পরমাণু বোমা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

23 September, 2018

পরমাণু বোমা


                                             
এটম বোমার জনক হিসেবে পরিচিত মহান বিজ্ঞানী জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার (Julius Robert Oppenheimer) বলেছিলেন- “আমরা আধুনিক ভৌতিক বিজ্ঞানে যা কিছু পায় তা প্রাচীন হিন্দু জ্ঞানের উদাহরণ মাত্র।” জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার কোয়ান্টাম মেকানিসক ও কোয়ান্টাম থিয়োরীর উপর অনেক গবেষণা চালিয়েছিলেন।
জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার সংস্কৃত ভাষা শিখেছিলেন এবং গীতার সম্পূর্ণ অধ্যয়ন করেছিলেন। মেক্সিকোতে প্রথমবার এটোমিক টেস্টের বিস্ফোরণ দেখার পর ওপেনহেইমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। উনি বলেন, আমরা হিন্দু শাস্ত্র ভাগবত গীতার একটা শ্লোক মনে পড়ছে যেখানে ভগবান কৃষ্ণ নিজের আসল স্বরূপ দেখিয়ে অর্জুনকে বলেছনে যে আমি অধর্মের বিনাশ করতে আসা মহাকাল।
কালোহস্মি লোকক্ষয়কৃৎ প্রবৃদ্ধো
লোকান্ সমাহর্তুমিহ প্রবৃত্তঃ। 
ঋতেহপি ত্বাং ন ভবিষ্যন্তি সর্বে
যেহবস্থিতাঃ প্রত্যনীকেষু যোধাঃ।।৩২।।
গীতা-একাদশ-অধ্যায়-বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ
অনুবাদঃ শ্রীভগবান বললেন- আমি লোকক্ষয়কারী প্রবৃদ্ধ কাল এবং এই সমস্ত লোক সংহার করতে এক্ষণে প্রবৃত্ত হয়েছি। তোমরা (পান্ডবেরা) ছাড়া উভয়-পক্ষীয় সমস্ত যোদ্ধারাই নিহত হবে।
জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার এখানে গীতার ১১ তম অধ্যায়ের ৩২ তম শ্লোকের কথা বলেছেন। প্রসঙ্গত জানিয়ে দি, মহাভারতে ব্রমহাস্ত্র এর উল্লেখ পাওয়া যায় যা বর্তমানের পরমাণু বোমার সমকক্ষ বলে মনে করা হয়। ওপেনহেইমার নিজেও এই সম্ভবনার উপর বিশ্বাস করতেন। পরমাণু বোমা পরীক্ষণের পর এক ইউনিভার্সিটিতে উনাকে প্রশ্নঃ করা হয়েছিল যে এটাই কি বিশ্বে প্রথম পারমানবিক বোমার পরীক্ষণ?
উত্তরে জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার বলেছিলেন আধুনিক যুগে এটাই প্রথম পরীক্ষণ। ওপেনহেইমারের এই উত্তর এটার দিকে ইঙ্গিত করেছিল যে ব্রমহাস্ত্ররূপী পরমাণু বোমার ব্যাবহার আগেও হয়েছে। ওপেনহেইমার গীতার প্রতি এতটাই প্রেম করতেন যে উনি সকলকে গীতা পড়ার কথা বলতেন এবং নিজের কাছেও এক কপি গীতা রাখতেন।

জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার  (জন্ম:২২ এপ্রিল, ১৯০৪, নিউ ইয়র্ক সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – মৃত্যু: ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৭, (৬২ বছর) প্রিন্সটন, নিউজার্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান সম্পর্কীয় প্রশাসক ছিলেন। লস এলামোজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে পরিচালক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে আণবিক বোমার উন্নয়নে কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি বার্কলে এলাকায় অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে
র অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত প্রিন্সটনের
ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিরও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিন্তু নিরাপত্তা বিষয়ক শুনানীতে তাঁর বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের পরামর্শকের দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে থেকে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীরা তাঁর স্বপক্ষে অবস্থান নেন। এছাড়াও, রাজনৈতিক এবং নৈতিকতাকে বিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্তে সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দাজ্ঞাপন করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ম্যানহাটন প্রকল্পের সাহায্যে প্রথম আণবিক বোমা
আবিষ্কারের জন্যে এনরিকো ফার্মির
পাশাপাশি তাঁকেও আণবিক বোমার জনকরূপে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ১৬ জুলাই, ১৯৪৫ তারিখে নিউ মেক্সিকোতে ট্রিনিটি টেস্ট নামে পরিচিত প্রথম আণবিক বোমার সফল পরীক্ষামূলক পর্যায়ের পর ওপেনহেইমার পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ভগবদ্গীতা থেকে উদ্বৃতি দিয়ে বলেছিলেন:
'' এখন আমি মৃত্যুর কারণ হতে পারি, বিশ্বকে ধ্বংস করে দিতে পারি। ''
৮ নভেম্বর, ১৯৪৮ তারিখে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তা প্রকাশ করা হয়েছিল। এ কথাই পরবর্তীকালে ১৯৫৮ সালে রবার্ট জাঙ্কের ব্রাইটার দেন এ থাউজেন্ড সানস: এ পার্সোনাল হিস্ট্রি অব দি অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস শীর্ষক পুস্তকে বিবৃত করা হয়েছিল। পুস্তকের একাংশে ওপেনহেইমারের স্বাক্ষাৎকারে ওপেনহেইমার তা পুণরায় ব্যক্ত করেছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন:
২২ এপ্রিল, ১৯০৪ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। জার্মান অভিবাসী পিতা জুলিয়াস ওপেনহেইমার ভাগ্যান্বষণে ১৮৮৮ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে আসেন। টেক্সটাইল শিল্পে আমদানী-রফতানীর ব্যবসা করতেন ও সফলকাম হয়েছিলেন। মা এলা ফ্রাইডম্যান ছিলেন একজন চিত্রকর । ১৯১২ সালে পরিবারটি ১৫৫, রিভারসাই ড্রাইভ, ওয়েস্ট ৮৮তম স্ট্রীটের নিকটবর্তী, ম্যানহাটন আবাসিক এলাকার দ্বাদশ তলায় স্থানান্তরিত হন। পরিবারে পাবলো পিকাসো এবং এডোয়ার্ড ভুইলার্দসহ ভিনসেন্ট ভ্যান গগের কমপক্ষে তিনটি প্রকৃত চিত্রকর্মের সংগ্রহ রয়েছে।
রবার্ট হেইমারের ফ্রাঙ্ক ওপেনহেইমার নামীয় ছোট একটি ভাই ছিল। তিনিও পরবর্তীকালে পদার্থবিদ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক-পূর্ব শ্রেণীতে অধ্যয়রত অবস্থায় ওপেনহেইমার ল্যাটিন, গ্রীক, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠেন। ১৯২৫ সালে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তিনি গবেষণাকর্মের জন্যে ইংল্যান্ড যান। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের
ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে লর্ড আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের তত্ত্বাবধানে আণবিক গঠন বিষয়ে গবেষণা চালান। ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে অবস্থানকালে তিনি পারমাণবিক গবেষণার উন্নয়নে ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময়ের সুযোগ পান। এরপর ম্যাক্স বর্নের ছত্রচ্ছায়াও তিনি অধ্যাপনা করেন। সেখানে তিনি
নিলস বোর এবং পি.এ.এম. দিরাক প্রমূখ প্রথিতযশা পদার্থবিদদের সাহচর্য্য পান। ১৯২৭ সালে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। লেইডেন এবং জুরিখের বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলোয় সংক্ষিপ্ত পরিদর্শন শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন ওপেনহেইমার। এরপর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে অধ্যাপনা করেন।
