♦ যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ আমাদের জীবনের উজ্জলতম আদর্শ এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার কর্মগুলো সর্বদাই আমাদের অনুপ্রাণিত করে। গীতায় ৩/২১ নং শ্লোকে বলা রয়েছে যে, শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যাহা আচরন করেন সাধারনে তারই অনুকরন করে। শ্রীকৃষ্ণের সমগ্র জীবনে এতো অসংখ্য মহত্বের বর্ণনা রয়েছে যা একটি লেখায় শেষ করা অসম্ভব। তাই আমরা আজ শ্রীকৃষ্ণ সমন্ধ্যে সাধারণ টুকিটাকি কিছু তথ্য জানবো।
এবং এই টুকিটাকি তথ্য থেকেই জানবো, শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর হন কি না!!!
সত্যি কি শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর ছিলেন?
♦♣♦ বহু মানুষের মনে একটি প্রশ্ন- ঈশ্বর সাকার নাকি নিরাকার?
==> আসুন, কোন মুখের কথায় বিশ্বাস না করে গীতায় কি বলে তা জানার চেষ্টা করি।
==> গীতায় ২/২৩ নং শ্লোকে বলেছে- এই আত্মাকে অস্ত্র দ্বারা ছেদন করা যায় না, অগ্নি ইহাকে দগ্ধ করিতে পারে না, জল ইহাকে আর্দ্র করিতে পারে না, এবং বায়ু ইহাকে শুষ্ক করিতে পারে না।
==> এই আত্মাকে কেউ কি দেখিতে পায়েছেন?
তবে আত্মার আত্মা পরমাত্মাকে কেউ কি করে দেখতে পারে?
==>গীতায় বলেছে- সূর্য-চন্দ্র-অগ্নি যাহা প্রকাশে অসমর্থ, যে স্থানে আশ্রয় লইলে জীব আর ফিরে আসে না, সেই স্থানই পরমাত্মার পরম ধাম। গীতাঃ ১৫/৬
==> তিনি (পরমাত্মা) সকল জ্যোতির জ্যোতিঃস্বরূপ, তিনি (পরমাত্মা) তমসার অতীত, তিনি (পরমাত্মা) জ্ঞান, আবার তিনি (পরমাত্মা) জ্ঞেয়, তিনি (পরমাত্মা) জ্ঞানগম্য, তিনি (পরমাত্মা) সকলের হৃদয়ের মধ্যস্থলে আছেন।
গীতাঃ ১৩/১৮
==> আমরা সকলেই জানি পরমাত্মাকে ব্রহ্ম বলে। গীতার ৮ অধ্যায় ৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে সেই কথাই বলেছে- অক্ষরং ব্রহ্ম পরমং।
==> এবার দেখি সনাতন ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদে পরমাত্মা সম্পর্কে কি বলেছেন?
♦♣♦ পবিত্র বেদে-
ঈশ্বর নিরাকার (যজুর্ব্বেদঃ ৪০।৮)
==> বঙ্গানুবাদঃ পরমাত্মা সর্ব ব্যাপক, সর্বশক্তিমান, শরীর রহিত, রোগ রহিত, জন্ম রহিত, শুদ্ধ, নিষ্পাপ, সর্বঙ্গ, অন্তর্যামী, দুষ্টের দমন কর্তা ও অনাদি। তিনি তাঁহার শাশ্বত প্রজা জীবের জন্য যথাযথ ফলের বিধান করেন।
♦♣♦ পরমাত্মার কোন মূর্তি নাই। (যজুঃ ৩২।৩)
♦♣♦ কিন্তু আমরা মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণকে কি রূপে দেখতে পাই- শ্রী কৃষ্ণের জন্মঃ
==> নারায়ন কেশ হতে শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরামের জন্মঃ-
♦ স চাপি কেশৌ হরিরুদ্ধবই শুক্লমেকমপরং চাপি কৃষ্ণম।। ৩২।।
♦তৌ চাপি কেশৌ নিবিহোতা যদুনাং কুলে স্ত্রিয়ো দেবকৌ রোহনী চ।
তয়োরহেকো বলদেবো বভূব যেসৌ শ্বেতস্তস্য দেবস্য কেশঃ।
কৃষ্ণ দ্বিতীয়ঃ কেশবঃ সম্যভূব কেশে যোসৌ বর্ণতঃকৃষ্ণ উক্ত।। ৩৩।।
(মহাঃ আদি পর্ব, অঃ ১৯৬, শ্লোক ৩২-৩৩)
==> সরলার্থঃ সেই সময় ভগবান নারায়ন নিজ কেশ উৎপাটন করলেন। যার মধ্যে একটি শ্বেত বর্ণ দ্বিতীয় শ্যাম বর্ণ। সেই দুই কেশ যদুবংশী দুই স্ত্রী দেবকী তথা রোহিনীর মধ্যে প্রবিষ্ট হলো। তার মধ্যে রোহিনীর গর্ভে বলদেব প্রকট হলো যা নারায়নের শ্বেত কেশ ছিলো।দ্বিতীয় কেশ যা শ্যাম বর্ণের তা দেবকীর গর্ভে কৃষ্ণরূপে প্রকট হলো।
(এখানে শ্রীকৃষ্ণ জন্ম গ্রহণ করেছেন)
==> এছাড়া গীতায় ২য় অধ্যায়, ১২ নং শ্লোকে বলেছেন→ আমি, তুমি এবং এই রাজারা যে ইতিঃপূর্বে ছিলাম না তাহাও নহে, কিংবা পরেও যে থাকিবো না তাহাও নহে। গীতা ২/১২
==> আবার, গীতার ৪র্থ অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন→হে মহাবীর অর্জুন! আমার এবং তোমার বহুবার জন্ম হইয়া গিয়েছে। আমি সে সবই জানি, কিন্তু তুমি তাহা জান না।
গীতা ৪/১
♦♣♦ তাহলে মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহন করেছেন, রূপ ও আকার ছিলেন, কারো পিতা এবং কারো পুত্র ছিলেন, কার সখা, কার রথের সারথী ছিলেন, কারো (কংসের) শত্রু ছিলেন, প্রয়োজনে খাদ্য গ্রহন করেছেন, ক্লান্তিতে বিশ্রাম করেছেন, ছোট বাচ্ছাদের সাথে খেলা করেছেন, কোন স্থানে যাবার জন্য রথের সাহায্য নিয়েছেন, প্রয়োজনে প্রকৃতির ডাকে সারা দিয়েছেন।
♣♣♣ এখান থেকে প্রমাণিত হয় শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মা বা ঈশ্বর নয়। কারণ, পবিত্র বেদে বলেছেন, ঈশ্বর বা পরমাত্মার কোন জন্ম ও মৃত্যু নেই।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
♦♣♦ ঈশ্বর সর্বদা সবখানে বিরাজমান!
