মোহাম্মদ একেশ্বরবাদী ধর্ম প্রচার করার নামে আসলে জড়বাদী ধর্ম প্রচার করেছিলেন অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে।একজন মানুষের মুসলমান হওয়ার প্রথম শর্ত হলো –শাহাদা। শাহাদা হলো আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তার কোন শরিক নেই, মোহাম্মদ হলো তার রসূল- এটা স্বীকার করা। আরবীতে- লা ইলাহা ইল্লাহ আল্লাহ , মোহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ। এছাড়া মোহাম্মদের নাম উচ্চারণ করার সাথে সাথে বলতে হবে- সাল্লাহ আল্লাহ আলাইহে ওয়া সাল্লাম। সংক্ষেপে, যেমন- মোহাম্মদ(সা:)। আর এই সা: এর প্রচলিত অর্থ হলো- তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইংরেজীতে Mohammad(PBUH- Peace Be Upon Him. কিন্তু আসলে কি এর অর্থ এটা ? এবার বিষয়টা ব্যখ্যা করা যাক।
বাক্যটি আরবীতে নিম্ন রূপে আসে।
صل الله علىه و سلم তাহলে দেখা যাক বাংলায় অনুবাদ করলে কী দাড়ায়। মূলত এখানে আরবী و (ওয়াও) সংযোগ অব্যয় ব্যবহার করে দুইটি বাক্যকে একত্রে যোগ করা হয়েছে। অর্থাৎ صل الله علىه (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে) হ’ল প্রথম বাক্য। তারপর و (অ) হইল সংযোগ অব্যয়। এর অর্থ “এবং”। পরবর্তী বাক্যকে প্রথম বাক্যের সংগে সংযুক্ত করেছে। দ্বিতীয় বাক্য হইল سلم (ছাল্লামা) যেমন আমরা বংলায় বলতে পারি “সুমন গোছল করিল এবং ভাত খাইল।” প্রথম বাক্য- صل الله (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি)- এখানে صل (ছাল্লা) শব্দটি ক্রীয়াপদ। এটা এসেছে আরবী صلوات (ছালাত) শব্দ থেকে। যার সোজা সাপটা অর্থ হইল নামাজ প্রার্থনা,প্রশংসা, বড়ত্ব প্রকাশ, মাথা নত করা (যেমন রুকু,ছেজদা তে করা হয়) এরপরে الله (আল্লাহু) শব্দ টা হইল এই ক্রীয়াটির কর্তা পদ। এরপর علىه (আলাইহি) যৌগ শব্দটি কর্মপদ, على (আলা অবয়)এবং ه (হি) সর্বনাম যুক্ত হয়ে হয়েছে।এর অর্থ “তাহার (নবীর)উপর” অতএব প্রথম বাক্যের পূর্ণ অর্থ দাড়াল “আল্লাহ তাহার (নবীর) উপর صلوات (ছালাত) করুন। আর দ্বিতীয় বাক্য- سلم (ছাল্লামা)- অর্থ “শান্তি বর্ষিত করুন” তাহলে পূর্ণ বাক্যটির সোজা সাপটা অর্থটি এরুপ দাড়াল, “আল্লাহ তাহার (নবীর) উপর صلوات ছালাত) করুন, ও শান্তি বর্ষিত করুন” অর্থাৎ – আল্লাহ নবীর ওপর প্রার্থনা করুন ও শা্ন্তি বর্ষন করুন। (অনুবাদক- আ: হাকিম চাকলাদার)
অনেককে প্রশ্ন করে যে উত্তর পাওয়া গেছে তা হলো – আল্লাহ নবীর ওপর আশীর্বাদ ও শান্তি বর্ষন করুন।
কিন্তু সাল্লাহ অর্থ হলো প্রার্থনা করা , কোনমতেই আশীর্বাদ বর্ষন করা নয়। বারাকা অর্থ হলো আশীর্বাদ। আর উক্ত দোয়াতে সোজা সাপ্টা সাল্লাহ শব্দটিই আছে বারাকা শব্দ নেই। তার অর্থ ইদানিং কিছু কিছু লোক বিষয়টি জানতে পেরে আসল অর্থ পরিবর্তন করার অপচেষ্টায় আছে বোঝা যাচ্ছে।
যাহোক, তার অর্থ স্বয়ং আল্লাহ মোহাম্মদের ওপর প্রার্থনা করছে।এই প্রথম শোনা গেল যে স্বয়ং সর্ব শক্তিমান আল্লাহ কারও ওপর প্রার্থনা করতে পারে। এতদিন জেনে এসেছি যে আল্লাহর বান্দারাই আল্লাহর ওপর প্রার্থনা করে থাকে। আর আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর আশীর্বাদ বা শান্তি বর্ষায়। এখন যেহেতু আল্লাহ মোহাম্মদের ওপর প্রার্থনা করে তাহলে বড় কে, মোহাম্মদ নাকি আল্লাহ? এছাড়া আর একটা বড় প্রশ্ন- উক্ত বাক্যটির অর্থ শুধুমাত্র তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক এভাবে কেন করা হয় ? বাক্যের প্রথম অংশটির অর্থ গোপন করা হয় কেন ? তাহলে মুসলমানরা কার কাছে প্রার্থনা করে ? মোহাম্মদ বলেছেন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে। মুসলমানরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে , আর আল্লাহ প্রার্থনা করে মোহাম্মদের ওপর, তার অর্থ ইসলাম যদি সত্য ধর্ম হয়, তাহলে এখানে আল্লাহ শুধুমাত্র একটা মাধ্যম যার মাধ্যমে সকল মুমিন মুসলমানের দোয়া ও প্রার্থনা মোহাম্মদের কাছে পৌছবে আর মোহাম্মদ সর্ব শক্তিমান সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত হয়ে সবার বিচার করবেন কেয়ামতের মাঠে। তাহলে যে বলা হয়- আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় – এর অর্থ কেমন হবে? এটা তো ঠিকই আছে আল্লাহ তো একজনই আর সে হলো মোহাম্মদের কাছে পৌছানোর মাধ্যম।
এছাড়াও আরও একটা ব্যপার আছে, যেমন নিচের আয়াত-
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’ আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।সূরা ফাতিহা-০১:০২
উপরের আয়াতে বলা হচ্ছে- সব প্রশংসাই আল্লাহ তালার।অর্থাৎ অন্য কাউকে প্রশংসা করা যাবে না।একমাত্র আল্লাহই হলো সকল প্রশংসার দাবিদার। এখন মোহাম্মদ অর্থ কি ? মোহাম্মদ শব্দের যে অর্থ পাওয়া গেল তা নিম্নরূপ:
GENDER:Masculine, OTHER SCRIPTS: محمّد (Arabic), PRONOUNCED: moo-HAH-med [key].. Meaning & History : Means “praiseworthy”, derived from Arabic حمد (hamid) “to praise”. This was the name of the prophet who founded the Islamic religion in the 7th century. Since his time, it has been very popular in the Muslim word.USAGE:Arabic
সূত্র: http://www.behindthename.com/name/muhammad
বাংলা করলে মোহাম্মদ শব্দের অর্থ দাড়ায় প্রশংসনীয় বা প্রশংসিত অর্থাৎ যে ব্যক্তিকে প্রশংসা করা হয় সেই ব্যক্তি হলো মোহাম্মদ। তাহলে দুজনকে পাওয়া গেল যাদেরকে প্রশংসা করতে হবে। সকল প্রশংসা যে আল্লাহর এবং কোন ব্যক্তি মানুষকে প্রশংসা করা যাবে না এটার বহু বিবরণ হাদিসে আছে(যারা কোরান হাদিস পড়ে নি তারা এ ধরনের কথা শোনা মাত্রই ক্ষেপে উঠতে পারে কারন তারা প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাইবে না যে কোন ব্যক্তিকে তার একটা ভাল কাজের জন্য প্রশংসা করা যাবে না), যেমন-
আবু মুসা বর্নিত: আল্লাহর নবী একজন মানুষকে অপর একজন মানুষ সম্পর্কে প্রশংসা করতে দেখলেন এবং বললেন- তুমি তাকে হত্যা করলে বা তাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেললে। সহি মুসলিম, হাদিস -৭১৪১
ঠিক একই রকম হাদিস বর্ণিত আছে- ৭১৩৮,৭১৩৯,৭১৪০,৭১৪২ ও ৭১৪৩ এ। অর্থাৎ বহু সংখ্যক একই রকম হাদিস আছে যা দ্বারা প্রমানিত হচ্ছে এটা শতভাগ সহি হাদিস যাতে কোনই সন্দেহ থাকতে পারে না।
যাহোক, আল্লাহ নিজে দাবী করছে সব প্রশংসাই তার অর্থ আর কারও জন্য প্রশংসা অবশিষ্ট নেই। অন্যদিকে মোহাম্মদ নিজেই প্রশংসিত অর্থাৎ তাকে প্রশংসা করা হয়েছে।এখন যেহেতু সব প্রশংসা আল্লাহর ,অথচ মোহাম্মদ হলেন প্রশংসিত ব্যাক্তি অর্থাৎ আল্লাহর দাবীকৃত সকল প্রশংসার মধ্যে ভাগ বসিয়েছেন তাহলে বিষয়টা দাড়ায়-হয় মোহাম্মদ আল্লাহর শরিক অথবা খোদ মোহাম্মদ নিজেই আল্লাহ।অথচ কোরান বার বার বলেছে আল্লাহর কোন শরিক নেই। তাহলে অবশেষে বিষয়টা কি দাড়াল? হয় মোহাম্মদ আল্লাহর চাইতে বড় কিছু নয়ত মোহাম্মদই কি স্বয়ং আল্লাহ নয় ? এবং মুসলমানরা মূলত: মোহাম্মদের কাছেই প্রার্থনা করে ?
ঠিক একারনেই কি মুসলমানদের কাছে আল্লাহর চেয়ে মোহাম্মদের গুরুত্ব অনেক বেশী? একারনেই আল্লাহকে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করলে তারা কিছুই মনে করে না ,কিন্তু মোহাম্মদের সামান্য সমালোচনা করলেই জঙ্গি জোশে ঝাপিয়ে পড়ে হত্যা লীলা চালিয়ে সব কিছু ধ্বংস করে দিতে চায় ?
