ঈশ উপনিষদ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

24 August, 2018

ঈশ উপনিষদ

এটি শুক্ল যজুর্বেদ গ্রন্থের সর্বশেষ অধ্যায়। ঈশোপনিষদ্‌ হলো একটি মুখ্য উপনিষদ্‌ (প্রধান উপনিষদ্‌)।প্রামাণিক ঋষিকৃত উপনিষদ ১১টি, যেগুলি হলো –
১. ঈশ, ২. কেন, ৩. কঠ, ৪. প্রশ্ন, ৫. মুণ্ডক, ৬. মাণ্ডুক্য, ৭. ঐতরেয়, ৮. তৈতরীয়, ৯. ছান্দোগ্য, ১০. বৃহদারণ্যক, ১১. শ্বেতাশ্বতর। বেদের কাণ্ব ও মধ্যন্দিন শাখায় এই উপনিষদ্‌ রয়েছে। শাখা অনুসারে এই উপনিষদের শ্লোক সংখ্যা ১৭ বা ১৮।বেদান্ত শাখার একটি প্রধান ধর্মগ্রন্থ হল ঈশোপনিষদ্‌। এই গ্রন্থটি একটি প্রভাবশালী শ্রুতিশাস্ত্র হিসেবে গৃহীত হয়েছে। গ্রন্থের প্রথম শ্লোকের প্রথম দুটি শব্দ (ঈশা বাস্যম্‌) থেকে এই উপনিষদ্‌টির নামটির উৎপত্তি। ঈশা বাস্যম্‌ শব্দদুটির অর্থ “ঈশ্বরের দ্বারা আবৃত” বা “ঈশ্বরে (আত্মায়) নিহিত”। এই গ্রন্থে হিন্দুধর্মের আত্মার তত্ত্বটি আলোচিত হয়েছে। বেদান্তের অদ্বৈত ও দ্বৈত – উভয় শাখাতেই এই উপনিষদের নিজস্ব ব্যাখ্যা প্রচলিত রয়েছে।
‘ঈশ্বর’ শব্দের মূল ‘ঈশ্‌’ (ईश) ধাতুর অর্থ ‘সমর্থ’ ও ‘অধিপতি’। ‘ঈশ্‌’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ‘প্রভু’। ‘বাস্যম্‌’ (वास्य) শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ‘নিহিত বা আবৃত’।
র্যা লফ গ্রিফিথ ও ম্যাক্স মুলার উভয়েই এই উপনিষদে ‘ঈশ’ শব্দটির অর্থ করেছেন ‘প্রভু’ ও ‘আত্মা’। পুকুন লি ঈশোপনিষদ্ নামটির অনুবাদ করেছেন ‘আত্মার অধিপতি’ (‘the ruler of the Self’)।
ঈশোপনিষদ্ ঈশাবাস্যোপনিষদ্ বা বাজসনেয়-সংহিতোপনিষদ্ নামেও পরিচিত।ঈশোপনিষদ্‌ একমাত্র উপনিষদ্‌ যেটি বেদের প্রাচীনতম অংশ তথা মন্ত্র-সংকলন সংহিতার সঙ্গে যুক্ত। অন্যান্য উপনিষদ্‌গুলি বেদের পরবর্তীকালীন অংশ ব্রাহ্মণ বা আরণ্যক অংশের সঙ্গে যুক্ত।
ঈশোপনিষদ্‌ গ্রন্থটির পাণ্ডুলিপিতে শুক্ল যজুর্বেদ গ্রন্থের দুটি শাখা অনুসারে পাঠান্তর দেখা যায়। এই শাখা দুটি হল কান্ব ও মধ্যণ্ডিন শাখা। ১ম থেকে ৮ম শ্লোক পর্যন্ত উভয় শাখাতে কোনো পাঠান্তর নেই। কিন্তু কান্ব শাখার ৯ম থেকে ১৪শ শ্লোকগুলি মধ্যণ্ডিণ শাখায় ১২শ, ১৩শ, ১৪শ, ৯ম, ১০ম ও ১১শ ক্রমে সজ্জিত। মধ্যণ্ডিণ শাখার ১৭শ শ্লোকটি কান্ব শাখার ১৫শ শ্লোক। কান্ব শাখার ১৬শ শ্লোকটি মধ্যণ্ডিণ শাখায় নেই। আবার কান্ব শাখার ১৭শ ও ১৮শ শ্লোকদুটি মধ্যণ্ডিণ শাখায় ১৫শ ও ১৬শ শ্লোক রূপে প্রদত্ত।
উভয় শাখাতেই ঈশোপনিষদ্‌ শুক্ল যজুর্বেদ গ্রন্থের ৪০শ অধ্যায়। কান্ব শাখায় ঈশোপনিষদ্‌ গ্রন্থের শ্লোকসংখ্যা ১৮ এবং মধ্যণ্ডিণ শাখায় শ্লোকসংখ্যা ১৭।
কান্ব ৪০১০১১১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
মধ্যণ্ডিন ৪০১০১১(১৭)১৫১৬

