অদ্বৈত বেদান্ত - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

14 August, 2018

অদ্বৈত বেদান্ত


একোহং ব্রহ্ম দ্বিতীয় নাস্তি।
ব্রহ্ম ব্যাতীত দ্বিতীয় কোন সত্তা হয় না। কারণ ব্রহ্মান্ডে ব্রহ ব্যাতীত আলাদা সত্তা থাকলে ব্রহ্ম সর্বব্যাপী হয় না। কারণ কোন সত্তা তখনই অনাদি বা স্বাধীন হতে পারে যখন তা ব্রহ্মের অধীন নয়। কিন্তু সনাতন শাস্ত্রে এমন কোন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না যেখানে ব্রহ্ম হতে পৃথক বা স্বাধীন সত্তা হতে পারে। 

আদি গুরু শংকরাচার্য বেদান্ত এর সেই সিদ্ধান্তকে প্রচার করেছেন যেখানে ব্রহ্মকে একমাত্র কারণ ও অনাদি সত্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
★কঠোপনিষদ ২-১-(১০-১৫) সেই পরমাত্মাই সর্বত্র বর্তমান আছেন, তিনিই আত্মা,
★কঠোপনিষদ ২-২-১০ সেই পরমাত্মাই বহু রূপে অদ্বৈত, সমস্ত জীব দেহেও তিনি এবং তার অতিরিক্তও তিনি।
★প্রশ্নোপনিষদ ৬-৫ যেমন সমস্ত নদী সমুদ্রে উপস্থিত হলে অদৃশ্য হয়ে যায়, তখন আর সেই নদীর নাম ও রূও বিনষ্ট হয়ে কেবল সমুদ্রই নির্দিষ্ট হয় তদ্রুপ জীবও সেই পরম পুরুষকে প্রাপ্ত হয়ে বিলীন হয়। এবং তখন জীবের কোন পৃথক অস্তিত্ব থাকে না। অব্যয় পুরুষ নামেই অভিহিত হয়।
★মুণ্ডক উপনিষদ ১-১-(৮-৯) ব্রহ্ম নিজেই নিজেকে স্ফীত করে সমগ্র সৃষ্টিতে ব্যাপ্ত হলেন। এবং সেই এক ব্রহ্ম হতেই হিরণ্যগর্ভ, নাম, রূপ, অন্ন জাত হল।
★মুণ্ডক উপনিষদ ২-১-১ অক্ষর ব্রহ্ম হতেই নানাবিধ জীব উদ্ভূত হয় এবং পুনরাই তাঁহাতেই বিলীন হয়।
★মুণ্ডক উপনিষদ ৩-২-৯ ব্রহ্মৈব ভবতি অর্থাৎ সেই পরম ব্রহ্মকে যিনি জানেন তিনি ব্রহ্মই হয়ে যান।
★মাণ্ডুক্য উপনিষদ ২ এই সমস্তই ব্রহ্ম, এই আত্মা ব্রহ্ম, উক্ত এই আত্মা চতুষ্পাৎ।
★মাণ্ডুক্য উপনিষদ ৩ থেকে ১২ নং শ্লোক চতুষ্পাদ আত্মার জাগ্রত, স্বপ্ন এবং সুষুপ্তি এই তিন অবস্থাই তুরীয় অবস্থায় বিলীন হয়। মংগলময় অদ্বিতীয় আত্মরূপেই স্থিতি হয়। যিনি এরূপ জানেন তিনি স্বয়ং পরমাত্মায় প্রবেশ করেন।
★মাণ্ডুক্য ১২ শিবোহদ্বৈত এবমোঙ্কার আত্মৈব। সংবিশত্যাত্মনাত্মানং য এবং বেদ, য এবং বেদ।
এবং
*মাণ্ডুক্য ৭ প্রপঞ্চোপশমং শান্তং শিবমদ্বৈতং চতুর্থং মন্যন্তে (এখানে স্পষ্ট অদ্বৈত উল্লেখ আছে).
