কর্মফল ও জন্মান্তরবাদ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

17 July, 2018

কর্মফল ও জন্মান্তরবাদ

দময়ন্তীর রূপ বর্ণনা প্রসঙ্গে মীমাংসা দর্শনের একটি তত্ত্ব –'কর্মকান্ড  জ্ঞানকান্ড. ভেদে বেদ ... ভারতীয় দর্শন-সম্মত অদৃষ্ট, জন্মান্তর ও কর্মফলভভাগের তত্ত্ব ঃযে মোক্ষ বা নির্বাণ ভারতীয় অধ্যাত্মদর্শনে চরম লক্ষ্য হিসেবে নির্দেশিত, তাকে বিশেষ কোন জন্মমৃত্যুর পরিসরে আবদ্ধ জীবনে আয়ত্ত করা সম্ভব নয়। ফলে এই লক্ষ্যে উপনীত হবার প্রস্তুতি হিসেবেই স্বীকৃত হয়েছে নির্দিষ্ট কোন জীবনের আগে এবং পরে জীবের আরও বিভিন্ন জন্ম-পুনর্জন্মের অস্তিত্ব। এই জন্মগুলিতে ভোগের মাধ্যমে প্রারব্ধ কর্ম ক্ষয় করে জীবকে যেতে হয় মোক্ষের দ্বারপ্রান্তে এবং জন্ম থেকে জন্মান্তরের এই সুদীর্ঘ পথের অতিক্রমণে যাত্রী হলো জীবের দেহাতীত সত্তা। এ প্রসঙ্গে কর্মফলবাদেরও উল্লেখ করতে হয়। কারণ প্রকৃতপক্ষে জন্মান্তরবাদ এবং কর্মফলবাদ– এ দুটি ধারণা পরস্পরের পরিপূরক। এই জন্মান্তর আর কর্মফলের স্বীকৃতির ভিত্তির উপর ভারতীয় দর্শনের যে বিশাল সৌধ দণ্ডায়মান, তার প্রাথমিক ধারণার ঔপনিষদিক উন্মেষও ঘটেছিলো উপনিষদীয় ঋষির কোন এক কৌতুহল-মুহূর্তে। অবশ্যই উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় যে, প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের মধ্যে প্রথমকালের অন্যতম প্রাচীন উপনিষদ ছান্দোগ্যই সর্বপ্রথম পুনর্জন্ম বিষয়ক ধারণার অবতারণা করে। ছান্দোগ্য উপনিষদে প্রচারিত পুনর্জন্ম সম্বন্ধে সেই সর্বপ্রাচীন উক্তিটি হলো–
‘তদ্য ইহ রমণীয়চরণা অভ্যাশো হ যত্তে রমণীয়াং যোনিম্ আপদ্যেরন্ । ব্রাহ্মণযোনিং বা ক্ষত্রিয়াযোনিং বা বৈশ্যযোনিং বাথ য ইহ কপূয়চরণা অভ্যাশো হ যত্তে কপূয়াং যোনিম্ আপদ্যেরন শ্বযোনিং বা সূকরযোনিং বা চন্ডালযোনিং বা।। (ছান্দোগ্য-৫/১০/৭)।।
অর্থাৎ :
তাদের মধ্যে যারা (পূর্বজন্মে) রমণীয় আচরণ বা পুণ্যকর্ম করে তারা দেহান্তরে শীঘ্রই ব্রাহ্মণযোনিতে বা ক্ষত্রিয়যোগিতে বা বৈশ্যযোনিতে জন্মলাভ করে। আবার যারা (পূর্বজন্মে) কপূয়াচরণ অর্থাৎ কুৎসিত বা অশুভ কর্ম করে তাদের শীঘ্রই কুকুরযোনিতে বা শূকরযোনিতে বা চণ্ডালযোনিতে পুনর্জন্ম হয়।

