नासदासीन्नो सदासीत्तदानीं नासीद्रजो नो व्योमा परो यत् । किमावरीव: कुह कस्य शर्मन्नम्भ: किमासीद्गहनं गभीरम् ॥
ঋগবেদ মন্ডল ১০সূক্ত ১২৯কে নাসদীয় সূক্ত বলা হয়। যদিও ঋগবেদের দশম মন্ডলের অনেক মন্ত্র পরবর্তীতে যুক্ত করা হয়েছে।এটি বিশ্বতত্ত্ব ও ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তির ধারণার সঙ্গে জড়িত। বিশ্বসৃষ্টির বিষয়ে বিশেষ কিছু টিকাসহ তথ্যপ্রদানের জন্য সূক্তটি ভারতীয় দার্শনিক ও পাশ্চাত্য দার্শনিক মহলে প্রসিদ্ধ।
नासदासीन्नो सदासीत्तदानीं नासीद्रजो नो व्योमा परो यत्।
किमावरीवः कुह कस्य शर्मन्नम्भः किमासीद्गहनं गभीरम् ॥১॥
न मृत्युरासीदमृतं न तर्हि न रात्र्या अह्न आसीत्प्रकेतः।
आनीदवातं स्वधया तदेकं तस्माद्धान्यन्न परः किञ्चनास ॥২॥
तम आसीत्तमसा गूहळमग्रे प्रकेतं सलिलं सर्वाऽइदम्।
तुच्छ्येनाभ्वपिहितं यदासीत्तपसस्तन्महिनाजायतैकम् ॥৩॥
कामस्तदग्रे समवर्तताधि मनसो रेतः प्रथमं यदासीत्।
सतो बन्धुमसति निरविन्दन्हृदि प्रतीष्या कवयो मनीषा ॥৪॥
तिरश्चीनो विततो रश्मिरेषामधः स्विदासीदुपरि स्विदासीत्।
रेतोधा आसन्महिमान आसन्त्स्वधा अवस्तात्प्रयतिः परस्तात् ॥৫॥
को अद्धा वेद क इह प्र वोचत्कुत आजाता कुत इयं विसृष्टिः।
अर्वाग्देवा अस्य विसर्जनेनाथा को वेद यत आबभूव ॥৬॥
इयं विसृष्टिर्यत आबभूव यदि वा दधे यदि वा न।
यो अस्याध्यक्षः परमे व्योमन्त्सो अङ्ग वेद यदि वा न वेद ॥৭॥
किमावरीवः कुह कस्य शर्मन्नम्भः किमासीद्गहनं गभीरम् ॥১॥
न मृत्युरासीदमृतं न तर्हि न रात्र्या अह्न आसीत्प्रकेतः।
आनीदवातं स्वधया तदेकं तस्माद्धान्यन्न परः किञ्चनास ॥২॥
तम आसीत्तमसा गूहळमग्रे प्रकेतं सलिलं सर्वाऽइदम्।
तुच्छ्येनाभ्वपिहितं यदासीत्तपसस्तन्महिनाजायतैकम् ॥৩॥
कामस्तदग्रे समवर्तताधि मनसो रेतः प्रथमं यदासीत्।
सतो बन्धुमसति निरविन्दन्हृदि प्रतीष्या कवयो मनीषा ॥৪॥
तिरश्चीनो विततो रश्मिरेषामधः स्विदासीदुपरि स्विदासीत्।
रेतोधा आसन्महिमान आसन्त्स्वधा अवस्तात्प्रयतिः परस्तात् ॥৫॥
को अद्धा वेद क इह प्र वोचत्कुत आजाता कुत इयं विसृष्टिः।
अर्वाग्देवा अस्य विसर्जनेनाथा को वेद यत आबभूव ॥৬॥
इयं विसृष्टिर्यत आबभूव यदि वा दधे यदि वा न।
यो अस्याध्यक्षः परमे व्योमन्त्सो अङ्ग वेद यदि वा न वेद ॥৭॥
