নবী মোহাম্মদ ও দাসী - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

24 July, 2018

নবী মোহাম্মদ ও দাসী

“ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ” Al Bidaya Wal Nihaya (Download Link) প্রখ্যাত মুফাসসির ও ইতিহাসবেত্তা আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ) প্রণীত একটি সুবৃহৎ ইতিহাস গ্রন্থ। এই গ্রন্থে ইসলাম তথা কোরআন এবং হাদিস ও বিভিন্ন বর্ণনাকারীর সূত্র হতে ইসলাম বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।  প্রাসঙ্গিক সহিহ হাদিসটি পাবেন সূনান নাসাঈ (ইফাঃ) খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ১০৬ তে। 

দাসী মারিয়াহ, নবী মোহাম্মদ এবং মধু

মারিয়াহ বিন্ত শামুন, যিনি বেশি পরিচিত মারিয়াহ আল-কিবতিয়্যা (Mariah Al Qibtiyah) নামে, তার সাথে নবী মুহাম্মাদের সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ । মিশরের (Egypt) ক্রিস্টান রাজা মুকাওকিস, মারিয়াহ আল-কিবতিয়াকে উপহার হিসেবে মুহাম্মাদের কাছে পাঠান । মারিয়ার সাথে তার বোন শিরিনকেও উপহার হিসেবে পাঠানো হয় । নবী শিরিনকে হাসান বিন তাহবীতের কাছে পাঠিয়ে দেন এবং সুন্দরী মারিয়াকে নিজের কাছে রাখেন ।
মুহাম্মাদের সাথে মারিয়ার শারীরিক ঘনিষ্ঠতা হয়, এবং তার থেকে জন্ম হয় তাঁর একমাত্র পুত্র ইব্রাহিমের । কিন্তু ইব্রাহিম শিশু অবস্থাতেই মারা যান । অনেকে দাবি করেন যে মুহাম্মদ মারিয়াকে বিবাহ করেছিলেন ( যেমন প্রখ্যাত তাফসীরের লেখক এবং প্রথম তাফসীরকারী নবী মুহাম্মাদের চাচাতো ভাই ইবনে আব্বাস ) এবং অনেকে বলেন যে তিনি নবী মুহাম্মাদের রক্ষিতা ছিলেন । আমরা সেটা অন্য একটি লেখায় বিশ্লেষণ করবো ।
এই লেখায় কোরআন ও তাফসীর থেকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে যে মারিয়ার সাথে বিবাহের আগে তাঁর সাথে নবীর কিরকম সম্পর্ক ছিল ।
এই বিষয়ে আল-কোরআনে কি বলা আছে?
আল-কোরআনের সুরাহ আত-তাহিরমের (সুরাহ নম্বর ৬৬) আয়াত নম্বর ১ থেকে ৫ উল্লেখযোগ্য । প্রথমে এই আয়াতগুলি একটু দেখে নি :
1. হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।
2. আল্লাহ তোমাদের জন্যে কসম থেকে অব্যহতি লাভের উপায় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তোমাদের মালিক। তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
3. যখন নবী তাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপনে বললেন, অতঃপর স্ত্রী যখন তা বলে দিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নবী সে বিষয়ে স্ত্রীকে কিছু বললেন এবং কিছু বললেন না। নবী যখন তা স্ত্রীকে বললেন, তখন স্ত্রী বললেনঃ কে আপনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করল? নবী বললেন: যিনি সর্বজ্ঞ, ওয়াকিফহাল, তিনি আমাকে অবহিত করেছেন।
4. তোমাদের অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে যদি তোমরা উভয়ে তওবা কর, তবে ভাল কথা। আর যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে জেনে রেখ আল্লাহ জিবরাঈল এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তাঁর সহায়। উপরন্তুত ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।
5. যদি নবী তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন, তবে সম্ভবতঃ তাঁর পালনকর্তা তাঁকে পরিবর্তে দিবেন তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী, যারা হবে আজ্ঞাবহ, ঈমানদার, নামাযী তওবাকারিণী, এবাদতকারিণী, রোযাদার, অকুমারী ও কুমারী।
কোনো তাফসীর ছাড়াই এই আয়াতগুলি পড়লে এই তিনটি জিনিস পরিষ্কার:
  • নবী কিছু জিনিস থেকে দূরে থাকবেন সেরকম কথা দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রীদের খুশি করার জন্য ।
  • তিনি তাঁর একজন স্ত্রীকে কিছু গোপন রাখতে বলেছিলেন, যেটা সেই স্ত্রী অন্য স্ত্রীদের বলে দিয়েছিলেন ।
  • এর ফলে নবী প্রায় তাঁর স্ত্রীদের পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন ।
এবার আমরা দেখি বিভিন্ন তাফসীরে এই আয়াতগুলি, বিশেষত ৬৬:১ এর কি প্রেক্ষাপট বলা হয়েছে ।
তাফসীর আল-জালালাইন (সুন্নি তাফসীর):
সুন্নিদের প্রধান তাফসীর আল-জালালাইন ৬৬:১ এর ব্যাপারে যা লেখা আছে:
হে নবী! কেন আপনি আপনার কপ্টিক (ইজিপ্শিয় ক্রিস্টান) দাসী মারিয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ যা আপনার জন্য জায়েজ করেছেন তার থেকে নিজেকে দূরে রাখেন – যখন আপনি হাফসার গৃহে তার সাথে শয্যা নিয়েছিলেন এবং হাফসা গৃহে ছিলেন না, কিন্তু হাফসা ফিরে আসেন ও জানতে পারেন যে এই ঘটনা ঘটেছে তাঁরই গৃহে ও তারই বিছানায় – ‘সে আমার জন্য হারাম’ বলার দ্বারা আপনার স্ত্রীকে খুশি করার জন্য (যা আপনার জন্য হালাল) তাকে হারাম ঘোষণা করেছেন?
আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময় তিনি আপনাকে এই নিষেধের জন্য ক্ষমা করেছেন ।
আল-তাবারি:
হাফসার গৃহে মারিয়ার সাথে নবী শুয়ে পড়েছিলেন এটা আল-তাবারিতেও আছে :
“হে আল্লার নবী, আমার গৃহে আর আমার বিছানায়?”
Source: Tafsīr al-Ṭabarī 66:1
ইব্ন আব্বাসের তাফসীর:
ইব্ন আব্বাস নবীর চাচাতো ভাই এবং সম্পূর্ণ কোরআনের প্রথম তাফসিরকারক ।
হে নবী! মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ তা’আলা তোমার জন্য যা হালাল করেছেন ( অর্থাৎ মারিয়া কিপতিয়া ইব্রাহিমের মাতাকে বিয়ে করা ; এ কারণে যে, তিনি মারিয়া কিপতিয়াকে বিয়ে না করার শপথ করেন ) তা কেন নিষিদ্ধ করছেন? আপনার স্ত্রী আয়েশা ও হাফসাকে সন্তুষ্ট করার জন্য? (এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়) তিনি আপনাকে ক্ষমা করেন, সেই শপথ সম্পর্কে।
আসবাব আল-নুজুলের তাফসীর:
মুহাম্মদ ইবনে মনসুর আল-তুসী আমাদেরকে খবর দিয়েছিলেন- ‘আলী ইবনে উমর ইবনে মাহদী আল হুসাইন ইবনে ইসমাঈল আল-মাহামিলী> আবদুল্লাহ ইবনে শাবীব ইশক ইবনে মুহাম্মাদ’ আবদুল্লাহ ইবনে উমর আবু আল-নাদর ‘উমর ইবনে আবদুল মালেকের ক্রেতা ‘আলী ইবনে আব্বাস’ ইবনে আব্বাস ‘উমর বলেন:
“আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আশীর্বাদ করুন এবং তাকে শান্তি দান করুন । হাফসাহের গৃহে তার সন্তানের মাতা মারিয়ার সাথে প্রবেশ করেন ।
যখন হাফসা তাকে [ঘনিষ্ঠ মুহুর্তে] মারিয়ার সঙ্গে পেয়ে গেলেন, তখন তিনি বললেন, ‘কেন তুমি তাকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছ? তুমি আমার সাথেই এটা করেছ, তোমার সমস্ত স্ত্রীদের ব্যতীত, কেবলমাত্র আমি তোমার কাছে তুচ্ছ। তিনি তাকে বললেন, ‘এ ব্যাপারে আয়শাকে বোলো না; সে (মারিয়াহ) আমার জন্য নিষিদ্ধ যদি আমি কখনো তাকে স্পর্শ করি ‘ ।
হাফসা বললেন, “সে তোমার দাসী হলে সে তোমার জন্য কীভাবে নিষেধ হবে?” নবী তাঁর কাছে শপথ করেছিলেন যে তিনি মারিয়াহকে স্পর্শ করবেন না এবং তারপর বললেন: ‘এই ঘটনার কথা কাউকে উল্লেখ করো না’।
কিন্তু হাফসা আইশাকে অবগত করেন । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর এক মাস নিজের স্ত্রীদের কাছে যাননি । তিনি ওনাদের থেকে ঊনত্রিশ দিন আলাদা অবস্থান করার পর, মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহ প্রকাশ করেছেন: “হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা কেন সরিয়ে রেখেছো?
