ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

10 March, 2019

ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব

ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব
প্রখ্যাত জিওলজিস্ট ডারউইন তার "অরিজিন অফ স্পিসিস" pdf1 pdf2 বইটিতে মানব সভ্যতার অরিজিন সংক্রান্ত একটি অত্যন্ত আলোচিত হাইপোথিসিস প্রদান করেন। আধুনিক বিজ্ঞান সমাজে যা বিবর্তনবাদ নাম পরিচিত। তিনি তার বিবর্তনবাদ তত্বে বলেন, পৃথিবীতে মানব সভ্যতার উত্পত্তির পেছনে ভূমিকা রয়েছে একটা ছোট্ট দুর্ঘটনার। বহু বছর পূর্বে যখন পৃথিবীতে প্রানের কোন অস্তিত্ব ছিল না (অবশ্যই বৃক্ষরাজি বিরাজমান ছিল), তখন কতিপয় মৌল, নাইট্রোজেন,হাইড্রযেন অক্সিজেন সহ আরো কিছু মৌলের ক্রমাগত রিয়েকশনের ফলে হটাত করেই প্রানের সঞ্চার ঘটে যায়। সম্ভবত প্রাণীটি ছিল একটি এককোষী প্রাণী, বর্তমান সময়ের বিভিন্ন বিজ্ঞানীর দৃষ্টিভংগী অনুসারে, এককোষী প্রাণীটি ছিল একটি ব্যকটেরিয়া। পরবর্তিতে এককোষী ব্যকটেরিয়টি বিভিন্ন সময় পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে নিজেই নিজের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন সাধন করে, যা ন্যাচারাল্লিই ব্যকটেরিয়াটির সক্রিয় প্রচেষ্টা ছাড়াই ঘটেছিল। প্রাণীর উপর প্রকৃতির এই পরোক্ষ হস্তক্ষেপকে ডারউইন সঙ্গায়িত করেছিলেন "ন্যাচারাল সিলেকশন" হিসেবে, যার হাত ধরে পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা আরো গভীর অনুসন্ধানের খোরাক পেয়েছেন।
অন দি অরিজিন অফ স্পিসিস ১৮৫৯ সালের ২৪ শে নভেম্বর লন্ডন থেকে প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ যার লেখক চার্লস ডারউইন। বইটির পুরো নাম On the Origin of Species by Means of Natural Selection, or the Preservation of Favoured Races in the Struggle for Life যার বাংলা করলে দাঁড়ায় "প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজাতির উৎপত্তি অথবা জীবন সংগ্রামে আনুকূল্য প্রাপ্ত গোত্রের সংরক্ষণ বিষয়ে"।

সন্দেহাতীতভাবে ডারউইনের বিবর্তনবাদ হাইপোথিসিসটি তার সময়কালে একটি অত্যন্ত প্রভাববিস্তারকারী তত্ব হিসেবে বিজ্ঞান মহলে স্বীকৃতি পেয়েছিল । কিন্তু বর্তমান হাইব্রিড প্রযুক্তির যুগে তত্বটি বিজ্ঞানীদেরই একাংশের কিছু যৌক্তিক সমস্যার সমাধান প্রদান করতে ব্যর্থ হয়ে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতে রয়েছে । কিছু সমস্যা :

প্রথমত, স্রেফ কতগুলো ক্যামিকেলের রিয়েকশন দিয়েই যদি প্রাণ সৃষ্টি করা যায় তাহলে বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানীরা টেস্ট টিউবে প্রাণ সৃষ্টির সকল উপাদানের সমন্বয় ঘটিয়েও কেন প্রাণ উদ্ভাবনে ব্যর্থ হচ্ছে ?
প্রাণীজগতের ভেরিয়েশনের ফ্রেকুয়েন্সিতে এত ওয়াইড রেঞ্জ পরিলক্ষিত হয় কেন ? তাছাড়া বিভিন্ন বিবর্তিত প্রানীগুলোর মধ্যকার অন্তর্বর্তী প্রাণী অনুপস্থিত কেন ? এপ আর মানুষের অন্তর্বর্তী প্রাণীটি কোথায় ?

 স্রেফ দুর্ঘটনা থেকেই যদি প্রানের উত্পত্তি ঘটে থাকে, তাহলে বর্তমান প্রানীগুলোর জিনেটিক কোডিং এত দৃঢ়ভাবে সংরক্ষিত কেন ? প্রাণীকুলের জিনেটিক কোডিং এ ক্রমাগত দুর্ঘটনা ঘটে ঘটে নতুন নতুন স্পেসিস তৈরী হয়ে যাবার কথা, কিংবা জিনেটিক কোডিং ক্রমাগত এ দুর্ঘটনা ঘটে কোন কোন প্রাণীর ৩ /৪ টা হাত, দুটা তিনটা মাথা গজানো প্রভৃতি দুর্ঘটনা ঘটে না কেন ?

বিস্ময়করভাবে রক্তখেকো প্রানীগুলোর আকৃতি মানুষের তুলনায় ছোট ছোট ( মশা, জোক প্রভৃতি )। প্রকৃতিতে এগুলোর অস্তিত্ব সুদৃঢ় করতে এরা কেন ঈগলের মত বড় আকৃতিতে বিবর্তিত হলো না ?

