ব্রাহ্মণ গ্রন্থ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

21 August, 2018

ব্রাহ্মণ গ্রন্থ

'ব্রাহ্মণ' শব্দটি এসেছে 'বৃহূ-বর্ধনে' থেকে যার অর্থ 'বৃদ্ধি করা'।  'ব্রাহ্মণ' অর্থও মন্ত্রও হয়। তদনুসারে, ব্রাহ্মণের অর্থ হবে 'গ্রন্থ যা মন্ত্র ব্যাখ্যা করে এবং তাদের বিনিযোগ দেওয়া'। কিছু পণ্ডিতের মতে, ব্রাহ্মণরা হলেন সেই পণ্ডিত যারা ব্রাহ্মণ বর্ণের অন্তর্গত এবং তাদের সমষ্টিগত চিন্তাগুলি হল ব্রাহ্মণ গ্রন্থ। মহাভাষ্যকর পতঞ্জলি ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ শব্দের একই অর্থ বিবেচনা করেছেন, 'সমনার্থভেতৌ ব্রাহ্মণ শব্দো ব্রাহ্মণ শব্দশ্চ' (মহাভাষ্য ৫-১-১)। এই অর্থ গ্রহণ করা হলে 'ব্রাহ্মণ' অর্থ হবে 'চারটি বেদ জানেন এমন ব্রাহ্মণদের দ্বারা বেদ ব্যাখ্যান'।
এককালে ‘ব্রাহ্মণ’ গ্রন্থ অনেক ছিলো; তার মধ্যে বহু গ্রন্থ বিলুপ্ত হয়েছে। তবু ‘ব্রাহ্মণ’-সাহিত্য হিসেবে আজও যা টিকে আছে তার মোট কলেবরও সুবিশাল। যেমন ঋগ্বেদের দুটি ব্রাহ্মণের কথা জানা যায়। একটি ঐতরেয় এবং অন্যটি কৌষীতকি। ঐতরেয় ব্রাহ্মণকে ভাগ করা হয়েছে চল্লিশটি অধ্যায়ে।
ঐতরেয় ব্রাহ্মণের সংকলক ছিলেন মহীদাসঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৫টি পঞ্চিকায় এবং পঞ্চিকাগুলি মোট ৪০টি অধ্যায়ে বিভক্ত। এই গ্রন্থের বিষয়বস্তু ছিলো সোমযাগ, অগ্নিহোত্র ও রাজসূয়যজ্ঞ। কৌষীতকি ব্রাহ্মণ বিভক্ত ছিলো ত্রিশটি অধ্যায়ে। এর বিষয়বস্তু ঐতরেয় ব্রাহ্মণের মতো হলেও এখানে সাধারণ গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কেও বক্তব্য রয়েছে। সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদেরও বেশ কিছু ‘ব্রাহ্মণ’ রয়েছে। ‘সংহিতা’ গ্রন্থের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রধান প্রধান ‘ব্রাহ্মণ’গুলির তালিকা এরকম–
ক। ঋগ্বেদ-সংহিতার সঙ্গে সংযুক্ত–
১। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ
    ২। কৌষীতকি বা সাংখ্যায়ন ব্রাহ্মণ
খ। সামবেদ-সংহিতার সঙ্গে সংযুক্ত–
    ১। তাণ্ড্যমহাব্রাহ্মণ বা পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণ
    ২। ষড়বিংশ ব্রাহ্মণ
    ৩। জৈমিনীয় বা তলবকার ব্রাহ্মণ
গ। কৃষ্ণ-যজুর্বেদ-সংহিতার সঙ্গে সংযুক্ত–
    ১। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ
    ২। কঠ ব্রাহ্মণ
ঘ। শুক্ল-যজুর্বেদ-সংহিতার সঙ্গে সংযুক্ত–
    ১। শতপথ ব্রাহ্মণ
ঙ। অথর্ববেদ-সংহিতার সঙ্গে সংযুক্ত–
    ১। গোপথ ব্রাহ্মণ।
ব্রাহ্মণ’গুলি গদ্যে রচিত। সূত্র সাহিত্যেতেইশটি ব্রাহ্মণের উল্লেখ থাকলেও এর মধ্যে অনেক কটি এখন লুপ্ত ও আংশিক বা পুরোপুরি ভাবে অন্যান্য ব্রাহ্মণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।  ঋগ্বেদীয় ব্রাহ্মণ দুটি, ঐতরেয় ও কৌষীতকী, এদের মধ্যে ঐতরেয় প্রাচীনতর, যার ভৌগোলিক পটভূমিকা কুরুপাঞ্চাল ও বশঊশীনর  অঞ্চল। 
বৈদিক সাহিত্যে সামবেদীয় ব্রাহ্মণ সমৃদ্ধতম – এতে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক ব্রাহ্মণ আছে, যা মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তাণ্ড্য মহা ব্রাহ্মণ বা পঞ্চবিংশতি ব্রাহ্মণ। নাম থেকেই বোঝা যায় এতে আছে পঁচিশটি অধ্যায়। এর আলোচ্য বিষয় হল সামগান ও সাম মন্ত্রের পদ্ধতি। এতে আছে অগ্নিষ্টোম ও অন্য সাতাশি ধরনের যজ্ঞানুষ্ঠান। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বিশ্বসৃজাময়ন যজ্ঞ, যা কিংবদন্তী অনুযায়ী এক হাজার বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়। সরস্বতী ও দৃষদ্বতী নদীর অববাহিকা এর ভৌগোলিক পটভূমিকা। ব্রাহ্মণের যুগে যে সমাজে শিল্পচর্চা গুরুত্ব পেত তার প্রমাণ ঐতরেয় ব্রাহ্মণের একটি চিরন্তন সুন্দর কথায় – শিল্প হচ্ছে বাস্তবেরই অনুকরণ। শিল্পের এইধরনের ব্যাখ্যা বৈদিক সাহিত্যে প্রথম।  পঞ্চবিংশতি ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে শিল্প তিন প্রকার – নৃত্য, গীত ও বাদ্য। ষড়বিংশ ব্রাহ্মণে আছে স্বাহা, স্বধা, বষট্‌ উচ্চারণের বিধি ও দেবমন্দির ও প্রতিমার উল্লেখ – যা থেকে ধারনা করা যায় বৈদিক সাহিত্যের মধ্যে এটি অনেক আধুনিক।  সামবেদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রাহ্মণ হচ্ছে ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণ, যার শেষ আটটি অধ্যায় নিয়ে রচিত বিখ্যাত ছান্দোগ্য উপনিষদ। সামবেদের আর একটি  ব্রাহ্মণে – সামবিধান ব্রাহ্মণে, আছে একটি চিত্তাকর্ষক কথা – সমস্ত জগত সাত সুরের সঙ্গীত প্রবাহে বিধৃত। এখান থেকেই কি সাত সুরের উৎপত্তি?
কৃষ্ণ যজুর্বেদের একটি মাত্র ব্রাহ্মণ পাওয়া যায় – তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ। একে সাধারণত তৈত্তরীয় সংহিতার অংশ হিসেবেই ধরা হয়। এরই উপসংহারে আছে বিখ্যাত কঠোপনিষদ।
ব্রাহ্মণ সাহিত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বহু গবেষিত হচ্ছে শুক্ল যজুর্বেদের শতপথ ব্রাহ্মণ। এর রচয়িতা হিসেবে দুজনের নাম পাওয়া যায়, শাণ্ডিল্য ও যাজ্ঞবল্ক্য।  শাণ্ডিল্য রচিত অংশটির ভৌগোলিক পটভূমিকা ভারতের উত্তর-পশ্চিম আর যাজ্ঞবল্ক্য রচিত অংশটিতে বিদেহর মতো দক্ষিণ-পূর্বের উল্লেখ আছে। তাই মনে করা হয় এই ব্রাহ্মণ সুদীর্ঘ কাল ধরে রচিত।  এই উপাখ্যানটি পরে পুরাণে বিস্তার লাভ করেছে। 
গোপথ ব্রাহ্মণ অথর্ববেদের একমাত্র ব্রাহ্মণ। অন্যান্য ব্রাহ্মণের মতো এতে যজ্ঞানুষ্ঠানের পদ্ধতি প্রক্রিয়া থাকলেও, এতে কিন্তু সেযুগের প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী স্বর খুঁজে পাওয়া যায়। এতে অথর্ববেদের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা দেখে মনে হয় বেদ হিসেবে দীর্ঘকাল অবহেলিত থাকার পর এ যেন এক বিলম্বিত প্রতিবাদ। এই ব্রাহ্মণেই পুত্র শব্দের ব্যুৎপত্তি হিসেবে পুন্নাম নরক থেকে ত্রাণ করে যে সে পুত্র, এর প্রথম উল্লেখ আছে। 