★তৈত্তিরীয় উপনিষদ ২-৬ সোহকয়াময়ত-বহু স্যাং প্রজায়েয়তি। অর্থাৎ সেই পরমাত্মা “আমি বহু হব” এরূপ সংকল্প দ্বারা নিজেই নিজেকে ব্যাক্ত করলেন এবং নিজেই সমগ্র সৃষ্টিতে প্রবেশ করলেন।
★তৈত্তিরীয় উপনিষদ ২-৭ এই ব্যাক্ত জগৎ সৃষ্টির পূর্বে অব্যাকৃত ব্রহ্মই ছিলেন। সেই ব্রহ্ম নিজেই নিজেকে ব্যাক্ত রূপে সমস্ত কিছু উৎপন্ন হল। সেই জন্য তাকে সুকৃত বা স্বয়ং কর্তা বলা হয়।
★ তৈত্তিরীয় উপনিষদ ৩-১০-৬ এই চরাচর জগতের সমস্ত কিছুর নাম উল্লেখ করে বললেন সকলই আমি (ব্রহ্ম)। আমিই পরমেশ্বর রূপে সমস্ত জগৎ শাসন করি। আমার জ্যোতিঃসমূহ নিত্য প্রকাশমান।
★ঐতরেয় উপনিষদ ১-১-১ সৃষ্টির পূর্বে এই জগৎ একমাত্র আত্মস্বরূপেই বর্তমান ছিল। ক্রিয়াশিল কিছুই ছিল না। সেই আত্মা ঈক্ষণ করলেন ‘আমি লোকসমূহ সৃজন করব।
★ঐতরেয় উপনিষদ ১-৩-১৩ পরমাত্মা নিজেই জীব হয়ে, ‘ আমি মানুষ, আমি কানা, আমি সুখী’ ইত্যাদি রূপে আকাশাদি ভূতবর্গকে নিজের সহিত অভিন্নরূপে জানলেন। এবং বাক্যে উহাদিগকে ব্যাক্ত করলেন। সেই জীব হৃদয়পুরশায়ী পুরুষকেই সর্বব্যাপী ও বৃহত্তমরূপে জ্ঞাত হলেন- অহো, আমি আমার আত্মস্বরূপকেই দেখিলাম। সেই জন্যই পরমাত্মার নাম ইন্দ্র। ইন্দ্রই তাঁহার প্রকৃত নাম। ১-৩-১৪ ঐতরেয়।
★ঐতরেয় উপনিষদ ৩-১-৩ প্রজ্ঞানং ব্রহ্ম।।
পঞ্চমহাভূতে চল ও অচল সমস্ত কিছুই তিনি, প্রজ্ঞানই তৎ সমুদয়কে সত্তাযুক্ত করেচন। প্রজ্ঞানেই সমস্ত কিছু প্রতিষ্ঠিত, প্রজ্ঞানই সমস্ত জগতের প্রবৃত্তির নিয়ামক এবং প্রজ্ঞাই সমস্ত জগতের আশ্রয় অতএব প্রজ্ঞানই ব্রহ্ম।
★শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ১-১ হতে ১-৩ প্রকৃতি, জগৎ, পঞ্চমহাভূত, জীবাত্মা কোন কিছুই কারণ হতে পারে না কেন না এই সকল কিছুই অনিত্য এবং পাপ পূন্যের অধীন এবং যার অধীনে চলমান সে অদ্বিতীয় পরমাত্মা।
যে অদ্বিতীয় পরমাত্মা প্রকৃতি ও জীবের সমস্ত কিছুর কারণকে যথানিয়মে পরিচালিত করেন সেই ত্রিগুণাত্মিক শক্তিকেই উক্ত ব্রহ্মবিদগণ সমাধি সহায়ে পরমাত্মা রূপে দর্শন করেছিলেন।
★শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ১-৭ লীনা ব্রহ্মণি তৎপরা যোনিমুক্তাঃ
(সর্বপ্রাণী ব্রহ্মচক্রে ভ্রমিত হয়ে সেই জীব বিদ্যা দ্বারা আপনাকে পরমাত্মা হতে অভিন্নরূপে জানলেন৷ ১-৬) সেই অবিকারী ব্রহ্মকে সমস্ত কিছুর কারণ জেনে ব্রহ্মজ্ঞগণ সমাধি অবলম্বনে ব্রহ্মেই লীন হন।
★শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ১-৮,৯
এই অবিনাশী ও বিনাশী কার্য ও কারণাত্মক বিশ্বকে পরমেশ্বর ধারণ করে আছেন। সেই পরমাত্মাই জীব রূপে অবিদ্যা দ্বারা সংসারে আবদ্ধ হন। তিনি অনাদী, সর্বজ্ঞ হয়েও অল্পজ্ঞ, ভোগ্য,ভোক্তা, ভোগ সম্পাদনে নিজেই নিযুক্ত। সাধক যখন এই তিনটিকে (ভোগ্য, ভোক্তা ও ভোগ) এই অনন্ত ব্রহ্মস্বরূপ জানেন তখন তার নিত্যাবস্থাই প্রাপ্ত হয়।
★শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ১-১২ ভোক্তা জীব, ভোগ্য পদার্থ, এবং অন্তর্যামী ঈশ্বর জ্ঞানীগনের দ্বারা এই ত্রিবিধ বস্তুকেই ব্রহ্মস্বরূপে জেনে সাধক উক্ত ব্রহ্মকে সর্বদা নিজের আত্মস্বরূপে জানবেন। কারণ ব্রহ্মজ্ঞানের অধিক আর কিছু নাই।
★শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩-২ একোহি রুদ্রো ন দ্বিতীয়ায় তস্থু। অর্থাৎ সেই রুদ্রই সকল কিছু সৃজন করে অন্তর্যামীরূপে বিদ্যমান থাকলেন এবং তার থেকে দ্বিতীয় কিছু নাই।
★শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৪-১ যিনি অদ্বিতীয় ও নির্বিশেষ, যিনি নানা প্রকার পদার্থ বিধান করেন মায়া সহায়ে এবং প্রলয়কালে বিশ্ব যাহাতে বিলীন হয় তিনিই বিজ্ঞান স্বরূপ পরমাত্মা।
★ শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৪-২ হতে ৪-৯ পর্যন্ত সমস্ত কিছুর নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে সকল কিছুই পরমাত্মা বা ব্রহ্ম। এবং এর সমাধান পরবর্তী ★
★শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৪-১০ মায়াং তু প্রকৃতিং বিদ্যান্মায়িনন্তু মহেশ্বরম্। তস্যাবয়বভূতৈস্তু ব্যাপ্তং সর্বমিদং জগৎ।
অর্থাৎ প্রকৃতিকে মায়া বলে জানবে এবং পরমেশ্বরকে মায়াধীশ বলে জানবে। সেই পরমেশ্বরই অবয়বরূপে কল্পিত বস্তুসমূহের দ্বারা এই অখিল জগৎ পরিপূর্ণ। {এখানে একমাত্র ব্রহ্মকে কারণ বলা হল এবং প্রকৃতিকে মায়া। আর জগৎকে কল্পিত বস্ত (মিথ্যা) বলা হল।}
★শ্বেতাশ্বত উপনিষদ ৬-১ জগৎ ও কালের কারণ কেবল পরমেশ্বরই।
★শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৬-১০ ও ৬-১১
সেই অদ্বিতীয় দেব মায়াশক্তি অবলম্বনপূর্বক মাকড়সার ন্যায় আপনাকে বিভিন্ন নাম, রূপ ও কর্ম দ্বারা আচ্ছাদিত করেছেন। তিনিই জ্যোতিঃস্বরূপ পরমাত্মা সর্বপ্রাণীতে অবস্থিত। তিনি সর্বব্যাপী, সকল প্রাণীর অন্তরাত্মা, কর্মাধ্যক্ষ, সর্বভূতের নিবাসস্থান, সর্বসাক্ষী, চেতয়িতা, উপাধিহীন ও নির্গুণ।
★শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৬-১৫ একো হংসো ভুবনস্যাস্য মধ্যে স এবাগ্নিঃ সলিলে সন্নিবিষ্টঃ
তমেব বিদিত্বাহতিমৃত্যুমেতি নান্যং পন্থা বিদ্যতেহয়নায়।
অর্থাৎ এই ভুবন মধ্যে একমাত্র পরমাত্মাই বিদ্যমান। তিনিই অগ্নিরূপে বর্তমান, তিনিই সলিলে সন্নিবিষ্ট, তাকে জানলেই মৃত্যুর অতীত হওয়া যায়। অন্য কোন পন্থা নাই।
(একই কথা ৬-১৬ ও ৬-১৭ দেখুন)
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১-২-৩ ব্রহ্ম নিজেকে ত্রিভাগে বিভক্ত করলেন। এবং সমগ্রই প্রতিষ্ঠিত হলেন।
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১-৪-১ সোহহমস্মীত্যগ্রে
অর্থাৎ শুরুতে জগৎ আত্মা রূপেই ছিল। তাহার হতে ভিন্ন কিছুই না দেখে বললেন আমিই সেই। অতএব “আমি” সেই নামধারী হলেন।
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১-৪-২ তিনি ভয় পেলেন। এই জন্য লোক একাকী থাকলে ভীত হয়। সেই বিরাট চিন্তা করলেন “আমা হতেই ভিন্ন কেহ যখন নাই, তখন কাকে ভয় পাব? দ্বিতীয় কেউ নাই তাই তার ভয় দূর হল। এজন্যই অদ্বৈতই নির্ভয়। দ্বৈত মানেই ভয় কারণ অন্য কেউ আছে মনে হলেই লোকে ভয় পায়। কিন্তু যখন জানে আমি ভিন্ন অন্য কেহ নাই তখন কাকে ভয় করবে??
