ধর্ম্ম - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

02 September, 2018

ধর্ম্ম

ধর্ম্ম
ঋষি বশিষ্ঠ বলেছেন,

"লোকে প্রেত্য বা বিহিতো ধর্ম্মঃ।।"
(বশিষ্ঠ ধর্মসূত্র ১/৪)
ভাবার্থঃ-- বেদ বিহিত কর্মই ধর্ম্ম।
√সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বেদ ভাষ্যকার মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ধর্ম্ম বিষয়ে বলেনঃ-
"যা পক্ষপাত রহিত ন্যায়, সত্যগ্রহণ, অসত্যের পরিত্যাগ, পাঁচ পরীক্ষার অনুকূল আচরণ, ঈশ্বরাজ্ঞা তথা বেদ এর আজ্ঞা পালন, পরোপকার করা ধর্ম, এর বিপরীত অধর্ম বলে।কেননা যা সকলের অবিরুদ্ধ তাই ধর্ম এবং যা পরস্পর বিরুদ্ধাচরণ সেটাকে অধর্ম বলা হবে না কেন?"
(স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী রচিত ব্যবহার ভানু নামক বই)

অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুযায়ী অতিমানবিক নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি বিশেষতঃ ব্যক্তিগত ঈশ্বর বা ঈশ্বরসমূহে বিশ্বাস এবং উপাসনা করাকে ধর্ম বলে।
"যা বেদবিহিত তাই ধর্ম আর যা বেদনিষিদ্ধ তাই অধর্ম ।
বেদ স্বয়ং ভগবানের স্বরূপ..................."
- শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ৬/১/৪০ শ্লোক (গীতাপ্রেস ভাষ্য)


উইকিপিডিয়াতে ধর্মের সংজ্ঞা, প্রভারভেদ এবং অনুসারীর সংখ্যা বিস্তারিত দেওয়া আছে।[1][2] ৪২০০ ধর্মের মধ্যে থেকে জেসন বয়েট তার বইতে প্রধান ১২টি ধর্ম চিহ্নিত করেছেন।[3] উক্ত ধর্মগুলোর প্রভারভেদ মনে রাখা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।[4]
ধর্মগুলো [রিলিজিয়ন] প্রধানত দুই প্রকার:—
  1. সেমেটিক বা আব্রাহামিক ধর্ম:— ইসলাম, খ্রিষ্টধর্ম, ইহুদিধর্ম, বাহাইধর্ম।
  2. নন-সেমেটিক ধর্ম।
নন-সেমেটিক বা অ-আব্রাহামিক ধর্মগুলো আবার দুই প্রকার:—
  1. আরিয়ান
  2. নন-আরিয়ান:— কনফুসীয়বাদ, তাওবাদ, শিন্তৌধর্ম, (নাস্তিক্যবাদ)
আরিয়ান ধর্মগুলো আবার দুই প্রকার:—
  1. বৈদিক:— হিন্দুধর্ম
  2. নন-বেদিক বা অবৈদিক:— বৌদ্ধধর্ম, শিখধর্ম, জৈনধর্ম, জরাথুস্ট্রবাদ।
সাধারণ অর্থে আমরা ইংরেজি শব্দ Religion-কে ধর্ম মনে করি, কিন্তু আসলেই কি তাই?
না। ইংরেজি শব্দের Religion-এর অর্থ বিশ্বাস। কিন্তু ধর্ম শুধু বিশ্বাসের উপর আধারিত নয়। বিশ্বাস ধর্মের সামান্য একটি অংশ মাত্র। আসলে ধর্ম মানে কি?
বৈশেষিক দর্শনে মহর্ষি কণাদের ভাষায়ঃ
‘য়তো অভ্যুদয় নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ স ধর্ম’
বৈশেষিক দর্শন ১ম অধ্যায়, ১ম আহ্নিক, ২য় সূত্র
অর্থাৎ যা দ্বারা যথার্থ উন্নতি এবং পরম কল্যাণ লাভ হয় তাই ধর্ম।
ধর্মের লক্ষণ সম্বন্ধে ঋষি মনু বলেছেন-
“শ্রুতিঃ স্মৃতিঃ সদাচারঃ স্বস্য চ প্রিয়মাত্মনঃ।
 এতচ্চতুর্বিধং প্রাহুঃ সাক্ষাৎ ধর্মস্য লক্ষণম্।।” (মনুস্মৃতি ২/১২)

