উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকং গতাসুমেতহমুপশেষ এহি।
হস্তাগ্যাভস্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভি সংবভূব।।
➢ অথর্ব্ববেদ ১৮/৩/২
বঙ্গানুবাদঃ- হে নারী! তুমি এই মৃত পতির পার্শ্বে কেন শয়ন করিয়া আছ। ওখান হইতে উঠিয়া জীবিত মানুষ্যদের নিকটে এখানে এস। তোমার পাণি গ্রহণকারী পতির সঙ্গে সেই পত্নীত্ব টুকুই জন্মিল।
সরলার্থঃ রমণি ! গাত্রোত্থান কর, তুমি এক মৃত ব্যক্তির পার্শ্বে শুইয়া আছো। তোমার (মৃত) স্বামীকে পরিত্যাগ করিয়া জীবিত সংসারে পূনর্ব্বার প্রবেশ কর; এবং যিনি তোমাকে হস্তে ধরিয়া আকর্ষণ করিতেছেন,তাঁহার স্ত্রীত্ব গ্রহণ কর। তিনি তোমাকেবিবাহ করিতে ইচ্ছুক আছেন।
নেহেরু মার্কা ইতিহাস, যে ইতিহাসের মূলকথা হলো, মুসলমানদের সম্পর্কে কিছু খারাপ লেখা যাবে না, সেই ইতিহাসের অকল্যানে আমরা প্রায় সবাই এটাই জানি যে, হ্যাঁ, সতীদাহ হিন্দু সমাজের প্রথা; এতে জীবন্তু হিন্দু বিধবাদের পুড়িয়ে মারা হতো ।আসলে এই প্রথার পেছনে এক ঘোর অভিসন্ধি ছিল সমাজের ধ্বজাধারী ব্যক্তিবর্গের ।
বৃদ্ধ স্বামীর মৃত্যুর পর তার তরুণী ভার্যা যাতে তার সম্পত্তির ওপর অধিকার জমাতে না পারে, এটাই ছিল সমাজের কর্তা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য।
তার ফলে, তার সম্পত্তি দশভূতে মিলে ভোগ করা খুব সহজ হয়ে যায় আর কি।তৎকালীন সমাজে বহুবিবাহও ছিল এক মারাত্মক ব্যাধি, কুলীন ব্রাহ্মণরা যেন স্ত্রী নয়, বিনেপয়সায় আমৃত্যু ঝি পেতেন একের পর এক; তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, এর কোনোটাই সনাতন ধর্মানুসারে নয়।
কেমন সমাজ, হিন্দু সমাজ ? যে সমাজে জীবন্ত মানুষদের পুড়িয়ে মারা হতো ? মুসলমানদের এই প্রশ্নের মুখে পড়েন নি, এমন শিক্ষিত হিন্দু, হিন্দুসমাজে খুব কমই আছে। সত্যিই তো, সতীদাহ একটি নৃশংস প্রথা। তাই মুসলমানদের এই প্রশ্নের জবাবে হিন্দুদের মাথা নত করে থাকা ছাড়া, অন্য কোনো উপায় থাকে না ।
কিন্তু, সত্যিই কি সতীদাহ হিন্দু সমাজের প্রথা ? রামায়ণ, মহাভারতে কি সতীদাহের কোনো উল্লেখ আছে বা এই ধরণের কোনো ঘটনা আছে ? জঙ্গলে বাস করলে যেমন, কিছুটা জংলীত্ব আপনাকে বরণ করতেই হবে, সভ্য হয়ে আপনি জঙ্গলে বাস করতে পারবেন না; তেমনি মুসলিম শাসনে ব মুসলমানদের সাথে বসবাস করতে গেলেও আপনার জীবনাচরণে কিছু না কিছু মৌলিক পরিবর্তন বাধ্য হয়ে আপনাকে আনতেই হবে। সতীদাহ, বাল্য বিবাহ এবং রাত্রীকালীন বিবাহ এই ধরণের ঘটনা এবং তা ভারতে মুসলিম দুঃশাসনের কুফল। তা ছাড়া পুরাণকার দের বেদের ভুল ব্যাখ্যা দ্বারা সতরদাহ প্রথা যোগ করেন ব্রাহ্মণ সমাজ।
৭১১ খিষ্টাব্দে, মুহম্মদ বিন কাশিমের কাছে সিন্ধুর হিন্দু রাজা দাহির পরাজিত হলে, রাজপরিবারের মেয়েরা সম্মান বাঁচাতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সময় তাদের এক মন্ত্রী, রাণীকে জানায়, মুসলিম সৈন্যরা খুবই নৃশংস এবং অমানবিক হয়, এমনকি তারা মৃত মেয়েদেরকেও ধর্ষণ করতে ছাড়ে না। এই কথা শুনে মৃত্যুর পর দেহের পবিত্রতা রক্ষার্থে রাণী আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এবং অন্তঃপুরের সব মেয়েরা ঐভাবেই আত্মাহুতি দেয়। এই হলো ভারতবর্ষে সতী হয়ে মরার জন্য সতীদাহ প্রথার শুরু।
এরপর যখনই কোনো হিন্দু রাজা মুসলমানদের কাছে পরাজিত হয়ে রাজ্য হারিয়েছে, তখনই সেখানকার নারীরা সিন্ধুর রাজপরিবারের নারীদের দৃষ্টান্তকে অনুসরণ করে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে নিজেদের শেষ করে দিয়েছে। যেহেতু হিন্দুসমাজে বিধবা বিবাহের প্রচলন ছিলো না, সেহেতু প্রথমত যোদ্ধা পুরুষদের বিধবা স্ত্রীরা এবং পরে সকল ধরণের বিধবারাই এভাবে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করে আগুনে আত্মাহুতি দিতে শুরু করে এবং এটা ছিলো সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়।
হিন্দু সমাজকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নারীদের এই আত্মবিসর্জন, কালক্রমে হিন্দু সমাজে খুব শ্রদ্ধার বিষয় হয়ে উঠে এবং যেহেতু সতী হিসেবেই এবং সতীত্ব রক্ষার জন্য তারা নিজেদেরকে দাহ করছে, তাই এর নাম হয়ে উঠে সতীদাহ এবং শত শত বছর ধরে চলার ফলে এটা এক সময় হিন্দু ধর্মের অঙ্গ হয়ে উঠে।
আমার এই তথ্যগুলো অনেকের কাছেই বানানো গল্প মনে হতে পারে; তাদের জন্য মহাভারত থেকে কিছু দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। এগুলো পড়ার সাথে সাথে এটা মাথায় রাখবেন যে, রামায়ন-মহাভারতে যেগুলি নেই, সেগুলো হিন্দু ধর্ম ও সমাজের কোনো প্রথা নয়।
