পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

01 September, 2018

পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং

ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।

পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ।।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।।
শুক্ল যজুর্ব্বেদীয় (বৃ ৫/১/১)
মুলানুবাদঃ – অদ:–ইন্দ্রিয়ের অগোচর কারণস্বরূপ ব্রহ্ম, তিনি পূর্ণ; এবং ইদং—কাব্যাত্মক ব্ৰহ্ম, তিনিও পূর্ণ ; পূর্ণ জগৎ-কানা পূর্ণ কারণ হইতে অভিব্যক্ত হয়। অবশেষে এই পূর্ণের পূর্ণ লইয়— অর্থাৎ পরিপূর্ণগরূপ এই কার্য জগৎ তাহতে বিলীন হইলে পর, সেই পূর্ণই অবশিষ্ট থাকেন; অর্থাৎ তাহার কোন প্রকার বিকৃতি ঘটে না ॥

অর্থ :- পরব্রহ্ম পূর্ণ, নামরূপ ব্রহ্মও পূর্ণ ;পূর্ণ থেকে পূর্ণ উদ্গত হন; পূর্ণের পূর্ণত্ব বিদ্যা সহায়ে গ্রহণ করলে পূর্ণই (পরব্রহ্মই) অবশিষ্ট থাকেন। ওঁ আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক - এই ত্রিবিধ বিঘ্নের বিনাশ হোক।
শব্দ বিশ্লেষণ ঃ
ওঁ (ব্রহ্ম বাচক শব্দ)
পূর্ণমদ = পূর্ণম + অদ ; পূর্ণম মানে সর্বব্যাপী,অনন্ত আর অদ মানে উহা মানে এখানে ব্রহ্মকে নির্দেশ করা হচ্ছে ।
পূর্ণমিদং = পূর্নম + ইদং ; পূর্ণম মানে সর্বব্যাপী,অনন্ত আর ইদং মানে ইহা অর্থাৎ ব্রহ্ম থেকে উৎপন্ন সকল কিছু । (পরের অর্থগুলো বিশ্লেষণে বুঝা যাবে ।)
পূর্ণাৎ(ব্রহ্ম হতে বা সর্বব্যাপী হতে)
পূর্ণমুদচ্যতে = পূর্ণম(ঐ) + উদচ্যতে(উদ্গত হওয়া বা উৎপন্ন হওয়া সকল পদার্থ ।) বিঃদ্র উপরোক্ত ইদং দ্বারা এই সকল পদার্থকেই নির্দেশ করা হয়েছে ।
এবার এই লাইনটাকে সাজিয়ে দেখি কি আসে?
ওঁ পূর্ণমদঃ(ব্রহ্ম পূর্ণ), পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে(ব্রহ্ম থেকে উৎপন্ন সকল পদার্থই পূর্ণ,কারণ তারা পূর্ণ থেকে উৎপন্ন হয়েছে ।)
ব্যাখা –
এটা খুব সহজেই অনুমান করা যায় যে,পূর্ণ থেকে উৎপন্ন কোনো কিছু স্বাভাবিকভাবেই পূর্ণ হবে । একটি উদাহরণ এমন দেওয়া যেতে পারে জে,মাতৃজঠরে শিশু-সন্তান ধীরে ধীরে পূর্ণতা পায়। আর পূর্ণতা নিয়েই আলোর মুখ দেখে।এখানে পূর্ণতা মানে হচ্ছে অবয়ব।পূর্ণ মা থেকে যে সন্তান জন্ম নেয় তাও পূর্ণ।এখানেও তাই,পূর্ণ ব্রহ্ম থেকে উৎপন্ন সকল কিছু এভাবেই পূর্ণতা পায় ।
এবার আসি ২য় লাইন এ -
পূর্ণস্য ( ব্রহ্ম হতে উৎপন্ন সকল কিছু নির্দেশক)
পূর্ণমাদায় =পূর্ণম(পূর্ণতা) + আদায় ( আদায় করা)
পূর্ণমেবাবশিষ্যতে = পূর্ণম ( পূর্ণব্রহ্ম ) + এব (কেবল) + অবশিষ্যতে ( অবশিষ্ট থাকা )
এই লাইনকে বাংলায় সাজালে এমনটা দাঁড়ায় যে, উৎপন্ন সকল কিছু পূর্ণব্রহ্ম থেকে পূর্ণতা প্রাপ্ত হলেও পূর্ণ ব্রহ্মই অবশিষ্ট থাকেন ।
ব্যাখা –
খেয়াল করি,সকল প্রানী মায়ের শরীর থেকেই পূর্ণতা(অবয়ব) লাভ করি।সন্তান উৎপন্ন হয় মা এর গর্ভে,মা এর শরীরের উপাদান নিয়েই।তাইলে আমাদের শরীর আর মা এর শরীর একি।কিন্তু শুধু শরীর দিয়েই তো আর চলে না,শরীরকে সঞ্জীবিত করতে দরকার আত্মা।আর আত্মা তো সকল দেহে এক।মানে ,আমরা মা এর পূর্ণতা থেকে পূর্ণতা পেলেও আমরা মায়েরই অংশ।এখানে একটা বিষয় খেয়াল করার আছে , মায়ের শরীর আর আমদের শরীর একই হলেও যদি আত্মা ভিন্ন হত তাহলেও কিন্তু আমরা পূর্ণতা লাভ করতে পারতাম না।তাই,আত্মার একত্ব আছে বলেই আমরা এক হতে পেরেছি।
একইভাবে পূর্ণব্রহ্ম হতে সকল সকল পদার্থ উৎপন্ন হয় বলেই সকল পদার্থ পূর্ণ নয়।তাহলে পূর্ণ কিভাবে হবে? পদার্থ পূর্ণ তখনি হবে যখন ব্রহ্ম তাদের মধ্যে অবস্থান করবেন।আর ব্রহ্ম সব কিছুতে প্রছন্নভাবে অবস্থান করেন।আর এভাবে সবকিছুতে ব্রহ্ম অবস্থান করার মাধ্যমে সব কিছুই ব্রহ্ম হলো।ব্রহ্মের বাইরে আর কিছুই রইল না।
এই শ্লোকের মূলশিক্ষাই হলও,সবকিছু ব্রহ্ম থেকে উৎপন্ন হলেও সবকিছুই ব্রহ্ম।
আর এটাই হলো, সর্বেশ্বরবাদ তত্ত্ব। অর্থাৎ,সবকিছুই ঈশ্বর। ঈশ উপনিষদের শুরুতেই অর্থাৎ শান্তিপাঠেই এই সর্বেশ্বরবাদই তুলে ধরা হয়েছে।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মনুস্মৃতি প্রথম অধ্যায়

স্মৃতি শাস্ত্রের মধ্যে মনুস্মৃতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেমন বৃ্হস্পতিস্মৃতিতে বলা হয়েছে- বেদার্থপ্রতিবদ্ধত্বাত্ প্রাধাণ্যং তু মনো: স্মৃত...

Post Top Ad

ধন্যবাদ