দশম অধ্যায়-বিভূতি-যোগ
শ্রীভগবানুবাচ
শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভগবান্ কহিলেন) [হে] মহাবাহো ! (হে মহাবীর অর্জ্জুন !) ভূয়ঃ এব (পুনরায়) মে (আমার) পরমং (উৎকৃষ্ট) বচঃ (বাক্য) শৃণু (শ্রবণ কর) । যৎ (যেহেতু) প্রীয়মাণায় (প্রেমবান্) তে (তোমাকে) অহম্ (আমি) হিতকাম্যয়া (হিতকামনায়) বক্ষ্যামি (বলিব) ॥১॥
শ্রীভগবান্ বলিলেন—হে মহাবাহো ! পুনর্ব্বার আমার উত্তম বাক্য শ্রবণ কর । যেহেতু প্রিয়পাত্র তোমাকে আমি তোমার মঙ্গল কামনা করিয়াই ইহা বলিব ॥১॥
সুরগণাঃ (দেবতাগণ) মে (আমার) প্রভবং (সর্ব্বোত্তম বা সর্ব্ববিলক্ষণ জন্ম) ন বিদুঃ (জানেন না), মহর্ষয়ঃ ন (মহর্ষিগণও জানেন না) । হি (যেহেতু) অহম্ (আমি) দেবানাং (দেবতাদিগের) মহর্ষীণাং চ (ও মহর্ষিগণের) সর্ব্বশঃ (সর্ব্বপ্রকারেই) আদিঃ (আদি কারণস্বরূপ) ॥২॥
সমস্ত দেবতাগণ আমার প্রকৃষ্ট বা সর্ব্ববিলক্ষণ জন্ম জানেন না, মহর্ষিগণও জানেন না । যেহেতু আমি দেবতাদিগের ও মহর্ষিগণের সর্ব্বপ্রকারেই আদি কারণ ॥২॥
যঃ (যিনি) মাম্ (পরমেশ্বরকে) অজম্ (জন্মরহিত) অনাদিং (কারণ রহিত) লোকমহেশ্বরম্ চ (ও ভূত সকলের মহান্ ঈশ্বর বলিয়া) বেত্তি (জানেন), সঃ (তিনি) মর্ত্ত্যেষু (মনুষ্যগণের মধ্যে) অসংমূঢ়ঃ (মোহ বর্জ্জিত হইয়া) সর্ব্বপাপৈঃ (ভক্তিবিরোধী সমস্ত পাপ হইতে) প্রমুচ্যতে (মুক্ত হন) ॥৩॥
যিনি পরমেশ্বরকে, জন্মরহিত সর্ব্বাদি ও ভূতসকলের মহান্ ঈশ্বর বলিয়া জানেন, তিনিই সমস্ত মনুষ্যলোকের মধ্যে সম্যক্ মোহরহিত হইয়া পাপ সমুদয় হইতে মুক্ত হইয়া থাকেন ॥৩॥
বুদ্ধিঃ (সূক্ষ্মার্থনিশ্চয় সামর্থ্য), জ্ঞানম্ (আত্মা অনাত্ম বিবেক), অসংমোহঃ (ব্যগ্রতার অভাব), ক্ষমা (সহিষ্ণুতা), সত্যং (যথার্থ ভাষণ), দমঃ (বাহ্যেন্দ্রিয় সংযম), শমঃ (অন্তরিন্দ্রিয় সংযম), সুখং (সুখ), দুঃখং (দুঃখ), ভবঃ (জন্ম), অভাবঃ (মৃত্যু), ভয়ং চ (ভয়), অভয়ং এব চ (এবং অভয়) ; অহিংসা (অহিংসা) সমতা (নিজের তুলনায় সর্ব্বত্র সুখ দুঃখ দর্শন), তুষ্টিঃ (সন্তোষ), তপঃ (বেদোক্ত কায়ক্লেশ), দানং (দান), যশঃ (সুখ্যাতি) অযশঃ [চ] (ও অখ্যাতি) ভূতানাং (প্রাণিবর্গের) [এতে] (এই সমস্ত) পৃথগ্বিধাঃ (নানাপ্রকার) ভাবাঃ (ভাব) মত্তঃ এব (আমা হইতেই) ভবন্তি (উৎপন্ন হইয়া থাকে ) ॥৪–৫॥
বুদ্ধি, জ্ঞান, অব্যাকুলতা, ক্ষমা, সত্যভাষণ, বাহ্য ইন্দ্রিয়গণের নিগ্রহ, অন্তরস্থ ইন্দ্রিয়গণের নিগ্রহ, সুখ, দুঃখ, জন্ম, মৃত্যু, ভয় ও অভয়, অহিংসা, সর্ব্বত্র, সমদৃষ্টি, তুষ্টি, তপস্যা দান, যশ ও অযশ, প্রাণিমাত্রের এই সকল ভিন্ন ভিন্ন ভাব আমা হইতেই উৎপন্ন হইয়া থাকে ॥৪–৫॥
সপ্ত মহর্ষয়ঃ (মরিচ্যাদি সপ্ত মহর্ষিগণ) পূর্ব্বে (তাঁহাদরও পূর্ব্ববর্ত্তী) চত্বারঃ (সনকাদি চারিজন) তথা মনবঃ (এবং স্বায়ম্ভুবাদি চতুর্দ্দশ মনুগণ) [এতে] (ইঁহারা সকলেই) মদ্ভাবাঃ (আমার প্রভাব সম্পন্ন) মানসাঃ জাতাঃ (এবং হিরণ্যগর্ভরূপী আমার মন হইতে উৎপন্ন), লোকে (এই পৃথিবীতে) ইমাঃ প্রজাঃ (এই দৃশ্যমান ব্রাহ্মণাদি প্রজাসমূহ) যেষাং (যাঁহাদের অর্থাৎ তাঁহাদেরই বংশজাত পুত্ত্রাদি ক্রমে এই পৃথিবী পরিপূর্ণ হইয়াছে) ॥৬॥