মহাভারতের গল্প যার থেকে শুরু, সেই রাজা শান্তনু, শেষ বয়সের দিকে মৎস্য রাজার কন্যা সত্যবতীকে বিয়ে করে। অতঃপর সত্যবতীর দুই পুত্র জন্মানোর পর রাজা শান্তনু মারা যায়। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক, রাজা শান্তুনুর জ্যেষ্ঠপুত্র ভীষ্ম, রাজা না হওয়ায়, রাজাবিহীন হস্তিনাপুর রাজ্যকে ভীষ্ম ও সত্যবতী মিলে ততদিন পর্যন্ত শাসন করে, যতদিন না সত্যবতীর পৌত্র পাণ্ডুর রাজ্যভিষেক হয়। পরে পাণ্ডু, রাজ্য ছেড়ে বনে চলে গেলে, অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে কার্যনিবাহী রাজা নিযুক্ত করা হয় এবং ধৃতরাষ্ট্র কর্তৃক অপমান সইতে না পেরে সত্যবতী বনের এক আশ্রমে চলে যায় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়- কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কিছু বছর আগে।
এই প্রথা চালু হয়েছিল রাজা বল্লাল সেনের আমলে শুধুমাত্র বঙ্গ প্রদেশে
এখানে খেয়াল করুন, জীবিত সত্যবতীকে কিন্তু রাজা শান্তনুর মৃতদেহের সাথে দাহ করা হয়নি।
পরে, মহাভারতের আরেক ঘটনায়, বনে, পাণ্ডুর মৃতদেহের সাথে, পাণ্ডুর দ্বিতীয় স্ত্রী মাদ্রির মৃতদেহকে এক সাথে দাহ করা হয়। এই ঘটনাকে কেউ সহমরণের দৃষ্টান্ত হিসেবে ভুল করতে পারেন, তাই এই ঘটনাটা বিস্তারিত তুলে ধরছি: পাণ্ডু যেদিন কুন্তীকে বিয়ে করে, সেইদিন রাতেই পাণ্ডুকে যুদ্ধের জন্য যাত্রা করতে হয়। কিন্তু যুদ্ধ জয় করে ফেরার পথে, মন্দ্র রাজ, তার পালিত মেয়ে মাদ্রির সাথে পাণ্ডুর বিয়ে দিয়ে দেয়, ফলে মাদ্রীকে নিয়ে পাণ্ডু হস্তিনাপুর ফিরে আসে।
এরপর মাদ্রীর জেদের ফলে পাণ্ডু দুই স্ত্রীকে নিয়ে বনে বেড়াতে যায় এবং সেখানে মাদ্রীর ইচ্ছাকে পূরণ করার জন্যই হরিণ রূপে সহবাস রত এক ঋষি ও তার স্ত্রীকে পাণ্ডু তীর মেরে হত্যা করে বসে। ঋষি মারা যাওয়ার পূর্বে স্বরূপে পাণ্ডুকে দেখা দেয় এবং এই অভিশাপ দেয় যে, পাণ্ডু যখনই তার কোনো স্ত্রীর সাথে সহবাস করবে, তারপরই সে মারা যাবে। এরপর পাণ্ডু প্রাসাদে ফিরে আসে এবং সবাইকে জানায় যে তার মাধ্যমে এক ঋষি হত্যা হয়েছে। এর প্রায়শ্চিত্য করার জন্য সে রাজ্যের দায়িত্ব ছেড়ে স্থায়ীভাবে বনে চলে যেতে চায় এবং চলেও যায়। এরপর বনেই চলছিলো পাণ্ডু ও তার দুই স্ত্রীর দিন।
এই ফাঁকে দেবতাদের আশীর্বাদে কুন্তীর সন্তান লাভের বরের কথা জানতে পেরে পাণ্ডুর অনুমতি নিয়ে কুন্তী তিন পুত্র এবং মাদ্রী দুই পুত্র লাভ করে। এই তিন ও দুই মিলেই হয় পাঁচ পাণ্ডব। এর বেশ কয়েক বছর পর, হঠাৎ, পাণ্ডু একদিন মাদ্রীর প্ররোচনায়, তার উপরে থাকা অভিশাপের কথা ভুলে গিয়ে মাদ্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয় এবং সহবাস শেষে মারা যায় ।
মাদ্রীর কারণেই যে পাণ্ডুকে বনের জীবন বেছে নিতে হয়েছিলো এবং তার কারণেই আবার পাণ্ডুর প্রাণ গেলো, এসব ভেবে এবং স্বামীর শোক সইতে না পেরে মাদ্রী আকস্মিকভাবে প্রাণ ত্যাগ করে এবং স্বামী স্ত্রী দুইজনকেই এক সাথে দাহ করা হয়।
মুসলিম বা ইংরেজ আমলের সতীদাহের যে রূপকে আমরা জানি, এই ঘটনা সেরকম কিছু নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, পাণ্ডুর সাথে তার জীবিত স্ত্রী কুন্তীকে কিন্তু দাহ করা হয় নি। কুন্তী, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরও বেঁচে ছিলো। সুতরাং মহাভারতের যুগে সতীদাহের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আর যেহেতু রামায়ণ , মহাভারতেরও আগের কাহিনী, সেহেতু রামায়ণে সতীদাহের কোনো ঘটনা থাকাই সম্ভব নয় ।
মহাভারতের এই ঘটনাগুলি থেকে এটা স্পষ্ট যে, হিন্দুধর্মের যেসব প্রামান্য গ্রন্থ সেগুলোতে সতীদাহের মতো কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই, তাই সতীদাহ হিন্দুধর্মের কোনো সার্টিফায়েড প্রথা নয়।
তাহলে মধ্যযুগে সতীদাহপ্রথা এলো কোথা থেকে ? এই প্রশ্নের জবাব ভাবুন, আর আমার উপরে বর্ণনা করা সিন্ধুর রাজপরিবারের মেয়েদের আগুনে আত্মবিসর্জন দেওয়ার ঘটনার বিষয়গুলোকে মিলিয়ে দেখুন। দুই এ দুই এ চার এমনিতেই মিলে যাবে।
এরপরও অনেকেই মনে করতে পারেন, সিন্ধুর রাজ পরিবারের মেয়েদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে, পরবর্তীতে পরাজিত রাজ পরিবারের মেয়েরা আগুনে ঝাঁপ দেবে এবং কালক্রমে এটা একটা প্রথা হয়ে দাঁড়াবে, এটা কোনো কথা হলো ?