(যজুর্ব্বেদঃ ৪০।৫)
♦♣♦ গীতাঃ ১৩ অধ্যায়, ১৬ নং শ্লোক দেখুন!
*স্কিনসট ৪ নং দেখুন।
♦এবার দেখি মহাভারতে কি শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা সবখানে বিরাজমান ছিলেন কি না ?
♣ অতএব, মহাভারত বান পর্ব অনুষারে শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা সবখানে বিরাজমান ছিলেন না।
কিন্তু ঈশ্বর সর্বদা সবখানে বিরাজমান।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
♦♣♦ শ্রীকৃষ্ণ কাহার তপস্যা করতেন?
=> শ্রীকৃষ্ণ সহস্র বর্ষ সেই কল্যাণস্বরূপ পরমেশ্বর শিবের উপাসনা করেছিলেন।
♦ পূর্ণ বর্ষসহস্রং তু তপ্তবানেষ মাধবঃ।
প্রমাদ্য বরদং দেবং চরাচরগুরু শিবম্।।
(মহাঃ পর্ব, অঃ১৪, শ্লোক ১২)
==> অনুবাদঃ এই মাধব বরদায়ক দেব চরাচরগুরু ভগবান শিবকে প্রসন্ন করে পূর্বকালে পুরো এক হাজার বর্ষ পর্যন্ত তপস্যা করেছিলো।
=>> শ্রীকৃষ্ণ জগতে সবার প্রিয় কেন?
=> সর্বব্যাপক মহাদেবকে প্রসন্ন হেতু সবার প্রিয়তা লাভ করেছিলেন।
♦ রুদ্রভক্তা তু কৃষ্ণেন জগদ্ ব্যাপ্ত মহাত্মনা।
তং প্রসাদ্য তদা দেবং বদরী কিল ভারত।।
অর্থাৎ প্রিয়তরত্বং চ সর্বলোকেষু বৈ তদা।
প্রাপ্তবানেব রাজেন্দ্র সূবর্ণাক্ষান্মশ্বরাত।।
(মহাঃ অনুশাসন পর্ব, অঃ১৪, শ্লোক ১০-১১)
=> অনুবাদঃ রুদ্রদেবের প্রতি ভক্তির কারনেই মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ সম্পূর্ণ জগৎকে ব্যপ্ত করে রেখেছে। তিনি পূর্বকালে মহাদেবকে প্রসন্ন করে সেই মহেশ্বর দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ সব পদার্থ অপেক্ষা প্রিয়তর ভাবকে প্রাপ্ত করে অর্থাৎ সম্পূর্ণ লোকের প্রিয় হন।
=>> শ্রীকৃষ্ণের পূত্র প্রাপ্তির জন্য শিবের উপাসনা করেছিলেন।
=> কল্যাণস্বরূপ পরমেশ্বর শিবের কৃপাই উত্তম পুত্র প্রাপ্তি –
♦ ঐশ্বর্য যাদৃশং তস্য জগদ্যোনের্মহাত্মনঃ।
তদয়ং দৃষ্টবাম্ সাক্ষাত্ পূত্রার্থে হরিরচ্যুত।।
(মহাঃ অনুশাসন পর্ব, অঃ১৪, শ্লোক ১৪)
=> অনুবাদঃ জগতের কারনভূত পরমাত্মা শিবের ঐশ্বর্য যেমন সেরূপ পূত্রের জন্য তপস্যা করে এই অচ্যুত হরিকে প্রত্যক্ষ করেন।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
♦♣♦ শ্রীকৃষ্ণকে গান্ধারীর অভিশাপ-
==> কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের সঠিক নির্দেশনায় কৌরবদের পরাজয় এবং গান্ধারীর শতপুত্র নিহত হেতু পুত্রশোকে শ্রীকৃষ্ণকে গান্ধারীর অভিশাপ –
♦ পান্ডবা ধার্তরাষ্টাশ্চ দগ্ধা পরস্পরম।
উপেক্ষিতা বিনাশ্চ্যন্তসত্ব্যা কস্মাজনার্দন।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৩৯)
=> অনুবাদঃ হে জনার্দন! পান্ডব এবং ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র পরস্পরের সাথে লড়ে ভস্ম হয়ে গিয়েছে। তুমি এদের নষ্ট হতে দেখেও ইহার উপেক্ষা কি করে করলে?