যাহা সংসারের কারণীভূত অবিদ্যাকে সম্পূর্ণরূপে বিনাশ করে, তাহাকে উপনিষৎ বা ব্রহ্মবিদ্যা বলে। ব্রহ্মবিদ্যাপ্রতিপাদক গ্রন্থও উপচারবশতঃ উপনিষৎ নামে অভিহিত হয়। ব্রহ্মবিদ্যাপ্রতিপাদক গ্রন্থসমূহ অবিদ্যা ও অবিদ্যাপ্রসূত সংসারকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করিয়া আমাদের শরীরকে ব্রহ্মাবাপ্তির যোগ্য করিয়া থাকে এবং আমাদের আত্মাকে ব্রহ্মভাবে উন্নীত করে। এই জন্য আচার্য্যগণ ব্রহ্মবিদ্যাপ্রতিপাদক গ্রন্থসমূহকে উপনিষৎ বলিয়া কহিয়াছেন*। প্রতিপাদকরূপে সৎসরূপ আত্মার সমীপস্থ বলিয়াও ইহাকে উপনিষৎ বলিতে পারা যায়।

বেদ কর্ম্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড ভেদে দুই ভাগে বিভক্ত। কর্ম্মকাণ্ডকে কল্প এবং জ্ঞানকাণ্ডকে রহস্য বলা হয়। মীমাংসকগণ বেদকে মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ, এই দুই ভাগে বিভক্ত করিয়াছেন।+ বেদের সংহিতা ভাগে মন্ত্র এবং ব্রাহ্মণ ভাগে ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষৎ উপনিবদ্ধ আছে। মন্তগুলি যজ্ঞাদি কার্য্যে ব্যবহৃত হয়। ব্রহ্মণে যজ্ঞের প্রণালী এবং দুরূহ মন্তসমূহের ব্যাখ্যান প্রদত্ত হইয়াছে। এই জন্য পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিতগণ ব্রাহ্মণকে বেদের অংশ বলিয়া স্বীকার করেন না, কিন্তু বেদের ব্যাখ্যা বলিয়া অভিহিত করেন। অরণ্যে রচিত এবং আরণ্যকগণের কর্ত্তব্যের প্রতিপাদক বলিয়া ব্রহ্মণের অংশবিশেষ আরণ্যক নামে আখ্যাত। ব্রহ্মবিদ্যা প্রতিপাদক ব্রহ্মণের অংশ উপনিষৎ রূপে পরিচিত। উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত। বেদের অন্তঃ বা প্রতিপাদ্য উপনিষদে রহিয়াছে বলিয়া বেদান্ত এই নামটি সার্থক
উপনিষদে ব্রহ্মতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব ও প্রকৃতি-তত্ত্বের সবিশেষ আলোচনা রহিয়াছে। উপনিষৎগুলির মধ্যে ঈশ, কেন, কঠ, প্রশ্ন, মুণ্ডক, মাণ্ডুক্য, তৈত্তরীয়, ঐতরেয়, শ্বতাশ্বতর, ছান্দোগ্য, বৃহদারণ্যক ও মৈত্রায়ণী-এই দ্বাদশখানি প্রাচীন ও প্রামাণিক। আচার্য্য শঙ্কর এই দ্বাদশখানি উপনিষদের ভাষ্য প্রণয়ণ করিয়াছেন।
বেদের সহিত নিরবিচ্ছিন্নভাবে সম্বন্ধ বলিয়া উপনিষৎগুলিও সাধারণতঃ ঋগাদি বেদভেদে চারিটি প্রধান ভাগে বিভক্ত। ঋগ্‌বেদীয় উপনিষৎগুলির মধ্যে ঐতরেয় ও কৌষীতকী প্রসিদ্ধ। সামবেদের ছান্দোগ্য ও কেন; শুক্লযজুর্বেদের বৃহদারণ্যক প্রসিদ্ধ। সামবেদের ছান্দোগ্য ও কেন; শুক্লযজুর্বেদের বৃহদারণ্যক ও ঈশ; কৃষ্ণ যজুর্বেদের তৈত্তিরীয়, কঠ ও শ্বতাশ্বতর; এবং অথর্ববেদের প্রশ্ন, মুণ্ডক, মাণ্ডুক্য, অথর্ব শিরা এবং ব্রহ্ম প্রসিদ্ধ। মুক্তিকা উপনিষদের মতে ঋগ্‌বেদের একুশ, যজুর্বেদের একশত