মোহাম্মদের ইসলাম ধর্মের মূল কথা – আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় তার কোন শরিক নেই।
এখন দেখা যাক, মোহাম্মদ আপাত: এ কথা বলে সূক্ষ্মভাবে কি প্রচার করে গেছেন। কোরানে আছে-
বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। সূরা আল – ইমরান, ০৩: ৩১
বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না। সূরা আল – ইমরান, ০৩: ৩২
আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়। সূরা আল – ইমরান, ০৩: ১৩২
এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাত সমূহে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য।সূরা নিসা, ০৪: ১৩
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। সূরা নিসা, ০৪: ৫৯
আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। সূরা নিসা, ০৪: ৬৯
এরকম বহু আয়াতে একই কথা বলা হয়েছে। তা হলো – আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য কর।
কিন্তু বাস্তবে রসুলের হুকুমই পালনই যে আল্লাহর হুকুম পালন তার চুড়ান্ত বাস্তবায়ন দেখা যায় নিচের আয়াতে –
যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। সূরা নিসা, ০৪: ৮০
বিষয়টাকে একটা সমীকরণের সাহায্যেও প্রমান করা যেতে পারে, উপরোক্ত ০৪: ৮০ আয়াত মতে,
মোহাম্মদের হুকুম = আল্লাহর হুকুম বা, মোহাম্মদ + হুকুম = আল্লাহ + হুকুম
উভয় পক্ষ থেকে হুকুম শব্দটা বাদ দিলে সমীকরণ টি দাড়ায় এরকম- মোহাম্মদ= আল্লাহ ( প্রমানিত)
এভাবে কোরানের বানীর নামে মোহাম্মদ নিজেকে আল্লাহর আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ।আল্লাহর বানীর নামে নিজের বানী প্রচার করে গেছেন ২৩ টি বছর। পৌত্তলিক ধর্মের পরিবর্তে একেশ্বরবাদী ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে পৌত্তলিকদের বহু আচার অনুষ্ঠান ইসলামে আমদানী করেছেন। যেমন- কাবার ভিতরে অবস্থিত কাল পাথরের সামনে মাথা নত করে চুমু খাওয়া, হজ্জ করা, সাফা মারওয়ার পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়া দৌড়ি করা, কাবা শরীফের চারপাশে সাতবার ঘোরা এসব। এর সবগুলিই ছিল পৌত্তলিকদের প্রথা ও আচার। প্রথমেই কাল পাথর বা হযরে আসওয়াদ নিয়ে কথা বলা যাক-
ইবনে আব্বাস বর্ণিত নবী বলেছেন-“ কাল পাথর বেহেস্ত থেকে পতিত হয়েছে।যখন প্রথম দুনিয়াতে এটা পতিত হয় তখন এর রং ছিল দুধের মত সাদা কিন্তু আদম সন্তানদের পাপ গ্রহণ করার ফলে এর রং কাল হয়ে গেছে”। তিরমিজি, হাদিস- ৮৭৭
ইবনে ওমর নবী কে বলতে শুনেছেন, “ কাল পাথর ও আর রুখ আল ইয়ামানি কে স্পর্শ করলে পাপ মোচণ হয়।তিরমিজি, হাদিস-৯৫৯
অথচ পাপ মোচনের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতে, কোন পাথরের হাতে নয়।যা কোরানে পরিস্কার বলা আছে যেমন-
বলে দিনঃ তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুর এবাদত কর যে, তোমাদের অপকার বা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না? অথচ আল্লাহ সব শুনেন ও জানেন। সূরা মায়েদা-৫:৭৬
জিজ্ঞেস করুন নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের পালনকর্তা কে? বলে দিনঃ আল্লাহ! বলুনঃ তবে কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত এমন অভিভাবক স্থির করেছ, যারা নিজেদের ভাল-মন্দের ও মালিক নয়? বলুনঃ অন্ধ চক্ষুষ্মান কি সমান হয়? অথবা কোথাও কি অন্ধকার ও আলো সমান হয়। তবে কি তারা আল্লাহর জন্য এমন অংশীদার স্থির করেছে যে, তারা কিছু সৃষ্টি করেছে, যেমন সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ? অতঃপর তাদের সৃষ্টি এরূপ বিভ্রান্তি ঘটিয়েছে? বলুনঃ আল্লাহই প্রত্যেক বস্তুর স্রষ্টা এবং তিনি একক, পরাক্রমশালী। সুরা রাদ ১৩:১৬
তিনি বললেনঃ তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর এবাদত কর, যা তোমাদের কোন উপকার ও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না ? সুরা আম্বিয়া, ২১: ৬৬ (মক্কায় অবতীর্ণ)
তারা এবাদত করে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর, যা তাদের উপকার করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না। কাফের তো তার পালনকর্তার প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী। সুরা ফুরকান, ২৫:৫৫
কোরানে বলছে আল্লাহ ছাড়া ভাল মন্দ করার ক্ষমতা আর কারে নেই। অথচ একই সাথে মোহাম্মদ বলছে কাল পাথরের পাপ মোচন করার ক্ষমতা বিদ্যমান। যা শিরক ছাড়া আর কিছু নয়।অর্থাৎ মোহাম্মদ সুকৌশলে তার অনুসারীদেরকে এক আল্লাহর উপাসনার কথা বলে একই সাথে শিরক শিক্ষা দিচ্ছেন যা তার অন্ধবিশ্বাসী অনুসারীরা বুঝতে পারছে না।তবে এটা কিন্তু মোহাম্মদের এক কঠিন ও বুদ্ধিমান অনুসারী বুঝতে পেরেছিল যার নাম ওমর , ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আর তাই সে বলেছিল –
আবিস বিন রাবিয়া বর্নিত- ওমর কাল পাথরের নিকট আসলেন এবং একে চুমু দিলেন, তারপর বললেন-আমি জানি তুমি একটা পাথর বৈ আর কিছু নও, তুমি কারও উপকারও করতে পার না , অপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসুলুল্লাহকে না দেখতাম তোমাকে চুমু খেতে আমি তোমাকে চুমু খেতাম না। বুখারী, বই-২৬, হাদিস-৬৬৭
যায়েদ বিন আসলাম বর্নিত- ওমর বিন খাত্তাব কাল পাথরকে উদ্দেশ্য করে বললেন- আল্লাহর কসম, আমি জানি তুমি একটা পাথর ছাড়া আর কিছু নও, তুমি না পার কারো উপকার করতে, না অপকার। নবীকে যদি আমি না দেখতাম তোমাকে চুমু খেতে আমি তোমাকে কখনও স্পর্শ করতাম না। বুখারী, বই-২৬, হাদিস-৬৭৫
সোয়াইদ বিন ঘাফালা বর্ণিত: আমি ওমরকে কাল পাথরকে চুমু দিতে ও হাত বুলাতে দেখেছি এবং বলতে শুনেছি এরকম- আমি দেখেছি আল্লাহর নবীর তোমার জন্য অনেক ভালবাসা ছিল।সহি মুসলিম, বই-৭,হাদিস-২৯১৬
তার অর্থ এ কাল পাথর যেন তেন পাথর নয়, খোদ বেহেস্ত থেকে পথ ভুলে পৃথিবীতে টুপ করে এসে পড়েছে।আর এ পাথরের আছে পাপ মোচনে ক্ষমতা যা খোদ স্বয়ং নবীও মনে করতেন। তাহলে বিষয়টি দাড়াল, মোহাম্মদের আল্লাহ ছাড়াও একটা কাল পাথরেরও পাপ মোচনের ক্ষমতা বিদ্যমান। ঠিক একারনেই নিজেদের সীমাহীন পাপ মোচনের জন্য হজ্জের সময় হাজীরা এ কাল পাথরকে চুমু বা নিদেন পক্ষে একটু স্পর্শ পাওয়ার জন্য উন্মাদ হয়ে যায়, এটাকে স্পর্শ করতে যেয়ে এ পর্যন্ত কত মানুষ মানুষের পায়ের নীচে চাপা পড়ে মারা গেছে তার কোন সঠিক হদিস নেই।আর বলা বাহুল্য, মোহাম্মদের কাল পাথরকে এভাবে পাপ মোচনকারী হিসাবে প্রচার করাটা মারাত্মক শিরক।বলতে গেলে তা অন্যান্য ধর্মের চেয়ে বেশী শিরক। অন্য ধর্ম যেমন- হিন্দুরা দেব দেবীর মূর্তি তৈরী করে পূজো করে, আপাত দেখতে মনে হয় মূর্তি বা জড় পদার্থের পূজা , কিন্তু আসলে ওরা মূর্তি পূজা করে না, ওরা ওদের জীবন্ত দেব দেবীকে মূর্তির মধ্যে কল্পনা করে তার পূজা করে।বিভিন্ন দেব দেবীকে তারা আলাদা আলাদা ঈশ্বরও ভাবে না, প্রতিটি দেব দেবীকে তারা মনে করে তাদের এক ঈশ্বরের এক একটি গুণের প্রতিরূপ।যেমন যে ধণের কামনা করে সে ঈশ্বরের ধণ সম্পর্কিত গুণরূপ লক্ষ্মীর পুজা করে, যে বিদ্যা বা জ্ঞানের কামনা করে সে ঈশ্বরের জ্ঞানরূপ স্বরস্বতীর পুজা করে, ইত্যাদি। খৃষ্টানরা গীর্জার মধ্যে মেরী ও যীশুর মুর্তি তৈরী করে তার সামনে মাথা নত করে ও প্রার্থনা করে। আপাত দেখতে মনে হয়, মূর্তির সামনে মাথা নত করছে ও প্রার্থনা করছে, আসলে তারাও হিন্দুদের মত তারা জীবন্ত যীশুকে মুর্তির মধ্যে কল্পনা করে সেটা করছে।এর ফলে তাদের মধ্যে তাদের ঈশ্বরের সাথে একটা নৈকট্যের বন্ধন অনুভুত হয়।হাওয়ার সামনে বসে পূজা বা প্রার্থনা করার চেয়ে এটা অনেক বেশী উপভোগ্য ও আন্তরিক হয়ে ওঠে।সুতরাং যুক্তির খাতিরে দেখা যায়, হিন্দু বা খৃষ্টান এরা গূঢ়ার্থে মোটেই মূর্তি পূজা করে না অর্থাৎ শিরক করে না।
ইসলাম পূর্ব যুগে আরব রা ঠিক এভাবেই কাল পাথরকে পুজা করত আর তাদের দেখা দেখি মোহাম্মদও সেটা করতেন সেই বাল্য কাল থেকে।পরে ইসলাম চালু করার পরও তিনি সেটা বাদ দেন নি, কারন তিনি রাজনীতিবিদ বা সমরনেতা হিসাবে ভাল মতো চালু হলেও আধ্যাত্মিক বা তাত্ত্বিক বিষয়ে জ্ঞান ছিল সীমিত। কাল পাথরের সামনে মাথা নত করে তাকে চুমু খাওয়া তার একেশ্বরবাদী ধর্মেরই যে মহা লংঘন তথা চুড়ান্ত শিরক তা তার মাথাতে ঢোকেনি একেবারেই।আর এ একবিংশ শতাব্দিতে প্রায় দেড় বিলিয়ন মুসলমানদের মাথাতেও ঢুকছে না কোনমতে।অথচ স্বাড়ম্বরে চিৎকার করে ঘোষণা করে চলেছে ইসলাম হলো একমাত্র সত্য ধর্ম যা একেশ্বরবাদীতা প্রচার করে, কোন শিরক করে না, জড় পদার্থের পূজা করে না।
