বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

25 October, 2018

বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান

বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান

"ন পৌরষেয়ত্বং তত কর্তুঃ পুরুষস্যাভাবাত্।

নিজ শক্ত্যভিব্যক্তেঃ স্বতঃ প্রমাণ্যাত্।।"

সাংখ্যদর্শন ৫/৫১(মহর্ষি কপিল)

অর্থাৎঃ বেদের কর্তা কোন পরুষ নয়। এইজন্য বেদ অপৌরষেয়।বেদ নিজ শক্তি দ্বারা স্বতঃ প্রমাণ।


"অতএব চ নিত্যত্বম্"-বেদান্তদর্শন ১/২৯

বেদের নিত্যতা সিদ্ধ, বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান

সৃষ্টির আদি থেকে বেদ যা ছিল, তাই আছে। তাই সত্যযুগ আসুক, কি ত্রেতা, দ্বাপর, কলিযুগ আসুক। বেদ তো বেদই, কোন কল্পে বা মতান্তরে তার পরিবর্তন হয় না এবং সদা সর্বদা বর্তমান। বেদে জ্ঞান, কর্ম, উপাসনা ও বিজ্ঞান কান্ড আছে এবং দাবী করা হয় যে বেদ সব সত্য বিদ্যার পুস্তক। বেদ ঈশ্বরের নিত্য বিদ্যা, তার উৎপত্তি বা অনুৎপত্তি হতেই পারে না। অতএব তার বৃদ্ধি, ক্ষয় অথবা তাতে কোন পরিবর্তন ঘটতে পারে না। এইসব কারণে বেদ প্রতিপাদিত বৈদিক ধর্ম শ্বাশত, সত্য ও সনাতন। 

বেদের উপর পণ্ডিত মহীধর রাবণ, উবট, সায়ণাচার্যের যেসব ভাষ্য পাওয়া যায় সেগুলি সব মূলমন্ত্র ও ঋষিকৃত ব্যাখ্যান বিরুদ্ধ। উদাহরণ সরুপ- "গণনাং ত্বা " এই মন্ত্রে পণ্ডিত মহীধর "গণপতি" শব্দের অর্থ করেছেন "অশ্ব"।কিন্তু এমন হবে না। 

যথার্থ হলো, "বয়ং গণনাং গণনীয়াং পদার্থসমূহানাং গণপতি পালকং স্বামিন ত্বা পরমেশ্বরং"=পরমেশ্বর অর্থ গ্রহনীয়।

বেদে পরা ও অপরা দুই প্রকার বিদ্যা আছে। অপরা বিদ্যা দ্বারা পৃথিবী এবং তৃণ থেকে প্রকৃতি পর্যন্ত পদার্থ সকলের গুনের জ্ঞান হয় এবং তদ্বারা সম্যক্ কার্যসিদ্ধি হয়। দ্বিতীয় পরা বিদ্যা দ্বারা সর্বশক্তিমান ব্রহ্মের যথাবৎ প্রাপ্তি লাভ হয়। বেদজ্ঞান সর্বদোষ রহিত এবং এর তুলনায় অন্য কোন জ্ঞান দাঁড়াতে পারে না। বেদে সব সত্য বিদ্যার মূল হওয়ায় বেদ পূর্ণ এবং বেদ প্রতিপাদিত ধর্মও পূর্ণ। 

বৈদিক ধর্মের কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলঃ

১)বৈদিক ধর্ম কোন ব্যক্তি বিশেষের আদেশ বা পুজা-অর্চনার নাম নয়। একটা জীবন ধারার নাম। এই ধর্ম মানব ও মানবসমাজকে সুখ-শান্তি ও প্রগতি প্রদান করে। এটা কোন বিশেষ দেশ, কাল ও পরিস্থিতির ফসল না হয়ে সর্বব্যাপক সত্য। এর তত্ত্ব সিদ্ধান্ত সার্বদেশিক ও সার্বকালিক। 