নয়, সামবেদের সহস্র এবং অথর্ববেদের পঞ্চাশটি শাখা ছিল এবং প্রত্যেক শাখার একখানি করিয়া উপনিষৎও ছিল; সুতরাং উপনিষদের মোট সংখ্যা ছিল এগারশত আশি। উক্ত উপনিষদে নিম্নলিখিত ১০৮খানি উপনিষদের নাম দেওয়া ইয়াছে। ঋগ্‌বেদীয় উপনিষদের দশ, সামবেদীয় উপনিষদের ষোল, যজুর্বেদীয় উপনিষদের একান্ন (শুক্ল ১৯ ও কৃষ্ণ ৩২) এবং অথর্ববেদীয় উপনিষদের একত্রিশ,-এই অষ্টোত্তরশত। ইহা ব্যতীত ও আর অনেক উপনিষদের অভ্যুত্থান হইয়াছিল।
প্রতিপাদ্য বিষয় অনুসারে উপনিষৎগুলি তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত হইতে পারে। ঐতরেয়, ছান্দোগ্য, কেন, তৈত্তীরীয়, ঈশ, বৃহদারণ্যক, কঠ, প্রশ্ন, মূণ্ডক, মাণ্ডুক্যপ্রভৃতি উপনিষদে জীবের মুক্তি ও ব্রহ্মের স্বরূপ সবিশেষ আলোচনা রহিয়াছে; অতএব এই সকল উপনিষৎকে পারমার্থিক উপনিষৎ বলা যাইতে পারে। গর্ভ, আর্ষিক, জাবাল, কঠশ্রুতি, আরুণিক, সংন্যাস প্রভৃতি উপনিষদে প্রধানভাবে জীব ও ব্রহ্মের একত্ব প্রতিপাদিত হইয়াছে; সুতরাং এই শ্রেণীর উপনিষৎগুলিকে মুমুক্ষুপজীব্য উপনিশৎ বলা যায়। নারায়ণ, কৃষ্ণ, শিব রাম, দেবীপ্রভৃতি উপনিষৎ সাম্প্রদায়িক ভাবের অভিব্যঞ্জক বলিয়া সাম্প্রদায়িক উপনিষৎ নামে অখ্যাত হইতে পারে।
বৈদিকাচার্য্য সত্যব্রত সামশ্রমীর মতে উপনিষৎগুলি বৈদিক, আর্য্য, কাব্য ও কৃত্রিমভেদে চারি প্রকার। ঈশ, কেন, তৈত্তিরীয়, কৌষীতকী, বৃহদারণ্যক, ছান্দ্যোগ্য প্রভৃতি যে সকল উপনিষদে বৈদিক ধর্ম্মতত্ত্ব উপনিবদ্ধ আছে, তাহারা বৈদিক উপনিষৎ। মাণ্ডুকেয় প্রভৃতি যে সকল উপনিষদে সংহিতার মন্ত্র প্রমাণরূপে উদ্ধৃত হইয়াছে, তাহাদিগকে আর্য উপনিষৎ কহে। নারায়ণ, নৃসিংহ, সরস্বতী, গণেশ প্রভৃতি যে সকল উপনিষদ সাম্প্রদায়িক দেবতা বিশেষ ব্রহ্ম বা ব্রহ্মশক্তিরূপে কীর্ত্তিত হইয়াছেন, তাহাদিগকে কাব্যোপনিষৎ বলে। কতকগুলি আধুনিক সম্প্রদায় স্বীয় মতের পরিপোষক কোন প্রামাণ্য গ্রন্থ না পাইয়া, উক্ত উদ্দেশ্যসিদ্ধির অভিপ্রায়ে যে সকল উপনিষৎ রচনা করিয়াছেন, তাহাদিগকে কৃত্রিম উপনিষৎ বলে। গোপালতাপনী, নৃসিংহতাপনী প্রভৃতি উপনিষৎ এই শ্রেণীর অন্তর্গত। এতদ্ব্যতীত অনেকে জীবিকার নিমিত্ত অর্থের অভিপ্রায়ে উপনিষৎ নাম দিয়া কতকগুলি গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। এই শ্রেণীর উপনিষৎকে জীবকোপনিষৎ নাম দেওয়া যাইতে পারে। আল্লোপনিষৎ প্রভৃতি এই শ্রেণীভুক্ত।