এবার আসা যাক, কাবা ঘরকে কিবলা করে তার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া শিরক কি না।মোহাম্মদ তার নবুয়ত্বত পান চল্লিশ বছর বয়েসে। তার আগে তিনি ৩৬০ পুতুল ভর্তি কাবার মধ্যে বসে তাদের উপাসনা করতেন। এমন কি নবুয়ত্ব পাওয়ার পরও তিনি উক্ত পুতুল ভর্তি ও দেয়ালে আঁকা নানা দেব দেবীর মূর্তি ভর্তি কাবার মধ্যে বসে তাঁর আল্লাহর আরাধণা করতেন।তাতে কোন অসুবিধা হতো না। অথচ তিনিই হাদিসে বলছেন-
আয়শা বর্ণিত- আল্লাহর নবী বলেছেন- যারা প্রানীর ছবি আকে তাদের শেষ বিচারের দিন আল্লাহ বলবেন- যে সব প্রানীর ছবি আকতে তাদেরকে জীবন দান কর। যে ঘরে কোন প্রানীর ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেস্তারা প্রবেশ করে না। সহি বুখারি, বই-৩৪, হাদিস-৩১৮
সাইদ বিন আবু হাসান বর্ণিত- যখন আমি ইবনে আব্বাস এর সাথে ছিলাম , এক লোক এসে বলল- হে আব্বাসের পিতা , আমি ছবি একেঁ জীবিকা নির্বাহ করি। ইবনে আব্বাস বললেন- আমি শুধুমাত্র নবীর কথা থেকে বলতে পারি তিনি বলেছেন- যে ব্যক্তি ছবি আকেঁ তাকে সেই পর্যন্ত শাস্তি দেয়া হবে যে পর্যন্ত না সে তাতে জীবন দান করতে পারে ও সেটা কখনই সম্ভব হবে না। এটা শুনে লোকটার মুখ শুকিয়ে গেল। ইবনে আব্বাস বলল- তবে যদি তুমি ছবি আকতেই চাও তাহলে গাছ পালা ও নির্জীব বস্তু এসবের ছবি আকঁতে পার। সহি বুখারি, বই-৩৪, হাদিস-৪২৮
আবু তালহা বর্ণিত- আমি নবীকে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন যে ঘরে কোন প্রানীর ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেস্তারা প্রবেশ করে না। সহি হাদিস, বই- ৫৪, হাদিস- ৪৪৮
তাই নিচের আয়াত নাজিল হয় –
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে। সুরা বাক্কারা, ২: ১৪৪
আর যে স্থান থেকে তুমি বের হও, নিজের মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফেরাও-নিঃসন্দেহে এটাই হলো তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্ধারিত বাস্তব সত্য। বস্তুতঃ তোমার পালনকর্তা তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনবহিত নন। সূরা আল বাকারা, ২: ১৪৯
এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? আপনি বলুনঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান।সুরা আল বাকারা, ২: ১৪২
কাবা ঘরের দিকে কেন নামাজ পড়তে হবে? কাবার মধ্যে কি আল্লাহ বাস করে ? না সেখানে আল্লাহ বাস করে না।আবার কোরান এ কথাও বলে না যে আল্লাহর সর্বত্র বিরাজমান। কারন কোরান বলছে-
তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃস্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি পরম দয়াময়। তাঁর সম্পর্কে যিনি অবগত, তাকে জিজ্ঞেস কর। সূরা- ফুরকান-২৫:৫৯(মক্কায় অবতীর্ণ)
আল্লাহ যিনি নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে বিরাজমান হয়েছেন। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী নেই। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না?সূরা-সাজদা, ৩২: ০৪ (মক্কায় অবতীর্ণ)
সূরা-হাদীদ, ৫৭:০৪ ও সুরা-হুদ, ১১:০৭ আয়াতেও বলছে আল্লাহ আরশে অবস্থান করে।
এবার দেখা যাক , আল্লাহর আরশ কোথায় সে সম্পর্কে হাদিস কি বলে –
আল্লাহর আরশ হলো আসমান সমূহের ওপর অবস্থিত…….. সূনান আবু দাউদ, বই-৪০, হাদিস- ৪৭০৮
জান্নাতুল ফেরদাউসের ওপর আ ল্লাহর আরশ অবস্থিত…… সহি বুখারী, বই-৫২, হাদিস-৪৮
শুরুতে কিছুই ছিল না, তারপর আল্লাহ তার সিংহাসন তৈরী করলেন যা ছিল পানির ওপর, তার তিনি তার বইতে সবকিছু লিখলেন… সহি বুখারী, বই -৫৪,হাদিস-৪১৪
যখন সা’দ বিন মূয়াদের লাশ আল্লাহর কাছে রাখা হলো তখন তার আরশ কেঁপে উঠল। সহি মুসলিম. বই-৩১, হাদিস-৬০৩৩
(আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠতে মোহাম্মদ নিজে দেখেছিলেন, মনে হয় তখন মোহাম্মদ আল্লাহর আশ পাশেই ছিলেন না হয় আল্লাহর সাথে খোশ গল্প করছিলেন।)
তার মানে জানা গেল আল্লাহ সব কিছু সৃষ্টির পরম সব কিছু থেকে পৃথক হয়ে তার আরশে আসীন হয়েছে আর সেখান থেকেই তার সীমাহীন শক্তিশালি পর্যবেক্ষন ক্ষমতার দ্বারা দ্বীন দুনিয়ার সব কিছু পর্যবেক্ষন করছে অর্থাৎ সব কিছু তার জানা।অর্থাৎ আল্লাহ যে দুনিয়ার কোথাও থাকেন না তা সুনিশ্চিত। তাহলে যারা মক্কার কাবা ঘরের দিকে মুখ করে নামায পড়ে , তারা কার কাছে প্রার্থনা করে ও মাথা নত করে ? অন্তত: আল্লাহর কাছে যে প্রার্থনা ও মাথা নত করে না তা সুনিশ্চিত।যদিও তারা মনে করতে পারে যে তারা আল্লাহর কাছেই তা করে , কিন্তু তাদের এ ধারনা ভ্রান্তিপূর্ণ।আসলে তারা মাথা নত করে মক্কার ইট পাথরের তৈরী একটা দালান ও তার মধ্যে থাকা কাল পাথরের প্রতি তথা তারা মাথা নত করে সম্পূর্নই জড় পদার্থের প্রতি।আল্লাহ যদি বলত সে কাবা ঘরের মধ্যে অবস্থান করে তাহলে একটা যুক্তি ছিল কিন্তু আল্লাহ কাবা ঘর তো দুরের কথা দ্বীন দুনিয়ার কোথাও বাস করে না। সে বাস করে সাত আসমানের ওপর তার আরশে। তার অর্থ মোহাম্মদ কৌশলে তাঁর অনুসারীদেরকে আল্লাহর কাছে মাথা নত করার নাম করে মুলত একটা জড় পদার্থের তৈরী ঘর ও তার মধ্যে অবস্থিত কাল পাথরের কাছে মাথা নত করার জন্য বিধান করে গেছেন।যেটা সেই সময়ের মুসলমান তো বটেই বর্তমানের মুসলমানরা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারছে না।
মোহাম্মদ কেন কাবা কে তার কিবলা বানালেন তা বোঝা খুবই সহজ। কোন মতেই যখন ইহুদি ও খৃস্টানরা মোহাম্মদের নবুয়ত্ব বিশ্বাস করে তার বশ্যতা স্বীকার করল না , তখন মোহাম্মদ মনে করলেন সলোমনের মন্দিরকে কিবলা করার কোন অর্থ হয় না, সেটা করলে তার ইসলাম মক্কা থেকে অনেক দুরবর্তী প্যলেষ্টাইনের ওপর নির্ভরশীল থাকবে, অতদুর গিয়ে মোহাম্মদ বা তার অনুসারীদের পক্ষে সুবিধা হবে না কারন প্যলেষ্টাইন ইহুদি ও খৃষ্টানদের দখলে আর তারা মোহাম্মদকে নবী মানে না। পক্ষান্তরে কাবা ঘরকে কিবলা করলে তাতে আরবদের মধ্যে নিজস্ব জাতীয়তা বোধ ও ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি হবে এবং সব কিছু তারাই নিয়ন্ত্রন করতে পারবে।অর্থাৎ এ ধরনের সিদ্ধান্ত ছিল যতটা না ধর্ম কেন্দ্রিক তার চাইতে বেশী রাজনৈতিক। এত কথা মোহাম্মদের মত নিরক্ষর ব্যক্তি জানলেন কেমনে ? এর উত্তরও সোজা। মোহাম্মদ তার নবুয়ত্ব দাবী করলে সাথে সাথে ইহুদি ও খৃষ্টানরা তার প্রতিবাদ করে। তারা যুক্তি দেখায় সকল নবী আসার কথা ইসরাইলি বংশ থেকে তথা ইসহাকের বংশ থেকে।অথচ মোহাম্মদের জন্ম মক্কার কুরাইশ বংশে যারা না ইহুদি না খৃষ্টান, তারা পৌত্তলিক।আর তখনই মোহাম্মদ তার গল্প তৈরী করে ফেলে ও বলতে থাকে কুরাইশ বংশ হলো ইব্রাহিমের অন্য পূত্র ইসমাইলের বংশ থেকে যে ইসমাইলকে ইব্রাহিম তার মা হাজেরা সহ মোহাম্মদের কল্পিত দাবি মোতাবেক মক্কাতে নির্বাসন দিয়েছিল আর সে অর্থে মোহাম্মদ হলো ইসরাইলি বংশোদ্ভূত।আর তাই তৌরাত কিতাবে যে নবীর আগমনের ভবিষ্যদ্বানী করা আছে সেই ব্যক্তি হলো মোহাম্মদ।মোহাম্মদ এ দাবী করার সময় একবারও পারিপার্শিক ও ভৌগলিক অবস্থা সম্পর্কে কোন চিন্তা করেন নি। একটা দুধের শিশু ইসমাইলকে নিয়ে তার মাতা হাজেরাকে কিভাবে প্যালেষ্টাইন থেকে প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার দুরে কঠিন মরুভুমি পাড়ি দিয়ে নির্বাসন দেয়া সম্ভব তা তার মাথাতে খেলেনি।এর পরেও কথা হলো ইসমাইলের বংশ ধারাকে ইসরাইলি বংশ বলা হয় না। ইসরাইলি বংশ বলা হয় ইসহাকের এক পূত্র জ্যকব যার অন্য নাম ছিল ইসরাইল তার ছিল বারটা পূত্র যাদের থেকে বারটা গোত্র সৃষ্টি হয় তাদেরকে বলা হয় ইসরাইলি। সুতরাং মোহাম্মদ রচিত কিচ্ছা কে সত্য ধরে নিলেও মোহাম্মদের নবুয়ত্ব টেকে না। আর তখনই মোহাম্মদ প্রচার করতে থাকেন যে ইহুদি ও খৃষ্টানরা তাদের তোরাত ও গসপেল বিকৃত করে ফেলেছে।আর তাই মোহাম্মদ যখন মদিনাতে তার ক্ষমতা মোটামুটি ভাবে কুক্ষিগত করে ফেলেছিলেন ও মদিনার অধিকাংশ মানুষ তার বশ্যতা স্বীকার করে ফেলেছিল তখনই তিনি সব কিছু বিচার বিবেচনা করে তার কিবলা সলোমনের মন্দিরকে বাদ দিয়ে কাবাকে স্থির করেন ও এর জন্য প্রয়োজনীয় আয়াত নাজিল করে ফেলেন।অবশ্য এর কিছুকাল আগে থেকেই তার নিজেরও ইচ্ছা ছিল ও কিছু সাহাবি তাকে কাবা ঘরকে কিবলা করার জন্য চাপ দিচ্ছিল।যা দেখা যায় নিচের হাদিসে-
বারা বিন আযিব বর্ণিত- আল্লাহর রসূল বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে ষোল বা সতের মাস নামায পড়লেন কিন্তু তিনি কাবা ঘরের দিকে মুখ করে নামায পড়তে ইচ্ছা পোষণ করতেন, তাই আল্লাহ নাজিল করলেন এ আয়াত – নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে। (২:১৪৪) । সহি বুখারি, বই-৮, হাদিস-৩৯২