শিয়াদের মতে:
এই ঘটনাটি ত্বাবাকাতে ইবনে সা’দ দ্বারাও প্রকাশিত হয়েছে:
ওয়াকিদী আমাদেরকে জানায় যে আবু বকর (রাঃ) বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হাফসার বাড়িতে মারিয়া সাথে যৌন সম্পর্ক করেছিলেন। যখন রাসূলুল্লাহ বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন, তখন হাফসা দরজায় বসে ছিল। তিনি নবীকে বললেন, হে আল্লাহর রসূল, আপনি আমার ঘরে এবং আমার পালা সময়ে এটা করলেন?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করো এবং আমাকে যেতে দাও কারণ আমি তাকে (মারিয়াহকে) আমার জন্য হারাম করে দিলাম । হাফসা বললেন, যদি আপনি শপথ না করেন, আমি এটা গ্রহণ করবো না। আল্লাহর পবিত্র হজরত বলেন, আমি আর (মারিয়াহকে) স্পর্শ করবো না।
■ তাবাকাত অষ্টম এডিশন পৃষ্ঠা ২২৩ । প্রকাশক এন্তেশারাত-এ ফারহাঙ বা আন্দিসহ তেহরান ২০০৩

মোহাম্মদ কাজেম মোরেফির ফার্সি তাফসীর:
এছাড়াও এটি বিবৃত করা হয় যে স্ত্রীদের মধ্যে তাঁর (আল্লাহর রাসূল) দিন বিভক্ত ছিল। যখন হাফসার পালা আসে, নবী হাফসাকে তাঁর পিতা ওমর খাত্তাবের বাড়ীতে একটি কাজের জন্য পাঠান। যখন তিনি এই আদেশটি গ্রহণ করেছিলেন এবং গিয়েছিলেন, তখন নবী তাঁর দাসী মরিয়মকে(আল-কিবতিয়্যা) ডাকেন, (যিনি তার পুত্র ইব্রাহিমকে জন্ম দিয়েছিলেন এবং যাকে রাজা নাজাশী থেকে উপহার পেয়েছিলেন), এবং তার সাথে যৌনসম্পর্ক করেছিলেন। হাফসা ফিরে এলে তিনি দেখেন দরজা বন্ধ। তাই তিনি যে বন্ধ দরজার সামনে বসে থাকলেন যতক্ষণ না নবী কাজ সমাপ্ত করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন এবং তাঁর মুখশ্রী থেকে তৃপ্তি ঝরে পড়ছিলো । হাফসা যখন এই অবস্থায় তাকে পেয়েছিলেন তখন তিনি তাকে বলেছিলেন: আপনি আমার সম্মান রাখেননি; আপনি আমার বাড়িতে থেকে, একটি অজুহাত দিয়ে আমাকে বাইরে পাঠান যাতে আপনি ক্রীতদাস মেয়ের শয্যাসঙ্গী হতে পারেন । এবং যে দিন আমার পালা ছিল আপনি অন্য কারোর সঙ্গ নিয়েছেন ।
তারপর নবী বলেন: মৌন হও । যদিও তিনি (মারিয়া) আমার দাসী এবং আমার জন্য হালাল, তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমি এই মুহুর্তে তাকে নিজের জন্য হারাম ঘোষণা করলাম ।
কিন্তু হাফসা চুপ না থেকে যখন নবী তার বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেলেন তখন তিনি সেই দেওয়ালের দিকে তাকালেন যা তার কক্ষকে আয়েশার থেকে আলাদা করেছিল এবং আয়েশাকে সব কিছু জানালেন।
তিনি এই সুখবরও জানালেন যে হযরত মরিয়মকে নিজের জন্য হারাম ঘোষণা করেছেন ।
আকা মাহ্দী পুয়ার তাফসীর:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জয়নবের কক্ষে গিয়েছিলেন তখন তিনি একটি পাত্রে মধু পান করতেন। আয়শা এবং হাফসা বিরক্ত হয়ে পড়েন এবং আয়শা একটি ফন্দি তৈরি করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আইশার ঘরে এলে তিনি অভিযোগ করেন যে তিনি মাগাফীর খেয়েছেন (মাগাফীর একটি বৃক্ষের রসে তৈরী দুর্গন্ধযুক্ত আঠা ) তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে তিনি শুধুমাত্র মধু গ্রহণ করেছেন। আয়শা বলেন: “সম্ভবত মৌমাছিরা মাগাফির বৃক্ষের রস খেয়েছিলো । এইজন্যেই মধুতে দুর্গন্ধ হয়ে গেছে ।”
যখন তিনি হাফসার কক্ষে যান তখন হাফসাও আয়শার মত অভিনয় করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দুর্গন্ধপূর্ণ বস্তু থেকে দূরে থাকতেন । তাই তিনি মধু খাবেন না বলে কসম খেলেন ।
