আয়িশার নয় বছর বয়সঃ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

10 September, 2018

আয়িশার নয় বছর বয়সঃ


আয়িশা কি নয় বছর বয়সে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছিলেন?

ভূমিকা

ইদানিং কালে এক ধরণের বিব্রত চেহারার মুসলিমদের দেখতে পাওয়া যায়, যারা নানান কৌশলে ইসলাম ধর্মে শিশু বিবাহের বিষয়টিকে ধামাচাপা, নয়তো তা সম্পর্কে মনগড়া কথা বলার চেষ্টা করেন। তারা প্রায়শই বলবার চেষ্টা করেন যে, ইসলামে শিশু বিবাহ থাকলেও যৌন কর্মের জন্য নারী শিশুটির প্রাপ্তবয়ষ্ক বা সাবালিকা হওয়া জরুরি। এই বিষয়টিকে তুলে ধরার জন্য তারা বলেন, হযরত আয়িশা ৯ বছর বয়সেই বয়ঃসন্ধিকালে পৌছে গিয়েছিলেন, কারণ সেই সময়ে নাকি অল্প বয়সেই মেয়েরা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে যেতো। যা একেবারেই ভিত্তিহীন কথা। ইসলামে শিশু মেয়েদের বিবাহের নির্দিষ্ট কোন বয়সসীমা নেই, এবং মেয়েটির সাথে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক অবস্থায় বয়ঃসন্ধিকালে না পৌঁছালেও যৌনকর্মে কোন বাধা নেই। সেই বিষয়টি নিয়েই এই লেখাটিতে আলোচনা করবো।

প্রাপ্তবয়ষ্ক কাকে বলে?

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় যে, বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানো এবং প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া ভিন্ন বিষয়। বয়ঃসন্ধি হচ্ছে প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার একটি ধাপ, যা আসলে প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া বোঝায় না। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানো মানেই ধরে নেয়া হয় সাবালিকা বা প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়ে যাওয়া। যদিও আধুনিক বৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারণা অনুসারে কথাটি সত্য নয়। বয়ঃসন্ধি হচ্ছে প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার লক্ষণের সুচনা। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হচ্ছেন একজন মানুষ যার তুলনামূলকভাবে পরিণত বয়স হয়েছে যা যৌন পরিপক্কতা ও পুনরূপাৎদনের ক্ষমতা অর্জনের সাথে জড়িত। একজন নারী বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছালেই সে সন্তান জন্ম দেয়ার পরিপক্কতা অর্জন করে না। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছাবার পরে তার শরীর সন্তান জন্ম দানের উপযুক্ত হতে সবে শুরু করে। এই প্রক্রিয়া কারো কারো ক্ষেত্রে ৩ আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ৫ বছরে পূর্ণতা পায়। কিন্তু ইসলামে মেয়েদের সাথে যৌনকাজের জন্য বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোও জরুরি কিছু নয়। সেই বিষয়েই এই লেখাটি।

আয়িশার বয়স কত ছিল?

বিভিন্ন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে মুহাম্মাদের সাথে আয়িশার বিবাহের সময় আয়িশার বয়স ছিল ছয় বছর এবং যখন আয়িশার বয়স নয় বছর। নয় বছর বয়সেই তিনি মুহাম্মাদের সাথে যৌনসঙ্গম করেন। [১]

হিশাম এর পিতা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদিনার দিকে বের হওয়ার তিন বছর আগে খাদীজাহ (রাঃ)-এর মৃত্যু হয়। তারপর দু’বছর অথবা এর কাছাকাছি সময় অতিবাহিত করে তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বিবাহ করেন। যখন তিনি ছিলেন ছয় বছরের বালিকা। তারপর নয় বছর বয়সে বাসর উৎযাপন করেন।
Narrated Hisham’s father: Khadija died three years before the Prophet (ﷺ) departed to Medina. He stayed there for two years or so and then he married `Aisha when she was a girl of six years of age, and he consumed that marriage when she was nine years old.
সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ৩৮৯৬