মরিচ্যাদি সপ্ত মহর্ষি, তৎপূর্ব্ববর্ত্তী সনকাদি ব্রহ্মর্ষি চতুষ্টয় এবং স্বায়ম্ভুবাদি চতুর্দ্দশ মনু ইঁহারা সকলেই আমার প্রভাব সম্পন্ন এবং হিরণ্যগর্ভরূপী আমার মন হইতে উৎপন্ন । এই ব্রহ্মাণ্ডে এই সকল দৃশ্যমান ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়াদি প্রজাসমূহই তাঁহাদের বংশজাত ॥৬॥
যঃ (যিনি) মম (আমার) এতাং (এই) বিভূতিং (বিভূতি) যোগং চ (ও ভক্তিযোগ) তত্ত্বতঃ (যথার্থরূপে) বেত্তি (জ্ঞাত আছেন), সঃ (তিনি) অবিকল্পেন (নিশ্চল) যোগেন (তত্ত্বজ্ঞান দ্বারা) যুজ্যতে (যুক্ত হন) ; অত্র (এই বিষয়ে) ন সংশয়ঃ [অস্তি] (সন্দেহ নাই) ॥৭॥
যিনি আমার এই বিভূতি ও ভক্তিযোগ সম্যক্রূপে অবগত আছেন, তিনি নিশ্চল তত্ত্বজ্ঞান দ্বারা ভক্তিযোগের অনুষ্ঠান করেন । এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই ॥৭॥
অহং (আমি) সর্ব্বস্য (ব্রহ্ম, পরমাত্মা, ভগবদাদি সর্ব্ব কারণেরও) প্রভবঃ (উৎপত্তি অদ্বয়জ্ঞান স্বয়ং ভগবান্), মত্তঃ (আমা হইতে) সর্ব্বং (চিদচিৎ জগচ্চেষ্টা ও বেদাদি শাস্ত্র প্রভৃতি) প্রবর্ত্ততে (প্রবর্ত্তিত হয়), ইতি (এই রহস্য) মত্বা (উপলব্ধি করিয়া) বুধাঃ (সুমেধগণ) ভাবসমন্বিতাঃ (দাস্যসখ্যাদিভাবযুক্ত হইয়া) মাং (আমাকে) ভজন্তে (ভজন করেন) ॥৮॥
আমি ব্রহ্ম, পরমাত্মা ও নারায়ণেরও আকরতত্ত্ব অদ্বয়জ্ঞান-স্বরূপ কৃষ্ণ, আমা হইতেই চিদচিদ্ বিলাসময় বিশ্ব, তচ্চেষ্টা ও উদ্দেশ্য সাধ্য-সাধনময় বেদাদি শাস্ত্র সমস্তই প্রবর্ত্তিত—এই রহস্য বিচারপর সুমেধগণ ধর্ম্মাধর্ম্ম সমুদয় উল্লঙ্ঘন পূর্ব্বক রাগভক্তি অবলম্বনে আমার ভজন করিয়া থাকেন ॥৮॥
[তে] (তাঁহারা) মচ্চিত্তাঃ (আমাতে নিবেদিতাত্মা) মদ্গতপ্রাণাঃ (মদাত্মভূতা) পরস্পরম্ (পরস্পর) বোধয়ন্তঃ (স্বরূপগত ভাব বিনিময় করিতে করিতে) মাং কথয়ন্তঃ চ [সন্তঃ] (আমার কথা আলোচনা করিতে করিতে) নিত্যং (সর্ব্বদা) তুষ্যন্তি চ (তুষ্ট হন) রমন্তি চ (এবং মধুর রস আস্বাদন করেন) ॥৯॥
আমাতে নিবেদিতাত্মা ও মদাত্মভূত ভক্তগণ পরস্পর আমার কথা আলোচনা ও আমার সম্বন্ধীয়-ভাবের আদান প্রদান করিতে করিতে সর্ব্বদা স্বরূপগত বাৎসল্য মাধুর্য্যাদি রস আস্বাদন করিয়া পরিতোষ লাভ করেন ॥৯॥
[অহং] (আমি) সততযুক্তানাং (নিত্য আমার সংযোগ কামনাশীল) প্রীতিপূর্ব্বকম্ (ও স্নেহ পূর্ব্বক) ভজতাং (ভজনকারী) তেষাং (তাঁহাদিগকে) তং (সেই) বুদ্ধিযোগং (বুদ্ধিযোগ) দদামি (দান করি) যেন (যদ্দ্বারা) তে (তাঁহারা) মাম্ (আমাকে) উপযান্তি (নিকটে পাইতে পারেন) ॥১০॥
আমি সেই সর্ব্বদা আমার আত্মভূত ও প্রেমপূর্ব্বক ভজনশীল ভক্তগণকে এইরূপ বুদ্ধিযোগ প্রদান করি, যদ্দ্বারা তাঁহারা আমাতে উপগত হন বা বিবিধ অন্তরঙ্গ সেবাপ্রাপ্ত হন ॥১০॥