১৯৩১ সালে তাঁর মাতা মারা যান। ফলে তিনি বাবার কাছাকাছি ছিলেন ও নিয়মিতভাবে ক্যালিফোর্নিয়া ভ্রমণ করতেন। ১৯৩৭ সালে মারা গেলে তিনি ও তাঁর ভাই ফ্রাঙ্ক $৩৯২,৬০২ মার্কিন ডলার উত্তরাধিকারীসূত্রে প্রাপ্ত হন। তিনি তাঁর নিজের সমূদয় অংশ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শিক্ষার্থীদের বৃত্তির জন্য একটি দলিল সম্পাদন করেন।
রাজনৈতিক জীবন:
১৯২০-এর দশকে ওপেনহেইমার নিজেকে বৈশ্বিক বিষয়াবলী থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন ওপেনহেইমার। সংবাদপত্র পাঠ করা কিংবা রেডিও শোনায় আগ্রহবোধ হয়নি তাঁর। কেবলমাত্র আর্নেস্ট লরেন্সের সাথে হাঁটার সময় ১৯২৯ সালের ওয়াল স্ট্রীট বিপর্যয়ের কথা ছয় মাস পর শুনেছেন। এছাড়াও, তিনি ১৯৩৬ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি
নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত কোন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি। কিন্তু ১৯৩৪ সালের পরই তিনি রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। নাজি জার্মানি থেকে চলে আসা জার্মান পদার্থবিদদের জন্যে নিজ বেতনের তিন শতাংশ পরিমাণ সমমানের বার্ষিক $১০০ ডলার অর্থ তাঁদের সহায়তার জন্যে প্রদান করেছেন। ১৯৩৪ সালে ওয়েস্ট কোস্ট ওয়াটারফ্রন্ট স্ট্রাইকে তিনি এবং মেলবা ফিলিপস, বব সার্বারসহ তাঁর কতিপয় ছাত্র মিছিলে অংশ নেন। ওপেনহেইমার সার্বারকে পুণঃপুণঃ বার্কলেতে একটি পদে ঢোকানোর চেষ্টা চালালে বার্জ কর্তৃক আটকানো হয়। বার্জ মনে করেন যে, 'একজন ইহুদীই বিভাগের জন্যে যথেষ্ট।'
জার্মানিতে অ্যাডলফ হিটলারের উত্থানের পরপরই তিনি রাজনীতিতে আগ্রহান্বিত হন। ১৯৩৬ সালে স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় প্রজাতন্ত্রটির পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। ঐ সময় তিনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে তাঁর পিতার মৃত্যুর ফলে তিনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগঠনে যুক্ত হন। জোসেফ স্টালিনের নিয়ন্ত্রণাধীন রুশ বৈজ্ঞানিকগণ তাঁর সদস্যপদ কেড়ে নেয়। এরপর তিনি আর কখনো সংগঠনে যুক্ত হননি। একই সময়ে তিনি জোরপূর্বক সাম্যবাদ গণতান্ত্রিক দর্শনে প্রবেশ করেন।
ম্যানহাটন প্রকল্প:
১৯৩৯ সালে নাজি জার্মানি কর্তৃক
পোল্যান্ড দখল করা হয়। বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এবং লিও জিলার্ড মার্কিন সরকারকে সতর্ক করে দেন যে যদি নাজিরা পারমাণবিক বোমা তৈরী করে তাহলে তা সমগ্র মানবজাতির জন্য ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি ও ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এ প্রেক্ষিতে ওপেনহেইমার প্রকৃতিপ্রদত্ত ইউরেনিয়াম থেকে ইউরেনিয়াম-২৩৫ পৃথকীকরণের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। কেননা, এ ধরণের পারমাণবিক বোমা নির্মাণের জন্যে ইউরেনিয়াম-২৩৫ প্রয়োজন। আগস্ট, ১৯৪২ সালে মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্রিটিশ এবং মার্কিন পদার্থবিদদের নিয়ে পারমাণবিক শক্তির সন্ধানে সংস্থা গঠনের চেষ্টা চালায় যা পরবর্তীকালে ম্যানহাটন প্রকল্প নামে পরিচিত। এর কর্মপন্থা নির্ধারণে ওপেনহেইমারকে প্রকল্প গঠন এবং ল্যাবরেটরির প্রশাসকরূপে মনোনীত করা হয়। ১৯৪৩ সালে নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের সান্তা ফে'র নিকটবর্তী লস অ্যালামোজ এলাকাকে নির্ধারণ করেন। উল্লেখ্য এলাকাটিতে ওপেনহেইমার তাঁর শৈশবকাল অতিক্রম করেন একটি বোর্ডিং স্কুলে।
