বেদে মাংস ভক্ষণের বিধান নাই
কোন সাহিত্যের ব্যাখা করিতে হইলে সেই সাহিত্যের ব্যাকরণ ও অভিধান অনুসারে করিতে হয়। সংস্কৃত সাহিত্য দুই প্রকারের আছে—বৈদিক সাহিত্য ও লৌকিক সাহিত্য। লৌকিক সাহিত্যের ব্যাখ্যা মুগ্ধবোধ ও সংক্ষিপ্তসার আদি ব্যাকরণের এবং অমরকোষ অভিধান অনুসারে করিতে হয় বৈদিক সাহিত্যের ব্যাখ্যা বৈদিক ব্যাকরণ “পানিনি” এবং শব্দ কোষ নিঘন্টু ও নিরুক্ত অনুসারে না করিলে অনর্থের সৃষ্টি হয়। বেদে কোন রুড়ি শব্দ নাই, সকল শব্দই যৌগিক বা যোগারু। অনর্থের কিছু নমুনা প্রদর্শিত হইল।
| “প্রেত জয়ত নর ইন্দ্রে। বঃ শৰ্ম্ম যচ্ছতু উগ্ৰাবঃ সন্তু ৰাহৰ হনাবৃষ সয়থ যঃ বেদ”—এই মন্ত্রের দেবতা। ( বিষয় বস্তু Subject matter) হইতেছে যোদ্ধাগন । যোদ্ধাদের স্তুতি করা হইয়াছে—হে যোদ্ধাগণ তোমরা দ্রুত গতিতে অগ্রসর হও, তাহাদের উপর বিজয়লাভ কর। প্র-ইত ধাতু গমণ অর্থে প্রেতা হইয়াছে। লৌকিক ব্যাকরণ মতে মৃত মনুষ্যকে আহবান করা হইয়াছে বিষ্ণুরূপী প্রেত রাজের’ও অর্থ করা হইয়াছে।
“স্বধিতে মৈনং হিংসী”– লৌকিক ব্যাকরণ মতে অর্থ হইল তরবারিকে শানিত করিয়া পশুর উদরচ্ছেদ করিবে। মন্ত্রের অর্থ হইল হে পরশু পশুকে হত্যা করিও না । এই মন্ত্রের দেবতা হইল বিদ্বানগণ । অর্থ হইল হে প্রশস্ত অধ্যাপক তুমি কুমারী শিষ্যাকে অনুচিৎ তাড়না করিও না।
নমঃ শুভঃ” –লৌকিক ব্যাকরণ অনুসারে ভাষ্য হইল হে কুকুর রূপী রুদ্র, তোমাকে নমস্কার। বৈদিক শব্দকোষ অনুসারে ‘নম” অন্ন অর্থে প্রয়োগ হয়। সুতরাং এই মন্ত্রের অর্থ হইল “কুকুরকে অন্ন দাও।
বৈদিক কোষ ও ব্যাকরণ অনুসারে ঋগ্বেদের ১ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম মণ্ডলের মন্ত্র গুলিয় অর্থ এরূপ হইবে-ঋগ্ধের ১০ম ৮৬ সু মন্ত্র ১৫ ।
বৃষভো ন তিগ্ন শৃঙ্গে। Sন্ত যুথেষু রোবৎ মন্থস্তু ইন্দ্ৰ শং হৃদে যং তে সুনোতি ভাব, বিশস্মাদিন্দ্র উত্তরঃ ।।
পদাথঃ- (ন) যে প্রকার ( তীক্ষ্ম শৃঙ্গ) প্রখর শিং বিশিষ্ট বৃষভঃ) বদ (মুথেষু দলে অন্তরঃ) মধ্যে (য়োরুবৎ ) শব্দ করে ঐ প্রকার এই জীব শরীরের ৭িভিন্ন ইন্দ্রিয়ের মধ্যে প্রেরণা দান করে। হে (ই) পরমেশ্বর (ভায়, বিভিগুণ সমূহের মননদ্বারা উপাসকগণ যম) যাকে (তে) তোমাকে পাইবার জন্য {সুনেতি যে জ্ঞান উৎপন্ন করে (তে তােমার প্রাপ্তি তে (মন্থঃ) ঐ জ্ঞান দে) উপাসকের হৃদয়ে (শম, কলাণ কারী হয় (ইন্দ্র) পরমেশ্বর (বিশ্বস্মং) সকল পদাথের জীবজগৎ ও প্রকৃতি পরমাণুর কাৰ্য কারণের মধ্যে উত্তর ) সূহ্ম তম ও শ্রেষ্ঠ। ভাবার্থ -যে প্রকারে বলদ দলের মধ্যে শব্দ করে ঐরূপ এই জীব শরীরে বিভিঃ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে প্রেরনা দান করে গুন স্মুহের দ্বারা উপাসক গণের হৃদয়ে তোমার প্রাপ্তিতে কল্যাণ কারী জ্ঞান উৎপন্ন হয়। ঈশ্বর সকল পদার্থের মধ্যে সূক্ষতম ও শ্রেষ্ঠ।
এই মন্ত্রে ১৫ বা ২০ অঙ্ক বোধক কোন পদ নাই। প্রার্থনা উপাসনা আদি ভাব যুক্ত ইন্দ্ৰ শব্দ ঈশ্বর বোধক, অন্যাত্র রাজ; তেজস্বী পুরুষ ও নেতা আদি বুঝায়।
“কর্হি স্বিৎসা ত ইন্দ্র চেত্যাসদঘস্য যদ্ভিনদো রক্ষ এষৎ।মিক্রূবো যচ্ছসনে ন গাবঃ পৃথিব্যা আপৃগমুয়া শয়ন্তে।।
ঋগ্বেদ ১০/৮৯/১৪
পদার্থঃ- হে (ইন্দ্র) তেজস্বী পুরুষ (তে) ‘তোমার (অঘস) পাপ নাসকারী (চত্যা) শক্তি (কহিম্বিৎ) কখন (অসৎ) প্রকট হইবে (যৎ) যাহা হইতে তুমি (রক্ষ) রাক্ষস দিগকে (ভিনদঃ) ভেদ করিয়া( মিত্ৰক্রুৰঃ) মিত্রের উপর করতাকারীদের (এষৎ) আঈষৎ ভীত করিয়া (যৎ) যাহা হইতে (শসনে) শ্মশানে, ভাগাড়ে (গবঃ) পশুকে ! ন সমান (আপৃক) মারিয়া (অমুয়) এই (পৃথিব্যা) পৃথিবীর উপর শয়ন্তে পড়ে।
