বেদ উৎপত্তি বিষয় - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

15 July, 2021

বেদ উৎপত্তি বিষয়

তস্মাদ্যজ্ঞাৎসর্বহুত ঋচঃ সামানি জজ্ঞিরে।
ছান্দংসি জজ্ঞিরে তস্মাদ্যজুস্তস্মাদজায়ত।। 
যজুর্বেদ অধ্যায় ৩১মন্ত্র ৭

तस्मा॑द्य॒ज्ञात् स॑र्व॒हुत॒ऽऋचः॒ सामा॑नि जज्ञिरे।
छन्दा॑सि जज्ञिरे॒ तस्मा॒द्यजु॒स्तस्मा॑दजायत ॥
পদার্থঃ- হে মনুষ্য! তোমাদের উচিত (তস্মাৎ) সেই পূর্ণ (যজ্ঞাৎ) অত্যন্ত পূজনীয় (সর্বহুতঃ) যার অর্থ সমস্ত লোক পরমাত্মার কাছ থেকে সমস্ত কিছু দেয় বা আত্মসমর্পণ করে (ঋচঃ) ঋগ্বেদ (সামানি) সামবেদ (জজ্ঞিরে) উৎপ্নন হয় (তস্মাৎ) সেই পরমাত্মা থেকে (ছান্দংসি) অর্থববেদ (জজ্ঞিরে) উৎপন্ন হয় (তস্মাৎ) সেই পুরুষ থেকে (য়জুঃ) যজুর্বেদ (অজায়ত) উৎপন্ন হয়, তাকে জানো।
(তস্মাৎ য়জ্ঞাৎ) সৎ যাঁহার কদাপি নাশ হয় না, চিৎ যিনি সদা জ্ঞান স্বরূপ, যাঁহার কদাপি লেশমাত্র অজ্ঞান নাই, আনন্দ যিনি সদা সুখস্বরূপ এবং সকলের সুখদাতা, এবম্ভূত সচ্চিদানন্দাদি লক্ষণযুক্ত সর্বত্র পরিপূর্ণ, সকলের উপাসনার যোগ্য, ইষ্টদেব ও সর্বশক্তিমান্ পরমব্রহ্ম হইতে, (ঋচঃ) ঋগ্বেদ (য়জু) যজুর্বেদ (সামানি) সামবেদ (ছান্দংসি) এব্ং অর্থববেদ প্রকাশিত হইয়াছে। এজন্য সকলেরই বেদশাস্ত্র গ্রহণ ও তদনুযায়ী আচরণ করা কর্ত্তব্য। বেদ অনেক বিদ্যার আধার, ইহা প্রকাশ করিবার জন্য, ‘জজ্ঞিরে’ এবং অজায়ত’ এই ক্রিয়া দ্বয়ের প্রয়োগ হইয়াছে। ঈশ্বর হইতে বেদ সকল উৎপন্ন হইয়াছে, ইহা অবধারণের জন্য, ‘তস্মাৎ’ এই পদ দুইবার প্রযুক্ত হইয়াছে। বেদ মন্ত্র সকল গায়ত্রাদি ছন্দযুক্তহেতু, ‘ছন্দাসি’ এই পদ দ্বারা অর্থবেদের উৎপত্তি প্রকাশ করিতেছে। শতপথ ব্রাহ্মণ এবং বেদ মন্ত্র প্রমাণ দ্বারা ইহা সিদ্ধ হইতেছে, যে যজ্ঞ শব্দে ‘বিষ্ণু’ এবং বিষ্ণু শব্দে সর্বব্যাপক পরমেশ্বরেরই গ্রহণ হইয়া থাকে, কারণ জগৎ উৎপত্তি করা, এক পরমেশ্বর ভিন্ন অন্যত্র বা অপরে ঘটিতে পারে না।
पदार्थान्वयभाषाः -हे मनुष्यो ! तुमको चाहिये कि (तस्मात्) उस पूर्ण (यज्ञात्) अत्यन्त पूजनीय (सर्वहुतः) जिसके अर्थ सब लोग समस्त पदार्थों को देते वा समर्पण करते उस परमात्मा से (ऋचः) ऋग्वेद (सामानि) सामवेद (जज्ञिरे) उत्पन्न होते (तस्मात्) उस परमात्मा से (छन्दांसि) अथर्ववेद (जज्ञिरे) उत्पन्न होता और (तस्मात्) उस पुरुष से (यजुः) यजुर्वेद (अजायत) उत्पन्न होता है, उसको जानो ॥
भावार्थभाषाः -हे मनुष्यो ! आप लोग जिससे सब वेद उत्पन्न हुए हैं, उस परमात्मा की उपासना करो, वेदों को पढ़ो और उसकी आज्ञा के अनुकूल वर्त्त के सुखी होओ ॥
সরলার্থঃ- হে মনুষ্য! যার থেকে সব বেদ উৎপন্ন হয়েছে, তোমরা সেই পরমাত্মার উপাসনা করো, বেদ অধ্যয়ন করো আর তাহার আজ্ঞা অনুকূল চলিয়া সুখী হও।
বৃহস্পতে প্রথমং বাচো অগ্রং যৎপ্রৈরত নামধেয়ং দধানাঃ।
যদেষাং শ্রেষ্ঠং যদরিপ্রমাসীৎপ্রেণা তদেষাং নিহিতং গুহাবিঃ।।
(ঋগ্বেদ ১০।৭১।১)
बृह॑स्पते प्रथ॒मं वा॒चो अग्रं॒ यत्प्रैर॑त नाम॒धेयं॒ दधा॑नाः ।
 यदे॑षां॒ श्रेष्ठं॒ यद॑रि॒प्रमासी॑त्प्रे॒णा तदे॑षां॒ निहि॑तं॒ गुहा॒विः ॥
ऋग्वेद  मण्डल:10 सूक्त:71 मन्त्र:1 


अंग्रेज़ी लिप्यंतरण
bṛhaspate prathamaṁ vāco agraṁ yat prairata nāmadheyaṁ dadhānāḥ | yad eṣāṁ śreṣṭhaṁ yad aripram āsīt preṇā tad eṣāṁ nihitaṁ guhāviḥ ||

पद पाठ
बृह॑स्पते । प्र॒थ॒मम् । वा॒चः । अग्र॑म् । यत् । प्र । ऐर॑त । ना॒म॒ऽधेय॑म् । दधा॑नाः । यत् । ए॒षा॒म् । श्रेष्ठ॑म् । यत् । अ॒रि॒प्रम् । आसी॑त् । प्रे॒णा । तत् । ए॒षा॒म् । निऽहि॑तम् । गुहा॑ । आ॒विः ॥ १०.७१.१

पदार्थान्वयभाषाः -(बृहस्पते) हे वेदवाणी के स्वामी परमात्मन् ! (वाचः-अग्रं प्रथमम्) वाणी के श्रेष्ठरूप सृष्टि के प्रारम्भ में होनेवाले (नामधेयं यत्-दधानाः प्रैरत) पदार्थमात्र के नामव्यवहार के प्रदर्शक वेद को धारण करते हुए परमर्षि प्रेरित करते हैं, जनाते हैं (यत्) यतः (एषाम्) इन परम ऋषियों का (श्रेष्ठम्) श्रेष्ठ कार्य (अरिप्रम्-आसीत्) पापरहित-निष्पाप है (प्रेणा-एषां गुहा निहितम्) तेरी प्रेरणा से इन परमर्षियों के हृदय में प्रकट होता है ॥
भावार्थभाषाः -वेद का स्वामी परमात्मा सृष्टि के आरम्भ में आदि ऋषियों के पवित्र अन्तःकरण में वेद का प्रकाश करता है, जो पदार्थमात्र के गुण स्वरूप को बताता है, उसे वे ऋषि दूसरों को जनाते हैं ॥-ब्रह्ममुनि
- হে বেদবাণীর স্বামী পরমাত্মন্ বাণির শ্রেষ্ঠরূপ সৃষ্টির প্রারম্ভে হওয়া পদার্থ মাত্রের নাম ব্যবহারের প্রদর্শক বেদ কে ধারণ করে প্রেরিত করেন যা এই পরম ঋষির শ্রেষ্ঠ কার্য পাপরহিত নিষ্পাপ তোমার প্রেরণা দ্বারা এই মহর্ষির হৃদয়ে প্রকট হয়। 
বৃহস্পতে=সেই জ্ঞানের স্বামীর প্রথমম্= অত্যন্ত বিস্তারিত বাচঃ অগ্ৰম্=বাণীর অগ্ৰস্থানে স্থিত এই বেদজ্ঞান।নামধেয়ং দধানাঃ=প্রভুর নাম হৃদয়ে ধারণ করে অনান্য ঋষিগণ এবং বিচারশীল ব্যাক্তিরা য়ত্=সেই বেদজ্ঞান প্রৈরত= নিজের মধ্যে প্রেরণ করলেন। এষাম্=সৃষ্টির প্রারম্ভে উৎপন্ন সেই সমস্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে য়ত্=যে শ্রেষ্ঠম= সর্বোত্তম ছিল য়ত=যে অরিশম্=একেবারে নির্দোষ ছিল,যার বুদ্ধি এবং মন সর্বাধিক পবিত্র আসীত্=ছিল তত্=সেই এষাম্=শ্রেষ্ঠ গুহা=হৃদয়রুপ গুহায় প্রেণা=প্রভুর প্রেমের জন্য নিহিতম্=এই বেদ জ্ঞান স্থাপিত হয়েছে এবং আবিঃ=প্রকট হয়েছে।
ভাবার্থঃ- প্রভুর দেওয়া বেদবাণী এই সৃষ্টির প্রারম্ভিক শব্দ ছিল। সর্বশ্রেষ্ঠ হৃদয়ে এই বেদবাণীর প্রকাশ ঘটেছিল এবং তাদের দ্বারা বিস্তার হয়েছিল।
.বেদ বাণী অনাদি অনন্ত এবং সনাতন। বেদ কে ঈশ্বরীয় জ্ঞান রুপে ঋষি মহর্ষিরা নিজেদের অন্তরে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তারপর প্রকট করেছেন।
নিরুক্তকার যাস্ক আরো বলেছেন -