নাসদাসীন্নো সদাসীত্তদানীং নাসীদ্রজো নো ব্যোমা পরো যৎ,
কিমবরীবঃ কুহ কস্য শর্মন্নম্ভঃ কিমাসীদগহনং গভীরম্(১)
ন মৃত্যুরাসীদমৃতং ন তর্হি ন রাত্র্যা অহ্ন আসীৎ প্রকেতঃ,
আনীদবাতং স্বধয়া তদেকং তস্মাদ্ধানান্ন পরঃ কিং চনাস(২)
কিমবরীবঃ কুহ কস্য শর্মন্নম্ভঃ কিমাসীদগহনং গভীরম্(১)
ন মৃত্যুরাসীদমৃতং ন তর্হি ন রাত্র্যা অহ্ন আসীৎ প্রকেতঃ,
আনীদবাতং স্বধয়া তদেকং তস্মাদ্ধানান্ন পরঃ কিং চনাস(২)
অনুবাদ: (১) তখন(মুলারম্ভে) অসৎও ছিল না, সৎও ছিল না; অন্তরীক্ষ ছিল না এবং তাহার অতীত আকাশও ছিল না; কে (কাহাকে) আবরণ করিল? কোথায় কাহার স্থান ছিল? অগাধ ও গহন জল কি তখন ছিল? (২) তখন মৃত্যুও ছিল না, অমৃতত্বও ছিল না; রাত্রি ও দিনের প্রভেদ ছিল না. সেই এক ও অদ্বিতীয় একমাত্র আপন শক্তি দ্বারাই, বায়ু ব্যতীত, শ্বাসোচ্ছ্বাস করিয়া স্ফূর্তিমান ছিলেন, তাঁহা ব্যতীত অন্য কিছুই ছিল না।
নবম মন্ডল অপেক্ষা দশম মন্ডল পরে রচিত হয়েছে, ভাষাগত স্বাক্ষীতে এটি পূর্ণভাবে নিশ্চিত ৷
উদাহরণের মাধ্যমে যে কথা 'বৈদিক এজ' এর ৩৩৯ পৃষ্ঠায় দেখানো হয়েছে তা অধিকতর কল্পিত ৷
একজন গ্রন্থকার তার গ্রন্থে নানা প্রকার ভাষার প্রয়োগ করেন ৷ কোথাও ভাষা সরল হয় কোথাও কঠিন হয় ৷ বেদ তো সকল প্রকার লোকের লাভের জন্যই ৷ বেদে বলা আছে, 'বিশ্বানি দেব সবির্তদুরিতানি পরাসুব ৷ যদ ভদ্রং তত্র আসুব ৷' এখানে যেমন অতিসরলার্থক মন্ত্র আছে তেমনি এত কঠিন মন্ত্র আছে যে বড় বড় বুদ্ধিমান লোকেদেরও এর বাস্তবিক অর্থ জানতে মস্তিষ্কের পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে হয় ৷ এমন কোনো নিয়ম নেই যে অমুক প্রকার শব্দ এখানে অবশ্যই আসা উচিত যদি এ প্রকার শব্দ না আসে তাহলে এটি নতুন, এমনটা বুঝে নিতে হবে ৷ বৈদিক এজের লেখক বলেন যে, দশম মন্ডলে লোক, মোঘ, বিসর্গ, গুন ইত্যাদি কিছু নতুন শব্দ এসেছে যেটি প্রক্ষিপ্ত ভাগসমূহ আর বালখিল্য সুক্তগুলো ছাড়া ঋগবেদের অন্য ভাগ সমূহে পাওয়া যায় না ৷ যেখানে এটি পাওয়া যায় সেখানে আপনি আপনার কল্পনায় প্রথমেই প্রক্ষিপ্ত মেনে নিচ্ছেন যার জন্য কোনো প্রমান আপনার কাছে নেই ৷ বালখিল্য সুক্তগুলোর উপর আমরা এই অধ্যায়ে আগে বিচার করে দেখাব যে এটাকে প্রক্ষিপ্ত মানার কোনো কারন নেই ৷
'লোক' শব্দ ঋগবেদের অন্য মন্ডলসমূহেঃ
