অর্জ্জুনঃ উবাচ (অর্জ্জুন বলিলেন) যে ভক্তাঃ (যে ভক্তগণ) এবং (এই প্রকারে) সততযুক্তাঃ (সর্ব্বদা আপনার প্রতি অনন্য ভক্তিযুক্ত) [সন্তঃ] (হইয়া) ত্বাং (শ্যামসুন্দরাকার সাক্ষাৎ আপনাকে) পর্য্যুপাসতে (উপাসনা করেন), যে চ অপি (এবং যে সকলভক্ত) অব্যক্তং (নির্ব্বিশেষ) অক্ষরম্ (ব্রহ্মকে) [পর্য্যুপাসতে] (উপাসনা করেন) তেষাং (এই দুই প্রকার যোগীর মধ্যে) কে (কাহারা) যোগবিত্তমাঃ (শ্রেষ্ঠ যোগবিৎ) ॥১॥
অর্জ্জুন বলিলেন—যে সকল ভক্ত উক্ত প্রকারে সর্ব্বদা আপনাতে অনন্যভক্তি হইয়া (দ্বিভুজ শ্যামসুন্দরাকার) আপনাকে উপাসনা করেন, এবং যাহারা নির্ব্বিশেষ ব্রহ্ম ভাবনা করেন, এই উভয়ের মধ্যে কাহারা শ্রেষ্ঠ যোগবিৎ অর্থাৎ জ্ঞানযোগী ও ভক্তিযোগীর মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ ? ॥১॥
অনুবাদঃ অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন-এভাবেই নিরন্তর ভক্তিযুক্ত হয়ে যে সমস্ত ভক্তেরা যথাযথভাবে তোমার আরাধনা করেন এবং যাঁরা ইন্দ্রিয়াতীত অব্যক্ত ব্রহ্মের উপাসনা করেন, তাঁদের মধ্যে কারা শ্রেষ্ঠ যোগী।
শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভগবান্ কহিলেন) যে (যাহারা) পরয়া (নির্গুণ) শ্রদ্ধয়া উপেতাঃ (শ্রদ্ধাযুক্ত হইয়া) ময়ি (আমার শ্যামসুন্দরাকারে) মনঃ (মন) আবেশ্য (নিবিষ্ট করিয়া) নিত্যযুক্তাঃ [সন্তঃ] (নিত্য অনন্যভক্তিযুক্ত হইয়া) মাং (আমাকে) উপাসতে (উপাসনা করেন) তে (তাহারা) যুক্ততমাঃ (সর্ব্বশ্রেষ্ঠ যোগী), [ইতি] (ইহা) মে (আমার) মতাঃ (অভিমত) ॥২॥
শ্রীভগবান্ কহিলেন—যাহারা নির্গুণ শ্রদ্ধা সহকারে আমার এই শ্যামসুন্দরাকারে মনকে অভিনিবিষ্ট করিয়া নিত্য অনন্যভক্তিদ্বারা আমার উপাসনা করেন, তাঁহারাই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ যোগবিৎ, ইহাই আমার অভিমত ॥২॥
যে তু (কিন্তু যাহারা) ইন্দ্রিয়গ্রামং (ইন্দ্রিয় সকলকে) সংনিয়ম্য (সম্যক্রূপে নিরোধ করিয়া) সর্ব্বত্র (সকলের প্রতি) সমবুদ্ধয়ঃ (সমদৃষ্টি অবলম্বন পূর্ব্বক) সর্ব্বভূতহিতে (সমস্ত প্রাণীর হিতকার্য্য সাধনে) রতাঃ [সন্তঃ] (চেষ্টাশীল হইয়া) [মে] (আমার) অনির্দ্দেশ্যম্ (অনির্ব্বচনীয়) অব্যক্তং (প্রাকৃত রূপাদিহীন) সর্ব্বত্রগম্ (সর্ব্বব্যাপী) অচিন্ত্যং (চিন্তাতীত) কূটস্থম্ (সর্ব্বদা একরূপ) অচলং (চাঞ্চল্যশূন্য) ধ্রুবম্ (নিত্য) অক্ষরম্ চ (ও নির্ব্বিশেষ স্বরূপ ব্রহ্মকে) পর্য্যুপাসতে (উপাসনা করেন), তে (তাহারাও) মাম্ এব (আমারই অঙ্গকান্তিকে) প্রাপ্নুবন্তি (প্রাপ্ত হন) ॥৩–৪॥
