প্রশ্নঃ আল্লাহর রাসুল বলেছেন, ‘যে নিজের দ্বীন পরিবর্তন করবে, তাকে হত্যা করে ফেলবে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৯২২, জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৫৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৩৫১, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৮৭১) । এই হাদিস হতে পরিস্কার বলা হচ্ছে ইসলাম ত্যাগ করলে তাকে হত্যা করতে হবে এটা কি অন্যায় না ? ধরেন আমি কি মানব কি মানবো না এটা আমার ইচ্ছা , অবশ্য কারো ক্ষতি করবো না তাহলে এখানে আমাকে কেন ইসলাম মৃত্যু দণ্ড এর আদেশ দিল ?
উত্তরঃ খুব ভাল একটি প্রশ্ন । আশা করি শেষ পর্যন্ত পড়বেন!
মুরতাদের ব্যাপারে কুরআনে কোথাও কোন পার্থিব দণ্ড বা শাস্তির কথা নেই । আসুন দেখি এই ব্যাপারে কোরানের কি বলেনঃ
* আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ কিরুপে সৎপথে পরিচালিত করবেন সেই সম্প্রদায়কে যারা ইমান আনয়নের পর ও রাসুলকে সত্য বলিয়া সাক্ষ্যদান করার পর এবং তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর কুফুরি করে ? আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না । (সুরা আল ইমরান আয়াত ৮৬)
* আল্লাহ বলেনঃ তোমরা তাদের মত হইয়ো না যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে । তাদের জন্য মহাশাস্তি আছে । (সুরা আল ইমরান আয়াত ১০৫)
* আল্লাহ বলেনঃ সেদিন কিছু মুখ উজ্জ্বল হবে এবং কিছু মুখ কাল হবে । যাদের মুখ কাল হবে তাদের বলা হবে ইমান আনার পর কি তোমরা কুফুরি করেছিলে ?সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ করো যেহেতু তোমরা কুফুরি করিতে । (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৬)
* আল্লাহ বলেনঃ কেউ তার ইমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করিলে এবং কুফুরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখিলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব এবং তার জন্য আছে মহাশাস্তি তবে তার জন্য না , যাকে কুফুরির জন্য বাধ্য করা হয় কিন্তু তার চিত্ত ইমানে অবিচলিত । ( সুরা নাহল, ১০৬ আয়াত)
* আল্লাহ বলেনঃ তোমরা দোষ স্থালনের চেষ্টা করো না । তোমরা তো ইমান আনার পর কুফুরি করিয়াছ । তোমাদের মধ্যে কোন দলকে ক্ষমা করিলেও অন্য দলকে শাস্তি দিব কারন তারা অপরাধী । (সুরা তওবা, ৬৬)
* আল্লাহ বলেনঃ উহারা আল্লাহর শপথ করে যে , উহারা কিছু বলে নাই, কিন্তু উহারা তো কুফুরির কথা বলেছে এবং ইসলাম গ্রহনের পর তারা কাফের হয়েছে উহারা যা সংকল্প করেছে তা পায় নাই । আল্লাহ ও তাঁর রাসুল নিজ কৃপায় তাদের অভাবমুক্ত করেছেন বলেই তারা বিরোধিতা করিয়াছিল । তারা তওবা করলে তাদের জন্য ভাল হবে কিন্তু তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য মরমন্তু শাস্তি দিবেন । দুনিয়াতে তাদের কোন অভিভাবক নাই এবং কোন সাহায্যকারী নাই । (সুরা তওবা, ৭৪)
* আল্লাহ বলেনঃ যারা ইমান আনে ও পরে কুফুরি করে এবং আবার ইমান আনে , আবার কুফুরি করে , অতপর তাদের কুফুরি প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায় আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথে পরিচালিত করবেন না । (সুরা নিসা, ১৩৭ আয়াত)
* আল্লাহ বলেনঃ তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে দুনিয়াতে যারা আছে তারা সকলেই অবশ্যই ইমান আনত , তবে কি তুমি মুমিন হবার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে ? আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ইমান আনা কারো সাদ্ধে না এবং যারা অনুধাবন করে না আল্লাহ তাদেরকে কুলসলিপ্ত করেন । (সুরা ইউনুস, আয়াত ৯৯ - ১০০)
* আল্লাহ বলেনঃ বল, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক । (সুরা কাহফ, আয়াত ২৯)
* আল্লাহ বলেনঃ কেউ রাসুলের অনুগত করলে সে তো আল্লাহরই অনুগত্ত করিল এবং মুখ ফিরিয়ে নিলে তোমাকে তাদের উপর তত্থাবধায়ক প্রেরন করি নাই । (সুরা নিসা, ৮০ আয়াত) ।
