নিরামিষ ভাল নাকি আমিষ ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

10 August, 2019

নিরামিষ ভাল নাকি আমিষ ?


কে বেশি উপকারী, শাক-সবজী থেকে আসা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, না কি মাছ-মাংস থেকে আসা প্রাণীজ প্রোটিন?
যাঁরা প্রাণীজ প্রোটিন খান না অর্থাৎ, নিরামিশাষী তাঁদের অবধারিত ভাবে একটা প্রশ্ন শুনতে হয়, আপনাদের পর্যাপ্ত পুষ্টি জোটে তো? 

আমরা জানি শরীরের সমস্ত কোষ ও টিস্যুর সৃষ্টি এবং রক্ষণাবেক্ষণের মূলে রয়েছে প্রোটিন। অধিকাংশ পেশি ও অঙ্গও প্রোটিনে তৈরি। প্রোটিন আসলে কতকগুলি বড় ও জটিল অনু যা শরীরে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অসংখ্য ছোট ছোট একক দিয়ে প্রোটিন অনু তৈরি। এরা অ্যামিনো অ্যাসিড। ২০ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিডের সন্ধান পাওয়া গেছে যারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রোটিন অনু তৈরি করে। এই অ্যামিনো অ্যাসিডগুলির ১১টি কে নন-এসেনিনয়াল এবং ৯টি কে এসেনসিয়াল বলে। আমাদের শরীর নন-এসেনসিয়াল প্রোটিন তৈরি করে নিতে পারে, তবে এসেনসিয়াল প্রোটিনগুলি শরীরে তৈরি হয় না। আর তাই বাইরে থেকে এদের সংগ্রহ করতে হয়। সেই জন্য এই ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ প্রোটিন খাদ্য গ্রহণ খুবই জরুরি। শরীর এই সব প্রোটিনকে প্রথমে এদের উপাদানে ভেঙে পরে প্রয়োজন মতো নতুন প্রোটিন তৈরি করে নেয়।
প্রাণীজ প্রোটিনকে অনেক বেশি ‘সম্পূর্ণ’ বলে মনে করা হয়। অনেকে আবার একে ‘উচ্চমানের’ বলেও উল্লেখ করেন। অবশ্য এর অর্থ যদি এইভাবে করা হয় যে এরা বেশি স্বাস্থ্যকর তাহলে ভুল হবে। এটা ঠিক যে মাছ বা মাংসের মতো প্রাণীজ উত্স থেকে পাওয়া প্রোটিনে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন প্রস্তুতির সমস্ত রকমের অ্যামিনো অ্যাসিড উপাদান অনেকটা ‘প্যাকেজ’-এর আকারে মজুত থাকে। তাছাড়া এরা দ্রুত ব্যবহারযোগ্য। প্রাণীর শরীরে থাকা প্রোটিন আর আমাদের শরীরের প্রোটিনের মধ্যে অনেক সাদৃশ্যও আছে। অন্যদিকে উদ্ভিজ্জ উত্স থেকে পাওয়া প্রোটিনে সাধারণত এই ধরনের প্রয়োজনীয় এসেনসিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে না।
তবে এই তথ্য শুনে আমিষভোজীরা যদি খুশী হন তবে সে গুড়ে বালি। কারণ প্রাণীজ প্রোটিনের সবচেয়ে খারাপ দিক হল এতে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল ও ফ্যাট, বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। আর এই ফ্যাট হার্টের রোগ, অ্যাথেরোস্ক্লেরেসিস ও স্ট্রোক-সহ সমস্ত রকমের কার্ডিওভাসকুলার রোগের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকির কারণ।টক্সিনের মাত্রা বেড়ে যায়।
অথচ
অন্যদিকে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনে অনেক কম পরিমান স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল থাকে। সুতরাং অনেক বিজ্ঞানী এমনটাই মনে করেন যে তথাকথিত ‘নিম্ন মানের’ উদ্ভিজ্জ প্রোটিন যা শরীরের জন্য দরকারী নতুন প্রোটিন সংশ্লেষনে বেশি সময় নেয়, আসলে বেশি স্বাস্থ্যকর। এখানেও যেন সেই আপ্তবাক্যটি প্রযোজ্য ‘স্লো বাট স্টেডি উইনস দি রেস’।
আমিষের খারাপ দিক
