পুরাণের নোংরামি - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

15 September, 2018

পুরাণের নোংরামি

 হিন্দুদের অনেক পুরাণ আছে, প্রধান পুরাণ ১৮ টি। এসবই নাকি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস লিখেছিলেন। কিন্তু ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এগুলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির হাতে রচিত হয়নি ; নানা জনের হাতে এই বর্তমান পুরাণগুলি রচিত হয়েছে। ব্যাসের নামে প্রচলিত অনেক পুরাণে তো ইংরেজ আমলেও অনেক কিছু ঢোকানো হয়েছে। এসব অবশ্যই হিন্দুরাই ঢুকিয়েছিল, বিধর্মীরা নয়। যাইহোক, বিবিধ কারণে হিন্দু ধর্মে একই ঘটনার একাধিক ভার্সন আমাদের চোখে পড়ে, যা অত্যন্ত স্বাভাবিক।  ব্রহ্মা, চার মস্তকধারী এই পুরুষ হিন্দু ধর্মে সৃজনকর্তা রূপে পরিগণিত হন। তিনি বৃদ্ধ, তাকে ‘পিতামহ ব্রহ্মা’  বলেও ডাকা হয়ে থাকে। পিতামহ হলেও সৃষ্টকর্তা ব্রহ্মা  বড্ড রসিক এবং দুষ্টু প্রকৃতির দেবতা ছিলেন।

ব্রহ্মার উপর অনেক রকমের দুষ্টুমির অভিযোগ আছে। এর মধ্যে  ভয়াবহ একটি অভিযোগ হল, অজাচারের অভিযোগ। ব্রহ্মা তার কন্যার সাথে সঙ্গম করতে চেয়েছিলেন। অনেক ধর্মগ্রন্থের বিবরণ অনুযায়ী সেই চাওয়া আর পাওয়াতে পরিণত হতে পারেনি, কেবল চাওয়াতেই সীমাবদ্ধ থেকেছিল। আবার অনেক ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী তিনি তার পলায়নরতা কন্যাকে ধর্ষণ করেছিলেন; কিছু বিবরণ অনুসারে তিনি তার কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন।
ব্রহ্মার সাথে তার কন্যার অজাচারের ব্যাপারটি প্রচুর হিন্দু ধর্মগ্রন্থে উল্লেখিত আছে। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের কাহিনীগুলোতে অনেকসময়ই কন্যার নাম বদলে গিয়েছে। কখনো সেই কন্যাকে বলা হয়েছে দৌঃ, কখনো বলা হয়েছে ‘ঊষা’ , কখনো ‘সরস্বতী’ বলা হয়েছে, কখনো বলা হয়েছে ‘সন্ধ্যা’ , আবার কখনো সে কন্যা ‘বাক’, কখনো বা ‘শতরূপা’। কন্যার নাম বদলালেও এখানে পিতার নাম মোটামুটি একই আছে। এখানে বরারবই পিতা হলেন, প্রজাপতি বা ব্রহ্মা।
বৃহদারণ্যক উপনিষদে দেখা যায় প্রজাপতি তার শরীর থেকে এক নারীকে সৃষ্টি করে তার সাথেই মিলিত হয়েছিলেন। এই অজাচারের ফলেই নাকি মানুষের উৎপত্তি হয়েছিল! কিন্তু নারীটির কাছে প্রজাপতির এই আচরণ নিন্দনীয় বলে মনে হয়েছিল, কেননা প্রজাপতির দেহ থেকেই তো তিনি সৃষ্টি হয়েছেন! তাই সেই নারীটি পলায়ণ করতে শুরু করেন। তিনি গাভী, অশ্বা, গর্দভী প্রভৃতির রূপ ধরে পলায়ন করতে থাকেন; আর প্রজাপতিও বৃষ, অশ্ব, গর্দভ প্রভৃতির রূপ ধরে তার সাথে সঙ্গম করেন। এর মাধ্যমেই নাকি এইসকল প্রাণীর উৎপত্তি হয়েছে! সেই নারীটি সব রকমের প্রাণীর রূপ ধারণ করেই পলায়ন করছিলেন আর প্রজাপতিও সকল প্রাণীর রূপ ধরেই তার সাথে সম্ভোগ করেছিলেন। এইভাবেই নাকি সকল প্রাণীর সৃষ্টি হয়েছিল। তথ্যসূত্রঃ(বৃহদারণ্যক উপনিষদ/১/৪/৩ ; অনুবাদক সীতানাথ তত্ত্বভূষণ;  হরফ প্রকাশনী)

ভাগবত পুরাণের নোংরামি

ভাগবত পুরাণ ৩/২০/২৩,৩৪ শ্লোক
ব্রহ্মা জঘনদেশ অর্থাৎ নিতম্ব নিয়ে অসুরদের সৃষ্টি করে, তারপর সেই অসুররাই ব্রহ্মার সাথে মৈথুন করার চেষ্টা করে, ব্রহ্মা হাসতে হাসতে সেখান থেকে ভয়ে পালিয়ে যায়।
ভাগবত পুরাণ ৩/২০/২৩

ভাগবত পুরাণের ৮ স্কন্ধ, ১২ অধ্যায়, ১২ শ্লোক থেকে ৩৩ শ্লোক
একসময় শঙ্করজী বিষ্ণুজীকে বললেন যে -হে প্রভু আপনি যখন লীলার করার জন্য অবতার গ্রহণ করেন তখন আমি আপনার সেই রূপ দর্শন করি এখন আমি সেই রূপকে দেখতে চাই যে রূপ দ্বারা আপনি দৈত্যদের মোহিত করে দেবতাদের অমৃত খাইয়ে ছিলেন, শঙ্করজীর এই প্রার্থনা শুনে বিষ্ণু রাজি হলেন। (ভাগবত পুরাণ ৮/১২/১২-১৬ শ্লোক)

বিষ্ণুর সেই মোহিনী রূপ খুবই সুন্দর ছিল, তা দেখে শঙ্করজী সতী এবং তার গুণ কে ভুলে গেলেন এবং কামী হয়ে ওঠেন, একসময় মোহিনী দৌড়াতে শুরু করলেন, তার পিছে শঙ্করজীও মোহিনীর পিছে পিছে দৌড়াতে শুরু করলেন, পেছনে ভগবান শঙ্করকে দেখতে দেখতে বাতাস দ্বারা মোহিনীর শাড়ি খুলে বিবস্ত্র হয়ে জান, মোহিনীর এক এক অঙ্গ খুবই রুচিকর ছিল, এই দৃশ্য দেখে ভগবান শঙ্করের মন আকৃষ্ট হয়ে যায়, বিষ্ণুর সেই মোহিনী রূপ শঙ্করজীর বিবেক কে হরণ করেন, সেই রূপ দেখে ভগবান শঙ্কর কামুক হয়ে জান, তিনি সমস্ত লজ্জা ত্যাগ করে মোহিনীর কাছে চলতে থাকেন। (ভাগবত পুরাণ ৮/১২/১৯-২৫ শ্লোক)

মোহিনী জী তো পূর্ব থেকেই বিবস্ত্র ছিল, তাই ভগবান শঙ্করকে নিজের দিকে আসতে দেখে মোহিনী লজ্জিত হন, মোহিনী এক বৃক্ষের আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে পড়েন আর হাসতে লাগল ভগবান শঙ্করের স্বভাব দেখে। ভগবান শঙ্করের ইন্দ্রিয় নিজের বশে ছিল না বরং তিনি কামবশে ছিল। মেয়ে হাতির পেছনে ছেলে হাতির সাদৃশ্যে তারা দৌড়াতে শুরু করেন। (ভাগবত পুরাণ ৮/১২/২৬-২৭ শ্লোক)

 আরো দেখুন.....

ইহার পর ভগবান শঙ্কর মোহিনী কে ধরে ফেলেন, আর তাকে দুই হাতে হৃদয় ভরে জড়িয়ে ধরেন , যেভাবে ছেলে হাতি মেয়ে হাতির সাথে আলিঙ্গন করে সেভাবে ভগবান শঙ্কর মোহিনী কে জড়িয়ে ধরেন, অনেক চেষ্টার পর মোহিনী শঙ্করের কাছ থেকে ছাড়া পান তারপর পুণরায় দৌড়াতে শুরু করে, ভগবান শঙ্করও সেই মোহিনী রূপধারী বিষ্ণুর পিছে চলতে থাকে, কামুক পুরুষ হাতির পেছনে মহিলা হাতির সমান সে মোহিনীর পিছে দৌড়াতে থাকে। ইহার পর ভগবান শঙ্করের বীর্য বেরিয়ে আসে। (ভাগবত পুরাণ ৮/১২/২৮-৩২)

ভগবান শঙ্করের সেই বীর্য পৃথিবীতে যেখানে যেখানে পরে সেখানে সেখানে সোনা রুপার গহনা তৈরি হয়ে যায় ।
(ভাগবত পুরাণ ৮/১২/৩৩)

