বৈদিক বায়ূতত্ব - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

18 June, 2019

বৈদিক বায়ূতত্ব

বৈদিক বায়ূতত্ব
বৈদিক বায়ূতত্ব

বৈদিক বায়ূতত্ব কি?? বায়ূর স্বরূপ কি? সৃষ্টিতে বায়ূর ভূমিকা কি? বায়ূ তত্ব কয় ভাগে বিভাজিত??

উত্তরঃ
বৈদিক বায়ূতত্ব দুই ভাগে বিভক্ত।
১. দিব্য বায়ূ তত্ব।
২. সাধারণ পার্থিব্য বায়ূ তত্ব।
আমাদের আলোচনার বিষয় দিব্যবায়ূ তত্ব।
দিব্যবায়ূর সংজ্ঞাঃ পশ্যন্তি ওম্ রশ্মি, মহতত্ব,অহঙ্কার তত্ব,মস্তত্ব ও ছোট ছোট বাক্ রশ্মি দ্বারা গঠিত সত্বাকে দিব্য বায়ূ বলে। দিব্য বায়ূর কোন মাচ নাই, ঘনন্ত নাই। দিব্য বায়ূ রজোগুণযুক্ত হয়। রজ,গুণযুক্ত বিধাষ বায়ূ সর্বদা গতিযুক্ত সত্বা। গতির নাম ই বায়ূ। বেদে বহু মন্ত্র সূক্তের দেবতা এই দিব্য বায়ূ।
দিব্য বায়ূ সম্পর্কে ব্রাহ্মণ গ্রন্থের ঋষিদের ব্যাখ্যান অন্যতম।
।।অয়ম্ বায়ূ অন্তরিক্ষস্য পৃষ্ঠম্।। ( জৈমিনি ব্রাহ্মণ ৩/২৫২)। এই বায়ূই অন্তরিক্ষের পৃষ্ঠ স্বরূপ। অন্তরিক্ষই দিব্য বায়ূর পৃষ্ঠ বলে জানিও।
।।অয়ম বৈ বায়ূর বিশ্বকর্মা যুযম্ পাত ইতম্ সর্বম্ করোতি।। ( শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/৬/১/১৭)।
দিব্য বায়ূই ই বিশ্বকর্মা। দিব্য বায়ূর দ্বারাই সকল সৃষ্টির নির্মান হয়। সৃষ্টির প্রতিটি কনা দিব্য বায়ূ জাত। তাই দিব্যবায়ূ বিশ্বকর্মা বলে খ্যাত। বিশ্বকর্মা অার কিছু নয় তাহা বায়ূই।
।। ন খলু বৈ কিঞ্চন বায়ূণা নাভিগতমস্তি।। ( মৈত্রানী সংহিতা ২/২/৭)
সৃষ্টির মূল শক্তি বায়ূ। বায়ূ সৃষ্টির নাভি। নাভি যেমন সকল শক্তির মূল স্থান তদ্রুপ বায়ূ ফোর্সের নাভি স্বরূপ। বৈদিক বল ১১ প্রকারের হয়ে থাকে। সর্বপ্রকারের বল বায়ূ জাত বলে জানিও।
।। যদিদম্ সর্বময়ুতে তস্মাৎ বায়ূঃ।( জৈমিনী ব্রাহ্মণ ২/৫৬)
বায়ূ তত্ব সর্বত্র গতিশীল। সকল পদার্থকে বায়ূই গতি প্রদান করে থাকে।
।। বায়ূরস্যি অন্তরিক্ষে শ্রিতা দিবঃ প্রতিষ্ঠা। (তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩/১১/১/৯)।।
বায়ূ তত্ব আকাশ দ্বারা গঠিত। বায়ূই আকাশের বেজ।
।। বায়ূর বৈ তূর্নি হব্যবাট বায়ূর হৃদম সর্বম্ সদ্যস্ততরতি যদিদম্ কিঞ্চৎ।। (ঐ তরেয় ২/৩৪)।।
বায়ূ তত্বই সকল কিছুকে নির্মান করে তাহার ধারণ করে থাকে এবং সেই ধারণকৃত বস্তুতে গতিসঞ্চার করে থাকে। জল দ্বারা যেমন বরফ উৎপন্ন হয়ে জল বরফকেই ধারন করে রাখে এবং গতি ও প্রদান করে।
।। বায়ূর হি প্রাণঃ।। (ঐতরেয় ২/২৬)
বায়ূই প্রাণ রশ্মি। দশপ্রাণ বায়ূই। প্রাণ, অপান, উদান, সামান, ব্যান, নাগ, কূর্ম, কৃকল, দেবদত্ত, ধনঞ্জয় বায়ূ এই দশ প্রাণ। উক্ত বিভাজিত প্রাণরশ্মি তথা বায়ূ সকল সৃষ্টির নির্মান করে তাহার পালন পোষন ও ধারন করে থাকে। সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, অগ্নি ইত্যাদি পদার্থ বায়ূর কন্ডেন্স রূপ। বায়ূই উহার সৃষ্টি করে এবং ধারন করে এবং গতি ও প্রদান করে।
।। প্রাণঃ হি বায়ূঃ।। (তান্ড্য মহাব্রাহ্মণ ৪/৬/৮)।।
প্রাণ ই বায়ূ।