বিংশ শতাব্দীর সাড়াজাগানো বিষয় বিবর্তনবাদ যা মুলত বস্তুবাদী মতাদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত, বিজ্ঞান নামে চালিত এক প্রকারের অপবিজ্ঞান।প্রাচীন গ্রীক যুগ থেকেই এ ধরনের চিন্তাচেতনা কিছু দার্শনিকের দ্বারা প্রকাশিত হলেও মুলত উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ডারউইনের বই the origin of species by means of natural selection এর মাধ্যমে পূর্ন বিকশিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে।ডারউইন বিবর্তনবাদের main factor হিসেবে natural selection বা প্রাকৃতিক নির্বাচনকে দেখান।এটা এমন নয় যে ডারউইন ই প্রথমে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কন্সেপ্ট দেন।ডারউইনের আগেই জীববিজ্ঞানীরা এ প্রাকৃতিক নির্বাচন সম্পর্কে জানত।তারা এটিকে প্রজাতির ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচিয়ে প্রজাতির স্থিতি রক্ষার factor হিসেবেই মনে করত।তবে ডারউইনই একে প্রথমে বিবর্তনের মেকানিজম হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।অবশ্য ডারউইনের সমসাময়িক বিজ্ঞানী রাসেল ওয়ালেস ও এ প্রাকৃতিক নির্বাচন দিয়ে বিবর্তনবাদকে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস চালান।তবে যেহেতু ডারউইনই প্রথম এটি নিয়ে বিশদ লেখালেখি করেন তাই তাকেই এর কৃতিত্ব দেয়া হয়।কিন্তু পরে যখন বিবর্তনাবাদীরা এ প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তবাদকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারছিলেন না তখন তারা নতুন আরেকটি কন্সেপ্ট এর সাথে যুক্ত করলেন যাকে বলে মিউটেশন।আর এর নাম দেন new Darwinism বা নব্য ডারউইনবাদ।বিজ্ঞানী মায়ার,ডবজানাস্কি ও জুলিয়ান হাক্সলি এ নব্য ডারউইনবাদের প্রতিষ্ঠাতা।
আমাদের দেশের পাতি নাস্তিক ও বিবর্তনবাদীরা কথায় কথায় এ প্রাকৃতিক নির্বাচনের লেবু কচলায়।তারা অত্যন্ত বিজ্ঞোচিত ও চটকদার ভংগিতে এ প্রাকৃতিক নির্বাচনের কথা বলে বিবর্তনবাদকে প্রমান করতে চায়।এ প্রাকৃতিক নির্বাচন আসলে কি?তথাকথিত বিবর্তনের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা আসলে কতটুকু?আমি আগেই বলে নিচ্ছি আমি কোন বিজ্ঞানী বা গবেষক নই।শখের পাঠক হিসেবে পড়তে পড়তে যতটুকু জেনেছি সে জিনিসটাই লেখার চেষ্টা করব।আমি আমার কথা নয় বরং চেষ্টা করব স্বনামধন্য বিজ্ঞানীদের উদ্ধৃতি রেফারেন্সসহ তুলে ধরতে।এর দ্বারা আমি পাঠককে শুধু এ জিনিসটি বুঝাতে চাই যারা ডারউইনের দেয়া বিবর্তনের ব্যাখ্যা স্বরূপ প্রাকৃতিক নির্বাচনকে ওহী হিসেবে নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে তাদের এ ঢেঁকুর গ্যাস্ট্রিকের আলামত।
চলুন দেখি, যার ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে প্রকৃতিক নির্বাচনকে বিবর্তনের ভিত্তি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয় সে ডারউইন এ প্রাকৃতিক নির্বাচন নিয়ে কি বলেন?
“এটা কি সম্ভব যে,একটি বাদুড়ের গঠন ও অভ্যাসবিশিষ্ট প্রানী গঠিত হয়েছে কিছু বিস্তর অভ্যাস ও গঠনের পার্থক্যবিশিষ্ট প্রানীর পরিবর্তিত হওয়া থেকে?এটা কি আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলেই একদিকে জিরাফের লেজের মত কম গুরুতবপূর্ন অঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে অপরদিকে চোখের মত সুন্দর অংগের সৃষ্টি হয়েছে”। (১)
ডারউইন তার এক চিঠিতে এও স্বীকার করে নিয়েছেন যে এ প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনবাদ ব্যাখ্যায় অনেক ভুল আছে।তিনি লিখেছেন “এতে অনেক ভুল প্রায় নিশ্চিত,যদিও আমি তা ধরতে পাচ্ছি না” (২)
প্রাকৃতিক নির্বাচন আসলে কি?
শক্তিশালী জীব কোন একটি পরিবেশে বেশি টিকে থাকতে পারে,বেশি খাপ খাওয়াতে পারে এ থেকেই প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারনা আসে।survival of the fittest তত্ত্ব অনুযায়ী যোগ্যতমরাই টিকে থাকবে,যোগ্যতমদেরই প্রকৃতি টিকিয়ে রাখবে এরকম চিন্তাধারার থেকেই প্রকৃতিক নির্বাচনে নামক টার্ম আসে। উদাহরনসবরুপ বলা যায়,একটি জেব্রার দল,যারা প্রতি নিয়ত সিংহের সম্মুখীন হয়।সিংহের শিকার হতে প্রানে বাঁচার জন্য তারা দৌড়ে বাঁচতে চায়।এখন জেব্রার দলে সে সকল জেব্রাই বেঁচে থাকবে যারা ভাল দৌড়াতে পারে।আর যারা ভাল দৌড়াতে পারে না তারা সিংহের আহারে পরিনত হয়।
আরেকটি উদাহরন লক্ষ্য করি,একটি এলাকায় দুই ধরনের কুকুর আছে।এক ধরনের কুকুরের লোম বড় আরেকটির লোম ছোট।ওই এলাকায় প্রচন্ড শীত পড়লে ছোট লোমের কুকুর মারা যেতে যাবে অপরদিকে বড় লোমের কুকুর জীবিত থাকবে ফলে আস্তে আস্তে বড় লোমের কুকুরের অনুপাত এলাকায় বেড়ে যাবে।একটা পর্যায়ে ছোট লোমের কুকুর হয় গরম কোন এলাকায় পাড়ি জমাবে নয়তো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অন্য কথায় বলা যায় প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে বড় লোমওয়ালা কুকুররা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।
লক্ষ্য করুন এখানে কোন নতুন প্রজাতির প্রানীর আবির্ভাব ঘটে নি।দুই প্রজাতির কুকুর অলরেডী সেখানে ছিল।তার মধ্যে এক প্রজাতির কুকুর প্রাকৃতির নির্বাচনের জন্য সুবিধা পেয়ে যায়।এটা তো এমন নয় যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের জন্য বড় লোমের কুকুরের আবির্ভাব ঘটেছে,কিংবা ছোট লোমের কুকুর বড় লোমের কুকুরে পরিনত হয়ে গেছে। এতে কি এক প্রজাতির প্রানী আরেক প্রজাতির প্রানীতে পরিনত হয়ে গেছে?
অতএব বলা যায়,প্রাকৃতিক নির্বাচনে ফলে কোন নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয় না বা নতুন কোন বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি হয় না।তাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনবাদ ব্যাখ্যা দেয়া যায় না।ডারউইন নিজেই এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন-
“যতক্ষন পর্যন্ত সুবিধাজনক পার্থক্য ও ভেরিয়েশন না থাকে ততক্ষন পর্যন্ত প্রাকৃতিক নির্বাচন কিছুই করতে পারেনা”। (৩)
প্রাকৃতিক নির্বাচন কোন নতুন কিছু সৃষ্টি করে না।বরং যে সকল জীব আগে থেকেই ছিল তাদের মধ্যে কিছু প্রজাতি ধ্বংস করতে সহায়তা করে।বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী D’Arcy Wentworth Thompson এর ভাষায়-
“আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রাকৃতিক নির্বাচন সৃষ্টির জন্য নয় বরং ধবংসের জন্য-উপড়িয়ে ফেলার জন্য,ছেঁটে ফেলার জন্য,কেটে ফেলার জন্য এবং আগুনে নিক্ষেপ করার জন্য” (৪)
প্রাকৃতিক নির্বাচনকে কেউ অস্বীকার করছে না।আমি আগেই বলেছি ডারউইনের আগেই যারা সৃষ্টিতে বিশ্বাসী ছিল তারাও মুলত এ জিনিসটি জানত।এখনো সবাই একে মানে তবে বিবর্তনবাদের কারন হিসেবে নয়।যারা বিবর্তনবাদ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন তারা বিশিষ্ট বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী স্টিফেন জে গোল্ডের নাম শুনে থাকবেন।তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবর্তনের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে খুব সুন্দর একটি কথা বলেছেন।তিনি বলেছেন-
“ডারউইনবাদের মূলতত্ত্ব একটা ছোট শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধঃপ্রাকৃতিক নির্বাচনই বিবর্তনীয় পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি।প্রাকৃতিক নির্বাচন যে অক্ষমদের দূরীকরনে নাবোধক ভুমিকা পালন করে এটা কেউ অস্বীকার করেনা।ডারউইনিয়ান থিউরীর যা দরকার তা হল এটা সবলদের ও একই সাথে সৃষ্টি করে”।(৫)
স্বনামধন্য জীবাশ্মবিজ্ঞানী Dr. Colin Patterson যিনি British Museum of Natural History এ সিনিয়র বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেছেন প্রাকৃতিক নির্বাচন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন-
“এখন পর্যন্ত কেউ প্রাকৃতিক নির্বাচনের মেকানিজম দ্বারা নতুন কোন প্রজাতি দেখাতে পারে নি।এমন কি কাছাকাছি ও যায়
নি,যদিও বেশিরভাই নব্য ডারউইনবাদীদের যুক্তি তর্কই এটি নিয়ে” (৬)
পি পি গ্রাসে,রজার লিওইন,আর হাল্ডেন এর মত প্রচুর বিজ্ঞানী এ প্রাকৃতিক নির্বাচন কিভাবে বিবর্তনবাদ ঘটাতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গেছেন।তাই হালের যারা প্রাকৃতিক নির্বাচন দিয়ে বিবর্তনবাদ ব্যাখ্যা করতে পারছে না তারা শুধুমাত্র নব্য ডারউইনবাদের নতুন তত্ত্ব মিউটেশন নিয়েই কথা বলতে বেশি পছন্দ করেন।আস্তে আস্তে তারা তাদের আশ্রয় মিউটেশনে খুঁজে নিয়েছেন।যদিও সে আশ্রয় ও মাকড়শার জালের ন্যায় দূর্বল।বিজ্ঞানের দূর্দান্ত গতির কাছে টিকতে পারছে না।
footnotes:
১,Charles Darwin, The Origin of Species, Chapter VI, “Difficulties of the Theory.
২, Francis Darwin, The Life and Letters of Charles Darwin, Vol. II, p. 10
৩, Charles Darwin, The Origin of Species by Means of Natural Selection, New York: The Modern Library, p. 127
৪, Lee M. Spetner, Not By Chance, Shattering the Modern Theory of Evolution, The Judaica Press Inc., 1997, p. 175
৫, Stephen Jay Gould, “The Return of Hopeful Monsters,” Natural History, Vol. 86, July-August 1977, p. 28
৬, Colin Patterson, “Cladistics,” BBC, Interview with Brian, Peter Franz, 4 March 1982
মিউটেশন আসলে কি?
কোষের DNA মলিকুলের ভাংগন বা স্থান পরিবর্তনকে মিউটেশন বলে।মিউটেশনের ফলেই DNA সিকোয়েন্স ভেংগে যায়।কোন কোন সময় এর নিঊক্লিওটাইডগুলো এক স্থান হতে অপরস্থানে সরে গিয়ে মিঊটেশন ঘটায়।এ ভাংগন মুলত বাহ্যিক কারন যেমন রেডিয়েশন অথবা রাসায়নিক কারনেই হয়ে থাকে।
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন বেশিরভাগ মিউটেশনই প্রানীদেহের জন্য খারাপ।এটা বিজ্ঞানে একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে মিউটেশন প্রানীদেহের ক্ষতিসাধন করে।
প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী B.G.Ranganathan মিউটেশন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন-
“প্রথমত,প্রকৃত মিউটেশন প্রকৃতিতে দুর্লভ।বেশিরভাগ মিঊটেশনই ক্ষতিকর কারন জিনের গঠনের সাজানো পরিবর্তনের বদলে এতে এলোমেলো পরিবর্তন দেখা যায়।এলোমেলো যে কোন পরিবর্তনই কোন সাজানো সিস্টেমকে ভালোর বদলে খারাপের দিকেই নিয়ে যায়।উদাহরনস্বরুপ ভূমিকম্প যদি কোন সাজানো বিল্ডিংয়ে আঘাত হানে তখন এর ভালো কিছু হওয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকে না” ।(১)
ওয়ারেন ওয়েবার মিউটেশন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন-
“অনেকে শুনে আশ্চার্য হবেন যে বাস্তবতঃ সকল mutant জিনই ক্ষতিকর। মিউটেশন বিবর্তন প্রক্রিয়ার একটি প্রয়োজনীয় অংশ।বাস্তবতায় যেখানে মিঊটেশন ক্ষতিকর সেখানে এটি কিভাবে উচ্চশ্রেনীর প্রানীদের বিবর্তনে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে?”(২)
বিবর্তনবাদীরা মিঊটেশনকে একটি জাদুর যন্ত্র হিসেবে দেখায়।তারা মিউটেশনের কারনে যে কোন অলৌকিক কিছু সম্ভব বলে বিশ্বাস করে।Celal Sengor দাবি করেছেন যে মিউটেশনের অলৌকিক প্রভাব রয়েছে তিনি আরো বলেছেন-“মিউটেশনের মাধ্যমে আইনস্টাইন ও তৈরি কর সম্ভব”। বিবর্তনবাদীরা এ পর্যন্ত উপকারী মিউটেশন ঘটানোর জন্য কম চেষ্টা করে নি।তারা কয়েক দশক ধরে এটা নিয়ে প্রচুর গবেষনা করেছে।মিঊটেশনের মাধ্যমে বিবর্তনবাদ প্রমান করার জন্য fruit fly এর উপর চালানো পরীক্ষাটি খুবই প্রসিদ্ধ।এ পরীক্ষার মাধ্যমে তারা প্রমান করতে চেয়েছেন মিউটেশন বিবর্তনবাদ ঘটানোর জন্য দায়ী।কিন্তু একটাও প্রয়োজনীয় মিউটেশন ঘটাতে তারা সক্ষম হননি।এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডারউইনবাদী Gordon Rattray Taylor বলেছেন-
“এটা খুবই চমকলাগানো কিন্তু খুব একটা প্রকাশিত ঘটনা না। প্রজনন বিদেরা ৬০ বছর যাবৎ ল্যবরেটরীতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে fruit fly উৎপন্ন করার জন্য চেষ্টা করেছেন কিন্তু তারা তো নতুন কোন প্রজাতি উৎপন্ন করতে পারে নি,এমন কি নতুন কোন উপকারী এনজাইম ও তৈরি করতে পারে নি।যদিও এ সকল fruit fly রা প্রতি ১১ দিনে নতুন বংশধারার জন্ম দেয়”(৩)