ব্রাহ্মণগুলিকে প্রাচীন সংস্কৃত গদ্যসাহিত্যের প্রথম নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়। তবে এই গদ্য ছিল ছন্দোবদ্ধ, সমাসবদ্ধ ও স্মৃতিতে রাখার সুবিধার জন্য পুনরাবৃত্তি ও পৌনঃপুনিকতা দুষ্ট। তাই এতে সংহিতার কাব্যঝংকারের আনন্দ অনুপস্থিত। ব্রাহ্মণগুলির ভাষা পাণিনি পূর্ববর্তী হিসেবে ধরা হয়। কেবল গোপথ ব্রাহ্মণকে পাণিনির সমসাময়িক বলা হয়েছে।
ব্রাহ্মণগুলিতে প্রচুর উপাখ্যান আছে, যেগুলি পুরাণের গল্পকথাগুলির পূর্বসূরি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় শতপথ ব্রাহ্মণের দেবাসুরের সংগ্রাম ও প্রজাপতি ব্রহ্মার বরদানের ঘটনাগুলি। বৈদিক সাহিত্যে এখানেই প্রথমবার এই সংগ্রামকে সত্য ও অসত্যের দ্বন্দ্ব হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যে ধারনাটি অনেক পরে বিভিন্ন পুরাণে সম্পূর্ণতা লাভ করেছে। কিন্তু ইহা সত্য নয়, ব্রাহ্মণ গ্রন্থ গুলি বেদের ব্যাখ্যান গ্রন্থ।প্রাচীনেরা মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ উভয়কেই বেদ নামে অভইহিত করিয়াছেন। সুতরাং বেদের মন্ত্রাতিরিক্ত বাগই ব্রাহ্মণ শব্দের বাচ্য। সুপ্রাচীন গ্রন্থহুলিতে মন্ত্রের অর্থ-মীমাংসা, বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠানের বিস্তৃত বিবরণ ও নানা বিষয় উপাখ্যান সন্নিবিষ্ট হইয়াছে।পরে ইহায় পুরাণরূপে পল্লবিত হইয়াছে।
যজুর্বেদের পরই আমরা ব্রাহ্মণ গ্রন্থে গদ্য সাহিত্যের প্রথম নিদর্ঢ়ন প্রাপ্ত হইয়া থাকি। ব্রাহ্মণ গ্রন্থে "নারশংসী" নামক আর একটী বিষয়ের উল্লেখ দৃষ্ট হইয়া থাকে। নরস্তুতি বিষয়ক শ্রুতিগুলি "নারশংসী" বা "নারশংস্য"নামে প্রসিদ্ধ।
বৈদিক গবেষণা pdf


অনেক পন্ডিতের মাতানুসারে ব্রাহ্মণ এবং সংহিতা উভয় মিলেই বেদ। কিন্তু বেদোৎপত্তির বিষয়ে আমরা যেসব তথ্য পাই সেক্ষেত্রে বেদ কে অপৌরুষেয় এবং নিত্য বলা হয়েছে।  যেমনঃ
তস্মাৎ যজ্ঞাত্ সর্বহুত ঋচঃ সামানি জজ্ঞিরে।
ছন্দাংসি জজ্ঞিরে তস্মাৎ যজুস্তস্মাদজায়ত।।
(ঋঃ ১০।৯০।৯, যজুঃ ৩১।৭, অথর্বঃ ১৯।৬।১৩)
অর্থাৎ সেই পূজনীয় এবং সবার গ্রহনযোগ্য পরমেশ্বর হতে ঋগবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ উৎপন্ন হয়েছে।


 পদার্থ- (তস্মাৎ) সেই ( যজ্ঞাৎ) ঈশ্বর হইতে,[ য়জ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ শ০ ব্রা০-১/১/২/১৩] য়জ্ঞঃ বিষ্ণু,ব্যাপক ঈশ্বর হইতে ( সর্বহুতঃ) সর্ব পূজিত ( ঋচঃ) ঋগ্বেদ ( সাসানি) সামবেদ ( জজ্ঞিরে) উৎপন্ন হয় ( ছন্দাংসি) অর্থবেদ ( জজ্ঞিরে) উৎপন্ন হয় ( তস্মাৎ) তাহা হইতে ( যজুঃ) যজুর্বেদ ( তস্মাৎ) তাহা হইতে ( অজায়ত) উৎপন্ন হয়।