বস্তুতঃ লোকঃ এই শব্দ দশম মন্ডলের অতিরিক্ত নিম্নস্থানসমূহে এসেছে ৷
ঋগবেদ ১/৬৩/৬, ২/৩০/৬, ৩/২/৯, ৪/১৩/১৩, ৫/৪/১১, ৬/২৩/৩,৭, ৬/৪৭/৮, ৬/৭৩/২, ৭/২০/২, ৭/৩৩/৫, ৭/৬০/৯, ৭/৮৪/২, ৭/৯৯/৪, ৮/১০০/১২, ৯/৯২/৬ ৷
লোক এর বহুবচন হলো লোকাঃ
ঋগ ৯/১১৩/৯, 'লোকে' এই সপ্তমী একবচনের প্রয়োগ ঋগ ৩/২৯/৮, ৫/১/৬, ৯/১১৩/৭২ এই মন্ত্রগুলোতে আসার পর দশম মন্ডলের ১০/৮৫/২৪ এই 'লোক' শব্দটি এসেছে ৷ এই ভাগগুলোকে 'বৈদিক এজ' এর লোকেরাও প্রক্ষিপ্ত মানে না ৷ এটাই আশ্চর্য যে এ ধরনের অযথার্থ, তথ্য বিরুদ্ধ কথা তারা কি করে লিখলো ৷
মোঘ শব্দ অন্য মন্ডলসমূহেঃ
'মোঘম' এর প্রয়োগ ঋগবেদের ১০ম মন্ডল ছাড়াও ৭ম মন্ডলের নিম্ন মন্ত্রে পাওয়া যায় যেমনঃ
বাহমনৃতদেব আস মোঘং বা দেবাং অপ্যুহে অগ্নে ৷
ঋগ ৭/১০৪/১৪
অধা স বীরৈর্দশভির্বিযুযা যো মা মোঘং যাতুধানেত্যাহ ৷
অতএব 'বৈদিক এজ' লোকেদের বক্তব্য অযথার্থ ৷
বিসর্গ শব্দ সপ্তম মন্ডলেঃ
ঋগবেদের সপ্তম মন্ডলের ১০৩ সূক্তের নবম মন্ত্রে "তপ্তা ধর্মা অশ্নুবতে বিসর্গম" এইভাবে বিসর্গ শব্দ এসেছে ৷
দশম মন্ডলেও শুধুমাত্র ১০/৫/৬ এ ই আছে ৷
বিজয় শব্দ ঋগবেদ দশম মন্ডলেও কেবল ১ বার ১০/৮৪/৪ এ এসেছে
কিন্তু 'বিজয়ন্ত' এর প্রয়োগ ঋগবেদ ২/১২/৬ এ 'যস্মান্ত ঋতে বিজযন্তে জনাসঃ' এইভাবে এসেছে ৷
এর অতিরিক্ত 'জয়তি' এর প্রয়োগ ঋগবেদ ১/৬৩/৪, ৪/৫০/৯, ৬/৭৫/৫, ৭/৩২/৯, ৯/৮৬/৪০ ৷
জয়তু এর প্রয়োগ ঋগ ৬/৪৭/২৬ এ ৷ জযন্ এর প্রয়োগ ঋগ ৪/১৭/১০, ৫/৩১/৬, ৬/৭৩/২, ৯/৮৫/৪২ এ ৷
জযন্তম্ এর প্রয়োগ ঋগ ১/৯১/২১, ৫/৪৪/১, ৬/৭৫/১৮ এ ৷
জযন্তি এর প্রয়োগ ঋগ ৮/১৬/৫ এ ৷
জযন্তী এর প্রয়োগ ঋগ ১/১১৬/১৭, ১/১২৩/২ এ ৷
জযন্তু এর ব্যবহার ঋগ ৬/৪৭/৩১, জযসি এর ব্যবহার ঋগ ৯/৮৫/৩ এ জযাতি এর ব্যবহার ঋগ ৫/৩৭/৫, জযামসি এর ব্যবহার ঋগ ৪/৫৭/১, জযাব এর ব্যবহার ঋগ ১/১৭৯/৩, জযেম এর ব্যবহার ১/৮/৩, ১/১২৩/৫, ৮/২১/১২, ৮/৬৮/৯, ৯/৯২/১১, ৯/৬১/২৩, ৯/৮৫/৮ এ তথা জযেম এর ব্যবহার ১/১০২/৪, ২/৪০/৫, ৪/২০/৩, ৫/২/১১, ৫/৪/১, ৬/৮/৬, ৭/৮২/১, ৭/৯৮/৪ ইত্যাদিতে প্রয়োগ হয়েছে তাই 'বিজয়' শব্দকে ধরে দশম মন্ডলের অর্বাচীনতা প্রমানের চেষ্ঠা সর্বথা ব্যার্থ ৷ বিজয় শব্দ না এসে যদি বযং, জযেম, ত্বযা, যুজা ইত্যাদির প্রয়োগ আসে তো তাতে কি ব্যাবধান হলো ?