উল্লেখ্য, বাসর উদযাপন বলতে যৌনকর্মের মাধ্যমে বিবাহকে কনজ্যুমেট করা বোঝানো হয়েছে।

বর্তমানে কিছু মুসলিম বলার চেষ্টা করে যে নয় বছর বয়সে আয়িশা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানোর পর মুহাম্মাদ তাঁর সাথে যৌনসঙ্গম করে এবং ইসলামে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানোর আগে যৌনসঙ্গম করা নিষিদ্ধ। কিন্তু, কুরআন, হাদীস অথবা প্রাচীন আলেমদের বক্তব্যে এমন কোনো নিষেধাজ্ঞার কথা পাওয়া যায়না। বরং দেখা যায় যে অপ্রাপ্তবয়স্ক যৌনদাসীদের সাথে সঙ্গম করা সাহাবীদের কাছে সাধারণ ঘটনা ছিল। [২]

আরবে বছরের হিসেব কীভাবে হতো?

প্রাচীন আরবে মানুষের বছর গণনা ছিল চন্দ্রবছরের হিসেব ধরে। চন্দ্রবছরকে ইংরেজিতে বলা হয় Lunar Years, আর আমরা বর্তমান সময়ে যেভাবে বছর গণনা করি সেটিকে বলা হয় সৌর বছর বা Solar Years। নবী মুহাম্মদের সময় মানুষের বয়স গণনা করা হতো চন্দ্রবছরের হিসেবে। সমস্যা হচ্ছে, চন্দ্র বছরের হিসেবে বছরে হচ্ছে ৩৫৪ দিন, আর বর্তমানে সৌর বছরে সর্বমোট দিন হচ্ছে প্রায় ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। কিন্তু প্রচলিত গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি মতে বছর হিসাব করা হয় ৩৬৫ দিনে।

A lunar year has approximately 354 days. A solar year has 365 days. [১১]

  • তাহলে, হাদিস অনুসারে আয়িশার বয়স ৬ বছর মানে হচ্ছে, আয়িশার বয়স আসলে ছিল ৬ X ৩৫৪= ২১২৪ দিন।
  • সেই হিসেবে, বর্তমান সৌরবছরের হিসেবে আয়িশার বয়স সেই সময়ে ছিল ২১২৪ ÷ ৩৬৫ = ৫ বছর ১০ মাস
  • আবার, হাদিস অনুসারে আয়িশার বয়স ৯ বছর মানে হচ্ছে, আয়িশার বয়স আসলে ছিল ৯ X ৩৫৪= ৩১৮৬ দিন।
  • সেই হিসেবে, বর্তমান সৌরবছরের হিসেবে আয়িশার বয়স সেই সময়ে ছিল ৩১৮৬ ÷ ৩৬৫ = ৮ বছর ৮ মাস ২৬ দিন।

আয়িশাই একমাত্র নন

মুহাম্মদ যে শুধু অপ্রাপ্তবয়ষ্ক আয়িশার প্রতিই আকর্ষিত ছিলেন, তা কিন্তু নয়। এমনকি, হামাগুড়ি দেয়া কচি শিশু দেখেও তিনি তাকে বিবাহ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। মানে, হামাগুড়ি দেয়া শিশু দেখলেও উনার মনে বিবাহের ইচ্ছা জাগতো। যার রেফারেন্স পাওয়া যায় ইবনে ইসহাকের গ্রন্থে। গ্রন্থের নামঃ সিরাতে রাসুলাল্লাহ (সাঃ), অনুবাদ, শহীদ আখন্দ, প্রথমা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৩৫৩।

একই বিষয় পাবেন Guillaume এর The Life Of Mohammed গ্রন্থে ৩১১ পৃষ্ঠায়।

আয়িশা কী বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছিলেন?