এ প্রেক্ষিতে এই নবোত্থিত ধারণার সামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন তাঁর দর্শন-দিগদর্শন গ্রন্থে যে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি করেছেন তার উদ্ধৃতি সম্ভবত অপ্রাসঙ্গিক হবে না। তিনি বলেছেন-
ঐ যুগের প্রথম প্রচারক সম্ভবত ভাবেননি, যে সিদ্ধান্ত তিনি প্রচার করছেন ভবিষ্যতে তা কত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে, এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হওয়ার শক্তিকে রুদ্ধ করে সমাজকে স্রোতহীন এক বদ্ধ জলায় পরিণত করবে। মৃত্যুর পর স্বর্গসুখ লাভের প্রলোভন দেখানো দুঃখপীড়িত মানুষকে আশার কুহক দেখানো ছাড়া আর কিছু নয়। এর একমাত্র অভিসন্ধি হলো মানুষ যাতে তার দুরবস্থার জন্য দায়ী এই সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে মুখর না হয়ে ওঠে; একে সংযত রাখার জন্যই এই পুনর্জন্মের প্রলোভন। কিন্তু পুনর্জন্ম তো কষ্ট নিপীড়িত মানুষের কাছে আরও ভয়ঙ্কর। এখানে শুধু বর্তমানের দুঃখ ভুলে যেতে উপদেশ দেওয়া হয়নি, বরঞ্চ আরও বলা হয়েছে যে, সামাজিক বৈষম্য কিছু অন্যায় নয়, কেন না তোমারই গতজন্মের কর্মফলে আজ এই অবস্থা। সামাজিক বৈষম্য না থাকলে আজ যে কষ্ট তুমি করছ, পরজন্মে তার পুরস্কার পাবে কি করে?’- (দর্শন-দিগদর্শন-২, পৃষ্ঠা-৩০)।

বলার অপেক্ষা রাখে না, পুনর্জন্মের সাথে পুর্বজন্মের কর্মফল নামক এক অভূতপূর্ব কল্পনাকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যে অব্যর্থ ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন ছান্দোগ্যের প্রখ্যাত ঋষি উদ্দালক আরুণি, তারই অব্যর্থ প্রভাব অন্যান্য উপনিষদে তো বটেই, কালক্রমে সেটাই অপ্রতিরোধ্য গতিতে পল্লবিত হতে হতে পরবর্তীকালের গড়ে ওঠা দর্শনগুলোরও অবিচ্ছেদ্য তত্ত্বীয় অংশে পরিণত হয়েছিলো। ভারতীয় দর্শনগুলিতে এই জন্মান্তর ও কর্মফলের স্বীকৃতির অংশীদার কেবল বেদ ও উপনিষদনুসারী ষড়দর্শনই নয়, তার সম অংশীদার বৌদ্ধ এবং জৈন দর্শনও। কেননা বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুযায়ী গৌতম বুদ্ধ নিজেই বোধিসত্ত্ব রূপে বিভিন্ন জন্ম অতিবাহিত করার পর শাক্যবংশীয় অন্তিম জীবনে বুদ্ধত্ব বা বোধিজ্ঞানের অধিকারী হন।

চার্বাকেতর ভারতীয় দর্শনচিন্তার অঙ্গিভূত কর্মফলবাদের এই মৌল অধ্যাত্মচিন্তার রূপায়ণ সম্ভব হয়েছে একমাত্র জন্মান্তরবাদের পটভূমিকায়। কর্মফলবাদীদের মতে মানুষের অনুষ্ঠিত সব কর্মই সুনির্দিষ্ট পরিণতির অপেক্ষা রাখে এবং এই পরিণতির ভালো মন্দ, তারতম্য ইত্যাদি কৃতকর্মের গুণাগুণের উপর নির্ভরশীল। মানুষ তার স্বকৃত কর্মের ফল নিজে ভোগ করতে বাধ্য। কিন্তু সব কাজের ফল এক জন্মে পাওয়া যায় না। যে জন্মমৃত্যুসীমানার মধ্যে একটি কাজের অনুষ্ঠান, অনেক সময় সেই সীমানার মধ্যেই কাজটি ফলবাহী হয়। আবার বহু ক্ষেত্রে সেই কাজের ফল অন্য জন্মে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কৃত কর্মের ছাপ আত্মার মধ্যে সংস্কারের আকারে সঞ্চিত থাকে এবং জন্ম থেকে জন্মান্তরে পরিচালিত হয়।

