স্বামী বিবেকানন্দ ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ – ৪ জুলাই ১৯০২ নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একজন দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য। ভারতে হিন্দু পুনর্জাগরণের তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতে তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাটি প্রবর্তন করেন। বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। স্বামী বিবেকানন্দ উত্তর কলকাতার এক কায়স্থ দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই দত্ত-পরিবারের আদি নিবাস ছিল অধুনা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমার অন্তর্গত দত্ত-ডেরিয়াটোনা বা দত্ত-ডেরেটোনা গ্রাম। মুঘল শাসনকাল থেকেই দত্তরা উক্ত গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। গবেষকরা অনুমান করেন যে তারাই ছিলেন ওই গ্রামের জমিদার। অষ্টাদশ শতাব্দীতে দত্ত-পরিবারের সদস্য রামনিধি দত্ত তার পুত্র রামজীবন দত্ত ও পৌত্র রামসুন্দর দত্তকে নিয়ে গড়-গোবিন্দপুর গ্রামে (অধুনা কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম ও ময়দান অঞ্চল) চলে আসেন। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণের কাজ শুরু হলে উক্ত এলাকার অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গে দত্তরাও সুতানুটি গ্রামে (অধুনা উত্তর কলকাতা) চলে আসেন। এখানে প্রথমে তারা মধু রায়ের গলিতে একটি বাড়িতে বাস করতেন। ৩ নম্বর গৌরমোহন মুখোপাধ্যায় স্ট্রিটের যে বাড়িতে বিবেকানন্দ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই বাড়িটি নির্মাণ করেন রামসুন্দর দত্তের জ্যেষ্ঠ পুত্র রামমোহন দত্ত। রামমোহন দত্তের জ্যেষ্ঠ পুত্র দুর্গাপ্রসাদ দত্ত ছিলেন বিবেকানন্দের পিতামহ।তিনি সংস্কৃত ও ফারসি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। ২৫ বছর বয়সে একমাত্র পুত্র বিশ্বনাথ দত্তের জন্মের পর তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করে গৃহত্যাগ করেন। বিশ্বনাথ দত্ত দুর্গাপ্রসাদের কনিষ্ঠ ভ্রাতা কালীপ্রসাদ কর্তৃক প্রতিপালিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাটর্নি। বিশ্বনাথ দত্ত বাংলা, ফারসি, আরবি, উর্দু, হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষা শিখেছিলেন। সাহিত্য, ইতিহাস ও ধর্মগ্রন্থ পাঠে তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। ধর্ম বিষয়ে তিনি উদার ছিলেন। বাইবেল ও দেওয়ান-ই-হাফিজ ছিল তার প্রিয় বই। তিনি সুলোচনা (১৮৮০) ও শিষ্টাচার-পদ্ধতি (বাংলা ও হিন্দি ভাষায়, ১৮৮২) নামে দুইটি বই রচনা করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ প্রথা প্রবর্তনের সমর্থনে তিনি প্রকাশ্যে মতপ্রকাশ করেছিলেন। দুর্গাপ্রসাদের সংসারত্যাগের পর কালীপ্রসাদের অমিতব্যয়িতায় দত্ত-পরিবারের আর্থিক সাচ্ছল্য নষ্ট হয়েছিল। কিন্তু অ্যাটর্নিরূপে বিশ্বনাথ দত্তের সুদূর-প্রসারিত খ্যাতি সেই সাচ্ছল্য কিয়দংশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। তার স্ত্রী ভুবনেশ্বরী দেবী ছিলেন সিমলার নন্দলাল বসুর মেয়ে। তিনি বিশেষ ভক্তিমতী নারী ছিলেন। তার প্রথম কয়েকটি সন্তানের মৃত্যু ও কন্যাসন্তানের জন্মের পর পুত্রসন্তান কামনায় তিনি তার এক কাশীবাসিনী আত্মীয়াকে দিয়ে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরে নিত্য পূজা দেওয়ার ব্যবস্থা করান। এরপরই স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম হওয়ায় তার বিশ্বাস হয় যে, তিনি শিবের কৃপায় পুত্রলাভ করেছেন। পিতার প্রগতিশীল ও যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও মায়ের ধর্মপ্রাণতা বিবেকানন্দের চিন্তা ও ব্যক্তিত্ব গঠনে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল।
স্বামী বিবেকানন্দ স্বয়ং মূর্তি ভাঙ্গার কথা বলেন!!!
প্রমাণঃ
"যিনি তোমার অন্তরে ও বাহিরে, যিনি সব হাত দিয়ে কাজ করেন ও সব পায়ে চলেন, তুমি যাঁর একাঙ্গ, তাঁরই উপাসনা কর এবং অন্য সব প্রতিমা ভেঙে ফেল"
"যিনি উচ্চ ও নীচ, সাধু ও পাপী, দেব ও কীট সর্বরূপী, সেই প্রত্যক্ষ জ্ঞেয় সত্য ও সর্বব্যাপীর উপাসনা কর এবং অন্য সব প্রতিমা ভেঙে ফেল"
"যাতে পূর্বজন্ম নাই, পরজন্ম নাই, বিনাশ নাই, গমনাগমন নাই, যাতে অবস্থিত থেকে আমরা সর্বদা অখন্ডত্ব লাভ করছি এবং ভবিষ্যতেও করব তাঁরই উপাসনা কর এবং অন্য সব প্রতিমা ভেঙে ফেল।"
"হে মূর্খগণ, যে-সকল জীবন্ত নারায়ণে ও তাঁর অনন্ত প্রতিবিম্বে জগৎ পরিব্যাপ্ত, তাঁকে ছেড়ে তোমরা কাল্পনিক ছায়ার পিছনে ছুটেছ।তাঁর---- সেই প্রত্যক্ষ দেবতারই---- উপাসনা কর এবং আর সব প্রতিমা ভেঙে ফেল।"
গ্ৰন্থসূত্রঃ
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা_সপ্তম খন্ড_পত্রাবলী_পত্র সংখ্যা 351
মিস মেরী হেলকে লিখিত (সাল 1897)
প্রকাশক_উদ্বোধন কার্যালয়
বিবেকানন্দের কিছু জীর্ণ বাণীঃ
জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।
খালি পেটে ধর্ম হয় না, ক্ষুধার্ত জনগণকে ধর্ম উপদেশ দেয়া অবমাননাকর।
হে ভারত ভুলিও না মেথর, মুচি চণ্ডাল তোমার ভাই…
ব্রিটিশ সভ্যতা তিনটি ব এর সমষ্টি – বাইবেল, বেয়নেট ও ব্র্যাণ্ডি।
আমি সন্ন্যাসী, তাই জগতে নিজেকে প্রভু নয়, দাস বলেই মনে করি।
ইত্যাদি।
কিন্তু বিবেকানন্দ রচনাবলী (বিবেকানন্দ রচনা সমগ্র, অখণ্ড বাংলা সংস্করণ, প্রকাশক নবপত্র, পৃঃ২৬৪ ) থেকে উদ্ধৃত করে প্রবীর ঘোষ দিয়েছেন বিবেকানন্দের অবৈজ্ঞানিক এবং উদ্ভট চিন্তার উদাহরণ – অন্ধকার ঘরে ইস্পাতের পাতের উপর শক্তি প্রয়োগ করলে নাকি পাতটা চৈতন্য বা মনে রূপান্তরিত হয়ে যায়। প্রবীর ঘোষ লিখেছেন –
“একটি ইস্পাতের পাত গড়ে, তাকে কম্পিত করতে পারে এ রকম একটা শক্তি এতে প্রয়োগ কর। তারপর কি ঘটবে? যদি একটি অন্ধকার ঘরে এই পরীক্ষাটি করা হয়, তবে তুমি প্রথমে শুনতে পাবে একটি শব্দ – একটি গুন গুন শব্দ। শক্তিপ্রবাহ বর্ধিত কর, দেখবে ইস্পাতের পাতটি আলোকময় হয়ে উঠছে। শক্তি আরো বাড়িয়ে দাও, ইস্পাতটি একেবারে অদৃশ্য হয়ে যাবে। ইস্পাতটি মনে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।”
(প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয়, লৌকিক, দে’জ পাবলিশিং, একাদশ মূদ্রণ, ১৯৯৮, পৃঃ ২১৭।)
কি, এই কথাগুলো মেনে নিতে পারছেন না? একটা ইস্পাতের পাত নিয়ে পরীক্ষা শুরু করলেই তো পারেন। মনে রূপান্তরিত হয়েছে কিনা কি করে বুঝবেন? কেন ই.সি.জি মেশিনের সাহায্যে।
পরীক্ষায় ইস্পাতের পাতটি আলোকময় হচ্ছে না? অদৃশ্য হচ্ছে না? উল্টো-পাল্টা বিজ্ঞানবিরোধী আষাঢ়ে গল্প ফেঁদেছি বলছেন? আমাকে এর জন্য ধিক্কার দেবেন নাকি? একটু থামুন। শুনুন, এমন একটা তথ্যের বা তত্ত্বের জন্য প্রশংসা বা নিন্দা কোন কিছুই আমার প্রাপ্য নয়, প্রাপ্য বিবেকানন্দের। বিবেকানন্দ রচনাসমগ্রের উল্লেখিত বইটির ২৬৪ পৃষ্ঠায় বিবেকানন্দের বক্তব্য হিসেবেই এমন উদ্ভট কথা লেখা হয়েছে।
বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পরে ১৮৮৬ সালে প্রথম শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ‘বরাহনগর মঠে’র প্রতিষ্ঠার পরে সেখানে মহা উৎসাহে পশুবলি পবর্তন করেছিলেন। অধিকাংশ গুরুভাইদের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি সর্বদাই দেবী পূজায় পশুবলির ব্যবস্থা রাখতেন। এমনকি বেলুড়মঠের দুর্গাপূজাতেও তিনি পাঁঠাবলি দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার গুরু রামকৃষ্ণের স্ত্রী সারদা দেবী আপত্তি করলে তিনি তা করতে পারেননি। কিন্তু বেলুড় মঠে করতে না পারলেও কালিঘাট থেকে বলি দিয়ে পাঁঠা নিয়ে এসে ভোজনের আয়োজন করতেন। পরবর্তী জীবনে আমরা আরো দেখি তার আইরিশ শিষ্যা নিবেদিতাকে দিয়ে বিভিন্ন জনসভায় পশুবলির সমর্থনে বক্তৃতার ব্যবস্থা করেছিলেন। বিবেকানন্দের জীবপ্রেমের কি অত্যাশ্চর্য নমুনা!