কিন্তু যাঁহারা ইন্দ্রিয়গণকে সংযত করিয়া সকলের প্রতি সমদৃষ্টি অবলম্বলপূর্ব্বক সমস্ত ভূতের হিতসাধনে চেষ্টাযুক্ত হইয়া আমার অনির্দ্দেশ্য প্রাকৃত রূপাদি-রহিত, সর্ব্বব্যাপী, হ্রাসবৃদ্ধি-শূন্য, নিত্য ও নির্ব্বিশেষ-স্বরূপ ব্রহ্মকে উপাসনা করেন, তাঁহারাও আমাকেই অর্থাৎ আমার তেজঃস্বরূপ ব্রহ্মকে লাভ করেন ॥৩–৪॥
অব্যক্তাসক্তচেতসাম্ (নির্ব্বিশেষ ব্রহ্মস্বরূপে আকৃষ্টচিত্ত) তেষাম্ (সেই সকল ব্যক্তির) অধিকতরঃ (অত্যন্ত অধিক) ক্লেশঃ (কষ্টকর) [ভবতি] (হয়) । হি (যেহেতু) দেহবদ্ভিঃ (দেহবান্ জীব কর্ত্তৃক) অব্যক্তা (নির্ব্বিশেষ ব্রহ্মবিষয়ক) গতিঃ (সাধ্যসাধন) দুঃখং (দুঃখময় রূপে) অবাপ্যতে (লব্ধ হয়) ॥৫॥
নির্ব্বিশেষ ব্রহ্মে আসক্তচিত্ত ব্যক্তিদের অত্যধিক ক্লেশ হইয়া থাকে । যেহেতু দেহবান্ জীবের পক্ষে নির্ব্বিশেষ ব্রহ্মবিষয়ক সাধ্য-সাধন দুঃখময় রূপেই লাভ হইয়া থাকে ॥৫॥
যে তু (কিন্তু যাহারা) সর্ব্বাণি (সমস্ত) কর্ম্মাণি (কর্ম্ম) ময়ি (আমাতে) সংন্যস্য (সমর্পণ পূর্ব্বক) মৎপরাঃ [সন্তঃ] (একমাত্র আমাতে আশ্রিত হইয়া) অনন্যেন এব (জ্ঞানকর্ম্মাদির সম্পর্কশূন্য) যোগেন (ভক্তিযোগ দ্বারা) মাং (আমাকে) ধ্যায়ন্তঃ (চিন্তা পূর্ব্বক) উপাসতে (উপাসনা করেন), [হে] পার্থ ! (হে অর্জ্জুন !) ময়ি (আমাতে) আবেশিতচেতসাম্ (আবিষ্টচিত্ত) তেষাম্ (তাহাদিগকে) অহং (আমি) মৃত্যুসংসারসাগরাৎ (মৃত্যুযুক্ত সংসারসাগর হইতে) ন চিরাৎ (অচিরে) সমুদ্ধর্ত্তা ভাবমি (উদ্ধার করিয়া থাকি) ॥৬–৭॥
কিন্তু যাঁহারা সকল কর্ম্ম আমাতে সমর্পণ পূর্ব্বক একমাত্র আমাকে আশ্রয় করিয়া, জ্ঞানকর্ম্মাদি সম্বন্ধ শূন্য শুদ্ধ ভক্তিযোগ দ্বারা আমার অনুধ্যান পূর্ব্বক আরাধনা করেন, হে পার্থ ! আমাতে আবিষ্টচিত্ত তাহাদিগকে আমি অচিরাৎ মৃত্যুময় সংসার-সমুদ্র হইতে উদ্ধার করি ॥৬–৭॥
ময়ি এব (শ্যামসুন্দরাকার আমাতেই) মনঃ (মনকে) আধৎস্ব (স্থির কর), ময়ি [এব] (আমাতেই) বুদ্ধিং (বিবেকবতী বুদ্ধিকে) নিবেশয় (নিযুক্ত কর) ; অতঃ ঊর্দ্ধ্বং (এই জীবনের পর) ময়ি এব (আমার সমীপেই) নিবসিষ্যসি (অবস্থান করিবে), [অত্র] (ইহাতে) ন সংশয়ঃ (সংশয় নাই) ॥৮॥