শিবপুরাণে


শিবপুরাণ অনুসারে, ব্রহ্মা তার কন্যা সরস্বতীর রূপে দেখে কামাতুর হয়ে পড়েন এবং তাকে বলেন,” ওই সুন্দরী! যেও না, দাঁড়াও!  “ একথা শুনে সরস্বতী ভীষণ রেগে যান এবং ব্রহ্মাকে বলেন, “ পিতা হয়ে কিভাবে তুমি ধর্মবিরুদ্ধ অশুভ কথা বললে!” এরপর সরস্বতী ব্রহ্মাকে অভিশাপ দেন।
(শিবপুরাণ/জ্ঞানসংহিতা/৪৯ অধ্যায়/৭৭-৭৯;  অনুবাদক-শ্রী পঞ্চানন তর্করত্ন)
শিবপুরাণের জ্ঞানসংহিতার ৪৯ তম অধ্যায়ে ব্রহ্মাকে তার কন্যা সরস্বতীর প্রতি কামাতুর হয়ে পড়তে দেখা যায়।
শিবপুরাণ মতে, বর্তমানে ব্রহ্মা চতুর্মুখ হলেও পূর্বে তিনি পঞ্চ মুখবিশিষ্ট ছিলেন। একবার শিব ও পার্বতীর সামনে স্রষ্টা ব্রহ্মা অপভ্রংশ শব্দ ব্যবহার করেন, এর ফলে শিব তার একটি মুখ কেটে ফেলেন।
পুরাণ বর্ণনাকার সূতের মুখে ব্রহ্মার মাথা হারানোর কাহিনী শুনে মুনিরা জিজ্ঞেস  করেন, “ব্রহ্মার মুখ কেন এমন বিরুদ্ধভাষী হল?” উত্তরে সূত বলেন, “ হে ঋষিগণ! পূর্বকালে ব্রহ্মা নিজ কন্যা সরস্বতীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে অনুসরণ করে কাম বিহ্বল চিত্তে তাকে ‘অয়ি সুন্দরী! গননে নিবৃত্ত হও’ এই কথা বলেছিলেন। তা শুনে সরস্বতী রেগে গিয়ে অভিশাপ দেন , “পিতা হয়ে তুমি যে মুখে ধর্ম বিরুদ্ধ অশুভ কথা বললে, সেই মুখে তুমি বিরুদ্ধভাষী হবে।“(শিবপুরাণ/জ্ঞানসংহিতা/৪৯ অধ্যায়/৭৭-৭৯| অনুবাদক-শ্রী পঞ্চানন তর্করত্ন )
সরস্বতীর এই অভিশাপের পর থেকে ব্রহ্মা তার মুখ দিয়ে ‘অতি কঠোর দুষ্ট শব্দ’ উচ্চারণ করতেন। আর শিব ও পার্বতীর সামনে এমন দুষ্ট শব্দ ব্যবহারের ফলেই পিতামহ ব্রহ্মা তার পঞ্চম মুখ হারান।

স্কন্দ পুরাণে

নানান পুরাণে যদিও সরস্বতী ব্রহ্মার কন্যা এবং সরস্বতীর সাথে ব্রহ্মা অজাচারে লিপ্ত হয়েছিলেন কিন্তু স্কন্দ পুরাণের ব্রহ্মখণ্ডে ব্রহ্মাকে গায়ত্রী ও সরস্বতীর পতিরূপে দেখা যায়। তবে স্কন্দ পুরাণেও ব্রহ্মাকে তার ‘বাক’ নামক কন্যার সাথে অজাচারে লিপ্ত হতে দেখা যায়।
পুরাণ বর্ণনাকার সূত বলেন, “ বিপ্রগণ! পূর্বে প্রজাপতি কামুক  হয়ে মোহক্রমে বাক নামের নিজকন্যার প্রতি আসক্ত হন। কন্যা বাক প্রজাপতির কামুক মনোভাব বুঝতে পেরে লজ্জায় মৃগীরূপ ধারণ করেন। তখন ব্রহ্মাও হরিণ হয়ে তার সাথে রমণ করতে অভিলাষী হন। বাগদেবী হরিণীরূপে গমন করলে, মৃগরূপী ব্রহ্মাও তার অনুগমন করেন।“ [স্কন্দ পুরাণ/ব্রহ্মখণ্ড/সেতুমাহাত্ম্য পর্ব/ অধ্যায় ৪০]
দেবতারা সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে কন্যা সঙ্গমে উদ্যত দেখে তার নিন্দা করতে থাকেন। দেবতারা বলেন, “ এই ব্রহ্মা কন্যাগমনে উদ্যত হয়ে বড়োই অকার্য করছেন।“
ব্রহ্মাকে এই ধরণের অবৈধ কাজে লিপ্ত দেখে শিব ব্যাধের রূপ ধারণ করে মৃগরূপী ব্রহ্মাকে হত্যা করেন।
ব্রহ্মা নিহত হলে , ব্রহ্মার স্ত্রী গায়ত্রী এবং সরস্বতী কঠোর তপস্যা করে শিবকে সন্তুষ্ট করেন। শিব সন্তুষ্ট হলে ব্রহ্মাও আবার জীবিত হয়ে ওঠেন।
ব্রহ্মা জীবিত হয়ে মহেশ্বরকে বলেন, “ হে দেব দেবেশ! হে করুণাকর, শঙ্কর! তোমায় নমস্কার করি। হে প্রভু, করুণা সিন্ধু ! পাপাচরণ হতে আমায় পরিত্রাণ কর। হে শম্ভু, তোমার কৃপায় আমার যাতে কখনো নিষিদ্ধাচরণে পুনরায় আর প্রবৃত্তি না হয়, তুমি আমায় সেভাবে সবসময় রক্ষা কর।“
শিব ব্রহ্মাকে বলেন, “ তথাস্তু! হে বিধি! অতঃপর তুমি আর প্রমাদে পতিত হয়ো না। কুপথে চলা সমস্ত পুরুষদের আমিই সর্বদা শাসন করি। “

কালিকা পুরাণে

বিধাতা ব্রহ্মা, দক্ষ প্রভৃতি প্রজাপতিগণকে সৃষ্টি করে যখন ক্রতু,পুলহ,পুলস্ত,বসিষ্ট,নারদ প্রভৃতি দশ মানস পুত্রকে সৃষ্টি করেন, তখন তার মন থেকে এক পরম রূপবতী উত্তম রমণী আবির্ভূত হন। তিনি সন্ধ্যা নামে বিখ্যাত হন। এই সন্ধ্যাকে সন্ধ্যাবেলায় পূজা করা হয়ে থাকে। (১/২৪-২৫)
তার মত সম্পূর্ণ গুণশালীনি রমণী তখন স্বর্গ, মর্ত্য, পাতলে আর ছিল না, তার আগে অথবা পরে হয়নি, আর হবেও না। (১/২৬)
পুরাণকারের বর্ণনা অনুযায়ী,
  • সন্ধ্যা ‘স্বভাব সুন্দর সুনীল কুন্তল(কেশ) ভারে বর্ষাকালীন ময়ূরীর ন্যায়’ (১/২৭)
  • তার ‘আকর্ণবিলম্বী অলকগুচ্ছ শোভিত আপাটল ললাটদেশ ইন্দ্রধনু বা নবীন শশধরের ন্যায়।‘ (১/২৮)
  • তার চোখ ছিল হরিণীর মত। (১/ ২৯)
  • “যার সৌন্দর্য ও লাবণ্যগুণে বদন মণ্ডলের পরিপূর্ণতা- চিবুকের কাছে আসার জন্যই যেন তার স্তনযুগলের উদ্যম, হে বিপ্রগণ তার সেই কমলকলিকাকৃতি , উত্তঙ্গ পীবর পরস্পর সংযুক্ত শ্যামাগ্র স্তনযুগল দেখলে মুনিরাও মোহিত হতেন।” (১/৩৩)
  • “তার ত্রিবলি শোচিত ক্ষীণ কটিদেশ, বসনের ন্যায় মুষ্টিগ্রাহ্য। তার কটিদেশকে সকলেই কামদেবের শক্তি বলে মনে করেছিল।” (১/৩৪)
এই পরম সুন্দরী যিনি কিনা ব্রহ্মার নিজের কন্যা তাকে দেখে ব্রহ্মা ভাবতে লাগলেন। তাকে দেখে দক্ষ প্রভৃতি প্রজাপতিগণ ও ব্রহ্মার মরিচী প্রভৃতি মানসপুত্রগণ অত্যন্ত উৎসুক হয়ে ভাবতে থাকেন। এই রূপবতী কার হবেন, এই নিয়ে সবাই ভাবছিলেন।
ব্রহ্মা এমন চিন্তা করতে করতে এক মনোহর পুরুষ তার থেকে উৎপন্ন হন। সেই পুরুষই কামদেব নামে পরিচিত। ব্রহ্মা তাকে বর দিয়ে বলেন , “তুমি তোমার এই মনোহর মূর্তি ও পুষ্পময় পঞ্চশরে স্ত্রী পুরুষদের মোহিত করে চিরস্থায়ী সৃষ্টির প্রবর্তক হও।”(১/৫৩) ব্রহ্মা বলেন, দেব, দানব,কিন্নর,গন্ধর্ব, মানুষ,পশুপাখি,সাপ,জলজ প্রাণী সকলেই কামদেবের দ্বারা মোহিত হবে। ব্রহ্মা আরো বলেন, “অন্য প্রাণীর কথা দূরে থাক, আমি, বিষ্ণু , এবং মহেশ্বর আমরাও তোমার বশবর্তী হব” (১/৫৭)
ব্রহ্মার কাছ থেকে বর পাওয়ার পর, কামদেব ব্রহ্মার উপরেই প্রথমে তা পরীক্ষা করে দেখতে চাইলেন। কামদেব ভাবলেন,
“ব্রহ্মা আমার যে নিত্যকর্ম স্থির করে দিয়েছেন, তার পরীক্ষা এখানে মুনিদের সামনেই,এই ব্রহ্মার উপরেই করে দেখি। (২/১৭) এখানে মুনিরা আছেন, দক্ষ প্রজাপতি আছেন, স্বয়ং ব্রহ্মাও আছেন, আর  সন্ধ্যাও এখানে আছেন। (২/১৮) এই সকল পুরুষ এবং ব্রহ্মাও আমার শরব্য হবেন।(২/১৯)”
এর পরেই কামদেব কামবাণে সকলকে মোহিত করলেন। “এরপর শরপীড়িত হয়ে সেইসমস্ত মুনি এবং ব্রহ্মা মোহিত হয়ে মনে মনে কিছুটা বিকার প্রাপ্ত হলেন।” (২/২৪-২৫) “তারা সকলে বিকার প্রাপ্ত হয়ে বারবার সন্ধ্যার দিকে দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন, দেখতে দেখতে তাদের কাম বৃদ্ধি পেল। কেননা রমণী হতেই কাম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ” (২/২৬)
তখন সেই দুষ্ট মদন তাদের বারবার মোহিত করে,যাতে তাদের বহিরিন্দ্রিয়ের বিকার হয়,তা করলেন। (২/২৭)
এরপর যখন ব্রহ্মা ইন্দ্রিয়ের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে , সন্ধ্যাকে দেখতে লাগলেন তখন তার শরীর হতে ৪৯ সাত্ত্বিক ভাবের উদয় হল। (২/২৮)
তারা সকলে দৃষ্টিপাত করতে থাকলে সন্ধ্যাও বারবার কটাক্ষপাত ও কটাক্ষসঙ্কোচ প্রভৃতি কামদেবের বাণ সম্ভূত বিবিধ ভাব প্রকাশ করতে লাগলেন। (২/৩০) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গ উঠলে মন্দাকিনীর যেমন শোভা হয়, সেইরকম স্বভাব সুন্দরী সন্ধ্যাদেবীও মদন বিকার জনিত সেই ভাবপ্রকাশ করে অত্যন্ত শোভা পেয়েছিলেন।
এরপর  সেই সন্ধ্যাকে দেখতে দেখতে বিধাতার শরীরে স্বেদজলধারা বইতে লাগল।তিনি সন্ধ্যার প্রতি অভিলাষী হলেন। (২/৩২) এরপর মরীচি , অত্রি সেই সমস্ত মুনি এবং দক্ষ প্রমুখ মুনিবরেরাও ইন্দিয়বিকার প্রাপ্ত হলেন। (২/৩৩)
তখন, ব্রহ্মা ও মুনিদের অবস্থা দেখে কামদেব তার ক্ষমতার উপর বিশ্বাস আনলেন।
সেই সময়ে আকাশচারী মহাদেব ব্রহ্মা এবং দক্ষ সদৃশ পুত্রগণকে ওইরকম বিকারপ্রাপ্ত দেখে  উপহাস করতে লাগলেন। (২/৩৬) শিব ধিক্কার জানিয়ে হাসতে হাসতে তাদের লজ্জায় ফেলে দিয়ে বলতে লাগলেন,
“ ওহে ব্রহ্মা! নিজের তনয়াকে দেখে, তোমার কিনা কামভাব উপস্থিত হল। যারা বেদানুসারে চলে, এ কাজ তাদের যোগ্য নয়।“ (২/৩৭-৩৮)
শিব বলেন, “ পুত্রবধূ ও কন্যা মাতৃতুল্য; এটা বেদের সিদ্ধান্ত। তুমি সামান্য কামের প্রভাবে এটা বিস্মৃত হলে কিভাবে?” (২/৩৯)
“ধৈর্য তোমার মনকে সর্বদা সতর্ক করে রাখে। বিধি তারপরেও ক্ষুদ্র কাম কিনা তোমার সেই মন বিগড়ে দিল?” (২/৪০)
শিবের কথা শুনে ব্রহ্মার ঘাম ঝরতে থাকে। “ব্রহ্মা সেই কামরূপিনী সন্ধ্যাকে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হলেও ইন্দ্রিয় বিকার নিয়ন্ত্রণ  করলেন, তাকে আর গ্রহণ করলেন না।“ ২/৪৫