স্বামী বিবেকানন্দের এক শিষ্য তাকে জিজ্ঞাসা করলেন 'মাছ মাংস খাওয়া উচিত ও আবশ্যক কি ?' উত্তরে তিনি বললেন 'খুব খাবি বাবা, তাতে যা পাপ হবে তা আমার'।
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা খণ্ড-৯
স্বামী শিষ্য সংবাদ -২৬ বেলুড় মঠ ১৮৯৮ সাল।
স্বামীজীকে তার এক শিষ্য মাংস খাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, উত্তরে তিনি বলেন
'খুব খাবি বাবা, তাতে যা পাপ হবে তা আমার'। স্বামীজী মানতেন যে মাংস খেলে পাপ হয় তবুও তিনি এমন মাংস খাওয়ার উপদেশ দিতেন। স্বামীজী এখানে বলেছেন যে 'তাতে যা পাপ হবে তা আমার'। আচ্ছা বলুন তো এক জনের পাপ কি ভিন্ন একজন গ্রহণ করে নিতে পারে ? স্বামীজী মাংস খাওয়ার উপদেশ দিয়েছেন এবং তার শিষ্য যদি মাংস খায় তাহলে পাপ দুই জনেরই হবে। উদাহরণঃ- যে ব্যক্তি চুরি করে এবং যে চুরি করার কৌশল জানিয়ে দেয় তারা উভয়ই পাপী। বলছি, স্বামীজী কোন অশাস্ত্র পড়ে জানতে পেরেছিলেন যে অন্যের পাপও গ্রহণ করা যায় ? আমি স্বামীজীর যতই বাণী পড়ি ততই অবাক হই!
মাংস খাওয়ার অধিকার তাদেরই আছে যারা খুবই কঠিন পরিশ্রম করে আর ভক্ত হতে চায় না। কিন্তু আপনি যদি ভক্ত হতে চান তাহলে মাংস ত্যাগ করতে হবে।
প্রেম যোগ, প্রথম অধ্যায় -হিন্দি। ইংরেজি গ্রন্থ- religion of love।
একজন বেদান্তবাদী সন্ন্যাসী হিসেবে সমগ্র জীবজগতকে ভালবাসার উপদেশের সাথে পশুবলি একেবারে অসঙ্গতিহীন, তা বোধ হয় না বলে দিলেও চলবে। শুধু তাই নয়, বিবেকানন্দ বললেন –
আরে একটা পাঁঠা কী, যদি মানুষ বলি দিলে যদি ভগবান পাওয়া যায়, তাই করতে আমি রাজি আছি।
অর্থাৎ কল্পিত ভগবানকে পাওয়ার জন্য দরকার হলে মানুষকে পর্যন্ত বিবেকানন্দ বলি দেবেন! এই না হলে ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর’।
তথ্যসূত্রঃ
[১] নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন
[২] মহেন্দ্রনাথ দত্ত, শ্রীমৎ বিবেকানন্দ স্বামীজির ঘটনাবলী, প্রথম খন্ড, পৃঃ ৯৬।
আমেরিকায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে স্বামীজী বলে দিলেন—“হিন্দুরা পশু বধের বিরোধী।” (পাশ্চাত্যে স্বামী বিবেকানন্দ—মেরি লুই বার্ক, প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১৮২)। বিদেশ থেকে কোন লোক কোন কালে ভারতবর্ষে কী আসেনি? রোজকার খাদ্যের চাহিদা যোগাতেই অজস্র প্রাণী প্রতিদিন নিহত হচ্ছে। এছাড়াও আছে পূজো পার্বণে অগুনতি পাঁঠা মহিষের মুণ্ডচ্ছেদ। হিন্দুরা অবলা প্রাণীর মুণ্ডপাত করতে চায় না বললে কি সবাই মানবে! 'একবার তিনি তাদের (বিদেশি শিষ্যদের) টের সুপ্রাচীন কালী মন্দিরে নিয়ে গেলে দেবীর সামনে ছাগবলির রক্ত দেখে একজন রীতিমত শিউরে উঠে বললেন, “একি! দেবীর সামনে এত রক্ত কেন?" বিবেকানন্দ উত্তর দিলেন, “ছবিটি পূর্ণাঙ্গ করতে একটু রক্ত থাকলই বা ক্ষতি কী”।' এই বলছেন হিন্দুরা রক্তপাত বিরোধী, পরমুহূর্তেই বলছেন রক্তপাত না থাকলে পুজো ইনকমপ্লিট।
বলি প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত বেশ সুন্দর কিছু বক্তব্য রেখে গেছেন। একবার ভক্তদের মধ্যে বলি নিয়ে আলোচনা চলছে। ‘শ্রীম (ভক্তদের প্রতি) — “যদি বল কেন এসব কাটাকুটি হচ্ছে? কেন তিনি এসব করছেন? তার উত্তর, কি করবে এই পশুর জীবন দিয়ে? তার দিকে মন নাই, তাহলে এ জীবনে কি লাভ? তাই বলির ব্যবস্থা। এই কথাই মনে হচ্ছে। আবার মানুষের মধ্যেও যারা পশুভাবাপন্ন, তাদেরও বলি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল পূর্বে। মানে এই, কি করবে এই শরীর দিয়ে তার দিকে যদি মন না রইল”।' (শ্রীম দর্শন, নবম ভাগ, প্রথম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৮৯)। স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ তার “প্রিয় শ্রীরায়’-এর চিঠির উত্তরে জানাচ্ছেন—'নরবলির অর্থ নিজের ক্ষুদ্র আমিত্বকে বলি দেওয়া। এই ক্ষুদ্র আমিত্ব নিজেকে দুর্বল ও পাপী মনে করে। পশু বলির অর্থও একই প্রকার। যে তা করতে পারে সেই বীর।' অতএব, ওহে সুনীত দে, ঈশ্বরে মন নাই, এই বীর সেনানীর হাতে তোমারও বলি হবার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আমরা স্বামীজীকে এক রকম ভেবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। তা বলে সবাই যে সেই রকমই ভাবে তা কিন্তু মোটেও নয়। আমেরিকার লোকেরা স্বামীজীকে কি ভাবে, স্বয়ং স্বামীজীর বয়ানেই শুনে নিন—"আমেরিকায় আমাকে বলিত, আমি যেন পাঁচ সহস্র বৎসর পূর্বের কোন অতীত ও বিলুপ্ত গ্রহ হইতে আসিয়া বৈরাগ্য বিষয়ে উপদেশ দিতেছি। ইংলাণ্ডের দার্শনিকগণও হয়তো এইরূপই বলিবেন।" (স্বামীজীর বাণী ও রচনা, দ্বিতীয় খণ্ড, চতুর্থ সংস্করণ, পৃষ্ঠা-১৫)। শ্রীরামকৃষ্ণ সম্বন্ধে রমা রলাঁ-ও প্রায় একই মন্তব্য করে গেছেন। বলেছেন, 'রামকৃষ্ণের ভাব দেখে মনে হচ্ছে, তিনি যেন হাজার বছরের প্রাচীন কোন গীর্জায় বসে আছেন।
নারীদের অধিকার সচেতন’ বিবেকানন্দ যেমন বিধবা বিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে বলেছেন, একই ধারায় আবার বাল্যবিবাহ সমর্থন করে গেছেন অনেক সময়ই। যেমন, ইংরেজি রচনাবলীর দ্বিতীয় খণ্ডে আছে –
The Hindus, to keep up a high standard of chastity in the race, have sanctioned child-marriage, which in the long run has degraded the race. At the same time, I cannot deny that this child-marriage makes the race more chaste. (vol2, page 89)
বিবেকানন্দ বাল্যবিবাহের পক্ষে আরো অনেক মন্তব্যই করেছেন, যার একটি আমি পেয়েছিলাম রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্বোধন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ‘ভারতীয় নারী’ পুস্তিকায়। বিবেকানন্দ বলেছেন,
‘কখনো কখনো শিশু বয়সেই আমাদিগকে বিবাহ দেওয়া হয়, কেননা বর্ণের নির্দেশ। মতামতের অপেক্ষা না রাখিয়াই যদি বিবাহের ব্যবস্থা করিতে, তবে প্রণয়বৃত্তি জাগ্রত হওয়ার পূর্বে বাল্যকালে বিবাহ দেয়া ভাল। যদি অল্প বয়সে বিবাহ না দিয়া ছেলেমেয়েদের স্বাধীনভাবে বাড়িতে দেয়া হয়, তবে তাহার এমন কাহারো প্রতি আসক্ত হইতে পারে, যাহাদের সহিত বিবাহ বর্ণ অনুমোদন করিবেন না। সুতরাং তাহাতে অনর্থের সৃষ্টি হইতে পারে। সুতরাং বাল্যকালে বিবাহ হইলে, বালক-বালিকার ভালবাসা রূপ-গুণের উপর নির্ভর না করিয়া স্বাভাবিক হইবে’।
(ভারতীয় নারী, প্রকাশক উদ্বোধন কার্যালয়, পৃষ্ঠা ১৫)
বিবেকানন্দ বলেছেন, ভারতীয় নারীদের কাউকেই পুড়িয়ে মারা হয় না, তারা সবাই স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়েই যে স্বামীর চিতায় আত্মাহুতি দেন তার উল্লেখ আছে বিবেকানন্দের বাণী ও রচনাসমগ্রের নবম খণ্ডের ৬৬৮ পৃষ্ঠায়-
Widows are not burned on the funeral pyre of their husband unless it is a voluntary act of self-immolation (vol 9, page 668)
বিবেকানন্দ বলেছিলেন,
‘বিধবাগনের স্বামী সংখ্যার উপর কোন জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে না।’
উদ্ধৃতিটি আছে ইংরেজি রচনাবলীর পঞ্চম খণ্ডের ২৭৪ পৃষ্ঠায় –
I have yet to see a nation whose fate is determined by the number of husbands their widows get (vol 5, Page 274).