♦ শক্তেন বহুমৃত্যেন বিপুলে তিষ্ঠতা বলে।
উভয়ত্র সমর্থেন শ্রুতবাক্যেন চৈব হ।।
ইচ্ছতোপেক্ষিতো নাশাঃ কুরুণাং মধুনুদন।
যস্মাৎ ত্বয়া মহাবাহো ফল তস্মাদবাপ্নুহি।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৪০-৪১)
=> অনুবাদঃ মহাবাহু মধুসুদন! তুমি শক্তিশালী ছিলে তোমার পাশে অনেক যোদ্ধা এবং সৈনিক ছিলো। তুমি মহান বল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ছিলে। দুই পক্ষ আপনার কথা মেনে নেওয়ার সামর্থ আপনার মধ্যে ছিলো। তুমি বেদশাস্ত্র ও মহাত্মাদের কথা শুনেছো এবং জেনেছো তথাপি তুমি কুরু কুলের নাশকে উপেক্ষা করেছো। জেনে বুঝেও এই বংশের বিনাশ হতে দিয়েছো। ইহা তোমার মহা দোষ, অতঃ তুমি ইহার ফল প্রাপ্ত করো।
♦ পতিত্র শুষয়া যেন্মে তপঃ কিচিদপজিতম্।
তেন ত্বাং দূরবাপেন শপ্স্যে চক্রগদাধর।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৪২)
=> অনুবাদঃ চক্র এবং গদাধারী কেশব! আমি পতির সেবা দ্বারা যা কিছু তপ করেছি। সেই দূর্লভ তপবল দ্বারা তোমাকে শাপ করছি।
♦ তমসুপস্থিতে বর্ষ ষটত্রিংশে মধুসুদন।
হতশাতির্হতাত্যো হতপুত্রো বনেচর।।
অনাথবদবিজ্ঞাতো লোকেষ্বনভিলক্ষিত।
কুসিতেনাভ্যপায়েন নিধনং মমবাক্যসি।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৪৪-৪৫)
=> অনুবাদঃ হে মধুসুদন! আজ থেকে ছত্রিশ বর্ষ উপস্থিত হওয়ার পর তোমার কুটুম্ব স্ত্রি পুত্র সবাই নিজেদের মধ্যে লড়ে মারা যাবে। তুমি অপিরিচিত লোকের দৃষ্টিতে অচল হয়ে অনাথের সমান বনে বিচরন করবে এবং কোন নিন্দিত উপায়ে মৃত্যুকে প্রাপ্ত করবে।
♦ তবাপ্যেং হতসুতা নিহতজ্ঞাতিবান্ধবাঃ।
স্ত্রিয়ঃ পরিপতিযন্তি যথৈতা ভরতস্ত্রিয়ঃ।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৪৬)
=> অনুবাদঃ এই ভরতবংশের স্ত্রীদের সমান তোমার কুলের স্ত্রী ও পুত্রী তথা ভাই মারা যাবার পর তাদের শবের পাশে বিলাপ করবে।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
♣ >> জরা ব্যাধের শরে শ্রীকৃষ্ণের দেহত্যাগ।
==> শ্রীকৃষ্ণ নিজ বংশের বিনাশ দেখে দেহ থেকে মুক্তি লাভের ইচ্ছা করলেন। এবং মন বানী এবং ইন্দ্রীয়ের নিরোধ করে যোগ সমাধি আশ্রয় করে স্থিত করলেন। সেই সময় জরা নামক ভয়ংকর ব্যাধ মৃগ শিকারে সেই স্থানে উপস্থিত হলেন। এবং শ্রীকৃষ্ণকে মৃগ মনে করে তীর নিক্ষেপ করলেন এবং সেই তীর শ্রীকৃষ্ণের পায়ে বিদ্ধ হলো। যখন মৃগ কে ধরার জন্য সেখানে আসলেন তখন সেখানে যোগে স্থিত শ্রীকৃষ্ণকে দেখতে পেলেন এবং নিজেকে অপরাধী মনে করে ভয় পেলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ তাকে আশ্বস্থ করে নিজ কান্তিতে পৃথিবী এবং আকাশ ব্যপ্ত করে উর্ধলোকে চলে গেলেন।
♦ স কেশবং যোগযুক্তং শয়ানং –
মৃগাসক্তো লুব্ধকং সায়কেন।।
জরাবিধ্যত পদতলে ত্বয়াবাং।
(মৌষল পর্ব, অঃ ৪ শ্লোক ২২-২৩)
=> অনুবাদঃ মৃগে আসক্ত হয়ে জরা ব্যাধ যোগেস্থিত কেশবকে মৃগ মনে করে তীর নিক্ষেপ করে তার পদতল বিদ্ধ করলেন।
(এখানে শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু করলেন)
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
=>> অর্জুন কর্তৃক শ্রীকৃষ্ণের অন্তিম সৎকার –
♦ ততঃ শরীরে রামস্য বাসুদেবস্য চোভয়োঃ।
অনিষ্য দাহয়ামাস পুরুষৈরাপ্তকারিভিঃ।।
(মহাঃ। মৌষল পর্ব। অঃ ৭ শ্লোক ৩১)
=> অনুবাদঃ তদনন্তর বিশ্বস্থ পুরুষ দ্বারা বললাম তথা বসুদেবনন্দন শ্রীকৃষ্ণ উভয়ের শরীর খোজ করে অর্জুন তাদের দাহ সংস্কার করলেন।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
♦♣♦ ঈশ্বর সর্বদা সচ্চিদানন্দ!