‘মীম্' এর বিষয়ে আপনি বলছেন যে ঋগবেদের প্রথম ৯ মন্ডলে এটি ৫০ বার এসেছে আর দশম মন্ডলে কেবল ১ বার ৷ এতে কিছুই প্রমাণিত হয় না ৷ এসেছে তো ! এটা আপনি মানছেনও ৷ এক শব্দ বারবার অনাবশ্যকভাবে আসবে এটা আবশ্যক নয় ৷
আজ্য, কাল, লোহিত আর বিজয় এই শব্দ প্রথমবার দশম মন্ডলে আসে এবং এতে কিছুই প্রমাণিত হয় না ৷ ভিন্ন-ভিন্ন মন্ডলে যদি ভিন্ন-ভিন্ন বিষয় আর তৎপ্রতিপাদক শব্দসমূহের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তো এতে এর নবীনতা কিভাবে হয়ে যায় ? সর্ব, ভগবান, প্রাণ, হৃদয় ইত্যাদি শব্দের ব্যাপারে আপনি বলছেন Mostly, though not exclusively — প্রায়, সর্বথা নয়, এই দশম মন্ডলে এসেছে ৷ যখন এই শব্দ অন্য মন্ডলেও আসে তো পুনরায় আপনার এই নবীনতার যুক্তির কি হবে, যদি কথাপ্রসঙ্গে মেনেও নিই যে —নতুন কিছু অথবা প্রথমে অপ্রযুক্ত শব্দ এলে নবীনতা প্রমাণিত হয় ৷ যেটাকে আমরা মানি না ৷ বেদকে তো আমরা ঈশ্বরীয় বাক্ মান্য করি যেখানে আবশ্যকতানুসারে পূর্ণবুদ্ধিপূর্বক শব্দসমূহের প্রয়োগ আছে ৷
বুদ্ধিপূর্বা বাক্যকৃতির্বেদে ৷....বৈশেষিক দর্শণ
আমাদের কোনো অধিকার নেই এবং এটা আমাদের মূর্খতাপূর্ণ দুঃসাহস যে আমরা বলি অমুক ২ শব্দ প্রথম মন্ডলে কেন আসেনি আর এই স্থান বা অমুক মন্ডলে কেন এসেছে ? বিষয়ভেদেও ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের শব্দের প্রয়োগ করা হয়, একথা তো সাধারন লেখকও জানেন ৷
একজন লেখক তার গ্রন্থে বিষয়ভেদে ভিন্ন প্রকার শৈলীর ভাষা প্রয়োগ করেন এর কিছু স্পষ্ট উদাহরণ নিচে লেখা হলো ৷
১) পাণিণির অষ্টাধ্যায়ী সূত্রের ভাষা উনার "জাম্ববতী বিজয় মহাকাব্য" এর ভাষা থেকে ভিন্ন ৷
২) জৈমিনীয় মিমাংসা সূত্রের ভাষা জৈমিনীয় ব্রাহ্মণের ভাষা থেকে অত্যন্ত ভিন্ন ৷
৩) শৌনকের ঋক প্রাতিশাখ্য থেকে শৌনকপ্রোক্ত ঐতরেয় আরণ্যকের পঞ্চম আরণ্যকের ভাষা ভিন্ন প্রকার করেছেন ৷
৪) কাত্যায় শ্রৌতসূত্র থেকে কাত্যায়ন স্মৃতির ভাষা সর্বথা ভিন্ন ৷
এভাবে অন্য অনেক উদাহরণ দেয়া যায় ৷ বর্তমান কালের সুপ্রসিদ্ধ লেখকগনের উদাহরণ নিতে হলে বলা যায় যে শ্রী অরবিন্দজীর Life Divine এর ক্লিষ্ট ভাষা শৈলী থেকে The Yoga and its object বা Bases of Yoga বইসমূহের সরল ভাষা ও শৈলী থেকে আকাশ পাতাল পার্থক্য ৷
পৃত্সু, গির্বণ, বিচর্ষণিঃ, বীতী ইত্যাদির মত প্রয়োগ এই দশম মন্ডলে পাওয়া যায় না যেখানে প্রথম মন্ডলে এটা খুব সাধারণ ব্যাপার ৷
তো কি হয়েছে ? একই ধরনের শব্দের প্রয়োগ সর্বত্র ব্যাবহার করা কি আবশ্যক ?