বিধবা বিবাহের বিরোধিতা করে আরো অনেক স্পষ্ট উক্তিই আছে বিবেকানন্দের রচনাবলীতে। যেমন,
The question of widow marriage would not touch seventy per cent of the Indian women (vol 3, P184)
অর্থাৎ,বিধবাবিবাহ আন্দোলনে শতকরা সত্তর জন ভারতীয় নারীর কোন স্বার্থই নাই’।
১৯০০ সালের ১৮ই জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ায় ভারতের নারীদের নিয়ে তিনি একটি বক্তৃতা দেন। সেখানে তিনি বলেন, যেহেতু পুরুষের চেয়ে নারীরা সংখ্যায় বেশি, সেহেতু বিধবাবিবাহ প্রবর্তিত হলে নাকি ‘কুমারী মেয়েদের স্বামী মিলবে না’।
আমার এই অংশটির প্রমাণ স্বরূপ উদ্ধৃত করছি ইংরেজি রচনাবলীর পঞ্চম খণ্ড থেকে –
Therefore has society put one party under disadvantage, i.e. it does not let her have a second husband, who has had one; if it did, one maid would have to go without a husband. On the other hand, widow-marriage obtains in communities having a greater number of men than women,…( vol 5, p 183)
স্বামীজির এই সারবত্তাহীন বক্তব্য অর্থহীন। সারা পৃথিবীতে নারী এবং পুরুষের অনুপাত হল ১ :১.০১ । পুরুষেরাই বরং সামান্য হলেও সংখ্যায় অধিক। এমনকি ভারতের ক্ষেত্রেও স্বামীজির বক্তব্য যে অসার তা দৈনিক আজকালে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন ভারতের মানবতাবাদী সমিতির সম্পাদিকা সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৪ সালের ৮ ই এপ্রিল (সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ নির্মোহ চিঠিকে এবং তার পরবর্তীতে হিন্দুত্ববাদী পাঠকদের জবাবকে কেন্দ্র করে দৈনিক আজকাল পত্রিকায় ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত তুমুল বিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছিলো, যেগুলো পরবর্তীতে সংকলিত হয়েছে রাজেশ দত্ত সম্পাদিত ‘রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ : মুক্ত মনের আলোয়’ শীর্ষক গ্রন্থে। উৎসাহী পাঠকেরা পড়ে দেখতে পারেন)-
‘১৯০১ সালের সেন্সাস অনুজায়ই ভারতীয় নারী-পুরুষের অনুপাত হল ৯৭২ : ১০০০। অর্থাৎ, প্রতি একহাজার জন পুরুষ পিছু ৯৭২ জন নারী। সুতরাং স্বামীজি তার স্বমত প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারী পরিসংখ্যানকে শুধু বিকৃত করেননি, বিদ্যাসাগরের মত একজন সমাজ সংস্কারকের জীবনের ‘সর্বপ্রধান সৎকর্ম’কেও অস্বীকার করেছেন’।
বাল্যবিবাহিত নারীদের নাজুক অবস্থা অস্বীকার করে স্বামীজি উলটো বলেছেন –
‘ভারতে সাধারণভাবে বিধবাদের বিস্তর প্রতিপত্তি, কারণ সে দেশে সম্পত্তির বড় অংশ বিধবাদের করায়ত্ত। বস্তুত, বিধবারা এমন একটা স্থান অধিকার করে আছে যে, মেয়েরা এবং হয়তো পুরুষেরাও পরজন্মে বিধবা হবার জন্য সম্ভবত প্রার্থনাও করে থাকে’।
ইংরেজি রচনাবলীর অষ্টম খন্ডে লাইনগুলো আছে এভাবে –
He denied that the condition of the child widows is as bad as has been represented, saying that in India the position of widows in general is one of a great deal of influence, because a large part of the property in the country is held by widows. In fact, so enviable is the position of widows that a woman or a man either might almost pray to be made a widow (Vol 8, page 170) .
বিধবাদের বিয়ে যে প্রত্যাশিত নয়’, সেটার প্রতিফলন আমরা ইংরেজি রচনাবলীর নবম খণ্ডের ৬৭৬ পৃষ্ঠাতেও দেখি-
A widow is not expected to ever marry again(vol 9, page 676)
এবারে দেখা যাক বিবেকানন্দ জাতিভেদ প্রথার সমর্থনে কি বলেছেন। এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে স্পষ্ট উক্তি পাওয়া যাবে ইংরেজি রচনাবলীর পঞ্চম খণ্ডের ৩৫০ পৃষ্ঠাতে –
It is owing to caste that three hundred millions of people can find a piece of bread to eat yet (vol 5, Page 350).
অর্থাৎ,জাতিভেদ আছে বলেই ত্রিশ কোটি মানুষ এখনো খাবার জন্য এক টুকরো রুটি পাচ্ছে।
নিরঞ্জন ধরের লেখা বইয়েও তার এই বক্তব্য পাওয়া যায়।
জাতিভেদ আছে বলিয়াই ত্রিশ কোটি লোক এখনও এক টুকরা রুটি পাইতেছে।“
তথ্যসূত্রঃ
নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন
জাতিপ্রথায় উচ্চতা অর্থ দ্বারা নিরূপিত হয় না’ কিংবা ‘জাতির মধ্যে প্রত্যেকেই সমান’ – জাতিভেদের সমর্থনে যে উক্তিগুলো ব্যবহৃত হয়েছে, সেই উক্তিগুলোর সমর্থনে বহু উদ্ধৃতিই ইংরেজি রচনাবলী থেকে হাজির করা যায়। যেমন, রচনাবলীর দ্বিতীয় খণ্ডে একনজর চোখ বুলিয়েই আমি পেলাম এই উক্তিগুলো –
Quality and birth make caste, not money (Vol 2, Page 397)
In caste the poorest is as good as the richest, and that is one of the most beautiful things about it (Vol 2, Page 397)
Jealousy, hatred and avariciousness are born of moneygetters.Here it is all work, hustle and bustle. Caste saves a man from all this. (Vol 2, Page 397)
Caste has kept us alive as a nation, and while it has many defects, it has many more advantages (Vol 2, page 398).