আয়িশা দ্বারা বর্ণিত সহীহ মুসলিমের একটি হাদীসে পাওয়া যায়, আয়িশা নয় বছর বয়সে মুহাম্মাদের ঘরে গমন করেন এবং সেই সময় তাঁর সঙ্গে তাঁর খেলার পুতুলগুলিও ছিল। [৩] সহীহ বুখারীতেও অনুরূপ হাদীস পাওয়া যায়। [৪]

নিচের হাদিসগুলো লক্ষ্য করুন। আয়িশা মুহাম্মদের ঘরে যাওয়ার পরেও আয়িশা পুতুল দিয়ে খেলা করতো। কারণ আয়িশার তখন পর্যন্ত ঋতুস্রাব শুরু হয় নি। সেই কারণে কাপড়ের তৈরি পুতুল তার জন্য হালাল ছিল।

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৬৫/ আচার ব্যবহার
পরিচ্ছেদঃ ২৫১৪. মানুষের সাথে হাসিমুখে মেলামেশা করা। ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বলেন, মানুষের সাথে এমনভাবে মেলামেশা করবে, যেন তাতে তোমার দ্বীনে আঘাত না লাগে। আর পরিবারের সঙ্গে হাসি তামাশা করা।
৫৭০০। মুহাম্মাদ (রহঃ) … আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলা করত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
Narrated `Aisha:
I used to play with the dolls in the presence of the Prophet, and my girl friends also used to play with me. When Allah’s Messenger (ﷺ) used to enter (my dwelling place) they used to hide themselves, but the Prophet would call them to join and play with me. (The playing with the dolls and similar images is forbidden, but it was allowed for `Aisha at that time, as she was a little girl, not yet reached the age of puberty.)

আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তার সাত বছর বয়সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেন। তাকে নয় বছর বয়সে তার ঘরে বধুবেশে নেয়া হয় এবং তার সঙ্গে তার খেলার পুতুলগুলোও ছিল। তাঁর আঠারো বছর বয়সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন।
সহীহ মুসলিম (হাদিস একাডেমি) ৩৩৭২

‘আয়িশাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলা করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত।
সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ৬১৩০

গ্রন্থের নামঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ [4849]
অধ্যায়ঃ ৩৬/ আদব
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ৬০. কাপড়ের স্ত্রী পুতুল নিয়ে খেলা করা সম্পর্কে।
৪৮৪৯. মুসাদ্দাদ (রহঃ) ………. আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি কাপড়ের তৈরী স্ত্রী পুতুল নিয়ে খেলা করতাম। অধিকাংশ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এমন সময় আসতেন, যখন অন্যান্য বালিকারা আমার কাছে উপস্থিত থাকতো। আর তিনি যখন ঘরে প্রবেশ করতেন, তখন তারা চলে যেত এবং যখন তিনি বাইরে যেতেন, তখন তারা আবার আসতো
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ নাসরুল বারীতে লেখা আছে – “সেই সময় হযরত আয়িশা নাবালিকা ছিলেন। তাই তিনি (মুহাম্মাদ) তাঁকে (আয়িশাকে) খেলার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু সাবালিকা নারীদের জন্য এটা মাকরূহ।” [৫]

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে নয় বছর বয়সে আয়িশা নাবালিকা ছিলেন, যখন মুহাম্মাদ তাঁর সাথে যৌনসঙ্গম করেন। একই কথা ‘দারুসসালাম’ প্রকাশনীর সহীহ বুখারীর অনুবাদেও বলা হয়েছে –

“The playing with the dolls and similar images is forbidden, but it was allowed for `Aisha at that time, as she was a little girl, not yet reached the age of puberty.” [৬]

এই হাদীসটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনু হাজার আসকালানী বলেন –