ভাবার্থ – হে তেজস্বী পুরুষ! তোমার পাপ নাশক শক্তি কখন প্রকট হইবে? যাহার দ্বারা তুমি রাক্ষস দিগের নাশ কর এবং মিত্র দিগের দ্রোহ ও কুতকারীগণকে ভীতকর এবং তাহাদের শরীর ভাগাড়ে ফেল যেমন মৃত পশুকে ভাগাড়ে ফেলে ।
ঋগ্বেদ ৬ মণ্ডল। ১৭। ১১ মন্ত্র
‘বর্ধানং বিশ্বে মরুতঃ সজোষাঃ পচচ্চতং মহিষাং তুভ্যম,। পূষা বিষ্ণুত্রীণি সরাঃ মি ধাবনবৃত্রহণং মদিরমশুমস্মৈ ,
পদাথ-হে (ইন্দ্র) সূর্যের সমান বর্তমান রাজা (সজোষাঃ) তুল্য প্রীতির সহিত সেবনকারী অর্থাৎ প্রাণীমাত্রের প্রতি সমদর্শিতা (বিশ্বে) সম্পূর্ণ (মরুতঃ) মনুষ্য (যম) যিনি আপনাকে (বর্দ্ধান)
বৃদ্ধি করে আর যে (পুষা) পুষ্টিকারী | (ধাবন) ধাবিত হইয়া (বিষ্ণু) ব্যাপক বিজলি যে রূপ (ত্রীনি সরাংসি) দু লোক আন্তরিক ও পৃথিবী এই তিন লোকে প্রবাহিত অবস্থায় ব্যাপ্ত আছে (অ)ইহার জন্য (মদিবমং ) আন্দনকারী (অংশুম) বিভক্ত ( বৃত্রহনমং) সূৰ্য্য যে রূপ মেঘকে নাশ করে ঐরূপ শত্রুকে নাশকারী, আর যে (তুভ্যাম), ‘ আপনার জন্য (শতম,) বহু (মহিষান, ) উত্তম পদার্থের দান দ্বারা এবং পরোপকারের জন্য (পচং) পাক করে তাহাকে আপনারা জানুন।
| ভাৰাৰ্থ—যে রূপ প্রজাপালক রাজা রাজ্য বিস্তার করে সেইরূপ প্ৰজাদিগকে নিরস্থর বৃদ্ধি করুক।
১ম মণ্ডল ১৬২।১১ মন্ত্র
যত্তে গাত্রাদাগ্নিনা পচ্যমানদভি শূলং নিহতস্যাবধাবতি। মা তদ্ভূম্যামা শ্রিষন্মা তৃণেষু দেবেভ্যস্তদুশদ্ভ্যো রাতমস্তুু।।
পদাথ-হে বীর (নিধিতপ্ত) নি পূর্বক হন ধাতুর অর্থ প্রহার করা অস্ত্র প্রয়ােগ করিতে থাকা কালে (ত) তােমার ( অগ্নিনাং) ক্রোধাগ্নি হইতে ( গাত্রাং) হস্তদ্ধারা ( পচামানৎ) অগ্নি সংযোগ তীক্ষ্ণধার বিশিষ্ট (যৎ ) যে অস্ত্র (অভিশূলং) নিদ্ধারিত লক্ষে। (অবধাবতি) ধাবিত হয় (মা) না । (তদৃভূম্যানশিযৎ ) তৃণ আচ্ছাদিত ভূমির উপর পড়িয়া নিস্ফল না হয় ( উশদভাঃ) আমাদিগের সম্পত্তি আদি আক্রমনকারী ( দেবেভঃ) দিগুনশালী শত্রুর উপর ( রাতম) অস্ত্ৰ ( অস্তু) হোক। ভাবার্থ-যুদ্ধকুশল যোদ্ধার বর্ণনা করা হইয়াছে। সুস্থিরতা পূর্বক শত্রুর উপর অস্ত্র প্রয়োগ করিতে হইবে।
১ম মণ্ডল ১৬২ সুক্ত মন্ত্র ১২ ।
যে বাজিনং পরিপশ্যন্তি পক্কং য ঈমাহুঃ সুরভির্নির্হরেতি। যে চার্বতো মাসম্ভিক্ষামুপাসত উতাে তেষামতিগূর্তির্ন ইন্বতু।।
পদার্থ- (যে) যে মনুষ্য (বাজিনং) বহু অন্নাদি পদার্থ ’ ভােজনের (পক্কং) পাক করা (পরিপশ্যন্তি) চারিদিক হইতে দেখে ( যে) যে ( ইম্) জল পাক করে (অস্থি ) কহে ( তেষাম) উহাদের (অভিগুভিঃ) উদ্যম (সুরভিঃ) সুগন্ধ (নঃ ) আমাদিগকে (ইহুতু) প্রাপ্ত হয়। (যে চ) আর যে (অর্বতঃ) প্রাপ্ত ( মাসস্তিকান) মাংস পাইবার জন্য ( উতো) তর্ক বিতর্ক ( উদাসতে) করে, হে বিধান তুমি (ইতি) এই প্রকার মাংসাদি ভক্ষণ ত্যাগ দ্বারা উদ্যমকে (নিহর) নিরঙ্কর দৃঢ় কর।
ভাবার্থ-যে সকল মনুষ্য অল্প জল শোধন ও পাক করিতে জানে এবং মাংস ভােজন তাগ করে, তাহাৱা উদাম শীল হয়। মন্ত্র ১০!
“যন্নীক্ষণং মাংষ্পচন্যা উখায়া যা পাত্ৰাণি যূষ্ণ আসেচনানি। উম্মন্যাপিধানা চরুণ্যমাঁকাঃ সূনাঃ পরিভূষন্ত্যশ্বম্ ।।
পদাথ’-(যৎ ) যে মনুষ্য ( মাংম্প ন্য। মাংসদি পাকের (উখায়া) পাকথলি কড়া আনি ত্যাগ করিয়া ( নিক্ষনং ) নিরস্থর দেখে (য) যে (যুষণ) রস বা জল ( আসেচনানি) ঠিক মত ঢালে (পাত্ৰানি) পাত্রে বড়া আদিতে (উষ্মন্যা) গরম রাখিতে ( অপিধান) ঢাকনা অাদি দেয় এবং (চরূণা)
অন্নাদি পাক কুশলী (অঙ্কঃ) উত্তমরূপে উপাদায়ে করিতে জানে ( অশ্বম) ঘােড়াকে শিক্ষা দেয় এবং (পরিভূসন্তি) জীন আদি আরা সুশোভিত করে সে (সূনাঃ) সুখে গমনা গমন করে।
ভাবার্থ- যে মনুষ মাংসাদি পাকদোষ বহিত পাকথলিতে অন্নপাক করে ‘ এর আগে ঠিকমত জল দেয় এবং উষ্ণ রাখে সে হয় উত্তম পাচক !