২)বৈদিক ধর্মে বিবেক দৈব-প্রেরণা মনে করে তার বিরুদ্ধাচরণ কে বর্জন করা হয়েছে। ৩)বৈদিক ধর্ম যুক্তিবাদী, কিন্তু অন্যান্য সকল ধর্ম অন্ধবিশ্বাসের উপর নির্ভর।তাদের বিশ্বাস যে, ধর্মে যুক্তি-তর্কের কোন অবকাশ নেই। খোদার কাজে বুদ্ধি দিয়ে নাকগলানো ঠিক নয়। ধর্মের লক্ষ্য হলো মানুষের কল্যাণ করা, তার বুদ্ধিহরণ করে তাকে মনুষ্য থেকে পশুতে পরিণত করা নয়। 

৪)বৈদিক ধর্ম সিদ্ধান্তকে স্বাধীনভাবে প্রশ্রয় দেয়। মহর্ষি দয়ানন্দকে বিষ প্রদান, যীশুখৃষ্ট কে ক্রুশবিদ্ধ করা, সক্রেটিস কে বিষদানে মেরে ফেলা,মনসুরকে পাথরের আঘাতে হত্যা করা হয়েছিল। এসব এই জন্য হয়েছিল, কারণ তারা প্রচলিত ধর্মের উপর সন্দেহ ব্যক্ত করেছিলেন। বৈদিক ধর্ম বিচার স্বাতন্ত্র্যকে ধর্মের মুখ্য অঙ্গ স্বীকার করে, এর দৃষ্টিতে বিচার-স্বতন্ত্রতা মানবতার প্রতীক, মানব সমাজের প্রগতির মূল আধার।

৫)বৈদিক ধর্ম আচরণে উদার হতে শিক্ষা দেয়। এই পৃথিবী বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। দুটি মনুষ্যের গুণ-কর্ম সর্বাংশে একরকম হয় না। কোন লোক পৃথিবীতে স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়, অর্থাৎ তার মধ্যে ভাল-মন্দের সমাবেশ থাকবে। অতএব মতভেদ ও পার্থক্যের জন্য যদি উদার মতাবলম্বী না হওয়া যায়, তাহলে পৃথিবীতে সংঘর্ষের কোন সমাপ্তি কোন সময় ঘটবে না। ধর্ম সংঘর্ষের জন্য নয়, কিন্তু শান্তি স্থাপনের জন্য। এইজন্য উদারতা ধর্মের মুখ্য গুণ এবং বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ ঈশ্বরের এই জগতে বেচে থাকার একমাত্র উপায়। উদারতার অভিপ্রায় অসত্য, অন্যায়, অত্যাচারের সঙ্গে সন্ধি করা নয়। বরঞ্চ উদারতাকে পাপের বদলে সৃষ্টির গুণ মেনে তর্ক, যুক্তি ও অহিংসাযুক্ত প্রক্রিয়া দ্বারা সহৃদয় ভাবনা নিয়ে বিরুদ্ধবাদীদের মন ও মস্তিষ্ক পরিবর্তন করার চেষ্টা করা। উদারতা ও সহঅস্তিত্বের সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে বিশ্বশান্তি স্থাপন করা অসম্ভব। 

৬)বৈদিক ধর্ম ক্রম বিকাশবাদী ও আশাবাদী হওয়ায় পুনর্জন্মের সিদ্ধান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। 

৭)বৈদিক ধর্ম ঈশ্বরকে নিরাকার ও সর্বব্যাপক মানে। এইজন্য ঈশ্বর এই সৃষ্টির রচনায় সমর্থ হয়েছিলেন। ঈশ্বর কর্মফল প্রদান করেন, প্রার্থনা করলে তিনি প্রার্থনাকারী কে প্রেরণা ও শক্তি প্রদান করেন। ফল প্রাপ্তি নিজ কর্মানুসারে জীবের নিজের হাতে। ঈশ্বররের গুণ হৃদয়ে ধারণ করলে মানব সমস্ত প্রাণীকে সমানভাবে দেখে,উচু-নীচু, ছোট-বড় মনে করার ভাব নষ্ট হয় এবং এর দ্বারা বিশ্ববন্ধুত্ব, প্রেম, সেবাভাব জাগ্রত হয়। ঈশ্বরকে যে সর্বব্যাপক মনে করে ,সে পাপ করতে ভীত হয়। ন্যায়কারী ঈশ্বরের ন্যায় থেকে জীব রেহাই পায় না। তার ন্যায়বিচারে জীবের মৃত্যুর পরে পুনর্জন্ম পর্যন্ত যায়। ৮)বৈদিক ধর্ম সুস্থ শরীর ও শুভ ইচ্ছার সতত পূরণ কে স্বর্গ এবং অসুস্থ শরীর ও ইচ্ছার পূরণ না হওয়াকে নরক মনে করে। 