[টীকা-ছন্দ=গোপথ ব্রাহ্মণের পূর্বভাগ ১/২৯ এ বলা হয়েছে-"অথর্বণা চন্দ্রমা দৈবতং তদেব জ্যোতিঃ সর্বাণি ছন্দাংসি আপস্থানম্" অর্থাৎ অর্থব্বেদের চন্দ্রমা দেবতা, তিনি জ্যোতি,সমস্ত প্রকারের ছন্দ এবং জলের স্থান। এখানে সমস্ত প্রকারের ছন্দ স্পষ্ট করে দেয় যে,অথর্ব্বেদ ছন্দময়। অথর্ব্বেদের ভাষ্যকার ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী তাঁর অথর্ব্বেদভাষ্যভূমিকা'য় বলছেন-অথর্ব্বেদের আরেক নাম "ছন্দ" এর অর্থ আনন্দদায়ক,অর্থাৎ তাহার মধ্যে আনন্দদায়ক পদার্থের বর্ণনা রয়েছে। চান্দেরাদেশ্চ ছঃ [ উঃ ৪/১৯]। ইতি চদু আহ্লাদে-আসুন, চস্য ছঃ। চন্দয়তি আহ্লাদয়তীতে ছন্দঃ]। পাণিনীর অষ্টাধ্যায়ীর অনেক মূত্রে "ছন্দ" কে বেদের অর্থে গ্রহণ করা হয়েছে,যথাঃ "ছন্দাংসি লুঙলঙলিট" [ পা০ ৩/৪/৬] অর্থাৎ বেদে ধাতু সম্বধীয় অর্থে ধাতুর সাথে লুঙ, লঙ লিট প্রত্যয় হয়। অনেকে বলে যে, পাণিনি মুনির অথর্ব্বেদের জ্ঞান চিলো না এজন্য অথর্ব্বেদ অর্বাচীন। এটাও তাদের ভ্রম, কেননা যেই প্রকার শাকলাদি শাখার নামে ঋগ্বেদ প্রসিদ্ধ সেই প্রকার শৌকনাদি সংহিতার নামে অথর্ব্বেদ প্রসিদ্ধ। পাণিনি মুনি "শাকলাব্ধ" [ পা০ ৪/৩/১২৮] এবং "শৌনকাদিভ্যচ্ছন্দসি" [ পা০ ৪/৩/১০৬] এই দুই সূত্রে ঋগ্বেদ এবং অথর্ব্বেদের দুটি শাখার উল্লেখ করেছেন। এ থেকে স্পষ্ট যে পাণিনি মুনির অথর্ব্বেদের জ্ঞান ছিলো।।]
ভাবার্থ-যাহা হইতে চারিবেদ উৎপন্ হইয়াছে তিনিই উপাস্য। প্রতি সৃষ্টির প্ররম্ভে মানব জাতির শৈশবাবস্থায় পরমাত্মা উপদেষ্টা ও রক্ষকরূপে পূর্ব জন্মের সুকৃতি সম্পন্ন ঋষিদের স্বচ্ছ হৃদয়ে বেদ বাণী প্রেরণা দান করেন। ইহাই নৈমিত্তিক জ্ঞান। ইহার গবেষণাতেই মানবের শিক্ষা সভ্যতার জন্ম হয়। শুধু সহজাত জ্ঞান দ্বারা মানবের সভ্যতার বিকাশ হইতে পারে না। তাই অপৌরুষেয় জ্ঞান বা ঈশ্বর প্রদত্ত বেদ বাণীর প্রয়োজন হয়।।

এবং আর একটি মন্ত্রে স্পষ্ট বেদ কে নিত্য বলা হয়েছে " তস্মৈ নূনমভিদ্যবে বাচা বিরূপ নিত্যয়া; ঋগবেদ ৮।৭৫।৬"।  এর সমর্থন বেদান্তসূত্রে বলা হয়েছে " অতএব চ নিত্যম; ১।৩।২৯" অর্থাৎ বেদ অপৌরুষেয় হেতু নিত্য। সেহেতু কল্পান্তরে বেদ বাণীর কোনরূপ পরিবর্তন হয় না।

তো এটা স্বাভাবিক যে, অপৌরুষেয় নিত্য বাণীতে কোন মনুষ্যের জীবনকাহিনী বা ইতিহাস থাকবে না। কারণ ইতিহাস তো কোন ব্যক্তির জন্মের পর তার জীবনের কৃত কর্মের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়ে থাকে। আর কল্পান্তরে ইতিহাস কখনো এক থাকে না এজন্য ইতিহাস সর্বদা অনিত্য। যেহেতু  বেদ সর্বদা নিত্য , তাই অনিত্যাদি ইতিহাস যুক্তগ্রন্থ বেদ হতে পারে না।
অপরদিকে ব্রাহ্মণাদি গ্রন্থে বিভিন্ন যাজ্ঞবল্ক, মৈত্রেয়ী, জনকাদির ইতিহাস বর্নিত রয়েছে। আর কোন মনুষ্য জীবন ইতিহাস কোন দেহধারীর পক্ষেই লেখা সম্ভব। বিশেষতঃ ব্রাহ্মণগ্রন্থ দেহধারী পুরুষ কর্তৃক রচিত হবার কারনেই কখনো বেদ সঙ্গা প্রাপ্ত হতে পারে না। এই সকল গ্রন্থ ঈশ্বরোক্ত নয়।  পরন্ত এগুলো মহর্ষিগণ কর্তৃক বেদের ব্যাখ্যা স্বরূপ লিখিত হয়েছে। 

পাণিনীর অষ্টাধ্যায়ীতে  স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে,
" চতুর্থ্যর্থে বহুলং ছন্দসি "
(অঃ২। পা ৩।সূ ৬২)
অর্থাৎ ব্রাহ্মণ শব্দ দ্বারা ঐতরেয় আদি ব্যাখ্যান গ্রহন হয়,  এবং ছন্দস শব্দ দ্বারা মন্ত্র মূল বেদের গ্রহন হয়ে থাকে। এই জন্য এই সূত্রে ছন্দঃ গ্রহন করা হয়েছে [ছন্দাংসি] বেদ বিষয়ে [চতুর্থ্যয়ে] চতুর্থ বিভক্তির অর্থে ষষ্ঠী বিভক্তি হয় [বহুলং] বহুল করে।
ব্রাহ্মণগ্রন্থ যে বেদ সঙ্গা প্রাপ্ত হতে পারে না,  তার অন্যতম কারন এই যে, " ইষে ত্বোজে ত্বেতি " শতপথঃ কাং ১।অঃ ৭। " ইত্যাদি বেদ মন্ত্রসকলের "প্রতীক" ধরে ব্রাহ্মণগ্রন্থে বেদের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু  মন্ত্র সংহিতাই ব্রাহ্মণগ্রন্থের একটিও প্রতীক কোন স্থানে দেখা যায় না।  অতএব ঈশ্বরোক্ত  রূপ যে, মূল মন্ত্র অর্থাৎ চারটিই সংহিতা আছে তাই বেদ, ব্রাহ্মণগ্রন্থ বেদ নয়।
বেদ মন্ত্রসমূহ ছন্দযুক্ত হয়। বেদ সাত ছন্দ এবং প্রতিপ্রকার ছন্দে ৮ প্রকার উপছন্দ আছে। মোট ৫৬ প্রকার বিশেষ ছন্দ ও তাহার অনেক উপছন্দ নিয়ে বেদ মন্ত্রের শৈলী সৃষ্টি হয়েছে।
একটি নির্দিষ্ট অক্ষর সংখ্যা নিয়ে প্রতিটি ছন্দের নির্মাণ হয়। যেমন গায়ত্রী হয় ২৪ অক্ষরে তাহার সাথে ৪ অক্ষের ক্ষয় অথবা যোগ হয়ে সকল উপছন্দের নির্মাণ হয়েছে যায়। জগতী তে ৪৮ টি অক্ষর আছে। এই ভাবে বেদের প্রতিটি ছন্দের নির্দিষ্ট অক্ষর আছে। প্রতিটি বেদ মন্ত্র নির্দিষ্ট অক্ষরযুক্ত।
তাই বেদ মন্ত্রসমূহ কখন ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থ হইবে না। ব্রাহ্মণ গ্রন্থ সমূহ কাণ্ডিকা আকারে থাকে। কাণ্ডিকা ব্রাহ্মণগুলো অনেক অক্ষরের সহিত গদ্য ও পদ্যে তৈরী হয়। যাহার নির্দিষ্ট কোন অক্ষর সংখ্যা বা ছন্দ নাই। ব্রাহ্মণগ্রন্থ বেদ হতে মন্ত্র নিয়ে উক্ত মন্ত্রের ছন্দবিজ্ঞান তথা সৃষ্টি বিদ্যার বিশেষ আলোচনা করে অথবা ব্রহ্মবিদ্যার বিশেষ আলোচনা করে থাকে।
ব্রাহ্মণ গ্রন্থের মধ্যে আরণ্যক এবং উপনিষদ থাকে। প্রতিটি আরণ্যক অথবা উপনিষদগুলো ব্রাহ্মণগ্রন্থের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ মাত্র।
তাই পাণিনিসূত্র ছন্দ তথা বেদ ও ব্রাহ্মণগ্রন্থের বিশেষ পার্থক্যের নির্দেশ করেছে।