(যজুর্ব্বেদঃ ৩৬।৫)
=> সচ্চিদানন্দ অর্থ হচ্ছ, সৎ+চিৎ+আনন্দ অর্থাৎ নিত্যজ্ঞানসুখপূর্ণ ব্রহ্ম। যিনি স্বয়ং সর্বদা অনন্দিত থাকেন এবং অন্যকে আনন্দ দান করেন।
♦♣ এখন মহাভারতে দেখি, সেখানে কি শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা সচ্চিদানন্দ ছিলেন???
→ দেখি কোথায় কোথায় শ্রীকৃষ্ণ আনন্দিত ছিলেন না।
১) যখন পঞ্চপান্ডবেরা দ্রুত ক্রিয়ায় (পাশা খেলায়) সর্বশেষে বাজি হিসেবে দ্রোপদিকে রাখলো এবং পরাজিত হলো, তখন দূর্যোধনের আদেশে দূর্শাসন দ্রোপদির বস্ত্র হরণ করতেছিল তখন কি শ্রীকৃষ্ণ দূঃখ প্রকাশ করে নি?
২) কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে চক্রগুহর ভেতরে যখন নিরঅস্ত্র অভীমনূকে হত্যা করেছিল, তখন কি শ্রীকৃষ্ণ দূঃখ প্রকাশ করে নি?
৩) গুরু দ্রোণের পুত্র অর্শোধামা যখন যুদ্ধের নিয়ম ভেঙ্গে রাতের অাঁধারে পঞ্চপান্ডবের পঞ্চপুত্রকে বিশ্রামঘরে হত্যা করেছিল, তখন কি শ্রীকৃষ্ণ দূঃখ প্রকাশ করে নি?
৪) গুরু দ্রোণের পুত্র অর্শোধামা যখন ব্রহ্মাঅস্ত্র নিক্ষেপ করে অভীমনূর গর্ভজাত সন্তান (পরীক্ষিত) কে উত্তরার গর্ভেই হত্যা করেছি তখন কি শ্রীকৃষ্ণ দূঃখ প্রকাশ করে নি?
৫) গান্ধেরীর অভিশাবের ফলে যখন রামের মৃত্যু , স্ত্রীকুল এবং যদু বংশের সকল শিশুর মৃত্যু হচ্ছিলো অর্থাৎ যদু বংশ ধ্বংষ হচ্ছিল, তখনো কি শ্রীকৃষ্ণ দূঃখ প্রকাশ করে নি?
>> উক্ত সময় শ্রীকৃষ্ণ দূঃখ প্রকাশ করলে, সেই মূহুত্বে শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে সচ্চিদানন্দ ছিলেন???
কিন্তু ঈশ্বর বা পরমাত্মা সর্বদাই সচ্চিদানন্দ।
এবার স্বয়ং বিবেচনা করুন।
এবং এই টুকিটাকি তথ্য থেকেই জানবো, শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর হন কি না!!!
সত্যি কি শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর ছিলেন?
♦♣♦ বহু মানুষের মনে একটি প্রশ্ন- ঈশ্বর সাকার নাকি নিরাকার?
==> আসুন, কোন মুখের কথায় বিশ্বাস না করে গীতায় কি বলে তা জানার চেষ্টা করি।
==> গীতায় ২/২৩ নং শ্লোকে বলেছে- এই আত্মাকে অস্ত্র দ্বারা ছেদন করা যায় না, অগ্নি ইহাকে দগ্ধ করিতে পারে না, জল ইহাকে আর্দ্র করিতে পারে না, এবং বায়ু ইহাকে শুষ্ক করিতে পারে না।
==> এই আত্মাকে কেউ কি দেখিতে পায়েছেন?
তবে আত্মার আত্মা পরমাত্মাকে কেউ কি করে দেখতে পারে?
==>গীতায় বলেছে- সূর্য-চন্দ্র-অগ্নি যাহা প্রকাশে অসমর্থ, যে স্থানে আশ্রয় লইলে জীব আর ফিরে আসে না, সেই স্থানই পরমাত্মার পরম ধাম। গীতাঃ ১৫/৬
==> তিনি (পরমাত্মা) সকল জ্যোতির জ্যোতিঃস্বরূপ, তিনি (পরমাত্মা) তমসার অতীত, তিনি (পরমাত্মা) জ্ঞান, আবার তিনি (পরমাত্মা) জ্ঞেয়, তিনি (পরমাত্মা) জ্ঞানগম্য, তিনি (পরমাত্মা) সকলের হৃদয়ের মধ্যস্থলে আছেন।
গীতাঃ ১৩/১৮
==> আমরা সকলেই জানি পরমাত্মাকে ব্রহ্ম বলে। গীতার ৮ অধ্যায় ৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে সেই কথাই বলেছে- অক্ষরং ব্রহ্ম পরমং।
==> এবার দেখি সনাতন ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদে পরমাত্মা সম্পর্কে কি বলেছেন?