প্রথা যে কত শক্তিশালী একটা ব্যাপার, সেটা বোঝানোর জন্য আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার একটা ঘটনা বলছিঃ
সব হিন্দু পরিবারে ভাইফোঁটার উৎসব থাকলেও, আমার খুব ঘনিষ্ঠ একটি হিন্দু পরিবারে কোনো ভাই ফোঁটা উৎসব নেই। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানতে পারলাম, দুই পুরুষ আগের কোনো এক ভাই ফোঁটা উৎসবের পরের দিন, যে ভাইকে ফোঁটা দেওয়া হয়েছিলো, সেই ভাই ই মারা যায়। এরপর ওই পরিবারে এই বিশ্বাস ঢুকে যায় যে, তাদের জন্য ভাইফোঁটা অশুভ । তারপর থেকেই তারা এই উৎসব বাদ দেয় এবং এখনও প্রায় ১০০ বছর পরও পারিবারিক প্রথাকে মেনে তারা ভাইফোঁটা পালন করে না।
প্রথা এমনই শক্তিশালী একটা ব্যাপার, যখনই তা কোনো কারণে বন্ধ হয়, তা যেমন বন্ধই থাকে, তেমনি যখনই কোনো প্রথা, কোথাও থেকে শুরু হয়, সেটাও চলতেই থাকে। তাই যখনই কোনো হিন্দু রাজার রাজ্যের উপর মুসলমান শাসকদের দৃষ্টি পড়েছে এবং ওই হিন্দু রাজারা যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হয়েছে, তখনই মুসলমান সৈন্যদের ধর্ষণ এমনকি মৃতদেহকেও ধর্ষণের কবল থেকে রক্ষা করার জন্যই পূর্বসুরী সিন্ধু রাজপরিবারের মেয়েদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে পরবর্তী রাজ পরিবারের মেয়েদের এরকমটা ঘটানো অসম্ভব কিছু নয়, যেহেতু পরাজিতদের মেয়েদেরকে মুসলমান সৈন্যরা নির্বিচারে ধর্ষণ করতো, কোরান হাদিসেও যার অসংখ্য উদাহরণ আছে, এবং আছে মুসলমানদের ইতিহাসেও। সেহেতু সতীদাহ প্রথার উৎপত্তির ব্যাপারে আমার অনুসন্ধান ও জানাকে আমি ১০০% সঠিক ও সত্য বলে মনে করি।
রাজা রাম মোহন রায়, তার বাল্যকালে তার বৌদিকে সতী হতে দেখেন; এই বিষয়টি তাকে গভীরভাবে ব্যথিত করে। পরে তিনি ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর, বৃটিশ সরকারের ভাইসরয়, “উইলিয়াম বেন্টিংক” এর সহায়তায় সতীদাহ বন্ধে একটি আইন পাশ করাতে সমর্থ হন। এভাবেই ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয় সতীদাহ প্রথা।
কিন্তু এই সতীদাহ প্রথা বন্ধেও মুসলমানরা খুঁজে পায় মুসলিম শাসকদের অবদান। এই সব মূর্খদের উদ্দেশ্যে বলছি, মুসলমান শাসকরা সতীদাহ বন্ধ করতে উদ্যোগী হলে এটার জন্য রাম মোহন রায়কে এত ফাইট করতে হতো না, আর এটা ১৮২৯ সালের পর, ইংরেজ আমলে বন্ধ না হয়ে ১৭৫৭ সালের আগে হতো। মুসলমানদের এ এক সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র; মুসলিম শাসকদের অত্যাচারের কারণেই যে ভারতে সতীদাহ প্রথার উদ্ভব হয়েছে, এই ইতিহাসকে চাপা দিতেই তাদের এই অপপ্রচার। কিন্তু সত্য চাপা থাকে না, সত্য একদিন না একদিন প্রকাশ হয় ই এবং তা আজ প্রকাশিত হয়েছে।
कुह॑ स्विद्दो॒षा कुह॒ वस्तो॑र॒श्विना॒ कुहा॑भिपि॒त्वं क॑रत॒: कुहो॑षतुः ।
को वां॑ शयु॒त्रा वि॒धवे॑व दे॒वरं॒ मर्यं॒ न योषा॑ कृणुते स॒धस्थ॒ आ ॥
-ऋग्वेद १०.४०.२[10/40/2]
" কুহস্বিদ্ দোষা কুহ বস্তোরশ্বিনা কুহাভিপিত্বং করতঃ কুহোষতুঃ।
কো বাং শযুত্রা বিধবেব দেবরং মর্যং ন যোষা কুণুতে সদ্যস্থ আ।।"-ঋগ্বেদ ১০।৪০।২
पदार्थान्वयभाषाः -(अश्विना) हे विवाहित स्त्री-पुरुषों ! तुम दोनों (कुह दोषा) किस स्थान में रात्रि को (कुह वस्तोः) और कहाँ दिन में (कुह-अभिपित्वं करतः) कहाँ भोजनादि की अभिप्राप्ति करते हो (कुह-ऊषतुः) कहाँ वास करते हो (वां शयुत्रा कः) तुम दोनों का शयनाश्रम कौन सा है (विधवा-इव देवरम्) जैसे विधवा और देवर का नियोग हो जाने पर व्यवहार होता है (मर्यं न योषा सधस्थं कृणुते) जैसे वर के प्रति वधू सहस्थान बनाती है, ऐसे विवाहित स्त्री-पुरुषों ! तुम्हारा व्यवहार हो ॥
भावार्थभाषाः -गृहस्थ स्त्री-पुरुषों को सदा प्रेम के साथ रहना चाहिए। जैसे विवाहकाल में वर-वधू स्नेह करते थे, वह स्नेह बना रहे। कदाचित् मृत्यु आदि कारणवश दोनों का वियोग हो जाये, तो सन्तान की इच्छा होने पर नियोग से सन्तानलाभ कर सकते हैं ॥[grhasth stree-purushon ko sada prem ke saath rahana chaahie. jaise vivaahakaal mein var-vadhoo sneh karate the, vah sneh bana rahe. kadaachit mrtyu aadi kaaranavash donon ka viyog ho jaaye, to santaan kee ichchha hone par niyog se santaanalaabh kar sakate hain]-ब्रह्ममुनि
দেবরঃ কস্মাৎ দ্বিতীয়ো বর উচ্যতে।-নিরুক্ত ৩।১৫
পরাশর সংহিতার অংশ
বেদের ভুল ব্যাখ্যার পরিনামঃ
অধুনা কিছু নাস্তিক ও অন্যান্য ধর্মালম্বীদের মধ্যে কিছু কুচক্রী লোক বেদ এর কিছু মন্ত্র এর রেফারেন্স দেয় সতীদাহ প্রথা এর পক্ষে হিসেবে দাবী করে।তারা অথর্ববেদ ১৮.১.১-২এর রেফারেন্স দেয়।মজার বিষয় হল রেফারেন্সটা দেখলেই বোঝা যায় যে তারা জীবনেও এই মন্ত্রগুলো পড়ে দেখেনি,কিছু নাস্তিকদের পেইজ থেকে কপি পেষ্ট করেছে মাত্র।কারন দেখা যায় যে ওই মন্ত্র দুইটি সতীদাহ প্রথাকে সমর্থন তো দুরে থাক,বরং স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর সুখী জীবন নিশ্চিত করতে বলেছে এবং প্রয়োজনে পুনরায় বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে।দেখা যাক বেদ এর মন্ত্রগুলো-