ন্যায় ও বৈশেষিক দর্শনের মতে এই সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত অদৃষ্ট। প্রতিটি জীবের কর্মফলভোগ তার নিজস্ব পাপপুণ্যের সমষ্টি বা ভাণ্ডার অনুযায়ীই হয়ে থাকে। এই কর্মফল-ভাণ্ডার বা সঞ্চিত পাপপুণ্যের সমষ্টি ন্যায়দর্শনে জীবের অদৃষ্ট বলে পরিচিত। এই অদৃষ্টকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়– ধর্ম ও অধর্ম। এগুলির উৎপত্তি যথাক্রমে শুভ ও অশুভ প্রবৃত্তি থেকে। যেমন ন্যায়সূত্র এবং তার বাৎস্যায়নকৃত ভাষ্য ন্যায়ভাষ্যে বলা হয়েছে–
‘পূর্ব্বকৃত-ফলানুবন্ধাৎ তদুৎপত্তিঃ’। (ন্যায়সূত্র-৩/২/৬০)।।
‘পূর্ব্বশরীরে যা প্রবৃত্তির্ব্বাগ্ বুদ্ধিশরীরারম্ভলক্ষণা, তৎ পূর্ব্বকৃতং কর্ম্মোক্তং, তস্য ফলং তজ্জনিতৌ ধর্ম্মাধর্ম্মৌ;’ (ন্যায়ভাষ্য-৩/২/৬০)।
অর্থাৎ :
পূর্বকৃত কর্মফলের (ধর্ম ও অধর্ম নামক অদৃষ্টের) সম্বন্ধপ্রযুক্ত সেই শরীরের উৎপত্তি হয় (অর্থাৎ শরীর-সৃষ্টি আত্মার কর্ম বা অদৃষ্টনিমিত্তক, এটাই তত্ত্ব)। (ন্যায়সূত্র-৩/২/৬০)।।
ভাষ্য : পূর্বশরীরে বাক্য, বুদ্ধি ও শরীরের দ্বারা আরম্ভ অর্থাৎ কর্মরূপে যে প্রবৃত্তি, তাই পূর্বকৃত কর্ম বলে চিহ্নিত, সেই কর্মজনিত ধর্ম ও অধর্ম তার ফল। (ন্যায়ভাষ্য-৩/২/৬০)।।

ন্যায়মতে মানুষের দেহত্যাগ, জন্মান্তরে নতুন দেহে প্রবেশ ইত্যাদি এই অদৃষ্টের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। নৈয়ায়িক আচার্য উদয়নও তাঁর ‘কুসুমাঞ্জলি’ গ্রন্থে বলেছেন–
‘চিরধ্বস্তং ফলায়ালং য কর্ম্মাতিশয়ং বিনা।’- (কুসুমাঞ্জলি)
অর্থাৎ : অনেক কাল পূর্বে ধ্বংসপ্রাপ্ত কর্ম মধ্যবর্তী অতিশয় (অদৃষ্ট) ব্যতীত ফলপ্রদানে সমর্থ হয় না।