♦♣♦ পবিত্র বেদে-
ঈশ্বর নিরাকার (যজুর্ব্বেদঃ ৪০।৮)
==> বঙ্গানুবাদঃ পরমাত্মা সর্ব ব্যাপক, সর্বশক্তিমান, শরীর রহিত, রোগ রহিত, জন্ম রহিত, শুদ্ধ, নিষ্পাপ, সর্বঙ্গ, অন্তর্যামী, দুষ্টের দমন কর্তা ও অনাদি। তিনি তাঁহার শাশ্বত প্রজা জীবের জন্য যথাযথ ফলের বিধান করেন।
♦♣♦ পরমাত্মার কোন মূর্তি নাই। (যজুঃ ৩২।৩)
♦♣♦ কিন্তু আমরা মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণকে কি রূপে দেখতে পাই- শ্রী কৃষ্ণের জন্মঃ
==> নারায়ন কেশ হতে শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরামের জন্মঃ-
♦ স চাপি কেশৌ হরিরুদ্ধবই শুক্লমেকমপরং চাপি কৃষ্ণম।। ৩২।।
♦তৌ চাপি কেশৌ নিবিহোতা যদুনাং কুলে স্ত্রিয়ো দেবকৌ রোহনী চ।
তয়োরহেকো বলদেবো বভূব যেসৌ শ্বেতস্তস্য দেবস্য কেশঃ।
কৃষ্ণ দ্বিতীয়ঃ কেশবঃ সম্যভূব কেশে যোসৌ বর্ণতঃকৃষ্ণ উক্ত।। ৩৩।।
(মহাঃ আদি পর্ব, অঃ ১৯৬, শ্লোক ৩২-৩৩)
==> সরলার্থঃ সেই সময় ভগবান নারায়ন নিজ কেশ উৎপাটন করলেন। যার মধ্যে একটি শ্বেত বর্ণ দ্বিতীয় শ্যাম বর্ণ। সেই দুই কেশ যদুবংশী দুই স্ত্রী দেবকী তথা রোহিনীর মধ্যে প্রবিষ্ট হলো। তার মধ্যে রোহিনীর গর্ভে বলদেব প্রকট হলো যা নারায়নের শ্বেত কেশ ছিলো।দ্বিতীয় কেশ যা শ্যাম বর্ণের তা দেবকীর গর্ভে কৃষ্ণরূপে প্রকট হলো।
(এখানে শ্রীকৃষ্ণ জন্ম গ্রহণ করেছেন)
==> এছাড়া গীতায় ২য় অধ্যায়, ১২ নং শ্লোকে বলেছেন→ আমি, তুমি এবং এই রাজারা যে ইতিঃপূর্বে ছিলাম না তাহাও নহে, কিংবা পরেও যে থাকিবো না তাহাও নহে। গীতা ২/১২
==> আবার, গীতার ৪র্থ অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন→হে মহাবীর অর্জুন! আমার এবং তোমার বহুবার জন্ম হইয়া গিয়েছে। আমি সে সবই জানি, কিন্তু তুমি তাহা জান না।
গীতা ৪/১
♦♣♦ তাহলে মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহন করেছেন, রূপ ও আকার ছিলেন, কারো পিতা এবং কারো পুত্র ছিলেন, কার সখা, কার রথের সারথী ছিলেন, কারো (কংসের) শত্রু ছিলেন, প্রয়োজনে খাদ্য গ্রহন করেছেন, ক্লান্তিতে বিশ্রাম করেছেন, ছোট বাচ্ছাদের সাথে খেলা করেছেন, কোন স্থানে যাবার জন্য রথের সাহায্য নিয়েছেন, প্রয়োজনে প্রকৃতির ডাকে সারা দিয়েছেন।
♣♣♣ এখান থেকে প্রমাণিত হয় শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মা বা ঈশ্বর নয়। কারণ, পবিত্র বেদে বলেছেন, ঈশ্বর বা পরমাত্মার কোন জন্ম ও মৃত্যু নেই।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
♦♣♦ ঈশ্বর সর্বদা সবখানে বিরাজমান!
(যজুর্ব্বেদঃ ৪০।৫)
♦♣♦ গীতাঃ ১৩ অধ্যায়, ১৬ নং শ্লোক দেখুন!
*স্কিনসট ৪ নং দেখুন।
♦এবার দেখি মহাভারতে কি শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা সবখানে বিরাজমান ছিলেন কি না ?
♣ অতএব, মহাভারত বান পর্ব অনুষারে শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা সবখানে বিরাজমান ছিলেন না।
কিন্তু ঈশ্বর সর্বদা সবখানে বিরাজমান।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
♦♣♦ শ্রীকৃষ্ণ কাহার তপস্যা করতেন?