"সাক্ষাত্কৃতধর্মোণ ঋষয়ো বভূবুস্তেহবরেভ্যোহসাক্ষাত্ কৃতধর্মস্য উপদেশেন মন্ত্রানসম্প্রাদু ; নিরুক্ত ১।১৯"
অর্থাৎ তপের বল দ্বারা যারা ধর্মের সাক্ষাৎ করেছেন তারাই (ধর্মের সাক্ষাৎ দ্রষ্টা ঋষি)। আর তাহারাই  যারা ধর্মের সাক্ষাৎ করে নি তাদের উপদেশ দিয়েছেন।
ইহাতে স্পষ্ট হয় যে, জ্ঞান প্রাপ্ত হওয়ার প্রণালী এই যে জ্ঞান বাণীর সাথে ঋষির হৃদয়ে প্রকট হয় এবং সেই জ্ঞানের গ্রাহক ঋষি সংসারে প্রচলিত করেন।
 

এখন আমাদের জানা আবশ্যক যে, এই বেদ কাহার মধ্যে প্রকট হয়েছে।  শতপথ ব্রাহ্মণে এ বিষয়ে বলা হয়েছে -
তেভ্যস্তপ্তেভ্যস্ত্রয়ো বেদা অজায়ন্তে ঋগ্বেদো বায়োর্যজুর্বেদঃ সূর্যাৎ সামবেদঃ।
(শতপথ ব্রাহ্মণ ১১।৫।৮।৩
অর্থাৎ সেই তপস্বী ঋষির মাধ্যম দ্বারা পরমাত্মা অগ্নি থেকে ঋগ্বেদ, বায়ু থেকে যজুর্বেদ এবং সূর্য থেকে সামবেদ প্রকট করেছেন।

আপত্তিঃ প্রজাপতির্বা ইদমগ্র আসীদিতি (শত০ ১১/৫/৮/১-৪) এখানে স্পষ্ট লিখিত যে, তপ দ্বারা প্রজাপতি তিন লোক কে বানিয়েছেন ।এবং ওই তিন লোক কে তপিয়ে অগ্নি, বায়ু, সূর্য এই তিন জ্যোতিকে সৃষ্টি করেছেন। এবং এই তিন জ্যোতিকে তপিয়ে তিন বেদ কে সৃষ্টি করেছেন । তাহলে অগ্নি, বায়ু, সূর্য - এই তিন' জ্যোতিতত্ত্ব নাকি ঋষি?

মীমাংসাঃ  প্রথমত এরা কখনও জ্যোতিতত্ব হতে পারে না  কারণ জড় পদার্থে জ্ঞানের প্রকাশ বা কার্য অসম্ভব। এবং যে যে স্থানে অর্থ সম্ভব, সেখানে লক্ষণ হয়ে থাকে।  অর্থাৎ যে লক্ষণ ধরলে ওই কার্য বা অর্থ সম্ভব সেখানে সে অনুযায়ী অর্থ করতে হয়। যেমন  কোন সত্যবাদী ধর্মাত্মা বিদ্বান আপ্ত পুরুষ যদি বলে যে, "ক্ষেত্র মধ্য মঞ্চ শব্দ করিতেছে"  যেমন এস্থলে লক্ষণ দ্বারা এরূপ বুঝতে হবে,  যে মঞ্চের স্বয়ং শব্দ করা অসম্ভব,  অতএব মঞ্চন্থ কোন ব্যক্তি শব্দ করছে।  সেরূপ এস্থলে বোঝা উচিৎ যে, মনুষ্যের দ্বারা বিদ্যার প্রকাশ হওয়া সম্ভব জড় দ্বারা নয়।  এ বিষয়ে "তেভ্যঃ" শব্দ দ্বারা বলা হয়েছে অগ্নি, বায়ু, আদিত্য আদি ঋষিদের মধ্যে পরমেশ্বর বেদ প্রেরণ করেছিলেন। যদি এই জ্ঞান ঋষির মধ্য দিয়ে বেদ প্রকাশ না হয়ে থাকে তবে কি জ্ঞানশূণ্য, জড় তত্ত্ব হইতে  নির্গত হয়েছিলো ? একটু বুদ্ধি পূর্বক বিচার করুন। যেখানে তপ অর্থ তপানো নয় বরং জ্ঞানবিচারের নামই তপ । নয়তো সেখানে কামারের কোন চুল্লি ছিলো না যাতে তিনি সবকিছু তপিয়ে যাবেন। আর আপনি পাঠের অর্থও সম্পূর্ণ করেননি। উক্ত পাঠের পূর্ণাঙ্গ  যথার্থ অর্থ  হচ্ছে -

 
প্রজাপতির্বা ইদমগ্র আসীত্। এক এব সোহকাময়ত স্যাং প্রজায়েয়েতি সোশ্রাম্যত্স তপোতপ্যত তস্মাচ্ছান্তান্তেপানাত্ ত্রয়োলোকা অসৃজ্যন্ত পৃথিব্যন্তরিক্ষং দ্যৌ ।১।। 
 স ইমাঁস্ত্রীংলোকানভিততাপ । তেভ্যস্তপ্তেভ্যস্ত্রীণি জ্যোতিংষ্যজায়ন্তাগ্নির্য়োয়ং পবতে সূর্যঃ।২।।
 স ইমানি ত্রীণী জ্যোতীংষ্যভিততাপ । তেভ্যস্তপ্তেভ্যস্ত্রয়ো বেদা অজায়ন্তাগ্নের্ঋগ্বেদো বায়োর্যজুর্বেদঃ সূর্যাত্সামবেদঃ।৩।।
 স ইমাঁস্ত্রীন্ বেদানভিততাপ । তেভ্যস্তপ্তেভ্যস্ত্রীণি শুক্রাণ্যজায়ন্ত ভূরিণ্যৃগ্বেদাদ্ ভূব ইতি যজুর্বেদাৎ স্বরিতি সামবেদান্তদৃগ্বেদেনৈব হোত্রমকুর্বত যজুর্বেদেনাধ্বর্যবং সামবেদেনোদ্গীথং যদেব ত্রয়্যৈ বিদ্যায়ৈ শুক্রংতেন ব্রহ্মত্বমথোচ্চক্রাম।৪।।
(শত০ ১১/৫/৮/১-৪)

ভাষ্যার্থঃ - এই এক ই প্রজাপতি প্রথমে ছিলেন । তিনি ভাবলেন আমি প্রজার সহিত হয়ে যাবো । উনি জ্ঞানপূর্বক প্রযত্ন করলেন। সেই জ্ঞাণ তথা যত্ন হইতে তিনি তিন লোক সৃষ্টি করলেন -পৃথিবী, অন্তরিক্ষ, দ্যৌ।১।।
- তিনি এই তিন লোককে রচনা করলেন, এই তিন লোক রচনার পর তিনি সংসার কে জ্ঞান হইতে প্রকাশিত করার জন্য তিন প্রকাশমান ঋষিকে জন্মপ্রদান করেন - অগ্নি, বায়ু, সূর্য। ২।।

- তিনি এই তিন জ্যোতিস্মান ঋষিদিগকে জ্ঞানপ্রদান করেন। এবং তাহারা জ্ঞানবান হওয়ার পর তিন বেদ প্রকাশিত হয় । অগ্নি হতে ঋগ্বেদ , বায়ু হতে যজুর্বেদ, সূর্য হতে সামবেদ। ৩।।
 
- তিনি এই তিন বেদকে প্রকাশিত করেন- এবং প্রকাশিত হওয়ার পর তিন শক্তির জন্ম হয় ।ভূঃ ঋগ্বেদ হতে , ভূবঃ যজুর্বেদ হতে, স্বঃ সামবেদ হতে। তাই ঋগ্বেদ দ্বারা হবন সম্পন্ন হয় , যজুর্বেদ দ্বারা অধ্বর্যু ঘী হবন সম্পন্ন হয় , সামবেদ দ্বারা মঙ্গল গাওয়া হয় এবং এই তিন বিদ্যা হতে জ্ঞাণবান হয়ে ব্রহ্ম প্রাপ্ত হয়।।৪।।

এবার বলুন, এখানে তিন জ্যোতির তত্ত্ব কথা নাকি ঋষি ? জ্ঞান তত্ত্ব কি কোন জড় পদার্থ হতে নির্গত হওয়া সম্ভব না কি সজীব প্রাণ হতে?