জার্মানির আত্মসমর্পণের পর ১৬ জুলাই, ১৯৪৫ সালে বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রচেষ্টায় নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের
আমোগোর্ডো এলাকায় প্রথম আণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একই বছরের অক্টোবর মাসে ওপেনহেইমার তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দেন। ১৯৪৭ সালে ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি'র প্রধান হন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সাধারণ পরামর্শক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ কমিটিই ১৯৪৯ সালে হাইড্রোজেন বোমা নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের পরপরই ৯ অক্টোবর, ১৯৪১ সালে প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট আণবিক বোমা নির্মাণে আপদকালীন প্রকল্প অনুমোদন করেন। মে, ১৯৪২ সালে জাতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা কমিটির সভাপতি জেমস বি. কন্যান্ট প্রকল্পের প্রধান হিসেবে রবার্ট ওপেনহেইমারকে নিযুক্ত করেন। ইউরোপীয় পদার্থবিদ ও তাঁর ছাত্র রবার্ট সারবার,
এমিল কোনোপিনস্কি , ফেলিক্স ব্লচ,
হান্স বেটে এবং এডওয়ার্ড টেলারকে নিয়ে আণবিক বোমার জন্যে কি কি করতে হবে তাঁর হিসাব এবং কি কি স্তরে সাজাতে হবে তার নির্দেশনা দেন।
নিরাপত্তা শুনানী:
জে. এডগার হুবারের পরিচালনায়
এফবিআই বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব থেকেই ওপেনহেইমারকে অনুসরণ করে আসছিল। বার্কলেতে সমাজতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার সাথে সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ এবং
কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে তাঁর ভাই ও ক্যাথেরিন পিউনিং হ্যারিসন নামীয় স্ত্রীর সাথে তাঁর নৈকট্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টিই এর প্রধান কারণ। ১৯৪০-এর দশকের শুরুতে তাঁকে তাঁর বাড়ি এবং অফিসে পর্যবেক্ষণ করা হতো, ফোনে নজরদারী এবং ডাক যোগাযোগে ব্যবহৃত চিঠিও খোলা হতো।এছাড়াও, রাজনৈতিক শত্রুরূপে বিবেচিত আণবিক শক্তি সংস্থার সদস্য লুইজ স্ট্রজ কর্তৃক তাঁকে হাইড্রোজেন বোমা উদ্ভাবনে নিষ্ক্রিয়তা; স্ট্রজের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ রফতানীতে বিরুদ্ধাচরণকে 'ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ভিটামিনের চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ' - এ বাক্য প্রয়োগকেও এর জন্যে দায়ী করা হয়।
ব্যাপারটি অস্পষ্টই রয়ে গেছে যে, ওপেনহেইমার ১৯৪২ সালে কিছুসংখ্যক বন্ধুদের সাথে আণবিক অস্ত্রের বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। তাঁর উক্ত বন্ধুবর্গ
সোভিয়েত সরকারের গুপ্তচরবৃত্তির সাথে জড়িত ছিল। এ ঘটনাই পরবর্তীকালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৪ সালে নিরাপত্তাবিষয়ক শুনানীতে এ আলোচনায় অংশগ্রহণকে তিনি মিথ্যায় ভরপুর নামে আখ্যায়িত করেন।