৯)বৈদিক ধর্ম স্বয়ং সম্পূর্ণ। এর দ্বারা মনুষ্য সমাজের পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সমানভাবে সাধিত হয়। বিজ্ঞানকেও ধর্মের অঙ্গ মানা হয়েছে। বেদের মতে যে ব্যক্তি এই পার্থিব জগতে পরিব্যাপ্ত বিজ্ঞানের নিয়মগুলিকে তার শক্তির সূত্রগুলিকে জানে সে ব্রহ্মকেও জানতে পারে। 

১০)বৈদিক ধর্মে বর্ণ ব্যবস্থা, শ্রম বিভাগ, শিক্ষক, পোষক, সেবক, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র জন্ম থেকে হয় না কিন্তু গুণ-কর্ম-স্বভাব অনুসারে হয়। তাছাড়া আশ্রম ব্যবস্থা, ব্রহ্মচর্য থেকে সন্ন্যাস পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি অবস্থার সম্যক্ জ্ঞান এই ধর্মে বিদ্যমান।

১১)বৈদিক ধর্মে মানুষের উপকারীদের অর্থাৎ ঈশ্বর, অন্য মনুষ্য, অন্য প্রাণী, অচেতন পদার্থ যেমন-অগ্নি, বায়ু, সূর্য, চন্দ্র, জলাদির প্রতি আদর ও কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করা হয়েছে। ১২)বৈদিক ধর্মে পশু-পাখী ও নারীর মধ্যে আত্মা স্বীকার করে, স্ত্রী জাতিকে পাপ মনে করা হয় না। শুধু তাই নয়, মাতাকে জীবন নির্মাণের মূল আধার ও রাষ্ট্র নির্মাণকারিণী বলে গণ্য করা হয়। অথর্ব বেদ অনুসারে পরিবারের সমস্ত উৎপন্ন দ্রব্য ও আয়ের ১৬ভাগের মধ্যে, ৩ভাগ শ্রমিক ও কৃষক, ১ভাগ শাসনকর হিসাবে, ৮ভাগ গৃহস্বামী এবং অবশিষ্ট ৪ভাগ পত্নী পাবে। বৈদিক ধর্মে বিবাহ অটুট আত্মিক সম্পর্ক যা সন্ন্যাস বা মৃত্যু ছাড়া ছিন্ন হয় না। বহুবিবাহকে এই পবিত্র বন্ধনের শত্রু মনে করা হয়। সতী প্রথার কোন স্থান নেই। গর্ভাধান থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া(শবদাহ) পর্যন্ত ১৬টি সংস্কার মনুষ্যের উন্নতির জন্য যা অন্যত্র দুর্লভ। 

১৩)বৈদিক ধর্মে সমগ্র জগতে ঐক্যের দর্শন পরিলক্ষিত হয়। পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীরা এই মান্যতার সমর্থন করেন। বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এই বিশ্বকে বিজ্ঞানীরা Multiverse না বলে Universe বলেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বিজ্ঞানীরাও এই বিবিধের মাঝেও সৃষ্টির ঐক্য দর্শন করেছেন। এই মৌলিক গুণ বিশ্ব মানব সমাজের ঐক্যের পৃষ্ঠভুমি। 

১৪)বৈদিক ধর্মের নিজস্ব পর্ব বা উৎসব আছে। সেগুলো শুধু ধর্মীয় নয় রাষ্ট্রীয় পর্বও বটে। এই পর্বগুলি সাধারণত দুটি ঋতুর সন্ধিক্ষণে হয়। হোমযজ্ঞ বা অগ্নিহোত্র, বায়ু-জলাদি শুদ্ধি হেতু এবং প্রদুষণের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাও বটে। রক্ষা বন্ধন, বিজয়াদশমী, দীপাবলী, হোলী-দোল ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় পর্ব, বসন্তোৎসব, নবান্ন, পহেলা বৈশাখ, ক্রান্তি ও পরিবর্তনের প্রতীক। 