বেদা অজায়ন্ত ঋগ্বেদ এবাগ্রেরজায়ত যজুর্বেদো বায়োঃ সামবেদ আদিত্যা"
জীববিশেষৈরগ্নিবায়্বাদিত্যৈর্বেদানামুত্পাদিতত্বাত্। ঋগ্বেদ এবাগ্নেরজায়ত যজুর্বেদো বায়োঃ সামবেদ আদিত্যাত্ ( ঐতেরীয় ব্রা০ ৫/৩২।। ইতি শ্রুতেরীশ্বরস্যাগ্ন্যাদিপ্রেরকত্বেন নির্মাতৃত্বং দ্রষ্টব্যম্ ।। (সায়ণভাষ্যভূমিকাসংগ্রহ পৃ০ ৪)
ভাষার্থঃ
অগ্নি, বায়ু, আদিত্য বিশেষ জীব হইতে বেদের উৎপত্তি ঋগ্বেদ অগ্নি হইতে , যজুর্বেদ বায়ু হইতে, সামবেদ আদিত্য হইতে , ওইরূপ শ্রুতি হওয়ার কারণে ঈশ্বরের অগ্নি আদির প্রেরক হেতু ঈশ্বর হতে বেদের নির্মাণ জানা উচিৎ।
আপত্তিঃ "য়ো বৈ ব্রহ্মাণং বিদধাতি" (শ্বেতাঃ ৬।১৮) এই বচন অনুসারে দেখা যায় যে, পরমেশ্বর ব্রহ্মার হৃদয়ে বেদোপদেশ প্রদান করছিলেন। তাহার পর পুণরায় অগ্নি ইত্যাদি ঋষিদের আত্মায় করলেন কেন?

মীমাংসাঃ এই শ্লোকের বর্ণনা এইরূপ যে , পরমাত্মা প্রথমে ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করেন অতঃপর তাহার জন্য বেদ প্রেরণ করেন। কিন্তু বেদ কিভাবে প্রেরণ করেন তাহার কোন বর্ণনা নেই।   সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমাত্মা সমস্ত সৃষ্টি রচনার পর প্রথমে যোগী ঋষি আদিদের  সৃষ্টি করেন-

"তেন দেবা অযজন্ত সাধ্যা ঋষশ্চ যে " (যজুর্বেদ ৩১।৯)
অর্থাৎ সেই পরমাত্মা প্রথমে  বিদ্বান,  সাধনকারী,  ঋষিদের সৃষ্টি করেন  যারা সেই পরমেশ্বরের  উপাসনা করেন।
মনুস্মৃতিতেও এ বিষয়ে বলা হয়েছে -

কর্মাত্মনাং চ দেবনাং সোহসৃজত্ প্রাণিনাং প্রভূঃ।
সাধ্যানাং চ গণং সুক্ষং যজ্ঞং চৈব সনাতনম্।।
(মনু ১।২২)
- সেই পরমাত্মা কর্মশীল  অগ্নি, বায়ু আদি দেব  কে এবং মনুষ্য,  পশু পক্ষি আদি এবং সাধক আদি বিদ্বান কে তথা সনাতন যজ্ঞ উৎপন্ন করেছেন।
 এই সৃষ্টি আদির মধ্যে অগ্নি, আদি ঋষি এবং ব্রহ্মাও ছিলো।  তখন পরমাত্মা ব্রহ্মা কে এই অগ্নি আদি ঋষি দ্বারা বেদ প্রেরণ করেছিলেন। এ বিষয়ে মনুস্মৃতিতে রয়েছে -

অগ্নিবায়ুরবিভ্যস্তু ত্রয়ং ব্রহ্ম সনাতনম্।
দুদোহ যজ্ঞসিদ্ধ্যর্থমৃগযজুঃ সামলক্ষণম্।।
(মনুস্মৃতি ১।২৩)
সেই ব্রহ্মা যজ্ঞ সম্পাদনের জন্য অগ্নি, বায়ু, সূর্য এই তিনটি দেবতা হতে যথাক্রমে ঋক, যজু, সাম সংজ্ঞক তিনটি সনাতন বেদ দোহন করেছিলেন। অর্থাৎ তাদের দ্বারা প্রাপ্ত করেছিলেন।
শৌলির দৃষ্টিতে বেদ তিন:-
1. ঋক
2। সাম
3। যজুঃ
এই তিন প্রকারের ছন্দ:- ঋক ছন্দ (ঋক রশ্মি ), সাম রশ্মি ও যজুঃ রশ্মি মিলিত হয়ে অথর্ববেদ এর ছন্দ
 (অথর্ববেদের মন্ত্র ) সৃষ্টি হয়েছে ।
এজন্যই ঋষি প্রণিত গ্রন্থে ঋক, সাম, যজুঃ কথাটিই আছে শুধু ।
অতএব এটা স্পষ্ট যে, ব্রহ্মা অগ্নি আদি দ্বারা বেদ প্রাপ্ত করেছেন।  এখন শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের যথার্থ ভাষ্য দেখুন -

যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্ব যো বৈ বেদাংশ্চ প্রহিণোতি তস্মৈ।
তং হ দেবং আত্মবুদ্ধিপ্রকাশং সুমুক্ষুর্ব শরণমহং।।
(শ্বেতাঃ ৬।১৮)


ভাষ্যার্থঃ যিনি প্রথমে চার বেদের জ্ঞাতা ঋষি কে উৎপন্ন করেছেন। যিনি নিশ্চয় করে ব্রহ্মার জন্য চার বেদের প্রকাশ অগ্নি, বায়ু আদি ঋষি দ্বারা স্থাপিত করেন,  সেই আত্মবুদ্ধি প্রকাশ কারী পরমাত্মদেবের শরণেই আমি মোক্ষের ইচ্ছুক নিশ্চয়রূপে হয়ে যাই।

আপত্তিঃ  এই সব রচনা ব্রহ্মাই করেছে "অগ্নিবায়ুরবিভ্যস্তু" মনুস্মৃতি ১।২৩ এই শ্লোকে  ব্রহ্মা "দুদোহ" ক্রিয়ার কর্তা অর্থাৎ , এই শ্লোকে ব্রহ্মা কর্তা ও দোহন ক্রিয়া- এর অর্থ অগ্নি, বায়ু , রবি হতে ব্রহ্মা বেদ' কে দোহন করেছেন।

মীমাংসাঃ এই সারা সংসারের রচনা পরমাত্মা দ্বারা সংগঠিত হয়েছে। যার মধ্যে অগ্নি আদি তথা ব্রহ্মাদি ঋষিও শামিল। "অগ্নিবায়ুরবিভ্যস্তু" এই শ্লোকে ব্রহ্মা হলেন কর্তা তথা ঋগ্যযুঃ সাম এবং অগ্নি আদি ঋষি কর্ম এবং দোহন ক্রিয়া রয়েছে। দোহা' ধাতু দ্বিকর্মক তথা "ণ্যন্তগর্ভা"। অতঃ অর্থ ইহা হয় যে, -'পরমাত্মা অগ্নি, বায়ু , আদিত্য  দ্বারা ব্রহ্মাকে চারবেদ প্রাপ্ত করিয়েছেন । যখন আপনার সংস্কৃত ব্যকরণ আসে না , শুধু শুধু তা ব্যর্থ আওড়ানো কি প্রয়োজন ?
আপত্তিঃ  মনুস্মৃতির উক্ত অগ্নি, বায়ু আদি কে "দেব" বলা হয়েছে  অর্থাৎ এগুলো নিশ্চয় কোন ভৌতিক দেবতা।  আর  মনু এবং  শতপথে এই উভয়ে অগ্নি, আদিত্য, বায়ু এই তিনের নাম এসেছে। তবে চতুর্থ অঙ্গিরা কোথা থেকে আসলো?