 ব্রাহ্মণগ্রন্থেে প্রমাণ কদাপি বেদের সমতূল্য হতে পারে না।  কারন তাহা ঈশ্বরোক্ত নয়,  কিন্তু এগুলো [ব্রাহ্মণ সকল] বেদানুকুল বশতঃ প্রমাণ যোগ্য হয়ে থাকে।  এদের মধ্যে প্রভেদ এই যে, যদি কোন স্থানে ব্রাহ্মণগ্রন্থের রচনা বেদ প্রতিকূল দৃষ্ট হয়,  তবে তা প্রামাণ্য নয়, কিন্তু বেদে যদি ব্রাহ্মণগ্রন্থের বিরোধ দৃষ্ট হয়,  তবুও তা সর্বদা প্রামাণ্য।  অর্থাৎ বেদ স্বতঃ প্রমাণ ও ব্রাহ্মণগ্রন্থ সকল বেদানুকুল বশতঃ পরতঃ প্রমাণ স্বরূপ।


[সন্দর্ভঃ ঋগবেদভাষ্যভূমিকা [মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী], বেদ রহস্য [মহাত্মা নারায়ন স্বামী], Secret of the Vedas [ ঋষি অরবিন্দ],  অষ্টাধ্যায়ী [পাণিনী] 

এখন কেন বা কিসের ভিত্তিতে তারা এই কথা বলছে?

ঋক্, সাম,যজু বা অথর্ববেদের নয় বরং Black বা কৃষ্ণযজুর্বেদের(একে কৃষ্ণ বা Black বলা হয় এই কারনেই যে এই গ্রন্থে ১০০০ শুক্ল যজুর্বেদ মন্ত্রের সাথে কঠক ব্রাহ্মণ এর ২০০০+ শ্লোক যুক্ত আছে তাই এটিকে মিশ্র অর্থে কৃষ্ণ বলা হয়,এটিকে তৈত্তিরীয় সংহিতাও বলা হয়।বিষ্ণুপুরাণের রুপক কাহিনী থেকে বোঝা যায় যে তিত্তির পাখিসমূহ থেকে সঞ্চিত জ্ঞান বা নানা অঞ্চল থেকে মিশ্রিত শ্লোকের সমন্বয়ে তৈরী ব্রাহ্মণ গ্রন্থ সমন্বয়ে কৃষ্ণযজুর্বেদ এর সৃষ্টি) অপ্রধান একটি শ্রৌতসূত্র যা কাত্যায়ন শ্রৌতসূত্র নামে পরিচিত সেই কাত্যায়নেও নয় বরং কাত্যায়ন এর একটি প্রতিজ্ঞা পরিশিষ্ট নামক খিল অংশে পাওয়া যাওয়া একটি শ্লোক এর ভিত্তিতে।শ্লোকটি হল-

মন্ত্রব্রাহ্মণয়োর্বেদনামধেয়ম্'।অর্থাৎ মন্ত্র ব্রাহ্মণ উভয়ের নাম ই বেদ।

মজার বিষয় হল ঋগ্বেদের সাংখ্যায়ন ও অশ্বলায়ন , শুক্ল যজুর্বেদের কাত্যায়ন, তথা সামবেদের ব্রাহ্মায়ণ এবং লাটচায়ন কোন প্রধান সূত্রেই এটি পাওয়া যায় না।

এই সূত্রের ব্যাখ্যাতে বিখ্যাত টীকাকার হরদত্ত তাই বলেছেন "কৈশ্চিন্মন্ত্রাণামেব বেদত্বমাখ্যাতম্ (আশ্রিতম্)" অর্থাৎ-- 'অনেক প্রাচীন আচার্য শুধু মন্ত্রকেই বেদ মেনেছেন' অর্থাৎ প্রাচীন আচার্য্যের মতে মন্ত্রেরই কেবল মূখ্য বেদত্ব সিদ্ধ, ব্রাহ্মণের নয়, এটা সুনিশ্চিত হয়ে যায়।

ব্রাহ্মণনাম কর্মণস্তত্মন্ত্রাণাং
চ ব্যাখ্যানগ্রন্থ
(তৈত্তিরীয় সংহিতা ৭.৫.৭)

অর্থাৎ মন্ত্র সংহিতার ব্যাখ্যা করার জন্য যে গ্রন্থ লিখা হয়েছে তাই ব্রাহ্মণ গ্রন্থ।


তাদের এহেন উদ্ভট ধারনার কি কারন যে যেখানে ব্রাহ্মণ গ্রন্থ নিজেই বলছে তারা বেদের ব্যাখ্যা করার জন্য লিখিত গ্রন্থমাত্র সেখানে সে নিজেই কিভাবে বেদ হতে পারে? এর কারন হল এরা শাস্ত্র অধ্যয়ন ই করেনি।করলে জানত তৎকালীন সময়ে চার বেদের পর অন্যান্য প্রথিতযশা গ্রন্থসমূহকে বেদ, পঞ্চমবেদ ইত্যাদি নামে প্রায় প্রশংসাসূচক ডাকা হত।যেমন ধরুন Medical Science এর প্রথিতযশা Davidson's Principle&Practice Of Medicine কে পাশ্চাত্যে Medicine Bible বলা হয়।ঠিক তেমনি আমাদের প্রাচ্যে নাট্যবেদ,উপবেদ,ছন্দবেদ ইত্যাদি নামে প্রথিতযশা বইসমূহকে ভুষিত করা হত।যেমন মহাভারত,রামায়ণ কে পঞ্চমবেদ বলে ভূষিত করা হয়েছে।কিন্তু কোন উন্মাদও মহাভারতকে আসলেই বেদ বলে মনে করবেনা।