অর্থাৎঃ শ্রুতি অর্থাৎ বেদ পাঠ ও এর বাণীসমূহ হৃদয়ে ধারণ করা; স্মৃতি অর্থাৎ বেদানুকূল আপ্তোক্ত শাস্ত্রসমূহ পাঠ ও এর বাণীসমূহ হৃদয়ে ধারণ করা; সদাচার অর্থাৎ সৎপুরুষদিগের আচার তথা বেদ প্রতিপাদিত কর্ম করা; এবং নিজ আত্মার প্রিয় কর্ম অর্থাৎ সত্য গ্রহণ ও অসত্য বর্জন করা- এই চারটি ধর্মের লক্ষণ। অর্থাৎ এর দ্বারাই ধর্মাধর্মের নির্ণয় হইয়া থাকে।
धारणात् धर्म इत्याहुः धर्मों धारयति प्रजाः।
यः स्यात् धारणसंयुक्तः स धर्म इति निश्चयः।।
ধারণাত্ ধর্ম ইত্যাহুঃ ধর্মো ধারয়তি প্রজাঃ।
যঃ স্যাত্ ধারণসংযুক্তঃ স ধর্ম ইতি নিশ্চযঃ।।
কর্ণপর্ব ৬৯।৫৮, মহাভারত  শান্তি পর্ব ১০৯।১১

অর্থাৎঃ সমাজকে, প্রজা সাধারণকে ধারণ করে রাখে যা তাই ধর্ম্ম, ইহা এমন এক সদাচার যা ধারণ করলে আত্মার উন্নতি ও মোক্ষ প্রাপ্তির পথ সুগম হয় ও সমাজ ব্যবস্থা ঠিক থাকে। সমাজের সমৃদ্ধি, কল্যাণ হয়, তাই বিচার করে সেটিই ধর্ম্ম, তাই স্থির করতে হয়। ধর্ম প্রজাদিগকে ধারন করে, যা প্রজাকে ধারনকরে একসূত্রে বেঁধে রাখে তা অবশ্যই ধর্ম্ম...অর্থাৎ যা থেকে জাগতিক কল্যাণ ও মোক্ষলাভ হয় তাহাই ধর্ম।অর্থাৎ যে যে ব্যবহারে নিজের ও অন্যের হানি হয় তাহাকে অধর্ম এবং যে যে ব্যবহারে নিজের ও অন্যের উপকার হয় তাহাকে ধর্ম বলে।
ধর্ম শব্দটি আসে সংস্কৃত √ধৃ হতে। এই √ধৃ -এর অর্থ 'ধারণ'। 'একজন ব্যক্তি তার জীবনে তার যত প্রকার বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে সব মিলিয়ে হয় তার ধর্ম।' তার বিশ্বাস, তার পরম্পরাগত শিক্ষা, তারা আচার ব্যবহার ইত্যাদি এই সবই তার ধর্ম। যেভাবে আগুনের ধর্ম দহন করা, জলের ধর্ম শীতলতা, পশুর ধর্ম পশুত্ব, তেমনি মানুষের ধর্ম হয় মনুষত্ব। কিন্তু শাস্ত্র বলে মানুষ উচ্চমার্গীয় একটি জীব এবং এই উচ্চমার্গীয় জীবকে নির্ণয়ের জন্য মনুস্মৃতি বা (মনুষ্যের বিধি বিধান সম্বলিত গ্রন্থ)লেখা হয়েছে। স্মৃতিশাস্ত্রে ধর্ম্ম বলতে সদ্ গুণাবলীকে বোঝানো হয়েছে, মহর্ষি মনু বলেছেন।
এই গ্রন্থ অনুসারে মনুষ্য ধর্ম বিবেচিত হবে দশটি গুণ এর মাধ্যমে, যে দশটি গুণের উপস্থিতি তাদেরকে মনুষ্য প্রমাণ করবে। যথা-
धृति: क्षमा दमोऽस्तेयं शौचमिन्द्रियनिग्रह:। 
धीर्विद्या सत्यमक्रोधो दशकं धर्मलक्षणम् ॥ मनु स्मृति 6/92
ধৃতিঃ ক্ষমা দম অস্তেয় শৌচং ইন্দ্রনিগৃহ।
ধীঃ বিদ্যা সত্যম্ অক্রোধ দশকম ধর্মস্য লক্ষণম্।। (মনুস্মৃতি ৬ষ্ঠ অং ৯২ শ্লোক)
ধৃতিঃ ক্ষমা দমোস্তেয়ং শৌচমিইন্দ্রিয়নিগ্রহঃ।
ধী র্বিদ্যা সত্যমক্রোধো দশকং ধর্ম লক্ষণম্।।-[মনুস্মৃতি ৬/৯২]
পদার্থ-( ধৃতি) কষ্ট অথবা বিপত্তিতে খুব ধৌর্য ধারণ রাখা আর দুঃখে এবং বিচলিত না হয়ে তথা ধর্ম পালনে কষ্ট আসার পরও ধৌর্য রেখে পালন করে দেখান,দুঃখি অথবা বিচলিত হয়েও ধর্মকে ত্যাগ না করা,( ক্ষমা) ধর্ম পালনের জন্য নিন্দা-স্তুতি,মান-অপমানকে সহন করা ( দমঃ) ঈর্ষা,লোভ মোহ,শত্রুতা আদি অধর্ম রূপ সংকল্প অথবা বিচার হইতে মনকে বশ করে রাথা, ( অস্তেযম্) চুরি, ডাকাতি মিথ্যা,ছল-কপট ভ্রষ্টারচার,অন্যায় অধর্মাচরণ হইতে কারো বস্তু ধন আদি না নিতে,( শোচম্) দেহ আর মনকে পবিত্রতা রাখা,( ইন্দ্রিয়নিগ্রহঃ) ইন্দ্রিয়কে নিজ-নিজ বিষয়ে অধর্ম আর পতন হইতে থামিয়ে রাখা, (ধীঃ) বুদ্ধিকে উন্নতি করে,মননশীল হয়ে বুদ্ধিবর্ধক উপায় করা আর বুদ্ধিনাশক নেশা আদি না করা,( বিদ্যা) সত্যবিদ্যা কে ব্যায় করে অধিকাধিক যত্ন করে বিদ্যা আর জ্ঞানকে উন্নতি করা,(সত্যম্) মন,বচন,কর্ম হতে সত্য মেনে সত্যভাষণ ও সত্যাচরণ করা,আত্মবিরুদ্ধ মিথ্যাচরণ না করা, ( অক্রোধঃ) ক্রধের ব্যবহার আর বিনিময় এর ভাবনাকে ত্যাগ করে শান্তি আদি গুণকে ধারণ করা, (দশক ধর্মলক্ষণম্) এই দশ ধর্মের লক্ষণ। ওই গুণ হতে ধর্মপালন এর শনাক্তকরণ হয় আর ওই মনুষ্যগণ ধার্মিক হয় এর লক্ষিত-সিদ্ধ কর। এই ধর্মের সর্বসামান্য লক্ষণ হয়।।
অর্থাৎ, ধৃতি, ক্ষমা, দম, অস্তেয়, শৌচ, ইন্দ্রিয়নিগ্রহ, ধী, বিদ্যা, সত্য, অক্রোধ- এই দশটি ধর্ম্মের লক্ষণ।
১। ধৃতি- সর্বদা ধৈর্য অবলম্বন করা;(ধারণা করা স্মরণ রাখিবার শক্তি।)