মৎস্য পুরাণে

মৎস্য পুরাণে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা তার মেয়ে শতরূপাকে বিয়ে করেছিলেন-
“তিনি (ব্রহ্মা) জপে নিরত আছেন, এমন সময় তার পবিত্র দেহ ভেদ করে অর্ধস্ত্রীরূপ ও অর্ধপুরুষরূপ প্রাদুর্ভূত হল। স্ত্রীরূপার্ধ শতরূপা নামে বিখ্যাত হলেন। হে পরন্তপ!এই শতরূপাই সাবিত্রী,গায়ত্রী,সরস্বতী ও ব্রহ্মাণী নামে প্রসিদ্ধ। ব্রহ্মা তাকে- স্বদেহ-সম্ভূত নারীকে ‘আত্মজা’ রূপে কল্পনা করলেন। এরপর বিভু প্রজাপতি তাকে দেখে পীড়িত ও কামশরে জর্জরিত হয়ে বললেন, অহো ‘কি রূপ!’ কি অপূর্ব রূপ।‘ তখন বশিষ্ঠ প্রমুখ মহর্ষিরা তাকে বোন বলে সম্বোধন করতে লাগলেন। কিন্তু ব্রহ্মা তার মুখপঙ্কজ ছাড়া আর কিছুই  দেখতে পেলেন না। তিনি বারবার ‘অহো কি রূপ! অহো রূপ!’ এই কথাই বলতে লাগলেন। এরপর ব্রহ্মা সেই প্রণাম-নম্রা কন্যকে পুনরায় দেখলেন। সেই বরবর্ণিনী তাকে প্রণাম করে প্রদক্ষিণ করল। তার রূপ দেখবার জন্য ব্রহ্মার একান্তই ইচ্ছা; কিন্তু তাতে তিনি পুত্রদের কাছে বিশেষরূপে লজ্জিত; কাজেই তার দক্ষিণদিকে এক পাণ্ডুবর্ণ মুখ বিকাশ পেল,এরপর বিস্ময়ে  তার পশ্চিমদিকে অন্য এক মুখ বের হল।এরপরে তার কামাতুর চতুর্থ মুখ প্রকটিত হয়ে পড়ল।তার কামাতুরতার কারণে আরও এক মুখ প্রকাশিত হল। এই মুখ সেই উপরের দিকে ওঠা নারীকে দেখার কৌতুহল বশতই নির্গত হল। ব্রহ্মা সৃষ্টিকার্য সম্পন্ন করবার জন্য ভীষণ তপস্যা করেছিলেন; কিন্তু নিজের কন্যা সঙ্গমেচ্ছায় তার তা নষ্ট হয়ে গেল। তার উর্ধদিকে যে পঞ্চম মুখ বিকাশ পেয়েছিল, তা জটাজালে আবৃত হল।এরপর ব্রহ্মা তার পুত্রদের বললেন তোমরা সুর,অসুর ও মানুষী প্রজা সৃজন কর। পিতার এই কথায় তারা সকলেই বিবিধ প্রজা সৃষ্টি করতে লাগলেন। তারা সৃষ্টি কার্যের জন্য প্রস্থান করলে বিশ্বাত্মা ব্রহ্মা সেই প্রণামাবনতা অনিন্দিতা শতরূপার পাণিগ্রহণ করলেন। এবং তার সাথে তিনি অত্যন্ত কামাতুর হয়ে কাল কাটাতে লাগলেন। তিনি প্রাকৃত জনের ন্যায় সেই লজ্জিতা ললনার সাথে শতবর্ষ অবধি কমল গর্ভে থেকে রমণ করলেন। এরপর দীর্ঘকাল অতীত হলে তার এক পুত্র জন্মাল। এই পুত্র স্বায়ম্ভুব মনু নামে অভিহিত।আমরা শুনেছি ওই মনুই বিরাট পুরুষ, তার অনুরূপ গুণসমূহযোগে ইনি অধিপুরুষ নামেও নির্দিষ্ট।…”
[মৎস্য পুরাণ/৩য় অধ্যায়| শ্রী পঞ্চানন তর্করত্ন কর্তৃক সম্পাদিত]

শিবপুরাণে(শিবলিঙ্গ)

দারুবনে ঋষিরা বাস করতেন। একদিন শিব ঋষিদের কোনোরূপ পরীক্ষা করার জন্য গায়ে ছাই-ভস্ম মেখে নগ্ন হয়ে,বনের মধ্যে প্রবেশ করেন ,বিকৃত মনোবৃত্তি নিয়ে হাতে নিজ লিঙ্গ ধরে ঋষিপত্নীদের মোহিত করতে থাকেন। কোনো কোনো ঋষিপত্নী ব্যাকুল হয়ে শিবের সামনে উপস্থিত হন। কেউ কেউ শিবের হাত ধরে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। ঋষিরা এসব দেখে অত্যন্ত রেগে যান। তারা শিবকে তার এমন আচরণের কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তারা শিবকে অভিশাপ দেন- “তোমার লিঙ্গ ভূতলে পতিত হউক।” অভিশাপ মাত্রই শিবের লিঙ্গ মাটিতে খসে পড়ে যায়। ওই লিঙ্গ সামনে যা কিছু পেল তাই দগ্ধ করে। স্বর্গ, মর্ত, পাতালে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দেয় মহাদেবের লিঙ্গ।
এই পরিস্থিতিতে লোকেরা ও ঋষিরা দুঃখিত হন। নিরূপায় হয়ে তারা ব্রহ্মার শরণ নেন। ব্রহ্মা বলেন, “যে পর্যন্ত লিঙ্গ স্থিরভাবে অবলম্বন না করিতেছে, সে পর্যন্ত ত্রিজগতের কোথাও শুভ হইবে না, ইহা সত্য কহিতেছি।” এরপর ব্রহ্মা দেবতা- ঋষিগণকে উপদেশ দেন, ” মঙ্গলদায়িনী গিরিজাদেবীর আরাধনা কর, তিনি যদি প্রসন্না হইয়া যোনিরূপ ধারণ করেন, তাহা হইলে নিয়ম এই প্রকার করিবে।” এরপর ব্রহ্মা বলেন কিভাবে যোনিতে লিঙ্গ স্থাপন করে কোন কোন উপাচারের মাধ্যমে তার আরধনা করতে হবে, “…হে দেবেশ! প্রসন্ন হও, হে জগদলাদায়ক… শান্ত হও। এই প্রকারে করিলে নিশ্চয় স্বাস্থ্য হইবে।”
তারপর শিবের শরণাপন্ন হয়ে দেবতা, ঋষিরা তার আরাধনা করতে থাকেন। আরাধনায় শিব সন্তুষ্ট হন। পার্বতী ছাড়া অন্য কেউ শিবের লিঙ্গ ধারণে সমর্থ হবে না ভেবে দেবতা-ঋষিরা পার্বতীকে সন্তুষ্ট করেন। পার্বতী লিঙ্গ ধারণ করেন। লিঙ্গ স্থাপিত হলে জগতে সুখ হয়।
[শিবপুরাণ/জ্ঞানসংহিতা/অধ্যায় ৪২|অনুবাদক- শ্রী পঞ্চানন তর্করত্ন]