“আবু দাউদ [৭] এবং আন নাসাই [৮] আয়িশা থেকে বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ তাবূক অথবা খায়বারের যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তন করলেন। ঘরের তাকের উপর পর্দা ঝুলানো ছিল। বায়ু প্রবাহের ফলে তার এক পাশ সরে যায় যাতে তার খেলার পুতুলগুলো দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। তিনি পুতুলগুলো দেখে বললেন, হে আয়িশা! এগুলো কি? উত্তরে তিনি বললেন, এগুলো আমার মেয়ে। আর তিনি এগুলোর মধ্যে কাপড়ের তৈরী দুই ডানাবিশিষ্ট একটি ঘোড়াও দেখতে পেলেন। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ এগুলোর মধ্যে ওটা কি দেখতে পাচ্ছি? তিনি বললেন, ঘোড়া। তিনি বললেন, তার উপর আবার ওটা কি? তিনি বললেন, দু’টো পাখা। তিনি বললেন, এ আবার কেমন ঘোড়া, যার পাখা আছে! আমি বললাম, আপনি কি শুনেননি যে, সুলাইমানের ঘোড়ার কয়েকটি পাখা ছিল! আয়িশা বলেন, একথা শুনে রাসূলুল্লাহ হেসে দিলেন, যাতে আমি তাঁর সামনের সারির দাঁত দেখতে পেলাম।” আল খাত্তাবি বলেন, “আয়িশাকে পুতুল নিয়ে খেলতে দেওয়ার একমাত্র কারণ তিনি তখনও বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছাননি।” আমি (ইবনু হাজার) বলি, “ঘটনা এটিই ছিল কিনা সেই বিষয়টি প্রশ্নাতীত নয়, তবে এমনটা ঘটে থাকতে পারে, কারণ খাইবারের যুদ্ধের সময় আয়িশার বয়স ছিল চোদ্দ বছর…” [৯]

Islamweb নামক ওয়েবসাইটে এই ব্যাখ্যাটির ইংরেজি অনুবাদও করা হয়েছে। [১০]

সুতরাং, এই আলোচনার মাধ্যমে বোঝা যায় যে এমন কোনো হাদীস নেই যা প্রমাণ করে নয় বছর বয়সে আয়িশা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছিলেন। বরং সহীহ হাদীস দ্বারা দেখা যাচ্ছে যে খাইবারের যুদ্ধের সময়ও আয়িশা পুতুল নিয়ে খেলতেন, অথচ ইসলামে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানোর পর পুতুল নিয়ে খেলা নিষিদ্ধ। এর দ্বারা ধারণা করা যায় সম্ভবত চোদ্দ বছর বয়সেও তিনি নাবালিকা ছিলেন। সুতরাং, বর্তমান কিছু মুসলিমদের নয় বছর বয়সে আয়িশার বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানোর দাবিটি ভিত্তিহীন। এমন কোনো হাদীস থাকলে ইবনু হাজার আসকালানী সেটি উল্লেখ করে ইবনু খাত্তাবির মতকে ভুল প্রমাণিত করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা না করে চোদ্দ বছরে অয়িশার বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানোর ঘটনাটিকে সম্ভাব্য বলে স্বীকার করেছেন।

এছাড়াও, মনে রাখতে হবে, প্রাপ্তবয়ষ্ক কিংবা অপ্রাপ্তবয়ষ্ক, সকল নারীর জন্য স্বামীর যৌনচাহিদা পূরণ স্ত্রীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। অপ্রাপ্তবয়ষ্ক নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দেয়ার বৈধতা ইসলামে রয়েছে। যা উপরের হাদিস থেকে প্রমাণিত।

গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
হাদিস নম্বরঃ [3433] অধ্যায়ঃ ১৭। বিবাহ
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ২০. স্বামীর বিছানা পরিহার করা স্ত্রীর জন্য নিষিদ্ধ
৩৪৩৩-(১২২/…) আবূ বাকর ইবনু শায়বাহ, আবূ কুরায়ব, আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহিমাহুমুল্লাহ) ….. আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বামী যখন স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে এবং সে না আসায় তার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে রাত্রি যাপন করে, সে স্ত্রীর প্রতি ফেরেশতাগণ ভোর হওয়া পর্যন্ত লা’নাত করতে থাকে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪০৬, ইসলামীক সেন্টার ৩৪০৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
গ্রন্থঃ সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ৯/ বিবাহ
হাদিস নাম্বার: 1853
২/১৮৫৩। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআয (রাঃ) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সাজদাহ করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে মু‘আয! এ কী? তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পাই যে, তথাকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদেরকে সাজদাহ করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ ছাড়া অপর কাউকে সাজদাহ করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সাজদাহ করতে। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার প্রভুর প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে না। স্ত্রী শিবিকার মধ্যে থাকা অবস্থায় স্বামী তার সাথে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে চাইলে স্ত্রীর তা প্রত্যাখ্যান করা অনুচিত।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
It was narrated that: Abdullah bin Abu Awfa said “When Muadh bin Jabal came from Sham, he prostrated to the Prophet who said: ‘What is this, O Muadh?’ He said: ‘I went to Sham and saw them prostrating to their bishops and patricians and I wanted to do that for you.’ The messenger of Allah said: ‘Do not do that. If I were to command anyone to prostrate to anyone other than Allah, I would have commanded women to prostrate to their husbands. By the One in Whose Hand is the soul of Muhammad! No woman can fulfill her duty towards Allah until she fulfills her duty towards her husband. If he asks her (for intimacy) even if she is on her camel saddle, she should not refuse.’ ”

গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-১৩ঃ বিবাহ
হাদিস নম্বরঃ [3255]
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫৫-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যদি কোনো মানবকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে স্ত্রীকে তার স্বামীর জন্য সিজদা করার নির্দেশ দিতাম। (তিরমিযী)[1]
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

কোরআনে শিশু বিবাহের বৈধতা

এছাড়াও, সুরা তালাকের ৪ নম্বর আয়াতে বলা আছে,

তোমাদের যে সব স্ত্রী আর ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যারা এখনো ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদেরও; আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আর যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ্‌ তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।
সুরা ৬৫ঃ৪

তাফসীরে ইবনে কাসীর

তাফসীরে ইবনে কাসীরে বলা হয়েছে, অপ্রাপ্তবয়ষ্কা মেয়ের কথা।

তাফসীরে জালালাইন

তাফসীরে জালালাইনেও বলা হয়েছে, অপ্রাপ্তবয়ষ্কতার কারণে যে সব মেয়ে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায় নি, তাদের কথা।

 

অর্থাৎ, যারা ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি, বা অপ্রাপ্তবয়সী মেয়ে, তাদের ইদ্দতকাল তিনমাস।

তাফসীরে মাযহারী

এবারে তাফসীরে মাযহারী (খণ্ড ১১ পৃষ্ঠা ৫৬২, ৫৬৩) থেকে দেখে নিইঃ



মা’আরেফুল কোরআন

এবারে আসুন মা’আরেফুল কোরআনের খণ্ড ৮ এর ৪৮১, ৪৮৩ নম্বর পৃষ্ঠাগুলো দেখি।

সহবাসের পূর্বে তালাক দিলে ইদ্দত লাগবে না

স্ত্রী তালাক প্রাপ্তা হলে বা তার স্বামীর মৃত্যু হলে যে সময়ের জন্য উক্ত স্ত্রীকে এক বাড়ীতে থাকতে হয়, অন্যত্র যেতে পারে না বা অন্য কোথাও বিবাহ বসতে পারে না তাকে “ইদ্দত” বলে।