আল্লাহ বার বার মোহাম্মদকে আকাশের দিকে তাকাতে দেখে বুঝে ফেলে মোহাম্মদ চান কাবা কে কিবলা বানাতে। আল্লাহ বিন্দু মাত্র দেরী না করে সাথে সাথে তার জন্য আয়াত নাজিল করে দেয়।কিন্তু এ ধরনের নির্দেশ যে প্রকারান্তরে তার ইসলামকে পৌত্তলিকতার জালে আবদ্ধ করে ফেলে সে বোধ টুকু মোহাম্মদের ছিল না।উক্ত ২:১৪৪ আয়াত টি নিচের আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক-
এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? আপনি বলুনঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান।সুরা আল বাকারা, ২: ১৪২
কারন পূর্ব পশ্চিম যদি আল্লাহরই হয় তাহলে পূর্ব পশ্চিম যে কোন দিকে মুখ করে নামায পড়লেই তা আল্লাহর কাছে পৌছানোর কথা। আর এ হিসাবে আল্লাহ যদি বলত- তোমরা পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিন সব কিছুই আমার , যে দিকে মুখ করেই নামাজ পড়ো না কেন তা আমার কাছেই আসে- তাহলে তা হতো বাস্তব ভিত্তিক ও যুক্তি যুক্ত। অথচ আল্লাহ পূর্ব পশ্চিম আমার বলে আবার বলছে শুধুমাত্র কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে , এটা কোন ধরনের কথা ? তার অর্থ কি কাবার দিকে মুখ করে নামাজ না পড়লে তা আল্লাহর কাছে পৌছবে না ? এটা কি কোরানের আল্লাহর পূর্ববর্তী ব্ক্তব্যের সাথে স্ববিরোধী নয়? এ ছাড়া এ ধরনের বক্তব্য কি আল্লাহর সংকীর্ণ মনের পরিচয় নয় ? আল্লাহ কেন শুধুমাত্র একটি ঘরের মুখাপেক্ষি থাকবে? যখন কোন মুসলমান চাঁদ মঙ্গলে বেড়াতে যাবে তখন সে কার দিকে তাকিয়ে নামাজ পড়বে ? কিন্তু এটা যে আসলে আল্লাহর মনের কথা নয় বরং মোহাম্মদের মনের গোপন কথা ও ইচ্ছা তা কিন্তু বোঝা যায় উপরোক্ত বুখারি বই -৮ ও হাদিস -৩৯২ এবং নিচের আয়াত থেকে-
যদি আপনি আহলে কিতাবদের কাছে সমুদয় নিদর্শন উপস্থাপন করেন, তবুও তারা আপনার কেবলা মেনে নেবে না এবং আপনিও তাদের কেবলা মানেন না। তারাও একে অন্যের কেবলা মানে না। যদি আপনি তাদের বাসনার অনুসরণ করেন, সে জ্ঞানলাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে নিশ্চয় আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।সূরা বাক্কারা, ২:১৪৫
অদ্ভুত কথা ! আহলে কিতাবিরা কেন মোহাম্মদের কিবলা মানতে যাবে ? আর তা ছাড়া তাদের তো কোন কিবলাই নেই বা তার দরকারও নেই, কারন তাদের ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান, তাই যে কোন দিকে তাকিয়ে তার প্রার্থণা করলেই সে তা শুনতে পায়।সলোমনের মন্দিরকে তারা পবিত্র উপাসনালয় জ্ঞান করে ঠিকই কিন্তু তার দিকে তাকিয়ে তো তারা প্রার্থনা করে না। অর্থাৎ সলোমনের মন্দিরের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করাটা তাদের জন্য আবশ্যকিয় কোন বিধান নয়। যুক্তির দিক দিয়ে সেটাই সঙ্গত আর কোরানের আল্লাহও কিন্তু সেটাও স্বীকার করছে যৌক্তিক কারনেই ২:১৪২ আয়াতে। অর্থাৎ বিষয়টা দাড়াচ্ছে যেহেতু আহলে কিতাবিরা মোহাম্মদকে নবী স্বীকার করছে না , তাই মোহাম্মদের সোজা বক্তব্য যে তিনি নিজে আর তাদের উপাসনালয় বায়তুল মোকাদ্দাসকে আর কিবলা করবেন না। তার চেয়ে বড় কথা হলো মদিনাতে হিজরত করার দেড় বছর পর মোহাম্মদ কাবাকে কিবলা বানাবার ওহী পান, এর পরও মোহাম্মদ ও তার অনুসারীরা মদিনাতে সাড়ে আট বছর কাল কাটান ও এ গোটা সময় তারা সবাই পুতুল ও ছবি ভর্তি কাবার দিকে মুখ করে নামায পড়তেন তাতে তাদের কোন অসুবিধা হয় নি।অথচ মোহাম্মদের বর্ণনা মতেই সে ঘরে কোন ফিরিস্তা আসার কথা নয়। তাহলে সে সময় তারা কার কাছে নামায পড়তেন ? আপাত: দৃষ্টিতে আল্লাহর কাছে বলেই মনে হয় , কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কি তাই ?
তবে নিচের হাদিস থেকে আল্লাহর আরশের অবস্থান সম্পর্কে একটা ধারনা করা যেতে পারে-
আবু দার বর্ণিত- মসজিদের মধ্যে একদা আমি নবীর কাছে ছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন- “ আবু দার, তুমি কি জান সূর্য অস্ত যাওয়ার পর সে কোথায় যায় ? আমি উত্তর করলাম-“ আল্লাহ ও তার রসুল ভাল জানেন”। তিনি বললেন-“ এটা আল্লাহর আরশের নিচে যায়, বিশ্রাম করতে থাকে ও প্রার্থনা করতে থাকে পূনরায় উদিত হওয়ার জন্য। পরে তাকে আল্লাহ অনুমতি দিলে সে পূনরায় পূর্ব দিকে উদিত হয় যা আল্লাহ বর্ণনা করেছেন তার বানী ৩৬:৩৮ আয়াতে(সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ।) ”। সহি বুখারি, বই-৬০, হাদিস-৩২৬
পৃথিবীকে সমতল ভূমি (কোরান বস্তুত সেটাই ধরেছে) ধরলে আল্লাহর আরশের অবস্থান সম্পর্কে একটা আন্দাজ করা যেতে পারে।সমতল ভূমির ওপরের পৃষ্ঠে আমাদের অবস্থান , ঠিক এর উল্টো পাশেই হলো আল্লার আরশ কারন আমরা তো দেখি সূর্য অস্ত যাওয়ার পর সমতল পৃথিবীর উল্টো পাশেই চলে যায়।যদি সূর্য পৃথিবীর উল্টো পিঠে গমন ক’রে সেখানে আল্লাহর আরশের সাক্ষাত পায় তাহলে অবশ্যই সেখানেই আল্লাহর আরশ থাকবে এটা সুনিশ্চিত। তবে সেখানে পৌছানোটা আমাদের জন্য কঠিন হবে কারন পৃথিবীর উল্টো পিঠে গেলেই তো আমরা টুপ করে পড়ে যাব। যেমন-
আমি পৃথিবীতে পর্বমালামসূহ রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে এবং তাতে তৈরী করেছি প্রশস্ত পথ, যাতে তারা পথ প্রাপ্ত হয়। সূরা আম্বিয়া, ২১:৩১ ( মক্কায় অবতীর্ণ)
আমি কি করিনি ভূমিকে বিছানা এবং পর্বতমালাকে পেরেক? সূরা আন নাবা-৭৮:৬-৭ (মক্কায় অবতীর্ণ)
তিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন; তোমরা তা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্বপ্রকার জন্তু। আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছি, অতঃপর তাতে উদগত করেছি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদরাজি। সূরা লোকমান-৩১:১০(মক্কায় অবতীর্ণ)
অর্থাৎ পৃথিবীতে পর্বতমালা আল্লাহ তৈরী করেছেন পেরেকের মত করে। পেরেক দিয়ে যেমন কোন কিছু গেথে দেয়া হয় শক্ত করে পর্বত সেভাবেই সমতল পৃথিবীকে গেথে রেখেছে যাতে পৃথিবী কাত হয়ে যেতে না পারে সেকারনেই আল্লাহ পরিস্কার ভাষায় বলছে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুকে না পড়ে, কারন তা হলে আমরা সবাই গড়িয়ে পড়ে যাব।আল্লাহ বড়ই দয়ালু আমরা পৃথিবী থেকে পড়ে যাই তা সে চায় না। কিন্তু কার সাথে পৃথিবীকে গেথে রেখেছে তা পরিস্কার নয়।এছাড়াও সে দুনিয়াতে অনেক রাস্তা ঘাট তৈরী করে রেখেছে যাতে মানুষ জন চলা ফিরা করতে পারে।বর্তমানে দরিদ্র মুসলিম দেশ গুলো ( বিশেষ করে বাংলাদেশ) কেন যে খামোখা রাস্তা ঘাট ব্রিজ কালভার্ট এসব তৈরী করার জন্য ইহুদি নাসারা কাফেরদের কাছে হাত পাতে বোঝা দুস্কর, তার চেয়ে বরং আল্লাহর কাছে আর্জি জানালেই তো পারে। অতীতে যেমন সে রাস্তা ঘাট তৈরী করে দিয়েছিল না চাইতেই , আর এখন সবাই মিলে তার কাছে প্রার্থনা জানালে সে কি রাস্তা ঘাট ব্রিজ কালভার্ট তৈরী করে দেবে না ?
যাহোক , সব চেয়ে মজা লাগল উক্ত সহি বুখারি, বই-৬০, হাদিস-৩২৬ এ উল্লেখিত সুরা ইয়াসিনের ৩৬:৩৮ আয়াতের সম্পর্কে তথাকথিত ইসলামি পন্ডিত জাকির মিয়ার এক দুর্দান্ত বাল খিল্যসুলভ ব্যখ্যা শুনে। আয়াত টা এরকম –
সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ। সূরা ইয়াসিন, ৩৬:৩৮
বর্তমানে বিজ্ঞানের বদৌলতে আমরা জানি সূর্য আকাশ গঙ্গা নামক স্পাইরাল প্রকৃতির ছায়াপথের একটা বাহুর একেবারে শেষ দিকে অবস্থান করছে ও তা প্রতি ২০ কোটি বছরে ছায়াপথটির কেন্দ্রকে একবার করে প্রদক্ষিন করছে অনেকটা ৩৬৫ দিনে আমাদের পৃথিবী যেমন একবার সূর্যকে প্রদক্ষিন করে সেরকম। তো জাকির মিয়ার বক্তব্য হলো সূর্য যে ২০ কোটি বছরে তার ছায়াপথের কেন্দ্রকে একবার প্রদক্ষিন করে আসে উক্ত আয়াত নাকি সেটাই বলছে।যে লোক কোরান হাদিস তেমন পড়ে নি , জানেও না তাতে কি লেখা সে লোক কিন্তু ঠিকই ঘাবড়ে যাবে জাকির মিয়ার এ বক্তব্যে ও একই সাথে মনে করে বসতে পারে জাকির মিয়া সত্য কথা বলছে। কারন আয়াতটিতে তো পরিস্কার বলছে – সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। অথচ জাকির মিয়ারও ১৪০০ বছর আগে তার নবী মোহাম্মদ কিন্তু এ আয়াতের যথার্থ ব্যখ্যা দিয়ে গেছেন উক্ত হাদিসে। ঠিক একই ব্যখ্যা কিন্তু মোহাম্মদ সহি বুখারি, বই -৯৩, হাদিস- ৫২৮ ও সহি মুসলিম , হাদিস -২৯৭ এ প্রদান করেছেন। তাহলে প্রশ্ন হলো – কার ব্যখ্যা সত্য? মোহাম্মদের নাকি জাকির মিয়ার ?