এই মন্ত্রে ১৫ বা ২০ অঙ্ক বোধক কোন পদ নাই। প্রার্থনা উপাসনা আদি ভাব যুক্ত ইন্দ্ৰ শব্দ ঈশ্বর বোধক, অন্যাত্র রাজ; তেজস্বী পুরুষ ও নেতা আদি বুঝায়।
“কর্হি স্বিৎসা ত ইন্দ্র চেত্যাসদঘস্য যদ্ভিনদো রক্ষ এষৎ।মিক্রূবো যচ্ছসনে ন গাবঃ পৃথিব্যা আপৃগমুয়া শয়ন্তে।।
ঋগ্বেদ ১০/৮৯/১৪
পদার্থঃ- হে (ইন্দ্র) তেজস্বী পুরুষ (তে) ‘তোমার (অঘস) পাপ নাসকারী (চত্যা) শক্তি (কহিম্বিৎ) কখন (অসৎ) প্রকট হইবে (যৎ) যাহা হইতে তুমি (রক্ষ) রাক্ষস দিগকে (ভিনদঃ) ভেদ করিয়া( মিত্ৰক্রুৰঃ) মিত্রের উপর করতাকারীদের (এষৎ) আঈষৎ ভীত করিয়া (যৎ) যাহা হইতে (শসনে) শ্মশানে, ভাগাড়ে (গবঃ) পশুকে ! ন সমান (আপৃক) মারিয়া (অমুয়) এই (পৃথিব্যা) পৃথিবীর উপর শয়ন্তে পড়ে।
ভাবার্থ – হে তেজস্বী পুরুষ! তোমার পাপ নাশক শক্তি কখন প্রকট হইবে? যাহার দ্বারা তুমি রাক্ষস দিগের নাশ কর এবং মিত্র দিগের দ্রোহ ও কুতকারীগণকে ভীতকর এবং তাহাদের শরীর ভাগাড়ে ফেল যেমন মৃত পশুকে ভাগাড়ে ফেলে ।
ঋগ্বেদ ৬ মণ্ডল। ১৭। ১১ মন্ত্র
‘বর্ধানং বিশ্বে মরুতঃ সজোষাঃ পচচ্চতং মহিষাং তুভ্যম,। পূষা বিষ্ণুত্রীণি সরাঃ মি ধাবনবৃত্রহণং মদিরমশুমস্মৈ ,
পদাথ-হে (ইন্দ্র) সূর্যের সমান বর্তমান রাজা (সজোষাঃ) তুল্য প্রীতির সহিত সেবনকারী অর্থাৎ প্রাণীমাত্রের প্রতি সমদর্শিতা (বিশ্বে) সম্পূর্ণ (মরুতঃ) মনুষ্য (যম) যিনি আপনাকে (বর্দ্ধান)
বৃদ্ধি করে আর যে (পুষা) পুষ্টিকারী | (ধাবন) ধাবিত হইয়া (বিষ্ণু) ব্যাপক বিজলি যে রূপ (ত্রীনি সরাংসি) দু লোক আন্তরিক ও পৃথিবী এই তিন লোকে প্রবাহিত অবস্থায় ব্যাপ্ত আছে (অ)ইহার জন্য (মদিবমং ) আন্দনকারী (অংশুম) বিভক্ত ( বৃত্রহনমং) সূৰ্য্য যে রূপ মেঘকে নাশ করে ঐরূপ শত্রুকে নাশকারী, আর যে (তুভ্যাম), ‘ আপনার জন্য (শতম,) বহু (মহিষান, ) উত্তম পদার্থের দান দ্বারা এবং পরোপকারের জন্য (পচং) পাক করে তাহাকে আপনারা জানুন।
| ভাৰাৰ্থ—যে রূপ প্রজাপালক রাজা রাজ্য বিস্তার করে সেইরূপ প্ৰজাদিগকে নিরস্থর বৃদ্ধি করুক।
১ম মণ্ডল ১৬২।১১ মন্ত্র
যত্তে গাত্রাদাগ্নিনা পচ্যমানদভি শূলং নিহতস্যাবধাবতি। মা তদ্ভূম্যামা শ্রিষন্মা তৃণেষু দেবেভ্যস্তদুশদ্ভ্যো রাতমস্তুু।।
পদাথ-হে বীর (নিধিতপ্ত) নি পূর্বক হন ধাতুর অর্থ প্রহার করা অস্ত্র প্রয়ােগ করিতে থাকা কালে (ত) তােমার ( অগ্নিনাং) ক্রোধাগ্নি হইতে ( গাত্রাং) হস্তদ্ধারা ( পচামানৎ) অগ্নি সংযোগ তীক্ষ্ণধার বিশিষ্ট (যৎ ) যে অস্ত্র (অভিশূলং) নিদ্ধারিত লক্ষে। (অবধাবতি) ধাবিত হয় (মা) না । (তদৃভূম্যানশিযৎ ) তৃণ আচ্ছাদিত ভূমির উপর পড়িয়া নিস্ফল না হয় ( উশদভাঃ) আমাদিগের সম্পত্তি আদি আক্রমনকারী ( দেবেভঃ) দিগুনশালী শত্রুর উপর ( রাতম) অস্ত্ৰ ( অস্তু) হোক। ভাবার্থ-যুদ্ধকুশল যোদ্ধার বর্ণনা করা হইয়াছে। সুস্থিরতা পূর্বক শত্রুর উপর অস্ত্র প্রয়োগ করিতে হইবে।
১ম মণ্ডল ১৬২ সুক্ত মন্ত্র ১২ ।
যে বাজিনং পরিপশ্যন্তি পক্কং য ঈমাহুঃ সুরভির্নির্হরেতি। যে চার্বতো মাসম্ভিক্ষামুপাসত উতাে তেষামতিগূর্তির্ন ইন্বতু।।
পদার্থ- (যে) যে মনুষ্য (বাজিনং) বহু অন্নাদি পদার্থ ’ ভােজনের (পক্কং) পাক করা (পরিপশ্যন্তি) চারিদিক হইতে দেখে ( যে) যে ( ইম্) জল পাক করে (অস্থি ) কহে ( তেষাম) উহাদের (অভিগুভিঃ) উদ্যম (সুরভিঃ) সুগন্ধ (নঃ ) আমাদিগকে (ইহুতু) প্রাপ্ত হয়। (যে চ) আর যে (অর্বতঃ) প্রাপ্ত ( মাসস্তিকান) মাংস পাইবার জন্য ( উতো) তর্ক বিতর্ক ( উদাসতে) করে, হে বিধান তুমি (ইতি) এই প্রকার মাংসাদি ভক্ষণ ত্যাগ দ্বারা উদ্যমকে (নিহর) নিরঙ্কর দৃঢ় কর।
ভাবার্থ-যে সকল মনুষ্য অল্প জল শোধন ও পাক করিতে জানে এবং মাংস ভােজন তাগ করে, তাহাৱা উদাম শীল হয়। মন্ত্র ১০!
“যন্নীক্ষণং মাংষ্পচন্যা উখায়া যা পাত্ৰাণি যূষ্ণ আসেচনানি। উম্মন্যাপিধানা চরুণ্যমাঁকাঃ সূনাঃ পরিভূষন্ত্যশ্বম্ ।।
পদাথ’-(যৎ ) যে মনুষ্য ( মাংম্প ন্য। মাংসদি পাকের (উখায়া) পাকথলি কড়া আনি ত্যাগ করিয়া ( নিক্ষনং ) নিরস্থর দেখে (য) যে (যুষণ) রস বা জল ( আসেচনানি) ঠিক মত ঢালে (পাত্ৰানি) পাত্রে বড়া আদিতে (উষ্মন্যা) গরম রাখিতে ( অপিধান) ঢাকনা অাদি দেয় এবং (চরূণা)
অন্নাদি পাক কুশলী (অঙ্কঃ) উত্তমরূপে উপাদায়ে করিতে জানে ( অশ্বম) ঘােড়াকে শিক্ষা দেয় এবং (পরিভূসন্তি) জীন আদি আরা সুশোভিত করে সে (সূনাঃ) সুখে গমনা গমন করে।
ভাবার্থ- যে মনুষ মাংসাদি পাকদোষ বহিত পাকথলিতে অন্নপাক করে ‘ এর আগে ঠিকমত জল দেয় এবং উষ্ণ রাখে সে হয় উত্তম পাচক !