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১-৪-৫ তিনি অবগত হলেন ” আমিই সৃষ্টিরূপে বিদ্যমান” কারণ আমিই সই সমস্ত সৃজন করেছি। সেই জন্য তার নাম হল সৃষ্টি। যিনি এরূপ জানেন যে সৃষ্টি ও স্রষ্টা অভেদ, তিনও স্রষ্টা হন কারণ তিনিও সৃষ্টি।
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১-৪-১০ অহম্ ব্রহ্মাস্মি
আমিই ব্রহ্ম
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২-৪-৬ আত্মা হতে ভিন্ন কিছু নাই। যিনি ভূতবর্গকে আত্মা হতে পৃথক জানেন, নিখিল জগৎ / ভূতবর্গ তাহাকে প্রত্যাখ্যান করে।
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২-১৫-১৯ মায়াবশত সেই পরমেশ্বর এক হয়েও বহুরূপে রূপায়িত হন। এবং এই সর্বানুভবকারী আত্মা ব্রহ্মই, ইহাই সর্ব বেদান্তের উপদেশ।
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৪-৩-১১, ১৩,১৯
হিরণ্ময় পুরুষ স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্নই জগৎ। তিনি স্বপ্ন এর মধ্যে যা কিছু নির্মাণ করেন জাগ্রত অবস্থায় তা ভোগ করেন (সুখ -দূঃখ)। উক্ত পুরুষ জাগ্রত ও সুষুপ্তি অবস্থা অতিক্রম করে পুনর্বার তুরীয় হন। মানে বিলীন হন। শ্যেন পক্ষীও যেমন আকাশে উড়ে উড়ে ক্লান্ত হয়ে নীড়ের দিকে চলে, ঠিক তেমনি এই পুরুষও এক সময় নিজের তুরীয় অবস্থার দিকে ধাবিত হন। অর্থাৎ স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেন, জাগ্রতও থাকতে চান না এবং অভিলাষ করেন না।
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৪-৩-২৩ ন তু তদ্ অদ্বিতীয়মস্তি ততোহন্যদ্বভিক্তং যৎ পশ্যেৎ
অর্থাৎ তাহা হতে দ্বৈত কিছুই নাই তাই সুষুপ্তিতে তিনি দ্বিতীয় কাউকে দেখেন না। (যদি সুষুপ্তিতে দ্বিতীয় কেউ না থাকে তাহলে অদ্বৈতবাদই সত্য কারণ এই মতেও তাই বলা হয় ব্রহ্ম হতে দ্বিতীয় কিছু নাই).