উপনিষদের গভীর ও সরস উপদেশে অনুপ্রাণিত হইয়া, সাধারণ লোকের মধ্যে উহার প্রচারের উদ্দেশ্যে অনেকে বিভিন্ন ভাষায় ইহাদের অনুবাদ করিয়াছেন। মোগল সম্রাট্‌ আরঙ্গজেবের ভ্রাতা কতিপয় উপনিষদের ফার্সি অনুবাদ করাইয়াছিলেন। পাশ্চাত্ত্য মনীষিগণের মধ্যে ভট্ট মোক্ষমূলার, ডসেন, বার্ণেট, কাউএল, রোয়ার প্রভৃতির নাম এ সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য। ইহারা যে শুধু অনুবাদ করিয়াছেন তাহাই নহে, কিন্তু এতৎসম্পর্কে প্রবন্ধাদি রচনা করিয়াও এই সকল গ্রন্থকে জনসমাজে হৃদয়গ্রাহী করিতে প্রয়াস পাইয়াছেন। উপনিষদের ভাবগাম্ভীর্য্যে মোহিত হইয়া জার্ম্মাণীর প্রসিদ্ধ দার্শনিক পণ্ডিত শোপেনহর বলিয়াছেন- “এরূপ আত্মোৎকর্ষ বিধায়ক গ্রন্থ আর দ্বিতীয় নাই; ইহা আমাকে জীবনে শান্তি দিয়াছে, মৃত্যুতেও শান্তি দিবে।” বাঙ্গালীদিগের মধ্যে প্রথমে রাজা রামমোহন রায়, উপনিষৎ প্রচারের জন্য লেখনী ধারণ করিয়াছিলেন এবং ইংরাজী ও বাঙ্গালা ভাষায় উহার তর্জমা করিয়া প্রকাশ ও প্রচার করিয়াছিলেন। এই সকল চেষ্টার ফলেই আধুনিক শিক্ষিত নরনারীর হৃদয়ে উপনিষৎপ্রীতি জাগ্রত হইয়াছে। সরল ভাষায় উপনিষদের প্রচার হইলে, দেশের নরনারীর উৎসাহ বর্দ্ধিত হইবে এবং শঙ্করের মতবাদ প্রচারের সহায়ক হইবে মনে করিয়া বঙ্গীয় শঙ্করসভা এই দুরূহ কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিয়াছেন। আশাকরি জনসাধারণের সহানুভূতি পাইতে এ সভা বঞ্চিত হইবে না।

ঈশোপনিষদ্‌ তার ১ম স্তোত্রটিতে ‘ঈশ’ শব্দটির একক উল্লেখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই শব্দটি অন্যান্য স্তোত্রে পুনরায় উল্লিখিত হয়নি। একটি ব্যাখ্যা অনুসারে, ‘ঈশ’ শব্দটি অদ্বৈতবাদের দ্যোতক। অন্য একটি ব্যাখ্যা অনুসারে, এটি একেশ্বরবাদের একটি রূপের দ্যোতক। সেই হিসেবে প্রথম মতানুসারে ‘আত্মা’ এবং দ্বিতীয় মতানুসারে ‘পরম দেবতা’।
ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগৎ্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্‌।।
ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু অনিত্য বস্তু আছে, এ সমস্তই পরমেশ্বরের দ্বারা আবরণীয়। উত্তমরূপ ত্যাগের দ্বারা (আত্মাকে) পালন কর। কাহারও ধনে লোভ করিও না। অথবা—(ধনের) আকাঙ্ক্ষা করিও না, (কারণ) ধন আবার কাহার?
— ঈশোপনিষদ্‌ স্তোত্র ১
র‍্যালফ গ্রিফিথ ‘ঈশ’ শব্দটি মূল দার্শনিক ভাবধারার প্রেক্ষাপট অনুসারে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি এটির অনুবাদ করেছেন ‘প্রভু’ (the Lord)। ‘প্রভু’ শব্দটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, এই শব্দের অর্থ ‘সর্বাত্মা এবং তোমার অন্তর্নিহিত আত্মা – একমাত্র পরম সত্য’ (the Soul of All, and thy inmost Self – the only absolute soul)। ‘সর্বম্‌’ কথাটির মাধ্যমে অভিজ্ঞতাপ্রসূত সত্য। ‘ত্যক্তেন’ শব্দটির মাধ্যমে সন্ন্যাসের ভারতীয় ধারণাটিকে বোঝায়। ‘ভুঞ্জীথা’ বলতে বোঝায় ‘আত্মোপলব্ধির আনন্দ’।