২। ক্ষমা- নিন্দা-স্তুতি, মান-অপমান এবং হানি-লাভাদি দুঃখের মধ্যেও সহিষ্ণু থাকা;(কেহ অপকার করিলে যে তাহার প্রত্যপকারে প্রবৃত্তি হয়,সেই প্রবৃত্তিকে যে শক্তি দ্বারা নিরোধ করা যায়।)

৩। দম- মনকে সর্বদা ধর্মে রত এবং অধর্ম হইতে বিরত রাখা;(শোক,তাপাদি দ্বারা কোন প্রকার চিত্তবিকৃতি উপস্থিতি হইলে,যে শক্তি দ্বারা ঐ প্রবৃত্তির নিরোধ করা যায়।)

৪। অস্তেয়- চৌর্য পরিত্যাগ করা অর্থাৎ অনুমতি ব্যতীত ছল, কপটতা, বিশ্বাসঘাতকতা বা বেদবিরুদ্ধ উপদেশ দ্বারা পরপদার্থ গ্রহণ না করা;(অবিধি পূর্ব্বক পরস্ব গ্রহণের প্রবৃত্তিকে যে শক্তি দ্বারা নিরূদ্ধ করা যায়।)

৫। শৌচ- রাগ, দ্বেষ ও পক্ষপাত পরিত্যাগ করিয়া জল, মৃত্তিকা মার্জনাদি দ্বারা শরীর ও মনের পবিত্রতা রক্ষা করা;(শরীর ও চিত্তের নির্ম্মলভাব।)

৬। ইন্দ্রিয়নিগ্রহ- ইন্দ্রিয়সমূহকে অধর্মাচরণ হইতে নিবৃত্ত করিয়া সর্বদা ধর্মপথে পরিচালনা করা;(যে শক্তি দ্বারা ইন্দ্রিয়গণকে বিষয় হইতে নিরুদ্ধ করা যায়।)

৭। ধী- মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য বুদ্ধিনাশক পদার্থ, কুসংসর্গ, আলস্য এবং প্রমাদ প্রভৃতি পরিত্যাগ করিয়া উৎকৃষ্ট পদার্থ সেবন এবং সৎসঙ্গ ও যোগাভ্যাস দ্বারা বুদ্ধির উন্নতি সাধন;(শাস্ত্রাদি দ্বারা বস্তুর তত্ত্ব নিশ্চয় শক্তি-ধীশক্তি)।