মীমাংসাঃ আপনি দেবের সংজ্ঞা নিশ্চয় পুরোটা জানেন না নতুবা এমন কথা বলতেন না। শতপথ ব্রাহ্মণ ৩।৭।৩।১০ এ বিদ্বানদের দেব বলা হয়েছে। নিরুক্তাকার যাস্ক বলেছেন - "দেবো দানদ বা, দীপনাদ্ বা, দৌতনাদ বা, দ্যুস্থানো ভবতীতি বা; নিঃ ৭।১৫। অর্থাৎ দেবের লক্ষন হচ্ছে দান। সবার হিতার্থে যে দান করে সে দেব। দেবের গুণ হচ্ছে দীপন অর্থাৎ প্রকাশ করা। দেবের কর্ম হচ্ছে দৌতন অর্থাৎ সত্যপদেশ করা। অর্থাৎ যে মানুষ সত্য মানে, সত্য বলে এবং সত্য উপদেশ দান করে সে দেব। আর  চতুর্থ নাম অঙ্গিরা অথর্ববেদের সাথে স্বয়ং এসেছে,  এজন্য উক্ত তিনের সাথে তাহার নাম দেওয়া হয় নি। শতপথেই অথর্ববেদের সাথে ঋষি অঙ্গিরার নাম যুক্ত।  দেখুন -
 "যদথর্বাঙ্গিরসঃ স য় এবম্ বিদ্বানোথর্বাঙ্গিরসো অহরহঃ স্বাধ্যায়মধীতে।" (শত০ ১১।৫।৬।৭।)

"এবং বা অরেস্য মহতো ভূতস্য নিঃশ্বাসতমতদ্ যদৃগ্বেদো যজুর্বেদঃ সামবেদোহর্থবাঙ্গিরসঃ।। (শতপথঃ ১৪।৫।৪।১০)

উণাদিকোষ ৪।২৩৬ এ ও " অঙ্গিরসিঃ অঙ্গিরাঃ " শব্দ এসেছে।  এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-

অঙ্গিরাঃ অঙ্গেতি প্রাপ্নোতব জানাতি বা স, অঙ্গিরাঃ।  ঈশ্বরোহগ্নির্ঋষিষির্ভিদো বা। তস্যাপত্যমাঙ্গিরসঃ।

আপত্তিঃ  'ব্রহ্মা দেবানাং প্রথমঃ' ইত্যাদি (মুন্ডকোপনিষদ ১।১।১-২) এখানে ব্রহ্মা দ্বারাই সৃষ্টির আরম্ভে বেদের প্রকাশ , এমনই লিখিত আছে ।

মীমাংসাঃ  আপনি যে পাঠ দিয়েছেন এই পাঠে না আছে সৃষ্টির আরম্ভের বর্ণন , না আছে ব্রহ্মা দ্বারা চার বেদ প্রকট হওয়ার উল্লেখ। এখানে যে ব্রহ্মার বর্ণনা করা হয়েছে তা  সৃষ্টির আরম্ভযুক্ত ব্রহ্মা প্রতীত হয় না । কেননা সৃষ্টির আরম্ভযুক্ত ব্রহ্মার পুত্রের গণনা যাহা পুরাণ শাস্ত্রে আছে , তাহা- মরিচি, অত্রি, অঙ্গিরা,  পুলস্ত্য ,পুলহ, ক্রতু , ভৃগু, বশিষ্ট,  দক্ষ, নারদ (ভাগবতঃ ৩।১২।২১-২২) আদি নাম তো ব্রহ্মার পুত্রেরই পাওয়া যায় , কিন্তু অথর্বা নামক ব্রহ্মার পুত্র কোথাও উল্লেখ পাওয়া যায় না ।

ইহাতে বোঝা যায় যে, মুন্ডকোপনিষদের ব্রহ্মা পৌরাণিক ব্রহ্মা ছিলেন না বরং সেখানে(মুন্ডক) অন্যকোন ব্রহ্মা ছিলেন যিনি তার পুত্র অথর্বাকে ব্রহ্মবিদ্যা পড়িয়েছেন। আর উক্ত পাঠে  "প্রথম"  অর্থ শ্রেষ্ঠ তথা প্রসিদ্ধ অর্থাৎ 'বিদ্বানমধ্যে প্রসিদ্ধ ব্রহ্মা নামক ঋষি।' পুরো পাঠের অর্থ দেখুন-

ব্রহ্মা দেবানাং প্রথমঃ সম্বভূব বিশ্বস্য কর্তা ভুবনস্য গোপ্তা।
স ব্রহ্মবিদ্যাং সর্ববিদ্যাপ্রতিষ্ঠাম্ অথর্বায় জ্যেষ্ঠপুত্রায় প্রাহ।।১।
অথর্বণে যাং প্রবদেত ব্রহ্মাহথর্বা তাং পুরোবাচাঙ্গিরে ব্রহ্মবিদ্যাম্।
স ভারদ্বাজায় সত্যবহায় প্রাহ ভারদ্বাজোহঙ্গিরসে পরাবরাম্।।২।
(মুন্ডকোপনিষদ্ ১।১।১-২)

ভাষ্যার্থঃ  ব্রহ্মা  বিদ্বানের মধ্যে প্রথম (মুখ্যস্থানিয়) উদ্ভুত হয়ে জগতে ধর্মের কর্তা অর্থাৎ প্রাণীর রক্ষার উপদেশ দাতা তিনি ব্রহ্ম বিদ্যার সর্ব বিদ্যানিষ্ঠাত অথর্বা কে যিনি তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলো তাহাকে উপদেশ প্রদান করেন। প্রথমে অথর্বাকে ব্রহ্মা যে বিদ্যার উপদেশ করেন , অথর্বা অঙ্গিরা ঋষিকে সেই ব্রহ্মবিদ্যা সম্বন্ধে বলেন। তিনি (অঙ্গিরা) ভরদ্বাজ গোত্রযুক্ত সত্যবাহকে , এবং সত্যবাহ অঙ্গিরা ঋষিকে ব্রহ্ম বিদ্যার উপদেশ করেন।

বলুন এখানে চার বেদের প্রাদুর্ভাবের বর্ণনা কোথায় আছে? 

আপত্তিঃ  "স ব্রহ্মবিদ্যাম্" মুন্ডকের এই শ্রুতিতে ব্রহ্মা আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র অথর্বাকে বেদ পাঠ করিয়েছেন এবং অথর্বা অঙ্গিরাকে , অঙ্গিরা সত্যবাহকে বেদ উপদেশ করেন - যেখানে বেদ ক্রম রয়েছে , তা কি মিথ্যা ?

মীমাংসাঃ এই ক্রমকে আমরা মিথ্যা বলছি না । কিন্তু এই ক্রম পৌরাণিক চতুর্মুখ ব্রহ্মার ও নয় কারণ পুরাণ শাস্ত্রে কোথাও ব্রহ্মার পুত্র অথর্বার বর্ণন নেই । এবং কেননা প্রত্যেক চার বেদ বক্তার নামই ব্রহ্মা । নিরুক্তে বলা হয়েছে - "ব্রহ্মা সর্ববিদ্যঃ সর্ব বেদিতুমর্হতি। ব্রহ্মা পরিবৃল্হঃ শ্রুততো ব্রহ্মা পরিবৃহল্হং সর্বতঃ।।(নিঃ ১।৮) ব্রহ্মা তাহাকে বলে যিনি সর্ববিদ্যার জ্ঞাতা,  যে সব কিছু জানার যোগ্য,  ব্রহ্মা তাহাকে বলে যিনি ত্রয়ি বিদ্যা জানে।   অতঃপর এই ক্রম কোনো অন্য ব্রহ্মার ; যাহার পুত্রের নাম অথর্বা ছিলো । এটা দ্বারা ব্রহ্মার উপর বেদ প্রকট হওয়া সিদ্ধ হয় না ।

বরং অগ্নি আদি ঋষির মধ্যে দিয়ে বেদ প্রকাশের প্রমাণ ঐতেরীয় ব্রাহ্মণেও উপস্থিত।  দেখুন - "বেদা অজায়ন্ত ঋগ্বেদ এবাগ্রেরজায়ত যজুর্বেদো বায়োঃ সামবেদ আদিত্যা" (ঐতেরীয় ব্রা০ পঞ্চিকা৫ অঃ২৫।৩২) বেদের উৎপত্তি ঋগ্বেদ অগ্নি হইতে , যজুর্বেদ বায়ু হইতে, সামবেদ আদিত্য হইতে।
অগ্নেঋগবেদো বাযোর্যজুর্বেদঃ সূর্যাৎ সামবেদঃ।।
শতপথ ব্রাক্ষণ-11/5/8/3,গোপথ ব্রাক্ষণ-1/6
অর্থ-পরমাত্না সৃষ্টির আদিতে অগ্নি(ঋগ) বায়ু (যজুর্বেদ) সূর্য বা আদিত্য (সাম) ঋষিদের অন্তরে বেদজ্ঞান প্রকাশিত করেছেন।
প্রাচীন উপনিষদ বৃহদারণ্যকের প্রমাণ•
অরেহস্য মহতো ভূতস্য নিঃশ্বসিতমেতদ্ যদৃগ্বেদো যজুর্বেদঃ সামবেদোহথর্বাঙ্গিরস
বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৪।৫।১১
অর্থ-ঋগ্বেদ,সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ পরমাত্মার নিঃশ্বাস সদৃশ। অর্থাৎ,এই চার বেদ নিঃশ্বাসের ন্যায় সহজভাবে নিঃসৃত হয়েছে।
অর্থাৎ,বেদ জ্ঞান ঈশ্বরের সহজাত জ্ঞান।
বিজ্ঞানেন বা ঋগ্বেদং বিজানাতি যর্জুবেদং সামবেদমার্থবর্ণং চতুর্থ।
সপ্তম অধ্যায়_সপ্তম খন্ড_প্রথম শ্লোক
অর্থ বিজ্ঞানের দ্বারা ঋগ্বেদ,যর্জুবেদ,সামবেদ ও চতুর্থ বেদ অথর্ববেদ জানা যায়।
অগ্নিবাযুরবিভ্যস্তু‌ এয়ং ব্রহ্ম সনাতনম্।
দুদোহ যজ্ঞসিদ্ধ্যর্থমৃগযজুঃ সামলক্ষণম্।।মনু-১।২৩
অর্থ- ব্রহ্মা ঋষি,অগ্নি,বায়ু, আদিত্যর নিকট হতে ঋগ,সাম,যজুঃ বেদ শিক্ষা লাভ করেছিলেন।