এসব অপপ্রচারকারীরা বেদ নিয়ে বিধর্মীদের যেকোন বিদ্রুপ,প্রশ্নের জবাব দেবার জন্য মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীসহ সকল আর্ষ বেদভাষ্যকারের দ্বারস্থ হন এবং বলেন সায়নের ভাষ্য ভুল।কিন্তু এই ক্ষেত্রে তারা আবার সায়নের আশ্রয় নিয়ে বলেন যে সায়নাচার্যও বলেছেন ব্রাহ্মণ গ্রন্থও বেদ তাই ব্রাহ্মণ কে বেদ মানতে হবে।অর্থাৎ বিপদের সময় সায়নকে ভুল মেনে দয়ানন্দজির আশ্রয় নিলেও ব্যবসার সময় তারা দয়ানন্দজিকে ভুলে গিয়ে সায়নের দোহাই দেন।কিন্তু মজার কথা হল সায়নাচার্য তাদের জন্য বিরাট দুঃখ রেখে গেছেন।

তিনি তৈত্তিরীয় সংহিতার ভাষ্য করার সময় লিখেছেন-

যদ্যপি মন্ত্রব্রাহ্মণাত্মকো বেদস্তথাপি। ব্রাহ্মণস্যমন্ত্রব্যখ্যারুপত্বান্মন্ত্রা এবাদো সমাম্নাতা।।
(তৈত্তিরীয় সংহিতা সায়নভাষ্য পৃষ্ঠা ৩)

অর্থাৎ মন্ত্র-ব্রাহ্মণকে যদিও বেদ বলা হয় তথাপি ব্রাহ্মণ হল আসলে মন্ত্রের ব্যাখ্যায় লিখিত গ্রন্থ,মন্ত্রের সমান নয়।
কাঠক সংহিতার ভাষ্যে সায়ন একই কথা লিখেছেন-

তত্র শতপথব্রাহ্মণস্য মন্ত্রয়াখ্যারুপত্বাদু ব্যাখ্যেয়মন্ত্র প্রতিপাদক সংহিতাগ্রন্থ পূর্বেভাবিত্বাত প্রথমো ভবতি

অর্থাৎ শতপথ ব্রাহ্মণসহ ব্রাহ্মণসমূহ প্রামাণিক সংহিতাগ্রন্থের ব্যাখা গ্রন্থ।
প্রাচীন বেদভাষ্যকার ভাস্কর তৈত্তিরীয় সংহিতার ভাষ্যে বলেছেন একই কথা-

ব্রাহ্মণ নাম কর্মণস্তন্মন্ত্রাণাং চ ব্যাখ্যানগ্রন্থ

অর্থাৎ বেদ তথা মন্ত্র সংহিতার ব্যাখ্যানগ্রন্থ ই হল ব্রাহ্মণ।

এজন্যে ঋষি জৈমিনী তার পূর্বমীমাংসায় বলেছেন-

মন্ত্রতস্তু বিরোধে স্ব্যাতপ্রয়োগরুপসামর্থ্যাদুৎপত্তি দেশ সঃ
(পূর্বমীমাংসা ৫.১.১৬)

অর্থাৎ যেহেতু এই মন্ত্র সংহিতার উৎপত্তি ঐশ্বরিক(এবং ব্রাহ্মণগ্রন্থের তা নয়) তাই মন্ত্রের সাথে ব্রাহ্মণের বিরোধে মন্ত্রের কথা ই শ্রেষ্ঠ মানতে হবে।

অর্থাৎ প্রাচীন সায়ন,ভাস্কর,জৈমিনি সহ সকলেই একবাক্যে মেনেছেন যে একমাত্র মন্ত্রসংহিতা ই বেদ/শ্রুতি(যা ধ্যানে শোনা হয়েছে,ঐশ্বরিক)।ব্রাহ্মণ গ্রন্থকে কেউ কেউ বেদ বলে উপমা দিলেও সবাই পরিস্কার করে দিয়েছেন যে এটা মনুষ্যরচিত গ্রন্থ মাত্র,ঐশ্বরিক কিছু নয়।

কালজয়ী গ্রন্থ অষ্টাধ্যায়ীতে পাণিনি একই কথা বলেছেন-
পুরাণপ্রোক্তেষু ব্রাহ্মণকল্পেষু।।
(৪.৩.১০৪)

অর্থাৎ পুরাণতথা পুরাতন ঋষিরা ব্রাহ্মণ প্রোক্ত তথা রচনা করেছেন
শতপথ ব্রাহ্মণ এটাও স্পষ্ট করেছে যে ব্রাহ্মণ গ্রন্থ আসলে কি কি নিয়ে গঠিত-
গাথা ইতিহাসা পুরাকল্পশ্চ ব্রাহ্মণান্যেচ
(শতপথ ১৪.৭.২.১১,১২,১৩)

অর্থাৎ গাথা,ইতিহাস,পুরাণ এইসব নিয়ে ব্রাহ্মণ রচিত।

মীমাংসাসূত্র আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে-
তচ্চোদকেষু মন্ত্রাখ্যা
শেষে ব্রাহ্মণশব্দ
(
পূর্বমীমাংসা ২.১.৩৩)
অর্থাৎ ঈশ্বর যে বাণী প্রেরণ করেছেন তাই হল মন্ত্রসংহিতা আর এর শেষে যেসকল শব্দ রচিত হয়েছে ব্যখ্যা হিসেবে তা হল ব্রাহ্মণ।
ঋষি গৌতমও ন্যায়সুত্রে একই কথা বলেছেন-

তদপ্রামাণ্যমনৃণব্যাখ্যাতপুনরোক্তদোশেভ্য
(২.১.৫৬)

অর্থাৎ এই প্রামাণ্য মন্ত্রবেদের শেষে ব্যাখ্যানরুপ ব্রাহ্মণ গ্রন্থ পুনরায় লেখা হয়েছে বা উক্ত হয়েছে।
এবং আর একটি মন্ত্রে স্পষ্ট বেদ কে নিত্য বলা হয়েছে
"তস্মৈ নূনমভিদ্যবে বাচা বিরূপ নিত্যয়া"
ঋগবেদ ৮.৭৫.৬
" অত এব চ নিত্যম;তু নিত্য।"


সেহেতু কল্পান্তরে
তো এটা স্বাভাবিক যে, অপৌরুষেয় নিত্য বাণীতে কোন মনুষ্যের জীবনকাহিনী বা ইতিহাস থাকবে না। কারণ ইতিহাস তো কোন ব্যক্তির জন্মের পর তার জীবনের কৃত কর্মের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়ে থাকে। আর কল্পান্তরে ইতিহাস কখনো এক থাকে না এজন্য ইতিহাস সর্বদা অনিত্য। যেহেতু বেদ সর্বদা নিত্য , তাই অনিত্যাদি ইতিহাস যুক্তগ্রন্থ বেদ হতে পারে না।