৮। বিদ্যা- পৃথিবী হইতে পরমেশ্বর পর্যন্ত(যাবতীয় পদার্থের) যথার্থ জ্ঞান অর্জন ও পদার্থসমূহের দ্বারা যথোচিত প্রয়োজনের সিদ্ধি এবং মন, বাক্য ও কর্ম দ্বারা আত্মানুরূপ আচরণ করা;(
যে শক্তি দ্বারা অন্তরস্থ চৈতন্য স্বরূপ পরমাত্মার আন্তরিক প্রত্যক্ষ করা যায়,শরীরাদি হইতে আপনাকে পৃথকরূপে জানা যায়, যে শক্তি দ্বারা ইন্দ্রিয়,মন,বুদ্ধি অভিমান প্রভৃতি অন্তরস্থ পদার্থ সকল আম্র ও কাঁঠালের রসাস্বাদের ন্যায় পৃথক্ পৃথক্ রূপে জাজ্জল্যমান মানসিক প্রত্যক্ষ করিতে পারে।)
৯। সত্য- কায়, মন ও বাক্য দ্বারা যথার্থ আচরণ করা অর্থাৎ যে পদার্থ যেরূপ তাহাকে সেইরূপ মনে করা, সেইরূপ বলা এবং সেইরূপ করা;
১০। অক্রোধ- ক্রোধাদি দোষ পরিত্যাগ করিয়া শান্তি প্রভৃতি গুণ গ্রহণ করা।
অতএব, ব্রহ্মচারী, গৃহস্থ, বাণপ্রস্থী এবং সন্ন্যাসী সকলের উচিত যত্নসহকারে উপরোল্লিখিত দশ লক্ষণান্বিত ধর্ম পালন করা।(
যে শক্তি দ্বারা ক্রোধকে নিরুদ্ধ করা যায়
এই দশটি এবং বৈরাগ্য,ঔদাসীন্য,ভক্তি,শ্রদ্ধা,প্রেম,সন্তোষ প্রভৃতি কতকগুলি সৎগুণএতৎ সমস্তের মধ্যে আত্মবোধের ক্ষমাতাটিই সর্ব্বোচ্চ পরম ধর্ম্ম )
*কেহ কেহ ধৈর্য্যকেই ধৃতি বলিতে চাহেন, কিন্তু তাহা নিতান্ত ভ্রম। যে ধৈর্য্যকে তাঁহারা ধৃতি বলিতে চাহেন,সেই ধৈর্য্য পরোক্ত দম শক্তি ও ইন্দ্রিয় নিগ্রহাদি শক্তির মধ্যে অন্তর্নিহিত সুতরাং এখানে আবার ধৈর্য্য অর্থ করিলে মনুর পুনরুক্তি দোষ ঘটে।
ধর্ম
এর মধ্যেই একজন ব্যক্তির মনুষত্ব প্রমাণিত হয়। এই ১০ লক্ষণ একটি পশুকেও মানুষ হিসেবে বিবেচিত করাতে পারে। 
এর পরে আসে মানুষের বিশ্বাস বা আস্থার বিষয়। যেখানে এসে ধর্ম প্রথম বারের মতো দুই ভাগে বিভক্ত হয়।
  1. আস্তিক্যবাদ
  2. নাস্তিক্যবাদ
এই আস্তিক্যবাদের মধ্যেই প্রথমবারের মতো ঈশ্বরের অস্তিত্ব দেখা যায়। ঈশ্বরের বর্ণনা দিতে গিয়ে শাস্ত্র বলে -
ॐ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদম্ পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।। — বৃহদারণ্যক উপনিষদ।
সংক্ষিপ্ত অর্থে, যিনি এই বিশ্ব সংসার এর পূর্ণরূপ, তার হতেই সবকিছু পূর্ণ হয় এবং তার মধ্যেই পূর্ণরূপ বিরাজমান।
এখন ধর্মের পর্যায়বাচক শব্দগুলির মধ্যে প্রথমটি হ’ল ‘ধৃতি’। ধৃতি মানে ধৈর্য্য (patience) কিন্তু ধারণকর্ত্তা অর্থাৎ যা জীবের বিশেষ বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে রাখে এই অর্থে ধর্মের দশ অবস্থার কথা বলা হয়। তোমরা জান, এই দশটি স্তরে বা অবস্থায় ধর্মের কার্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। যা পূর্বে বলেছি 
“ধৃতির্ক্ষমা দমোহস্তেয়ং শৌচমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃ।
ধীবির্দ্যা সত্যমক্রোধঃদশকং ধর্মলক্ষণম্‌”।।
এখানে ধর্মের দশটি স্তরের কথা বলা হচ্ছে। প্রথমটিতে বলা হচ্ছে ‘ধৃতি’। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষকে ধৃতি অর্থাৎ ধৈর্য্য ধরতে হবে। বর্ষায় ধানের চারা রোপণের পরে পাকা ফসলের জন্যে ধৈর্য্যের সঙ্গে অপেক্ষা করতে হবে। ঠিক তেমনি আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও সাধনা আরম্ভ করে ফলের জন্যে ধৈর্য্যের সঙ্গে প্রতীক্ষা করতে থাকো। যদি অধৈর্য্য হও সেটা তোমার পক্ষে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হবে না।

যেখানে কোন কর্ম নিষ্পন্ন হয় সেখানে তার সমপরিমাণ ও বিরুদ্ধধর্মী প্রতিকর্মও তৈরী হয়, অবশ্য যদি মৌল আপেক্ষিক তত্ত্ব তিনটি অর্থাৎ দেশ, কাল ও পাত্র অপরিবর্ত্তিত থাকে। ঠিক তেমনি আধ্যাত্মিক সাধনা ভূমিতে তুমি যা কিছু করছ বা করতে পারবে সে সবই তোমার নিজস্ব কর্মগত অভিব্যক্তি। তার প্রতিকর্মগত সম্ভাবনাও অবশ্যই তৈরী হবে। তাই প্রতিকর্মের স্ফূরণের জন্যে তোমাকে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতেই হবে। ধর্মের যে প্রথম লক্ষণ ‘ধৃতি’ এটাই তার তাৎপর্য।

দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে ‘ক্ষমা’। আমি আগেই বলেছি যে প্রতিটি কর্মের সমান ও বিরোধী প্রতিকর্ম অবশ্যই তৈরী হবে যদি দেশ, কাল ও পাত্র এই তিনটি আপেক্ষিক তত্ত্ব অপরিবর্ত্তিত থাকে। কিন্তু বাস্তবে স্থান, কাল ও পাত্র কখনও অপরিবর্ত্তিত থাকে না। তাতে পরিবর্ত্তন অনিবার্যভাবেই এসে পড়ে আর পরিবর্ত্তনটাও সাধারণ ভাবে আসে না। বরং সেটা রূপান্তরণের এক বিশেষ অবস্থা রূপে আসে। ধরো, কোন দুষ্কর্মকারী কুকর্ম করতে শুরু করল। মনে কর, সে তোমাকে একটা আঘাত দিল। স্বাভাবিক ভাবেই এর একটা প্রতিকর্ম থাকবে। তৃতীয় পর্যায়ে এসে এই প্রতিকর্মেরও বিরোধী প্রতিকর্ম তৈরী হবে। আবার চতুর্থ পর্যায়ে এসে তৃতীয় পর্যায়ের কর্মের বিরুদ্ধ প্রতিকর্ম দেখা দেবে। যেমন রাম শ্যামকে অপমান করল। পরিণামে শ্যামের পুত্র রামের পুত্রকে অপমান করল, আবার রামের পৌত্র শ্যামের পৌত্রকে অপমান করবে। এই রকম পরম্পরাগতভাবে প্রথম পর্যায়ের পর দ্বিতীয় পর্যায়, পরে তৃতীয় পর্যায়, আবার চতুর্থ পর্যায় চলতেই থাকবে। কিন্তু কোথাও তো এর অবসান ঘটাতে হবে। এই পর্যায়ক্রমে সবাইকে যাত্রাপথের শেষ ক্রমিক বিন্দুতে পৌঁছতেই হবে। আর এই সমাপ্তিবিন্দু তোমার ভেতরই স্থিত হয়ে থাকবে। অর্থাৎ তোমার তরফ থেকে বদলা নেবার যখন সুযোগ এল, সে সময়ে তোমার নিজের তরফ থেকে কোন প্রতিকর্ম আসতে দিও না। আর সেই পর্যায়টাকে শেষ হতে দাও। এই যে কর্ম ও প্রতিকর্মের পৌনঃপৌনিক অবস্থার পরিসমাপ্তি, এই পরিসমাপ্তি যা তোমার তরফ থেকে হয়েছে তাকে বলে ‘ক্ষমা’। এটাই হ’ল ধার্মিক অভিব্যক্তির দ্বিতীয় অবস্থা।

তৃতীয় স্তর হ’ল  ‘দম’। এই প্রসঙ্গে একটা মজার গল্প আছে। কতকগুলো লোক একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল। দূরে দিগন্তে তারা এক মহান অত্যুজ্জ্বল সত্তার আবির্ভাব লক্ষ্য করল। সেই সত্তাটির প্রচণ্ড স্পন্দন তথা অত্যন্ত তীব্র ঔজ্জ্বল্য সবাইকে অভিভূত করল। তখন তারা সবাই মিলে সেই মহান সত্তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কে আপনি?” তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তখন তারা আবার জিজ্ঞেস করল, “আপনার আদেশ কী?” তখন সেই প্রোজ্জ্বল সত্তাটি বললেন- ‘দ’। তিনি শুধু এক অক্ষরে উত্তর দিলেন- ‘দ’। উপস্থিত জনতার মধ্যে তুলনামূলকভাবে যারা প্রাগ্রসর ছিল তারা ‘দ’ ধ্বনিটির ব্যাখ্যা করল “দমনং কুরু”। দ্বিতীয় দলের লোকেরা যারা মনুষ্যস্থানীয় ছিল তারা ‘দ’ ধ্বনিটির অর্থ করল “দয়াং কুরু”। তা’ হ’লে  ‘দ’ ধ্বনির প্রথম অর্থ ধরা হ’ল ‘দমনম্‌’, দ্বিতীয় অর্থ ধরা হ’ল ‘দয়া’। তৃতীয় দলের সদস্যরা ‘দ’ ধ্বনিটির অর্থ করল “দানং কুরু”। এই শেষোক্ত দলের সদস্যদের বলা হত অসুর বা দানব। শ্লোকটিতে বলা হয়েছে ‘দমোহস্তেয়ম্‌’। এখানে ‘দম্‌’ শব্দের অর্থ হ’ল ‘দমনম্‌’।