বিবর্তনবাদীরা যে fruit fly নিয়ে কাজ করছিল সেটির একজোড়া নতুন পাখনা সৃষ্টি করে কিন্তু প্রানীটি চিরতরে ঊড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।অন্য কথায় বলা যায় এ মিউটেশন প্রানীটির ক্ষতি সাধন করেছে এবং প্রানীটিকে প্রতিবন্ধী করে দিয়েছে।এটা DNA তে নতুন কোন তথ্যের সংযুক্তি ঘটায় না।তাই অনেক বিজ্ঞানী বলেছেন মিউটেশন প্রানীদেহের যদি অল্পস্বল্প উপকার করেও থাকে কিন্তু নতুন কোন তথ্যের সংযুক্তি ঘটায় না বলে এ মিঊটেশনের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় কোন ভুমিকা নেই।
বিবর্তনবাদীরা উপকারী মিউটেশনের উদাহরন হিসেবে sikle cell anemia রোগটির কথা উল্লেখ করে।এ রোগের কারনে রক্তের হিমোগ্লোবিনের গঠনগত কিছু পরিবর্তন ঘটে।এ হিমোগ্লোবিনই রক্তের মধ্য দিয়ে অক্সিজেন বহনে সহায়তা করে।গঠনগত পরিবর্তনের ফলে এর অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।এ রোগাক্রান্ত মানুষ শ্বাস সংক্রান্ত জটিলতায়ও ভোগে।কিন্তু তারপরো এটাকে উপকারী মিউটেশন হিসেবে উল্লেখ করা হয় কারন এ রোগ কিছুটা ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।তাই এটা বিবর্তনের উপহার হিসেবেই বিবর্তনবাদীরা মনে করে।ব্যাপারটা যেন এমন যে কেঊ প্যারালাইজড অবস্থায় জন্ম গ্রহন করার ফলে আমাদের খুশি হয়ে যাওয়া।যাক বাবা সে কখনো কোথাও উষ্ঠা খেয়ে পড়বে না,কারন সে তো হাঁটতেই পারে না।
অনেকে বর্তমানে রিচার্ড ডকিন্সকে বিবর্তনবাদের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী হিসেবে মনে করে।হাক্সলীকে যেমন বিবর্তনের ঘোর সমর্থক ও প্রচারক হওয়ার কারনে “darwin’s bulldog” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল তেমনি ডকিন্সকেও অনেকে “Darwin’s 2nd bulldog” বলে থাকেন।তাকে এক ইন্টারভিউতে উপকারী মিউটেশন হয়েছে এমন প্রানীর উদাহরন দিতে বললে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেন নি,বরং তিনি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলেন বিবর্তনের পক্ষে কোন সদুত্তর না দিতে পারার কারনে।(৪)
ফ্রান্সের প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী এবং ফ্রান্স বিজ্ঞান একাডেমীর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট Pierre-Paul Grassé
বলেছেন-
“মিউটেশন কোনরকম বিবর্তন ঘটায় না”(৫)
যারা বিবর্তনবাদ নিয়ে পড়াশোনা করেন তারা প্রখ্যাত বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী Stephen jay gould এর নাম শুনে থাকবেন।মিউটেশন বিবর্তনে কতটুকু ভূমিকা রাখে এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন-
You don’t make new species by mutat-ing the species… A mutation is not the cause of evolutionary change.(6)
Pleiotropic Effect
ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব
জেনেটিক কোডিং প্রক্রিয়া বিবর্তনবাদীদের কপালে নতুনভাবে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।পূর্ন গঠনের কোন প্রানীর একটি জিন একের অধিক তথ্য ধারন করে ।উদাহরনস্বরুপ বলা যায় একটি জিন একইসাথে লম্বা হওয়া এবং চোখের রং এর তথ্য ধারন করে। মাইকেল ডেন্টনের মতে উচ্চশ্রেনীর প্রানীদের প্রায় সকল জিনই একের অধিক অংগের তথ্য বহন করে।
প্রানীদেহে জেনেটিক গঠনের এমন বৈশিষ্ট্যের কারনে, মিউটেশনের কারনের যে কোন জিনের DNA পরিবর্তনই একের অধিক অংগকে আক্রান্ত করে।তাই মিঊটেশনের প্রভাব দেহের এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না বরং অনেক অংগকেই তার ধ্বংসকারী প্রভাবে প্রভাবিত করে।
তাই মিঊটেশনের ফলে আপাত দৃষ্টিতে কিছু দৈব সুবিধা পেয়েছে বলে মনে হলেও অন্যান্য অংশে তা যে ক্ষতির চিহ্ন রেখে যায় তা লাভজনক বা সুবিধাজনক অংগের লাভ বা সুবিধাকে ছাড়িয়ে যায়।ফলে মিঊটেশন মোটের উপর ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনা।
মিউটেশন কেন বিবর্তনবাদকে সমর্থন যোগায় না তা দিয়ে গবেষনা করতে গিয়ে তিনটি বিষয় উঠে আসে
১,মিঊটেশন সবসময় ক্ষতিকর।যেহেতু এটি দৈবভাবে ঘটে ,এটি সবসময় প্রানীর ক্ষতিই করে।কোন নিঁখুত জটিল গঠনের মধ্যে অবচেতন হস্তক্ষেপ ক্ষতি বৈ উপকার করে না।
২,DNAতে কোন নতুন তথ্য সংযুক্ত হয় না। DNA এর জেনেটিক তথ্যের উপাদানের অপসারন, ধ্বংস কিংবা স্থান পরিবর্তন হয় তারপরো মিউটেশন কখনোই জীবিত প্রানীর নতুন কোন অংগের বা বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি করে না।
৩,মিঊটেশনের ফলাফলকে তার পরবর্তী বংশধারায় যেতে হলে মিঊটেশনটি অবশ্যই reproductive cell এ ঘটতে হবে।দেহের অন্য কোন অংগের কোষে এ মিউটেশন ঘটলে তা বংশ পরম্পরায় পরবর্তী প্রানীতে যাবে না।উদাহরণস্বরূপ মানুষের চোখে যদি রেডিয়েশনের কারনের DNA উপাদানে পরিবর্তন আসে তাহলে তা তার পরবর্তী অংশে যাবে না।
উপরোক্ত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি মিউটেশন কোন নতুন প্রজাতির জন্ম দেয় না।হিরোশিমা,নাগাসাকি আর চরনবিলে মানুষ যে রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মিউটেশন ও তেমনি সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই আজ নব্য ডারউইনবাদ এক কঠিন হুমকির সম্মুখীন।বিজ্ঞানের আগামীর আবিষ্কারগুলো হয়ত মানুষকে আরো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে যে মানুষ কত ভুল একটি থিউরীকে এতদিন লালন করেছে।
Footnotes:
১,B. G. Ranganathan, Origins?,Pennsylvania: The Banner Of Truth Trust,1988. (emphasis added)
২,20 Warren Weaver et al., “Genetic Effects of Atomic Radiation”, Science, vol. 123, June 29, 1956, p. 1159.
৩, Gordon R. Taylor, The Great Evolution Mystery, New York: Harper & Row, 1983, p.48
৪,” Biological Evidence of Creation: From a Frog to a Prince,” Keziah, American Portrait Films, Cleveland, OH,1998.
৫, Pierre-Paul Grassé, Evolution of Living Organisms, p-88
৬, Stephen J. Gould, speech at Hobart College, February 1414,1980
বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও দার্শনিক বিবর্তনকে কখনো ফ্যাক্ট বা বাস্তবতা, কখনো থিওরী বা তত্ত্ব, কখনো উভয়টি, আবার কখনো কোনটিই নয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। [১]
বিবর্তন কি ফ্যাক্ট নাকি থিয়োরি তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। তবে ১৯৮০ সালের পরে এর বিপক্ষে কিছু অকাট্য প্রমাণ তুলে ধরেন কিছু বিজ্ঞানী, যার কারণে এটি কোন প্রতিষ্ঠিত ফ্যাক্ট নয়।
বিবর্তন, বাস্তবতা ও তত্ত্ব
বিবর্তনবাদ
জীববিজ্ঞানে বিবর্তন বলতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে গাঠনিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের (traits) পরির্তনকে বুঝায়।
ডারউইনের বিবর্তনবাদ অনুসারে, একজন আদি পিতা ও মাতা—যারা ঠিক আজকের মানুষের মতো মানুষ ছিলেন না—বিশেষ কোনো জেনেটিক মিউটেশনের কারণে তারা প্রথম একজন আধুনিক মানব শিশুর জন্ম দেন। এটি দৈব চক্রে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা মাত্র: এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য নেই, কোনো সৃষ্টিকর্তার হাত নেই। প্রকৃতির হাজার খেলার মধ্যে এটি ছিল একটি খেলা। এই একই প্রক্রিয়ায় পৃথিবীতে সকল প্রাণের উদ্ভব হয়েছে। বিবর্তনবাদ অনুসারে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে দৈব চক্রে।
'কোনো কারণে ৩.৬ বিলিয়ন বছর আগের আদি পৃথিবীতে, কোনো এক জায়গার কাদা মাটিতে কিছু অজৈব পদার্থ কাকতালীয়ভাবে একসাথে মিশে প্রথম অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি করে। এরকম অনেকগুলো অ্যামাইনো অ্যাসিড কোনো কাকতালীয় কারণে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে একসাথে হয়ে প্রোটিন তৈরি হয়। তারপর কয়েকটি বিশেষ প্রোটিন কোনো কাকতালীয় কারণে একসাথে হয়ে ডিএনএ তৈরি হয় এবং তারপর সেখান থেকে আরও বিরাট কোনো কাকতালীয় কারণে প্রথম এককোষী প্রাণীর সৃষ্টি হয়। সেই এককোষী প্রাণীরা বহু বছর ধরে বিবর্তিত হয়ে একসময় কোনো কারণে বহুকোষী প্রাণীতে পরিণত হয়। তার বহু বছর পরে সেই বহুকোষী প্রাণীরা বিবর্তিত হয়ে আরও জটিল জলচর প্রাণীতে পরিণত হয়। তারপর সেই জলচর প্রাণীগুলো একসময় হাত-পা গজিয়ে ডাঙায় উঠে এসে নানা ধরনের স্থলচর প্রাণীতে পরিণত হয়। এরপর সেই স্থলচর প্রাণীগুলো কোটি কোটি বছর ধরে বিবর্তিত হয়ে একসময় গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির মতো প্রাণীতে পরিণত হয়। এবং সবশেষে একই প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে বানরররূপী আদিমানব থেকে উদ্ভব হয়েছে আধুনিক মানুষের। এখানে লক্ষ্য করুন এই গোটা প্রক্রিয়ায় কতগুলো কাকতালীয় ব্যাপার রয়েছে। এই প্রতিটি কাকতালীয় ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা হচ্ছে কমপক্ষে কোটি কোটি কোটি সম্ভাবনার মধ্যে একটি। যেমন ৩০০ অণু দিয়ে গঠিত একটি প্রোটিন তৈরি হবার সম্ভাবনা হচ্ছে ১০^৩৯০ এর মধ্যে একটি। (১০ এর পরে ৩৯০টি শূন্য দিলে যে বিরাট সংখ্যা হয় ততগুলো সম্ভাবনার মধ্যে একটি। ) যার অর্থ হচ্ছে— এটা (বিবর্তনবাদ) গাণিতিক ভাবে দেখলে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
কোন জীবের বংশধরদের মাঝে যে জিনসমূহ ছড়িয়ে পড়ে তারাই বংশগতিতে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য উৎপাদন করে। জিনের পরিব্যক্তির মাধ্যমে জীবের নির্দিষ্ট কোন বংশধরে নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হতে পারে বা পুরনো বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটতে পারে। যদিও একটি প্রজন্মে জীবের বৈশিষ্ট্যের যে পরিবর্তন সাধিত হয়, তা খুবই সামান্য। Microevolution বা সূক্ষ্ম-বিবর্তন অবশ্যই প্রকৃতিতে হয়। এবং সেটা হয় একই প্রজাতির মধ্যে, অল্প কিছু জেনেটিক পরিবর্তন থেকে। আর এভাবেই একসময় উপ-প্রজাতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই সূক্ষ্ম বিবর্তন হতে হতে একসময় Macroevolution বা স্থুল-বিবর্তন হয়ে এক প্রজাতির প্রাণী সম্পূর্ণ অন্য প্রজাতির প্রাণীতে পরিণত হয় না—যেটা বিবর্তনবাদীরা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এটা নিয়ে বিবর্তনবাদীদের মধ্যেই দ্বিমত রয়েছে।
কেবলই তত্ত্ব
বিবর্তনবাদ যদি সত্যি হতো তাহলে—
১. আমরা এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে বিবর্তিত হওয়ার সময়, তার মাঝামাঝি অবস্থার অনেক নিদর্শন প্রকৃতিতে দেখতে পারতাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা যে লক্ষ লক্ষ ফসিল পেয়েছি, তার কোথাও কোনোদিনও এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে বিবর্তিত হওয়ার সময় মাঝামাঝি অবস্থার কোনো প্রাণী অর্থাৎ Missing Link দেখা যায়নি। যেমন এখনও পর্যন্ত এমন কোনো বানর বা গরিলার ফসিল পাওয়া যায়নি—যেটার মাথা ছিল মানুষের মতো, বা যেটার গায়ের লোম মানুষের মতো একদম ছোট, বা যেটার হাত মানুষের হাতের মতো—যেগুলো দেখে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, গরিলা বা বানর থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তন হয়ে মানুষ এসেছে।
২. প্রাণীদের মধ্যে সূক্ষ্ম বিবর্তনের (Microevolution) নিদর্শন মিললেও বড় ধরনের বিবর্তনের কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি, যেখানে এক প্রজাতির প্রাণী বিবর্তিত হয়ে আরেক প্রজাতির প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। Macroevolution-এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে মাছির বিবর্তন করার চেষ্টা করেছিলেন। অনেক চেষ্টার পরে দেখা গেল তিন ধরনের মাছি তৈরি হলো— ১) আগে যেরকম ছিল সেরকমই, ২) মিউটেটেড বা বিকৃত, অথবা ৩) মৃত। [২]
২০১০ সালে একটি গবেষণায় মাছির ৬০০ প্রজন্ম পরীক্ষা করেও কোনো বিবর্তনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।[৩]
একইভাবে ই-কোলাই (Escherichia coli) ব্যাকটেরিয়ার ৪০,০০০ প্রজন্মের উপর বিবর্তনের চেষ্টা করেও বিবর্তনবাদের পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। [৪]
সুতরাং অতীতেও বিবর্তন হয়ে একটি প্রজাতির প্রাণী অন্য প্রজাতির প্রাণীতে রূপান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বর্তমানেও না।