।। প্রাণ উ বৈ বায়ূঃ।। ( শতপথ ৮/৪/১/৮)।।
প্রাণ রশ্মিই বায়ূ।
।। বাক্ বৈ বায়ূঃ।। (তান্ড্য মহাব্রাহ্মণ ১৮/৮/৭)।।
বাক্ রশ্মি ই বায়ূ।
দিব্য বায়ূ অহঙ্কার, মন অাদির রূপ। ছোট বড় বেদ ঋচার দ্বারা বাক্ রশ্মি গঠিত হয়। ঋচাই ঋচার সৃজন করে। মনস্তত্ব অাদি বায়ূরূপি ঋচা উক্ত ঋচার মাঝে বেদের বহু ছোট বড় ছন্দরশ্মিযুক্ত ঋচার নির্মান হয়ে থাকে। ঋচার সৃষ্টির সাথে সাথে সৃষ্টি তত্বে নতুন নতুন পদার্থের নির্মান হতে থাকে। বাক্ রশ্মিই পরা ওম্ রশ্মি বলে জানিও। প্রাণ রশ্মিই পরা ওম্ রশ্মি। উহা অভিন্ন।
।। বায়ূঃ বৈ নিকায় ছন্দশ্চ।। (শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/৫/২/৫)।।
বেদ ঋচা অাদি ছন্দসমুহই বায়ূ। বেদ ঋচাই বিশ্বা নির্মানকর্তা বিশ্বকর্মা।
।। বায়ূর বৈ রেতসাম।। (শতপথ ব্রাহ্মণ ১৩/৩/৮/১)।।
বায়ূর স্বভাবই নির্মান করা। সৃষ্টির প্রকিটি কনার সংমিশণ বায়ূ দ্বারা হয়। বায়ূই বলস্বরূপ। বায়ূ ১১ প্রকার বলের নির্মান করে। সকল বলের তথা ফোর্সোর মূল বায়ূ।
।। ত্রিষ্টুভ হি বায়ূ।। ( শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/৭/৩/১২)।।
ত্রিষ্টুভ ছন্দরশ্মই বায়ূ। বেদ ঋচা যাহা ত্রিষ্টুভ ছন্দযুক্ত তাহা বায়ূর রূপ। অাকাশে ত্রিষ্টুভ ছন্দরশ্মি ই বেশী। বলবান ছন্দযুক্ত প্রাণরশ্মি ই ত্রিষ্টুভ।
সৃষ্টি নির্মানে বায়ূর ভূমিকা। সূক্ষ, সূক্ষ প্রাণ এবং ছন্দরশ্মিই বায়ূ। উক্ত ছন্দঅাদি রশ্মির কন্ডেন্সরূপই বায়ূ। বায়ূর আরেক নাম অনিরুক্ত। বায়ূ সৃষ্টিতে অব্যক্তরূপে কাজ করে থাকে। সৃষ্টির প্রত্যেক বলের পিছরে এই বায়ূ। বিভিন্ন পদার্থকে জোড়ানোর ক্জ বায়ূ দ্বারাই সম্পন্ন হয়।সকল সৃষ্টির অাধার বায়ূ। ফান্ডামেন্টাল যাবতীয় ফোার্স বায়ূজাত।
ফিল্ড গঠনঃ বায়ূ কন্ডেন্স হয়ে সৃষ্টিতে প্রথম ফিল্ডস্ গঠন করে। বায়ূ রজোগুণ যুক্ত বলে উহাক্রিয়াশীল থাকে। অপর বস্তকে ক্রিয়াযুক্ত করে। ধারণ করে। বায়ূর কোন মাচ নাই। কিন্তু বায়ূ কন্ডেন্স হলে মাচ গঠিত হয়।
বিভিন্ন কন্টাজ,পার্টিকেল,ইলিমেন্টারি পার্টিকেল প্রভৃতি বায়ূ কন্ডেন্সরূপ। এসবের মাঝে যে শক্তি বা বল তাহা বায়ূর বলে জানিও। জল হতে বরফ জাত। আবার জলই বরফকে ধারণ করে থাকে এবং গতিও প্রদান করে। তদ্রুপ বায়ূ সব ফিলস অাদি গঠন করে ধারণ করে তাহাকে গতিযুক্ত করে।
নিরুক্ত ১০/১।। যাস্করাচার্যের মতে বায়ূ গতি প্রদান কারী ও ধারণকারী।
বায়ূ না থাকলো সূর্য উদয় হত না। সূর্য হতে রশ্মি বা কিরণ পৃথিবীতে অাসত না। ফোটন নির্মান হত না, পৃথিবী ঘুরত না,অাকর্ষণ বিকর্ষন ইত্যাদি হত না। গ্যালাক্সি আদি গঠিত হত না। অগ্নি,বিদ্যুৎ বল কিছুই হত না। এককথায় সৃষ্টি থাকত না। বায়ূই ধারণকারী,নির্মানকারী ও বলপ্রদানকারী। তাই বায়ূই বিশ্বকর্মা।
আশা করি পাঠকগন বুঝতে পেরেছেন। খুব সংক্ষেপে ব্যাক্ত করলাম। নমস্তে সবাইকে।

লেখকঃ আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্টিক

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