* আল্লাহ বলেনঃ ধর্মে জোর জবরদস্তী নাই । (সুরা বাকারা, ২৫৬) ।
উপরের আয়াতে ইমান তথা ইসলাম গ্রহনের পরে আবার কুফুরি (ইসলাম ত্যাগ ) করলে সাথে সাথে হত্যা করতে হবে এমন কিছু বলা নাই অথবা তাকে মেরে ফেল এরকম কিছুই বলা নাই । অর্থাৎ কুরআন মুরতাদকে ইসলামে ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছে। তাকে সাথে সাথে মৃত্যুদণ্ড দিলে ‘আবার মুসলমান’ হবার সুযোগ সে পাবে না, কুরআন তাকে সুযোগ দিচ্ছে ইসলামে ফিরে আশার।
ইউরোপিয়ান ফতোয়া ও গবেষণা কাউন্সিলের সদস্য বিশ্ব-বিখ্যাত শরিয়া সমর্থক ডঃ জামাল বাদাওয়ি পর্যন্ত এটা স্বীকার করেছেন এবং বলেছেনঃ
কোরানের কোন আয়াতেই মুরতাদের দুনিয়ার শাস্তির বিধান নাই । কোরআন বলে এই শাস্তি শুদুমাত্র পরকালেই হবে । (ফতোয়া কাউন্সিলের ওয়েবসাইট)
++++++++++ এখন আসুন এমন হাদিস সম্পর্কে জানব যেখানে রাসুল (সা) কোন মুরতাদদের শাস্তি প্রদান করেননিঃ
* নবীজীর ওহি-লেখক আবদুলা বিন সা’আদ-ও মুরতাদ হয়ে মদিনা থেকে মক্কায় পালিয়ে গিয়েছিল। এ হেন মহা-মুরতাদকেও নবীজী মৃত্যুদণ্ড দেননি (ইবনে হিশাম-ইশাক পৃঃ ৫৫০) বরং ইসলাম গ্রহন করার পরে, হজরত ওসমান (রা) পরে তাকে মিশরের গভর্নর করেছিলেন । কি বুঝলেন! এখানে একটি প্রশ্ন আসে কেন নবীজি (সা) তাকে সাথে সাথেই মৃত্যুদণ্ড এর হুকুম দিলেন না ?
* মুরতাদ-হত্যার বিরুদ্ধে কুরআনের সবচেয়ে স্পষ্ট নির্দেশ আছে সুরা ইমরান- এর ৮৬ নম্বর আয়াতে । হারিথ নামে এক মুসলমান মুরতাদ হলে তার ব্যাপারে নাজিল হয়েছিল এই আয়াত : “কেমন করে আল্লাহ্ এমন জাতিকে হেদায়েত দেবেন যারা ইমান আনার পর ও রসুলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেবার পর ও তাদের কাছে প্রমাণ আসার পর কাফের হয়েছে ?” নবীজী তাকে মৃত্যুদণ্ড কেন, কোন শাস্তিই দেননি (ইবনে হিশাম-ইশাক পৃঃ ৩৮৪)।
* ihadis.com সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৫৩৬ , হাসান হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, কোন ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুশরিক হয়ে শিরকে লিপ্ত হলে আল্লাহ্ তার কোন আমলই গ্রহণ করবেন না । যাবত না সে মুশরিকদের থেকে পৃথক হয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে । - এখানে মুশরিক ব্যাক্তিকে সুযোগ দেয়া না হয় তাহলে সে আমার ইসলামে আসবে কিভাবে ?
* ihadis.com সহিহ বুখারি হাদিস নং ১৮৮৩, হাদিস সহিহঃ জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন বেদুইন নবী (সা) এর নিকট এসে ইসলামের উপর তাঁর কাছে বায়াত গ্রহণ করলো । পরদিন সে জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় নবী (সা) এর কাছে এসে বলল, আমার বায়াত ফিরিয়ে নিন । নবী (সা) তা প্রত্যাখ্যান করলেন । এভাবে তিনবার হল । অতপর বললেন, মদিনা কামারের হাপরের মত, যা তার আবর্জনা ও মরীচিকাকে দূরীভূত করে এবং খাটি ও নির্ভেজালকে পরিচ্ছন্ন করে । (ঐ লোক পরে মদিনা ছেড়ে চলে যান) ।
* ihadis.com সুনানে আন নাসাই, হাদিস নং ৪০৬৮, সহিহ হাদিসঃ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক আনসারী ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহনের পর মুরতাদ হয়ে গেল এবং মুশরিকদের সাথে মিলিত হল । পরে সে লজ্জিত হয়ে হয়ে নিজের কওমকে বলে পাঠালো, তোমরা নবী (সা) কে জিজ্ঞাসা করো, আমার কি তওবা করার সুযোগ আছে ? তার কওমের লোক নবী (সা) কে বললেন। অমুক ব্যাক্তি লজ্জিত হয়েছে । এখন কি তার তওবা কবুল হয়েছে ? তখন এই আয়াত নাযিল হয় অর্থঃ ইমান আনার পর ও রাসুলকে সত্য বলে সাক্ষ্যদানের পর যারা কুফরি করে আল্লাহ্ তাদের কিভাবে হিদায়েত দিবেন ? (৩:৮৬ -৮৯)
* ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৭০০, সহিহ হাদিসঃ বারা ইবনু আযিয (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নবী মুহাম্মদ (সা) হুদায়বিয়ার দিন মুশরিকদের সঙ্গে তিনটি বিষয় সন্ধি করেছিলেন । তা হলঃ মুশরিকরা কেউ মুসলিম হয়ে তার নিকট এলে তিনি তাকে তাদের নিকট ফিরিয়ে দিবেন । মুসলিমদের কেউ মুরতাদ হয়ে তাদের নিকট গেলে তারা তাকে ফিরিয়ে দিবেন না । আর তিনি আগামি বছর মক্কায় প্রবেশ করবেন এবং সেখানে তিন দিন অবস্থান করবেন । কোষাবদ্ধ তরবারি, ধনুক ও এরকম কিছু বেতিত অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করবেন না । ইতোমধ্যে আবু জান্দাল (রা) শিকল পরা অবস্থায় লাফিয়ে লাফিয়ে তার নিকট এলে, তাকে তিনি তাদের নিকট ফিরিয়ে দিলেন । - এই হাদিসে পরিষ্কার বলা হচ্ছে রাসুল (সা) চুক্তি করেছেন যে কেউ মুসলিম থেকে মুরতাদ হলে তাকে ফিরিয়ে দিবে কোন রুপ শাস্তি বেতিত । এখানে মুরতাদদের মৃত্যু দন্ধ দেয়া হয়নি ।
* ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২২৯০, সহিহ হাদিসঃ আবু যিনার (রহ) মুহাম্মদ ইবনু হামযা আমর আসলামি (রহ) এর মাধ্যমে তাঁর পিতা হতে থেকে বর্ণিতঃ উমার (সা) তাঁকে সাদকা উশুলকারী নিযুক্ত করে পাঠান । সেখানে এক ব্যাক্তি তার স্ত্রীর দাসীর সাথে ব্যাভিচার করে বসল। তখন হামজা (রহ) কিছু লোককে তার পক্ষ হতে যামিন স্থির করলেন । পরে তিনি উমার (রা) এর নিকট ফিরে আসলেন । উমার (রা) উক্ত লোকটিকে একশত বেত্রাঘাত করলেন এবং লোকদের বিবরণকে সত্য বলে গ্রহণ করলেন । তারপর লোকটিকে তার অজ্ঞতার জন্য (স্ত্রীর দাসীর সাথে যৌন সম্ভোগ করা যে অবৈধ তা সে জানত না) অব্যাহতি দেন।জরির ও আশআস (রহ) মুরতাদ-ধর্মচ্যুত ব্যাক্তিদের সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) কে বলেন, তাদেরকে তওবা করতে বলুন এবং গোত্রের লোকেরা তাদের যামিন(দার) হয়ে গেল । হাম্মাদ (রহ) বলেন,যদি কোন ব্যাক্তি যামিন হবার পর মৃত্যুবরন করে তবে সে দায়মুক্ত থেকে যাবে (অর্থাৎ ওয়ারিশদের উপর সে দায়িত্ব বর্তাবে) - এখানে মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় নি বরং তাদের তওবার সাথে যামিনদার হয়ে গিয়েছিল ।
* ihadis.com সুনানে সবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩৫৮ , হাসান হাদিসঃ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সাদ ইবনু আসুস সারহ রাসুলুল্লাহ (সা) এর ওহী লেখকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল । শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করে এবং সে কাফিরদের সঙ্গে মিশে যায় । মক্কাহ বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা) তাকে হত্যার আদেশ দেন । কিন্তু উসমান ইবনে আফফান (রা) তার জন্য নিরাপত্তার জন্য আবেদন পেশ করলে রাসুলুল্লাহ (সা) তাকে নিরাপত্তা প্রদান করেন । - এই হাদিস থেকে বুঝা যায় রাসুল (সা) এই মুরতাদকে শাস্তি দেন নি এবং কোন ভাল ব্যাক্তি মুরতাদের বিষয় সুপারিশ করতে পারবে ।
* নবীজী (সা) বলিয়াছেন যে ব্যক্তি ধর্মত্যাগ করে তাহাকে হত্যা কর” (বোখারী ২৮৫৪ নং হাদিস- মওলানা আবদুল জলিলের অনুবাদ) নিয়ে মওলানাদের মধ্যেই মহা-বিতর্ক আছে কারণ তাহলে যারা তাদের ধর্ম ত্যাগ ক’রে ইসলাম গ্রহণ করে তাদেরকেও খুন করতে হয়। নবীজীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জীবনী “সিরাত”-এ (ইবনে হিশাম/ইশাক,পৃষ্ঠা ৩৮৪, ৫২৭ ও ৫৫০) উবায়রাক ছাড়াও আমরা নবীজীর সময়ে তিনজন মুরতাদের দলিল পাই। তারা হল হারিথ, নবীজীর ওহি লেখক ইবনে সা’দ, এবং উবায়দুলাহ − ।- এ তিনজনের কাউকে মৃত্যুদণ্ড কেন, কোনো শাস্তিই দেননি নবী মুহাম্মদ (সা) । তিনি মনে কষ্ট পেয়েছেন, তবু সর্বদা মেনে চলেছেন লা-ইকরাহা ফিদ্দিন, − ধর্মে জবরদস্তি নাই − বাকারা ২৫৬।
দলিল প্রমানে এ-সব ঘটনা আছে নামধাম, তারিখ, ঘটনার বিবরণ সহ। দেখুন সহি বুখারি ৯ম খণ্ড হাদিস ৩১৮: জাবির বিন আব্দুল্লাহ বলেন, এক বেদুইন আল্লাহর রসুলের কাছে বায়াত গ্রহণ করিল। পরে মদিনায় তাহার জ্বর হইলে সে আল্লাহ্র রসুলের নিকট আসিয়া বলিল ‘হে আল্লাহ্র রসুল, আমার বায়াত ফিরাইয়া দিন।’ রসুল সম্মত হইলেন না। তারপর সে আবার আসিয়া বলিল ‘হে আল্লাহর রসুল, আমার বায়াত ফিরাইয়া দিন।’ রসুল সম্মত হইলেন না। তারপর সে আবার আসিয়া বলিল ‘হে আল্লাহর রসুল, আমার বায়াত ফিরাইয়া দিন।’ রসুল সম্মত হইলেন না। তারপর সে মদিনা ছাড়িয়া চলিয়া গেল। ইহাতে আল্লাহর রসুল বলিলেন− “মদিনা একটি উনুনের মতো, − ইহা ভেজালকে বাহির করিয়া দেয় এবং ভালোকে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করে।”