৩. বিবর্তনবাদ দাবি করে যে, জেনেটিক মিউটেশনের মাধ্যমে প্রাণীদের মধ্যে বিবর্তন হয়ে উন্নততর এবং বেশি টেকসই প্রাণীর সৃষ্টি হয় এবং এইভাবেই আদি-মানুষ থেকে আধুনিক মানুষ এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় উলটো প্রমাণ পাওয়া গেছে। উদ্ভিদ এবং মানুষ উভয়েরই উপর গবেষণায় দেখা গেছে বেশিরভাগ মিউটেশনের ফলে দেহে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় না। কিন্তু খারাপ মিউটেশন হয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এবং এগুলো কোষের বংশপরম্পরায় টিকে থাকে। একে বলা হয় জেনেটিক এনট্রপি। প্রত্যেক মানুষ তার নিজের মিউটেশন এবং তার পূর্ব পুরুষদের মিউটেশন বহন করে এবং তারপর তার বংশধরের মধ্যে দিয়ে দেয়। [৫]
সাম্প্রতিক কালে হিউমেন জিনোম গবেষণার উন্নতির ফলে বিজ্ঞানীরা ২১৯ জন মানুষ এবং ৭৮ জন বাবা-মা এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে গবেষণা করে দেখেছেন, প্রতি বংশ পরম্পরায় ৬০টি নতুন মিউটেশন যোগ হয়! বিবর্তনবাদীরা দাবি করে: ২.৪ মিলিয়ন বছর আগে, এক বানর/গরিলার কাছাকাছি দেখতে আদি মানুষ থেকে আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছে। যার অর্থ দাঁড়ায় এই পর্যন্ত মানুষের প্রায় ১২০,০০০ প্রজন্ম এসেছে। এখন প্রতি প্রজন্ম যদি ৬০টি মিউটেশন যোগ করে, তাহলে ১২০,০০০ প্রজন্মে আজকে মানুষের মধ্যে ৭,২০০,০০০ মিউটেশন থাকার কথা। এতো মিউটেশন হলে মানুষ আর মানুষ থাকত না, এবং অনেক আগেই মানব জাতি পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।
৪. এক প্রজাতির প্রাণীর থেকে অন্য প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে ধাপে ধাপে বিবর্তন কখনও সম্ভব নয়। যেমন, সরীসৃপের দ্বিমুখী ফুসফুস কখনই পাখির একমুখী ফুসফুসে বিবর্তিত হতে পারে না। সেটা হতে হলে বিবর্তন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরীসৃপকে শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে—যেটা কেবল হাস্যকরই নয় বরং অযৌক্তিক। সুতরাং বিবর্তনবাদীরা যে-দাবি করে সরীসৃপ থেকে পাখির বিবর্তন হয়েছে, সেটা ভুল। [৬]
একইভাবে উভচর প্রাণীর তিন-কক্ষ-বিশিষ্ট হৃদপিণ্ড থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণীর চার-কক্ষ-বিশিষ্ট হৃদপিণ্ডের বিবর্তন হওয়া কখনও সম্ভব নয়, কারণ সেটা হতে হলে প্রথমে উভচর প্রাণীর হৃদপিণ্ডের মধ্যে নতুন দেওয়াল সৃষ্টি হতে হবে, যা রক্ত চলাচল ব্যহত করবে, না হয় নতুন রক্তনালীর সৃষ্টি হতে হবে, যা রক্ত চলাচলকে ব্যহত করবে।... এরকম অনেক প্রমাণ রয়েছে যা থেকে সহজেই দেখানো যায় যে, এক প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে ধীরে ধীরে বিবর্তন হয়ে অন্য প্রজাতির প্রাণী সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। কারণ বিবর্তনের সময় মাঝামাঝি যেই অবস্থাগুলো হতে হবে, সেগুলো প্রাণীর জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর নয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এইধরনের অর্ধেক বিবর্তন সেই প্রাণীর জন্য মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং বিবর্তনবাদ শুধুই একটি থিওরি। এর পক্ষে কোনো গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক প্রমাণ নেই। প্রকৃতিতে কি ধরনের বিবর্তন হয়?
একটি ব্যাপার পরিষ্কার করা দরকার: Microevolution বা সূক্ষ্ম-বিবর্তন অবশ্যই প্রকৃতিতে হয়। এবং সেটা হয় একই প্রজাতির মধ্যে, অল্প কিছু জেনেটিক পরিবর্তন থেকে। আর এভাবেই একসময় উপ-প্রজাতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই সূক্ষ্ম বিবর্তন হতে হতে একসময় Macroevolution বা স্থুল-বিবর্তন হয়ে এক প্রজাতির প্রাণী সম্পূর্ণ অন্য প্রজাতির প্রাণীতে পরিণত হয় না—যেটা বিবর্তনবাদীরা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এটা নিয়ে বিবর্তনবাদীদের মধ্যেই দ্বিমত রয়েছে। কাজেই বলা যায়, বানরের মধ্যে সূক্ষ্ম বিবর্তন হয়ে বিভিন্ন প্রজাতির বানর তৈরি হয়, কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত বানরই থাকে; মানুষ হয়ে যায় না। বিবর্তনের টেক্সট বইগুলোতে বিবর্তনবাদের পক্ষে যে সব উদাহরণ দেখানো হয়— যেমন ডারউইনের পাখির ঠোটের ‘বিবর্তন’, ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার ‘বিবর্তন’ হয়ে এন্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্টেন্স, এইচআইভি ভাইরাসের ‘বিবর্তন’—এগুলো সবই হয় একই প্রজাতির মধ্যে। পাখি বিবর্তনের পরে পাখিই থাকে, ব্যাকটেরিয়া শেষ পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াই থাকে। তাই, বলা যায়, এই তত্ত্বটি কেবলই তত্ত্ব, বাস্তব সত্য নয়।
চার্লস ডারউইনকে নিয়ে সেসব ভ্রান্তধারণার কয়েকটির ব্যাখ্যা। ১) ডারউইন ও গ্যালাপাজোসঃ এই কিংবদন্তীকে নিয়ে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণার একটি এটি। বলা হয়ে থাকে, ডারউইন তাঁর বিগল জলযাত্রায় গিয়ে গ্যালাপাজোসে যান। সে সময়ে গ্যালাপাজোস ছিলো জনশূন্য। এই জনশূন্য স্থানে তিনি প্রাণীদের অবলোকন করেন এবং প্রথম তাঁর মাথায় বিরর্তনবাদের চিন্তা আসে। গ্যালাপাজোসে ডারউইন, ডারউইনের মতবাদ, গ্যালাপাজোসে ডারউইন কিন্তু এটি পুরোপুরি একটি মিথ। কারণ গ্যালাপাজোসে থাকা অবস্থায় তিনি একজন বিবর্তনবাদী ছিলেন না। মূলত বিবর্তনবাদে তিনটি মূল ভিত্তি ছিলো যা তিনি গ্যালাপাজোস থেকে ফিরে আসার পরে আবিষ্কার করেন। তিনটি ভিত্তি হিসেবে তিনি তাঁর অটোবায়োগ্রাফির একটি অনুচ্ছেদে বলেন, “প্রথমত, বিগলের সমুদ্রযাত্রার সময় প্যামপিন স্তরসমূহে জীবাশ্ম প্রাণীর সাঁজোয়াভাবে আবৃত থাকা আমাকে বিমোহিত করে। এটি অনেকটা সাঁজোয়া জাহাজের মত ছিলো। দ্বিতীয়ত, এই ব্যবস্থার কারণে স্বজাতী প্রাণীগুলো তারা একে অপরকে এই মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে বদলি করে। তৃতীয়ত, আমেরিকার ও গ্যালাপাজোসের প্রাণীদের এই বৈশিষ্ট্য প্রায় একই। এমনকি আরো কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য দ্বীপঅঞ্চলের জন্যেও একই। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই দ্বীপগুলো ভৌগলিকভাবে খুব একটা পুরোনো নয়”। সুতরাং তিনি বিগলের সমুদ্রযাত্রার সময় প্রকৃতিকে আগে দেখা গ্যালাপাজোসের প্রকৃতির সাথে তুলনা করেছেন। তাই বলা যায়, বিবর্তনবাদ আবিষ্কারের সময় তিনি গ্যালাপাজোসে ছিলেন না। ২) বিবর্তনবাদ নিয়ে লেখা বইয়ের ভুল নাম ও ব্যাখাঃ বিবর্তনবাদ নিয়ে লেখা চার্লস ডারউইনের একটি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় বই হিসেবে স্বীকৃতি পায় “অজিরিন অফ স্পেসিস”। কিন্তু বইটি এই নামে বহুল পরিচিত হলেও এটি বইটির আসল নাম নয়। বইটির আসল নাম হলো, “অন দ্যা অরিজিন অফ স্পেসিস” যার অর্থ – “বিভিন্ন প্রজাতি অরিজিন অর্থ্যাৎ উৎপত্তি কোথায় থেকে এসেছে?” এক কথায় উত্তর দিতে হলে বলতে হবে, প্রতিটি প্রজাতি প্রাকৃতিক উপায়ে তাঁর পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। অন্যদিকে বইটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করা যায়, এটি সকল প্রজাতি নিয়ে বলবে, শুধু মানুষ জাতিকে নিয়ে না। অন দ্যা অরিজিন অফ স্পেসিস, চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ, অন দ্যা অরিজিন অফ স্পেসিস এই ব্যখা কিংবা প্রশ্নোত্তরের কারণ হলো, অনেকেই মনে এই বইটি আসলে “অরিজিন অফ লাইফ” অর্থ্যাৎ জীবনের উৎপত্তি নিয়ে বলেছে। কিন্তু আসলে ডারউইন এই নিয়ে বইটি লিখেননি। তবে তিনি বইটিতে এটি বলেছিলেন, জীবন মূলত প্রকৃতি থেকে উৎপন্ন হওয়া একটি বিষয়। তবে তাঁর সময়ে তিনি এটি প্রমাণ করে যেতে পারেন নি। এছাড়া তিনি আরো বলেন, আমরা পৃথিবীতে যেসব জীবাশ্ম দেখতে পাই তাঁর সবই তাদের নিজস্ব কোন না কোন গোত্র থেকে এসেছে। ৩) মানুষ আর বানরের আদি সম্পর্কঃ আমরা শুনে থাকি, মানুষের বানর থেকে কালক্রমে পরিবর্তিত হয়েছে। এতে তর্কবাদীরা একটি মজার প্রশ্ন করেন, “মানুষ যদি বানর থেকে আসে তাহলে মানুষ কেন এখনো বানরে পরিণত হচ্ছে না?” মূলত বিবর্তনবাদ নিয়ে আমাদের মাঝে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণার একটি এটি। মানুষ জাতির জন্যেও এটি অসম তুলনা। প্রকৃতপক্ষে, ডারউইন এমন কিছু আদৌ বলেন নি। তিনি বলেছেন, মানুষ, বনমানুষ ও বানর তিনটিই একই গোত্র থেকে এসেছে। এমনটি বলার কারণও খুব স্পষ্ট। ক্রিস্টোফার কলম্বাস | পর্দার আড়ালের এক হত্যাকারী- পড়তে ক্লিক করুন আসলে বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে এই তিন জাতি অনেকে কাছাকাছি। “অন দ্যা অরিজিন অফ স্পেসিস” ছাড়াও ১৮৭১ সালে প্রকাশিত “দ্যা ডিসেন্ট অফ ম্যান অ্যান্ড সিলেকশন ইন রিলেশন টি সেক্স” গ্রন্থে এই বিষয়ে বলেন। তবে এক্ষেত্রে অন দ্যা অরিজিন অফ স্পেসিসে দেওয়া তাঁর বক্তব্যই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, “সাদৃশ্য আমাকে এই গবেষণায় একধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। যেমনঃ এখন আমি বিশ্বাস করি সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ একই প্রোটোটাইপ (আদিরূপ) থেকে এসেছে। তবে এটি পুরোপুরি ঠিক নাও হতে পারে। তবুও কিন্তু প্রতিটি জীবের মাঝে রাসায়নিক, কোষের গঠন, জন্ম ও বেড়ে উঠা সহ কোন না কোন ক্ষেত্রে একটি সাধারণ বিষয় রয়েছে”। অন্যদিকে, বর্তমানে এটি প্রমাণিত যে বানরের থেকে বনমানুষের সাথে আমাদের সাদৃশ্য বেশি। ৪) ডারউইনের ধর্মমতঃ ডারউইনের ধর্মমত নিয়ে অনেকের মাঝে ব্যাপক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে তাকে পুরোপুরি নাস্তিক বলে দেন। কিন্তু তিনি আসলে নাস্তিক ছিলেন না। তিনি ইংল্যান্ডের চার্চে ব্যাপটিস্ট ছিলেন। এর আগে তিনি ইউনিটেরিয়ান চ্যাপেলে শৈশব কাটিয়েছিলেন। এমনকি একটা সময় তিনি জাতীয়ভাবে পাদ্রী হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছিলেন। কিন্তু ডারউইন কোন বিশেষ ধর্মে ছিলেন না। ১৮২০ ও ১৮৩০ এর দিকে যখন প্রকৃতি ও জীবন নিয়ে বিস্তরভাবে ভাবতে শুরু করলেন তখন খ্রিস্টধর্মের উপর অবিশ্বাস করতে থাকলেন। চার্লস ডারউইন বলেন- “আমি কখনো সৃষ্টিকর্তাকে অস্তিত্ব অস্বীকার করি না। সে অর্থে আমি নাস্তিক নই। আসলে আমার মনে হয় একজন অজ্ঞ মানুষই আমার মনের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবে” এসময় তিনি মানুষের উৎপত্তি নিয়ে যে মতবাদ দিয়েছিলেন তা মূলত খ্রীস্টধর্ম মতবাদ থেকে অনেক আলাদা ছিলো। মূলত এই কারণে খ্রিস্টধর্ম থেকে কিছুটা দূরত্ব থাকতে শুরু করেন তিনি। তিনি মনে করতেন, পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মের কিছু মিথ আছে। অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে সেসব মিথের ব্যখা থাকলেও খ্রিস্টান ধর্মের তা নেই। তাঁর ধর্ম মতবাদ ও নাস্তিকবাদিতা নিয়ে সেসময়ও কথা উঠেছিলো। ৫) “যোগ্যতমের বেঁচে থাকা”-র ধারণাঃ চার্লস ডারউইনের তত্ত্ব, চার্লস ডারউইনের মতবাদ, যোগ্যতমের বেঁচে থাকা আমরা সবাই জানি যে, “যোগ্যতমের বেঁচে থাকা”-র ধারণার প্রবর্তক চার্লস ডারউইন। কিন্তু এটির প্রবর্তক ডারউইন ছিলেন না। মূলত এটি প্রবর্তন করেন দার্শনিক হারবার্ট স্পেনসার। তবে “Survival of the fittest”-র মূল দর্শনের সাথে ডারউইনের বিবর্তনবাদের অনেকটাই মিল ছিলো। অন্যদিকে, স্পেন্সার এই তত্ত্বের অনুপ্রেরণা ডারউইনের কাছ থেকেই পান। স্পেন্সার ১৮৬১ সালে তাঁর লেখা “ প্রিন্সিপালস অফ বায়োলজি” তে বলেন, “যোগ্যতমের বেঁচে থাকা তত্ত্বের মূল চালিকা শক্তি ছিলো মি. ডারউইনের ন্যাচারাল সিলেকশন। তিনি জীবনের যে বিবর্তন দেখিয়েছেন এখানে সেটিকে অবলম্বন করে তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে”। পরবর্তীতে, ডারউইন স্পেন্সারের এই তত্ত্বের বাহাবা দিয়ে ১৮৭২ সালে “অন দ্যা অরিজিন অফ স্পেসিস”-এর ষষ্ঠ সংস্করণে বলেন, “আমি মানুষের ক্ষমতাকে বিচার করতে ন্যাচারাল সিলেকশন তত্ত্বের প্রবর্তন করি। কিন্তু এর অভিব্যক্তি ব্যবহার করে মি. হারবার্ট স্পেন্সার “সারভাইভাল অফ দ্যা ফিটেস্ট” নামে যে তত্ত্ব প্রবর্তন করেছেন তা আরো সঠিক ও সুবৃহৎ”। এগুলো ছাড়াও বিবর্তনবাদ নিয়ে প্রথম প্রকাশিত বই, তাঁর তত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতা, সৃষ্টি ও বিবর্তন নিয়ে তাঁর বিরোধী মতবাদ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দেখা যায়। এখানে বলতে হয়, “অন দ্যা অরিজিন অফ স্পেসিস” বিবর্তনবাদ নিয়ে প্রথম লেখা বই ছিলো না। এর আগে ১৮৪৪ সালে রবার্ট চেম্বারস “ভেস্টিজেসেস অফ দ্যা ন্যাচরাল হিস্ট্রি অফ ক্রিয়েশন” বিবর্তনবাদ ও প্রজাতির বিবর্তন নিয়ে একটি গবেষণালব্ধ বই লেখেন।
বিবর্তনের বিপক্ষে কিছু আলোচনা