২১ ডিসেম্বর, ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত মার্কিন সামরিক নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিবেদনে তাঁর বিরুদ্ধে অগ্রহণযোগ্যতা এবং অতীতে কমিউনিস্টদের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠে। এছাড়াও, সোভিয়েত গুপ্তরচদের সাথে সম্পর্ক বজায় ও হাইড্রোজেন বোমা নির্মাণে বাঁধার কথা তুলে ধরা হয়। নিরাপত্তা শুনানীতে স্পষ্টভাবে অভিযুক্ত করা যায়নি। কিন্তু, সামরিক নিরাপত্তা বিষয়ে তাঁর অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। এরফলে তাঁর সাথে পারমাণবিক শক্তি কমিশনের পরামর্শক পদের চুক্তিনামা বাতিল করা হয়। এ ঘটনাটি ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে। ম্যানহাটন প্রকল্পে কর্মরত ৪৯৩ জন বিজ্ঞানী একযোগে স্বাক্ষর সহকারে তাদের প্রতিবাদ লিপি প্রেরণ করে।
ওয়ার্নার ভন ব্রাউন কংগ্রেসনাল কমিটিকে ওপেনহেইমারের মতামতকে সংজ্ঞায়িত করেছেন - 'যদি ইংল্যান্ডে তাঁর এ মতামত প্রকাশ করা হতো, তাহলে তিনি নাইট পদবীধারী হতেন।'
আমেরিকার বিজ্ঞানীদের সংগঠন দ্রুততার সাথে তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং এ বিচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ঘটায়। ফলে রবার্ট ওপেনহেইমার বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের প্রতীকিতে পরিণত হন যিনি বৈজ্ঞানিকদের আবিষ্কারের সাথে নৈতিকতাজনিত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়েছেন ও প্রেতাত্মাদের শিকারে পরিণত হয়েছেন। জীবনের বাকী দিনগুলোয় তিনি বিজ্ঞান এবং সমাজের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয়ের লক্ষ্যে কাজ করে যান।
২০ মে, ২০০৯ তারিখে উড্রো উইলসন ইনস্টিটিউটে একটি সেমিনারে
কেজিবি'র সংগ্রহশালা থেকে ভাসিলিয়েভের নোটবইয়ের উপর ব্যাপক বিশ্লেষণ করা হয়। জন আর্ল হেনেজ,
হার্ভে ক্লের এবং আলেকজান্ডার ভাসিলিয়েভের মতে ওপেনহেইমার কখনো সোভিয়েত ইউনিয়নে তথ্য পাচারের সাথে জড়িত ছিলেন না। তবে কেজিবি প্রাণপনে চেষ্টা করেছিল তাঁকে দলে টেনে নেয়ার জন্যে। কিন্তু তারা কখনো সফলকাম হয়নি। ওপেনহেইমার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। বরঞ্চ ম্যানহাটন প্রকল্প থেকে অনেক লোককে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ আচরণের জন্যে বের করে দিয়েছেন তিনি।
সম্মাননা:
১৯৬৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন ওপেনহেইমারকে আণবিক শক্তি কমিশনের প্রদেয় এনরিকো ফার্মি পুরস্কার প্রদান করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ইনস্টিটিউট ফর স্টাডি থেকে অবসর নেন। এর পরের বছরই গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দেহাবসান ঘটে তাঁর।
বৈজ্ঞানিক হিসেবে ওপেনহেইমার তাঁর ছাত্র এবং সহকর্মীদের কাছে প্রথিতযশা
গবেষক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। শিক্ষকতা পেশায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি আধুনিক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রয়েছেন। কারণ তাঁর বৈজ্ঞানিক বিষয়াবলী প্রায়শঃই দ্রুততার সাথে পরিবেশ পাল্টে দিতো। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট কোন একটি বিষয়ে দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত থাকেননি; ফলে তিনি নোবেল পুরস্কারের যোগ্যতা অর্জন করেননি। তারপর কৃষ্ণ গহ্বর সম্পর্কীয় তত্ত্বটি এ পুরস্কারের দাবীদার হতো যদি তিনি বেঁচে থাকতেন যা জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। ৬৭০৮৫ ওপেনহেইমার নামীয় একটি তারাকে তার সম্মানে নামাঙ্কিত করা হয়।


How Bhagwad Gita inspired him

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