হাফসার নির্ধারিত দিনে, যখন তিনি তার পিতা-মাতার বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং তার কক্ষে ছিলেন না, হযরত রাসূলুল্লাহ রাত্রির সময় মরিয়াকে তার স্থানে নিয়ে আসেন । এই মারিয়াহ মিসরের শাসক কর্তৃক প্রেরিত এবং তাঁর তার পুত্র ইব্রাহিমের জন্ম দেন । হাফসা ফিরে এসে এটা জানতে পারেন ।
হাফসার বিদ্বেষপূর্ণ মন্দ স্বভাবকে শান্ত করার জন্য তিনি শপথ করে বলেছিলেন যে, মরিয়ার সাথে তিনি আর কিছুতে লিপ্ত হবেন না।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ আচরণের সাধারণ নারীদের চেয়ে উচ্চতর মর্যাদা, সামাজিক আচরণ ও শিষ্টাচার প্রদর্শন করবেন বলে আশা করা হতো যেহেতু তারা শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের সাথে ছিলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আইসা ও হাফসার অবাধ্য আচরণ দ্বারা অত্যন্ত বিরক্ত ছিলেন এবং তিনি এক মাসের জন্য তাঁর স্ত্রীদের ত্যাগ করেন। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে নবী একথা জানালেন যে, আল্লাহ তাকে মধু ও মরিয়ার অনুমতি দিয়েছেন, তাদের কাউকে ত্যাগ করতে হবে না। উল্লিখিত ঘটনায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কসম খেয়েছিলেন । আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তিনি এই কসম ভঙ্গ করেন ,এবং কাফ্ফারা আদায় করেন ।
পরিবর্ত মতামত:
এর পরিবর্তে কিছু ইসলামিক স্কলার দাবি করেন এখানে নবী জয়নাবের গৃহে মধু খেয়েছিলেন এবং সেটা নিয়ে হাফসা ও আয়েশা গোসা করেছিলেন । তখন নবী তাদের খুশি করার জন্যে বলেন যে “আমি আর মধু খাবো না” । তখন নাকি আল্লাহ এই আয়াত নাজিল করেন । ইবনে কাসির ও সহীহ বুখারীতে এই মধু খাওয়ার গল্পটি রয়েছে ।
পাঠকের কাছে প্রশ্ন:
  1. মারিয়া যদি নবীর স্ত্রী হতেন, নবী কি কখনো মারিয়াকে নিজের জন্য হারাম করতেন? সেটা তো মারিয়ার ওপর অবিচার করা হতো ।
  2. মধু খাওয়ার মতো একটি তুচ্ছ জিনিসের জন্য কি এরকম অবস্থা হয় যে নবী তাঁর সব স্ত্রীদের তালাক দেয়ার জন্য প্রস্তুত হন?
  3. শুধু মধু খাওয়ার জন্যে নবী ২৯ দিন কোনো বিবির ঘরে যান নি এটা কতটা সম্ভব ?
  4. নবী “মধু খাবো না” বলাতে আল্লাহ পাঁচ পাঁচটি আয়াত নাজিল করবেন?

রেফারেন্স:

নবী মোহাম্মদ (দঃ) তার নবুয়তের জীবনে খুব অল্পই কঠিন  বিপদে পরেছিলেন। মক্কায় তিনি ছিলেন চাচা আবু তালিবের ও বনু হাশিম গোত্রের নিরাপত্তায়। একবার কাবায় ধর্ম প্রচারের সময়  তার গায়ে উটের নাড়ি ভুঁড়ি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল , এ ছাড়া কেও তাকে চাপাতি আক্রমন তো দুরের কথা, চড় থাপ্পর মেরেছে এমন বর্ণনা ও পাওয়া যায় না , তবে চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর পর জীবনের  আশঙ্কায় তিনি মদিনাতে পালিয়ে যান । উহুদের যুদ্ধে পরাজিত হলেও মক্কার কোরাইশরা নব্য মুসলিমদের তাড়া করেননি বরং মক্কায় ফিরে গেছেন। খন্দকের যুদ্ধে পূর্ণ পরাজয়ের আশঙ্কা ছিল, তবে সালমান ফারসির পরামর্শে পরিখা বা খন্দক খনন করে রক্ষ্যা পান । তবে পারিবারিক জীবনে একাধিক বিবি নিয়ে বেচারা মোহাম্মদ (দঃ) বড়ই বেচঈন অবস্থায় পড়েন যা যে কোন রণক্ষেত্রের চাইতেও কম বিপদ জনক ছিল না। বিবিদের শাসন করে আল্লাহতালা আয়াতের পর আয়াত নাজিল করেছেন , আর পুত্রবধু জয়নব এর সাথে নিকাহ জায়েজ করতে আল্লহর কতই না কষ্ট করতে হয়েছে, কত আয়াত, কত তফসির।