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৪-৪-৫ অয়মাত্মা ব্রহ্ম
অর্থাৎ আত্মা ব্রহ্মই
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৪-৪-১৯
মনের দ্বারা ব্রহ্ম অনুদ্রষ্টব্য। ব্রহ্মে কোন ভেদ নাই। যিনি দ্বৈত দেখেন তিনি পুনঃপুনঃ মৃত্যুর অধীন হন।
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৪-৫-১৫
(অদ্বৈতবাদী) মহর্ষি যাজ্ঞ্যবল্ক মৈত্রেয়ীকে বললেন যে যখন ব্রহ্ম দ্বৈত হয়ে থাকে (যত্র হি দ্বৈতমিব ভবতি) তখন একে অপরকে দেখে, একে অপরকে আঘ্রাণ করে, একে অপরকে বলে, একে অপরকে চিন্তা করে, একে অপরকে স্পর্শ করে।
কিন্তু যখন সমস্তই যখন আত্মা হয়ে গেল তখন কি দিয়ে কাকে দেখব, কি দিয়ে কাকে আঘ্রাণ করব, কাকে বলব, কাকে চিন্তা করব, কাকে স্পর্শ করব। সকল কিছুই তো আত্মা। সেই বিজ্ঞাতাকে কি দিয়ে জানব? হে মৈত্রেয়ী, এইরূপে তুমি উপদিষ্ট হলে। প্রিয়ে, অমৃতের সাধন এর থেকে দ্বিতীয় কিছু নাই। ইহা বলেই যাজ্ঞ্যবল্ক সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন।
(স্বয়ং যাজ্ঞবল্ক্য বললে অদ্বৈত এর ন্যায় অমৃততত্ত্ব আর কিছু নাই)
★বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৫-১ ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে। পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।
অর্থাৎ ব্রহ্ম পুর্ণ, জীবও পূর্ণ। পূর্ণ হতে পূর্ণই উদগত হল। পূর্ণের পূর্ণত্ব গ্রহণে জীব হল তবুও পূর্ণই অবশিষ্ট থাকল। ওঁ ই আকাশ ব্রহ্ম। আকাশ চিরন্তন। (জীব ব্রহ্মৈব নাপরঃ)
গীতা ১৫/৭ মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ মনঃষ্ঠানীন্দ্রিয়াণি প্রকৃতিস্থানি কর্ষতি।
অর্থাৎ আমারই সনাতন অংশ জীব হয়ে প্রকৃতিতে অবস্থিত।
ব্রহ্মের অংশ অবিচ্ছেদ্য। ঋগবেদে বলা আছে একং সদ্ বিপ্রা বহুধা বদন্তি। যেহেতু ব্রহ্ম অখন্ড। সেহেতু জীব ব্রহ্মের সনাতন অংশ বলতে অবিচ্ছেদ্য বুঝায় কারণ ব্রহ্ম হতে অংশ ভিন্ন হলে ব্রহ্ম খণ্ডিত হয়ে যায়। (জীব ব্রহ্মৈব নাপরঃ)
★ছান্দোগ্য উপনিষদ ১-১২- ৫ এবং ২-২৩-৩
ওঁ ই সমস্ত কিছু। ওঁ ভিন্ন দ্বৈত কিছু নাই। ওম্ ভোজন করব, ওম্ পান করব, ওঁ জ্যোতির্ময়, বর্ষণকারী, প্রজাগণ এর পতি, জগৎ প্রসবিতা সূর্য, এবেদং সর্বমোঙ্কার এবেদং সর্বম্।।
★ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩-১৪-১ সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম
অর্থাৎ সকল কিছুই ব্রহ্ম।
★ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬-২-১, ৩
সদেব সোম্যেদমগ্র আসীদেকমেবাদ্বিতীয়ম্ (একমেব অদ্বিতীয়ম্)
হে সোম্য সৃষ্টির পূর্বে এই জগৎ এক অদ্বিতীয় সদ্রুপে বিদ্যমান ছিল। উক্ত সৎ ঈক্ষণ করলেন আমি বহু হব। (তদৈক্ষত বহু স্যাং প্রজায়েয়েতি)
★ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬-৮-২ যেমন সূতায় বাধা পক্ষী উড়ে অন্য কোথায় আশ্রয় না পেয়ে বন্ধন সীমাতেই আশ্রয় নেয়। জীবও সেই রূপ কোথাও আশ্রয় না পেয়ে পরমাত্মাকেই আশ্রয় করে। (জীব ব্রহ্ম দ্বারা সুতার ন্যায় বেধে রয়েছে অর্থাৎ জীব ব্রহ্মৈব নাপরঃ)
★ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬-৮-৪ এই সমস্তই সৎ হতে উৎপন্ন, সতে আশ্রিত ও সতে বিলীন হয়।
★ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬-৮-৭, ৬-৯-৪, ৬-১১-৩, ৬-১৬-১, ৬-১৬-৩ তত্ত্বমসি
অর্থাৎ তুমিই সেই ব্রহ্ম।
★ছান্দোগ্য উপনিষদ ৭-২৫-১,২
আত্মা ভিন্ন অন্য কিছু নাই। সমস্ত কিছুই আত্মা, সকল দিকেই আত্মা। যাঁরা আত্মা ভিন্ন অন্য বস্ত দেখেন তারা অন্য রাজার অধীন ও অনিত্য লোকের অধিবাসী।
★গীতা ৮/১৮ ব্রহ্মার দিবসের আগমে অব্যাক্ত (প্রকৃতি) হতে সকল ব্যাক্ত পদার্থ উদ্ভূত হয়। আবার রাত্রিসমাগমে (প্রলয়ে) সেই অব্যাক্ত কারণেই লয়প্রাপ্ত হয়।
★গীতা ৮/২০ কিন্ত সেই অব্যাক্তের (প্রকৃতির) অতীত যে নিত্য অব্যাক্ত পদার্থ আছেন, তিনি সকল ভূতের বিনাশ হলেও বিনষ্ট হন না।
(এখানে স্পষ্ট যে একমাত্র পরমাত্মাই নিত্য ও সমস্ত কিছুর কারণ। এখানে প্রকৃতি সহ সকল বস্তুর লয় ঘটছে। তাই যারা দ্বৈতবাদ এবং ত্রৈতবাদ কে মানেন এবং মনে করেন ব্রহ্ম, প্রকৃতি ও জীব অনাদি এবং স্বাধীন ও কারণ সত্তা তাদের মতবাদ খন্ডিত হল)
★গীতা ৭/৬ সমস্ত ভুত এই দুই প্রকৃতি (পরা ও অপরা প্রকৃতি) হতে জাত হয়। সুতরাং আমিই নিখিল জগতের উৎপত্তি ও লয়ের কারণ। সুতরাং প্রকৃতপক্ষে আমি জগতেরও কারণ।
অতএব কেবল ব্রহ্মই একমাত্র কারণ। দ্বিতীয় বা তৃতীয় কোন কারণ এবং পৃথক সত্তাও আর অবশিষ্ট থাকে নাই। সেহেতু অদ্বৈত ভিন্ন সমস্ত মতবাদ খন্ডিত হয়।
★গীতা ১৩/২২ এই দেহে যে পরম পুরুষ আছেন, তিনিই উপদ্রষ্টা,অনুমন্তা, ভর্তা, ভোক্তা, মহেশ্বর ও পরমাত্মা বলে উক্ত হয়। (অহম ব্রহ্মাস্মি এই কথা সিদ্ধ হয় গীতা দ্বারা).
★গীতা ১৩/৩০ যখন তত্ত্বদর্শী সাধক ভূতসমূহের পৃথক পৃথক ভাব, অর্থাৎ নানা রূপ হতে একস্থ বা এক ব্রহ্মবস্তুতেই অবস্থিত এবং সেই ব্রহ্ম হতেই এই নানা রূপের বিস্তার দর্শন করেন তখন তিনি ব্রহ্মভাব প্রাপ্ত হন। (এক ব্রহ্ম ব্যাতীত দ্বিতীয় কিছু নাই।)
★গীতা ১৪/২৭ আমিই ব্রহ্মের প্রতিষ্ঠা।
অর্থাৎ চরাচর জগৎ এবং তার অতিরিক্ত যা কিছুই আছে সকল কিছুই পরমাত্মার অধীন। ব্রহ্ম কার্য ও কারণ, সগুন ও নির্গুন
এই শ্লোকে এটাই বলা হল যে সমস্ত কার্য ব্রহ্মের প্রতিষ্ঠা আমিই (কারণ ব্রহ্ম).
অতএব এক পরমেশ্বর অক্ষরব্রহ্ম ব্যাতীত দ্বিতীয় বা তৃতীয় সত্তা হতেই পারে না। সেহেতু অদ্বৈত মতবাদ শতভাগ শাস্ত্রসিদ্ধ।
Written By Joy Biswas

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মনুস্মৃতি প্রথম অধ্যায়

স্মৃতি শাস্ত্রের মধ্যে মনুস্মৃতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেমন বৃ্হস্পতিস্মৃতিতে বলা হয়েছে- বেদার্থপ্রতিবদ্ধত্বাত্ প্রাধাণ্যং তু মনো: স্মৃত...

Post Top Ad

ধন্যবাদ