That money had nothing to do with social standing in the caste. All were equal. (Vol 2, p 424)
ব্রাহ্মন্যবাদের সমর্থনে বিবেকানন্দের পরিষ্কার উদ্ধৃতি আছে অনেকই। যেমন ইংরেজি রচনাবলীর পঞ্চম খণ্ডের ২৬৫ পৃষ্ঠায় আছে –
…the Brahmin being the ideal of humanity. (vol 5, P 265)
‘ভারতে ব্রাহ্মণই মনুষ্যত্বের চরম আদর্শ’।
শুদ্রদের নিয়ে তার সহানুভূতির খেলা যে কীরকম কৌশলী ছিলো তা বোঝা যায় ১৮৯৫ সালে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রদের সবাইকেই ‘খুশি করে চলার’ উপদেশ দিয়ে পত্রিকার সম্পাদককে বলেন –
‘গত সংখ্যায় ক্ষত্রিয়দের খুব বাড়ানো হয়েছে, পরের সংখ্যায় ব্রাহ্মণদের খুব প্রশংসা কর, তার পরের সংখ্যায় বৈশ্যদের।'
নিরঞ্জন ধর তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন –
স্বামীজি কেবল জাতিপ্রথাকে সমর্থন করেই ক্ষান্ত হননি, এমনকি নিম্নবর্ণের হিন্দুদের তিনি তাঁদের বর্তমান হীন সামাজিক অবস্থাকে মেনে নিতেও পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন, ইন্দুমতী নাম্মি এক পত্রলেখিকাকে তিনি জানাচ্ছেন, ‘ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় ‘দেব দেবী’ লিখিবে, বৈশ্য ও শূদ্রেরা ‘দাস’ ও দাসী’।
বিবেকানন্দ বলেছেন -
তুই বামুন, অপর জাতের অন্ন নাই খেলি। [স্বামী শিষ্য সংবাদ (শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী ), বেলুড় মঠ, ১৮৯৮]
বিবেকানন্দ আরও বলেছেন -
জ্ঞানোন্মেষ হলেও কুমোর কুমোরই থাকবে, জেলে জেলে, চাষা চাষা।“ [স্বামী শিষ্য সংবাদ, শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী (বেলুড় মঠ, ১৮৯৮)]
বিবেকানন্দ জাতিভেদ প্রথার অন্ধ সমর্থক ছিলেন।তিনি বলেছেন-
আমি সমাগত শ্রোতৃবর্গের নিকট খোলাখুলি বলিতে চাই যে, আমি একজন জাতিভেদলোপকারী বা সমাজ সংস্কারক মাত্র নহি। জাতিভেদ বা সমাজ সংস্কার সম্বন্ধে আমার কিছু করিবার নাই। [বেদান্তের উদ্দেশ্য- স্থানীয় হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা , কুম্ভকোনম, ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৭]
স্বামীজির অমিতব্যয়িতার দৃষ্টান্ত স্বরূপ আমি ব্যবহার করছি , আলাসিঙ্গা পেরুমলকে লেখা চিঠির খণ্ডিতাংশ , যেখানে তিনি আলাসিঙ্গাকে আদেশ করেছেন মাদ্রাজে তার জন্য একটি বাড়ি বানাতে । উক্তিটি পাওয়া যাবে ইংরেজি রচনাবলীর পঞ্চম খণ্ডের ৭৬ পৃষ্ঠায়-
Where shall I come to if you cannot make a home for me in Madras? ( vol 5, page 76)
অর্থাৎ, কিছু একটা করে দেখাও। মাদ্রাজে আমার জন্য একটা গৃহ নির্মাণ করতে না পার তো আমি থাকবো কোথায়?
উনি যে আমেরিকায় গিয়ে ১৩ ডলার দিয়ে একটা মীরশ্যাম পাইপ কিনেছিলেন, আর সেটা আবার ফাদারকে বলতে নিষেধ করেছিলেন সেটাও আছে ইংরেজি রচনাবলীর ৭ম খণ্ডের ২৬৩ পৃষ্ঠায়-
DEAR SISTER (Miss Isabelle McKindley.),…
Yesterday I bought a pipe for $13 — meerschaum do not tell it to father Pope. The coat will cost $30. I am all right getting food . . . and money enough. Hope very soon to put something in the bank after the coming lecture. (NEW YORK, 2nd [actually 1st]
May, 1894. (vol 7, Page 263)
স্বামী জীর মিথ্যা প্রচারঃ-
শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর গাজীপুরে পওহারী বাবার বাগানে স্বামীজীকে দেখা দিয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণ, প্রায় ২/৩ ঘন্টা স্বামীজী তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
স্বপ্নের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত অবস্থায় দেখা যেতেই পারে, এটা স্বাভাবিক বিষয় কিন্তু জাগ্রত অবস্থায় মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখা এইটা পুরোই অবৈজ্ঞানিক কথন। হিন্দু সমাজে শ্রীরামকৃষ্ণ কে অলৌকিক মহাপুরুষ বানানোর পেছনে স্বামী বিবেকানন্দের বলা এমন কাহিনী দারুণ ভূমিকা রেখেছে। স্বামীজীর বলা উক্ত কথনের কোনো ভিত্তি-যুক্তি নেই কিন্তু
এমনও হতে পারে যে সেই সময় স্বামীজী মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।সিজোফ্রেনিয়া বলে একটি মানসিক রোগ রয়েছে এই রোগে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিরা নানান প্রকার শব্দ, গন্ধ অনুভব করে, ফাঁকা জায়গাতেও অনেক কিছু দেখতে পায়।
[স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা খণ্ড-৯> স্বামী-শিষ্য-সংবাদ -৪০> বেলুড় মঠ, মার্চ মাস ১৯০১ সাল।]
রামকৃষ্ণের মৃত্যুর আগে স্বামীজীর শরীরে এক ধরণের সূক্ষ্ম তেজ ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। স্বামীজীর এই সমস্ত কথন কি কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি ১% বিশ্বাস করবে ? হিন্দু সমাজ কে নাস্তিকের পথে এগিয়ে দেওয়ার জন্য এই সমস্ত অলৌকিক মিথ্যা কাহিনীই যথেষ্ট।
[স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা খণ্ড-৯ > স্বামী-শিষ্য-সংবাদ- ৩৪> বেলুড় মঠ
কাল—মে (শেষ ভাগ), ১৯০১ সাল।]
বিবেকানন্দ সমালোচক যুক্তিবাদী নিরঞ্জন ধর ‘বিবেকানন্দ: অন্য চোখে (উৎস মানুষ সংকলন)' গ্রন্থে বিবেকানন্দের সন্ন্যাস গ্রহণ সম্বন্ধে মন্তব্য করেছেন- ‘বিবেকানন্দ স্বভাব সন্ন্যাসী ছিলেন না, ছিলেন অভাব সন্ন্যাসী’। কথাটা ঠিকই। এ নরেন্দ্রনাথকে বিবেকানন্দ বানিয়েছিলেন রাজস্থানের খেতরি মহারাজা অজিত সিংহ। সে সময়টা অখ্যাত এই নরেন্দ্রনাথ (বিবেকানন্দের আসল নাম) তখন পরিচিত ছিলেন ‘বিবিদিষানন্দ’ এবং ‘সচ্চিনানন্দ’ নামে। ১৮৯১ সালের জুন মাসে মাউন্ট আবুতে খেতরি রাজার সাথে আলাপ হয় এবং তিনি সেখানে ৬ মাস থেকে যান।। ইতিহাস থেকে জানা যায় মহারাজার সাথে বিবেকানন্দের এক ‘স্পেশাল’ সম্পর্ক গড়ে উঠে। ১৮৯৩ সালে শিকাগো যাত্রার আগে আবার তিনি সেখানে যান। মহারাজা তাকে ৩০০০ টাকা দেন যাত্রার খরচ বাবদ; শুধু তাই নয় যে পোশাক পরা বিবেকানন্দের ছবি দেখে আমরা অভ্যস্ত, সেই পোশাকও তাকে দিয়েছিলেন অজিত সিংহ, দেখিয়ে দেন কিভাবে এই পোশাক পরতে হয়। সেই সাথে তার নতুন নামকরণ করেন ‘বিবেকানন্দ’!
এই অজিত সিং এর সাথে স্বামীজির সম্পর্ক এতোটাই ‘স্পেশাল’ ছিলো যে, সেটাকে বিবেকানন্দ নিজের পরিবারের স্বার্থে কাজে লাগাতেও তিনি দ্বিধা করেননি। প্রথমবার আমেরিকা ভ্রমণের আগে তিনি মা এবং ভাইদের ভরণপোষণের জন্য তিনি মহারাজকে দিয়ে একশত টাকার এক মাসিক ভাতা মঞ্জুর করতে রাজি করেন। ১৮৯১ সাল থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত (অর্থাৎ যতদিন নরেন্দ্রনাথের মা ভুবনেশ্বরী দেবী বেঁচে ছিলেন) নিয়মিত এই টাকা দিয়ে এসেছেন অজিত সিংহ। শুধু তাই নয় ১৮৯৮ সালে আবার স্বামীজির অনুরোধে মহারাজ স্বামীজির ব্যক্তিগত খরচের জন্য তাঁকে আরো একশ টাকা ভাতা মঞ্জুর করেন।
তিনি বরাবরই এ ধরণের দেশীয় রাজা-মহারাজদের আথিত্য গ্রহণে অতিশয় ঔৎসুক্য দেখিয়েছেন। তিনি সুযোগ পেলেই রাজাদের রাজপ্রাসাদে বাস করতেন, রাজাদের সাথে খানাপিনা করতেন। বিদেশ থেকে ভারতবর্ষে ফিরে আসার পর বিবেকানন্দের সম্মাননার আয়োজন করেন রামনাদের রাজা, মহীশুরের মহারাজা এবং পোরবন্দরের দেওয়ান। ভারত ভ্রমণে বেড়িয়েও তিনি অধিকাংশ সময় রাজ রাজড়াদের বাসস্থানেই উঠতেন। এ প্রসঙ্গে নিরঞ্জন ধর লিখেছেন –
‘… উক্ত রাজ্যসমূহের প্রায় সর্বত্রই বিবেকানন্দ তাঁদের রাজা বা রাজ্যের দেওয়ানদের আতিথ্য নিতেন এবং সেই রাজ্য ছেড়ে যাবার সময় নৃপতি বা দেওয়ানদের আতিথ্য নিতেন এবং সেই রাজ্য ছেড়ে যাবার সময় নৃপতি বা দেওয়ানদের কাছ থেকে পরবর্তী উদ্দিষ্ট শাসক, দেওয়ান বা উচ্চ-কর্মচারীর নামে পরিচয়পত্র নিয়ে যাত্রা করতেন। সন্ন্যাস জীবনের যে সর্বজন স্বীকৃত আদর্শ, তার সঙ্গে রাজা-গজাদের আতিথ্যের জন্য এতোখানি লালায়িত হওয়ার সামঞ্জস্য পাওয়া দুষ্কর’।
রাজ রাজড়াদের সাথে ‘সন্ন্যাসী’ স্বামীজির অন্তরঙ্গতা স্বামীজীর জীবদ্দশাতেই গৃহী গুরুভাইদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। দেশের বিত্তশালী অংশের সাথে বিবেকানন্দের এতটা মাখামাখি রামকৃষ্ণভক্তরা সুনজরে দেখেনি। তারা মনে করেছিলেন যে, স্বামীজি রামকৃষ্ণের আদর্শ লঙ্ঘন করেছেন। ১৮৯৯ সালে সাধারণ সন্ন্যাসীদের বিদ্রোহের ব্যাপারটা এতো প্রকট আকার ধারণ করেছিল যে, তারা বেলুড় মঠের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে ‘গরীব রামকৃষ্ণ সভা’ নামে আলাদা সংস্থা সৃষ্টি করে ফেলতে শুরু করেছিলেন। এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন গিরীন্দ্র ও হারাধন। তবে শেষ পর্যন্ত নানামুখি মধ্যস্থতায় তাঁদের অসন্তোষ দূর করা হলেও এটি আমাদের কাছে বিবেকানন্দের ভোগবাদী চরিত্রের একটি দৃষ্টান্ত হয়েই রইবে।
পুরুষরা যে মদ খেয়ে মাতাল হয়, এরজন্য দায়ি কারা?!!