তেষাম্ এব (তাঁহাদেরই) অনুকম্পার্থম্ (প্রেমাধীন হইয়াই) অহম্ (আমি) আত্মভাবস্থঃ [সন্] (তাঁদের অন্তরে প্রকাশিত হইয়া) ভাস্বতা (উজ্জ্বল) জ্ঞানদীপেন (মৎসাক্ষাৎকার রূপ জ্ঞান দ্বারা) অজ্ঞানজং (অদর্শন জন্য) তমঃ (মোহরূপ অন্ধকার) নাশয়ামি (নাশ করি) ॥১১॥
তাঁহারা জ্ঞানশূন্য প্রেমভক্তির পরমাবস্থায় ইষ্টবিরহজনিত ভ্রম-মোহাদি তমোভাবাক্রান্ত হইয়া পড়িলে আমি প্রেমাধীন হইয়া তাঁহাদের অন্তরে স্বরূপসাক্ষাৎকাররূপ উজ্জ্বল জ্ঞানদ্বারা বিরহদুঃখরূপ তমোনাশ করিয়া থাকি ॥১১॥
অথবা
তাঁহাদেরই অনুকম্পার্থ আমি জীবজগতের হৃদয়স্থ হইয়া উজ্জ্বল জ্ঞান দ্বারা অজ্ঞানরূপ অন্ধকার নাশ করিয়া থাকি ॥১১॥
অর্জ্জুন উবাচ (অর্জ্জুন বলিলেন) ভবান্ (আপনি) পরমং (পরম) পবিত্রং (অবিদ্যামালিন্যনাশক) পরং ধাম (সর্ব্বোৎকৃষ্ট শ্যামসুন্দর বপুই) পরং ব্রহ্ম (পরমব্রহ্ম অর্থাৎ সাক্ষাৎ ভগবান্) [অহং মন্যে] (আমি মনে করি), সর্ব্বে ঋষয়ঃ (সকল ঋষিগণ) দেবর্ষিঃ নারদঃ (দেবর্ষি নারদ) অসিতঃ (অসিত) দেবলঃ (দেবল) তথা ব্যাসঃ (এবং মহর্ষি ব্যাস সকলেই) ত্বাম্ (আপনাকে) শাশ্বতং পুরুষং (সনাতন পুরুষ) দিব্যম্ (স্বয়ং প্রকাশ) আদিদেবম্ (আদিদেব) অজং (জন্মরহিত) বিভুম্ (ও সর্ব্বব্যাপক) আহুঃ (বলিয়া থাকেন), স্বয়ং চ এব (এবং আপনি নিজেই) মে (আমাকে) ব্রবীষি (বলিতেছেন) ॥১২–১৩॥
অর্জ্জুন কহিলেন—হে ভগবান্ আপনি পরব্রহ্ম, পরমাশ্রয় ও পরমপাবন ! দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল ও ব্যাসাদি প্রধান প্রধান মহর্ষিগণ সকলেই আপনাকে স্বয়ংপ্রকাশ স্বয়ম্ভু, সমগ্র ঐশ্বর্য্যের মূলীভূত লীলাময় সর্ব্বাদি সনাতন পুরুষোত্তমরূপে বর্ণন করিয়াছেন, এবং আপনি নিজেও তাহাই বলিতেছেন ॥১২–১৩॥
[হে] কেশব ! (হে কেশব !) মাং (আমাকে) যৎ (‘ন মে বিদুঃ’ ইত্যাদি শ্লোক দ্বারা যাহা) বদসি (বলিতেছেন) এতৎ সর্ব্বম্ (এ সমস্তই) ঋতং (যথার্থ বলিয়া) মন্যে (মানি) । হি (ইহা নিশ্চয় যে) [হে] ভগবন্ (হে ভগবন্) তে (আপনার) ব্যক্তিং (পরিচয়) ন দেবাঃ দানবাঃ (কি দেবগণ, কি দানবগণ কেহই) ন বিদুঃ (জানেন না) ॥১৪॥
হে কেশব ! ‘ন মে বিদুঃ’ ইত্যাদি বাক্যের দ্বারা আমাকে যাহা বলিতেছেন সে সমুদয়ই আমি যথার্থ বলিয়া মানি । হে ভগবন্ ! ইহা নিশ্চিত যে দেবগণ বা দানবগণের মধ্যে কেহই আপনার পরিচয় জানেন না ॥১৪॥
[হে] পুরুষোত্তম ! (হে পুরুষোত্তম !) [হে] ভূতভাবন ! (হে জগৎপিতঃ !) [হে] ভূতেশ ! (হে ভূতনাথ !) [হে] দেবদেব ! (হে দেবারাধ্য !) [হে] জগৎপতে (হে জগন্নাথ !) ত্বং (আপনি) স্বয়ম্ এব (নিজেই) আত্মনা (চিচ্ছক্তি দ্বারা) আত্নানং (আপনাকে) বেত্থ (জানিতেছেন) ॥১৫॥
হে পুরুষোত্তম ! হে জগৎপিতা ! হে ভূতনাথ ! হে দেবদেব ! হে জগৎপতে! আপনি স্বয়ংই নিজ চিচ্ছক্তি দ্বারা আপনাকে জানিতেছেন ॥১৫॥