দাসী মারিয়া আল কিবতিয়ার ইতিহাসটি বেশ লম্বা, তাই অতি সংক্ষেপে কিছু গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় উল্লেখ করব, লেখাটি মেলিখ আজাদ ভাই এর লেখার সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে । প্রথমত, এ কথা আপনাদের জানা যে মারিয়া আল কিবতিয়া বা Mary the Copt কে নবী মিশরের শাসন কর্তার থেকে উপহার হিসাবে পেয়েছিলেন । মারিয়া ছিলেন কপটিক খ্রিষ্টান , যারা প্রয়াত জাতি সংঘের জেনারেল সেক্রেটারি বুত্রস বুত্রস ঘালির নাম জানেন, তিনিও একজন কপটিক খ্রিষ্টান, এই সম্প্রদায় এখনও মিশরে বসবাস করে আর তাদের চার্চে আমাদের শান্তি প্রিয় মুমিন ভাইদের বোমাবাজির খবর নিয়মিতই পাওয়া যায়। নবীর যে সব বিবি ও যৌন দাসীদের রূপের বর্ণনা পাওয়া যায় , মারিয়া তাদের মধ্যে একজন, সাফিয়া, জয়নব ও রায়হানা ও রূপবতী ছিলেন বলে জানা যায় ।আপনারা এও জানেন যে, নবী তার বিবিদের সাথে পালাক্রমে রাত্রি যাপন করতেন, এটি তার বিবিদের ন্যায্য পাওনা ও আরবিয় প্রচলিত রীতি । নবীর দ্বিতীয় বিবি সাওদা ছিলেন বয়স্কা যাকে নবী বিবি খদিযার মৃত্যুর পর নিকাহ করেন, বলা হয়ে থাকে বিবি খদিযার ঘরে হওয়া সন্তানদের লালন পালনের জন্য নবী এই বিবাহটি করেন। নবী একদা বিবি সাওদাকে তালাক দিতে চাইলে তিনি নবীকে অনুনয় করেন এই বলে যে, বিবি হিসাবে উনি আর কিছু দাবি করেন না তবে নবীর বিবি হিসাবে মৃত্যু বরন করতে চান , এবং তার নিজের পালাটি তিনি বিবি আয়েশাকে দিয়ে দেন এবং এভাবে নিজের বিবাহ বজায়ে রাখেন। নবী পুত্রবধু  জয়নব বিনতে যাহাশকে নিকাহের পর গৃহ বিবাদের সূচনা হয়। জয়নব ছিলেন সুন্দরী ও এই বলে বড়াই করতেন যে, অন্য বিবিদের বিয়ের ঘটক তাদের পিতারা (ভিন্নমতে  ঘটক  পাখি ভাই) আর তার বিয়ের ঘটক স্বয়ং আল্লহতালা। নবীর বিবিরা ( মুমিন দের আম্মাজান – উম্মুল মুমেনিন)  দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েন ঃ আয়েশার দলে ছিলন ওমর কন্যা হাফসা, সাওদা ও সাফিয়া অপর পক্ষে জয়নবের দলে ছিলেন উম্মে সালামা , উম্মে  হাবিবা ও জুহাইরিয়া। মারিয়ার আগমনে এরা কেওই “ মারিয়া কিবতিয়ার আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম” বলে এগিয়ে আসেন নি, বরং, সুন্দরী মারিয়ার সাথে নবী মোহাম্মদ (দঃ) এর ঘন ঘন মেলামেশায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় যখন মারিয়া গর্ভবতী হয়ে পড়েন । পরিস্থিতি সামাল দিতে, নবী শেষ পর্যন্ত মারিয়াকে আলিয়া নামক মদিনার উত্তরে এক স্থানে পাঠিয়ে দেন । মদিনার এই অংশটি নবী তথা মুসলমানরা বানু নাদির নামক ইয়াহুদি গোত্রকে ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ করে দখল করেছিলেন । অতি সংক্ষেপে,  সুরা আত তাহারিম এর প্রথম কয়েকটি আয়াত বুঝতে এই পরিপ্রেক্ষিত মাথায় রাখতে হবে ।
এবার আসি মুল বিষয়ে, সুরা আত তাহারিম (৬৬)  এর প্রথম কয়েকটি আয়াত মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুন, সব প্রশ্নের উত্তর এর মধ্যেই আছে। সুরার আয়াত গুলোকে পুনরায় উল্লেখ করতে হচ্ছে।
  1. হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।
  2. আল্লাহ তোমাদের জন্যে কসম থেকে অব্যহতি লাভের উপায় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তোমাদের মালিক। তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