তবে মীমাংসা দর্শনে তার নিজস্ব মতে বিশেষ ক্ষেত্রে এই শক্তিকে ‘অপূর্ব’ আখ্যায় অভিহিত করা হয়েছে। বৈদিক যাগযজ্ঞে বিশ্বাসী এই দর্শন পরিণামে স্বর্গই তার লক্ষ্য। তাই শাবরভাষ্যে (২/১/৫) মীমাংসক শবরস্বামী বলছেন,–
‘যাগ ক্রিয়া-বিশেষ, ক্রিয়া আবার ক্ষণিক– উৎপত্তির পরক্ষণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়; কিন্তু যাগক্রিয়ার ফল ক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপন্ন হয় না। অনেক পরে উৎপন্ন হয়। অতএব যাগক্রিয়াকেই কী ভাবে ফল-উৎপাদক বলা যায়? অথচ বিধি আছে ‘দর্শপূর্ণমাসাভ্যাং স্বর্গকামো যজেত’; তাই স্বীকার করতেই হবে দর্শপূর্ণমাস নামের যাগ স্বর্গফলের সাধন। কীভাবে তা সম্ভব হতে পারে ? ‘অপূর্ব’-র দরুন সম্ভব হয়। যাগক্রিয়া একটি অদৃশ্য শক্তি উৎপাদন করে, তারই নাম অপূর্ব। ক্রিয়া বিনষ্ট হলেও এই শক্তিটি কার্যকরি থাকে এবং এই শক্তিই শেষ পর্যন্ত ফল সৃষ্টি করে।’- (শাবরভাষ্য-মীমাংসাসূত্র-২/১/৫)

তার মানে, মীমাংসা-মতে যজ্ঞাদি ক্রিয়া ‘অপূর্ব’ নামে যে শক্তির সঞ্চার করে মৃত্যুর পরেও তা যজ্ঞাদির কর্তা মানুষের আত্মাকে আশ্রয় করে থাকে এবং উপযুক্ত সময়ে ফল প্রসব করে। মীমাংসা-মতে অপূর্বের ব্যাখ্যায় ‘তন্ত্রবার্ত্তিকে’ ভাট্টমীমাংসক ভট্টপদ কুমারিল বলেছেন–
‘কর্ম্মভ্যঃ প্রাগযোগ্যস্য কর্ম্মণঃ পুরুষস্য বা।
যোগ্যতা শাস্ত্রগম্য যা পরা সাহপূর্ব্বমিষ্যতে।।’- (তন্ত্রবার্ত্তিক)
অর্থাৎ : প্রধান কর্ম অনুষ্ঠানের পূর্বে অনুষ্ঠাতা ব্যক্তি স্বর্গাদি ফল লাভের অযোগ্য থাকেন এবং অঙ্গ কর্মের অনুষ্ঠানের পূর্বে অনুষ্ঠেয় যাগাদি কর্মও ফল উৎপাদনের অযোগ্য থাকে। প্রধান কর্ম ও অঙ্গ কর্ম অনুষ্ঠিত হলেই অনুষ্ঠাতা ব্যক্তি ও অনুষ্ঠিত কর্ম উভয়েরই  যোগ্যতা জন্মে। অতএব অনুষ্ঠাতা ব্যক্তি ও অনুষ্ঠিত কর্মে যে যোগ্যতা থাকে, তাকেই শাস্ত্রে অপূর্বাদি শব্দে অভিহিত করা হয়।

যোগশাস্ত্রেও কর্ম ও তার ফল সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা আছে। মানুষের কৃত কর্মের যে সংস্কার দেহ থেকে দেহান্তরে যাবার সময়েও আত্মার সঙ্গি হয়, যোগের পরিভাষায় তার নাম ‘কর্মাশয়’। আশয় হলো সংস্কার বা কর্মফল জন্য বাসনা। সংস্কার অর্থ এক্ষেত্রে পূণ্য কর্মজন্য অথবা পাপ কর্মজন্য সংস্কার। যোগসূত্রভাষ্যের টীকাকার বাচস্পতি মিশ্রের ‘তত্ত্ববৈশারদী’ গ্রন্থে যোগভাষ্যের ব্যাখ্যায় এই ‘কর্মাশয়’কে ‘ধর্ম’ ও ‘অধর্ম’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।–
‘কর্মণামাশয়ো ধর্মাধর্মৌ’। (তত্ত্ববৈশারদী, যোগসূত্রভাষ্য-২/১২)
অর্থাৎ : কর্মের আশয় বা কর্মাশয় হলো ধর্ম ও অধর্ম বা তৎজনিত সংস্কার।