মোহাম্মদ কিন্তু খুব সহজ সরল ভাবেই সেই ১৪০০ বছর আগেকার মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির ওপর ভিত্তি করে উক্ত আয়াতের ব্যখ্যা দিয়েছেন। এজন্য মোহাম্মদকে ধণ্যবাদ। কারন তখন মানুষের ধারনা ছিল পৃথিবী হলো সমতল একটা ভূমি আর তাই সূর্যই পূর্ব দিকে উদিত হয়ে সারা দিন কিরণ দিয়ে অস্ত যায় ও রাতের বেলা বিশ্রাম নেয় যা ছিল তখনকার সব ধর্মেরই ব্ক্তব্য।বিশেষ করে খৃষ্টান ধর্মেরও।হিন্দু ধর্মের বক্তব্যও প্রায় একই রকম। এর কারন হলো সে সময় বা তারও হাজার হাজার বছর আগ থেকে যে কেউ সকাল বেলায় উঠে দেখত সূর্য পূব দিকে উদয় হয় ও সারাদিন আকাশে পরিভ্রমন শেষে পশ্চিমে অস্ত যায়।মোহাম্মদ নিজেও সেটা শৈশব থেকে দেখে এসেছেন ও সুবিধা মত একসময় তার কোরানে বর্ণনা করেছেন ও পরে তার মত করে সহজ সরল ব্যখ্যা প্রদান করেছেন।এখন জাকির মিয়া এসে বলছে ভিন্ন কথা। জাকির মিয়া কি মোহাম্মদের চাইতে বেশী ইসলাম জানে ও বোঝে ?
ইসলাম অভিযোগ করে হিন্দু খৃষ্টান এসব ধর্ম পৌত্তলিকতা দোষে দুষ্ট। বিষয়টা কি আসলে তাই ?
হিন্দু ধর্মের মূল কথা হলো তাদের ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় প্রয়োজন অনুসারে বহু রূপে আত্মপ্রকাশ করে।যে মানুষ তাকে যে ভাবে ডাকে ঈশ্বর ঠিক সেভাবেই তার কাছে ধরা দেয়।যদি কোন সত্যিকার ঈশ্বর থেকে থাকে আসলে হওয়ার কথাও তো তাই। কেউ ঈশ্বরকে বন্ধু ভাবে চাইতে পারে , কেউ সন্তান হিসাবে, কেউ বা স্বামী হিসাবে। ঈশ্বরের যদি এভাবে তার ভক্তের ইচ্ছা পূরণের ক্ষমতা না থাকে তাহলে সে কিসের ঈশ্বর? ধরা যাক, এক লোক তাকে বন্ধু হিসাবে চাইল কিন্তু অন্য তার ভাই ঈশ্বরকে পিতা হিসাবে কামনা করল।সে ক্ষেত্রে ঈশ্বর একই সাথে দুই সহোদর ভাইয়ের সাধ কিভাবে মিটাবে ? এটা একমাত্র সম্ভব ঈশ্বর যদি বহু রূপ ধারন করেন। মুনকার নকির নামক দুই ফিরিস্তা যদি একই সাথে দুনিয়ার সাতশ কোটি মানুষের দুই কাধে বসে তাদের কাজ কাম লিখে রাখতে পারে, ঈশ্বর কেন পারবে না দুনিয়ার মানুষ যে যেমন করে তাকে চাইবে সেভাবে তার কাছে ধরা দিতে? যদি তা না পারে বা না করে সেটা তাহলে ঈশ্বরের অক্ষমতা। হিন্দুদের যে শত কোটি দেব দেবী আছে এগুলো সেই এক ঈশ্বরের বহুরূপ ছাড়া আর কিছু নয়। হিন্দুরা যার যার সুবিধা মত তার আরাধ্য দেব দেবী নির্ধারন করে তার পূজা করে। আবার যদি কেউ চায় সে শুধুমাত্র পরম ঈশ্বরেরও উপাসনা করতে পারে। ওপর থেকে দেখলে মনে হয় মূর্তি পূজা করছে। কিন্তু বিষয়টা মোটেও তা নয়। ওরা আরাধ্য দেবতাকে সামনে রেখে তার মধ্যে জীবন্ত দেবতার কল্পনা করে, মাথা নত করে। মাথা নত করার সময় মনে মনে ভাবে তার আরাধ্য দেবতা তাকে দেখছে। সে তার সামনের দেব-দেবীর মূর্তিকে জড় পদার্থ মনে করে না। যে কারনে তার অন্তরের সাথে তার আরাধ্য দেবতার একটা মিলন ঘটে, আরাধ্য দেবতাকে সে হৃদয়ে অনুভব করতে পারে। এটাই একজন ভক্ত হিন্দুকে চরম আনন্দ প্রদান করে যা সে শুধু নিজেই অনুভব করে, অন্যকে প্রকাশ করতে পারে না। বিষয়টাকে মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যেভাবেই ব্যখ্যা করা হোক না কেন, হিন্দুদের ধর্ম ঠিক এরকমই। ইসলাম শুধু উপর দিয়ে দেখে উপহাস করে বলে হিন্দুরা মূর্তি পূজা করে।সেখানে ইসলামের আল্লাহ এরকম বহু রূপ ধারন করতে পারে না, অন্তত: কোরান হাদিসে তার কোন উল্লেখ নেই। আর তাই সে তার ভক্তের কামনা বাসনা মিটাতে অক্ষম। একই সাথে এক ব্যক্তি একই সময়ে বিচারক ও দয়ালু হতে পারে না। কোন বিচারক একজন ক্রিমিনালকে বিচার করে সঠিক ভাবে ফাসির রায় দিলে সেটা তার চুড়ান্ত ন্যয় বিচার হতে পারে কিন্তু তখন তিনি আ র অভিযুক্তের প্রতি দয়ালু থাকেন না। সুতরাং একই সাথে আল্লাহ কিভাবে তার সৃষ্ট কোটি কোটি মানুষের বিচার করে কাউকে ফাসি কাউকে করুনা করে একই সময়ে সবার প্রতি পরম ন্যয় বিচারক ও দয়ালু থাকেন ? এটা সম্ভব শুধুমাত্র আল্লাহ বহু রূপ ধারন করে তখনই। ইসলামের আল্লাহর এ ধরনের বহু রূপ ধারনের ক্ষমতা নেই। আর সে কারনেই দেখা যায় কোরানে আল্লাহর প্রকৃত রূপ হলো – একজন ভীষণ রাগী, ক্রুদ্ধ, হিংস্র, প্রতিশোধ পরায়ন কোন অস্তিত্বের , তার মধ্যে ভালবাসা, করুনা, ক্ষমার কোন লক্ষন দেখা যায় না। যদিও মাঝে মাঝে উল্লেখ আছে সে নাকি ক্ষমাশীল কিন্তু তার রাগ ও হিংস্রতার কথা যদি ৫০ বার উল্লেখ করা হয়েছে তো ক্ষমাশীলতার কথা বলা আছে মাত্র ১ বার। অর্থাৎ সার্বিক ভাবে কোরানের আল্লাহ একজন হিংস্র কোন জন্তু বা জীব। পরম করুনাময় সৃষ্টি কর্তা নয় কোনমতেই। একারনেই সম্ভবত কোন মুসলমান ইসলামের সব ধরনের বিধান অনুসরণ করেও কখনো আল্লাহর সাথে নৈকট্য অনুভব করে না। যেহেতু ইসলামের আল্লাহর তার ভক্তের সাধ পূরনের কোন ক্ষমতা নেই, তাই এ ধরনের রূঢ় ও ক্রুদ্ধ সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব থাকতে পারে না, থাকলেও সেটা ঈশ্বর না হয়ে হবে নিশ্চিত ভাবে শয়তান। কারন শয়তানই একমাত্র এভাবে ক্রুদ্ধ ও হিংস্র হতে পারে কোন পরম করুণাময় ঈশ্বর নয়। আর হিন্দুদের ঈশ্বর জগতের সব জায়গাতেই বিরাজমান, তাই তাদের কোন নির্দিষ্ট কিবলার দরকার পড়ে না। যে কোন দিকে বসেই তারা তাদের ঈশ্বর বা দেব দেবীকে ডাকতে পারে। ইসলামের আল্লাহর এ বিষয়ে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আল্লাহ শুধুমাত্র কাবা নামক একটা দালান ও তার ভিতরের কাল পাথরের দিকে না তাকিয়ে ডাকলে সে কোন ডাক শোনে না, যদিও সে তার মধ্যে বাস করে না। এভাবে জড় বস্তুর প্রতি মাথা নত করতে বা জড় বস্তুকে পুজা দেয়ার জন্য মানুষকে প্ররোচিত করে তাদেরকে বিভ্রান্ত ও বিপথে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত করতে পারে একমাত্র শয়তান , কোন সৃষ্টিকর্তা নয়। হিন্দুদের ঈশ্বর তাই এ ধরনের শয়তানের প্রভাব মুক্ত।
ঠিক তেমনি ভাবে খৃষ্টানরা বিশ্বাস করে ত্রিত্ব বাদ(Trinity) তে । পিতা, পূত্র ও পবিত্র আত্মা যারা মূলত একই ঈশ্বরের তিনটি রূপ।এখানে ঈশ্বর পিতা হিসাবে বিচারকের ভূমিকায় আর পূত্র হিসাবে দয়াবানের ভুমিকায়, মানুষকে জ্ঞান দান করে সৎ পথে থাকার কাজটি করে পবিত্র আত্মা। ঈশ্বরের দয়ার রূপ হলো তার রূপক পূত্র যীশু। বাস্তবে তো যীশু ঈশ্বরের পূত্র নয় বরং স্বয়ং নিজেই। ঈশ্বর যেহেতু তার সৃষ্ট মানব কুলকে ভালবাসে, কিন্তু মানব কুল মাঝে মাঝে বিপথগামী হয়ে পড়ে তাই তাদেরকে উদ্ধারের জন্য স্বয়ং ঈশ্বর তার পূত্রের রূপ ধারন করে পৃথিবীতে আগমন করেছিল। ক্রুশ বিদ্ধ অবস্থায় সে অশেষ যন্ত্রনা ভোগ করে মারা যাওয়ার অভিনয় করেছিল। কেন এ অভিনয়? এ যন্ত্রনা ভোগ করে মারা যাওয়ার মধ্যে সে প্রমান করতে চায় যে সে তার সৃষ্ট মানবকুলকে সীমাহীন ভালবাসে। এটা যখন মানুষ বুঝতে পারবে তখন মানুষ অনুতপ্ত হয়ে যীশুর বানী অনুসরণ করবে। আর ঈশ্বর পবিত্র আত্মার ভূমিকা পালন করে সকল মানুষের মনে শুভাশুভ জ্ঞান দান করে যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে কারন ঈশ্বর প্রতিটি মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দিয়ে তৈরী করেছে। অথচ মোহাম্মদ ত্রিত্ববাদের এ গভীর মাহাত্ম ধরতে পারেন নি। তার কতিপয় প্রশ্ন- ঈশ্বর কিভাবে তিনটি হয় ? ঈশ্বরের পূত্র কিভাবে একই সাথে ঈশ্বর হয়? যদিবা ঈশ্বরের পূত্র ঈশ্বর হয়ে থাকে তাহলে সে কিভাবে ক্রুশে মারা যেতে পারে? অর্থাৎ ঈশ্বর কি মরণশীল ? এসবের উত্তর – ঈশ্বর তিনটি নয় একটি , ত্রিত্ব (Trinity) হলো ঈশ্বরের তিনটি রূপ যার তার ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলীর বহি:প্রকাশ। স্বয়ং ঈশ্বর মানুষ হিসাবে পৃথিবীতে আগমন করেছে আর তার জন্মদানের জন্য কোন পিতার ঔরসের দরকার পড়ে নি বা পড়েও না এবং ঈশ্বর তার নিজ আত্মা কে কুমারী মরিয়মের গর্ভে প্রবেশ করিয়ে তাকে গর্ভবতী করে ও পরে যীশু রূপে পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করে। বাহ্যিকভাবে দেখলে কুমারী মরিয়মের গর্ভে তাঁর জন্ম কিন্তু তার গর্ভধারন ঈশ্বরের মাধ্যমে, তাই যীশু নিজেকে ঈশ্বরের পূত্র বলেছেন। আবার যেহেতু যীশুর আত্মা স্বয়ং ঈশ্বরের আত্মা তাই তিনি স্বয়ং ঈশ্বরও। যীশুর ঈশ্বরের পূত্র বলে নিজের পরিচয় দেওয়াটা ছিল সম্পূর্ণ রূপক, বাস্তব নয় অর্থাৎ যীশু ঈশ্বরের ঔরসজাত কোন পূত্র নয়।যীশুর মানব রূপে আগমনের কারনেই নিজেকে ঈশ্বরের পূত্র বলেছিলেন, তিনি নিজেকে ঈশ্বর বলতে পারতেন না , কারন তিনি মানুষকে শাসন বা শাস্তি দিতে আসেন নি, এসেছিলেন ভাল কিছু শিক্ষা দিতে, মানুষকে ভালবাসা দিতে ও শেখাতে, ক্ষমা করা শেখাতে অর্থাৎ যীশু ছিল ঈশ্বরের দয়ার বাস্তব প্রতিরূপ।তিনি নিজেকে তাহলে ঈশ্বর পরিচয় কেন দেন নি? কারন নিজেকে ঈশ্বর পরিচয় দিলে মানুষরা তার শিক্ষাকে অস্বীকার করলে সাথে সাথেই তাদেরকে শাস্তি দিতে হত তাদেরকে ধ্বংস করে দিতে হতো, না হলে তাকে অসীম শক্তিশালী বলা যেত না এ বিষয়টি এড়ানোর জন্যই যীশু নিজেকে ঈশ্বর হিসেবে পরিচয় দেয় নি।এটাই হলো ঈশ্বরের ত্রিত্ববাদের ব্যখ্যা আর যার অর্থ মোটেই খৃষ্টানদের ঈশ্বর তিন টি নয় , একটিই যা মোহাম্মদ মোটেই বুঝতে পারে নি, অত গভীরে বোঝার মত যে বিদ্যা ও জ্ঞান থাকা দরকার মোহাম্মদের তা ছিল না। না থাকার কারনেই কোরানে বলছে-