দেখুন এই বিষয়ে সর্বজ্ঞ যোগী, শিবের অবতার, বিবেকানন্দ কি বলছেন----
"আমার(বিবেকানন্দের) একটি নারীর কথা মনে পড়ছে। তার স্বামী ছিল ঘোর মাতাল।স্ত্রীলোকটি আমার কাছে তার স্বামীর অতিরিক্ত পান দোষ সম্বন্ধে অভিযোগ করত। আমার কিন্তু নিশ্চিত ধারণা---
অধিকাংশ লোক তাদের স্ত্রীদের দোষে মাতাল হয়ে থাকে।
তোষামোদ করা আমার কাজ নয় আমাকে সত্যি বলতে হবে।"
••গ্ৰন্থসূত্র_বিবেকানন্দ রচনা সমগ্ৰ_অখন্ড সংস্করণ_কর্মযোগ_পৃষ্ঠা_ 128
প্রকাশক_নবপত্র প্রকাশন
বিশ্লেষণ--- বিবাহিত পুরুষরা, নিজেদের স্ত্রীদের দোষে মদ খান, বিবেকানন্দের এই উক্তি, উনার নারী বিদ্বেষী মনোভাবের পরিচয় দেয়।
যাঁরা মদ খান,তাঁরা সুখে ও দুঃখে সমভাবে মদ খান।
প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে তাঁর নিজের ভালো-মন্দের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়!!
বিবেকানন্দের এই সাধারণ জ্ঞানটুকুও মনে হয় ছিল না!!
এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠে যে,অবিবাহিত ছেলেদের মদ খাবার জন্য দায়ী কে?!!!
বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ সম্পর্কে কি বলেছেন দেখুন------
"বেদ তত্ত্বজ্ঞ ব্রাহ্মণগণ যজ্ঞস্থলে মন্ত্রোচ্চারণ দ্বারা আকাশ বাতাস মুখরিত করিতেন; বিধিপূর্বক যজ্ঞ সম্পাদন করার ফলে তাঁহাদের শুদ্ধ হৃদয় হইতে বেদান্ত বাক্য দ্বারা ভ্রম ও অজ্ঞানের অন্ধকার দূরীভূত হইয়াছিল; তাঁহারা মেঘের মতো গম্ভীর সুমধুর সুরে সামবেদ প্রভৃতি দ্বারা যাঁহার স্তব করিয়াছেন, যাঁহার মহিমা কীর্তন করিয়াছেন---- আমি সর্বদা সেই শ্রীরামকৃষ্ণের ভজনা করি"!!!
গ্ৰন্থসূত্র_স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা_ষষ্ঠ খন্ড_বীরবাণী
প্রকাশক_উদ্বোধন কার্যালয়
বিশ্লেষণ_ বিবেকানন্দ বলছেন যে, সত্য যুগ,ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ ও কলিযুগে রামকৃষ্ণের জন্ম গ্রহণের আগে যত যজ্ঞ করা হয়েছে ও বেদ মন্ত্র পাঠ করা হয়েছে,সব রামকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে!!!
এবং,সত্য-ত্রেতা-দ্বাপর- কলির সমস্ত বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণরা, শুধুমাত্র, রামকৃষ্ণের স্তব ও মহিমা কীর্তন করেছেন!!!
সুতরাং, বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের দয়ায় আমরা জানতে পারলাম ঈশ্বরের প্রকৃত স্বরূপ।
সুতরাং, আমাদের গর্বিত হিন্দু ভাইদের ঈশ্বর হলেন, Transgender বা রূপান্তরকামী ও অশিক্ষিত!!!
স্বামীজির ভোগবাদী চরিত্র বোঝার জন্য একটা নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ বোধ হয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না । পুনা থেকে স্বামীজি একবার ভাবনগরের মহারাজার পরিচয়পত্র নিয়ে কোলাহপুরে গিয়েছিলেন এবং কোলাহপুরের রানির প্রাইভেট সেক্রেটারি স্বামীজিকে বেলগাঁওয়ের এক মহারাষ্ট্রীয় ভদ্রলোকের কাছে একটি পরিচয়পত্র দেন। সেই পরিচয়পত্র নিয়ে স্বামীজি একদিন ওই ভদ্রলোকের বাসায় যান। ভদ্রলোকের বাসায় হঠাৎ হাজির হলেন, গল্প গুজব করলেন, তারপর ভুঁড়ি-ভোজ সম্পন্ন করার পরে স্বামীজি আয়েশ করে পান-সুপুরি চেয়ে বসলেন। তারপর চাইলেন দোক্তা। স্বামীজির ব্যাপার-স্যাপার দেখে গৃহকর্তার সুশিক্ষিত পুত্র মন্তব্য করলেন :
‘যে সন্ন্যাসীর এই এই প্রকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দৈহিক ভোগের ঊর্ধ্বে চলে যাওয়া উচিৎ, তাঁর মুখে এই জাতীয় চাহিদা শুনলে মনে কী ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া হয় তা সহজেই অনুমেয়। … সন্ন্যাসী হয়েও তিনি এমন সব জিনিসের জন্য লালায়িত যা শুধু গৃহস্থদের বেলা শোভা পায়’।
বস্তুত: আমার লেখায় আমি দেখিয়েছি খেতরির রাজা অজিত সিং-এর সাথে বিবেকানন্দের কেমন চমৎকার দহরম মহরম ছিলো। কিভাবে তার কাছ থেকে সারা জীবন ধরে বিবেকানন্দ অর্থ সাহায্য নিয়েছেন, নিজের জন্য পরিবারের জন্য – সেগুলোর সত্য মিথ্যা বিবেকানন্দের ভক্তরা যাচাই করার প্রয়োজনবোধ করেননি শুধু অজিত সিংহ নয়, বহু রাজরাজড়াদের কাছ থেকে মঠের জন্য এবং ‘নানা জনহিতকর’ কাজের জন্য বিবেকানন্দ সাহায্য পেয়েছেন, বিদেশ থেকেও প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন কিন্তু সেই সংগৃহীত অর্থের একটা বিরাট অংশ তিনি নিজের পরিবারের প্রয়োজনে ব্যয় করেন। আমি আমার লেখায় দেখিয়েছি স্টার্ডি, ম্যুলার প্রমুখ কয়েকজন বিদেশী ভক্ত স্বামীজির সংসর্গ ত্যাগ করেছিলেন। বিশেষতঃ হেনরিয়েটা ম্যুলার যিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, তিনি ভারতের জনগণের সেবার জন্য স্বামীজিকে প্রায় ৩৯,০০০ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন তা বিবেকানন্দ পারিবারিক প্রয়োজনে এবং বেলুড় মঠে নিজে থাকার জন্য বড় বড় তিনটি আরামপ্রদ ঘর নিরঞ্জন ধর একে বিবেকানন্দের বাগানবাড়ি হিসেবে উল্লেখ করেছেন) তৈরিতে ব্যয় করেছেন। তিনি ১৮৯৮ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর ‘সোশাল রিফর্মিস্ট’ পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে বিবেকানন্দের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন।
এমনকি স্বামীজির বেহিসেবী খরচ আর অমিতব্যায়িতা দেখে আমেরিকার বহু ভক্ত তার সান্নিধ্য ত্যাগ করেছিলেন। বিবেকানন্দ স্তাবকদের বদান্যতায় আমরা অবশ্য কেবল আইরিশ নারী মিস মার্গারেট নোবলের নামই জানি, যিনি শিষ্য হিসেবে ভারতে এসে ভগ্নি নিবেদিতা নামে পরিচিত হন। কিন্তু একই সময় আবার অগণিত শিষ্য যে স্বামীজির অসন্ন্যাসীমার্কা কার্যকলাপের পরিচয় পেয়ে তার থেকে দূরে সরে গেছেন সে ব্যাপারটি চেপে যাওয়া হয়েছে নিপুণ কৌশলে। এপ্রসঙ্গে এডওয়ার্ড স্টার্ডির কথা বলা যেতে পারে, যার সাথে স্বামীজির পরিচয় হয়েছিল ইংল্যান্ডে। স্টার্ডি ইংল্যান্ডে স্বামীজির কাজের পরিচালকও নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৮৯৬ সালে তিনি জানালেন যে, স্বামীজি মধ্যে তিনি ‘মহত্তম বন্ধু ও বিশুদ্ধ গুরুর’ সন্ধান পেয়েছেন। কিন্তু পরের বছরের শুরুতেই স্বামীজির স্বরূপ পুরোপুরি বুঝবার পর তার সম্বন্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখি। তিনি স্বামীজির অন্ধভক্ত সিস্টার নিবেদিতাকে উদ্দেশ্য করে লেখেন –