একইসাথে উল্লেখ্য, সহবাসের পূর্বে তালাক দিলে ইসলামে ইদ্দতের বিধান নেই।

হে মুমিনগণ, যখন তোমরা মুমিন নারীদেরকে বিবাহ করবে অতঃপর তাদের সাথে সহবাসের পূর্বেই তালাক দিয়ে দেবে তবে তোমাদের জন্য তাদের কোন ইদ্দত নেই যা তোমরা গণনা করবে। সুতরাং তাদেরকে কিছু উপহার সামগ্রী প্রদান কর এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে বিদায় দাও।
সুরা ৩৩ঃ৪৯

তাহলে স্পষ্টতই বোঝা যায়, যারা ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি, তাদের যেহেতু ইদ্দতের কথা বলা আছে, তাই অবশ্যই সহবাসের অনুমতিও দেয়া আছে। নইলে ইদ্দতের নির্দেশই থাকতো না। কারণ সহবাস ছাড়া তো ইদ্দতের প্রয়োজনই নেই।

বোখারীর ব্যাখ্যা

এর আরো প্রমাণ পাওয়া যায় বোখারী শরীফ (বাংলা তরজমা ও ব্যাখ্যা) গ্রন্থ (খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৯৬-১৯৭) থেকেঃ

এপোলজিস্টদের পক্ষে দুইটি হাদিস

আয়িশার বয়স নিয়ে আলোচনার সময় ইসলামের পক্ষের মানুষেরা দুইটি হাদিস নিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করেন, আয়িশা সেই সময়ে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছিলেন। এর একটি সহিহ বুখারীর, আরেকটি সুনান আবু দাউদের। আসুন, হাদিস দুইটি পর্যালোচনা করে দেখি, আসলেই হাদিস দুইটির সত্যতা কতটুকু। প্রথমে প্রখ্যাত ওয়েবসাইট সুন্নাহ ডট কম থেকে হাদিসটির ইংরেজি অনুবাদ দেখে নিইঃ

(86)Chapter: (If) a mosque (is built) on a road, it should not be a cause of harm for the people
Narrated `Aisha:
(the wife of the Prophet) I had seen my parents following Islam since I attained the age of puberty. Not a day passed but the Prophet (ﷺ) visited us, both in the mornings and evenings. My father Abu Bakr thought of building a mosque in the courtyard of his house and he did so. He used to pray and recite the Qur’an in it. The pagan women and their children used to stand by him and look at him with surprise. Abu Bakr was a Softhearted person and could not help weeping while reciting the Qur’an. The chiefs of the Quraish pagans became afraid of that (i.e. that their children and women might be affected by the recitation of Qur’an).
Reference : Sahih al-Bukhari 476
In-book reference : Book 8, Hadith 124
USC-MSA web (English) reference : Vol. 1, Book 8, Hadith 465
(deprecated numbering scheme)

পাঠক, লক্ষ্য করুন, এই হাদিসটিতে হাদিসের অনুবাদক মুহসিন খান খুব কৌশলের সাথে أَعْقِلْ শব্দটির অনুবাদ করেছেন Age of Puberty; অথচ, এই শব্দটির সঠিক অর্থ হচ্ছে Age of Reason বা জ্ঞানমতে বা জ্ঞান হওয়ার বয়স থেকে। এই হাদিসটি বাঙলায় অনুবাদের সময় বাঙলা অনুবাদক আবার সঠিক অনুবাদটিই করেছেন। আসুন দেখি হাদিসটির বাঙলা অনুবাদঃ