অতএব শ্যামসুন্দরাকার আমাতেই তোমার মনকে স্থির করিয়া নিত্য আমার স্মরণ কর, এবং তোমার বিচার বুদ্ধিকেও আমাতেই নিবিষ্ট কর, তাহার ফলে এই দেহান্তের পরই আমার নিকটে বাস করিবে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই ॥৮॥
[হে] ধনঞ্জয় ! (হে অর্জ্জুন !) অথ (তবে যদি) ময়ি (আমাতে) চিত্তং (চিত্ত) স্থিরম্ (দৃঢ়ভাবে) সমাধাতুং (সম্যক্ স্থাপন করিতে) ন শক্নোষি (না পার), ততঃ (তাহা হইলে) অভ্যাস যোগেন (অভ্যাস যোগের দ্বারা) মাম্ (আমাকে) আপ্তুং (প্রাপ্ত হইতে) ইচ্ছ (চেষ্টা কর) ॥৯॥
হে ধনঞ্জয় ! আর যদি চিত্তকে দৃঢ় শ্রদ্ধার সহিত আমাতে স্থাপন করিতে না পার, তাহা হইলে অভ্যাস রূপ যোগের দ্বারা আমাকে প্রাপ্ত হইতে চেষ্টা কর ॥৯॥
অভ্যাসে অপি (অভ্যাস যোগেও) [যদি] অসমর্থঃ (অক্ষম) অসি (হও), [তর্হি] (তাহা হইলে) মৎ কর্ম্মপরমঃ (আমার কর্ম্মপরায়ণ) ভব (হও) । মদর্থম্ (আমার প্রীত্যর্থে) কর্ম্মাণি (শ্রবণ কীর্ত্তনাদি কর্ম্ম) কুর্ব্বন্ অপি (করিয়াও) সিদ্ধিম্ (সিদ্ধি) অবাপ্স্যসি (লাভ করিবে) ॥১০॥
অভ্যাস-যোগেও যদি তুমি অসমর্থ হও, তবে মৎসন্বন্ধীয় কর্ম্মপরায়ণ হও । আমার প্রীতির উদ্দেশ্যে শ্রবণ কীর্ত্তনাদি যে কোন কর্ম্মের আচরণ করিলেও সিদ্ধি লাভ করিবে ॥১০॥
অথ (আর যদি) এতৎ অপি (ইহাও) কর্ত্তুং (করিতে) অশক্তঃ (অসমর্থ) অসি (হও), ততঃ (তাহা হইলে) মদ্যোগম্ (আমাতে সর্ব্বকর্ম্মর্ার্পণরূপ যোগ) আশ্রিতঃ [সন্] (আশ্রয় করিয়া) যতাত্মবান্ [ভূত্বা] (সংযতচিত্ত হইয়া) সর্ব্বকর্ম্মফলত্যাগং (সমস্ত কর্ম্মের ফলত্যাগ) কুরু (কর) ॥১১॥
আর যদি ঐরূপও করিতে না পার, তাহা হইলে তুমি আমাতে সমস্ত কর্ম্মার্পণরূপ যোগ আশ্রয় পূর্ব্বক সংযত চিত্ত হইয়া সকল কর্ম্মফলের চিন্তা পরিত্যাগ কর ॥১১॥
হি (যেহেতু) অভ্যাসাৎ (আত্মনিয়োগ চেষ্টা অপেক্ষা) জ্ঞানম্ (সাক্ষাৎ অনুভূতি) শ্রেয়ঃ (শ্রেষ্ঠ), জ্ঞানাৎ (উক্ত জ্ঞান অপেক্ষা) ধ্যানং (আমাতে অভিনিবেশ) বিশিষ্যতে (শ্রেষ্ঠ), ধ্যানাৎ (ধ্যান হইতে) কর্ম্মফল ত্যাগঃ [স্যাৎ] (স্বর্গাদি সুখ বা মোক্ষের স্পৃহা থাকে না) ত্যাগাৎ অনন্তরম্ (কর্ম্মফলেবিতৃষ্ণার পরেই) শান্তিঃ (আমাভিন্ন সমস্ত বিষয়ে ইন্দ্রিয়ের উপরতি) [ভবতি] (হইয়া থাকে) ॥১২॥
যেহেতু আত্মনিয়োগ চেষ্টা অপেক্ষা আমার চিদনুভূতি শ্রেষ্ঠ, আবার তাহা হইতে আমার অভিনিবেশরূপ ধ্যান শ্রেষ্ঠ, ধ্যান হইতে স্বর্গসুখ বা মোক্ষের কামনা দূর হয়, এবং নিষ্কাম হইলেই বিষয়বিতৃষ্ণারূপ শান্তি আসিয়া উপস্থিত হয় ॥১২॥