অপরদিকে ব্রাহ্মণাদি গ্রন্থে বিভিন্ন যাজ্ঞবল্ক, মৈত্রেয়ী, জনকাদির ইতিহাস বর্নিত রয়েছে। আর কোন মনুষ্য জীবন ইতিহাস কোন দেহধারীর পক্ষেই লেখা সম্ভব। বিশেষতঃ ব্রাহ্মণগ্রন্থ দেহধারী পুরুষ কর্তৃক রচিত হবার কারনেই কখনো বেদ সঙ্গা প্রাপ্ত হতে পারে না। এই সকল গ্রন্থ ঈশ্বরোক্ত নয়। পরন্ত এগুলো মহর্ষিগণ কর্তৃক বেদের ব্যাখ্যা স্বরূপ লিখিত হয়েছে।

স্পষ্ট যে, ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদ নয় পরন্ত তার ব্যাখ্যাস্বরূপ লিখিত হয়েছে। এরূপ অনেক বেদ মন্ত্রের ব্যাখ্যা ব্রাহ্মণাদি গ্রন্থে পাওয়া যায়। যেমন-

ঋগবেদ ১।২৪।৩ এর ব্যাখ্যা ঐতেরীয় ব্রাহ্মণ ১।১৬ মধ্য, যজুর্বেদের ১ম মন্ত্রের ব্যাখ্যা শতপথ ১।৭।১ এ, তথা সামবেদ ১ম মন্ত্রের ব্যাখ্যা তাণ্ড্য  ব্রাহ্মণ ১১।২।৩ এর মধ্যে।

ঋষি অরবিন্দের মতেও এটা স্পষ্ট যে, বেদ মন্ত্র কোন ইতিহাসাদির বর্ণনা করে নি। বরং মন্ত্রগুলোর একটা উচ্চ আধ্যাত্মিক অর্থ রয়েছে এটাই তিনি স্বীকার করেছেন।

মন্ত্রসংহিতা ই একমাত্র ব্রহ্ম প্রেরিত বাণী তা স্বয়ং বেদ নিজেই বলছে-
প্র নুনং ব্রহ্মণ স্বতির্মন্ত্রং বদত্যুক্তম
(যজুর্বেদ ৩৪/৫৭)

অর্থাৎ ব্রহ্ম স্বয়ং মন্ত্রের উপদেষ্টা।(ব্রাহ্মণ এর নন)

অর্থাৎ আমরা বুঝলাম যে প্রাচীন সায়ন,ভাস্কর,হরদত্ত জৈমিনি, পাণিনি,গৌতম সহ সকল বিখ্যাত ভাষ্যকার ই বলে গেছেন একমাত্র মন্ত্রসংহিতা ই ঐশ্বরিক গ্রন্থ,ব্রাহ্মণ গ্রন্থ মনুষ্য লিখিত যা বেদের তথা মন্ত্রসংহিতার ব্যখ্যামাত্র।