বিচর্ষণি স্থানে যদি প্রচেতা বা বিশ্ববেদাঃ এর মত শব্দের প্রয়োগ দশম মন্ডলে পাওয়া যায় তো এতে কি ভিন্নতা হয়ে যায় ? বিচর্ষণিঃ— এই শব্দ পঞ্চম ও সপ্তম মন্ডলে নেই তো এতে কি এইটি অর্বাচিন প্রমাণিত হয়ে যায় ? এভাবেই এই লেখকগন দশম মন্ডলের ভাষা অন্য মন্ডল থেকে পৃথক হওয়ার কল্পনা করেন, যেটা থেকে আমাদের কোন সার প্রতীত হয় না ৷
বস্তুত এই সকল কথা মৈকডোনল ইত্যাদি পাশ্চাত্য লেখকগনের গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে জিনি হিরণ্যগর্ভ সূক্ত, নাসদীয় সূক্ত, শ্রদ্ধাসূক্ত, মন্যুসূক্তাদি দেখে আশ্চর্য হয়েছেন যে, জংলী লোক এধরনের আধ্যাত্মিক দার্শনিক ও মনোবৈজ্ঞানীক বিষয়ের উপর কিভাব বিচার প্রকট করেছে অতঃ এই সকলের পিছে উপজ হওয়া উচিত ৷
ভাষাভেদ তো একটা বাহানা বানানে হয়েছে, যার বিষয়ে সুপ্রসিদ্ধ ভারতীয় বিদ্বান শ্রী পন্ডিত সত্যব্রতজী 'সামশ্রমী' তে 'ত্রয়োপরিচয়' নামক নিজের বিদ্যতাপূর্ণ গ্রন্থে ঠিকই লিখেছেন যে—
এবং দশমমন্ডলস্য ঋকপরিশিষ্টরূপত্বং কল্পযিতুং তৈঃ (পাশ্চাত্যবিপশ্চিদ্ভিঃ) ভাষাপার্থক্যপ্রদর্শনাদিপ্রযাসঃ স্বীকৃতঃ — দশমমণ্ডলস্য ভাষা মন্ত্রার্থগততাত্পর্যাণি চ প্রথমমণ্ডলাদিভ্যঃ পৃথগেবেতি নূনং তস্য নবমমণ্ডলপরিশিষ্টরূপত্বমিতি তদাশযঃ ৷ কিমত্র ব্রমো বযম্ ? অস্মচ্ছ তিঘু হি বশমসণ্ডলস্য মণ্ডলান্তরাণাং চ ভাষা একবিশ্রেবোপ একবিধৈবোপলম্যতে, অস্মদবুদ্ধিষু চ তরৈকবিধমেব তাত্পর্যমিতি ন জানীমহে কেষাং বুদ্ধিমালিন্যং কেষাং বা হঠকারিত্বমিতি ॥ (ত্রযীপরিচযঃ পৃষ্ঠা ৪৯ ৷)
প্রথমাদিমণ্ডলেষ শ্রুতানাং বহুনাং সূক্তানাং দশমমণ্ডলস্থিতানাং চ বহুনাং সূক্তানাং দ্রষ্টারোভিন্না এবাবগম্যন্তে পরিশিষ্টবাদিনাং মতে তত্ কথমুপপদ্যেতেতি বিচারন্ত্বত্র মাধ্যস্থ্যপদমাদধানা এবেতি ॥
(ত্রযীপরিচযঃ পৃষ্ঠা ৫১ ।)
অর্থাৎ
এইভাবে দশমমণ্ডলকে ঋগবেদের পরিশিষ্ট দেখানোর জন্য পাশ্চাত্য বিদ্বানগন ভাষার পৃথকতা ইত্যাদি বিষয়ে চেষ্টা করেছেন ৷ তাহাদের বক্তব্য হলো দশম মণ্ডলের ভাষা আর মন্ত্রের তাৎপর্য প্রথম দিকের মণ্ডল হতে পৃথক, অতএব এটা নবমমণ্ডলের পরিশিষ্ট ৷ আমাদের কাছে তো দশম মণ্ডল আর অন্যান্য মণ্ডলগুলোর ভাষা একই ধরনের শোনায় আর আমাদের বুদ্ধিতে এগুলোর তাৎপর্যও একই ধরনের (অন্য মণ্ডলগুলোর সদৃশ) আমরা জানি না কার বুদ্ধি মলিন আর কে পরিষ্কার ?
প্রথম তথা অন্য মণ্ডলগুলোর সূক্তগুলো আর দশম মণ্ডলের অনেক সূক্তের দ্রষ্টা ঋষি একই ৷ তাহলে পরিশিষ্টবাদিগনের মতে এই কথা কি করে সিদ্ধ হতে পারে তা পক্ষপাতবিহীন বিদ্বানই বিচার করবেন ৷
বাস্তবিক কথা এটিই যে পাশ্চাত্য বিকাশবাদী বা খ্রিস্টানধর্মের পক্ষপাত বিদ্বানগনের হিরণ্যগর্ভ সূক্ত বিশেষতঃ প্রজাপতে ন স্বদেতান্যন্যো বিশ্বা জাতানি পরি তা বভূব ॥
ইত্যাদি মন্ত্রে প্রতিপাদিত একেশ্বরবাদ দেখে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়েছেন এজন্যে তারা দশমমণ্ডলকে পরবর্তীতে রচনা করা হয়েছে এমন কল্পনা করেছেন, প্রফেসর মৈক্সমূলরের এই লেখা
“This is one the hymns which have always been suspected as modern by European interpreters."