  3. যখন নবী তাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপনে বললেন, অতঃপর স্ত্রী যখন তা বলে দিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নবী সে বিষয়ে স্ত্রীকে কিছু বললেন এবং কিছু বললেন না। নবী যখন তা স্ত্রীকে বললেন, তখন স্ত্রী বললেনঃ কে আপনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করল? নবী বললেন,ঃ যিনি সর্বজ্ঞ, ওয়াকিফহাল, তিনি আমাকে অবহিত করেছেন।
  4. তোমাদের অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে যদি তোমরা উভয়ে তওবা কর, তবে ভাল কথা। আর যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে জেনে রেখ আল্লাহ জিবরাঈল এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তাঁর সহায়। উপরন্তুত ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।
  5. যদি নবী তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন, তবে সম্ভবতঃ তাঁর পালনকর্তা তাঁকে পরিবর্তে দিবেন তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী, যারা হবে আজ্ঞাবহ, ঈমানদার, নামাযী তওবাকারিণী, এবাদতকারিণী, রোযাদার, অকুমারী ও কুমারী।
উল্লেখিত আয়াতের শানে নাজুল ও তাফসির মেলিখ আজাদ ভাই তার লেখায় বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন । এখানে উল্লেখ, বিবি হাফসার ঘরে তার বিছানায় নবী মোহাম্মদ (দঃ) দাসী মারিয়ার সাথে যৌন সঙ্গম করেন যখন বিবি হাফসা কোন কাজে পিতা ওমরের বাসায় গিয়েছিলেন । বিবি হাফসা নবীকে এ অবস্থায় দেখে স্বভাবতই বিশেষ প্রীত হন নি । ( পাদটীকা ঃ মুমিন পাঠকরা তাদের দাসী নিয়ে নিজের বিবির বিছানায় সুন্নত পালন করে দেখতে পারেন, তবে অক্ষত ইমান দণ্ডের দায়িত্ব লেখকের নয় ) । এই বিষয়টিকে , তৎকালীন আরব কালচারের ভিত্তিতে দেখতে হবে। নবীর জন্য দাসীর সাথে যৌন সঙ্গম করা সম্পূর্ণ জায়েজ, তবে, বিপত্তি ঘটে যখন এটি তিনি করেন বিবি হাফসার পালার দিনে, এটি তখনকার সামাজিক বিবেচনায় গর্হিত কাজ। দ্বিতীয়ত, ওমরের কন্যা হিসাবে ও আবু বকর কন্যা বিবি আয়েশার সখি হিসাবে, বিবি হাফসার সামাজিক অবস্থান যথেষ্ট উচ্চ। এই বিষয়গুলো কোন ভাবেই মোহাম্মদ (দঃ) এর পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব ছিলনা। যার পরিপ্রেক্ষিতে দাসীর সাথে যৌন সঙ্গম করা সম্পূর্ণ জায়েজ হওয়া সত্ত্বেও নবী মারিয়াকে আর স্পর্শ করবেন না বলে শপথ করতে বাধ্য হন । বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে নবী এটিকে বিবি আয়েশার কাছ থেকে গোপন রাখতে বলেন । তবে হাফসা,  মারিয়াকে মাইনাস ওয়ান ফরমুলায় ফেলে দেওয়ার কৃতিত্ব বিবি আয়েশার কাছে আর গোপন রাখেন নি । এর পর নবী বিবি আয়েশার কাছ থেকে কি উত্তর পেয়েছিলেন , তার বর্ণনা আপাতত কোন সূত্রে আমি পাই নি। তবে সুরা আত তাহারিম এর ৪ ও ৫ নং আয়াতে নবী আল্লহর মাধ্যমে যে ভাবে শাসন , ভয় ভীতি  ও  তালাকের হুমকি-ধামকি দিয়েছেন, তাতে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না , নবী সত্যই আরবিয় মাইনকার চিপায় পড়ে ছিলেন, তাই ৪ নং আয়াতে লক্ষ্য করুন, মদিনার অধিপতি হওয়া সত্ত্বেও নবী,  আল্লাহ,  জিবরাঈল ,সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ উপরন্তুত ফেরেশতাগণ কেও  তাঁর সাহায্যকারী হিসাবে বর্ণনা