ত্বং (আপনি) যাভিঃ (যে যে) বিভূতিভিঃ (ঐশ্বর্য্য দ্বারা) ইমান্ (এই) লোকান্ (লোক সমূহ) ব্যাপ্য (ব্যাপিয়া) তিষ্ঠসি (রহিয়াছেন), [তাঃ] (সেই) দিব্যাঃ (উৎকৃষ্ট) আত্মবিভূতয়ঃ (স্বকীয় ঐশ্বর্য্য সকল) অশেষেণ (সবিশেষ ভাবে) [ত্বং] হি বক্তং অর্হসি (একমাত্র আপনিই বলিতে সমর্থ) ॥১৬॥
আপনি যে যে বিভূতি দ্বারা এই লোক সকল ব্যাপিয়া অবস্থান করিতেছেন, সেই সমুদয় অলৌকিক আত্ম-বিভূতিগুলি সম্পূর্ণরূপে আমাকে অনুগ্রহ পূর্ব্বক বলুন ॥১৬॥
[হে] যোগিন্ ! (হে যোগমায়াধিপতে !) সদা (সর্ব্বদা) কথং (কিরূপে) পরিচিন্তয়ন্ (সর্ব্ব প্রকারে চিন্তা করিয়া) অহং (আমি) ত্বাং (আপনাকে) বিদ্যাম্ (জানিতে পারিব ?) [হে] ভগবন্ ! (হে ভগবন্ !) কেষু কেষু চ (এবং কোন্ কোন্) ভাবেষু (পদার্থ সমূহে) [ত্বং] (আপনি) ময়া (আমা কর্ত্তৃক) চিন্ত্যঃ অসি (চিন্তনীয়) ॥১৭॥
হে যোগমায়াপতে ভগবন্ ! কিরূপে সর্ব্বদা সর্ব্বপ্রকারে চিন্তা করিয়া আমি আপনাকে জানিবে এবং কোন্ কোন্ পদার্থ সকলে আমি আপনার চিন্তনরূপ ভক্তি আচরণ করিব ? ॥১৭॥
[হে] জনার্দ্দন ! (হে জনার্দ্দন !) আত্মনঃ (আপনার) যোগং (ভক্তিযোগ) বিভূতিং চ (ও বিভূতি) ভূয়ঃ (পুনরায়) বিস্তরেণ (বিস্তৃতভাবে) কথয় (বলুন) । হি (যেহেতু) অমৃতম্ (আপনার অমৃতময় বাক্য) শৃণ্বতঃ (শ্রবণ করিয়া) মে (আমার) তৃপ্তিঃ (তৃপ্তি) ন অস্তি (হইতেছে না) ॥১৮॥
হে জনার্দ্দন ! আপনার যোগ ও বিভূতি সকল পুনর্ব্বার সবিস্তারে বলুন । যেহেতু আপনার এই সকল উপদেশরূপ অমৃতময়বাক্য শ্রবণ করিয়া আমার তৃপ্তি হইতেছে না ॥১৮॥
শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভগবান্ বলিলেন) হন্ত কুরুশ্রেষ্ঠ ! (ওহে কুরুশ্রেষ্ঠ !) দিব্যাঃ (অলৌকিক) আত্মবিভূতয়ঃ (প্রপঞ্চ চিচ্ছক্তিজাত প্রকটিত নিজ ঐশ্বর্য্য সমূহ) প্রাধান্যতঃ (প্রধান প্রধান রূপে) তে (তোমাকে) কথয়িষ্যামি (বলিব) । হি (যেহেতু) মে (আমার) বিস্তরস্য (বিস্তৃত বিভূতির) অন্তঃ (শেষ) ন অস্তি (নাই) ॥১৯॥
শ্রীভগবান্ কহিলেন—ওহে কুরুশ্রেষ্ঠ অর্জ্জুন ! আমার অলৌকিক চিচ্ছক্তিজাত প্রপঞ্চ প্রকটিত ঐশ্বর্য্যসকল প্রধান প্রধান রূপেই তোমার নিকট বলিতেছি ; যেহেতু আমার বিস্তৃত বিভূতি সমূহের সীমা নাই ॥১৯॥
[হে] গুড়াকেশ ! (হে জিতনিদ্র !) অহম্ (আমি) সর্ব্বভূতাশয়স্থিতঃ (সমস্ত জীবের অন্তঃকরণে অবস্থিত) আত্মা (পরমাত্মা) । অহম্ এব চ (এবং আমিই) ভূতানাম্ (প্রাণিগণের) আদিঃ (জন্ম), মধ্যং চ (ও স্থিতি) অন্তঃ চ (এবং নাশের হেতু) ॥২০॥
হে গুড়াকেশ ! আমি সমস্ত জীবের অন্তঃকরণে নিয়ামকরূপে অবস্থিত পরমাত্মা এবং আমিই ভূতগণের জন্ম, স্থিতি ও সংহারের কারণ ॥২০॥
আদিত্যানাম্ (দ্বাদশ আদিত্যগণের মধ্যে) অহং (আমি) বিষ্ণুঃ (বিষ্ণু নামক আদিত্য), জ্যোতিষাং (প্রকাশকগণের মধ্যে) অংশুমান্ (মহাকিরণশালী) রবিঃ (সূর্য্য), মরুতাম্ (বায়ুগণের মধ্যে) মরীচিঃ (মরীচি নামক বায়ু) নক্ষত্রাণাম্ (নক্ষত্রগণের মধ্যে) অহং (আমি) শশী (চন্দ্র) অস্মি (হই) ॥২১॥