এই যে স্বয়ং নবীজীর সামনে প্রকাশ্যে ইসলাম ত্যাগ − মৃত্যুদণ্ড তো দূরের কথা, কোথায় হুঙ্কার বা কোথায় শাস্তি ?
++++++++ যেসব মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিলঃ
*ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯২২, সহিহ হাদিসঃ ইকরিমাহ (রহ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আলী (রা) এর কাছে একদল যিন্দিককে (নাস্তিক ও ধর্মত্যাগীদের) আনা হল । তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন । এ ঘটনা ইবনু আব্বাস (রা) এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি কিন্তু তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলতাম না । কেননা রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিষেধ আছে যে, তোমরা আল্লাহ্র শাস্তি দ্বারা শাস্তি দিও না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম । কারন রাসুলুল্লাহ (সা) এর নির্দেশ আছে যে, কেউ তার দ্বীন বদলে ফেলে তাকে তোমরা হত্যা করো ।
* ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯২৩, সহিহ হাদিসঃ আবু মুসা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী (সা) এর কাছে এলাম । আমার সঙে আশআরি গোত্রের দুজন লোক ছিল । একজন আমার ডানদিকে অপরজন আমার বামদিকে । আর রাসুল (সা) তখন মিসওয়াক করছিলেন । উভয়েই তাঁর কাছে আবদার জানাল । তখন তিনি বললেন, হে আবু মুসা ! অথবা বললেন হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স ! রাবি বলেন, আমি বললাম ঐ সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, তারা তাদের অন্তরে কি আছে তা আমাদের জানায়নি এবং তারা যে চাকরি পার্থনা করবে তা আমি বুঝতে পারিনি । আমি যেন তখন তাঁর ঠোটের নিচে মিসওয়াকের প্রতি লক্ষ করছিলাম যে তা এক কোনে সরে গেছে । তখন তিনি বললেন আমরা আমাদের কাজে এমন কাউকে নিযুক্ত করব না বা করি না যে নিজেই তা চায় । বরং হে আবু মুসা তুমি ইয়ামানে যাও , এরপর তিনি তার পেছনে মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা) কে পাঠালেন ।যখন তিনি সেখানে পৌঁছলেন, তখন আবু মুসা (রা) তার জন্য একটি গদি বিছালেন আর বললেন নেমে আসুন । ঘটনাক্রমে তার কাছে একজন লোক শিকলে বাধা ছিল । তিনি জিজ্ঞেস করলেন ঐ লোকটি কে ? আবু মুসা (রা) বললেন, সে প্রথমে ইহুদি ছিল এবং মুসলিম হয়েছিল । কিন্তু আবার সে ইহুদি হয়ে গেছে । আবু মুসা (রা) বললেন, বসুন । মুয়াজ (রা) বললেন, না বসব না । যতক্ষণ না তাকে হত্যা করা হবে । এটাই আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের ফয়সালা । কথাটি তিনি তিনবার বলেন । এরপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হল এবং তাকে হত্যা করা হল ।
* ই,ফাঃ আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩০৫, সহিহ হাদিসঃ একদিন আবু মুসা (রা) এর নিকট এক মুরতাদ ব্যাক্তিকে হাযির করা হয় । তিনি তাকে প্রায় ২০ দিন যাবত পুনরায় মুসলমান হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন । পরে মুয়াজ (রা) সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে দ্বীনের দাওয়াত দেন । কিন্তু সে অস্বীকার করলে তাকে হত্যা করা হয় ।