=> শ্রীকৃষ্ণ সহস্র বর্ষ সেই কল্যাণস্বরূপ পরমেশ্বর শিবের উপাসনা করেছিলেন।
♦ পূর্ণ বর্ষসহস্রং তু তপ্তবানেষ মাধবঃ।
প্রমাদ্য বরদং দেবং চরাচরগুরু শিবম্।।
(মহাঃ পর্ব, অঃ১৪, শ্লোক ১২)
==> অনুবাদঃ এই মাধব বরদায়ক দেব চরাচরগুরু ভগবান শিবকে প্রসন্ন করে পূর্বকালে পুরো এক হাজার বর্ষ পর্যন্ত তপস্যা করেছিলো।
=>> শ্রীকৃষ্ণ জগতে সবার প্রিয় কেন?
=> সর্বব্যাপক মহাদেবকে প্রসন্ন হেতু সবার প্রিয়তা লাভ করেছিলেন।
♦ রুদ্রভক্তা তু কৃষ্ণেন জগদ্ ব্যাপ্ত মহাত্মনা।
তং প্রসাদ্য তদা দেবং বদরী কিল ভারত।।
অর্থাৎ প্রিয়তরত্বং চ সর্বলোকেষু বৈ তদা।
প্রাপ্তবানেব রাজেন্দ্র সূবর্ণাক্ষান্মশ্বরাত।।
(মহাঃ অনুশাসন পর্ব, অঃ১৪, শ্লোক ১০-১১)
=> অনুবাদঃ রুদ্রদেবের প্রতি ভক্তির কারনেই মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ সম্পূর্ণ জগৎকে ব্যপ্ত করে রেখেছে। তিনি পূর্বকালে মহাদেবকে প্রসন্ন করে সেই মহেশ্বর দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ সব পদার্থ অপেক্ষা প্রিয়তর ভাবকে প্রাপ্ত করে অর্থাৎ সম্পূর্ণ লোকের প্রিয় হন।
=>> শ্রীকৃষ্ণের পূত্র প্রাপ্তির জন্য শিবের উপাসনা করেছিলেন।
=> কল্যাণস্বরূপ পরমেশ্বর শিবের কৃপাই উত্তম পুত্র প্রাপ্তি –
♦ ঐশ্বর্য যাদৃশং তস্য জগদ্যোনের্মহাত্মনঃ।
তদয়ং দৃষ্টবাম্ সাক্ষাত্ পূত্রার্থে হরিরচ্যুত।।
(মহাঃ অনুশাসন পর্ব, অঃ১৪, শ্লোক ১৪)
=> অনুবাদঃ জগতের কারনভূত পরমাত্মা শিবের ঐশ্বর্য যেমন সেরূপ পূত্রের জন্য তপস্যা করে এই অচ্যুত হরিকে প্রত্যক্ষ করেন।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
♦♣♦ শ্রীকৃষ্ণকে গান্ধারীর অভিশাপ-
==> কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের সঠিক নির্দেশনায় কৌরবদের পরাজয় এবং গান্ধারীর শতপুত্র নিহত হেতু পুত্রশোকে শ্রীকৃষ্ণকে গান্ধারীর অভিশাপ –
♦ পান্ডবা ধার্তরাষ্টাশ্চ দগ্ধা পরস্পরম।
উপেক্ষিতা বিনাশ্চ্যন্তসত্ব্যা কস্মাজনার্দন।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৩৯)
=> অনুবাদঃ হে জনার্দন! পান্ডব এবং ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র পরস্পরের সাথে লড়ে ভস্ম হয়ে গিয়েছে। তুমি এদের নষ্ট হতে দেখেও ইহার উপেক্ষা কি করে করলে?
♦ শক্তেন বহুমৃত্যেন বিপুলে তিষ্ঠতা বলে।
উভয়ত্র সমর্থেন শ্রুতবাক্যেন চৈব হ।।
ইচ্ছতোপেক্ষিতো নাশাঃ কুরুণাং মধুনুদন।
যস্মাৎ ত্বয়া মহাবাহো ফল তস্মাদবাপ্নুহি।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৪০-৪১)
=> অনুবাদঃ মহাবাহু মধুসুদন! তুমি শক্তিশালী ছিলে তোমার পাশে অনেক যোদ্ধা এবং সৈনিক ছিলো। তুমি মহান বল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ছিলে। দুই পক্ষ আপনার কথা মেনে নেওয়ার সামর্থ আপনার মধ্যে ছিলো। তুমি বেদশাস্ত্র ও মহাত্মাদের কথা শুনেছো এবং জেনেছো তথাপি তুমি কুরু কুলের নাশকে উপেক্ষা করেছো। জেনে বুঝেও এই বংশের বিনাশ হতে দিয়েছো। ইহা তোমার মহা দোষ, অতঃ তুমি ইহার ফল প্রাপ্ত করো।
♦ পতিত্র শুষয়া যেন্মে তপঃ কিচিদপজিতম্।
তেন ত্বাং দূরবাপেন শপ্স্যে চক্রগদাধর।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৪২)
=> অনুবাদঃ চক্র এবং গদাধারী কেশব! আমি পতির সেবা দ্বারা যা কিছু তপ করেছি। সেই দূর্লভ তপবল দ্বারা তোমাকে শাপ করছি।