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৮/ সলাত
পরিচ্ছেদঃ ৮/৮৬. লোকের অসুবিধা না হলে রাস্তায় মাসজিদ বানানো বৈধ।
হাসান বাসরী, আইয়ূব এবং মালিক (রহ.) এরূপ বলেছেন।
৪৭৬. ‘উরওয়াহ বিন যুবাইর সংবাদ দিয়েছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমার জ্ঞানমতে আমি আমার মাতা-পিতাকে সব সময় দ্বীনের অনুসরণ করতে দেখেছি। আর আমাদের এমন কোন দিন যায়নি যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিনের উভয় প্রান্তে সকাল-সন্ধ্যায় আমাদের নিকট আসেননি। অতঃপর আবূ বাকর (রাযি.)-এর মাসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দিল। তিনি তাঁর ঘরের আঙ্গিণায় একটি মাসজিদ তৈরি করলেন। তিনি এতে সালাত আদায় করতেন ও কুরআন তিলাওয়াত করতেন। মুশরিকদের মহিলা ও ছেলেমেয়েরা সেখানে দাঁড়াতো এবং এতে তারা বিস্মিত হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতো। আবূ বাকর (রাযি.) ছিলেন একজন অধিক ক্রন্দনকারী ব্যক্তি। তিনি কুরআন পড়া শুরু করলে অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না। তাঁর এ অবস্থা নেতৃস্থানীয় মুশরিক কুরাইশদের নেতৃবৃন্দকে শঙ্কিত করে তুলল। (২১৩৮, ২২৬৩, ২২৬৪, ২২৯৭, ৩৯০৫, ৪০৯৩, ৫৮০৭, ৬০৭৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উরওয়াহ বিন যুবাইর (রহঃ)
Narrated `Aisha:
(the wife of the Prophet) I had seen my parents following Islam since I attained the age of puberty. Not a day passed but the Prophet (ﷺ) visited us, both in the mornings and evenings. My father Abu Bakr thought of building a mosque in the courtyard of his house and he did so. He used to pray and recite the Qur’an in it. The pagan women and their children used to stand by him and look at him with surprise. Abu Bakr was a Softhearted person and could not help weeping while reciting the Qur’an. The chiefs of the Quraish pagans became afraid of that (i.e. that their children and women might be affected by the recitation of Qur’an).

লক্ষ্য করুন, ইংরেজি অনুবাদে কী পরিমাণ জ্বালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন হাদিসের অনুবাদক। কেন এই জ্বালিয়াতি, নবী মুহাম্মদের চরিত্র পরিচ্ছন্ন করার জন্য?

আরেকটি হাদিস পাওয়া যায় সুনান আবু দাউদ শরীফ থেকেঃ

General Behavior (Kitab Al-Adab)
(63)Chapter: About swings
Narrated Aisha, Ummul Mu’minin:
The Messenger of Allah (ﷺ) married me when I was seven or six. When we came to Medina, some women came. according to Bishr’s version: Umm Ruman came to me when I was swinging. They took me, made me prepared and decorated me. I was then brought to the Messenger of Allah (ﷺ), and he took up cohabitation with me when I was nine. She halted me at the door, and I burst into laughter.
Abu Dawud said: That is to say: I menstruated, and I was brought in a house, and there were some women of the Ansari in it. They said: With good luck and blessing. The tradition of one of them has been included in the other.
Grade : Sahih (Al-Albani)
Reference : Sunan Abi Dawud 4933
In-book reference : Book 43, Hadith 161
English translation : Book 42, Hadith 4915