তোমরা জান যে সকল জায়গাতেই তোমাদের শত্রুও আছে, মিত্রও আছে। বাইরের শত্রুর সঙ্গে যখন লড়াই কর ও তাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে ফেল, তখন তোমার এই ধরণের কার্যকে বলা হয় ‘শমনম্‌’। আর এই ধরণের লোকেদের বলা হয় ‘শান্ত’। সংস্কৃত ‘শম্‌’ ধাতুর উত্তর ‘অনট্‌’ প্রত্যয় করে পাচ্ছি ‘শমন’ শব্দটি আর শম্‌ + ক্ত প্রত্যয় যোগ করে পাচ্ছি ‘শান্ত’ শব্দটি। ‘শান্ত’ মানে সেই ধরণের মানুষ যে বাহ্যিক বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। অনুরূপভাবে ‘দম’ ধাতুর উত্তর অনট্‌ প্রত্যয় ব্যবহার করে  পাচ্ছি ‘দমন’ শব্দ। ‘দমন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে আভ্যন্তরীণ শত্রুর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা অথবা যে সব হীন বৃত্তি, রিপু মানুষকে অধোগামী করে তার ওপর নিয়ন্ত্রণ। এটা হ’ল দমন। আর দম্‌ + ক্ত প্রত্যয় করে পাই ‘দান্ত’ শব্দটি। ‘দান্ত’ মানে যে ব্যষ্টি আভ্যন্তরীণ রিপুর ওপর বিজয় লাভ করেছে। ভারতে পৌরাণিক গালগল্পে এক দেবতার নাম ‘যমরাজ’। বিশ্বের ক্রমবর্দ্ধমান জনসংখ্যার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা তাঁর কর্ত্তব্য। সেই জন্যে তাঁকে বলা হয় ‘শমন’।‘শমন’ মানে যমরাজ।
“নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর।।“
তিনি সব কিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন বলে তাঁকে বলা হয় শান্ত। এই হ’ল ধৃতি বা ধর্মের তৃতীয় স্তর। তাই ধার্মিক বা আধ্যাত্মিক ব্যষ্টির নিজের ওপর, নিজের প্রত্যেক বৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।
চতুর্থ স্তর হচ্ছে ‘অস্তেয়’। আমি ধরে নিচ্ছি, তোমরা ‘অস্তেয়’ শব্দের ঠিক ঠিক অর্থ জান। ‘অস্তেয়’ শব্দের অর্থ হ’ল শারীরিক বা মানসিক দিক দিয়ে চৌর্যবৃত্তি থেকে বিরত থাকা।
এর পর পঞ্চম স্তর হ’ল ‘শৌচ’। তোমরা জান যে শৌচ দু’রকমের- বাহ্য শৌচ ও আভ্যন্তরীণ শৌচ। দেহ, নিজের পরিধেয় বস্ত্র ও ঘর-বাড়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হ’ল বাহ্য শৌচ আর মনকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হ’ল আভ্যন্তরীণ শৌচ।
“শৌচন্তু দ্বিবিধং প্রোক্তং বাহ্যমাভ্যন্তরম্‌।
মৃজ্জলাভ্যাং স্মৃতং বাহ্যং মনঃশুদ্ধিস্তথান্তরম্‌।।“
ষষ্ঠ স্তর হ’ল “ইন্দ্রিয়নিগ্রহঃ”। সংস্কৃত ‘ইন্দ্র’ শব্দের অর্থ হচ্ছে মুখ্য বা প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী সত্তা। ফার্সী ভাষায় এর প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘সর্দার’। ‘সর’ মানে মাথা আর ‘দার’ মানে মালিক । যে সব চেয়ে ওপরে , শীর্ষ স্থানে থেকে অন্যকে দিয়ে কাজ করে নেয় সে হ’ল সর্দার। ইন্দ্রিয় দশটি- পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়। দৈহিক স্তরে ইন্দ্রিয়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক ক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার দরুণ এদের বলা হয় ইন্দ্রিয়। কেননা ‘ইন্দ্র’ শব্দের অর্থ যার ভূমিকা হচ্ছে প্রধান অর্থাৎ প্রভাবশালী। কিন্তু ইন্দ্রিয়ের ওপরেও রয়েছে সূক্ষ্ম মন ও সূক্ষ্ম আত্মা। এই জন্যে নিজের মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি দিয়ে তোমাকে ইন্দ্রিয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ঠিক এই কারণেই ধর্মজীবনে ইন্দ্রিয়নিগ্রহ অত্যন্ত আবশ্যক। আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী।