মাংসের অন্য কিছু ক্ষতিকারক দিকও আছে। যেমন, মাংস প্রচণ্ড অ্যাসিডিক। তাছাড়া মুরগী বা পাঠা/খাঁসি যাতে দ্রুত বেড়ে ওঠে তার জন্য এদের শরীরে যে অ্যান্টিবায়োটিক ও কৃত্রিম হর্মোন প্রয়োগ করা হয় তা মারাত্মক বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের নানা উত্স আছে। যেমন, ডাল, বিনস, সয়া, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের ফল ইত্যাদি। যেহেতু শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরির মাত্র ১০% প্রোটিন থেকে আসা উচিত, সুতরাং এটা ঠিক যে খুব সহজেই শরীরের বৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণ ও বিপাকীয় কার্যকারীতার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন চাহিদা উদ্ভিদ উত্স থেকেই মেটানো সম্ভব। তবে তা যাতে পর্যাপ্ত হয় সেদিকে নজর দেওয়া দরকার। আবার এটাও দেখা দরকার যে নির্দিষ্ট পরিমান উদ্ভিদ প্রোটিন ঠিক ঠিক অনুপাতে নেওয়া হচ্ছে কিনা।
প্রয়োজন নজরদারীর
আর এর পরেও যে কথাটি থেকে যায় তা হল দেশটার নাম ভারতবর্ষ, এখানে চোখ বুঁজে শাক-সবজি কিংবা ফল কেনা যায় না। অবশ্য চোখ থেকেই বা কি করবেন! সরকার যখন জেগে ঘুমোন তখন একজন নাগরিক আর কি-ই বা করতে পারেন। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন লাল শাককে লাল রঙে, পটল-ঝিঙেকে সবুজ রঙে কিংবা বেগুন-টমেটোকে চকচকে করে মনোহারী করে তোলার জন্য কোনও রাসায়নিকে চুবিয়ে আনা হয়েছে, ফল পাকাবার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এমন রাসায়নিক যা মারাত্মক মারণ রোগ ডেকে আনতে পারে, অথচ, আপনার কিছুই করার থাকে না।
ক্ষতিকারক রাসায়নিক
এই সব ক্ষতিকারক রাসায়নিকগুলির কয়েকটির নাম – কপার সালফেট, রোডামাইন অক্সাইড, ম্যালাকাইট গ্রিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, পেট্রোলিয়াম অয়েল, ইত্যাদি। এরা প্রকৃতিতে নিউরোটক্সিক (ব্রেনকে আক্রমণ করে)। এদের থেকে অ্যালজাইমার্স এবং ডিমেনশিয়া, এছাড়াও কার্সিনোজেনিক বলে ক্যান্সারও হতে পারে। বস্ত্রশিল্পে ব্যবহৃত ম্যালাকাইট গ্রিন পরিচিত কার্সিনোজেন, কপার সালফেট লিভার ও কিডনির ক্ষতি করার পাশাপাশি প্রচুর ফ্রি রেডিক্যালের জন্ম দেয় এবং ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত ক্যালসিয়াম কার্বাইডও কার্সিনোজেন। পেট্রোলিয়াম অয়েলের ক্ষতিকারক প্রভাবে শ্বাসতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হয়। বাজার থেকে এইসব সবজি ও ফল কিনে এনে ভাল করে ধুয়ে হয়ত কিছুটা ক্ষতিকারক রাসায়নিক মুক্ত করা যায় তবে এদের ভিতরে যা ঢুকে যায় তা থেকে মুক্তির কোনও উপায় নেই। তাছাড়া পেট্রোলিয়াম অয়েলের মতো রাসায়নিক তো জলে দ্রাব্যও নয়। আর একটি বিষয়ও ভুলে গেলে চলবে না। এইসব শস্য উত্পাদনের সময়েও যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছিল তাতেও একধরনের ক্ষতিকর উপাদান এর ভিতরে ঢুকে গেছে। এই যখন পরিস্থিতি তখন শুধু উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ওপরেই বা ভরসা করবেন কি ভাবে!

ডিমকে প্রোটিনের সহজলভ্য উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একটি ডিম থেকে মোটামুটি ৫–৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। বীজ জাতীয় খবর প্রোটিনের ভাল উৎস, যেমন: বাদাম, কুমড়োর বিচি, শিমের বিচি, কাঠালের বিচি, ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি। আর ফলের মধ্যে কলা। এককাপ ছোলা থেকে প্রায় ডিমের সমান আর এককাপ মসুর ডাল প্রায় ডিমের দ্বিগুন ৯-১০ গ্রাম প্রোটিনই পাওয়া যায়। এগুলো সবই সহজলভ্য এবং স্বল্পমূল্যের বিকল্প। ডিম রান্না ছাড়াও কেক, পুডিং বানাতেও ব্যাবহার করা হয় ডিমের আঠালো বৈশিষ্ঠ্যের কারনে। এসব ক্ষেত্রে কলা ব্যাবহার করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে খাবারে কলার স্বাদ এবং ঘ্রাণ থেকে যাবে।
তাহলে?
মিত্ররাই ভেবে নিন, এবার কী করবেন? তবে আমার ব্যক্তিগত মতামতের কথা যদি বলেন, আমি নিরামিষের পক্ষেই হাত তুলব।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