অথর্ববেদ ১৮.১.৩
ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্।
ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।
মর্ত্য-হে মনুষ্য,ইয়ং নারী-এই স্ত্রী,পতিলোকম- পতিলোককে অর্থাত্ বৈবাহিক অবস্থাকে,বৃণনা- কামনা করিয়া,প্রেতম-মৃ ত পতির,অনু-পরে,উপ ত্বা-তোমার নিকট,নিপদ্যতে-আ সিতেছে,পুরাণম-স নাতন,ধর্ম্মম-ধর্মকে,পালয়ন্তী-পালন করিয়া,তস্য-তাহার জন্য,ইহ-এই লোকে,প্রজাম্-সন্তানকে,দ্রবিণং- এবং ধনকে,ধেহি-ধারন করাও
অর্থাত্,হে মনুষ্য!এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে।সে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে।
এই বিষয়ে একই ভাবে তৈত্তিরীয় আরন্যক ৬.১.৩ এ বলা হয়েছে-
ইয়ং নারী পতিলোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্বা মর্ত্য প্রেতম।
বিশ্বং পুরাণ মনু পালয়ন্তী তস্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।
অর্থাত্,হে মনুষ্য!মৃত পতির এই স্ত্রী তোমার ভার্যা।সে পতিগৃহ সুখের কামনা করিয়া মৃত পতির পরে তোমাকে প্রাপ্ত হইয়াছে।কিরুপ ভাবে?অনাদি কাল হইতে সম্পূর্ন স্ত্রী ধর্মকে পালন করিয়া।সেই পত্নীকে তুমি সন্তানাদি এবং ধনসম্পত্তি সহ সুখ নিশ্চিত কর।
পরের মন্ত্রটি দেখি,
অথর্ববেদ ১৮.৩.২(এই মন্ত্রটি ঋগবেদ ১০.১৮.৮ এ ও আছে)
উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকংগতাসুমেতমুপশেষ এহি।
হস্তাগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভি সংবভূব।।
নারী-হে স্ত্রী!তুমি,এতত্ গতাসুম্-এই গতপ্রান পতির ,উপশেষে-শয়ন করিয়া আছ(মায়া ধরে আছ),জীবলোকং অভি উদীর্থ-(মায়া ত্যগ করে)বাস্তবতায় ফিরে এস(জীবলোকে),তব- তোমার,হস্তগ্রাভস্য দিধিষোঃ-পাণিগ্রহনকারী,পত্যুঃ-পতির সঙ্গে,ইদং জনিত্বম-আবার পত্নীত্ব,অভি সংবভুব-সৃষ্টি হল
অর্থাত্,হে নারী!মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি?বাস্তবজীবনে ফিরে এস।পুনরায় তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির সাথে তোমার আবার পত্নীত্ব তৈরী হবে।
সায়নভাষ্যে এই মন্ত্রের অর্থ দেখা যায় এরকম-
"হে মৃতপতীর পত্নী!জীবিত পুত্রপৌত্রের লোক অর্থাত্গৃ হের কামনা করে শোক ত্যগ কর।মৃত পতির মায়া ত্যগ কর।তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির স্ত্রী হইবার ইচ্ছায় তুমি নিশ্চিতরুপে অনুসরন কর।
প্রায় একইভাবে তৈত্তিরীয় আরন্যক এ বলা হয়েছে ৬.১.১৪ তে,
"হে নারী!তুমি এই মৃতপতির মায়ায় আবদ্ধ হয়ে আছ।এই মায়াত্যগ কর।পুনরায় পতি কামনা কর এবং পাণিগ্রহনকারী বিবাহের অভিশাষী এই পতিকে জায়াত্বের সহিত প্রাপ্ত হও"
অর্থাত্ মন্ত্রদুটিতে সতীদাহ প্রথার কোন কথাই নেই বরং স্বামীমৃত্যুর পর স্ত্রীকে শোকে মুহ্যমান হয়ে না পড়ে শোকত্যগ করে স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে বলা হয়েছে এবং প্রয়োজনে পুনরায় বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছে।
ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্। ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।➢ অথর্ব্ববেদ ১৮/৩/১
বঙ্গানুবাদঃ- হে মনুষ্য! এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্ক্ষা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে। সে সনাতন ধর্ম্মের পালয়িএী। তাহার জন্য ইহলোক সন্তান ও ধন দান কর।
অপশ্যং যুবতিং নীয়মানাং জীবাং মৃতেভ্যঃ পরিণীয়মানাম্।
অন্ধেন যত্তমসা প্রাবৃতাসীৎপ্রাক্তো অপাচীমনয়ং তদেনাম।।
.
পদার্থঃ (অপশ্যম) আমি দেখেছি (জীবাম) জীবিত (যুবতীম) যুবতী নারীকে (পরিনীমানাম) বিবাহিত হতে এবং (মৃতেভ্যঃ) মৃতের নিকট হতে [মৃত পতির নিকট হতে] (নীয়মানাম) নিয়ে যেতে (যত) কারন সে (অন্ধেন তমসা) গভীর অন্ধকারে (প্রাবৃতা) আবৃত (আসীত) ছিলো (ততঃ) অতঃ (এনাম) তাহাকে (প্রাক্ত) সামনে থেকে [ মৃত পতির সামনে হতে] (অপচীম্ অনয়ম) দূরে আনয়ন করি।
.
উক্ত মন্ত্রে কোথাও সতী দাহের উল্লেখ নেই। বরং পতি বিয়োগে শোকান্ধকারে আচ্ছন্ন পত্নিকে সহনাভূতি দেখানো হচ্ছে। সে যেন অধিক শোকে আচ্ছন্ন হয়ে না পড়ে এ জন্য তাকে পতির নিকট হতে দূরে রাখার কথা বলা হচ্ছে।
আর অথর্ববেদ ১৮।৩।১ এই মন্ত্রে স্বভাবতই সতিদাহ প্রথার খন্ডন হয়ে যায়-
.
ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্বা মর্ত্য প্রেতম্।
ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্মৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।
(অথর্ববেদ ১৮।৩।১)
.
পদার্থঃ (মর্ত্য) হে মনুষ্য! (ইয়ং নারী) এই স্ত্রী (পতিলোকম্) পতিলোককে অর্থাৎ বৈবাহিক অবস্থাকে (বৃণানা) কামনা করিয়া (প্রেতম্) মৃত পতির (অনু) পরে (উপ ত্ব) তোমার নিকট আসিতেছে (পুরাণম্) সনাতন (ধর্মম) ধর্মকে (পালয়ন্তী) পালন করিয়া (তস্য) তাহার জন্য (ইহ) এই লোকে (প্রজাম) সন্তান কে (দ্রবিণং চ) এবং ধর্মকে (ধেহি) ধারন করাও।
.