 ঋগবেদের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ইতরারপুত্র ঐতরেয় মহীদাসের লেখা ঐতেরীয় ব্রাহ্মণ যা ৭০০০ বছর পূর্বে লেখা। ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলির ভাষা অত্যন্ত জটিল এবং প্রতীকী হওয়ার কারণে এই গ্রন্থগুলি সর্বদা রহস্যজনক থাকে। আচার্য অগ্নিব্রত জী এই বইটিকে বিশ্বে প্রথমবারের মতো একটি বৈজ্ঞানিক ভাষ্য হিসাবে তৈরি করেছে। পুস্তক টি ২৮০০ পৃষ্ঠায় চারটি অংশে প্রকাশিত হয়েছে। বেদ বিজ্ঞান আলোক কেবল সৃষ্টি উৎসের বিজ্ঞানই নয়, সৃষ্টি বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক যেমন অ্যাস্ট্রো ফিজিক্স, কসমোলজি, কোয়ান্টাম ফিল্ড থিয়োরি, স্ট্রিং থিয়োরি, কণা পদার্থবিজ্ঞান, পারমাণবিক এবং পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদির অনেক অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানের পুস্তক। 
ব্রাহ্মণ গ্রন্থ সনাতন ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হলেও তা সম্বন্ধে আমরা অনেকেই জানিনা। পবিত্র বেদের পরেই ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে বলে ধরা হয়।
বেদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, উপাচার ও এদের বিনিয়োগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদানকারী গ্রন্থসমূহ হল ব্রাহ্মণ গ্রন্থ।
' ব্রহ্মন্ ' শব্দের সাথে অণ্ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ব্রাহ্মণ শব্দটি তৈরী হয়েছে৷ শতপথ ব্রাহ্মণ ৭।১।১।৫ অনুযায়ী ব্রহ্ম অর্থ মন্ত্র ও ৩।১।৪।১৫ অনুযায়ী ব্রহ্ম অর্থ যজ্ঞ । বেদমন্ত্রসমূহের বিনিয়োগ ও ব্যাখ্যা প্রস্তুতকারক , যজ্ঞের ব্যাখ্যা ও বিবরণ প্রস্তুতকারক গ্রন্থই হলো ব্রাহ্মণ ৷
পূর্ব মীমাংসা ২।১।৩৩ অনুযায়ী মন্ত্র ব্যতীত বৈদিক বাঙ্ময়ের অবশিষ্ট অংশই ব্রাহ্মণ । মন্ত্র নিত্য ও ঈশ্বরোক্ত । পবিত্র ৪ বেদ তথা মন্ত্র সংহিতা হলো ঋক্ , সাম ও যজুর্বেদ যারা পদ্য , গান ও গদ্যাত্মক৷ অপরদিকে ব্রাহ্মণ গ্রন্থ সর্বদাই গদ্যাত্মক ।
বৈদিক যজ্ঞ, উপাচার বিধিসমূহের বর্ণনা ও ব্যাখায় ব্রাহ্মণ গ্রন্থের গুরুত্ব অপরিসীম। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় হিন্দু বিবাহের বিখ্যাত বাক্যটি এই ব্রাহ্মণ গ্রন্থ থেকেই নেয়া-
যদেতদ্ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম।
যদিদং হৃদয়ং মম তদস্তু হৃদয়ং তব।।
(সামবেদীয় ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণ,১ম প্রপাঠক,৩য় সূক্ত,শ্লোক ৯)
অনুবাদঃ তোমার হৃদয় আমার হোক,আমার হৃদয় তোমার।
ব্রাহ্মণ গ্রন্থসমূহে নানা যাজ্ঞিক উপাচারের বর্ণনার সাথে সাথে আছে রাজারাজড়াদের ইতিহাস, বিভিন্ন পৌরাণিক গল্প, রূপকথা। মনুষ্য রচিত গ্রন্থ বলে এতে বিভিন্ন রাজাদের জীবনের গল্প, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের কথা। তবে দুঃখজনক হলো অধিকাংশ ব্রাহ্মণ গ্রন্থ ই এখন পাওয়া যায় না। ব্রাহ্মণ গ্রন্থসমূহ একেকটি একেক সময়ে, একেকযুগে রচিত হয়েছে। দেখা গেছে কিছু ব্রাহ্মণগ্রন্থ ৯০০ খ্রিষ্টপূর্বে আবার কিছু ব্রাহ্মণগ্রন্থ ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বে রচিত। বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্নজন কর্তৃক বিভিন্নসময়ে রচিত হওয়ায় এদের অনেকগুলোই এখন পাওয়া যায়না, অনেকগুলোই বিভিন্ন সময়ে বিকৃত হয়েছে, আবার অনেকগুলোই পাওয়া গেলেও এদের সম্পূর্ণ অংশ পাওয়া যায় না। স্বাভাবিকভাবেই মনুষ্যরচিত হওয়ায় এদের নির্দিষ্ট গাণিতিক ও বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণপ্রণালী ছিলনা, আর এটিই এদের অনেকগুলোর হারিয়ে যাবার মূল কারণ।
বর্তমানে এখনো আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যায় এমন প্রধান প্রধান ব্রাহ্মণ গ্রন্থসমূহ হলো-
* ঐতরেয় ব্রাহ্মণ (ঋগ্বেদ সম্বন্ধীয়)
* কৌষিতকি ব্রাহ্মণ(ঋগ্বেদ সম্বন্ধীয়)
* শতপথ ব্রাহ্মণ(যজুর্বেদ সম্বন্ধীয়)
* মহাতাণ্ড্য ব্রাহ্মণ (সামবেদ সম্বন্ধীয়)
* ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণ (সামবেদ সম্বন্ধীয়,যার একটি অংশ ছান্দোগ্য উপনিষদ নামে পরিচিত)
* গোপথ ব্রাহ্মণ (অথর্ববেদ সম্বন্ধীয়)
আগে ছিল কিন্তু এখন আর পাওয়া যায় না এমন হারিয়ে যাওয়া কিছু ব্রাহ্মণ গ্রন্থের সাথেও আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই-
➢ঋগ্বেদীয় ব্রাহ্মণ
১। পৈঙ্গি , পৈঙ্গ্য বা পৈঙ্গায়নি ব্রাহ্মণ - আপস্তম্ব শ্রৌতসূত্র ৫।১৪।১৮, ৫।২৯।৪ , বৌধায়ন শ্রৌতসূত্র ২।৭ , সত্যাষাঢ় শ্রৌতসূত্র ও মহাদেবকৃত বৈজয়ন্তী ব্যাখ্যা ৩।৭ , ৬।৫ ; মহাভাষ্য ৪।২।৬৬ এসব জায়গাতে প্রাচীন এই পৈঙ্গী ব্রাহ্মণের কথা উল্লেখ থাকলেও এখন আর এই ব্রাহ্মণটি পাওয়া যায় না।
[ প্রসঙ্গতঃ গৌতমধর্মসূত্রের ১৪।৬, ১৪।১৭তে মস্করী ভাষ্যে পৈঙ্গি গৃহ্যসূত্র নামের একটি গৃহ্যসূত্রেরও উল্লেখ পাওয়া যায় ]
২। তলবকার ব্রাহ্মণ - দ্রাহায়ণ শ্রৌতসূত্র ৬।২।১ ; ব্রহ্মসূত্র ১।১।৬ শাঙ্করভাষ্য ; ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৮।২২ ও তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ২১।১১।৩ সায়ণভাষ্য
৩। বহ্বৃচ ব্রাহ্মণ - কৌষীতকি ব্রাহ্মণ ১৬।৯ ; কাঠক গৃহ্যসূত্র ৫৯।৫ , শাঙ্খ্যায়ন শ্রৌতসূত্র ১।১।১৫ দেবপাল ভাষ্য ; পূর্ব মীমাংসা ২।৪।১ ও ৬।৩।১ শাবরভাষ্য এসব জায়গায় তলবকার ব্রাহ্মণের কথা পাওয়া যায়, অথচ এই গ্রন্থটি এখন আর নেই, হারিয়ে গেছে কালের আবর্তে।
৪। আশ্বলায়ন ব্রাহ্মণ - ভট্ট রঘুনন্দকৃত স্মৃতিতত্ত্বে মলমাস প্রকরণে উল্লেখিত । ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৩।১।১ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ । সম্ভবতঃ অর্বাচীন বঙ্গীয় ও মৈথিল বিদ্বানগণ ঐতরেয় ব্রাহ্মণকেই আশ্বলায়ন ব্রাহ্মণ বলেন ৷
৫। গালব ব্রাহ্মণ - মহাভাষ্য ৬।৩।৬১, ৪।১।১৬০, ১।১।৪৪ এইসব গ্রন্থে গালব ব্রাহ্মণ নামক ব্রাহ্মণ গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায়। এটিও এখন হারিয়ে গেছে।
➢যজুর্বেদীয় ব্রাহ্মণ
১। চরক ব্রাহ্মণ - হারিয়ে যাওয়া এই গ্রন্থটির উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদ ৮।৭৭।১০ সায়ণ ভাষ্য ; শাঙ্খ্যায়ন শ্রৌতসূত্র ১।৩।১৫, ১।১৭।৭ ২।৬।৪ ইত্যাদির আনর্ত্তীয় বরদত্তসুতকৃত ব্যাখ্যা ; যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি ১।৩২, ১।৭৭, ৩।২২ বিশ্বরূপাচার্যকৃত বালক্রীড়া টীকা
২। শ্বেতাশ্বতর ব্রাহ্মণ - শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু প্রাচীনকালে শ্বেতাশ্বতর ব্রাহ্মণ নামেও একটি ব্রাহ্মণ ছিল। অশ্ববামীয় সূক্তের আত্মানন্দকৃত টীকা , যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি ১।২ বিশ্বরূপাচার্যকৃত বালক্রীড়া টীকা ইত্যাদি জায়গায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়।
৩। কাঠক ব্রাহ্মণ - ৮টি ছোট খণ্ড পাওয়া গিয়েছে , তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩।১০-১২কেও কাঠক ব্রাহ্মণ বলে ; নিরুক্ত ১০।৫ দেবরাজ যজ্বা টীকা ; গৌতম ধর্মসূত্র ২২।১ মস্করী ভাষ্য।
৪। মৈত্রেয়াণী ব্রাহ্মণ - বৌধায়ন শ্রৌতসূত্র ৩০।৮ , ঋগ্বেদের ৮ম অষ্টকের ১ম অধ্যায়ের বেঙ্কট মাধবভাষ্যের প্রারম্ভিক শ্লোকে এর উল্লেখ আছে। বর্তমানে এটিও আর পাওয়া যায় না।
৫। জাবাল ব্রাহ্মণ - গৌতম ধর্মসূত্র ১৬।২৫, ২৩।২২ মস্করী ভাষ্যে এই প্রাচীন গ্রন্থটির কথা থাকলেও এটির অস্তিত্ব এখন আর পাওয়া যায় না।
[ এখানে বলে রাখা ভালো জাবালোপনিষদ নামক একটি উপনিষদের অনেক বাক্য শঙ্করাচার্য তার ব্রহ্মসূত্রভাষ্যে উল্লেখ করলেও ৩।৩।৩৭, ৩।৩।৪০এ জাবালাঃ , জাবালানাং শ্রুতিঃ বলে যে উদ্ধৃতি দিয়েছেন তার মূল পাওয়া যায় না । অতএব এগুলো আসলে কোন গ্রন্থের তার কোন সূত্র নেই, সেই গ্রন্থগুলো হারিয়ে গেছে]
৬। খাণ্ডিকেয় ব্রাহ্মণ - ভাষিকসূত্র ৩।২৬
৭। ঔখেয় ব্রাহ্মণ - ভাষিকসূত্র ৩।২৬
৮। হারিদ্রবিক ব্রাহ্মণ - ঋগ্বেদ ৫।৪০।৮ সায়ণ ভাষ্য ; নিরুক্ত ১০।৫ এর দূর্গ টীকায় মৈত্রেয়াণীরই শাখাভেদ বলা হয়েছে ; মহাভাষ্য ৪।২।১০৪, বার্তিক ১৯
৯। তুম্বুরু ব্রাহ্মণ - মহাভাষ্য ৪।২।১০৪
১০। আহ্ণরক ব্রাহ্মণ - তৈত্তিরীয় প্রাতিশাখ্য ২৩।১৬ ; নিরুক্ত ৩।৩১ দূর্গকৃত নিরুক্তবৃত্তি
১১। কংকতি ব্রাহ্মণ - আপস্তম্ব শ্রৌতসূত্র ১৪।২০।৪
১২। ছাগলেয় ব্রাহ্মণ - বৌধায়ন শ্রৌতসূত্র ২৩।৫ , ঋগ্বেদ ১।৩৭।১১ বেঙ্কটমাধব ভাষ্য
➢সামবেদীয় ব্রাহ্মণ
১। ভাল্লবি ব্রাহ্মণ - সুরেশ্বরাচার্যকৃত বৃহদারণ্যকের বার্তিক ২১৯-২০ ; কাশিকা ৪।২।৬৬, ৪।৩।১০৫ ; দ্রাহ্যায়ণ শ্রৌতসূত্র ৩।৪।২ , ব্রহ্মসূত্র ৩।৩।২৬ শাঙ্করভাষ্য ; ভাষিকসূত্র ৩।১৫
২। কালববি ব্রাহ্মণ - আপস্তম্ব শ্রৌতসূত্র ২০।৯।৯
৩। রৌরুকি ব্রাহ্মণ - গোভিল গৃহ্যসূত্র ৩।২।৬ ; লাট্যায়ন শ্রৌতসূত্র ২।৩।১ অগ্নিস্বামী ভাষ্য
৪। শাট্যায়ন ব্রাহ্মণ - ব্রহ্মসূত্র ৩।৩।২৫-২৭, ৪।১।১৬,১৭ শাঙ্করভাষ্য ; আপস্তম্ব শ্রৌতসূত্র ৫।২৩।৩, ১০।১২।১৪, আশ্বলায়ন শ্রৌতসূত্র ১।৪।১৩ , ঋগ্বেদ সায়ণ ভাষ্য ১।৮৪।১৩ , ৭।৩৩।৭, ৮।৯১।৩,৫,৭, ; বেঙ্কট মাধবকৃত ঋগ্বেদ ভাষ্য ১।২৩।১৬, ১।৫১।১৩,১৪ ; তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ সায়ণ ভাষ্য ৪।৬।৫, ৫।৪।১৪
কোন বেদের শাখাগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত ছিল তা অনিশ্চিত এমন হারিয়ে যাওয়া বা অনুপলব্ধ ব্রাহ্মণ গ্রন্থ-
১। আরুণেয় ব্রাহ্মণ - মহাভাষ্য ৪।২।১০৪
২। সৌলভ ব্রাহ্মণ - মহাভাষ্য ৪।২।৬৬, ৪।৩।১০৫
৩। শৈলালী ব্রাহ্মণ - আপস্তম্ব শ্রৌতসূত্র ৬।৪।৭
৪। পরাশর ব্রাহ্মণ - তন্ত্র বার্তিক চৌখাম্বা সংস্করণ ৯৬৪
৫। মাষশরাবি ব্রাহ্মণ - দ্রাহ্যায়ণ শ্রৌতসূত্র ৮।২।৩০ ; পাণিনীয় গণপাঠ ৮২।৩, ৮৯।১৭
৬। কাপেয় ব্রাহ্মণ - সত্যাষাঢ় শ্রৌতসূত্র ১।৪ ;
৭। রহস্যাম্নায় ব্রাহ্মণ - স্মৃতি রত্নাকর পৃ ৭৪
৮। নিরুক্ত ব্রাহ্মণ - ন্যায়পরিশুদ্ধি পৃ ২৯২
অর্থাৎ আমরা দেখলাম ব্রাহ্মণগ্রন্থ নামের আমাদের প্রাচীন এই গ্রন্থগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ই হারিয়ে গেছে। মনুসংহিতাতেও এই কথাই বলা আছে যে মনুষ্যসৃষ্ট গ্রন্থ এককালে নষ্টভ্রষ্ট হয়ে যায়। তবে বর্তমানে যেগুলো এখনো পাওয়া যায় সেগুলো আমাদের অমূল্য সম্পদ তাতে সন্দেহ নেই।