আমি দ্বাদশ আদিত্যগণের মধ্যে বিষ্ণুনামক আদিত্য, জ্যোতিষ্কগণের মধ্যে প্রচুর কিরণশালী সূর্য্য, বায়ুগণের মধ্যে মরীচি নামক বায়ু, এবং নক্ষত্রগণের মধ্যে আমি চন্দ্ররূপে আছি ॥২১॥
[অহং] (আমি) বেদানাং (বেদগণের মধ্যে) সামবেদঃ (সামবেদ) অস্মি (হই), দেবানাম্ (দেবতাগণের মধ্যে) বাসবঃ (ইন্দ্র) অস্মি (হই), ইন্দ্রিয়াণাং (ইন্দ্রিয়গণের মধ্যে) মনঃ (মন) অস্মি (হই), ভূতানাম্ [চ] (এবং ভূতগণের মধ্যে) চেতনা (জ্ঞানশক্তি) অস্মি (হই) ॥২২॥
আমি বেদগণের মধ্যে সামবেদ, দেবগণের মধ্যে ইন্দ্র, এবং প্রাণিগণের মধ্যে জ্ঞান শক্তি ॥২২॥
[অহং] (আমি) রুদ্রাণাং (একাদশ রুদ্রগণের মধ্যে) শঙ্করঃ (শিব) যক্ষরক্ষসাম্ চ (এবং যক্ষ ও রক্ষোগণের মধ্যে) বিত্তেশঃ (কুবের) অস্মি (হই) । বসূনাং (অষ্টবসু মধ্যে) পাবকঃ (অগ্নি), শিখরিণাম্ চ (এবং পর্ব্বত সমূহ মধ্যে) অহম্ (আমি) মেরুঃ (সুমেরু) অস্মি (হই) ॥২৩॥
আমি একাদশ রুদ্রগণের মধ্যে শঙ্কর, এবং যক্ষ ও রক্ষোগণের মধ্যে কুবের । আমি অষ্টবসু মধ্যে অগ্নি, এবং পর্ব্বতসমূহ মধ্যে সুমেরু পর্ব্বত ॥২৩॥
[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) মাং (আমাকে) পুরোধসাং (পুরোহিতগণের মধ্যে) মুখ্যং (প্রধান) বৃহস্পতিম্ (বৃহস্পতি বলিয়া) বিদ্ধি (জানিবে) । অহম্ (আমি) সেনানীনাম্ (সেনাপতিগণের মধ্যে) স্কন্দঃ (কার্ত্তিকেয়) সরসাম্ [চ] (এবং জলাশয়গণ মধ্যে) সাগরঃ (সমুদ্র) অস্মি (হই) ॥২৪॥
হে পার্থ ! আমাকে পুরোহিতগণের মধ্যে প্রধান—বৃহস্পতি বলিয়া জানিও । আমি সেনাপতিগণের মধ্যে কার্ত্তিকেয়, এবং জলাশয় সমূহ মধ্যে সমুদ্র ॥২৪॥
অহং (আমি) মহর্ষীণাং (মহর্ষিগণের মধ্যে) ভৃগুঃ (ভৃগু), গিরাম্ (শব্দ সমূহের মধ্যে) একম্ অক্ষরম্ (এক অক্ষর প্রণব) অস্মি (হই) । যজ্ঞানাং (যজ্ঞ সকলের মধ্যে) জপযজ্ঞঃ (জপরূপ যজ্ঞ) স্থাবরাণাং [চ] (এবং স্থাবরগণের মধ্যে) হিমালয়ঃ (হিমালয় পর্ব্বত) অস্মি (হই) ॥২৫॥
আমি মহর্ষিগণের মধ্যে ভৃগু, বাক্য সমুদয়ের মধ্যে একাক্ষর প্রণব, যজ্ঞ সকলের মধ্যে জপযজ্ঞ এবং স্থাবরগণের মধ্যে হিমালয় পর্ব্বত ॥২৫॥
[অহং] (আমি) সর্ব্ববৃক্ষাণাং (বৃক্ষ সকলের মধ্যে) অশ্বত্থঃ (অশ্বত্থ), দেবর্ষীণাং (দেবর্ষিগণের মধ্যে) নারদঃ (নারদ), গন্ধর্ব্বাণাং (গন্ধর্ব্বগণের মধ্যে) চিত্ররথঃ (চিত্ররথ), সিদ্ধানাং চ (এবং সিদ্ধগণের মধ্যে) কপিলঃ মুনিঃ (কপিল মুনি) ॥২৬॥
আমি বৃক্ষ সমূহ মধ্যে অশ্বত্থ, দেবর্ষিগণের মধ্যে নারদ, গন্ধর্ব্বগণের মধ্যে চিত্ররথ এবং সিদ্ধগণের মধ্যে কপিল মুনি ॥২৬॥
মাম্ (আমাকে) অশ্বানাং (অশ্বগণের মধ্যে) অমৃতোদ্ভবম্ (অমৃত-নিমিত্ত মন্থন হইতে জাত) উচ্চৈঃশ্রবসম্ (উচ্চৈঃশ্রবা), গজেন্দ্রাণাং (হস্তিগণের মধ্যে) ঐরাবতং (ঐরাবত), নরাণাং চ (এবং মনুষ্যগণের মধ্যে) নরাধিপম্ (রাজা বলিয়া) বিদ্ধি (জানিবে) ॥২৭॥
আমাকে অশ্বগণ মধ্যে অমৃত মন্থন সময়ে উত্থিত উচ্চৈঃশ্রবা হস্তিসমূহের মধ্যে ঐরাবত এবং মনুষ্যসমূহের মধ্যে রাজা বলিয়া জানিবে ॥২৭॥