♦ তমসুপস্থিতে বর্ষ ষটত্রিংশে মধুসুদন।
হতশাতির্হতাত্যো হতপুত্রো বনেচর।।
অনাথবদবিজ্ঞাতো লোকেষ্বনভিলক্ষিত।
কুসিতেনাভ্যপায়েন নিধনং মমবাক্যসি।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৪৪-৪৫)
=> অনুবাদঃ হে মধুসুদন! আজ থেকে ছত্রিশ বর্ষ উপস্থিত হওয়ার পর তোমার কুটুম্ব স্ত্রি পুত্র সবাই নিজেদের মধ্যে লড়ে মারা যাবে। তুমি অপিরিচিত লোকের দৃষ্টিতে অচল হয়ে অনাথের সমান বনে বিচরন করবে এবং কোন নিন্দিত উপায়ে মৃত্যুকে প্রাপ্ত করবে।
♦ তবাপ্যেং হতসুতা নিহতজ্ঞাতিবান্ধবাঃ।
স্ত্রিয়ঃ পরিপতিযন্তি যথৈতা ভরতস্ত্রিয়ঃ।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৪৬)
=> অনুবাদঃ এই ভরতবংশের স্ত্রীদের সমান তোমার কুলের স্ত্রী ও পুত্রী তথা ভাই মারা যাবার পর তাদের শবের পাশে বিলাপ করবে।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
♣ >> জরা ব্যাধের শরে শ্রীকৃষ্ণের দেহত্যাগ।
==> শ্রীকৃষ্ণ নিজ বংশের বিনাশ দেখে দেহ থেকে মুক্তি লাভের ইচ্ছা করলেন। এবং মন বানী এবং ইন্দ্রীয়ের নিরোধ করে যোগ সমাধি আশ্রয় করে স্থিত করলেন। সেই সময় জরা নামক ভয়ংকর ব্যাধ মৃগ শিকারে সেই স্থানে উপস্থিত হলেন। এবং শ্রীকৃষ্ণকে মৃগ মনে করে তীর নিক্ষেপ করলেন এবং সেই তীর শ্রীকৃষ্ণের পায়ে বিদ্ধ হলো। যখন মৃগ কে ধরার জন্য সেখানে আসলেন তখন সেখানে যোগে স্থিত শ্রীকৃষ্ণকে দেখতে পেলেন এবং নিজেকে অপরাধী মনে করে ভয় পেলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ তাকে আশ্বস্থ করে নিজ কান্তিতে পৃথিবী এবং আকাশ ব্যপ্ত করে উর্ধলোকে চলে গেলেন।
♦ স কেশবং যোগযুক্তং শয়ানং –
মৃগাসক্তো লুব্ধকং সায়কেন।।
জরাবিধ্যত পদতলে ত্বয়াবাং।
(মৌষল পর্ব, অঃ ৪ শ্লোক ২২-২৩)
=> অনুবাদঃ মৃগে আসক্ত হয়ে জরা ব্যাধ যোগেস্থিত কেশবকে মৃগ মনে করে তীর নিক্ষেপ করে তার পদতল বিদ্ধ করলেন।
(এখানে শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু করলেন)
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
=>> অর্জুন কর্তৃক শ্রীকৃষ্ণের অন্তিম সৎকার –
♦ ততঃ শরীরে রামস্য বাসুদেবস্য চোভয়োঃ।
অনিষ্য দাহয়ামাস পুরুষৈরাপ্তকারিভিঃ।।
(মহাঃ। মৌষল পর্ব। অঃ ৭ শ্লোক ৩১)
=> অনুবাদঃ তদনন্তর বিশ্বস্থ পুরুষ দ্বারা বললাম তথা বসুদেবনন্দন শ্রীকৃষ্ণ উভয়ের শরীর খোজ করে অর্জুন তাদের দাহ সংস্কার করলেন।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
♦♣♦ ঈশ্বর সর্বদা সচ্চিদানন্দ!
(যজুর্ব্বেদঃ ৩৬।৫)
=> সচ্চিদানন্দ অর্থ হচ্ছ, সৎ+চিৎ+আনন্দ অর্থাৎ নিত্যজ্ঞানসুখপূর্ণ ব্রহ্ম। যিনি স্বয়ং সর্বদা অনন্দিত থাকেন এবং অন্যকে আনন্দ দান করেন।
♦♣ এখন মহাভারতে দেখি, সেখানে কি শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা সচ্চিদানন্দ ছিলেন???
→ দেখি কোথায় কোথায় শ্রীকৃষ্ণ আনন্দিত ছিলেন না।
১) যখন পঞ্চপান্ডবেরা দ্রুত ক্রিয়ায় (পাশা খেলায়) সর্বশেষে বাজি হিসেবে দ্রোপদিকে রাখলো এবং পরাজিত হলো, তখন দূর্যোধনের আদেশে দূর্শাসন দ্রোপদির বস্ত্র হরণ করতেছিল তখন কি শ্রীকৃষ্ণ দূঃখ প্রকাশ করে নি?
২) কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে চক্রগুহর ভেতরে যখন নিরঅস্ত্র অভীমনূকে হত্যা করেছিল, তখন কি শ্রীকৃষ্ণ দূঃখ প্রকাশ করে নি?