এরপর আসছে ‘ধী’। ‘ধী’ মানে কল্যাণাত্মিকা বুদ্ধি। মানুষ হয়তো বৌদ্ধিক জগতে শক্তিশালী হতে পারে কিন্তু যদি তাকে ঠিক পথ দেখানো না হয় সেক্ষেত্রে তার প্রতিভা শয়তানের প্রতিভায় পরিণত হবে। এই ধরণের বৌদ্ধিকতা সমাজকে অধোগামী করে, শোষণ করে। তাই মানুষকে যদি সত্যিকারের পথ দেখানো না হয় তাহ’লে এই আত্মাবর্জিত জ্ঞানবুদ্ধি রাক্ষসের মত সর্বভক্ষক হয়ে উঠতে পারে। এই জন্যে ‘ধী’ মানে হচ্ছে শ্রেয়াত্মিকা বুদ্ধি, কল্যাণাত্মিকা বুদ্ধি যা সমাজের প্রগতির সহায়ক হতে পারে, যার প্রয়োগে কেবল মানুষেরই কল্যাণ নয়, সমগ্র জীবজগতেরই কল্যাণ হতে পারে। ‘ধী’ শব্দের এটাই প্রকৃত তাৎপর্য।
তারপর আসছে ‘বিদ্যা’। তোমরা জান, বৈদিক মূল ‘বিদ্‌’ ধাতু থেকে ‘বিদ্যা’ শব্দ নিষ্পন্ন। ‘বিদ্‌’ ধাতুর মানে হচ্ছে বাহ্য প্রক্ষেপণের বা বাহ্য-প্রক্ষেপিত অস্তিত্বের আত্মস্থীকরণ। এর মূল ভাব, মুখ্য ভাব অথবা অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হ’ল বাহ্যিক বস্তুভাবের আভ্যন্তরীণ আত্মস্থীকরণ। এই আত্মস্থীকরণ প্রক্রিয়ায় আমরা মুখ্যতঃ দু’রকম আত্মস্থীকরণের সংস্পর্শে আসি। একটির নাম বিদ্যা, অপরটির নাম অবিদ্যা। মানুষের বাহ্যিক জীবনের সঙ্গে রয়েছে অবিদ্যার সম্পর্ক। আর বিদ্যার সম্পর্ক রয়েছে মানুষের আভ্যন্তরীণ জীবনের সঙ্গে।
আনন্দমার্গে আমরা বাইরের পৃথিবীকে কখনও উপেক্ষা বা অবহেলা করি না। আমরা বলি, আমাদের গতি যেন বস্তুজগতের সঙ্গে সা্মঞ্জস্য রেখে আত্মিক জগতের দিকে হয়ে থাকে ( Ours is  the subjective approach through objective adjustment )। অবিদ্যা কী তাও তোমাদের জানতে হবে। এখানে অবিদ্যা মানে জড়বিজ্ঞান (modern science)। জড়বিজ্ঞান অবিদ্যার অধিক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে। তোমাকে নিজের জীবনে অবিদ্যাকে বিদায় করার প্রয়াস করলে হবে না- যেমন তোমরা ইংরেজীকে এদেশ থেকে তুলে দেবার চেষ্টা করছ। হ্যাঁ, মনে রেখো অবিদ্যাকে শেষ করার চেষ্টা যেন না করা হয়।
“বিদ্যাঞ্চাবিদ্যাঞ্চ যস্তদ্বেদোভয়ং সহ।
অবিদ্যয়া মৃত্যুং তীর্ত্বা বিদ্যয়ামৃতমশ্নুতে”।।
অবিদ্যা কী, অবিদ্যার কাজ কী- এসব তোমাদের শিখতে হবে, আর সেই সঙ্গে বিদ্যা সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। অবিদ্যার সাহায্য নিয়ে ভৌতিক ক্ষেত্রে সমাজের উন্নতি ঘটাতে হবে আর বিদ্যার সাহায্য নিয়ে আধ্যাত্মিক মুক্তি-মোক্ষ লাভের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ভৌতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার এই রকম মণিকাঞ্চণ যোগ ঘটাতে হবে। ‘বিদ্যা’ শব্দের এই হ’ল তাৎপর্য।
ধর্মের এর পরের স্তর হচ্ছে ‘সত্য’। সত্যের অর্থ হ’ল যা চিরশাশ্বত তার যে স্বীকৃত রূপ তাই হ’ল সত্য- Recognised status of veracity. তোমাদের এটা জেনে নেওয়া উচিত, মনে রাখা উচিত আর নিজের বৈয়ষ্টিক ও সামূহিক জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা উচিত।
এরপরে আসছে অক্রোধ। কোন প্রকার ভাবনার দ্বারাই মানুষের অযথা বিচলিত বা প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। ক্রোধ হ’ল এক ধরণের সেন্টিমেন্ট। এর উদ্দেশ্য হ’ল সূক্ষ্ণতর মনের কার্যকে উপেক্ষা করে স্নায়ূকোষ ও স্নায়ূতন্তুর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া। কাজেই এটাও খুব বিপজ্জনক। জীবনে অবাঞ্ছিত ক্রিয়াকলাপ থেকে পাপীদের প্রতিনিবৃত্ত করবার জন্যে ক্রোধের ভাণ করতে পার। একে সাত্ত্বিক ক্রোধ বলে। কিন্তু কখনও ক্রোধের বশীভূত হ’য়ো না। যদি তেমনটা হও তা হ’লে তাকে বলব তামসিক ক্রোধ।