ধারণা ১ – বিবর্তন শুধু একটা তত্ত্ব

এই মিথ্যাচারটিকে, যদি না সেটা অজ্ঞানতাবশত করা হয়ে থাকে; অনেকেই তর্কে তুলে আনেন। “বিবর্তন ফ্যাক্ট না, এটা একটা থিওরি মাত্র” বলে বোঝাতে চান বিবর্তন বিশ্বাসযোগ্য নয়! বিবর্তন ফ্যাক্ট এবং থিওরি দুটোই, নির্ভর করে আপনি কী নিয়ে কথা বলছেন তার উপর।

সকল প্রাণী সরলতর প্রাণী থেকে কয়েক মিলিয়ন বছরে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান অবস্থানে এসেছে। সেই সরলতর প্রাণীকে বলা হয় LUCA (Last Universal Common Ancestor)- এটা একটা বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট। এই ফ্যাক্টের সত্যতা পাওয়া যায় ফসিলে, ডিএনএতে আর জৈবভূগোলে। আপনি ফসিল খুঁজতে যত গভীরে যাবেন তত সরলতর প্রাণীর ফসিল পাবেন। সরলতর প্রাণীদের ভীড়ে আপনি জটিল গঠনের ফসিল পাবেন না, কখনোই। একই গভীরতায় পাওয়া ফসিলরা একই রকম গঠনের হবে, জটিলতার দিক থেকে।

ডিএনএর গঠনও প্রচ্ছন্নভাবে বিবর্তনের প্রমাণ দিয়ে যায়। শিম্পাঞ্জীর সাথে মানুষের কার্যকর জীন ৯৯.৬% মিলে যায়। ইদুরের সাথে ৮০% মিলে যায়। এই শতকরা অনুপাত আবার একক পূর্বপুরুষের জীবনকালের সাথে সম্পর্কিত। এগুলো বিবর্তনকে ফ্যাক্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এবার দেখা যাক থিওরির অংশটা।

থিওরি হচ্ছে যা দিয়ে ফ্যাক্টকে বিশ্লেষণ করা হয়। The Theory of Evolution by the means of Natural Selection”, থিওরিটা হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের অংশটা।

অন্যভাবে বলতে গেলে, বিবর্তন হচ্ছে ফ্যাক্ট, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে সেটা ঘটে এটা হচ্ছে থিওরি। আরো কিছু থিওরি যদি আমরা দেখি তবে ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে- The theory of universal gravity, The germ theory, The cell theory, The heliocentric theory, যেগুলো সর্বোচ্চ বৈজ্ঞানিক সম্মানপ্রাপ্ত সত্য সেগুলোকেও থিওরিই বলা হয়।

চার্লস ডারউইন আর আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেসের আগেও অনেক প্রকৃতিবাদী-জীববিজ্ঞানী-দার্শনিক বিবর্তনের কথা বলে গেছেন। তারা যেটা পারেন নি সেটা হচ্ছে “কেনো” প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া। ডারউইন আর ওয়ালেস “কেনো” আর “কিভাবে” ব্যাখা করতে পেরেছেন। আর সেটাই তাদের অসাধারণ আর ক্ষেত্রবিশেষে ঘৃনার পাত্র করে তুলেছে।

ধারণা ২ – বানর/এপ থেকে মানুষের বিবর্তন হয়েছে

“যদি মানুষের বিবর্তন বানর/এপ থেকে হয় তাহলে এখনো কেনো বানর/এপ আছে?” প্রশ্নটি হতাশাজনক ভাবে ভুল।

মানুষ বানর বা এপ থেকে বিবর্তিত হয় নি। মানুষ এবং বানর/এপের একক একটা পূর্বপুরুষ ছিল। যদি সময় যাত্রা করে আমরা কয়েক মিলিয়ন বছর অতীতে যেতে পারি তবে আমরা আমাদের এপ-সদৃশ পূর্বপুরুষদের দেখতে পাবো। এদের জনসংখ্যা কয়েকটি ধারায় বিভক্ত হয়েছিল আর বিবর্তনের ভিন্ন ভিন্ন পথে যাত্রা শুরু করেছিল। একটা ধারায় আসা সর্বশেষ প্রাণী আমরা, আরেকটা ধারার সর্বশেষ প্রাণী শিম্পাঞ্জী। (সর্বশেষ বলতে সবচেয়ে নতুন প্রাণী বোঝানো হয়েছে- ধারা এখানেই শেষ হয়ে যায় নি। বিস্তারিত পাবেন “ভুল ধারনা ৭” এ)