এ মন্ত্রে বেদ স্পষ্ট বিধবা বিবাহের আজ্ঞা দিচ্ছে। যেখানে পতি বিযোগের পর নারীর পূনরায় বিবাহের অনুমোদন রয়েছে। সেখানে বেদে সতিদাহ প্রথার দাবী একেবারেই ভিত্তিহীন।
পুরাণে সতীদাহ
অগ্নি পুরাণে সতীদাহ
“…একজন নারী দেহ ও আত্নায় শুদ্ধ হবেন, খরচের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হবে এবং পিতা যে ব্যক্তির সাথে তার বিবাহ দিয়েছেন ,বিশ্বাসের সাথে তার সেবা করবেন। স্বামীর মৃত্যুর পর যে বিধবা আত্মনিয়ন্ত্রণ করেন এবং ব্রহ্মচর্য পালন করেন, তিনি স্বর্গে গমন করেন। একজন বিধবার কোনো অপিরিচিত ব্যক্তির গৃহে বাস করার ইচ্ছা করা অনুচিত, তার ঝগড়াটে স্বভাবের হওয়াও উচিত নয়। একজন বিধবা এবং বিবাহিতা নারীর স্বামী দূরদেশে থাকলে, তাদের কখনো সাজসজ্জা করা উচিত নয়। তারা মন্দিরে বাস করবেন এবং ঈশ্বরের কাছে তাদের স্বামীর ভালোর জন্য প্রার্থনা করবেন। অন্য সময়ে বিবাহিতা নারী স্বামীর মঙ্গলের জন্য কিছু অলঙ্কার পরিধান করবেন। যে বিধবা মৃত স্বামীর চিতায় নিজেকে পোড়ায় তিনি স্বর্গে গমন করেন।”
“কোনো ব্যক্তি পবিত্র কোনো স্থানে মৃত্যু বরণ করলে সকল পাপ থেকে মুক্ত হন।স্বামী যদি ব্রহ্মঘাতক (ব্রাহ্মণকে হত্যাকারী), অকৃতজ্ঞ, পাপীও হয়, তার স্ত্রী তার মৃত্যুর পর অগ্নিতে প্রবেশ করলে, তাকে উদ্ধার করেন। বিজ্ঞজনেদের মতে, এটা নারীদের জন্য পরম অনুতাপ।”
বিষ্ণুপুরাণ মতে, দুর্বাসার অভিশাপকে সম্মান জানিয়ে মায়াবী কৃষ্ণ হাঁটুর উপরে পায়ের পাতা স্থাপন করে যোগ অবলম্বন করেন। জরা নামে এক ব্যাধ কৃষ্ণকে হরিণ ভেবে তার দিকে তীর নিক্ষেপ করে। এভাবে কৃষ্ণ মৃত্যুবরণ করেন। [৪] কৃষ্ণের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীরা সহমৃতা হন। বিষ্ণু পুরাণ বলছে-
” পরাশর বললেনঃ কৃষ্ণ এবং রামের মৃতদেহ পাওয়া গেলে অর্জুন তাদের এবং অন্যান্য মৃতদের সৎকার করেন। কৃষ্ণের আট পত্নী, পূর্বে রুক্মিণীর সাথে যাদের নাম নেওয়া হয়েছে, তারা হরিকে আলিঙ্গন করে তার চিতার অগ্নিতে প্রবেশ করেন। হে ধার্মিকগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, রামের মৃতদেহকে আলিঙ্গন করে রেবতিও আগুনে প্রবেশ করেন, স্বামীর সাথে সংস্পর্শের ফলে অগ্নি রেবতীর সুখী হৃদয়ের কাছে শীতল হয়েছিল। সেখানে সব শোনার পর, উগ্রসেন আর বসুদেবের সাথে দেবকী এবং রোহিনী আগুনে প্রবেশ করেন।…”
“স্বামী নিরুদ্দেশ হলে, মৃত হলে অথবা ছেড়ে চলে গেলে অথবা নপুংসক অথবা নীচস্বভাবের হলে, এমন জরুরী অবস্থায় একজন নারী পুনরায় বিবাহ করতে পারেন।”
“যে নারী তার স্বামীর সাথে সহমৃতা হন, তার স্বামীর শরীরে যত লোম আছে, তত বছর স্বামীর সাথে তিনি স্বর্গে বাস করবেন।”
গরুড় পুরাণের অন্য স্থানে আবার বলা হচ্ছে-
“যে নারী স্বামীর কাছে পবিত্র এবং বিশুদ্ধ, তার উচিত মৃত স্বামীকে নমস্কার করে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরু হবার আগে স্বামীর চিতায় আরোহণ করা। যে নারী চিত্তের দৌর্বল্যের কারণে চিতা হতে দূরে সরে যান তার প্রজাপাত্য প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত। স্বামীকে অনুসরণ করে যে নারী চিতায় আরোহণ করেন, মানুষের শরীরে যে সাড়ে তিন কোটি লোম আছে, তত বছরই তিনি স্বর্গে বাস করেন। সাপুড়ে যেমন গর্ত থেকে সাপকে বের করে আনে তেমনি সেই নারী তার স্বামীকে নরক থেকে উদ্ধার করেন এবং তার স্বামীর সাথে স্বর্গসুখ ভোগ করেন। যে নারী চিতায় আরোহণ করেন তিনি স্বর্গে যায়। স্বর্গের অপ্সরাদের দ্বারা তিনি প্রশংসিত হন এবং স্বামীর সাথে ,যতসময় ১৪ জন ইন্দ্র স্বর্গে রাজত্ব করেন, ততসময় স্বর্গেসুখ ভোগ করেন। এমনকি যদি পুরুষটি ব্রহ্মঘাতিও (ব্রাহ্মণকে হত্যাকারী) হয়, যদি বন্ধু বা মহৎ কোনো ব্যক্তির খুনিও হয়, তার স্ত্রী চিতায় আরোহণ করলে সে পাপমুক্ত হয়। যে নারী স্বামীর মৃত্যুর পর অগ্নিতে প্রবেশ করেন , তিনি স্বর্গে অরুন্ধতীর মত সুখ্যাতি লাভ করেন। যতক্ষণ কোনো নারী তার স্বামীর মৃত্যুর পর নিজেকে দহন না করেন, ততক্ষণ তিনি তার নারীজন্ম থেকে মুক্তি পান না। যে নারী তার স্বামীর অনুগমন করেন, তিনি তার মাতৃকুল, পিতৃকুল ও পতিকুলের তিন পুরুষকে পরিশুদ্ধ করেন।” [৮]
পরশুরামের পিতা জমদগ্নিকে মৃত ভেবে তার মাতা রেণুকা সহমরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন-
“পবিত্র রীতিনীতির অনুষ্ঠানকারী রেণুকা যে স্বামির শোকে বিভোর হয়েছিলেন, তিনি তার পুত্রদের ডেকে এই কথাগুলো বললেনঃ ২/৩/৩০/৩৫
রেণুকা বললেনঃ
হে আমার পুত্রেরা আমি তোমাদের স্বর্গীয় মেধাবী পিতার অনুগমণের ইচ্ছা করি। এর অনুমতি প্রদান করা তোমাদের কর্তব্য। ২/৩/২০/৩৬
বৈধব্যের দুর্গতি অসহনীয়।আমি কিভাবে তা সহ্য করবো? স্বামীর দুঃখে শোকার্ত হয়ে আমি পাগল হয়ে যাব। আমি কিভাবে আমার দিনযাপন করবো? ২/৩/৩০/৩৭
তাই আমি আমার প্রিয়তম স্বামীকে অনুসরণ করবো যাতে আমি তার সাথে অন্য জগতে কোনো বাধা ছাড়াই চিরকাল বাস করতে পারি। ২/৩/৩০/৩৮
এই জ্বলন্ত চিতায় প্রবেশ করে,কিছু দীর্ঘ সময়ের পরে, পিতৃদের জগতে আমি আমার স্বামীর অতিথি হব। ২/৩/৩০/৩৯
হে পুত্রেরা যদি তোমরা আমার প্রিয় কিছু করতে চাও, তবে আমার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করে অন্য কোন কিছুই প্রকাশ করতে পার না, আগুনে আমার আত্মাহুতিতে তোমাদের সম্মতি ও সমর্থন জানানো ছাড়া।২/৩/৩০/৪০
এই কথাগুলো বলার পরে দৃঢ় সিদ্ধান্তের সাথে রেণুকা তার স্বামীর অনুগমণের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং অগ্নিতে প্রবেশ করলেন। ২/৩/৩০/৪১”
পদ্মপুরাণে এক ব্রাহ্মণ মারা গেলে তার স্ত্রী দুঃখে ভেঙ্গে পড়ে। তখন সেখানে নারদ এসে উপস্থিত হলে স্ত্রীটি নারদের পায়ে লুটিয়ে পড়ে।
“তাকে উঠিয়ে নারদ বিশুদ্ধ নারীটিকে তার মৃত স্বামীর সম্বন্ধে বললেনঃ হে নিষ্পাপ বিশালাক্ষী , দয়াকরে তুমি তোমার স্বামীর কাছে যাও। হে বিশালাক্ষী, তোমার স্বামী তার আত্মীয় দ্বারা পরিত্যক্ত এবং মৃত। হে শুভে, তোমার কাঁদা উচিত নয়। অগ্নিতে প্রবেশ কর ( তোমার স্বামীর চিতায়)।
ব্রাহ্মণ নারীটি বললেনঃ
হে ঋষি, আমাকে যেতে হবে নাকি যেতে হবে না বলুন, যাতে অগ্নিতে প্রবেশের সময় পার না হয়ে যায়।
ঐ শহরটি এখান থেকে একশ যোজন দূরে। ব্রাহ্মণকে (তোমার স্বামীর মৃতদেহকে) কাল পোড়ানো হবে।
Avyaya (নারীটি) বললেনঃ
হে মুনি! আমি আমার স্বামীর কাছে যেতে চাই, যিনি দূরে আছেন।
তার কথা শুনে নারদ বললেনঃ “তুমি আমার বীণার হাতলে বস। আমি সেখানে এক মুহূর্তে পৌঁছে যাব।” এটা বলতে বলতে তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন- সেই দেশে যেখানে মৃত ব্রাহ্মণটি ছিলেন। মুনি Avyaya কে বললেনঃ”যদি তুমি অগ্নিতে প্রবেশ করতে চাও, তবে কেঁদো না।হে কন্যা! যদি তুমি পরপুরুষ সম্ভোগের মত পাপ করে থাকো, তবে শুদ্ধ হবার জন্য এর প্রায়শ্চিত্ত করো। আগুনে প্রবেশের ফলে তোমার ছোটখাটো পাপ বিনষ্ট হয়ে যাবে।আগুনে প্রবেশ ছাড়া মহিলাদের সকল পাপ নিবারণের অন্যকোনো প্রায়শ্চিত্ত আমি দেখি না। 5/106/64-69A
নারীটি নারদকে জিজ্ঞেস করে, অগ্নিতে প্রবেশের সময় নারীদের কি কি করা উচিত?