য়স্মাদৃচো অপাতক্ষন্ য়জুর্য়স্মাদপাকষন্ ।
সামানি য়স্য লোকমান্যথর্বাঙ্গরেসো মুখম্।
স্কম্ভং তং ব্রূহি কতমঃ স্বিদেব সঃ। -[অথর্ববেদ ১০।৭।২০]

যস্নাদৃচো অপাঃ) যে সর্বশক্তিমান পরমেশ্বর হইতে, (ঋচঃ) ঋগ্বেদ, (যজুঃ) যজুর্বেদ (সামানি) সামবেদ (আংগিরসঃ) অথর্ববেদ, এই বেদ চতুষ্টয় উৎপন্ন বা প্রাদুর্ভূত হইয়াছে এবম্ভূত ঈশ্বর, আংগিরস অর্থাৎ অথর্ববেদ যাঁহার মুখ স্বরূপ, সামবেদ যাঁহার লোমবৎ, যজুর্বেদ যাঁহার হৃদয় স্বরূপ, এবং ঋগ্বেদ যাহার প্রাণ স্বরূপ (ব্রূহি কতমঃ স্বিদেব সঃ) যে, যাঁহা হইতে চারি বেদ উৎপন্ন হইয়াছে, তিনি কোন দেব? তাহা তুমি বল? এই প্রশ্নের উত্তরে ঈশ্বর বলিতেছেন, (স্কংভ তং) যিনি সমগ্র জগতের ধারণ কর্ত্তা পরমেশ্বর, তাঁহাকেই স্কম্ভ বলা যায়, এবং সেই স্কম্ভকেই বেদ সকলের কর্ত্তা প্রকাশ বলিযা জানিবে সেই সর্বাধার পরমেশ্বর ভিন্ন, অন্য কোন দেব, বেদ কর্ত্তা নহে, এবং তিনি ভিন্ন মনুষ্যের উপাসনা যোগ্য অন্য কোন ইষ্টদেব নাই। কারণ যে বেদকর্ত্তা পরমাত্মাকে পরিত্যাগ করিয়া তৎস্থানে অন্যের উপাসনা করে, সে (নিশ্চয়ই) হতভাগ্য সন্দেহ নাই।

देवता: आयुः ऋषि: ब्रह्मा छन्द: सतःपङ्क्तिः स्वर: दीर्घायु सूक्त

সতং তেহয়ুগে হায়নান্ দ্বেযুগে ত্রীণি চত্বাতি কৃণ্মঃ।
ইন্দ্রাগ্নী বিস্বেদেবাস্তেনু মন্যস্তামহ্নণীয়মানাঃ।।
অথর্ব- ৮।২।২১
পদার্থ- হে মনুষ্য! ( তে) তোমাদের জন্য ( শতম্) শত ( অয়ুতম্) দশ হাজার (হায়নান্) বর্ষের ক্রম দ্বারা ( দ্বেযুগে) দুই যুগ ( ত্রীণি) তিন যুগ এবং ( চত্বারি) জার যুগ ( কৃণমঃ) আমি করিয়া থাকি। আর ( ইন্দ্রাগ্নী) বায়ু এবং অগ্নি ( তে) এই প্রসিদ্ধ ( বিশ্বে দেবাঃ) সমস্ত দিক্য পদার্থকে চন্দ্র,সূর্য ইত্যাদি পদার্থকে ( অহ্নণীয়মানাঃ) সংকোচ বা প্রলয় না করিয়া ( অনু মন্যস্তাম্) অনুকূলে মনস্তত্ত্ব দ্বারা ধারণ করে।
ভাবার্থ-পরমেশ্বর এই সৃষ্টির কাল চক্রকে মনুষ্যের উপকারের জন্য নার্মাণ করিয়াছে। বিজ্ঞানী মনুষ্য পরমেশ্বরের অপার মহিমায় নিজের পরাক্রম বৃদ্ধি করিয়া নতুন-নতুন আবিস্কার করিয়া অমর নাম করিয়া থাকেন।
এই মন্ত্র উত্তরার্দ্ধে আসিয়াছে -অথর্ব-১।৩৫।৪
এই মন্ত্রে পূর্বার্দ্ধে সৃষ্টির সময় মোট আয়ু ৪,৩২,০০০০০ বর্ষ। মন্ত্রে বর্ণিত তথ্য অনিসারে সাত শূন্যের বাম পাশে যথাক্রমে দুই,তিন এবং চার সংথ্যা লিখিলে সৃষ্টির মোট আয়ুর পরিমাণ বাহির হইয়া যায়। সৃষ্টিতে মোট ১০০০ চতুর্যুগী হইয়া থাকে। ১০০০ চতুর্যুগীতে মোট ১৪ টি মন্বস্তর হইয়া থাকে। বর্তমন ৭ মন্বস্তর চলয়মান আছে। সপ্তম বৈবস্বত মনু্র ২৮ তম চতুর্যুগী কলিযুগ চলমান আছে। বর্তমান কলিযুগে বর্ষ গতি চলয়মান আছে। সূর্যসিদ্ধান্ত এবং মনুস্মৃতির হিসাব অনুসারে বেদমন্ত্রের আলোকে হিসাব করিলে সৃষ্টির বয়স হইবে [ ১ অরব ৯৭ কোটি ৩৮ লক্ষ ১৩ হাজার ১২২বর্ষ ] এবং বেদ প্রকাশের কাল [ ১ অরব ৯৬ কোটি ০৮ লক্ষ ৫৩ হাজার ১২২ বর্ষ ] যাহারা ইহা হইতে অধিক তধ্য চান তাহারা সরাসরি বেদ, মনুস্মৃতি, সূর্যসিদ্ধান্ত অধ্যয়ন করিতে পারেন।।
पदार्थान्वयभाषाः -[हे मनुष्य !] (ते) तेरे लिये (शतम्) सौ और (अयुतम्) दश सहस्र (हायनान्) वर्षों को [क्रम से] (द्वे युगे) दो युग, (त्रीणि) तीन [युग] और (चत्वारि) चार [युग] (कृण्मः) हम करते हैं। (इन्द्राग्नी) वायु और अग्नि और (ते) वे [प्रसिद्ध] (विश्वे देवाः) सब दिव्य पदार्थ [सूर्य, पृथिवी आदि] (अहृणीयमानाः) संकोच न करते हुए (अनु मन्यन्ताम्) अनुकूल रहें ॥२१॥ भावार्थभाषाः -परमेश्वर ने यह सृष्टि और काल चक्र मनुष्य के उपकार के लिये बनाये हैं। विज्ञानी पुरुष परमेश्वर की अपार महिमा में अपना पराक्रम बढ़ाकर नये-नये आविष्कार करके अमर नाम करते हैं ॥२१॥ इस मन्त्र का उत्तरार्द्ध आ चुका है-अ० १।३५।४ ॥ मन्त्र के पूर्वार्द्ध में सृष्टि का समयक्रम कलियुग, द्वापर, त्रेता और सत्ययुग और वर्षों का अर्थ दैववर्ष जान पड़ता है, सो इस प्रकार है− सन्धिकाल युगकाल १००*१=१०० १०,०००*१=१०,००० १००*२=२०० १०,०००*२=२०,००० १००*३=३०० १०,०००*३=३०,००० १००*४=४०० १०,०००*४=४०,००० योगसन्धि १,००० वर्ष योगयुग १,००,००० योगसन्धि और युग १,०१,००० १-अथर्ववेद काण्ड ८ सूक्त २ मन्त्र २१ के अनुसार युगवर्ष गणना ॥ सूचना−मन्त्र में केवल [सौ, दश सहस्र, वर्षे, दो युग, तीन और चार] पद हैं, कलि आदि पदों की कल्पना की गयी है। एक दैववर्ष में ३६० [तीन सौ साठ] मानुष वा सौर वर्ष होते हैं ॥ सन्धि कलि द्वापर त्रेता कृतयुग चतुर्युगी और दैव वर्ष मानुष दैव वर्ष मानुष दैव वर्ष मानुष दैव वर्ष मानुष दैव वर्ष मानुष युग वा सौर वर्ष वा सौर वर्ष वा सौर वर्ष वा सौर वर्ष वा सौर वर्षसन्धि १०,००० ३६,००० युग १००३६,००,००० २००२०,००० ७२,०००७२,००,००० ३००३०,००० १,०८,०००१,०८,००० ४००४०,००० १,४४,०००१,४४,००,००० १,०००१,००,००० ३,६०,०००३,६०,००,०००योग १०,१०० ३६,३६,००० २०,२०० ७२,७२,००० ३०,३०० १,०९,०८,००० ४०,४०० १,४५,४४,००० १,०१,००० ३,६™३,६०,०००२-मनु अध्याय १ श्लोक ६९-७० और सूर्य सिद्धान्त अध्याय १ श्लोक १५-१७ के अनुसार युग वर्ष गणना ॥सन्धिऔर युग कृतयुग श्रेतायुग द्वापरयुग कलियुग चतुर्युगी दैव वर्ष मानुष वा सौर वर्ष दैव वर्ष मानुष वा सौर वर्ष दैव वर्ष मानुष वा सौर वर्ष दैव वर्ष मानुष वा सौर वर्ष दैव वर्ष मानुष वा सौर वर्षसन्ध्या वर्षयुग वर्षसंध्यांशवर्ष ४००4000४०० १,४४,०००१४,४०,०००१,४४,०००3003000३०० १,०८,०००१०,८०,०००१,०८,००० २००2000२०० ७२,०००७,२०,०००७२,००० १००1000१०० ३६,०००३,६०,०००३६,००० १०००10000१,००० ™३,६०,०००३६,००,०००३,६०,०००योग ४,८०० १७,२८,००० ३,६०० १२,९६,००० २,४०० ८,६४,००० १,२०० ४,३२,००० १२,००० ४३,२०,०००[आगे मनु श्लोक ७१, ७२ के अनुसार बारह सहस्र चतुर्युगी का एक दैव युग और एक सहस्र दैव युग का ब्रह्मा का एक दिन, और इतनी ही रात्री। अर्थात् १२,००० दैव वर्ष*१००० युग*३६० मानुष वर्ष= ४,३२,००,००,०० [चार अरब बत्तीस करोड़] मानुष वर्ष का एक दिन और इतनी वर्षों की ब्रह्मा की रात्री है, परन्तु मन्त्र का संबन्ध इससे नहीं है] ॥ टिप्पणी:२१−(शतम्) कलिसन्धेः शतदैववर्षाणि (ते) तुभ्यम् (अयुतम्) कलियुगस्य दशसहस्रदैववर्षाणि (हायनान्) अ० ३।१०।९। संवत्सरान् (द्वे युगे) द्विगुणितं शतं चायुतं च द्वापरस्य सन्धियुगयोर्दैववर्षाणि (त्रीणि) त्रिगुणितं शतं चायुतं च त्रेतायुगस्य सन्धियुगयोर्दैववर्षाणि (चत्वारि) चतुर्गुणितं शतं चायुतं च कृतयुगस्य सन्धियुगयोर्दैववर्षाणि (कृण्मः) कुर्मः। अन्यद् यथा-अ० १।३५।४। (इन्द्राग्नी) वाय्वग्नी (विश्वे) सर्वे (देवाः) दिव्यगुणाः पदार्थाः (ते) प्रसिद्धाः (अनुमन्यन्ताम्) अनुकूला भवन्तु (अहृणीयमानाः) असंकुचन्तः ॥-पण्डित क्षेमकरणदास त्रिवेदी