‘এই দেশে যে সব সন্ন্যাসীর পদার্পণ ঘটেছে তাঁদের বৈরাগ্য সম্পর্কে অনেক কিছু শোনা গেলেও আমি তাঁদের মধ্যে বৈরাগ্যের অতি সামান্য পরিচয়ই পেয়েছি। আমি কোনভাবে আপনার আদর্শকে প্রভাবিত করতে চাই না, তবে স্বীকার করতেই হবে যে, নানাভাবে আমি তার সম্পর্কে নিরাশ হয়েছি’।
আরেকটি চিঠিতে স্টার্ডি বলেন,
‘এই দেশে আমি সন্ন্যাসের কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু মুখে যারা এ-বিশয়ে সোচ্চার, তাঁদের ব্যবহারে আমি এর কোন নিদর্শন পাইনি। … আহার ও বাসস্থান নিয়ে তাঁরা সর্বদা অসন্তোষ জানাচ্ছেন। বস্তুত এই সব তথাকথিত সন্ন্যাসীদের পুষতে আমাদের দারিদ্র্য-পীড়িত কেন্দ্রগুলির যে ব্যয় বহন করতে হচ্ছে তা একজন পরিশ্রমী অধ্যক্ষ, তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক কিংবা একজন ডাক্তারের ভরণ-পোষণের ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি, যদিও তারা ত্যাগী বলে নিজেদের জাহির করেন না। … আমি শুধু বলতে চাই যে, আমি কোথাও উৎকর্ষের পরাকাষ্ঠা দেখার আশা রাখি না, বা দেখতেও চাই না, তবে কোন ছলনা বা মিথ্যাচারকেও স্বীকার করতে রাজি নই। যদি সন্ন্যাসীর মধ্যে আমরা মানসিক সন্তোষ ও স্থৈর্য, সরল পরিবেশের আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি না দেখি এবং তার পরিবর্তে যদি তারা শিলং-মূল্যের চুরুট, সর্বোৎকৃষ্ট আহার ও বেশভূষার জন্য কেবলই দাবী জানাতে থাকেন তাহলে তাঁদের স্বরূপ সম্পর্কে আমরা কী ধারণা করতে পারি? আমি শুধু বলতে পারি যে, তাঁদের জীবনে সন্ন্যাসের আদর্শ প্রতিফলিত হয়নি’।
আমি আমার লেখায় যা উল্লেখ করেছি তার বাইরে আরো অনেক উদাহরণ আছে বিবেকানন্দের অত্যধিক ভোজনপ্রীতির । যেমন, জুনাগড়ের নবাবের দেওয়ান হরিদাস বিহাড়িদাসের বাড়িতে তার আথিতিয়তার কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করি। ভারত পরিক্রমাকালে জুনানগড়ে পোঁছে যখন তার বাড়িতে উঠেন তখন বাড়ির মালিক উপস্থিত ছিলেন না। তার বাড়ি নিরামিষাশী ছিলো। কিন্তু সেই রান্না স্বামীজির পছন্দ না হওয়ায় তিনি পাচককে দিয়ে মাছ মাংস সহযোগে নিজের পছন্দমতো রান্না রাঁধিয়ে নিয়েছিলেন। এই ঘটনা মহেন্দ্র দত্তের ‘বিবেকানন্দের জীবনের ঘটনাবলি’ গ্রন্থেই পাওয়া যায়।
স্বামীজি জনসেবার জন্য দেয়া টাকা নিজের জন্য খরচ করে ফেলতেন তার বহু প্রমাণ আছে। অলি বুল নামে এক ইংরেজ নারী ছিলো যাকে বিবেকানন্দ ‘ধীরা মাতা’ বলে ডাকতেন। তিনি বহু সময়ই বিবেকানন্দের বেহিসেবি খরচকে নানাভাবে সামাল দিতেন। যেমন, ১৯০০ সালের ১ মে তারিখে বুল বিবেকানন্দকে যে পত্র লেখেন তা থেকে জানা যায়, স্বামীজি বেলুড় মঠের জন্য সংগৃহীত অর্থ থেকে হাজার ছাব্বিশেক টাকা ভেঙে ফেলেছেন। বুল স্বামীজির জনহিতকর কাজের রেকর্ড ‘পরিষ্কার’ রাখার উদ্দেশ্যে তাকে এককালীন অনুদান হিসেবে ৩০,০০০ তাকা দেন। সেক্ষেত্রে মঠের ঋণ শোধ করার পরেও তার হাতে হাজার চারেক উদ্বৃত্ত থাকবে। এভাবেই কখনো অজিত সিংহ কখনো অলি বুল প্রমুখের শরণাপন্ন হয়ে স্বামীজি তার বেহিসেবিপনা সামাল দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বিবেকানন্দ জাহাজে বা ট্রেনে সওয়ার হলে সাধারণতঃ প্রথম শ্রেণীর যাত্রী হতেন এবং প্রথম শ্রেণীর হোটেলেই আশ্রয়প্রার্থী হতেন। আমেরিকার বাল্টিমোরে একবার প্রথম শ্রেণীর হোটেলে আশ্রয় নিতে গিয়ে তাকে অপদস্থও হতে হয়েছিল।
তার সামন্ত প্রভুদের স্বার্থ বজায় রাখতে বিবেকানন্দ সবসময় সচেতনভাবেই নানা স্ববিরোধী মন্তব্যের আশ্রয় নিয়েছেন। এর একটি প্রমাণ পাওয়া যায় মহেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা শ্রীমৎ বিবেকানন্দ স্বামীজির জীবনের ঘটনাবলির ২য় খণ্ডে বর্ণিত একটি ঘটনায়। গঙ্গা মহারাজা (স্বামী অখণ্ডানন্দ) তখন নষ্ট স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য খেতরি রাজ্যে গিয়েছিলেন। তখন বিবেকানন্দ তাকে একটি চিঠিতে গরীব এবং নিচু জাতির লোকজনের ঘরে গিয়ে ধর্মোপদেশ দিতে পরামর্শ দেন। কিন্তু অখণ্ডানন্দ খেতরিতে এসে দেখলেন সেখানে অনেক নীচতলার অধিবাসীরা দাসসুলভ ব্যবহারে অতিষ্ঠ। তিনি তখন গোলাম বলে চিহ্নিত দাসদের দাসত্ব থেকে মুক্তির আন্দোলনে শরিক হয়ে যান। কিন্তু প্রজাপীড়ক রাজা অজিত সিংহও এতে যার পর নাই রুষ্ট হন। ঘটনা কালক্রমে বিবেকানন্দের কানে পৌঁছুলে তিনি অজিত সিংহের পক্ষ নিয়ে গঙ্গাকে ভর্ৎসনা করে বলেন,
‘গঙ্গা সন্ন্যাসী, তারা রাজা, তাঁদের রাজকর্মের পলিটিকসে হাত দিতে গেছলো কেন? এর জন্য তো রাজা অজিত সিং একটু বিরক্ত হয়েছিল’।
বিবেকানন্দ দেশপ্রেমিক ছিলেন না।
Complete Works of Swami Vivekananda বইয়ের ৭ম ভলিয়ুমের ৩০১ পৃষ্ঠায় আছে –
But it is to Amerique — there where the heart is. I love the Yankee land (Page 301).
যার বাংলা উদ্ধৃতি হিসেবে আমি দিচ্ছি –
‘আমার হৃদয় রয়েছে আমেরিকায়। আমি ভালবাসি ইয়াঙ্কি দেশকে’।
শিকাগো মহাসভার পরের দিনগুলোতে পাশ্চাত্যের মহনীয় বিলাস ব্যসনে এতটাই আপ্লুত হয়ে যান যে, তিনি ভারতে ফিরতেও দ্বিধান্বিত ছিলেন। ১৮৯৩ সালে আলা-সিঙ্গাকে লেখেন –
‘ভারতে গিয়ে ফল কি? ভারত আমার আইডিয়া শক্তিশালী করতে পারবে না। আমার আইডিয়ার প্রতি এদেশের (আমেরিকার) মানুষ সহৃদয়।‘
ঠিক এই কথাগুলোই ইংরেজি রচনাবলীর পঞ্চম খন্ডে (পৃঃ ৯৫) আছে এভাবে –
What is the use of going back to India? India cannot further my ideas. This country takes kindly to my ideas (Page 95).