বামনপুরাণে

দক্ষযজ্ঞে সতীর মৃত্যু হলে শিব অস্থির চিত্তে এদিক ওদিক হাটতে থাকেন। তাকে স্ত্রী শোকে কাতর দেখে কামদেব তার পুষ্পশর নিয়ে শিবকে তাড়া করলে শিব দারুবনে প্রবেশ করেন। সেখানে মুনিরা তাদের পত্নীদের সাথে বসবাস করতেন।  তাদের দেখে শিব তাদের কাছে ভিক্ষা চান। মুনিরা শিবের কথার উত্তর না দিলে শিব তাদের আশ্রমে মলত্যাগ করতে থাকেন। যাইহোক, মহাদেবকে আশ্রমে দেখতে পেয়ে ভার্গব ও আত্রেয়ের পত্নীরা ( সতী অরুন্ধতী ও অনুসূয়া বাদে) অত্যন্ত কামার্ত হয়ে পড়েন। তারা মহাদেবের পিছু পিছু যেতে লাগলেন। স্ত্রী হাতি যেমন পুরুষ হাতিকে অনুসরণ করে তারাও ঠিক তেমনিভাবে ঘরের কাজ ফেলে শিবের পিছু পিছু যাচ্ছিলেন। এই দৃশ্য দেখে ভার্গব ও আঙ্গিরস মুনি শিবকে অভিশাপ দেন যার ফলে তার লিঙ্গ মাটিতে পড়ে যায়। শিবের লিঙ্গ পতিত হলে  তা ত্রিভুবনে উৎপাত  করতে থাকে, সব ধ্বংস করতে থাকে। তা দেখে ব্রহ্মা শঙ্কিত হয়ে বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হন। এরপর ব্রহ্মা ও বিষ্ণু একসাথে লিঙ্গ যে স্থানে পড়েছিল সে স্থানে উপস্থিত হন। বিষ্ণু গরুড়ে চড়ে এবং ব্রহ্মা তার পদ্মযানে চড়ে লিঙ্গের শেষ খোঁজার চেষ্টা করতে থাকেন কিন্তু কেউই খুঁজে পান না। নিরুপায় হয়ে তারা স্তব স্তুতি করে শিবকে সন্তুষ্ট করেন। স্তব শেষ হলে শিব উপস্থিত হন। শিবকে দেখে তারা শিবকে তার লিঙ্গ ফিরিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু শিব বলেন, এক শর্তে তিনি তার লিঙ্গ ফিরিয়ে নিতে পারেন, যদি তার লিঙ্গের পূজা করা হয়! বামন পুরাণ অনুসারে, এর পর থেকে শিবলিঙ্গের পূজা শুরু হয়।

পদ্মপুরাণে

পদ্মপুরাণের উত্তরখণ্ডে,রাজা দিলিপ ঋষি বশিষ্টকে জিজ্ঞাসা করেন, “কোন কারণে শিব ও পার্বতীর নিন্দনীয় রূপ দেখা যায়? সেই প্রসিদ্ধ রূপটিতে (শিবলিঙ্গে)  কেন লিঙ্গ ও যোনি দেখা যায়?  শিবের এই নিন্দনীয় রূপের কারণ কি?”
বশিষ্ট বলেন,
পূর্বে স্বায়ম্ভূব মনু মন্দার নামক শ্রেষ্ঠ পর্বতে ঋষিদের সাথে নিয়ে এক দীর্ঘ চমৎকার যজ্ঞ করেছিলেন। কোন দেবতা ব্রাহ্মণের পূজনীয় এটা নিয়ে তর্ক বেধেছিল। কোনো কোনো ঋষি বললেন শিব শ্রেষ্ঠ। কেউ বললেন ব্রহ্মা একাই পূজনীয়। কেউ আবার বিষ্ণুর কথা বললেন। ঋষিরা ভৃগু ঋষিকে বললেন, ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরকে দেখে  আসতে। এদের মধ্যে যার মধ্যে শুদ্ধ সত্ত্ব গুণ বিরাজ করে তিনিই পূজনীয় হবেন।…
ঋষিদের কথামত ভৃগু, বামদেবের সাথে দেবতাদের দর্শন করতে যান। প্রথমে তারা শিবের আবাসস্থল কৈলাসে গিয়ে উপস্থিত হন। শিবের বাড়ির দরজার কাছে গিয়ে প্রহরারত নন্দীকে দেখে ভৃগু বলেন-
“আমি শ্রেষ্ঠ দেব শিবের সাথে দেখা করতে এসেছি। তাকে খবর দাও।“
ভৃগুর কথা শুনে নন্দী রুষ্ট কণ্ঠে বলে ওঠে, “ প্রভু এখন ব্যস্ত আছেন। তিনি পার্বতীর সাথে সম্ভোগ করছেন। হে মুনি, প্রাণের মায়া থাকলে, এখান থেকে চলে যাও।“
ভৃগু বহুদিন অপেক্ষা করেও শিবের দেখা পান না। অবশেষে রেগে গিয়ে তিনি শিবকে অভিশাপ দেন-
“ স্ত্রী সংসর্গে মত্ত হয়ে মহাদেব আমাকে অবজ্ঞা করছে। অতএব তাদের উভয়ের শরীর লিঙ্গ ও যোনিরূপ হবে। আমি ব্রাহ্মণ, শিব পাপাচ্ছন্ন হয়ে আমাকে জানতে পারল না। অতএব সে অব্রাহ্মণ হয়ে দ্বিজদের অপূজ্য হবে। আর যারা শিবভক্ত হয়ে অস্থিভস্ম, লিঙ্গমূর্তি ধারণ করবে তারা পাষণ্ড হয়ে বৈদিক ধর্ম হতে বহিষ্কৃত হবে।“
[পদ্মপুরাণ/উত্তরখণ্ড/২৫৫/১-৩৪ | publishers:- MOTILAL BANARSIDASS PUBLISHERS PRIVATE LIMITED]

স্কন্দ পুরাণে

একদিন শিব নগ্ন হয়ে ভিক্ষা করার জন্য দারুবনে গমন করেন।দারুবনের ঋষিরা স্নান করার জন্য অন্য জায়গায় গিয়েছিলেন,কেবলমাত্র ঋষি পত্নীরাই সেইসময়ে আশ্রমে ছিলেন, এমন সময় শিব দারুবনের আশ্রমের দিকে নগ্নভাবে অগ্রসর হন। মহাদেবকে দেখে মুনিপত্নীরা বলেন,” কে এই অপূর্ব দর্শন ভিক্ষুক এখানে আগমণ করিলেন? যাহা হউক আমরা সখীগণ সমভিব্যহারে ইহাকে ভিক্ষা প্রদান করিব।” তারপর তারা শিবকে মনমত ভিক্ষা দেন। এরপর মুনিপত্নীদের শিব জানান ,”আমি ঈশ্বর।”। তখন মুনিপত্নীরা অনুমান করেন, তিনি নিশ্চয় মহাদেবই হবেন। তারপর ঋষি পত্নীরা শিবের কাছে তার  ভিক্ষা করার কারণ জানতে চান। তখন শিব জানান,” পত্নী দাক্ষায়ণীর সহিত আমার বিচ্ছেদ ঘটিয়াছে,তাই আমি দিগম্বর হইয়া বিচরণ করি।” শিব আরো বলেন, তার সতী ভিন্ন অপর কোনো নারীতে তার রুচি নেই।
শিব ভিক্ষা গ্রহণ করে চলে যেতে থাকলে, ঋষিদের পত্নীরাও কামপরবশ হয়ে তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। তারা ঘরের সকল কাজ ছেড়ে শিবের পেছন পেছন চলতে শুরু করেন।
এদিকে ঋষিরা আশ্রমে এসে দেখেন তাদের স্ত্রীরা সেখানে নেই। তখন তারা আশঙ্কা করে বলেন, “আমাদের পত্নীসকল কোথায় গেল, কিছুই জানিতেছি না। কোনো নষ্ট লোক কি তাহাদের সকলকে হরণ করিল?” ঋষিরা আশ্রমের চারদিকে তাদের স্ত্রীদের খুজতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পেলেন, তাদের স্ত্রীরা শিবের পেছন পেছন চলে যাচ্ছেন। তা দেখে তারা সকলেই খুব রেগে যান এবং শিবের কাছে গিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, মহাদেব কেন তাদের পত্নীদের চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। ঋষিদের কথা শুনেও শিব কিছু না বলে কৈলাশের দিকে চলতে থাকেন। শিবের এমন আচরণ দেখে ঋষিরা অত্যন্ত রেগে যান, তারা শিবকে অভিশাপ দেন ,
“যেহেতু তুমি অব্যয় মহাদেব হইয়াও আমাদের কলত্রাপহরত্তা (স্ত্রী অপহরণকারী) , এইজন্য সত্ত্বর তোমাকে ক্লীব হইতে হইবে।”
মুনিদের অভিশাপের সাথে সাথে শিবের লিঙ্গ মাটিতে পড়ে যায়। ঐ লিঙ্গ মাটিতে পরে বাড়তেই থাকে, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সবই লিঙ্গ দ্বারা আবৃত হয়।শিবের লিঙ্গে সকল কিছুই লীন হয়ে যায়। যেহেতু শিবের লিংগে সব কিছু লীন হয়ে যায়, তাই তার নাম হয় লিঙ্গ। ব্রহ্মা ও বিষ্ণু এই লিঙ্গের আদি ও অন্ত জানার জন্য পাতাল ও স্বর্গাভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু কেউই তার আদি ও অন্ত দেখতে পান না।
ঋষি-দেবতাগন সকলেই ভয় বিহ্বল হয়ে শিবলিঙ্গের স্তুতি করতে থাকেন। বীরভদ্র, দেব ঋষিগণ শিবলিঙ্গের পূজা করে তাকে শান্ত করেন।