উত্তরে নারদ বলেন,
তাদের স্নান করতে হবে, নিজেদের পবিত্র করতে হবে,অলঙ্কার পরতে হবে,চন্দনের প্রলেপ দিতে হবে,পুষ্প পরতে হবে, ধূপ, শস্য এবং পবিত্র চাল রাখতে হবে। তাদের একটি সুষম সূত্র পরিধান করতে হবে, পায়ে লাল লাক্ষা লাগাতে হবে।সাধ্য অনুসারে তারা উপহার দান করবে, তারা সম্মতি সূচক বাক্য উচ্চারণ করবে এবং তারা খুশি মুখে থাকবে। তাদের অনেক শুভ গান ও বাদ্যযন্ত্রধ্বনি শুনতে হবে। অবিশ্বস্ততার মত পাপ করে থাকলে , প্রায়শ্চিত্তের জন্য সেই পুরোনো পাপের কথা স্বীকার করতে হবে। তারপর তাদের গয়না পরিধান করতে হবে, এবং ব্রাহ্মণকে তা নিবেদন করতে হবে। অলঙ্কার না থাকলে তারা ব্রাহ্মণকে প্রায়শ্চিত্তের অনুষ্ঠান করতে বলতে পারবে না। অন্য কোনো ভাবে, অন্য কোথাও সেই পাপের স্খালন হতে পারে না।
যাইহোক, কিছু কথোপকথন ও ঘটনার পরে,
“ব্রাহ্মণটির দেহ পুড়িয়ে নারদ ব্রাহ্মণটির স্ত্রীকে বলেনঃ হে অভয়া, যাও অগ্নিতে প্রবেশ কর, যদি তোমার ইচ্ছা হয়। তারপর সতী নারীটি সাজগোজ করে, নারদকে ডানদিক থেকে তিনবার প্রদক্ষিণ করে ,নমস্কার করে, নিজের মন গৌরিকে সমর্পণ করলেন। পার্বতীকে পৃথক ভাবে সন্তুষ্ট করার জন্য , তিনি নিজের সুষম সূত্র, হলুদ, পবিত্র শস্য,ফুল, বস্ত্র,চন্দন, চিরুনি, রকমারী ফল ইত্যাদি স্পর্শ করলেন। সতী নারীটি তিনবার দাউ দাউ করে আকাশ স্পর্শ করা অগ্নিকে তার ডানদিক থেকে প্রদক্ষিণ করলেন এবং তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। এবং এই কথাগুলো বললেনঃ
হে ইন্দ্র, হে পৃথিবী মাতা, হে সূর্য, ধর্মের মত সকল দেবতা আমার কথা শুনুন, “ যদি বিবাহের দিন থেকে আজ অবধি দিনরাত্রি আমি বাক্য, মন ও কর্মের দ্বারা স্বামীর স্বামীর সেবা করে থাকি এবং যদি বাল্য, যৌবন ও বার্ধক্যে আমি আমার কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে থাকি , তবে আমাকে আমার স্বামীর কাছে প্রেরণ করুন। এই কথা বলে তিনি তার হাতের ফুলটি ফেলে দিলেন এবং জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করলেন।তারপর তিনি সূর্যের মত চমৎকার একটি যান দেখলে যা স্বর্গীয় অপ্সরাদের সঙ্গীতে পূর্ণ ছিল। তিনি বিমানে আরোহন করলেন এবং স্বর্গে স্বামীর কাছে চলে গেলেন। তারপর যম সেই সতী নারীকে সম্মান জানিয়ে বললেন, তুমি স্বর্গে চিরকাল থাকবে। তোমার কোনো পাপ অবশিষ্ট নেই…” [Tr. N.A. Deshpande| Motilal Banarsi Dass Publication]
“রুক্মপুত্রি প্রদ্যুম্নের সাথে, ঊষা অনিরুদ্ধের সাথে আগুনে প্রবেশ করলেন। সকল যাদব নারীরা তাদের স্বামীর শরীরকে সম্মান জানালেন এবং আগুনে প্রবেশ করলেন।”
Padma Purana VI.252.89-90 [Tr. N.A. Deshpande | Motilal Banarsi Dass Publication]
দেবীভাগবত পুরাণে সতীদাহ
“একসময় যৌবন ও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ মাদ্রী একাকী এক নির্জন স্থানে ছিলেন। তাকে দেখে পাণ্ডু জড়িয়ে ধরেন এবং অভিশাপের কারণে মারা যান।যখন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার চিতা জ্বলছিল, তখন সতী মাদ্রী অগ্নিপ্রবেশ করেন এবং সতী হয়ে মারা যান।কুন্তিকে এমনটি করতে বারণ করা হয়েছিল, যেহেতু তার ছোট শিশুদের দেখাশোনা করার ছিল।”
“…তারপর সেই মুনিরা পাণ্ডুকে মৃত জানতে পেরে তাদের মৃতের সৎকারের অবশ্যকর্তব্য পালন করলেন। সেই সময়ে মাদ্রী কুন্তিকে তার দুই পুত্রের ভার অর্পণ করেন এবং তার স্বামীর সাথে সতী প্রথা পালন করে সত্যলোকে গমন করেন।”
“২০.যুবতী নারীটি তার স্বামীকে রাক্ষস দ্বারা বন্দি দেখে ভীত হয়ে পড়ে ন এবং তীব্র ক্রন্দনের সাথে তাকে অনুনয় করেন। ২১. বারবার আকুতি করা সত্ত্বেও নরখেকো নিষ্ঠুর রাক্ষসটি ব্রাহ্মণটির মাথা কেটে তাকে খেয়ে ফেলে।২২. এতে দুর্দশাগ্রস্ত, শোকার্ত পবিত্র নারীটি তীব্র বিলাপ করেন। তিনি তার স্বামীর হাড়গুলোকে জড়ো করেন এবং একটা চিতা প্রস্তুত করেন। ২৩. ব্রাহ্মণ নারীটি তার স্বামীর অনুগমনের জন্য চিতায় প্রবেশের বাসনা করলেন এবং রাক্ষস রাজাকে অভিশাপ দিলেন। ২৪. সতী নারীটি এটা বলার পরে অগ্নিপ্রবেশ করলেন- আজকের পর থেকে তুমি কোনো নারীর সাথে মিলিত হলে, মারা যাবে।”
“তারপর তিনি কাঠে আগুন জ্বালিয়ে একটি চিতা প্রস্তুত করলেন এবং তার উপর তার স্বামীর মৃতদেহ স্থাপন করলেন। এই কাজ শেষ হয়ে গেলে তিনি তীব্রভাবে বিলাপ করলেন এবং স্বামীর সাথে আগুনে পুড়িয়ে নিজেকে মারার জন্য প্রস্তুত করলেন।” [srimadbhagbatam/4/28/50 Translation: Vaktivedanta swami Prabhupada |The Vaktivedanta Book Trust]