যোগ-মতে এই কর্মাশয় বা সংস্কারের মাধ্যমেই কৃত কর্ম উপযুক্ত সময়ে ফলাবহী হয়। যোগসূত্র অনুসারে এই কর্মাশয়ের বিপাক বা ফলে পরিণতি তিন শ্রেণীতে বিভক্ত– জাতি, আয়ু ও ভোগ। যেমন–
ক্লেশমূলঃ কর্মাশয়ো দৃষ্টাদৃষ্টজন্মবেদনীয়ঃ। (যোগসূত্র-২/১২)।।
সতি মূলে তদ্বিপাকো জাত্যায়ুর্ভোগাঃ। (যোগসূত্র-২/১৩)।।
অর্থাৎ :
ক্লেশই দৃষ্টাদৃষ্টজন্মবেদনীয় কর্ম প্রবৃত্তির কারণ। যে সকল ধর্মাধর্ম কর্ম জীবের বর্তমান জন্মে বেদনার কারণ হয়, তারাই দৃষ্টজন্মবেদনীয়। আর যারা ভবিষ্যৎ কোন জন্মে বেদনার কারণ হয়, তারাই অদৃষ্টজন্মবেদনীয়। (যোগসূত্র-২/১২)।।  ক্লেশ থাকলেই ক্লেশ থেকে উৎপন্ন কর্মাশয়ের জন্ম, মরণ, জাতি প্রভৃতি বিবিধ ফলও থাকবে। (যোগসূত্র-২/১৩)।।

তার মানে, বিশেষ পরিবেশে জন্ম বা জাতি, আয়ু বা জীবনের পরিধি এবং ভোগ বা সুখদুঃখময় সংসারজীবনের বিচিত্র অনুভূতি– সব কিছুই নিয়ন্ত্রিত তার ‘কর্মাশয়’ অর্থাৎ পূর্বজন্ম কিংবা সেই জন্মেই অনুষ্ঠিত কর্মের সংস্কারের দ্বারা। মানুষের সঞ্চিত কর্মের সংস্কার যতদিন না ভোগের মাধ্যমে ক্ষীণ হয়, ততদিন মানুষ জন্ম থেকে জন্মান্তরের ঘূর্ণাবর্তে ঘুরে দুঃখময় সংসারের বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। এই সংস্কারের সম্পূর্ণ অবসান হলেই কেবল মোক্ষ সম্ভব।

কিন্তু যেহেতু সম্পূর্ণ কর্মহীন অবস্থায় মানুষের কোন সময়ই থাকা সম্ভব নয়, ফলে দৈহিক কর্মে লিপ্ত না হলেও মানসিক চিন্তার মাধ্যমে তাকে কাজ করে যেতেই হয়। এখন যদি প্রত্যেক কাজ তার সংস্কার রেখে যায় এবং এই সংস্কার পরিণতি লাভ করে, তাহলে তো মানুষের পক্ষে জন্ম-জন্মান্তরের আবর্ত থেকে পরিত্রাণের কোন উপায়ই থাকে না। তাতে কি মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করা সম্ভব হবে? আর ভারতীয় দর্শনে তাহলে মোক্ষকে চরম লক্ষ্য হিসেবে নির্দেশ করারও কোন আকর্ষণ বা সার্থকতা থাকে কি? সমস্যাটা দার্শনিকদেরও ভাবিয়েছে নিশ্চয়ই। তাই এ সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা হিসেবে ভারতীয় দর্শনগুলি কী উদ্যোগ নিয়েছে তা অনুসরণ করে দেখা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে আলোচনার সুবিধার্থে আমরা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে লতিকা চট্টোপাধ্যায়ের ‘চার্বাক দর্শন’ গ্রন্থে ভারতীয় দর্শনের পটভূমি বিশ্লেষণের রীতি অনুসরণ করবো।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মনুস্মৃতি প্রথম অধ্যায়

স্মৃতি শাস্ত্রের মধ্যে মনুস্মৃতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেমন বৃ্হস্পতিস্মৃতিতে বলা হয়েছে- বেদার্থপ্রতিবদ্ধত্বাত্ প্রাধাণ্যং তু মনো: স্মৃত...

Post Top Ad

ধন্যবাদ