কূর্ম পুরাণে

“পূর্বকালে দেবদারু বনে হাজার হাজার মুনি স্ত্রী পুত্রদের নিয়ে তপস্যা করেছিলেন। ঐ মহর্ষিরা নানা প্রকার কাম্য কর্ম করতে প্রবৃত্ত হয়ে বিবিধ যজ্ঞ  আর তপস্যা করতে লাগলেন। তখন কামনাসক্ত চিত্ত মুনিদের দোষ দেখিয়ে দেবার জন্য ভগবান মহাদেব দেবদারু বনে উপস্থিত হলেন।” মহাদেব বিষ্ণুকে সাথে করে দেবদারু বনে গিয়েছিলেন। মহাদেব ২০ বছর বয়সী অত্যন্ত সুঠাম, সুদর্শন পুরুষের রূপ ধারণ করলেন। আর বিষ্ণুও এক সুন্দরী নারীর মূর্তি ধারণ করলেন।নগ্ন মহাদেব ও স্ত্রীবেশধারী বিষ্ণু সবাইকে মোহিত করতে করতে জঙ্গলে বিচরণ করতে লাগলেন। ঋষিদের পতিব্রতা স্ত্রীরাও মহাদেবকে দেখে কামার্ত হয়ে পড়লেন। “তাদের বস্ত্র ও আভরণ খুলে পড়ে যেতে লাগল। এইভাবে বারাঙ্গনার মত নির্লজ্জ হয়ে তারা শিবের সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণ করতে লাগলেন। ঋষিদের তরুণ পুত্রেরা জিতেন্দ্রিয় ছিলেন কিন্তু এখন কামার্ত হয়ে স্ত্রী বেশধারী হৃষীকেশের (বিষ্ণুর) পেছনে পেছনে যেতে লাগলেন। বিলাসিনী নারীরা পত্নীর সঙ্গে অদ্বিতীয় মহাদেবকে অতি সুন্দর ও অদ্বিতীয় নায়করূপে দেখে নাচতে গাইতে শুরু করলেন আর মাঝে মাঝে ইচ্ছার বশে আলিঙ্গনও করতে লাগলেন… রুদ্র নারীদের আর কেশব (বিষ্ণু) পুত্রদের মোহিত করছেন দেখে মুনিরা ক্রুদ্ধ হলেন।“ অসন্তুষ্ট মুনিদের সাথে এক পর্যায়ে শিবের ঝগড়া বেধে গেল। “ঋষিরাও আবার তাকে দণ্ড, যষ্টি ও মুষ্টির দ্বারা  তাড়না করতে লাগলেন। তারপর শিবকে উলঙ্গ ও বিকৃত চিত্তযুক্ত হয়ে ভ্রমণ করতে দেখে ঋষিরা বললেন, রে দুর্মতি, তুই এই লিঙ্গ উপড়ে ফেল। মহাযোগী শঙ্কর তাদের বললেন, যদি আমার এই লিঙ্গের উপর তোমাদের এতই রাগ , তবে না হয় উপড়েই ফেলছি। এই বলে ভগদেবতার নেত্র উৎপাটনকারী ভগবান লিঙ্গ উপড়ে ফেললেন।“ তারপর শিব ও বিষ্ণু অদৃশ্য হয়ে গেলেন। এরপরেই নানা প্রকার দুর্যোগ দেখা দিতে শুরু করে। পৃথিবী কাঁপতে থাকে,সমুদ্র ফুলে উঠতে থাকে। এর পরে ঋষিরা ব্রহ্মার কাছে গিয়ে সব খুলে বলে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিলেন-
ব্রহ্মা বললেন, “তার (শিবের) যে লিঙ্গকে তোমরা ভূমিতে পড়ে যেতে দেখেছিলে , সেই লিঙ্গের মত দেখতে আরেকটি লিঙ্গ নির্মাণ কর, তারপর স্ত্রী পুত্রের সঙ্গে ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করে সযত্নে নানা প্রকার বৈদিক নিয়মে পূজা কর। তোমরা বন্ধু আর পুত্রদের সঙ্গে মিলে শতরুদ্রিয় পাঠ আর পরম তপস্যা অবলম্বন করে ঋক,যজুঃ, সামবেদস্থিত শাঙ্কর মন্ত্রে প্রতিষ্ঠা করে সমাহিতভাবে পূজা কর এবং সকলেই কৃতাঞ্জলিপুটে ভগবান শূলপানির শরণাপন্ন হও। তাহলেই অসংস্কৃতাত্ম পুরুষেরা যাকে সহজে দেখতে পায় না সেই দেবাধিপতি মহাদেবকে দেখতে পাবে।”
বিষ্ণু শঙ্খচূড়ের স্ত্রী তুলসীকে ধর্ষণ করেন-
“কবচ গ্রহণ করি বিষ্ণু অতঃপর।
তুলসীর নিকটেতে চলিলা সত্ত্বর।।
শঙ্খচূড় রূপে সেথা করিয়া গমন।
তুলসীর সতীধর্ম করিলা হরণ।।
না জানিলা দৈত্যপত্নী কি পাপ হইল।
দেবতা ছলনা করি সতীত্ব নাশিল।।
যেইক্ষেত্রে বিষ্ণুদেব করিলা রমণ।
তুলসী উদরে বীর্য হইল পতন।।
সেইক্ষণে মহাদেব দৈববাণী শোনে।
শঙ্খচূড়ে বধ তুমি করহ এক্ষণে।।“
[ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, ১৩৬ পৃষ্ঠা ,সুবোধচন্দ্র মজুমদারের অনুবাদ]
বিষ্ণু জলন্ধরের স্ত্রী বৃন্দাকে ধর্ষণ করেন। [ স্কন্দ পুরাণ / বিষ্ণুখণ্ড/ কার্ত্তিকমাসের মাহাত্ম্য কথন/ ২০-২১ অধ্যায় ]

