রাত্রিসূক্ত
য়াত্রী ব্যখ্যদায়তী পুরুত্রা দেব্য১ক্ষভিঃ।
বিশ্বা অধি শ্রিয়োহধিত।।১।।
পদার্থঃ (আয়তী রাত্রিঃ-দেবী) আসা রাত্রি দেবী (অক্ষভিঃ) নেত্র যেরূপ নক্ষত্রের সাথে (ব্যখ্যত্) নিজের বিশেষ রূপ দ্বারা দেখায় (বিশ্বাঃ শ্রিয়ঃ) সমস্ত শোভাকে (অধি-অধিত) নিজের মধ্যে ধারণ করেন।।১।।
ভাবার্থঃ রাত্রি যখন আসে তখন আকাশকে নক্ষত্রের দ্বারা নিজেকে দেখায়, সমস্ত শোভাকে নিজের অন্তর ধারণ করেন অর্থাৎ সমস্ত শোভাকে রাত্রি পুষ্ট করেন, আকাশের শোভা নক্ষত্রের দ্বারা রাত্রিকেই দেখিয়ে দেয়, মনুষ্যের দিনে শান্তির গ্লানি সুস্থতার রূপে প্রকাশিত হয়, বৃক্ষের ফুলও রাত্রিতে বিকাশিত হয়।।১।।
ওর্বপ্রা অমর্ত্যা নিবতো দেব্যু১দ্বতঃ।
জ্যোতিষা বাধতে তমঃ।।২।।
পদার্থঃ (অমত্যা) স্বরূপ দ্বারা নিত্য (দেবী) রাত্রি দেবী (উদ্বতঃ) উঁচু প্রদেশকে (নিবতঃ) নিচু প্রদেশকে (উরু-আ-অপ্রাঃ) অনেক ব্যাপ্ত হয়ে যায় অর্থাৎ উঁচু উঁচু নিচুকে সমান করে দেয় (জ্যোতিষা) গগন জ্যোতি দ্বারা (তমঃ) অন্ধকারকে (বাধতে) নিবৃত করেন অপিতু প্রাণিদেরকে নিদ্রা মনের অন্তর বর্তমান অন্ধকার জড়াতাকে নিবৃত্ত করেন পূর্ণ বিশ্রাম প্রদান করেন।। ২।।
ভাবার্থঃ রাত্রি শাশ্বত হয়, সৃষ্টির আরম্ভে চলে আসছে, উঁচু স্থানের আর নিচু স্থানকে ব্যাপ্ত করেন, তাহার এক রূপে দেখায়, নক্ষত্র সমূহের জ্যোতি দ্বারা অন্ধকারকে সরিয়ে তথা নিদ্রা নিয়ে মনে বিদ্যমান অন্ধকার বা জড়তাকে বিশ্রাম দিয়ে সরিয়ে দেয়, রাত্রির শয়নই করা উচিত।।২।।
নিরু স্বসারমকৃতোষসং দেব্যায়তী।
অপেদু হাসতে তমঃ।।৩।।
পদার্থঃ (দেবী-আয়তী) রাত্রি দেবী এসে (উষসং স্বসারম্) রাত্রিকে পিছনে আসার তাহার সহযোগিনী ঊষা প্রভাত বেলাকে (নির্-অকৃত) সংস্কৃত করেন-সুশোভিত করেন (তমঃ-ইত্-উ-অপহাসতে) অন্ধকারও সরে যায় ঊষা কালে।।৩।।
ভাবার্থঃ রাত্রি আসে তখন তাহার পিছনে চলতে থাকা ভগিনী যেরূপ ঊষা আসার পরে রাত্রির অন্ধকার সরে যায়, ঊষার শোভা রাত্রির আশ্রায়তে হয়।।৩।।
সা নো অদ্য য়স্যা বয়ং নি তে য়ামন্নবিক্ষ্মহি।
বৃক্ষে ন বসতিং বয়ঃ।।৪।।
পদার্থঃ (সা) সে রাত্রি (নঃ) আমাদের জন্য (অদ্য) আজ-প্রতিদিন কল্যাণকারী হোক (য়স্যাঃ-তে) যা তোমার (য়ামন্) প্রাপ্ত করাতে (বয়ম্) আমরা (নি-অবিক্ষ্মহি) সুখ পূর্বক থেকে ['বহুলং ছন্দসি' অ০ ২।৪।৭৩] (বৃক্ষে ন) যেরূপ বৃক্ষে বাস বাসাতে নিবেশ করেন-থাকেন ঐরূপই রাত্রি সুখ দ্বারা নিদ্রাকারী হোক।।৪।।
ভাবার্থঃ রাত্রি মনুষ্যের জন্য কল্যাণকারীণী হয়ে যাহার আসার পরে মনুষ্য একাগ্র হয়ে যায় যেরূপ পক্ষী নিজের বাসাতে আবৃষ্ট হয়ে যায়।।৪।।
নি গ্রামাসো অবিক্ষত নি পদ্বন্তো নি পক্ষিণঃ।