ঐ রূপ যে ঘড়াকে সুশিক্ষা দেয় এবং জীনাদী (সজ্জায়) দ্বারা সজ্জিত করে সে সুখে গমনাগমন করে।
ঋগ্বেদ ৮/১০১/১৫। মন্ত্র“
প্র নু ৰোচং চিকিতুষে জনায় মা গামনাগামদিতিং বধিষ্ট ”
পলাখ’- (চিকিতুষে জনায় প্রবঅচ) জ্ঞানী বান পুরুষের নিকট আনি বলিতেছি যে, (অনাগাম) নিরপরাধ ( অদিতিম )পৃথিবী সদৃশ অহিংস (গম) গরুকে ( বধিষ্ঠ। হনন করিও না।
অনুবাদ— (পরমেশ্বর উপদেশ দিতেছেন যে ) আমি জ্ঞানবান পুরুষের নিকট বলিতেছি যে, নিরপরাধ পৃথিবী সদৃশ। অহিসংগো জাতিকে হত্যা করিও না।
অথর্ব্ববেদ মন্ত্র –
यदि॑ नो॒ गां हंसि॒ यद्यश्वं॒ यदि॒ पूरु॑षम्।
तं त्वा॒ सीसे॑न विध्यामो॒ यथा॒ नो ऽसो॒ अवी॑रहा ॥ মন্ত্র নং ১।১৬।৪
“যদিনোগাংহিংসী যদ্যশ্বং যদি পুরুষম । তংবা সীসেন বিধ্যামো যথা নো হসো অবীরহা। ”
পদার্থ- (যদি নং গাং হিংসী) যদি আমাদের গরুকে হিংসা করে (যদি অশ্বম,) যদি অশ্বকে ( যদি পুরুষম,) যদি মনুষকে হিংসা করে (তত্ত্বা) তবে তোমাকে ( সীসেন) সীসক দ্বারা ( বিধামঃ) বিদ্ধ করিব ( যথা) যাহাতে (ন) আমাদের মধ্যে ( অ-বীরহ আস) বীরেদের বিনাশক কেহ না থাকে ।
অনুবাদ – যদি তুমি আমাদের গরু, অশ্ব ও প্রজাদিগকে। হিংসা কর তবে তোমাকে সীসকের গুলি দারা বিদ্ধ করিব। আমাদের সমাজের মধ্যে বীরেদের বিনাশকারী কেহই যেন না থাকে।
पदार्थान्वयभाषाः -(यदि) जो (नः) हमारी (गाम्) गाय को, (यदि) जो (अश्वम्) घोड़े को और (यदि) जो (पुरुषम्) पुरुष को (हंसि) तू मारता है। (तम् त्वा) उस तुझको (सीसेन) बन्धन काटनेहारे सामर्थ्य [ब्रह्मज्ञान] से (विध्यामः) हम वेधते हैं, (यथा) जिससे तू (नः) हमारे (अवीरहा असः) वीरों का नाश करनेहारा न होवे ॥४॥
भावार्थभाषाः -मनुष्य वर्तमान क्लेशों को देखकर आनेवाले क्लेशों को यत्नपूर्वक रोककर आनन्द भोगें ॥४॥
टिप्पणी:४−यदि। संभावनायाम्। चेत्। गाम्। १।२।३। गोजातिम्। हंसि। हन हिंसागत्योः−लट्। मारयसि। नाशयसि। अश्वम्। अशूप्रुषिलटि०। उ० १।१५१। इति अशूङ् व्याप्तौ−क्वन्। यद्वा, अश भोजने−क्वन्। अश्वः कस्मादश्नुतेऽध्वानं महाशनो भवतीति−निरु० २।२७। जातावेकवचनम्। घोटम्। तुरङ्गम्। पूरुषम्। पुरः कुषन्। उ० ४।७४। पुर अग्रगतौ−कुषन्। अन्येषामपि दृश्यते। पा० ६।३।१३७। इति निपातनाद् दीर्घः। पुरति अग्रे गच्छतीति पुरुषः। नरं, जनम्। तम्। तथाविधम्। त्वा। त्वां हिंसकम्। सीसेन। म० २। विघ्ननाशकसामर्थ्येन, ब्रह्मज्ञानेन। विध्यामः। व्यध ताडने वेधे−दिवादित्वात् श्यन्। ग्रहिज्यावयिव्यधि०। पा० ६।१।१६। इति संप्रसारणम्। छिनद्मः। ताडयामः, मारयामः। यथा। येन प्रकारेण। असः। अस सत्तायाम्−लेटि अडागमः। त्वम् भूयाः। अवीर-हा। वीरयतीति वीरः, वीर शौर्य्ये−अच्। वीरान् हन्तीति वीरहा, वीर+हन्−क्विप्। न वीरहा अवीरहा। अशूरहन्ता ॥ अथ चतुर्थोऽनुवाकः ॥-पण्डित क्षेमकरणदास त्रिवेदी
যেখানে গোহত্যা নিষেধ করা হয়েছে এবং অশ্ব ও গাোহত্যাকারীকে গুলিবিদ্ধ করার উপদেশ আছে সেখানে গোমাংস ভক্ষণের বিধান থাকতে পারে না। বেদ মন্ত্রের অপব্যাখ্যায় গো মহিষ ও অশ্বের মাংস ভক্ষণের বিধান দেখান হইয়াছে। বেদে গোমাংস আদি ভক্ষণের বিধান থাকিলে সকল ভারতবাসীগণ গোমাংস আদি খাইত। মনুর সময় হইতে গোমাংস খাওয়া বন্ধ হইত না। কারণ মনুর বিধান অপেক্ষা বেদের বিধান মান্য করা হয়।
গোঘ্ন – গোঘ্ন শব্দের দ্বারা অতিথিকে বুঝায় বলা হইয়াছে কারন গৃহে অতিথি আসিলে গোমাংস খাওয়ানা হইত, এই উক্তি সত্য নয়। গৃহে অতিথি আসিলে আজকাল যেমন ‘চা’ দ্বারা আপ্যাইত করা হয়, সেইরূপ বৈদিক এমন কি পৌরাণিক যুগেও অতিথিকে দধি, ছানা আদি দ্বারা সৎকার করা হত। সেজন্য “গোঘ্ন” বলা হইত । “অঘ্ন” শব্দ সবত্র হত্যা অর্থে প্রযোগ হয় ন রক্ষা করা অর্থে প্রয়োগ হয়। হস্তঘ্ন’ শব্দ দ্বারা যে দ্রব্য হস্তুকে ধনুর ছিলা হইতে রক্ষা করে সেই দ্রব্যের নাম হয় । অতি পুরাকালে যুদ্ধের সময় যোদ্ধাগন হস্তগ্ন ব্যবহার করিতেন।
ইজদি ও যবনগণ মনে করিতেন যে, আদিকালে বা সুবর্ণ। যুগে মনুষ্য নিরামিষ ভোজী ছিল। মনুষ্য তার আদিম অবস্থায় নির্দোষী ছিল। সকল পশুর সহিত শান্তি পূর্ণভাবে বসবাস করিত এবং ভূমির স্বতঃস্ফূর্ত উৎপাদিত ফল ভক্ষণ করিত। এ বিষয়ে “The religion of the Semites.” p601 বলা হইয়াছে “The man is his . primitive state of inosence lived at peace with all animals eating the spontaneous fruits of the earth” বায়ু পুরানে ৮! ৪ উক্ত আছে; পৃথীরসোদ্ভনং নাম আহারং হ্যাহরস্তি বৈ।” মহাভারতে দীর্ঘ জীবন লাভের জন্য উপদেশ দেওয়া হইয়াছে-বৃষা মাংসাং নাম্নীয়াৎ” গোমাংস ভক্ষণ করিও না। যখন শিষ্টাচার বিহীন হইয়া মনুষ্য? | মাংস খাইতে আরম্ভ করিল তখনও এই সংসারে অনেক জাতি গোমাংস খাওয়া অাচার বিরুদ্ধে মনে করিত। হেরোডোটল, বলেন মিশর হইতে ট্রাইটানিয়া পর্যন্ত সকল জাতি গোমাংস। খাইত না, সীরিন দেশের স্ত্রীলোকগন গোমাংস খাওয়া অধর্ম মনে করিত।