পুরাণে সতীদাহ

অগ্নি পুরাণে সতীদাহ
“…একজন নারী দেহ ও আত্নায় শুদ্ধ হবেন, খরচের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হবে এবং পিতা যে ব্যক্তির সাথে তার বিবাহ দিয়েছেন ,বিশ্বাসের সাথে তার সেবা করবেন। স্বামীর মৃত্যুর পর যে বিধবা আত্মনিয়ন্ত্রণ করেন এবং ব্রহ্মচর্য পালন করেন, তিনি স্বর্গে গমন করেন। একজন বিধবার কোনো অপিরিচিত ব্যক্তির গৃহে বাস করার ইচ্ছা করা অনুচিত, তার ঝগড়াটে স্বভাবের হওয়াও উচিত নয়। একজন বিধবা এবং বিবাহিতা নারীর স্বামী দূরদেশে থাকলে, তাদের কখনো সাজসজ্জা করা উচিত নয়। তারা মন্দিরে বাস করবেন এবং ঈশ্বরের কাছে তাদের স্বামীর ভালোর জন্য প্রার্থনা করবেন। অন্য সময়ে বিবাহিতা নারী স্বামীর মঙ্গলের জন্য কিছু অলঙ্কার পরিধান করবেন। যে বিধবা মৃত স্বামীর চিতায় নিজেকে পোড়ায় তিনি স্বর্গে গমন করেন।”
“কোনো ব্যক্তি পবিত্র কোনো স্থানে মৃত্যু বরণ করলে সকল পাপ থেকে মুক্ত হন।স্বামী যদি ব্রহ্মঘাতক (ব্রাহ্মণকে হত্যাকারী), অকৃতজ্ঞ, পাপীও হয়, তার স্ত্রী তার মৃত্যুর পর অগ্নিতে প্রবেশ করলে, তাকে উদ্ধার করেন। বিজ্ঞজনেদের মতে, এটা নারীদের জন্য পরম অনুতাপ।”
[ kurma purana/ uttarabhaga/34/108-109]
বিষ্ণু পুরাণে সতীদাহ
বিষ্ণুপুরাণ মতে, দুর্বাসার অভিশাপকে সম্মান জানিয়ে মায়াবী কৃষ্ণ হাঁটুর উপরে পায়ের পাতা স্থাপন করে যোগ অবলম্বন করেন। জরা নামে এক ব্যাধ কৃষ্ণকে হরিণ ভেবে তার দিকে তীর নিক্ষেপ করে। এভাবে কৃষ্ণ মৃত্যুবরণ করেন। [৪] কৃষ্ণের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীরা সহমৃতা হন। বিষ্ণু পুরাণ বলছে-
” পরাশর বললেনঃ কৃষ্ণ এবং রামের মৃতদেহ পাওয়া গেলে অর্জুন তাদের এবং অন্যান্য মৃতদের সৎকার করেন। কৃষ্ণের আট পত্নী, পূর্বে রুক্মিণীর সাথে যাদের নাম নেওয়া হয়েছে, তারা হরিকে আলিঙ্গন করে তার চিতার অগ্নিতে প্রবেশ করেন। হে ধার্মিকগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, রামের মৃতদেহকে আলিঙ্গন করে রেবতিও আগুনে প্রবেশ করেন, স্বামীর সাথে সংস্পর্শের ফলে অগ্নি রেবতীর সুখী হৃদয়ের কাছে শীতল হয়েছিল। সেখানে সব শোনার পর, উগ্রসেন আর বসুদেবের সাথে দেবকী এবং রোহিনী আগুনে প্রবেশ করেন।…”
“স্বামী নিরুদ্দেশ হলে, মৃত হলে অথবা ছেড়ে চলে গেলে অথবা নপুংসক অথবা নীচস্বভাবের হলে, এমন জরুরী অবস্থায় একজন নারী পুনরায় বিবাহ করতে পারেন।”
“যে নারী তার স্বামীর সাথে সহমৃতা হন, তার স্বামীর শরীরে যত লোম আছে, তত বছর স্বামীর সাথে তিনি স্বর্গে বাস করবেন।”
গরুড় পুরাণের অন্য স্থানে আবার বলা হচ্ছে-
“যে নারী স্বামীর কাছে পবিত্র এবং বিশুদ্ধ, তার উচিত মৃত স্বামীকে নমস্কার করে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরু হবার আগে স্বামীর চিতায় আরোহণ করা। যে নারী চিত্তের দৌর্বল্যের কারণে চিতা হতে দূরে সরে যান তার প্রজাপাত্য প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত। স্বামীকে অনুসরণ করে যে নারী চিতায় আরোহণ করেন, মানুষের শরীরে যে সাড়ে তিন কোটি লোম আছে, তত বছরই তিনি স্বর্গে বাস করেন। সাপুড়ে যেমন গর্ত থেকে সাপকে বের করে আনে তেমনি সেই নারী তার স্বামীকে নরক থেকে উদ্ধার করেন এবং তার স্বামীর সাথে স্বর্গসুখ ভোগ করেন। যে নারী চিতায় আরোহণ করেন তিনি স্বর্গে যায়। স্বর্গের অপ্সরাদের দ্বারা তিনি প্রশংসিত হন এবং স্বামীর সাথে ,যতসময় ১৪ জন ইন্দ্র স্বর্গে রাজত্ব করেন, ততসময় স্বর্গেসুখ ভোগ করেন। এমনকি যদি পুরুষটি ব্রহ্মঘাতিও (ব্রাহ্মণকে হত্যাকারী) হয়, যদি বন্ধু বা মহৎ কোনো ব্যক্তির খুনিও হয়, তার স্ত্রী চিতায় আরোহণ করলে সে পাপমুক্ত হয়। যে নারী স্বামীর মৃত্যুর পর অগ্নিতে প্রবেশ করেন , তিনি স্বর্গে অরুন্ধতীর মত সুখ্যাতি লাভ করেন। যতক্ষণ কোনো নারী তার স্বামীর মৃত্যুর পর নিজেকে দহন না করেন, ততক্ষণ তিনি তার নারীজন্ম থেকে মুক্তি পান না। যে নারী তার স্বামীর অনুগমন করেন, তিনি তার মাতৃকুল, পিতৃকুল ও পতিকুলের তিন পুরুষকে পরিশুদ্ধ করেন।” [৮]
[Garuda Purana II.4.88-97 | Motilal BanarsiDas Publishers Privet Limited]
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে সতীদাহ
পরশুরামের পিতা জমদগ্নিকে মৃত ভেবে তার মাতা রেণুকা সহমরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন-
“পবিত্র রীতিনীতির অনুষ্ঠানকারী রেণুকা যে স্বামির শোকে বিভোর হয়েছিলেন, তিনি তার পুত্রদের ডেকে এই কথাগুলো বললেনঃ ২/৩/৩০/৩৫
রেণুকা বললেনঃ
হে আমার পুত্রেরা আমি তোমাদের স্বর্গীয় মেধাবী পিতার অনুগমণের ইচ্ছা করি। এর অনুমতি প্রদান করা তোমাদের কর্তব্য। ২/৩/২০/৩৬
বৈধব্যের দুর্গতি অসহনীয়।আমি কিভাবে তা সহ্য করবো? স্বামীর দুঃখে শোকার্ত হয়ে আমি পাগল হয়ে যাব। আমি কিভাবে আমার দিনযাপন করবো? ২/৩/৩০/৩৭
তাই আমি আমার প্রিয়তম স্বামীকে অনুসরণ করবো যাতে আমি তার সাথে অন্য জগতে কোনো বাধা ছাড়াই চিরকাল বাস করতে পারি। ২/৩/৩০/৩৮
এই জ্বলন্ত চিতায় প্রবেশ করে,কিছু দীর্ঘ সময়ের পরে, পিতৃদের জগতে আমি আমার স্বামীর অতিথি হব। ২/৩/৩০/৩৯
হে পুত্রেরা যদি তোমরা আমার প্রিয় কিছু করতে চাও, তবে আমার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করে অন্য কোন কিছুই প্রকাশ করতে পার না, আগুনে আমার আত্মাহুতিতে তোমাদের সম্মতি ও সমর্থন জানানো ছাড়া।২/৩/৩০/৪০
এই কথাগুলো বলার পরে দৃঢ় সিদ্ধান্তের সাথে রেণুকা তার স্বামীর অনুগমণের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং অগ্নিতে প্রবেশ করলেন। ২/৩/৩০/৪১”
[brahmanda puranam- Publisher- Motilal Banarsi das private limited]
পদ্মপুরাণে সতীদাহ
পদ্মপুরাণে এক ব্রাহ্মণ মারা গেলে তার স্ত্রী দুঃখে ভেঙ্গে পড়ে। তখন সেখানে নারদ এসে উপস্থিত হলে স্ত্রীটি নারদের পায়ে লুটিয়ে পড়ে।
“তাকে উঠিয়ে নারদ বিশুদ্ধ নারীটিকে তার মৃত স্বামীর সম্বন্ধে বললেনঃ হে নিষ্পাপ বিশালাক্ষী , দয়াকরে তুমি তোমার স্বামীর কাছে যাও। হে বিশালাক্ষী, তোমার স্বামী তার আত্মীয় দ্বারা পরিত্যক্ত এবং মৃত। হে শুভে, তোমার কাঁদা উচিত নয়। অগ্নিতে প্রবেশ কর ( তোমার স্বামীর চিতায়)।
ব্রাহ্মণ নারীটি বললেনঃ
হে ঋষি, আমাকে যেতে হবে নাকি যেতে হবে না বলুন, যাতে অগ্নিতে প্রবেশের সময় পার না হয়ে যায়।
নারদ বললেনঃ ৫/১০৬/৫৮-৬২ 
ঐ শহরটি এখান থেকে একশ যোজন দূরে। ব্রাহ্মণকে (তোমার স্বামীর মৃতদেহকে) কাল পোড়ানো হবে।
Avyaya (নারীটি) বললেনঃ
হে মুনি! আমি আমার স্বামীর কাছে যেতে চাই, যিনি দূরে আছেন।