অদ্বৈত বেদান্ত প্রবক্তা আদি শঙ্কর’ ১ম স্তোত্রের ‘ঈশ’ শব্দটির অর্থ করেছেন ‘আত্মা’।অন্যদিকে দ্বৈত বেদান্ত প্রবক্তা মধ্ব এই শব্দটির অর্থ করেছেন বিষ্ণু। এই বিষয়ে অন্যান্য মতও আছে। যেমন, অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালের পণ্ডিত মহীধর বলেছেন, ১ম স্তোত্রটি বুদ্ধের কথা বলেছে। তবে ম্যাক্স মুলারের মতে, এই মত গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। হিন্দুধর্মে ‘আত্মা’র অস্তিত্ব স্বীকৃত। অন্যদিকে বৌদ্ধধর্মে তা স্বীকার করা হয় না।
ঈশোপনিষদ্‌ গ্রন্থের ২য় থেকে ৬ষ্ঠ স্তোত্রে হিন্দুধর্মের দুটি পরস্পর-বিরোধী সংকটের অবতারণা করা হয়েছে। এই সংকট গৃহস্থের ব্যবহারিক জীবন ও কর্ম এবং ত্যাগ ও [[জ্ঞান (হিন্দুধর্ম)|
কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ।
এবং ত্বয়ি নান্যথেতোঽস্তি ন কর্ম লিপ্যতে নরে।।
অসুর্যা নাম তে লোকা অন্ধেন তমসাবৃতাঃ।
তাংস্তে প্রেত্যাভিগচ্ছন্তি যে কে চাত্মহনো জনাঃ।।
অনেজদেকং মনসো জবীয়ো নৈনদ্দেবা আপ্নুবন্‌ পূর্বমর্ষৎ।
তদ্ধাবতোঽন্যানত্যেতি তিষ্ঠৎ তস্মিন্নপো মাতরিশ্বা দধাতি।।
তদেজতি তন্নৈজতি তদ্দূরে তদ্বন্তিকে।
তদন্তরস্য সর্বস্ব তদু সর্বস্যাস্য বাহ্যতঃ।।
যস্তু সর্বাণি ভূতান্যাত্মন্যেবানুপশ্যতি।
সর্বভূতেষু চাত্মানং ততো ন বিজগুপ্সতে।।
যে ব্যক্তি এই জগতে শত বৎসর বাঁচিয়া থাকিতে উৎসুক, তিনি (শাস্ত্র-বিহিত) কর্ম করিয়াই বাঁচিতে ইচ্ছা করিবেন। এই প্রকার (আয়ুষ্কামীও) নরাভিমানী তোমার পক্ষে এতদ্ব্যতীত অন্য কোনও উপায় নাই যাহাতে তোমাতে (অশুভ) কর্ম লিপ্ত না হইতে পারে। অসুরদিগের আবাসভূত সেই সকল লোক দৃষ্টিপ্রতিরোধক অজ্ঞানান্ধকারে আচ্ছাদিত। যে সকল মানব আত্মঘাতী তাহারা সকলেই তাহারা সকলেই দেহত্যাগ করিয়া সেই-সকল লোকে গমন করে। (সেই আত্মতত্ত্ব) অচল, এক ও মন হইতেও অধিকতর বেগবান্‌। পূর্বগামী ইহাকে ইন্দ্রিয়েরা প্রাপ্ত হয় না। ইনি স্থির থাকিয়াও দ্রুতগামী অপর সকলকে অতিক্রম করিয়া যান। ইনি আছেন বলিয়াই বায়ু (অর্থাৎ সূত্রাত্মা) সর্বপ্রকার কর্ম আপনাতে ধারণ করেন। অথবা—সূত্রাত্মা সর্বপ্রকার কর্ম যথাযথ বিভাগ করিয়া দেন। ইনি চলেন, ইনি চলেন না; ইনি দূরে, আবার ইনি নিকটে; ইনি এই সমস্ত জগতের ভিতরে; আবার এই সমস্ত জগতের বাহিরে। কিন্তু যিনি সমুদয় বস্তুই আত্মাতে এবং সমুদয় বস্তুতেই আত্মাকে দেখেন, তিনি সেই দর্শনের বলেই কাহাকেও ঘৃণা করেন না।
— ঈশোপনিষদ্‌, স্তোত্র ২-৬
আদি শঙ্কর বলেছেন, ৬ষ্ঠ স্তোত্রের ‘ইনি’ (উপরের উদ্ধৃতির শেষ বাক্য দ্রষ্টব্য) বলতে বোঝানো হয়েছে “আত্মা ও নিজ আত্মা ও সকলের আত্মার একত্ব অনুসন্ধানের পথযাত্রী মুমুক্ষু। সন্ন্যাসও এর অন্তর্গত।” অন্যদিকে মধ্ব মনে করেন, ‘ইনি’ হলেন “ঈশ্বরের প্রেমে নিমগ্ন জীবাত্মা। এই আত্মা পরমাত্মার নীরসান্নিধ্য কামনা করে।”