10 fas “Thus from Egypt as far lake Tritonis … cow’s flesh however noe of the tribes ever taste, but abstain from it for the same reason as the Egyptians, neither do they any of them breed swine. Even at cyrine, the women think it wrong to eat the flesh of cow…” cecatuita. ভাগ ১, পৃঃ ৩৬১, গ্রন্থ ৪র্থ, অধ্যায় ১৮%। মনুষ্যগণ অলভ্য হইতে থাকায় এই শ্রেষ্ঠ ন পরিত্যাগ করিতে থাকে। হিজরী ৩০৭ বিঃ সংবৎ ১৭৯তে আল মাসুদী লিখিয়াছেন যীশুখৃষ্টের শিষ্যগণ ও ভিক্ষুগণ নিরামিষ ভোজী ছিলেন। কেবল মিশর দেশের শিষ্যগণ মাংস খাইতেন যীশুশিষ্য মার্ক মাংস খাইতে অনুমতি দিয়াfecera …of all the christian monks, those of Egypt are the only ones who eat meat because Mark permitted them to d) so, ইণ্ডিয়া এ্যান্টি কারি ভাগ ১৮। মেজর কিসিগোরের মূল অার ঐ অন্থ হইতে ইঞ্জী অনুবাদ আরবী গ্রন্থ কিতাব আমরূজ উল ওহর যুবারিন আল-জোহর।
যখন ভারতের কিছুটা পতন ঘটিল, অহিংস যজ্ঞে পশু বলি। আরাম্ভ হইল। তখন অন্যান্য দেশবাসীগণ ইহার অনুসরণ করিল। হেরোডোটস বলেন মিশর দেশের পুরোহিত গণেৱ সিদ্ধান্ত ছিল। যে যজ্ঞ ব্যতীত কোন পশুকে হত্যা করা বিধিমুক্ত নয়।
The Egyptian priests made it apoint of religion not to kill any live animals except those which they offer in Sacrifice ( 4:39)
নিরুক্তে পরিস্কার ভাবে বলা আছে
তদ্ধিত বন্নিগমা ভবন্তি গোভিঃ শ্রীনীত।
মৎ সরম্ গোববিঃ সন্নদ্ ধা আসিবীডয়স্ব।।।
মহর্ষি দয়ানন্দ ইহার সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন,
গরু থেকে উৎপাদিত দুগ্ধ সহিত সোম অর্থাৎ=
(ঔষধি মিশ্রিত করে পরিপাক করে যজ্ঞে আহুতি দেয়।
এই বিষয়ে অধ্যাপক অবিনাশ চন্দ্র দাসের উক্তি=
This of course may be interpreted to mean that by the word গৌ or cow is implied not her flesh but her milk and milk products like butter and ghee etc, এতে বোঝা যায়,যে,
বেদে গো মাংসো খাওয়ার কথা নেই।
কেবল মন্ত্রের বিকৃত অর্থ করে বিরুদ্ধবাদীরা,
বেদের মিথ্যাচার করে অপপ্রচার করা করা
পবিত্র বেদ, রামায়ণ, মহাভারতের কোথাও,
গোঘ্ন, শব্দে, গরু কে হত্যা করার কথা নেই,
বরং গরু রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।
যেমন হস্তাঘ্ন শব্দে যুদ্ধ ক্ষেতে বীরদের হাতকে,
রক্ষা করার ধর্ম বিশেষ
ঋকবেদে আছে--
( মাতা রুদ্রাণাং দুহিতা বসূনাং স্বসাদিত্যানাম মৃতস্য নাভিঃ।
প্রনুবোচং চিকিতুষে জনায়,মা গামনাগামদিতিং বধিষ্ট।।)) ঋ০ ৮-১০-১-১৫।
অর্থাৎ = গাববী রুদ্র ব্রহ্মচারী বিদ্বান্ গণের মাতা, নির্মাতা।
বিদ্বান্, সোনাপতি ইত্যাদি গণের নিকট গাভীকে, মাতৃতুল্য পূজনীয়া পালনীয় ও রক্ষণী বলে স্বীকৃত।
==
গাভী অমতের নাভি, "গৌ" নির্দোষ, নিস্পাপ ও অবধ্য।
=
তাকে হত্যা করো না এবং কেউ যেন তাকে হত্যা না করে।
=
মহাভারতে বলা হয়েছে--
[অঘ্ন ইতি গাবাং নাম, ক এতাহন্তমর্হতি।]
মহচ্চ কারাকুশলং, বৃষং গাং বা লভেত য়ঃ।।
অর্থাৎ= গাভীর অপর নাম অঘ্না ।
রামায়ণেও বাল্মীকি কিষ্কিন্ধ্যা কান্ডের একটি শ্লোকে,
গোঘ্ন শব্দের প্রয়োগ রয়েছে=
গোঘ্নে চৈব সুরাপে চ,চৌরে ভগ্নব্রতে তথা" ==
কিষ্কিন্ধ্যা = ৩৪।১২। এখানে গোঘ্ন " শব্দে গো হত্যাকারী বলা হয়েছে।
আবার গোমেধ শব্দের অর্থ গুরু কে হত্যা করা নয়।
গৌ" এর অর্থ পৃথিবী,বাণী, ও ইন্দ্রয়াদী ও হয়।
মেধ শব্দ মেধৃ- যথা মেধাসংগমনয়ো এই ধাতু থেকে উৎপন্ন হয়।
ভূমিতে কৃষিকার্য করা, বাণী, শুদ্ধ করা পবিদ্র করা,
মিলিত হওয়া ইত্যাদিও হয়।
(অর্থাৎ= গো+ মেধা+ যজ্ঞ, এর অর্থ হয় পৃথিবীকে উর্বর করে অন্ন উপন্ন করা কে গোমেধ যজ্ঞ বলা হয়।
বেদ সংহিতায় ২০০০০-এর অধিক (২০৩৭৯) মন্ত্র আছে, কিন্তু কোথাও গোমেধ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়না। অবশ্য কর্মকাণ্ডের যজ্ঞ বিধানসমূহের মধ্যে। গোমেধ এবং অশ্বমেধের বর্ণনা পাওয়া যায়। অশ্বমেধ এবং গোমেধ এদুটি এমন যজ্ঞ যে, যার সঙ্গে পশুহত্যার বিষয়কে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কোন রাজা অথবা ঋষি গোমেধ যজ্ঞ করেছেন এমন কোন প্রমাণ রামায়ণ-মহাভারত আদি ইতিহাস গ্রন্থে কিংবা রঘুবংশ ইত্যাদি ঐতিহাসিক কাব্যেও পরিলক্ষিত হয়না। অবশ্য প্রাচীনকালে প্রসিদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত রাজা অশ্বমেধ যজ্ঞ করতেন। মধ্যকালে বেদজ্ঞানে অজ্ঞ কর্মকাণ্ডী সাম্প্রদায়িগণ অশ্বমেধ-এর সঙ্গে পশুবধ যুক্ত করেছেন এবং এ বিষয়ে তারা মহীধরাচার্যের ন্যায় তান্ত্রিক বামমার্গী আচার্যের সাহায্য পেয়েছিলেন। রামায়ণ থেকে শুরু করে মহাভারত পর্যন্ত অনেক অশ্বমেধ যজ্ঞের বর্ণনা পাওয়া যায়, কিন্তু যজ্ঞ কুণ্ডে কোন ঘোড়ার আহুতি প্রদান কোন আর্য রাজার দ্বারা সম্পাদিত হয়নি। রাক্ষসদের কথা অবশ্য ভিন্ন ছিল। মাংস ভক্ষণ এবং চর্বির আহুতি প্রদান করা ছিল রাক্ষসী আচরণ।