অহং (আমি) আয়ুধানাম্ (অস্ত্রগণের মধ্যে) বজ্রং (বজ্র), ধেনূনাম্ (ধেনুগণের মধ্যে) কামধুক্ অস্মি (কামধেনু), [কন্দর্পাণাং] (কন্দর্পগণের মধ্যে) প্রজনঃ (সন্তান উৎপত্তি হেতু) কন্দর্পঃ অস্মি (কামদেব), সর্পাণাম্ চ (এবং একমস্তকবিশিষ্ট সবিষ সর্পগণের মধ্যে) বাসুকিঃ অস্মি (সর্পরাজ বাসুকি) ॥২৮॥
আমি অস্ত্রগণের মধ্যে বজ্র ও গাভীগণের মধ্যে কামধেনু । কন্দর্পগণের মধ্যে সন্তান উৎপাদক কামদেব এবং এক মস্তকবিশিষ্ট সবিষ সর্পসমূহ মধ্যে সর্পরাজ বাসুকি ॥২৮॥
অহম্ (আমি) নাগানাং (অনেক মস্তকবিশিষ্ট বিষহীন নাগগণের মধ্যে) অনন্তঃ (অনন্ত নাগ), যাদসাম্ চ (এবং জলচারিগণের মধ্যে) বরুণঃ অস্মি (বরুণদেব) । পিতৄণাম্ (পিতৃগণের মধ্যে) অহম্ (আমি) অর্য্যমা (অর্য্যমা), সংযমতাম্ চ (এবং দণ্ডকারিগণের মধ্যে) যমঃ অস্মি (যমরাজ) ॥২৯॥
আমি অনেক মস্তকবিশিষ্ট বিষহীন নাগগণের মধ্যে অনন্ত নাগ, এবং জলচারিগণের মধ্যে বরুণদেব । আমি পিতৃগণের মধ্যে অর্য্যমা, এবং দণ্ডবিধানকারিগণের মধ্যে যমরাজ ॥২৯॥
অহম্ (আমি) দৈত্যানাং (দৈত্যগণের মধ্যে) প্রহ্লাদঃ (প্রহ্লাদ), কলয়তাম্ চ (এবং বশীকারকদিগের মধ্যে) কালঃ অস্মি (কাল) । অহং (আমি) মৃগাণাং চ (পশু সমূহের মধ্যে) মৃগেন্দ্রঃ (সিংহ), পক্ষিণাম্ চ (এবং পক্ষিগণের মধ্যে) বৈনতেয়ঃ (গরুড়) ॥৩০॥
আমি দৈত্যগণের মধ্যে প্রহ্লাদ, এবং বশকারিগণের মধ্যে কাল । আমি পশু সকলের মধ্যে সিংহ, এবং পক্ষি সকলের মধ্যে গরুড় ॥৩০॥
অহম্ (আমি) পবতাম্ (পবিত্রকারী বা বেগবান্ বস্তুগণের মধ্যে) পবনঃ (পবন), শস্ত্রভৃতাম্ (শস্ত্রধারিবীরগণ মধ্যে) রমাঃ অস্মি (পরশুরাম) । ঝষাণাং (মৎস্যসমূহ মধ্যে) মকরঃ অস্মি (আমি মকর), স্রোতসাম্ চ (এবং নদীগণের মধ্যে) জাহ্নবী অস্মি (আমি জাহ্নবী) ॥৩১॥
আমি পবিত্রকারী বা বেগবান্ বস্তুগণের মধ্যে বায়ু, শস্ত্রধারী বীরগণ মধ্যে পরশুরাম, মৎস্য সমূহের মধ্যে মকর এবং নদী সমূহের মধ্যে গঙ্গা ॥৩১॥
[হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) সর্গাণাম্ (আকাশাদি সৃষ্টবস্তুসমূহের) আদিঃ (সৃষ্টি), অন্তঃ (সংহার) মধ্যং চ (ও স্থিতি) অহম্ এব (আমিই), বিদ্যানাং (সমস্ত বিদ্যার মধ্যে) অধ্যাত্মবিদ্যা (আত্মবিদ্যা), প্রবদতাম্ চ (এবং তর্ক বা বিচারকারিগণের মধ্যে) অহম্ (আমি) বাদঃ (তত্ত্বনির্ণায়ক বিচার) ॥৩২॥
হে অর্জ্জুন ! আকাশাদি সৃষ্ট বস্তুগণের সৃষ্টি, প্রলয় ও স্থিতি আমিই । সমুদয় বিদ্যার মধ্যে আত্মজ্ঞান, এবং তর্ক বা বিচারকারিগণের বাদ বা জল্প ও বিতণ্ডা মধ্যে আমি বাদ স্বরূপ ॥৩২॥
[অহং] (আমি) অক্ষরাণাম্ (বর্ণ সকলের মধ্যে) অকারঃ (অকার), সামাসিকস্য চ (এবং সমাস সমূহ মধ্যে) দ্বন্দ্বঃ অস্মি (দ্বন্দ্বসমাস), অহম্ এব (আমিই) অক্ষয়ঃ (প্রবাহস্বরূপ অনন্ত) কালঃ (কাল), [স্রষ্টৄণাং চ] (এবং সৃষ্টিকারিগণের মধ্যে) বিশ্বতোমুখঃ (চতুর্ম্মুখ) ধাতা (ব্রহ্মা) ॥৩৩॥