ম্যাক্স মুলার একাধিক প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ভারতীয় পণ্ডিতদের টীকাগুলি পর্যালোচনা করে বলেছেন যে, ঈশোপনিষদ্ গ্রন্থের এই স্তোত্রগুলি “যজ্ঞ ও ধর্মের ধারণার সঙ্গে যুক্ত সকল অনুষ্ঠানের অসারতা”র কথা বলছে। তবে একই সঙ্গে এই স্তোত্রগুলি জানাচ্ছে “সামাজিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিকারক নয়; বরং তার প্রয়োজন আছে। একে জ্ঞানের পথে আপেক্ষিকভাবে মধ্যবর্তী প্রস্তুতি হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে।” ম্যাক্স মুলারের মতে, ঈশোপনিষদ্‌ নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা ও অনুষ্ঠানগুলিকে ঠিকও বলছে না, আবার ভুলও বলছে না।মোক্ষলাভের জন্য এগুলি অনেকের কাছে প্রয়োজনীয়। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা কামনাবাসনাকে অর্থহীন বলে অনুভব করতে পারেন। এর ফলে জিজ্ঞাসু মন শান্ত হয় এবং কোনটি সর্বোচ্চ জ্ঞান, তা তারা বুঝতে পারেন।
র্যা লফ গ্রিফিথ বলেছেন ঈশোপনিষদ্‌ গ্রন্থের উক্ত স্তোত্রগুলি কর্মবাদের সমালোচনা করেছে। তিনি মনে করেন, কর্মীরা “ভবিষ্যৎ জীবনে সুবিধা অর্জন বা স্বর্গলাভে”র আশায় কর্ম অনুষ্ঠান করেন। এটি অজ্ঞতা। তাঁর মতে, ঈশোপনিষদ্‌ গ্রন্থে বলা হয়েছে “আত্মজ্ঞান ও তার চিরন্তন, সর্বব্যাপী প্রকৃতি”কে এড়িয়ে চলা “নিজ আত্মাকে হত্যা”র সামিল। আত্মানুসন্ধান হল চিরন্তন, সম্পূর্ণ, সর্বাধীশ্বর ও আত্ম-নির্ভর, পরম একত্ব, সকল প্রকৃতি ও অস্তিত্বের বিধানের অনুসন্ধান। 
ঈশোপনিষদ্‌ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, দুঃখ ও কষ্টের অন্যতম মূল হল নিজ আত্মাকে অন্যের আত্মার থেকে পৃথক জ্ঞান করে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া। এই পৃথক জ্ঞান আসে অস্তিত্বের প্রকৃতিকে সংঘর্ষশীল দ্বৈতজ্ঞান করার থেকে। এই জ্ঞানে একজনের আনন্দ ও বেদনা অন্যের আনন্দ ও বেদনার থেকে পৃথক মনে হয়। এই উপনিষদের মতে, যদি একজন ব্যক্তি সকল বস্তুতে আত্মাকে অনুভব করতে পারেন, তাহলে এই কষ্ট আর থাকে না। এই অদ্বৈত জ্ঞান থেকে তিনি বুঝতে পারেন সকল অস্তিত্বের মধ্যে একটি একত্ব রয়েছে। তখন তিনি ব্যক্তিগত অহংবোধের ঊর্ধ্বে উঠে যান এবং বিশ্বজনীন মূল্যবোধ, আত্মা ও প্রকৃত জ্ঞানের অনুসন্ধানে লিপ্ত হন।
যস্মিন্‌ সর্বাণি ভূতান্যাত্মৈবাভূদ্বিজানতঃ।
তত্র কো মোহঃ কঃ শোক একত্বমনুপশ্যতঃ।।
সমুদয় বস্তু যে কালে জ্ঞানীর আত্মাই হইয়া গেল, তখন সেই একত্বদর্শীর মোহই বা কি, আর শোকই বা কি? অথবা—জ্ঞানীর যে আত্মা সমুদয় বস্তু আত্মরূপে এক হইয়া গেল, সেই একত্বদর্শীর আত্মায় মোহই বা কি, আর শোকই বা কি?