অশ্বমেধ যজ্ঞতো রাষ্ট্রের সংগঠন। শতপথ ব্রাহ্মণে অশ্বমেধের ব্যাখ্যা নিম্নরূপ :
(১) রাষ্ট্রং বা অশ্বমেধঃ (শ.ব্রা.১৩/১/৬/৩) = রাষ্ট্রই [রাষ্ট্রের গঠন] অশ্বমেধ।
(২) তস্মাদ্ রাষ্ট্রয় অশ্বমেধেন যজেত (শ.ব্রা.১৩/১/৬/৩) = অতএব রাষ্ট্রবাদীর অশ্বমেধ যজ্ঞ করা উচিৎ।
(৩) 'অশ্বমেধ যাজী সর্বা দিশো অভি জয়ন্তি (শ.ব্রা.১৩/১/২/৩) = অশ্বমেধকারী সকল দিক জয় করেন।
শ্রীরামের পূর্বজ রঘু অশ্বমেধ করেন। শ্রীরামও অশ্বমেধ করেন, যুধিষ্ঠিরও করেছিলেন। যে কোন চক্রবর্ত্তী সম্রাট যিনি রাষ্ট্রের সংগঠন করেছেন, তিনিই অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পাদন করেছেন। রাজার ঐশ্বর্য ও বর্চস্বের প্রতীক ঘোড়া সকল দিকে পরিক্রমা করে আসত। ঐ ঘোড়াকে হত্যা করে টুকরো করে কখনও তো কেউ আহুতি দেয়নি। মহীধরাচার্য একজন তান্ত্রিক আচার্য ছিলেন। তিনি বেদমন্ত্রকে ভেঙ্গে চুরে অন্যরূপ দেবার চেষ্টা করেছিলেন। সায়নাচার্য মহীধরাচার্য এরা ঋষি যুগের কয়েক হাজার বৎসর পূর্বে আবির্ভূত হন। ততক্ষণে বিদেশী সংস্কৃতি-সমূহের মিল-মিশ হওয়ার অনেক সুযোগ এসে গেছে। পশু হিংসা বিদেশী সংস্কৃতির মিশ্রণের ফল। যা বেদ ব্যতীত অন্য শাস্ত্রের মধ্যে বিদেশী শাস্ত্রের মিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়। বেদ যজ্ঞকে অধ্বর বলে অভিহিত করে ["যজ্ঞমধ্বরম্"(ঋগ্বেদ-১/১/৪)]। নিরুক্তের সর্বমান্য আচার্য যাস্ক অধ্বরের ব্যাখ্যা করেছেন—"অধ্বর ইতি যজ্ঞনাম ধ্বরতির্হিংসাকর্মা তৎপ্রতিষেধঃ"(নিরুক্ত-১/৮)। হিংসার ত্যাগ হলো অধ্বর।
বেদে অনেক স্থানে যজ্ঞের জন্য অধ্বর শব্দের প্রয়োগ করা হয়েছে। অতএব বেদে ঘোড়া, গরু, ছাগল ইত্যাদি যে কোন পশু হিংসার আদেশ কিংবা বিধান নেই।
এখানে আমরা গোমেধ যজ্ঞের বিষয়ে আলোচনা করছি। 'গোমেধ যজ্ঞ' তিনটি শব্দের দ্বারা সম্পূর্ণ হয়। (১) গো, (২) মেধ ও (৩) যজ্ঞ। এই তিন শব্দের প্রথম শব্দের বিবেচনা করা উচিত।
গো : গরু চতুষ্পদ দুগ্ধ-প্রদানকারী পশু। কিন্তু সংস্কৃত সাহিত্যে “গো”-এর অনেক অর্থ হয় এবং সকল প্রকার অর্থই সাহিত্যে এবং সমাজের মধ্যে সুলভ প্রয়োগ পাওয়া যায়। হলাযুধ সংস্কৃত কোষে একটি শ্লোক পাওয়া যায়—
“দিগদৃষ্টি দীধিতস্বর্গবজ্র বাহ্মাণবারিষু।
ভূমৌ পশৌচ গো শব্দো বিশ্বদ্বিদশসু স্মৃতঃ।।"
(হলা০ অভিধান০ কা০ ৫)
অর্থাৎ—বিদ্বানগণ গো শব্দের দশ প্রকার অর্থ করেন। ১) দিশা, ২) দৃষ্টি, ৩) দীধিতি কিরণ, ৪) স্বর্গ, ৫) বজ্র, ৬) বাক্ বাণী, ৭) বাণ - তীর, ৮) বারি - জল, ৯) ভূমি, ১০) পশু (গো নামক পশু)। গোমেধ যজ্ঞে বাক্ - বাণী এবং ভূমি পৃথিবীর পরম্পরা অনুযায়ী = প্রয়োগ পাওয়া যায়। অন্য প্রয়োগও হতে পারে।
গৌ-এর এই অর্থ বৈদিক কোষ 'নিঘন্টু' দ্বারা সমর্থিত। যাস্কাচার্য নিঘন্টুর ব্যাখ্যা তিনি তার নিরুক্তে লিখেছেন—
১) 'গৌরিতি পৃথিব্যা নামধেয়ম্ (নিরুক্ত-২/৫)
(ক) যদ্ দূরংগতা ভবতি = পৃথিবী দূর পর্যন্ত বিস্তৃত তাই গৌ (পৃথু বিস্তারে)
(খ) যচ্চাস্যাং ভূতানি গচ্ছন্তি = এর উপর আরূঢ় হয়ে প্রাণী
অনেকদূর পর্যন্ত গমন করে।
২) 'গৌঃ মাধ্যমিকা বাণী–শাস্ত্রে বাণীর ভেদ চার প্রকার, (১) পরা, (২) পশ্যন্তি, (৩) মধ্যমা, (৪) বৈখরী। এর মধ্যে মধ্যমা বাণীর নাম গৌ।
ক) “গৌঃ এতস্যা মাধ্যমিকায়াঃ বাচঃ” (নিরুক্ত-৬/২)
(খ) 'গৌঃ বাগেষা মাধ্যমিকা” (নিরুক্ত-১১/৪২)
সুতরাং গো-এর দুটি অর্থ আমরা গ্রহণ করছি।
(১) গো = পৃথিবী, এবং (২) গো = বাণী ।
মেধ—মেধ-এর তিন প্রকার অর্থ ধাতুপাঠ দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে।
১) মেধ থেকে মেধা, মেধাবিন, "যাং মেধাং দেবগণাঃ পিতরশ্চোপাসতে (যজুর্বেদ-৩২/১৪)। এস্থানে মেধা = বুদ্ধি জ্ঞান ইত্যাদি।
২) মেধ শব্দের সংগমন, সমন্বয়, সংগতিকরণ আদি অর্থও হয়।
৩) মেধ শব্দের অর্থ হিংসাও হয় কিন্তু এর প্রয়োগ বিরল, হিংসা অর্থে প্রয়োগ অত্যন্ত কম।
যজ্ঞ— যজ্ঞ শব্দ যজ্ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়। এরও তিনটি অর্থ আছে—
১) দেবপূজা (পূজনন্নাম সৎকারঃ)।
২) সংগতিকরণ অর্থাৎ কোন বস্তুর সমন্বয় সামঞ্জস্য সংস্কার দ্বারা তাকে অধিক উপযোগী করা।
৩) দান করা।
শতপথ ব্রাহ্মণ গ্রন্থে “অন্নং হি গৌঃ" (শ.ব্রা.৪/৩/৪/২৫) লিখিত আছে। আজ থেকে প্রায় সোয়া শত বৎসর পূর্বে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী মহারাজ নিজ অদ্বিতীয় ধর্ম-মীমাংসার গ্রন্থ সত্যার্থপ্রকাশে সর্বপ্রথম উক্ত পাঠের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করান। সুতরাং খড়কুটোর বেড়ার আড়ালে থাকা পর্বত প্রকাশ্যে এলো। এখন গো+মেধ+যজ্ঞ এই তিন শব্দ একত্রিত করলে বিষয়টা সহজ বোধগম্য হয় যে, "পৃথিবীকে উর্বর করে অন্নউৎপন্ন করা গোমেধ যজ্ঞ"। ভারতীয় পরম্পরায় গোদান এবং গোচারণ ভূমির দান বহুবার একই সঙ্গে সম্পাদিত হত। শ্রী রঘুনন্দন শর্মা তার নিজ প্রসিদ্ধ গ্রন্থ বৈদিক সম্পত্তিতে লিখেছেন (বৈদিক সম্পত্তি পৃ.৩৪৫)–