আমি অকারাদি বর্ণ সকলের মধ্যে অকার এবং সমাসগণের মধ্যে দ্বন্দ্বসমাস । আমিই প্রবাহস্বরূপ অনন্তকাল, এবং সৃষ্টিকারিসকলের মধ্যে চতুর্ম্মুখ ব্রহ্মা ॥৩৩॥
অহম্ (আমি) [হরণকারিণাং] (হরণকারিদিগের মধ্যে) সর্ব্বহরঃ (সর্ব্বস্মৃতি নাশকারী) মৃত্যুঃ (মৃত্যু), ভবিষ্যতাম্ চ (ও ভাবি ষড়্বিধ প্রাণি-বিকার মধ্যে) উদ্ভবঃ (জন্মরূপ আদিবিকার), নারীণাং চ (এবং নারীগণের মধ্যে) কীর্ত্তিঃ (কীর্ত্তি) শ্রীঃ (কান্তি) বাক্ (সংস্কৃত বাণী) স্মৃতিঃ (স্মৃতিশক্তি) মেধা (শাস্ত্রার্থাবধারণশক্তি) ধৃতিঃ (ধৈর্য্যশক্তি) ক্ষমা চ (এবং ক্ষমারূপিনী সপ্ত ধর্ম্মপত্নী) ॥৩৪॥
আমি হরণকারিগণের মধ্যে সর্ব্বস্মৃতি নাশকারী মৃত্যু, ও ভাবি ষড়্বিধ প্রাণি-বিকার মধ্যে জন্মরূপ প্রথমবিকার, এবং নারীগণের মধ্যে কীর্ত্তি, শ্রী, বাণী, স্মৃতি, মেধা, ধৃতি এবং ক্ষমা রূপিণী সপ্ত ধর্ম্মপত্নী ॥৩৪॥
অহম্ (আমি) সাম্নাং (সামবেদীয় মন্ত্র সকলের মধ্যে) বৃহৎসাম (ইন্দ্রস্তুতিরূপ মন্ত্র বিশেষ) তথা ছন্দসাম্ (এবং ছন্দোবদ্ধ মন্ত্রগণের মধ্যে) গায়ত্ত্রী (গায়ত্ত্রী মন্ত্র) । মাসানাং (মাসসমূহের মধ্যে) অহম্ (আমি) মার্গশীর্ষঃ (অগ্রহায়ণ মাস) ঋতূনাং [চ] (এবং ঋতুগণের মধ্যে) কুসুমাকরঃ (বসন্ত) ॥৩৫॥
আমি সামবেদীয় মন্ত্র সকলের মধ্যে ইন্দ্রস্তুতিরূপ বৃহৎসাম, এবং ছন্দোবদ্ধ মন্ত্রগণের গায়ত্ত্রীচ্ছন্দ । মাস সমূহের মধ্যে আমি অগ্রহায়ণ মাস এবং ঋতুগণের মধ্যে বসন্ত ঋতু ॥৩৫॥
অহম্ (আমি) ছলয়তাম্ (পরস্পর বঞ্চনাকারিগণের সম্বন্ধে) দূত্যং (দ্যূতক্রীড়া), তেজস্বিনাম্ (তেজস্বিগণের সম্বন্ধে) তেজঃ অস্মি (প্রভাব), অহম্ (আমি) [জেতৄণাং] (বিজয়িগণের সম্বন্ধে) জয়ঃ অস্মি (জয়স্বরূপ), [অহং ব্যবসায়িনাং] (আমি উদ্যমশীলগণের সম্বন্ধে) ব্যবসায়ঃ (অধ্যবসায়), সত্ত্ববতাম্ [চ] (এবং বলবান্গণের সম্বন্ধে) সত্ত্বং অস্মি (বলস্বরূপ) ॥৩৬॥
আমি পরস্পর বঞ্চনাকারিগণের সম্বন্ধে পাশা খেলা ও তেজস্বিগণের সম্বন্ধে প্রভাব । আমি বিজয়িগণের সম্বন্ধে জয়স্বরূপ, উদ্যমশীলগণের সম্বন্ধে অধ্যবসায়, এবং বলবান্গণের সম্বন্ধে বলস্বরূপ ॥৩৬॥
অহং (আমি) বৃষ্ণীনাং (যাদবগণের মধ্যে) বাসুদেবঃ (শ্রীবাসুদেব) পাণ্ডবানাং (পাণ্ডবগণের মধ্যে) ধনঞ্জয়ঃ (অর্জ্জুন) মুনীনাম্ (মুনিগণের মধ্যে) ব্যাসঃ (ব্যাসদেব) কবীনাম্ অপি (এবং শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতগণ মধ্যে) উশনাঃ কবিঃ অস্মি (পণ্ডিত শুক্রাচার্য্য) ॥৩৭॥
আমি যাদবগণের মধ্যে বাসুদেব, পাণ্ডবগণের মধ্যে অর্জ্জুন, মুনিগণের মধ্যে ব্যাসদেব, এবং শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতগণের মধ্যে পণ্ডিত শুক্রাচার্য্য ॥৩৭॥
[অহং] (আমি) দময়তাম্ (দণ্ডকারিগণের সম্বন্ধে) দণ্ডঃ অস্মি (দণ্ড), জিগীষতাম্ (এবং জয়েচ্ছুগণের সম্বন্ধে) নীতিঃ অস্মি (সামাদি উপায়রূপা নীতি) । অহম্ (আমি) গুহ্যানাং (গোপ্য সকলের মধ্যে) মৌনং (মৌনভাব) জ্ঞানবতাম্ এব চ (এবং জ্ঞানবান্গণের সম্বন্ধে) জ্ঞানং অস্মি (জ্ঞান) ॥৩৮॥