আল্লাহ এমন নন যে, সন্তান গ্রহণ করবেন, তিনি পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা, তিনি যখন কোন কাজ করা সিদ্ধান্ত করেন, তখন একথাই বলেনঃ হও এবং তা হয়ে যায়। সুরা মারিয়াম, ১৯:৩৫
তারা বলেঃ দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। এ কারণে যে, তারা দয়াময় আল্লাহর জন্যে সন্তান আহবান করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়।সূরা মারিয়াম, ১৯: ৮৮-৯১
আয়াতগুলি পরিস্কার বোঝাচ্ছে যে খৃষ্টানরা যীশুকে যে ঈশ্বরের পূত্র বলে তার অর্থ ঈশ্বরের ঔরসেই যেন যীশুর জন্ম কিন্তু ঈশ্বরের এ ধরনের কোন পূত্রের দরকার পড়ে না। অর্থাৎ মোহাম্মদ বুঝতেই পারে নি যে ঈশ্বরের পূত্র বলতে খৃষ্টানরা এটা মোটেই বোঝায় না যে তার জন্ম হয়েছিল ঈশ্বরের ঔরসেই।এ থেকে বোঝা যায় মোহাম্মদ যীশু যে ঈশ্বরের পূত্র- এ বিষয়টা স্থূল অর্থে গ্রহণ করেছে।
মোহাম্মদ মোটেই ত্রিত্ববাদ বুঝতে না পের যীশু সম্পর্কে উল্টা পাল্টা কথা বলছে তার প্রমান নীচের আয়াত-
فَاتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا (17
অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করল। সূরা মরিয়াম, ১৯:১৭
উক্ত আয়াতে আল্লাহ বলছে আমার রুহ ( আল্লাহর রূহ) প্রেরণ করলাম, তো এখানে আমার অর্থ তো আল্লাহর । অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ নিজেই মরিয়মের কাছে আগমন করেছে।
قَالَتْ إِنِّي أَعُوذُ بِالرَّحْمَن مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيًّا (18
মারইয়াম বললঃ আমি তোমা থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করি যদি তুমি আল্লাহভীরু হও। সুরা মারিয়াম, ১৯:১৮
قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا (19
সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব। ১৯:১৯
কি ধরনের আজগুবি ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ কথা বার্তা কোরানে বলা হয়েছে যা দেখা যায় ১৯:১৯ আয়াতে।১৯:১৭ বলছে আল্লাহ নিজের রুহ বা আত্মা তথা স্বয়ং নিজেই মরিয়মের কাছে আগমন করেছে অথচ এর এক আয়াত পরেই ১৯:১৯ তে বলছে আমি তো তোমার পালন কর্তা প্রেরিত। এ থেকে বোঝা যায় যীশু সম্পর্কে মোহাম্মদ সম্পুর্ণ একটা অস্পষ্ট ও ধোয়াসার মধ্যে ছিলেন। যীশুকে তিনি অবজ্ঞা করতেও পারছিলেন না আবার তাকে ঈশ্বরের পূত্র বা ঈশ্বর হিসাবে গ্রহন করতেও রাজী ছিলেন না। আর এসবের ব্যখ্যা করতে গিয়ে তথাকথিত ইসলামি পন্ডিতদের লেজে গোবরে অবস্থা তারা এখানে ১৯:১৭ আয়াতের আমার রুহ বলতে নাকি আল্লাহ জিব্রাইলকে বুঝিয়েছে তার কারন ১৯:১৯ আয়াতে বলছে আমি তো শুধু তোমার পালন কর্তা প্রেরিত। তাদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয়- আল্লাহর রুহ কিভাবে জিব্রাইল হয়, তখন তারা শুরু করে আগডুম বাগডুম যত সব অর্থ হীন পাগলের প্রলাপ।তার উক্ত আয়াত গুলো পড়ে বুঝতেই পারে না যে বস্তুত মোহাম্মদ যীশু সম্পর্কে কোন সঠিক ধারনা করতে ব্যর্থ হয়েই এ ধরনের অসাঞ্জস্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন।
আদম কে জীবন দেয়ার ব্যপারেও মোহাম্মদ অবাস্তব ও আজগুবি বক্তব্য প্রদান করেছেন যা দেখা যায় নিচের আয়াতে –
فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُواْ لَهُ سَاجِدِينَ (29
Yusuf Ali: When I have fashioned him (in due proportion) and breathed into him of My spirit, fall ye down in obeisance unto him.”Surah Hijr, 15:29
যখন আমি তাকে (আদম ) সাজাব ও তার ভিতর আমার রুহ ফুকে দেব, তোমরা সবাই তার সামনে সেজদায় পড়ে যেও। সুরা হিজর, ১৫:২৯ (মক্কায় অবতীর্ণ)
وَالَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهَا مِن رُّوحِنَا وَجَعَلْنَاهَا وَابْنَهَا آيَةً لِّلْعَالَمِينَ (91
এবং সেই নারীর কথা আলোচনা করুন, যে তার কামপ্রবৃত্তিকে বশে রেখেছিল, অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলাম। সূরা আম্বিয়া, ২১:৯১ (মক্কায় অবতীর্ণ)
খেয়াল করতে হবে , ১৫:২৯ অনুযায়ী, আল্লাহ যদি তার নিজের রুহ ( আত্মা) আদমের দেহে ফুকে দেয় ও তার ফলে আদম জীবিত হয়ে ওঠে, তাহলে আদমের আত্মাটা কার হবে ? নিশ্চয়ই আল্লাহর হবে অর্থাৎ আদম আল্লাহর সমান হয়ে যাবে। একই প্রক্রিয়া আল্লাহ করেছে যীশুর ক্ষেত্রেও।আর এ পয়েন্ট টা ধরেই ইসলামি পন্ডিতরা বলতে চায়, আদমের দেহে আল্লাহর রূহু(আত্মা) প্রবেশ করিয়ে তাকে জীবন দিলে যেমন আদম আল্লাহ হয়ে যায় নি , ঠিক সেভাবেই যীশুকেও আল্লাহ তার আত্মা দ্বারা জীবন দান করাতে যীশু আল্লাহ বা ঈশ্বর হয়ে যায় নি। অর্থাৎ তারা একটা ভুল যুক্তি দিয়ে একটা সত্য বিষয়কে ভুল প্রমান করতে চায়।তাদের সেই ভুল যুক্তি টা কি ? সেটা হলো – আল্লাহ প্রতিটি জীবন্ত প্রানীর শরীরে নিজের আত্মা প্রবিষ্ট করিয়ে দিয়ে তাদেরকে জীবন দান করে।অথচ এই আল্লাহর কিন্তু কাউকে জীবন দিতে শুধুমাত্র হও বললেই হয়ে যায় নিজের আত্মা প্রবেশ করানোর দরকার পড়ে না। আর আল্লাহ যদি নিজের আত্মাকে কোন প্রানীর শরীরে ঢুকিয়ে দেয়, তাহলে সেই প্রানী হুবহু আল্লাহর মত কেউ হয়ে যাবে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে সৃষ্টি সম্পর্কিত মোহাম্মদের ধারনা ছিল খুবই সীমিত। তবে শুধুমাত্র এ পয়েন্টে ইসলামি পন্ডিতরা যীশুর ঈশ্বরত্বকে উড়িয়ে দিতে চাইলেও তা সম্ভব নয় কারন কোরান হাদিসে আরও বহু বক্তব্য আছে যা যীশুর ঈশ্বরত্বের সমার্থক। এবার সৃষ্টি সম্পর্কিত ধারনা তৌরাত কিতাবে কেমন তা দেখা যাক,
প্রভু পরমেশ্বর মাটি থেকে ধুলো নিয়ে মানুষকে গড়লেন ও তার নাকে ফু দিয়ে তার প্রান সঞ্চার করলেন, আর মানুষ সজীব প্রাণী হয়ে উঠল।জেনেসিস, অধ্যায়-২, বাক্য-৭
খুবই যৌক্তিক বক্তব্য।মানুষকে জীবিত করতে আল্লাহর তো তার নিজের রুহ বা আত্মা মানুষের দেহে ঢুকানোর দরকার নেই, কারন সেটা করলে মানুষ তো আল্লাহর মত কেউ একজন হয়ে যাবে। বরং সোজা পথ হলো- হয় আল্লাহ বলতে পারে – জীবিত হও, অথবা তার দেহের যে কোন অংশে শুধুমাত্র একটা ফু দিয়েই সেটা করতে পারে। বিষয়গুলো আরও ভালভাবে বোঝা যাবে নিচের আয়াতে-
إِذْ قَالَتِ الْمَلآئِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًا فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ (45
যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত। সূরা- আল ইমরান, ৩:৪৫
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لاَ تَغْلُواْ فِي دِينِكُمْ وَلاَ تَقُولُواْ عَلَى اللّهِ إِلاَّ الْحَقِّ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ فَآمِنُواْ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ وَلاَ تَقُولُواْ ثَلاَثَةٌ انتَهُواْ خَيْرًا لَّكُمْ إِنَّمَا اللّهُ إِلَـهٌ وَاحِدٌ سُبْحَانَهُ أَن يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَات وَمَا فِي الأَرْضِ وَكَفَى بِاللّهِ وَكِيلاً (171