যঃ মদ্ভক্তঃ (আমার যে ভক্ত) সর্ব্বভূতানাং (সকল প্রাণীর প্রতি) অদ্বেষ্টা (দ্বেষশূন্য), মৈত্রঃ (বরং মিত্রভাবাপন্ন), করুণঃ (দীনের প্রতি কৃপালু), নির্ম্মমঃ (পুত্র কলত্রাদির প্রতি মমতা শূন্য), নিরহঙ্কারঃ (দেহে অহঙ্কার রহিত), সম দুঃখ সুখঃ (সুখে ও দুঃখে নিজের প্রারদ্ধ কর্ম্মফল ভাবনা দ্বারা সমদর্শী), ক্ষমী (সহিষ্ণু) সততং (সর্ব্বদা) সন্তুষ্টঃ (যথা লাভে সন্তোষযুক্ত), যোগী (ভক্তিযোগযুক্ত), যতাত্মা (অলাভেও সংযত চিত্ত), দৃঢ়নিশ্চয়ঃ (অনন্যভক্তিতে স্থির সংকল্প), ময়ি (আমাতে) অর্পিত মনোবুদ্ধিঃ (মন ও বুদ্ধি সমর্পণকারী), সঃ (তিনিই) মে (আমার) প্রিয়ঃ (প্রীতির পাত্র) ॥১৩–১৪॥
আমার যে ভক্ত, সমস্ত জীবের প্রতি হিংসা বর্জ্জিত, বরং মিত্রতা সম্পন্ন, হীনজনের প্রতিও কৃপালু, পুত্ত্রকলত্রাদিতে মমতা শূন্য, দেহাদিতে অহঙ্কার রহিত, সুখে দুঃখে সমভাবাপন্ন, ক্ষমাশীল, সর্ব্বদা যদৃচ্ছালাভে সন্তুষ্ট, ভক্তিযোগযুক্ত, সংযতচিত্ত, অনন্যভক্তিতে দৃঢ়নিশ্চয়, আমাতে যাহার মন ও বুদ্ধি সমর্পিত তিনিই আমার প্রিয় ॥১৩–১৪॥
যস্মাৎ (যাহা হইতে) লোকঃ (কোন লোক) ন উদ্বিজতে (উদ্বেগপ্রাপ্ত হন না), যঃ চ (ও যিনি) লোকাৎ (কোন লোক হইতে) ন উদ্বিজতে (উদ্বেগপ্রাপ্ত হন না), যঃ চ (ও যিনি) হর্ষামর্ষভয়োদ্বেগৈঃ (প্রাকৃত হর্ষ, ক্রোধ, ভয় ও উদ্বেগ হইতে) মুক্তঃ (মুক্ত) সঃ (তিনি) মে (আমার) প্রিয়ঃ (প্রিয়) ॥১৫॥
যাহা হইতে লোক সকল উদ্বেগ প্রাপ্ত হয় না, ও যিনি কোন লোক হইতে উদ্বেগ প্রাপ্ত হন না, এবং যিনি প্রাকৃত হর্ষ, ক্রোধ, ভয় ও উদ্বেগ হইতে মুক্ত, তিনিই আমার প্রিয় ॥১৫॥
যঃ মদ্ভক্তঃ (আমার যে ভক্ত) অনপেক্ষঃ (ব্যবহারিক কার্য্যে অপেক্ষা শূন্য) শুচিঃ (বাহ্যভ্যন্তর শৌচসম্পন্ন) দক্ষঃ (নিপুণ) উদাসীনঃ (পক্ষপাতশূন্য) গতব্যথঃ (উদ্বেগশূন্য) সর্ব্বারম্ভপরিত্যাগী (ভক্তিপ্রতিকূল নিখিলোদ্যমরহিত) সঃ (তিনি) মে (আমার) প্রিয়ঃ (প্রিয়) ॥১৬॥
আমার যে ভক্ত ব্যবহারিক কার্য্যে অপেক্ষাশূন্য ও অনাসক্ত, বাহ্যাভ্যন্তর শৌচসম্পন্ন, নিপুণ, উদ্বেগশূন্য এবং সর্ব্বপ্রকার সকাম উদ্যম রহিত, তিনিই আমার প্রিয় ॥১৬॥
যঃ (যিনি) ন হৃষ্যতি (লৌকিক প্রিয়বন্তু লাভে হৃষ্ট হন না) ন দ্বেষ্টি (অপ্রিয় বস্তু প্রাপ্তিতেও দ্বেষ করেন না), ন শোচতি (লৌকিক প্রিয়বস্তু নাশে শোক করেন না) ন কাঙ্ক্ষতি (অপ্রাপ্ত বস্তুর প্রাপ্তি আকাঙ্ক্ষাও করেন না) শুভাশুভ পরিত্যাগী (পুণ্য ও পাপ কর্ম্মত্যাগকারী) যঃ (যিনি) ভক্তিমান্ (ভক্তিমান্) সঃ (তিনি) মে (আমার) প্রিয়ঃ (প্রিয়) ॥১৭॥