আমেরিকার লোকজনেরা যে তাকে গুরু হিসেবে কত সম্মান করছেন, তার সব ব্যয় নির্বাহ করেছেন, তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন আরো অনেক জায়গাতেই, যেমন, ইংরেজি রচনাবলীর ষষ্ঠ অধ্যায়ে আছে –
American nation loves and respects me, pays my expenses, and reveres me as a Guru (vol 6, page 267)
শিকাগো মহাসভার সম্মিলনের সময় এবং তার পরবর্তী বছরের সময়গুলোতে সমগ্র ভারতবর্ষে চলছিলো ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। ১৮৯৬-৯৭ সালে রাজস্থান, বর্তমান উত্তরপ্রদেশ, বোম্বাই, হায়দ্রাবাদ, মাদ্রাজ বিশেষত মধ্যপ্রদেশে দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মানুষের সংখ্যা ছিলো ৯৬.৯ লক্ষ এবং দুর্ভিক্ষে মৃতের সংখ্যা ছিলো ৫১.৫ লক্ষ। অথচ ‘জীব-প্রেমিক’ বিবেকানন্দ মধ্যভারতের দুর্ভিক্ষের সময় প্রপীড়িত মানুষের সাহায্যের জন্য একটি কপর্দকও সাহায্য দিতে রাজী হননি।
স্বামীজি দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য অর্থ ব্যয় না করে শিকাগো গেছেন ধর্মসভা করতে, তারপর স্বদেশ তার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে প্রচুর অর্থব্যয় করতে শিষ্যদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন আমেরিকা থেকেই। তখনো দেশে দুর্ভিক্ষ পুরোদমে চলছিলো। অভ্যর্থনা বাদ দিয়ে কিংবা সংক্ষেপিত করে সেই অর্থ তিনি দুঃস্থ মানুষের সাহায্যে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং, তার বন্ধু প্রিয়নাথ সিংহ এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছেন,
হ্যাঁ, আমি ইচ্ছে করেছিলাম যে আমায় নিয়ে একটা হৈ চৈ হয়। কি জানিস, একটা হৈ চৈ না হলে তাঁর (ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের) নামে লোক চেতবে কি করে! … তাকে ঠিক জানলে তবে ঠিক মানুষ তৈরি হবে; আর মানুষ তৈরি হলে দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি তাড়ানো কতক্ষণের কথা!
(নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন)
সহমরণের সমর্থনে বিবেকানন্দ বলেন –
‘প্রথমে সেই ভাবটাই উস্কে দিয়ে তাঁদের (হিন্দু নারীদের) character form করতে হবে – যাতে তাঁদের বিবাহ হোক বা কুমারী থাকুক, সকল অবস্থাতেই সতীত্বের জন্য প্রাণ দিতে কাতর না হয়। কোন একটা ভাবের জন্য প্রাণ দিতে পারাটা কি কম বীরত্ব?’
(স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ১০ম খণ্ড, পৃঃ ৩৯)
স্বামী বিবেকানন্দ যে সহমরণ সমর্থন করতেন, তা ভগ্নি নিবেদিতার ভাষ্যেও স্পষ্ট হয়–
‘জগতের চোখে সহমরণ এত বড় প্রথা কেন – কারণ ওতে ইচ্ছাশক্তির বিকাশ হয়’।
(ভগ্নী নিবেদিতা, স্বামীজিকে যেরূপ দেখিয়াছি, পৃঃ ১৮৩)
শিকাগো মহাসভা থেকে ফেরার পর কলকাতায় এক অভিনন্দন সমাবেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিবেকানন্দ আবেগের সঙ্গে বলেছিলেন, “এই সভা মঞ্চে যেসব ইংরেজ বন্ধু উপস্থিত আছেন, তারাই সে বিষয়ে সাক্ষ্য দেবেন। কিন্তু যতই আমি তাদের মধ্যে বাস করতে লাগলাম, তাদের জাতীয় জীবনযন্ত্র কিভাবে কাজ করছে দেখতে পেলাম, তাদের সঙ্গে মিশে জানলাম কোথায় রয়েছে তাদের জাতির হৃৎস্পন্দন – ততই আমি তাদের ভালবাসতে লাগলাম। তার ফলে, হে ভাতৃগণ, এখানে এমন কেউ নেই যিনি আমার থেকে ইংরাজদের বেশি ভালবাসেন।”
(বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২)
বিবেকানন্দই ইংরেজদের ‘বীরের জাতি’,’ প্রকৃত ক্ষত্রিয়’, ‘অটল ও অকপট’, এবং ‘প্রভু’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
(স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩০৭)
তিনি বলেছেন, “সকল কথার ধুয়ো হচ্ছে – ‘ইংরেজ আমাদের দাও। বাপু আর কত দেবে? রেল দিয়াছে, তারের খবর দিয়াছে, রাজ্যে শৃঙ্খলা দিয়াছে, ডাকাতদের তাড়াইয়াছে, বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়াছে। আবার কী দেবে? নিঃস্বার্থভাবে কে কী দেয়? বলি তোরা কী দিয়েছিস?”
(স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ২৫৩)
এই উক্তি থেকে বোঝা যায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে বিবেকানন্দের কোন স্পষ্ট ধারনা ছিলো না। হ্যাঁ, রেল ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা প্রচলন, ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি ব্রিটিশরা করেছে, কিন্তু এগুলোও তারা করেছে তাদের কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখার প্রয়োজনেই, ভারতের উন্নতি করার মুখ্য উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, যা রবীন্দ্রনাথ বা বিবেকানন্দেরা সে সময় ভাবতেন। ব্রিটিশেরা ভারতে এসে প্রথমেই যেটা করতে সফল হয়েছিল তা হচ্ছে দেশী শিল্পের ধ্বংস সাধন, এবং পাশাপাশি ব্রিটেন থেকে আসা দ্রব্যের একটা বড় সড় বাজার তৈরি। এই প্রক্রিয়ারই অংশ হিসেবে ভারতে রেলপথ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা সে সময় অনুভব করে ইংরেজরা। ইংল্যান্ড থেকে পাঠানো শিল্পজাত নানা দ্রব্য ভারতের বন্দরগুলো থেকে দেশের অভ্যন্তরে বহন করে নিয়ে যাওয়া, ভারতের কাঁচামাল বন্দর পর্যন্ত পৌঁছানো, আর তার সাথে চলমান বিদ্রোহ বিপ্লবকে ঠাণ্ডা করে ভারতকে সামরিক শক্তির পদানত রাখার উদ্দেশ্যে, অর্থাৎ কম সময়ের মধ্যে সৈন্য সামন্ত প্রেরণের সুবিধার জন্য ভারতে রেলপথ স্থাপন খুব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। এমনকি লর্ড ডালহৌসির ১৮৫৩ সালের প্রতিবেদনেও ব্যাপারটা স্বীকার করে বলা হয়েছিল, রেলওয়ে স্থাপনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘ভারতকে গ্রেট ব্রিটেনের কাঁচামাল সরবরাহের উৎস এবং অপরদিকে ভারতকে গ্রেট ব্রিটেনের রপ্তানিকৃত শিল্পদ্রব্যের বাজার হিসেবে গড়ে তোলার সুস্পষ্ট লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে।
(সুকোমল সেন, ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস (১৮৩০-২০০০), এনবিএ, ষষ্ঠ মূদ্রণ, ২০০৫)
অবশ্য এটা বলার অর্থ এই নয় যে, ব্রিটিশদের বিপক্ষে স্বামীজি কিছু বলেননি। অবশ্যই বলেছেন। কিন্তু অন্য অনেক দিকের মত ব্রিটিশ তোষণ-বিরোধিতার ব্যাপারটাতেও স্বামীজির স্ববিরোধিতাই পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠে।
রামকৃষ্ণ জিবনীকার ক্রিস্টোফার ইশারউডও সেটা স্বীকার করে বলেছেন –
‘স্বামীজি আজ যা বলতেন, পরদিন তার কথার সাথে কোন মিল থাকতো না।‘
(খ্রিস্টোফার ইশারউড, রামকৃষ্ণ ও তার শিষ্যগণ, পৃঃ ২৭৮)
১৯৯৫ সালে আলাসিঙ্গাকে বিবেকানন্দ বলছেন,
‘বাজে সমাজ সংস্কার নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করো না, প্রথমে আধ্যাত্মিক সংস্কার না হলে সমাজ সংস্কার হতে পারে না। কে তোমায় বললে, আমি সমাজ সংস্কার চাই? আমি তো তা চাই না। ভগবানের নাম প্রচার কর, কুসংস্কার ও সমাজের আবর্জনার পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলো না। (বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা পত্রাবলী, পত্র নং ২০৯, পৃঃ ৩৫৮)
ইংরেজীতে –
Meddle not with so-called social reform, for there cannot be any reform without spiritual reform first. Who told you that I want social reform? Not I. Preach the Lord — say neither good nor bad about the superstitions and diets (Vol 5, page 90)
বিবেকানন্দ বইপড়ার বিরোধিতা করেছেন।তিনি বলেছেন-
To be religious, you have first to throw books overboard. The less you read of books, the better for you. (page 30)
অর্থাৎ, ধার্মিক হইতে গেলে আপনাদিগকে প্রথমেই গ্রন্থাদি ফেলিয়া দিতে হইবে। বই যত কম পড়েন ততই ভাল।
বিবেকানন্দের চোখে বৈষ্ণব সম্প্রদায়
1.বৈষ্ণবরা মদ ও মাংস না খেয়ে, শ্রীকৃষ্ণ,শ্রীরাম, শাস্ত্র ও মহাপুরুষদের বাক্য অবমাননা করছেন!