শতপথ ব্রাহ্মণ এবং বৌদ্ধ যুগীয় গ্রন্থের উল্লেখ থেকে T. W. Phys Davis, LL.D., Ph.D. আপন পুস্তকে লিখেছেন যে– পশুচারণ ভূমি ও জঙ্গল বিষয়ে অধিক ধ্যান দেওয়া হতো। পুরোহিত সর্বদা এই বিষয়ের প্রতি ইচ্ছা রাখতেন যে যজ্ঞাদি করার পর তাঁর ঐ প্রকার ভূমির প্রাপ্তি হোক। দানপত্র লেখার সময় এ বিষয়ে বিশেষ ধ্যান রাখা হত যে, ঐ প্রকার এক আধ পশুচারণ ভূমি অথবা জঙ্গলের কথা যেন ঐ পত্রে উল্লেখ থাকে। ডেভিস-এর ইংরেজি উদ্ধৃতি—
"Great importance was attached to these rights of pastures and forestry. The priest claimed to be able, as one result of performing a particular sacrifi e to ensure that a wide tract such land should be provided (Sat- 13.37), and it is often made a special point, in describing the grant of a village to a priest, that it contains such common lands." (The Stories of the Nation Buddhist India-T. W. Rhys Davis Dialogue of Buddha)
গোমেধ যজ্ঞ ব্যবস্থায় ধার্মিক কর্মকাণ্ড একটি শব্দ রূপে পরিগণিত হতে শুরু করে। বর্তমান অর্থশাস্ত্রের ভাষায় Land Reclamation ভূমিকে কৃষিযোগ্য করে গড়ে তোলা বোঝায়। স্বামী দয়ানন্দজী তো সোয়াশত বৎসর পূর্বেই গোমেধ শব্দের প্রতি ভ্রান্ত ধারণা দূরীভূত করেছিলেন। তিনি “অন্নং হি গৌঃ” শতপথ ব্রাহ্মণের প্রমাণের উদ্ধৃতি দিয়ে এর সম্বন্ধ কৃষি ও অন্ন উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। এদিকে পারসীদের পবিত্র পুস্তক সমূহের অধ্যয়নের মাধ্যমে ডাঃ মার্টিন হাগ বলেন যে, গোমেধ-এর অর্থ গোবধ নয়। পক্ষান্তরে, এর অর্থ—ভূমিকে উর্বর করে বনস্পতি উৎপন্নযোগ্য করা। তিনি এ ধরণের কল্পনাই শুধু করেন নি, পরন্তু আবেস্তা ভাষা দ্বারা গোমেধ-এর অপভ্রংশ "গোমেজ" (Gomez) শব্দ অন্বেষণ করে উপস্থিত করেন। এই শব্দের দ্বারা “গোমেধ” শব্দের উপর অত্যন্ত উত্তম প্রভাব বিস্তার করে।
ডাঃ হাগ লিখছেন, "পারসী ধর্মে কৃষিকার্য ধর্ম বলে মনে করা হয়। অতএব কৃষি-ধর্মের সঙ্গে সম্বন্ধ রক্ষাকারী সমস্ত ক্রিয়াকলাপের নাম 'গোমেজ'— "The Parsi religion enjoins agriculture as religious duty and this is the whole meaning of Gomez" (From Essays on the Sacred Language-Writings and Religion) (বেদোঁ কা যথার্থ স্বরূপ - আচার্য ধর্মদের বিদ্যামার্তণ্ড পৃ-২৯২)
আমরা সংস্কৃতের হলায়ুধ কোষ এবং যাস্কাচার্যের নিরুক্ত প্রমাণের মাধ্যমে এটাই দেখিয়েছি যে গো শব্দের অনেক অর্থের মধে বাণীও একটি অর্থ। কয়েকজন আচার্য মধ্যমাবাণীর সংজ্ঞা গোশব্দ রূপে বর্ণনা করেছেন। মেধের অর্থ সংগমন এবং যজ্ঞের অর্থ সংগতিকরণই হয়। সুতরাং 'গোমেধ-এর অর্থ হবে বাণীর অর্থ ও ভাবের সঙ্গে সংগমন- সংগতিকরণ। আত্মা থেকে 'পরা' বাণী মনের সংকল্পের দ্বারা 'পশ্যন্তী' রূপ নিয়ে উচ্চারণের পূর্বে 'মধ্যমা' রূপ দ্বারা বৈখরী বাণীকে প্রস্ফুটিত করে। এই সামঞ্জস্য, সংগতিকরণ ভাষাকে, বাণীকে প্রভাবশালী করে তোলে।
মহর্ষি গার্গ্য্যায়ণ কৃত প্রণববাদে গোমেধ যজ্ঞের ব্যাখ্যা নিম্নরূপে পাওয়া যায় -
“গোমেধস্তাবচ্ছব্দমেধ (শব্দ+মেধ) ইত্যবগম্যতে, গাং বাণীং মেধয়া সংয়োজনমিতি তদর্থাৎ। শব্দশাস্ত্র জ্ঞানমাত্রস্য সর্বেভ্যঃ প্রদানমেব গোমেধো যজ্ঞঃ” (প্রণববাদ-প্রকরণ ৩, তরঙ্গ ৬) অর্থাৎ বাণীকে মেধার সঙ্গে সংযুক্ত করা, অন্য সকল ব্যক্তিকে শব্দ শাস্ত্রের শিক্ষা দেওয়া, অর্থাৎ ব্যাকরণ পড়ানো = গোমেধ যজ্ঞ করা।
বেদ শাস্ত্র, ঋষি পরম্পরায় সত্যনিষ্ঠা দ্বারা বিচার করা হলে মাংস, মদ্য গোবধ ইত্যাদির কোন প্রকার রূপ পাওয়া যায় না। ঠিক এই কারণবশতঃ আজও আর্য হিন্দুদের মধ্যে এই সকল বিষয় ঘৃণার বস্তু এবং কদাচার হিসেবে পরিগণিত হয়।
এই প্রসঙ্গে আরও একটি আলোচ্য বিষয় আছে যে, সংস্কৃত ভাষায় লিখিত সব কিছুই প্রমাণ নয়। সত্যযুগের সময়ে সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব না হলেও, ত্রেতায় বিশেষভাবে মহারাজ রঘুর সময় থেকে আসুরী সংস্কৃতির আদান প্রদান সম্বন্ধে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। রাবণ অহিরাবণ আদির পূর্বেও আসুরিক আচার বিচারের মিশ্রণ হতে থাকে। অসুরদের যাগ যজ্ঞে রক্ত মাংসের প্রচলন তো ছিলই উপরন্তু যখন আসুরিক সংস্কৃতিতে প্রভাবান্বিত আচার্য্যগণ গভীর ভাবে মিশ্রণের প্রভাবকে গ্রহণ করতে শুরু করেন তখন মহর্ষি ব্যাস, পিতামহ ভীষ্ম প্রভৃতি প্রতিটি মানুষকে সাবধান করানোর বিষয়টি অনুভব করেন যে, বেদে মাংস ভক্ষণ ও মদ্যপানের উল্লেখ নেই।
সুরা মৎস্যাঃ মধু মাংসমাসবং কৃশরৌদনম্।
ধূৰ্ত্তৈঃ প্রবর্তিতং যজ্ঞে নৈতদ বেদেষু বিদ্যতে॥