হে হে আহলে-কিতাবগণ! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর শানে নিতান্ত সঙ্গত বিষয় ছাড়া কোন কথা বলো না। নিঃসন্দেহে মরিয়ম পুত্র মসীহ ঈসা আল্লাহর রসূল এবং তাঁর বাণী যা তিনি প্রেরণ করেছেন মরিয়মের নিকট এবং রূহ-তাঁরই কাছ থেকে আগত। অতএব, তোমরা আল্লাহকে এবং তার রসূলগণকে মান্য কর। আর একথা বলো না যে, আল্লাহ তিনের এক, একথা পরিহার কর; তোমাদের মঙ্গল হবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ একক উপাস্য। সন্তান-সন্ততি হওয়াটা তাঁর যোগ্য বিষয় নয়। যা কিছু আসমান সমূহ ও যমীনে রয়েছে সবই তার। আর কর্মবিধানে আল্লাহই যথেষ্ট।সূরা নিসা,৪:১৭১
উপরে যীশু সম্পর্কে আবারও কতিপয় অসামঞ্জস্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হচ্ছে যার পারস্পরিক কোন মিল নেই। যেমন-
১. যীশু মরিয়মের পূত্র, ২. যীশু আল্লাহর রসুল, ৩. যীশু আল্লাহর বানী, ৪. যীশু আল্লাহর রূহ । যীশু যদি নিজেই আল্লাহর বানী ও আল্লাহর রূহ হয় তাহলে সে আল্লাহর রসূল কেমনে হয় ? আল্লাহর রসূল হলো একজন মানুষ যার কাছে আল্লাহ কোন ফিরিস্তা মারফত বানী পাঠায় বা অনেক সময় সরাসরি নিজে কথা বলেম যেমন-ইব্রাহিম, মূসা।পক্ষান্তরে যীশু নিজে যেটা বলত সেটাই আল্লাহর বানী যা ইঞ্জিল কিতাবে লিখিত আছে যাকে সকল মুসলমান আসমানি কিতাব বলেও জানে, যীশুর কাছে কোনদিন কোন ফিরিস্তা এসে বানী দিয়ে যায় নি।এ যদি হয় কোরান বর্ণিত যীশু তাহলে যীশু আসলে কে ? মরিয়মের গর্ভে দৃশ্যত জন্মগ্রহন করেছিল বলে তাকে মরিয়মের পুত্র ধরা যেতে পারে। কিন্তু আল্লাহর রসুল কোনমতেই নয়। তার অর্থ মোহাম্মদ জানতেনই না আসলে যীশু কে, লোক মুখে শোনা কথার ওপর ভরসা করে তিনি যীশু সম্পর্কে নানা রকম পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে গেছেন মাত্র। মোহাম্মদ নিজেই আবার কোরানে যীশুকে পাপহীন বলে ঘোষণা করেছেন যেমন-
সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব। সূরা মারিয়াম,১৯:১৯
এখানে পবিত্র বলতে বুঝায় পাপ হীন।কোরানে আর কাউকেই পবিত্র বলা হয় নি। এমন কি মোহাম্মদকেও নয়।ঠিক তেমনি ভাবে বহু হাদিসেও একই কথা বলেছেন মোহাম্মদ-
সাইদ বিন মুসাইব বর্ণিত- আমি নবীকে বলতে শুনেছি যে আদম সন্তানদের মধ্যে এমন কেউ নেই যাকে জন্মের সময় শয়তান ছুয়ে দেয় না আর এ কারনে সে চিৎকার করে কেঁদে উঠে। ব্যতিক্রম শুধু মরিয়ম আর তনয় ঈশা। সহি বুখারী, বই-৫৫, হাদিস-৬৪১
আবু হুরায়রা বর্ণিত- আমি আল্লাহর নবীকে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন যে আদম সন্তানদের এমন কেউ নেই যার জন্ম গ্রহনের সময় শয়তান তাকে ছুয়ে না দেয় ব্যতিক্রম শুধু মরিয়ম ও তার পূত্র। সহি মুসলিম, বই -৩০, হাদিস-৫৮৩৮
ঠিক উক্ত হাদিস আছে , বুখারির বই নং-৫৪, হাদিস -৫০৬ , সহি মুসলিম , বই -৩০ , হাদিস-৫৮৩৭ এবং বই-৩৩, হাদিস-৬৪২৯ তে।
পক্ষান্তরে, অন্য সকল নবী সম্পর্কে মোহাম্মদের কোরান কি বলেছে দেখা যাক-
আদ ম: সবাই জানি পাপের কারনে আদম ও হাওয়া বেহেস্ত থেকে দুনিয়াতে বিতাড়িত হয়েছিল।(সূরা, আরাফ-২২-২৩)
ইব্রাহিম: যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবন দান করবেন।আমি আশা করি তিনিই বিচারের দিনে আমার ক্রটি-বিচ্যুতি মাফ করবেন।সুরা আশ শোরা, ২৬: ৮১-৮২ (মক্কায় অবতীর্ণ)
মূসা: তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু। সূরা আল কাসাস, ২৮:১৬
মোহাম্মদ: জেনে রাখুন, হে মোহাম্মদ, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ক্রটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ, তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত। সূরা মোহাম্মদ, ৪৭: ১৯ (মদিনায় অবতীর্ণ)
তার মানে বোঝা গেল একমাত্র যীশু ছাড়া সবাই কম বেশী পাপী ও ভূল কাজ করেছে। আর তাই তারা তাদের ঈশ্বর বা আল্লাহর কাছে মাফ চায়। যীশু জীবনে কোন পাপ কাজ করে নি। এরকম সম্পূর্ণ পাপ হীন হতে পারে কে ?
কোরান হাদিস থেকে যীশু সম্পর্কে যা জানা গেল তা হলো-
১. যীশুর জন্ম অলৌকিক, একজন কুমারী মাতা থেকে, ২. যীশু হলো আল্লাহর রুহ, ৩. যীশু হলো আল্লাহর বানী, ৪. যীশু হলো চির পবিত্র তথা নিষ্পাপ, ৫. যীশুকে শয়তান স্পর্শ করতে পারে নি, ৬. যীশু কখনো ভুল করে নি, ৭. যীশু মৃতকে জীবন দান করতে পারত , যে ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতে।
এত সব গুনের অধিকারী হওয়া একমাত্র কার পক্ষে সম্ভব ? একমাত্র আল্লাহ বা ঈশ্বরের পক্ষেই সম্ভব। এতগুলো বিষয় স্বীকার করেও মোহাম্মদ তার কোরানে বলছেন যীশু নাকি একজন নবী মাত্র। এর চাইতে আজগুবি ও হাস্যকর আর কিছু হতে পারে ? অথচ অন্য কোন নবির এর একটা গুণও ছিল না। মূসা নবি কিছু অলৌকিক ঘটনা দেখাতে পারলেও মৃতকে জীবন দিতে পারত না। প্রশ্ন হতে পারে , উক্ত বিষয় স্বীকার তাহলে করলেন কেন মোহাম্মদ? উত্তর বুঝতে কষ্ট হয় না। আগেই বলেছি খৃষ্টানদের কাছ থেকে শুনে শুনে মোহাম্মদ তার কোরানে যীশু সম্পর্কে বানী প্রচার করেছেন, সেটা করতে গিয়ে কোন কথার কি গুঢ় অর্থ হবে তা উপলব্ধি করতে পারেন নি তাৎক্ষনিকভাবে।ঠিক একারনেই খৃষ্টানদের কাছে তো বটেই ইহুদীদের কাছেও মোহাম্মদের কোরানের বানীকে খুবই অদ্ভুত ও উদ্ভট মনে হতে থাকে ও তারা আরও বেশী নিশ্চিত হতে থাকে যে মোহাম্মদ কোন মতেই নবী তো দুরের কথা একজন শুভ গুণ সম্পন্ন মানুষও নয়। তাই তারা যতই মোহাম্মদকে প্রশ্ন করতে থাকে ততই মোহাম্মদ রাগান্বিত হতে থাকেন আর তাদেরকে উদ্দেশ্য করে নানা রকম ভয় ভীতিকর আয়াত নাজিল করতে থাকেন। উদ্দেশ্য একটাই – তাদের মুখ বন্দ করা।
পক্ষান্তরে মোহাম্মদ কি পরিবেশে তাঁর আল্লাহর বাণী প্রচার করেছেন ? প্রাথমিক মক্কার জীবন বাদ দিলে বাকী জীবনটা তিনি ছিলেন রাষ্ট্র ক্ষমতায়, আর সে সময়টাও কম নয়, প্রায় ১৩ বছর। মদিনাতে গিয়ে তিনি সেখানে এক ইসলামী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। যেটা বার বার বলা হয় তা হলো আসলে ধর্ম নয় বরং একটা ঐক্যবদ্ধ আরব রাজ্য প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর মূল স্বপ্ন। এখন তিনি রাজ্যের দন্ড মুন্ডের কর্তা। তিনি নিজেই আল্লাহর কাছ থেকে সময়ে সময়ে যখন দরকার পড়ে তখনই ওহি প্রাপ্ত হন। ইসলাম ধর্ম প্রচার ও তার মাধ্যমে যদি গোটা মানব জাতিকে উদ্ধার করা তার একমাত্র লক্ষ্য হতো তাহলে তিনি অবশ্যই এমন ব্যবস্থা করতেন যে তাঁর কথিত আল্লাহর বাণীগুলো সুন্দরভাবে সংকলিত করে বহু সংখ্যক কপি করে রাখতেন যাতে কোন এক কপি হারিয়ে গেলেও সমস্যা না হয়। এটা তাঁর পক্ষে করা ছিল অতীব সোজা কারন তিনি ছিলেন রাজশক্তির অধিকারী। কিন্তু তা তিনি করেন নি। বিভিন্ন হাদিসে দেখা যাচ্ছে- মাঝে মাঝে তিনি আয়াত লিখে রাখতে বলতেন। একটু ভাল করে চিন্তা করলে দেখা যাবে- তিনি যখন মক্কাতে ছিলেন তখন সূরাগুলো লেখার তেমন উদ্যোগ নেয়া হয়নি, মোহাম্মদ কাউকে সেটা করতে বলেনও নি। তবে কিছু কিছু আয়াত বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ নিজেদের তাগিদে লিখে রাখত। এর একটা উদাহরণ দেখা যায়- খলিফা ওমরের বোনের কাছে এধরণের কিছু আয়াত লেখা ছিল, যেটা সে রাত্রে তেলাওয়াত করছিল, যা শুনে পরে ওমর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এ বিষয়টি সবাই অবগত আছেন। তবে মোটেই সেটা সমন্বিত কোন প্রচেষ্টা ছিল না। মক্কার সে বিরূপ পরিবেশে তা সম্ভবও ছিল না। মক্কাতে যে সমন্বিত প্রচেষ্টায় কোরান সংরক্ষন করা হয় নি বা সেটা সম্ভব ছিল না সেটা কিন্তু কোরানের বাণী থেকেই বোঝা যায়, যেমন- আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। সূরা-আল হিজর, ১৫:০৯ মক্কায় অবতীর্ণ।