—Vedic Hymns by Prof. Max Muller.
অর্থাৎ এই হিরণ্যগর্ভ সূক্ত ওই সূক্তগুলোর মধ্যে আছে যেগুলোর উপর ইউরোপীয় ব্যাখ্যাকারীগন সবসময়ই সন্দেহ করেন যে এগুলো নতুন ৷
প্রজাপতে ন ত্বদেসান্যন্যো বিশ্বা জাতানি পরি তা বভুব ৷
এই মন্ত্রের উপর টিপ্পণী করতে গিয়ে প্রফেসর মৈক্সমূলর খ্রিস্টিয় মতের প্রতি পক্ষপাতের কারনে লিখেছেন-
"The last verse is to my mind the most suspicious of all."
অর্থাৎ আমার বিচারে এই শেষ মন্ত্র তো অত্যন্ত সন্দেহপূর্ণ ৷
বাস্তবে দেখা যায় ঋগবেদের প্রথম ৯ মন্ডলে অগ্নি, মিত্র, বরুণ, ইন্দ্র ইত্যাদি নামে প্রধানত পরমেশ্বরেরই গ্রহণ করা হয়েছে এবং
প্রথম মন্ডলেই এটা বলা হয়েছে যে
ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমগ্নিমাহুরথো দিব্যঃ সে সুপর্ণো গরুত্নান্ ৷
একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মতরিশ্বানমাহুঃ॥
ঋগবেদ ১/১৬৪/৪৬
অর্থাৎ বিদ্বানগন ওই এক পরমেশ্বরকেই ইন্দ্র, মিত্রবরুণ, অগ্নি, যম, মাতরিশ্বা ইত্যাদি অনেক নামে ডাকে ৷
ঋগবেদের দ্বিতীয় মন্ডলে আছে -
ত্বমগ্ন ইন্দ্রো বৃষভঃ সতামসি ত্বং বিষ্ণরূরূগাযো নমস্যঃ ৷
ত্বং ব্রহ্মা রযিবিদ্ ব্রহ্মণস্পতে ত্বং বিধর্তঃ সচসে পূরন্ধ্যা ॥
ঋগবেদ ২/১/৩
ত্বমগ্নে রাজা বরুণো ধৃতব্রতস্ত্বং মিত্রো ভবসি দস্ম ইডযঃ ৷
ত্বমর্যমা সত্পতির্যস্য সংভূজং ত্বমংশো বিদথে দেবভাজযুঃ ॥
ঋগবেদ ২/১/৪
ইত্যাদি মন্ত্রগুলো দ্বারা এক পরমেশ্বরকেই অগ্নি, ইন্দ্র, বিষ্ণু, বরুন, মিত্র, অর্যমা ইত্যাদি নামসমূহে আহবান করে একেশ্বরবাদের প্রবল সমর্থন করে গেছেন যাহা দশম মন্ডল থেকে কোনো প্রকারেই কম নয় ৷
তৃতীয় মণ্ডলেও ইন্দ্র নামে পরমেশ্বরকে স্মরণ করে—
ত্বং হি ষ্মা চ্যাবযন্নচ্যূতান্যেকো বৃত্রা চরসি জিঘ্নমানঃ ৷
তব দ্যাবাপৃথিবী পর্বতাসোঅনু ব্রতায নিমিতেব তস্থুঃ ॥
ঋগবেদ ৩/৩০/৪
উতাভযে পুরুহুত শ্রবোভিঃ, একোদৃলমবদো দৃত্রহা সন্ ৷
ইমেচিদিন্দ্র রোদসী অপারে যত্ সংগৃভ্ণা মঘবন্ কাশিরিত্তে ॥
ঋগবেদ ৩/৩০/৫
ইত্যাদি মন্ত্রে বর্ণনা এসেছে তা হলো, তুমি এক, যিনি সকল বিঘ্ন, পাপ তথা অজ্ঞানকে নষ্ট কর ৷ পৃথিবী, আকাশ, পর্বত সব তোমার নিয়ম অনুসারে কার্য করছে ৷ এ সকল কিছুর পরমেশ্বর তুমিই নিয়ন্ত্রকারী ৷ এইটি দশম মণ্ডলের একেশ্বরবাদ প্রতিপাদক মন্ত্রের সমান ৷