নি শ্যেনাসশ্চিদর্থিনঃ।।৫।।
পদার্থঃ (গ্রামাসঃ) জনসমূহ রাত্রিতে (নি-অবিক্ষত) শয়ন করে-করেন (পদ্বন্তঃ-নি) পদবান পশু শয়ন করেন (পক্ষিণঃ-নি) পক্ষীও শয়ন করেন (শ্যেনাসঃ-অর্থিনঃ) তীব্র গতিমানও শয়ন করেন (চিত্-নি) ক্লান্ত দূর করার জন্যও শয়ন করেন।।৫।।
ভাবার্থঃ রাত্রিতে মনুষ্য পশু পক্ষী শান্তি প্রয়োজন সাধনের জন্য শয়ন করেন।।৫।।
য়াবয়া বৃক্যং১বৃকং য়বয় স্তেনমূর্ম্যে।
অথা নঃ সুতরা ভব।।৬।।
পদার্থঃ (ঊর্ম্যে) হে রাত্রি! ['ঊর্ম্যা রাত্রিনাম' নিঘ০ ১।৭] (বৃক্যং বৃকং য়বয়) নেকড়ে বাঘ নেকড়ে ঘাতক পশুকে আমাদের দ্বারা পৃথক করে নিদ্রা দাও (স্তেনং য়বয়) চোরকে আমাদের থেকে পৃথক করে নিদ্রা দাও (অথ ন সুতরা ভব) আমাদের জন্য সুখ দ্বারা ব্যতীতকারী হও।।৬।।
ভাবার্থঃ রাত্রিতে মনুষ্য নিদ্রায় যায় নিদ্রা যাওয়ার পরে নেকড়ে আদি জঙ্গলী পশু এবং চোরের আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, মানবের ভাবনা হয় যে তাহারা আমাদের উপর না করেন আর নিদ্রায় যায়, অথবা আমরা ঐরকম গভীরে না নিদ্রায় যেখানে তাহারা আমাদের বিরক্ত করতে পারে।।৬।।
পদার্থঃ (উষঃ) হে ঊষাবান (কৃষ্ণং তমঃ) ঘনো অন্ধকারকে নিজের রূপ দিয়ে (পেপিশত্) অত্যন্ত চুর্ণ করে দাও (ব্যক্তং মা-উপাস্থিত) আমাকে পূর্ণরূপে উপস্থিত হয়ে (ঋণা-ইব য়াতয়) ঋণকে যথার্থ দূর করে-অবতরণ, রাত্রির অনন্তর ঊষা সেবা করে যে রাত্রির অন্ধকারকে মুছে দেয়।।৭।।উপ মা পেপিশত্তমঃ কৃষ্ণং ব্যক্তমস্থিত।উষ ঋণেব য়াতয়।।৭।।
ভাবার্থঃ প্রভাত বেলা ঊষা যখন আসা রাত্রির অন্ধকারকে চুর্ণ করে আসে তথা আমাদের মানস অন্ধকার থেকে ঋণকে যথার্থ বিমুক্ত করায়, জ্ঞান জাগরণ দেয়।।৭।।
উপ তে গা ইবাকরং বৃণীষ্ব দুহিতর্দিবঃ।
রাত্রি স্তোমং ন জিগ্যুষে।।৮।।
পদার্থঃ (রাত্রি) হে রাত্রি! (তে) তোমার জন্য (গাঃ ইব) দুধ দানকারী গাভীকে যথার্থ-যেরূপ ঘাস আদি দিয়ে যায় ঐরূপ (উপাকরম্) হোম দ্বারা উপচার করি (বৃণীষ্ব) তুমি ইহা অনুকূল বানাও, আমাদের জন্য তাহার থেকে সুখকারী হোক (দিবঃ-দুহিতঃ) সূর্যের কন্যা (জিগ্যুষে) বিরোধীর জিতার ইচ্ছুকের জন্য (স্তোমম্-ইব) স্তুতি সমূহের সমান হব্য দিয়ে যেরূপ ইষ্টদেবকে স্তুতি সমূহকে অর্পিত করে যায় ঐরূপই তোমাকে হব্য পদার্থ দিয়ে, তাহার থেকে সুবাসিত হোক।।৮।।
ভাবার্থঃ রাত্রি সূর্যের পুত্র সমান হয় তাহার স্বাগত করা উচিত, হোম দ্বারা স্বয়ং হোম করে, রোগাদি বিরোদ্ধের বিজয় পাওয়ার জন্য।।৮।।
ভাষ্যঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক 'বিদ্যামার্তণ্ড'
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