লক্ষণীয়, উক্ত আয়াতটি মক্কাতে অবতীর্ণ। মক্কার বিরূপ পরিস্থিতিতে যেখানে মুসলমানদের টিকে থাকাই মুসকিল ছিল সেখানে কে সংকলন করতে যাবে কোরানের আয়াত ? সে কারনেই মোহাম্মদ কোরানের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন।পরে মদিণাতে যাওয়ার পর মোহাম্মদ তাঁর সাহাবীদেরকে তা লিখে রাখতে বলতেন। এ থেকে মনে হতে পারে মোহাম্মদ বোধ হয় তার পূর্বের বক্তব্য – আল্লাহই কোরানের সংরক্ষক এ বিষয় থেকে সরে এসেছেন, অর্থাৎ তিনি আর আল্লাহর ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না, তাই তিনি মাঝে মাঝে তাঁর সাহাবীদেরকে আয়াত লিখতে বলছেন। মোহাম্মদ তাঁর গোটা জীবনে এরকম বহু সময়েই তার কথা পাল্টে ফেলেছেন। তবে সেগুলো কিন্তু তিনি আবার আল্লাহর বাণী দ্বারাই সিদ্ধ করেছেন। যাহোক এ বিষয়ে অন্য কোন এক সময়ে আলোচনা করা যাবে। কিন্তু এমন কোন প্রমান পাওয়া যায় না যে তিনি তাঁর সব সূরাগুলোকে সংকলিত করে একটা কিতাব আকারে রাখার কোন ব্যবস্থা তিনি কখনো নিয়েছেন। তা যদি নিতেন, তাহলে মোহাম্মদের সবচাইতে প্রিয়পাত্র আবু বকরকে আর কষ্ট করে বিভিন্ন যায়গা থেকে পান্ডুলিপি সংগ্রহের জন্য ব্যবস্থা নিতে হতো না। সে কি করেছিল তা এবার দেখা যাক-
যায়েদ বিন তাবিত ( যিনি আল্লাহর বাণী লেখায় নিয়োজিত ছিলেন) বর্ণিত – ইয়ামামা যুদ্ধে ( যে যুদ্ধে বহু সংখ্যক কোরানে হাফেজ মারা যায়) বহু সংখ্যক সাহাবী হতাহত হওয়ার পর পর আবু বকর আমাকে ডেকে পাঠালেন যেখানে ওমরও উপস্থিত ছিলেন, বললেন, ওমর আমার কাছে এসে বললেন, “ইয়ামামার যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক মানুষ (যাদের মধ্যে অনেক কোরানে হাফেজও আছে) হতাহত হয়েছে এবং আমার আশংকা হয় অন্যান্য যুদ্ধক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে যাদের মধ্যে অনেক কোরানে হাফেজও থাকবে, আর এভাবে কোরানে হাফেজ মারা যেতে থাকলে কোরানের একটা বিরাট অংশই হারিয়ে যাবে যদি তুমি তা সংগ্রহ না কর।আর আমারও অভিমত যে তুমি কোরান সংগ্রহ কর”। আবু বকর আরও বললেন, “ কিভাবে আমি সেটা করতে পারি যা আল্লাহর নবী নিজেই করেন নাই ?” ওমর বললেন, “ আল্লাহর শপথ, এটা নিশ্চয়ই একটা ভাল কাজ”। “তাই ওমর আমাকে এ ব্যপারে চাপ দিয়ে যেতে লাগল, আমাকে তার প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য বুঝাতে লাগল, অবশেষে আল্লাহ আমার হৃদয় খুলে দিলেন এবং এখন আমারও ওমরের সাথে একই মত”। (যায়েদ বিন তাবিত আরও বললেন) ওমর আবু বকরের সাথে বসে ছিলেন ও আমার সাথে কথা বলছিলেন না। আবু বকর আরও বললেন “ তুমি একজন জ্ঞানী যুবক এবং আমরা তোমাকে সন্দেহ করি না: এবং তুমি আল্লাহর রাসুলের ওহী লেখার কাজে নিয়োজিত ছিলে। অতএব এখন খোজাখুজি করে কোরান সংগ্রহ কর”। আমি (যায়েদ বিন তাবিত ) বললাম- “ আল্লাহর কসম, কোরান সংগ্রহের মত এরকম কাজ করার চেয়ে যদি আবু বকর আমাকে একটা পাহাড়ও স্থানান্তর করতে বলত সেটাও আমার কাছে অপেক্ষাকৃত সহজ মনে হতো”। আমি তাদের উভয়কে বললাম- “ আপনারা কিভাবে সে কাজ করতে সাহস করেন যা আল্লাহর নবী নিজেই করেন নি?” আবু বকর বললেন-“ আল্লাহর কসম, এটা প্রকৃতই একটা ভাল কাজ। তাই আমি ওমরের সাথে এটা নিয়ে অনেক তর্ক করেছি যে পর্যন্ত না আল্লাহ আমার অন্তর খুলে দিলেন যা তিনি আমাদের উভয়ের জন্যই খুলে দিয়েছিলেন”। অত:পর আমি কোরান সম্পর্কিত বস্তু অনুসন্ধান করতে লাগলাম, আর আমি পার্চমেন্ট, খেজুর পাতা, হাড় ইত্যাদিতে লেখা এবং এ ছাড়াও যাদের কোরান মুখস্ত ছিল তাদের কাছ থেকে আয়াত সমূহ সংগ্রহ করতে লাগলাম। আমি সূরা আত-তাওবা এর শেষ আয়াতটি খুজাইমার কাছ থেকে সংগ্রহ করলাম যা আমি অন্য কারও কাছ থেকে পাই নি( সে আয়াতগুলো ছিল- তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। কোরান,০৯:১২৮)
যে পান্ডুলিপিতে কোরানের আয়াত সমূহ সংগৃহীত হয়েছিল, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা আবু বকর তা নিজের কাছেই রেখেছিলেন, অত:পর তা ওমর তাঁর কাছে রেখেছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর, এবং অবশেষে তা ওমরের কন্যা হাফসার নিকট ছিল। সহি বুখারি, বই-৬০, হাদিস-২০
এ হাদিস কি বলে মোহাম্মদের সময়ে সম্পূর্ন কোরান সংকলণ করা হয়েছিল ? হয়ে থাকলে তো আর আবু বকরকে উদ্যোগ নিতে হতো না। পরবর্তী ঘটনা কি ? উক্ত হাদিস থেকে বোঝাই যাচ্ছে- খোদ যায়েদ ইবনে তাবিত কোরানের বিভিন্ন আয়াত সমূহ সংগ্রহ ও সংকলণ করেছিল যা পরবর্তিতে আবু বকর ও ওমরের হাত ঘুরে হাফসার কাছে যায় । আর ইতো পূর্বে আয়শার কাছে যে কোরান ছিল বলা হয়েছে তা নিশ্চয়ই সম্পূর্ন নয়। তা হলে তার পিতা আবু বকর এ কথা বলত না। আয়শার কাছে নিশ্চয়ই কিছু সূরার একটা সংকলণ ছিল, যা সম্পূর্ণ কোরান নয়। ইয়ামামার যুদ্ধে আনুমানিক ৭০০ জন মুসলমান মারা যায় যাদের মধ্যে অনেকেই কথিত কোরানে হাফেজ ছিল। যায়েদ শুধুমাত্র খুজাইমার কাছে ছাড়া আর কারও কাছে উক্ত সূরা আত তাওবার শেষ দুটি আয়াত ১২৮ ও ১২৯ পায় নাই। কিন্তু উপরে দেখা যাচ্ছে হাদিসে মাত্র ১২৮নং আয়াতটিরই উল্লেখ আছে। শেষ ১২৯ নং আয়াতটি লেখা নাই উক্ত হাদিসে যা হলো-
এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কারো বন্দেগী নেই। আমি তাঁরই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি।
এখন প্রশ্ন হল বহু সংখ্যক কোরানে হাফেজ মারা যাওয়াতে, এমনও তো হতে পারে যে তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল যারা আরও আয়াত জানত? কিন্তু মরে যাওয়াতে যায়েদ তাদের কাছ থেকে আয়াত সংগ্রহ করতে পারে নি।
সূরা আত তাওবার একটি/দুটি আয়াত পাওয়ার জন্য যদি শুধুমাত্র খুজাইমাই একমাত্র ব্যাক্তি হয়ে থাকে , অন্য অনেক সূরার অনেক আয়াত সম্পর্কে সেরকম শুধুমাত্র অন্য যে কোন একজন লোক থাকবে না কেন ?সুতরাং আমরা কিভাবে নিশ্চিত হবো যে মুখস্থকারী ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে অনেক আয়াত চিরতরে হারিয়ে যায় নি ?
এছাড়া দেখা যায়-কোরানের আয়াত ছাগলেও খেয়ে ফেলেছিল, যেমন-
আয়শা বর্ণিত-পাথর মারা ও প্রাপ্ত বয়স্কদেরকে স্তন্য পান করানোর বিষয়ে যে আয়াত নাযিল হয়েছিল, তা একটা পাতায় লিখে আমার বিছানার নিচে রাখা হয়েছিল।যখন নবী মারা গেলেন আর আমরা তার দাফন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তখন একটা ছাগল ঘরে ঢুকে আয়াত লেখা পাতা খেয়ে ফেলে। ইবনে মাজা, হাদিস-১৯৩৪
এ থেকে বোঝা যায় সেই সময় কোরানের আয়াতসমুহ কি ভাবে বিরাজমান ছিল।এভাবে ছাগলে যদি আয়াত লেখা পাতা খেয়ে ফেলে, আরও কত ছাগল বা দুম্বা আয়াত লেখা পাতা খায় নি বা পাগলে আয়াত লেখা পাতা বা চামড়া ছিড়ে ফেলে নি তার নিশ্চয়তা কোথায় ? এসব হাদিস থেকে পরিস্কার যে- সেই সময়ে সুষ্ঠুভাবে কোরানের আয়াত গুলোকে সংরক্ষণ করা হতো না অথচ যা ছিল ইসলামের মতে দুনিয়ার সবচাইতে মূল্যবান দলিল।আল্লাহ জিব্রাইলকে দিয়ে মুখে মুখে ওহি না পাঠিয়ে যদি একটা শক্ত কাগজে লিখে সময়ে সময়ে আয়াতগুলো পাঠাত, মোহাম্মদ সেগুলো সংরক্ষণ করে রাখতেন, পরে সেগুলোকে একত্রিত করলেই হয়ে যেত একটা পরিপূর্ণ কোরান। এটাই কি সবচাইতে সোজা পথ ছিল না , যেহেতু আল্লাহই বলছে যে সে নিজেই কোরানের সংরক্ষক ? এ কর্মটি করলে আজকে দুনিয়ায় কেউ আর কোরানের বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারত না।
মক্কার জীবনে যে সব মুসলমান ছিল তারা ছিল প্রধানত নিম্ন শ্রেনীর মানুষ ও দাস দাসী। দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার জন্যই তাদেরকে দিনরাত পরিশ্রম করতে হতো। এরা নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছিল, কারন মোহাম্মদ প্রচার করেছিলেন মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই, তাদের এত সময় ছিল না যে বসে বসে কোরান মূখস্থ করবে, তাছাড়া তারা সবাই পরিণত বয়েসে ইসলাম গ্রহণ করেছিল যে বয়েসে মুখস্থ করা কঠিন। যতদুর জানা যায় মক্কাতে মোট ৯০ সূরা নাযিল হয়েছিল, তা কোন পুস্তক আকারে ছিল না, সেগুলো সুন্দরভাবে লিখে রাখা হয়েছিল এমন নজীরও নেই। সুতরাং সেগুলো তাই দৈনিক এক সাথে বসে পড়ার কোন উপায়ও ছিল না। যে যার মত কিছু কিছু দরকারী সূরা ও আয়াত হয়ত তারা লিখে রাখত হাড় বা খেজুর পাতায়। এটাই যেখানে বাস্তব অবস্থা ছিল সেখানে শত শত মানুষ পুরো কোরান মূখস্থ করে রেখেছিল এটা কিভাবে বিশ্বাস যোগ্য? আবু বকর ঠিক এটাই বুঝাতে চেয়েছিল উক্ত হাদিসে, দেখা যাক প্রকৃতপক্ষে সে কি বলেছিল-
এভাবে কোরানে হাফেজ মারা যেতে থাকলে কোরানের একটা বিরাট অংশই হারিয়ে যাবে যদি তুমি তা সংগ্রহ না কর। সহি বুখারি, বই-৬০, হাদিস-২০১
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