2.কীর্তন করলে ভয়ানক কামভাব জাগে।
3.বৈষ্ণব ধর্ম,বৌদ্ধ ধর্ম থেকে এসেছে।
4.বৈষ্ণব ধর্মে নোংরা যৌনাচার প্রবেশ করেছে।
1. মূর্খ শাস্ত্রহীন বৈষ্ণব:-----
"আধুনিক বৈষ্ণব পড়েছেন কিছু ফাঁপরে,তাঁদের ঠাকুর রাম বা কৃষ্ণ মদ-মাংস দিব্যি ওড়াচ্ছেন,রামায়ণ-মহাভারতে রয়েছে।সীতাদেবী গঙ্গাকে মাংস,ভাত আর হাজার কলসী মদ মানছেন!
বর্তমান কালে শাস্ত্রও শুনবে না, মহাপুরুষ বলেছেন বললেই শোনে না।"
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা
ষষ্ঠ খণ্ড_প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য_
আহার ও পানীয় _পেজ_136
প্রকাশক_উদ্বোধন কার্যালয়
"যারা বড় ভাবপ্রবন তাদের কুণ্ডলিনী ফড়ফড় করে ওপরে ওঠে বটে,কিন্তু উঠতেও যতক্ষণ নাবতেও ততক্ষণ।যখন নাবেন তখন একেবারে সাধককে অধঃপাতে নিয়ে গিয়ে ছাড়েন।
এজন্য ভাবসাধনার সহায় কীর্তন-ফীর্তনের একটা ভয়ানক দোষ আছে।
নেচে কুঁদে সাময়িক উচ্ছ্বাসে ঐ শক্তির ঊর্ধ্বগতি হয় বটে, কিন্তু স্থায়ী হয় না,নিম্নগামিনী হবার কালে জীবের ভয়ানক কাম বৃত্তির আধিক্য হয়।"
**গ্ৰন্থসূত্র**
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা নবম খন্ড_স্বামী-শিষ্য সংবাদ_43_পৃষ্ঠা_154
প্রকাশক--উদ্বোধন কার্যালয়
3.বৌদ্ধ ছদ্মবেশী বৈষ্ণব:-
"বৌদ্ধ ও বৈষ্ণব ধর্ম আলাদা নয়।বৌদ্ধ ধর্ম মরে যাবার সময় হিন্দু ধর্ম তার কতকগুলি নিয়ম নিজেদের ভেতরে ঢুকিয়ে আপনার করে নিয়েছিল।
ঐ ধর্মই এখন ভারতবর্ষে বৈষ্ণব ধর্ম বলে বিখ্যাত।"
***গ্ৰন্থসূত্র***
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা নবম খন্ড_স্বামী-শিষ্য সংবাদ_26_পৃষ্ঠা_95
প্রকাশক--উদ্বোধন কার্যালয়
আধুনিক বৈষ্ণব ধর্ম যা মৃত বৌদ্ধ ধর্মের কঙ্কালাবশিষ্ট---- তাতেও ঘোর বামাচার ঢুকেছে।
****গ্ৰন্থসূত্র****
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা নবম খন্ড_স্বামী-শিষ্য সংবাদ_27_পৃষ্ঠা_99
প্রকাশক--উদ্বোধন কার্যালয়
বিশ্লেষণ _আপনাদের উন্নত বৈষ্ণবীয় গোবরে ভর্তি মস্তিষ্কের জন্য, বিবেকানন্দ যে উপহার দিয়েছেন,সাহস থাকলে রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে কেস করুন !
বৈষ্ণবরা যে ছদ্মবেশী বৌদ্ধ,এইটা বৈষ্ণবদের প্রাণপ্রিয় ভাগবত পুরাণ থেকেই প্রমাণ দিচ্ছি:----
ততঃ কলৌ সম্পবৃত্তে সম্মোহায় সুরদ্বিষাম্।
বুদ্ধো নাম্নাঞ্জনসুতঃ কীকটেষু ভবিষ্যতি।।
ভাগবত পুরাণ_স্কন্ধ_1_অধ্যায়_3_শ্লোক_24
অর্থ_কলিযুগে আস্তিকদের হিংসাকারী নাস্তিকদের সম্মোহিত করার জন্য বুদ্ধদেব গয়া প্রদেশে,অঞ্জনার পুত্র-রূপে জন্ম গ্রহণ করবেন।
বৈষ্ণবদের পুরাণে,নাস্তিক বুদ্ধদেব স্বয়ং বিষ্ণুর অবতার।
বৈষ্ণবরা যে বুদ্ধদের একটি শাখা ও বেদ বিরোধী নাস্তিক তা বৈষ্ণবীয় পুরাণগুলোতে,বেদ বিরোধী ও ঈশ্বরে অবিশ্বাসী নাস্তিক বুদ্ধদেবকে বিষ্ণুর অবতার ঘোষণা করার থেকেই প্রমাণ হয়।
সুতরাং, বৈষ্ণবরা ছদ্মবেশী বৌদ্ধ, বিবেকানন্দের এই যুক্তি একশো শতাংশ গ্ৰহণযোগ্য।
মিথ্যা প্রচারের ফলে অনেকেই,স্বামী বিবেকানন্দ'কে মহান হিন্দু সন্ন্যাসী ও ইংরেজ বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করেন।
কিন্তু, বিবেকানন্দের চোখে কেমন ছিল হিন্দু ধর্ম বা বিবেকানন্দ সত্যিই কি ইংরেজ বিদ্বেষী ছিলেন তা জানার জন্য,তাঁর বাণী ও রচনাবলী এবং তাঁর সম্পর্কে গবেষণা মূলক লেখা পড়া দরকার।
নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রমাণ দেওয়া হল:----
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী:--
আমার দৃঢ় বিশ্বাস,
যেটাকে নানাবিধ কুরুচিপূর্ণ
আধুনিক হিন্দু ধর্ম বলা হয়,
তা হচ্ছে অচল অবস্থায় পতিত বৌদ্ধধর্ম মাত্র।
এটা স্পষ্ট বুঝলে হিন্দুদের পক্ষে তা বিনা আপত্তিতে ত্যাগ করা সহজ হবে।
বৌদ্ধধর্মের যেটি প্রাচীনভাব---যা শ্রীবুদ্ধ নিজে প্রচার করে গেছেন,তার প্রতি এবং শ্রীবুদ্ধের প্রতি আমার গভীরতম শ্রদ্ধা"
•আলমবাজার মঠ, কলকাতা,5ই মে,1897
•গ্ৰন্থসূত্র_আমি বিবেকানন্দ বলছি
চতুর্দশ সংস্করণ, মার্চ,2015
প্রকাশক_সাহিত্যম,18B শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট, কলকাতা
(রামকৃষ্ণ মিশনের শাখা,অদ্বৈত আশ্রমের সভাপতি,স্বামী বোধসারানন্দ দ্বারা অনুমোদিত গ্ৰন্থ)
আমি এক্ষণে হিন্দু ধর্মের উপর কোন পুস্তক লিখিতেছি না।
তবে আমার মনের ভাব লিপিবদ্ধ করিতেছি।
হিন্দু ধর্ম পরে দেখা যাইবে।
হিন্দু ধর্ম বললে কি এদেশের লোক আসে?
সঙ্কীর্ণ বুদ্ধির নামে সকলে পালায়।
আসল কথা,তাঁর ধর্ম; হিন্দুরা বলুক হিন্দুধর্ম ---তদ্ধৎ সর্বে(সেইরূপ সকলে)
•গ্ৰন্থসূত্র_স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা _সপ্তম খন্ড_স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে লিখিত পত্র_পত্র সংখ্যা _249_সাল_1895
বিবেকানন্দ ও তাঁর ইংরেজ বিদ্বেষের নমুনা:----
"ইংরেজ জাতের প্রতি আমার থেকে অধিকতর ঘৃণা পোষণ করে এমন কেউই কখনও ইংলন্ডে পদার্পণ করেনি।
কিন্তু যত আমি তাঁদের সঙ্গে বসবাস করতে লাগলাম এবং তাঁদের সঙ্গে মিশতে লাগলাম,
যতই দেখতে লাগলাম ব্রিটিশ জাতির জীবনযন্ত্র কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং যতই ঐ জাতের হৃদস্পন্দন কোথায় হচ্ছে বুঝতে লাগলাম,ততই তাঁদের ভালোবাসতে লাগলাম "
•গ্ৰন্থসূত্র_আমি বিবেকানন্দ বলছি
চতুর্দশ সংস্করণ, মার্চ,2015
প্রকাশক_সাহিত্যম,18B শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট, কলকাতা
বিশ্লেষণ _ স্বামী বিবেকানন্দের মতে, আধুনিক হিন্দু ধর্ম কুরুচিপূর্ণ কারণ তা বর্তমানে অচল বৌদ্ধধর্মের বিকৃত রূপ!
সুতরাং, বর্তমানে প্রচলিত হিন্দু ধর্ম হিন্দুদের ত্যাগ করতে হবে!
আমাদের গর্বিত হিন্দু ভাইয়েরা স্বামী বিবেকানন্দের এই বাণী পালন করতে রাজী আছেন তো?
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