তার কথা শুনে নারদ বললেনঃ “তুমি আমার বীণার হাতলে বস। আমি সেখানে এক মুহূর্তে পৌঁছে যাব।” এটা বলতে বলতে তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন- সেই দেশে যেখানে মৃত ব্রাহ্মণটি ছিলেন। মুনি Avyaya কে বললেনঃ”যদি তুমি অগ্নিতে প্রবেশ করতে চাও, তবে কেঁদো না।হে কন্যা! যদি তুমি পরপুরুষ সম্ভোগের মত পাপ করে থাকো, তবে শুদ্ধ হবার জন্য এর প্রায়শ্চিত্ত করো। আগুনে প্রবেশের ফলে তোমার ছোটখাটো পাপ বিনষ্ট হয়ে যাবে।আগুনে প্রবেশ ছাড়া মহিলাদের সকল পাপ নিবারণের অন্যকোনো প্রায়শ্চিত্ত আমি দেখি না। 5/106/64-69A
নারীটি নারদকে জিজ্ঞেস করে, অগ্নিতে প্রবেশের সময় নারীদের কি কি করা উচিত?
উত্তরে নারদ বলেন,
তাদের স্নান করতে হবে, নিজেদের পবিত্র করতে হবে,অলঙ্কার পরতে হবে,চন্দনের প্রলেপ দিতে হবে,পুষ্প পরতে হবে, ধূপ, শস্য এবং পবিত্র চাল রাখতে হবে। তাদের একটি সুষম সূত্র পরিধান করতে হবে, পায়ে লাল লাক্ষা লাগাতে হবে।সাধ্য অনুসারে তারা উপহার দান করবে, তারা সম্মতি সূচক বাক্য উচ্চারণ করবে এবং তারা খুশি মুখে থাকবে। তাদের অনেক শুভ গান ও বাদ্যযন্ত্রধ্বনি শুনতে হবে। অবিশ্বস্ততার মত পাপ করে থাকলে , প্রায়শ্চিত্তের জন্য সেই পুরোনো পাপের কথা স্বীকার করতে হবে। তারপর তাদের গয়না পরিধান করতে হবে, এবং ব্রাহ্মণকে তা নিবেদন করতে হবে। অলঙ্কার না থাকলে তারা ব্রাহ্মণকে প্রায়শ্চিত্তের অনুষ্ঠান করতে বলতে পারবে না। অন্য কোনো ভাবে, অন্য কোথাও সেই পাপের স্খালন হতে পারে না।
যাইহোক, কিছু কথোপকথন ও ঘটনার পরে,
“ব্রাহ্মণটির দেহ পুড়িয়ে নারদ ব্রাহ্মণটির স্ত্রীকে বলেনঃ হে অভয়া, যাও অগ্নিতে প্রবেশ কর, যদি তোমার ইচ্ছা হয়। তারপর সতী নারীটি সাজগোজ করে, নারদকে ডানদিক থেকে তিনবার প্রদক্ষিণ করে ,নমস্কার করে, নিজের মন গৌরিকে সমর্পণ করলেন। পার্বতীকে পৃথক ভাবে সন্তুষ্ট করার জন্য , তিনি নিজের সুষম সূত্র, হলুদ, পবিত্র শস্য,ফুল, বস্ত্র,চন্দন, চিরুনি, রকমারী ফল ইত্যাদি স্পর্শ করলেন। সতী নারীটি তিনবার দাউ দাউ করে আকাশ স্পর্শ করা অগ্নিকে তার ডানদিক থেকে প্রদক্ষিণ করলেন এবং তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। এবং এই কথাগুলো বললেনঃ
হে ইন্দ্র, হে পৃথিবী মাতা, হে সূর্য, ধর্মের মত সকল দেবতা আমার কথা শুনুন, “ যদি বিবাহের দিন থেকে আজ অবধি দিনরাত্রি আমি বাক্য, মন ও কর্মের দ্বারা স্বামীর স্বামীর সেবা করে থাকি এবং যদি বাল্য, যৌবন ও বার্ধক্যে আমি আমার কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে থাকি , তবে আমাকে আমার স্বামীর কাছে প্রেরণ করুন। এই কথা বলে তিনি তার হাতের ফুলটি ফেলে দিলেন এবং জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করলেন।তারপর তিনি সূর্যের মত চমৎকার একটি যান দেখলে যা স্বর্গীয় অপ্সরাদের সঙ্গীতে পূর্ণ ছিল। তিনি বিমানে আরোহন করলেন এবং স্বর্গে স্বামীর কাছে চলে গেলেন। তারপর যম সেই সতী নারীকে সম্মান জানিয়ে বললেন, তুমি স্বর্গে চিরকাল থাকবে। তোমার কোনো পাপ অবশিষ্ট নেই…” [Tr. N.A. Deshpande| Motilal Banarsi Dass Publication]
“রুক্মপুত্রি প্রদ্যুম্নের সাথে, ঊষা অনিরুদ্ধের সাথে আগুনে প্রবেশ করলেন। সকল যাদব নারীরা তাদের স্বামীর শরীরকে সম্মান জানালেন এবং আগুনে প্রবেশ করলেন।” Padma Purana VI.252.89-90  [Tr. N.A. Deshpande | Motilal Banarsi Dass Publication]
দেবীভাগবত পুরাণে সতীদাহ
“একসময় যৌবন ও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ মাদ্রী একাকী এক নির্জন স্থানে ছিলেন। তাকে দেখে পাণ্ডু জড়িয়ে ধরেন এবং অভিশাপের কারণে মারা যান।যখন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার চিতা জ্বলছিল, তখন সতী মাদ্রী অগ্নিপ্রবেশ করেন এবং সতী হয়ে মারা যান।কুন্তিকে এমনটি করতে বারণ করা হয়েছিল, যেহেতু তার ছোট শিশুদের দেখাশোনা করার ছিল।”
“…তারপর সেই মুনিরা পাণ্ডুকে মৃত জানতে পেরে তাদের মৃতের সৎকারের অবশ্যকর্তব্য পালন করলেন। সেই সময়ে মাদ্রী কুন্তিকে তার দুই পুত্রের ভার অর্পণ করেন এবং তার স্বামীর সাথে সতী প্রথা পালন করে সত্যলোকে গমন করেন।”
“২০.যুবতী নারীটি তার স্বামীকে রাক্ষস দ্বারা বন্দি দেখে ভীত হয়ে পড়ে ন এবং তীব্র ক্রন্দনের সাথে তাকে অনুনয় করেন। ২১. বারবার আকুতি করা সত্ত্বেও নরখেকো নিষ্ঠুর রাক্ষসটি ব্রাহ্মণটির মাথা কেটে তাকে খেয়ে ফেলে।২২. এতে দুর্দশাগ্রস্ত, শোকার্ত পবিত্র নারীটি তীব্র বিলাপ করেন। তিনি তার স্বামীর হাড়গুলোকে জড়ো করেন এবং একটা চিতা প্রস্তুত করেন। ২৩. ব্রাহ্মণ নারীটি তার স্বামীর অনুগমনের জন্য চিতায় প্রবেশের বাসনা করলেন এবং রাক্ষস রাজাকে অভিশাপ দিলেন। ২৪. সতী নারীটি এটা বলার পরে অগ্নিপ্রবেশ করলেন- আজকের পর থেকে তুমি কোনো নারীর সাথে মিলিত হলে, মারা যাবে।”
“তারপর তিনি কাঠে আগুন জ্বালিয়ে একটি চিতা প্রস্তুত করলেন এবং তার উপর তার স্বামীর মৃতদেহ স্থাপন করলেন। এই কাজ শেষ হয়ে গেলে তিনি তীব্রভাবে বিলাপ করলেন এবং স্বামীর সাথে আগুনে পুড়িয়ে নিজেকে মারার জন্য প্রস্তুত করলেন।” [srimadbhagbatam/4/28/50 Translation: Vaktivedanta swami Prabhupada |The Vaktivedanta Book Trust]
এই শ্লোকের ভাষ্যে প্রভুপাদ বলছেন,
“বিশ্বস্ত স্ত্রীর তার স্বামীর সাতে মারা যাওয়া বৈদিক ব্যবস্থার এক দীর্ঘ ঐতিহ্য। একে সহমরণ বলা হয়। ভারতে এই প্রথা ব্রিটিশ শাসনকাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।সেই সময়, যাইহোক, মাঝে মাঝে যে স্ত্রী তার স্বামীর সাথে মরতে প্রস্তুত নয় তাকেও তার আত্মীয়েরা জোর করে তা করতে বাধ্য করতো। পূর্বে ব্যাপারটি এমন ছিল না। স্ত্রী স্বেচ্ছায় অগ্নিতে প্রবেশ করতেন। ব্রিটিশ সরকারকে এই প্রথাকে অমানবিক ভেবে রদ করেছিলেন। যাইহোক, ভারতের ইতিহাসের আদিকাল থেকে আমরা সন্ধান পাই, যখন মহারাজা পাণ্ডুর মৃত্যু হয় তখন তার দুই স্ত্রী বেঁচে ছিলেন, মাদ্রী এবং কুন্তি। প্রশ্ন ছিল, তারা উভয়ে মরবেন, না তাদের একজন মরবেন। মহারাজা পাণ্ডুর মৃত্যুর পর তার স্ত্রীরা স্থির করেন একজন বেঁচে থাকবেন এবং অপরজন সহমরণে যাবেন। মাদ্রী সহমরণে গেলেন এবং পাঁচ পাণ্ডব সন্তানদের দেখাশোনার জন্য কুন্তি বেঁচে থাকলেন। এমনকি ১৯৩৬ সালে আমরা অনুগত স্ত্রীকে স্বেচ্ছায় তার স্বামীর সাথে আগুনে প্রবেশ করতে দেখেছি।এটি নির্দেশ করে যে একজন ভক্তের স্ত্রীকে এমন আচরণ করার জন্য প্রস্তুত করে রাখতে হবে।একইভাবে আধ্যাত্মিক গুরুর কোনো নিবেদিত শিষ্যের গুরুর লক্ষ্য সম্পাদনে ব্যর্থ হওয়ার চেয়ে আধ্যাত্মিক গুরুর সাথে মরা ভালো। দেবত্বের সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব যেমন ধর্ম সংস্থাপনের জন্যই পৃথিবীতে নেমে আসেন, তেমনি তার প্রতিনিধি, আধ্যাত্মিক গুরুও ধর্মসংস্থাপনের জন্য আসেন। আধ্যাত্মিক গুরুর লক্ষ্যের দায়িত্ব নেওয়া এবং তা সঠিকভাবে পালন করা শিষ্যের দায়িত্ব। অন্যথায়, শিষ্যের তার গুরুর সাথে মরা উচিত। অন্য কথায়, আধ্যাত্মিক গুরুর ইচ্ছা পূরণের জন্য ব্যক্তিগত চিন্তা পরিত্যাগ করে শিষ্যের জীবন দান করতেও প্রস্তুত থাকা উচিত।”