*************মুরতাদদের কেন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়ঃ
*আবু মুসা আশআরি (রা) এর পক্ষ থেকে এক লোক উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এর কাছে এলো । তিনি তাঁর কাছে ওখানকার লোকদের হাল-অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন । সে এ সম্পর্কে তাকে জানালো । উমর (রা) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন , তোমাদের কাছে কি নতুন কোন খবর আছে ? সে বলল হ্যাঁ । এক লোক ইসলাম গ্রহন করার পর মুরতাদ (ধর্ম ত্যাগী) হয়েছে । তিনি বলেন , তোমরা তার সাথে কি ব্যাবহার করেছ ? সে বলল , আমরা তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করেছি । তিনি বলেন, কেন তোমরা তাকে তিন দিন একটি ঘরে বন্দী করে রাখলে না ? প্রতিদিন তাকে খাবার খাওয়াতে । তাকে তওবা করতে বলতে । হয়ত সে তওবা করতো এবং পুনরায় আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসত ? (এরপর তিনি বলেন) হে আল্লাহ! আমি (তাদের) এই নির্দেশ দেইনি । আমি উপস্থিত ছিলাম না এবং আমার কাছে খবর পৌঁছালে তাতে আনন্দিতও হই নি । (মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ (রহ), পৃষ্ঠা ৬১৪-৬১৫)।
* আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন অবস্থা ব্যতীত মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়ঃ (১ম) যদি কোন মুসলমান বিবাহ করার পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, (২য়) ঐ ব্যক্তি যে কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করে তাকে হত্যা করা যাবে এবং (৩য়) ঐ ব্যক্তি যে দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করে আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হল, তাকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে বা দেশান্তর করা হবে। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪০৪৮, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস , Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ)
* উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেনঃ তিন অবস্থার যে কোন একটি ব্যতীত কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়। প্রথমতঃ বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও যদি সে ব্যভিচার করে, তখন তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা হবে, দ্বিতীয়ত ঐ ব্যক্তি, যে কোন মুসলমানকে স্বেচ্ছায় হত্যা করে, তৃতীয়ত ঐ ব্যক্তি যে ইসলাম হতে বের হয়ে যায়, এবং পরে আল্লাহ্ তা‘আলা এবং আল্লাহ্র রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাকে হত্যা করা হবে বা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা দেশান্তর করা হবে। ( সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৭৪৩, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস , Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ)
* মুহাম্মাদ ইব্ন সিনান (রহঃ) —- আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, “আল্লাহ্ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল, তবে তিনটি মধ্যে যে কোন একটি কারণে তার রক্ত প্রবাহিত করা হালালঃ (১) যদি কেউ বিবাহ করার পর যিনা করে, তবে তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে; (২) যে ব্যক্তি আল্লাহ্ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবে, তাকে হত্যা করা হবে, অথবা শুলী দণ্ড দেওয়া হবে, অথবা দেশ থেকে বের করা হবে এবং (৩) যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করবে, তার জীবনের বিনিময়ে তাকে হত্যা করা হবে।(হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) ,সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ) , অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান, হাদিস নাম্বার: ৪৩০২ )
* ihadis.com বুলগুল মারাম, হাদিস নং ১১৯৭, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, তোমাদের সংঘবদ্ধ থাকা অবস্থায় যদি কেউ আসে আর সে তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ইচ্ছা, চেষ্টা করে তবে তোমরা তাকে হত্যা করো ।
* ihadis.com সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩৫২, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম সাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নাই আর আমি আল্লাহর রাসুল, তাকে হত্যা করা বৈধ নয় , যদি না সে তিনটি অপরাধের কোন একটি করে থাকে। ১/ বিবাহিত ব্যাক্তি যিনা করলে । ২/ কেউ কাউকে হত্যা করলে তার বিনিময়ে হত্যা এবং ৩/সমাজের ঐক্য বিনষ্টকারী মুরতাদ ।
* ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩০১৮, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) উকল নামের এক দল যারা পরে মুরতাদ হয়, এবং এক রাখালকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে রাসুল (সা) তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেন । আবু কিলাবা (রা) বলেন তারা হত্যা করেছে, চুরি করেছে, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা) এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে এবং পৃথিবীতে ফাসাদ ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছে।
* ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯১৯ , সহিহ হাদিসঃ আবু বাকরাহ (রা) থেকে বর্ণিত তিন বলেনঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ সব থেকে কঠিন কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহ্র সাথে শরীক করা, পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। মিথ্যা সাক্ষ্য কথাটি তিনবার বললেন । অথবা বলেছেন মিথ্যা বক্তব্য । কথাটি বারবার বলতে থাকলেন এমন কি আমরা আকাঙ্ক্ষা করতে লাগলাম হায় যদি তিনি নীরব হয়ে যেতেন । - নিজে আল্লাহ্ ও রাসুল (সা) কে সত্য সাক্ষ্য দেয়ার পরেও আবার ফিতনা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য পলটি নিবেন এটা ইসলাম কখনো বরদাশত করবে না ।
*ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯৩০, সহিহ হাদিসঃ সুয়ারদ ইবনে গাফালা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আলী (রা) বলেছেনঃ আমি যখন তমাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা) এর কোন হাদিস বয়ান করি আল্লাহ্র শপথ তখন তার উপর মিথ্যা কথা আরোপ করার চেয়ে আকাশ থেকে নিচে পড়ে যাওয়াটাই আমার কাছে শ্রেয়। কিন্তু আমি যদি আমার ও তোমাদের মধ্যকার বিষয় সম্পর্কে কিছু বলি তাহলে মনে রাখতে হবে যে, যুদ্ধ একটি কৌশল । আমি রাসুলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে অল্প বয়স্কা যুবক, নির্বোধ, তারা সৃষ্টির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম কথা থেকে আবৃত্তি করবে অথচ ইমান তাদের গলা অতিক্রম করবে না । তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায় । তাদেরকে যেখানে পাও তোমরা হত্যা করবে । কেননা তাদেরকে হত্যা করলে হত্যাকারীর জন্য কিয়ামতের দিন প্রতিদান আছে ।- এই হাদিস থেকে বুঝা যায় এম্ন কিছু মানুষ থাকবে যারা নিজেরা মুসলিম না কিন্তু ইসলামের কথাগুলা ভুলভাবে মানুষদের সাথে বলে তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে । অনেকেই আছে যারা ইসলাম গ্রহন না আবার পরে ইচ্ছা করেই মুরতাদ হয়ে যায় যাতে মানুষদের ভ্রান্ত করতে পারে এমন ভয়ংকর মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে রাষ্ট্রীয় ভাবে ।
একটি যৌক্তিক উদাহরণঃ
দেখুন আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে অ্যামেরিকা জান তাহলে কারো কোন সমস্যা নাই কিন্তু যদি বাংলাদেশ থেকে অ্যামেরিকায় যাওয়ার পরে বাংলাদেশ এর বিরুদ্ধে উস্কানি মূলক কথা,লিখা লিখি,সাম্প্রদায়িক উস্কানি তথা এক কথায় দেশদ্রোহী করেন তাইলে কিন্তু আপনাকে বাংলাদেশের সরকার মৃত্যুদণ্ড দিতেই পারে কারন আপনি দেশদ্রোহী এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ অপরাধী ।একই ভাবে আপনি যদি ইসলাম ত্যাগ করেন তাইলে আমাদের কারো কোন সমস্যা নাই কিন্তু যদি উস্কানি মূলক কথা, লিখা লিখি, সাম্প্রদায়িক উস্কানির দাঙ্গা তথা এক কথায় ধর্মদ্রোহী হন তাইলেই ইসলামই রাষ্ট্র আপনাকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড দিতেই পারে এটি স্বাভাবিক বরং আম্মাজান আয়েশা থেকে যে হাদিস আমরা পাচ্ছি সেখানেই পরিষ্কার জেনে যাচ্ছি যে যদি ইসলাম ত্যাগ করে আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তাহলে তাকে হত্যা অথবা শূলে চড়ানো অথবা দেশান্তর করা হবে ।