বেদের উৎপত্তি এবং বেদ সৃষ্টিকর্তা কে? পবিত্র বেদ হইতে প্রমাণ।
তস্মাদ্যজ্ঞাৎসর্বহুত ঋচঃ সামানি জজ্ঞিরে।
ছান্দংসি জজ্ঞিরে তস্মাদ্যজুস্তস্মাদজায়ত।-যজু ৩১/৭
য়স্মাদৃচো অপাতক্ষন্ য়জুর্য়স্মাদপাকষন্ ।
সামানি য়স্য লোকমান্যথর্বাঙ্গরেসো মুখম্।
স্কম্ভং তং ব্রূহি কতমঃ স্বিদেব সঃ। [অথর্ববেদ ১০।৭।২০]
বেদোৎপত্তি বিষয় অর্থাৎ কোথা হইতে বেদ উৎপন্ন হইয়াছেঃ-

(তস্মাৎ য়জ্ঞাৎ) সৎ যাঁহার কদাপি নাশ হয় না, চিৎ যিনি সদা জ্ঞান স্বরূপ, যাঁহার কদাপি লেশমাত্র অজ্ঞান নাই, আনন্দ যিনি সদা সুখস্বরূপ এবং সকলের সুখদাতা, এবম্ভূত সচ্চিদানন্দাদি লক্ষণযুক্ত সর্বত্র পরিপূর্ণ, সকলের উপাসনার যোগ্য, ইষ্টদেব ও সর্বশক্তিমান্ পরমব্রহ্ম হইতে, (ঋচঃ) ঋগ্বেদ (য়জু) যজুর্বেদ (সামানি) সামবেদ (ছান্দংসি) এব্ং অর্থববেদ প্রকাশিত হইয়াছে। এজন্য সকলেরই বেদশাস্ত্র গ্রহণ ও তদনুযায়ী আচরণ করা কর্ত্তব্য। বেদ অনেক বিদ্যার আধার, ইহা প্রকাশ করিবার জন্য, ‘জজ্ঞিরে’ এবং অজায়ত’ এই ক্রিয়া দ্বয়ের প্রয়োগ হইয়াছে। ঈশ্বর হইতে বেদ সকল উৎপন্ন হইয়াছে, ইহা অবধারণের জন্য, ‘তস্মাৎ’ এই পদ দুইবার প্রযুক্ত হইয়াছে। বেদ মন্ত্র সকল গায়ত্রাদি ছন্দযুক্তহেতু, ‘ছন্দাসি’ এই পদ দ্বারা অর্থবেদের উৎপত্তি প্রকাশ করিতেছে। শতপথ ব্রাহ্মণ এবং বেদ মন্ত্র প্রমাণ দ্বারা ইহা সিদ্ধ হইতেছে, যে যজ্ঞ শব্দে ‘বিষ্ণু’ এবং বিষ্ণু শব্দে সর্বব্যাপক পরমেশ্বরেরই গ্রহণ হইয়া থাকে, কারণ জগৎ উৎপত্তি করা, এক পরমেশ্বর ভিন্ন অন্যত্র বা অপরে ঘটিতে পারে না।যজু ৩১/৭
(যস্নাদৃচো অপাঃ) যে সর্বশক্তিমান পরমেশ্বর হইতে, (ঋচঃ) ঋগ্বেদ, (যজুঃ) যজুর্বেদ (সামানি) সামবেদ (আংগিরসঃ) অথর্ববেদ, এই বেদ চতুষ্টয় উৎপন্ন বা প্রাদুর্ভূত হইয়াছে এবম্ভূত ঈশ্বর, আংগিরস অর্থাৎ অথর্ববেদ যাঁহার মুখ স্বরূপ, সামবেদ যাঁহার লোমবৎ, যজুর্বেদ যাঁহার হৃদয় স্বরূপ, এবং ঋগ্বেদ যাহার প্রাণ স্বরূপ (ব্রূহি কতমঃ স্বিদেব সঃ) যে, যাঁহা হইতে চারি বেদ উৎপন্ন হইয়াছে, তিনি কোন দেব? তাহা তুমি বল? এই প্রশ্নের উত্তরে ঈশ্বর বলিতেছেন, (স্কংভ তং) যিনি সমগ্র জগতের ধারণ কর্ত্তা পরমেশ্বর, তাঁহাকেই স্কম্ভ বলা যায়, এবং সেই স্কম্ভকেই বেদ সকলের কর্ত্তা প্রকাশ বলিযা জানিবে সেই সর্বাধার পরমেশ্বর ভিন্ন, অন্য কোন দেব, বেদ কর্ত্তা নহে, এবং তিনি ভিন্ন মনুষ্যের উপাসনা যোগ্য অন্য কোন ইষ্টদেব নাই। কারণ যে বেদকর্ত্তা পরমাত্মাকে পরিত্যাগ করিয়া তৎস্থানে অন্যের উপাসনা করে, সে (নিশ্চয়ই) হতভাগ্য সন্দেহ নাই। (অর্থব কাং-১০ প্রপাঃ ২৩অনু ০৪ মং ২০
পৃথিবী সৃষ্টির প্র্ররম্ভে বেদের সৃষ্টি তাই যতসব গ্রন্থ আছে সবগুলোই বেদের উপরে আধারিত তাই যে সকল গ্রন্থ বেদ বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত নয় সে সকল গ্রন্থ সনাতন ধর্মের মান্য হতে পারে না।।