তো শিম্পাঞ্জী আর মানুষের একক প্র-প্র-প্র-প্র…পিতামাতারা ৪-৬ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছেন। এর পরে আসা মানবসদৃশ প্রাণীদের ১৪টির মতো ফসিল পাওয়া গেছে যেগুলো “ভুল ধারণা ৪”এ জানতে পারবেন।

ধারণা ৩ – তাপগতিবিদ্যার ২য় সুত্র বিবর্তনবাদের সাথে সাংঘর্ষিক

প্রায়ই যে কথাটা শোনা যায় সেটা হচ্ছে- “তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্র বিবর্তনকে সমর্থন করে না”। আসুন দেখি তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্র কি বলে-

“কোনো সিস্টেম নিন্মশক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে যেতে পারবে না, যদি না বাইরে থেকে শক্তির প্রবেশ না হয়।” অন্য ভাষায়- “সিস্টেমের disorder বাড়তেই থাকবে যদি না বাইরে থেকে order সরবরাহ করা হয়।”

ধরুন আপনি মইয়ের চড়ে মাটি থেকে ৫ফুট উচ্চতায় দাড়িয়ে আছেন, আপনার বন্ধু নিচে মাটিতে দাড়িয়ে আছেন। একজন পদার্থবিদের কাছে আপনার বন্ধুর চেয়ে আপনার potential energy বেশী হওয়ায় আপনি বেশী “ordered”। আপনার বন্ধুটির এনট্রপি (শক্তি রূপান্তরের অক্ষমতা বা অসম্ভাব্যতা বা শক্তির অপ্রাপ্যতা) আপনার চাইতে বেশী।

লক্ষ্য করুন- তাপগতিবিদ্যার ২য় সুত্রে কম শক্তিস্তর থেকে বেশী শক্তিস্তরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ নাই, তবে শর্ত একটাই- বাইরে থেকে শক্তির সরবরাহ আসতে হবে। নিচে দাড়ানো আপনার বন্ধুটি মই চড়ে উপরের শক্তিস্তরে উঠার পথে কোনো বাধা নাই, তবে তাকে তার মাংসপেশীর শক্তি ক্ষয় করতে হবে। অন্য কথায়, শক্তি সরবরাহ করতে হবে।

আরেকভাবে দেখা যাক- বদ্ধ সিস্টেম- যেখানে বাইরে থেকে শক্তি প্রবেশ করানো যায় না, সেখানে এনট্রপির পরিবর্তন অসম্ভব। খোলা সিস্টেমে এনট্রপি বাইরে থেকে শক্তি নিয়ে পরিবর্তিত হতে পারে।

এবার ২য় সুত্রকে বিবর্তনের সাথে মিলিয়ে দেখা যাক। পৃথিবী খোলা সিস্টেম- নিকটবর্তী শক্তির আধার হচ্ছে সূর্য, যেখান থেকে আমরা প্রতিনিয়ত শক্তি পাচ্ছি। সূর্য ছাড়া প্রাণ অসম্ভব। সূর্যের তাপশক্তি ব্যবহার করে প্রাণীরা খাদ্য তৈরি করছে। সুতরাং তাপগতিবিদ্যার ২য় সুত্রের সাথে বিবর্তনবাদের কোন সংঘর্ষ নাই, বরং বিবর্তনবাদ তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্র মেনেই চলছে।

ধারণা ৪ – মিসিং লিংক নাই

Odontochelys একটি মধ্যবর্তি প্রাণীর ফসিল যেটা কচ্ছপ আর গিরগিটির মাঝামাঝি একটি প্রাণী ছিল। ছবিতে আমরা একটা গিরগিটির মত লম্বা লেজ আর কচ্ছপের মত খোলস দেখতে পাচ্ছি।

মিসিং লিংকগুলো আর মিসিং নয়, বিজ্ঞানীরা শত শত ফসিল পেয়েছেন যেগুলো একই সাথে দুটো প্রাণীর বৈশিষ্ট্য বহন করে। উদাহরণস্বরূপ- তিমি। স্তন্যপায়ী হয়েও তিমি পানিতে বেঁচে আছে মাছের মতো। তিমির কংকালে পায়ের হাড়গুলো এখনো বিদ্যমান, যা প্রমাণ করে তিমি বা তার কোনো পূর্বপুরুষ স্থলজ প্রাণী ছিল।

এছাড়াও Archaeopteryx, Confuciusornis, আর Jeholornis পাখি আর সরীসৃপ মধ্যবর্তী প্রাণীর ফসিল। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এই ফসিলগুলো প্রমাণ করে বিবর্তনবাদের সত্যতা। সৃষ্টিতত্ত্ববিদেরা এগুলোকে অস্বীকার করেন, তারা বলেন মধ্যবর্তী ফসিল বলে কিছু নাই, তবে তারা মিসিং লিংক দিয়ে বিবর্তনকে মিথ্যা প্রমাণ করতে চান। ফসিলের প্রমাণ দেখালেও তারা অস্বীকার করেন।

এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে এমন মানবসদৃশ প্রাণীর ফসিলগুলো হচ্ছে-

Sahelanthropus tchadensis

Ardipithecus ramidus

Australopithecus anamensis

Australopithecus afarensis

Kenyanthropus platyops

Australopithecus africanus

Australopithecus garhi

Australopithecus sediba

Australopithecus aethiopicus

Australopithecus robustus

Australopithecus boisei

Homo habilis

Homo georgicus

Homo erectus

Homo ergaster

Homo antecessor

Homo heidelbergensis

Homo neanderthalensis

Homo floresiensis

ধারণা ৫ঃ বিবর্তন বিজ্ঞান নয়, কারণ এটা প্রত্যক্ষ বা পরীক্ষা করা যায় না

ক্ষুদ্রতর পরিসরে বিবর্তন বহুবার প্রত্যক্ষ করা হয়েছে। ব্যাকটেরিয়ারা এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, বিজ্ঞানীরা সেটা প্রতিনিয়ত দেখে নতুন এন্টিবায়োটিক বানাচ্ছেন। গ্রান্ট আর গ্রান্টের করা ২০০২ সালের পরীক্ষায় আমরা দেখেছি খরার কারণে কিভাবে গ্যালাপাগোসের ফিঞ্চ পাখিদের ঠোঁটের পরিবর্তন হয়েছে।

যাই হোক- যখন কেউ এই দাবি করেন তখন তারা বোঝান দীর্ঘ পরিসরে বিবর্তন প্রত্যক্ষ করার কথা। তারা বলেন “মাইক্রোইভোলিউশন হতেই পারে, তবে সরীসৃপ কিভাবে মোরগে পরিণত হয় আমরা সেটা দেখতে চাই।”

প্রথমত- মাইক্রোইভুলূ্যশন আর ম্যাক্রোইভুলূ্যশনের মাঝে পার্থক্য খুব বেশী নয়। ক্ষুদ্র পরিসরে বিবর্তন হতে পারলে বৃহৎ পরিসরেও হতে পারে। অনেকগুলো মাইক্রোইভোলিউশন (মিউটেশন) মিলেই ম্যাক্রোইভোলিউশন হয়।

আর বিজ্ঞান মানেই যে প্রত্যক্ষ করতে হবে সেটা কিন্তু না। আপেক্ষিকতাবাদের প্রতিপাদ্য সময়কালের বক্রতা প্রত্যক্ষ করা আমাদের মত ত্রিমাত্রিক প্রাণীদের পক্ষে অসম্ভব, কিন্তু আমরা সময়কালের বক্রতার প্রমাণ ঠিকই বের করে নিয়েছি। বিজ্ঞানীরা তথ্য ধরে আগান, গোয়েন্দাদের মতো সূক্ষ প্রমাণ জড়ো করে বড় বড় রহস্য সমাধান করেন তাঁরা। বিজ্ঞান সবসময় প্রত্যক্ষ প্রমাণের উপর নির্ভর করে না।

বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা তথ্য-প্রমাণ জড়ো করে করে বলতে পারেন- মোরগ সরীসৃপ থেকে বিবর্তিত হয়েছে। ফসিল-ডিএনএ ইত্যাদি তথ্য বিচার বিশ্লেষন করে তাঁরা আমাদের দেখান এটাই সত্য। তাঁরা বলেন- “পাখিরা যদি সরীসৃপ থেকে বিবর্তিত হয়ে থাকে তবে পাখিদের ডিএনএ সরীসৃপদের সাথে বেশী মিলবে।” পরে সেটার প্রমাণ হাজির করার পর তাঁরা উপসংহার টানেন। এটাকেই বলে scientific method!

ধারণা ৬- একক প্রাণীর বিবর্তন

প্রজাতির বিবর্তন হয়, একক প্রাণীর নয়। বিবর্তন হল নির্দিষ্ট সময়ে একটা প্রজাতির জীনগত গঠনে যে পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং, যেহেতু কোন একক প্রাণী তার জীনগত কাঠামোতে কোন পরিবর্তন আনতে পারে না, তার একক বিবর্তন সম্ভব নয়। যেমন, যদি কোন খরার সময় শুধুমাত্র বড় বীজসম্পন্ন গাছগুলো ছাড়া সকল বীজসম্পন্ন গাছ ধ্বংস হয়ে যায়, ছোট ঠোঁটের কোন পাখি ঐ খরার আদলে বিবর্তিত হতে পারবে না। অন্য ভাষায়, এটি বড় বীজ খাওয়ার জন্য তার জীনগত কাঠামোর পরিবর্তন করে তার ঠোঁটের আকার-আকৃতি বদলে ফেলতে পারবে না। জীববিজ্ঞানের ভাষায়, এটি অভিযোজিত হতে পারবে না। ফলাফলস্বরূপ, বড় ঠোঁটের পাখিগুলোর তুলনায় ছোট ঠোঁটের পাখিগুলো কম খাবার পাবে এবং কম সন্তানের জন্ম দেবে। এর মানে হলো, পরবর্তী প্রজন্মে বড় ঠোঁটের জন্য জীন বেশি থাকবে। সুতরাং সম্পূর্ণ প্রজাতির খরার সাথে খাপ খাওয়াতে বিবর্তিত এবং অভিযোজিত হবে, কোনো একক প্রাণী নয়।

ধারণা ৭: বিবর্তনের কোন লক্ষ্য আছে

মানুষ প্রায়ই বিবর্তন সম্পর্কে বলে যে, “কিছু সাধন করে ফেলায় চেষ্টারত”; নয়তো তারা প্রাইমেট এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের অন্য প্রাণীদের তুলনায় “বেশি বিবর্তিত” বলে আখ্যা দেয়। কিন্তু এ ধরণের বিবৃতিগুলো প্রবল সমস্যাযুক্ত কারণ তারা এটারই পরিষ্কার ইঙ্গিত দেয় যে বিবর্তনের কোন উদ্দেশ্য আছে, যা সত্য নয়। জীববিজ্ঞানীরা প্রায়ই বলেন যে, “বিবর্তন অন্ধ।” বিবর্তন যা করে তা হলো কোন জীব প্রজাতিকে তার বর্তমান পরিবেশ এবং জীবনপ্রণালীর সাথে অভিযোজিত করে তোলে। বিবর্তনের কোন উদ্দেশ্য নেই, এবং এটি কোন ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম নয়। সুতরাং, সহস্র প্রজন্মের জন্য নির্বাচিত বৈশিষ্ট্য পরিবেশের এ কোন পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