— ঈশোপনিষদ্‌, স্তোত্র ৭
ঈশোপনিষদ্‌ গ্রন্থের ৮ম থেকে ১১শ স্তোত্রের বিদ্যা (প্রকৃত জ্ঞান, চিরন্তন সত্য) অনুসন্ধানের প্রশংসা করা হয়েছে। এই গ্রন্থ অনুসারে, যিনি ‘বিদ্যা’ ও ‘অবিদ্যা’কে জানতে পারেন, ‘অবিদ্যা’ তাকে মৃত্যু অতিক্রম করতে সাহায্য করে (তিনি জীবিত থাকেন) এবং বিদ্যা তাকে অমরত্ব দান করে। সত্য জ্ঞান তাকে সকল দুঃখ ও ভয় থেকে মুক্তিই দান করেন এবং তিনি জীবনে আনন্দ পান। এস. মুখোপাধ্যায়ের মতে, ঈশোপনিষদ্‌ গ্রন্থের ১১শ শ্লোকে বলা হয়েছে যে, একজন ব্যক্তিকে পার্থিব জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞা দুইই অর্জন করতে হবে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক ব্যবহার, ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত লক্ষ্য এবং জীবনের পার্থিব ও আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের সামঞ্জস্য থেকেই পরিপূর্ণ জীবন লাভ সম্ভব।
ঈশোপনিষদ্‌ গ্রন্থের ১২শ থেকে ১৪শ স্তোত্রে কোনোকিছুর শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ কারণ বা শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক কারণ অনুসন্ধান সম্পর্কে সতর্ক করে বলা হয়েছে, এই ধরনের একদেশদর্শী অনুসন্ধান অজ্ঞানতার অন্ধকারে ঠেলে দেয়। জ্ঞান অর্জনের জন্য উভয়ের অনুসন্ধানই কাম্য। এই উপনিষদে বলা হয়েছে, যিনি সত্য ও নশ্বর এবং প্রত্যক্ষ অসত্য কারণ ও গুপ্ত সত্য কারণ উভয়কেই জানেন, তিনি মুক্ত হয়ে অমরত্ব লাভ করেন।
ঈশোপনিষদ্‌ গ্রন্থের শেষ ১৫শ থেকে ১৮শ স্তোত্রে জ্ঞানের আকাঙ্ক্ষার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে যে জ্ঞান আলোকের সুবর্ণ চাকতির পিছনে লুক্কায়িত থাকে। তবে এই আলোক ব্যক্তিকে খুঁজে নিতে হয়। এই জ্ঞান মানব মনকে তার কৃতকর্মের কথা এবং সেই কৃতকর্মের প্রারব্ধের কথে মনে করিয়ে দেয়। মধ্যণ্ডিন ও কান্ব শাখাদুটিতে এই স্তোত্রগুলির বিন্যাসে কিছু পার্থক্য আছে। তবে উভয় শাখাতেই একই অণুধ্যান উল্লিখিত হয়েছে, “হে অগ্নি ও মন, আমাকে পবিত্র জীবনের দিকে নিয়ে যাও। আমাকে পাপের জীবন থেকে দূরে যাওয়ার পথ বলে দাও।” এইভাবে সৎ পথ ও ধন উপভোগের পন্থা (কর্মের মধু ও আত্ম-অনুসন্ধান) বলা হয়েছে। শেষ স্তোত্রে মৌলিক ধারণা “আমিই সেই” উল্লিখিত হয়েছে। এই ধারণায় ব্যক্তি আত্মাকে বিশ্বাত্মার সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে।
পুরুষঃ সোঽহমস্মি
আমিই সেই, তোমার মধ্যে অন্তর্নিহিত পুরুষ
— ঈশোপনিষদ্‌, স্তোত্র ১৬ সংক্ষেপিত

মন্ত্র ০১

ঈশা ব্যসমিদং সর্বং যতকিঞ্চ জগত্যাং জগত্‍।।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্‌ ধনম্।। ১।।
শান্তিপাঠ।–যে সকল পদার্থ, ইন্দ্রিয়ের অগোচর (সূক্ষ্ম), তাহা ব্রহ্ম দ্বারা পূর্ণ বা ব্যাপ, যে সকল পদার্থ ইন্দ্রিয় গোচর তাহাও ব্রহ্ম দ্বারা ব্যাপ্ত এবং এই সমস্ত জগৎই পরিপূর্ণ ব্রহ্ম হইতে অভিব্যক্তি হইয়াছে; আর সেই পূর্ণ স্বভাব ব্রহ্মের পূর্ণতা জগদ্ব্যাপ্ত হইলেও তাহার পূর্ণতার হানি হয় না।