করে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করে তার বিবিদের কাছে নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। পরিস্থিতি এতটাই নাগালের বাইরে চলে যায় যে , পুরা ১ মাস নবী বিবিদের থেকে আলাদা ছিলেন । বর্ণনা আছে , ওমর ও আবু বকর তাদের নিজ নিজ কন্যা দের শাসন করেন, একটি বর্ণনায় দেখলাম, আবু বকর বিবি আয়েশার চুল ধরে উত্তম মধ্যম দিয়েছিলেন, তবে এর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয় নি। মারিয়াকে আর স্পর্শ করবেন না বলে কসম করার পর মারিয়ার সান্নিধ্য বঞ্চিত নবী মোহাম্মদ (দঃ) যে বিশেষ মন-দৈহিক কষ্টে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তা সহজেই অনুমান করা যায় সুরা আত তাহারিম এর বর্ণিত আয়াতগুলোতে ।
মারিয়ার গর্ভে পুত্র সন্তান ইব্রাহিমের জন্ম হলে, মারিয়ার সামাজিক অবস্থানের উন্নতি ঘটে আর নবীর বন্ধা বিবিদের মধ্যে ঈর্ষা ছড়িয়ে পড়ে । তবে মারিয়ার সতীত্ব নিয়েও রটনার বর্ণনা পাওয়া যায় , মারিয়ার বাসায় কাঠ সরবরাহকারী এক সগোত্রীয় কপটিক যুবককে নিয়ে, সেই বর্ণনা আপাতত বাদ রাখলাম। নবী তার পুত্রসন্তানটি এক বার বিবি আয়েশার নিকট গর্ব ভরে দেখান আর নিজের চেহারার সাথে সামঞ্জস্য ও দ্রুত বেড়ে উঠা উল্লেখ করেন। উত্তরে বিবি আয়েশা বলেন যে পুত্রটি মতেও নবীর চেহারার মত নয় , আর বেড়ে উঠার ব্যাপারে বলেন , যে পরিমান ছাগ দুগ্ধ পান করানো হচ্ছে তাতে যে কোন শিশুই এভাবেই বাড়ত । দুঃখজনক ভাবে ১৮ মাস বয়সে শিশু ইব্রাহিমের মৃত্যু হয় আর আরব সমাজে যেহেতু পুত্র সন্তানের গুরুত্ব অত্যধিক, এই মৃত্যু নবীর জীবনের একটি অন্যতম শোকের ঘটনা ।
এবার আসি মধুর বিষয়য়ে। সকল আদি তাফসির গ্রন্থে মারিয়ার এই বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে উল্লেখিত যা মেলিখ আজাদ ভাই তার লেখায় তথ্য সূত্র সহ উল্লেখ করেছেন । এই বিষয়টি , পরিবর্তিত সামাজিক প্রেক্ষাপটে পরবর্তী মুস্লিম পণ্ডিতদের অসস্থির  কারন হয়ে দাড়ায়। যে নবী সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ অনুকরণীয় মানব, তিনি কেন আর দশটা আম জনতার মত দাম্পত্য কলহে আর কেলেংকারিতে জড়াবেন । তাও যদি এটি হাদীস বা সিরাতে থাকলে অস্বীকার করা যেত, কোরানের আয়াত বলে কথা। এ থেকেই  শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত শুরু হয় মধু দিয়ে যৌন কর্ম ঢাকার অপচেষ্টা । বিষয়টি আরও পরিস্কার হয় যখন দেখি ইবনে কাথিরের তাফসিরের অন লাইন ভার্শন থেকে দাসী মারিয়ার সাথে যৌন সঙ্গম এর পুরা বর্ণনাই বাদ দেওয়া হয়েছে অথচ , মুল ইবনে কাথিরের তাফসিরে এই নিয়ে দুই পৃষ্ঠা ব্যাপী বর্ণনা আছে । পাঠকদের নিম্নে দেওয়া ইউটিউব ভিডিও দেখার পরামর্শ দিচ্ছি, উল্লেখ্য ডঃ ইয়াসির কাদি ,একাডেমিক  ইসলামে  সর্ব উচ্চ ডিগ্রি ধারী স্কলার।
Dr Yasir Qadhi: Muhammad (Pbuh) caught having sex with his Coptic slave Mariyah