যিনি জাগতিক লাভে হৃষ্ট হন না, অপ্রিয় সংযোগে দ্বেষ করেন না, যিনি জাগতিক প্রিয় বস্তু নাশে শোক করেন না, অপ্রাপ্ত বস্তুর আকাঙ্ক্ষাও করেন না এবং পুণ্যকর্ম্ম ও পাপকর্ম্ম পরিত্যাগকারী ভক্তিমান্, তিনিই আমার প্রিয় ॥১৭॥
[যঃ] নরঃ (যে ব্যাক্তি) শত্রৌ চ (শত্রুর প্রতি) মিত্রে চ (মিত্রের প্রতি), তথা (এবং) মানাপমানয়োঃ (সন্মানে ও অপমানে) সমঃ (তুল্যজ্ঞানবিশিষ্ট) ; শীতোষ্ণ সুখ দুঃখেষু (শীত, গ্রীষ্ম, সুখ ও দুঃখে) সমঃ (হর্ষবিষাদ শূন্য), সঙ্গবিবর্জিতঃ (অনাসক্ত), তুল্যনিন্দাস্তুতিঃ (নিন্দা ও স্তুতিতে সমবুদ্ধি), মৌনী (যতবাক্ বা ইষ্ট মননে তৎপর ), যেন কেনচিৎ (শরীর যাত্রাহেতু যাহা লব্ধ হয় তাহাতেই) সন্তুষ্টঃ (সন্তুষ্ট) অনিকেতঃ (গৃহাসক্তি শূন্য), স্থিরমতিঃ (পরমার্থবিষয়ে নিশ্চিত জ্ঞানবিশিষ্ট) ভক্তিমান্ (ও ভক্তিযুক্ত) [সঃ] (সেই ব্যাক্তিই) মে (আমার) প্রিয়ঃ (প্রিয়) ॥১৮–১৯॥
যে ব্যক্তি শত্রুতে ও মিত্রতে , মানে ও অপমানে তুল্যভাব এবং শীত, গ্রীষ্ম, সুখ ও দুঃখে সমভাবাপন্ন, সর্ব্বত্র অনাসক্ত, নিন্দা ও স্তুতিকে তুল্যবোধ, সংযতবাক্, যদৃচ্ছালাভে সন্তুষ্ট, গৃহাসক্তি-রহিত, পরমার্থ বিষয়ে স্থিরবুদ্ধি ও ভক্তিমান্, তিনিই আমার প্রিয় ॥১৮–১৯॥
শ্রদ্ধধানাঃ (শ্রদ্ধাবান্) মৎপরমাঃ [সন্তঃ] (ও মৎপরায়ণ হইয়া) যে তু (আর যে সকল ব্যক্তি) যথোক্তং (উক্ত প্রকারে) ইদং (এই) ধর্ম্মামৃতম্ (ধর্ম্মরূপ অমৃতের) পর্য্যুপাসতে (শ্রবণাদি দ্বারা উপাসনা করেন) তে ভক্তাঃ (সেই সমস্ত ভক্তগণ) মে (আমার) অতীব (অতিশয়) প্রিয়াঃ (প্রিয়) ॥২০॥
আর যাঁহারা শ্রদ্ধা সহকারে আমার সম্যক্ আশ্রিত হইয়া উক্ত প্রকার অমৃতময় ধর্ম্মের উপাসনা করেন, সেই ভক্তগণ আমার অতীব প্রিয় জানিবে ॥২০॥
অনুবাদঃ যাঁরা আমার দ্বারা কথিত এই ধর্মামৃতের উপাসনা করেন, সেই সকল শ্রদ্ধাবান মৎপরায়ণ ভক্তগণ আমার অত্যন্ত প্রিয়।
ইতি শ্রীমহাভারতে শতসাহস্র্যাং সংহিতায়াং বৈয়াসিক্যাং ভীষ্মপর্ব্বণি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জ্জুনসংবাদে ভক্তিযোগো নাম দ্বাদশোঽধ্যায়ঃ ॥১২॥ |
ইতি দ্বাদশ অধ্যায়ের অন্বয় সমাপ্ত ॥
ইতি দ্বাদশ অধ্যায়ের বঙ্গানুবাদ সমাপ্ত ॥
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