আমি দণ্ডকারিগণের সম্বন্ধে দণ্ড, এবং জয়েচ্ছুগণের সম্বন্ধে সামাদি উপায়রূপা নীতি । আমি গোপনীয় সকলের মধ্যে মৌনীভাব, এবং জ্ঞানিদের সম্বন্ধে জ্ঞান ॥৩৮॥
[হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) যৎ চ (আর যাহা) সর্ব্বভূতানাং (ভূত সকলের) বীজং (মূল কারণ) তৎ অপি (তাহাও) অহম্ (আমি) ময়া বিনা (আমাকে পরিত্যাগ করিয়া) যৎ স্যাৎ (যাহা হইতে পারে ) তৎ (সেরূপ) চরাচরম্ (স্থাবর ও জঙ্গম) ভূতং (কোনও বস্তু বা জীব) ন অস্তি (নাই) ॥৩৯॥
হে অর্জ্জুন ! আর যাহা যাহা সকল ভূতগণের উৎপত্তির কারণ বলিয়া কথিত হয় সে সকলই আমি । আমাভিন্ন যাহা হইতে পারে তাদৃশ স্থাবর বা জঙ্গম কোন বস্তু বা জীব নাই ॥৩৯॥
[হে] পরন্তপ ! (হে শত্রুতাপন !) মম (আমার) দিব্যানাং (অলৌকিক) বিভূতীনাং (বিভূতি সমূহের) অন্তঃ (সীমা) ন অস্তি (নাই) । এষঃ তু (কিন্তু এই) বিভূতেঃ (বিভূতির) বিস্তরঃ (বাহুল্য) উদ্দেশতঃ (সংক্ষেপেই) ময়া (আমা কর্ত্তৃক) প্রোক্তঃ (কথিত হইল) ॥৪০॥
হে পরন্তপ ! আমার উৎকৃষ্ট বিভূতি সকলের অন্ত নাই ; কেবলমাত্র তোমার অবগতির জন্যই বিভূতিগণের এই বিস্তার নামমাত্র আমি তোমার নিকট বর্ণন করিলাম ॥৪০॥
যৎ যৎ (যে যে) সত্ত্বং এব (বস্তুই) বিভূতিমৎ (ঐশ্বর্য্যযুক্ত), শ্রীমৎ (সৌন্দর্য্য বিশিষ্ট), ঊর্জ্জিতম্ বা (অথবা বল প্রভাবাদির আধিক্যবিশিষ্ট) তৎ তৎ এব (সেই সমস্ত বস্তুই) মম (আমার) তেজোঽংশসম্ভবম্ (প্রভাবের অংশ হইতে উৎপন্ন বলিয়া) ত্বং (তুমি) অবগচ্ছ (জানিবে) ॥৪১॥
যে যে বস্তুই ঐশ্বর্য্যযুক্ত, সৌন্দর্য্যবিশিষ্ট অথবা বলপ্রভাবাদির আধিক্যবিশিষ্ট সেই সমুদয় বস্তুই আমার শক্তির অংশ হইতে উৎপন্ন বলিয়া তুমি জানিবে ॥৪১॥
[হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) অথবা (অথবা) এতেন (এই) বহুনা (পৃথক্ পৃথক্ উপদিষ্ট) জ্ঞাতেন (জ্ঞানের দ্বারা) তব (তোমার) কিং ? (কি প্রয়োজন ?) অহম্ (আমি) ইদং (এই ) কৃৎস্নম্ (চিৎ অচিৎ সমস্ত) জগৎ (বিশ্ব) একাংশেন (প্রকৃতির অন্তর্যামী পুরুষরূপ এক অংশ দ্বারা) বিষ্টভ্য (ধারণ করিয়া) স্থিতঃ (অবস্থিত) [অস্মি] (রহিয়াছি) ॥৪২॥
অথবা হে অর্জ্জুন ! আমার বিভূতির এই বিস্তৃত জ্ঞানে তোমার কি প্রয়োজন ? আমি প্রকৃতির অন্তর্যামী কারণার্ণবশায়ী পুরুষরূপ আমার এক অংশ দ্বারা এই স্থাবরজঙ্গমাত্মক বিশ্বকে ধারণ করিয়া অবস্থান করিতেছি ॥৪২॥
ইতি শ্রীমহাভারতে শতসাহস্র্যাং সংহিতায়াং বৈয়াসিক্যাং ভীষ্মপর্ব্বণি শ্রীমদ্ভবগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জ্জুনসংবাদে বিভূতিযোগো নাম দশমোঽধ্যায়ঃ ॥১০॥ |
ইতি দশম অধ্যায়ের অন্বয় সমাপ্ত ॥
ইতি দশম অধ্যায়ের বঙ্গানুবাদ সমাপ্ত ॥
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