বেদের উৎপত্তি সম্বৎ ৭৭ সালে, অর্থাৎ ১,৯৬,০৮,৫৩,১২২ বৎসর হইল বেদোৎপত্তি ও জগৎপত্তি হইয়াছে।
বর্ত্তমান সৃষ্টিতে সপ্তম বৈবস্বত মনু চলিতেছে। ইহার পূর্বে ছয় মন্বন্তর গত হইয়া গিয়াছে। যথা ১ স্বায়ম্ভব,২ স্বরোচিষ,৩ ঔত্তমি,৪ তামস,৫ রৈবত,৬ চাক্ষুষ এই ছয়টি ব্যতীত হইয়াছে এক্ষনে সপ্তম বৈবস্বত মনু চলিতেছে। ভবিষ্যতে সাবর্ণি আদি সাত মন্বন্তর হইবে। এই অতীত, বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ মন্বন্তর লইয়া সর্বসমেৎ ১৪ মন্বন্তর হইতেছে।পুনশ্চ একাত্তর (৭১) চতুর্যুগীতে এক এক মন্বন্তর হইয়া থাকে, ইহার গণনা এই প্রকার যথা ১৭,২৮,০০০ বর্ষে এক সত্যযুগ হইয়া থাকে। ১২,৯৬,০০০ বর্ষে এক ত্রেতাযুগ হয়। ৮,৬৪,০০০ বর্ষের নাম এক দ্বাপর যুগ। ৪,৩২,০০০ বর্ষের নাম কলিযুগ রাখা হইয়াছে। এই রূপে আর্যগণ এক ক্ষণ ও নিমেষ হইতে এক বৎসর পর্য্যন্ত কালের সুক্ষ্ম এবং স্থুল সংজ্ঞা বাঁধিয়া দিয়াছেন। উক্ত চারি যুগ মিলিয়া ৪৩,২০,০০০ বৎসরকে এক চতুর্যুগী বলা হয়। ৭১ চতুর্যুগী অর্থাৎ ৩০,৬৭,২০,০০০ বর্ষে এক মন্বন্তর হয়। এইরূপে ৬ মন্বন্তর মিলিয়া ১,৮৪,০৩,২০,০০০ বৎসর গত হইয়াছে,আর সপ্তম মন্বন্তরের ভোগ মধ্যে ২৮ চতুর্যুগী চলিতেছে, এই চতুর্যুগীতে কলিযুগের ৫,১২২ বর্ষ গত হইয়াছে। বাকী ৪,২৬,৮৭৮ বৎসর কলি যুগের আরও ভোগ হইবে।
বর্ত্তমান সময় যাহা চলিতেছে সপ্তম বৈবস্বত মনুর ১২,০৫,৩৩,১২২ বৎসর ভোগ হইয়া ইহরই ৭৭ বর্ষের ভোগ হইতেছে এবং এখন আরও উক্ত বৈবস্বত মনুর ১৮,৬১,৮৬,৮৭৮ বৎসর ভোগ হইতে বাকী আছে। পূর্বোক্ত এক হাজার চতুর্যুগের নাম এক ব্রাহ্মদিন এবং অন্য আর এক হাজার চতুর্যুগীকে এক ব্রাহ্মরাত্রী বলা হয়। পরমেশ্বর সৃষ্টি উৎপন্ন করিয়া এক হাজার চতুর্যুগী কাল পর্য্যন্ত সৃষ্টিকে স্থিত করিয়া রাখেন। এই স্থিতিকালকে এক ব্রাহ্মদিবস বলা হয়। এইরূপে আর এক হাজার চতুর্যুগী সময়, যখন ঈশ্বর সৃষ্টি কে কারণে লয় করিয়া প্রলয়াবস্থায় রাখেন, তাহাকেই এক ব্রাহ্মরাত্রী বলে। অর্থাৎ সৃষ্টির প্রকাশ ও স্থিতিকালকে দিবস ও প্রলয়কালকে রাত্রি বলে। এক্ষণে বর্ত্তমান ব্রাহ্মদিনের ১,৯৬,০৮,৫৩,১২২ বর্ষ বর্ত্তমান সৃষ্টি ও বেদোৎপত্তির পরে ব্যতীত হইয়াছে এবং ২,৩৩,৩২,২৬,৮৭৮ বর্ষ এখন আরও সৃষ্টির স্থিতিকাল বাকি আছে। বর্ত্তমান কালের পর প্রতি বৎসর গত হইলেই বর্ত্তমান কালের সংখ্যায় এক বৎসর করিয়া বৃদ্ধিও ভবিষ্যত স্থিতি কালের সংখ্যায় এক বৎসর করিয়া হ্রাস হইবে। এইরূপ হ্রাস ও বৃদ্ধর নিয়মেই আজ পর্য্যন্ত বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ স্থিতিকালের হ্রাস বৃদ্ধির ক্রম হইয়া আসিতেছে। ব্রহ্ম অর্থাৎ পরমেশ্বর এই সংসারের স্থিতিকালকে দিবস ও প্রলয় কালকে রাত্রি সংজ্ঞা প্রদান করিয়াছেন।
এবিষয়ের বিশেষ প্রমাণ স্বরূপ মনুসংহিতা উদ্ধৃত করা হইয়াছে যথা-
দিব্য বর্ষের গণনানুসারে চারি হাজার দিব্য বৎসরে এক সত্যযুগের স্থিতি। এই ৪০০০ দিব্য বর্ষের পূর্ববর্ত্তী দশমাংশ কাল অর্থাৎ পূর্ববর্ত্তী বা অতীত চারিশত বৎসর রূপ সময় কে সত্যযুগের সন্ধ্যা বলে। এই রূপে চার হাজার বর্ষের পরবর্ত্তী দশমাংশ কাল অর্থাৎ পরবর্ত্তী চারি শত দিব্য বৎসরকে সত্যযুগের সন্ধ্যাংশ কাল বলা হয়। এজন্য সর্ব সমেৎ ৪৮০০ দিব্য বর্ষ এক পূর্ণ যুগের পরিমাণ। মনুষ্যদিগের গণনায় এক বৎসরে এক দিব্য দিবস হয়। এজন্য মনুষ্যদিগের ৩৬০ বৎসরে এক দিব্য বৎসর হইয়া থাকে অতএব ৩৬০ কে ৪৮০০ দিয়ে গুণ করিলে যে সংখ্যা হয়(১৭,২৮,০০০),তাহাই মনুষ্যদিগের বৎসরের গণনায় সত্যযুগের স্থিতি হইবে। অতএব সত্য যুগের স্থিতি ১৭,২৮,০০০ মনুষ্যের বৎসর। অন্যান্য যুগের অর্থাৎ ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের পরিমাণ ক্রমশঃ ১০০০ বৎসর করিয়া এবং সন্ধ্যায় ও সন্ধ্যাংশের পরিমাণ হইতে এক এক শত বৎসর কমিয়া যাইবে। যথা সত্য যুগের ৪০০০ বৎসর স্থিতি হইতে ত্রেতাযুগে ১০০০ বৎসর কম। এজন্য ত্রেতা যুগের স্থিতি ৩০০০ দিব্য বৎসর। এবং সত্যযুগের সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশের প্রত্যেক ৪০০ দিব্য বৎসর হইতে ১০০ বৎসর হ্রাস করিলে প্রত্যেকের ৩০০ বৎসর হয়। এজন্য ত্রেতার সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ কালের পরিমাণ প্রত্যেক ৩০০ দিব্য বৎসর হইয়া থাকে। এজন্য সর্বসমেৎ দ্বাপরের স্থিতি ৩৬০০ দিব্য বৎসর যাহা মনুষ্যের গনণায় ১২,৯৬,০০০ বৎসর হয়। পুনরায় ত্রেতাযুগ হইতে ১০০০ বৎসর এবং সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ হইতে এক শত বৎসর হ্রাস করিলে দ্বাপরের স্থিতি ২০০০ দিব্য বৎসর হয়। উহার সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশের পরিমাণ প্রত্যেকের ২০০ দিব্য বৎসর হইয়া থাকে। যাহা মনুষ্যের বৎসরের হিসাবে ৮,৬৪,০০০ বৎসর হয়। এই রূপ হিসাবে কলিযুগের স্থিতি ১০০০ বৎসর এবং তাহার সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশের প্রত্যেকের স্থিতি কাল ১০০ দিব্য বৎসর করিয়া হয়। অতএব সর্বসমেৎ ১২০০ দিব্য বৎসর পর্য্যন্ত কলিযুগের স্থিতি জানিবে। অর্থাৎ মনুষ্যের বৎসর হিসেবে কলিযুগে ৪,৩২,০০০ বৎসর স্থিতি হয়। পূর্বোক্ত চারিযুগ মিলিয়া ১২,০০০ দিব্য বৎসরে এক দিব্য যুগ হইয়া থাকে,যাহা মানুষ্যের গণনায় ৪৩,২০,০০০ বৎসর হয়। উপরোক্ত এক সহস্র দিব্য যুগে এক ব্রাহ্ম দিন এবং আর এক সহস্র দিব্য বর্ষে এক ব্রাহ্মরাত্রি হইয়া থাকে। অর্থাৎ ৪৩,২০,০০,০০০ মনুষ্য বর্ষে এক সৃষ্টিকাল হইয়া থাকে।
দিব্য বর্ষ পরিমাণ দ্বাদশ সহস্র সংখ্যায় পরিগণিত পূর্বোক্ত যুগকে এক সপ্ততি গুণ করিলে যেরূপ (৮,৫২,০০০) হয়,ইহাকে এক মন্বন্তর বলে। এইরূপে পরম পিতা পরমেশ্বর অসংখ্য মন্বন্তর যাহা অনেক বার অতীত হইয়া গিয়াছে, এবং ভবিষ্যতেও হইবে, তিনি তা সহজ ভাবে পুনঃপুনঃ সৃষ্টি ও প্রলয় করিয়া থাকেন।
কালের পরিমাণ সুগমতার সহিত জানিবার জন্য ব্রাহ্মদিন ও ব্রাহ্মরাত্রি সংজ্ঞা করা হইয়াছে, যদ্দ্বারা মনুষ্য সহজে বেদোৎপত্তি, সৃষ্টি ও প্রলয়ের গণনা করিতে সমর্থ হন। প্রত্যেক মন্বন্তরের পরিবর্ত্তনে সৃষ্টির কিছু কিছু নৈমিত্তিক গুণ বা স্বভাবের পরিবর্ত্তন হয় এবং তজ্জন্যই মন্বন্তর সংজ্ঞা করা হইয়াছে। বর্ত্তমান সৃষ্টির কল্প ও প্রলয়ের বিকল্প সংজ্ঞা দেওয়া হইয়াছে।
উক্ত বর্ষের গণনা নিম্নলিখিত প্রকারের করা উচিত।
এক(১)
দশ(১০)
শত(১০০)
সহস্র(১০০০)
দশ সহস্র(১০,০০০)
লক্ষ(১,০০,০০০)
নিযুত(১০,০০,০০০)
কোটি(১,০০,০০,০০০)
অর্বুদ(১০,০০,০০,০০০)
বৃন্দ(১,০০,০০,০০,০০০)
খর্ব(১০,০০,০০,০০,০০০)
নিখর্ব(১,০০,০০,০০,০০,০০০)
শংখ(১০,০০,০০,০০,০০,০০০)
পদ্ম(১,০০,০০,০০,০০,০০,০০০)
সাগর (১০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০)
অন্ত্য(১,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০)
মধ্য(১০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০)
পরার্দ্ধ(১,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০)
এইরূপ দশ দশ গুণ বৃদ্ধি করিয়া সূর্য্য সিদ্ধান্তাদি শাস্ত্রানুসারে গণনা করা হইয়াছে।
সমস্ত সংসারের সহস্র সংজ্ঞা হইয়া থাকে এবং পূর্বোক্ত ব্রাহ্মদিন ও ব্রাহ্মরাত্রিকে সহস্র সংজ্ঞা দেয়া যায়। এজন্য হে পরমেশ্বর! আপনি এই সহস্র চতুর্যুগী দিন ও রাত্রির পরিমাণ কর্ত্তা অর্থাৎ নির্ম্মাণকারী। ইহাই মন্ত্রের সামান্যার্থ‌। এই রূপেই আর্য্যগণ জ্যোতিষশাস্ত্রে যথাবৎ বর্ষের সংখ্যা গণনা করিয়াছেন এবং তাহারা সৃষ্টির উৎপত্তি কাল হইতে আজ পর্য্যন্ত এক এক দিবস গণনা করিয়া ক্ষণ হইতে কল্পান্ত পর্য্যন্ত কালের গণনা গণিত বিদ্যা দ্বারা প্রসার করিয়া আসিতেছেন। অর্থাৎ আমরা পরম্পরানুসারে শুনিয়া ও অন্যকে শুনাইয়া লিখিয়া ও লিখাইয়া এবং স্বায়ং পাঠ করিয়া ও অপরকে পাঠ করাইয়া আজ পর্য্যন্ত কালের সময়ের সংখ্যা গণনা করিয়া আসিতেছি। এইরূপ সৃষ্টি ও বেদোৎপত্তি বিষয়ের বর্ষ গণনার ব্যবস্থা সকলের গ্ৰহণ যোগ্য। মনুষ্যমাত্রেরই ইহা স্বীকার ও গ্রহণ করা কর্ত্তব্য। যেহেতু আর্য্যগণ প্রতিদিন ওঁ তৎ সৎ পরমাত্মার এই তিন শ্রেষ্ঠ নাম প্রথমে উচ্চারণ করিয়া প্রত্যেকে কার্য্যারম্ভে ও পরমেশ্বরের নিত্য স্ততি প্রার্থনা করিয়া থাকেন। যেহেতু তাঁহার কৃপায় আমরা সুখের সহিত পরমাত্মার সৃষ্টিতে বর্ত্তমান রহিয়াছি এবং ইহা যেন প্রতি দিনের জমা খরচের খাতার মত লিখিত পঠিত করিয়া চলিয়া আসিতেছে। পূর্বোক্ত ব্রাহ্মদিনের দ্বিতীয় প্রহরের পর মধ্যাহ্নের নিকট ঐ ব্রাহ্মদিবস আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে এবং যত দিন এখনও বৈবস্বত মনুর ভোগ বাকি আছে, তত দিনই মধ্যাহ্ন পূর্ণ হইতে বাকি রহিয়াছে। এজন্য লেখা আছে - শ্রী ব্রহ্মণো দ্বিতীয়ে প্রহরার্দ্দ্ধে বৈবস্বত মন্বন্তরে অষ্টাবিংশতিতমে কলিযুগে কলি প্রথম চরণে ইত্যাদি অর্থাৎ সম্প্রতি বৈবস্বত মন্বন্তর বর্ত্তমান রহিয়াছে। এই মন্বন্তরে অষ্টবিংশতি কলির প্রথম চরণের ভোগ হইতেছে, তৎপর অমুক বর্ষ,ঋতু, অয়ন্ মাস, পক্ষ, দিবস,নক্ষত্র,মহূর্ত্ত,লগ্ন ও পলাদিতে আমি অমুক কার্য্য করিতেছি, এরূপ সংকল্প বাক্য আমরা আবাল বৃদ্ধ বণিতা সকলেই বলিয়া থাকি। যে রূপ জমাখরচের খাতায় আমরা মিতি (শুক্লপক্ষের বা কৃষ্ণপক্ষের তিথি) লিখিয়া থাকি। তদ্রূপ মাস ও বর্ষের হ্রাস ও বৃদ্ধি করিয়া আসিতেছি। এইরূপে আর্যগণ পঞ্জিকাতেও বর্ষ ,মাস ও দিবস লিখিয়া আসিতেছেন এবং এই ইতিহাসই আজ পর্য্যন্ত সমগ্র আর্য্যাবর্ত্তে এইভাবে ঐক্যতার সহিত বর্ত্তমান রহিয়াছে। সকল পুস্তকেই এক প্রকারই (অর্থাৎ বিরোধ রোহিত) লেখা আছে দেখা যায়। যদি সৃষ্টির উৎপত্তি কাল হইতে আজ পর্য্যন্ত ক্রমাগত এবিষয়ের যথার্থ গণনা করিয়া লিখিয়া না আসিতেন, তাহা হইলেও এ বিষয়ের গণনার হিসাব আর্য্যগণের অবগতি নিশ্চয়ই সুকঠিন হইত, অন্য মনুষ্য সম্বন্ধে কোনো কথাই নাই এবং ইহা দ্বারা আরও সিদ্ধ হয় যে, সৃষ্টির আরম্ভ হইতে আজ পর্য্যন্ত কেবল আর্য্যগণই বিদ্বান ও সুসভ্য হইয়া চলিয়া আসিতেছেন।