মূলানুবাদ।–জগতে যে কিছু পদার্থ আছে, তৎসমস্তই আত্মরূপী পরমেশ্বর দ্বারা আচ্ছাদন করিবে, অর্থাৎ একমাত্র পরমেশ্বরই সত্য, জগৎ তাহাতে কল্পিত—মিথ্যা, এই জ্ঞানের দ্বারা জগতের সত্যতা-বুদ্ধি বিলুপ্ত করিবে। [তাহাতেই তোমার হৃদয়ে আসক্তি-ত্যাগরূপ সন্ন্যাস আসিবে,] সেই ত্যাগ বা সন্ন্যাস দ্বারা আত্মার অদ্বৈত নির্ব্বিকার ভাব রক্ষা কর; কাহারো ধনে আকাঙ্ক্ষা করিও না।।১।]
শঙ্কর ভাষ্যানুবাদ
‘ঈশ্‌’ ধাতুর অর্থ ঐশ্বর্য্য বা শাসন-ক্ষমতা; যিনি এই জগতের শাসনে সমর্থ পরমাত্মা পরমেশ্বর, তিনিই এখানে ‘ঈশা’-পদের প্রতিপাদ্য। তিনি প্রত্যকরূপে (জীবরূপে) সর্ব্ব বস্তুর অভ্যন্তরে থাকিয়া, সমস্ত জগৎ যথানিয়মে শাসিত ও পরিচালিত করিতেছেন। সেই সর্ব্বাত্মরূপী পরমেশ্বর দ্বারা পৃথিবীস্থ সমস্ত বস্তুকে আচ্ছাদিত করিবে,–সর্ব্বত্র তাঁহার সত্তা উপলব্ধি করিবে। [অভিপ্রায় এই যে] জগৎকারণ পরমেশ্বরই জীবরূপে সর্ব্বদেহে বর্ত্তমান আছেন; এবং তাঁহার সংকল্পপ্রসূত স্থাবর-জঙ্গমময় এই জগৎ বস্তুতঃ মিথ্যা হইয়াও তাঁহাকে আশ্রয় করিয়াই সত্যের ন্যায় প্রতিভাত হইতেছে। সেই পরমাত্মরূপী আমিই এই জগৎ, আমার সত্তাই জগতের সত্তা, তদ্ভিন্ন জগতের আর পৃথক সত্তা নাই; এইরূপ যথার্থ সত্য জ্ঞানের দ্বারা জগতের সত্যতা ঢাকিয়া ফেলিবে, অর্থাৎ ‘জগত সত্য’ বলিয়া যে ভ্রম ছিল, তাহা বিলুপ্ত করিবে। যেমন চন্দন ও অগরুপ্রকৃতি গন্ধদ্রব্যসমূহ জলাদি-সংস্পর্শে কখন কখন দুর্গন্ধযুক্ত বলিয়া মনে হয় সত্য; কিন্তু ঘর্ষণ করিলেই তাহার স্বভাবসিদ্ধ মনোহর সৌরভ প্রকাশ পায়, এবং আগন্তুক দুর্গন্ধ দূর করিয়া দেয়, ঠিক সেইরূপ, কর্ত্তৃত্ব-ভোক্তৃত্বপূর্ণ, ভিন্ন ভিন্ন নাম (সংজ্ঞা), রূপ (আকৃতি) ও চেষ্টা বা ক্রিয়া-সম্পন্ন এই সমস্ত জগৎ নিজে অসত্য হইয়াও, যথার্থ সত্যস্বরূপ পরমেশ্বরের আশ্রয়ে থাকিয়া সত্য বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে মাত্র; বস্তুতঃ উহা মিথ্যা—অধ্যস্ত মাত্র; এইরূপ সত্য ভাবনা দ্বারা জগতের সত্যতা-ভ্রম নিরস্ত হইয়া যায়।
উক্তরূপ যে লোক আপনাকে ঈশ্বরাংশ বলিয়া বুঝিতে পারে, তাহার আর পুত্র, সম্পদ বা স্বর্গাদি লোক-লাভের এষণা বা কামনা থাকে না; সুতরাং তদর্থ কর্ম্মেও অধিকার থাকে না; একমাত্র বাসনাত্যাগরূপ সন্ন্যাসেই অধিকার থাকে; তাহার ফলে সিএ লোক তখন সন্ন্যাস গ্রহণ করে। অতএব, তুমি তাদৃশ ভাবাপন্ন হইয়া, সন্ন্যাস দ্বারা আত্মাকে পরিপালন কর; অর্থাৎ জগতের মিথ্যাত্ব ভাবনাদ্বারা আত্মার আত্মত্ব (নির্ব্বাকারত্ব ও সত্যত্ব প্রভৃতি ভাবগুলি) রক্ষা কর। তুমি এইরূপে বাসনা পরিত্যাগপূর্ব্বক নিজের কিংবা পরের, কাহারো ধনের আকাঙ্খা করিও না। অথবা, ধন কাহার?—ধন ত কাহারও নহে, যাহা আকাঙ্খা করিতে পারা যায়। আত্মাই সমস্ত জগৎ, এবং সমস্ত জগৎই আত্মরূপ; সেইরূপ পরমেশ্বর-চিন্তা দ্বারা যখন সমস্ত বস্তুই মিথ্যা বলিয়া পরিত্যাগ করিয়াছ, তখন আর সেই মিথায় বিষয়ে আকাঙ্খা বা লোভ করা সঙ্গত হয় না। (৬) মন্ত্রে যে, ‘স্বিৎ’ কথাটি আছে, উহা অর্থহীন নিপাত শব্দ (বাক্যের শোভাবর্দ্ধকমাত্র)।।১।।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মনুস্মৃতি প্রথম অধ্যায়

স্মৃতি শাস্ত্রের মধ্যে মনুস্মৃতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেমন বৃ্হস্পতিস্মৃতিতে বলা হয়েছে- বেদার্থপ্রতিবদ্ধত্বাত্ প্রাধাণ্যং তু মনো: স্মৃত...

Post Top Ad

ধন্যবাদ