এই শ্লোকের ভাষ্যে প্রভুপাদ বলছেন,
“বিশ্বস্ত স্ত্রীর তার স্বামীর সাতে মারা যাওয়া বৈদিক ব্যবস্থার এক দীর্ঘ ঐতিহ্য। একে সহমরণ বলা হয়। ভারতে এই প্রথা ব্রিটিশ শাসনকাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।সেই সময়, যাইহোক, মাঝে মাঝে যে স্ত্রী তার স্বামীর সাথে মরতে প্রস্তুত নয় তাকেও তার আত্মীয়েরা জোর করে তা করতে বাধ্য করতো। পূর্বে ব্যাপারটি এমন ছিল না। স্ত্রী স্বেচ্ছায় অগ্নিতে প্রবেশ করতেন। ব্রিটিশ সরকারকে এই প্রথাকে অমানবিক ভেবে রদ করেছিলেন। যাইহোক, ভারতের ইতিহাসের আদিকাল থেকে আমরা সন্ধান পাই, যখন মহারাজা পাণ্ডুর মৃত্যু হয় তখন তার দুই স্ত্রী বেঁচে ছিলেন, মাদ্রী এবং কুন্তি। প্রশ্ন ছিল, তারা উভয়ে মরবেন, না তাদের একজন মরবেন। মহারাজা পাণ্ডুর মৃত্যুর পর তার স্ত্রীরা স্থির করেন একজন বেঁচে থাকবেন এবং অপরজন সহমরণে যাবেন। মাদ্রী সহমরণে গেলেন এবং পাঁচ পাণ্ডব সন্তানদের দেখাশোনার জন্য কুন্তি বেঁচে থাকলেন। এমনকি ১৯৩৬ সালে আমরা অনুগত স্ত্রীকে স্বেচ্ছায় তার স্বামীর সাথে আগুনে প্রবেশ করতে দেখেছি।এটি নির্দেশ করে যে একজন ভক্তের স্ত্রীকে এমন আচরণ করার জন্য প্রস্তুত করে রাখতে হবে।একইভাবে আধ্যাত্মিক গুরুর কোনো নিবেদিত শিষ্যের গুরুর লক্ষ্য সম্পাদনে ব্যর্থ হওয়ার চেয়ে আধ্যাত্মিক গুরুর সাথে মরা ভালো। দেবত্বের সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব যেমন ধর্ম সংস্থাপনের জন্যই পৃথিবীতে নেমে আসেন, তেমনি তার প্রতিনিধি, আধ্যাত্মিক গুরুও ধর্মসংস্থাপনের জন্য আসেন। আধ্যাত্মিক গুরুর লক্ষ্যের দায়িত্ব নেওয়া এবং তা সঠিকভাবে পালন করা শিষ্যের দায়িত্ব। অন্যথায়, শিষ্যের তার গুরুর সাথে মরা উচিত। অন্য কথায়, আধ্যাত্মিক গুরুর ইচ্ছা পূরণের জন্য ব্যক্তিগত চিন্তা পরিত্যাগ করে শিষ্যের জীবন দান করতেও প্রস্তুত থাকা উচিত।”
শ্রীমদভাগবতের ৯/৯/৩২ শ্লোক এর ভাষ্যে প্রভুপাদ বলছেন,
“বৈদিক সংস্কৃতিতে সতী বা সহমরণ বলে একটি ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে কোনো নারী তার স্বামীর সাথে মারা যায়। এই ব্যবস্থা অনুসারে, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী স্বেচ্ছায় তার স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় ঝাপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করে।এখানে, এই শ্লোকে এই সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত কথাগুলি ব্রাহ্মণের স্ত্রীর দ্বারা প্রকাশিত হল। স্বামী ছাড়া কোনো মহিলা মৃতদেহের মত। তাই বৈদিক সংস্কৃতি অনুসারে কোনো নারীর অবশ্যই বিয়ে দিতে হত। এটা তার পিতার দায়িত্ব। কোনো মেয়েকে দান করে দেওয়া যেত এবং স্বামীর একের অধিক স্ত্রী থাকতে পারতো , কিন্তু কোনো নারীর অবশ্যই বিয়ে দিতে হত।এটা বৈদিক সংস্কৃতি। একজন মহিলা সবসময় নির্ভরশীল (অধীন?) থাকবেন, বাল্যকালে পিতার উপর নির্ভরশীল থাকবেন, যৌবনে স্বামীর উপর নির্ভরশীল থাকবেনে এবং বার্ধক্যে জ্যেষ্ঠ সন্তানের উপর নির্ভরশীল থাকবেন। মনুসংহিতা অনুযায়ী, নারী কখনোই স্বাধীন থাকবেন না। মহিলাদের জন্য স্বাধীনতা মানে দুঃখজনক জীবন।আজকের যুগে, কত মেয়েরা অবিবাহিতা থাকে এবং নিজেদের স্বাধীন ভাবার ভ্রম করে, কিন্তু তাদের জীবন হয় দুঃখজনক। এখানে একটি ঘটনা দেখা যায়, যেখানে একজন মহিলা অনুভব করে, স্বামী ছাড়া তার জীবন মৃতদেহের সমান।”
শ্রীমদভাগবত ১/১৩/৫৮ তে, ধৃতরাষ্ট্রের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী গান্ধারী সহমৃতা হন-
“বাইরে যখন তার স্বামীকে রহস্যময় শক্তির আগুনে কুটির সহ জ্বলতে দেখবেন, তখন সতী স্ত্রী আত্মহারা হয়ে আগুনে প্রবেশ করবেন।”
প্রভুপাদ তার ভাষ্যে বলছেন,