চতুর্থ মণ্ডলের—
য এক ইচ্চ্যাবযতি প্রভুমা রাজা কৃষ্টীনাং পুরুহূত ইন্দ্রঃ ৷
সত্যমেনমনু বিশ্বে মদন্তি রাতি দেবস্য গৃণতো মঘোনঃ ॥
ঋগবেদ ৪/১৭/৫
ইত্যাদি মন্ত্রে একেশ্বর পূজার ভাব অত্যন্ত স্পষ্ট যে এক ঈশ্বরই সব মনুষ্যের রাজা ৷ সেই সত্যস্বরূপ পরমেশ্বরের দানকে সকল বিদ্বানগন কীর্তন করেন ৷
পঞ্চম মণ্ডলের—
একং নু ত্বা সৎপতি পাংচজন্যং জাতং শ্রীনোমি যশসং জনেষু ৷
তং মে জগৃভ্র আশসো নবিষ্ঠং দোষাবস্তোর্হবমানাসো ইন্দ্রোম্ ৷
ঋগবেদ ৫/৩২/১১
ইত্যাদি মন্ত্রে এটাই বলা হয়েছে যে, পরমেশ্বর এক ৷ তিনিই সকলের উত্তম স্বামী ও সবার হিতকারী ৷
ষষ্ঠ মন্ডলে আছে—
য এক ইততমু ষ্টুহি কৃষ্টীনাং বিচর্ষণিঃ ৷
পতির্যজ্ঞে বৃষক্রতুঃ ॥ ৬/৪৫/১৬
ইত্যাদি মন্ত্রে স্পষ্ট আদেশ আছে যে, যে পরমেশ্বর সর্বজ্ঞ, সকলের স্বামী ও সর্বশক্তিমান ৷ হে মনুষ্য তুমি সেই এককে সদা স্তুতি কর ৷
এভাবেই অন্য সব মণ্ডলে প্রচুর এইধরনের একেশ্বর পূজা প্রতিপাদক মন্ত্র আছে ৷ অতএবঃ এটাই বোঝাচ্ছে যে দশম মণ্ডলেই এ ধরনের কিছু কিছু একেশ্বরপূজা প্রতিবাদক বা দার্শনিক ভাবের মন্ত্র আছে, যেটা অন্য মণ্ডলে নাই ৷ এই কথা সর্বথা অশুদ্ধ ৷
দশম মণ্ডলে যেমন শ্রদ্ধা বিষয়ক মন্ত্র আছে, একই ভাবে দ্বিতীয় মণ্ডলে আছে—
স ইজ্জনেন স বিশা স জন্মনা স পুত্রৈর্বাজং ভরতে ধনা নৃভিঃ ৷
দেবানাং যঃ পিতরমাবিবাসতি শ্রদ্ধামনা হবিষা ব্রহ্মণস্পতিম ॥
(ঋগবেদ ২/২৬/৩)
তথা অন্য মণ্ডলের মন্ত্রতের শ্রদ্ধার প্রতিপাদন করে এর উত্তম ফলের বর্ণনা আছে ৷
অতএব দশম মণ্ডলকে নবীন মানার ব্যাপারে পাশ্চাত্য লেখকগনের পক্ষপাত ছাড়া অন্য কোনো বাস্তবিক কারন নেই ৷ ভাষার পার্থক্যটাও এক কল্পনা মাত্র, যেভাবে দেখানো হয়েছে এটাতে আসলে কোনো সারবস্তু নাই ৷
এই বিষয়ে আরেকটা কথা উল্লেখ্য যে একদিকে ডঃ মেকডোনাল্ড আদি লেখকগন ভাষার পার্থক্যের কল্পিত ভিত্তিতে দশম মণ্ডলকে পরবর্তী রচনা হিসেবে বলার চেষ্টা করেছেন, অন্যদিকে আবার লিখেছেন—
Nevertheless the supplements collected in it (Tenth Mandal) appear for the most Part to be older than the additions which occur in the earlier books.
-The History of Sanskrit Literature by Macdonel p. 44.