এবারে বাঙলায় পড়িঃ

حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، ح وَحَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، قَالاَ حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَزَوَّجَنِي وَأَنَا بِنْتُ سَبْعِ سِنِينَ فَلَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ أَتَيْنَ نِسْوَةٌ – وَقَالَ بِشْرٌ فَأَتَتْنِي أُمُّ رُومَانَ – وَأَنَا عَلَى أُرْجُوحَةٍ فَذَهَبْنَ بِي وَهَيَّأْنَنِي وَصَنَعْنَنِي فَأُتِيَ بِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبَنَى بِي وَأَنَا ابْنَةُ تِسْعٍ فَوَقَفَتْ بِي عَلَى الْبَابِ فَقُلْتُ هِيهْ هِيهْ – قَالَ أَبُو دَاوُدَ أَىْ تَنَفَّسَتْ – فَأُدْخِلْتُ بَيْتًا فَإِذَا فِيهِ نِسْوَةٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَقُلْنَ عَلَى الْخَيْرِ وَالْبَرَكَةِ ‏.‏ دَخَلَ حَدِيثُ أَحَدِهِمَا فِي الآخَرِ ‏.
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, আমার ছয় বা সাত বছর বয়সে (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)) আমাকে বিয়ে করেন। আমরা মদিনায় আগমন করলে একদল মহিলা আসলেন। বর্ণনাকারী বিশরের বর্ণনায় রয়েছেঃ আমার নিকট (আমার মা) উম্মু রূমান (রাঃ) আসলেন, তখন আমি দোলনায় দোল খাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন, আমাকে প্রস্তুত করলেন এবং পোশাক পরিয়ে সাজালেন। অতঃপর আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পেশ করা হলো। তিনি আমার সঙ্গে বাসর যাপন করলেন, তখন আমার বয়স নয় বছর। মা আমাকে ঘরের দরজায় দাড় করালেন এবং আমি উচ্চহাসি দিলাম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ আমার মাসিক ঋতু হয়েছে। আমাকে একটি ঘরে প্রবেশ করানো হলো। তাতে আনসার গোত্রের একদল মহিলা উপস্থিত ছিলেন। তারা আমার জন্য কল্যাণ ও বরকত কামনা করলেন।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৩৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

পাঠক, লক্ষ্য করুন, আয়িশার যে ঋতুস্রাব হয়েছিল, তা আবু দাউদের মতামত মাত্র। উনি আয়িশা অথবা আয়িশার কাছ থেকে সরাসরি শুনেছেন এমন কারো কাছ থেকেও এই কথা শোনেন নি। শুধুমাত্র আবু দাউদের মতামত তো গ্রহণযোগ্য নয়।

উপসংহার

উপরের আলোচনা থেকে কয়েকটি বিষয় সম্পূর্ণ পরিষ্কার যে, সুরা তালাকের ৪ নম্বর আয়াত অনুসারে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়ের ইদ্দত তিনমাস। সুরা আহজাবের ৪৯ আয়াত অনুসারে বিবাহ এবং যৌন সম্পর্ক না হলে ইদ্দতের প্রশ্নই আসে না। তাই অপ্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়ের সাথে বিবাহ এবং যৌনতা দুই-ই জায়েজ। আবার, আয়িশা ৯ বছর বয়সে নবীর সাথে যৌন সম্পর্কের সময় ঋতুর বয়সেও পৌঁছান নাই। কারণ ঋতুর বয়সে পৌঁছে গেলে সেই নারী ইসলামের দৃষ্টিতে বালেগা হিসেবে গণ্য এবং পুতুল খেলা তার জন্য মাকরুহ। আয়িশা নিশ্চয়ই এরকম মাকরুহ কাজ করেন নি। এবং নবীর ঘরেও তিনি পুতুল খেলতেন। তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না, ঋতুর বয়সে পৌঁছাবার আগেই নবী মুহাম্মদ তার সাথে যৌন সঙ্গম করেছিলেন। প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া তো অনেক দুরের ব্যাপার!

তথ্যসূত্র

~~~~~
[১] সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ৩৮৯৬
[২] ফাতহুল বারী ৮/৬৭
[৩] সহীহ মুসলিম (হাদিস একাডেমি) ৩৩৭২
[৪] সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ৬১৩০
[৫] নাসরুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ১১/২৪১
[৬] সহীহ বুখারী (দারুসসালাম) ৮/৮৮
[৭] সুনানে আবু দাউদ ৪৯৩২
[৮] সুনানুল কুবরা ৮৯০১ #page-12393
[৯] ফাতহুল বারী ১০/৫২৭
[১০] Meaning of hadeeth about Aa’ishah’s playing with dolls
[১১] The Difference Between Solar & Lunar Years



No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