(শান্তি পর্ব-২৬৫-৯)
অর্থাৎ মদ, মাংস, মৎস ইত্যাদি যজ্ঞে প্রদান করার প্রচলন ধূর্তগণের প্রচার, এই প্রকার বিধান বেদের কোথাও পাওয়া যায়না। বিপরীতভাবে মুসলমানযুগে আজ থেকে প্রায় ৭০০ বৎসর পূর্বে এবং ঋষি-মুনিদের পরম্পরা সমাপ্ত হবার বহু পরে সায়ণাচার্য ঊটাচার্য, মহীধরের বেদ ভাষ্য রচিত হয়, যার মধ্যে বেদ এবং ঋষি পরম্পরার বিরুদ্ধে পশুবধ আদির বর্ণনা পাওয়া যায়, যদ্যপি ঋষি-পরম্পরার মধ্যে এসকল প্রমাণ নেই। দ্বাপরের শেষকালে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়ে। জরাসন্ধের জামাতা কংস বেদ ব্রাহ্মণ, গাভী, যজ্ঞ এদের সকলকে নষ্ট করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ বিষয়ে শ্রীমদ্ভাগবৎ-এর একটি শ্লোক বিচার্য—
তন্মাসর্বাত্মনা রাজন্ ব্রাহ্মণান্ ব্রহ্মবাদিনঃ।
উপস্থিনো যজ্ঞশীলান্ গাশ্চ হন্মে হবিদুমা।।
(দশম-৪-৪০)
কংসকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে বেদপাঠী, বেদোপদেশক, যজ্ঞের যাচক যজমান, তপস্বী-ব্রাহ্মণ এবং যজ্ঞের জন্য প্রয়োজনীয় দুগ্ধ-ঘৃত প্রদানকারী গাভীগণের হত্যা করার জন্য সম্পূর্ণ চেষ্টা করা হোক। মহাভারতের পরবর্তী সময়ে বেদ-বাণী, বেদ প্রচারক ব্রাহ্মণগণের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এবং পশ্চিমের আসুরী সংস্কৃতির মিশ্রণ হতে থাকে। মুসলমান যুগে বৈদিক গ্রন্থ নষ্ট করা হয় এবং তীব্রভাবে ইসলামী মিশ্রণ করা হয়। অল্লোপনিষদ্ রচিত হল এবং এটি অথর্ববেদের শাখা বলে বর্ণনা করা হল। সেখানে আল্লাকে পরমেশ্বর রূপে প্রার্থনা করার শিক্ষা দেওয়া হল।
অল্লো জেষ্ঠং শ্রেষ্ঠং পরমং পূর্ণং ব্রহ্মাণম্ অল্লাম॥২॥
অল্লো রসুল মহামদঃ অকবরস্য অল্লো অল্লাম্ ॥৩॥
অল্লা ঋষীণাং সর্ব দিব্যাং............................ ॥৬॥
ওম্ অল্লা ইল্লাল্লা অনাদি স্বরূপায় অথর্ব০ ॥
...........................অদৃষ্টং কুরু কুরু ফট্ ॥৯॥
.........অল্লো রসুল মহমদ অকবরস্য অল্লো অল্লাম্ ইল্লল্লেতি ইলল্লাঃ ॥১০॥
যখন স্বামী দয়ানন্দজী এই ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে অথর্ববেদে কোথায় এর বর্ণনা আছে একথা জানতে চেয়ে শাস্ত্রার্থে আহ্বান করলেন তখন এই প্রকার ষড়যন্ত্রে ইতি পড়ল। পীর পয়গম্বর দরবেশ, মাজার, গাজী মিঞার চোগা-চাপকান ইত্যাদির পূজা শুরু হল এবং আর্য সমাজ জাতি ধর্ম জাগরণের জন্য এর বিরোধ করল, ফলস্বরূপ আর্য সমাজকে সাম্প্রদায়িক, দ্বন্দ্বপ্রিয় অসহিষ্ণু এবং আরও অনেক কিছু বলা হতে লাগল। কিন্তু–
জ্যোঁ শ্বান ভূকতে হ্যায় খড়ে, হাতি জাতা হ্যায় চলা,
ক্যা মশকোঁ কী হুংকার সে, খগপতি ভরতা হ্যায় ভলা?
গান্ধীজী একদা আর্যসমাজের আলোচনা করায় সকলে অবাক হয়েছিলেন কিন্তু দেশজাতীর রক্ষক ঐ পক্ষপাতদুষ্ট আলোচনায় নিরুৎসাহী হননি।
ইসলামী যুগ ছিল বর্বর নিষ্ঠুর। পরিচ্ছন্ন কায়দায় রাষ্ট্রদ্রোহী খৃষ্টানগণ সভ্যতার জামা পরে উপস্থিত হন। ভারতীয় বিচার ও চিন্তাধারায় মিশনারীগণ আক্রমণ করেন। বিদ্যা, ইতিহাস ও মান্যতার ক্ষেত্রে ছল কপটতা চলতে থাকে। পুরা বিদ্যা, ভারতীয় বিদ্যা, ঐতিহাসিক তথ্য সমূহকে খৃষ্টানগণ ভেঙ্গে চুরে পরিবর্তন ঘটাতে শুরু করেন। তারা বলতে শুরু করেন, আর্যগণ আক্রমণকারী, সিন্ধু সভ্যতা অনার্যদের, হিন্দু দ্রাবিড়, ভিন্ন। ভারতীয় পরম্পরার ইতিহাসের উপেক্ষা, মিথ্যা প্রতিপন্ন করা, সংস্কৃত বিদ্যার রূপ বিকৃত করা ইত্যাদি ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ইংরেজদের দ্বারা নতুন ভাবে ইতিহাস লেখানো হয! নতুন নতুন অভারতীয় মান্যতার সংযোজন হয়। ওদের সঙ্গে যুক্ত হয় সমাজবাদী। সাম্যবাদী ইত্যাদি বরুবাদী। ভারতীয় পরম্পরার বিদ্বানগণের উপেক্ষা এবং ইংরেজ মনোভাবাপন্ন দাসেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক পদে নিযুক্ত করা হয়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও পরম্পরা প্রাপ্ত ভারতীয়তা বিরোধী কার্যের গড় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্বান নির্মাণ কাৰ্য্য চলতে থাকল।
যে যত উগ্রতার মাধ্যমে ভারতীয়তার বিরোধ করতে সক্ষম তাকে ততই উচ্চ আসন এবং সারস্বত পুরস্কার প্রদান করা হত। ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ রক্ষা করাই ছিল ইংরেজদের স্বার্থ। খৃষ্ট ও খৃষ্টীয়তা ছিল একমাত্র হাতিয়ার
অল্লোপনিষদের ন্যায় খৃষ্টোপনিষদ্ও রচিত হয়েছিল। একটি প্রচলিত শ্লোক—
“নরকুল কুলযঘ্নো মোক্ষদঃ প্রেম মূর্তিঃ ।
বিজিত নরক রাজ্যঃ স্বর্গরাজ্যৈক মার্গঃ।।
সকল ভুবন ভৰ্ত্তা পাতু নঃ খ্রীষ্টযীশুঃ।।”
এ সকল হিন্দুদের খৃষ্টান করার নীতি ছিল। যীশুকে পরমেশ্বরের রূপে সংস্কৃত ভাষায় শ্লোকের মাধ্যমে স্তুতি প্রার্থনা করা থেকে অন্তর্নিহিত উদ্দ্যেশ্য সুস্পষ্টরূপে প্রকাশিত হয়।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