অর্থাৎ তারপরও এই দশম মণ্ডলের 'পরবর্তীতে যুক্ত' সূক্তগুলো বেশিরভাগই অন্যান্য মণ্ডলগুলোর 'পরবর্তীতে যুক্ত' সূক্তগুলোর চেয়ে প্রাচীন প্রতীয়মান হয় ৷
অন্য মণ্ডলে প্রক্ষিপ্ত আছে কি নেই তা ভিন্ন প্রশ্ন, সেটা নিয়ে আমরা সামনে প্রকাশ করব, কিন্তু এই কমেন্টে তাদের এই ভাষার ভিন্নতাকে ভিত্তি ধরে দশম মণ্ডল নতুন হওয়ার কল্পনা, স্বয়ং ভুল প্রমাণিত হয়ে যায় এতে কোনো সন্দেহ নেই ৷ এখানে উল্লেখ্য যে এই দশম মণ্ডলের অনেক ঋষি অতি প্রাচীন, উদাহরণ—
বৈন্য পৃথু — ১০/১৪৮
অদিতি দাক্ষাযণী — ১০/৭২
প্রজাপতি পরমেষ্ঠী — ১০/১২৯ নাসদীয় সূক্তের ঋষি
বিবস্বান্ — ১০/১৩
যম বৈবশ্বত — ১০/১৪
যমী বৈবশ্বতী — ১০/১৫৪
যম-যমী — ১০/১০
নাভা নেদিষ্ঠ — ১০/৬১-৬২
শর্যাত — ১০/৯২
বুধ — ১০/১০১
পুরূরবা — ১০/৯১
শচী পৌলমী — ১০/১৫৯
ত্রিশিরাঃ — ১০/৮৯
বৃহষ্পতি অঙ্গিরস — ১০/৭১ জ্ঞান সূক্ত
চ্যবন — ১০/১৯
মান্ধাতা যৌবনাশ্ব — ১০/১৩৪
জমদগ্নি — ১০/১১০
যেই সূক্তগুলোর ঋষিই প্রাচীন বৈবশ্বত মনুর কাছাকাছি সময়ের, সে সূক্তগুলোকে নবীন রচনা বলা কতটা দুঃসাহসী কাজ ৷ মন্যু শব্দটা ঋগবেদের প্রথম মণ্ডলে ৩ বার, দ্বিতীয় মণ্ডলে ২ বার, চতুর্থ মণ্ডলে ২ বার, পঞ্চম ও ষষ্ঠ মণ্ডলে ২ বার, সপ্তম মণ্ডলে ৪ বার, নবম মণ্ডলে ১ বার ও দশম মণ্ডলে ৪ বার এসেছে ৷ তাহলে এই শব্দটিকে নতুন বলা এবং দশম মণ্ডলে প্রথমবার এসেছে তাই এর নবীনতা সিদ্ধ হয় একথাগুলো সর্বৈব অশুদ্ধ ৷
শ্রদ্ধা শব্দটাও ঋগবেদের প্রথম মণ্ডলে ৩ বার, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম মণ্ডলে ১ বার, নবম মণ্ডলে ২ বার এবং দশম মণ্ডলে ৫ বার এসেছে ৷ অতএব এই কারনে দশম মণ্ডলের অর্বাচীনতা প্রমান করার চেষ্টা সর্বৈব অশুদ্ধ ৷
'বিশ্বে দেবাঃ' এইটি ঋগবেদের প্রথম মণ্ডলের ৩ নং সূক্তের দেবতা, তৃতীয় মণ্ডলের ২ নং সূক্তের, চতুর্থ আর পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম মণ্ডলের ১ নং এর, ষষ্ঠ ও নবম মণ্ডলের ২ নং এর এবং দশম মণ্ডলের ৩ নং এর দেবতা ৷ অতএব এই ভিত্তিতে দশম মণ্ডলের অর্বাচীনতা প্রমান করার চেষ্টা সর্বৈব অসঙ্গত এতে কোনো সন্দেহ নেই ৷
উষস্ এই শব্দ প্রথম মণ্ডলে ৩২ বার, দ্বিতীয় মণ্ডলে ৯ বার, তৃতীয় মণ্ডলে ১৬, চতুর্থ মণ্ডলে ২৭, পঞ্চম মণ্ডলে ৯, ষষ্ঠ মণ্ডলে ১৪, সপ্তম মণ্ডলে ২৯, অষ্টম মণ্ডলের ২, নবম মণ্ডলে ৮, দশম মণ্ডলে ২৩ বার এসেছে ৷ এর ভিত্তিতেও ঋগবেদ দশম মণ্ডলের নবীনতা প্রমান করার চেষ্টা নিতান্ত অসঙ্গত ৷ অনুবাকানুক্রমণী আর চরণব্যুহতে লেখা আছে —
অধ্যাযাশ্চ চতুঃ, ষষ্টি, মণ্ডলানি দশৈব তু ৷
অর্থাৎ ঋগবেদে ৬৪ অধ্যায় আর ১০ মণ্ডল আছে ৷
১০ মণ্ডল হওয়ার কারনেই ঋগবেদের নির্দেশ যাস্কাচার্যকৃত নিরুক্তে 'দাশতযী' নামে করা হয়েছে ৷ দশম মণ্ডলের অর্বাচীনতার বিষয়ে মেকডোনাল্ মহোদয়ের এই যুক্তি "এর সূক্ত সংখ্যা প্রথম মণ্ডলের সমান" এতটাই হাস্যকর যে এর মীমাংসা করাটাও অনাবশ্যক ৷
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