১৫)বৈদিক ধর্ম তথাকথিত ধর্মগুলির মূলস্রোত।আজ থেকে প্রায় ২০০কোটি বছর আগে শুরু হয়েছে। যা কিছু ভাল তা সব এর অবদান। পৃথিবীর কোন ধর্ম এখনও এমন সত্য জ্ঞানের পরিচয় দিতে পারেনি যা পূর্ব হতে বেদে বিদ্যমান ছিল না। বেদ সমস্ত মনুষ্য মাত্রের জন্য। বেদ মন্ত্রে উল্লেখ আছে --- "ওম্।য়থেমাম্ বাচম্ কল্যাণীমাবদানি জনেভ্যঃ"। অর্থঃ আমি যেমন সব মনুষ্যমাত্রকে কল্যানময়ী বেদ প্রদান করেছি, তোমরাও সেই জ্ঞান সবাই কে দান কর ।

"ওম্। মিত্রস্য চক্ষুসা সর্বানি ভূতানি সমীক্ষা মহে। পশ্য দেবস্য কাব্যং ন মমার ন র্জীয়তি"। অর্থঃ সবাই কে মিত্রবৎ মনে করবে। পরমেশ্বর এর জ্ঞান বেদ কখনও নষ্ট হয় না বা জীর্ণ হয় না। 

কত উচ্চ আদর্শ, শিক্ষা এবং দর্শন ও উপদেশপূর্ণ ;যা অন্য ধর্মগ্রন্থ থেকে অবশ্যই শ্রেষ্ঠ। বেদ বিষয়ে মহান দার্শনিক,বিদ্বান,যোগীগণ বলেছেন-- ১)আমেরিকান বিদ্বান থেরো উল্লেখ করেছেন যে - "Of all the so called revelations,Vedas are the only ones whose principles are based on reason and science. " যতসব ঈশ্বরীয় গ্রন্থ আছে তাদের মধ্যে কেবল বৈদিক সিদ্ধান্ত যুক্তি ও বিজ্ঞানের উপর আধারিত। 

২)প্রোফেসর ম্যাক্সমুলার উল্লেখ করেছেন যে- "I maintain that there is nothing of importance equal to the Vedas. " আমার মতে বেদের সমান গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। 

৩)ঋষি অরবিন্দ ঘোষ বলেছেন- "Vedas only contain the truth of science and the truth religion ". বেদের মধ্যে বিজ্ঞান ও ধর্মের সত্য নিহিত আছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ধর্মের নিবাস কোথায়? মহাভারত অনুসারে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির এবং যক্ষরাজের মধ্যে যে প্রশ্নোত্তর হয়েছিল, ঐ সময় যক্ষরাজ যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন ককরেছিলেন--ধর্মের নিবাস কোথায়? যুধিষ্ঠির উত্তরে বলেছিলেন, সজ্জনতার মধ্যে ধর্ম থাকে। ধর্মপ্রেমী মানব তিন প্রকারের। কাহারো নামে শ্রদ্ধা হয়, কাহারো ধামে শ্রদ্ধা হয়,এবং কাহারো কর্মে শ্রদ্ধা হয়ে থাকে। ধার্মিক হতে গেলে বা করতে গেলে -শুদ্ধ বিচার, শুদ্ধ আচরণ, শুদ্ধ আহার-বিহারের প্রয়োজন হয়। ধর্মই জীবন।বলা হয়েছে -"ধর্মেণ হন্যতে ব্যাধি, ধর্মেণ হন্যতে রিপুঃ, ধর্মেণ হন্যতে পাপং, য়তো ধর্মঃ, ততো জয়ঃ"।অর্থাৎ ধর্মের দ্বারা ব্যাধি, রিপু, পাপ এসব নাশ হয়, যেখানে ধর্ম, সেখানে জয়। 

মনু মহারাজ বলেছেন- "ধর্মো এব হতো হন্তি ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ। অর্থাৎ ধর্মকে যে হত্যা করে, ধর্ম তাকে হত্যা করে এবং ধর্মকে যে রক্ষা করে, ধর্ম তাকে রক্ষা করে।

ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তা,  সর্বাধার,  সর্বব্যাপক,  সচ্চিদানন্দ,  অজর, অমর,  নিত্য পবিত্র আদি গুণ দ্বারা পূঁর্ণ সত্তা।  জ্ঞান সত্য,  শাশ্বত নিয়ম,  সৃষ্টি নিয়মাকুল , সর্বহিতকারী মানবমাত্রের জন্য এক সমান ব্যবহার্য্য, প্রমাণ এবং তর্ক দ্বারা সিদ্ধ পক্ষপাত রহিত বিদ্যা। বেদ যা সমস্ত বিদ্যার ভান্ডার এবং আদিমূল। বৈদিক ধর্মের সমস্ত মত এবং সম্প্রদায়ের আদিস্রোত বেদই।


মানবের সৃষ্টিকাল থেকে আজ পর্যন্তের ইতিহাস স্পস্ট করেছে যে, মনুষ্য মূলভূত জ্ঞান অর্জন করতে পারতো না। কারন জ্ঞান দুই প্রকার - এক নৈমিত্তিক বা মূলভূত জ্ঞান এবং দ্বিতীয় নৈসর্গিক বা স্বাভাবিক জ্ঞান।  নৈমিত্তিক জ্ঞান একদম মূল যাহা বিনা জ্ঞান বিকশিত হতে পারে না। যেমন গণিতের সংখ্যা এক দুই আদি বিনা গণিত বা ভৌতিক বিজ্ঞানের  কোন ক্ষেত্র বা বিকাশ সম্ভব নয়।  সমস্ত ভৌতিক বিজ্ঞানের আত্মা গণিত এবং  ইহা বিশ্ববিখ্যাত এবং সর্বমান্য যে গণিত বিজ্ঞানের মূল আধারভূত সংখ্যা বেদ এবং বৈদিক গণিত বিজ্ঞান থেকে উদ্ভুত হয়েছে। স্বাবাবিক জ্ঞান মনুষ্যের মধ্যে জন্ম থেকেই হয়। ইহা জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং কর্মেন্দ্রিয়ের ব্যবহারের সাথে সমন্ধিত। মানুষ প্রশিক্ষন দ্বারা নৈমেত্তিক জ্ঞান প্রাপ্ত হবার পর স্বাধ্যায়,  চিন্তন, মনন, অভ্যাস  দ্বারা বিদ্যার উন্নতি করতে পারে।  

আস্তিক জগতে কিছু লোক  যারা জ্ঞানের আদিস্রোত ঈশ্বর কে মানে না।  এরূপ লোককে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।  ১।  সত্ অসত্ বিবেকবাদী ২। প্রকৃতিবাদী ৩। সামাজিক বিকাসবাদী।

প্রথম বর্গের লোকের মত এই যে পরমেশ্বর আমাদের  সত্য - অসত্য,  ধর্ম - অধর্মের নির্ণয় করার জন্য চেতনা বা চেতনাত্মা দিয়েছে যা দ্বারা আমরা নিজ কর্তব্য অকর্তব্যের স্বয়ং নির্ধারন করতে পারি ।  এই তর্ক নৈমিত্তিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে সঠিক নয়।  ইহা উচিৎ যে, ব্যক্তি বাহ্য বাতাবরণ কে দেখে স্বাভাবিক জ্ঞান ও নিজ মান্যতার উপর কিছু নির্ণয় নিতে পারে। এবং এই নির্ণয় সেই ব্যক্তির সামাজিক বাতাবরণ ও মানত্যতা দ্বারা প্রভাবিত।  তাহার আধারে এক সমান, মানবতাবাদী,  সর্বমান্য,  আচারসংহিতা হতে পার না। এইজন্য জার্মান দার্শনিক কাণ্ট নিজ "মেটাফিজিক্স অফ মোরল্স" পুস্তকে লিখেছিলেন -

" Feeling which naturally differ in degree can not furnish  uniform standard of good and evil,  nor has any one a right to form judgements for others by his own feelings"

" ব্যক্তির ভাবনা বিভিন্ন হতে পারে  যা ভালো - খারাপ এর মধ্যে এক সমান মাপদন্ড তৈরী করতে পারে না।  আর না অন্যের সমন্ধ্যে নিজ বিচারানুকুল নির্ণয় নেবার অধিকার হয় "

ইহার বিপরীত ঈশ্বর, জীব,  প্রকৃতি আদির স্বরূপ তাহার পারস্পারিক সমন্ধ্য,  সৃষ্টি রচনা,  ভৌতিক জ্ঞান  বিজ্ঞান,  মোক্ষ সাধানাদির মূল জ্ঞান তো শুধু মাত্র চেতনা দ্বারা হতে পারে না।  তো এই ধারণা অমান্য। 