দ্বিতীয় যৌক্তিক উদাহরণঃ
* আমর ইব্ন আওন (রহঃ) —- আবদুল্লাহ্(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহ্র রাসূল”। তবে তিনটি কারণের কোন মুসলমানের রক্ত প্রবাহিত করা হালালঃ (১) যদি কোন বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করে; (২) যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তবে এর বিনিময়ে হত্যা এবং (৩) যে ব্যক্তি দীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলমানের জামায়াত থেকে বেরিয়ে যায়। (হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih), সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান,হাদিস নাম্বার: ৪৩০১)
খেয়াল করুন হাদিসের শেষের লাইন "যে ব্যক্তি দীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলমানের জামায়াত থেকে বেরিয়ে যায়" জামাত অর্থ দল । ধরেন এক দেশের গোয়েন্দা তার দেশের সব কিছুই জানে গোপন সব কিছু এখন যদি এই লোক অন্যের টাকা খেয়ে অন্য দেশে চলে যায় যেয়ে যদি সব ফাঁশ করে দেয় গোপন তথ্য, সেটি হতে পারে আর্মি বাহিনীর গোপন ছক হতে পারে দেশের গোপন সম্পদ ইত্যাদি !!! এখন কেউ যদি এই ধরণের লোকদের টার্গেট করে বলে যারা নিজেদের দল ত্যাগ করেছে তাদের হত্যা করো এটা কি অন্যায় নাকি এটাই সুবিচার ? অবশ্যই এটাই ন্যায় বিচার কারন তুমি নিজের দেশের সাথে গাদ্দারি করেছ । একই ভাবে কেউ যদি ইসলাম গ্রহন করে এবং সাহাবীদের সাথে কিছু দিন চলে তাদের হতে পারে গোপন রহস্য অথবা হতে পারে যুদ্ধের কিছু গোপন তথ্য, বের করে ইসলাম ত্যাগ করে , এখন তাদেরকে টার্গেট করে যদি নবী মুহাম্মদ (সা) এটা বলে যে যে ইসলাম ত্যাগ করে তাকে হত্যা করো , এটা অবশ্যই ভাল একটি হুকুম কারন দেশের জন্য গাদ্দারি করা কেউ সাপোর্ট করবে না, যাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে ।
তৃতীয় যৌক্তিক বিশ্লেষণঃ
আল্লাহ কুরআনে বলেছেনঃ আহলে কিতাবের এক দল এটাই বলে যে, বিশ্বাস স্থাপনকারীদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তারপ্রতি আগে বিশ্বাস স্থাপন করো এবং পরে তা অস্বীকার করো - যেন তারা ফিরে আসে । (সুরা আল ইমরান, অধ্যায় ৩, আয়াত ৭২ )
আসুন এই আয়াতের তাফসীর থেকে ঘুরে আসি তাহলে বুঝতে পারবেন আসল রহস্য কি এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের জালিয়াতির রহস্য ফাঁশ করা হয়েছে এই আয়াতে । কারন এই আয়াত দ্বারা বুঝান হয়েছে যে, ইহুদিরা পূর্ণ সত্য জানার পরেও ইসলাম নিয়ে তারা তামাসা করত এবং শুদু এটাই না বরং মুসলমানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য যে সব পন্থা তারা বের করেছে তার মধ্যে একটি কথা আল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে, তারা পরামর্শ করে - তোমরা দিনের প্রথমাংশে ইমান আনবে এবং মুসলমানদের সাথে নামায পড়বে এবং শেষাংশে কাফির হয়ে যাবে। তাহলে মূর্খদেরও এ ধারনা হবে যে এরা এ ধর্মের ভিতরে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি পেয়েছে বলেই এটা গ্রহন করার পরেও তা হতে ফিরে গেল, কাজেই তারাও এ ধর্ম ত্যাগ করবে এতে বিস্ময়ের কিছু নাই । মোটকথা তাদের এটা একটা কৌশল ছিল যে দুর্বল ঈমানের লোকেরা ইসলাম হতে ফিরে যাবে এই জেনে যে এ বিদ্বান! লোকগুলো যখন ইসলাম গ্রহনের পরেও তা হতে ফিরে গেল তাহলে অবশ্যই এ ধর্মের মধ্যে কিছু দোষত্রুটি রয়েছে । (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠাঃ ৯২, সুরা আল ইমরান এর ৭২ নং আয়াতের তাফসীর দেখুন । অনুবাদ ডঃ মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান)