মন্ত্র সংহিতা বেদ। ছন্দ থেকে ব্রাহ্মণ পৃথক পাণিনি অষ্টধ্যায়ী ৪।২।৬৬ [ देखिये-छन्दोब्राह्मणानि च तद्विषयाणि ]
জৈমিনিকৃত পূর্বমিমাংসা ১।২।৩২ [ तच्चोदकेषु मंत्राख्या ] ২।১।৩৩ [ शेषे ब्राह्मणशब्दः ] যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে বেদের যে অংশটি অবশিষ্ট আছে তা ব্রাহ্মণ।

"ब्रह्मणां वेदानामिमानि व्याख्यानानि ब्राह्मणानि अर्थात् शेषभूतानि सन्तीति"-ঈশ্বর বেদস্থ বাক্য অর্থাৎ ছন্দ মন্ত্রাদি দ্বারা ঋষিদের বেদ জ্ঞাত করেছেন, বাকি অর্থ শিক্ষা, শ্রবণ, আবৃত্তি, ব্যখ্যা ইত্যাদি..যা কিছু। ব্রহ্মা থেকে জৈমিনি মুনি মহাশয়রা করে গেছেন, যার কারনে ঐতরেয় প্রভৃতি গ্রন্থগুলি ব্রহ্মাদির ব্যাখ্যান গ্রন্থ.. তাই এসকলের নাম ব্রাহ্মণ গ্রন্থ হয়েছে, অর্থাৎ "ব্রাহ্মণম বেদনামিমানি ব্যাখ্যানানি ব্রাহ্মণানি অর্থাৎ শেষভূতানি সন্তীতি"।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মনুস্মৃতি প্রথম অধ্যায়

স্মৃতি শাস্ত্রের মধ্যে মনুস্মৃতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেমন বৃ্হস্পতিস্মৃতিতে বলা হয়েছে- বেদার্থপ্রতিবদ্ধত্বাত্ প্রাধাণ্যং তু মনো: স্মৃত...

Post Top Ad

ধন্যবাদ