জয়নব বিনতে যাহাশ এর ঘরে মধু খাওয়া নিয়ে ঘটনাটি এতই তুচ্ছ যে, এটিকে উল্লেখ করার মত নয় । মেলিখ আজাদ ভাই যথাযথই উল্লেখ করেছেন যে, এই তুচ্ছ মধুর জন্য নবী এক মাসের জন্য বিবিদের থেকে আলাদা ছিলেন না। আর আরব সমাজে কসম খাওয়া অনেক বড় গুরুত্ব বহন করে , মধুর জন্য নবী কসম কাটবেন আর সব বিবিকে তালাক দিবেন এই উদ্ভট চিন্তা জোকার নায়ক জাতীয় কপট apologist রা মানুষকে খাওয়াতে পারে। তবে সমস্যা এখানেই শেষ নয়, আরব সমাজে কোন বিষয়ে কসম কাটলে সেটা ভঙ্গ করা খুব কঠিন, এর কাফফারা হিসাবে উট করবানি , অর্থ , দাস মুক্তি ইত্যাদি পূর্বে নিরধারিত শর্ত মানতে হত । তবে আল্লাহ ২ নং আয়াতের মাধ্যমে এখান থেকেও নবীকে উদ্ধার করেন। (আল্লাহ তোমাদের জন্যে কসম থেকে অব্যহতি লাভের উপায় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তোমাদের মালিক। তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।)
মারিয়া আল কিবতিয়া নবীর দাসী না পত্নী ছিল এ নিয়ে বিতর্ক আছে এবং এটি ভিন্ন আলোচনা , তবে, বিবি হয়ে থাকলে যখন নবী হাফসার কাছে মারিয়াকে আর স্পর্শ করবেন না বলে শপথ করেন , এতে শরিয়া আইনে এটা বলার জন্য তার বিবি তালাক হয়ে যাবে এবং পুনরায় তার সাথে সম্পর্ক করার আগে হিল্লা বিয়ে এবং দ্বিতীয় স্বামী করতিক পূর্ণ যৌন মিলন হলেই বিবি প্রথম স্বামীর কাছে হালাল হবে । এই ক্ষেত্রে , নবীকে এ ভাবে অব্বহতি দেওয়া যায় যে, কোন নবীর বিবিকে অন্য কেও নিকাহ করতে পারবে না কারন সকল নবীর বিবিকে উম্মতের আম্মাজান বা উম্মুল মুমেনিন হিসাবে কোরানে নির্দেশিত আছে । সমস্যা এখানেই শেষ নয়, সুরা আহযাবের ৫২ নং আয়াতে বলা আছেঃ
এরপর আপনার জন্যে কোন নারী হালাল নয় এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য আপনাকে মুগ্ধ করেতবে দাসীর ব্যাপার ভিন্ন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন
ঘটনা হল সুরা আহযাব নাজিল হয় মারিয়ার আগমনের পূর্বে অর্থাৎ নবী যদি মারিয়াকে বিবাহ করেন এতে আল্লাহর আদেশের বরখেলাপ করবেন তবে দাসীর ব্যাপারে সম্ভোগ করতে কোন বাধা নেইযে কারনে বহু মুফাসসিরগন মারিয়াকে নবীর অধিকার ভুক্ত দাসী হিসাবেই উল্লেখ করেছেন। তবে এ সকল বিষয় নিয়ে আলিম সমাজে বিতর্ক আছে ।
উপসংহারে , এত আরব রীতি কপচানর পর একটি খাঁটি বাংলা প্রবাদ দিয়ে শেষ করিঃ “দুই সতীনের ঘর খোদায় রক্ষা কর”। দশ এগারটি সতীন তার উপর উপপত্নি , এ থেকে রক্ষা করতে বাস্তবিকেই খোদার সরাসরি আয়াত নাজিল ছাড়া আর কেও রক্ষা করতে পারবে না । আমিন ।
যদিও ইবনে কাথির এর তাফসিরের  সকল অন লাইন ভার্সন হতে চতুরতার সাথে মারিয়া কিবতিয়া সংক্রান্ত অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে তবে নিম্নে দেওয়া বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রে এই চৌর্য বৃত্তি না করায় অনুবাদককে সাধুবাদ জানানো যায়। নিম্নে শুধুমাত্র মারিয়া সংক্রান্ত অংশ দেওয়া হল । আগ্রহি পাঠকরা উপরের লিঙ্ক থেকে পূর্ণ তাফসীর পড়তে পারেন।
মুলঃ হাফেজ আল্লামা ইমাম্মুদিন ইবনু কাসীর (রহঃ)
আনুবাদঃ ডঃ মুহাম্মাদ মুজীবুর রহমান
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: Tafsir Ibn Kathir (তাফসীর ইবনে কাসীর ) is one of the Most Comprehensive and Complete Explanation of The Noble Quran. Translated in to the Bangla language for the First time in the History of Islam! You can find more information inside the book.


























No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মনুস্মৃতি প্রথম অধ্যায়

স্মৃতি শাস্ত্রের মধ্যে মনুস্মৃতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেমন বৃ্হস্পতিস্মৃতিতে বলা হয়েছে- বেদার্থপ্রতিবদ্ধত্বাত্ প্রাধাণ্যং তু মনো: স্মৃত...

Post Top Ad

ধন্যবাদ