বিতীয় পতিকে (উপৈহি) প্রাপ্ত হও। এবং (উদীর্স্ব) ইহা বিচার করিবে এবং নিশ্চয় জানিবে যে,(হস্তাগ্রাভস্য দিধিষোঃ) তোমার [বিধবার] পুনঃ পাণিগ্রগণকারী নিযুক্ত পতির সম্বন্ধের জন্য যদি নিয়োগ হয় তবে (ইদম্) এই ( জনিত্বম) উৎপন্ন পুত্র উক্ত নিযুক্ত (পত্যুঃ পতির হইবে। আর তোমার প্রয়োজনে নিয়োগ করিলে এই সন্তান (তব) তোমার হইবে। তুমি এইরূপ স্হিরনিশ্চিত (অভি সম্ বভূথ) হও।নিযুক্ত পুরুষও এই নিয়ম পালন করিবে।।-ঋগ্বেদ-১০।১৮।৮
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