“গান্ধারী ছিলেন একজন আদর্শ পবিত্র নারী, তার স্বামীর জীবনসঙ্গিনী, এবং এরপরে যখন তিনি দেখলেন তার স্বামী নিজের রহস্যময় যোগের আগুনে কুটির সহ জ্বলছেন, তিনি মরে গেলেন। একশ পুত্রকে হারানোর পরে তিনি ঘর ছেড়েছিলেন এবং জঙ্গলে তার সবচাইতে প্রিয় স্বামীকে পুড়তে দেখলেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে একাকী বোধ করলেন, তাই তিনি অগ্নিতে প্রবেশ করলেন এবং মৃত্যুতেও স্বামীকে অনুসরণ করলেন। পবিত্র নারীর মৃত স্বামীর অগ্নিতে প্রবেশের নাম হল সতী প্রথা, এবং এই কাজটি কোনো নারীর জন্য সবচেয়ে যথাযথ বলে বিবেচনা করা হয়। পরবর্তীকালে এই প্রথা এক জঘন্য অপরাধ হয়ে পড়ে কারণ অনিচ্ছুক মহিলাদের উপরও এটা জোর করে চাপানো হচ্ছিল। বর্তমানের অধঃপতিত যুগে কোনো নারীর সতীপ্রথা পালন করা সম্ভব নয়, অতীতে যতটা পবিত্র ভাবে গান্ধারী এবং অন্যান্যরা করেছিলেন। গান্ধারীর মত সতী নারীর কাছে পতির থেকে আলাদা থাকা প্রকৃত অগ্নির চাইতেও জ্বালাময়। এরকম মহিলা স্বচ্ছায় সতীপ্রথা পালন করতে পারেন এবং এখানে কারোর কোনো অপরাধমূলক জোরাজুরি নেই। যখন এই প্রথা কেবল একটা ফর্মালিটি হয়ে উঠেছিল, তখন মহিলাদের এই নিয়ম পালন করতে বাধ্য করা হত, প্রকৃতপক্ষে এটা অপরাধমূলক হয়ে উঠেছিল এবং তাই আইনের দ্বারা এই অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়। নারদ মুনি তার ভবিষ্যদ্বাণীতে যুধিষ্ঠিরকে তার বিধবা মাসির কাছে (মূল ইংরেজি অনুবাদে aunt আছে) যেতে বারণ করেছিলেন।”
“এভাবে ব্রাহ্মণপত্নী রাজা সুদাস যিনি মিত্রসাহা নামে পরিচিত তাকে অভিশাপ দিলেন। তারপর, স্বামীকে অনুসরণ করার জন্য , স্বামীর হাড়গুলো একত্রিত করে তিনি তাতে আগুন ধরালেন এবং সেই আগুনে ঝাপ দিয়ে স্বামীর মতোই একই গতি প্রাপ্ত হলেন।“
[shrimadbhagabatam/9/9/36- translated by prabhupada]
স্কন্দ পুরাণে সতীদাহ
“এর পরেই রাজা Manojava ওই তীর্থের বলে তার দেহ ত্যাগ করে শিবলোকে গেলেন। হে ব্রাহ্মণেরা, তারপর তার স্ত্রী সুমিত্রা তার দেহকে আলিঙ্গন করে তার চিতায় আরোহণ করলেন। তিনিও (সুমিত্রা) একইলোক প্রাপ্ত হলেন।”
[Skanda Purana III.i.12.115-116 |Tr. G.V. Tagare|Motilal BanarsiDass Publication]
“৫৩.যে সতী নারী গৃহ থেকে শ্মশানে আত্মাহুতি দেওয়ার জন্য অবধি তার স্বামীর অনুসরণ করে, প্রতি ধাপে সে নিশ্চয় একটি অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান পূণ্য লাভ করে। ৫৪.সাপুড়ে যেমন জোর করে সাপকে গর্ত হতে বের করে আনে, তেমনি সতী নারীও তার স্বামীকে যমদূতের হাত থেকে রক্ষা করে আনে এবং স্বর্গভোগ করে। ৫৫-৫৮. সতী নারীকে দেখে যমদূত পালিয়ে যায়।সতী নারীর দ্যুতি দেখে সূর্যও জ্বালা বোধ করে, এমনকি আগুনও দগ্ধ হয়ে যায়, অন্যান্য আলোর উৎসও ভীত হয়ে ওঠে। একজন সতী নারী তার স্বামীর সাথে তত কোটি দশ হাজার বছর স্বর্গ ভোগ করে, যে সংখ্যক লোম তার শরীরে আছে।” [
Skanda Purana III.ii.7.53-56| Motilal BanarsiDass Publication]
৩৮-৪১. তার স্ত্রী অনন্য বৈশিষ্ট্যের সাথে সুন্দরী ছিলেন। তিনি সতী ছিলেন এবং মহান গুণের অধিকারী ছিলেন। তিনি আনন্দের সাথে হাসতেন। তিনি দৃঢ় চিত্তের অধিকারী ছিলেন। যখন তার স্বামীকে হত্যা করা হল, তার অবস্থা করুণ হয়ে পড়ল। পতিবিচ্ছেদে তিনি অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়লেন। তিনি ভয়ানক জংগলের মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন। সুন্দরী মহিলাটি জ্বালানি ও পাতা সংগ্রহ করে চিতা প্রস্তুত করে স্বামীর সাথে সেই চিতায় আরোহণ করলেন। এই কাজ করে তিনি মানসিক ভাবে তৃপ্তি পেয়েছিলেন।
[Skanda Purana V.i.53.38-41 |Motilal BanarsiDass Publication]
ব্রহ্ম পুরাণে সতীদাহ
ব্রহ্ম পুরাণে কপোত কপোতির উপাখ্যানে কপোত অগ্নিতে ঝাপ দিয়ে মারা গেলে, কপোতিকেও একই কাজ করতে দেখা যায় এবং কপোতির কথায় সহমরণের আদর্শ ফুটে ওঠে। খাঁচায় বদ্ধ কপোতি ব্যাধ লুব্ধককে বলে, “মহাশয়, দয়া করে আমাকে মুক্ত করে দিন। পতিবিহীন এই জীবনে আর কি প্রয়োজন? আমি এখনই এই অগ্নিতে দেহত্যাগ করবো।” ব্যাধ কপোতিকে মুক্ত করে দিলে কপোতি বলে, “সমস্ত অবস্থায় স্বামীর অনুগমন করাই স্ত্রী জাতির ধর্ম। বেদে এবং লোকসমাজে এই পথই প্রশস্ত বলে অভিহিত। পতিব্রতা নারী স্বামীর সাহায্যেই স্বর্গে গমন করে থাকে। যে নারী স্বামীর অনুগমন করে, সে বহুকাল পর্যন্ত স্বর্গে বাস করে।” তারপর সে যখন আগুনে প্রবেশ করল তখন আকাশে জয়ধ্বনি শোনা গেল। সেই পক্ষি দম্পতি সূর্যের মত উজ্জ্বল বিমানে স্বর্গে যেতে যেতে ব্যাধকে বলল- “মহাশয় আমরা দেবলোকে যাচ্ছি। এখন তোমার অনুমতি নিচ্ছি;কারণ তুমি আমাদের অতিথি। তোমার জন্যই আমাদের স্বর্গে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হল। তোমাকে আমরা নমস্কার করি।”
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