শ্রীমদভাগবতের ৯/৯/৩২ শ্লোক এর ভাষ্যে প্রভুপাদ বলছেন,
“বৈদিক সংস্কৃতিতে সতী বা সহমরণ বলে একটি ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে কোনো নারী তার স্বামীর সাথে মারা যায়। এই ব্যবস্থা অনুসারে, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী স্বেচ্ছায় তার স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় ঝাপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করে।এখানে, এই শ্লোকে এই সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত কথাগুলি ব্রাহ্মণের স্ত্রীর দ্বারা প্রকাশিত হল। স্বামী ছাড়া কোনো মহিলা মৃতদেহের মত। তাই বৈদিক সংস্কৃতি অনুসারে কোনো নারীর অবশ্যই বিয়ে দিতে হত। এটা তার পিতার দায়িত্ব। কোনো মেয়েকে দান করে দেওয়া যেত এবং স্বামীর একের অধিক স্ত্রী থাকতে পারতো , কিন্তু কোনো নারীর অবশ্যই বিয়ে দিতে হত।এটা বৈদিক সংস্কৃতি। একজন মহিলা সবসময় নির্ভরশীল (অধীন?) থাকবেন, বাল্যকালে পিতার উপর নির্ভরশীল থাকবেন, যৌবনে স্বামীর উপর নির্ভরশীল থাকবেনে এবং বার্ধক্যে জ্যেষ্ঠ সন্তানের উপর নির্ভরশীল থাকবেন। মনুসংহিতা অনুযায়ী, নারী কখনোই স্বাধীন থাকবেন না। মহিলাদের জন্য স্বাধীনতা মানে দুঃখজনক জীবন।আজকের যুগে, কত মেয়েরা অবিবাহিতা থাকে এবং নিজেদের স্বাধীন ভাবার ভ্রম করে, কিন্তু তাদের জীবন হয় দুঃখজনক। এখানে একটি ঘটনা দেখা যায়, যেখানে একজন মহিলা অনুভব করে, স্বামী ছাড়া তার জীবন মৃতদেহের সমান।”
শ্রীমদভাগবত ১/১৩/৫৮ তে, ধৃতরাষ্ট্রের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী গান্ধারী সহমৃতা হন-
“বাইরে যখন তার স্বামীকে রহস্যময় শক্তির আগুনে কুটির সহ জ্বলতে দেখবেন, তখন সতী স্ত্রী আত্মহারা হয়ে আগুনে প্রবেশ করবেন।”
প্রভুপাদ তার ভাষ্যে বলছেন,
“গান্ধারী ছিলেন একজন আদর্শ পবিত্র নারী, তার স্বামীর জীবনসঙ্গিনী, এবং এরপরে যখন তিনি দেখলেন তার স্বামী নিজের রহস্যময় যোগের আগুনে কুটির সহ জ্বলছেন, তিনি মরে গেলেন। একশ পুত্রকে হারানোর পরে তিনি ঘর ছেড়েছিলেন এবং জঙ্গলে তার সবচাইতে প্রিয় স্বামীকে পুড়তে দেখলেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে একাকী বোধ করলেন, তাই তিনি অগ্নিতে প্রবেশ করলেন এবং মৃত্যুতেও স্বামীকে অনুসরণ করলেন। পবিত্র নারীর মৃত স্বামীর অগ্নিতে প্রবেশের নাম হল সতী প্রথা, এবং এই কাজটি কোনো নারীর জন্য সবচেয়ে যথাযথ বলে বিবেচনা করা হয়। পরবর্তীকালে এই প্রথা এক জঘন্য অপরাধ হয়ে পড়ে কারণ অনিচ্ছুক মহিলাদের উপরও এটা জোর করে চাপানো হচ্ছিল। বর্তমানের অধঃপতিত যুগে কোনো নারীর সতীপ্রথা পালন করা সম্ভব নয়, অতীতে যতটা পবিত্র ভাবে গান্ধারী এবং অন্যান্যরা করেছিলেন। গান্ধারীর মত সতী নারীর কাছে পতির থেকে আলাদা থাকা প্রকৃত অগ্নির চাইতেও জ্বালাময়। এরকম মহিলা স্বচ্ছায় সতীপ্রথা পালন করতে পারেন এবং এখানে কারোর কোনো অপরাধমূলক জোরাজুরি নেই। যখন এই প্রথা কেবল একটা ফর্মালিটি হয়ে উঠেছিল, তখন মহিলাদের এই নিয়ম পালন করতে বাধ্য করা হত, প্রকৃতপক্ষে এটা অপরাধমূলক হয়ে উঠেছিল এবং তাই আইনের দ্বারা এই অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়। নারদ মুনি তার ভবিষ্যদ্বাণীতে যুধিষ্ঠিরকে তার বিধবা মাসির কাছে (মূল ইংরেজি অনুবাদে aunt আছে) যেতে বারণ করেছিলেন।”
“এভাবে ব্রাহ্মণপত্নী রাজা সুদাস যিনি মিত্রসাহা নামে পরিচিত তাকে অভিশাপ দিলেন। তারপর, স্বামীকে অনুসরণ করার জন্য , স্বামীর হাড়গুলো একত্রিত করে তিনি তাতে আগুন ধরালেন এবং সেই আগুনে ঝাপ দিয়ে স্বামীর মতোই একই গতি প্রাপ্ত হলেন।“
[shrimadbhagabatam/9/9/36- translated by prabhupada]
স্কন্দ পুরাণে সতীদাহ
“এর পরেই রাজা Manojava ওই তীর্থের বলে তার দেহ ত্যাগ করে শিবলোকে গেলেন। হে ব্রাহ্মণেরা, তারপর তার স্ত্রী সুমিত্রা তার দেহকে আলিঙ্গন করে তার চিতায় আরোহণ করলেন। তিনিও (সুমিত্রা) একইলোক প্রাপ্ত হলেন।”
[Skanda Purana III.i.12.115-116 |Tr. G.V. Tagare|Motilal BanarsiDass Publication]
“৫৩.যে সতী নারী গৃহ থেকে শ্মশানে আত্মাহুতি দেওয়ার জন্য অবধি তার স্বামীর অনুসরণ করে, প্রতি ধাপে সে নিশ্চয় একটি অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান পূণ্য লাভ করে। ৫৪.সাপুড়ে যেমন জোর করে সাপকে গর্ত হতে বের করে আনে, তেমনি সতী নারীও তার স্বামীকে যমদূতের হাত থেকে রক্ষা করে আনে এবং স্বর্গভোগ করে। ৫৫-৫৮. সতী নারীকে দেখে যমদূত পালিয়ে যায়।সতী নারীর দ্যুতি দেখে সূর্যও জ্বালা বোধ করে, এমনকি আগুনও দগ্ধ হয়ে যায়, অন্যান্য আলোর উৎসও ভীত হয়ে ওঠে। একজন সতী নারী তার স্বামীর সাথে তত কোটি দশ হাজার বছর স্বর্গ ভোগ করে, যে সংখ্যক লোম তার শরীরে আছে।” [Skanda Purana III.ii.7.53-56| Motilal BanarsiDass Publication]
৩৮-৪১. তার স্ত্রী অনন্য বৈশিষ্ট্যের সাথে সুন্দরী ছিলেন। তিনি সতী ছিলেন এবং মহান গুণের অধিকারী ছিলেন। তিনি আনন্দের সাথে হাসতেন। তিনি দৃঢ় চিত্তের অধিকারী ছিলেন। যখন তার স্বামীকে হত্যা করা হল, তার অবস্থা করুণ হয়ে পড়ল। পতিবিচ্ছেদে তিনি অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়লেন। তিনি ভয়ানক জংগলের মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন। সুন্দরী মহিলাটি জ্বালানি ও পাতা সংগ্রহ করে চিতা প্রস্তুত করে স্বামীর সাথে সেই চিতায় আরোহণ করলেন। এই কাজ করে তিনি মানসিক ভাবে তৃপ্তি পেয়েছিলেন।
[Skanda Purana V.i.53.38-41 |Motilal BanarsiDass Publication]
ব্রহ্ম পুরাণে সতীদাহ
ব্রহ্ম পুরাণে কপোত কপোতির উপাখ্যানে কপোত অগ্নিতে ঝাপ দিয়ে মারা গেলে, কপোতিকেও একই কাজ করতে দেখা যায় এবং কপোতির কথায় সহমরণের আদর্শ ফুটে ওঠে। খাঁচায় বদ্ধ কপোতি ব্যাধ লুব্ধককে বলে, “মহাশয়, দয়া করে আমাকে মুক্ত করে দিন। পতিবিহীন এই জীবনে আর কি প্রয়োজন? আমি এখনই এই অগ্নিতে দেহত্যাগ করবো।” ব্যাধ কপোতিকে মুক্ত করে দিলে কপোতি বলে, “সমস্ত অবস্থায় স্বামীর অনুগমন করাই স্ত্রী জাতির ধর্ম। বেদে এবং লোকসমাজে এই পথই প্রশস্ত বলে অভিহিত। পতিব্রতা নারী স্বামীর সাহায্যেই স্বর্গে গমন করে থাকে। যে নারী স্বামীর অনুগমন করে, সে বহুকাল পর্যন্ত স্বর্গে বাস করে।” তারপর সে যখন আগুনে প্রবেশ করল তখন আকাশে জয়ধ্বনি শোনা গেল। সেই পক্ষি দম্পতি সূর্যের মত উজ্জ্বল বিমানে স্বর্গে যেতে যেতে ব্যাধকে বলল- “মহাশয় আমরা দেবলোকে যাচ্ছি। এখন তোমার অনুমতি নিচ্ছি;কারণ তুমি আমাদের অতিথি। তোমার জন্যই আমাদের স্বর্গে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হল। তোমাকে আমরা নমস্কার করি।”

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