আসলে এটা পুরাতন কিছুই না । বর্তমানেও এই বাজে কাজ খৃষ্টানরা তো করেই নাস্তিক ধার্মিকরাও এটাই করছে । এমন কিছু মানুষদের তৈরি করে যারা কিছু বছর ইসলামের পক্ষে খুব দাওয়াতি কাজ করে যখন দেখে তার অনুসারি অনেক , সে যদি এখন ইসলাম ত্যাগ করে তাইলে অনেকেই বিভ্রান্ত হবে সহজে । ভাববে যে এই লোক যেহেতু এত দিন দাওয়াত দিয়েছে হটাত এখন ইসলাম ত্যাগ করে ফেলল তাই হয়ত ইসলাম ভাল না (নাউজুবিল্লাহ) । আচ্ছা এই সব ধান্দাবাজদের টার্গেট করে যদি নবী মুহাম্মদ (সা) বলেন যারা ইসলাম ত্যাগ করে তাদের হত্যা করো এটা কি অন্যায় ? যাদের বিবেক আছে , যারা সুস্থ তারা অবশ্যই বলবে হুম এটা অবশ্যই মানবিক রাষ্ট্রীয় হুকুম ।
মুরতাদের মৃত্যুদণ্ড যৌক্তিকতা বিষয়ে ইবনুল কায়িম আল জাওজিয়া (রহ) লিখেনঃ
মৃত্যুদণ্ড হল সর্বউচ্চ অপরাধের সর্বউচ্ছ শাস্তি । সর্বউচ্ছ অপরাধ যেমনঃ মানুষ হত্যা , দ্বীনের বিষয়ে কটূক্তি করা বা দ্বীন ত্যাগ করার মাধ্যমে দ্বীনের উপর আঘাত হানা ইত্যাদি । মুরতাদ এর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া খুবই যুক্তিসংগত কারন সমাজে মুরতাদ এর অবস্থান সংঘাত - সহিংসতা ও আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারন হয়ে থাকে । এমন লোক বেঁচে থাকার মাঝে কোন মঙ্গলের আশা করা যায় না । একে বাচিয়ে রাখা বরং অনেক নির্বুদ্ধিতা । (ইলামুল মুয়াক্কিয়িন ২/৮৪)
উপরের সমস্ত বিশুদ্ধ যৌক্তিক তথ্য প্রমান হাতে রেখেই আমরা খুব দৃঢ়তার সাথে দাবি করছিঃ
১/ কুরআনে কোথাও মুরতাদকে সাথে সাথেই মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আদেশ নেই । বরং কুরআন মুরতাদদের সুযোগ দিচ্ছে ফেরত সত্য জীবন বিধান ইসলামে ফেরত আসার । এর পক্ষে ইউরোপিয়ান ফতোয়া ও গবেষণা কাউন্সিলের সদস্যদের ফতোয়া পেশ করা হয়েছে।
২/ যেসব মুরতাদরা মুসলিমদের সমাজের ঐক্য নষ্ট করেনি, অথবা ইসলামের বিরুদ্ধে উস্কানি মুলক ষড়যন্ত্র করেনি, ইসলামকে নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করেনি অথবা মুসলিমদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য চেষ্টা করেননি এমন মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি । উপরের এর পক্ষে প্রচুর সহিহ হাদিস দেখানো হয়েছে । যেখানে নবী মুহাম্মদ (সা) এসব মুরতাদদের শাস্তি দেন নি ।
৩/ পক্ষান্তরে যেসব মুরতাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল তারা ছিল ইসলামের শত্রু তথা ইচ্ছা করেই মুসলিম হত আবার ইচ্ছা করেই ইসলাম থেকে বের হত যাতে সাধারন মুসলিমরা তাদের দেখে মনে করে ইসলামে হয়ত সমস্যা আছে ! (নাউজুবিল্লাহ) । যেসব মুরতাদ মুসলিম সমাজের মধ্যে একতা নষ্ট করতে চেয়েছে, চুরি করেছে, নবী মুহাম্মদ (সা) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্ল্যান করেছে , পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করতে চেয়েছে এসব সমাজ বিরোধী, দেশ বিরোধী , মানবতা বিরোধী মুরতাদদের মৃত্যু দণ্ড দেয়া হয়েছে । বরং এদের মৃত্যুদণ্ড দেয়াই যৌক্তিক।
৪/ মুরতাদদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সুযোগ দেয়া হবে যাতে সে ইসলামে ফিরে আসে । এখন ইসলামি রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিবে তাকে বেশি সময় দিবে নাকি কম ।
৫/ আপনি এক দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাবেন এখানে কোন প্রব্লেম নাই কিন্তু এক দেশে যেয়ে যদি আরেক দেশের বিরদ্ধে উস্কানি দেন এখানে আপত্তি আছে ঠিক একই যুক্তিতে আপনার জ্ঞানের স্বল্পতার জন্য যদি ইসলাম আপনার ভাল না লাগে আপনি ইসলাম না মানতেই পারেন কিন্তু আপনি ইসলাম ত্যাগ করে উস্কানি দিবেন , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাবেন এটা ইসলাম কখনো মেনে নিবে না । সোজা হিসাব ।
৬/ মুরতাদের অবস্থা ইসলামি রাষ্ট্র ভাল ভাবে যাচাই করবে তার মতলব আসলে কি ! যদি ভাল হয় তাইলে তো ভালই আর যদি কোন নোংরা মতলব থাকে এই ক্ষেত্রে ইসলামি রাষ্ট্র সেই মুরতাদকে মৃত্যুদণ্ড দিবে ।
৭/ ইসলামী রাষ্ট্রের কোন সাধারন মানুষ কোন মুরতাদকে শাস্তি দিতে পারবে না । করলে তারই শাস্তি হবে তবে সেটা ইসলামী সরকার নির্ধারণ করবেন । (বিস্তারিত দেখুনঃ বিধিবদ্ধ ইসলামী আইনের ভাষ্য (ই'ফা),খণ্ড ১, ধারা ৭২, পৃষ্ঠা ২৭৮,)
লিখেছেনঃ এম ডি আলী
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