প্রকৃতিবাদির মত যে প্রকৃতিকে দেখো সব জ্ঞান প্রাপ্ত করা যায়।  ইহা সর্বদা মান্য নয়।  যদি তাহাই হতো তো প্রকৃতির ক্রোড়ে পালনরত বনবাসি  জনজাতিও সুসভ্য,  সুশিক্ষিত এবং সুসংস্কৃত হতো। কোনও বনবাসি জাতি  অসভ্য এবং অবিকসিত  থাকতো না।  কারন তাহার সামনে তো প্রকৃতির বিশাল পুস্তক রয়েছে।  কোন শিক্ষা দেবার জন্য বিদ্যালয় খোল অধ্যয়ন অধ্যাপন করার আবশ্যকই নেই।  

তৃতীয় বিকাসবাদীর অনূসারে ধার্মিক নৈতিকতা এবং সমাজিক জ্ঞান আদির  ক্রমিক বিকাশ হয়ে থাকে। অতঃ সব প্রকারের জ্ঞান বিকাসবাদের পরিণাম।  ইহা মানা  একদম উচিৎ নয় কারণ বিকাশ তাহারই হয়ে থাকে যা পূর্ব থেকে  সুক্ষরূপে বিদ্যমান।  আর ইহা সর্বসম্মত তথ্য যে বেদে বিশ্বের প্রাচীনতম পুস্তক।  অতঃ বিশ্বের মূল জ্ঞান বেদেই এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের যে প্রগতি আমরা দেখতে পাই তা সেই বেদ জ্ঞানেরই বিকশিত রুপ।

বেদকে শুধু ভারতীয়রা অপৌরষেয় মানে না বরং বিভিন্ন দার্শনিকরাও ইহা মান্য করে যে সত্য সনাতনের আদি স্রোত ঈশ্বরই।  অন্য কেহ নয়।

(i)  দার্শনিক কাণ্ট লিখেছে - we maw well conede that if  the Gospel had no previously taught the universal moral law in their fully purity,  reason would not yet have attained so perfect an insight of them

আমি উত্তমপ্রকারে মানি যে,  যদি ঈশ্বরীয় জ্ঞান আমাদের প্রারম্ভে সত্য শাশ্বত নিয়ম কে না বলতো তো কেবল বুদ্ধি এমন নির্ভ্রান্ত এবং পূর্ণরূপে প্রাপ্ত করতে পারতো না।

(ii) বিদ্বান আর ফিলংট লিখেছে যে, The light of nature and the works of creation and providence are not sufficient to give that knowledge of God and of his will which is necessary  unto salvation.  The deepest discoveries and highest achivements of the unaided intellect need to be supplemented by truths which can only come to us through special revelation (theism, p 300)

অর্থাৎ প্রকৃতির প্রকাশ এবং সৃস্টির কার্য ঈশ্বর কে বোঝা এবং মোক্ষ প্রাপ্তির জন্য যথেষ্ট নয়।  গহনতম শোধ এবং উচ্চতম উপলব্ধির জন্যও সহায়তাহীন বুদ্ধির জ্ঞানের দ্বারা পুর্তির আবশ্যকতা যা আমরা ঈশ্বরীয় জ্ঞান দ্বারাই প্রাপ্ত হয়ে থাকে।

(iii) এই বিষয়ে গ্রীক দার্শনিক প্লেটো লিখেছে -  we will waite for one,  be He a God or an inspire man to instrut us in religious duties and to take away the darkness from our eyes,  we must sieze upon the best human views in navigating the dangerous sea of life,  if there is no safer or less  perious way,  no stouter vesel,  no Divine Reavelation,  for making this voyage (phaedo)

অর্থাৎ ধার্মিক কর্তব্যের শিক্ষা দেবার জন্য আমরা পরমেশ্বর  বা তার দ্বারা প্রেরিত কোন পুরুষের প্রতীক্ষা করা পড়ে  যে আমাদের চোখের সামনের অন্ধকার দূর দেয়। এই মানব জীবনরূপী ভয়ংকর সমুদ্র কে উত্তমরূপে পার করার জন্য যদি আমাদের  ঈশ্বরীয় জ্ঞান দ্বারা  কোন প্রবল সাধন মিলা সর্বদা অসম্ভব হয় তো উত্তম থেকে উত্তম মানবীয় বিচারের উপর আমাদের নির্ভর প্রয়োজন পড়ে।

(iv) দার্শনিক সুকরাত ঈশ্বরীয় জ্ঞানের ব্যাপারে বলেছেন  - You may resign yourself or sleep and give yourself upto despire,  unless God in this goodness,  shall reach safe to send you instraction.