অনেকে প্রশ্ন করেন যে, ব্যাসদেব যদি বেদ কে চার ভাগে ভাগ না করে থাকে তবে তার নাম বেদব্যাস কেন হলো ?
বেদব্যাস নাম তার বেদ কে বিভক্ত করার জন্য হয় নি ব্যাসদেব বেদ অধ্যয়ন - অধ্যাপন দ্বারা বেদার্থ বিস্তার করেছিলেন এজন্য তার নাম "বেদব্যাস" হয়েছিলো। পারাপারের মধ্য রেখাকে "ব্যাস" বলা হয়। অর্থাৎ ঋগবেদের আরম্ভ থেকে অথর্ববেদের পার পর্যন্ত চার বেদ পড়েছিলেন। আর শুকদেব এবং জৈমিনি প্রভৃতি শিষ্যদের পড়িয়েছিলেন। বাস্তবিক পক্ষো তার জন্ম নাম ছিলো "কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন"। যদি কেউ বলে যে, ব্যাসদেব বেদ চার ভাগে বিভক্ত করেছিলেন। একথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেননা ব্যাসদেবের পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, পরাশর, বশিষ্ঠ এবং ব্রহ্মা প্রভৃতিও চারবেদ অধ্যয়ন করেছিলেন।

ও৩ম্ শম্

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

জাতিবাদ ও ভগবান মনু

  সম্পাদকীয় বর্তমান সময়ে দেশ অনেক গম্ভীর সমস্যায় গ্রস্ত আছে, তারমধ্যে একটা হল - জাতিবাদ। এই জাতিবাদের কারণে আমাদের দেশের অনেক বড় হানি হ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