৩) গুরু দ্রোণের পুত্র অর্শোধামা যখন যুদ্ধের নিয়ম ভেঙ্গে রাতের অাঁধারে পঞ্চপান্ডবের পঞ্চপুত্রকে বিশ্রামঘরে হত্যা করেছিল, তখন কি শ্রীকৃষ্ণ দূঃখ প্রকাশ করে নি?
৪) গুরু দ্রোণের পুত্র অর্শোধামা যখন ব্রহ্মাঅস্ত্র নিক্ষেপ করে অভীমনূর গর্ভজাত সন্তান (পরীক্ষিত) কে উত্তরার গর্ভেই হত্যা করেছি তখন কি শ্রীকৃষ্ণ দূঃখ প্রকাশ করে নি?
৫) গান্ধেরীর অভিশাবের ফলে যখন রামের মৃত্যু , স্ত্রীকুল এবং যদু বংশের সকল শিশুর মৃত্যু হচ্ছিলো অর্থাৎ যদু বংশ ধ্বংষ হচ্ছিল, তখনো কি শ্রীকৃষ্ণ দূঃখ প্রকাশ করে নি?
>> উক্ত সময় শ্রীকৃষ্ণ দূঃখ প্রকাশ করলে, সেই মূহুত্বে শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে সচ্চিদানন্দ ছিলেন???
কিন্তু ঈশ্বর বা পরমাত্মা সর্বদাই সচ্চিদানন্দ।
এবার স্বয়ং বিবেচনা করুন।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন: ভাগবত পুরাণের প্রতারণা দেখুনঃ
জন্মাষ্টমীর উৎসব উদযাপন অনেকেই করেন।
ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল বলেই সবাই বিশ্বাস করেন বা পুরাণে তাই লেখা আছে।
ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে,আকাশে পূর্ণ চন্দ্রের উদয় হয় না অর্থাৎ পূর্ণিমার সময় আমরা যে গোলাকার চাঁদ দেখি, চাঁদের সেই পূর্ণাঙ্গ রূপ কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে থাকে না।
কিন্তু, ভাগবত পুরাণে বলা হয়েছে যে,
শ্রীকৃষ্ণের জন্ম গ্ৰহণের সময় আকাশের পূর্ব দিকে পূর্ণ চাঁদ প্রকাশিত ছিল।
ভাগবত পুরাণের লেখক কি মাত্রায় নেশা দ্রব্য গ্ৰহণ করতেন, আমার জানা নেই।
তাছাড়া, মিথ্যা লিখতে লিখতে মানুষ তাল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে বোধহয়!
প্রমাণ দেখুন:------------
মুমুচুর্মুনয়ো দেবাঃ সুমনাংসি মুদান্বিতাঃ।
মন্দং মন্দং জলধরা
জগর্জুরনুসাগরম্ ।।
নিশীথে তমউদ্ভূতে জায়মানে
জনার্দনে ।
দেবক্যাং দেবরূপিণ্যাং বিষ্ণুঃ সর্বগুহাশয়ঃ ।
আবিরাসীদ্ যথা প্রাচ্যাং দিশীন্দুরিব পুষ্কলঃ ॥
ভাগবত পুরাণ
স্কন্ধ_10_ অধ্যায়_3_ শ্লোক_7-8
•অনুবাদ_যখন সব জীবের হৃদয়ে অবস্থিত ভগবান শ্রীবিষ্ণু পূর্ব দিকে উদিত পূর্ণ চাঁদের মত গভীর অন্ধকার রাতে দেবকীর গর্ভ থেকে আবির্ভূত হলেন বা জন্ম গ্ৰহণ করলেন,
তখন দেবতা ও ঋষিরা আনন্দে পুষ্প বৃষ্টি করতে লাগলেন এবং আকাশের মেঘেরা মৃদু গর্জন করতে লাগল!!
বিশ্লেষণ_ 1.কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পূর্ণ চাঁদ উদিত হতে পারেই না।
2.দক্ষিণ ভারতের, বৈষ্ণবদের মতে, বিষ্ণুর অংশ হলেন শ্রীকৃষ্ণ।
প্রকৃতপক্ষে, ভাগবতের এই শ্লোকটির দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বৈষ্ণবদের মত পুষ্টি লাভ করেছে,কারণ এই শ্লোকে বলা হয়েছে, দেবকীর গর্ভ থেকে ভগবান বিষ্ণু জন্ম গ্ৰহণ করেছেন!!
যদিও, ভাগবতের অন্যত্র বলা হয়েছে,শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান!!
ভাগবত পুরাণে এইরকম পরস্পর বিরোধী তথ্য অনেক আছে।
গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের মতে, শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান আর বিষ্ণু হলেন শ্রীকৃষ্ণের সামান্য অংশ মাত্র!!
বিচার করার বিষয় হল এই যে, বৈষ্ণবদের নিজেদের মধ্যেই গোলযোগ,ঈশ্বর কে তা নিয়ে!
এঁরা আবার জ্ঞান দিতে আসেন, ঈশ্বর নিয়ে!!
আপনি যদি শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর ভাবেন তাহলে, দক্ষিণ ভারতের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে আপনি মূর্খ !!
আবার আপনি যদি,বিষ্ণুকে ঈশ্বর ভাবেন তাহলে গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের কাছে আপনি মূর্খ!!
প্রতারক বৈষ্ণব সম্প্রদায় এইভাবেই আমাদের সবাইকে প্রতারণা করছেন!
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