এইভাবে ধৃতি, ক্ষমা, দম, অস্তেয়, শৌচ, ইন্দ্রিয়নিগ্রহ, ধী, বিদ্যা, সত্য ও অক্রোধ- এই হ’ল ধর্মের দশটি মূল লক্ষণ। যদি ধৃতিকে ও ধর্মকে সমার্থক বলে মনে করা হয় তাহ’লে এই দশটিকে ধৃতির লক্ষণ বলেও মনে করা যেতে পারে।
(আনন্দবচনামৃতম ৮ম খণ্ড থেকে সংগৃহীত)
ধর্মের মহান সিদ্ধান্ত সার্বকালিক, সার্বদেশিক, সৃষ্টি নিয়মানুগ,বেদ ও ঈশ্বরীয় অভিপ্রেত।
বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন --- পশ্চিম জার্মানির হেরীচীডে একটা বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন এর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আলোচনা চক্রে বলা হয়েছিল যে বেদে "ক" প্রজাপতি পরমেশ্বরের নাম। ল্যাটিন ভাষায় "Q ui"(কুই) সংস্কৃততে "কিম্ "ও "ক" রুপে দেখতে পাওয়া যায়। আরবীয় "কাবা" শব্দে "ক" অব্বা=ক অব্বা  অর্থাৎ পিতা, এবং দ্বিতীয় শব্দ কিবলা=অর্থাৎ মহান  যা "ক্বি" এর রুপান্তর বলে মনে হয়। ঋগ্বেদে "কঃ" সৌচীক নামক অগ্নি। সৌচীকের অর্থ সূচ থেকে জাত, এর তুলনা জার্মানির"লোকী" নামক দেবতার সাথে করা যেতে পারে, যাকে সূচিকা পুত্র বলা হয়। ক+শ্রদ্ধা=অর্থাৎ কোদ্ধার তুলনা আরবীর খোদার অর্থাৎ গডের (G od) সাথে করা যেতে পারে। এই "ক" ভারতের কোল নামক জাতির আদি পুরুষ পরমেশ্বরের সূচক।এই "ক"-র বেত্তাকে কোবিদ্ অর্থাৎ বিদ্বান বলা হয়। কবীর অর্থাৎ রহস্য বাদী কবি এবং আরবীয় "কবালা " ও ইহুদির"কবালা" তেও "ক" বিদ্যমান। ভারতের "কওয়াল " নামক শব্দেও এটা দেখা যায়। ক-ক্রস, বেদে কৃষ্ণ-ক অক্ষরের প্রাচীন রুপ এই ক্রস যা ব্রাহ্মী ও পূর্ব ব্রাহ্মী সিন্ধুলিপিতে পাওয়া যায়। এইসব বিবরণ থেকে পরিষ্কার বোঝাযায় যে, বেদ শব্দ পৃথিবীর সমস্ত জাতির মূলে আছে।
সেই জন্য বলা হয়েছে -"পিতৃদেব মনুষ্যণাং দেবশ্চক্ষু সনাতনাম্"(মনু১২/৯৪)-পিতৃ অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক, দেব অর্থাৎ বিদ্বান ও সাধারণ মানুষের জন্যও বেদ নেত্র সমান।
নেত্রহীন লোকেরা হোঁচট খায়, পরনির্ভরশীল-পরাধীন হয়।আধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিকগণ বেদ বিদ্যার অজ্ঞানতাবশত টেকনোলজির ভস্মাসুর তৈরি করছে। ইকোলজিক্যাল হলোক্যাস্ট (ecological hollocast) (পরিবেশ তন্ত্রের ধ্বংস) ও নিউক্লিয়ার ডিজাস্টার (পারমাণবিক বিপর্যয়) এদেরই দান। যদি এইসব বিজ্ঞানী বেদধর্ম শিক্ষালাভ করতেন, তাহলে পরমপিতা পরমেশ্বরের প্রজাগণকে রক্ষার উপায় উদ্ভাবন করতেন এবং দানব শক্তির জন্ম দিতেন না। এর সমর্থন পাওয়া যায় মহারাজ মনুর বচনে--"য়া বেদ বাহয়াঃ স্মৃতয়ো য়াশ্চ কাশ্চ কুদ্দষ্টয়ঃ। সর্বাস্তা নিস্ফলাঃ প্রেত্য তমোনিষ্ঠা হিতা স্মৃতাঃ"। অর্থাৎ যে সব ধর্ম গ্রন্থ ,সংবিধান ,আইন-বিধান, বেদ ধর্ম বিহিত নয় এবং ধূর্ত, স্বার্থান্বেষী, নাস্তিকাদি লোকের দ্বারা লিখিত সেগুলো মেনে চলায় কারও কোন কল্যাণ হয় না। অতএব, বেদকে অনুসরণ করো।
ফুটনোটগুলি

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মনুস্মৃতি প্রথম অধ্যায়

  মনুস্মৃতি অধ্যায় ১ (সৃষ্টি ও ধর্ম্ম উৎপত্তি বিষয়) মনুমেকাগ্রমাসীনমভিগম্য মহর্ষযঃ । প্রতিপূজ্য যথান্যাযমিদং বচনমঅব্রুবন্ ।। মনু ১।১ (महर्षय...

Post Top Ad

ধন্যবাদ