কারণ, বিবর্তন শুধু জীবকে তার বর্তমান পরিবেশ এবং জীবনপ্রণালীর সাথে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে, যেকোন এক প্রজাতিকে অন্যদের চেয়ে “বেশি বিবর্তিত” বলে আখ্যা দেওয়ার কোন মানে হয় না। যেমন, একটা বানর একটা মাছির চেয়ে বেশি বিবর্তিত নয় যে মাছি বানরটার পায়খানা থেকে আর্দ্রতা পায়। বানর অবশ্যই বেশি জটিল, কিন্তু এটি আসলে বেশি বিবর্তিত নয় কারণ বানর এবং মাছি দুজনই তাদের নিজ নিজ জীবনপ্রণালীর সাথে খুব ভালভাবেই খাপ খাইয়েছে। যদি আপনি বলতে চান যে বানরটা মাছিটার চেয়ে বেশি বিবর্তিত, তাহলে আপনি বলছেন যে বিবর্তনের উদ্দেশ্য আছে, যা ভুল।

পরিশেষে, এটা সৃষ্টিতত্ত্ববিদদের প্রচলিত সমালোচনা, “কিছু প্রজাতির উলটো বিবর্তন হয়েছে (যেমনঃ পেঙ্গুইনের ওড়ার ক্ষমতা হারানো, তিমির সাগরে ফিরে যাওয়া)”, এর ব্যাখ্যা দেয়। মনে হতে পারে যে বিবর্তনের নির্দিষ্ট লক্ষ রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে এটা শুধু জীবকে তার বর্তমান পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াচ্ছে। সুতরাং, একটা সময়ে, যখন ওড়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল, বিবর্তন পাখিকে ওড়ার সামর্থ দিয়েছে। কিন্তু অ্যান্টার্কটিকায় যেসব পাখির বাস, ওড়ার বিদ্যার প্রয়োজনীয়তা তাদের এত বেশি ছিল না, যতটা ছিল সাঁতার এবং উষ্ণ থাকার বিদ্যার, যা বিবর্তন তাদের দিয়েছে ওড়ার ক্ষমতার পরিবর্তে এবং পেঙ্গুইন এসেছে।

ধারণা ৮: কিছু সিস্টেম বিবর্তনের জন্য খুব বেশিই জটিল

এটা বিবর্তনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে পুরনো সমালোচনা। এবং ইদানীং “সরলীকরণের অযোগ্য জটিলতা” নামে একে নিয়ে আবার কথা হচ্ছে।এর মূলকথা হল, কিছু সিস্টেম বিবর্তনের জন্য খুব বেশি জটীল কারণ সকল অংশ একত্রিত হবার আগ পর্যন্ত তারা কার্যকরী নয়। যেমন, একটা চোখের ছোট একটা অংশের অনুপস্থিতির জন্য চোখটা দেখতে পাবে না, একটা Bacterial Flagellum একটা প্রোটিনের অভাবে Flagellum এর মত আচরণে সক্ষম হবে না। সুতরাং, বিতর্কের মূলকথা হল, এই সিস্টেমগুলো বিবর্তিত হতে পারতো না কারণ সেখানে কোন কার্যকরী ধাপ থাকতো না, প্রকৃতি ঐ ধাপগুলো নির্বাচন করতে পারতো না। সমস্যা হল, এই বিতর্ক একটা বিষয়কে অবজ্ঞা করছে, “বিবর্তন অন্ধ”। বিবর্তনের চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে নির্বাচিত হবার জন্য বৈশিষ্ট্যগুলোকে কার্যকরী হতে হবে, এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বরং, যদি কোন বৈশিষ্ট্য কার্যক্ষম হয়, প্রকৃতি তাদের নির্বাচিত করবে। প্রকৃতপক্ষে, কেউ এখনো পুরোপুরি সরলীকরণের অযোগ্য কোন সিস্টেম খুঁজে বের করতে পারেনি, এবং জটিল সিস্টেমের বিবর্তন ব্যাখ্যায় আমাদের আছে বিবর্তন পদ্ধতি। যেমনঃ পূর্বে উল্লেখিত চোখের উদাহরণে, চোখটা শুধু কিছু আলোক সংবেদনশীল কোষ যোগ করে নিত (অনেকটা চ্যাপ্টাকৃমির মত)। তারা ঠিক চোখের মত কাজ করে না, কিন্তু এরপরও তারা কার্যক্ষম, সুতরাং প্রকৃতি তাদের জন্য নির্বাচন করবে। একইভাবে, যসব প্রোটিনের জন্য Flagellum এর উদ্ভব হয়, তারা কোষের অন্যান্য কাজগুলো করে, এমনকি আমরা এমন এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া খুঁজে পেয়েছি যা প্রতি ধাপকে কোষের জন্য কার্যক্ষম করে Flagellum এ রূপান্তরিত করবে, যদিও চূড়ান্ত ধাপই হবে একটি পরিপূর্ণ Flagellum। সুতরাং এটি সত্য নয় যে কিছু সিস্টেম বিবর্তনের জন্য খুব বেশিই জটিল।

ধারণা ৯: বিবর্তন মহাবিশ্বের প্রথম কোষের নির্মাণ বর্ণনা করে

আমরা প্রায়ই মানুষকে বলতে শুনি যে, “বিবর্তনবাদ সত্য নয় কারণ……ব্লা…ব্লা…ব্লা… বিগ ব্যাং,” অথবা কেন আমরা এখনো প্রথম কোষের নির্মাণ কিভাবে হয়েছিল তা বের করতে পারিনি, এমন আজবাজে কথা। এসব বিতর্কের সাথে বিবর্তনবাদের কোন সম্পর্কই নেই। বিগ ব্যাং তত্ত্ব মহাবিশ্বের আবির্ভাব নিয়ে এবং Abiogenesis জীবনের নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করে। বিবর্তন মঞ্চে আসে মূলত জীবনের উৎপত্তির পর। সুতরাং, যদি আপনি কোনভাবে বিগ ব্যাং বা Abiogenesis কে ভুল প্রমাণ করেও ফেলেন, আপনার পক্ষে এরপরও সম্ভব হবে না বিবর্তনকে ভুল প্রমান করা। প্রকৃতপক্ষে, কিছু মানুষ ভাবে প্রথম কোষটি ঈশ্বরের সৃষ্টি, তারা বিবর্তনবাদকেও তার জায়গা ছেড়ে দেয়। অন্য কথায়, তারা Abiogenesis কে না মানলেও বিবর্তনকে মেনে নিয়েছে (যদিও বিগ ব্যাং এবং Abiogenesis কে অস্বীকার করার মত কোন শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক কারণ নেই।)

ধারণা ১০: বিবর্তনের ভিত্তি হল বিশ্বাস

যারা এটা দাবি করেন তাদের কাছে আমি জানতে চাইব যে ঠিক কোন অংশটি আপনি মনে করেন স্রেফ বিশ্বাসভিত্তিক? ৫ম পয়েন্টে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, আমরা মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের বিবর্তন নিজের চোখে দেখিনি বলে বিবর্তনকে অবৈজ্ঞানিক বলে আখ্যা দেয়া যায় না। বরং বিবর্তন হচ্ছে বিজ্ঞানের সর্বাধিক স্বীকৃত ধারণাগুলোর একটি, এবং যদি আপনি আসলেই ‘Origin of the Species’ পড়ে থাকেন তো দেখবেন, এটি প্রমাণে পরিপূর্ণ। এছাড়াও, ডারউইন ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী বিজ্ঞানী এবং তিনি পরিষ্কার ভবিষ্যদ্বানী করে গেছেন যে তাঁর থিওরি সঠিক হলে পরবর্তীতে রিসার্চাররা কী কী ফলাফল পেতে পারেন। যেমন, তিনি স্পষ্টভাবে ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন আমাদের মধ্যবর্তী ফসিল আবিষ্কারের কথা, এবং আমরা করেছি। কিছু জীব আছে, যাদের অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাওয়ার কয়েক যুগ আগেই বিবর্তন এদের ধারণা দিয়েছিল। এটি নিঃসন্দেহে এক অনন্য কৃতিত্ব। একইভাবে, বিবর্তন জেনেটিকস এবং ফসিল রেকর্ডের মধ্যেকার শক্তিশালী সম্পর্কের ধারণা করেছিল, এবং আবারো, এর ধারণা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং আপনি যদি দাবি করেন বিবর্তন স্রেফ বিশ্বাসভিত্তিক, আপনার কাছে আমি জানতে চাইব যে ঠিক কোন অংশটি আপনি মনে করেন শুধুমাত্র বিশ্বাসভিত্তিক, কারণ এর কোন দিক নেই যা আমি গবেষণামূলক তথ্য দিয়ে ভুল প্রমাণ করতে পারেন।

বিবর্তনের বিপক্ষে লেখাটি ডঃ প্রশান্ত মন্ডলের


স্যার রিচার্ড ওয়েন (২০শে জুলাই ১৮০৪ - ১৮ই ডিসেম্বর ১৮৯২) ছিলেন একজন ইংরেজ জীববৈজ্ঞানিকতুলনামূলক শারীরস্থান বিশেষজ্ঞ এবং পুরাজীববিদ। বেশ কিছু বিতর্কে জড়িত থাকা সত্ত্বেও ওয়েনকে বিশেষত জীবাশ্মের বিশ্লেষণে অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন একজন প্রকৃতি-বৈজ্ঞানিক হিসেবে মানা হয়। 

চার্লস ডারউইন-এর প্রাকৃতিক নির্বাচন মারফত বিবর্তনের তত্ত্বের প্রবল ও প্রকাশ্য বিরোধিতার জন্যেও তাকে মনে রাখা হয়। তিনি ডারউইনের সাথে একমত ছিলেন যে বিবর্তনের প্রক্রিয়াটি বাস্তব, কিন্তু মনে করতেন ডারউইনের অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস বইতে বর্ণিত পদ্ধতির চেয়ে আসল বিবর্তন অনেক বেশি জটিল।(Cosans (2009) pp. 97–103প্রাথমিকভাবে ডারউইনের সঙ্গে তার ভাল সম্পর্ক থাকলেও ডারউইনের অরিজিন অফ স্পিসিস বইয়ের কঠোর সমালোচক ছিলেন ওয়েন; বইটিতে ওয়েন ও চেম্বার্স সমেত অন্যান্য পূর্ববর্তী গবেষকদের প্রাণ সংক্রান্ত কাজকর্মের কথা উল্লেখ করা হয়নি বলে। এখানে উল্লেখ্য যে ওয়েন প্রমুখ গবেষকেরা বিবর্তনকে বাইবেলে বর্ণিত অবৈজ্ঞানিক সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে তুলনা করেছিলেন।

বিবর্তনীয় উন্নয়নমূলক জীববিজ্ঞান-এর সাম্প্রতিক উত্থানের পিছনে যে নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রভাব আছে, ওয়েনকে তার জনক বলা যায়। ডারউইন এবং ওয়েন উভয়ের কাছেই তুলনামূলক শারীরস্থানের এই সামঞ্জস্য বিবর্তনীয় উত্তরাধিকারের প্রমাণ রূপে প্রতিভাত হয়।

অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস-এ ডারউইনের তত্ত্ব প্রকাশিত হওয়ার পর বইটির লেখক ওয়েনের কাছে একটি নোট পাঠান যেখানে এই তত্ত্ব সম্বন্ধে লেখা ছিল "ব্যাপারটাকে ঘৃণ্য মনে হতে পারে"। ওয়েন দ্রুত সাড়া দিয়ে যথাযথ ভদ্রতা সহকারে লেখেন যে তিনি দীর্ঘকাল যাবৎ বিশ্বাস করেন "উপস্থিত প্রভাবক" সমূহের দ্বারাই প্রজাতির "পরিকল্পিত" অস্তিত্ব সম্ভব হয়েছে। এরপর ডারউইন ওয়েনের সাথে দীর্ঘ কথোপকথনে অংশগ্রহণ করেন এবং ওয়েন জানান যে ডারউইনের বইতেই "প্রজাতির উৎপত্তির প্রক্রিয়া সম্বন্ধে আজ অবধি প্রকাশিত" সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, যদিও তার মনে এই সংশয় তখনও ছিল যে পরা-পরিব্যক্তির তত্ত্ব মানুষকে পাশবিক বলে চিহ্নিত করবে। সম্ভবত ডারউইন ওয়েনকে আশ্বস্ত করেছিলেন এই বলে যে তিনি গোটা ব্যাপারটাকে পূর্বনির্ধারিত কোনো 'নকশার' ফল হিসেবে দেখছেন। ওয়েন এই কথাকে "সৃষ্টিকারী শক্তি"র প্রতি তাঁদের দু'জনের সাধারণ বিশ্বাসের সূচক হিসেবে অনুবাদ করেন।

ব্রিটিশ মিউজিয়ামের প্রাকৃতিক ইতিহাসের সংগ্রহের প্রধান থাকার সময় ওয়েন অরিজিন- এর উপর অজস্র প্রশ্ন ও অভিযোগমূলক চিঠি পান। এই সময় ঐ ব্যাপারে তাঁর ব্যক্তিগত মতামত সম্পর্কে যদিও কিছু জানা যায় না। সংসদীয় একটি কমিটির সামনে প্রাকৃতিক ইতিহাসের আলাদা জাদুঘরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বক্তব্য রাখার সময় তিনি খেয়াল করিয়ে দেন: "গোটা বুদ্ধিজীবী মহল এই বছর প্রজাতির উৎপত্তি সম্পর্কিত একটা বই নিয়ে আলোড়িত হয়ে আছে; আর তার ফলে কী হচ্ছে? দর্শকেরা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে আসেন আর বলেন, 'আমাদের এইসব পায়রাগুলো দেখান। টাম্বলার কোথায়? পাউটার কোথায়?' আর আমি লজ্জা সত্ত্বেও বলতে বাধ্য হই, আমি আপনাদের ওগুলোর কোনোটাই দেখাতে পারব না।"... "আপনাদের ওইসব প্রজাতির নমুনা দেখানোর ক্ষেত্রে, বা এমন কোনোরকম সাহায্যের ক্ষেত্রে যা সমস্ত রহস্যের গূঢ়তম রহস্য তথা প্রজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারবে — এরকম স্থান বা পরিকাঠামো আমাদের নেই; কিন্তু অবশ্যই এরকম জায়গার প্রয়োজন আছে, আর ব্রিটিশ মিউজিয়াম ছাড়া আর কোথায়ই বা তেমন উপযুক্ত স্থান পাওয়া যাবে?"

অবশ্য হাক্সলির আক্রমণাত্মক মনোভাবের ফলও ফলতে শুরু করেছিল। ১৮৬০ খ্রিঃ এপ্রিল মাসে এডিনবরা রিভিউ পত্রিকায় অরিজিন বইটির উপর ওয়েনের লেখা কিন্তু লেখক-পরিচয়বিহীন একটি রিভিউ প্রকাশিত হয়। এখানে ওয়েন ক্রুদ্ধভাবে বইটির বিরুদ্ধে সৃষ্টিতত্ত্বের অবমাননার অভিযোগ আনেন; সেইসঙ্গে ডারউইন যে ওয়েনের "সজীব উপাদানের পূর্বনির্ধারিত ক্রমপরিণতির নিরন্তর প্রক্রিয়াকে" পুরোপুরি অবজ্ঞা করেছেন সেই কারণেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া ডারউইনের "শিষ্য" হুকার ও হাক্সলিকেও একহাত নিয়ে বলেন তাদের কার্যকলাপ তাদের "অদূরদর্শী আনুগত্যের" পরিচায়ক, এবং আলোচনাধীন বইটি "বিজ্ঞানের সেই রকম অপব্যবহারের দ্যোতক ... যার কবলে পড়ে একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র আজ থেকে প্রায় সত্তর বছর আগে সাময়িকভাবে তাদের মর্যাদা জলাঞ্জলি দিয়েছিল"। এখানে ওয়েন ফরাসি বিপ্লবের প্রসঙ্গ এনেছেন। ডারউইনের কাছে এই রিভিউ "হিংসুক, চূড়ান্ত অসূয়াপ্রসূত, ধূর্ত, এবং ... ক্ষতিকারক" রূপে প্রতিভাত হয় এবং পরবর্তীকালে তিনি বলেন, "লন্ডনবাসীরা বলে যে আমার বই নিয়ে লোকে আলোচনা করে বলে ও (ওয়েন) নাকি হিংসায় পাগল হয়ে গেছে। ওয়েন আমায় যেরকম প্রবলভাবে ঘৃণা করে তেমনভাবে কারো দ্বারা ঘৃণিত হওয়া পীড়াদায়ক"।

ডারউইনের তত্ত্বের প্রতিক্রিয়ার সময় হাক্সলি ও ওয়েনের বাগ্‌যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। ওয়েন হাক্সলির বদনাম করার চেষ্টা করেন তাকে "পরিবর্তিত নরবানর থেকে মানুষের উদ্ভবের তত্ত্বের সমর্থক" হিসেবে চিহ্নিত করে। এথিনিয়াম-এ হাক্সলির একটি রচনার শিরোনাম ছিল 'এপ অরিজিন অফ ম্যান অ্যাজ টেস্টেড বাই দ্য ব্রেইন' (মস্তিষ্কের দ্বারা পরীক্ষিত মানুষের বাঁদর-উৎস)। ১৮৬২ খ্রিঃ (আর অন্যান্য সময়ে) হাক্সলি নরবানরের মস্তিষ্কের ব্যবচ্ছেদ এবং প্রদর্শনের একাধিক ব্যবস্থা করেন (যেমন বিএ মিটিং-এ অনুষ্ঠিত একটি কর্মশালা যেখানে উইলিয়াম হেনরি ফ্লাওয়ার ব্যবচ্ছেদের কাজটি করেছিলেন)। তথাকথিত 'অনুপস্থিত অঙ্গ' সমূহের উপস্থিতির চাক্ষুষ প্রমাণ (হিপোক্যাম্পাস মাইনর ইত্যাদি) কার্যত ওয়েনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ আনার কাজে ব্যবহৃত হয়। ওয়েন বলেছিলেন যে নরবানরদের মস্তিষ্কে উক্ত গঠনগুলোর অনুপস্থিতিই মানুষের সাথে তাদের পার্থক্যের প্রধান কারণ। হাক্সলির ব্যবচ্ছেদের পরেও তিনি শুধু স্বীকার করেন যে গঠনগুলো যদিও অপরিণত বা অনুন্নত রূপে নরবানরদের মস্তিষ্কে থাকতে পারে, তাও মানুষ ও নরবানরের পার্থক্যের প্রধান নির্ণায়ক মস্তিষ্কেরই আয়তন। হাক্সলি দুই বছর ধরে প্রচারকার্য চালান এবং ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন। প্রতিটা কর্মশালার পর আরও বেশি সংখ্যক বিজ্ঞানী ডারউইনের তত্ত্বের সমর্থনে এগিয়ে আসতে থাকেন এবং সাধারণভাবে বিজ্ঞান জগৎ ঐ তত্ত্বের সমর্থক হয়ে ওঠে। ওয়েন বলেছিলেন মানুষ বড় মস্তিষ্কের কারণে নরবানরদের থেকে আলাদা, কিন্তু হাক্সলি বলেন মানুষের নিজেদের জাতিগত বৈচিত্র্যের তুলনায় ঐ পার্থক্য নগন্য। ওয়েনের সমালোচনামূলক একটি গবেষণাপত্রে হাক্সলি সরাসরি লেখেন, "আমরা যদি ক অর্থাৎ ইউরোপীয় মগজ, খ অর্থাৎ বসজেসম্যান মগজ এবং গ অর্থাৎ ওরাং-ওটান মগজ পাশাপাশি সাজিয়ে রাখি, তাহলে ক আর খ এর মধ্যে যতটা পার্থক্য আজ অবধি বোঝা গেছে, খ আর গ এর মধ্যেও ঠিক সেরকম"। ওয়েন এর উত্তর হিসেবে বলেন যে প্রকৃতপক্ষে মানুষের বিভিন্ন জাতির মস্তিষ্ক একই রকম আয়তন ও ক্ষমতাবান, আর মানুষের মস্তিষ্ক যে গোরিলা প্রভৃতি অন্যান্য নরবানরের মস্তিষ্কের দ্বিগুণ বড় - গোরিলার দেহ মানুষের চেয়ে অনেক বড় হওয়া সত্ত্বেও - এই ব্যাপারটাই মানুষকে আলাদা করতে সক্ষম। ১৮৬১ খ্রিঃ হাক্সলি জুলজিকাল সোসাইটি কাউন্সিলে যোগদান করলে ওয়েন সংস্থাটি থেকে বেরিয়ে যান, আর পরের বছর হাক্সলি ওয়েনের বিরুদ্ধে "ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচারের" অভিযোগ এনে তার রয়াল সোসাইটিতে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা শেষ করেন।

১৮৬৩ খ্রিঃ ওয়েন ব্রিটিশ মিউজিয়ামের আর্কিওপ্টেরিক্স জীবাশ্মটি কেনেন। এই জীবাশ্মটি ডারউইনের ভবিষ্যদ্বাণী সফল করে প্রমাণ করে যে ডানায় অব্যবহারযোগ্য আঙুলবিশিষ্ট আদিম পাখির খোঁজ একদিন পাওয়া যাবে। যদিও ওয়েন নিজে এটিকে স্রেফ পাখি বলেই ঘোষণা করেছিলেন।

ওয়েন ও ডারউইনের সমর্থকদের বিবাদ চলতেই থাকে। ১৮৭১ খ্রিঃ ওয়েন কিউ-তে অবস্থিত জোসেফ ডালটন হুকার-এর উদ্ভিদবিদ্যা-সংগ্রহশালাটির সরকারি সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিতে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ওয়েন সম্ভবত প্রতিষ্ঠানটিকে তার ব্রিটিশ মিউজিয়ামের আওতায় আনার চেষ্টা করছিলেন। ডারউইন এর পর মন্তব্য করেন, "আমি ওয়েনকে ঘৃণা করি বলে লজ্জা পেতাম, কিন্তু এবার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই ঘৃণা আমি যত্ন করে পালন করব"।




No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

জাতিবাদ ও ভগবান মনু

  সম্পাদকীয় বর্তমান সময়ে দেশ অনেক গম্ভীর সমস্যায় গ্রস্ত আছে, তারমধ্যে একটা হল - জাতিবাদ। এই জাতিবাদের কারণে আমাদের দেশের অনেক বড় হানি হ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