অর্থাৎ  তুমি যদি নিদ্রার প্রতি নিজেকে সমর্পন করে থাকো যা নিরাশের প্রবাহে বহমান থাকে যতক্ষণ পরমেশ্বর নিজ কৃপা দ্বারা তোমাকে শিক্ষা না দেয়। 

উপরোক্ত  পাশ্চাত্য প্রমান দ্বারা সিদ্ধ হয় যে জ্ঞানের আদি স্রোত ঈশ্বর।   ভারতীয় দর্শন এবং বৈদিক বাঙ্ময় তো প্রারম্ভ থেকেই মান্য করে যে,  মনুষ্য মাত্রের নৈমিত্তিক জ্ঞানের জন্য ঈশ্বরীয় জ্ঞানের আবশ্যকতা। 

কপিল ঋষি বলেছেন - 

ন পৌরষেয়ত্বং তত কর্তুঃ পুরুষস্যাভাবাত্।

নিজ শক্ত্যভিব্যক্তেঃ স্বতঃ প্রামাণ্যাত্।।

(সাংখ্যদর্শন ৫।৫১) 

অর্থাৎ বেদের কর্তা কোন পুরুষ নয়।  এইজন্য বেদ অপৌরষেয়। বেদ নিজ শক্তি দ্বারা স্বতঃ প্রমাণ।

মহর্ষি ব্যাসদেব বলেছেন -

অতএব চ নিত্যত্বম্

(বেদান্তদর্শন ১।২৯)

বেদের নিত্যতা সিদ্ধ।  অতএব বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান।

ইহার অতিরিক্ত বেদে অনেক মন্ত্র রয়েছে যাহা দ্বারা সিদ্ধ হয় যে  সৃষ্টির আরম্ভে ঈশ্বরীয় জ্ঞানের আবশ্যকতা হয়েছে এবং এজন্য পরম ব্রহ্ম পরমেশ্বর সৃষ্টির আদিতে বেদজ্ঞান দিয়েছে যাতে সমস্ত মানব নিজ উন্নতি এবং মরণান্তে মোক্ষ কে প্রাপ্ত হতে পারে। যেমনঃ

অপূর্বেণেষিতা বাচস্তা বদন্তি যথাযথম্।

বদন্তীর্যত্র গচ্ছন্তি তদাহুর্ব্রাহ্মণং মহত্।।

(অথর্ববেদ ১০।৮।৩৩)

অর্থাৎ সেই কারণ রহিত পরমাত্মা অপার কৃপা করে সৃষ্টির আদিতে মনুষের জ্ঞানের জন্য ব্রহ্মম - জ্ঞানেন উপদেশ দিয়েছেন যাহা দ্বারা আমরা যথার্থ জ্ঞান প্রাপ্ত হতে পারি।

উপরোক্ত প্রমাণ এবং শাস্ত্রীয় বচন দ্বারা সিদ্ধ হয় যে,  মনুষ্যের সৃস্টির আদিতে নৈমিত্তিক জ্ঞানের আবশ্যকতা হয়। সেই ঈশ্বর ব্যতিত অন্য কেউ নেই যে এই  জ্ঞান দান করতে পারে। যেমন পিতা নিজ পূত্রের কল্যাণার্থে সব প্রকার শিক্ষা দীক্ষা দিয়ে তাহার কল্যাণ চান।  এই প্রকার ঈশ্বর নিজ সৃষ্টির কল্যাণার্থে সৃষ্টির সাথে ঋষির মাধ্যমে সত্য সনাতন পবিত্র বেদ জ্ঞান দান করেছেন যাতে মানুষ তাদের নিজ কর্তব্য অকর্তব্যের  নির্ধারণ করতে পারে।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